Tuesday, June 22, 2021

৪৭. স্ত্রী সহবাসের পর তৎক্ষণাৎ গোসল এবং কিছু ভুল ধারণা Marriage education series

 May be an image of text that says 'স্ত্রী সহবাসের পর তৎক্ষনাৎ গোসল এবং কিছু ভুল ধারণা আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল'

স্ত্রী সহবাসের পর তৎক্ষণাৎ গোসল এবং কিছু ভুল ধারণা
▬▬▬◖◯◗▬▬▬
 
প্রশ্ন: সহবাস এর পরপরই কি গোসল করতে হবে? যদি ভুল বশত: না করা হয় তাহলে উপায় কি?
উত্তর:
 
নিম্নে প্রশ্নটির উত্তর প্রদান করা হল। পাশাপশি তুলে ধরা হল, সমাজে প্রচলিত সহবাস পরবর্তী কতিপয় কুসংস্কার ও ভুল ধারণা:
 
◉◉ গোসল ফরজ হলে সালাতের পূর্ব পর্যন্ত গোসল বিলম্ব করা জায়েজ আছে:
স্ত্রী সহবাস, স্বপ্নদোষ ইত্যাদির কারণে গোসল ফরজ হলে তৎক্ষণাৎ গোসল করা আবশ্যক নয়। বরং ঘুম, ব্যস্ততা বা প্রয়োজনে বিলম্ব করা জায়েজ আছে। এ মর্মে একাধিক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যেমন:
➧ ১) হাদিসে এসেছে:
 
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّهُ لَقِيَهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فِي طَرِيقٍ مِنْ طُرُقِ الْمَدِينَةِ وَهُوَ جُنُبٌ فَانْسَلَّ فَذَهَبَ فَاغْتَسَلَ فَتَفَقَّدَهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَلَمَّا جَاءَهُ قَالَ ‏"‏ أَيْنَ كُنْتَ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ لَقِيتَنِي وَأَنَا جُنُبٌ فَكَرِهْتُ أَنْ أُجَالِسَكَ حَتَّى أَغْتَسِلَ ‏.‏ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ سُبْحَانَ اللَّهِ إِنَّ الْمُؤْمِنَ لاَ يَنْجُسُ ‏"‏ ‏.‏
 
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি একবার মদিনার কোন এক রাস্তায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সাক্ষাৎ পেলেন। তিনি (আবু হুরায়রা রা.) তখন অপবিত্র অবস্থায় ছিলেন। এই কারণে তিনি আস্তে করে পাশ কেটে চলে গেলেন এবং গোসল করলেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তালাশ করলেন। পরে তিনি এলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন: আবু হুরায়রা, তুমি কোথায় ছিলে?
তিনি বললেন: হে আল্লাহর রাসূল, আপনার সঙ্গে যখন আমার সাক্ষাৎ হয় তখন আমি অপবিত্র অবস্থায় ছিলাম। তাই আমি গোসল না করে আপনার সাথে উঠবস করাকে অপছন্দ করেছি। 
 
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “সুবহানাল্লাহ! মুমিন তো অপবিত্র হয় না।” (সহিহ বুখারী ও মুসলিম। সহীহ মুসলিম, হাদিস নম্বর/৭১০ অধ্যায়ঃ ৩/ হায়েজ)
 
