Thursday, June 17, 2021

৩০. স্ত্রীর অন্যায় ও পাপাচারে স্বামীর চুপ থাকা নাজায়েজ Marriage education series

 May be an image of text that says 'স্ত্রীর অন্যায় ও পাপাচারে স্বামীর চুপ থাকা নাজায়েজ'

 

স্ত্রীর অন্যায় ও পাপাচারে স্বামীর চুপ থাকা নাজায়েজ
▬▬▬▬◐◯◑▬▬▬▬▬
প্রশ্ন: আমার স্ত্রী আমাকে অনেক বিষয়েই কথা দেয় যে, সে এই কাজ টা করবে না। কিন্তু একটা সময় সেই কাজ টা করে বসে এবং আমার কাছ থেকে বিষয়টা গোপন করার চেষ্টা করে-যদিও আমি তার এই কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে অবগত। তাছাড়া এসব বিষয়ে তাকে কিছু বলতে গেলে উল্টো আমার উপর রাগ করে বসে। এ ক্ষেত্রে আমার করণীয় কি? কিভাবে তাকে দীনের পথে দাওয়াত দেবো? নাকি সব কিছু আল্লাহর উপরে ছেড়ে দেবো?
উত্তর:
আপনার স্ত্রী যদি অন্যায়, অপকর্ম ও পাপাচারে লিপ্ত থাকে তাহলে তা দেখা বা জানার পর আপনার জন্য নীরবতা অবলম্বন করা বা স্ত্রীর উপর দায়-দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে চুপচাপ বসে থাকা জায়েজ নাই। কারণ আল্লাহ তাআলা স্বামীকে স্ত্রীর উপর কর্তৃত্ববান ও দায়িত্বশীল বানিয়েছেন (সূরা নিসা: ৩৪) এবং আদেশ করেছেন, নিজেকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানোর পাশাপাশি স্ত্রী-পরিবারকে জাহান্নামে আগুন থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করা। (সূরা তাহরিম: ৬)
এই দায়িত্ব পালনে অবহেলা করলে স্বামীকে আল্লাহর কাঠগড়ায় জিজ্ঞাসার সম্মুখীন হতে হবে। ইবনে উমর রা. সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন,
أَلاَ كُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ : وَالرَّجُلُ رَاعٍ عَلَى أَهْلِ بَيْتِهِ وَهُوَ مَسْئُولٌ عَنْهُمْ"‏ ‏
“জেনে রাখো, তোমাদের প্রত্যেকেই একেকজন দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। ...একজন পুরুষ তার পরিবার (স্ত্রী-সন্তানদের) উপর দায়িত্বশীল। সে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।" [সহিহ মুসলিম]
যাহোক, আপনি তার অন্যায়-অপকর্ম সম্পর্কে অবগত হলে তাকে তাকে তা বলুন। আন্তরিকতার সাথে উপদেশ দিন ও সংশোধনের চেষ্টা করুন। সেই সাথে তার হেদায়েতের জন্য আল্লাহর নিকট দুআ করুন এবং যে কারণে সে অন্যায়-পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার সুযোগ পায় তা চিহ্নিত করে সে পথ বন্ধ করুন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্যায় দেখলে প্রথমত: তা হাত দ্বারা প্রতিহত করার নির্দেশ দিয়েছেন যদি ক্ষমতা থাকে। [সহিহ মুসলিম]
সুতরাং স্বামী যদি তার স্ত্রীকে অন্যায়-অপকর্ম ও আল্লাহর নাফরমানি করতে দেখে বা জানতে পারে তাহলে তার জন্য আবশ্যক হল, তাকে বাধা দেয়া বা নিষেধ করা। প্রয়োজনে এ ক্ষেত্রে সে ক্ষমতা প্রয়োগেরও অধিকার রাখে। এটি তার আল্লাহ প্রদত্ত অধিকার।
এতে যদি সে তওবা করে, সংশোধিত হয় এবং অন্যায় পথ থেকে ফিরে আসে তাহলে তো আল হামদুলিল্লাহ। অন্যথায় তার উপর সূরা নিসা এর ৩৪ ও ৩৫ নং আয়াত প্রয়োগ করবেন।
মহান আল্লাহ বলেন,
وَاللَّاتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَاهْجُرُوهُنَّ فِي الْمَضَاجِعِ وَاضْرِبُوهُنَّ ۖ فَإِنْ أَطَعْنَكُمْ فَلَا تَبْغُوا عَلَيْهِنَّ سَبِيلًا ۗ إِنَّ اللَّـهَ كَانَ عَلِيًّا كَبِيرًا وَإِنْ خِفْتُمْ شِقَاقَ بَيْنِهِمَا فَابْعَثُوا حَكَمًا مِّنْ أَهْلِهِ وَحَكَمًا مِّنْ أَهْلِهَا إِن يُرِيدَا إِصْلَاحًا يُوَفِّقِ اللَّـهُ بَيْنَهُمَا ۗ إِنَّ اللَّـهَ كَانَ عَلِيمًا خَبِيرًا
“আর যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোন পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সবার উপর শ্রেষ্ঠ। যদি তাদের মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হওয়ার মত পরিস্থিতিরই আশঙ্কা কর, তবে স্বামীর পরিবার থেকে একজন এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন সালিস নিযুক্ত করবে। তারা উভয়ের মীমাংসা চাইলে আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছু অবহিত।” [সূরা নিসা: ৩৪ ও ৩৫]
কিন্তু স্বামী যদি নিজেই অন্যায়-অকর্ম ও নানা গুনাহের কাজে লিপ্ত থাকে তাহলে স্ত্রী-পরিবারকে বাধা দেয়ার সাহস পাবে কোত্থেকে? সুতরাং তার জন্য আবশ্যক হল, নিজে যেমন পাপবাচার ও আল্লাহর নাফরমানি থেকে মুক্ত থাকবে তেমনি তার স্ত্রী-সন্তানদেরকেও মুক্ত রাখবে। পাশাপাশি তাদেরকে ঈমান, তাকওয়া, সৎকর্ম ও পবিত্রতার উপর পরিচালনা করবে। অন্যথায় একদিকে তাদের দাম্পত্য জীবন পাপ-পঙ্গিলতায় কলুষিত হওয়ার এবং আল্লাহর গজবে নিপতিত হয়ে সাংসারিক সুখ-শান্তি বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা আছে, অন্য দিকে আশঙ্কা আছে আখিরাতে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হওয়ার। আল্লাহ ক্ষমা করুন। আমিন।
 
▬▬▬▬◐◯◑▬▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

 

২৯. স্বামী বা মাহরাম পুরুষ ছাড়া মহিলাদের হজ্জ বা উমরা আদায় Marriage education series

 No photo description available.

