Sunday, June 20, 2021

৩৫. তার স্বামী বর্তমানে জেলে... প্রতিবেশী ছেলেরা খারাপ প্রস্তাব দেয়... Marriage education series

 

তার স্বামী বর্তমানে জেলে... প্রতিবেশী ছেলেরা খারাপ প্রস্তাব দেয়...
------------------
প্রশ্ন: তার স্বামী বেনামাজি, নেশাখোর, খুব অত্যাচার করে। বোনটির তিন ভাইয়ের মধ্যে এক ভাই এই অত্যাচারের প্রতিবাদ করায় তার স্বামী উক্ত ভাই কে খুন করে। ভাই খুন হওয়ার পর বোনটির স্বামী এখন জেলে। এখন সমস্যা হচ্ছে, বোনকে তার বাপের বাড়িতে উঠতে দিচ্ছে না। বলছে, তোর জন্য তোর ভাই খুন হয়েছে। তুই আমাদের মেয়ে না।
এমনকি শ্বশুর বাড়িতেও কোনও ঠাঁই নেই।
বোনটি বর্তমানে দুটো ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে একাকী তাদের বাড়িতে থাকে। তার সংসার চলে খুব কষ্টে। সে যুবতী হওয়ায় প্রতিবেশী ছেলেরা তার সাথে জিনায় জড়াতে চায়। অনেকে সাহায্য করতে চায় কিন্তু তার বদলে জিনা করতে চায়।
এর মধ্যে একটা ছেলে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় এবং টাকাকড়ি দিয়ে তার সংসার চালায়। যেহেতু ছেলেটি তার সংসারের খরচ চালাচ্ছে তাই সে তাকে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু তার মন কাঁদে তার স্বামীর জন্য। বোনটি চায়, তার স্বামীর জন্য অপেক্ষা করতে যতক্ষণ না তার স্বামী জেল থেকে ছাড়া পায়। কিন্তু সমাজের ছেলেরা তাকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না। এখন তার কী করা উচিত?
উত্তর:
আপনার বিবরণ অনুযায়ী, উক্ত বোনের সাথে তার বাবা ও শ্বশুরের পক্ষ থেকে যা করা হচ্ছে তা জুলুম ছাড়া অন্য কিছু নয়। এটি খুবই দু:খ জনক এবং অগ্রহণযোগ্য আচরণ। তাদের উচিৎ আল্লাহকে ভয় করা এবং একজন অসহায় নারীর প্রতি সদয় হওয়া। মেয়েটি অভিভাবক তথা পিতার জন্য অপরিহার্য দায়িত্ব হল, তার অসহায় মেয়েকে আশ্রয় দেয়া এবং বিপদে সাহায্য করা। তিনি রাগ বা জেদের বশবর্তী হয়ে এ দায়িত্ব পালন না করে তার অসহায় মেয়েকে অনিশ্চিত গন্তব্য ও অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিলে তাকে আখিরাতে অবশ্যই আল্লাহর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
 
অনুরূপভাবে শ্বশুরেরও উচিৎ, তার ছেলের বউকে ছেলের অনুপস্থিতিতে হেফাজতের ব্যবস্থা করা। এটি মানবিক ও সামাজিক উভয় দিক থেকে তার উপর কর্তব্য। বিশেষ করে বাবা যদি তার মেয়েকে আশ্রয় না দেয়।
 
বাবা কিংবা শ্বশুর কেউ তাকে আশ্রয় না দিলে সমাজের নেতৃস্থানীয় বা সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি বা প্রশাসন তার নিরাপত্তা বিধান করবে।
 
যাহোক, স্বামী জেলে থাকা অবস্থায় বর্তমান পরিস্থিতিতে তার উচিৎ, আল্লাহর ভয় অন্তরে জাগ্রত রেখে নিজের ইজ্জত-সম্ভ্রম হেফাজত করা, পরিপূর্ণ পর্দা রক্ষা করে চলা, বাড়ির বাইরে গেলে আতর-সুগন্ধি ব্যবহার না করা, কোনো পর পুরুষকে তার বাড়িতে আসার সুযোগ না দেয়া এবং তাদের সাথে বিনা প্রয়োজনে কথাবার্তা এড়িয়ে চলা। 
 
আর যদি সম্ভব হয় তাহলে তার নিকটাত্মীয় কোনো মাহরাম ছেলে অথবা কমপক্ষে কোনো নিকটাত্মীয় মহিলাকে তার বাড়িতে রাখা। সেই সাথে যে সব মানুষ তাকে খারাপ প্রস্তাব দেয় এবং নানাভাবে ডিস্টার্ব করে তাদের ব্যাপারটি স্থানীয় সৎ দায়িত্বশীল ব্যক্তিদেরকে জানানো।
 
আর যেহেতু সে এখনো আরেকজনের স্ত্রী-তার স্বামী থেকে বিয়ে বিচ্ছেদ হয় নি সেহেতু অন্য কোনো ব্যক্তি সাথে বিয়ে শরিয়ত সম্মত নয়। 
 
সুতরাং হয় সে তার স্বামী জেল থেকে মুক্তি পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে অথবা অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চাইলে আইনগত ভাবে কোর্টের মাধ্যমে খোলা তালাকের ব্যবস্থা করবে। 
 
আল্লাহ তাকে এই বিপদ থেকে রক্ষা করুন। আমরা সকলেই তার জন্য দুআ করি। নিশ্চয় আল্লাহ হেফাজত কারী।
 
---------------------
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
জুবাইল, সৌদি আরব

৩৪. বাড়িতে স্বামী-সন্তানদের সামনে পর্দা এবং টয়লেট যাওয়ার সময় মাথায় কাপড় দেয়ার বিধান Marriage education series

 No photo description available.

 

 

বাড়িতে স্বামী-সন্তানদের সামনে পর্দা এবং টয়লেট যাওয়ার সময় মাথায় কাপড় দেয়ার বিধান
▬▬▬▬✪✪✪▬▬▬
প্রশ্ন: ক. আমি পরিপূর্ণ পর্দা করার চেষ্টা করছি আল হামদুলিল্লাহ। আমার ঘরে স্বামী ছাড়া অন্য কোন নন মাহরাম থাকে না। আমার মেয়ে তিনজন আর ছেলে একজন -যার বয়স দু বছর মাত্র। আমি বাসায় মাথায় কাপড় দেই না। এতে কি আমার গুনাহ হচ্ছে?
 
খ. টয়লেট যাওয়ার সময় কি মাথায় কাপড় দিয়ে যেতে হবে?
উত্তর:
আপনি পরিপূর্ণ পর্দা করার চেষ্টা করছেন-এ জন্য আপনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। দুআ করি, তিনি যেন আপনাকে এ পথে টিকে থাকতে সাহায্য করেন। আমীন।
 
🌀 ক. বাড়িতে স্বামী-সন্তানদের সামনে পর্দা:
আপনি বাড়িতে থাকা কালীন যদি কোন নন মাহরাম পুরুষ আপনাকে না দেখে তাহলে মাথায় কাপড় না দিলেও তাতে কোন গুনাহ নেই। অর্থাৎ স্বামী ছাড়াও নিজের সন্তান-সন্ততি, ভাই, ভায়ের ছেলে, বোনের ছেলে, দাদা, চাচা, শ্বশুর ইত্যাদি ব্যক্তিদের সামনে পর্দা করা আবশ্যক নয়। তবে এদের সামনে যথাসম্ভব শালীন পোশাক পরিধান কর করে চলাফেরা করতে হবে। এরা ছাড়া পর পুরুষের সামনে অবশ্যই পর্দা করতে হবে। কেননা তা আল্লাহর পক্ষ থেকে অবধারিত ফরয। আল্লাহ তাআলা বলেন:
 
وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَىٰ عَوْرَاتِ النِّسَاءِ ۖ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِن زِينَتِهِنَّ ۚ وَتُوبُوا إِلَى اللَّـهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
 
"তারা যেন (মহিলাগণ) তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নি পুত্র, স্ত্রী লোক অধিকারভুক্ত দাসী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ ও বালক- যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পাদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।" (সূরা নূর: ৩১)
 
🌀 টয়লেটে মাথা ঢাকা:
টয়লেটে যাওয়ার সময় মাথায় কাপড় দেয়ার ব্যাপারে কোন সহীহ হাদিস নাই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম টয়লেটে যাওয়ার সময় মাথা ঢাকতেন-মর্মে দুটি হাদিস পাওয়া যায় তবে। সেগুলো মুহাদ্দিসীনদের মতে যঈফ বা দুর্বল।
তবে কোন কোন সালাফ বা পূর্বসূরি থেকে টয়লেটে যাওয়ার সময় মাথা ঢাকাকে একটি আদব ও সৌন্দর্য হিসেবে উল্লেখিত হয়েছে।
আল্লামা ইবনে উসাইমীন রহঃ বলেন:
“মাথা খোলা অবস্থায় টয়লেটে যেতে কোন সমস্যা নেই। তবে ফকীহগণ এ সময় মাথা ঢাকাকে মুস্তাহাব বলেছেন। (ফাতাওয়া ওয়া রাসায়েলে উসাইমীন ১১/৬৮)
সুতরাং নারী-পুরুষ নির্বিশেষে মাথা খোলা অবস্থায় টয়লেটে প্রবেশ করতে শরীয়তে কোন বাধা নেই। তবে কেবল আদব হিসেবে মাথা ঢাকা যেতে পারে। তবে তাকে সুন্নত মনে করা যাবে না। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✪✪✪▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
fb/AbdullaahilHadi
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব

 

৩৩. কোনো পুরুষকে পছন্দ হলে তাকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পাওয়ার জন্য দুআ করার বিধান এবং বিয়ের ক্ষেত্রে একজন পুরুষের মধ্যে কোন কোন বৈশিষ্ট দেখা জরুরি Marriage education series

 No photo description available.

 

 

কোনো পুরুষকে পছন্দ হলে তাকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পাওয়ার জন্য দুআ করার বিধান এবং বিয়ের ক্ষেত্রে একজন পুরুষের মধ্যে কোন কোন বৈশিষ্ট দেখা জরুরি
▬▬▬🔹🧡🔹▬▬▬
প্রশ্ন: আমরা কাউকে যদি পছন্দ করি তাহলে তাকে স্বামী হিসেবে পাওয়ার জন্য আল্লাহর নিকট চাইতে পারি কি?
উত্তর:
কোনো পুরুষের মাঝে দ্বীনদারী, উন্নত চরিত্র, জ্ঞান-গরিমা, মেধা, যোগ্যতা, সৌন্দর্য ইত্যাদি দেখে পছন্দ হলে তাকে স্বামী হিসেবে পাওয়ার জন্য আল্লাহর নিকট দুআ করায় কোনো দোষ নেই। কারণ একজন ভালো স্বামী একজন নারীর জীবনের বিশাল প্রাপ্তি- তাতে কোনো সন্দেহ নাই। এতে সে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতে লাভবান হবে।
🌀 মহান আল্লাহ আমাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের জন্য এ দুআ শিক্ষা দিয়েছেন:
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
"হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান কর এবং আখিরাতেও কল্যাণ দান কর এবং আমাদেরকে থেকে রক্ষা কর জাহান্নামের আগুন থেকে।" (সূরা বাকারা: ২০১)
আর ভালো স্বামী/স্ত্রী, সুসন্তান, অর্থ-সম্পদ, ভালো চাকুরী, উপকারী বন্ধু, সৎ প্রতিবেশী, সুস্বাস্থ্য ইত্যাদি সবই দুনিয়াবি কল্যাণ। সুতরাং এ সব কল্যাণকর বিষয় পাওয়ার জন্য আল্লাহর নিকট দুআ করায় কোনো দোষ নেই।
🌀 তাছাড়া হাদিসেও বর্ণিত হয়েছে:
احْرِصْ عَلَى مَا يَنْفَعُكَ ، وَاسْتَعِنْ بِاللَّهِ وَلَا تَعْجَزْ ، وَإِنْ أَصَابَكَ شَيْءٌ فَلَا تَقُلْ : لَوْ أَنِّي فَعَلْتُ كَانَ كَذَا وَكَذَا ، وَلَكِنْ قُلْ : قَدَرُ اللَّهِ وَمَا شَاءَ فَعَلَ ، فَإِنَّ لَوْ تَفْتَحُ عَمَلَ الشَّيْطَانِ "
"যাতে তোমার উপকার হয় তা অর্জনে আগ্রহী হও এবং আল্লাহর সাহায্য কামনা কর। দুর্বলতা প্রদর্শন করো না। তবে যদি তোমার কোন কাজে কিছু ক্ষতি সাধিত হয়, তখন তুমি এভাবে বলো না যে, “যদি আমি কাজটি এভাবে করতাম তা হলে আমার এই এই হত।” বরং বল, “আল্লাহ এটাই তকদীরে রেখেছিলেন। আর তিনি যা চান তা-ই করেন।” কেননা ‘যদি’ শব্দটি শয়তানের কাজের পথকে উন্মুক্ত করে দেয়।” (মুসলিম, মিশকাত হা/৫২৯৮)।
তবে এ জন্য দুটি শর্ত রয়েছে:
▪১) আপনি যাকে স্বামী হিসেবে পেতে চান অবশ্যই তার দ্বীনদারী ও চরিত্র সম্পর্কে আগে নিশ্চিত হবেন তারপর দুআ করবেন।
▪২) সে ব্যক্তির সাথে আপনার বিবাহ বৈধ কি তা নিশ্চিত হতে হবে। যদি তার সাথে আপনার বিবাহ বন্ধন বৈধ হয় অর্থাৎ তাকে বিয়ে করতে শরীয়তের কোন বাধা না থাকে তাহলে তাকে স্বামী হিসেবে পাওয়ার জন্য দুআ করতে পারবেন। যেমন: সে যেন বংশগত, দুগ্ধ পান বা বৈবাহিক সূত্রে আপনার মাহরামদের অন্তর্গত না হয়। কেননা মাহরাম হলে আপনার সাথে তার বিবাহ বন্ধন বৈধ নয়।
- অথবা আপনি যদি অন্য কারো স্ত্রী হয়ে থাকেন তাহলে তো তার নিকট থেকে শরীয়ত সম্মত পদ্ধতিতে তালাক হওয়া পর্যন্ত অন্য কারো সাথে আপনার বিবাহ বন্ধন অবৈধ।
🔰 তবে সবচেয়ে উত্তম হল, নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পাওয়ার জন্য দুআ করার চেয়ে অনির্দিষ্টভাবে আল্লাহর কাছে ভালো ও উপযুক্ত স্বামী পাওয়ার জন্য দুআ করা। কেননা আমরা মানুষের বাহ্যিক গুণ-বৈশিষ্ট্য দেখে মুগ্ধ হলেও তার প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে অথবা সে আপনার জন্য উপযুক্ত কি না তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। তাই এ বিষয়টি আল্লাহর উপর সমর্পণ করা উত্তম। অর্থাৎ এভাবে দুআ করা উত্তম হে, আল্লাহ, তুমি আমার জন্য দ্বীন ও দুনিয়ার জন্য কল্যাণকর এবং উপযুক্ত ব্যক্তির সাথে বিয়ের ব্যবস্থা করো।