হাদিসের বক্তব্য: “মুমিন তো অপবিত্র হয় না" এর অর্থ হল, মুমিন অভ্যন্তরিণভাবে কখনো নাপাক হয় না। বাহ্যিকভাবে শরীরে নাপাকি লাগলে শরীর নাপাক হয় কিন্তু তার মধ্যে ঈমান থাকায় অভ্যন্তরিণভাবে সে পবিত্র থাকে (জীবিত ও মৃত সর্বাবস্থায়)। পক্ষান্তরে কাফির বাহ্যিকভাবে যদি পরিষ্কারও থাকে তবে ঈমান না থাকার কারণে সে অভ্যন্তরিণভাবে নাপাক।
ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন:
فيه جواز تأخير الاغتسال عن أول وجوبه
“এ হাদিসে গোসল ফরজ হওয়ার পর তা বিলম্ব করার বৈধতা পাওয়া যায়।” (সহিহ বুখারির ব্যাখ্যা গ্রন্থ ফাতহুল বারী)
➧ ২) আরেকটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
عن غضيف بن الحارث، قال: قلت لعائشة: أكان النبي صلى الله عليه وسلم يغتسل قبل أن ينام؟ وينام قبل أن يغتسل؟ قالت: نعم. قلت: الحمد لله الذي جعل في الأمر سعة
গাযীফ ইবনুল হারিস রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমি আয়েশা রা. কে প্রশ্ন করলাম, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি ঘুমের পূর্বে গোসল করতেন অথবা গোসলের পূর্বে ঘুমাতেন?
তিনি বললেন: হ্যাঁ।
আমি বললাম: আল হামদু লিল্লাহ-সকল প্রশংসা আল্লাহর যিনি বিষয়টিতে ছাড় রেখেছেন। (সহিহ আবু দাউদ, হা/২২৬)
➧ ৩) এ ছাড়াও সহিহ সনদে প্রমাণিত হয়েছে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্ত্রী সহবাসের পর শরীর নাপাক অবস্থায় রমাযান মাসে ভোর রাতে সেহরি খেয়েছেন। তারপর ফজরের আজান হলে গোসল করে মসজিদে সালাত আদায়ের জন্য গেছেন। যেমন:
- উম্মুল মোমিনীন আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত,
ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻳﺪﺭﻛﻪ ﺍﻟﻔﺠﺮ ﻓﻲ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻭﻫﻮ ﺟﻨﺐ ﻣﻦ ﻏﻴﺮ ﺣﻠﻢ، ﻓﻴﻐﺘﺴﻞ ﻭﻳﺼﻮﻡ .
“রমজান মাসে স্বপ্নদোষ ব্যতীতই অপবিত্র অবস্থায় (অর্থাৎ স্ত্রী সহবাসের মাধ্যমে নাপাক অবস্থায়) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ফজর হয়ে যেত। অত:পর তিনি গোসল করতেন এবং রোজা রাখতেন।” (সহিহ বুখারি, হা/১৮২৯, মুসলিম, হা/ ১১০৯)।
- স্ত্রী উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালামা রা. বর্ণনা করেন:
ﻛﺎﻥ ﻳﺪﺭﻛﻪ ﺍﻟﻔﺠﺮ ﻭﻫﻮ ﺟﻨﺐ ﻣﻦ ﺃﻫﻠﻪ ﺛﻢ ﻳﻐﺘﺴﻞ ﻭﻳﺼﻮﻡ.
“সহবাসের ফলে নাপাক অবস্থায় রাসুল সাল্লাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর করে ফেলতেন। অত:পর তিনি গোসল করতেন এবং রোজা রাখতেন।” (সহিহ বুখারি, হা/ ১৯২৬)
আর এ কথা ঠিক যে, তিনি ভোর রাতে সেহরি খেতেন এবং তার উম্মতকে সেহরি খেতে উৎসাহিত করেছেন। এখান থেকে বুঝা যায়, তিনি ভোর রাতে নাপাক অবস্থায় (গোসলের পূর্বে) রোজার জন্য সেহরি খেয়েছেন। তারপর ফজর উদিত হলে গোসল করে সালাতে গেছেন।
উল্লেখ্য যে, একটি হাদিসে এসেছে: “যে ঘরে জুনুবি ব্যক্তি (গোসল ফরজ হয়েছে এমন নাপাক ব্যক্তি) এবং কুকুর থাকে সে ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করে না।” এই হাদিসটি মুহাদ্দিসগণের দৃষ্টিতে জইফ বা দুর্বল। তবে যে ঘরে কুকুর আছে সে ঘরে (রহমতের) ফেরেশতা প্রবেশ করে না’ মর্মে অন্য একটি সহিহ হাদিস রয়েছে।
- সালাতের সময় হলে গোসলের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করার পর সালাত আদায় করা আবশ্যক। কেননা সালাতের জন্য পাক-পবিত্রতা অর্জন করা পূর্বশর্ত।
◉◉ স্ত্রী সহবাসের পর গোসল করতে বিলম্ব করলে ওজু করা মুস্তাহাব:
স্ত্রী সহবাসের পর কেউ ইচ্ছে করলে তৎক্ষণাৎ গোসল করে নিতে পারে আবার ইচ্ছে করলে বিলম্বও করতে পারে। বিলম্ব করতে চাইলে অজু করে নেওয়া উত্তম।
➧ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
في الصحيحين أن عمر استفتى رسول الله صلى الله عليه وسلم: أينام أحدنا وهو جنب؟ قال: "نعم، إذا توضأ".
ওমর রা. রাসূল-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট প্রশ্ন করলেন, শরীর নাপাক অবস্থায় কি কেউ ঘুমাতে পারে?
তিনি বললেন: “হ্যাঁ, যদি অজু করে।” (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)
قال ابن عبد البر: ذهب الجمهور إلى أنه ـ أي: الأمر بالوضوء للجنب الذي يريد
النوم - للاستحباب
“ইবনে আব্দুল বার বলেন, জুমহুর তথা অধিকাংশ আলেম এই মত ব্যক্ত করেছেন যে, যে জুনুবি (নাপাক) ব্যক্তি ঘুমাতে চায় তার জন্য ওজু করার নির্দেশ টি মুস্তাহাব পর্যায়ের।”
◉◉ সহবাসের পর গোসল করা সম্পর্কে কতিপয় ভুল ধারণা ও ভিত্তিহীন কথা:
১. সহবাসের সাথে সাথেই গোসল করতে হবে; নয়তো গুনাহ হবে।
২. সহবাস করে গোসলের পূর্বে মাটিতে পা রাখা যাবে না। অন্যথায় মাটি বদ দুআ করবে এবং অভিশাপ দিবে!
৩. সহবাস করার পর গোসলের পূর্বে কোন কিছুতে হাত দেয়া যাবে না। এই অবস্থায় কোন কিছুতে হাত দিলে তা অপবিত্র হয়ে যাবে!
৪. এ অবস্থায় রান্না-বান্না করলে বাড়ি থেকে লক্ষ্মী চলে যাবে। (এটি স্পষ্ট শিরক)।
৫. গোসলের পূর্বে হাতে কিছু নিয়ে দরজা ধরতে হবে।
৬. নাপাক অবস্থায় খাওয়া-দাওয়া করা যাবে না।
৭. এ অবস্থায় রান্না-বান্না করা যাবে না।
৮. ঘর-বাড়ি ঝাড়ু দেয়া যাবে না।
৯. সন্তানকে বুকের দুধ পান করানো যাবে না।
১০. অবস্থায় দুআ-তসবিহ, জিকির-আজকার পাঠ করা যাবে না।
এ সবই কুরআন-সুন্নাহ বর্হিভূত ভুল ধারণা ও বাতিল কথা। ইসলামে এ সব কথার কোন ভিত্তি নাই।
আল্লাহ আমাদেরকে দীনের সঠিক জ্ঞান ও বুঝ দান করুন এবং সর্ব প্রকার বাতিল ও কুসংস্কার থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
আল্লাহু আলাম।
➤ সংযুক্তি:
অনেকে প্রশ্ন করে যে, নাপাক অবস্থায় যদি মারা যায় তাহলে কি গুনাহগার হবে?
উত্তর: যেহেতু সে তার স্ত্রীর সাথে সহবাস বা স্বপ্নদোষ জনিত কারণ, হায়েজ, নেফাস ইত্যাদি শরিয়ত সম্মত কারণে নাপাক হয়েছিল এবং ইসলাম প্রদত্ত সুযোগ থাকার কারণে গোসল করতে বিলম্ব করেছিল সেহেতু গোসলের পূর্বেই যদি মৃত্যুবরণ করেও ইনশাআল্লাহ তাতে তার কোন গুনাহ হবে না।
এক্ষেত্রে দাফনের পূর্বে তাকে যে গোসল দেওয়া হবে সেটি তার নাপাকি এবং দাফন উভয়টির জন্য যথেষ্ট হবে।
হাদীসে বর্ণিত হয়েছে: হানজালা রা. এবং হামজা বিন আব্দুল মোতালিব রা. নাপাক অবস্থায় যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হয়েছিলেন।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬✪◯✪▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব
fb/AbdullaahilHadi।

 

৪৬. নিকটাত্মীয় বা স্বামীর মৃত্যুতে মহিলাদের শোক পালন করার বিধিবিধান: Marriage education series

 No photo description available.

নিকটাত্মীয় বা স্বামীর মৃত্যুতে মহিলাদের শোক পালন করার বিধিবিধান:
▬▬▬▬◖◯◗▬▬▬▬
 
যদি পিতা, মাতা, ভাই, বোন, সন্তান, স্বামী বা অন্য কোন নিকটাত্মীয় মারা যায় তবে মহিলার জন্য শোক পালন করা বৈধ। স্বামীর ক্ষেত্রে চার মাস দশ দিন ওয়াজিব (আবশ্যক)। আর অন্যদের ক্ষেত্রে সবোর্চ্চ তিন দিন বৈধ; আবশ্যক নয়। 
তবে স্ত্রী স্বামীকে খুশি রাখতে যদি অন্য কোন মানুষের মৃত্যুতে স্ত্রী শোক পালন না করে তবে সেটাই উত্তম। কারণ, স্বামীর সুখ কামনাতেই নারীর জন্য অজস্র কল্যাণ নিহিত রয়েছে।
 
◈◈ শোক পালনের দলিল:
স্বামীর মৃত্যুতে শোক পালনের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
 
وَالَّذِينَ يُتَوَفَّوْنَ مِنكُمْ وَيَذَرُونَ أَزْوَاجًا يَتَرَبَّصْنَ بِأَنفُسِهِنَّ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرً
 
"আর তোমাদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করবে এবং নিজেদের স্ত্রীদেরকে ছেড়ে যাবে, তখন সে স্ত্রীদের কর্তব্য হলো, নিজেকে চার মাস দশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করিয়ে রাখা।" (সূরা বাকারা: ২৩৪)
 
আবু সালামার মেয়ে যয়নব বলেন, শাম থেকে আবু সুফিয়ান রা. এর মৃত্যু সংবাদ আসার পর তৃতীয় দিন (তাঁর মেয়ে উম্মুল মুমিনিন) উম্মে হাবিবা রা. কিছু হলুদ বা জাফরান (অন্য বর্ণনায় সুগন্ধি) আনতে বললেন। অত:পর তা আনা হলে তিনি তা তার চেহারার দু পাশে ও দু গালে এবং দু বাহুতে মাখলেন। অত:পর বলেন, এটা করার আমার কোন দরকার ছিল না। কিন্তু আমি এজন্যই এমনটি করলাম যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
 
« لاَ يَحِلُّ لاِمْرَأَةٍ تُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ أَنْ تُحِدَّ عَلَى مَيِّتٍ فَوْقَ ثَلاَثٍ ، إِلاَّ عَلَى زَوْجٍ ، فَإِنَّهَا تُحِدُّ عَلَيْهِ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرًا »
 
"যে মহিলা আল্লাহ ও পরকালের উপর বিশ্বাস রাখে তার জন্য স্বামী ছাড়া কারও মৃত্যুতে তিন দিনের বেশি শোক পালন করা বৈধ নয়। স্বামীর মৃত্যুতে সে চার মাস দশ দিন শোক পালন করবে।" (সহিহ বুখারি, অনুচ্ছেদ: স্বামী ছাড়া অন্যের মৃত্যুতে মহিলার শোক পালন করা)।
 
◈◈ শোক পালনের পদ্ধতি:
● ১) মৃতের প্রতি শোক প্রকাশের উদ্দেশ্যে মহিলা সকল প্রকার সৌন্দর্য গ্রহণ থেকে দূরে থাকবে।
● ২) আতর-সুগন্ধি ব্যবহার না করা। তবে তৈল, সাবান, রোগ-ব্যাধির জন্য ঔষধ ইত্যাদি ব্যবহারে অসুবিধা নাই যদিও তাতে সুগন্ধি থাকে। কারণ এগুলো মূলত: সুগন্ধি হিসেবে ব্যবহৃত হয় না।
● ৩) সৌন্দর্য বর্ধক পোশাক না পরা। বরং স্বামী মারা যাওয়ার আগে স্বাভাবিকভাবে যে পোশাক পরিধান করত তাই পরিধান করবে। তবে শুধু সাদা বা শুধু কালো পোশাক পরিধান করতে হবে-এমন ধারণা ঠিক নয়।
● ৪) সুরমা, কাজল ইত্যাদি ব্যবহার না করা।
● ৫) মেহেদী, খেজাব বা আলাদা রং ব্যবহার না করা।
● ৬) কোন ধরণের অলংকার-যেমন: দুল, চুরি, নাক ফুল, আংটি, নূপুর ইত্যাদি ব্যবহার না করা।
● ৭) বিয়ের প্রস্তাব বা বিয়ে থেকে বিরত থাকা।
● ৮) শোক পালনের দিন শেষ পর্যন্ত নিজের বাড়িতে থাকবে। এমনকি সে সময় যদি সে তার পিতার বাড়িতেও থাকে তবে স্বামীর মৃত্যুর খবর পেলে নিজ বাড়িতে ফিরে আসবে। তবে একান্ত প্রয়োজন-যেমন: বিপদের আশংকা, প্রয়োজন বশত: বাড়ি পরিবর্তন, চিকিৎসা বা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনা ইত্যাদি জরুরি কাজে অন্যত্র যেতে পারবে।
● ৯) স্ত্রী যদি গর্ভবতী হয়ে থাকে তবে সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে অথবা চার মাস দশ দিন অতিবাহিত হলে তখন উপরোক্ত নিষেধাজ্ঞা সমূহ উঠে যাবে এবং অন্যত্র বিয়ের ব্যবস্থা করা যাবে।
মোটকথা, স্বামী মারা যাওয়ার পর স্ত্রী এমন সব ধরণের আচরণ বা সৌন্দর্য অবলম্বন করবে না যা তাকে বিয়ের দিকে আকৃষ্ট করতে পারে।
 
এটা এ কারণে যে এর মাধ্যমে, স্বামীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়, স্বামীর পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়দের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করা হয়, তাদের বেদনা বিধুর অনুভূতিতে সহমর্মিতা প্রকাশ হয় সর্বোপরি আল্লাহ এবং তার রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নির্দেশের আনুগত্য করা হয়।
আল্লাহু আলাম।
 
▬▬▬▬◖◯◗▬▬▬▬
গ্রন্থনায়:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

 

৪৫. বিয়েতে আত্মীয়-অনাত্মীয়: কোনটি উত্তম? নিকটাত্মীয় মেয়েকে বিয়ে করলে সন্তানের কোন ক্ষতির সম্ভাবনা আছে কি? Marriage education series

 May be an image of text that says 'বিয়েতে আত্মীয় অনাত্মীয়: কোনটি উত্তম? নিকটাত্মীয় মেয়েকে বিয়ে করলে সন্তানের কোন ক্ষতি হয় কি?'

বিয়েতে আত্মীয়-অনাত্মীয়: কোনটি উত্তম? নিকটাত্মীয় মেয়েকে বিয়ে করলে সন্তানের কোন ক্ষতির সম্ভাবনা আছে কি?
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
প্রশ্ন: নিকটাত্মীয়কে বিয়ে করলে সন্তানের নাকি বিভিন্ন সমস্যা হয়? এ ব্যাপারে ইসলাম কী বলে?
উত্তর:
নিকটাত্মীয় বা রক্ত সম্পর্কীয় ব্যক্তিকে বিয়ে করলে 'জিনগত রোগ-ব্যাধির সংক্রমণ হবে, সন্তান বিকলাঙ্গ বা দুর্বল হবে আর আত্মীয়তার সম্পর্কহীন দূরের মেয়েকে বিয়ে করলে সন্তান সুস্বাস্থ্য বান, মেধাবী ও খুব ভালো হবে' এ জাতীয় কথা নিতান্তই ভিত্তিহীন, দলিল বিহীন ও বাস্তবতা বিবর্জিত। কুরআন-হাদিসের আলোকে তো প্রমাণিত নয় বরং বাস্তবতা ও বিজ্ঞানের আলোকেও তা সঠিক নয়।
 
প্রথমত: আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, কুরআন ও হাদিস যা হালাল করেছে তাতে কোন সমস্যা থাকবে না বা তাতে ক্ষতির কোন কারণ নাই এ কথায় সন্দেহের অবকাশ নাই। এতে কোন ধরণের স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকলে সর্বময় জ্ঞানের অধিকারী মহামহিম আল্লাহ তা কখনোও হালাল করতেন না। অথচ তিনি নিকটাত্মীয় বা রক্ত সম্পর্কীয় মেয়েদেরকে বিয়ে করা হালাল করেছেন।
 
◈ আল্লাহ তাআলা বলেন,
 
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَحْلَلْنَا لَكَ أَزْوَاجَكَ اللَّاتِي آتَيْتَ أُجُورَهُنَّ وَمَا مَلَكَتْ يَمِينُكَ مِمَّا أَفَاءَ اللَّـهُ عَلَيْكَ وَبَنَاتِ عَمِّكَ وَبَنَاتِ عَمَّاتِكَ وَبَنَاتِ خَالِكَ وَبَنَاتِ خَالَاتِكَ
 
"হে নবী, আপনার জন্য আপনার স্ত্রীগণকে হালাল করেছি, যাদেরকে আপনি মোহরানা প্রদান করেন। আর দাসীদেরকে হালাল করেছি, যাদেরকে আল্লাহ আপনার করায়ত্ব করে দেন এবং বিবাহের জন্য বৈধ করেছি আপনার চাচাতো ভগ্নি, ফুফাতো ভগ্নি, মামাতো ভগ্নি, খালাতো ভগ্নিকে...।" (সূরা আহযাব: ৫০)
◈ কোন নারীদেরকে বিয়ে করা যাবে না তা মহান আল্লাহ সূরা নিসা এর ২৩ নং আয়াতে উল্লেখ করেছেন। (যেমন: মা, কন্যা, বোন, ফুফু, খালা, শাশুড়ি প্রমুখ) এর বাইরে যেকোনো নারীকে বিয়ে করা জায়েজ। আর বিয়ে নিষিদ্ধ নারীদের মধ্যে চাচাতো, ফুফাতো, খালাতো, মামাতো বোন এবং তাদের কন্যগণ অন্তর্ভুক্ত নয়। সুতরাং এসকল নিকটাত্মীয় মেয়েদেরকে বিয়ে করতে কোন আপত্তি নেই।
 
উল্লেখ্য যে, স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীগণ বলেন, মহান আল্লাহ কুরআনে যে নারীদেরকে বিয়ে নিষিদ্ধ করেছেন তাদের সাথে বিয়ে হলে বাস্তবিকভাবে নানা জেনেটিক সমস্যা হতে পারে‌। এর বাইরে কোন স্বাস্থ্য ঝুঁকি নেই।
 
◈ তাছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে তার রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়কে বিয়ে করেছেন। যেমন: তিনি তার ফুফু মাইমুনা রা. এর কন্যা যয়নাব বিনতে জাহাশ (সাহাবি আব্দুল্লাহ বিন জাহাশ রা. এর বোন) কে বিয়ে করেছেন।
 
◈ তাঁর স্ত্রীদের মধ্যে আয়েশা বিনতে আবি বকর রা., হাফসা বিনতে উমর রা.ও বংশীয় দিক দিয়ে তার রক্ত সম্পর্কীয়। 
 
◈ তিনি তার কলিজার টুকরা কন্যা ফাতিমা রা. কে তার চাচাতো ভাই আলী বিন আবি তালিব রা. এর সাথে বিয়ে দিয়েছেন।
 
◈ সেই সাথে আমাদের চারপাশে অসংখ্য বৈবাহিক জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে এ কথার সত্যতা পাওয়া যায় না।
গবেষকগণ বলেন,"শুধু বাংলাদেশেই নয়, মধ্যপ্রাচ্য, পশ্চিম এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোতে আত্মীয়দের মধ্যে বিয়ের সংখ্যা মোট বিবাহের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৩৭ শতাংশই রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়দের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করে থাকে। এমনকি এই প্রবণতা দক্ষিণ ভারতেও দেখা যায়।" (biyeta)
তবে নিকটাত্মীয় স্বামী-স্ত্রী ও তাদের সন্তানদের মাঝে জিন বাহিত রোগ-ব্যাধি সংক্রমিত হওয়ার ঘটনা যদি কোথাও ঘটেও থাকে তাহলে তা নিতান্তই অপ্রতুল; ব্যাপক নয়।
সুতরাং এর উপর ভিত্তি করে শরিয়তের হালালকৃত এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করা কোনভাবেই সঙ্গত হতে পারে না।
 
◯◯ সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি শাইখ আল্লামা আব্দুল্লাহ বিন বায রহঃ
অনাত্মীয় মেয়েকে বিয়ে করার নির্দেশ বাচক হাদিস সম্পর্কে শায়খ আব্দুল্লাহ বিন বায রাহ. কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,
"এ হাদিসের কোন ভিত্তি নেই বরং নিকটাত্মীয়কে বিয়ে করার অধিক উত্তম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিকট আত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে করেছেন।
আর কিছু ফকিহ যারা দূরবর্তী মেয়েদেরকে বিয়ে করার কথা বলে তাদের কথার কোন ভিত্তি নাই। বরং সে স্বাধীন। ইচ্ছে করলে, নিকটাত্মীয় মেয়েকে বিয়ে করতে পারে-যেমন: চাচাতো বোন, খালাতো বোন। আবার ইচ্ছা করলে, দূরের কাউকে বিয়ে করতে পারে। এতে কোনও অসুবিধা নেই।
যারা বলে যে, দূরের মেয়েকে বিয়ে করলে সন্তান বেশি সু স্বাস্থ্যবান ও ভালো হবে তাদের একথার কোন ভিত্তি নেই। কোন দলিল নেই। বরং যদি নিকটাত্মীয়কে বিয়ে করা সহজ হয় তবে ভালো। এটাই উত্তম। কারণ এতে রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়তার বন্ধন আরও মজবুত হয়। আর যদি দূরের মেয়ে বেশি দ্বীনদার এবং বেশি ভালো হয় তবে দূরের মেয়েকে বিয়ে করাই ভালো।
মোটকথা, দ্বীনদার মেয়েকে বিয়ে করার চেষ্টা করতে হবে-চাই সে নিকটাত্মীয় হোক অথবা না হোক। নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
تُنْكَحُ المَرْأَةُ لِأَرْبَعٍ: لِمَالِهَا، وَلِحَسَبِهَا، وَجَمَالِهَا، وَلِدِينِهَا، فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّينِ، تَرِبَتْ يَدَاكَ
"চারটি গুণের কারণে নারীকে বিবাহ করা হয়- নারীর ধন-সম্পদ, বংশ-মর্যাদা, রূপ-সৌন্দর্য ও দীনের কারণে। কিন্তু তুমি দীনদার নারীকে অগ্রাধিকার দিয়ে সফল হও। (অন্যথায়) তোমার দু হাত ধূলায় ধূসরিত হোক!" (অর্থাৎ দীনদার নারীকে প্রাধান্য না দিলে বিপর্যয় অবধারিত)।
[আবু হুরায়রা. হতে বর্ণিত- সহিহ বুখারি/ ৫০৯০ ও সহিহ মুসলিম ১৪৬৬]
সুতরাং একজন ইমানদার ব্যক্তি ভালো দ্বীনদার নারী অনুসন্ধান করবে যদিও তা নিকটাত্মীয়দের মধ্য থেকে না হয়। অনুরূপভাবে একজন মহিলাও একজন সৎ স্বামী অনুসন্ধান করবে, খোঁজখবর নিবে যদিও সে অনাত্মীয় হয়।" (শাইখের অফিসিয়াল ওয়েব সাইট থেকে)
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব

 

৪৪. প্রশ্ন: স্ত্রী কে জান, কলিজা, পাখি ইত্যাদি বলে সম্বোধন করা যাবে কি? Marriage education series

