Sunday, July 25, 2021

এক মহিলা এসে তার স্বামীর ব্যাপারে ভয়ানক রকমের তিনটা অভিযোগ পেশ করেন।

 

একবারের ঘটনা। নবীজি ﷺ সাহাবিদের নিয়ে বসা। এসময় এক মহিলা এসে তার স্বামীর ব্যাপারে ভয়ানক রকমের তিনটা অভিযোগ পেশ করেন।
১। আমি নামাজ পড়তে গেলে আমার স্বামী আমাকে মারেন।
২। ফজরের নামাজ না পড়ে উনি ঘুমিয়ে থাকেন।
৩। আমি নফল রোযা রাখলে রোযা ভাঙতে বাধ্য করেন।
মজার বিষয় এই মহিলার স্বামী সফওয়ান ইবনে মু'আত্তল রা.। যিনি সেই মজলিশে অন্য সবার সাথে বসা। নবীজি ﷺ সফওয়ানকে ডেকে বললেন, অভিযোগগুলো কি সত্য? তিনি বিনয়ের সাথে বললেন, হ্যা অভিযোগ সত্য। তবে এর ব্যাখ্যা আছে হে আল্লাহর নবী।
: কী ব্যাখ্যা?
:: সে প্রথম অভিযোগ তুলেছে, সে নামাজ পড়লে আমি তাকে মারি। আসলে সে নামাজে লম্বা লম্বা কেরাত পড়ে। ফলে আমাকে সে সময় দিতে পারে না। অপেক্ষায় ঝুলিয়ে রাখে। অথচ আমি তার সঙ্গ পেতে চাই। তার সেবার মুখাপেক্ষী থাকি।
নবীজি ﷺ বললেন,
: নামাজের জন্য ছোট কেরাতই যথেষ্ট।
নোট- স্বামী ঘরে থাকা অবস্থায় স্বামীর সেবা নফল ইবাদাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। স্বামীকে সঙ্গ দেয়াই একটি ইবাদাত। অথচ আজকাল আমাদের মা-বোনেরা বই/মোবাইল/ঘুম/ফেসবুক/ইউটিউব নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। যা মোটেও ইবাদাত তো নাই, বরং ক্ষেত্রে বিশেষ গোনাহের কারখানা।
:: তার দ্বিতীয় অভিযোগ, ফজরের নামাজ না পড়ে আমি ঘুমিয়ে থাকি। আসলে বিষয়টা হল আমার পেশা হল পানি টানা। এটাই আমার জীবিকা নির্বাহের উপায়। সেটা রাতের বেলাতেই করতে হয়। কাজ যখন শেষ হয়, তখনও ফজরের ওয়াক্ত হয় না। এদিকে প্রচন্ড ঘুমের চাপে মাঝেমধ্যে ঘুমিয়ে যাই। নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারি না। পরে ঘুম ভাঙ্গে সূর্যদয়ের পর!
নবীজি ﷺ বললেন,
: আচ্ছা। তাহলে যখনি ঘুম ভাঙবে সালাত আদায় করে নিবে।
:: তার তৃতীয় অভিযোগ, সে রোযা রাখলে আমি তাকে তা ভাঙতে বাধ্য করি। কারণ আমি সারা রাত কঠিন পরিশ্রম করি৷ দিনের বেলাতেই কেবল স্ত্রীর কাছে যাওয়ার ফুরসত পাই। আর সেই সময়টাতেও তার সাথে মিলিত হতে পারি না, কারণ সে তখন রোযাদার!
নবীজি ﷺ বললেন,
: তোমরা সবাই শোনো, আজকের পর মহিলারা তার স্বামীর সম্মতি ছাড়া নফল রোযা রাখতে পারবে না।
নোট- স্বামীর অধিকার ক্ষুন্ন করে নফল কোনো ইবাদাত স্ত্রীর জন্য বৈধ নয়।
[ আবু দাউদঃ২৪৫৯, আদ্দুরারুস সানিয়াহ এর সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা]
আজকের অধিকাংশ দীনি বোনদের মেজাজ হল- ''সব ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতা খোজা''। পুরুষকে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবা। বিশেষত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের মাঝে এটা প্রকট। স্বামী তালাক দিতে পারলে স্ত্রী কেন পারবে না...? স্বামীর জন্য নেটজগত অবাধ হলে স্ত্রীর জন্য কেন ফেতনা...? দুজনের গড়ে তোলা সংসারে পুরুষ কেন নেতা...? এমনকি অনেকে অভিযোগ তোলে, পুরুষ ৭০ টা হুর পেলে নারী কেন 'কিছু' পাবে না...? ডিভোর্স বৃদ্ধি ও সংসারে অশান্তির প্রধান কারণও কিন্তু এই 'সমতা' ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা' এর বিষাক্ত চেতনা!
অথচ আল্লাহ এবং নবীজি ﷺ পুরুষকে নারীর চেয়ে কর্তৃত্বের দিক থেকে উপরে রেখেছেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতা তো হবে আল্লাহ তা'আলা যদি 'সমতা' বিধান দিতেন।
নবীজি ﷺ বলেছেন,
আল্লাহর পর কাউকে সাজদাহ করা বৈধ হলে আমি প্রতিটা স্ত্রীকে বলতাম, সে যেন তার স্বামীকে সাজদাহ করে! কেননা আল্লাহ তা'আলা স্বামীদেরকে স্ত্রীদের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন। [ আবু দাউদঃ২১৪০, আয যাওয়াজিরঃ২/৪১, সনদ সহিহ]
আল্লাহু আকবার!

বিপদ যখন নিয়ামত

 

আহসান সাহেব শহরের একজন দক্ষ ব্যবসায়ী। ব্যবসা সম্পর্কে অগাধ পান্ডিত্ব্য থাকা সত্ত্বেও, হঠাৎ-ই বড় ধরণের বিপর্যয়ের শিকার হলেন। কোটি টাকার ধসে- যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো!
এই মহা বিপর্যয়ে আহসান সাহেবের প্রতিক্রিয়া কেমন হতে পারে? হয়ত অধিক শোকে পাথর, নয়তো কেঁদেকেটে আশপাশের মানুষজন এক করা, কিংবা ক্ষোভে-দুঃখে ব্যবসা বন্ধ করে বনবাসী হওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়া, ইত্যাদি।
যদি তার প্রতিক্রিয়া উপরের কোনো একটি হয়, তাহলে পরিণতি কী হতে পারে?
অপরদিকে, আসাদ সাহেব বেশ আজিব ব্যবসায়ী।
জীবনের এক উৎফুল্ল সকালে তিনিও কোটি টাকার লোকসানের শিকার হলেন। তবে আহসিন সাহেবের মতো ভেঙ্গে পড়লেন না। বিপর্যয়ের কারণে দুঃখ-দুশ্চিন্তা ভর করতে পারতো তার উপর, কিন্তু তিনি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে ব্যাপারটা হাসিমুখে সামলে নিলেন ভিন্ন পন্থায়।
কেন কীভাবে লোকসানটা হল- সেটা নিয়ে বিস্তর গবেষণা করে সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নবউদ্যমে ফের শুরু করলেন। বছর খানেক পর, তার আত্মবিশ্বাস ও ঘুরে দাঁড়ানো তাকে পৌঁছে দিল বিশ্বের সেরা ব্যবসায়ীদের একজনের স্থানে।
অবশেষে উষ্ণ চায়ের কাপে প্রশান্তির চুমুক।
এদিকে আমাদের রহিম চাচা একজন সাদামাটা ব্যবসায়ী। তিনিও একদিন ব্যবসায় চরম ধরা খেলেন। তাৎক্ষণিক খবরটা পেয়ে কিছুটা বিচলিত হলেও পরমুহূর্তেই প্রশান্তচিত্তে বিশ্বাস রাখলেন, এটি মহান আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছাতেই ঘটেছে। আল্লাহর থেকে প্রতিদানের আশায় ধৈর্য ধারণ করে কষ্ট সহ্য করলেন। তারপর আসাদ সাহেব যে পথে এগিয়েছিলেন, সেই পথ ধরলেন।
উপরের তিন ব্যক্তির মধ্যে কে উত্তম? কে আসলেই সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন?
আহসান, আসাদ কিংবা রহিম সাহেবদের জীবনের পর্যালচনা করা মুখ্য নয়, আমাদের উদ্দেশ্যে এটি উদঘাটন করা যে- বিপদের মতো এক অনিবার্য বিষয়, যার সাথে আমাদের সবারই অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে সাক্ষাৎ হয়ে যায়- এহেন দূর্দশা যখন ঘিরে ধরে, তখন আমাদের আচরণ কেমন হওয়া উচিত?
কেমন হলে তা আমাদের চলার পথকে বিষাক্ত কণ্টকযুক্ত না করে, করবে ফুলের মতো মসৃণ?
নিয়ত ও ইয়াকীন বা বিশ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গি
দৃষ্টিভঙ্গির শক্তি- একই পরিস্থিতিতে একজনের কাছে যা বিপদ, অন্যজনের কাছে তা-ই নিয়ামতঃ
আলী বানাত (রহ.) এর ঘটনা আমাদের প্রায় সকলেরই জানা, ক্যান্সার যার জীবনে এক মহান নিয়ামত হয়ে এসেছিল।
আমরা আলী বানাত (রহ.)কে দাঁড়িপাল্লার একদিকে রেখে, ঠিক তার পরিস্থিতিতে থাকা আর একজন ক্যান্সারের রোগীকে অপর প্রান্তে রেখে বিষয়টা বুঝার চেষ্টা করবো।
দুজনের অবস্থা ও পরিস্থিতি একই হওয়া সত্ত্বেও আলী বানাত রহ. কেন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে প্রশান্ত ছিলেন? অন্যজন কেন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দুঃখী? পার্থক্যটা কোথায়?
দৃষ্টিভঙ্গিতে। মনোযোগে। লক্ষ্যে। নিয়তে।
আলী বানাত রহ:-এর দৃষ্টিভঙ্গিতে ছিল কৃতজ্ঞতা। তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে খুঁজে পেয়েছিলেন তাঁর স্রষ্টাকে।
অপরদিকে অন্য রোগীটির দৃষ্টিভঙ্গিতে ছিল হতাশা। তিনি মগ্ন ছিলেন অন্যদিকে- জীবন বুঝি শেষ হয়ে আসছে, এই চাকচিক্যময় পৃথিবী ছেড়ে পাড়ি জমাতে হবে অনিশ্চিত গন্তব্যে।
আমরা ভাবি, আমাদের সাথে যা ঘটে তার ওপর নির্ভর করে- আমরা সুখী হবো নাকি দুঃখী। গবেষক ও লেখিকা Gallagher এর মতে, যুগ যুগ ধরে হয়ে আসা গবেষণা এর সাথে বিরোধ করে বলে- আমাদের জীবন কেমন হবে তা নির্ভর করছে- আমরা কোথায় মনোযোগ দিচ্ছি- তার উপর। আমাদের ব্রেইন সেই অনুযায়ী দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে নেয়।(১)
দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তি বিশ্বাসের উপর। বিশ্বাস পরিণত হয় চিন্তায়, চিন্তা পরিণত হয় শব্দে, শব্দ পরিণত হয় কর্মে, কর্ম পরিণত হয় অভ্যাসে।(২)
দ্বীন আমাদের এই অভ্যাস বা স্বভাবে পরিণত করতে হবে।
এই অভ্যাসের মূল ভিত্তিই যেহেতু বিশ্বাস, বারবার বিশ্বাস পরিশুদ্ধ ও দৃঢ় করাতে মনোযোগী হন।
শাইখুল ইসলাম তাকী উসমানী (হাফি) বলেন,
"এই দ্বীন মূলত দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের নাম। ওই কাজটিই যদি আপনি আরেক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে করেন, আরেক নিয়তে করেন, অন্য উদ্দেশ্যে করেন, তা হলে সেই জিনিসটিই-যেটি নিরেট দুনিয়া ছিল-দ্বীন হয়ে যায়।"(৩)
এই দৃষ্টিভঙ্গির অর্থ কী? এর অর্থ হলো, আমরা আমাদের আশপাশে যা ঘটছে তা কীভাবে দেখছি, বুঝছি ও উপলব্ধি করছি এবং ঘটে যাওয়া বিষয়গুলো আমাদের কাছে কী অর্থ বহন করছে। এটা আমাদের বিশ্বাস দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয়।
দৃষ্টিভঙ্গিই হতে পারে আমাদের বিপদের উৎস কিংবা নিয়ামতের। যে পরকালে বিশ্বাস করে ও যে করে না, যেকোন পরিস্থিতিতে তাদের সিদ্ধান্ত ও অন্তরের অবস্থা কখনোই এক হবে না।
মানুষ বস্তু বা ঘটনার চেয়ে বিশ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা অধিক প্রভাবিত হয়। মানুষ বস্তু বা ঘটনা দ্বারা বিশৃঙ্খলতার শিকার হয় না, বরং তা থেকে সে যে দৃষ্টিভঙ্গি নেয়, তা দ্বারা হয়।(৪)
আমাদের জীবনের অধিকাংশ সমস্যাগুলোর সমাধানই হলো- দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। উপরের উদাহরণেই দেখেছি- কেবল দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা কীভাবে একই পরিস্থিতিতে থাকা দুজন ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীকে দুরকম মানসিক অবস্থায় রাখতে পারে।
যার বিশ্বাসের গন্তব্য শেষ হয় জান্নাতে, পার্থিব কোনো বিপদই তার পথে বাঁধা হতে পারে না, বরং বিপদ যেন তার সামনে নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচন করে।
রাসূল সা. এর দুটো অমিয় বাণী উল্লেখ করতে চাই- যা আমাদের অস্থির অন্তরে প্রশান্তির এই পরশ বুলিয়ে দেবে- কীভাবে আমাদের জীবনের সমস্ত বিপদও হতে পারে নিয়ামত।
একটি বিখ্যাত হাদিস, কিন্তু আলোচ্য বিষয়ের সাথে কীভাবে তা সম্পৃক্ত সে সম্পর্ক হয়তো অনেকেরই ভাবা হয়নি গভীরভাবে।
রাসূল(সাঃ) বলেছেন, মুমিনের বিষয় বড়ই আশ্চর্যজনক। তার সবকিছুই তার জন্য কল্যাণকর; মুমিন ছাড়া আর কারও এই বৈশিষ্ট্য নেই। সে যখন আনন্দদায়ক কিছু লাভ করে তখন শোকর করে, আর শোকর তার জন্য কল্যাণের বিষয়। যখন কষ্টদায়ক কোনো কিছুর সম্মুখীন হয়, তখন সে সবর করে, আর সবরও তার জন্য কল্যাণের বিষয়।(৪)
কিছু ক্ষেত্রে শব্দগুলো পড়ে গেলেই হয় না, গভীরভাবে অনুভব করতে হয়; যেন তা অন্তরে গেঁথে যায়, শরীরের শিরা-উপশিরায় মিশে যায়।
এই হাদিসের দৃষ্টিতে চিন্তা করতে পারলে, ভবিষ্যত কেন্দ্রিক সমস্ত ভয় দূর হয়ে যাবে। কারণ আমরা জেনে গেছি, যা-ই ঘটুক, তা মুমিনের জন্য কল্যাণকর।
আরেক হাদিসে রাসূল (সাঃ) বলেন, শপথ সেই সত্তার, যার হাতে আমার প্রাণ! আল্লাহ মুমিনদের জন্য এমন কোনো বিষয় নির্ধারণ করেন না, যাতে তাঁর উপকার নেই। আর এই বিশেষত্ব মুমিনগণ ছাড়া আর কারও জন্যেই নয়।“(৫)
সুতরাং জীবনের সমস্ত সচেতনতা ও মনোযোগ একটি খাতে ব্যয় করুন- কীভাবে মুমিন হওয়া যায়, আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত হওয়া যায়। একবার মুমিন হতে পারলে, যা কিছুই ঘটুক না কেন, হতাশ হওয়ার কারণ নেই। যা ঘটেছে তাতে উপকার আছে বলেই ঘটেছে।
দ্বিতীয় হাদিসঃ
নাবী (ﷺ) বলেছেনঃ মুসলিম ব্যক্তির উপর যে সকল যাতনা, রোগ-ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানী আপতিত হয়, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে বিদ্ধ হয়, এ সবের দ্বারা আল্লাহ তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন। (৬)
যেকোন বিপদের সময়ই রাসূল(সাঃ) এর এই বাণী হতে পারে আমাদের অন্তরের স্বস্তি ও শীতলতা।
সমস্যা হল, সুখের সময় অনেক কিছুই করা যায়, বলা যায়; কিন্তু বিপদে যে পড়ে সে-ই জানে এর বাস্তবতা। বিপদে পতিত ব্যক্তির সচেতনতা অনেকাংশে লোপ পায়, বিবেকের চেয়ে আবেগ অধিক সক্রিয় হয়ে ওঠে।
তাই উত্তম হলো, যত দ্রুত সম্ভব বিশ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গির জমিনে এই দুটো হাদিসের বীজ বপন করে দেওয়া, যেন তা শেকড় গজিয়ে অন্তরের গভীর পর্যন্ত পৌঁছে যায়, যা বিপদের সময়ও আমাদেরকে রাখবে দৃঢ় ও প্রশান্ত।
এই প্রশান্তির ব্যাপারে শাইখ সালমান আল আওদাহ বলেন,
"ঈমানের পর আপনার জন্য সবচেয়ে বড় নিয়ামত হলো অন্তরের প্রশান্তি, স্থিরচিত্ত ও সুখ।"(৭)
বিপদ-আপদে কীভাবে শোকর করা যায়?
এক্ষেত্রে মূলনীতিটা হল, দুনিয়ার ক্ষেত্রে নিজ অবস্থানের নিচে দৃষ্টি দেয়া, আখেরাতের ক্ষেত্রে উপরে।
যেমন- যার এক হাত ভাঙলো, তার জন্য শুকরিয়ার বিষয়, দুই হাত ভাঙ্গেনি। যে দুই হাত হারাল, তার শুকরিয়ার বিষয়- দুই পা হারায়নি। যে দুই পা হারালো, তার শুকরিয়ার বিষয়- জীবন যায়নি।
সবর ও শোকর একজন মানুষের জীবনের সার্বক্ষণিক কাজ। কীভাবে? মানুষের যে কোন অবস্থাই হয় তার মনমত, অথবা তার মনের বিপরীত। প্রথম অবস্থায় শোকরের নির্দেশ রয়েছে, আর দ্বিতীয় অবস্থায় রয়েছে সবরের নির্দেশ।(১০)
ইমাম বুখারী রহ. এর লিখিত হযরত আনাস(রাঃ) এর আম্মার ঘটনা।
তাঁর ছোট ছেলের ইন্তেকাল হয়। তিনি রাতে এটা স্বামীকে জানায় না। স্বাভাবিকভাবেই খাবার তৈরি করেন। ভাল কাপড় পরেন। সুগন্ধি মাখেন। খাবার খাওয়ার পর রাতে তাঁদের মিলন হয়। স্বামী ফজরের নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় ছেলের মৃত্যুর খবর দিয়ে বলেন, নামাজের পর দাফন করতে। সেই রাতের মিলনে তাঁর ছেলে আব্দুল্লাহ জন্মগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে আব্দুল্লাহর ঔরসে এমন ন’জন সন্তান লাভ করে, যারা প্রত্যেকে ছিলেন কুর’আনের হাফিজ।(৮)
শাইখুল হাদিস জাকারিয়া রহঃ এর কাছে যখন মাওলানা ইউসুফ সাহেব রহঃ এর মৃত্যুর সংবাদ আসে, সে মুহূর্তের ব্যাপারে তিনি লিখেন,
“মৃত্যুর জন্য তো কোন সময় অসময় নেই এবং এটা অসম্ভব কোন ব্যাপারও নয়।“(৯)
তাঁর মৃত্যুর খবর শুনার পরপরই জাকারিয়া (রহঃ) বাহ্যিক দুনিয়ার মানুষের ভিড়, কথাবার্তা উপেক্ষা করে ওঠে ওযূ করে নামাজের নিয়ত বাঁধেন।
তিনি আল্লাহর কাছে নিজেকে সপর্দ করে বিপদের সময়টা কীভাবে নিয়ামতে পরিণত করলেন দেখুন। এই ঘটনার প্রেক্ষিতেই তিনি বলেন-
“এ সময়টা খুব গুরুত্বপুর্ণ ও মূল্যবান। খুব বরকতের সময়। এ সময়টাতে মন দুনিয়া ভুলে আখেরাতমুখী হয়, এ সময়ের তেলাওয়াত দা্মী, যিকর ও ধ্যানও দামী।“(১০)
প্রিয় পাঠক, কল্পনাও যেখানে হার মানে! আল্লাহর ফায়সালা সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নেয়ার কোন স্থরে পৌঁছেছিলেন তাঁরা একবার ভাবতে পারেন?
“বিপদের তীরের লক্ষ্যস্থল হয়ে ‘উঃ’ শব্দ না করাই প্রকৃত সবর।“
“আরেফ অর্থাৎ খোদার তত্ত্বজ্ঞানী ব্যক্তি সর্বদা ‘রেযা’ অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলার বিধানের প্রতি সন্তুষ্টির গহ্বরে অবতরণ করে।“(১১)
বিপদ মোকাবেলা করার সবচেয়ে ইফেক্টিভ যে উপায় আমার কাছে মনে হয়, তা হল, 'Accept–then act' নীতি।
যা ঘটেছে তা এমন ভাবে বিনা বাধায় গ্রহণ করে নিন, যেন আপনি তা স্বেচ্ছায় বেছে নিয়েছেন। তারপর বিপদটাকে বন্ধু ভেবে কাজ করুন, শত্রু ভেবে নয়।
“If you take any action—leaving or changing your situation—drop the negativity first, if at all possible. Action arising out of insight into what is required is more effective than action arising out of negativity.”(১২)
এটুকু করা গেলে বিপদ মোকাবেলা করা অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ। আপনার কাজ হলো, আপনার দিক থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাওয়া। সমাধান করা গেলে গেল, না গেলে তাকদীরে যা আছে।
আমলঃ
বিপদকে নিয়ামতে পরিণত করা
সুলতান মুহাম্মদ গাযনাওয়ী রহিমাহুল্লাহ একবার তার গোলাম ‘আওয়ায’কে একটি আংটি দিয়ে বললেন, আংটিতে এমন কিছু লিখে দাও যা আমি সুখের সময় দেখলে চিন্তিত হয়ে পড়বো এবং দুঃখের সময় দেখলে আনন্দ অনুভব করবো।
বুদ্ধিবান সেই গোলাম আংটিতে লিখল, ‘এই সময়টাও অতিবাহিত হয়ে যাবে।‘
সময় তার আপন গতিতেই অতিবাহিত হয়ে যাবে, বিপদও কেটে যাবে, কেবল আমল রয়ে যাবে।
বিপদের কারণে অন্তরে যে অস্থিরতা বা পেরেশানির সৃষ্টি হয়, মানুষ দুনিয়ার কাছেই এর সমাধান চায়। অথচ যিনি এই কষ্ট নিমিষেই দূর করে দিতে পারেন, তাঁর কাছে যাওয়া হয় না, তাঁর কথা স্মরণে থাকে না; অন্তরে থাকে সেই হাহাকার–"দুনিয়া, দুনিয়া, দুনিয়া..."
আদীব হুজুর কত চমৎকারভাবে বলেছেন,
"আশ্চর্য! এই একটি ভুল জীবনে বারবার করি। 'মাটির পুতুল', আমরা আশা করি তার কাছে কিছু পাওয়ার, যার না আছে দেওয়ার ইচ্ছা, না আছে সাধ্য৷ আশা করি এবং নিরাশ হই। অথচ শান্তি ও সান্ত্বনার ডালি সাজিয়ে যিনি প্রতীক্ষায় আছেন আমার জন্য, কখন হাত পেতে দাঁড়াবো তাঁর দুয়ারে, তাঁর কথা আমরা ভুলে যাই।"(১৩)
বিপদ তখনই নিয়ামত, যখন তা আমাদের সাথে আমাদের রবের বন্ধন দৃঢ় করে; আর তখন শাস্তি, যখন তা আমাদেরকে রবের থেকে দূরে সরায়।
চলুন দেখে নেই কী করলে- বিপদগুলো স্রেফ বিপদ হয়ে আমাদের কিছুদিন কষ্টে রেখেই সময়ের স্রোতে বয়ে যাবে না, বরং তা বিদায় নেয়ার সময় আমাদের সাথে আমাদের মহান রবের বন্ধন আরও দৃঢ় করে দিয়ে যাবে।
ইস্তিরজা:
যেকোন বিপদে পতিত হলেই পড়ুন ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন’ অর্থাৎ ‘নিশ্চয় আমরা আলাহর জন্য এবং আমরা তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাব।‘(১৪)
বিশ্বাস ও ধৈর্য:
বিশ্বাস: কোন বিপদ ঘটে গেলে এই বিশ্বাস রাখুন যে, এটি আল্লাহর ফায়সালা ও নির্দেশমতোই ঘটেছে।
ধৈর্য: আল্লাহর থেকে প্রতিদানের আশায় ধৈর্য ধারণ করে সেই কষ্ট সহ্য করুন।
ঈমাম ইবনু কাসির (রহ.) মতে, এই দুটি কাজ করতে পারলে, আপনার কষ্টের ক্ষতিপূরণ স্বরুপ আল্লাহ অন্তরকে সৎপথে পরিচালিত করবেন, ঈমানকে সুদৃঢ় করবেন, যা কিছু হারিয়েছেন তাঁর পরিবর্তে সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ অথবা এরচেয়েও ভাল কিছু আপনাকে দান করবেন। (১৫)
দু'আঃ
ধৈর্য, প্রশান্তি ও নিরাপত্তা- এই শক্তিশালী বিষয়গুলো দুর্বল মানবচিত্ত থেকে উৎসারিত হয় না, তা আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়ামত হিসেবে আসে।(১৬) বিপদে পড়লে আমাদের সর্বপ্রথম কাজ হলো, কল্যাণের ফায়সালার জন্য দু’আ করে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া, ধৈর্য ও প্রশান্তি চাওয়া। যদি এ দুটো সম্বল থাকে, তবে তা-ই আপনার জন্য দৃঢ় ও অটল-অবিচল থাকার জন্য যথেষ্ট।(১৭)
আল্লাহ তা'আলার কাছে এমন দৃঢ়তা অর্জনের দু’আ করুন, যেন যত শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় জীবনে বয়ে যাক না কেন, আকাশপানে তাকিয়ে বলতে পারেন–"যা-ই ঘটুক, তাতে কী এমন হবে? আমার দ্বারা আমার রব্ব অসন্তুষ্ট হবার মতো কিছু না হলেই হলো।"
তাওয়াক্কুলঃ
পরিস্থিতি যতোই কঠিন হোক, পুরো বিষয়টা আল্লাহর উপর ন্যস্ত করে নির্ভার হয়ে যান।(১৮) হৃদয় দিয়ে অনুভব করে এই দুটো আয়াত পড়ে দেখুন তা কীভাবে আপনার সমস্ত দুঃখ ও কঠিন বোঝাকে হালকা করে দেয়-
“যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেনই। নিশ্চয় আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।“(১৯)
যেসব বিষয় অনিশ্চিত, অজানা কিংবা আশঙ্কার, সেসব ব্যাপারে আমরা কেন তাঁর উপর ভরসা করতে পারি না যিনি আমাদের প্রতি আমাদের মায়ের চেয়েও দয়াশীল?
প্রিয় পাঠক, আসুন আল্লাহর কাছে দু'আ করে, ভিক্ষা চেয়ে একবার আল্লাহর উপর ভরসা করা শিখে ফেলি; তারপর দুনিয়ার কোনো বিপদকেই বিপদ মনে হবে না। ভীষণ বিপদেও প্রশান্তি ব্যতিত অস্বস্তিকর কোনো অনুভূতিই অন্তরে জায়গা পাবে না।
আল্লাহর রহমতঃ
যত বড় বিপদের কালো মেঘই জড়ো হোক না কেন; আপনি সেই মুহূর্তেও আল্লাহর রহমতের বারিধারা বর্ষণের আশা করুন, অন্বেষণ করুন।
মূলত, রবের সাথে সম্পর্ক যত গভীর হবে, রবের প্রতি সুধারণা যত দৃঢ় হবে, বিপদ তত তুচ্ছ মনে হবে, বিপদের সময়ও তত বেশি মানসিকভাবে শক্ত থাকতে পারবেন।
তাকদীরের প্রতি সন্তুষ্টি:
আমাদের অশান্তির সিংহ ভাগই বোধহয় এমন কিছু, যা আমরা পরিবর্তন করতে পারি না, বা করা সম্ভব নয়। এই অযথা অশান্তিকে প্রশ্রয় না দিয়ে আমাদের কাজ হলো, ইচ্ছেশক্তি প্রয়োগ করে যা আমরা , তা মেনে নিয়ে তাকদিরের উপর সন্তুষ্ট হওয়া।
যে বিষয়গুলো স্মরনে রাখা প্রয়োজন:
• জীবনের সমস্ত বিপদ-আপদই পূর্বনির্ধারিত।(২০)
• আল্লাহর নির্দেশ ছাড়া কোন বিপদই আসে না।(২১)
• মুমিনের জীবনে যে বিপদই আসুক না কেন, তা তার জন্য কল্যাণকর।
• মুমিন জীবনের সর্বক্ষেত্রেই জান্নাতি-সুখ অনুভব করে, কারণ সে আল্লাহর প্রতিটি সিদ্ধান্তেই সন্তুষ্ট থাকে। এটা সেই জান্নাতি সুখ, ইবনে তাইমিয়া রহঃ দুনিয়ার যে জান্নাতের কথা বলেছেন। আর এই সুখের ভিত্তি হলো তাকদীরের উপর সন্তুষ্টি। যতক্ষণ কেউ আল্লাহর ফায়সালার উপর সন্তুষ্টির বিশ্বাস স্থাপন করবে না, ততক্ষণ সে প্রশান্তি লাভ করতে পারবে না।
যত সম্পদ, যশ-খ্যাতি-সম্পদ-প্রতিভা কারও থাকুক না কেন, সে চাইলেই তার সমস্ত ইচ্ছে পূরণ করতে পারবে না। মানুষকে দুর্বলভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ায় কোনো না কোনো পর্যায়ে এসে সে অসহায় হতে বাধ্য।
হাদিসে দুনিয়াকে মুমিনের জন্য কারাগার বলা হয়েছে, যা ইচ্ছে পূরণের কারখানা নয়।
মূলকথা, এই মূলনীতি বিশ্বাসে গেঁথে নিন- আল্লাহ যা চান তা-ই করেন। আমাদের উপর যে বিপদ এসেছে, তা না-আসার ছিল না। আর যে বিপদ আসেনি, তা আসার ছিল না। কলম শুকিয়ে গেছে। সুতরাং অভিযোগ ও হা-হুতাশ না করে আল্লাহ তা’আলার ফায়সালার সামনে আত্মসমর্পন করুন।
সর্বাবস্থায় তাকদীরের প্রতি সন্তুষ্ট থাকার সিদ্ধান্ত নিন। অজ্ঞাত শঙ্কা থেকে চিরমুক্তি মিলবে ইনশা আল্লাহ।(২২)
রবের ফায়সালার ব্যাপারে সুধারণা
আল্লাহ আপনার জন্য যা নির্ধারণ করেছেন তা আপনার নিজের নির্বাচনের থেকে উত্তম।(২৩) প্রত্যেক কাজেই আল্লাহ তা'আলার হিকমাহ রয়েছে, যে ব্যাপারে আমরা অজ্ঞ। দৃশ্যমান জগতেই আমাদের জ্ঞান সীমাবদ্ধ।
এই ব্যাপারে মালিক ইবনে দিনার (রহঃ) এর একটি চমৎকার ঘটনা রয়েছে। আল্লাহ তাঁর মেয়েকে দুনিয়া থেকে নিয়ে, মূলত তাঁকে বাঁচিয়েছিলেন। তাঁর মেয়েকে হারানোর পর তিনি হয়েছিলেন পৃথিবীর বুকে হেঁটে যাওয়া শ্রেষ্ঠ মানুষদের একজন; পেয়েছিলেন এমন এক নির্মল জীবন, যে জীবনের প্রতি পদে পদে উন্নীত হয়েছিলেন এক অনন্য উচ্চতায়।
তাঁর দুনিয়াবী জীবনের এইযে সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটি হারানো- তাঁর জন্য মূলত বিপদ ছিল, নাকি নিয়ামত?
আলেমগণ বলেন, অনেক সময় এমন হয়, আল্লাহ তা’আলা বাহ্যিকভাবে আপনাকে দিয়েছেন, কিন্তু বাস্তবে বঞ্চিত করেছেন। এমনও হতে পারে, বাহ্যিকভাবে বঞ্চিত করেছেন, বাস্তবে দান করেছেন। (২৪)
আমাদের জ্ঞান বড় সীমিত, যা দ্বারা আমরা অনেকসময় বুঝতে সক্ষম হই না- পার্থিব স্বচ্ছলতা-অস্বচ্ছলতা রবের সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টির নির্ণায়ক হতে পারে না।
১০
চিরস্থায়ী বিপদ ও নিয়ামতঃ
আল্লাহ তা’আলা বান্দাকে দুনিয়ায় এমন কোন বিপদে ফেলেন না, যা সহ্য করার ক্ষমতা তার নেই।(২৫) আমাদেরকে বরং সেই মহা বিপদ নিয়ে গভীরভাবে ভাবা উচিত- যার সময়সীমা ১ দিন হলেও, তা ভোগ করার ক্ষমতা আমাদের নেই।
মৃত্যুটা খুব বড় বিপদ নয়, বরং ভয়াবহ বিপদ হলো সেটাই, যা মৃত্যুর পর ঘটবে।(২৬)
দুনিয়ার বিপদও ক্ষণস্থায়ী, নিয়ামতও ক্ষণস্থায়ী। দুনিয়াতে যত বড় বিপদই আসুক না কেন, তা একসময় কেটে যায়। কিন্তু আখেরাতের বিপদে? মৃত্যুর পরে যদি গন্তব্য হয় জাহান্নাম, সেই লেলিহান শিখার এক মুহূর্তের স্পর্শ সহ্য করার ক্ষমতা কি আছে আমাদের?
দুনিয়ার অনিশ্চিত কোনো বিপদের সামান্য আশঙ্কাও আমাদের কাবু করে ফেলে; অথচ আখেরাতের মতো একটি অনিবার্য বিষয় আমাদের মাঝে কোন প্রভাব ফেলে না!”(২৭)
এখন একটা চমৎকার বিষয় লক্ষ করুন- জাহান্নামের স্মরণ ও কল্পনাকে যদি কাজে লাগানো যায়, গুনাহ থেকে বিরত থাকা সহজ হবে।
আমার কথা হলো, জাহান্নামের মতো এক ভয়াবহ বিপদ থেকেও যদি ভাল কিছু বের করে আনা যায়; তাহলে আপনিই বলুন, দুনিয়ায় কি এমন কোন বিপদ থাকতে পারে, যে বিপদ থেকে ভাল কিছু বের করে আনা যাবে না!
১১
টাটকা গরম পানির মধ্যে আলু দিলে, তা ভেতর থেকে নরম হয়ে আসে, আবার ডিম দিলে তা ভেতর থেকে শক্ত হয়। একই গরম পানিতে কফির দানা দিলে, তা পানিটাকেই পরিবর্তন করে দেয়, কফিতে পরিণত করে।
প্রিয় পাঠক, আমরা ৩ জন ব্যক্তির কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম। এতটুক পর্যন্ত আসলে, আপনি বুঝে গেছেন, সেই তিন জনের মধ্য থেকে রহিম সাহেবই সফল ছিলেন। তিনি দুনিয়ার কল্যাণের জন্য যা করা প্রয়োজন তা করতে যেমন ভুল করেননি, সেই সাথে আখেরাতের পুঁজি অর্জন করতেও ভুলে যাননি। বিপদ ছিল তার জন্য নিয়ামত, দুনিয়া ও আখেরাত উভয় দৃষ্টিকোণ থেকে।
রহিম সাহেবের মতো আমাদেরও দৃঢ় হওয়া উচিত- জমিনে যা-ই ঘটুক, ফায়সালা তো হয় আসমানে।
“যাদের ফয়সালা হয় আসমানে তারা তো জমিনের ভয়ে ভীত নয়।“ আল্লাহ তা'আলা তো এজন্যই আপনাকে বিপদে ফেলেন, যেন আপনার অন্তরে এই চেতনা জাগ্রত হয়–এই দুনিয়ার বেলা ফুরাবার আগে যেন আপনি রবের কাছে ফিরে আসেন। আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টির চেয়ে শ্রেষ্ঠ নিয়ামত আর কি হতে পারে? (২৮)
যে বিপদ আপনার মাঝে জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের আকাঙ্খার বীজ বপন করে দিয়ে যায়, তাঁর সাথে ভালোবাসার বন্ধন দৃঢ করতে সহযোগিতা করে, যে বিপদ তাওবার বদ্ধদুয়ার উন্মোচন করে; সেই বিপদের চেয়ে বড় নিয়ামত এই ক্ষণিকের জীবনে আর কী হতে পারে বলুন তো?
এমন বিপদে পড়লে তো আপনি বাস্তবে কিছুই হারাননি, বরং বাহ্যিক দৃষ্টিতে দুনিয়ার মাপকাঠিতে যত বড় ক্ষতিই হোক না কেন, আপনি সবকিছুই পেয়ে গেলেন।
যে বিষয় আপনার উদাসীনতা দূর করে আপনার অন্তরে এক তীব্র অনুভূতি জাগ্রত করে, আল্লাহর সন্তুষ্টির মতো সবচেয়ে বড় নিয়ামত অর্জনের জন্য, এরচেয়ে উত্তম কিছু আর কী হতে পারে?
আমাদেরকে বিপদকে নিয়ামত হিসেবে নেয়ার মাঝে এক বিরাট বাঁধা হল বস্তুজগতে অভ্যস্ততা। আমাদের চশমা (পড়ুন, দৃষ্টিভঙ্গি) বদলাতে হবে। পার্থিব লাভ-ক্ষতির চশমায় দুনিয়া দেখলে চলবে না। এটা আল্লাহর বিশেষ রহমত যে, তিনি আমাদের বেছে নিয়েছেন তাঁর দ্বীন মেনে চলার জন্য।
আমাদের চোখের সামনে থাকতে হবে সেই চশমা, যা দিয়ে সমস্ত কিছু আখিরাতের লাভ-ক্ষতির ফিল্টার হয়ে প্রবেশ করবে আমাদের অন্তরে। তবেই আমরা এই পার্থিব জীবনের বিপদগুলো নিয়ামতরূপে দেখতে পারবো।
বিপদ কীভাবে নিয়ামত হতে পারে কুর’আনে এর চমৎকার একটি উদাহরণঃ
অসহনীয় যন্ত্রণাও অনেক সময় লুকায়িত রহমত হয়ে থাকে।
মারইয়াম (আঃ) যন্ত্রণার কারণে মৃত্যু কামনা করেছিলেন।
"হায়! এর আগে যদি আমার মৃত্যু হতো।"(২৯) অথচ তাঁর গর্ভে ছিলেন একজন নবী যিনি মানুষের জন্য রহমত হয়ে এসেছেন।(৩০)
প্রিয় পাঠক, যদি কখনো মনে হয় যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল, গোটা জীবন তছনছ হয়ে গেল; যদি এমন পরিস্থিতে হারিয়ে আপনার মন ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যায়; সবর করুন ও আল্লাহর ফায়সালার উপর সন্তুষ্ট হয়ে অন্তরের সেই ভাঙ্গা টুকরো গুলো নিয়েও স্বপ্ন দেখুন সেই জীবনের– যে জীবনে কোন কিছুই ভেঙ্গে যায় না, যে জীবনের প্রশান্তি অনন্তকালের, যে জীবনে বিপদের কোন ছিটেফোঁটা নেই, আছে কেবল নিয়ামতের অসীম বারিধারা।
প্রিয় দুটো লাইন দিয়ে শেষ করছি; যে দুটো লাইন পুরো লেখার মূল বক্তব্যের সাথে মিলে যায়-
“সে কি পেল, যে আল্লাহকে হারাল?
সে কি হারালো, যে আল্লাহকে পেল?”(৩১)
.
বিপদ যখন নিয়ামত
তাহসিন কামাল

❝ আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ লিখেছেন, একজন স্ত্রীর মধ্যে চারটি গুণ থাকা আবশ্যক। four must have qualities in a wife

 

❝ আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ লিখেছেন, একজন স্ত্রীর মধ্যে চারটি গুণ থাকা আবশ্যক।
.
প্রথম গুণ: চেহারায় লাজুকতা থাকা।
.
বলাবাহুল্য, যে নারীর চেহারায় লাজুকতা থাকবে, তার অন্তরেও নিশ্চিত লজ্জা থাকবে। প্রবাদে বলে, চেহারা মনের আয়না। চেহারায় তাই ফুটে ওঠে যা অন্তরে বিদ্যমান থাকে৷ চেহারায় লজ্জা থাকলে বোঝা যাবে তার অন্তরে লাজুকতা রয়েছে।
.
হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) এর বিখ্যাত বাণী, 'পুরুষদের জন্য লজ্জা উত্তম আর নারীদের জন্য লজ্জা অতি উত্তম'।
.
দ্বিতীয় গুণ: মুখে মিষ্টতা থাকা।
.
অর্থাৎ তার কথা শুনলে মন জুড়িয়ে যাবে। স্বামীর সাথে কড়া কথা বলবে না। বাচ্চাদেরকে ধমক দেবে না। সবসময় শান্ত ও মিষ্টি সুরে কথা বলবে। আচরণ ও উচ্চারণে মাধুর্য থাকবে।
.
তৃতীয় গুণ : অন্তর সৎ হওয়া।
.
চতুর্থ গুণ : হাত সর্বদা কাজে ব্যস্ত থাকা।
.
যার মধ্যে এই গুণগুলো থাকবে, সে-ই উত্তম স্ত্রী। ❞
- শাইখ যুলফিকার আহমদ নকশবন্দী (হাফি.)
[ তাকওয়া ও আত্মশুদ্ধি, পৃ:৩৬; অনু: আবু জারীর আবদুল ওয়াদুদ, মাকতাবাতুল আযহার ]

ভুল

 

" আপনার মেয়ে বিয়ের পরে অন্য একটা ছেলের জন্য বিষ খেয়েছে, ওরকম মেয়ে তো থাকার থেকে না থাকাই ভালো! ভালোই হয়েছে মরে গেছে। এরকম মেয়েদের মরাই উচিৎ। খুব তো হুজুরগীরি দেখাতো অথচ তলে তলে এতো কিছু। আমি আগেই বুঝতে পেরেছিলাম ঘুমটার নিচে যে খ্যামটা নাচে। কেন যে আম্মা রনি ভাইয়ের জন্য এরকম একটা দুশ্চরিত্রা ক্ষ্যাত মেয়ে পছন্দ করেছিলেন? রনি ভাইয়ের জীবনটা একেবারে নরক হয়ে গেলো। এতো সুন্দর স্মার্ট একটা ছেলে তাকে রেখে যদি বউ বাইরে গিয়ে আকাম-কুকাম করে তাহলে তার জীবনটা কি আর জীবন থাকে!" কথাগুলো বলে একটা তৃপ্তির ঢেকুর তুলল সুমুর বড় জা মালিহা। মনে মনে বেশ ভালো লাগছে তার। এই মেয়ে একেবারে শাশুড়ীর প্রাণ বায়ু ছিলো এবার দেখুক মালিহার থেকে ভালো আর কেউ নেই! ট্রেনে উঠে সুমুর বাবাকে দেখতে না দেখতেই এতো গুলো কথা বলে ফেলল সুমুর বড় জা।
সুমুর বাবা নাদিম শেখ নিরব দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করলেন সুমুর শশুড়বাড়ির প্রতিটি মানুষকে। সুমুর শাশুড়ীর মুখ বেশ গম্ভীর। সুমুর শশুর, শাশুড়ী, বড় জা আর বড় ভাসুর । নাদিম শেখ ভেবে পায়না মানুষ এতোটা কান্ডজ্ঞাণহীন হয় কিভাবে? সুমু তার একটা মেয়েই। সেই মেয়েটা কাল রাতে মারা গেছে সেই কষ্টটা সামলাতেই পাথর হয়ে গেছেন তিনি আর এই মানুষগুলো এসেছে তার নিত্য তৈরি হওয়া কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিতে। হায় মানুষ, কবে তোমরা আসল মানুষ হবে? কবে তোমাদের ছোটো ছোটো কথার আঘাতে অন্যের হ্রদয়ের ক্ষত বিক্ষত হওয়া দেখবে?
একবুক কষ্ট নিয়ে সুমুর মায়ের দিকে তাকালো নাদিম শেখ। তার কোলের উপরে চুপটি করে ঘুমিয়ে আছে সুমুর মা। কান্না করতে করতে চোখমুখ ফুলে গেছে একদম। কয়েকটা ঘন্টায় যেনো কতো বড় ঝড় বয়ে গেছে চেনা পরিচিত মুখটায়। তাও ভালো হয়েছে সুমুর মা ঘুমে নাহলে কথা গুলো শুনে আরো বেশি কষ্ট পেতো।
আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা বড় দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন নাদিম শেখ। হটাৎ খেয়াল হলো তিনি আজ জানালার পাশের সিটটাতে বসেছেন। অথচ বিয়ের এতোগুলা বছরে সবসময় সুমুর মা বাচ্চাদের মতো জেদ করে জানালার পাশের সিটটাতে বসেছে। এই দীর্ঘ ৩১ বছরে কখনোই এই নিয়মের ব্যাঘাত ঘটেনি। আর আজ? সুমুর মায়ের এতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার মাথায় নেই!
বিয়ের ৯ বছর পরে কোনো এক বৃষ্টিমুখর রাতে সুমুর অস্তিত্বের খবর জানতে পেরেছিলেন নাদিম শেখ । এতোটা খুশি তিনি জীবনে আর কবে হয়েছিলো মনে পড়ে না। তারপর আস্তে আস্তে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ! যেদিন সুমু জন্ম নিলো। সেইদিনটা এখনো স্পষ্ট মনে পড়ে নাদিম শেখের। তার মা ছোট্ট একটা পরী এনে দিলেন তার কোলে। পাখির ছানার মতো ছোটো ছোটো হাত পা, ছোট্ট একটা মাথা। নাদিম শেখের আনন্দের দিনের তো সেই শুরু।
সুমুর ছোটো বেলা থেকে শুরু করে বিয়ে দেয়ার আগে পর্যন্ত এই একুশ বছরের প্রতিটা প্রতিক্রিয়া মনে করার চেষ্টা করলো নাদিম শেখ। খুব বেশি চেষ্টাও করতে হলো না তাকে স্মৃতি যেনো হরহর করে জানান দিচ্ছে তাদের উপস্থিতি। তার মেয়ে ছোটো থেকেই বেশ বুদ্ধিমতি ছিলো কিন্তু মনটা ছিলো তুলোর মতো নরম। আজ সুমুর বড় জা যেভাবে কথাগুলো বললো সুমুকে কেউ ভয়াবহ কষ্ট দিলেও সে এরকম কথা কখনোই বলতো না। ছোটো থেকেই মেয়েটার ছিলো ইসলামের প্রতি বেশ ঝোক। নামাজ, রোজা, আমল আর উত্তম আখলাক এর সুন্দর একটা উদাহরণ ছিলো সুমু। এক ওয়াক্ত নামাজ বাদ দিয়ে পার পেতো না নাদিম শেখ অমনি সুমুর হাজারটা যুক্তির ফেরে বিপদে পড়ে যেতেন তিনি।
একদিন তার সুমুটা একটা পাখির ছানা নিয়ে বাসায় আসলো। প্রশ্ন করলাম, " এটা কোথা থেকে এনেছো মা?" সুমু কিছুটা অপরাধী ও উৎফুল্লের সাথে পাখি আনার ঘটনা বললো। ছাদে চিলেকোঠার অইখানে একটা পাখির বাসা ছিলো। সেখানে চারটা পাখির ছানা দেখেছিলো সুমু আর নিচের ফ্ল্যাটের মেয়ে রাহা। তারপর অনেক কসরত করে সেই পাখির বাসা নিচে নামিয়ে দুইটা ছানা রাহা আর দুইটা এনেছে সুমু। নাদিম শেখ সেদিন সুমুকে বলেছিলো," সুমু মা তোমাকে যদি আমাদের কাছে থেকে কেউ অন্যকোথাও নিয়ে যায় আমাদের অনেক কষ্ট হবে না ? তোমরা যে পাখির ছানা গুলো নিয়ে এসেছো এখন পাখির আব্বু আম্মু যখন বাসায় এসে দেখবে তাদের ছানা গুলো সেখানে নেই পাখিগুলো অনেক কষ্ট পাবে না? আর কোনো জীবজন্তকে কষ্ট দিলে আল্লাহ যে অনেক গুনাহ দিবে মা। "
আর বেশি কিছু বলার প্রয়োজন পড়েনি সেদিন সুমুকে। সুমু নাদিম শেখকে নিয়ে চিলেকোঠায় গিয়ে পাখির ছানা গুলো দিয়ে এসেছিলো। বাসায় এসেই সুমুর সেকি মন খারাপ! ওর মাকে বারবার জিজ্ঞাসা করছিলো কি করলে আল্লাহ ওকে গুনাহ দিবে না? কোন কাজগুলো করলে আল্লাহ ওকে মাফ করে দিবে? ওর বারবার প্রশ্নের কারণে ওর মা হয়তো বলেছিলো, " আল্লাহর কাছে তওবা করে অই কাজ আর না করলে আল্লাহ মাফ করে দিবেন। "
তারপর ওর দাদুর কাছে জিজ্ঞাসা করেছে তওবা কিভাবে করে? ও তওবা করবে। ওর দাদু সেভাবে বুঝতে না পারাতে আমার কাছে জিজ্ঞাসা করেছে, " তওবা কিভাবে করে বাবা ?"
আমি বেশ অবাক হয়েছিলাম ওর প্রশ্নে। তওবা কিভাবে করে সেটা ও জেনে কি করবে? পরে বুঝতে পারলাম ঘটনা। ওকে বললাম, "অজু করে আসো তো সুমু মা।" সুমু অজু করে একদম জায়নামাজ হিজাব নিয়ে এসেছে দেখলাম। ওকে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়তে বললাম। নামাজ শেষ হলে বললাম, " এখন আল্লাহ তোমাকে যে নেয়ামত গুলো দিয়েছে সেগুলোর শুকরিয়া আদায় করো। আল্লাহর যে নাম গুলো তুমি মুখস্থ করেছো সেগুলো বলে আল্লাহকে ডাকো। আল্লাহকে বলো তুমি নিজের উপর জুলুম করেছো এখন তওবা করছো আর কখনো অই কাজ করবে না। তারপর আল্লাহর কাছে মাফ চাও।" তারপর আমার কথা মতো ও অনেকক্ষণ ধরে মোনাজাত করলো। কান্নাও করলো দেখলাম। এরপর বড় হয়েও এই অভ্যেসটা বজায় রেখেছিলো সুমু।
তারপর ঘুমাতে যাওয়ার আগে পরে যখন মনে পড়ে তখনই ওর মাকে আর আমাকে এসে প্রশ্ন করছে ওকে আল্লাহ মাফ করে দিয়েছে কিনা। যখন বলি আল্লাহ অনেক দয়ালু মা। আল্লাহ তোমাকে অবশ্যই মাফ করে দিবে। তখন খুব খুশি হয়ে যায় ওর মায়া মায়া মুখটা। এখনো চোখ বন্ধ করলে সব যেনো স্পষ্ট হয়ে উঠে নাদিম শেখের কাছে। দিনে কতোবার যে এই একই প্রশ্ন করতো আর যখন বলা হতো আল্লাহ অনেক দয়ালু তোমাকে অবশ্যই মাফ করে দিবে প্রতিবারই খুশিতে জ্বলজ্বল করতো সুমুর মুখটা।
সুমুর হয়েছিলো একদম ওর মায়ের মতো দেখতে। শুধুমাত্র ওর নাকটা হয়েছিলো নাদিম শেখের নাকের মতো বেশ তীক্ষ্ণ। নাক তীক্ষ্ণ হয় কিভাবে সেটা জানা নেই নাদিম শেখের তবে ওর নাক নিয়ে কথা উঠলে সবাই এটাই বলতো। তাই নাদিম শেখও সুমুর বেলায় ঠিক সেই উদাহরণটাই ভাবতো। আরেকটা জিনিসের সাথে সুমুর সাথে নাদিম শেখের বেশ মিল ছিলো সেটা হচ্ছে হাত পায়ের নখ। নাদিম শেখ মাঝে মাঝেই সুমুর সাথে বসে ওর হাত পায়ের নখের সাথে নিজের নখ মিলিয়ে দেখতো। একদম নাদিম শেখের নখের মতো নখ শুধু মাত্র আকারে হালকা ছোটো এই যা।
অনেক রাত হয়ে এসেছে ঠিক কয়টা বাজে তা ঠাওর করতে পারছে না নাদিম শেখ। ট্রেন চলছে একটা খটখট শব্দ করে। তাছাড়া আর তেমন কোনো শব্দ নেই আশেপাশে। সুমুর শশুরবাড়ির সবাই ঘুমে। তাদের কারো কোনো বিকার নেই এই মানুষদুটোর কষ্ট সম্পর্কে। তারা তাদের মতো অভিযোগ করেই যাচ্ছে। সুমুকে নিয়ে যে কথা গুলো বলছে ওরা যে অপবাদ গুলো দিচ্ছে তার মেয়েটার উপর অন্যসময় হলে হয়তো এদের মাথা ফাটিয়ে ফেলতো নাদিম শেখ। কিন্তু আজকে তার কিছুই বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না। প্রবাদে আছে না,
" অল্প সুকে কাতর, অধিক সুকে পাথর "। পাথরই হয়ে গেছে নাদিম শেখ। অনেক চেষ্টা করেও একফোঁটা পানি আসছে না চোখে। কান্না আসলেই এক অদ্ভুত ব্যাপার। কখনো না চাইতেই চোখের কোনে উঁকি দেয় আর কখনো অনেক চেষ্টার পরেও দেখা মেলে না তাদের। নাদিম শেখ আল্লাহর প্রত্যেকটা ফয়সালাই হাসি মুখে মেনে নেয়। যুদ্ধ যতো কঠিন হোক আত্মবিশ্বাসের সাথে লড়ে যায় একজন লড়াকু সৈনিকের মতো। কিন্তু আজ যে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না নাদিম শেখ। সুমু কি শুধু তার মেয়ে সুমু তো তার বেঁচে থাকার অক্সিজেন। আজ সেই অক্সিজেন টাই নাকি নেই। নেই মানে কোথাও নেই। আর কখনোই নাদিম শেখের অক্সিজেন হবে না তার সুমু মা।
নাদিম শেখ অনেক চেষ্টা করেও তার অবচেতন মনকে বিশ্বাস করাতে পারছে না যে সুমু আত্মহত্যা করেছে তাও আবার পর পুরুষের জন্য। নাদিম শেখের কেনো বেশি কষ্ট হচ্ছে সুমুকে হারানোর জন্য নাকি সুমু সম্পর্কে এসব বাজে কথা শোনার জন্য? ঠিক বুঝতে পারছে না নাদিম শেখ। অন্তরটা যেনো ফালা হয়ে গেছে সুমু নেই খবরটা শোনার পরে থেকে। আর তাতে নুন আর মরিচের গুঁড়ো ছিটানোর জন্য তো কথার অভাব নেই।
কিছুদিন পর পর নাদিম শেখের কাছে রনি ফোন দিয়ে সুমুর নামে বিচার দিতো। সুমু নাকি ওর কোনো কথা শুনে না। তারপর সুমুর সাথে কথা বলার সময় ওর মা আর নাদিম শেখ সুমুকে খুব বোঝাতো জামাইয়ের কথার অবাধ্য না হতে। কিছুদিন পর পর জামাইয়ের বিচারে অতিষ্ঠ হয়ে গেছিলো নাদিম শেখ। লাস্টে সুমুকে বলেছে জামাইয়ের কথা না শুনলে তোর সাথে আমরা কেউ কথায় বলবো না। সুমু বরাবরই চুপ করে থাকে আর শুনে যায়। কোনটা যে ঠিক আর কোনটা বেঠিক সেটা বোঝার উপায় নেই। সুমুকে কোনো ফোন ইউজ করতে দিতো না রনি। আর রনি বেশ রাতে ফেরার কারণে শুক্রবার ছাড়া কথা বলতে পারতো না সুমুর সাথে। পঁচিশ দিন যাবত সুমুর সাথে কথা হয়না নাদিম শেখের। জামাইয়ের কথা শুনে না তাই একটু শাসন তো করতেই হয়। অবশ্য নাদিম শেখের কলিজাটা ছিন্নভিন্ন হয়ে যেতো সপ্তাহে একটা দিন সুমু মায়ের সাথে কথা না বলে।
নাদিম শেখের কাছে ব্যাপারটা কেমন রহস্যময় লাগছে। এতোক্ষণ মনের সাথে যতোই যুদ্ধ করুক তার ভেতরটা বারবার জানান দিচ্ছে সুমু কখনোই এরকম কাজ করতে পারে না। যে মেয়ে আল্লাহর ভয়ে একটা ছেলের দিকে পর্যন্ত তাকাতো না সেই মেয়ে মাত্র ১১ টা মাসে এতো পরিবর্তন হতে পারে না। যদিও কোনো ভাবেই ব্যাপারটা নাদিম শেখের বিশ্বাস হচ্ছে না কারণ সুমুর মা তো শোনার পরে থেকেই কেঁদে বুক ভাসাচ্ছে তার মেয়ে এরকম না এটা বলে। ঠিক এই একই কথাও নাদিম শেখ নয় নাদিম শেখের পুরো অস্তিত্ব জানে। তার মেয়ে কোনোভাবেই আত্মহত্যা করতে পারে না। কিন্তু তাহলে কেনো তার জামাই এরকম বললো। শুধু তাই নয় ওর জামাই এটাও বললো যে শুধু মাত্র এই ঘটনাটার জন্যই নাদিম শেখের কাছে জানাতো যে সুমু কথা শুনে না। কারণ এটা বলতে নাকি তার রুচিতে বাধতো। ভাবতো সময় দিলে হয়তো ঠিক হয়ে যাবে। নাদিম শেখ যেনো এক সাগরের অতলে হাড়িয়ে যাচ্ছে কাকে বিশ্বাস করবে সে এতোগুলো বছরের দেখা সুমুকে না তার তার যুক্তিসংগত ভাবে কথা বলা মেয়ের জামাইকে।
সারারাত কষ্টের সাগরে সাতরে সাতরে অবশেষে তবে সকাল হলো। অবশেষে তার সুমুকে সে দেখতে পাবে। ট্রেন থেকে নেমে সবাই পৌছালো সুমুদের বাসায়। তিনরুমের একটা আলিশান ফ্ল্যাটে থাকতো সুমু আর রনি। বিছানার একটা চাদর দিয়ে ঢেকে রাখা তার মেয়েটা হ্যা অইতো তার মেয়ে। কষ্টগুলো যেনো দলা পাকিয়ে বুকের ভেতর একটা ধাক্কা দিয়ে উঠলো।
সুমুদের লাইব্রেরীর মতো রুমটাতে ঢুকলো নাদিম শেখ। তার মেয়েটার বই পড়ার প্রতি ছিলো অদম্য আগ্রহ। হঠাৎই চোখ পড়লো কালো চামড়ার মোটা ডাইরিটার উপর। নাদিম শেখ যদি খুব ভুল না করেন তাহলে এটা সুমুর ডাইরি। হ্যা এটা অবশ্যই সুমুর ডাইরি। ডাইরিটা নিয়ে নিলো নাদিম সাহেব।
ফিরতি ট্রেনের পথ ধরেছে সবাই। আলাদা একটা কামরা বুক করা হয়েছে নাদিম শেখদের জন্য। সুমুর শশুড়বাড়ির কেউ এই কামরায় আসেনি। তাদের নাকি লাশের সাথে এক কামরায় যেতে ভয় লাগে। শুধু ভয় পান না এই দুটো মানুষ। যাদের নয়নের মণি আজ লাশ হয়ে গেছে। সুমুর মায়ের কান্নার আওয়াজে আর ট্রেনের খটখট শব্দে অদ্ভুত এক শব্দ তৈরি হয়েছে কামরার ভেতরে । মেয়েটার মাথা কোলে নিয়ে অনেকক্ষণ যাবত তাকিয়ে রইলো নিষ্পাপ মুখটার দিকে। আবারো খুব চেষ্টা করছে নাদিম শেখ একটু কান্না করতে। সুমুর মায়ের মতো কেদে একটু হালকা হতে। হঠাৎ করেই নাদিম শেখের মনে পড়লো ডাইরিটার কথা। পাশের ব্যাগটা থেকে ডাইরিটা হাতে নিলো।
প্রথম পেইজ উল্টাতেই চোখে পড়লো সুমুর হাতের ছোটো ছোটো লেখাগুলো। এটা ২০১৯ এর মে মাসের একটা দিন। যেদিন সুমুর পা কেটে গিয়েছিলো। সেটা লিখে রেখেছে সুমু। নাদিম শেখ মনে করার চেষ্টা করলো সুমুর বিয়ের ডেট। হ্যা ২০২০ এর ফেব্রুয়ারি মাসের ১৭ তারিখ বিয়ে হয়েছিলো সুমুর। পাতা উল্টে নাদিম শেখ চলে গেলো সেই ফেব্রুয়ারী মাসটাতে।
১১ ই ফেব্রুয়ারি,
" সেদিন যে ছেলেটা দেখতে এসেছিলো সেই ছেলের সাথে বিয়ে দিতে যেনো রাজি না হয় বাবা। ছেলেটাকে আমার মোটেও ভালো লাগে নি। দাড়ি তো নেই আর না আছে টাকনুর উপর প্যান্ট। আল্লাহ একটা দ্বীনদার জীবনসঙ্গী দিও আমাকে। রাব্বানা হাবলানা,,,,,,"
১৪ ফেব্রুয়ারি,
"বাবা কিভাবে যেনো রাজি হয়ে গেলো। মাকে বললাম ছেলেটা তো দ্বীনদার না মা। মা বললো সমস্যা কি বিয়ের পরে বানিয়ে নিবি। মা বাবা দুজনেই মুটামুটি ইসলাম মেনে চলে। তাদের কাছে আমি এরকমটা একদমই আশা করিনি। আল্লাহ হেদায়েত না দিলে কিভাবে মানুষ দ্বীনের পথে আসবে? আমার বিশ্বাস শেষ পর্যন্ত হলেও বাবা বুঝবে। "
১৭ ই ফেব্রুয়ারি,
"আজ আমার বিয়ে। বিয়ে নিয়ে কতো কতো স্বপ্ন দেখেছি, কতো ভাবনা সেগুলো আর তেমন একটা কাজ করছে না আজ। কিভাবে কাজ করবে স্বপ্নের মানুষটার সাথে যে বাস্তব মানুষটার কোনই মিল নেই। তাছাড়া কিভাবে একজন মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকবো আমি এটাও ভাবনার ব্যাপার। বাবা শেষ পর্যন্ত আর বুঝেনি। আমিও পারলাম না এতোদিনের ইচ্ছেটা প্রকাশ করতে। বাবা মা যা করবে আমার ভালোর জন্যই নিশ্চয়ই এই ভেবে চুপচাপ মেনে নিলাম সব। কেনো যে টাকাওয়ালা ছেলের জন্য আমাদের বাবারা দ্বীনদার ছেলেদের রিজেক্ট করে। "
লিখাটুকু পড়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো নাদিম শেখ। সুমু রাজি ছিলো না বিয়েতে। তিনি কিভাবে এতোবড় একটা ভুল করলেন? দোষ তো তারই ছেলেদের অবস্থা দেখে তিনি যেনো পাগলই হয়ে গেছিলেন।
৭ ই মার্চ,
" আল্লাহগো তুমি জানো কি চলছে আমার ভেতর। মানুষটা নামাজ ও পড়ে না। শুধু জুমাবারে মসজিদে যায়। আমিতো এরকম ছেলে চাইনি আল্লাহ। "
১০ ই আগস্ট,
" এই নিয়ে তিনবার উনি আমার গায়ে হাত তুলেছে। কি করবো আমি? পর্দা যে আমার জন্য ফরজ কি করে আমি তোমার অবাধ্য হয়ে ওনার কথা শুনি? ওনার ফ্রেন্ডদের সামনে বোরকা পড়ে গিয়েছি বলে ওনার নাকি সব প্রেস্টিজ লো করে দিয়েছি আমি। "
১৬ অক্টোবর,
" আমি আল্লাহর উপর ভরসা করে দুনিয়ার সব শখ আহ্লাদ ছেড়ে দিলাম। আমার আর প্রয়োজন নেই অন্যকারো ভালোবাসার। আমি আর কষ্ট পাবো না। ভেংগেও পড়বো না। যতো মারধর করে করুক আমি কোনোভাবেই বেপর্দা হয়ে কারো সামনে যাবো না।"
ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন নাদিম শেখ। তার ছোট্ট একটা ভুলের জন্য এতোটা কষ্ট পেয়েছে তার সুমু। অথচ এই নিষ্পাপ মেয়েটাকে নিয়ে এরকম একটা ঘটনা তৈরি করেছে ছি!
যে মেয়েটাকে ফুলের টোকা লাগতে দেননি এতোগুলা বছর সেই মেয়েটাকে এতোটা অত্যাচার করেছে পাষন্ডটা।
আপনা আপনি ধৈয্য হাড়িয়ে ডাইরিটার শেষ লিখাটায় চলে গেলেন নাদিম শেখ।
২৮ ই ডিসেম্বর
" এতো কিছুর মাঝেও আল্লাহ আমার জন্য একটা স্বস্তির খবর পাঠালো। আলহামদুলিল্লাহ আমি কনসিভ করেছি। এইতো আমার বেচে থাকতে আর কি লাগে। এইতো অনেক প্রশান্তি আমার!"
৬ ই জানুয়ারি, ২০২১
" আল্লাহগো আমার বাবুটার কিছু হতে দিও না। আমি অনেক দূরে চলে যাবো তবুও বাবুটার যেনো কিছু না হয়। আজকে অনেক মেরেছে আমাকে। বাচ্চাটা এবরশন করাতে বলে। বয়স হয়ে গেছে ৩২ এর উপরে এখনো নাকি বাবা হওয়ার বয়স হয়নি। থ্রেট দিয়েছে এবরশন না করালে আমাকে বিষ খায়িয়ে মেরে ফেলবে। আমি বাবার কাছে চলে যাবো। যদিও বাবা মার কাছে আমার নামে উল্টো পাল্টা বলেছে বলুক। অবশ্যই বাবা মা আমাকে বুঝবে। আমার সোনাটার তো কোনো দোষ নেই ওকে পৃথিবীর আলো দেখানোর পথে বাধা হয়ে দাড়াবো না আমি। সুস্থ একটা পরিবেশ পাবে আমার সোনাটা। এরকম অসুস্থ পরিবেশে না থাকাই ভালো আমার বাবুর। কোন সন্তান মেনে নিতে পারবে যে তার বাবা চরিত্রহীন! আল্লাহগো বাবার সাথে কথা বলার ব্যাবস্থা করে দাও। আমি আর পারছি না এই অসুস্থ পরিবেশে থাকতে। যখন তখন আমার পেটে লাত্থি দিতে পারে। আমার বাবুটা যে তাহলে আর পৃথিবীর আলো দেখবে না।
ট্রেন চলছে নিস্তব্ধ রাতের অন্ধকার চিড়ে। তার মাঝে ডুকরে কেঁদে উঠছে এক বুড়ো। সে তার জীবনের অনেক বড় একটা ভুল বুঝতে পেরেছে কিন্তু সময় হাড়িয়ে। আকাশের দিকে তাকিয়ে বুড়োটা চিল্লিয়ে বলে উঠলো, " আল্লাহগো সারাজীবন নিজেকে খুব দ্বীনদার মনে হতো। নামাজ, রোজা, নফল আমল, সুন্নাত ইবাদাত কতো ইবাদতই না করেছি। আজ সেসব তুচ্ছ মনে হচ্ছে আল্লাহ। আমিতো তোমাকে সত্যি ভালো বাসতে পারনি আল্লাহ। যদি পারতাম তাহলে তোমার উপর ভরসা করে মেয়েটাকে একটা দ্বীনদার পাত্রের হাতে তুলে দিতে পারতাম। আমার একটা ভুলের জন্য আমার মেয়েটার জীবন যে নরক হয়ে গিয়েছিলো আল্লাহ ভুলের মাসুল ও আমার সুমু মা দিলো। আজ পৃথিবীর প্রত্যাকটা বাবাকে বলতে ইচ্ছে করছে আপনারা নিজেদের ঈমানের পরিক্ষা এই যায়গাটাতে এসে দিন। আপনার মেয়েটাকে কম আয়ের হলেও একটা দ্বীনদার পাত্রের হাতে তুলে দিন। আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। নাহলে আমার মতো হ্যা আমার মতো অনেক পরে এসে বুঝতে পারবেন। আপনাদের সুমুরা সবাই হয়তো আমার সুমুর মতো মারা যাবে না তবে যতোদিন বেচে থাকবে এক নরকের মতো জীবন যাপন করতে হবে।
আচ্ছা সুমু মার মৃত্যুর জন্য কে বেশি অপরাধী ? রনি নাকি নাদিম শেখ নিজে!
ভুল
Taiyeeba Tania

ভালোবেসে সংশোধন

 

আপনি আপনার স্কুল-কলেজ-ভার্সিটির শিক্ষকের মেয়েকে পছন্দ করেছেন। তাকে ভালোবাসেন, তার সাথে প্রেম করতে চান। অথবা আপনি আপনার মাদ্রাসার হুজুরের মেয়েকে পছন্দ করেছেন। এখন তাকে বিয়ে করতে চান।
নিজেকে ঐ ছেলের জায়গায় চিন্তা করুন। মনে করুন, আপনিই সেই ছেলে। এখন আপনার মানসিক অবস্থা আর ভয় কীরকম কাজ করছে? আপনি ঐ স্যারের/হুজুরের সামনে দাঁড়াতে পারবেন?
স্যাররা সবাই টিচার্স রুমে বসে আছেন অথবা হুজুর অন্যান্য হুজুরদের সাথে রুমে বসে আছেন। আপনি কি সাহস করে সবার সামনে গিয়ে বলতে পারবেন, “স্যার/হুজুর, আমি আপনার মেয়েকে পছন্দ করেছি। তার সাথে প্রেম/বিয়ে করতে চাই।”
ঐ মুহূর্ত কল্পনা করতেই তো পা থরথর করে কাঁপার কথা! এরকম কথা কি সরাসরি মেয়ের বাবা, যিনি আমার শিক্ষক, তাকে বলতে পারবো?
আপনি চিন্তা করুন, আপনি এলাকার চেয়ারম্যান/কাউন্সিলরের মেয়েকে পছন্দ করেছেন। চেয়ারম্যান/কাউন্সিলরের সাথে অন্যান্য লোকেরা যখন বসে আছে, আপনি সাহস করে বলতে পারবেন- “আপনার মেয়েকে আমি বিয়ে করতে চাই?”
স্বাভাবিকভাবে বুঝাই যাচ্ছে যে, এসব ক্ষেত্রে আমাদের জড়তা কাজ করবে। এমন জড়তা কাজ করাটাই তো স্বাভাবিক। তিনি তো আমার বন্ধু না যে, তাকে গিয়েই বলতে পারবো- ‘আমি আপনার মেয়ের সাথে প্রেম করবো’। তিনি আমার শিক্ষক, আমার এলাকার পাওয়ারফুল একজন ব্যক্তি।
সাহাবীদের কাছে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কতোটা ভরসার পাত্র ছিলেন চিন্তা করা যায়? মন খুলে নিজের সুখ-দুঃখ বলা যায়, এরকম মানুষ হিশেবে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কেমন ছিলেন, ভাবা যায়?
তিনি আল্লাহর প্রেরিত রাসূল, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি, মদীনা রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান, মসজিদের ইমাম, একজন সেনাপতি এবং একজন কাউন্সিলর (পরামর্শদাতা)।
একবার এক যুবক সাহাবী রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে এসে বললেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমাকে যিনা (Sexual intercourse) করার অনুমতি দিন!”
আপনাকে যেটা কল্পনা করতে বলেছিলাম, সেটার চেয়েও অনেক-অনেক ভয়ঙ্কর কথা যুবক এসে জিজ্ঞেস করছেন। আপনি তো প্রেম বা বিয়ের জন্য স্যারকে বলতে দ্বিধাবোধ করছেন, কিন্তু ঐ সাহাবী আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে!
ঐ সাহাবী কিন্তু রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐরকম কোনো বন্ধু নন যে মন চাইলো আর যা ইচ্ছে বলে দিবেন। তা-ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অন্যান্য সাহাবীদের সাথে তখন বসা। বাকি সাহাবীরা তাকে ধমক দিলেন- “থামো, থামো’’। অর্থাৎ, তোমার এত্তো বড়ো সাহস? তুমি কী বলছো এগুলো?
ঐ যুবক রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কতোটা ‘কমফোর্ট জোন’ হিশেবে চিন্তা করেছে ভাবা যায়? নিজের এমন ইচ্ছের কথাও তিনি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে শেয়ার করছেন; যেসব বিষয়ের কথা সব বন্ধুও তার অন্য বন্ধুকে বলে না।
নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ডাকলেন- ‘‘আমার কাছে এসো।’’ সাহাবীরা তাকে ধমক দিলেন, নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে কাছে যেতে বললেন। এখন কি তিনি সজোরে তার গালে দুটো চড়-থাপ্পড় মারবেন? কিংবা সাহাবীদেরকে বলবেন, ‘একে ধরো, বেঁধে রাখো। শাস্তি দিয়ে দেখিয়ে দাও যে, এরকমটা কেউ করতে চাইলে কী পরিণতি হয়।’
না। নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কোনোটাই করলেন না। ঠিক এই মুহূর্তে আপনি চিন্তা করুন আপনি সাহস করে আপনার শিক্ষককে সবার সামনে তার মেয়ের সাথে প্রেম/বিয়ের প্রস্তাবের পর তিনি কী রি-অ্যাক্ট করবেন।
নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি নিজের মায়ের জন্য এমনটা করতে পছন্দ করো?” অর্থাৎ তার সাথে অবৈধভাবে কেউ এটা করুক।
নবিজীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রশ্নের মোড় ঘুরিয়ে দিলেন। সাহাবী বললেন যে, তিনি এটা পছন্দ করেন না। অতঃপর নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বুঝালেন যে, তুমি যার সাথে এমনটা করবে, সে তো কারো না কারো মা।
এবার জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার মেয়ের সাথে এমনটা হোক, সেটা তুমি পছন্দ করো?” যুবক সাহাবী আবারো ‘না’ বললেন। আবার নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বুঝালেন যে, তুমি যার সাথে এমনটা করবে, সে তো কারো না কারো মেয়ে।
এভাবে নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বোন, ফুফু, খালার উদাহরণ দিয়ে জিজ্ঞেস করে একই সমাধান দিলেন যে, তুমি যার সাথেই এমনটা করো না কেনো, সে কারো না কারো মা, বোন, মেয়ে, খালা, ফুফু। তুমি যেমন নিজের কারো সাথে এমনটা হোক চাও না, তেমনি তারাও তো এমনটা চায় না।
এই ধরণের বুঝানোর ভঙ্গিকে বলে ‘Empathy’। আরেকজনের সুখ বা দুঃখ নিজের মতো উপলব্ধি করা, সেটা বুঝা। সেই ইম্পেথির ফিলিংস যুবক সাহাবীর মধ্যে নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জাগিয়ে দিলেন। তাকে বকাঝকা করলেন না, মারলেনও না, ধমকও দিলেন না, অপমানও করলেন না।
বুঝানো শেষে তাঁর পবিত্র হাত যুবকের বুকে রাখলেন। এই ফিলিংসটাও একটু চিন্তা করুন। যে একটা পাপ কাজের জন্য এসেছিলো, তাকে বুঝানো শেষে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার বুকে হাত রাখছেন। চিন্তা করুন, নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেই হাত আমার-আপনার বুকে রাখছেন! কারণ, ঐ যুবকের অনুভূতি আমাদের প্রত্যেকেরই হয়। আমরা হয় বলি, নতুবা গোপন রাখি।
নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুবকের বুকে হাত রেখে দু’আ করলেন, “হে আল্লাহ! আপনি তার গুনাহ মাফ করে দিন, তার হৃদয়কে পবিত্র করে দিন এবং তাকে ব্যভিচার থেকে রক্ষা করুন।” [মুসনাদে আহমাদ: ২২২১১]
সেদিনের পর থেকে যুবকটি কোনোদিন যিনার দিকে ঝুঁকেননি। নবিজীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ বুঝানো তার কতোটা কাজে লেগেছিলো একবার ভাবুন যে, তিনি যিনা করার কথাই মাথা থেকে বাদ দিয়ে দেন।
আমার নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীদের কাছে এমন এক মানুষ ছিলেন যে, যার কাছে মনের দুঃখ এমনভাবে বলা যায়, যা একজন বন্ধুর কাছেও বলা যায় না। তাঁর কাছে সাধারণ মানুষের এক্সেস এতো সহজ ছিলো যে, মানুষ তাঁর কাছে যেতে সঙ্কোচবোধ করতো না। তাঁকে নিজের বাবা-মায়ের চেয়েও আপন মনে করতো। এটা শুধুমাত্র কুরআনের আক্ষরিক নির্দেশ মানার জন্যই ছিলো, এমন না। নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁদের সাথে এমন ব্যবহার করতেন যে, তারা নিজেদের সবচেয়ে আপন মানুষ হিশেবে তাঁকে কল্পনা করতো।
তিনি ধমক দিয়ে, মেরে, অপমান করে মানুষকে সংশোধন করেননি। ভালোবেসে কাছে টেনে নিয়েছেন। এমন কাছে টেনে নিয়েছেন, এমন বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন, সেই পাপে ইচ্ছুক মানুষটি পরিণত হয় শ্রেষ্ঠ মানুষে। তাঁকে হত্যা করতে আসা মানুষগুলো ৫ মিনিটের মধ্যে তাঁকে তাঁদের সবচেয়ে প্রিয় মানুষ বলে স্বীকৃতি দেয়।
এমন যাদুময়ী ভালোবাসা যার মধ্যে আছে, মানুষ সেই ভালোবাসার টানেই ছুটে যাবে তার কাছে।
।। ভালোবেসে সংশোধন ।।
- আরিফুল ইসলাম

দ্বীনের পথে আসতে চাইলে আপনাকে সর্বপ্রথম এই "একটু" শব্দটি জীবন থেকে মুছে ফেলতে হবে।

 

দ্বীনের পথে আসতে চাইলে আপনাকে সর্বপ্রথম এই "একটু"
শব্দটি জীবন থেকে মুছে ফেলতে হবে।
মুছ ফেলতে একটু একটু করে আগের অভ্যাস।
আবার এই
"একটু" শব্দকেই পুজি করে আপনাকে দ্বীনের পথে আসতে হবে।
একটু ঝোক কেটে উঠতে হবে।
আপনি নিয়মিত নতুন করে নামাজ পড়া শুরু করেছেন, পর্দা করার চেষ্টা করছেন।
ইত্যাদি ইত্যাদি করছেন ,,,
কিন্তু আগের রেখে যাওয়া অভ্যাস ছাড়তে পারেনি। আমরা অনেকেই পারি না।
এই ""একটু"" রোগ নিয়েই নামাজ, রোজ,পর্দা, নেশা, নাচ গান, যেনা, ফেতনা সবই করছি।
ফলাফল শূন্য হয়ে যাচ্ছে আমাদের,
""একটু"" রোগ গুলো হলো,
⚫কেবল তো মসজিদে আজান দিলো একটু পড়ে নামাজ টা পড়ি।
⚫একটু গান টা শুনলাম তো কি হলো?
⚫একটু সিগারেট খেলে কিছু হবে না।
⚫একটু পর্দা ছাড়া আজ বাইরে গেলে তেমন কিছুই হবে না।
⚫একটু টিভি সিরিয়াল দেখে নামাজ পড়তে যাবো,,,!
⚫একটু বিয়ে বাড়িতে গিয়ে বরটাকে দেখে আসলে কিছুই হবে না।
⚫একটু প্রেম করলে তো তেমন কিছুই হবে না।
আমরা তো খারাপ কিছু করছিনা!
⚫একটু ছেলে বন্ধুর সাথে ফোন কলে কথা বলে কিছু হবে না।
ইত্যাদি ,,
একটু একটু করতে করতে দ্বীনের পথে আর আসা হয়না।
ঠিক যেমন ফুটো কলসি তেমন।
একটু দেখি, করি, যাই, খাই ইত্যাদি,
কে জীবন থেকে আগে মুছে ফেলতে হবে ,,
___আর এই ""একটু""____
কে মুছে ফেলতে হলে একটুর সাহায্য নিয়ে এগোতে হবে।
একটু একটু স্বভাব টাকে একটু একটু করেই পরিবর্তন করতে হবে।
একেবারেই কেউই এই একটু স্বভাব পরিবর্তন করতে পারে না।
তাই একটু একটু চেষ্টা দ্বারাই সকল গুন্নাহ থেকে ফিরে আসতে হবে।
""একটু""_""একটু""_স্বভাবকে মুছতে হলে
একটু_একটু করে চেষ্টা দ্বারাই নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে।
এই একটু স্বভাব টাকে পরিবর্তন করতে পারলেই দ্বীনের পথ সহজ হবে।
ইনশাআল্লাহ। চলুন আজ থেকেই একটু অভ্যাস কে পরিবর্তন করার একটু চেষ্টা করি।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে হেদায়েত দান করুন,
সঠিক দ্বিন বোঝার তৌফিক দান করুন আমীন ,,

অবসর সময়গুলোতে আমরা কি করছি?

 

অবসর সময়গুলোতে আমরা কি করছি?
.
- টিভি দেখছি?
- গল্প-গুজব, আড্ডা, পরনিন্দা (অন্যের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা)?
- (শরীয়াহ অনুমোদিত নয় এমন) খেলাধূলা?
- গল্পের বই?
- ফেইবুক (অপব্যবহারে)?
- অবিশ্বাসীদের মত (হারাম) আনন্দ-ফূর্তিতে মেতে থাকা?
.
এবার দেখি আল্লাহ আমাদেরকে অবসর সময়ে কি করতে বলেছেন?
মহান আল্লাহ্ বলেছেনঃ "অতএব, যখন সময় পাও তখন (ইবাদতের জন্য) পরিশ্রম করো, আর তোমার পালনকর্তার দিকে মনোনিবেশ করো।"
(সূরা ইনশিরাহ (৯৪), আয়াত ৭-৮)
____
.
.
অথচ মানুষ সময়গুলোকে কাজে লাগায় না। হেলায়-ফেলায় অথবা অহেতুক-অনর্থক কাজের মাধ্যমে জীবনের অনেকগুলো মূল্যবান সময় নষ্ট করছে।
.
এজন্যই আল্লাহ্ বলেছেনঃ "কসম সময়ের মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ"। ( সুরা আসরঃ ১)
.
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
“এমন দুটি নিয়ামত আছে, বহু মানুষ সে দুটির ব্যাপারে ধোঁকায় আছে। (তা হল) সুস্থতা ও অবসর।”
(বুখারী ৬৪১২, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)
____
.
.
মানুষ ভুলে যায় কেন তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে!
"আমি মানুষ ও জিন কে আমার ইবাদাত ব্যাতিত অন্য কোন উদ্দেশে সৃষ্টি করিনি।
(সুরা আল যারিয়াতঃ ৫৬)
সুতরাং প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর উচিত সুস্থতা ও অবসরের সময়গুলোকে কদর করা রবের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ইবাদতে কঠোর মনোনিবেশ করা।
____
.
.
শেষ করবো প্রিয় নাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটি হাদিস দিয়ে, তিনি বলেছেনঃ তোমরা পাঁচটি অবস্থায় পতিত হওয়ার পূর্বে পাঁচটি জিনিসকে মূল্যায়ন কর।
(১) বৃদ্ধ হওয়ার পূর্বে যৌবনকে
(২) রোগ আক্রমণ করার পূর্বে সুস্থতাকে
(৩) কর্মব্যস্ততার পূর্বে অবসর সময়কে
(৪) মৃত্যু আসার পূর্বে জীবনকে
(৫) দরিদ্রতার পূর্বে সচ্ছলতাকে।
[ মুসতাদরাক হাকিম, হা/৭৯১৬ ]
▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂
:
- সংগৃহীত

তরবারি যে সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে না, যবান তা ছিন্ন করতে পারে

 

"শরীয়তের নির্দেশ হল, স্ত্রীরা স্বামীর সাথে নম্রতার সাথে কথা বলবে, আর পরপুরুষের সাথে কড়াসুরে কথা বলবে। কিন্তু বর্তমান ফ্যাশনেবল নারীদের চিত্র উল্টা। স্বামীর সাথে যখন কথা বলে, তখন যেন দুনিয়ার সব তিক্ততা তার মুখে এসে জড়ো হয়। আর পরপুরুষের সাথে যখন কথা বলে তখন যেন দুনিয়ার সমস্ত মিষ্টতা তার মুখে এসে ভিড় করে।
.
মনে রাখবেন, তরবারি যে সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে না, যবান তা ছিন্ন করতে পারে। নারীদের যবান তরবারির চেয়েও অধিক ধারালো। তাদের যবানের তরবারিতে কখনোই মরিচা পড়ে না। অনেক নারীর ঘর ভাঙ্গেই বদযবানির কারণে, বদগুমানি বা কুধারণার কারণে।
.
এজন্য শরীয়তের নির্দেশ হল, মাহরামদের সাথে নম্রস্বরে ভদ্রভাষায় কথা বলবে। আর পরপুরুষদের সাথে কড়াস্বরে কথা বলবে।"
.
~ শায়খ যুলফিকার আহমদ নকশবন্দী (হাফি.)
.
[খুতুবাতে যুলফিকার : ১/৪৪; অনু : আবু জারীর আবদুল ওয়াদুদ, মাকতাবাতুল আযহার]

নারীর মর্যাদা

 

নারীর মর্যাদা
 
● স্বামী যদি স্ত্রীর সাথে খেয়ানত করে, পরনারীর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তবে ঐ স্বামীর শাস্তি হচ্ছে তাকে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করা।
● ২য় স্ত্রী বিবাহ করলে স্বামী যদি উভয় স্ত্রীর সাথে সমতা বা ইনসাফ রক্ষা না করে, তবে কিয়ামত দিবসে তার শরীরের এক অংশ বিকলাঙ্গ অবস্থায় উত্থিত হবে।
● মোহরানা নির্ধারণ করার পর স্বামী তা স্ত্রী প্রদান না করলে কিয়ামত দিবসে চোর হিসেবে উত্থিত হবে।
● স্ত্রীকে তালাক দিলে, মোহরানার কোন অংশ ফেরত নেয়ার অধিকার নেই স্বামীর।
● স্ত্রীকে প্রহার করলে বা লাঞ্ছিত করলে সেই স্বামী ইসলামের দৃষ্টিতে ইতর শ্রেণীর লোক। স্ত্রীকে সম্মান করা উঁচু স্বভাবের লোকদের কাজ।
● চার মাসের বেশী সময় ছেড়ে থাকলে, স্ত্রীর অধিকার আছে তার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার।
● প্রাপ্য মীরাছ থেকে নারীকে বঞ্ছিত করা, আল্লাহর সীমালঙ্ঘণকারীর কাজ। আর এরূপ ব্যক্তি জালেম।
● স্ত্রীকে অপছন্দ করলে, স্বামীকে সবর করতে বলা হয়েছে। কেননা হতে পারে, তোমারা যা অপছন্দ কর, তাতেই আল্লাহ রেখেছেন অফুরন্ত কল্যাণ।
● কোন কারণে স্ত্রীকে তালাক দিলে তার অনুগ্রহ ও ভালো বিষয়গুলো অস্বীকার করা ভদ্রলোকের কাজ নয়।
● তালাক হয়ে গেলে সন্তানদের থেকে স্ত্রীকে বঞ্ছিত করা উচিত নয়। সন্তানদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব পিতার উপর; মাতার উপর নয়।
● নারী তার সম্পদে স্বাধীন। ইচ্ছামত ব্যবহার/খরচ করতে পারে। স্বামী যদি গরীব হয়, তবে স্ত্রী তাকে সাদকা দিতে পারে। তখন সে দ্বিগুণ ছোয়াব পাবে। কিন্তু না দিলে স্বামীর করার কিছু নেই। জবরদখল করার কোন অধিকার নেই।
● স্ত্রীর ভরণ-পোষণ, বাসস্থান, পোষাক প্রভৃতির দায়িত্ব স্বামীর। দায়িত্ব অবহেলা করলে, আল্লাহর সামনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
● স্ত্রীর উপর অত্যাচার করলে, অনুরূপ শাস্তির দণ্ড স্বামীকে দেয়া হবে।
● স্ত্রীর উপর স্বামীর কর্তৃত্ব আল্লাহর পক্ষ থেকে একপ্রকার দায়িত্ব। কিন্তু স্বামীর আনুগত্য করা স্ত্রীর জন্য জিহাদ ফি সাবীলিল্লাহর অন্তর্ভুক্ত।
● স্ত্রীর উপর স্বামীর আদেশ-নিষেধ শরীয়তের সীমার মধ্যে আনুগত্য করা ফরয। কিন্তু তার বাইরে হলে তার আনুগত্য করা হারাম।
● নারীকে অসম্মান করার কারণেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইহূদী গোত্র বানী কাইনুকা’র বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন।
● নারীর ইজ্জত বাঁচানোর জন্য পুরুষ যদি প্রতিরোধ করতে গিয়ে প্রাণ হারায়, তবে সে আল্লাহর পথে শহীদের মর্যাদা পাবে।
● নারীর ইজ্জত সুরক্ষার জন্য ইসলাম তার প্রতি অপবাদ আরোকারীর জন্য ৮০ বেত্রাঘাত দণ্ডের বিধান রেখেছে।
● নারী (মাতার) পদতলে আল্লাহ রেখেছেন পুরুষের (ছেলের) জান্নাত।
● নারীর (কন্যা সন্তান) উত্তম তারবিয়াতের বিনিময়ে আল্লাহর পুরস্কার রেখেছেন জাহান্নাম থেকে মুক্তি।
ইসলামের এই মর্যাদার পরও কি মুসলিম নারীর দরকার আছে ‘বিশ্ব নারী দিবস’?
ওহে মুসলিম রমণী! এরপরও কি তুমি ইসলাম নিয়ে গর্ববোধ করবে না?
লেখাঃ শাইখ আব্দুল্লাহিল কাফি (আল্লাহ তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।)

দ্বিনদার মেয়ে চিনবো কি ভাবে?

 

দ্বিনদার মেয়ে চিনবো কি ভাবে?
>>আমার খুব যানতে ইচ্ছা করছিলো দ্বিনদার মেয়ের ভিতর কি কি গুন থাকে?
<<বর্তমানে সোসাল মিডিয়ায় ৯৫%মেয়েরা তো নিজেকে দ্বিনদার বলে দাবি করে আসলেই কি এরা সবাই দ্বিনদার?
একদিন আমার উস্তাদের কাছে প্রশ্ন করলাম হুজুর আপনি যে বিবাহ করলেন কি কি গুন দেখে বিবাহ করলেন যদি আমাদের কেও বলতেন আমরাও বিয়ে শাদীর সময় ঐ সব বিষয় গুলো অনুসরন করতাম|
এরপর হুজুর আমাকে বল্ল আমি প্রথম সর্তে বলছিলাম
•আমার ঘর বাড়ি নাই|
•মাটি দিয়ে ঘর বানবো সেখানে আমার সাথে এক সাথে থাকতে হবে|
•একটা কাপর এক বৎসর পরিধান করতে হবে||
•শরীরে ব্যবহার করার জন্য কোন সাবান দেয়া হবে নাহ|
•জামা কাপর ধোয়ার সাবান ব্যবহার করতে হবে|
•স্বর্ন জীবনেও চোখে দেখতে পাবে না|
কিন্ত এখন তার যে পরিমান স্বর্ন আছে এত পরিমান স্বর্ন অনেক ধনীর ঘরেও নাই|
•আর হুজুর মোহরনা দরছিলেন মাত্র ৩০০০\=হাজার টাকা আমি ভাবতেও অবাক হই এই যুগে এমন সর্তে কোন বাবা,মা মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হয়?মেয়ে বা কি ভাবে রাজি হয়?
নিশ্চই পূর্ব যুগের সমস্ত দ্বীনদার মহীয়সি নারীরা অনেক কষ্টে এই সামান্য ও নগন্য জগত অতিবাহিতো করছেন| যেমন ইব্রাহীম (আ:) প্রথম স্ত্রী সারা (আ:) যদিও রাঁজ কন্যা ছিলো বাট বিয়ের পরে ইব্রাহীম (আ:)সঙ্গে থাকা অবস্থায় মৃত্যেুর আগ পর্যন্ত অনেক কষ্টে অতীবাহিতো হয়েছে তার জীবন আল্লাহ তায়ালা এই কষ্টের বিনিময় দুনিয়ায় উত্তম প্রতিদান হিসাবে তাকে একজন নবী দান করছিলেন হযরত ইসহাক (আ:) ইব্রাহিম (আ:) ২য় স্ত্রী হাজেরা (আ:) ছোট বেলা থেকেই অনেক কষ্টে বড় হয়েছেন তিনি সারা (আ:)থেকে বেশি কষ্ট করেছিলেন যার প্রতিফল স্বরুপ ইসমাইল (আ:)কে দান করছিলেন
তাছারা খাদিজা (রা:) ফাতেমা (রা:) ফেরউনের স্ত্রী আসিয়া,রাবেয়া বৎসি সকলে অনেক কষ্টে জীবন যাপন করছেন|
এখন নিজেকে নিজে প্রশ্ন করেন আপনের ভিতর যে গুন আছে এগুলো দ্বিনদার নারীর গুনের সাথে মিল আছে কি না?
একজন দ্বিনদার নারীর বড় গুন হলো অল্পতেই সন্তষ্ট থাকা এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা বিপদ আপদে ধৈর্য ধারন করা|
::;;আমি দেখলাম হুজুরের অনেক সমস্যা থাকা সত্যেও তাদের সাথে কখনো ঝগড়া,রাগারাগি হয় না এত ধৈর্য কি ভাবে একজন মানুষের ভিতর থাকে?
"আমি তাদের এমন সংসার দেখে মাঝে মাঝে আফসোস করি আল্লাহ যদি আমাকেও এমন একজন জীবন সঙ্গী দান করিক এটা আল্লাহ কাছে আরজি জানাই।
<আল্লাহ আমাদেরকে দ্বীনদার মহীয়সি লাইফ পার্টনার দান করুন>>
<<পোস্ট কপিকৃত,,অন্যের বাস্তবতা থেকে লেখা>>

আপনার সন্তান উসামা ইবনে যায়িদের (রাদিআল্লাহু আনহু) মতো হচ্ছে না। কারণ, আপনি তাকে তাঁর মতো গড়ে তুলতে পারছেন না।

 

আপনি আপনার ১৭ বছর বয়সী ছেলেকে বলতে পারবেন- এই মাসের পরিবারের খরচ তুমি চালাও? আপনি কি আপনার ১৭ বছর বয়সী ছেলেকে বলতে পারবেন- তুমি ঢাকা থেকে দোকানের মালামাল নিয়ে এসো? আপনি কি আপনার ১৭ বছর বয়সী ছেলেকে বলতে পারবেন- অন্ধকার মধ্য রাতে পাশের গ্রামে একটি প্রয়োজনে যেতে?
কেনো পারবেন না?
কারণ, আপনি আপনার ছেলেকে ননীর পুতুল করে গড়ে তুলেছেন। তাকে শুধু আদর করেছেন, দায়িত্ব দেননি কখনো। তাকে দায়িত্ব গ্রহণে উপযোগী করে গড়ে তুলেননি।
অথচ রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সময় মাত্র ১৭ বছরের উসামা ইবনে যায়িদকে (রাদিআল্লাহু আনহু) তিনি মুসলিম বাহিনীর সেনাপতি বানান। উসামা ইবনে যায়িদের (রাদিয়াল্লাহু আনহু) অধীনে ছিলেন আবু বকর, উমরের (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) মতো সাহাবী; যারা বয়সে তাঁর বাবার বড়ো।
আপনার সন্তান উসামা ইবনে যায়িদের (রাদিআল্লাহু আনহু) মতো হচ্ছে না। কারণ, আপনি তাকে তাঁর মতো গড়ে তুলতে পারছেন না।
[শায়খ তাওফিক চৌধুরীর লেকচার অবলম্বনে]
© আরিফুল ইসলাম

গায়েরে_মাহরাম_বলতে_কি_বুঝায়,

 

গায়েরে_মাহরাম_বলতে_কি_বুঝায়,
 
 
তা আমরা অনেকেই জানি না?
যে সকল পুরুষের সামনে যাওয়া তাদের সাথে বিনা প্রয়োজনে কথা বলা, দুষ্টামি মজা রসিকতা করা ইসলামি শারিয়্যাহতে জায়েজ নয় হারাম এবং যাদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বৈধ তাদের কে গায়রে মাহরাম বলে। বস্তুতঃ গায়রে মাহরামের সামনে একান্ত অপারগ হয়ে যদি যাওয়াই লাগে তবে নারী ইসলামিক ভাবে পরিপূর্ণ পর্দা করে সামনে যেতে হবে এবং নম্র কোমল কন্ঠে / ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলা যাবে না।
জানেন কি, গায়রে মাহরাম কারা?
সহজ ভাষায় মাহরাম পুরুষ বাদে সমস্ত বিশ্বে-মহাবিশ্বে যত পুরুষ আছে সবাই গায়রে মাহরাম।
নিজ পরিবারে (কাজিন) চাচাত/খালাত/মামাত/­ফুপাত ভাই, দুলাভাই, দেবর, ভাসুর, সমস্ত চাচা শ্বশুর, মামা শ্বশুর, খালু ও ফুপা শ্বশুর, নিজ খালু/ফুপা এরা সবাই গায়রে মাহরাম। শুধু (আপন দাদা,নানা,শ্বশুর বাদে)
তাদের সামনে নিজেকে প্রদর্শন করা আল্লাহর হুকুমের অবাধ্যতা করা। মাহরাম ছাড়া সকল পুরুষের সামনে পর্দা করতে হবে।
ভাবছেন, এরা তো আপনার ফ্যামিলি, আপনার নিকটাত্মীয়, এদের সামনে যাওয়া কেন নিষেধ হবে....? নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা যা জানেন, অবশ্যই আপনি তা জানেন না।
ইসলামের এই বিধান শুধুমাত্র আখিরাতের নাজাতেরই উপায় নয় বরং আমাদের দুনিয়ার জীবনের শান্তি, স্বস্তি এবং পবিত্রতারও রক্ষাকবচ।
নারীর ১৪ জন মাহরাম পুরুষ কারা এক নজরে দেখে নিন-
১. স্বামীঃ (দেখা দেওয়া, সৌন্দর্য প্রদর্শনের প্রেক্ষিতে মাহরাম)
২. পিতা, দাদা, নানা ও তাদের উর্ধ্বতন পুরুষগণ মাহরাম।
৩. শ্বশুর, আপন দাদা শ্বশুর ও নানা শ্বশুর এবং তাদের উর্ধ্বতন পুরুষগণ মাহরাম।
৪. আপন ছেলে, ছেলের ছেলে, মেয়ের
ছেলে ও তাদের ঔরসজাত পুত্র সন্তান এবং আপন মেয়ের স্বামী মাহরাম।
৫. স্বামীর অন্য স্ত্রীর গর্ভজাত পুত্র অর্থাৎ সৎ ছেলে মাহরাম।
৬. আপন ভাই, সৎ ভাই মাহরাম।
৭. ভাতিজা অর্থাৎ, আপন ভাইয়ের ছেলে এবং সৎ ভাইয়ের ছেলে মাহরাম।
৮. ভাগ্নে অর্থাৎ, আপন বোনের ছেলে এবং সৎ বোনের ছেলে মাহরাম।
৯. এমন বালক যার মাঝে মহিলাদের প্রতি কোন আকর্ষণ নেই অর্থাৎ পাগল ও শিশু।
১০. দুধ সম্পর্কীয় পিতা, দাদা, নানা, চাচা, মামা এবং তাদের উর্ধ্বতন পুরুষগণ মাহরাম।
১১. দুধ ভাই, দুধ ভাইয়ের ছেলে, দুধ বোনের ছেলে এবং তাদের ঔরসজাত যে কোন পুত্র সন্তান মাহরাম।
১২. দুধ সম্পর্কীয় ছেলে, তার ছেলে, দুধ সম্পর্কীয় মেয়ের ছেলে এবং তাদের ঔরসজাত যে কোন পুত্র সন্তান। এবং দুধ সম্পর্কীয় মেয়ের স্বামী মাহরাম। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ৫০৯৯, মুসলিম শরীফ হাদীস নং ১১৪৪)
১৩. আপন চাচা, সৎ চাচা।
১৪. আপন মামা, সৎ মামা।
উপরোক্ত পুরুষ যাদের সাথে দেখা দিতে পারবে তারা ছাড়া অন্য সমস্ত পুরুষকে দেখা দেওয়া সম্পূর্ণ নাজায়েয এবং সৌন্দর্য প্রদর্শন হারাম।
ভাবছেন, মাহরাম/গায়রে মাহরাম কি শুধু মেয়েদের জন্যই প্রযোজ্য, পুরুষরা স্বাধীন?
না, মোটেও তা নয়। পুরুষের জন্যও মাহরাম/গায়রে মাহরাম বিধান প্রযোজ্য।
পুরুষদের জন্যও মাহরাম নারী ১৪ জন। তারা হল-
মায়ের মত ৫ জন,
মা, খালা, ফুফু, শাশুড়ি, দুধ-মা।
বোনের মত ৫ জন,
বোন, দাদি, নানি, নাতনি, দুধ-বোন।
মেয়ের মত ৪ জন,
মেয়ে, ভাই-এর মেয়ে, বোনের মেয়ে, ছেলের বউ।
"মুমিন পুরুষদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয় তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত।" [সূরা আন্-নূর(২৪), আয়াত: ৩০]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আমাদের সকলকে তাঁর বিধি-বিধান মেনে চলার তৌফিক দান করুন।