Monday, December 19, 2011

''ভালবাসা কিংবা অন্য কিছু '' [ Collection of Love Stories -09 ]







মেজাজ সপ্তমে চড়ে আছে হিমেলের ৷ সকাল থেকে এ পর্যন্ত (রাত ২টা) ছয়টা এস .এম. এস করেছে সে লাবণ্যকে ৷ কিন্তু কোন রিপ্লাই নেই ৷ মোবাইলের ম্যাসেজ এলার্ট অন করা থাকলেও বার বার তাকাচ্ছে মোবাইলের দিকে ৷ সাধারনত অন্য সময় ব্যস্ত থাকলেও রাতে ঘুমোতে যাবার আগে এবং সকালে অন্তঃত একটা ''শুভ রাত্রি'' এবং একটা ''শুভ সকাল'' মেসেজ দিতে ভুলে না লাবণ্য ৷ কিন্তু আজ কোনটাই না পেয়ে চরম অস্হির হয়ে উঠেছে হিমেল ৷ শেষ পর্যন্ত ফোন করল লাবণ্যকে ৷ বেশ ক'বার রিং হবার পরও answer করল না লাবণ্য ৷ প্রচন্ড রাগে মোবাইলটা মাটিতে আছাড় মারল সে ৷ বাকি রাতটা অস্হিরতা আর অশান্তিতে না ঘুমিয়েই কাটাতে হলো হিমেলকে ৷



সকালে খুব ছোট একটা ম্যাসেজ আসলো মোবাইলে ''শুভ সকাল'' sorry আমি খুব busy পরে কথা বলব ,bye. সাথে সাথে রিপ্লাই দিল হিমেল ''তুমি কি কোন সমস্যায় আছো?'' কিন্তু কোন রিপ্লাই পেল না ৷ কিছুক্ষন পর ফোন করেও বন্ধ পেল লাবণ্য'র মোবাইল ৷ বিষয়টা বেশ চিন্তিত করে তুলেছে হিমেলকে ৷ কিছুই ভাল লাগছে না তার ৷ লাবণ্য'র এরকম হঠাৎ বদলে যাওয়ার কারন বুঝতে পারছে না সে ৷ রাগ ও অভিমানে হিমেল সিদ্ধান্ত নিল কিছুদিন কোন যোগাযোগ করবে না লাবণ্য'র সাথে ৷



দুই দিন পর আবার এস.এ.মএস করল সে ৷ ভুলে গেল সব রাগ অভিমান ৷ যদিও মনের কোনে কিছুটা রাগ রয়ে গেছে কারন এই দুই দিনে লাবণ্য একটিবারও তার সাথে যোগাযোগের কোন চেষ্টা করেনি ৷ কিন্তু লাবণ্য'র রিপ্লাই পেয়ে নিমিষেই সব কষ্ট ভুলে গেল ৷ কথা হল দুজনের অনেক্ষন ৷ কিন্তু ঐ পর্যন্তই ৷ লাবণ্য বদলে যেতে থাকলো ৷ আগে যেখানে  প্রায় সারাদিনই দুজনের কথা বা মেসেজ আদান প্রদান হত সেখানে এখন সারাদিনে ২/৩ টা রিপ্লাই দেয় লাবণ্য ৷ সে ফোন করলে ২/১ মিনিট কথা বলে পরে ফোন back করার কথা বলে রেখে দেয় ৷ কিন্তু backকরে না আর ৷ ক্রমেই বদলে যেতে থাকে লাবণ্য ৷



রাত বাড়ছে ,হিমেলের চোখে ঘুম নেই ৷ আজ খুব মনে পড়ছে লাবণ্য'র সাথে প্রথম পরিচয় পর্বটা ৷ মোবাইলের ক্রস কানেকশনের মাধ্যমে লাবণ্য'র সাথে প্রথমে পরিচয় ,তারপর বন্ধুত্ব ৷ অনেক কথা হত দুজনের ৷ পারিবারিক ,সামাজিক এবং ব্যক্তিগত পছন্দ, অপছন্দ, ভাল লাগা, মন্দ লাগা গুলো দুজনে শেয়ার করত অনায়াসে ৷ কোন সময় একজনের কোন কারনে মন খারাপ হলে অন্যজন আপ্রান চেষ্টা করত মন ভাল রাখার ৷ঠিকমত ঘুম ,খাওয়া দাওয়া হচ্ছে কি না খবর রাখত একজন আরেকজনের ৷ এমন কী মাঝে মাঝে কিছু আবেগ অনুভূতি ,প্রেম ভালবাসার কথাও হত দুজনের মাঝে ৷ কোন কোন দিন এসব topic লাবণ্য কৌশলে এড়িয়ে যেত আবার কোন কোন দিন খুব আগ্রহ নিয়ে গল্প করত ৷ দিন যতই গড়িয়ে যেতে লাগল হিমেল ততই দূর্বল হয়ে পড়ল লাবণ্য'র প্রতি ৷ কিন্তু বন্ধুত্ব হারানোর ভয়ে হিমেল তার ভালবাসার কথা কখনো স্পষ্ট করে বলতে পারেনি লাবণ্যকে ৷ তারপরও লাবণ্য'র প্রতি কেমন যেন বুদ হয়ে থাকত সবসময় ৷ একদিন কথা না হলে পাগলের মত হয়ে যেত হিমেল ৷ আজ এসব স্মৃতি মনে পড়ে চোখ জলে ভরে উঠল তার ৷ সে কিছুতেই বুঝতে পারছে না কেন লাবণ্য  তাকে হঠাৎ করে  ignore করছে ৷ আজ দুই সপ্তাহ হতে চলল লাবণ্য'র সাথে কোন যোগাযোগ নেই হিমেলের ৷



বেশ কিছুদিন থেকে রাতে একদম ঘুম হয় না হিমেলের ৷ এক ধরনের ইনসমনিয়ায় ভুগছে সে ৷ প্রায় নির্ঘুম কাটে প্রতিটি রাত ৷ সারাক্ষন তাকিয়ে থাকে মোবাইলের দিকে ৷ জানে হারিয়ে গেছে লাবণ্য ,তারপরও হিমেল অজান্তেই অপেক্ষা করে তার ফোনের ৷



রাতে ঘুম না হওয়া চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌছেঁছে হিমেলের ৷ মাত্র ২/১ ঘন্টা ঘুম হয় ৷ তা-ও কিছুক্ষন পরপর ঘুম ভেঙ্গে যায় ৷ অশান্তি আর অস্হিরতা তাকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে ৷ ঘুম না হওয়ার প্রভাব পড়েছে চেহারা ও আচরনে ৷ বন্ধু বান্ধব এমনকি পরিবারের সদস্যদের সাথে অকারনেই রেগে যাওয়া ,কর্কশ ভাষায় কথা বলা ,কথায় কথায় ঝগড়া করা নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷ সবকিছুই যেন অসহ্য লাগে ৷ এই তো সেদিনও দুপুরে খাবার খেতে জোরাজোরি করায় ছোট বোনটাকে কষে চড় মেরেছিল সে ৷ হিমেলের এ অবস্হা দেখে মা বার বার ডাক্তার দেখাতে বলছেন ৷ কিন্তু ইচ্ছে করেই সে ডাক্তার দেখাচ্ছে না ৷ কেবল রাতে বিছানায় এসে এপাশ ওপাশ করতে করতে যখন ঘুম আসেনা তখনই মনে হয় শীঘ্রই ডাক্তার দেখাতে হবে ৷



একটি আন্তর্জাতিক চ্যারেটি সংস্হায় সেচ্ছাসেবক হিসাবে কাজ করছে হিমেল ৷ তার কাজ হচ্ছে ঢাকা শহরের বিভিন্ন আবাসিক এলাকার বাসায় বাসায় গিয়ে পুরনো ও অব্যবহৃত কাপড় চোপড় সংগ্রহ করা এবং কেউ উৎসাহিত হলে সংস্হায় কিছু আর্থিক অনুদান জোগাড় করা ৷ পরে এসব কাপড় শহরের অলিতে গলিতে থাকা পথহারা শিশুদের মাঝে বিতরন করা ৷ দুটো কারনে এই সংস্হায় কাজ করতে আগ্রহী হয়েছে সে ৷ এক; কাজের ক্ষেত্র ঢাকা শহরের বিভিন্ন আবাসিক এলাকা হওয়ায় লাবণ্য কে খুঁজা যাবে৷ দুই ;পথহারা শিশুদের মাঝে কাজ করে ওদের আনন্দের মাঝে নিজের দুঃখকে ভুলার চেষ্টা করা৷



আজ সারাদিন শিশুদের নিয়ে ব্যস্ত সময় কেটেছে হিমেলের ৷ দিনভর প্রচুর পরিশ্রম গেছে ৷ বাসায় ফিরে তাই পরিশ্রান্ত দেহটা সে এলিয়ে দেয় বিছানায় ৷ এপাশ ওপাশ করতে করতে ও ঘুম না আসায় বাধ্য হয়ে একটি গল্পের বই হাতে নেয় ৷ পড়তে পড়তে একসময় গভীর ঘুমে তলিয়ে যায় হিমেল ৷



হঠাৎ দরজায় প্রচন্ড জোরে ধাক্কাধাক্কি আর ছোট বোন স্নেহার ডাকে ঘুম ভাঙ্গে তার ৷ দরজা খুলে ধমকের সুরে বলল কী-রে ,বাড়িতে ডাকাত পড়েছে না কি ? এতো চেঁচামেচি কেন ? স্নেহা বলল ,ভাইয়া ,এর চেয়েও ভয়াভহ ঘটনা ঘটেছে ৷ একটা মেয়ে এসেছে তোমার খোঁজে ৷ বলছে তোমার জন্য না-কি সে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে ৷ স্নেহার কথায় যেন আকাশ থেকে পড়ল হিমেল ৷ লাবণ্য ছাড়া আর কোন মেয়ের সাথে তার এমন কোন সম্পর্ক নেই যে তার জন্য কেউ বাড়ি থেকে পালিয়ে আসবে ৷ আর লাবণ্য তো হারিয়ে গেছে ৷হিমেল তাই বিস্মিত হয়ে জানতে চাইল মেয়েটা এখন কোথায় রে ? ড্রয়িং রুমে বসে আছে ৷



মুখ না ধুঁয়েই ড্রয়িং রুমে ছুটলো সে ৷এখানে লাবণ্যকে বসে থাকতে দেখে হার্টের একটা বিট যেন মিস করল হিমেল ৷ ভাল করে আবার তাকালো মেয়েটার দিকে ৷ হ্যাঁ ,ই-মেইলে যে ছবি লাবণ্য তাকে দিয়েছিল এ তো সেই মেয়ে অর্থাৎ লাবণ্যই ৷ নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না কিছুতেই ৷ তার হারিয়ে যাওয়া  লাবণ্যকে প্রথমবার সামনা সামনি দেখে মুখ দিয়ে কোন কথা বেরুচ্ছে না ৷ দুজনে নীরবে চোখে চোখে চেয়ে থাকল কিছুক্ষন ৷ শেষে লাবণ্যই নীরবতা ভাঙলো, চিনতে পেরেছো আমাকে ? অভিমানের সুরে হিমেল উত্তর দিল চিনতে পারার কথা কি? বেশ ! না চিনলে চলে যাই তাহলে ৷

চলেই যখন যাবে ,আসলে  কেন তাহলে ?



এভাবে মান অভিমান পর্ব শেষে হিমেল জানতে চাইল হঠাৎ অমন করে লাবণ্য তার কাছ থেকে হারিয়ে গিয়েছিল কেন ? লাবণ্য বলল তোমার সাথে এভাবে ঘন ঘন যোগাযোগ ভাইয়া ও বাবা ভাল চোখে দেখেনি তাছাড়া  তারা  অন্য এক ছেলের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করায়  তোমার সাথে যোগাযোগের সব মাধ্যম বন্ধ করে দেয় ৷ এমনকি এক ধরনের গৃহবন্দি করে রাখে আমাকে ৷ আগামিকালই ঐ ছেলের সাথে আমার বিয়ে হওয়ার কথা ,তাই অনেক কষ্টে ও চেষ্টায় আজ বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছি ৷

কিন্তু আমার ঠিকানা পেলে কী করে ?

তোমার মনে আছে ,একদিন তুমি বলেছিলে ভাড়া বাড়ি ছেড়ে নিজেদের বাড়িতে এই ঠিকানায় তোমরা move করছো ৷ ভাগ্যিস ঠিকানাটা আমার মনে ছিল ৷ তা-না হলে তো এ জীবনে আর তোমাকে পাওয়া হত না আমার ৷ আলাপের শেষ দিকে রুমে ঢুকে হিমেলের বাবা ,মা আর স্নেহা ও সব শুনল ৷ সব শুনে বাবা বললেন লাবণ্য'র পরিবারকে রাজি করিয়েই দুজনের বিয়ে দেয়া হবে ৷ মনে হয় তারা রাজি হবে না ,এতে ঝামেলা আরও বাড়বে হিমেলের সোজা উত্তর ৷ যা করার নিজেদেরকে করতে হবে আজই ৷ শেষ-মেষ সিদ্ধান্ত হল আজই কাজী ডেকে হিমেল আর লাবণ্য'র বিয়ে পড়ানো হবে ৷



বাড়িতে  অনেকটা উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে ৷ যদিও একান্ত পারিবারিক ভাবেই সাদামাটা বিয়ে হচ্ছে তারপরও ঘনিষ্ট কিছু আত্মীয় স্বজন বাড়িতে এসেছেন ৷  তাদেরকে নিয়ে চিৎকার চেঁচামেচিতে পুরো বাড়ি মাথায় তুলে রেখেছে স্নেহা, আর কিছুক্ষন পরপর এসে লাবণ্য'র সাথে দুষ্টুমি করছে ৷ কিছুক্ষন আগেই হিমেল ,লাবণ্য'র বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে ৷ হিমেল তাকিয়ে আছে লাবণ্য'র দিকে ৷ আজ যেন লাবণ্যকে আগের চেয়ে কয়েকগুন বেশি সুন্দর লাগছে ৷সে ভাবছে সব মেয়েকে-ই কি বিয়ের দিন এত সুন্দর লাগে? তার তাকিয়ে থাকা দেখে লাবণ্য বলল কী দেখছ এত ?

দেখছি তোমাকে ।

আমাকে তো আজ সারাদিনই দেখেছ ৷ নতুন করে দেখার কী হল ?

হুম ,সারাদিন দেখেছি অন্যভাবে ,এখন দেখছি নিজের বউ হিসাবে ।

তাক, আর দেখতে হবে না ।এই ,আজ পূর্নিমা না ? চলো ছাদে যাই ৷ আজ পুরো রাত দুজনে গল্প করে কাটাব ৷



 ভরা জোঁছনায় ছাদে হাত ধরাধরি করে বসে আছে তারা দুজন ৷ হিমেল বলল এত সহজে সবকিছু হয়ে গেল ,আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না ।

সত্যি ,আমারও বিশ্বাস হচ্ছে না ।বাসা থেকে যখন পালাই তখন আশঙ্কায় ছিলাম এই ঠিকানায় যদি তোমাকে না পাই !! শেষ পর্যন্ত আমাদের ভালবাসারই জয় হল ।

আচ্ছা ,আমাকে এই ঠিকানায় না পেলে কী করতে ?

কী আর করতাম আত্মহত্যা ।

তুমি সত্যি এত ভালবাস আমাকে ?এত দিন কেন বুঝতে দাওনি ?

বরং আমি যেদিন তোমাকে ভালবাসার কথা বললাম সেদিন থেকেই তুমি আমার সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দিয়েছিলে ৷

আসলে ভালবাসার প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে আমি দেখতে চেয়েছি তুমি সত্যি কতটা ভালবাস আমায় ৷ আর যোগাযোগ বন্ধ হবার কারন তো আগেই বলেছি ৷ যাই হোক ,বাদ দাও ঐসব ৷ এখন তো আমি তোমারই ৷

হুম , সেজন্যই-তো আমি এখন পৃথিবীর সেরা সুখী একজন ৷ আর সেই সুখে এখন আমার চোখে রাজ্যের সব ঘুম ৷ চল ঘুমাতে যাই ৷

কী! এখন ঘুমাবে?আমি আজ সারারাত তোমার হাত ধরে বসে থাকব আর তোমার কবিতা শুনব ৷



বেশ ,আমার চোখ দুটো তাহলে তোমাকে টেনে মেলে ধরতে হবে ৷

ঠিক আছে তা-ই হবে ৷





প্রচন্ড জোরে দরজা ধাক্কানোর শব্দ হচ্ছে ৷ স্নেহা উৎকন্ঠিত কন্ঠে ডেকেই যাচ্ছে ,ভাইয়া ,এই ভাইয়া ওঠ ,ওঠনা ৷ অনেক বেলা হয়ে গেছে ৷ বাবা ,মা ও ডেকে যাচ্ছেন হিমেল,বাবা  দরজাটা খোল, বাবা ৷ দরজা ধাক্কানোর শব্দ আরও বাড়তেই হঠাৎ ঘুম ভাঙল হিমেলের ৷ উঠে দরজা খুলতে খুলতে মোবাইলে সময় দেখল ,দুপুর ১২টা ৷ চোখ মুছতে মুছতে রুমের চারিদিকে তাকাল সে ৷ কোথাও লাবণ্য নেই ৷ তাহলে কি সে পুরো রাত জুড়ে স্বপ্নই দেখেছে ? কিন্তু স্বপ্নটা এতই স্পষ্ট ছিল যে ওটা স্বপ্ন ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে হিমেলের ৷ ভাবছে ,এই ঘুম যদি আর কখনোই না ভাঙতো !!!






বিঃদ্রঃ পাঠক ,ইচ্ছে করলে আপনারা হিমেলকে ঘুম থেকে না জাগিয়েই গল্পটা শেষ করতে পারেন ৷ ধন্যবাদ ৷



লিখেছেন-সোহেল রহমান



(বন্ধুরা, গল্পটি কেমন লাগলো সেটা আপনার কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানিয়ে দিন। আপনার কমেন্টটি হয়তো লেখককে আরও সুন্দর সুন্দর গল্প লিখতে অনুপ্রাণিত করবে। আর গল্পটি ভালো লাগলে ‘like’ করতে ভুলবেন না যেন!)







গল্পটি নেয়া :     https://www.facebook.com/notes/ভালবাসা-এবং-কিছু-আবেগের-গল্প/ভালবাসা-কিংবা-অন্য-কিছু-/212921565454667 

অসমাপ্ত ভালবাসা. . . . . [ Collection of Love Stories -08 ]


পেছনের সারির টেবিলে বসে বসে মেয়েটির রেশমী কালো চুল গুলো দেখতে থাকে অনিক। এটা তার প্রতিদিনের রুটিনের

একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।মেয়েটির এই ঘন কালো কেশ গুলি কেন জানি অনেক ভাল লাগে অনিকের।তার ইচ্ছে করে মেয়েটির চুল গুলি নিজের হাতটি দিয়ে একটু ছুঁয়ে দিতে,,নাক ডুবিয়ে একটু ঘ্রাণ নিতে।।কিন্তু সে জানে তার এই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে,,পাবেনা বাস্তবের রুপান্তর।তবুও সে স্বপ্ন দেখে..স্বপ্ন

দেখে মেয়েটিকে ভালবাসার,,একান্ত ভাবে কাছে পাবার।না হওক না তার স্বপ্ন গুলি সত্য,ভেংগে চুরমার হয়ে যাক সব।এতে তার কোন ক্ষতি নেই।এই স্বপ্ন দেখাতেও যে তার সুখ,,এক মধুর প্রাপ্তি।।



আজকাল ভার্সিটিতে যেতে খুব ভাল লাগে তাসফিয়ার।একটি ছেলে পেছন থেকে শুধু তাকেই দেখে,ভাবতেই কেমন রোমাণ্চণ অনুভূত হয় তার।ছেলেটি খুবই স্মার্ট।যদিও পড়ালেখায় তেমন মনোযোগী না। তবুও তাকে অনেক ভাল লাগে তাসফিয়ার। কারো ধ্যান্,ধারনা ও নিঃশ্বাসে সে,কারো চোখের মধ্য মনি হয়ে আছে সে..এটাই বা কম কিসের। কিন্তু তার একটাই দুঃখ।নিজের থেকে কিছুই বলেনা ছেলেটি।যদিও ক্লাসের শয়তান ছেলেদের

 একজন সে তবুও তাসফিয়ার সামনে আসলেই ভেজা বেড়াল হয়ে যায় ছেলেটি।।





এই পিছুটান আর সহ্য হয় না তাসফিয়ার।সে ভাবে যা করার এইবার তাকেই করতে হবে।এই হাবলু ছেলেটার আশায় বসে থাকলে চুলে পাক ধরবে তার..হওক না সে একটি মেয়ে।কি হয়েছে তাতে??মনের গোপন কথাটি প্রকাশ করতে মেয়ে ছেলে কোন ব্যাপারই না।যদিও ছেলেরাই আগে কাজটা করে।তবুও হওক না সে একটু ব্যতিক্রম। ভালবাসাটাও যে একটু ব্যতিক্রম ভাবেই উপভোগ করতে চায় সে...



এই সব ভাবতে ভাবতেই ভার্সিটিতে হাজির হয় সে।ক্লাসে ঢুকেই অনিককে ঠিক তার নির্ধারিত পেছনের টেবিলটিতে পায় সে। আজ তাসফিয়া তার প্রতিদিনকার

জায়গাটিতে বসল না।বসল ঠিক অনিকের পাশের আসনটিতে। অনিক হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে মেয়েটির দিকে।সে কোন স্বপ্ন দেখছে না তো?? নিজেকেই নিজে চিমটি কাটে সে। নাহ,,বাস্তবেই আছে সে।কিন্তু তাসফিয়া তার পাশে বসল কেনো!! কিছুতেই কিছু মেলাতে পারেনা অনিক। এই রকম একটি ঘোরের মধ্যেই কেটে যায় সময়।ক্লাস শেষে একটি চিরকুট হাতে ধরিয়ে দিয়েই সোজা চলে যায় তাসফিয়া।অনিক তাকিয়ে থাকে মেয়েটির চলার পথে।

 চিরকুটটি খোলে সে। তাতে লিখা "ভালবাসি"।

শুধু একটি শব্দ।কিন্তু এটিই যে তার কাছে পৃথিবীর মহামুল্যবান শব্দ। জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ...



এভাবেই শুরু হয় একটি ভালবাসার গল্পের।অনিক-তাসফিয়ার ভালবাসার গল্প।অন্যান্য সকল ভালবাসার মতোই তাদের মধ্যেও ছিল প্রেম আবেগ ও মিলনের এক অনিন্দ সুন্দর অনুভূতি।যে অনুভূতির সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছিলো তারা তাদের ভালবাসার তরী।তাদের মাঝে ভালবাসার যেমন কমতি ছিলো না,তেমনি খুনসুটি ও ঝগড়াঝাটির ও অভাব ছিল না।কিন্তু কোন ঝগড়াই তাদের ভালবাসায় বিভেদ সৃষ্টি করতে পারেনি কখনো। একজন

 অভিমান করতো তো আরেকজন তাকে মানিয়ে নিতো অনায়াসেই। তাই ভালবাসাটা অটুটই থেকে গেছে তাদের সর্বদা...



এরই মাঝে ভার্সিটির শেষ বর্ষে পদার্পণ করে তারা। বাসা থেকে বিয়ের জন্যে পীড়াপীড়ি শুরু হয়ে যায় তাসফিয়ার।অনেক বারই অনিককে পালিয়ে বিয়ে করার জন্য বলে তাসফিয়া। কিন্তু কিছুতেই রাজি হয় নাই অনিক। সে ভাবে আগে তাকে নিজের পায়ে দাড়াতে হবে তারপর বিয়ের চিন্তাভাবনা। কিন্তু এরই মধ্যে বিয়ে ঠিক হয়ে যায় তাসফিয়ার। ছেলে ডাক্তার।তাই এই পাত্র আর হাত ছাড়া করতে চায়নি তার বাবা-মা।বিয়ের দিন

 তারিখ সবই ঠিক হয়ে যায়।শেষ বারের মতো অনিককে ভেগে বিয়ে করার কথা বলে সে।কিন্তু অনিক জানে তার মতো কর্মহীন একটা ছেলে তাসফিয়া কে সুখী রাখতে পারবেনা। এবং তার ভালবাসার মানুষটিকে অসুখীও দেখতে চায় না সে।তাই বুকে পাথর রেখে সেদিন তাসফিয়াকে ফিরিয়ে দিয়েছিল সে।



আজ তাসফিয়ার বিয়ে। সকাল থেকেই খুব বৃষ্টি হচ্ছে।বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে চলেছে তবুও বৃষ্টি থামবার কোন নাম গন্ধই নেই। খোলা আকাশের নিচে বৃষ্টিতে ভিজছে অনিক। ভাবছে এতোক্ষণে হয়তো তাসফিয়ার বিয়ে হয়ে গিয়েছে।এক নতুন জীবনে পদার্পণ করেছে সে। পুরুনো স্মৃতি গুলির কথা মনে পরে তার। বৃষ্টির জলে ভিজেও চোখ গুলি যেন শান্ত হতে চাচ্ছেনা,নিজের জল ঝড়াবার জন্যে প্রস্তুত হচ্ছে। কিন্তু

 সে ভাবে আজ সে কাদবেনা।আজ তো সুখের দিন।তার ভালবাসার মানুষটির সুখের সংসার শুরু হতে যাচ্ছে।তাই কাঁদবে না সে আজ,কিছুতেই না।



হঠাত্‍ প্যান্টের পকেটে মোবাইলটা বেজে ওঠে তার। অনিচ্ছা সত্তেও ফোনটা ধরে সে।



ফোনের ওপাশ থেকে,

-"ওই হাবলু,তুমি কই??"



ভূত দেখার মতো চমকে উঠে অনিক।

-"তাসফিয়া তুমি?? তোমার না আজকে বিয়ে??"



-"আমি তোমার মতো বেঈমান না হাবলু। যে প্রেম

করবো একজনকে আর বিয়ে করবো আরেকজন কে"।।



-"মানে?? তুমি বিয়ে করো নি??"



-"কেন!!আমার বিয়ে হয়ে গেলে অনেক সুখী হইতা মনে হচ্ছে??"



-"নাহহ...মানে..."।



-"আচ্ছা হইসে।এখন চুপ থাক।আমি রেল স্ট্যাশনে আছি। যদি আমাকে পাওয়ার ইচ্ছা থাকে তাহলে জলদি আসো। নাহলে প্রতি ২০-৩০ মিনিটে তো একটা ট্রেইন আসেই।আত্বহত্যার জন্যে এর চেয়ে উত্তম স্থান আর হতেই পারেনা তা তুমিও ভালো করেই জানো...."।



অনিক ভাবে, "নাহ্,দ্বিতীয়বার আর তার ভালবাসার মানুষটিকে হারাতে পারবেনা সে। হারানোর ব্যাথা সহ্য করার শক্তিটুকু যে আর নেই তার...



আজ বৃষ্টির জলে ভাসিয়ে দিবে তার সব কষ্ট গুলোকে..ফিরবে নতুন দিন,,রৌদ্রজ্জল স্বপ্নময় নতুন দিন.....




((গল্পটি আমার একটি ফ্রেন্ডের জন্যে লিখা।তার মতে আমার সব গল্পই নাকি বিচ্ছেদের.. HAPPY ENDING এর গল্প

নাকি আমি লিখতে পারিনা..কতো বড় অপবাদ..:(..তাই এই গল্পটি তার জন্যেই লিখলাম এবং গল্পের

নায়িকা চরিত্রটির নামটিও তার নামেই দিলাম...))



লিখেছেন-ঈষাম আরমান

FB ID- Shomraat Esham




গল্পটি নেয়া :    https://www.facebook.com/notes/ভালবাসা-এবং-কিছু-আবেগের-গল্প/অসমাপ্ত-ভালবাসা-/212599718820185