 

 

স্বামী বা মাহরাম পুরুষ ছাড়া মহিলাদের হজ্জ বা উমরা আদায়
➖➖➖➖➖➖➖
প্রশ্ন: আমি উমরা ও হজ্জ আদায় করতে চাই। আমার মনে বারবার আল্লাহ ঘর দেখার তাড়না হচ্ছে। কিন্তু আমার মাহরাম কেউ রাজি নয়। আমার বাবা, ভাই, স্বামী কেউ যেতে চান না। আমার বোনের স্বামী ও বোন যাবে। বোন জীবিত অবস্থায় কি তার স্বামী আমার মাহরাম হিসেবে গণ্য হবে? আমার জন্য দোয়া করবেন যাতে আমার স্বামী রাজি হয়ে যান।
উত্তর:
দোয়া করি, আল্লাহ তাআলা আপনার বায়তুল্লাহর জিয়ারতের স্বপ্ন পূরণ করুন।
অতঃপর, ইসলামে স্বামী অথবা মাহরাম পুরুষ ব্যতিরেকে মহিলাদের জন্য দূরের সফর নিষেধ করা হয়েছে। সুতরাং স্বামী অথবা মাহরাম পুরুষ ব্যতিরেকে হজ/ওমরা সফরেও যাওয়া জায়েজ নয়।
এ মর্মে হাদিস হল:
♻ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে নারী আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে জেনে রাখ! তার জন্য অনুমতি নেই যে, সে আপন স্বামী অথবা মাহরাম পুরুষ ছাড়া সফর সমান দূরত্বে একাকী ভ্রমণ করবে। (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ১৩৩৮)
♻ কোন নারী হজ্জের উদ্দেশ্যেও মক্কাতেও একাকী যেতে পারে না:
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “কোন নারী নিজ মাহরাম সঙ্গী ছাড়া একাকী সফর করবে না। ”
তখন উপস্থিত এক সাহাবী আরজ করলেন, “আমি তো অমুক জিহাদে যাচ্ছি। আর এ দিকে আমার স্ত্রী হজ্বে যেতে যাচ্ছে। (আমি কি করবো)? জিহাদে বের হবো, নাকি স্ত্রীর সাথে হজ্বের সফরে বের হব।? কারণ আমি ছাড়া তার অন্য কোন মাহরারম সঙ্গী নেই।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
“তুমি জিহাদে না গিয়ে তোমার স্ত্রীর সাথে হজ্বের সফরে যাও।” (সহীহ বুখারী, হাদিস নং- ৩০০৬)
💠 বোনের স্বামী আপনার জন্য মাহরাম নয়। কেননা আপনার বোন বেঁচে থাকা অবস্থায়ও তাকে তালাক দিয়ে আপনাকে বিয়ে করা তার জন্য জায়েয রয়েছে। সুতরাং আপনার বোন বেঁচে থাকা অবস্থায়ও সে আপনার জন্য মাহরাম নয়।
অত:এব আপনার বোন ও তার স্বামীর সাথে আপনার সফর করা বৈধ হবে না। দোয়া করি, আল্লাহ যেন আপনার স্বামীর অন্তরে আল্লাহর ঘর জিয়ারতের আগ্রহ সৃষ্টি করে দেন। আমিন।
▪▪▪▪▪▪▪▪
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব
FB//AbdullaahilHadi

 

২৮. প্রসূতি নারী কত দিন নাপাক থাকে? এ সময় কি স্বামীর সাথে এক বিছানায় শোয়া যাবে? Marriage education series

 May be an image of text that says 'প্রসূতি নারী কত দিন নাপাক থাকে? এ সময় কি স্বামীর সাথে এক বিছানায় শোয়া যাবে? আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল'

 

প্রসূতি নারী কত দিন নাপাক থাকে? এ সময় কি স্বামীর সাথে এক বিছানায় শোয়া যাবে?
▬▬▬◆◯◆▬▬▬
প্রশ্ন: সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পরে একজন প্রসূতি নারী কত দিন পর্যন্ত নাপাক থাকে? এ সময় সে যদি তার স্বামীর সাথে এক বিছানায় শোয় তাহলে স্বামীও কি নাপাক হবে?
উত্তর:
❖ ১. সন্তান জন্মের পরে প্রসূতি মহিলাদের নেফাসের মেয়াদ সর্বোচ্চ ৪০ দিন। এই সময় একজন মহিলা নাপাক অবস্থায় থাকে। উম্মে সালামা রা. বর্ণিত হাদিসে এসেছে:
كانتِ النُّفساءُ على عهدِ رسولِ اللَّهِ صلَّى اللَّهُ عليهِ وسلَّمَ تقعدُ بعدَ نفاسِها أربعينَ يومًا أو أربعينَ ليلةً
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে নেফাস তথা প্রসূতি নারীরা চল্লিশ দিন বিরতি নিত”। (সহিহ আবু দাউদ, হা/৩১১-আলবানি)
❖ ২. এই নাপাক অবস্থায় তার জন্য, সালাত, সিয়াম, কাবা ঘরের তওয়াফ, স্বামী সহবাস করা ইত্যাদি বৈধ নয়।
❖ ৩. এ অবস্থায় স্বামী সহবাস ছাড়া স্বামী-স্ত্রী পাশাপাশি শোয়া, একে অপরকে স্পর্শ করা, আদর-সোহাগ ও আনন্দ-বিনোদন করা সবাই জায়েজ। এতে স্বামী নাপাক হবে না। এ সময় তার সাংসারিক সকল কাজ করাই বৈধ। প্রসূতি মহিলা রান্নাবান্না বা বাড়ির কোন কাজ করতে পারবে না...এটা কুসংস্কার। ইসলামে কুসংস্কারের স্থান নাই।
❖ ৪. এই সময় ছুটে যাওয়া নামাজগুলো কাজা করার প্রয়োজন নেই তবে ফরজ রোজা গুলো পরবর্তীতে স্বাভাবিক অবস্থায় কাজা করে নিতে হবে।
হাদিসে এসেছে:
كانت المرأةُ من نساءِ النبيِّ تَقعُدُ في النِّفاسِ أربعين ليلةً لا يَأمُرُها النبيُّ بقضاءِ صلاةِ النِّفاسِ
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদের কারো নিফাস হলে চল্লিশ দিন বিরতি নিতেন। তিনি তাকে নিফাস অবস্থার সালাত কাজা করার নির্দেশ দিতেন না”। (ইরওয়াউল গালিল, হা ২০১-হাসান)
❖ ৫. ৪০ দিনের আগে যখনই রক্ত বন্ধ হয়ে হবে তখনই গোসল করে পবিত্রতা অর্জন করতে হবে এবং যথারীতি নামায, রোযা ইত্যাদি শুরু করতে হবে।
❖ ৬. ৪০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও যদি স্রাব চালু থাকে তাহলে তা রোগ হিসেবে গণ্য হবে। এ সময় সে নিম্নাংশে একটা কাপড় বেঁধে বা আন্ডার ওয়্যার পরিধান করে নিবে- যেন রক্তস্রাব পা দিয়ে নিচে গড়িয়ে না পড়ে এবং প্রত্যেক ওয়াক্তে আলাদাভাবে করে ওযু করে সালাত আদায় করবে। এক ওয়াক্তের ওযু দ্বারা একাধিক ওয়াক্তের সালাত আদায় করবে না।
আল্লাহু আলাম।
 
▬▬▬◆◯◆▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

 

২৭. ইসলামের দৃষ্টিতে অন্ত:স্বত্বা স্ত্রীর সাথে সহবাস এবং তার খাওয়া-দাওয়া ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয় Marriage education series

 No photo description available.

 

ইসলামের দৃষ্টিতে অন্ত:স্বত্বা স্ত্রীর সাথে সহবাস এবং তার খাওয়া-দাওয়া ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়
▰▰▰▰▰◄✪►▰▰▰▰▰
প্রশ্ন: বর্তমানে ডাক্তাররা গর্ভবতী নারীদের উদ্দেশ্যে বলে থাকে যে, গর্ভ ধারণের ১ম তিন মাস এবং শেষ তিন মাস স্বামী সহবাস করা ঠিক নয়। এ সময় বাম কাত হয়ে শুলে গর্ভস্থ সন্তান ভালো থাকে, গর্ভাশয়ে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ হয়। এ ছাড়াও এ সময় দূরে সফর করা এবং ভারি কাজ করা উচিৎ নয়। তাছাড়া মান সম্মত পুষ্টিকর খাবার খেলে প্রসূতি মা ও গর্ভস্থ সন্তান ভালো থাকে ইত্যাদি। আমার প্রশ্ন হল, ইসলাম কি এ সকল বিধিবিধান সমর্থন করে? গর্ভবতী নারীদের কি এ সকল নিয়ম-কানুন মেনে চলা উচিৎ?
উত্তর:
বৈষয়িক ও স্বাস্থ্যগত বিষয়গুলো মানুষের বাস্তব অভিজ্ঞতা, বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণার ওপরে নির্ভরশীল। সুতরাং বৈজ্ঞানিক গবেষণা, ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে সকল আচরণ গর্ভবতী নারীর জন্য ক্ষতিকারক এবং যে সকল কার্যক্রম তাদের জন্য উপকারী বলে প্রমাণিত হয়েছে সেগুলো অনুসরণ করতে ইসলাম বাধা দেয় না। ইসলাম বৈষয়িক ক্ষেত্রে সব সময় উপকারী ও কল্যাণকর বিষয়কে সমর্থন করে-যদি না তাতে শরিয়া বিরোধী কোনো কিছু থাকে।
🌀 গর্ভকালীন স্ত্রী সহবাস করা:
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষ্য হল, “যদি গর্ভকালীন অবস্থা স্বাভাবিক ভাবে চলমান থাকে তাহলে সন্তান গর্ভে থাকা অবস্থায় প্রসব বেদনা শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত সহবাস করা যায়। সহবাসের সময় স্বাভাবিক নড়াচড়া গর্ভের শিশুর কোন ক্ষতি করে না। শিশু তলপেট এবং জরায়ুর শক্ত পেশী দ্বারা সুরক্ষিত থাকে। জরায়ুর মুখ মিউকাস প্লাগ দ্বারা সীল করা থাকে। সহবাসের সময় পুরুষেরে গোপনাঙ্গ গর্ভের শিশু পর্যন্ত পৌঁছায় না। তাই গর্ভে শিশুর ক্ষতির আশঙ্কা নেই।”
আর ইসলামী শরিয়ায় অনুযায়ীও অন্ত:সত্তা নারীর শারীরিক কোন সমস্যা না থাকলে সন্তান গর্ভধারণের প্রথম তিন মাস, শেষ তিন মাস বা এর মধ্যবর্তী সময়ে স্বামী-স্ত্রীর মিলনে সমস্যা নেই। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সর্তকতা অবলম্বন করা নিঃসন্দেহে উত্তম। এ ব্যাপারে হাদিস বর্ণিত হয়েছে:
عَنْ جُدَامَةَ بِنْتِ وَهْبٍ الأَسَدِيَّةِ أَنَّهَا سَمِعَتْ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ "‏ لَقَدْ هَمَمْتُ أَنْ أَنْهَى عَنِ الْغِيلَةِ حَتَّى ذَكَرْتُ أَنَّ الرُّومَ وَفَارِسَ يَصْنَعُونَ ذَلِكَ فَلاَ يَضُرُّ أَوْلاَدَهُمْ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ مُسْلِمٌ وَأَمَّا خَلَفٌ فَقَالَ عَنْ جُذَامَةَ الأَسَدِيَّةِ ‏.‏ وَالصَّحِيحُ مَا قَالَهُ يَحْيَى بِالدَّالِ ‏.
জুদামাহ্ বিনতে ওয়াহব আসাদিয়্যাহ্ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন, “আমি গীলা তথা স্তন্য দায়িনী অথবা অন্ত:সত্তা স্ত্রী সঙ্গম নিষিদ্ধ ঘোষণা করার ইচ্ছে করলাম। এরপর আমার নিকট আলোচনা করা হল যে, রোম ও পারস্যের লোকরা এ সময় সহবাস করে কিন্তু ‌এতে তাদের গর্ভস্থ সন্তানের কোন ক্ষতি হয় না।”
(সহিহ মুসলিম, অধ্যায়: বিবাহ ‘গীলাহ্’ অর্থাৎ স্তন্য দায়িনী স্ত্রীর সাথে সঙ্গমের বৈধতা এবং ‘আয্ল মাকরূহ হওয়া প্রসঙ্গে, হা/৩৪৫৬)
অর্থাৎ তৎকালীন রোম ও পারস্য দেশে সন্তান গর্ভে থাকা অবস্থায় বা সন্তানকে দুধ পান করানোর সময় স্ত্রী সহবাসের বিষয়টি প্রচলিত ছিলো। কিন্তু এতে তাদের কোন ক্ষতি হয় নি - রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম তা জানতে পেরে এই অবস্থায় স্বামী-স্ত্রীর সহবাস করাকে নিষেধ করেন নি।
🌀 গর্ভবতী মহিলার স্বাস্থ্য সম্মত ও পুষ্টিকর খাবার:
গর্ভবতী নারীর জন্য অবশ্যই স্বাস্থ্য সম্মত ও পুষ্টিকর খাদ্যের প্রয়োজন। কেননা, এতে মা ও ভ্রূণের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে বলা হয়েছ: “খাদ্য ঘাটতিতে আক্রান্ত গর্ভবতী মায়ের সন্তান হয় ওজনে কম ও লম্বায় ছোট। বহু ক্ষেত্রে গর্ভেই সন্তান মরে যায়, জন্মের কিছু সময় পর সন্তান মৃত্যুমুখে পতিত হয়, গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ে, সময় হওয়ার আগেই সন্তানের জন্ম হয়ে যায়, ফলে শিশু থাকে অপরিণত।”
এ কারণে ডাক্তার ও পুষ্টিবিদরা গর্ভবতী মায়েদের শরীরের যত্ন নিতে এবং পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যপ্রদ খাবার গ্রহণের সব সময় পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
🌀 গর্ভাবস্থায় দীর্ঘ সফর:
গর্ভ অবস্থায় দীর্ঘ সফর ক্ষতিকারক হতে পারে। তাই যথাসম্ভব এ থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে ডাক্তারগণ পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে বিশেষ প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু নিয়ম-কানুন মেনে আরামদায়ক সফর করা যেতে পারে।
🌀 গর্ভাবস্থায় পরিশ্রম ও ভারী কাজ করা:
গর্ভাবস্থায় একজন মা কতোটা পরিশ্রম করবেন তা সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়৷ সাধারণভাবে বলা যায়, মা গর্ভাবস্থায় তার স্বাভাবিক সংসারের সব কাজই করবেন৷ তবে প্রথম তিন মাস এবং শেষের দু-এক মাস খুব ভারী বা পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো৷ যেমন- কাপড় কঁাচা, ভারী জিনিস তোলা, পানি আনা, ধান ভানা ইত্যাদি না করা৷ গর্ভাবস্থায় সিঁড়িতে ওঠা-নামার সময় যথেষ্ট সতর্ক থাকা উচিত৷
🌀 অন্ত:স্বত্বা নারীর বাম দিকে শোয়ার বিষয়টি যদি বাস্তব অভিজ্ঞতা ও ডাক্তারি নির্দেশনা মোতাবেক তার জন্য উপকারী হয়ে থাকে তাহলে সে ভাবে শুতে কোন সমস্যা নেই। আল্লাহু আলম
▬▬▬💠🌀💠 ▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
fb/AbdullaahilHadi
লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব।

 

২৬. নির্জনে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে পর্দা কতটুকু? Marriage education series

 No photo description available.

 

নির্জনে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে পর্দা কতটুকু?
▬▬▬◄❖►▬▬▬
প্রশ্ন: যখন স্বামী-স্ত্রী নির্জনে সময় কাটায় তখন তাদের মাঝে কতটা পর্দা রক্ষা করা জরুরি? (একান্ত ঘনিষ্ঠ সময় ছাড়া বাকি সময়গুলোতে)। কেননা আমাদের আশে পাশে সর্বদা জিন ও ফেরেশতাগণ ঘুরা ফেরা করে।
উত্তর:
স্বামী-স্ত্রীর মাঝে কোনও পর্দা নেই। আল্লাহ তাআলা স্বামী-স্ত্রীকে পরস্পরের জন্য 'পোশাক' বলে অভিহিত করেছেন এবং একে অপরের জন্য সম্পূর্ণ হালাল করেছেন। সুতরাং তারা নির্জনে যেভাবে খুশি একে অপরের সামনে থাকতে পারে এবং আনন্দ-বিনোদন করতে পারে।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
 
هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ
 
"তারা (স্ত্রীরা) তোমাদের জন্য পোশাক এবং তোমরা তাদের জন্য পোশাক।" (সূরা বাকারা: ১৮৬)
 
❖ তাফসিরে কুরতুবিতে এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে:
"পোশাক মূলত: কাপড়। কিন্তু স্বামী-স্ত্রী একে অপরের জন্য পোশাক বলা হয়েছে এ জন্য যে, দেহের সাথে দেহের সংযোগ ঘটে, একে অপরের সাথে মিলিত হয় এবং পোশাকের মত একে অপরের সঙ্গে থাকে।" (সূরা বাকারার ১৮৬ নং আয়াতের ব্যাখ্যা, তাফসিরে কুরতুবী)
❖ এ ছাড়াও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
 
ﻋَﻦْ ﺑَﻬْﺰِ ﺑْﻦِ ﺣَﻜِﻴﻢٍ ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻴﻪِ ﻋَﻦْ ﺟَﺪِّﻩِ ﻗَﺎﻝَ ﻗُﻠْﺖُ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﻋَﻮْﺭَﺍﺗُﻨَﺎ ﻣَﺎ ﻧَﺄْﺗِﻰ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﻭَﻣَﺎ ﻧَﺬَﺭُ ﻗَﺎﻝَ ﺍﺣْﻔَﻆْ ﻋَﻮْﺭَﺗَﻚَ ﺇِﻻَّ ﻣِﻦْ ﺯَﻭْﺟَﺘِﻚَ ﺃَﻭْ ﻣَﺎ ﻣَﻠَﻜَﺖْ ﻳَﻤِﻴﻨُﻚَ ﻗَﺎﻝَ ﻗُﻠْﺖُ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺇِﺫَﺍ ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟْﻘَﻮْﻡُ ﺑَﻌْﻀُﻬُﻢْ ﻓِﻰ ﺑَﻌْﺾٍ ﻗَﺎﻝَ ﺇِﻥِ ﺍﺳْﺘَﻄَﻌْﺖَ ﺃَﻥْ ﻻَ ﻳَﺮَﻳَﻨَّﻬَﺎ ﺃَﺣَﺪٌ ﻓَﻼَ ﻳَﺮَﻳَﻨَّﻬَﺎ ﻗَﺎﻝَ ﻗُﻠْﺖُ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺇِﺫَﺍ ﻛَﺎﻥَ ﺃَﺣَﺪُﻧَﺎ ﺧَﺎﻟِﻴًﺎ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺃَﺣَﻖُّ ﺃَﻥْ ﻳُﺴْﺘَﺤْﻴَﺎ ﻣِﻨْﻪُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ .
 
বাহয বিন হাকিম তার পিতা হ’তে তিনি তার দাদা হ’তে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আমাদের আবরণীয় অঙ্গসমূহ কার সামনে আবৃত রাখব এবং কার সামনে অনাবৃত করতে পারি?
তিনি বললেন: "তোমার স্ত্রী ও দাসী (*) ব্যতীত সকলের সামনে তা আবৃত রাখ।"
কেউ যদি বাড়িতে প্রবেশের সময় সালাম দেয়, প্রবেশের দুআ পাঠ করে, সকাল-সন্ধ্যার তাসবীহ ও জিকিরগুলো পড়ে, ঘরে সূরা বাকারা তিলাওয়াত করে এবং নফল সালাত আদায় করে তাহলে জিন-শয়তান বাড়িতে প্রবেশ করতে পারবে না এবং কোনো ক্ষতিও করতে পারবে না ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহু আলাম।
--------------------------
ফুটনোট:
(*) উল্লেখিত হাদিসে 'দাসী' বলতে কাকে বুঝানো হয়েছে?
উত্তর:
ইসলামে 'দাসী' বলতে বুঝানো হয়, মুসলিম ও কাফেরদের মাঝে সংঘটিত যুদ্ধে বিজয়ী মুসলিমদের হাতে যুদ্ধবন্দী কাফের নারীগণ।
মুসলিম সেনাপতি সে সকল যুদ্ধবন্দি নারীদেরকে যোদ্ধাদের মধ্যে বণ্টন করবেন। অত:পর তারা তাদের বাসস্থান ও ভরন-পোষণের ব্যবস্থা করবে এবং তাদের এক হায়েয অতিবাহিত হওয়ার পর তাদের সাথে সহবাস করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে বিয়ের প্রয়োজন নাই।
ক্রয় করার মাধ্যমেও মালিক দাসীর মালিক হওয়া জায়েয আছে।
আল্লাহ তাআলা সফলকাম মুমিনের বৈশিষ্ট বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন:
 
وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ إِلَّا عَلَىٰ أَزْوَاجِهِمْ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُومِينَ
 
"যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে। তবে তাদের স্ত্রী ও মালিকানাভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্রে সংযত না রাখলে তারা তিরস্কৃত হবে না।" সূরা মুমিনূন: ৫ ও ৬)
উল্লেখ্য যে, এ সকল দাসীরা স্ত্রী মর্যাদা না পেলেও তাদের প্রতি করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে ইসলামে চমৎকার নির্দেশনা রয়েছে।
কুরআন ও হাদিসে দাস-দাসী মুক্তির ব্যাপারে যথেষ্ট উৎসাহিত করা হয়েছে। এমনকি ইসলামের বিভিন্ন বিধি-বিধানের কাফফারা হিসেবে (যেমন: মানত ও কসম ভঙ্গ, স্ত্রীর সহবাসের মাধ্যমে রমজান মাসে রোজা ভঙ্গ ইত্যাদি ক্ষেত্রে) দাস-দাসী মুক্তির বিষয়টিকে জুড়ে দেওয়া হয়েছে যেন তাদের মুক্তির পথ সুগম হয়।
বর্তমান যুগে দাস-দাসীর অস্তিত্ব নেই।
 
▬▬▬◄❖►▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
জুবাইল, সৌদি আরব
fb id: AbdullaahilHadi

 

২৫. স্বামী-স্ত্রী এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরকে নিয়ে জামাআতে সালাত আদায় করার পদ্ধতি Marriage education series

 No photo description available.

 

 

স্বামী-স্ত্রী এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরকে নিয়ে জামাআতে সালাত আদায় করার পদ্ধতি
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
প্রশ্ন: কনো ব্যক্তির কারণ বশত: জামাআত ছুটে গেলে বাড়িতে স্বামী-স্ত্রী দুজনে জামাআতে সালাত আদায় করতে পারে কি?
উত্তর:
পুরুষের জন্য মসজিদে গিয়ে জামাআতের সাথে সালাত আদায় করা সুন্নতে মুআক্কাদা। (অনেক আলেমের মতে ওয়াজিব)। তাই কোন কারণে ১ম জামাআত ছুটে গেলে মসজিদে গিয়ে ২য় জামাআত, ৩য় জামাআতে...সালাত আদায় করবে। অন্যথায় একাকী সালাত আদায় করবে।
কিন্তু ঝড়-বৃষ্টি, রাস্তার নিরাপত্তা হীনতা ইত্যাদি কারণে যদি বাড়িতে সালাত আদায় করতে হয় তাহলে স্বামী-স্ত্রী এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরকে নিয়ে জামাআতে সালাত আদায় করবে। এ ক্ষেত্রে স্বামী ইমাম হিসেবে সামনের কাতারে থাকবে, ছেলে সন্তানরা তার পরের কাতারে আর স্ত্রী ও মেয়েরা শেষ কাতারে দাঁড়াবে।
কেবল স্বামী-স্ত্রী মিলে জামাআত করলে স্বামী সামনে আর স্ত্রী তার পেছনে দাঁড়াবে। এটাই সঠিক পদ্ধতি।
আল্লাহু আলাম
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানী
fb/AbdullaahilHad

২৪. প্রশ্ন: বাসর রাতে কি যৌনমিলন আবশ্যক? যদি তাই হয় তাহলে একজন অপরিচিতার সাথে তা কীভাবে সম্ভব? Marriage education series

 No photo description available.

 

 

প্রশ্ন: বাসর রাতে কি যৌনমিলন আবশ্যক? যদি তাই হয় তাহলে একজন অপরিচিতার সাথে তা কীভাবে সম্ভব?
▬▬▬◖❤❤◗▬▬▬
উত্তর:
বাসর রাতে যৌনমিলন করতেই হবে ইসলামে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। যদি স্বামী-স্ত্রী উভয়ে সম্মত ও আগ্রহী হয় তাহলে সহবাস করবে, অন্যথায় বিরত থাকবে।
 
❤ বাসর রাতে করণীয়:
 
বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী একসাথে আগে পিছে দাঁড়িয়ে দু রাকআত নফল সালাত আদায় করবে, স্বামী নব বধূর কপালে হাত রেখে দুআ পাঠ করবে, তাকে দুধ বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খেতে দিবে। তাপর পরস্পরে কথাবার্তা বলবে, পরিচিত হবে, স্ত্রীর মন থেকে ভয়ভীতি দূর করে একটা আন্তরিকতা ও ভালবাসা পূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করবে।
 
অত:পর যদি তারা উভয়ের মধ্যে যৌন মিলনে আগ্রহ সৃষ্টি হয় তাহলে দুআ পড়ে সহবাসে লিপ্ত হবে।
--------------------------------------
 
❤ বাসর রাতে স্বামী স্ত্রীর কপালে হাত রেখে এই দোয়াটি পাঠ করা সুন্নত:
 
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا، وَخَيْرَ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا، وَشَرِّ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ
 
(আল্লা-হুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা ওয়া খাইরা মা জাবালতাহা ‘আলাইহি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা জাবালতাহা ‘আলাইহি)
 
“হে আল্লাহ, আমি এর যত কল্যাণ রয়েছে এবং যত কল্যাণ তার স্বভাবে আপনি দিয়েছেন তা চাই। আর এর যত অকল্যাণ রয়েছে এবং যত অকল্যাণ ওর স্বভাব-চরিত্রে আপনি রেখেছেন তা থেকে আপনার আশ্রয় চাই।”
 
(আবু দাঊদ-২/২৪৮, নং ২১৬০; ইবন মাজাহ্‌ ১/৬১৭, নং ১৯১৮। আরও দেখুন, সহীহ ইবন মাজাহ, ১/৩২৪)
❤ সহবাসের পূর্বে স্বামী এবং স্ত্রী উভয়ের জন্য নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়া সুন্নত :
 
” ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ، ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺟَﻨِّﺒْﻨَﺎ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥَ ، ﻭَﺟَﻨِّﺐْ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥَ ﻣَﺎ ﺭَﺯَﻗْﺘَﻨَﺎ ”
 
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহ্‌। আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়তান ও জান্নিবিশ শায়তানা মা রাযাক্বতানা।
 
অর্থ: আল্লাহর নামে শুরু করছি। হে আল্লাহ, আমাদেরকে শয়তান হতে বাঁচান এবং আমাদেরকে যদি কোন সন্তান দেন তাকেও শয়তান হতে বাঁচান। [বুখারী হা/ ৬৩৮৮ ও মুসলিম হা/ ১৪৩৪)]
 
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
FB ID: AbdullaahilHadi
জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

বাসর রাতে জামাআতের সাথে নবদম্পতীর দু রাকাআত নফল সালাত আদায় করা মুস্তাহাব Marriage education series

 No photo description available.

 

বাসর রাতে জামাআতের সাথে নবদম্পতীর দু রাকাআত নফল সালাত আদায় করা মুস্তাহাব
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
প্রশ্ন: বাসর রাতে নতুন বর ও কনের দু রাকাআত নামাযের বিধান কি? এ সংক্রান্ত হাদীসগুলো কি সহীহ?

উত্তর:


বাসর রাতে নব দম্পতীর দু রাকাআত নামায পড়ার ব্যাপারে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে কোন হাদীস পাওয়া যায় না। তবে একাধিক সাহাবীর আমল পাওয়া যায়। তাই অনেক আলেমগণ বলেছেন, এই দু রাকাআত নামায পড়া মুস্তাহাব।


এ ব্যাপারে সাহাবীদের আমল সম্পর্কে সহীহ সনদে দুটি হাদীস উল্লেখ করা হল: 


🌀 ১. আবু উসাইদ . এর গোলাম আবু সাঈদ হতে বর্ণিত। তনি বলেন, আমি গোলাম থাকা অবস্থায় বিয়ে করলাম এবং কয়েকজন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবীকে ডাকলাম। তাদের মধ্যে ছিলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ, আবু যর এবং হুযায়ফা রা.।
তিনি বলেন, আমি তাদেরকে বললাম, আমাকে (আমার করণীয় সম্পর্কে) শিক্ষা দিন। তারা বললেন,
إذا أدخل عليك أهلك فصل عليك ركعتين ، ثم سل الله تعالى من خير ما دخل عليك ، وتعوذ به من شره ، ثم شأنك وشأن أهلك
“যখন তোমার ঘরে তোমার স্ত্রীকে প্রবেশ করানো হবে তখন তুমি দু রাকাআত সালাত আদায় কর এবং তোমার ঘরে যে এসেছে আল্লাহর নিকট তার কল্যাণ প্রার্থনা কর এবং অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা কর। তারপর তুমি এবং তোমার স্ত্রীর যা করণীয় কর।”(মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা ৩/৪০১ এবং মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক ৬/১৯১, শাইখ আলবানী রহ. বলেন, আবু সাঈদ পর্যন্ত এ হাদীসের সনদ সহীহ)

🌀 ২) শাকীক রহ. তবে বর্ণিত, এক লোক আব্দুল্লাহ (অর্থাৎ ইবনে মাসঊদ) এর নিকট আগমন করলেন (তিনি আবু জারীর নামে পরিচিত)। তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা কে বললেন, আমি এক যুবতী মেয়ে বিয়ে করেছি। কিন্তু আমার আশংকা হচ্ছে, সে আমাকে অপছন্দ করবে (বা আমার প্রতি রাগ-গোস্বা করবে)।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ বললেন, 


ن الإلف من الله ، والفرك من الشيطان ، يريد أن يكره إليكم ما أحل الله لكم ، فإذا أتتك فمرها أن تصلي وراءك ركعتين

ভালবাসা ও সুসম্পর্ক আল্লাহর পক্ষ থেকে হয় আর ঘৃণা বা রাগ-গোস্বা হয় শয়তানের পক্ষ থেকে। কারণ সে আল্লাহর হালাল করা বিষয়ে তোমাদের মাঝে ঘৃণা সৃষ্টি করতে চায়। সুতরাং তোমার স্ত্রী তোমার কাছে আসলে তাকে আদেশ করবে, সে যেন তোমার পেছনে দু রাকাআত সালাত আদায় করে।” ( মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা ৩/৪০২ এবং মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক ৬/১৯১, ত্বাবারানী কাবীর ৯/২০৪ শাইখ আলবানী রহ. বলেন, হাদীসের সনদ সহীহ- আদাবুয যাফাফ পৃষ্ঠা ২৪)


উক্ত হাদীসদ্বয় দ্বারা অনেক আলেম, বাসর রাতে নতুন স্বামী-স্ত্রীর কর্তৃক দুরাকাআত নামায আদায় করাকে মুস্তাহাব বলেছেন।

💠 নামায পড়ার নিয়ম হল, স্বামী আগে দাঁড়াবে আর স্ত্রী তার পেছনে দাঁড়াবে। তারপর জামাআতের সাথে দু রাকাআত নফল সালাত আদায় করবে। তারপর তারা উভয়ে তাদের নতুন জীবনের কল্যাণ চেয়ে এবং অকল্যাণ থেকে আশ্রয় চেয়ে মহান আল্লাহর নিকট দুআ করবে।

💠 বাসর রাতে এ দু রাকআত নামাযে কিরাআত কি উঁচু স্বরে পড়বে না কি নিচু স্বরে পড়বে?

উত্তর:
যদি রাতের বেলায় উক্ত নামায পড়া হয় তাহলে একটু উঁচু স্বরে আর দিনের বেলায় পড়লে নিম্ন স্বরে পড়বে। যে কোন নফলের ক্ষেত্রে এটিই সাধারণ সুন্নত। সুতরাং এ বিধান এখানেও প্রযোজ্য হবে ইনশাআল্লাহ।

আল্লাহু আলাম।
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব

 

২৩. বাসর রাতের বিশেষ নামায ও দুআ Marriage education series

 No photo description available.

 

 

বাসর রাতের বিশেষ নামায ও দুআ
▬▬▬▬💕💕💕▬▬▬▬
প্রশ্ন:
▪ ক. বাসর রাতে স্বামী-স্ত্রী দু রাকাত নামায পড়ার পর বরকতের জন্য যে দোয়াটি করতে হয় সেটি কখন পড়বে? নামাযে থাকা কালীন সময়ে নাকি সালাম ফিরানোর পর?
যদি সালাম ফিরানোর পরে পড়তে হয় তাহলে কি তারা দু জন একসাথে হাত উঠিয়ে সম্মিলিতভাবে পাঠ করবে না কি দুজনেই নিজে নিজে চুপে চুপে পড়বে?
▪ খ. প্রশ্ন: বাসর রাতে এ দু রাকআত নামাযের কিরাআত কি আওয়াজ করে পড়বে না কি নিম্নস্বরে পড়বে?
▪ গ. সহবাসের পূর্বে যে দুআটি পড়তে হয় সেটা কি স্বামী-স্ত্রী দু'জনকেই পড়তে হবে নাকি শুধু স্বামীকে পড়লেই যথেষ্ট হবে?
----------------------------
উত্তর
 
▪ ক. স্বামী স্ত্রী বাসর রাতে দু'রাকাত নফল নামাজ পড়ার ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কোন হাদিস পাওয়া না গেলেও এ ব্যাপারে সাহাবী এবং পূর্বসূরীদের আমল রয়েছে। 
 
( এ ব্যাপারে দলীল-প্রমাণ সহকারে আমাদের আলাদা একটি পোস্ট রয়েছে।)
সুতরাং কেউ যদি তা পড়ে তাহলে তাতে আপত্তি নেই ইনশাআল্লাহ। অনেক আলেম এ দু রাকআতকে মুস্তাহাব বলেছেন।
 
❖ বাসর রাতে স্ত্রী-পরিবারের জন্য বরকত ও কল্যাণের দুআ:
 
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, স্ত্রী স্বামীর কাছে গেলে স্বামী দাঁড়িয়ে যাবে এবং স্ত্রী তার পিছনে দাঁড়াবে। অতঃপর তারা একসঙ্গে দুই রাক‘আত সালাত আদায় করবে এবং বলবে:
 
اَللّهُمَّ بَارِكْ لِىْ فِىْ أَهْلِىْ وَبَارِكْ لَهُمْ فِىَّ، اَللّهُمَّ اجْمَعْ بَيْنَنَا مَا جَمَعْتَ بِخَيْرٍ و فَرِّقْ بَيْنَنَا إِذَا فَرَّقْتَ إِلَى خَيْرٍ
 
উচ্চারণ: উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা বা-রিকলী ফী আহলী, ওয়া বা-রিক লাহুম ফিইয়্যা, আল্লাহুম্মাজমা’ বাইনানা মা জামা’তা বিখাইর, ওয়া ফাররিক বাইনানা ইযা ফাররাকতা ইলা খাইর।
 
অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য আমার পরিবারে বরকত দিন এবং আমার ভিতরেও বরকত দিন পরিবারের জন্য। হে আল্লাহ! আপনি তাদের থেকে আমাকে রিযিক দিন আর আমার থেকে তাদেরকেও রিযিক দিন। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের যতদিন একত্রে রাখেন কল্যাণেই একত্রে রাখুন। আর আমাদের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দিলে কল্যাণের পথেই বিচ্ছেদ ঘটান।” (তাবারানী, মু‘জামুল কাবীর, হা/৮৯০০; মাজমাউয যাওয়ায়েদ হা/৭৫৪৭; সিলসিলাতুল আছার আছ-ছহীহাহ হা/৩৬১; আদাবুয যিফাফ, পৃঃ ২৪।)
 
হাদীসের ভাষা থেকে বুঝা যায়, বাসর রাতে স্বামী-স্ত্রী দু জনে দু রাকআত নফল সালাত আদায় করার পর স্বামী এ দুআটি পাঠ করবে। 
 
-----------------------
❖ বাসর রাতে স্ত্রীর কপালে হাত রেখে নিম্নোক্ত দোয়াটি পাঠ করা সুন্নত:
 
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا وَخَيْرَ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَمِنْ شَرِّ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ
 
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা ওয়া খাইরা মা জাবালতাহা ‘আলাইহি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা জাবালতাহা ‘আলাইহি।
 
অর্থ: "হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে এর মধ্যকার কল্যাণ এবং এর মাধ্যমে কল্যাণ চাই এবং তার মধ্যে নিহিত অকল্যাণ ও তার মাধ্যমে অকল্যাণ থেকে আপনার নিকট আশ্রয় চাই।” (সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: বিবাহ, অনুচ্ছেদ: বিবাহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিধান, হা/ ২১৬০, সনদ: হাসান)
 
উপরোক্ত দুটি দুআ ছাড়া বাসর রাতে স্বামী-স্ত্রীর জন্য আলাদা কোন দুআ হাদীসে বর্ণিত হয় নি। তবে তারা নিজেরা নিজের দাম্পত্য জীবনের কল্যাণ ও বরকত কামনা মহান রবের দরবারে দুআ করতে পারে। দু জনে এক সাথে হাত উঠিয়েও করতে পারে আবার নিজে নিজে আলাদাভাবেও করতে পারে ইনশাআল্লাহ। তবে এটি সুন্নাহ-এমনটি ভাবা যাবে না বরং দুআ করার বিষয়টি যেহেতু উন্মুক্ত সে হিসেবে তারা তাদের প্রয়োজন তুলে ধরে দুআ করতে পারে। আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমীন।
 
▪ খ. যদি রাতের বেলায় উক্ত নামায পড়া হয় তাহলে একটু উঁচু স্বরে আর দিনের বেলায় পড়লে নিম্ন স্বরে পড়বে। সাধারণ যে কোন নফলের ক্ষেত্রে এটিই সাধারণ সুন্নত। সুতরাং এ বিধান এখানেও প্রযোজ্য ইনশাআল্লাহ।
 
--------------------------
 
❖ গ. সহবাসের পূর্বে স্বামী এবং স্ত্রী উভয়ের জন্য নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়া সুন্নত : 
 
” ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ، ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺟَﻨِّﺒْﻨَﺎ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥَ ، ﻭَﺟَﻨِّﺐْ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥَ ﻣَﺎ ﺭَﺯَﻗْﺘَﻨَﺎ ”
 
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহ্‌। আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়তান ও জান্নিবিশ শায়তানা মা রাযাক্বতানা।
 
অর্থ: আল্লাহর নামে শুরু করছি। হে আল্লাহ, আমাদেরকে শয়তান হতে বাঁচান এবং আমাদেরকে যদি কোন সন্তান দেন তাকেও শয়তান হতে বাঁচান। [বুখারী হা/ ৬৩৮৮ ও মুসলিম হা/ ১৪৩৪)]
 
স্বামী যেমন শয়তানের অনিষ্ট থেকে বাঁচতে এবং নবজাতক সন্তানকে বাঁচাতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে অনুরূপভাবে স্ত্রীও তাই করবে।
সুতরাং শয়তান থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এ দোয়াটি পড়ার ক্ষেত্রে ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই ইনশাআল্লাহ।
 
▬▬▬▬💕💕💕▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব
fb/AbdullaahilHadi

 

বাসর রাতে জামাআতের সাথে নবদম্পতীর দু রাকাআত নফল সালাত আদায় করা মুস্তাহাব
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
প্রশ্ন: বাসর রাতে নতুন বর ও কনের দু রাকাআত নামাযের বিধান কি? এ সংক্রান্ত হাদীসগুলো কি সহীহ?

উত্তর:
বাসর রাতে নব দম্পতীর দু রাকাআত নামায পড়ার ব্যাপারে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে কোন হাদীস পাওয়া যায় না। তবে একাধিক সাহাবীর আমল পাওয়া যায়। তাই অনেক আলেমগণ বলেছেন, এই দু রাকাআত নামায পড়া মুস্তাহাব।
এ ব্যাপারে সাহাবীদের আমল সম্পর্কে সহীহ সনদে দুটি হাদীস উল্লেখ করা হল:
🌀 ১. আবু উসাইদ . এর গোলাম আবু সাঈদ হতে বর্ণিত। তনি বলেন, আমি গোলাম থাকা অবস্থায় বিয়ে করলাম এবং কয়েকজন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবীকে ডাকলাম। তাদের মধ্যে ছিলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ, আবু যর এবং হুযায়ফা রা.।
তিনি বলেন, আমি তাদেরকে বললাম, আমাকে (আমার করণীয় সম্পর্কে) শিক্ষা দিন। তারা বললেন,
إذا أدخل عليك أهلك فصل عليك ركعتين ، ثم سل الله تعالى من خير ما دخل عليك ، وتعوذ به من شره ، ثم شأنك وشأن أهلك
“যখন তোমার ঘরে তোমার স্ত্রীকে প্রবেশ করানো হবে তখন তুমি দু রাকাআত সালাত আদায় কর এবং তোমার ঘরে যে এসেছে আল্লাহর নিকট তার কল্যাণ প্রার্থনা কর এবং অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা কর। তারপর তুমি এবং তোমার স্ত্রীর যা করণীয় কর।”(মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা ৩/৪০১ এবং মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক ৬/১৯১, শাইখ আলবানী রহ. বলেন, আবু সাঈদ পর্যন্ত এ হাদীসের সনদ সহীহ)

🌀 ২) শাকীক রহ. তবে বর্ণিত, এক লোক আব্দুল্লাহ (অর্থাৎ ইবনে মাসঊদ) এর নিকট আগমন করলেন (তিনি আবু জারীর নামে পরিচিত)। তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা কে বললেন, আমি এক যুবতী মেয়ে বিয়ে করেছি। কিন্তু আমার আশংকা হচ্ছে, সে আমাকে অপছন্দ করবে (বা আমার প্রতি রাগ-গোস্বা করবে)।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ বললেন,
ن الإلف من الله ، والفرك من الشيطان ، يريد أن يكره إليكم ما أحل الله لكم ، فإذا أتتك فمرها أن تصلي وراءك ركعتين
“ভালবাসা ও সুসম্পর্ক আল্লাহর পক্ষ থেকে হয় আর ঘৃণা বা রাগ-গোস্বা হয় শয়তানের পক্ষ থেকে। কারণ সে আল্লাহর হালাল করা বিষয়ে তোমাদের মাঝে ঘৃণা সৃষ্টি করতে চায়। সুতরাং তোমার স্ত্রী তোমার কাছে আসলে তাকে আদেশ করবে, সে যেন তোমার পেছনে দু রাকাআত সালাত আদায় করে।” ( মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা ৩/৪০২ এবং মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক ৬/১৯১, ত্বাবারানী কাবীর ৯/২০৪ শাইখ আলবানী রহ. বলেন, হাদীসের সনদ সহীহ- আদাবুয যাফাফ পৃষ্ঠা ২৪)
উক্ত হাদীসদ্বয় দ্বারা অনেক আলেম, বাসর রাতে নতুন স্বামী-স্ত্রীর কর্তৃক দুরাকাআত নামায আদায় করাকে মুস্তাহাব বলেছেন।

💠 নামায পড়ার নিয়ম হল, স্বামী আগে দাঁড়াবে আর স্ত্রী তার পেছনে দাঁড়াবে। তারপর জামাআতের সাথে দু রাকাআত নফল সালাত আদায় করবে। তারপর তারা উভয়ে তাদের নতুন জীবনের কল্যাণ চেয়ে এবং অকল্যাণ থেকে আশ্রয় চেয়ে মহান আল্লাহর নিকট দুআ করবে।

💠 বাসর রাতে এ দু রাকআত নামাযে কিরাআত কি উঁচু স্বরে পড়বে না কি নিচু স্বরে পড়বে?

উত্তর:
যদি রাতের বেলায় উক্ত নামায পড়া হয় তাহলে একটু উঁচু স্বরে আর দিনের বেলায় পড়লে নিম্ন স্বরে পড়বে। যে কোন নফলের ক্ষেত্রে এটিই সাধারণ সুন্নত। সুতরাং এ বিধান এখানেও প্রযোজ্য হবে ইনশাআল্লাহ।

আল্লাহু আলাম।
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব