Sunday, June 10, 2012

অপয়া পুকুর [ Small Ghost Tale - 4 ]





ঘটনা টা আমি যখন ক্লাস ৭ এ পড়ি তখন।ঈদে বেড়াতে প্রত্যেক বারের মত নানুর বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইলে গিয়েছিলাম।ঈদের তখন ও দু দিন বাকী।বিকেলে পৌছানোর সাথে সাথেই দেখলাম গ্রামের কিছু ছেলে পুলে আর আমার এক মামা ২দিন আগে জন্ম নেয়া খুব খুব সুন্দর ছোট্ট একটা বাছুরের সাথে খেলছে,খেলা মানে বাছুর টাকে ধরতে গেলেই সেটা উঠোন ভরে দৌড়াচ্ছিল,আর ছেলে রা গোল হয়ে দাঁড়িয়ে সেই বাছুর টাকে ধরার চেষ্টা করছিল।সব ক্লান্তি ঝেরে ফেলে দিয়ে আমিও তাদের দলে যোগ দিয়েছিলাম।সে রাত কেটে গেল।বলা বাহুল্য,বাছুর টার কপালে চাদ সাইন ছিল,গ্রামের ভাষায় যাকে চাদ কপালে বলা হয়।ঘটনা টা তার পরের রাতের।মামার সাথে ঘুমোচ্ছিলাম রাতে।মামা তখন ক্লাস নাইনে পরত।হঠাত মাঝ রাতে আমার খুব প্রস্রাব চাপে।মামা কে ডাকলে মোটামুটি বিরক্ত হয়।আপনারা সবাই জেনে থাকবেন,গ্রামের টয়লেট গুলো জঙ্গলের কাছাকাছি কিংবা একটু দূরে দূরে হয়।আর ছোটো খাটো কাজ করার জন্য আনাচে কানাচেই যথেষ্ট।আমিও সেই সুযোগ টাই নিচ্ছিলাম।হঠাত মামা ডেকে বলল,দেখ,দেখ,আমাদের বাছুর টা না?হুম তাইত,সেই চাদ কপালে বাছুর।চিনতে ভুল হয় নাই।মামা বলল,গোয়াল ঘর তো তালা মারা।তাইলে এইটা এইখানে আসল কেমনে?আমি বললাম,চোর ঢুকসে,আমি সিউর।বাছুর টা আমাদের দিকে কয়েক পাক ঘুরে সোজা সামনের পুকুর পাড়ের পারিবারিক কবরস্থানে্র দিকে দৌড় দিল।আমরা তাড়াতাড়ি গোয়াল ঘরে গেলাম,সেটা দিব্যি তালা মারা ছিল।হৈ চৈ করে বাড়ি তে সেই রাতেই জিনিষ টা জানানো গেল,কেউ কথা কানে না তুলে ঘুম ভাঙ্গানোর জন্য গালমন্দ করতে লাগল।কিন্তু তারপর ও যখন লাইট নিয়ে সবাই গোয়াল ঘরের তালা খুলে ভিতরে ঢুকল,তখন দেখতে পেলাম,বাছুর টা নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে।আরো কিছু গালমন্দ কপালে জোটার পর সেই রাতে ঘুমোতে গেলাম।

২ দিন পরের ঘটনা

বাজার থেকে একাই ফিরছিলাম,বাজার টা গ্রাম থেকে ২ কিমি এর মত দুরে।রাত ৭টা হবে,শীত কালে এই সমইয়েই গ্রাম নীরব হয়ে যায়।কুয়াশার কারনে চাদের আলো স্পষ্ট ছিল না,সেই আলো তে আমি স্পষ্ট দেখলাম,ওই বাছুর টাই আমার পাশ ঘেষে একটা পুকুরে নেমে অদৃশ্য হয়ে গেল।আমি এক দৌড় দিয়ে বাড়ি আসতে পারলাম ঠিক ই,কিন্তু একটা জায়গায় পরিত্যক্ত বাশ এ পা লেগে ছিটকে একটা রেইন ট্রি গাছের নিচে পড়ে খুব ব্যাথা পাই।তখন ব্যাথার চোট টা ভয়ের চেয়ে কম ছিল।তাই আবার দৌড় দিয়ে যখন বাড়িতে পৌছালাম,তখন দেখি,মামার মাথায় পানি ঢালার রাজ কারবার চলছে।তাকে মাস্টার বাড়ীর পুকুরের সামনে অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া যায়।মাস্টার বাড়ির পুকুর টা সেই পুকুর যেটায় বাছুর টাকে আমি নামতে দেখেছিলাম।সুস্থ হওয়ার পর মামা কাউকেই আসল কথা বলতে চায় নি।আমার ঘটনা টা মামার সাথে শেয়ার করার পর মামা যা বলল,সেই রাতে মামা প্রাইভেট পরে আসছিল।হঠাত বাছুর টা মামাকে ওভারটেক করে ক্রমান্বয়ে একটা বিড়ালে পরিণত হয়।তারপর যখন পুকুরে নামে তখন একটা মেয়ে হয়ে ডুব দেয়।মামা বলেছিল,সেই মেয়ে টা মাস্টার বাড়ির বড় বউ,যে গত বছর গর্ভবতী থাকা অবস্থায় পুকুরের পানি তে গোসল করতে যেয়ে মারা যায়।গাভীন গরু টা ওই মাস্টার বাড়ির ছিল।মামারা যেটা কিনে নেয়।সেই গরু টার যাবতীয় পরিচর্যা ওই মহিলাই করত।আর আমার পায়ের ব্যথায় ভীষন জ্বর আসে।রাতে হঠাত চিতকার চেচামেচি তে ঘুম ভাঙ্গে।রাত কত বলতে পারব না,তবে অনেক রাত ছিল।কারন ছিল,গোয়াল ঘরের বাছুর টার গলায় কামড়ের দাগ পাওয়া গেছে।সেটি আর বেচে নেই।সবার ধারণা,কাজ টি শেয়ালের,তালা দেয়া ঘরে শেয়াল কিভাবে ঢুকল সেই প্রশ্ন কেন কারো মনে আসেনি,সে প্রশ্ন অনেকের কাছেই করেছিলাম।তারা কেউ ই বিষয় টি আমার মত করে নেয় নি।হয়ত অত জটিল ভাবনায় তারা সময় নষ্ট করতে চায়নি।আরো প্রশ্ন থেকে যায়।যদি কাজ টি শেয়ালের ই হয়ে থাকে,সেই গোয়াল ঘরে আরো কিছু ছাগল,গরু ছিল।এই অবলা বাছুর টার ই কেন এই অবস্থা হবে?পরে এই বাছুর টাকে আর দেখা না গেলেও মাস্টার বাড়ির ওই বউ কে রাতে অনেকেই অনেক জায়গায় আবিস্কার করেছে।অনেকেই ওই পুকুর পারে ওই মহিলা কে অনেক রাতে কাদতে দেখেছে ঠিক কোন সদ্য ভুমিষ্ঠ কোন শিশুর কান্নার সুরে।আরো কিছু ঘটনা ঘটে।যার সাক্ষী আমি তো বটেই,আরো অনেকেই।সেগুলো অন্য আরেক দিন শেয়ার করব।ওই পুকুর টা কে এক পর্যায়ে ভরাট করে ফেলা হয়।সাতার জানা এক গ্রাম্য দিন মজুর বিকেলের কিছু পরে হাত পা ধুতে সেই পুকুরেই নেমেছিলেন।দুর্ভাগ্য তাকেও মুক্তি দেয় নি।লাশ হয়ে তার মর দেহ টাকেই তার পরিবার উপহার হিসেবে পেয়েছিল।এরপর পুকুর টা ভরাট হয়েছে হয়ত,কিন্তু এর বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সাক্ষী অনেকেই।যেসব লোক জন সেই কাজে পুকুরে নেমেছিলেন,তাদের অনেকের বাচ্চাই মৃত্যু কে আলিংগন করেছে।এক শ্রমিকের স্ত্রী কিছু দিন পর বাচ্চা প্রসব করার পর মারা যায়,আর বাচ্চাটাও কিছুদিন পর মারা গিয়েছিল গলায় কোন প্রশ্নবিদ্ধ কামরের যন্ত্রনায়।তাহলে কি সেই মহিলা টার মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল না, নাকি মরার পর তার কাছের গরু কিংবা অপয়া পুকুর টার মায়া ত্যাগ করতে পারে নি??গাভী টাকে অনেক আগেই হাটে বেচে ফেলা হয়।কে জানে পরবর্তী মালিক ও সেই গরু রাখতে গিয়ে নতুন কোন অঘটনের জন্ম দিয়েছেন কিনা।



আমেনরা(Amenra) [ The Titanic Ghost ]



খ্রিস্টপূর্ব একাদশ শতকে মিসরে আমেনরা(Amenra)
নামে এক রাজ কুমারী মারা যান।
তাকে যথা নিয়মে মমি করে সমাধিস্থ করা হয়।
অনেক বছর পর ঊন বিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে তার
মমিটি কেনার জন্য চারজন ইংরেজ মিসরে আসেন
এবং তারা রাজকুমারী আমেনরার মমিটি ক্রয় করেন।
কিন্তু এর জন্য তাদের নিদারুণ দুর্ভাগ্য বরণ
করতে হয়। মমিটি কিনে নিয়ে যাওয়ার সময়
চারজনের মধ্যে একজন মরুভূমিতে ঝড়ের
কবলে পড়ে মারা যান। তারপর ইংল্যান্ডে ফেরার
পর তাদের একজন দেখেন তার সব সম্পত্তি কেউ একজন
আত্মসাৎ করেছে। অপরজন ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন
এবং তার চাকরি চলে যায়। মমিটির
পরবর্তীতে স্থান হয় ব্রিটিশ মিউজিয়ামে। কিন্তু
যেই একবার মমিটিকে স্পর্শ করেছে তাকেই কোনও
না কোনও দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এমন কি এক
দর্শনার্থী যে কিনা কাপড় দিয়ে মমিটির মুখ
পরিষ্কার করেছিল এক সপ্তাহের মধ্যে তার
ছেলে মারা যায়। আর একবার এক ফটো সাংবাদিক
মমিটির ছবি তুলেছিলেন। ছবিটি ডেভেলপ
করে তিনি দেখেন রাজকুমারীর মুখের বদলে এক
বীভৎস ও বিকৃত মুখ। সে রাতেই
তিনি আত্মহত্যা করেন। এরপর মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ
মমিটির প্রদর্শন বন্ধ করে দেন
এবং এটি স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
পরের দিনই কর্মকর্তারা দেখেন প্রধান
নির্বাহী কর্মকর্তার লাশ পড়ে আছে টেবিলের ওপর।
কিন্তু মানুষের শখ চিরন্তন। এত কিছুর পরও এক
আমেরিকান পর্যটক মমিটি ক্রয় করেন এরপর
স্বদেশে ফেরার জন্য নিউইয়র্ক
গামী একটি জাহাজের কেবিন ভাড়া নেন। আর এ
যাত্রাই ছিল সেই জাহাজটির প্রথম ও শেষ যাত্রা।
কারণ যাত্রাপথেই জাহাজটি ডুবে যায় এবং এটিই
ছিল বিশ্ব বিখ্যাত জাহাজ টাইটানিক।
অদ্ভুত। খুবই অদ্ভুত।
....Collected....

একটি অতিপ্রাকৃত ঘটনা [Paranormal Stories - 1 ]




।। একটি অতিপ্রাকৃত ঘটনা ।।
জানিয়েছেনঃ শাকিলা তুবা
“বাসায় কাজের লোক না থাকলে আমার কি যে ঝামেলা যায়, এ কথাটা শাহেদ কখনোই বুঝলো না। হুট করে কয়েকজন বন্ধু নিয়ে বাসায় ফিরলো। কি আর করা! অগত্যা রান্না বান্না করে সবাইকে খাইয়ে বিদায় দিতে দিতে রাত ১২টা বেজে গেল। আমিও থালাবাটিগুলো নিয়ে রান্নাঘরে ঢুকলাম। সব ধুয়ে অবসর হতে হতেই ভাবলাম কাল সকালের নাশতার জন্যে সবজি কেটে ফ্রিজে রেখে দিই।সকালে উঠে ক’টা রুটি বানিয়ে, 
সবজিটা ভেজে দিলেই হবে। আর ডিম তো আছেই পোচ করে দেবক্ষন।
বেডরুমে ঢুকে দেখি বাহ শ্রীমান তার দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে কি আরামের একটা ঘুম দিয়েছেন! পুরুষমানুষগুলো কি যে স্বার্থপর হয়! এই যেমনআমার ছেলেটা। নয় বছর বয়স হয়েছে, ওর সব কিছু এখনো আমাকেই করে দিতে হয়। মেয়েটাপাঁচ বছরের। অথচ দেখো কি লক্ষী। আজো যখন বাসায় এত গেস্ট, মেয়েটা আমাকে টেবিলেপ্লেট সাজাতে সাহায্য করলো। গ্লাসগুলো সাজিয়ে দিল। আর ছেলেটা বসে বসে তখনকার্টুন দেখছিল।
আমি বাথরুমে ঢুকে মুখহাত ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। তারপর মুখে ক্রিম ঘঁষতে ঘঁষতে একদম বিছানায়। শরীর আর বইছে না। ওয়াল ঘড়িতে দেখলাম সময় রাত দেড়টা বাজে।হাত বাড়িয়ে বেডসুইচ অফ করে শুয়ে পড়লাম। আমার বাঁদিকে শাহেদ, ডানপাশে মেয়ে টায়রা আর ওর পাশে দেয়াল বরাবর ছেলে টোকন। ওদের দিকে একবারতাকিয়ে আমি চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টায় ডুবে গেলাম।
চোখটা লেগে এসেছিল প্রায়। কোন এক আজানা কারনে ঘুমটা ভেঙ্গে গেছে। পাশ ফিরে শুতেগিয়ে হোঁচট খেলাম মনে মনে। বাইরের স্ট্রীট ল্যাম্পের আলো পর্দা ছাড়িয়ে আমার ঘরে এসে এক চিলতে ফিতের মত পড়ে থাকে প্রতিদিন। আজো পড়েছে। সে আলোয় আমি দেখলাম, সম্পূর্ন অপরিচিত মোটা, কালো, মধ্যবয়স্ক এবং কুৎসিতএক লোক মুখ হা করে আমার পাশে ঘুমুচ্ছে। আমার সমস্ত শরীর যেন অবশ হয়ে আসতে চাইলো। কেমন যেন বিশ্রী একটা গন্ধ চারপাশে। কোনমতে পাশ ফিরে দেখলাম ঐপাশে কালোকালো দু’টো অপরিচিত ছেলেমেয়ে পাশাপাশি শুয়ে আছে। কিছুই বুঝতে পারছি না! এবার আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম, বিছানাটা আমার নয়, এমনকি বাড়ীটাও। কেমন যেন পুরনো দিনের একটা বাড়ী। হায়হায়, এ আমি কোথায়? বাড়ী যদি অন্যের হয় বেডসুইচটা কি আছে? কোন কিছু না ভেবেই আমিলাফ দিয়ে উঠে বসে হাত বাড়িয়ে বেড সুইচটা অন করে দিলাম। আলো জ্বলে উঠতেই আমার বুকটা যেন আরো হিম হয়েউঠলো। দেখি, আমার বর শাহেদ আর ছেলেমেয়ে দু’টো বিছানায় উঠে বসে আছে আর একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওদেরদৃষ্টিতে হিমশীতল শূণ্যতা বুঝিবা মৃত মানুষের চোখ। আমি চীৎকার করতে করতে ছুটে গেলাম দরজার দিকে। ঘাড় ঘুরিয়ে একঝলক শুধু দেখলাম ওরা সেই একই ভাবে বসে আছে তবে দৃষ্টিটা আমার উপর।
কোনরকমে গিয়ে কিচেনে ঢুকলাম। ঢুকতেই আমার হৃৎপিন্ডটা বের হয়ে আসবার উপক্রম হল। দেখি অনেকগুলো অচেনা মহিলা আমারই রান্নাঘরে। পিঠা বানাচ্ছিলবুঝিবা। তাদের সামনে ছড়ানো চালের গুঁড়ি, কোড়ানো নারিকেল আর গুড়। ওরা হাসি আনন্দে কলকল করছিল। আমি ঢুকতেই সবাই খুব অবাক হয়ে তাকালো আমার দিকে, সবারই চোখ ভয়ে বিস্ফারিত। তারপরই ওরা সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠলো, ভূ—উ—ত, ভূ—উ—ত বলে। আর একজন আমার গায়ে ছুড়ে দিলো চালের গুঁড়াগুলো। আমি পাগলের মতো ওই ঘর থেকেও বেরিয়ে এলাম।
এখন আমি বেডরুমে ঘুরছি, রান্নাঘর-ড্রইংর ুম সব ঘুরছি। ভোজবাজির মত উধাও হয়ে গেছে সব। কেউ নেই। এমন কি আমার স্বামী বা ছেলেমেয়েরাও কোথাও নেই। ডাইনিং টেবিলে বসে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে ডায়েরী লিখছি। কেন লিখছি তাও জানিনা। আমার সারা গায়ে এখনো চালের গুঁড়া লেগে আছে,গলায় হাতে, কাপড়ে। এত রাতে, এত্তো বড় একটা বাড়ীতে আমি একা। আমার মতো ভীতু মানুষ একদম একা। কি করে এটা সম্ভবহলো জানিনা। আমি কাঁদছি আর বিড়বিড় করে ডাকছি, শাহেদ, শাহেদ---“
এটা আমার ছোট খালার লেখা একটা ডায়েরীর অংশবিশেষ। আঠারো বছর আগে মাত্র পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে উনি ঘুমন্ত অবস্থাতেই হার্ট এটাক করা মারা যান। খুবই আশ্চর্যের বিষয় হলো, উনি যেরাতে মারা যান ডায়েরীটা সে রাতের। মারা যান ঠিক রাত দেড়টায়, যখন আমার খালু আর খালাতো ভাইবোন টায়রা, টোকন ঘুমিয়ে ছিল। খালু টয়লেটে যাবার জন্যে রাত দুইটায় ঘুমথেকে উঠে দেখেন খালার সারা শরীর চালের গুঁড়ায় মাখামাখি আর তার শরীরটা তখনো গরম। ডাক্তার এসে মত দেন যে উনি রাত দেড়টায় পৃথিবী ছেড়েছেন।

ব্ল্যাক ম্যাজিক [Small Tale -4]





[ঘটনা-২]
কিছুদিন পর আবার বন্ধুটির ফোন।।বলল,তোর গ্রামের বাড়ি নান্দাইলে না??????হুম,কেন ,কি হইসে??নাওরীর কুদ্দুস কবিরাজ এর নাম শুনসস???আমি উনার নাম আগে শুনিনাই।
আমি নাওরী যামু,তোর যাওয়াই লাগব।কি আর করা গেলাম।নাওরী জায়গাটা আমার গ্রামের বাড়ি থেকে খুব দূরেনা।হঠাত কাওকে না জানিয়ে গ্রামে আসছি ব্যপারটা নিজের কাছেই খারাপ লাগছে।তাই আত্নগোপনের মতই ছিলাম।কুদ্দুস মিয়ার বাড়িতে উঠলাম।একটা টিনের ঘর,একটা ছনের ঘর,আরেক টা রান্নাঘর।বাড়ির উঠোন টা বেশ বড়ই।লোকমুখে শুনলাম উনি তাবিজ করে মানুষ বশ করায়।অনেককে মেরেও ফেলেন।বন্ধুকে বলেছিলাম,এইকাজ গুলো কুফরী।ধর্ম নিয়ে অনেক জ্ঞানই দিয়েছি।কিন্তুফলাফল শুন্য।দেখলাম কুদ্দুস মিয়া উঠোনে বসেই সবার সমস্যা সমাধান করেন।তখন রাত ৮টা।আমাদের কে বলল,আপনাদের খাবার দেয়া হয়েছে ওই ঘরে।খেয়ে বিশ্রাম করেন।আমি আসছি।পুটি মাছের ঝোল,লাল শাক আর ডাল দেয়া হয়েছে,সাথে মোটা চালের ভাত।।খেয়ে বসে আছি।।উনি আসল।বলল,উঠোনে আসেন।গেলাম,বসলা ম।উনি সিগেরেট ধরিয়ে সমস্যা জানতে চাইলেন।সব বলা হল।সব শুনে উনি বললেন,মেয়ের বাপকেতাবিজ করা লাগবে।ফ্রেণ্ড বলল করেন।ফ্রেণ্ড এর মাথা থেকে একটা চুল ছিড়ল।কয়েকটা বই আনল।একটা বই এর নাম আমারস্পষ্ট মনে আছে যার নাম তাবিজ করার ৩৬০টি উপায়।হারিকেন এর আলোয় তিনি বই ঘাটছিলেন আর আমি তাকে খেয়াল করছিলাম।আমার মামারাএলাকায় অনেক সম্ভ্রান্ত।তাদে র পরিচয় দেয়ার পর খাতির টা একটু বেড়ে গেল বলেই মনে হয়।উনাকেজিজ্ঞেস করলাম তাবিজে কাজ হয় কিনা।উনি বললেন আলবৎ হয়।তাবিজে কি মানুষ মারা যায়?উনি বললেন,মানুষ মারাটাই সহজ।প্রথমে বেদ মারা হয়।লোকটা বমি করে।এ অবস্থা অনেক দিন চলে।একসময় মৃত্যু নিশ্চিত।।আমি জিজ্ঞেস করলাম বুঝতে পারে না তাবিজ কে করল??উনি ফিক করে হাসল।আবার জিজ্ঞেস করলাম,ডাক্তার ভাল করতে পারে না???উনি বললেন,কোন মতেই না।একমাত্র আমার মত এ লাইনে যারা আছে,তারাই এ তাবিজ ভাঙ্গার ক্ষমতা রাখেন।আমার থেকে আরো অনেকেই আছে যারা আরো ভাল কাজ জানে।রাত তখন ২টা বাজে।উনার মোবাইলে একটা ফোন।সিলেট থেকে একজন করেছে কাউকে তাবিজ করতে।কথায় বুঝতে পারলাম।আমি জিজ্ঞেস করলাম তাবিজ করতে কি কি লাগে??উনি বললেন,খুবই সহজ।যাকে তাবিজ করতে হবে তার নাম,তার বাবার নাম।তারপর একটা চুল দিয়ে একটা মন্ত্র পড়ে মাটির তৈরীএকটা পুতুল সেই চুল দিয়ে বেধে রাখলেই হয়।।তাবিজ ভাঙ্গার জন্যও বিভিন্ন পদ্ধতি আছে।।তিনি আমাদেরকেকিছু কাজ দিলেন।মেয়ের বাড়ির সামনে মেয়ের একটুকরো কাপড় পুড়াতে হবে।বাড়ি টাকে কেন্দ্র করা চার পাক ঘুরতে হবে।বলা বাহুল্য,বন্ধুটা র কাছে মেয়েটার কিছু কাপড় ছিল।কুদ্দুস মিয়া বললেন,কিছু স্বর্ণের কাজ আছে।খরচ বেশী পড়বে।আমি ফ্রেণ্ডকে না করেছিলাম।সে আমার কথা শুনেনাই।ভার্সিট ি তে ভর্তির নাম করে আমার রিসিট দেখিয়ে বাসা থেকে অনেক টাকা নেয়।তার কাজ হয়েছে কিনা সে ব্যপারে কিছুবলব না।কিছু জরূরী কথা বলছি।
এ সমস্ত কালো যাদু,তাবিজ,তন্ত ্র মন্ত্রে কাজ অবশ্যই হতে পারে।।কিন্তু কতিপয় শয়তানরাই এ পথকে বেছে নেয়।এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া যে কি ভয়াবহ তাকবিরাজ,তান্ত্রি করা খুব অচিরেই বুঝতে পারে।একটা কথা শুনেছিলাম,সুরা ফাতিহা উলটো করে পরে কোন গাছে ফু দিলে গাছটা নাকি ২ভাগ হয়ে যায়।পরিণামে লোকটি কাফির হয়ে যায়।যেহেতু আমার কাফির হওয়ার কোন ইচ্ছা নাই,তাই আমি কখোনই এই পাপ কাজ করার দুসাহস দেখাইনি নাই।কথাটা নানার কাছ থেকে শোনা।কুরআন শরীফের সুরা উলটা পড়ে,আরো বিভিন্ন হাদীস কালাম, শয়তানের পথ ধরে কালো যাদু চর্চা কর তারা মানুষের ক্ষতি করে নিজের পকেট ভরে।বাজারে তো এ সমস্ত বই ওপাওয়া যায়।নীলক্ষেত গিয়ে খোজ করলেই পাওয়া যায়।এসকল তান্ত্রিক লোকেরা অত্যন্ত ভয়ংকর।নিজের মনুষ্যত্ব কে শয়তানের কাছে বেচে শয়তানের কাছ থেকে অনিষ্টের সার্টিফিকেট কিনে এ দলের লোকেরা।এ দুনিয়া তো কর্মক্ষেত্র।বেত ন পরের দুনিয়ায় পাবেন।আমরা যেন কখনোই এসব কালোযাদু চর্চা না করি এবং কোন তান্ত্রিক লোকের কাছে ধর্ণা না দেই।কোন কিছু দেওয়ার মালিক একমাত্র তিনি।অনেকেই বলেন,এই মেয়েটারে তাবিজ করমু।আমাকে দাম দেয় না।।আমার স্বামী আমাকে ভালবাসে না।ওরে তাবিজ করব।।চাইলে তো আল্লাহ কেও পাওয়া যায়।উনার কাছেই চান।এসব ফন্দি ফিকিরি মোটেও কল্যান বয়ে আনেনা।।বয়ে আনলেও আপনি আর মুমিন থাকছেন না।আজকাল টিভি তে অনেক বিজ্ঞাপন দেখি,ইজমা পাথর,জাপানি ব্রেস্লেট...আরো অনেক কিছুই...।এগুলোর কর্মক্ষমতা নিয়ে আমার যথেষ্ট প্রশ্ন আছে।।
যদি এ প্রতিমূলক উপস্থাপন আপনাদের ভাল লাগে,তাহলে অবশ্যি লাইক দিবেন।আপনাদেরলাইক থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই আমরা লেখতে বসি।।


জীবন্ত লাশ [ Small Tale - 3 ]




ঢাকার গুলশান ২ এলাকায় একটা এপার্টমেন্ট ছিল।।
কোনও ফ্যামিলিই ঐ এপার্টমেন্টে বেশি দিন
থাকতে পারতো না।। তারা নানা ধরনের প্রবলেম
ফেস করতো।। সবই আধিভৌতিক।। যেমন, রুমের দেয়াল
থেকে রক্ত পড়তে দেখা, ঘুমানোর সময় রুমের ভেতর
বাচ্চা কণ্ঠের কান্নার আওয়াজ
শুনতে পাওয়া ইত্যাদি।। এছাড়াও প্রতি রুমের
মধ্যে ভ্যাপসা একটা ভাব লক্ষ্য করা যেতো।।
এপার্টমেন্টটিতে কেউ
থাকতে পারে না দেখে ডেভেলপাররা ঐ
এপার্টমেন্টটি ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়।।
এপার্টমেন্ট ভাঙার সময় শ্রমিকরা স্টোর
রুমে একটি সিল করা কফিন খুঁজে পায়।। কফিনের
ভেতরটি মাটি দিয়ে ভরা ছিল।। মাটি সরানোর পর
একটি ৬-৭ বছরের বাচ্চার ডেড বডি পাওয়া যায়।।
বাচ্চাটার লাশ এতই জীবন্ত ছিল
যে দেখে মনে হচ্ছিল বাচ্চাটাকে মাত্রই
কফিনে রাখা হয়েছে।। এছাড়া কফিনটির ভেতর
একটি কাগজ ছিল, যেখানে পবিত্র কুরআন শরীফের
কিছু আয়াত উল্টা করে লেখা ছিল।। ধারণা করা হয়,
লাশটাকে শয়তানের
উদ্দেশ্যে বলি দেয়া হয়েছিলো।। গুলশান ২ এর
মতো জায়গাতেও এই ধরনের ঘটনা আসলেই
অনাকাঙ্ক্ষিত।। তবে, জানা যায়, যেইসব
ঘরে শয়তানের পূজা করা হয়, সেখানে কেই
শান্তিতে বাস করতে পারে না।।
....Collected....

কিছু অজানা তথ্য [ Interesting Information -1 ]



॥কিছু অজানা তথ্য॥

উত্তরা হতে বসুন্ধরা যাবার পথে একটা রেল ক্রসিং পড়ে । অনেকেই গভীর রাতে সেখানে ৩টামেয়েকে রাস্তা পার হতে দেখেছে । একজন নাকি তাদের উপর দিয়ে গাড়িও উঠিয়ে দিয়েছিল । কিন্তু সে যখন গাড়ি থেকে বের হলো , ৩টা মেয়ের নাম গন্ধও ছিল না সেখানে । এক্সিডেন্ট তো দূরের কথা !
এতো গেল উত্তরার বিষয় । ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথেও নাকি কেউ কেউ রাতের বেলা একটা মানুষের মত প্রাণীকে রাস্তা পার হতে দেখেছে হেডলাইটের আলোয়। মানুষের মত প্রাণী বলার কারণ , যে জিনিসটা রাস্তা পার হয় , তার শরীর মানুষেরই মত , লুঙ্গি আরপাঞ্জাবী পরা, কিন্তু মাথাটা হলো ছাগলের!!
নারায়ণগঞ্জে একটা শ্মশান ঘাট আছে । তার সাথেই একটা মুসলিম কবরস্থান । আজ থেকে ২০-২৫ বছর আগে যারা এই এরিয়া দিয়ে রাতের বেলা গাড়িনিয়ে যেত , তারা অনেকেই দেখত যে , তাদের গাড়ির পাশাপাশি ন্যাড়া মাথার একটা লোক দৌড়িয়ে সাথে সাথে যাচ্ছে ! গাড়ির স্পিড যতই বাড়ানো হত না কেন , লোকটার দৌড়ানোর স্পিড গাড়ির স্পিডের সমান থাকত ! সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার ছিল , লোকটা দৌড়ানোর সময় গাড়ির ড্রাইভারের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকত !!
মিরপুরে মাজারের পাশ দিয়ে একবার ৬জন ইয়াং ছেলেমেয়ে ফুলভলিউমে গান বাজিয়ে হইচই
করতে করতে গাড়ি নিয়ে যাচ্ছিল। হঠাত্ গাড়িটার এক্সিডেন্ট হয় । ঘটনাস্থলে একজন মারা যায় । অন্যরা গুরুতর আহত হয় ।পরে তাদেরকেজিজ্ঞেস করলে জানা যায় যে, তাদের গাড়িটা হঠাত্‍ একটা লোকের সাথে ধাক্কা খায় । লোকটা ছিল অনেকটা দরবেশের মত । লম্বা দাড়ি চুল , মাথায়পাগড়ি । হয়তো মাজারের সামনেদিয়ে এভাবে গাড়ি নিয়ে যাওয়াটা উনার পছন্দ হয়নি !!
গজারির বনের পাশ দিয়ে রাতেরবেলা যাওয়ার সময় বনের পাশেররাস্তায় একটা মেয়ে কে দাড়িয়েথাকতে দেখা যায় । বিয়ের শাড়ি পরা থাকে মেয়েটি।যারাই মেয়েটিকে দেখেছে , তাদের গাড়িতেই এসময়ে কোন নাকোন সমস্যা দেখা দিয়েছে । বলা হয়ে থাকে , মেয়েটা নাকি বিয়েরআসর থেকে পালিয়ে তার প্রেমিকের জন্য এ জায়গাতে অপেক্ষা করছিলো । মেয়েটার সাথে ছিল টাকা আর সোনার অলংকার । তার প্রেমিক তাকে জবাই করে গজারির বনে ফেলে রেখে টাকা আর গয়না নিয়ে পালিয়ে যায় । মেয়েটার ছিন্নবিচ্ছিন্ন , জানোয়ারে খাওয়ালাশ কিছুদিন পর বনের ভিতর থেকে উদ্ধার করা হয় । মেয়েটি কি তবে প্রতিশোধ নিতেই তার প্রেমিকের জন্য অপেক্ষা করে রাস্তার পাশে?!
উত্তরার কথায় ফিরে আসি । যারা উত্তরা তে বহুদিন ধরে বাস করছেন , তারা জানেন যে উত্তরা ৪০-৫০ বছর আগে পুরোপুরি গ্রাম ছিল এবং বন জঙ্গলে ভরা ছিল । তখন নাকি এসব জঙ্গলে খারাপ জিনিস বাসকরতো । তখন যারা স্থানীয় বাসিন্দা ছিলেন , তারা এসব খারাপ জিনিসের
দ্বারা নানা ভাবে অত্যাচারিত ও ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন । এখনও উত্তরা ১২ নং সেক্টরের পরেরসেক্টারগুলোর অনেক জায়গা বন জঙ্গল দিয়ে ভরা । ধীরে ধীরে সেগুলো সাফ করে আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠছে । আরো জানা যায় , উত্তরাতে আগে বহু পারিবারিক কবরস্থান ছিল এবং অনেক কবরস্থান ভেঙেলাশগুলোকে অন্য জায়গায় সমাহিত না করে তার উপরেই রাস্তা এবং মেইন রোড তৈরী করা হয়েছে ।
মনে করুন আপনাকে কেউ জোর করে আপনার বাড়ি থেকে বের করে দিলো । আপনি তখন
কি করবেন ? হয় জোর করে বাড়ির দখল নিতে চেষ্টা করবেন অথবা ক্ষমতার
জোর না থাকলে প্রতিশোধ নেয়ারঅপেক্ষায় থাকবেন , তাইতো ??
উত্তরা আগে বন জঙ্গলে ঘেরা ছিল । খারাপ অনেক কিছুই বাসকরতো এখানে । মানুষ জঙ্গল সাফ করে এখন সেখানে দালান কোঠা আর ইমারত গড়ে বাস করছে।কবরস্থানের জায়গার উপর নতুন করে মাটি ফেলে সেখানে ইটের বিলাসবহুল বাসস্থান বানানো হয়েছে । রাস্তা তৈরীকরা হয়েছে ।আগের বাসিন্দারা তাদের আবাসস্থলহারিয়েছে । তারা নিশ্চয় প্রতিশোধ নিতে চাইবে??উত্তরার রাস্তাগুলোতে উল্টাপাল্টা ঘটনার ফলে প্রায় প্রতিদিনই ছোট বড় রোডএক্সিডেন্ট হয় । এসব এক্সিডেন্ট গুলোকে কি আগের বাসিন্দাদের প্রতিশোধ হিসেবে ধরে নেয়া যায়না ?? অদেখা এ ভূবনের কতটুকু রহস্যই বা জানি আমরা ??




লাশ [Small Tale Ghost - 2 ]




এই ঘটনাটি ঘটেছিল আমার মামার সাথে।

প্রায় 4/5 বছর আগের কথা। আমার বয়স তখন 22/23 এরকম হবে। আমার মামা ঢাকায় থেকে লেখাপড়া করতো। আমার মামারদের বাড়ি ছিল রাজবাড়ি জেলায়। একবার আমার মামা ঈদের ছুটিতে গ্রামে আসতেছে। ওই গ্রামের যাওয়ার দুটি রাস্তা ছিল। একটি রাস্তা দিয়ে গেলে দ্রুত যাওয়া যায় কিন্তু একটি সমস্যা ছিল ওই রাস্তা পাশে কবরস্থান ছিল এবং ওখানে নাকি অনেক ভয় ছিল তাইওই রাস্তা দিয়ে রাতে কেউ বাড়ি ফিরতো না আর অন্য রাস্তা দিয়ে গেলে কনো সমস্যা হত না। আমার মামা বাজার পর্যন্ত আসে এবং রিস্কা ওয়ালা বলে আর যাবে না অনেক রাত হয়েছে তাই। 



আমার তখন কি আর করবে রিক্সাথেকে নামে এবং দেখে বাজারে দুই একটা দোকান খোলা আছে কিন্তু কনো ভ্যান বা রিক্সানেই। তখন আমার মামা কিছু করার নেই দেখে হাটা শুরু করে। একসময় ওই দুটো রাস্তারসামনে যেয়ে থেমে ভাবে যে কোন রাস্তা দিয়ে যাবে। তখন আমার মামা মনে করে কবরস্থানএর রাস্তা দিয়েই যাই। তারপরআমার মামা ওই কবরস্থান এর রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে। তখন আমার মামার মনে পরে যায় যে রাতে কেউ এই রাস্তা দিয়ে যায় না এবং এই রাস্তা দিয়ে গেলে নাকি সমস্যা হয়। এই ভেবে আমার মামা থেমে যায়। তারপর আমার মামা ভাবে ওই রাস্তা দিয়ে গেলে অনেক সময় লাগে এবং অনেক দেরি হয়ে যাবে বাড়ী পৌছাতে। এই ভেবেআমার মামা কবরস্থান এর রাস্তা দিয়ে হাটা শুরু করে।এমন সময় দেখে আমার মামার গ্রামের বন্ধু জামাল সে পেছন থেকে ডাকতেছে তখন আমারপেছনে তাকায় এবং দেখে সত্যিজামাল আসতেছে। তখন জামাল কাছে আসার পরে জামাল কে বলেতুই এত রাতে কোথায় গিয়েছিলি? তখন জামাল বললো তোকে আনতে বাজারে। তখন মামাবলে কোথায় তোকে তো বাজারে দেখলাম না। তখন জামাল বলে আমি একটু ওই দিকে গিয়েছিলাম। তখন আমার মামা বলে কোন দিকে? জামাল বলে ওইদিকে কিন্তু কোন দিক না দেখিয়ে। তখন আমার মামা এটারতেমন গুরুত্য না দিয়ে জামালএর সাথে হাটা শুরু করে। তারপর যখন কবরস্থান এর পাশেআসলো তখন দেখা গেলো জামাল নেই জামাল উধাও। আমার মামা এদিকে ওদিকে তাকিয়ে কোথাও জামাল কে খুজে পেল না। তখন আমার মামা একা একা হাটতে লাগলো একটু একটু ভয় নিয়ে বুকে। এমন সময় আমার মামা অনূভব করলো তার শরির এর ভিতর দিয়ে কে যেন বেরিয়ে গেলো। এরকম অনূভব করার পরে আমার মামা আরো ভয় পেয়ে যায়।এবং কিছু করার নেই ভেবে জোরে জোরে হাটতে শুরু করে। কিছুক্ষন পরে আমার মামার একদিকে চোখ পরে যায় এবং দেখে একটি মেয়ে কবরস্থান এরকবর থেকে লাশ উঠিয়ে সেই পচালাশ নখ দিয়ে ছিরে ছিরে কাচ্ছে এবং আমার মামা কে ডাকতেছে আর খিল খিল করে হাসতেছে। এটা দেখা মাত্র আমার মামা ভয় পেয়ে যায় এবং আমার মামার শরির ঠান্ডা হয়েযায় । তখন কিছু না দেখার ভান করে দৌর শুরু করে দেয়। একসময় আমার মামাদের বাড়ীতে এসে চিত্‍কার দিয়ে হাপাতে শুরু করে আমার মামা।তখন আমার নানা নানী এবং বড়মামা ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে এবং বলে কি হয়েছে তখন আমার মামা সব ঘটনা খুলে বলে। তখনআমার নানা নানী নিষেধ করে যে যত রাত ই হোক না কেনো আর যেন ওই রাস্তা দিয়ে না আসা হয়। এরপরে আমার মামার আর কনো সমস্যা হয় নাই এবং আর কনোদিন ওই রাস্তা দিয়ে আসেনি।
100% সত্য গল্প আমি ঠিকমত লিখতে পারিনি তাই। কেমন লাগলো তা like & কমেন্ট করে জানান।

জাহিদ [Small Tale -1]




অনেকদিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম । বেশ ভাল লেগেছিল।
কার লেখা জানি না । গল্পের খালি কাহিনী মনে আছে । নিজের মত করেই লিখছি....

প্রতিদিন বিকেল হলেই বাড়ী ফিরে আসে জাহিদ । বাসা বেশ খানিকটা দুর তো বটেই.. তাছাড়া তার নতুন বিয়ে করা বউ বাসায় একা থাকতে ভয় পায় । বিকেলের দিকে গ্রামের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাজ শেষ করে সাইকেলটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে । নতুন চাকর...ি একটু কষ্ট তো করতেই হবে । এইভেবে নিজেকে সান্ত্বনা দেয় সে 
। তার বাসায় যাওয়ার রাস্তাটা অনেক ঘুর পথে । কয়দিন আগে একটা সর্টকাট আবিষ্কার করেছে সে । রাস্তাটা একটু নির্জন অবশ্য কিন্তু দিনের বেলায় যায় বলে ভয় লাগেনা জাহিদের ।
সেদিন কাজ শেষ করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে গেল । প্রচন্ড শীতের সময় , ছয়টা বাজতে না বাজতেই রাতের মত হয়ে গেল। বের হওয়ার সময় একবার মনে হল ঘুরপথেই যাবে নাকি!! কিন্তু পরমুহূর্তেই হেসে উড়িয়ে দিল ও । ধুর, এই শী্তের মধ্যে এত দূর ঘুরে যাব!! তাই বড় টর্চটা হাতে নিয়ে তাড়াতাড়ি সাইকেল বের করে রওনা হয়ে গেল জাহিদ ।
রাস্তাটা পাকা নয় । পাকা হবার কথাও না । এমনিতেই মানুষজন খুব কম চলাচল করে এখান দিয়ে । প্রচন্ড শীতের মধ্যে এখন তো কারো আসার প্রশ্নই আসে না ।
হঠাৎ করেই ফুশ করে শব্দ , আর সেই সাথে সাইকেল নড়বড় ।
সাইকেল খুব জোরে চলছিল । তাই সরাসরি মাটিতে ।
শব্দ শোনার পর আর বলে দিতে হল না কি হয়েছে । জাহিদ তিক্ত মনে ভাবল বাঙালী বাঘা জিনিস । কী কী প্রবাদ যে বানাইছে । যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই কিনা সন্ধ্যা হয় ! টায়ারটাও এখনই পাংচার হইতে হইল ! হাত থেকে পড়ে টর্চটা নিভে গিয়েছিল । শংকিত মনে জাহিদ মাটি হাতড়ান শুরু করল । টর্চের মত কিছু একটা হাতে ঠেকল । তুলে নিয়ে সুইচ চাপতেই মনটা আবারো তিক্ততায় ভরে গেল । "চমৎকার !! আর কী চাই !!" এইটাও শেষ । সোজা হয়ে দাড়িয়ে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করার চেষ্টা করল জাহিদ । কি করা যায় ! অনেকক্ষন ভেবে এটুকুই বুঝল যে এখানে দাঁড়িয়ে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করার চেষ্টা করতে থাকলে মাথা চিরদিনের মত ঠান্ডা হয়ে যাবে !
প্রথমে সাইকেলটাকে ঝোপের আড়ালে নিয়ে রাখলো কোনরকমে। নিজে কোনরকমে বাসায় পৈছতে পারলেও সাইকেলটা নিয়ে যাওয়া সম্ভব না । সকালে নিয়ে গেলেই হবে ।
তারপর আবার রাস্তায় দাড়িয়ে এদিক ওদিক তাকাতেই হঠাৎ আশায় বুকটা নেচে উঠল । দূরে গাড়ির দুটো হেডলাইট এদিকেই আসছে । এই জায়গায় গাড়ি কিভাবে এল এ চিন্তা মাথায় এলেও জাহিদ তা মাথায় স্থান দিল না । জাহিদ অপেক্ষা করতে থাকল । কিন্তু গাড়িটা খুব বেশী স্লো । জাহিদ নিজেও একটু এগিয়ে গেল । গাড়িটা ওর সামনে এসেই থামল । জাহিদ খুশি মনে গাড়ির পেছনের সীটে গিয়ে উঠল । আস্তে করে গাড়ীর দরজা লাগাতেই গাড়িটা আবার চলতে শুরু করল ।
গাড়ির ভেতরটা বেশ গরম । জাহিদের মনে হল ও যেন ঠান্ডা দোযখ থেকে গরম বেহেশতে এসে পড়ল । গাড়ীর চালককে কিভাবে ধন্যবাদ দেবে বুঝতে পারছিল না জাহিদ । পেছন থেকে ও বলল-
" থ্যাংকিউ ভাই । জীবনটা বাঁচালেন ।"
চালক জবাব দিল না ।
একটু অস্বস্তিতে পড়ল জাহিদ । আবার বলল-
"রাস্তায় হঠাৎ সাইকেলের চাকা পাংচার হয়ে গেল আরকি হে হে।"
এবারো কোন জবাব নেই ।
জাহিদ বুঝতে পারছিল না এই লোক কথা বলে না কেন?
আবারো ও বলল
"এদিকে কার বাসায় যাবেন?"
এবারো কোন জবাব নেই।
এবার একটু মেজাজ খারাপ হল জাহিদের । ব্যাপার কি? যাই হোক ও চুপ করে গেল ।
কিছুক্ষণ পর ওর টনক নড়ল । কি ব্যাপার !! গাড়ী এত আস্তে আস্তে চলছে কেন ? সামনে ঝুকে জাহিদ ঐ লোককে ডেকে বলতে চাইল "ভাই গাড়ি এত আ-
মেরুদন্ড দিয়ে বয়ে যাওয়া শীতল স্রোত তার কথা মাঝপথেই থামিয়ে দিল । চালকের আসনে কেউ বসে নেই । সবার আগে যে সম্ভাবনাটা মাথায় এল তা আর ভাবতে চাইল না জাহিদ। গাড়ি থেকে নেমে যেতে চাইল ও । কিন্তু আতংকে ও নড়তে পারছিল না । সামনে রেল ক্রসিং । গাড়িটা খুব আস্তে আস্তে ঐ রেললাইনের উপর গিয়ে দাড়াল । হঠাৎ ট্রেনের হুইসেলের শব্দে জাহিদের মাথা পরিষ্কার হয়ে গেল । তাহলে ভুতটার তাহলে এই মতলব ! এখন ট্রেন এলে জাহিদ একদম চ্যাপ্টা হয়ে যাবে । তাড়াতাড়ি ও দরজার হাতল ধরে টান দিল । আবারো ভয়ে ও পাগল হয়ে গেল । বারবার হাতল ধরে টান দিলেও ওটা খুলছিল না । গাড়িটা আবারো নড়তে শুরু করছিল । ওদিকে ট্রেন কাছে চলে আসছিল । ভয়ে আর পরিশ্রমে হাঁপাতে হাঁপাতে যখন ও জীবনের আশা প্রায় ছেড়ে দিচ্ছিল তখনই ও খেয়াল করল দরজাটা তো লক করাও থাকতে পারে । তাড়াতাড়ি লকে হাত দিয়ে লকটা খুলে ও বাইরে ঝাঁপিয়ে পড়ল । মাটিতে গড়িয়ে ও কিছুটা দুরে সরে এলো । তখনই আবারো গাড়িটা চলতে শুরু করল । গাড়িটা রেললাইন পার হয়ে গেলেই ট্রেন চলে গেল । জাহিদ মাটিতে শুয়ে চোখে আতংক নিয়ে গাড়িটার দিকে তাকিয়ে ছিল । গাড়িটা আবারো ওর সামনে এসে দাঁড়াল ।

গাড়ির পেছন থেকে হঠাৎ এক যুবক বের হয়ে গাড়ির গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে হাঁপাচ্ছিল । তার সারা গায়ে এই শীতের রাতেও ঘাম । জাহিদের একটু খটকা লাগল । ভুতেরাও ঘামে ?!! যুবক জাহিদকে দেখতে পেয়ে কাছে এসে বলল ''কী ব্যাপার, মাটিতে শুয়ে আছেন কেন ? আমার গাড়িটা যে রেললাইনের উপর হ্যাং হয়ে ছিল দেখেন নি ? ''
জাহিদ কোনরকমে ঘাড় নাড়ল ।
''আচ্ছা মানুষতো আপনি ! আরেকটু হলেই মারা যাচ্ছিলাম আর আপনি হেল্প করতে আসলেন না ? পাক্কা দুই কিলোমিটার ধরে গাড়িটাকে ঠেলছি !! আসুন আসুন , আমার সাথে ঠেলুন ।

জাহিদ বিনা বাক্য ব্যয়ে উঠে যুবকের সাথে গাড়ি ঠেলতে শুরু করল ।


কংকাল [Horror Tale -01]




এস.এস.সি পরিক্ষা শেষ। কি করব ভেবে পাচ্ছিলাম না? একদিন আম্মা বলল চল সইয়ের বাড়ী থেকে বেড়িয়ে আসি। আমি, আম্মা, বদরুল, হাদীমামা সবাই মিলে কিশোরগন্জের পাকুন্দিয়া আম্মার সইয়ের বাড়ী বেড়াতে গেলাম। হৈ হৈ রৈ রৈ করে দিনগুলো খুব ভালই কাটছে। এর মাঝে একদিন ঐ এলাকায় মাইকে প্রচার হচ্ছে যাত্রা হবে।আমরা খুবই উৎফুল্ল। রাত্রে আমি, মামা, নয়ন ভাই, স্বপন, শরিফ, আরও তিনজ...ন মিলে রওনা হলাম। মোটামুটি তিন কি.মি. রাস্তা। তার মাঝে নাকি আবার নদী পার হইতে হয়।

প্রচন্ড শীত। খোলা গলায় গান ছেড়ে নদীর পাড় দিয়ে চলছি। পাশের ঘন কাশবনের ফাক দিয়ে মাঝে মাঝে একজোড়া…দুই জোড়া চোখ এসে উকি দেয়। উকি দিয়েই শেয়াল গুলো পাশের ঝোপে হারিয়ে যায়
। মামা বলল শেয়ালেরা রাত্রে নদীর পাড়ে আসে কাকড়া খাওয়ার জন্য।

আমরা মূল নদীরঘাটে এসে পৌছালাম। দেখি মাঝি নাই কিন্তু নৌকা আছে। আমরা মাঝিকে ডাকাডাকি করতে লাগলে কিছুক্ষণ পর মাঝিকে দেখলাম কাশবন থেকে বেড়িয়ে আসল। কিছুটা অপৃকতস্থ কি লেগেছিল? মনে নাই। নদী পার হলাম। আরও এক কিলোমিটার।

এবার কিন্তু সোজা কাশবনের ভিতর দিয়ে যেতে হবে। ছোট একটা রাস্তা। বোঝাই যাচ্ছে এটা একটা কাশবনই ছিল। মানুষ হাটতে হাটতে কিছুটা রাস্তা হয়েছে। হালকা চাদনী। দুইধারের কাশের জন্য দু্ইপাশে কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। শুধু সামনে আর পিছনে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সামনে আর পিছনের দুইপাশে শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার। কেননা চাদের আলো এতনিচে এসে পৌছাচ্ছেনা। আমরা সবাই হাটছি তো হাটছিই। কুয়াশা পরে দুইপাশের কাশগুলো কিছুটা নুয়ে পড়েছে। ফলে হাটার সময় আমাদের মুখে এসে লাগছে। খুবই বিরক্তিকর একটা ব্যাপার।

অনেকক্ষণ যাবৎ আমি একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম যে কিছুক্ষণ পর পরই কাশবনের ভিতর একটা শব্দ হচ্ছে। শেষবার যখন শব্দটা শুনলাম তখন আমার মনে হলো কিছু একটা আমাদের সাথে সাথে চলছে। আর কিছুক্ষণ পরপর শব্দটা শুনিয়ে কি বুঝাতে চাচ্ছে বুঝলাম না। তবে একটা অদ্ভুত ব্যাপার হলো একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর একই শব্দটা শোনা যাচ্ছে। বন-জঙ্গল পরিষ্কার করে করে সামনে যাওয়ার যে শব্দটা ঠিক সেই রকম। আমি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম।তবে কারও কাছে কিছু বললাম না।
সোজা সামনে হাটছি।


থেকে থেকে শব্দটা আমি ঠিকই শুনতে পাচ্ছি। একটা জিনিস খুব অদ্ভুত লাগছিল যে সবাই কেমন জানি নির্বিকার, কেউ কি কিছু শুনতে পাচ্ছেনা। তাহলে আমি কি কোন হ্যালুসেশানে আছি। মানুষের চেচামেচি শোনা যাচ্ছে। আমি আর মামাছাড়া আর বাকি সবাই দেখি দৌড় দিল। আমরাও পিছনে পিছনে দৌড় লাগালাম।

মোটামুটি সামনেই বসলাম। সবাই চিৎকার-চেচামেচি করছে। দুইঘন্টা……… এরমাঝে আয়োজকদের একজন এসে বলে গেল চুপ করার জন্য এখনি নাকি যাত্রা শুরু হবে। ৫-১০ সেকেন্ট চুপ ছিল আবার চিল্লা-চিল্লি। এবার স্থানীয় চেয়ারম্যানের অনুরোধ। সবাই চুপ।

নুপুরের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। বাদ্যযন্ত্র বেজে উঠল। নাচ শুরু হবে মনে হচ্ছে।সে কি নাচ……..নাচের তালে তালে দর্শকরা সবাই উন্মাতাল। মামার দিকে তাকিয়ে দেখি বসে বসে লাফাচ্ছে। মামা আমার দিকে তাকিয়ে কিছুটা লজ্জা পেল। কেউ কেউ টাকাও ছুড়ে মারছে। নৃত্যশিল্পী টাকা কুড়িয়ে ব্লাউজের ফাক দিয়ে বুকে রাখছে আর গা থেকে ধীরে ধীরে কাপড় খুলে ফেলছে। মামাকে দেখি বসা থেকে দাড়িয়ে দাড়িয়ে লাফাচ্ছে। এদিকে দর্শক সারি থেকে কে জানি কাগজ দিয়ে বল বানিয়ে নৃত্যশিল্পীর গায়ে মারল। শিল্পী কিছুটা বিব্রত বোঝাই যাচ্ছে।

আয়োজককারীদের মধ্য থেকে একজন এসে অনুরোধ করে যাচ্ছে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে। অহেতুক জামেলা কার সহ্য হয়? কেউ একজন ঐ আয়োজককারীর গায়ে জুতা ছুড়ে মারল। সেচ্ছাসেবক দলের আট-দশজন মিলে একটা লোককে সনাক্ত করে মাইর শুরু করল। সাথে সাথে দর্শকরাও ঝাপিয়ে পড়ল। মুহুর্তের মাঝেই হাজার হাজার মানুষ দৌড়াদৌড়ি শুরু করল। শরীফ, স্বপন বলল মামা দৌড় দেন….বিরাট মাইর লাগব…….এই এলাকা খুব খারাপ।
আমরা দৌড় লাগালাম।

শরীফ, স্বপনরা সামনে দিয়া আমরা পিছনে। দৌড়াচ্ছিতো… দৌড়াচ্ছিতো… পিছন দিয়া ধর ধর….। জইল্যারে ছাড়িসনা………মজিত্যা কই? এরকম হাজারও চিৎকার কানে ভেসে আসছে। পিছনে তাকিয়ে দেখি হাজারও মানুষ দ্বিক-বেদ্বিক হয়ে দৌড়াচ্ছে। আমরা তখন রাস্তাছেড়ে কাশবনের ভিতর দিয়া হামাগুড়ি দিয়ে দিয়ে আগাচ্ছি। মামার জুতা ছিড়ে গেছে। বেচারা ঐ জায়গায় বসে জুতার জন্য শোক করা শুরু করল। মামা আবার ভীষন কৃপণতো। আমরা মামাকে ধরে টেনে হিচড়ে ভিতরে যাচ্ছি। ধীরে ধীরে ধর ধর আওয়াজটাও স্তিমিত হয়ে আসছে।

আমরা নদীরপাড়ে এসে দাড়ালাম। হালকা চাদনি। ঘাটে কেউ নেই। সহজেয় বুঝতে পারলাম ভয়ে কেউ এদিকটায় আসেনি। শরিফ বলল এখানে দাড়ানো মোটেও নিরাপদ নয়। যে কোন ভাবেই নদীপাড় হতে হবে। আমি আবার সাতার জানিনা। মামা বলল ভাগ্নে তুমি আমার কাদে উঠ। আমি রাজি হলামনা। আমি সারাজীবন সব জায়গায় মাতব্বরি করতাম শুধু পানি ছাড়া। কেননা হাজার চেষ্টা করেও যে সাতারটা শিকতে পারলামনা। আমার সবসময় ভয় বেশী পানিতে গেলে নিচ দিয়ে যদি কেউ টান দেয়। সবাই আমাকে অনেক বুঝানোর পরও রাজি হলাম না। সবাই নদীর পাড়ে দাড়িয়ে আছি। একটা অজানা আতংক সবার ভিতরে কাজ করছে।

আল্লাহু… আল্লাহু… সবাই একটু ছড়ানো-ছিটানো থাকলেও দেখলাম মুহুর্ত্তের মাঝে একসাথে জড়ো হয়ে গেল। শব্দটার উৎপত্তি বুঝার চেষ্টা করতে লাগলাম। এর মাঝে শুনলাম ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু….। কাশবনের ভিতর দিয়ে যে রাস্তাটা চলে গেছে সে দিকে একটা ক্ষীণ আলোর রেখা কাশবনের উপরদিয়ে দেখা যাচ্ছে। আমরা সবাই সেদিকে তাকিয়ে রইলাম। আলোর তীব্রতা এবং শব্দের তীব্রতা বেড়েই চলছে।


সবাই একদৃষ্টিতে ঐ দিকে তাকিয়ে আছি। দেখি দুইজন মানুষ ঐ কাশবনের পথ দিয়ে বের হয়ে আসছে। দুইজনের হাতে দুইটি হারিকেন। পিছনে চারজনে কাদে করে একটি খাটিয়া নিয়ে আসলো। সাদা কাপড়ে ঢাকা। বুঝলাম কোন লাশ নিয়ে এসেছে। তার পিছনে আরও দুইজন হারিকেন হাতে। অবাক হয়ে গেলাম।

আসসালামু ওয়ালাইকুম। সবাই সালামের জবাব দিলাম।সবার চোখে-মুখে উৎকন্ঠা স্পষ্ট। আমি একটু আগ বাড়িয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কি ব্যাপার বলুনতো। সবচেয়ে বৃদ্ধ যে লোকটা সে বলল “মৃত ব্যাক্তিটি হলো এই এলাকার জামাই। শশুর বাড়ীতে এসেছিল। সাপের কামড়ে সন্ধায় মৃত্যু হয়েছে। এখন ঐ পাড়ে নিজ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে দাফনের জন্য।” সবার জড়তা মনে হয় একটু কাটল।

-বাবা নৌকা নাই
-না চাচা দেখি না তো
-ঠিক আছে তাহলে আপনারা এইখানে লাশের পাশে দাড়ান আমরা গিয়ে নৌকা নিয়ে আসছি।

এইটা কি কয়? মাথাটা আবার ঝিনঝিন করে উঠল। একটু সন্দেহও লাগছিল। শেষে আমি বললাম আপনারা চারজন এবং আমর চারজন মিলে গিয়ে নৌকা নিয়ে আসব। আর বাকি সবাই এখানে থাকুক।চাচা মনে হয় আমার মনের কথা বুঝতে পারল। চাচার মুখে যে হাসিটা দেখলাম সেই হাসির রহস্য হাজার রকমের হতে পারে।

আমরা আটজন মিলে রওনা হলাম। নদীর পাড়ে ধরে হাটছি। সাথে দুইটি হারিকেন। চাচা মনে হয় মাঝির বাড়ি চিনে।সেই দেখলাম চিনিয়ে চিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। একটা জায়গায় এসে চাচা থামল। টর্চলাইট মেরে দেখলাম ঘাটে ঐ বিশাল নৌকাটা বাধা আছে। জায়গাটা অনেক অন্ধকার। নদীর পাড়ের উপরে বাড়ি ঘরও আছে। কিন্তু মনে হচ্ছে যেন মৃত্যুপুরী। কিছুটা ভয় ভয় লাগছে। একটা প্যাচা উড়ে গেল।পানিতে কিছু পড়ার শব্দ। ঐ হাইল্যা… হাইল্যারে…….. বুঝতে পারলাম মাঝির নাম হালিম। কোন সারাশব্দ নাই। চাচা রাগে বলতে লাগল সবাই কি মইরা ভূত হয়ে গেছে। শেষে আমরাই নৌকা নিয়ে আসলাম।

অনেক বড় নৌকা। নৌকার ছাদ নেই। উপরে কাঠ দিয়ে মেঝে করা হয়েছে। তবে মাঝখানে চার হাতের মত জায়গা ফাকা। পানি সেচের সুবিধার জন্য এটা করা হয়। আমরা এই ফাকের এক পাশে বসলাম। অন্য পাশে ওরা। আমি নৌকার শেষ মাথায় বসলাম। নৌকা যখন ছাড়বে, ঠিক তখনি কাশবনের ভিতর থেকে একটা আওয়াজ আসল।

-বাবারা আমারে একটু নিয়া যাও।

টর্চ লাইট মেরে দেখি এক বৃদ্ধলোক। ভাবলাম এতরাত্রে আমরা নিয়া না গেলে বেচারা কিভাবে পার হবে? তাই আমিই সবাইকে অনুরোধ করলাম নেওয়ার জন্য। নৌকাটি ভাসিয়ে লোকটি লাফ দিয়ে নৌকায় উঠল। নৌকাটি দোলনার মত দোল খেতে লাগল। আমার কাছে মনে হলো সবাই নৌকায় উঠার পর নৌকাটি যতটুকু ডুবল ঐ লোকটি উঠার পর আরও বেশী ডুবল। লোকটি লাশের ঠিক পায়ের কাছে বসল। নৌকা চলতে লাগল।

খুব বেশী বড় নদী না। কিছুটা স্রোত আছে। মনের ভিতর অজানা আশংকটা যতই ভুলে থাকার চেষ্টা করছি ততই মনে পড়ছে। এই হালকা চাদনী রাতে কাশবনের উপরে কুয়াশার ধোয়া যে মায়াবী জাল সৃষ্টি করেছে তা আলিফ লায়লার কথা মনে করিয়ে দিল। ভয় কাটানোর জন্য মনে মনে গান গাওয়ার চেষ্টা করলাম। জোরকরেই কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে যেতে চাইলাম। দূরে ভেসে যাওয়া কলাগাছরুপী লাশগুলোকে একমনে দেখছিলাম।

হঠাৎ যে নৌকা চালাচ্ছিল তার বিকট চিৎকার। কেউ একজন পানিতে ঝাপিয়ে পড়ার শব্দ। আমি ঘুরে তাকাতে তাকাতেই সমস্ত নৌকাটা দুলে উঠল যেন কোন নীলদড়িয়ায় নৌকাটি ঝড়ের কবলে পড়েছে। সবাই লাফিয়ে পানিতে পড়ছে। মামা চিৎকার করে পানিতে লাফ দেওয়ার জন্য বলছে। আমি উঠে দাড়ালাম। নৌকার শেষমাথায় টর্চলাইট মেরে দেখি বৃদ্ধটি লাশের একটি পা ধরে পা‘র মাংস খাচ্ছে। পায়ের হারটি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। বৃদ্ধটির মুখে আলো পড়তেই আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। চোখ থেকে নীলআলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে। মুখে রক্তের দাগের মত এ্যাবরো-থেবরো মাংস লেপটানো। বিবৎস দৃশ্য। খুব বমি আসতে লাগল। আমি জোড়করে চেষ্টা করছি সবকিছু আটকিয়ে রাখতে। তীরের দিকে তাকালাম। বুঝতে পারছি এতটুকু সাতার দিয়ে পার হওয়া আমার পক্ষে সম্ভবনা। সবাইকে দেখলাম চিৎকার করছে আর দৌড়াচ্ছে। আমি বৃদ্ধের দিকে টর্চলাইট মেরে দাড়িয়ে রইলাম। বৃদ্ধটি আমার দিকে তাকালো…… উঠে দাড়ালো….. ঝপাৎ।

যতক্ষণ পারলাম সাতার কাটতেই থাকলাম। শেষে মাটি হাটুতে বাজল। বুঝতে পারলাম তীরে এসে পৌছেছি। দৌড় লাগালাম। চিৎকার অনুসরণ করে কাশবনের ভিতর দিয়ে দৌড়াতে লাগলাম। হাজার-হাজার মানুষের চিৎকার। চারদিকে মশাল আর মশাল। কেউ কেউ ডাকাত ডাকাত করেও চিল্লাচ্ছে। কাশবনের ঐ পাশেই একটা বাড়ী আছে সেখানে সবাই পরে রইলো। আমিও গিয়ে ঐ খানে শুয়ে পড়লাম। চারদিকে মানুষ ঘিরে ধরেছে। কেউ কেউ আমার কাছে ঘটনা জানতে চাইলো….।
 
আমার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছিলনা। এর মাঝে একজন সবাইকে ধমক দিয়ে সরিয়ে দিল। সবার মাথায় পানি ঢালার ব্যাবস্থা করতে বলল। মামার হুশ হওয়ার পর আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল- ভাইগ্না বাইচ্যা আছ? আপা আমারে মাইরাই ফালতো। একে একে সবাই হুশ হলো। আমি সব ঘটনা খুলে বললাম। এর মাঝে দেখি শরীফের আব্বাও লোক নিয়ে হাজির। কেউ কেউ নদীর পাড়ে যাওয়ার সাহস দেখালো। শেষে আমি সবাইকে নিয়া নদীর পাড়ে গেলাম। নৌকা নাই। আমরা স্রোতের অনুকুলে হেটে যাচ্ছি। সবাই চিৎকার করে উঠল এই যে নৌকা। দেখলাম শুধু কংকালটা আছে। এর মাঝে একজন বলল দেখিতো মাটিতে রাক্ষসটার পায়ের দাগ আছে কিনা? আমরা নদীর পাড়ে কোন পায়ের দাগও পাইনি।
শেষে ঐ কংকালটিই মাটি দেওয়া হলো।








মামুন দা [Ghost Stories -928]





রাত দুইটা বাজে। এবার উঠতে হবে। টাইড খেলা অনেক হয়েছে। আর ভাল লাগছে না। যদিও তাসের এই পর্ব সারারাতই চলবে। মামুন বিদায় নিল। বন্ধুরা নাছড় বান্দা। কেউ ছাড়তে চাই না। চাদঁ রাত বলে কথা। সারারাত ক্লাবে হই হুল্লর। আজ আবার একটা ছ...াগল চুরি করা হয়েছে। রান্না ভাল হয়নি। কেমন একটা বমি বমি লাগছে। মামুন ঢাকায় থাকে। ঈদের সময় শুধু বাড়ি আসা। চাদঁ রাতে পাড়ার এই ক্লাবটির চেহেরায় বদলে যায়। প্রায় সব বন্ধু ই জড়ো হয়। এবার শুধু নয়ন নেই। ডিভি পেয়ে আমেরিকা চলে গেছে। নয়নের উদ্দেশ্যে শোকগাথাঁ লেখা হয়েছে। কাশেম লিখেছে। কবি হিসাবে এই মফস্সল শহরে তার আবার খানিক নাম ডাক আছে। ভোর চারটায় আরেকবার গলা ভেজানোর ব্যবস্থা আছে। মামুনের মন ক’দিন ধরে এমনিতেই খারাপ। বিয়ের পর রুমা’কে ছাড়া প্রথম ঈদ করছে। মামুন শত প্রলোভন উপেক্ষা করে বেড়িয়ে পড়ল। শরিরটা আসলেই খারাপ করেছে। মাথার ভিতর একটা ভোতাঁ যন্ত্রনা। ক্লাব থেকে বেরিয়ে বাড়ির সর্টকার্ট পথ ধরল। ধানক্ষেতের আল দিয়ে। রাত ভালই হয়েছে। ঘুটঘুটে অন্ধকার। মোবাইলে চার্জ নেই। অনভস্ত্যতায় পথ চলতে একটু কষ্টই হচ্ছে। হঠ্যাৎ করে বমি চলে এসেছে। আর আটকাতে পারল না। ধান ক্ষেতের পাশেই বসে পড়ল। মনে হচ্ছে আর দাড়াতে পারবে না। আশেপাশে কাউকে খোজাঁর চেষ্টা করল। কেউ কি আছে। অন্ধকারে ভাল করে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। এখনো অনেক পথ। একটু পানি পেলে ভাল লাগত। কুলি করা দরকার। ঠিক এসময় নিমাই দা এসে উপস্থিত
: কিরে, মামুন না। কি হয়েছে তোর।
: নিমাই দা। খুব খারাপ লাগছে
: দাড়া। আমাকে ধরে দাড়া।
: মনে হয় পারব না। একটু পানি খাওয়াতে পারবে।
: পানি নেই। ধর স্প্রাইট খা।
: দেও।
মামুন স্প্রাইট দিয়েই কুলকুচি করল। আরেকবার বমি হয়ে গেল।
: নিমাই দা, আমাকে একটু বাসায় দিয়ে আসবা।
: শোন আমার বাসাতো কাছেই। তুই চল। আগে কিছুক্ষন রেস্ট নিবি।


মামুন বিনা বাক্য ব্যয়ে মেনে নিল। নিমাই দা স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলের অংকের মাষ্টার। মামুনদের দু-ব্যাচ সিনিয়ার। অসম্ভব ভাল। কিছু মানুষ থাকে উপকার করার জন্য জন্মায় সেই টাইপের। মামুন নিমাই এর হাত ধরে উঠে দাড়াল। দু-জনেই নিরবে এগিয়ে চলছে। গুনগুন করে নিমাই দা কি যেন একটা গাইছে। মামুনের তখন শোনার মত অবস্থা নেই। হঠ্যাৎ নিমাই দা মামুনের হাত শক্ত করে ধরল।
: কি হয়েছে?
: সামনে দেখ।
সামনে আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে কাফনের কাপড় পড়ে পাচঁটা লাশ পড়ে আছে ধান ক্ষেতের উপর। হালকা নড়ছেও। ভয়ের একটা শীতল স্রোত বয়ে গেল কেন জানি।
: চল
: কি ওগুলো
: চল না। যেয়ে দেখি।
: যাবা
: দুর গাধা। তুইতো ভয়েই আধমরা হয়ে গেলি।
: আমিতো এমনিতেই আধঁমরা। কিছু দেখলে কিন্তু ফুল মরা হয়ে যাব।
: বকবক করিস না। চল
কিছু দুর যেয়েই ঘটনা পরিস্কার হল। ধান ক্ষেতের উপর কে যেন কাপড় শোকাতে দিয়েছে। সাদা কাপড়। সেগুলোই দূর থেকে লাশের মত লাগছে। দু-দজনার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি। নিমাই দা’র গানটা এবার বোঝা যাচ্ছে। নজরুল সংগীত।
শাওন রাতে যদি স্মরণে আসে মোরে
বাহিরে ঝড় বহে নয়নে বারি ঝরে
শাওন রাতে যদি….

ভুলিও স্মৃতি মম নিশীথ স্বপন সম
আঁচলের গাঁথা মালা ফেলিও পথ পরে
বাহিরে ঝড় বহে নয়নে বারি ঝরে
শাওন রাতে যদি….


মামুন শুয়ে আছে নিমাই দা’র বাড়িতে। বাসা পর্যন্ত যেতে পারে নি। নিমাই দা’র বাড়ির সামনে আরেকবার বমি। কিছুতেই নিমাই দা ছাড়ল না। একটা এভোমিন পাওয়া গেছে। বৌদিও খুব ভাল। সাক্ষাত প্রতিমা’র মত চেহারা। মামুনের বিছানা গুছিয়ে দিল। বেশি কথা না বাড়িয়ে মামুন চুপচাপ শুয়ে পড়ল। ছোট্ট একটা বাড়ী নিমাই দা দের। তিন রুমের। উপরে টিন। নিমাই দা বৌদি’ পাশের রুমে। বাসায় বোধহয় আর কেউ নেই। ঘুটঘুটে অন্ধকার। নিমাই দা’র একটা ছোট বোন ছিল। রাজশ্রী। মামুনের সাথে একটা অনৈতিক সম্পর্কও কিভাবে যেন গড়ে উঠেছিল যৌবনের প্রথম বছরে। বেশি দূর আর এগোয়নি। মামুন ঢাকা বিশ্ব-বিদ্যালয়ে চলে এল। পরের বার গিয়ে শোনে বিয়ে হয়ে গেছে। সে অনেক দিন হল। শুনেছি এখন তিন ছেলে মেয়ের মা।মামুন রাজশ্রীর চেহারাটা মনে করা চেষ্টা করছে। কিছুতেই মনে পড়ছে না। আর দু-চোখ খোলা রাখা যাচ্ছে না। কখন ঘুমিয়েছে খেয়াল নেই। হঠ্যাৎ ঘুম ভেঙে গেছে। অদ্ভুত একটা শব্দে। মনে হচ্ছে এ ঘরে কোন মহিলা নামাজ পড়ছে। অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। তবে নামাজ পড়ার সময় যেমন আওয়াজ হয় সেরকম আওয়াজ। মামুন চোখ বন্ধ করে ফেলল। মনে মনে বলার চেষ্টা করল সে ভুল শুনেছে। গাছের শব্দ হতে পারে। কিছুক্ষন পর আর আওয়াজ পাওয়া গেল না। চোখ খুলে আরেক বিষ্ময়। নিমাই দা দের ঘরে টাঙিয়ে রাখা কৃষ্ঞ এর ছবিটা যেন মামুনের দিকে তাকিয়ে হাসছে। অদ্ভুত ভঙ্গিতে। ঘুটঘুটে অন্ধকারেও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। মামুন চোখ বন্ধ করে ব্যাখ্যা দ্বার করাবার চেষ্টা করল। দূরের কোন আলো জানলা দিয়ে ছবির উপর পড়ে এমন হতে পারে। ঠিক তাই। নিজের আহাম্মকিতে নিজেই হাসার পালা। ঘুমানো’র চেষ্টা করছে কিন্তু ঘুম আসছে না। একটা’র পর ভুতের গল্প মনে পড়ছে। মামুন রুমা’র কথা মনে করার চেষ্টা করল।


অনেকক্ষন ধরে রোদে দাঁড়িয়ে আছে। ঘামে একাকার। একটা সিগারেট খেতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু লাইন ছেড়ে যাওয়া যাবে না। বিডিআর দের একদল রিলিফ দিচ্ছে লা্ইন এদিক ওদিক হলেই লাঠির বাড়ি। মামুন রিলিফ নেওয়ার জন্য লাইনে দাড়ায়নি। পুরো ব্যবস্থাটা সরেজমিনে প্রতক্ষ করছে নিছক কৌতুহলে। অসহায় মানুষদের কষ্ট উপলদ্ধির ব্যর্থ চেষ্টা। ভদ্রলোকের মুখোস পড়ে আতলামী আর কি? মামুনের সঙ্গে কামাল ভাই। একের পর এক ছবি তুলে যাচ্ছেন ক’দিন ধরে। একটা পত্রিকায় কাজ করেন। তার সঙ্গেই আসা। পরীক্ষা দিয়ে কি করবে ভেবে পাচ্ছিল না। এ সময় দেশ জুড়ে ঝড়ের ভয়াল থাবা। ঘূর্ণিঝড়ে বিধস্ত এলাকা পরির্দশনের কৌতুহল আর কামাল ভাই যাচ্ছে তার সঙ্গি হওয়াতে কৈশর থেকেই রোমান্চ অনুভব করা। কিন্তু রোদের দাপটে আর টিকতে পারল না। সরে আসতে হল। ভরপেট খেয়েও দাড়াতে পারল না আর না খাওয়া লোকগুলো কিভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে আছে ভাবতেই অবাক হতে হয়।গত কয়েকদিন দেখেছে মানুষের নিরন্তর সংগ্রাম। বেচেঁ থাকা কত কষ্টকর তবু কি আশায় যেন বেঁচে থাকে মানুষ। স্বপ্ন প্রতারিত তবু স্বপ্ন দেখে বারবার। পথের এক কোণে একটি চায়ের দোকান দিয়ে বসেছে এক বুড়ো চাচা। কাষ্টমার নেই বললেই চলে। জনাকয়েক সাংবাদিক আর রিলিফ দিতে আসা মামুনে’র বয়সী কিছু ছেলে মেয়ে আছে। চা খাব। পিরিচে না ঢেলে চা খেতে পারে না সে। একটা মেয়ে খুব কৌতুহল নিয়ে মামুনের ফু দিয়ে চা খাওয়া দেখছে। মামুন তাকে কিছুটা অবাক করে দেওয়ার জন্য জিজ্ঞাসা করল
: ভালো আছেন?
অবাক হয়ে মামুনের দিকে তাকিয়ে সীমাহিন চেষ্টা স্মরন করার। মামুনই আবার কথা বলে উঠল -
: আপনি ঢাকা থেকে আসছেন।
: জি। কিন্তু আপনাকে তো…
: চিনতে পারলেন না। তাই তো। আমিও পারিনি।
চা এর বিল মিটিয়ে সোজা হাটা ধরে মামুন। পিছনের দিকে একবারও ফিরে না তাকিয়ে। জানে অবাক বিস্ময়ের এক জোড়া চোখ নিরীক্ষন করছে। সেই প্রথম রুমা’র সাথে দেখা।


মেঘের দিকে তাকিয়ে ছবি কল্পনা করা মামুনের ছোট বেলার অভ্যাস। পাবলিক লাইব্রেরীর চত্তরে বসে সেই চেষ্টায় করছিল। এমন সময় প্রশ্ন -

: কেমন আছেন।

অবাক হবার পালা। সেই মেয়েটি। যেন মামুনকে জব্দ করার জন্যই প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে।

: আপনি ঢাকাতেই থাকেন।

আগের সেই কথোপকথনের প্রতিশোধ নেবার চেষ্টা বোধহয়।

: আপনি

: কি চিনতে পারেন নি। আমি কিন্তু ঠিকই চিনেছি।

: আমিও চিনেছি। কিন্তু একটু অবাক হয়েছি আপনাকে দেখে।

: আপনি তো অবাক করে দিতে ভালবাসেন। তা নিজে অবাক হয়ে কেমন লাগছে।

মামুন হাসল। সে হাসিই যেন মামুন আর রুমা’র সম্পর্কটাকে আরও অনেক দূর নিয়ে চলল। পরিচয় থেকে আস্তে আস্তে ভাব ভালবাসায় গড়াল ব্যাপারটা। মনের রঙিন ঘুরি উড়িয়ে দিল এই যান্ত্রিক নগড়ে। সব কোলাহোল ছাড়িয়ে নির্জন নিরিবিলিতে প্রেম করতে করতে একদিন রুমা’র সাথে বিয়ে হয়ে গেল।আসলে বাধা হয়ে দাড়াতে পারে এমন কিছুই ছিল না দুজনের ভিতর।সে পারিবারিক হোক আর সামাজীক। তাই খুব সহজেই ওরা একে অপরের কাছে আসতে পেরেছিল। বাসর রাতে হৈমন্তীতে পড়া সেই কথাটা নাড়া দিয়ে গেল – “পাইলাম”।


রুমা আর মামুনের সম্পর্কটা বন্ধুর মত। একে বারে তুই সর্ম্পক। ভালোবাসার কমতি পরিলক্ষিত হয়নি কখনো কোথাও। ঢাকা শহরে একটা ছোট্ট ফ্লাটে থা্কে। একটা কাজের মেয়ে দেশের বাড়ী থেকেই এসেছে। ভালই চলছিল। খুনসুটি ঝগড়া ঝাটি যে একেবারে হত না তা না। তবে সাময়িক। সকাল ৭টার মধ্যে মামুনকে বেড়িয়ে পড়তে হয়। সারাদিন গার্মেন্টেস এ থাকে। ঢাকা শহরের জ্যাম ঠেলতে ঠেলতে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত ৯ টা। অফিসের আশেপাশে বাসা নিয়ে লাভ নেই। কারন অফিসে তার কোন কাজ নেই। যখন যে গার্মেন্টস এ কাজ চলে সেখানেই ডিউটি। রুমা’র একাক্বিত্ব ঘোচানের চেষ্টার কমতি নেই মামুনে’র। টি.ভি তো আছেই সাথে একটা নেট এর লাইন সহ একটা পি.সি কিনে দিয়েছে। শিখিয়ে দিয়েছে হাতে ধরে ব্যবহার। কিন্তু এই নেট লাইন ই একদিন দুই জনের নিবিড় সর্ম্পকে হঠ্যাৎ কেন যে ফাটল ধরাল তা বুঝে উঠতে পারল না। আসলে দোষটা কার কোথায় কতটুকু সে প্রশ্নে কোনদিনই একমত হতে পারেনি। প্রথম প্রথম নেট এ রুমা কি করে না করে খুব আগ্রহ ভরে মামুনকে দেখাতো। কিন্তু তারপর কোথায় যেন একটা গোপনীয়তা। লুকোচুরি খেলা। কিছু বিশেষ লোকের সাথে আলাপ চারিতায় বারবার মানা করা সত্বেও মামুন আবিষ্কার করে কি নেশায় আড্ডায় বুদ হয়ে থাকে সে। ভয়ঙ্কার কিছু হলেও হতে পারে ছা’পোষা মানুষ মামুন প্রশয় দিতে পারে না।নিজের মনটা’র ভিতর অশুভ চিন্তা বয়ে যায়। নারীর অধিকারের প্রশ্নে বড় বড় বুলি আউরানো এই মামুনই নিজেকে আবিষ্কার করে পৃথিবীর রঙ্গমন্চে অভিনেতা হিসাবে। এক কথা দু কথায় তর্ক। থামতে চাই না। বহু ব্যবহার করা তর্কের মূহৃতে বুকের ভিতর জড়িয়ে ধরে ঠোটের আলতো স্পর্শ মেখে দিয়া ঠোটে ওষুধটাও ইদানিং আর কাজ করে না। ঝগড়া চলতেই থাকে ভোর রাত অবধি -

: এটা কি হলো?

: ভালোবাসা।

: এ সব ন্যাকামী আমার সাথে আর করবা না।

: আচ্ছা করব না একটু হাস।

: ধ্যাৎ, ছাড় না, ছাই?

: ছাড়ব না।কি করবি?

: উফ। অসহ্য।

রুমা রেগে উঠে চলে যায়। অনেকক্ষন কোন খোজঁ নেই। মামুন পিছু পিছু যেয়ে দেখি সেই নেট। মেজাজ তিরিক্ষি হয়। সব ভালবাসাকে অপমান করে গায়ে হাত তুলে ফেলে। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে রুমা। দুচোখ বেয়ে নেমে আসতে থাকে জল। লজ্জায় সে জল মোছার ব্যর্থ চেষ্টা করতে করতে সামনে থেকে দ্রুত উঠে গিয়ে বেডরুমে ভিতর থেকে দরজায় সিটকিনি দেই। কিংকতর্ব্যবিমুঢ় হয়ে বসে থাকে মামুন।



পরদিন অফিস থেকে ফিরে রুমা’কে আর বাসায় দেখতে পাই না। ফুলির হাতে ছোট্ট একটা চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে গেছে -
: “চললাম। সন্দেহ করে ভালবাসাকে অপমান করেছ। আমার একাকিত্বকে ঘোচাতে না পেরে সহজাত পুরুষালী স্বভাব দেখিয়েছ। তোমার কাছ থেকে আমার আশা অনেক বেশী ছিল। আর দশ জনের সাথে তোমার পার্থক্য ঘুচিয়ে দিলে।ভাল থেকো।”

তারপর প্রায়ই একমাস হত চলল। রুমা বাপের বাড়ী থেকে আসে নি। মামুন একাই ঈদ করতে চলে এসেছে গ্রামের বাড়ী। এই মধ্যরাতে ভয় তাড়াবার জন্য এসব যখন ভাবছে মামুন ঠিক তখনই ভূমিকম্প হল। প্রথম দফা’য় তাই মনে হয়েছে। কিন্তু চোখ খোলার আগেই মনে হল পুরো খাট ধরে কেউ যেন ঝাকি দিচ্ছে। কিছু দেখা যাচ্ছে না। ভীষন ভয় লাগছে। কোন ব্যাখা দাড় করাতে পারছে না। কলেমা মনে করার চেষ্টা করতে লাগল প্রান পনে। এতে ভয় দূর হয়। কিছুতেই মনে পড়ছে না। এ সময় গগন বিদারি একটা চিৎকার ভেসে এল। কোন পিচাশের পক্ষেই এরকম আওয়াজ করা সম্ভব। মামুন লাফ মেরে উঠল। নিমাই দা নিমাই দা বলে প্রান পনে চিল্লাতে লাগল। কোন সাড়া শব্দ নেই। দরজা খুলে বাইরে যাবার চেষ্টা করল। কিন্তু দরজা খুলতেই যে দৃশ্য দেখল তাতে আত্বারাম খাচাঁ হবার যোগাড়। বৌদি দাড়িয়ে আছে। সিনেমায় দেখা রক্তচোষা ড্রাকুলাদের মত লাগছে। দাতে রক্ত লেগে আছে। সারা শরিরে রক্ত। কুৎসিত শব্দ করছে। কাচাঁ মাঙসের গন্ধ এসে নাকে লাগল। সামনে নিমাই দা’র লাশ পড়ে আছে। সেখান থেকে কলিজা বের করে খাচ্ছিল বোধহয়। ওফ এত বিভৎস! থুথু না বমি যেন করল বৌদি। গলা মাংস আর কলিজা বের হয়ে আসছে মুখ দিয়ে। মামুন স্থির। মামুনের দিকে এগিয়ে আসছে নর খাদকটা। নখ গুলো বেশ বড় বড়। মামুন ধাক্কা দিয়ে সরাতে চাইল। কিন্তু একেবারে নিখুত কাজ। সোজা মামুনের গলায় দাতঁ বসে গেছে। অজগরের খড়গোশ ধরার মত মামুনকে জাপটে ধরে রক্ত চুষতে লাগল। মামুনের দেহ নিথর। শেষবারের মত রুমা’র মুখটা মনে পড়ছে।

পাদটীকা.

মামুনের লাশ পাওয়া গেল পরদিন সকালে ঝিলের ধারে। নিমাই সরকার প্রথম দেখে। পরে সবাইকে খবর দেয়। পুলিশি তদন্ত চলছে। কি হয়েছিল ঠিক কেউ বলতে পারে না। তবে মামুনের গলায় দুটো ফুটো ছিল এটা নিশ্চিত।



জ্বিন কন্যা আফরোজা [Ghost Stories - 7002]




কে কে ওখানে?

আমি।



আমি কে ?



বেশ কিছুক্ষন চুপচাপ । কোন উত্তর নেই । তারপর একটা র্দীঘ শ্বাস ফেলার শব্দ । আমি আবার ও জিজ্ঞেস করলাম । আমি কে ? কথা বলছেন না কেন ?



আমি !



আমি কে ? আমি আবারও ভয়ে ভয়ে প্রশ্ন করলাম ।



আমি কেউ না।



তবে আমার ঘরে কি করছেন ? কি ভাবে এসেছেন ? দরজা খুললো কে ? এক সাথে এতোগুলো প্রশ্ন করে আমি প্রায় হাপিয়ে উঠলাম। এমনিতেই আমার হার্টের অবস্থা ভাল নয়। এখন তো মনে হচ্ছে ভয়ে হার্ট ফেল করবে। ঘুমিয়ে ছিলাম ; হঠাৎ খুট খুট শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল। প্রথমে ভেবে ছিলাম ইদুর টিদুর হবে । কাজের মেয়েটার উপড়ে মেজাজ খারাপ হলো ,কতো দিন বলেছি রাতে শোয়ার আগে তেলাপোকা ,ইদুর এর ঔষুধ ছিটিয়ে ঘুমাতে । না তার কোন খবর নেই । মনে হয় এনে দেওয়া ঔষুধ গুলোর কথা মেয়েটা ভুলেই গেছে । কাল নিজেই ছিটিয়ে দিতে হবে । রাতে এমনিতেই আমার ঘুম হয়না ।তাও আজ লেট নাইটে শুয়েছি । ভোরে অফিস ধরতে হবে । একবার ঘুম ভাংলে আর ঘুম আসবে না । আমার স্ত্রী তিথি ছেলে মেয়েকে নিয়ে দুদিনের জন্য বাবার বাড়ী গেছে । পুরো বাসায় আমি একা ।



অফিস থেকে ফিরে সামান্য লেখা লেখির চেষ্টা করা আর টিভি দেখা ছাড়া করার তেমন কিছু নেই । আজ ইস্পিলবার্গের একটা ছবি দেখে শুতে এমনিতেই দেরি করে ফেলেছি । মনে হয় আধা ঘন্টাও ঘুমাতে পারিনি এর মধ্যে খুট খুট শব্দ করে যন্ত্রনা শুরু হয়েছে । একবার মনে হলো ইদুর রান্না ঘরে শব্দ করছে । ঘুমের মধ্যেই হুস হুস শব্দ করে ইদুর তারাতে চেষ্টা করলাম ।



হুস , হুস করে আমি ঘুমিয়ে যাচ্ছি আবার শুরু হচ্ছে খুট খুট শব্দ করা । খেয়াল করে দেখলাম আমি হুস হুস করলে কিছু সময়ের জন্য থেমে যাচ্ছে খুট খুট শব্দ । চোখ লেগে আসতেই আবার সেই খুট খুট শব্দ । কখন যে হুস হুস করতে করতে ঘুমিয়ে পরে ছিলাম খেয়াল নেই । হঠাৎ অনুভব করলাম, কে যেন আমার বা পায়ের বুড়ো আঙুল ধরে আলতো করে টানছে । চোখ থেকে ঘুম পুরোপুরে সড়ে গেছে । আমি চোখ হালকা করে তাকালাম । পুরো ঘর অন্ধকার । বাতি জ্বালিয়ে ঘুমাতে ভুলে গেছি ? এখন দেখছি বাতি নিবানো । যতো দূর মনে মনে আছে -টিভি বন্ধ করে শন্করের একটা বই পড়ছিলাম । ঘরের বাতি জ্বলছিল । তা হলে বাতিটা নেভালো কে ?



পায়ের আঙুলে আবার কেউ র্স্পশ করলো । আমি ভয় পেতে শুরু করছি কেননা চোখ খুলে কাউকে দেখতে পাচ্ছি না । ইদুরের চিন্তাটা বাদ দিয়ে দিলাম । আমি মশারি টানিয়ে শুয়েছি । শোয়ার আগে বেশ ভাল মতো মশারী গুজে তারপর শুয়েছি । ভেতরে ইদুর থাকলে আগেই দেখতে পেতেম । হঠাৎ ভুতের কথা মনে হলো ? ভুত নয় তো ? ভুতের কথা মনে হতে ভয় বেড়ে গেলো । ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে । নড়তে পারছি না । মনে হলো নড়াচড়া করলে কেউ আমাকে মেরে ফেলবে । আবার ভয় পাচ্ছি দেখে নিজের উপড়ই রাগ লাগছে । কেউ শুনলে হাসবে । ছেলেটার কথা মনে হলো । ভাবলাম ও ,ও মনে হয় আমার চাইতে বেশী সাহসী ।



বা পাটা আমি একটু নাড়ালাম । এমন ভাবে নাড়ালাম যেনো ঘুমের মধ্যে নাড়াচ্ছি । সঙ্গে সঙ্গে স্পর্শটা বন্ধ হয়ে গেলো । মনে হলো কেউ পায়ের উপড় থেকে হাতটা সড়িয়ে নিল । এবার ভাবলাম , ইদুর হবার প্রশ্নই আসে না । আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে পরে আছি । ডাইনিং রুম থেকে ভেসে আসা ঘড়ির টিকটিক শব্দ শুনতে পাচ্ছি । এ ছাড়া অন্য কোন শব্দ নেই । চারিদিকে শুনশান নীরবতা , একটু আগে হয়ও খুট খুট শব্দটাও এখন আর হচ্ছে না ।






হঠাৎ মনে হলো কেউ আমার শরীরে থাকা চাদরটা ধরে টানছে । আমি মনে মনে দোয়া দুরুদ পড়তে লাগলাম । নিজের ঘরে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির সন্মুক্ষিন হবো কল্পনাও ছিল না । ভয়ে হাত পা একেবারে জমে যাচ্ছে । শরীর থেকে চাদরটা একটু একটু করে নীচের দিকে নেমে যাচ্ছে । যে করছে কাজটা , বুঝা যাচ্ছে সে খুব ধীরে সু্স্থেই কাজটা করছে ।



কি করবো বুঝতে পারছিনা । বিপদের সময় মাথা ঠান্ডা রাখাই হচ্ছে আসল ব্যাপার ।






শুধু মাত্র বিপদের সময় মাথা ঠান্ডা রাখার কারনে ৭০% লোক মৃত্যুর হাত থেকে বেচেঁ যায় । পরিসংখ্যানটা কোথায় যেন পড়েছিলাম । আমি মাথা ঠান্ডা রাখতে চেষ্টা করলাম ।



একবার ভাবলাম জোরে চিৎকার করে উঠি । তাতে চাদর টেনে যে আমাকে ভয় দেখাতে যাচ্ছে সে উল্টো ভয় পেয়ে যাবে ।



তার পরই মনে হলো চোর নয় তো ? বেশ কিছু দিন যাবত মহল্লায় চোরের আনাগোনা বেড়ে গেছে । সেদিও নাকি জ্বানালা দিয়ে বাড়ী ওয়ালির ব্যাগ থেকে মোবাইল ,টাকা নিয়ে গেছে চোর । কিন্তু আমার বিছানাটা তো জানালা থেকে বহু দূরে । জানালাও বন্ধ । তবে কি চোর আগেই ঘরের ভেতরে ডুকে ছিল ? এখন আফসোস হচ্ছে কেন শোয়ার পূর্বে চেক করে শুলাম না ।



অনেকক্ষন অন্ধকারে থাকার ফলে অন্ধকারটা চোখে সয়ে এসেছে । পায়ের দিকে কিছু একটা নড়ে উঠলো । আবচ্ছা আলোয় একটা অবয়ব দেখা যাচ্ছে । আমি চোখ কুচকে ভাল করে দেখতে চেষ্টা করলাম । মনে হলে কেউ একজন মেঝেতে হাটু ঘেরে খাঁটের উপর কুনি রেখে বসে আছে । ভয়ে আমার অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো । শুয়ে থেকেও স্পষ্ট নারী অবয়বটা দেখতে পাচ্ছি । ঘারের উপরে উড়তে থাকা চুল পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছি । আমার সমস্ত শরীর ঘেমে উঠেছে । কখন যে পুরোপুরি চোখ খুলে তাকিয়ে আছি বলতে পারবো না ।






হঠাতই অবয়বটা আমার পায়ের উপড় থেকে হাতটা সড়িয়ে নিয়ে আমার মুখের দিকে তাকালো । আমার মনে হলো , সে মনে হয় বুঝতে পেরেছে আমি তাকিয়ে আছি । আমি চোখ বন্ধ করার সাহস পেলাম না । দুজন চোখাচোখি তাকিয়ে থাকলাম । আমি মুহুত কাল ভুলে গেছি । চুপ করে পরে আছি । হঠাৎ ঘরের ভেতর প্রচন্ড বেগে বাতাস বইতে শুরু করলো । মনে হলো সব কিছু উড়িয়ে নিয়ে যাবে । আমি দুহাত দিয়ে খাটের কিনার আকড়ে ধরে থাকলাম । এক সময় বাতাস হঠাৎ ই থেমে গেল ।



অবয়বটা এক সময় উঠে দাঁড়ালো ।আমি কিছু একটা বলতে চাইলাম , কিন্তু পারলাম না । মনে হলো গলার ভেতরের সব রস কেউ নিংরে বেড় করে নিয়েছে । তবুও মাথা ঠান্ডা রেখে নিজেকে বোঝাতে চেষ্টা করলাম । ভয় পেলে চলবে না । ভয় পেলে চলবে না । বাঁচতে হলে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে । এছাড়া অন্য কোন উপায় নেই । শুধু মাত্র মাথা ঠান্ডা রাখার কারণে ৭০% লোক বেঁচে যায় । সঙ্গে সঙ্গে একটা হিন্দি ছবির ডায়ালোগ মনে হলো -জো ডরগায়া ও মর গায়া ।



আমি শরীরের সকল শক্তি এক করতে চেষ্টা করলাম । তখনই আমার মুখ থেকে প্রশ্নটা ছুটে গেলো কে কে ওখানে ? নিজের গলার স্বর নিজেই চিনতে পারলাম না । মনে হলো আমার গলায় অন্য কেউ কথা বলছে । আমি আবার ও একই প্রশ্ন করলাম -কে কে ওখানে ?



এবার মৃর্দু একটা হাসির শব্দ ভেসে এলো ।



আমি আবার বললাম কে ?



-আমি । খুব আস্তে উত্তর এলো । কেউ খেয়াল না করলে শুনতে পেত না ।



-আমি কে ? ভয়ে আমার হাত পা অসার হয়ে আছে ।



-আমি কেউ না ,বলে আবয়বটা হেসে উঠলো । যেন নিক্কন হয়ে কানে বাজছে । আমি মুগ্ধ হলাম । তিথির ভাষায় অতি তারাতারি মুগ্ধ হয় গাধা মানবরা । নিজেকে আমার কাছে গাধা মানব মনে হলো ।



-আমি কিন্তু ভয় পাচ্ছি । দয়া করে বলুন আপনি কে ? নিজেকে কেমন শিশু শিশু মনে হলো ।



এবার কোন উত্তর এলো না । তবে আবয়বটা উঠে গিয় ঘরের মাঝখানে রাখা রকিং চেয়ারটাতে বসে পরলো । মশারির ভেতর থেকেও দেখতে পাচ্ছি চেয়ারটা দুলছে । কেউ একজন হেলান দিয়ে বসে আছে চেয়ারটাতে । আমি স্বপ্ন দেখছি নাতো ? হাত নাড়িয়ে চিমটি কাটার শক্তি বা সাহস কোনটাই পেলাম না । শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছি চেয়ারটার দিকে ।






(২)






পৃথিবীতে কোন কিছুই যেমন স্থায়ি নয় । তেমনি আমার ভয়টাও স্থায়ি হলো না । খুব ধীরে ধীরে ভয়টা কেটে যাচ্ছে । গুন গুন করে একটা শব্দ হচ্ছে । মনে হলো আমার ঘরে থাকা আবয়বটা গান গাচ্ছে । কিন্তু আমার পরিচিত কোন সুরে নয় , অচেনা কোন সুরে । তিথি যেমন ঘরের কাজ করতে করতে আমন মনে সুর ভাজে , তেমনি । আমি সুরটা ধরতে চেষ্টা করে পারলাম না । না । এমন সুর আগে কখন ও শুনিনি । তবে সুরের মাদকতায় ভেসে গেল পুরো ঘর । আমি চোখ বন্ধ করে গান শুনছি । আর ভাবছি কি করা যায় । একবার মনে হলো হাউমাউ করে কেঁদে কেটে যদি মাপ চাই তবে কেমন হয় । নিজেরই পছন্দ হলো না ব্যাপারটা । আমার মাথা কাজ করতে শুরু করছে । চিন্তা করতে পারছি দেখে ভাল লাগল । একবার ভাবলাম হেলুসিনেশন নয় তো ? নিজের মুখ দিয়েই বিরক্তি সূর্চক শব্দ চুকবেড় হয়ে এলো । সঙ্গে সঙ্গে আবয়বটির দোল খাওয়া বন্ধ করে দিয়ে আমার দিকে তাকালো ।



আপনি কে ? দয়া করে বলবেন ?



মনে হলো একটা দীর্ঘস্বাস পরলো ।



এবাবে অর্যাচিত ভাবে কাউকে আমার ঘরে দেখে আমি ভয় পাচ্ছি এবং অসুস্থি বোধ করছি । দয়া করে বলুন আপনি কে ? কি চান ?



-আমাকে ভয় পাবার কিছু নেই । আমি তোমার কোন ক্ষতি করবো না । আপনি ঘুমান । আবাও সেই হাসির শব্দ ।



-কিন্তু এবাবে কেউ ঘরে বসে থাকলে তো আমার ঘুম আসবে না ।



-চলে যেতে বলছেন ?



আপনি কে ? কেনো এসেছেন তা যদি বলতেন । আমি কৌশলে প্রশ্নটা এড়িয়ে গেলাম ।



-আমি আফরোজা । এসেছি তাকাফুল শহর থেকে । আমি মানুষ সম্প্রদায়ের কেউ নই । আমি জ্বিন সম্প্রদায়ের মেয়ে বলে মেয়েটি হেসে উঠলো । জ্বিন ; শুনে আমি কেঁপে উঠলাম । কোথা থেকে হালকা চাপা ফুলেন মিষ্টি ঘ্রাণ ভেসে আসছে , পুরো ঘর মো মো করছে । হাসির শব্দে আমি আবার বিমহিত হলাম ।



আপনার হাসিটা অনেক সুন্দর । আমার মুখ ফসকে বের হয়ে গেল কথাটা । নিজেকে আবারাও কেমন হেবলা মনে হলো । তিথির কথা মনে হলো ও যদি জানে গভীর রাতে ঘরে বসে আমি কোন জ্বিন মেয়ের হাসির প্রশংসা করছি তা হলে ও কি করবে ?



আপনার স্ত্রীর কথা ভাবছেন ?



আমি মাথা নাড়ালাম ।



খুব ভালবাসেন বুঝি ? বলে মেয়েটি হাসতে লাগলো । রকিং চেয়ারটি আবার দুলছে । আমি কিছু বলার আগেই মেয়েটি বললো , এখন কি আপনার ভয় লামছে ?



আমি না, বললাম । আমি মিথ্যা বললাম ।



মানুষরা খুব সহজে মিথ্যা বলতে পারে । বলে মেয়েটি আবার হাসছে । মিথ্যা বলে ধরা খাবার জন্য কেমন লজ্জা লাগছে ।



আমার একবার মনে হলো বাতি জ্বালাবো কি না ?



দয়া করে বাতি জ্বালাবেন না । আমি বাতি সহ্য করতে পারিনা । আর একটু পরে আমি চলে যাবো ।



আমি চমকে উঠলাম এ যে দেখছি আমার থর্ট রিড করতে পারছে ।



আপনি কেন এসেছিলেন ...........আমি প্রশ্নটা শেষ করতে পারলাম না ।



-এমনিতেতো আসিনি । আছে একটা কারণ আছে ।



কি কারন ?আমি কারন যানার জন্য অস্থির হলাম । আমার ইচ্ছে হচ্ছে মেয়েটিকে দেখি ।



-আমাকে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে তাই না ? মেয়েটি হাসতে হাসতে বললো ।



জ্বি । আমি ছোট্র করে উত্তর দিলাম ।



আমাকে না দেখাই ভাল । আমরা দেখতে মানুষের মতো নই । আমরা হচ্ছি আগুনের তৈরি । আর মানুষ হচ্ছে মাটির । আমাদের কোন নিদিষ্ট কোন আকৃতি নেই । আমরা যে কোন আকার ধারন করতে পারি । যে কোন জায়গাতে যেতে পারি । শুধু মাত্র আসমানের নিদিষ্ট্য একটা সীমা পর্যন্ত ।



তা হলে এটা কি আপনার আসল আকৃতি নয় ?



না ।



আপনি কি তা হলে মেয়ে নন ?



আমি মেয়ে জ্বিন । আমাদের মধ্য ছেলে মেয়ে দুটো প্রজাতি আছে । মানুষের মধ্যে আছে তিনটি ।



মানুষের মধ্যে তিনটি ? একটি নারী এবং অন্যটি পুরুষ । আমি আরেকটি খুঁজে পেলাম না । মাথা কাজ করছে না ।



আমি এখন যাবো ।



কেন এসেছিলেন তা তো বললেন না ?



আরেক দিন বলবো ।



তার মানে এখনই চলে যাবেন ?



হ্যা , আযান এর সময় হয়ে এসেছে । আমি যাই ।



মনটা খারাপ হয়ে গেল । এমন সময় মসজিত থেকে ফজরের আযান ভেসে এলো । মেয়েটি হঠাৎই হাওয়ায় মিলিয়ে গেল ।



আমি তরিঘড়ি করে উঠে বাতি জ্বালালাম । না ! কেউ নেই । চেয়ারটা দুলছে । আমার মাথাটা কেমন করে উঠলো । অজানা কোন ভয়ে শরীর ছমছম করছে । কোন মতে বিছানায় বসে পরলাম ।






পরিশেষ : যখন জ্ঞান ফিরলো তখন আমি হাসপাতালে । সবাই মনে করলো আমি হঠাতই মাথা ঘুরে পরে গিয়েছিলাম । আমি ও কাউকে কিছু বললাম না । সব নিজের ভেতরে চেপে রাখলাম । বললে সবাই হয়তো হাসবে । তবে আশ্চযের বিষয় হলো এটা যে -মেডিকেল বোর্ড তন্ন ,তন্ন করে খুঁজেও আমার হার্টে কোন অসুখ খুঁজে পেলো না । যেনো রাতারাতি সব উবে গেছে । ডাক্টারা সবাই বললো মিরাকল ! মিরাকল ! কিন্তু আমি মনে মনে আফরোজাকে ধন্যবাদ দিলাম । সকল মিরাকলের পেছনেই কারো না কারো হাত থাকে । এখন আমার যখনই গভীর রাতে ঘুম ভাঙে তখনই আমি নিজের অজান্তে আফরোজা নামক জ্বিন কন্যাকে খুঁজি ।।



আঁধার বিলাস [ Ghost Stories - 784]




আঁধার বিলাস=- (পর্ব- ৩) 
লেখক:ইউনুস খান
 
লোকটা কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করেবললো......"এ খন ১২টা বাজে....তোমরা প্রস্তুত?"
 
রাহাতের ঘাঁড়ের রোমগুলো খাড়া হয়ে গেল। লোকটা কিসের প্রস্তুতির কথা বললো?
 
সে নাকে কিসের যেন গন্ধ পেল। খুব বাজে গন্ধ। গন্ধটাথেকে
 থেকে আসছে। রাহাত বার বার জামিলের দৃষ্টি আকর্ষন করতে লাগলো। কিন্তু সে অবাকহয়ে দেখলো জামিল খালেকুজ্জামানের দিকেই তাকিয়ে আছে। 
খালেকুজ্জামান আবার বলতে লাগলো........"আ মি অজ্ঞান অবস্থায় তিনদিন ছিলাম। যেদিন জ্ঞান ফিরল সেদিন নিজেকে আবিষ্কার করলাম জনতার মাঝে, শয়ে শয়ে মানুষ আমার চারপাশে দাঁড়িয়ে আমার দিকে ঝুঁকে আছে। সবাই অর্ধ উলঙ্গ। কালো কালো বিদঘুটে চেহারার মানুষ। । আমাকে চোখমেলতে দেখে লাঠি হাতে একজন মানুষ আমার দিকে এগিয়ে আসল।সে ছিলো ঐ গ্রামের নেতা। সেআমার বুকে লাঠি ঠেকিয়ে বললো,"আইডা কোথায়?" আমি কোনকথা বলতে পারলামনা...শুধু ইশারা দিয়ে বললাম যে আমি কিছুই জানিনা আমার কি হয়েছে। লোকটাআরেকটা লোককে ইশারা দিয়ে কি যেন বললো.......খেয়া ল করে দেখলাম অনেক মানুষ মিলে এক জায়গায় কাঠ জড়ো করছে....তার মাঝে দুটো খুঁটি আড়াআড়ি করে ক্রসকরে লাগানো......জেস াস ক্রাইস্টের ক্রসের মত। মুহুর্তের মধ্যে আমার মনে পড়ে গেল যে এরা আমাকে পোড়ানোর ব্যবস্থা করছে। আমার পাদুটো টলে গেল। কোনমতেবসে মনে মনে সৃষ্টিকর্তাকে ডাকতে লাগলাম....হঠাৎ খেয়াল করলাম সৃষ্টিকর্তার পরিবর্তে আমিডাকছি "আইডা, আইডা, আইডা".........ল োকগুলা আগুনজ্বালালো... .তারমাঝে কিছু লাল রং ছিটিয়ে দিল....তারপর আমার মাথায় একরকম হলদে দুর্গন্ধময় তরল ঢেলে দিল....আমাকে চাবুক দিয়েপেটাতে লাগলো....তিনদিন নাখাওয়া মানুষকে এভাবে পেটালে সে বেঁচে থাকার কথানা। কিন্তু আমি বেঁচে গেলাম। আর যে বাঁচালো সে হলো ডেভিড......."
 
জামিল হাঁ করে শুনতে থাকলো.....তার চোখ দুটো যেন কোটর ছেড়ে বের হয়ে আসছে। সেমূর্তির মত বললো...."কীভাবে ?"
 
রাহাত একটা কুকুরের কান্নার শব্দ শুনতে পাচ্ছে। কুকুরের কান্না সে আগেও বহুবার শুনেছে কিন্তু আজকে সে এই শব্দটাকে ভয় পাচ্ছে। সে মনে মনে নিজেকে বলছে...."রাহাত তুমি ভয় পেওনা। সিচুয়েশনের কারনে তুমি ভীত।"
 
লোকটা চট করে রাহাতের দিকে তাকিয়ে হাসলো তারপর বলতে লাগলো.."আমাকে যখন সবাই মারছে তখন এক লোক হঠাৎ দৌড়েএসে আমার নিশ্চল দেহের উপর শুয়ে পড়লো।এই আকস্মিক ঘটনায় গ্রামবাসী কিছুটার জন্য চমকে গেল। তারালোকটাকে দাঁড় করালো.....আমি আধচোখ মেলে দেখলাম.....ডেভি ড।"
 
সেদিনের জন্য আমরা বেঁচে গেলাম....ঐদিন আর আমাদেরকে তারা পোড়ালোনা। গ্রামবাসী একটা মাচা বানালো.....তার উপরে আমাদের দুজনকে বেঁধে রাখলো..মাচার নিচে তিনটা বিশাল বিশাল নেকড়ে ছুটোছুটি করছে.....পিঠে পিঠ ঠেকিয়ে দুজন পড়ে রইলাম। আমিবারবার এলিয়েপড়ছিলাম... .ডেভিড হঠাৎ ফিসফিসিয়ে আমাকে বললো....কালকেই সব শেষ হয়ে যাবে। আমি বললাম...."আইডাকোথায়?" ডেভিড কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো..."সে মিলিয়ে গেছে...তার অনন্য ক্ষমতা দিয়ে সে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে যখনসে জানতে পেরেছে গ্রামবাসী তার খোঁজ পেয়ে গেছে।"
 
"সে কোথায় মিলিয়ে গেছে?"
 
"তোমার মাঝে"
 
আমার হঠাৎ মনে পড়লো আইডার হাতে হাত রাখার পর সবকিছু ওলটপালট হয়ে গিয়েছিলো। আমি দম নিয়ে বললাম..."আইডা আমার মাঝে। কিন্তু আমি টের পাচ্ছিনা কেন?"
 
"জানের বদলা জান।"
 
"মানে?"
 
"আইডা তখনই ক্ষমতা দেখাতে পারবে যদি তার নামে কাউকে বলি দেওয়া হয়।"
 
"মানে?"
 
"তুমি কি ক্ষুধা অনুভব করছ?"
 
আমি অবাক হয়ে আবিষ্কার করলামআমার শরীরে ব্যথা কিন্তু কোনক্ষুধা নেই। ডেভিড হেসে বললো....."এটাই আইডার অস্তিত্বের প্রমান। আমি আইডার জন্য আমার জীবন উৎসর্গকরব। তুমি শুধু আমার মৃত্যুরপর রক্তটুকু পান করবে তাহলেইআইডা ক্ষমতা ফিরে পাবে।"
 
"আমি কিছু বুঝতে পারছিনা। আমার কি হবে?"
 
"তুমিতো তুমিই থাকবে। আইডাকেতুমি ধারন করবে।"
 
এরপর লোকটা দম নেয়ার জন্য থামল।
 
রাহাতের শিড়দাঁড়া বেয়ে বারবার যেন শীতল কিছু বয়ে যাচ্ছে।
 
¤¤ চলবে ¤¤