 May be an image of text that says 'স্ত্রী কে জান, কলিজা, পাখি ইত্যাদি বলে সম্বোধন করা যাবে কি? আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল'

প্রশ্ন: স্ত্রী কে জান, কলিজা, পাখি ইত্যাদি বলে সম্বোধন করা যাবে কি?
উত্তর:
আমাদের অজানা নয় যে, গভীর ভালোবাসা ও প্রেমের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে এ জাতীয় শব্দগুলো ব্যবহার করা হয়। সুতরাং স্ত্রীর উদ্দেশ্যে এগুলো ব্যবহারে কোন অসুবিধা নেই ইনশাআল্লাহ। অনুরূপভাবে যে সকল নাম, শব্দ বা প্রশংসা মূলক বাক্য শুনলে স্ত্রী খুশি হয় তার উদ্দেশ্যে সেগুলো ব্যবহার করতেও কোন আপত্তি নাই বরং উত্তম যদি তাতে শরিয়া বিরোধী কোনও কিছু না থাকে। 
 
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মা জননী আয়েশা রা. কে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে সম্বোধন করতেন।
হাদিসে এমন মোট ৬টি নাম/উপনাম পাওয়া যায় যেগুলো ব্যবহার করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মা আয়েশা রা. কে সম্বোধন করেছেন। যেমন:
 
✪ ১) আয়েশ (আয়শাহ থেকে শ এর পর আকার অতঃপর হ অক্ষর বিলুপ্ত করে সংক্ষেপে আয়েশ)।
✪ ২) হুমায়রা (লাল রঙ্গের পাখি বিশেষ)।
✪ ৩) ইবনাতুস সিদ্দিক/বিনতুস সিদ্দিক (সিদ্দিক এর মেয়ে)।
✪ ৪) ইবনাতু আবি বকর/বিনতে আবি বকর (আবু বকরের মেয়ে)।
✪ ৫) মুওয়াফফাকাহ (আল্লাহর পক্ষ থেকে তওফিক প্রাপ্তা)।
✪ ৬) উম্মে আব্দুল্লাহ (আব্দুল্লাহর মা-যদিও তার কোন সন্তান ছিলো না)।
নি:সন্দেহে প্রেম পূর্ণ ও আদর মাখা সম্বোধন দাম্পত্য জীবনে ভালবাসা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ এবং স্ত্রীর সাথে 'সুন্দর আচরণ ও সদ্ভাবে জীবন-যাপন' এর অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ
"আর তোমরা স্ত্রীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর।" (সূরা নিসা: ১৯)
আল্লাহু আলাম।
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

 

৪৩. স্ত্রীর উপর স্বামীর কর্তৃত্ব ও শাসন: কিভাবে কতটুকু? স্ত্রী অবাধ্য হলে স্বামীর করণীয় Marriage education series

 May be an image of text that says 'স্ত্রীর উপর স্বামীর মীর কর্তৃত্ব ও শাসন: কিভাবে কতটুকু? স্ত্রী অবাধ্য হলে স্বামীর করণীয়'

 

স্ত্রীর উপর স্বামীর কর্তৃত্ব ও শাসন: কিভাবে কতটুকু?
স্ত্রী অবাধ্য হলে স্বামীর করণীয়
▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬
প্রশ্ন: একজন স্বামী তার স্ত্রীর উপর কীভাবে ও কতটুকু শাসন করতে পারবে? স্ত্রী যদি স্বামীর শাসন মানতে না চায় তাহলে তার কী করণীয়?
উত্তর:
◈ আল্লাহ তাআলা পুরুষকে স্ত্রীর উপর দায়িত্ববান ও কর্তৃত্ব শীল হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّـهُ بَعْضَهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ وَبِمَا أَنفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ
"পুরুষেরা নারীদের উপর কর্তৃত্ব শীল (দায়িত্ববান) এ জন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে।" (সূরা নিসা: ৩৪)
◈ তাছাড়া আল্লাহ তাআলা পুরুষকে আদেশ করেছেন যেন, সে নিজে জাহান্নাম থেকে বাঁচার পাশাপাশি যেন তার স্ত্রী-পরিবারকেও বাঁচায়। আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا
"হে মুমিনগণ, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর।" (সূরা তাহরীম: ৬)
◈ মহান আল্লাহ কেবল দায়িত্ব দিয়েই ক্ষান্ত হন নি বরং তিনি তাকে কিয়ামতের দিন তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
ইবনে উমর রা.সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন,
أَلاَ كُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ : وَالرَّجُلُ رَاعٍ عَلَى أَهْلِ بَيْتِهِ وَهُوَ مَسْئُولٌ عَنْهُمْ"‏ ‏
“জেনে রাখো, তোমাদের প্রত্যেকেই একেকজন দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। ...একজন পুরুষ তার পরিবার (স্ত্রী-সন্তানদের) উপর দায়িত্বশীল। সে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।" [সহিহ মুসলিম]
সুতরাং স্বামীর দায়িত্ব হল, সে স্ত্রীকে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী চলার তথা নামাজ, রোজা, পর্দা, হালাল-হারাম মেনে চলা, স্বামীর আনুগত্য সহ আল্লাহর হুকুম-আহকাম মেনে চলার নির্দেশ দিবে, নামাজ, রোজা, পাক-পবিত্রতা, কুরআন পড়া বা ইসলাম সম্পর্কে না জানলে তাকে শিখতে সাহায্য করবে, তাকে ইসলামি জ্ঞানার্জনের সুযোগ দিবে এবং দীনের উপর পরিচালিত হতে এবং গুনাহ থেকে বাঁচতে একজন অভিভাবক, দায়িত্বশীল ও কল্যাণকামী হিসেবে সাহায্য করবে।
অনুরূপভাবে তাকে হারাম কাজ করতে দেখলে বাধা দিবে। যেমন: পর্দা হীনতা, বাইরে যেখানে সেখানে বেপরোয়া চলাফেরা করা, নন মাহরাম পুরুষদের সাথে মেলামেশা, দুষ্টামি ও হাসি-কৌতুক, পরপুরুষকে বাড়িতে প্রবেশের অনুমতি দেয়া, সুগন্ধি ব্যবহার করে বাইরে যাওয়া, গানবাজনা, নাটক-সিনেমা দেখা, অনুমতি ছাড়া দূরে যাওয়া ইত্যাদি।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্যায় দেখলে তা হাত দ্বারা প্রতিহত করার নির্দেশ দিয়েছেন যদি ক্ষমতা থাকে। সুতরাং স্বামী যদি তার স্ত্রীকে অন্যায়-অপকর্ম ও আল্লাহর নাফরমানি করতে দেখে তাহলে তার জন্য আবশ্যক হল, তাকে বাধা দেয়া বা নিষেধ করা। প্রয়োজনে এ ক্ষেত্রে সে ক্ষমতা প্রয়োগেরও অধিকার রাখে। এটি তার আল্লাহ প্রদত্ত অধিকার।
এই দায়িত্ব পালন করা স্বামীর জন্য ফরজ। সে যদি এ ক্ষেত্রে অবহেলা প্রদর্শন করে তাহলে গুনাহগার হবে এবং আখিরাতে আল্লাহর কাঠগড়ায় বিচারের মুখোমুখি হবে। আল্লাহ হেফাজত করুন। আমিন।
❑ স্ত্রী যদি স্বামীর এসব বাধা-নিষেধের ক্ষেত্রে অবাধ্যতা করে তাহলে কুরআনের আলোকে স্বামীর করণীয় হল:
◍ ১. প্রথমে তাকে সুন্দর ভাষায় নসিহত করবে এবং আন্তরিকতা ও ভালবাসা দিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করবে।
◍ ২. কিন্তু এতে সংশোধন না হলে ২য় পদক্ষেপে বিছানা আলাদা করে দিবে (অর্থাৎ একই ঘরে পৃথক বিছানায় শয়ন করবে)।
◍ ৩. এতেও সে ফিরে না এলে তাকে হালকা ভাবে প্রহারেরও অনুমতি আছে।
◍ ৪. তাতেও কাজ না হলে উভয় পক্ষের জ্ঞানী লোকদের মাধ্যমে সমঝোতা অথবা বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটাবে।
মহান আল্লাহ বলেন,
وَاللَّاتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَاهْجُرُوهُنَّ فِي الْمَضَاجِعِ وَاضْرِبُوهُنَّ ۖ فَإِنْ أَطَعْنَكُمْ فَلَا تَبْغُوا عَلَيْهِنَّ سَبِيلًا ۗ إِنَّ اللَّـهَ كَانَ عَلِيًّا كَبِيرًا وَإِنْ خِفْتُمْ شِقَاقَ بَيْنِهِمَا فَابْعَثُوا حَكَمًا مِّنْ أَهْلِهِ وَحَكَمًا مِّنْ أَهْلِهَا إِن يُرِيدَا إِصْلَاحًا يُوَفِّقِ اللَّـهُ بَيْنَهُمَا ۗ إِنَّ اللَّـهَ كَانَ عَلِيمًا خَبِيرًا
“আর যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোন পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সবার উপর শ্রেষ্ঠ। যদি তাদের মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হওয়ার মত পরিস্থিতিরই আশঙ্কা কর, তবে স্বামীর পরিবার থেকে একজন এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন সালিস নিযুক্ত করবে। তারা উভয়ের মীমাংসা চাইলে আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছু অবহিত।”(সূরা নিসা: ৩৪ ও ৩৫)
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব