Thursday, June 24, 2021

প্রশ্ন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কবরকে ‘রওযা’ বলা কি ঠিক? রওযা কী? রাসূল এর কবরের পাশে আর কাকে দাফন করা হয়েছে?

 May be an image of text that says 'প্রশ্ন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কবরকে 'রওযা' বলা কি ঠিক? রওযা কী? রাসূল এর কবরের পাশে আর কাকে দাফন করা হয়েছে? আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানী'

প্রশ্ন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কবরকে ‘রওযা’ বলা কি ঠিক? রওযা কী? রাসূল এর কবরের পাশে আর কাকে দাফন করা হয়েছে?
▬▬▬🔹♦🔹▬▬▬
উত্তর:
নিম্নে উপরোক্ত প্রশ্নসমূহের উত্তর প্রদান করা হল:
💠 ‘রওযা’ সংক্রান্ত একটি ব্যাপক প্রচলিত ভুল সংশোধনী:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কবরকে রওযা বলা একটি ব্যাপক প্রচলিত ভুল।
আমাদের সমাজে বেশির ভাগ সাধারণ মুসলিম এমনকি, অনেক মৌলভী-মাওলানা এবং ওয়াজ কারী সুরেলা বক্তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কবরকে ‘রওযা’ বলে উল্লেখ করে থাকে। বিভিন্ন গান-গজলেও তা ব্যাপকভাবে প্রচলিত। কিন্তু এটি একটি নিছক অজ্ঞতা। হাদিসে কোথাও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কবরকে ‘রওযা’ বলে অভিহিত করা হয় নি বরং তাঁর কবরকে ‘কবর’ই বলা হয়েছে।
যেমন দেখুন নিম্নোক্ত হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার কবরকে কবর হিসেবে উল্লেখ করেছেন:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ لاَ تَجْعَلُوا بُيُوتَكُمْ قُبُورًا وَلاَ تَجْعَلُوا قَبْرِي عِيدًا وَصَلُّوا عَلَىَّ فَإِنَّ صَلاَتَكُمْ تَبْلُغُنِي حَيْثُ كُنْتُمْ ‏"‏ ‏
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “তোমরা তোমাদের ঘরগুলোকে কবরস্থানে পরিণত করো না এবং আমার কবরকে উৎসবের স্থানে পরিণত করো না। তোমরা আমার উপর দরূদ পাঠ করো। তোমরা যেখানেই থাকো না কেন তোমাদের দরূদ আমার কাছে পৌঁছানো হবে।” [সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: হজ্জ অনুচ্ছেদ, কবর যিয়ারত, হা/ ২০৪২, সহিহ]
সুতরাং আমাদেরও কর্তব্য হবে, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কবরকে কবর বলা; রওযা নয়।
 
✅ রওযা কাকে বলে?
 
রওযা শব্দের অর্থ বাগান। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মসজিদে অবস্থিত খুতবার মিম্বার এবং তাঁর ঘর (বর্তমানে কবর) এর মধ্যস্থিত স্থানকে রওযা (রিয়াদুল জান্নাহ বা জান্নাতের বাগান) বলা হয়।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
 
«مَا بَيْنَ بَيْتِي وَمِنْبَرِي رَوْضَةٌ مِنْ رِيَاضِ الْجَنَّةِ وَمِنْبَرِي عَلَى حَوْضِي»
 
‘‘আমার ঘর (বর্তমানে কবর) ও মিম্বারের মাঝখানের স্থানটি রওযাতুন মিন রিয়াযিল জান্নাহ বা জান্নাতের বাগিচা সমূহের একটি বাগিচা। আর আমার মিম্বার আমার হাওজের উপর অবস্থিত।’’[সহীহ বুখারি, হাদিস নং ৭৩৩৫ ও সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৩৪৩৬।]
 
✅ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কবরের পাশে আর কার কবর আছে?
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কবরের পাশে তার সবচেয়ে নিকটতম দুই সাথী ও সর্বক্ষেত্রে সাহায্যকারী মুসলিম জাহানের ১ম ও ২য় খলিফা যথাক্রমে আবু বকর সিদ্দিক রা. এবং উমর ইবনুল খাত্তাব রা. এর কবর রয়েছে।
একটি কথা প্রচলিত রয়েছে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কবরের সন্নিকটে আরেকটি জায়গা ফাঁকা রয়েছে। সেখানে শেষ জামানায় ঈসা আলাইহিস সালাম দুনিয়াতে পুনরাগমন করলে তার মৃত্যুর পর তাকে সেখানে দাফন করা হবে। কিন্তু এ মর্মে বর্ণিত হাদিসটি সহীহ নয়।
এ মর্মে বর্ণিত জঈফ হাদিস ও সে ব্যাপারে মুহাদ্দিসদের বক্তব্য নিম্নে পেশ করা হল:
 
عن عبد الله بن عمرو رضي الله عنهما قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : ( ينزل عيسى ابن مريم إلى الأرض ، فيتزوج ، ويولد له ، ويمكث خمسا وأربعين سنة ، ثم يموت فيدفن معي في قبري ،
رواه ابن أبي الدنيا – كما عزاه إليه الذهبي في "ميزان الاعتدال" (2/562) - وابن الجوزي في "العلل المتناهية" (2/915) وفي "المنتظم" (1/126) ، وفي "الوفا" (2/714) أيضا : من طريق عبد الرحمن بن زياد بن أنعم الإفريقي .
قال ابن الجوزي : " هذا حديث لا يصح ، والإفريقي ضعيف بمرة " انتهى .
وأورده الذهبي في "ميزان الاعتدال" في سياق المناكير التي رواها هذا الراوي ، وقال : " فهذه مناكير غير محتملة " انتهى .
وقال الشيخ الألباني في "السلسلة الضعيفة" برقم (6562) : " منكر " انتهى
 
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬🔹♦🔹▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, ksa

 

হায়েযের সর্বোচ্চ মেয়াদ কত দিন? হায়েয থেকে পবিত্র হওয়ার আলামত কি? হায়েয থেকে পবিত্রতা অর্জনের পর যদি হলুদাভ বা ময়লার মত স্রাব দেখা যায় তাহলে কী করণীয়? Marriage education series

 May be an image of flower and text that says 'হায়েযের সর্বোচ্চ মেয়াদ কত দিন? wattn বল ਦ জারন হায়েয থেকে পবিত্র হওয়ার আলামত কি? চ হায়েয থেকে পবিত্রতা অর্জনের ਪਾব পর যদি হলুদাভ বা ময়লার মত স্রাব দেখা যায় তাহলে কী করণীয়? FB/Guidance2TheRightPath'

হায়েযের সর্বোচ্চ মেয়াদ কত দিন?
হায়েয থেকে পবিত্র হওয়ার আলামত কি?
হায়েয থেকে পবিত্রতা অর্জনের পর যদি হলুদাভ বা ময়লার মত স্রাব দেখা যায় তাহলে কী করণীয়?
▬▬▬🔸♦🔸▬▬▬
প্রশ্ন: এক জায়গায় শুনেছি, হায়েযের নির্দিষ্ট সময় পার হলেই (৫,৭, ১০ দিন) সাদা স্রাব না বের হলেও (হলদে, বাদামি রঙ থাকলেও) নামাজ শুরু করে দিতে হবে। যেহেতু ওই নারীর নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গিয়েছে। আবার আরেক জায়গায় শুনলাম, সাদা স্রাব না বের হলে কোনো ভাবেই নামাজ শুরু করা যাবে না। তা নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে ২/৩ দিন বেশি হলেও-এমন কি ১৫ দিন পর্যন্তও হতে পারে। আসলে কোনটা সঠিক?
হায়েযের শেষ এর দিকে সাদা স্রাব বের হওয়ার পরে সাথে সাথেই হলদে স্রাব বের হলে তা কি হায়েয বলেই গণ্য হবে নাকি সাদা স্রাব বের হওয়ার কারণে তার সলাত শুরু করে দিতে হবে?
উত্তর:
♻ প্রথমে আমাদের জানা উচিৎ হায়েযের সর্বোচ্চ মেয়াদ কত দিন। এর সর্বোচ্চ মেয়াদ কি ১৫ দিন না কি অন্য কোনো কিছু?
হায়েযের সর্বোচ্চ মেয়াদ কত দিন সে বিষয়ে বিজ্ঞ আলেমদের মাঝে দ্বিমত রয়েছে। যেমন:
🌀 একদল আলেম বলেন, হায়েয বা ঋতুস্রাবের রক্তের রং, গন্ধ বা ধরণ-প্রকৃতি সুপরিচিত। এটি সাধারণ রক্ত থেকে আলাদা। হায়েযের মেয়াদ বৃদ্ধি হতে পারে বিভিন্ন কারণে। যেমন: জন্মনিরোধক ঔষধ সেবন।
অতএব, কোন মহিলার ঋতুস্রাব যদি তার প্রতি মাসের নিয়মের বাইরেও অব্যাহত থাকে তাহলে যতদিন তা চলতে থাকে ততদিন তা ঋতুস্রাব হিসেবেই গণ্য হবে যত দিন তা বন্ধ না হয়। কেননা, ঋতুস্রাবের বিষয়টি খুবই ব্যাপক ও গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার পরও কুরআন-সুন্নায় এর মেয়াদ নির্ধারণ সম্পর্কে কোন বক্তব্য আসে নি।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
 
وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الْمَحِيضِ ۖ قُلْ هُوَ أَذًى فَاعْتَزِلُوا النِّسَاءَ فِي الْمَحِيضِ ۖ وَلَا تَقْرَبُوهُنَّ حَتَّىٰ يَطْهُرْنَ ۖ فَإِذَا تَطَهَّرْنَ فَأْتُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ أَمَرَكُمُ اللَّـهُ
 
“আর তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে হায়েয (ঋতুস্রাব) সম্পর্কে। বলে দাও, এটা অশুচি। কাজেই তোমরা হায়েয অবস্থায় স্ত্রীগমন থেকে বিরত থাক। তখন পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী হবে না, যতক্ষণ না তারা পবিত্র হয়ে যায়। যখন উত্তম রূপে পরিশুদ্ধ হয়ে যাবে, তখন গমন কর তাদের কাছে, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে হুকুম দিয়েছেন।” (সূরা বাকারা: ২২)
মোটকথা, যতদিন এই হায়েয অব্যাহত থাকবে ততদিন হায়েযের বিধান প্রযোজ্য হবে। আর হায়েজের রক্ত না থাকলে তখন তার বিধানও প্রযোজ্য হবে না।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন (মজমু ফতোয়া ১৯/২৩৭)। আল্লামা উসাইমীন রহ. এ মতকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।
 
🌀 তবে জুমহূর তথা অধিকাংশ বিদ্বানের মত হল, হায়েযের সর্বোচ্চ সময়সীমা ১৫ দিন। ১৫ দিন হয়ে গেলে গোসল করে পবিত্র হতে হবে যদিও রক্তস্রাব চলতেই থাকে। ঐ অবস্থায় প্রত্যেক ফরয সালাতের জন্যে আলাদাভাবে ওযু করবে। আর পোশাক থেকে ইস্তিহাযার রক্তের চিহ্ন ধুয়ে ফেলবে। তখন পনের দিনের পর নির্গত রক্তকে ইস্তেহাযা (রক্তপ্রদর) এর রক্ত বলা হবে।
এই মতকে গ্রহণ করেছেন সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি আল্লামা আব্দুল্লাহ বিন বায রহ.।
১৫ দিন নির্দিষ্ট করার পক্ষে কুরআন-সুন্নাহ থেকে কোনো দলিল না থাকলেও তারা মহিলাদের সাধারণ অবস্থা ও অভ্যাসকে দলিল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তারা বলেন, মহিলাদের ঋতুস্রাব ১৫ দিনের বেশি হয় না।
তবে ১৫ দিন নির্দিষ্ট করার পক্ষে দলিল না থাকায় ১ম অভিমতটিকে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. গ্রহণ করেছেন এবং শাইখ উসাইমীন রহ. এটিকে সমর্থন করেছেন। আর এটাই অধিক বিশুদ্ধ ইনশাআল্লাহ।
সুতরাং কারো নিয়মিত ৫/৭/১০ দিন সময়-সীমার চেয়ে বেশি ১৫ দিন বা ততোধিক সময় ধরে যদি স্রাব অব্যাহত থাকে আর তা যদি অবিকল হায়েজের রক্তের অনুরূপ হয় তাহলে তা হায়েয হিসেবেই ধরতে হবে এবং সে সময় সালাত-সিয়াম থেকে বিরত থাকতে হবে।
♻ হায়েয থেকে পবিত্র হওয়ার আলামত:
হায়েয থেকে পবিত্র হওয়ার আলামত হল, স্রাব সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাওয়া বা লজ্জা স্থান পরিপূর্ণভাবে শুষ্ক হয়ে যাওয়া অথবা বা সাদা স্রাব নির্গত হওয়া। এ দুটি আলামতের কোন একটি পাওয়া গেলে গোসল করে পবিত্রতা অর্জন করবে এবং যথারীতি সালাম-সিয়াম শুরু করবে।
♻ হায়েয বা ঋতুস্রাব থেকে পবিত্রতা অর্জনের পর যদি হলুদাভ বা ময়লার মত স্রাব দেখা যায়:
মহিলারা ঋতুস্রাব থেকে পবিত্র হওয়ার পর সাধারণ দিনগুলোতে যদি বিবর্ণ হলুদাভ বা ময়লাযুক্ত পানির মত ধুসর রঙ্গের স্রাব দেখতে পায় তাহলে তা হায়েয হিসেবে গণ্য হবে না। কেননা, উম্মে আত্বিয়া রা. হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন:
كُنَّا لا نَعُدُّ الْكُدْرَةَ وَالصُّفْرَةَ بَعْدَ الطُّهْرِ شَيْئًا
"আমরা (হায়েয বা ঋতুস্রাব) থেকে পবিত্রতা অর্জনের পর ময়লাযুক্ত ধুসর রঙ্গের পানি ও বিবর্ণ হলুদাভ স্রাবকে কিছুই মনে করতাম না।" (অর্থাৎ এগুলোকে হায়েয হিসেবে গণ্য করতাম না।)
[সুনান আবু দাউদ, শাইখ আলবানী রহ. হাদিসটিকে সহীহ বলেন।]
সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে:
كُنَّا لَا نَعُدُّ الْكُدْرَةَ وَالصُّفْرَةَ شَيْئًا
"আমরা ময়লাযুক্ত ধুসর রঙ্গের পানি ও বিবর্ণ হলুদাভ স্রাবকে কিছুই মনে করতাম না।" (সহীহ বুখারী হা/ ৩২৬)
সুতরাং কোন মহিলার এমনটি হলে, সে স্বাভাবিক নিয়মে নামায-রোযা অব্যাহত রাখবে। এটা পেশাবের মত নাপাকি হিসেবে গণ্য হবে। এ ক্ষেত্রে তা ধৌত করবে এবং প্রত্যেক ওয়াক্তে আলাদা ওযু করে সালাত আদায় করবে। আর রোযা অবস্থায় এমনটি দেখা গেলে স্বাভাবিক নিয়মে রোযা পূর্ণ করবে।
তবে হায়েযের সাথে যুক্ত অবস্থায় অর্থাৎ হায়েয শেষ হওয়ার শেষ দিকে এ ধরণের হলুদ বা ময়লার মত স্রাব নির্গত হলে তা হায়েয হিসেবেই গণ্য করতে হবে।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬◈◉◈▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, KSA
fb/AbdullaahilHadi

 

হিন্দুদেরকে খুশি রাখতে মুসলিমদের গরুর গোস্ত বর্জন কি ইসলাম সম্মত?

 May be an image of text that says 'হিন্দুদেরকে খুশি রাখতে মুসলিমদের নো বীফ" কালচার কি ইসলাম সম্মত?'

হিন্দুদেরকে খুশি রাখতে মুসলিমদের গরুর গোস্ত বর্জন কি ইসলাম সম্মত?
▬▬▬▬◯▬▬▬▬
 
প্রশ্ন: আমাদের হোস্টেলে ২২ জন ছেলে থাকে। ৩ জন হিন্দু বাদে বাকি সবাই মুসলিম। ওই ৩ জনের সমস্যা হয় বলে আমরা মুসলিমরা ফার্স্ট ইয়ার থেকেই হোস্টেলে গরুর মাংস খাই না। এতে (হিন্দুদের সাপোর্ট দেয়ায়) কি আমাদের গুনাহ হচ্ছে? আমাদের করণীয় কী?
উত্তর:
 
ইসলামে গরুর গোস্ত খাওয়া হালাল। ইসলাম ছাড়া ইহুদি ও খৃষ্টান সহ প্রায় সকল ধর্মেই গরুর গোস্ত খাওয়া অনুমোদিত। এমনকি হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, হিন্দু ধর্মেও গরুর গোস্ত খাওয়া নিষিদ্ধ নয়। তাদের দেব-দেবতারা গরুর গোস্ত খেতেন।
 
➧ স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, "এই ভারতবর্ষেই এমন এক দিন ছিল যখন কোন ব্রাহ্মণ গরুর মাংস না খেলে ব্রাহ্মণই থাকতে পারতেন না। যখন কোন সন্ন্যাসী, রাজা, কিংবা বড় মানুষ বাড়ীতে আসতেন, তখন সবচেয়ে ভালো ষাঁড়টিকে কাটা হতো। (Collected works of Swami Vivekananda, Advaita Asharama,1963, Vol III, page 172)।
➧ মহাত্মা গান্ধী বলেছেন,
 
"I know there are scholars who tell us that cow-sacrifice is mentioned in the Vedas. I… read a sentence in our Sanskrit text-book to the effect that Brahmins of old (period) used to eat beef. ( M.K.Gandhi, Hindu Dharma, New Delhi, 1991, p. 120).
 
"আমি জানি (কিছু সংখ্যক পণ্ডিত আমাদের বলেছেন) বেদে গো-উৎসর্গ করার কথা উল্লেখ আছে। আমি আমাদের সংস্কৃত বইয়ে এরূপ বাক্য পড়েছি যে,পূর্বে ব্রাহ্মণরা গো-মাংস ভক্ষণ করতেন।" (হিন্দুধর্ম,এম.কে. গান্ধী,নিউ দিল্লি,১৯৯১,পৃ. ১২০)॥
 
অতএব এবার নিশ্চয়ই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় গরু খাওয়া হিন্দু ধর্ম সম্মত।
[আরও দেখুন: সম্প্রতি গরুর গোস্ত বিষয়ে হিন্দু পণ্ডিতের সাথে ব্রাদার রাহুল ভাইয়ের ডিবেট এবং জাকির নাইকের এ সংক্রান্ত ভিডিও সমূহ। সেখানে সরাসরি তাদের ধর্মীয় বই থেকে প্রমাণ দেখানো হয়েছে]
কিন্তু বর্তমান যুগের কিছু হিন্দু তাদের ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞতা বা ভুল ব্যাখ্যার শিকার হওয়ার ফলে অথবা ধর্মীয় গোঁড়ামি বশত: গরুর গোস্ত খাওয়াকে নিষিদ্ধ মনে করে-যা সম্পূর্ণ ভুল।
এরা আবার গরুর দুধ পান করে, মুত পান করে, গরুর চামড়া দিয়ে জুতা বানায়, গরু দিয়ে চাষাবাদ করে এবং বাজারে বিক্রয় করে। ভারতে হিন্দু ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে পরিচালিত বড় বড় কোম্পানি আছে, যেখান থেকে গরু জবাই করে তার গোস্ত আরব সহ সারা বিশ্বে রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করে।
এখনো বহু হিন্দু পণ্ডিত এবং উচ্চ শিক্ষিত হিন্দুরা নির্দ্বিধায় গরুর গোস্ত খায়। শুধু তাই নয় তারা এর বিরোধিতাকারীদে প্রতিবাদও করে।
 
❑ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ধোঁয়া তুলে গরুর গোশত বর্জন ইসলামি চেতনা পরিপন্থী:
নিচের ঘটনাটি দেখুন:
 
সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রা. ইসলাম গ্রহণ করার আগে ছিলেন ইহুদি পণ্ডিত। ইহুদি ধর্ম তিনি বেশ নিষ্ঠার সাথেই পালন করতেন। ইহুদি ধর্মে উটের গোশত খাওয়া নিষেধ ছিল। মুসলিম হবার পর তিনি যখন দেখলেন, ইসলামের বিধান অনুসারে উটের গোশত খাওয়া জরুরি কোন বিষয় নয়, বরং এটি মুবাহ বা বৈধ এবং এটি খাওয়ার জন্য আলাদা কোন সওয়াবও নেই, তখন তিনি উটের গোশত না খাওয়ার উপরই বহাল রয়ে গেলেন। কারণ এতে করে তার ইসলামের কোন বিধান লঙ্ঘন হচ্ছিল না।
স্বাভাবিক দৃষ্টিতে বিষয়টাকে সাধারণ মনে হলেও গভীরভাবে চিন্তা করলে এতে অন্য বাতিল ধর্মের ধর্মীয় বিধানের প্রতি সূক্ষ্ম সহানুভূতি ও সম্মান প্রদর্শনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ফলে আল্লাহ তাআলার তা পছন্দ হয়নি। তিনি আয়াত নাজিল করলেন,
 
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ادْخُلُوا فِي السِّلْمِ كَافَّةً وَلا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ
 
"হে মুমিনগণ, তোমরা ইসলামে পূর্ণরূপে প্রবেশ করো এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না । নিশ্চয় সে তোমাদের জন্য স্পষ্ট শত্রু।" (বাকারা: ২০৮)
 
روى الواحدي في "أسباب النزول" عن ابن عباس رضي الله عنهما، قال: نزلت هذه الآية في عبد الله بن سلام وأصحابه، وذلك أنهم حين آمنوا بالنبي صلى الله عليه وسلم فآمنوا بشرائعه وشرائع موسى، فعظموا السبت، وكرهوا لحم الإبل وألبانها بعد ما أسلموا، فأنكر ذلك عليهم المسلمون، فقالوا: إنا نقوى على هذا وهذا، وقالوا للنبي صلى الله عليه وسلم: إن التوراة كتاب الله، فدعنا، فلنعمل بها، فأنزل الله تعالى هذه الآية
 
[আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, আসবাবুন নুযূল: আলী বিন আহমদ নিসাপুরি]
উক্ত আয়াতটি নাজিল হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে দুটি মতের মধ্যে এটি একটি।
বাহ্যত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রা. ইসলামের সাথে বিরোধমূলক কিছু না করলেও এটি ছিল ইসলামের মেজাজের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ। ইসলামের দাবি হল, অন্য বাতিল ধর্মের ধর্মীয় বিধানের প্রতি সম্মান বা সহানুভূতি না দেখানো। ফলে আল্লাহ তাকে সতর্ক করলেন। সেই সাথে এই সতর্ক বার্তা আগত সকল মানুষের জন্যও নির্ধারিত হয়ে গেল। [সংগৃহীত ও সংযোজিত]
 
হ্যাঁ, কেউ যদি ব্যক্তিগতভাবে তা না খায় সেটা তার নিজস্ব অভিরুচি। যে খাবে না সে বিরত থাকবে। যেমন: মুসলিমদের মধ্যেও অনেক আছে যারা গরুর গোস্ত খায় না, কেউ মুরগির গোস্ত খায় না, কেউ পাখির গোস্ত ইত্যাদি হালাল প্রাণীর গোস্ত খায় না। কে কি খাবে-না খাবে তা তার ইচ্ছা ও অভিরুচি।
সুতরাং আপনাদের হোস্টেলে ৩ জন হিন্দু গরুর গোস্ত খায় না বলে বাকি সব মুসলিমরা গরুর গোস্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকা সমীচীন মনে করি না। (যেহেতু তা হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থে কোথাও নিষেধ করা হয় নি।) বরং এটা ধর্মীয় অধিকার থেকে মুসলিমদের পিছু হটা এবং হিন্দুদের অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন দাবীর নিকট নতি শিকারের শামিল বরং তা ইসলামি চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক-যেমন উপরে উল্লেখিত আয়াতের শানে নুযূল থেকে প্রমাণিত।
 
আফসোসের বিষয় হল, বাংলাদেশের মত সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলিম দেশে একটি সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলিম হোস্টেলে মাত্র ৩ জন হিন্দুর জন্য ১৯ জন মুসলিম গরুর গোস্ত বর্জন করার পরও কিন্তু মুসলিমদের বিরুদ্ধে হিন্দুদের অভিযোগ থেমে যায় নি। কিছু হিন্দুর জন্য ঢাকার বহু মুসলিম হোটেলে 'নো বীফ' সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়ার পরও কিন্তু মুসলিমরা এখনো 'উদার' হতে পারে নি! বরং তারা মুসলিমদের প্রতি গোঁড়া, সাম্প্রদায়িক, সন্ত্রাসী ইত্যাদি নানা অভিধায় নিরন্তর অভিযোগ করেই যাচ্ছে। আল্লাহ তাআলা যথার্থই বলেছেন,
 
وَلَن تَرْضَىٰ عَنكَ الْيَهُودُ وَلَا النَّصَارَىٰ حَتَّىٰ تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمْ ۗ قُلْ إِنَّ هُدَى اللَّهِ هُوَ الْهُدَىٰ ۗ وَلَئِنِ اتَّبَعْتَ أَهْوَاءَهُم بَعْدَ الَّذِي جَاءَكَ مِنَ الْعِلْمِ ۙ مَا لَكَ مِنَ اللَّهِ مِن وَلِيٍّ وَلَا نَصِيرٍ
 
"ইহুদী ও খ্রিষ্টানরা কখনই আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, যে পর্যন্ত না আপনি তাদের ধর্মের অনুসরণ করেন। বলে দিন, যে পথ আল্লাহ প্রদর্শন করেন তাই হল সরল পথ। যদি আপনি তাদের আকাঙ্ক্ষা সমূহের অনুসরণ করেন- আপনার নিকট জ্ঞান আসার পরও-তবে (স্মরণ রাখবেন) আল্লাহর কবল থেকে কেউ আপনার উদ্ধারকারী ও সাহায্যকারী নেই।" [সূরা বাকারা: ১২০]
 
আর ইসলামের দৃষ্টিতে সকল কু ফ রি শক্তি এক সম্প্রদায়ভুক্ত (الكفر ملة واحدة) অর্থাৎ ইহুদি, খৃষ্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, অগ্নিপূজক ইত্যাদি সকল কা ফে র সম্প্রদায় এক জাতী। তারা মুসলিমদের প্রতি ততক্ষণ খুশি হবে না যতক্ষণ না তারা ইসলাম ছেড়ে তাদের ধর্মে দীক্ষিত হয়-যতই মুসলিমরা তাদেরকে ছাড় দিয়ে চলুক না কেন..যতই তারা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে সরে আসুক না কেন।
 
আল্লাহ তাআলা আত্মভোলা মুসলিমদেরকে তাদের আত্মপরিচয় জানার এবং পুনরায় তাদের হারানো আত্মমর্যাদা, সম্মান ও প্রভাব-প্রতিপত্তি ফিরিয়ে আনার তওফিক দান করুন। আমিন।
আল্লাহু আলাম।
-আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
জুবাইল, সৌদি আরব

 

সুলাইমান আ. এর আসরের সালাত ছুটে যাওয়া এবং ঘোড়া জবাই এর ঘ্টনা: প্রসঙ্গ: নামায ছুটে গেলে আমাদের করণীয়

 May be an image of text that says 'সালাত ছুটে গেলে করণীয় কি? "যে ব্যক্তি নামাযের কথা ভুলে যায় কিংবা নামায না পড়ে ঘুমিয়ে থাকে তার কাফফারা হল, যখন নামাযের কথা স্মরণ হবে তখন তা আদায় করা l" সহীহ বুখারী, হাদীস:৫৯৭৬ হাদীস:'

সুলাইমান আ. এর আসরের সালাত ছুটে যাওয়া এবং ঘোড়া জবাই এর ঘ্টনা:
প্রসঙ্গ: নামায ছুটে গেলে আমাদের করণীয়
▬▬▬▬▬▬▬▬
 
প্রশ্ন: সুলাইমান আ. কি নামায miss করার কারণে নিজের ঘোড়াগুলো জবাই করে ফেলেছিলেন?
আমরা তো অনেক কারণে গুনাহ করে ফেলি, নামায মিস করে ফেলি। কখনও নিজের পড়াশোনার কারণে, কখনও নিজেরদের স্বামী-সন্তানদের কারণে। কখনও আমরা নিজেদের লেখাপড়া অথবা সন্তান-সন্তুতি নিয়ে এত busy হয়ে যাই যে, ভুলে নামায মিস করে ফেলি। অবশ্যই এটা আমাদের উচিত নয়। কিন্তু যদি এমন হয়ে যায়, তখন কি আমাদের সেই জিনিসগুলো sacrifices করে দেয়া উচিত? নাকি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে চেষ্টা করা উচিত যেন আমরা যেন আর ভুল না করি।?
 
উত্তর:
প্রথমে আমরা সুলাইমান আ. এর আসলে কী ঘটেছিল সে সম্পর্কেে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করার পর সালাত ছুটে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় বিষয় আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
 
❒ আল্লাহর নবী সুলাইমান আলাইহিস সালাম আসর নামায ছুটে যাওয়ার কারণে কি সত্যি তাঁর ঘোড়াগুলো জবাই করে দিয়েছিলেন?
 
এ বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে কুরআনের নিন্মোক্ত আয়াতগুলোতে:
আল্লাহ বলেন:
 
وَوَهَبْنَا لِدَاوُودَ سُلَيْمَانَ ۚ نِعْمَ الْعَبْدُ ۖ إِنَّهُ أَوَّابٌ ﴿٣٠﴾ إِذْ عُرِضَ عَلَيْهِ بِالْعَشِيِّ الصَّافِنَاتُ الْجِيَادُ ﴿٣١﴾ فَقَالَ إِنِّي أَحْبَبْتُ حُبَّ الْخَيْرِ عَن ذِكْرِ رَبِّي حَتَّىٰ تَوَارَتْ بِالْحِجَابِ ﴿٣٢﴾ رُدُّوهَا عَلَيَّ ۖ فَطَفِقَ مَسْحًا بِالسُّوقِ وَالْأَعْنَاقِ ﴿٣٣
 
“আমি দাউদকে সোলায়মান দান করেছি। সে একজন উত্তম বান্দা। সে ছিল প্রত্যাবর্তনশীল। যখন তার সামনে অপরাহ্নে উৎকৃষ্ট অশ্বরাজি পেশ করা হল, তখন সে বললঃ আমি তো আমার পরওয়ারদেগারের স্মরণে বিস্মৃত হয়ে সম্পদের মহব্বতে মুগ্ধ হয়ে পড়েছি-এমনকি সূর্য ডুবে গেছে। এগুলোকে আমার কাছে ফিরিয়ে আন। অতঃপর সে তাদের পা ও গলদেশ ছেদন করতে শুরু করল।” [সূরা সাদ: ৩০-৩৩]
 
❒ সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা:
কোন কোন মুফাসসিরের মতে, সম্ভবত: তিনি এ ঘোড়াগুলো তার পিতা দাউদ আ. এর নিকট থেকে পৈত্রিক সম্পত্তি হিসেবে লাভ করেছিলেন। ওয়াহাব বিন মুনাব্বিস এবং মুকাতিল রহ. বলেন, তিনি যুদ্ধ জয়ের মাধ্যমে তিনি এসব লাভ করেছিলেন।
এগুলোর সংখ্যা নিয়ে দ্বিমত আছে। কেউ বলেন, তিন হাজার, কেউ বলেন, বিশ হাজার, কেউ বলেন, এক হাজার, কেউ বলেন, বিশটি।
যাহোক তিনি ঘোড়া প্রচণ্ড ভালোবাসতেন এবং এগুলোর প্রতি খুব যত্ন নিতেন। ইবনে কাসীর রহ. বলেন, এসব ঘোড়ার দেখভাল ও সেবা-যত্নে ব্যস্ত থাকায় তিনি একবার আসরের সালাত ভুলে গিয়েছিলেন। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত ত্যাগ করেন নি। যেমন আমাদের নবী মুহাম্মদ সা. খন্দক যুদ্ধে লিপ্ত থাকায় আসরের সালাত আদায় করতে ভুলে গিয়েছিলেন। পরে তিনি মাগরিবের পরে তা আদায় করেন। এটি সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে।
 
❒ আসরের সালাত ছুটে যাওয়ায় তিনি কী করেছিলেন?
আসরের সালাত ছুটে যাওয়ার পর তিনি ঘোড়াগুলোর কী করেছেন সেটি নিয়ে মুফাসসিরদের মতে দ্বিমত রয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে উপরোক্ত আয়াতের দু ধরণের ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। যথা:
🔸 আলী ইবনে আবী তালহা এবং ইবনে আব্বাস রা. বলেন, جعل يمسح أعراف الخيل، وعراقيبها حبالها.أه
অর্থাৎ “তিনি ঘোড়াগুলোর গর্দান এবং পায়ে নলাগুলো হাত দ্বারা মাসেহ করতে লাগলেন।” এমনটি করেছেন, সেগুলোর প্রতি ভালবাসা ও যত্নের বর্হিপ্রকাশ হিসেবে।
ইবনে হাযম রহ. বলেন, ঘোড়ার গর্দান ও পায়ের নলা কাটার বিষয়টি নাস্তিক-যিন্দিকদের বানোয়াট কাহিনী ও মিথ্যাচার। (আল মিলাল ওয়ান নিহাল গ্রন্থ)
তার মতে, আসরের সালাত ছুটে যাওয়ার কারণে, এভাবে নির্দোষ ঘোড়াগুলোর গলা ও পা কেটে ফেলা এবং এতগুলো মূল্যবান সম্পদ নষ্ট করার মত আচরণ আল্লাহ সম্মানিত নবী দ্বারা ঘটা শোভনীয় হতে পারে না। বরং এটি অহঙ্কারী রাজা-বাদশাহদের কাজ। বরং তিনি ঘোড়াগুলোর প্রতি ভালবাসা ও সম্মান প্রদর্শনার্থে সেগুলোর গলা ও পায়ের নলাগুলোতে হাত বুলিয়ে দিয়েছিলেন-যেমনটি ইবনে আব্বাস ও আলী ইবনে আবী তলহা এর বক্তব্যে উল্লেখিত হয়েছে।
 
🔸 অরেকদল মুফাসসির উপরোক্ত আয়াতের অর্থ করেছেন, তিনি ঘোড়াগুলো গলা ও পায়ের নলাগুলো কেটে দিয়েছিলেন।
তারা বলেন, আসরের সালাত ছুটে যাওয়ার কারণে তিন আল্লাহর ক্রোধ থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে সেগুলো জবাই করে ছিলেন গরীব-অসাহায় মানুষদেরকে খাওয়ানোর জন্য। আর জবাইর পদ্ধতি ছিল তার শরীয়ত অনুযায়ী। গরীব-অসহায়দের জন্য এ কাজ করা দোষ নয়। বরং প্রশংসনীয় গুণ। আর ঘোড়ার গোস্ত খাওয়া ইসলামে জায়েয।
তাই যখন আল্লাহর ক্রোধ থেকে রক্ষা পাওয়ার উদ্দেশ্যে তিনি ঘোড়াগুলো জবাই করে দিলেন, আল্লাহ তাআলা খুশি হয়ে তাঁকে তার চেয়ে উত্তম জিনিস দান করলেন। আর তা হল, বাতাসকে তার আধীনস্ত করে দিলেন। যা ঘোড়ার চেয়ে তাকে আরও বহু দ্রুত গতিতে তার উদ্দিষ্ট স্থানে পৌঁছিয়ে দিত। (এ মর্মে দেখুন: সুরা সাবা: ১২)
যা হোক, এ হল উক্ত আয়াতের সংক্ষিপ্ত তাফসীর। এবার আসি, নামায ছুটে গেলে আমরা কী করব সে বিষয়ে।
 
❒ সালাত ছুটে গেলে আমাদের করণীয় কি?
এ ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কি? যে জিনিসে ব্যস্ত থাকার কারণে সালাত ছুটে গিয়েছে সে জিনিসটিকে নষ্ট করে দেয়া, দান করে দেয়া বা বিসর্জন করা না কি তওবা-ইস্তিগফার করা?
এর উত্তর হল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 
 
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « إِذَا رَقَدَ أَحَدُكُمْ عَنِ الصَّلاَةِ أَوْ غَفَلَ عَنْهَا فَلْيُصَلِّهَا إِذَا ذَكَرَهَا فَإِنَّ اللَّهَ يَقُولُ أَقِمِ الصَّلاَةَ لِذِكْرِى ».
 
“যখন তোমাদের কেউ নামাযের সময় ঘুমিয়ে থাকে বা নামায থেকে গাফেল থাকে তাহলে যখন তার বোধোদয় হবে তখন সে যেন তা আদায় করে নেয়। কেননা আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, আমাকে স্মরণ হলে নামায আদায় কর।” (সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৬৮৪, ৩১৬)
অন্য হাদীসে এসেছে-
 
من نسي صلاة أو نام عنها فكفارتها أن يصليها إذا ذكرها
 
“যে ব্যক্তি নামাযের কথা ভুলে যায় কিংবা নামায না পড়ে ঘুমিয়ে থাকে তার কাফফারা হল, যখন নামাযের কথা স্মরণ হবে তখন তা আদায় করা।” (সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫৯৭৬)
তবে দুনিয়াবী ব্যস্ততায় নামায ছুটে গেলে করণীয় হল, তা কাযা করার পাশাপাশি আল্লাহর নিকট তওবা করা এবং ভবিষ্যতে আ যেন না ছুটে সে জন্য সতর্ক হওয়া। তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুল করবেন এবং ক্ষমা করবেন বলে আশা করা যায়।
 
আরও করণীয় হল, বিশেষ কোন কারণে নামায ছুটলে কারণ চিহ্নিত পূর্বক সমাধান করা। যদি সম্ভব হয় সে কারণ যেন আর না ঘটে সে জন্য চেষ্টা করা। যেমন, চাকুরীর কারণে সালাত কাযা হলে উক্ত চাকুরী বাদ দিয়ে অন্য চাকুরী খোঁজ করবে যেখানে ভালোভাব সালাত আদায় করা যায়, বিশেষ কোন ব্যস্ততা হলে সেটা অন্য সময় করা বা সম্ভব হলে সে কাজটা সম্পূর্ণ পরিত্যাগ করা...ইত্যাদি।
 
মোটকথা, একজন মানুষকে জীবন চলার পথে নানাকাজ করবার করতে হয়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যস্ত থাকতে হয়। এটা স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের করণীয় হবে, শত কাজের ভীড়েও নামাযকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ মনে করে যথাসময়ে তা আদায় কর এবং সর্বাত্তকভাবে চেষ্টা করা যেন, কোনভাবেই নামায কাজা না হয়। আল্লাহ তাওফিক দান করুন।
 
▬ ▬ ▬ ▬ ▬ ▬ ▬ ▬ ▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদি আরব

 

পাত্রী নির্বাচনের সঠিক মানদণ্ড Marriage education series

May be an image of text

 

পাত্রী নির্বাচনের সঠিক মানদণ্ড
▬▬▬ ◈❥◈▬▬▬
আপনি কি কোন মেয়েকে বিয়ের কথা ভাবছেন? তাহলে জেনে নিন, পাত্রী নির্বাচনের সঠিক মানদণ্ড।
পাত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সঠিক মানদণ্ড হল দুটি। যথা: সৌন্দর্য এবং দীনদারি। অর্থাৎ কোন নারীকে বিয়ের পূর্বে সর্ব প্রথম তার সৌন্দর্য অত:পর দীনদারি দেখা উচিৎ।
 
সুতরাং যদি কোনও মেয়ের প্রতি মনে প্রবল আকর্ষণ অনুভব করেন তাহলে শরিয়ত সম্মত পন্থায় বিয়ের জন্য অগ্রসর হোন। তারপর যদি তার দ্বীনদারি ঠিক থাকে তাহলে বিয়ে করুন; অন্যথায় বর্জন করুন। অর্থাৎ তাকে গ্রহণ ও বর্জন যেন হয় দ্বীনদারিকে কেন্দ্র করে-যেমনটি বলেছেন ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রাহ.।
তিনি বলেছেন:
 
إذا خطب رجل امرأة سأل عن جمالها أولا ، فإن حُمد سأل عن دينها ، فإن حمد تزوج، وإن لم يحمد يكون ردها لأجل الدين ، ولا يسأل أولا عن الدين ، فإن حُمد سأل عن الجمال ، فان لم يحمد ردَّها للجمال لا للدين
 
“কোন পুরুষ যদি কোনও নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় তাহলে সর্বপ্রথম তার সৌন্দর্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে। যদি এ ব্যাপারে তার প্রশংসা করা হয় তাহলে তার দ্বীন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে। দ্বীনের ক্ষেত্রে যদি প্রশংসিত হয় তাহলে বিয়ে করবে; অন্যথায় দীনের কারণে প্রত্যাখ্যান করবে। কিন্তু এমনটি করা ঠিক নয় যে, প্রথমেই দীন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে। এ ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় হলে তারপরে তার সৌন্দর্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে। তারপর সৌন্দর্যের ব্যাপারে প্রশংসনীয় না হলে ফিরিয়ে দিবে। তাহলে এ প্রত্যাখ্যান হবে সৌন্দর্যের কারণে; দীনের কারণে নয়। ” (শরহু মুনতাহাল ইরাদাত-ইমাম ভূতি ২/৬২১)
 
❥❥ সৌন্দর্য:
● রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
 
‏ إِذَا خَطَبَ أَحَدُكُمُ الْمَرْأَةَ فَإِنِ اسْتَطَاعَ أَنْ يَنْظُرَ إِلَى مَا يَدْعُوهُ إِلَى نِكَاحِهَا فَلْيَفْعَلْ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ فَخَطَبْتُ جَارِيَةً فَكُنْتُ أَتَخَبَّأُ لَهَا حَتَّى رَأَيْتُ مِنْهَا مَا دَعَانِي إِلَى نِكَاحِهَا وَتَزَوُّجِهَا فَتَزَوَّجْتُهَا ‏.‏
 
“তোমাদের কেউ যখন কোন নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দিবে তখন সম্ভব হলে তার এমন কিছু যেন দেখে নেয় যা তাকে বিবাহে উৎসাহিত করে।”
 
বর্ণনাকারী বলেন, “আমি একটি মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেবার পর তাকে দেখার আকাঙ্ক্ষা-অন্তরে গোপন রেখেছিলাম। অতঃপর আমি তার মাঝে এমন কিছু দেখি যা আমাকে তাকে বিয়ে করতে আকৃষ্ট করলো। অতঃপর আমি তাকে বিয়ে করি।" [সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: বিবাহ, অনুচ্ছেদ-১৯, বিয়ের উদ্দেশে পাত্রী দেখা প্রসঙ্গ, জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত-সনদ-হাসান]
 
● আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত,
 
ﻗِﻴﻞَ ﻟِﺮَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺃَﻱُّ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀِ ﺧَﻴْﺮٌ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟَّﺘِﻲ ﺗَﺴُﺮُّﻩُ ﺇِﺫَﺍ ﻧَﻈَﺮَ ﻭَﺗُﻄِﻴﻌُﻪُ ﺇِﺫَﺍ ﺃَﻣَﺮَ ﻭَﻻ ﺗُﺨَﺎﻟِﻔُﻪُ ﻓِﻲ ﻧَﻔْﺴِﻬَﺎ ﻭَﻣَﺎﻟِﻬَﺎ ﺑِﻤَﺎ ﻳَﻜْﺮَﻩُ
 
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! কোন স্ত্রী সর্বোত্তম?
তিনি বলেন: “(স্বামী) যে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে পুলকিত হয়, কোন নির্দেশ দিলে আনুগত্য করে এবং সে তার নিজস্ব ব্যাপারে বা তার অর্থ-সম্পদের ব্যাপারে স্বামী যেটা অপছন্দ করে তার বিপরীত কিছু করে না।” (মুসনাদে আহমদ। শাইখ আলবানি হাদিসটিকে হাসান বলেছেন। উৎস: সিলসিলা সহিহা, হা/১৮৩৮)
 
উল্লেখ্য যে, সৌন্দর্য বলতে কেবল বাহ্যিক রূপ-সৌন্দর্য বুঝায় না বরং মন ও মননের সৌন্দর্য তথা বিশেষ গুণ-বৈশিষ্ট্য, জ্ঞান, মেধা, যোগ্যতা, বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদিও এর অন্তর্ভুক্ত। যদিও মানুষ কারো গুনাগুণ বিচারের পূর্বে তার বাহ্যিক রূপ-সৌন্দর্য অবলোকন করে। 
 
বাহ্যিক সৌন্দর্যের বিষয়টিও আপেক্ষিক। সবার দৃষ্টিভঙ্গি এক নয়। একজনের কাছে কাউকে আকর্ষণীয় মনে হলেও অন্যের কাছে তা নাও হতে পারে। কারো কাছে ফর্সা ভালো লাগে তো কারো কাছে ভালো লাগে শ্যামলা।
 
সুতরাং বিয়ের পূর্বে এ দিকটি দেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বিয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য হল, মনের পরিতৃপ্তি ও প্রশান্তি অর্জন করা-যা চরিত্র হেফাজত ও চোখ অবনমিত রাখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
সুতরাং আপনি যদি এমন মহিলাকে বিয়ে করেন যার দিকে তাকালে আপনার মনে আকর্ষণ সৃষ্টি হয় বা ভালো লাগে তাহলে স্বভাবতই মনে প্রশান্তি অর্জিত হবে এবং পরনারী থেকে দৃষ্টি অবনমিত রাখতে সহায়ক হবে (তবে এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতি)।
এই সৌন্দর্য ও আকর্ষণবোধ ছাড়া দাম্পত্য জীবন বেশি দূর এগুনো সম্ভব নয়।
 
❥❥ দীনদারি:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দ্বীনদারী মেয়েকে বিয়ে করার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন:
● হাদিসে এসেছে:
 
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ تُنْكَحُ النِّسَاءُ لأَرْبَعٍ لِمَالِهَا وَلِحَسَبِهَا وَلِجَمَالِهَا وَلِدِينِهَا فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّينِ تَرِبَتْ يَدَاكَ ‏"‏ ‏.‏
 
 
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “নারীদেরকে (সাধারণত) চারটি বিষয় দেখে বিয়ে করা হয়। যথা: 
 
ক. তার ধন-সম্পদ।
খ. বংশমর্যাদা।
গ. রূপ-সৌন্দর্য।
ঘ. এবং দীনদারি বা ধার্মিকতা। 
 
তবে তুমি দীনদার (ধার্মিক) নারীকে বিয়ে করে সফল হয়ে যাও; অন্যথায় তুমি লাঞ্ছিত হবে।” [সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: বিবাহ, অনুচ্ছেদ-২ ধার্মিক মহিলা বিয়ে করার নির্দেশ, হা/২০৪৭-সনদ সহিহ]
আর এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ধার্মিকতা ও নীতি- নৈতিকতা হীন নারী একজন পুরুষের জন্য এবং তার পরিবার ও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য মারাত্মক ফিতনা, অশান্তি এবং ধ্বংসের কারণ।
আল্লাহ তাআলা প্রতিটি পুরুষকে তার পছন্দের দীনদার নারীকে বিয়ে করার মাধ্যেম একটি সুস্থ ও সুন্দর দাম্পত্য জীবন গড়ার তওফিক দান করুন। আমিন।
 
▬▬▬ ◈❥◈▬▬▬
লেখক:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব

৮০. একজন মহিলার জন্য স্বামী বা মাহরাম পুরুষ ছাড়া কতদূর সফর করা বৈধ? Marriage education series

 No photo description available.

একজন মহিলার জন্য স্বামী বা মাহরাম পুরুষ ছাড়া কতদূর সফর করা বৈধ?
----------------
প্রশ্ন: একজন মহিলার জন্য স্বামী বা মাহরাম পুরুষ ছাড়া কতদূর সফর করা জায়েজ? একটা হাদিসে বলা হয়েছে, “কোন মহিলার জন্য মাহরাম ছাড়া এক দিন-একরাতের সফর করা বৈধ নয়।” এখানে “এক দিন-এক রাত” দ্বারা কী উদ্দেশ্য?
উত্তর:
 
মহিলাদের জন্য স্বামী বা মাহরাম পুরুষ (যার সাথে কখনোও বিবাহ বৈধ নয়) ছাড়া একান্ত প্রয়োজন ব্যতিরেকে সফরের দূরত্ব অতিক্রম করা জায়েজ নেই। আর সফরের দূরত্ব হল, প্রায় ৮০ কি:মি: (যদিও এ বিষয়ে মতবিরোধ রয়েছে। কেননা, হাদিসে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট বক্তব্য আসে নি। তবে অনেক আলেম এই মত পোষণ করেছেন।)
এক দিন-এক রাতের দূরত্ব হওয়া জরুরি নয়। কেননা মহিলাদের মাহরাম ছাড়া সফরে নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত হাদিসগুলো বিভিন্ন শব্দে বর্ণিত হয়েছে। যেমন:
● ক. তিন দিন তিন রাত
● খ. তিন দিন
● গ. তিন রাত
● ঘ. এক দিন একরাত
● ঙ. অর্ধ দিন। হাদিসে এভাবে বিভিন্নভাবে এসেছে।
 
সুতরাং একান্ত জরুরি বা নিরুপায় না হলে মাহরাম ছাড়া কোন মহিলার জন্য সফর করা বৈধ নয় -সফর করতে সময় যত কম লাগুক বা বেশী লাগুক সেটা ধর্তব্য বিষয় নয়। কেননা, এ সংক্রান্ত হাদিসগুলো বিভিন্ন শব্দে বর্ণিত হওয়ায় সেটাই বুঝা যায়।
 
তবে যদি ফিতনা পতিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তবে সফরের দূরত্বের কম হলেও সফর করা যাবে না স্বামী বা মাহরাম পুরুষের সঙ্গ ছাড়া। আল্লাহ সবচেয়ে ভাল জানেন।
 
------------------
উত্তর:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
জুবাইল, দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স এন্ড গাইডেন্স, সৌদি আরব

 

৭৯. বাংলাদেশে নতুন 'বাল্য বিবাহ আইন' এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন (যা অনেকের অজানা) Marriage education series

 May be an image of text

বাংলাদেশে নতুন 'বাল্য বিবাহ আইন' এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন (যা অনেকের অজানা)
▬▬▬◍❂◍▬▬▬
২০১৭ সালের ২৪শে নভেম্বর বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে ১৯২৯ সালের বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনটিকে বিলুপ্ত করে “বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭” অনুমোদিত হয়।
বাল্য বিবাহ আইন ২০১৭ এবং তার দুটি বৈশিষ্ট্য:
 
১) নতুন আইনটির বৈশিষ্ট্য হল পূর্বে বলবত থাকা ১৯২৯ সালের বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনে ছেলেদের বিবাহের বয়স ছিল ২২ বছর এবং মেয়েদের বয়স ছিল ১৮ বছর। বর্তমান আইনে মেয়েদের বিবাহের বয়স সর্বনিম্ন ১৮ বছর এবং ছেলেদের বিবাহের বয়স সর্বনিম্ন ২২ এর স্থলে ২১ বছর নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।
 
২) বর্তমান বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনে আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল আইনটির ১৯ ধারায় বলা হয়েছে যে “এই আইনে অন্যান্য বিধানে যা কিছুই বলা থাকুক না কেন বিধি দ্বারা নির্ধারিত বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্ত বয়স্কের সর্বোত্তম স্বার্থে, আদালতের নির্দেশ এবং পিতামাতা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অভিভাবকের সম্মতিক্রমে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ ক্রমে বিবাহ সম্পাদিত হইলে উহা এই আইনের অধীনে অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে না।
 
bdlaws.minlaw.Gov.bd
 
[বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭ /২০১৭ সনের ৬ নং আইন)]
 
২য় বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে এডভোকেট আব্দুস সালাম প্রধান বলেন, নতুন “বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭” বাংলাদেশে বলবত হওয়ার ফলে ইসলামি আইনে বাল্যবিবাহ আইনের সাথে বর্তমান আইনের অসংগতি দূরীভূত হয়েছে।" [dailysangram]
 
অর্থাৎ বিশেষ ক্ষেত্রে অভিভাবকের সম্মতিক্রমে এবং আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ছেলেদের ক্ষেত্রে ২১ এর আগে এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৮ এর আগে বিয়ে হওয়া অপরাধ নয়।
 
সুতরাং বিশেষ পরিস্থিতিতে কোন অভিভাবক কোন আইন বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শক্রমে বাল্যবিবাহ আইনকে লঙ্ঘন না করেও ছেলেদের ক্ষেত্রে ২১ এর আগে এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৮ এর আগে বিয়ে দিতে পারে। এ আইনটি আমাদের অনেকের নিকট অজানা।
▬▬▬◍❂◍▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

 

৭৮. মসজিদে বিয়ের আকদ সম্পন্ন করার বিধান Marriage education series

 

মসজিদে বিয়ের আকদ সম্পন্ন করার বিধান
▬▬▬❖✪❖▬▬▬
প্রশ্ন : মসজিদে বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার নিয়ম কি?পাত্রীকে কি মসজিদে উপস্থিত থাকতে হবে?
মসজিদে বিবাহের সুন্নতি পদ্ধতি জানিয়ে উপকৃত করবেন।
উত্তর :
শরীয়ত বিরোধী গর্হিত কার্যক্রম সংঘটিত না হলে প্রয়োজনে মসজিদে বিয়ের আকদ সম্পন্ন হওয়া জায়েজ রয়েছে। কিন্তু মসজিদে বিয়ের আকদ সম্পন্ন হওয়া সুন্নত বা মুস্তাহাব’ এ কথা সঠিক নয়। যদিও অনেক আলেম তা বলেছেন। কিন্তু কোন সহীহ দলীল দ্বারা এটা প্রমাণিত নয়। কেউ যদি সব সময় নিয়ম করে বিয়ের আকদ মসজিদের মধ্যে করে তবে তা বিদআতে পরিণত হবে। আর যদি মসজিদে গান-বাজনা বা বেপর্দা নারী-পুরুষের সমাবেশ ঘটে তাহলে তা হবে শক্ত হারাম কাজ।
উল্লেখ্য যে, মসজিদে বিয়ে সম্পন্ন করার নির্দেশ জানিয়ে নিম্নোক্ত বর্ণিত হাদিসটি যঈফ। أعلنوا هذا النكاح واجعلوه في المساجد واضربوا عليه بالدفوف
তিরমিযী উক্ত হাদিসটি বর্ণনা করার পর নিজেই বলেছেন যে, এটি যঈফ বা দুর্বল। ইবনে হাজার এবং আলবানী এটিকে যঈফ বলেছেন।
হাদিসে মসজিদে বেচা-কেনা করা নিষেধ কিন্তু বিয়ে বেচাকেনা নয়। তাই মৌলিকভাবে মসজিদে বিবাহ সম্পন্ন করা বৈধ হলেও এটিকে সুন্নত বা মুস্তাহাব বলে নিয়মিতভাবে করা বিদআত। (আল্লামা বিন বায রহ. আল্লামা উসাইমীন রহ. প্রমুখ আলেমদের এর ফতোয়ার সারসংক্ষেপ)
বি:দ্র: মসজিদে আকদ করার ক্ষেত্রে পাত্রীকে মসজিদে অবস্থান করা জরুরি নয়। প্রয়োজনে থাকতে পারে যদি পরপুরুষদের থেকে আলাদাভাবে পর্দার অন্তরালে থাকে। আল্লাহু আলাম।
••••••••••••••••••••
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, ksa

৭৭. একাধিক বিয়ে করা Marriage education series

 

একাধিক বিয়ে করা
-------------
প্রশ্ন:
ক) পুরুষদের ৪টি বিয়ে করা তো জায়েয। কিন্তু তা কি সুন্নত?
খ) কোনো স্ত্রী যদি চায় তা, বিয়েরস্বামী পরে আর বিয়ে না করুক সে জন্য কি জোর করে বলতে পারবে বা তাকে বাধা দিতে পারবে?
গ) কিংবা বিয়ের কাবিনে কি উল্লেখ করা যাবে যে, প্রথম স্ত্রীর মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত আরেক বিয়ে করতে পারবে না?
উত্তর:
 
🔹 ক. একাধিক বিয়ে করা সুন্নাত নয় বরং তা প্রয়োজনের স্বার্থে শর্ত স্বাপেক্ষে অনুমতি দেয়া হয়েছে। কারণ দুনিয়ার সকল মানুষের প্রয়োজন ও সমস্যা এক রকম নয়। তবে ইসলামে এর সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর তা হল, ২ অথবা ৩ অথবা ৪। ইসলামের আগে এর কোন সীমা-সংখ্যা ছিল না।
 
তবে একাধিক বিয়ের ক্ষেত্রে ইসলাম কঠিন শর্ত দিয়েছে। তা হল, সকল স্ত্রীর মাঝে সমতা রক্ষা করা। সমতা রক্ষা করতে না পারলে একটির অধিক বিয়ে করতে নিষেধ করা হয়েছে। এ শর্ত পূরণে ব্যর্থ পুরুষদের জন্য আখিরাতে কঠিন খারাপ পরিণতির কথা বলা হয়েছে।
 
🔹 খ. বিয়ের সময় স্ত্রী যদি কাবিন নামায় ‘১ম স্ত্রী মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত স্বামী ২য় বিয়ে করতে পারবে না’ বলে শর্ত জুড়ে দেয় আর স্বামী যদি তাতে সম্মতি দেয় তাহলে এই শর্ত পালন করা স্বামীর জন্য অপরিহার্য। কারণ, হাদীসের আলোকে মুসলিম তার শর্ত পালনে বাধ্য। ওয়াদা রক্ষা না করা মুনাফিকীর আলামত।
 
🔹গ. বিয়ের পূর্বে ‘২য় বিয়ে করা যাবে না’ মর্মে কোন শর্ত না থাকলে স্বামীকে তার প্রয়োজনে ২য় বিয়ে করতে বাধা দেয়া স্ত্রীর চরম অন্যায় এবং তাকে মহান আল্লাহ প্রদত্ব অধিকার পালনে হস্তক্ষেপের শামিল। এ ক্ষেত্রে সে বিপথে গিয়ে অন্যায়-অপকর্মে লিপ্ত হলে উভয়েই গুনাহগার হবে। কারণ বিয়ের অন্যতম উদ্দশ্য হল, নিজেকে পবিত্র রাখা।
 
আল্লাহু আলাম।
➖➖➖➖➖
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল (মাদানী)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, ksa

৭৬. ইসলাম চারজন স্ত্রী রাখার অনুমতি দিয়ে কি নারীদেরকে অপমানিত করেছে? Marriage education series

 May be an image of text that says 'ইসলাম চারজন স্ত্রী রাখার অনুমতি দিয়ে কি নারীদেরকে অপমানিত করেছে?'

ইসলাম চারজন স্ত্রী রাখার অনুমতি দিয়ে কি নারীদেরকে অপমানিত করেছে?
------------------
উত্তর:
ইসলাম এমন একটি জীবন ব্যবস্থার নাম যা সকল যুগের জন্য সকল স্থানের জন্য প্রযোজ্য। বিভিন্ন সমাজের বিভিন্ন প্রকৃতির মানুষের সাথে ইসলাম সামঞ্জস্যপূর্ণ। পরিস্থিতির কারণে মানুষ ২য় বিবাহ করতে বাধ্য হতে পারে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই তার অধিকার সংরক্ষণ করা আবশ্যক।
তাই ইসলাম ২য় বিবাহ করার অনুমতি দিয়েছে। তবে সে ক্ষেত্রে শর্তারোপ করা হয়েছে যে, সকল স্ত্রীর সাথে ন্যায়পরায়ণতা সুলভ আচরণ করতে হবে। কোন মহিলাকে এ বিয়েতে বাধ্য করা যাবে না এবং এ বিয়েতে ২য় স্ত্রী শর্তারোপ করতে পারে।
ইসলামে একাধিক বিয়ে করা আবশ্যক করা হয়নি, উত্তমও বলা হয়নি। বরং তা শুধু বৈধ বলা হয়েছে।
একজন ব্যক্তি চারটি বিয়ে করতে পারে তবে শর্ত হচ্ছে, তাকে শরীয়ত নির্ধারিত অলঙ্ঘনীয় শর্তাবলী অবশ্যই পূরণ করতে সক্ষম হতে হবে। সেগুলো হল, ন্যায়-পরায়নতা বজায় রাখা, প্রত্যেক স্ত্রীর জৈবিক চাহিদা পূরণে সক্ষম হওয়া, ভরণ-পোষণ সহ জীবন-যাপনের উপকরণের ব্যবস্থা করা।
মোটকথা, শুধু প্রয়োজনের ক্ষেত্রেই ইসলাম একাধিক বিবাহের অনুমতি দিয়েছে। আর তাও শর্ত সাপেক্ষে। সমাজের বিভিন্ন প্রকৃতির বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের চাহিদা এবং বাস্তব প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করে ইসলাম এ অনুমতি প্রদান করেছে।
সবচেয়ে অবাক ব্যাপার হচ্ছে, যারা ইসলামের এ বিধানকে অনৈতিক এবং এতে নারীদের অপমান করা হয়েছে বলে অভিযোগ উত্থাপন করে তারাই যখন নিজের স্ত্রী বাদ দিয়ে অন্য মহিলাকে ‘র্গাল ফ্রেন্ড’ হিসেবে ব্যবহার করে তখন তার এটাকে অনৈতিক বলতে নারাজ! তারাই নারীদেরক পণ্যের মত পুরুষের উপভোগের বস্তুতে পরিণত করেছে। নারীর প্রতি এর থেকে চরম অপমান আর কী হতে পারে?
প্রকৃতপক্ষে এই আইনের মাধ্যমে ইসলাম তাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে লাঞ্ছনা ও অপমানের হাত থেকে উদ্ধার করে বৈধ পন্থায় সম্মানের সাথে ঘরে স্থান দেয়ার ব্যবস্থা করেছে।
তাই পরিশেষে বলব, একাধিক বিবাহের বৈধতা দিয়ে ইসলাম মানুষের ব্যক্তিগত প্রয়োজন, প্রকৃতিগত চাহিদা এবং নানা সামাজিক সমস্যা সমাধানের পথকে উন্মুক্ত করেছে। নারীকে পরপুরুষের ভোগ্য বস্তু থেকে উদ্ধার করে তাকে মর্যাদা এবং সম্মানের আসনে আসীন করেছে।
তবে প্রয়োজন, ইসলামী আইনের ব্যাপারে মুসলমানদের গণসচেতনতা এবং সঠিকভাবে তা ব্যবহার করা। তাহলেই যে উদ্দেশ্যে ইসলাম এ আইনকে মানবতার কল্যাণে দান করেছে সে উদ্দেশ্য পূর্ণ হবে। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফিক দান করুন। আমীন॥
-------------------------
অনুবাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব

 

৭৫. একাধিক বিয়ে সম্পর্কে এক মহিলা শাইখার চমৎকার আরবি বক্তৃতার অনুবাদ: Marriage education series

 May be an image of flower

একাধিক বিয়ে সম্পর্কে এক মহিলা শাইখার চমৎকার আরবি বক্তৃতার অনুবাদ
 
"পাশ্চাত্য যে বিষয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি আক্রমণ করে এবং মুসলিম উম্মাহর অধিকাংশ নারী যেটা গ্রহণ করে নিয়েছে সেটি হল, ইসলাম কর্তৃক একজন পুরুষকে চারটি বিয়ের বৈধতা প্রদান।
ইসলাম বাস্তবতা বিবর্জিত কাল্পনিক কোনো জীবনব্যবস্থা নয়। সুতরাং একাধিক বিয়ের বিষয়টি একটি সমস্যার সমাধান যা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তা হল, যেমন সমীক্ষা বলছে:
 
পৃথিবীতে মেয়ে শিশুর জন্মের হার ছেলেদের থেকে বেশি, জন্মের পরে মেয়ে শিশুর রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হওয়ার কারণে তাদের তুলনায় ছেলে শিশুর মৃত্যুর হার বেশি, গাড়ি এক্সিডেন্টে যুবতীদের তুলনায় যুবকদের মৃত্যুর হার বেশি, যুদ্ধ-বিগ্রহে মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের নিহত হওয়ার সংখ্যা বেশি-যেমনটি আপনারা দেখছেন।
 
তাছাড়া পুরুষদের তুলনায় মহিলারা দীর্ঘজীবী হয়। ফলাফল, নারীর সংখ্যাধিক্য। এটি একটি সমস্যা। সুতরাং সমাধান কি এবং কিভাবে হবে?
 
একাধিক বিয়ে হল, শারীরের রোগমুক্তি এবং সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য অস্ত্রপাচারের ন্যায়।
প্রিয় বোন, ওরা তোমাকে (স্ত্রী হিসেবে নয় বরং) বাস্তু চ্যুত গার্ল ফ্রেন্ড হিসেবে পেতে চায়। যেখানে না থাকবে আপনার কোনো অধিকার; না আপনার সন্তানদের অধিকার।
 
ইসলামের নিয়ামতের জন্য সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
(চুম্বক অংশের অনুবাদ)
বক্তৃতার লিংক:
 

 
 
 ...
 
------------------
অনুবাদক:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

 

৭৪. প্রশ্ন: কোনো পুরুষ একাধিক বিয়ে করতে চাইলে তার জন্য প্রথম স্ত্রীর অনুমতি নেয়া কি জরুরি? আর তাদের সবাইকে এক বাড়িতে রাখা কি জায়েজ? Marriage education series

 May be an image of text that says 'প্রশ্ন: কোন পুরুষ চার জন স্থীকে বিয়ে করতে চাইলে প্রত্যেক বউয়ের নিকট কি অনুমতি নেয়া জরুরি? আর সবাইকে এক বাড়িতে রাখা কি জায়েজ? আব্দল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানী'

প্রশ্ন: কোনো পুরুষ একাধিক বিয়ে করতে চাইলে তার জন্য প্রথম স্ত্রীর অনুমতি নেয়া কি জরুরি? আর তাদের সবাইকে এক বাড়িতে রাখা কি জায়েজ?
-----------------
উত্তর:
একজন পুরুষ তার প্রয়োজনে সর্বোচ্চ চারজন বিবাহ করতে পারে। আল্লাহ তাআলা তাকে এই অধিকার প্রদান করেছেন (দেখুন, সূরা নিসা: ৩)।
ইসলাম এ জন্য প্রথম স্ত্রীর অনুমতি নেয়াকে আবশ্যক করে নি-যদিও আমাদের দেশের মানব রচিত আইনে পূর্বের স্ত্রীর অনুমতিকে বাধ্যতা মূলক করা হয়েছে। কিন্তু এ আইনের সাথে ইসলামের সাথে ন্যূনতম সম্পর্ক নাই।
একজন পুরুষ একাধিক বিয়ে করলে সে তার সুবিধা অনুযায়ী তাদের থাকার সুব্যবস্থা করবে। একই বাড়িতে প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা ঘর থাকা জরুরি। তবে যদি প্রত্যেকের জন্য পৃথক পৃথক বাড়ির ব্যবস্থা করার সামর্থ্য থাকে তাহলে তা আরও ভালো।
কিন্তু একই ঘরে এক স্ত্রীর সাক্ষাতে আরেক স্ত্রীর সাথে দাম্পত্য সম্পর্কিত বিনোদন মূলক কার্যক্রম করা হারাম।
----------------
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
fb id:AbdullaahilHadi
জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

 

৭৩. যে সকল মেয়েদের বিভিন্ন কারণে বিয়ে হচ্ছে না তাদের প্রতি... Marriage education series

 No photo description available.

যে সকল মেয়েদের বিভিন্ন কারণে বিয়ে হচ্ছে না তাদের প্রতি...
-----------------------
প্রশ্ন: সমাজে কিছু মহিলা আছে, যাদের বিয়ে হয় না বিভিন্ন কারণে। কারো হয়ত শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই, কারো অর্থ-সম্পদ বা ভালো ঘরবাড়ি নেই। কাউকে হয়ত অভাবের তাড়নায় বাধ্য হয়ে গার্মেন্টেস ফ্যাক্টরিতে চাকুরী করতে হচ্ছে। কেউ আবার যৌতুক দিতে পারে না। এমনও কিছু মেয়ে আছে, যাদের দেখাশোনা করার মত কেউ না থাকার কারণে সংসারের ঘানি টানতে গিয়ে জীবনের সর্বস্ব বিলীন করে দিতে হয়েছে কিন্তু বিনিময়ে তারা কিছুই পায় নি। এ সব কারণে কোনো জীবন সঙ্গীও তাদের কপালে জোটে নি।
এদের ব্যাপারে ইসলাম কী বলে? আসলেই কি বিয়ে না হওয়ার পেছনে তারা দোষী বা এ কারণে তারা গুনাহগার হবে?
উত্তর:
কোন ব্যক্তির-চাই পুরুষ হোক অথবা নারী হোক- বিয়ের আগ্রহ ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টা থাকার পরও যদি কোনো কারণে বিয়ে না হয় তাহলে সে জন্য সে গুনাহগার হবে না। কারণ সে তার সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করেছে। আর আল্লাহ তাআলা সাধ্যের অতিরিক্ত বান্দার উপর দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না এবং যা তার ক্ষমতার মধ্যে নাই সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন না।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
لَا يُكَلِّفُ اللَّـهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا
“আল্লাহ কারো উপর তার সাধ্যাতীত কোন কাজের দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না।” (সূরা বাকারা: ২৮৬)
তবে কোন মেয়ে যদি বিয়ের উপযুক্ত বয়সে লেখাপড়া, ক্যারিয়ার, চাকুরী বা নিজের পায়ে দাঁড়ানো ইত্যাদি অজুহাতে বিয়ে বিলম্ব করে কিন্তু পরবর্তীতে আর বিয়ে না হয় অথবা বিয়ের প্রতি অবহেলা বশত: তা থেকে দূরে থাকে তাহলে নি:সন্দেহে সে গুনাহগার হবে। কারণ এটি আল্লাহর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিধানের প্রতি অবহেলা ও অবজ্ঞা প্রর্শনের শামিল। আল্লাহ ক্ষমা করুন। আমীন।
যা হোক, প্রবল ইচ্ছা ও প্রচেষ্টার পরও বিয়ে সংঘটিত না হলে এ ক্ষেত্রে করণীয় হবে, আল্লাহর ফয়সালার উপর ধৈর্য ধারণ করা, গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা, নফল রোযা রাখা, নেকির কাজে সময় অতিবাহিত করা, ইসলামের সেবা, মানুষের সেবা, জ্ঞান চর্চা, আল্লাহর পথে দাওয়াত ইত্যাদি অসংখ্য কল্যাণকর পথ খোলা আছে সেগুলোতে সময় কাটানো।
মনে রাখতে হবে, বিয়ে জীবনের একটি অংশ। কিন্তু এটাই সব কিছু নয়। একটি পথ বন্ধ হলেও আল্লাহর পথে জীবন কাটানোর অসংখ্য পথ খোলা আছে-আল হামদুলিল্লাহ।
ইসলামের ইতিহাসে এমন অনেক দিগ্বিজয়ী আলেম ও মনিষীর নাম পাওয়া যায় যারা জীবনে বিয়ে করতে পারেন নি। কিন্তু ইসলাম ও মানবতার সেবায় তাদের কালজয়ী অবদান বিশ্বকে ঋণী করে রেখেছে।
দুনিয়ার জীবনে ইচ্ছা ও প্রচেষ্টা থাকার স্বত্বেও যদি কারো বিয়ে না হয় এবং এতে সে যদি সবর করে, হারাম থেকে দূরে থাকে এবং আল্লাহর দ্বীনের উপর জীবন পরিচালনা করার মাধমে জান্নাতে প্রবেশ করে তাহলে সেখানে মহান আল্লাহ তাকে অফুরন্ত নিয়ামত দ্বারা সম্মানিত করবেন এবং জান্নাতি যুবকের সাথে বিয়ের ব্যবস্থা করবেন ইনশাআল্লাহ।
সুতরাং জীবনে যা কিছুই ঘটুক না কেন হাতাশ হওয়ার কোনো সুযোগ নাই। বরং মনে করতে হবে, নিশ্চয় আল্লাহ যা করেন তাতেই বান্দার কল্যাণ রয়েছে। এমনও হতে পারে, আল্লাহ তাআলা তাকে বিয়ে থেকে দূরে রাখার মাধ্যমে জীবনের আরও বড় কোনো ফেতনা ও বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেছেন।
অথবা তাকে দুনিয়ার ছোট নিয়ামত থেকে বঞ্চিত রেখে আখিরাতে বিশাল নিয়ামত দ্বারা প্রতিদান দিবেন-যা তার জন্য দুনিয়ার চেয়ে অনেক অনেক বেশি মুল্যবান।
নিশ্চয় আল্লাহ পরম প্রজ্ঞাময়, অসীম জ্ঞানের অধিকারী এবং সর্বময় কর্ম বিধায়ক।
আল্লাহু আলাম।
--------------------------
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
জুবাইল, সৌদি আরব

 

৭০. অভিমানে বিয়ে থেকে বিরত থাকা Marriage education series

 No photo description available.

অভিমানে বিয়ে থেকে বিরত থাকা
▬▬▬▬◆◈◆ ▬▬▬▬
প্রশ্ন: জনৈক ব্যক্তি কোনো এক মেয়ের সাথে প্রেম করতো। কিন্তু কোনো কারণে তার সাথে বিয়ে না হওয়ায় সে দু:খ-অভিমানে জীবনে আর বিয়ে করে নি। এ ব্যাপার ইসলামের কী বলে?
উত্তর:
বিয়ের সামর্থ্য এবং চাহিদা থাকার পরও কেউ যদি কেবল রাগ বা অভিমান বশত: বিয়ে না করে সে গুনাহগার হবে। কারণ তখন ভিন্নপন্থায় জৈবিক চাহিদা পূরণের দিকে ধাবিত হওয়ার এবং বিভিন্ন ধরণের পাপকর্মে লিপ্ত হওয়ার পর্যাপ্ত সম্ভাবনা রয়েছে।
অবৈধ প্রেম-প্রীতি করার পর তার প্রত্যাশিত মেয়ে/ছেলেকে বিয়ে করতে না পেরে রাগ-অভিমানে সারা জীবন বিয়ে থেকে বিরত থাকার পাপ দ্বিগুণ। একটি হল, অবৈধ প্রেমের পাপ। অন্যটি বিয়ের মত এত গুরুত্বপূর্ণ ইসলামের বিধানকে উপেক্ষা করার পাপ।
দুআ করি, মহান আল্লাহ যেন উক্ত ব্যক্তিকে সুবুদ্ধি দান করেন। আমীন।
এখন তার কর্তব্য হল, অতীত জীবনের পাপাচারের জন্য অনতিবিলম্বে তওবা করা। অত:পর অন্য কোনো মেয়েকে বিয়ে করে নতুনভাবে জীবন-সংসার শুরু করে। এটাই তার উপর আবশ্যক-যদি সে বিয়েতে সামর্থ্য বান হয়ে থাকে।
আল্লাহ তাওফিক দানকারী।
▬▬▬▬◆◈◆ ▬▬▬▬
উত্তর প্রদান:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

 

৬৯. ছেলে বা মেয়েকে কারো সাথে বিয়েতে বাধ্য করা কি বৈধ? Marriage education series

 May be an image of text that says 'রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "বিধবাকে তার মতামত ব্যতীত বিয়ে দেয়া যাবে না এবং কুমারীকে তার অনুমতি ব্যতীত বিয়ে দেয়া যাবে না তারা বললেন তার অনুমতি কেমন হবে? তিনি বললেনঃ তার চুপ থাকা।" [সহিহ বুখারি (তাওহীদ) হা/৬৯৭০, অধ্যায়: ৯০/ কুটচাল অবলম্বন] FB page: Guidance2TheRightPath'

ছেলে বা মেয়েকে কারো সাথে বিয়েতে বাধ্য করা কি বৈধ?
▬▬▬●◈●▬▬▬
প্রশ্ন: বিয়ের ক্ষেত্রে প্রত্যেকেরই একটা পছন্দ-অপছন্দ থাকে এবং অনেক সময় পছন্দ না হলে বিয়ের পর হয়ত ফিতনা হতে পারে। তাহলে বাবা মা কি ছেলে বা মেয়ে কে নির্দিষ্ট কারো সাথে বিয়েতে বাধ্য করতে পারে?
উত্তর:
 
ইসলামের দৃষ্টিতে পিতা-মাতার জন্য তাদের ছেলে বা মেয়েকে এমন ব্যক্তির সাথে বিয়েতে বাধ্য করা জায়েজ নাই যাকে সে পছন্দ করে না বা যার সাথে তার বিয়েতে আগ্রহ নেইকারণ বিয়ের ক্ষেত্রে স্বামী ও স্ত্রীর পারষ্পারিক আকর্ষণ ও আগ্রহ বোধ থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তা যদি না থাকে তাহলে এই পবিত্র বন্ধন দ্রুতই দুর্বল হয়ে পড়ে। এই জন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিয়ের পূর্বে বরক ও কনে একে অপরকে দেখে নেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে। যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
 
➤ জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রা. বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
 
إِذَا خَطَبَ أَحَدُكُمُ الْمَرْأَةَ فَقَدِرَ أَنْ يَرَى مِنْهَا بَعْضَ مَا يَدْعُوهُ إِلَيْ نكاحها فَلْيَفْعَلْ
 
“তোমাদের কেউ যখন কোন মেয়েকে বিয়ে করার ইচ্ছা করে তখন যতদূর সম্ভব তাকে দেখে নিয়ে এ মর্মে নিশ্চিন্ত হওয়া উচিত যে, মেয়েটির মধ্যে এমন কিছু আছে যা তাকে বিয়ে করার প্রতি আকৃষ্ট করে।” (আহমদ ও আবু দাউদ)
 
➤ অন্য হাদিসে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলছেন:
 
انْظُرْ إِلَيْهَا فَإِنَّهُ أَحْرَى أَنْ يُؤْدَمَ بَيْنَكُمَا ‏
 
"তাকে দেখে নাও, তোমাদের মধ্যে এটা ভালবাসার সৃষ্টি করবে।" 
[তিরমিযী, অনুচ্ছেদ: প্রস্তাবিত পাত্রীকে দেখা, শাইখ আলবানী হাদিসটিকে সহিহ সহিহ বলেছেন]
 
এ মর্মে আরও একাধিক হাদিস রয়েছে।
বিয়ের পূর্বে দেখাদেখির বিষয়ে ইসলামে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে এ কারণে যে, বর-কনে যেন একে অপরকে দেখে তাদের নিজস্ব পছন্দ ও অপছন্দের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিন্তু যদি কাউকে তার অপছন্দের ব্যক্তির সাথে জোর করে বিয়ে দেয়া হয় তাহলে সেখানে তার ব্যক্তিগত ইচ্ছা ও স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করা হল যা তাদের দাম্পত্য জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে-এ সম্ভাবনাই বেশি।
 
➤ এ ছাড়া হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ- সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-বলেছেন:
 
لاَ تُنْكَحُ الأَيِّمُ حَتَّى تُسْتَأْمَرَ وَلاَ تُنْكَحُ الْبِكْرُ حَتَّى تُسْتَأْذَنَ قَالُوا كَيْفَ إِذْنُهَا قَالَ أَنْ تَسْكُتَ
 
"বিধবাকে তার মতামত ব্যতীত বিয়ে দেয়া যাবে না এবং কুমারীকে তার অনুমতি ব্যতীত বিয়ে দেয়া যাবে না। তারা বললেন, তার অনুমতি কেমন হবে? তিনি বললেনঃ তার চুপচাপ থাকা।" 
[সহিহ বুখারি (তাওহীদ) হাদিস নম্বরঃ [6970] অধ্যায়: ৯০/ কূটচাল অবলম্বন (كتاب الحيل) পাবলিশারঃ তাওহীদ]
 
অর্থাৎ কুমারী মেয়ের নিকট বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার পর সে যদি চুপ থাকে তাহলে তা তার সম্মতি হিসেবে গণ্য হবে। যেমন বাংলা প্রবাদে বলা হয়, নীরবতা সম্মতির লক্ষণ।
 
এ সব হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয়, বিয়ের ক্ষেত্রে বর ও কনের নিজস্ব পছন্দ-অপছন্দ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারো জন্য আল্লাহ প্রদত্ত তাদের এ স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার অধিকার নাই। সুতরাং তাদের সম্মতি ছাড়া জোর পূর্বক বিয়েতে বাধ্য করা আল্লাহর নাফরমানির শামিল।
 
✪ শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রাহ. বলেন:
 
"وليس للأبوين إلزام الولد بنكاح من لا يريد ، فإن امتنع لا يكون عاقاً ، كأكل ما لا يريد"
"الاختيارات" (ص 344)
 
"বাবা-মার জন্য তাদের সন্তানকে এমন ব্যক্তির সাথে বিবাহে বাধ্য করার সুযোগ নাই যাকে সে বিয়ে করতে চায় না। অত:এব সে যদি এ ক্ষেত্রে বাবা-মার নির্দেশ না মানে তাহলে সে 'অবাধ্য' হিসেবে গণ্য হবে না- বিষয়টি অনিচ্ছা স্বত্বেও খাওয়ার মত।" (উৎস: আল ইখতিয়ারাত, পৃষ্ঠা নং ৩৪৪)
 
সুতরাং ছেলে হোক অথবা মেয়ে হোক কাউকেই তার ইচ্ছার বাইরে কারো সাথে বিয়েতে বাধ্য করার সুযোগ নেই। কেউ যদি তার প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে অথবা মেয়েকে এমন ব্যক্তির সাথে বিয়েতে বাধ্য করে তাহলে তাদের অধিকার রয়েছে বিয়ে রাখা অথবা ভঙ্গ করারআর সন্তান যদি এ ক্ষেত্রে বাবা-মার নির্দেশ অমান্য করে তাহলে তাতে তার গুনাহ হবে না বরং বাবা-মা তাদের অনধিকার চর্চার কারণে আল্লাহর নিকট গুনাহগার হবে।
মহান আল্লাহ আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন।
আল্লাহু আলাম
▬▬▬▬●◈●▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
fb id:AbdullaahilHadi
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

 

৬৮. মসজিদে বিয়ের আকদ সম্পন্ন করার বিধান Marriage education series

 

মসজিদে বিয়ের আকদ সম্পন্ন করার বিধান
▬▬▬❖✪❖▬▬▬
প্রশ্ন : মসজিদে বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার নিয়ম কি?পাত্রীকে কি মসজিদে উপস্থিত থাকতে হবে?
মসজিদে বিবাহের সুন্নতি পদ্ধতি জানিয়ে উপকৃত করবেন।
উত্তর : 
 
শরীয়ত বিরোধী গর্হিত কার্যক্রম সংঘটিত না হলে প্রয়োজনে মসজিদে বিয়ের আকদ সম্পন্ন হওয়া জায়েজ রয়েছে। কিন্তু মসজিদে বিয়ের আকদ সম্পন্ন হওয়া সুন্নত বা মুস্তাহাব’ এ কথা সঠিক নয়। যদিও অনেক আলেম তা বলেছেন। কিন্তু কোন সহীহ দলীল দ্বারা এটা প্রমাণিত নয়। কেউ যদি সব সময় নিয়ম করে বিয়ের আকদ মসজিদের মধ্যে করে তবে তা বিদআতে পরিণত হবে। আর যদি মসজিদে গান-বাজনা বা বেপর্দা নারী-পুরুষের সমাবেশ ঘটে তাহলে তা হবে শক্ত হারাম কাজ।
 
উল্লেখ্য যে, মসজিদে বিয়ে সম্পন্ন করার নির্দেশ জানিয়ে নিম্নোক্ত বর্ণিত হাদিসটি যঈফ। أعلنوا هذا النكاح واجعلوه في المساجد واضربوا عليه بالدفوف
তিরমিযী উক্ত হাদিসটি বর্ণনা করার পর নিজেই বলেছেন যে, এটি যঈফ বা দুর্বল। ইবনে হাজার এবং আলবানী এটিকে যঈফ বলেছেন।
হাদিসে মসজিদে বেচা-কেনা করা নিষেধ কিন্তু বিয়ে বেচাকেনা নয়। তাই মৌলিকভাবে মসজিদে বিবাহ সম্পন্ন করা বৈধ হলেও এটিকে সুন্নত বা মুস্তাহাব বলে নিয়মিতভাবে করা বিদআত। (আল্লামা বিন বায রহ. আল্লামা উসাইমীন রহ. প্রমুখ আলেমদের এর ফতোয়ার সারসংক্ষেপ)
 
বি:দ্র: মসজিদে আকদ করার ক্ষেত্রে পাত্রীকে মসজিদে অবস্থান করা জরুরি নয়। প্রয়োজনে থাকতে পারে যদি পরপুরুষদের থেকে আলাদাভাবে পর্দার অন্তরালে থাকে। আল্লাহু আলাম।
••••••••••••••••••••
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, ksa