অথবা এভাবে বলা যে, হে আল্লাহ, যদি উমুক ব্যক্তি আমার জন্য কল্যাণকর হয় তাহলে তাকে আমার সাথে বিয়ের ব্যবস্থা করে দাও। আর যদি সে আমার জন্য কল্যাণকর না তাহলে তার পরিবর্তে যে আমার জন্য অধিক কল্যাণকর তার সাথে বিয়ের সুব্যবস্থা করো।
🔰 কোনো ব্যক্তির সাথে বিয়ের পূর্বে তার ব্যাপারে বিজ্ঞজনদের পরামর্শ গ্রহণ এবং আল্লাহর নিকট ইস্তিখারা করা (দুই রাকাত নফল সালাত আদায় করার পর ইস্তিখারা এর দোয়া পাঠ করা) কতর্ব্য। এতে সে আল্লাহর রহমতে সঠিক সিন্ধান্তে উপনিত হতে পারে এবং আল্লাহ সাহায্য লাভ করে।
বিয়ের ক্ষেত্রে কেবল বাহ্যিক রূপ-সৌন্দর্য, কোন বিষয়ে যোগ্যতা, অর্থ-সম্পদ, খ্যাতি এ সব বিষয়কে কখনো অগ্রাধিকার দেয়া সমীচীন নয়-যতক্ষণ না তার আল্লাহ ভীরুতা, দ্বীনদারী, উন্নত চরিত্র ও নীতি-নৈতিকতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। কেননা বিয়ের পূর্বে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরুষের দুটি বিষয় দেখার জন্য বলেছেন। সেগুলো হল, দ্বীনদারী ও চরিত্র। যেমন:
আবু হাতিম মুযানী রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
إِذَا جَاءَكُمْ مَنْ تَرْضَوْنَ دِينَهُ وَخُلُقَهُ فَأَنْكِحُوهُ إِلاَّ تَفْعَلُوا تَكُنْ فِتْنَةٌ فِي الأَرْضِ وَفَسَادٌ ‏"‏ ‏.‏ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَإِنْ كَانَ فِيهِ قَالَ ‏"‏ إِذَا جَاءَكُمْ مَنْ تَرْضَوْنَ دِينَهُ وَخُلُقَهُ فَأَنْكِحُوهُ ‏"‏ ‏.‏ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ
"যখন তোমাদের কাছে এমন কারো প্রস্তাব আসে যার দ্বীন ও চরিত্র তোমাদের পছন্দ হয় তাকে বিয়ে দিয়ে দিবে। তা যদি না কর তবে পৃথিবীতে ফিতনা-ফাসা’দ সৃষ্টি হবে। সাহাবীরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, যদি তার মাঝে (কুফূ বা সমতার দিক থেকে) কিছু ত্রুটি থাকে? তিনি বললেন, "যখন তোমাদের কাছে এমন কারো প্রস্তাব আসে যার দ্বীন ও চরিত্র তোমাদের পছন্দ হয় তাকে বিয়ে দিয়ে দিবে।" এ কথা তিনি তিনবার বললেন। (তিরমিযী, পরিচ্ছদ: যার দীন তোমাদের কাছে পছন্দনীয় হয় তাকে বিয়ে কর।
হাদিস নম্বর: ১০৮৫, হাসান)
⛔ কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য, বর্তমান সমাজে মানুষ হাদিসে উল্লেখিত মানদণ্ডের আলোকে পাত্র খুঁজে না। তারা খুঁজে অর্থ-সম্পদ, ভালো চাকুরী, আয়-ইনকাম, প্রভাব-প্রতিপত্তি, হ্যান্ডসাম দৈহিক গঠন ইত্যাদি! কিন্তু তারা ভুলে যায়, আল্লাহ ভীরুতা, দ্বীনদারী নীতি-নৈতিকতা বিবর্জিত সম্পদ, সৌন্দর্য ও প্রভাবপত্তি সম্পন্ন মানুষের মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই। এগুলো তাকে অহংকারী ও উদ্ধত করে তোলে। আল্লাহর দ্বীনের পথে না চললে সে শয়তানের সঙ্গী হয়ে পাপ-পঙ্গিলতার মধ্যে ডুবে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে দাম্পত্য জীবনে নেমে আসে মারাত্মক অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা। এমন দ্বীন হীন স্বামীর সান্নিধ্য একজন দ্বীনদার, চরিত্রবান নারীর জীবন হয়ে যায় সীমাহীন যন্ত্রণাদায়ক।
আল্লাহ আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন।
▬▬▬🔸❤🔸▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
শাইখ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
fb/AbdullaahilHadi
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

 

৩২. প্রশ্ন: পর্দানশীন মেয়ের সাথে কি প্রেম করা যাবে? Marriage education series

 No photo description available.

 

 

প্রশ্ন: পর্দানশীন মেয়ের সাথে কি প্রেম করা যাবে?
উত্তর:
হ্যাঁ, অবশ্যই পর্দানশীন মেয়ের সাথে প্রেম করা যাবে। তবে তা বিয়ে করার পর; আগে নয়।
বিয়ের পর প্রেম-ভালোবাসা অত্যন্ত সওয়াবের। এতে আল্লাহ খুশি হন। পক্ষান্তরে বিয়ের পূর্বে কথিত প্রেম-ভালোবাসা গুনাহের। এতে শয়তান খুশি হয়।
-আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল

৩১. প্রশ্ন: মুশরিককে বিয়ে করে সন্তান হলে সে কি জারজ সন্তান হবে? Marriage education series

 No photo description available.

 

প্রশ্ন: মুশরিক বিয়ে করে সন্তান হলে সে কি জারজ সন্তান হবে?
উত্তর:
ইসলামের দৃষ্টিতে কোন মুসলিমের জন্য (চাই পুরুষ হোক অথবা নারী হোক) মুশরিককে বিয়ে করা হারাম।
মহান আল্লাহ বলেন:
 
وَلَا تَنكِحُوا الْمُشْرِكَاتِ حَتَّىٰ يُؤْمِنَّ ۚ وَلَأَمَةٌ مُّؤْمِنَةٌ خَيْرٌ مِّن مُّشْرِكَةٍ وَلَوْ أَعْجَبَتْكُمْ ۗ وَلَا تُنكِحُوا الْمُشْرِكِينَ حَتَّىٰ يُؤْمِنُوا ۚ وَلَعَبْدٌ مُّؤْمِنٌ خَيْرٌ مِّن مُّشْرِكٍ وَلَوْ أَعْجَبَكُمْ ۗ أُولَـٰئِكَ يَدْعُونَ إِلَى النَّارِ ۖ وَاللَّـهُ يَدْعُو إِلَى الْجَنَّةِ وَالْمَغْفِرَةِ بِإِذْنِهِ ۖ وَيُبَيِّنُ آيَاتِهِ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ
“আর তোমরা মুশরিক নারীদেরকে বিয়ে করো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান গ্রহণ করে। একজন মুসলিম ক্রীতদাসী মুশরেক নারী অপেক্ষা উত্তম, যদিও তাদেরকে তোমাদের কাছে ভালো লাগে। এবং তোমরা (নারীরা) কোন মুশরিকের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ো না, যে পর্যন্ত সে ঈমান না আনে। একজন মুসলিম ক্রীতদাসও একজন মুশরেকের তুলনায় অনেক ভাল, যদিও তোমরা তাদের দেখে মোহিত হও। তারা জাহান্নামের আগুনের দিকে আহ্বান করে, আর আল্লাহ নিজের হুকুমের মাধ্যমে আহ্বান করেন জান্নাত ও ক্ষমার দিকে। আর তিনি মানুষকে নিজের নির্দেশ বাতলে দেন যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।" (সূরা বাকারা: ২২১)
 
আর ইসলামের একটি মূলনীতি হল, “বিয়ে বৈধ হলে সন্তান বৈধ আর বিয়ে অবৈধ হলে সন্তানও অবৈধ।”
সুতরাং কোন মুসলিম যদি কোনও হিন্দু, বৌদ্ধ, অগ্নিপূজক, গাছ, মাছ, কবর পূজারী ইত্যাদি মুশরিককে বিয়ে করে তাহলে তার বিয়ে বাতিল। এভাবে তথাকথিত বিয়ে করে ঘর সংসার করলে তা শরিয়তের দৃষ্টিতে ব্যভিচার হিসেবে গণ্য হবে। সুতরাং তাদের ঔরসজাত সন্তানও হবে অবৈধ (জারজ) সন্তান।
 
উল্লেখ্য যে, এই সন্তানের কোনও দোষ নেই। সে নিষ্পাপ। তার প্রতি কোনও ধরণের কু ধারণা রাখা যাবে না। মান-মর্যাদা পাওয়ার ক্ষেত্রে তার প্রতি কোনরূপ বৈষম্য করা যাবে না। আলেম হলে তার পেছনে নামাজ পড়তেও কোন সমস্যা নেই।
 
আল্লাহ আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন।
আল্লাহু আলাম।
--------------------------
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব