Tuesday, June 15, 2021

৫. নবদম্পতির মাঝে মিল-মোহাব্বত সৃষ্টির ১০ উপায়

 No photo description available.

 

 

 

৫. নবদম্পতির মাঝে মিল-মোহাব্বত সৃষ্টির ১০ উপায়

 

 

নবদম্পতির মাঝে মিল-মোহাব্বত সৃষ্টির ১০ উপায়
▬▬▬❤💙❤▬▬▬
প্রশ্ন: নব দম্পতির মাঝে বনিবনা না হলে কী করণীয়? তারা কি একে অপরকে বুঝার জন্য কিছু দিনের জন্য আলাদা থাকতে পারে? শরিয়ত এ ব্যাপারে কী
বলে?
উত্তর:
বিয়ের পর নবদম্পতির মাঝে বনিবনা বা মিলমিশ না হলে একে অপরকে বুঝার উদ্দেশ্যে দূরে থাকা কোনো সমাধান নয়। এতে সমস্যা কমার পরিবর্তে বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি আছে।
যাহোক তাহলে এ ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করা যেতে পারে:
১) স্বামী-স্ত্রী একে অপরের সাথে কথা বলা, আলোচনা করা। কথা বলার মাধ্যমেই অধিকাংশ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
২) একে অপরের প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে অর্পিত হক বা অধিকার আদায় করা। এই অধিকারের দিকে মনোযোগ না দিলে মনমালিন্য সৃষ্টি হতে পারে।
৩) একে অপরকে বুঝতে কিছুটা সময় নেয়া। তাড়াহুড়া করা ঠিক নয়। এ জন্য দুজনের আলাদা থাকা জরুরি নয়।
অবশ্য যদি তারা একান্তই কয়দিনের জন্য দূরে থাকতে চায় তাহলে থাকতে পারে। কিন্তু সেটা যেন দীর্ঘ সময় না হয়ে যায়।
৪) নবদম্পতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, তারা একে অপরকে সুখী করার সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। এ জন্য কথার ফাঁকে ফাঁকে ও আলাপচারিতার মধ্য দিয়ে অপরেরে ভালো লাগা-মন্দ লাগার বিষয়গুলো বুঝে নেয়ার চেষ্টা করবে এবং সেভাবে কাজ করবে।
৫) সঙ্গীর মধ্যে ছোটখাটো দোষত্রুটি থাকলেও সেগুলোর জন্য রাগারাগি করবে না বরং আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মেনে নিবে। মনে রাখতে হবে, পৃথিবীতে কেউ পরিপূর্ণ নয়। কেউ দোষত্রুটি থেকে মুক্ত নয়। এ দুনিয়ার জীবনে সব কিছু ইচ্ছেমত পাওয়া সম্ভব নয়। সম্পূর্ণ ত্রুটি মুক্ত ও ইচ্ছামত সব কিছু পাওয়া যাবে একমাত্র জান্নাতে।
৬) সঙ্গীর মধ্যে দোষত্রুটি থাকলে যথাসম্ভব ধৈর্য ও সহনশীলতা সহকারে নিজেরাই সংশোধন করার চেষ্টা করবে। এ সব বিষয় বাইরে প্রকাশ করা উচিৎ নয়।
৬) মনে রাখতে হবে, পৃথিবীতে সব পরিবারে কিছু না কিছু সমস্যা আছে। এটা স্বাভাবিক। কিন্তু এসব সমস্যা যেন দাম্পত্য জীবনের সুখ-শান্তি কেড়ে নেয়ার কারণ হয়ে না দাঁড়ায় সে জন্য এগুলোকে বড় করে দেখার প্রয়োজন নাই।
৭) দাম্পত্য জীবনের সমস্যা সমাধানের জন্য তৃতীয় পক্ষকে হস্তক্ষেপ করতে দেয়া মানে সমস্যা বৃদ্ধি করা। সুতরাং নিজেদের সমস্যাগুলো বাবা, মা, ভাই, বোন, চাচা, মামা কাউকেই বলা ঠিক নয়।
তবে নিজেরা চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হলে তখন এমন অভিজ্ঞ ব্যক্তির পরামর্শ নেয়া উচিৎ যে, সমাধান দিতে পারবে বলে আশা করা যায়।
৮) তারা যে, বিয়ে করতে পেরেছে এ জন্য আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা কর্তব্য। এ কৃতজ্ঞতা বোধ দাম্পত্য জীবনকে সুখময় করতে সাহায্য করবে।
৯) স্বামী বা স্ত্রীর শারীরিক সক্ষমতা বিষয়ক কোনো সমস্যা থাকলে দ্রুত ডাক্তারের সাহায্য নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সঙ্গীর প্রতি সহানুভূতিশীল হবে এবং তাকে সাহায্য করবে। এ বিষয়ে তাড়াহুড়া করা উচিৎ নয়।
১০) সর্বোপরি দাম্পত্য জীবনকে সুখময় ও সমস্যা মুক্ত করার জন্য মহান আল্লাহর কাছে বিশেষভাবে দুআ করা।
আল্লাহ তাআলা প্রতিটি দাম্পত্য জীবনকে সুখ-শান্তি দ্বারা ভরে দিন। সকলের প্রতি বর্ষণ করুন তার অবারিত রহমত ও কল্যাণের বারিধারা।
আল্লাহুম্মা আমীন। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬❤💙❤▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব
fb id: AbdullaahilHadi

 

৪. স্বামী-স্ত্রী মহান আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত ও অন্যতম নিদর্শন। সুতরাং এ ব্যাপারে যত্নশীল হোন:

 

 No photo description available.

 

 

 

৪. স্বামী-স্ত্রী মহান আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত ও অন্যতম নিদর্শন। সুতরাং এ ব্যাপারে যত্নশীল হোন:

 

 

স্বামী-স্ত্রী মহান আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত ও অন্যতম নিদর্শন। সুতরাং এ ব্যাপারে যত্নশীল হোন:
▬▬▬▬♥♥▬▬▬▬
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
مِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
“তাঁর (আল্লাহর) অন্যতম একটি নিদর্শন যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।” (সূরা রোম: ২১)
সুতরাং
🔹 স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন।
🔹 একে অপরকে ভালবাসুন।
🔹 একে অপরকে মূল্যায়ন করুন।
🔹 একে অপরের প্রতি যত্নবান হোন।
🔹 একে অপরের হক যথার্থভাবে আদায় করুন।
🔹 এই নিয়ামত লাভের জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করুন।
🔹 দূরে থাকলে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করুন।
🔹 পরস্পরের খাওয়া-দাওয়া, ঘুম, পোশাক, সাজ-গোঁজ, বিনয়-নম্রতা, ধন্যবাদ জ্ঞাপন, উপহার প্রদান, ভালো লাগা-মন্দ লাগার প্রতি লক্ষ্য রাখা, আবেগ-অনুভূতিকে মূল্যায়ন করা ও শারীরিক চাহিদা পূরণের ব্যাপারে যত্ন নিন।
🔹 সর্বোপরি মহান আল্লাহর ইবাদতে একজন অপরজনের সাহায্যকারী বন্ধু হোন।
তাহলে দেখবেন, দৈহিক সৌন্দর্য, আর্থিক সচ্ছলতা ও বৈষয়িক চাহিদা পরিপূর্ণভাবে না থাকলেও দাম্পত্য জীবন সৌন্দর্য ও সুখ-সমৃদ্ধিতে ভরে উঠবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আমাদের সাহায্যকারী।‎
------উত্তর প্রদানে:----------
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব
FB/AbdullahilHadi

৩. দাম্পত্য জীবনে মধুর সম্পর্ক এবং ভালবাসা ​বিনিময়ের অভাবনীয় মর্যাদা​

 May be an image of text that says 'দাম্পত্য জীবনে মধুর সম্পর্ক এবং ভালবাসা বিনিময়ের অভাবনীয় মর্যাদা!'

 

 

 

৩. দাম্পত্য জীবনে মধুর সম্পর্ক এবং ভালবাসা ​বিনিময়ের অভাবনীয় মর্যাদা​

 

 

দাম্পত্য জীবনে মধুর সম্পর্ক এবং ভালবাসা ​বিনিময়ের অভাবনীয় মর্যাদা​
▬▬▬▬◈♥◈▬▬▬▬
প্রশ্ন: বিয়ের পর দাম্পত্য জীবনে ভালোবাসা বিনিময়ের ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই।
উত্তর:
প্রথমে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি এ কারণে যে, মহান আল্লাহ আমাদেরকে ইসলামের মত এত সুন্দর ও মহান জীবনাদর্শ দান করে ধন্য করেছেন। আল হামদুলিল্লাহ।
আমরা জানি, স্বামী-স্ত্রীর সুসম্পর্ক ও ভালবাসার বন্ধনে একটি সুখী পরিবার গঠিত হয় আর একেকটি সুখী পরিবার মিলে সুখী সমাজ গঠিত হয়। আর প্রতিটি সমাজে যদি সুখ ও শান্তির সু বাতাস প্রবাহিত হয় তাহলে 'শান্তি' নামক সোনার হরিণটা আবারও মানুষের হাতে এসে ধরা দিবে এতে কোন সন্দেহ নেই।
সুতরাং এ কথায় কোন বিবেকবান মানুষের দ্বিমত থাকার কথা নয় যে, দাম্পত্য জীবনে ভালবাসা পূর্ণ পবিত্র ও মধুর সম্পর্ক একটি সুস্থ, সুন্দর ও শান্তিময় জীবন, পরিবার, সমাজ ও বিশ্ব বিনির্মাণের কেন্দ্রবিন্দু।
দাম্পত্য জীবনটা মূলত: স্বামী-স্ত্রীর পারস্পারিক ভালবাসা ও দয়া-মমতার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে। এর মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের জীবনে প্রবাহিত হয় সুখ-শান্তির নির্মল ঝর্ণাধারা। তাই তো মহান আল্লাহ বলেন,
 
وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
 
"আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনা বলী রয়েছে।" (সূরা রূম: ২১)
 
♥♥ স্বামী-স্ত্রীর পারস্পারিক মধুর সম্পর্ক ও ভালবাসার মর্যাদা:
 
দাম্পত্য জীবন মানুষের জৈবিক চাহিদা পূরণের মাধ্যমে পৃথিবীর গতিধারা বজায় রাখার একটি চমৎকার ব্যবস্থা। এটি সব ধর্মেই গ্রহণযোগ্য ও সামাজিকভাবে স্বীকৃত বিষয়। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে এই দাম্পত্য জীবন অবারিত সওয়াব অর্জনেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র তা অধিকাংশ মানুষের নিকট অপরিচিত। তাই আজকের আলোচনায় এ দিকটি সংক্ষেপে তুলে ধরার চেষ্টা হলো: 
 
◈ ১) স্ত্রীকে ভালবাসা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহ (আদর্শ) এর অন্তর্ভুক্ত। তিনি বলেন,
حُبّبَ إِلَيَّ مِنْ دنياكُمُ النّساءُ والطيبُ وجُعِلَتْ قرةُ عينِي في الصّلاةِ
"আমার নিকট তোমাদের পার্থিব সামগ্রীর মধ্য থেকে প্রিয় করে দেয়া হয়েছে: স্ত্রী ও সুগন্ধিকে এবং নামাজকে আমার জন্য বানানো হয়েছে চক্ষু শীতল কারী।" [ত্বাবারানী-শাইখ আলবানি হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। দ্রষ্টব্য: আন নাসিহা/২৫৫]
 
◈ ২) স্বামী-স্ত্রী যদি একে অপরকে আল্লাহর কারণে (দীনদারী, ইবাদত-বন্দেগি, সততা, নৈতিকতা, সচ্চরিত্র, সদাচার ইত্যাদি কারণে) ভালবাসে এবং আল্লাহর কারণেই ঘৃণা করে তাহলে তারা আরশের ছায়াতলে আশ্রয় প্রাপ্ত ৭ শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত হওয়ার মর্যাদা লাভ করবে। যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللَّهُ في ظِلِّهِ يَوْمَ لا ظِلَّ إلَّا ظِلُّهُ: إِمامٌ عادِلٌ، وشابٌّ نَشَأَ فِي عِبَادَةِ اللَّه تَعالى، وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌفي المَسَاجِدِ، وَرَجُلانِ تَحَابَّا في اللَّه: اجتَمَعا عَلَيهِ، وتَفَرَّقَا عَلَيهِ، وَرَجُلٌ دَعَتْهُ امْرَأَةٌ ذَاتُ مَنْصِبٍ، وَجَمَالٍ فَقَالَ: إِنِّي أَخافُ اللَّه، ورَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فأَخْفَاها، حتَّى لا تَعْلَمَ شِمالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِينهُ، ورَجُلٌ ذَكَرَ اللَّه خالِيًا فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ متفقٌ عَلَيْهِ.
 
◈ ৩) স্বামী-স্ত্রী যদি একে অপরকে আল্লাহর জন্য ভালবাসে এবং নিজের জন্য যা পছন্দ করে তার সঙ্গীর জন্যও তাই পছন্দ করে তাহলে তারা ঈমানের প্রকৃত সাধ অস্বাদন করবে। যেমন: প্রখ্যাত সাহাবি আনাস রা. বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
‏ ثَلاَثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ وَجَدَ بِهِنَّ حَلاَوَةَ الإِيمَانِ مَنْ كَانَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا وَأَنْ يُحِبَّ الْمَرْءَ لاَ يُحِبُّهُ إِلاَّ لِلَّهِ وَأَنْ يَكْرَهَ أَنْ يَعُودَ فِي الْكُفْرِ بَعْدَ أَنْ أَنْقَذَهُ اللَّهُ مِنْهُ كَمَا يَكْرَهُ أَنْ يُقْذَفَ فِي النَّارِ
 
"তিনটি বৈশিষ্ট্য যার মধ্যে রয়েছে, সে ঈমানের প্রকৃত স্বাদ অনুভব করবে। যথা:
(১) অন্য সবার তুলনায় যার কাছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অধিক প্রিয়।
(২) যে কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই তার বান্দাকে ভালোবাসে।
(৩) এবং যাকে আল্লাহ কুফর থেকে মুক্তি দিয়েছেন, তারপর সে কুফরের দিকে ফিরে যাওয়াকে এমন অপছন্দ করে যেমন আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে অপছন্দ করে।" [সহীহ মুসলিম (হাদিস একাডেমী) ১। ঈমান]
 
◈ ৪) স্বামী-স্ত্রী যদি একে অপরের সাথে সুন্দর ভাষায় কথা বলে তাহলে তারা উভয়ের সদকার সওয়াব পাবে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
الكَلِمَةُ الطَّيِّبَةُ صَدَقَةٌ
"একটি ভালো কথা হল সদকা।" (সহিহ বুখারি)
◈ ৫) স্বামী-স্ত্রী যদি একে অপরের সাথে মুচকি হেসে কথা বলে তাহলে তাতেও সদকার সওয়াব পাবে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ,
تَبَسُّمُكَ فِي وَجْهِ أَخِيكَ لَكَ صَدَقَةٌ.
"তোমার ভায়ের (সাক্ষাতে) মুচকি হাসাও একটি সদকা।" (জামে তিরমিযি/ ১৯৫৬)
◈ ৬) স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে খুশি করা আল্লাহর নিকট প্রিয় আমল হিসেবে বিবেচিত। হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে,
أحبُّ الأعمالِ إلى اللهِ عزَّ وجلَّ سُرُورٌ يدْخِلُهُ على مسلمٍ
"আল্লাহর নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় কাজ হল, কোন মুসলিমের হৃদয়ে আনন্দ প্রবেশ করানো।" (সিলসিলা সহিহা/৯০৬)
◈ ৭) স্বামী-স্ত্রী যদি একে অপরের কোনও উপকার করে বা ভালো কাজ করে তাহলে এর বিনিময়ে সদকার সওয়াব লাভ করবে। যেমন: আল্লাহর নবী সাল্লাহু সাল্লাম এরশাদ করেছেন,
كُلُّ مَعْرُوفٍ صَدَقَةٌ، وَإِنَّ مِنَ الْمَعْرُوفِ أَنْ تَلْقَى أَخَاكَ بِوَجْهٍ طَلْقٍ.
"প্রতিটি ভালো কাজ সদকা। আর তোমার ভায়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করাটাও একটি ভালো কাজ।" (জামে তিরমিযি, হাদিস ১৯৭০)
◈ ৮)স্বামী-স্ত্রী যদি কোনভাবে একে ওপরের উপকার করে তাহলে তারা আল্লাহর নিকট শ্রেষ্ঠ ও প্রিয় মানুষ হওয়ার মর্যাদা লাভ করবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
خَيْرُ النَّاسِ أَنْفَعُهُمْ لِلنَّاسِ
“যে ব্যক্তি মানুষের বেশি উপকার করে সেই শ্রেষ্ঠ মানুষ।” (ইবনে হিব্বান-হাসান)
অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
أحبُّ الناسِ إلى اللهِ أنْفَعُهُمْ لِلنَّاسِ
"আল্লাহর নিকট সে ব্যক্তি সর্বাধিক প্রিয় যে সর্বাধিক মানুষের উপকার করে।" (সিলসিলা সহিহা/৯০৬)
এই উপকার করা যে কোন মুসলিমের ক্ষেত্রে হতে পারে। সুতরাং স্বামী-স্ত্রী যদি একে অপরের উপকার করে তাহলে তারাও এ মর্যাদা অধিকারী হবে এতে কোনও সন্দেহ নাই।
◈ ৯) একজন স্বামী যদি তার স্ত্রীর মুখে এক লোকমা খাবার তুলে দেয় হাদিসে তাকে শ্রেষ্ঠ সদকা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যেমন: প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
إنَّ أعظم الصدقة لُقمة يضعها الرجل في فم زوجته
"শ্রেষ্ঠ সদকা হল, একজন মানুষ তার স্ত্রীর মুখে এক লোকমা খাবার তুলে দেয়া।" (সহিহ বুখারি ও মুসলিম) অন্য হাদিসে স্ত্রী পরিবারের জন্য খরচ করাকেও সদকার সওয়াব বলা হয়েছে যদি সদকার নিয়তে খরচ করে। সুবহানাল্লাহ!
◈১০) স্বামী-স্ত্রী যদি একে অপরকে সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করে তাহলে এতে তারা সদকার সওয়াব অর্জন করবে। হাদিসে এসেছে,
أَمْرٌ بِالْمَعْرُوفِ صَدَقَةٌ وَنَهْىٌ عَنْ مُنْكَرٍ صَدَقَةٌ
"সৎকাজের আদেশ দেয়া, অসৎ কাজ হতে বিরত রাখা সদকা।" [সহিহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ১৩/ যাকাত, পরিচ্ছেদ: ১১. প্রত্যেক কল্যাণকর কাজই সদকা, হা/২২০১]
বরং একটি পরিবার দাওয়াতি কাজের সর্ব প্রথম এবং সবচেয়ে বেশী উপযুক্ত ক্ষেত্র।
সুতরাং স্বামী-স্ত্রীর যদি একে অপরের মাঝে দাওয়াতি কাজ করে তাহলে উভয়ে 'দাঈ ইলাল্লাহ' এর খাতায় নাম লেখাতে পারে-যেভাবে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবুওত প্রাপ্তির পর সর্বপ্রথম দাওয়াতী কাজ শুরু করেছিলেন তার নিজ গৃহাঙ্গনে। সেই দাওয়াতে ইসলামের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসে সর্বপ্রথম যার নাম স্বর্ণাক্ষরে লিপিবন্ধ আছে তিনি হলেন তাঁর প্রাণপ্রিয় স্ত্রী খাদিজা বিনতে খুয়াইলিদ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা।
যাহোক যদিও উল্লেখিত হাদিস সমূহ কেবল স্বামী-স্ত্রীর জন্য নির্দিষ্ট নয়। বরং যে কোন মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু মানুষের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠজন ও জীবনসঙ্গীর উপর সবার আগে তা প্রযোজ্য হবে তাতে কোন সন্দেহ নাই।
◈ ১১) স্বামী স্ত্রী যদি ভালবাসার চূড়ান্ত নিদর্শন হিসেবে একে অপরের সাথে সহবাসে লিপ্ত হয় তাহলে এতেও আল্লাহ তাআলা সদকার সওয়াব দান করেন। যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
فِي بُضْعِ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ ‏"‏ ‏.‏ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ أَيَأْتِي أَحَدُنَا شَهْوَتَهُ وَيَكُونُ لَهُ فِيهَا أَجْرٌ قَالَ ‏"‏ أَرَأَيْتُمْ لَوْ وَضَعَهَا فِي حَرَامٍ أَكَانَ عَلَيْهِ فِيهَا وِزْرٌ فَكَذَلِكَ إِذَا وَضَعَهَا فِي الْحَلاَلِ كَانَ لَهُ أَجْرٌ
"স্ত্রীর সঙ্গে মিলনও সদকা। তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, কেউ যদি স্ত্রী সংগম করে এতেও কি সে সওয়াব পাবে? তিনি বললেন তোমরা কি মনে কর যদি সে জৈবিক চাহিদা পূরণ করে হারাম পথে তাতে কি তার পাপ হবে না? অনুরূপভাবে যদি সে তা হালাল পথে করে তবে সে সাওয়াব পাবে।" (সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ১৩/ যাকাত, পরিচ্ছেদ: ১১. প্রত্যেক কল্যাণকর কাজই সদকা, হা/২২০১)
◈ ১২) এভাবে স্বামী-স্ত্রী মধুর ভালবাসার সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে একে অপরকে অনেক হারাম সম্পর্ক, পাপাচার, জিনা, ব্যভিচার থেকে বাঁচতে সাহায্য করে। এতে তারা উভয়ে সওয়াব পাবে ইনশাআল্লাহ।
◈ ১৩) অনুরূপভাবে স্বামী-স্ত্রীর মিলনের ফলে আল্লাহ তাআলা যদি তাদের কোলে সন্তান দান করে আর তারা উভয়ে মিলে তাকে সৎ, চরিত্রবান, দীনদার সুসন্তান হিসেবে গড়ে তোলে তাহলে এটি তাদের উভয়ের আমলনামায় সদকায়ে জারিয়ার সওয়াব হিসেবে লিপিবদ্ধ হবে। সেই সন্তান যত সৎকর্ম করবে তারা উভয়ে এর বিনিময়ে সওয়াব লাভ করবে। সেই সুসন্তান দুআ করলে কবরে থেকেও তারা সওয়াব অর্জন করবে। যা হাদিসের আলোকে সু সাব্যস্ত।
মোটকথা, স্বামী-স্ত্রী উভয়ে যদি আল্লাহ ও তার রসূলের দেখানো নির্দেশনা মোতাবেক তাদের দাম্পত্য জীবনকে সাজিয়ে নিতে পারে তাহলে তারা এ পৃথিবীতে কেবল সুখ-সমৃদ্ধ জীবনই পাবে না বরং আখিরাতেও বিশাল নেকির ভাণ্ডার অর্জন করবে এবং উভয়েই জান্নাতে প্রবেশ করে গড়ে তুলতে পারবে আরেক নতুন ভালোবাসার ঘর।
সুতরাং দাম্পত্য জীবনকে কেবল সন্তান উৎপাদনের কারখানা না বানিয়ে আসুন নেকি অর্জনের কারখানায় রূপান্তরিত করি।
আল্লাহ তাআলা প্রতিটি স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সুদৃঢ় ভালবাসা ও প্রেমময় সম্পর্ক স্থাপন করে দিন। আল্লাহুম্মা আমিন।
▬▬▬▬◈♥◈▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

 

২. পাত্র নির্বাচনের মানদণ্ড কী?

 No photo description available.

 

 

২. পাত্র নির্বাচনের মানদণ্ড কী?

 .

 

পাত্র নির্বাচনের মানদণ্ড কী?
-------------------
মেয়েদের বিয়ের ক্ষেত্রে চরিত্রবান ও দ্বীনদার যুবককে অগ্রাধিকার দেয়া উচিৎ। কেনানা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
إذا أتاكم من ترضون خلقه ودينه فزوجوه . إلا تفعلوا تكن فتنة في الأرض وفساد عريض
“যখন তোমাদের নিকট এমন কোন ব্যক্তি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে, যার চরিত্র ও দীনদারীতে তোমরা সন্তুষ্ট, তবে তোমরা তার বিয়ের ব্যবস্থা করে দাও। যদি তোমরা তা না কর, তবে তা পৃথিবীর মধ্যে বিপর্যয় ডেকে আনবে এবং ব্যাপক বিশৃঙ্খলার কারণ হবে।”
[তিরমিযী, অধ্যায়: বিবাহ, পরিচ্ছেদ: যখন তোমাদের নিকট এমন ব্যক্তি আসে যার দীনদারীতে তোমরা সন্তুষ্ট, তবে তোমরা তার বিয়ের ব্যবস্থা কর ইবনু মাজাহ, অধ্যায়: বিবাহ, পরিচ্ছেদ: সমতা হাদিস নং- ১৯৬৭]
বিশেষ করে চরিত্রবান সহীহ আকীদা সম্পন্ন কোন যুবক পেলে তাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কেননা, তার মধ্যেই প্রকৃত দ্বীন পাওয়া যাবে। কিন্তু যদি কোন মেয়ের বিবাহ বিলম্ব হয়ে যাওয়ার কারণে ঈমানের কমতি ও চারিত্রিক স্খলনের আশংকা করে এবং সহীহ আকীদাওয়ালা দ্বীনদার পাত্র না পাওয়া যায় তাহলে তুলনা মূলক যাকে ভালো পাওয়া যায় তার সাথে বিবাহ দেয়া যেতে পারে। আল্লাহ সাহায্যকারী।
আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন।
--------------------
উত্তর প্রদানে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

 

 

 

১. পাত্রী নির্বাচনের সঠিক মানদণ্ড

 No photo description available.

 

১. পাত্রী নির্বাচনের সঠিক মানদণ্ড

 

 

পাত্রী নির্বাচনের সঠিক মানদণ্ড
▬▬▬ ◈❥◈▬▬▬
আপনি কি কোন মেয়েকে বিয়ের কথা ভাবছেন? তাহলে জেনে নিন, পাত্রী নির্বাচনের সঠিক মানদণ্ড।
পাত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সঠিক মানদণ্ড হল দুটি। যথা: সৌন্দর্য এবং দীনদারি।  
 
অর্থাৎ কোন নারীকে বিয়ের পূর্বে সর্ব প্রথম তার সৌন্দর্য অত:পর দীনদারি দেখা উচিৎ। 
 
 
সুতরাং যদি কোনও মেয়ের প্রতি মনে প্রবল আকর্ষণ অনুভব করেন তাহলে শরিয়ত সম্মত পন্থায় বিয়ের জন্য অগ্রসর হোন। তারপর যদি তার দ্বীনদারি ঠিক থাকে তাহলে বিয়ে করুন; অন্যথায় বর্জন করুন। অর্থাৎ তাকে গ্রহণ ও বর্জন যেন হয় দ্বীনদারিকে কেন্দ্র করে-যেমনটি বলেছেন ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রাহ.।
তিনি বলেছেন:
 
إذا خطب رجل امرأة سأل عن جمالها أولا ، فإن حُمد سأل عن دينها ، فإن حمد تزوج، وإن لم يحمد يكون ردها لأجل الدين ، ولا يسأل أولا عن الدين ، فإن حُمد سأل عن الجمال ، فان لم يحمد ردَّها للجمال لا للدين
 
“কোন পুরুষ যদি কোনও নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় তাহলে সর্বপ্রথম তার সৌন্দর্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে। যদি এ ব্যাপারে তার প্রশংসা করা হয় তাহলে তার দ্বীন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে। দ্বীনের ক্ষেত্রে যদি প্রশংসিত হয় তাহলে বিয়ে করবে; অন্যথায় দীনের কারণে প্রত্যাখ্যান করবে। কিন্তু এমনটি করা ঠিক নয় যে, প্রথমেই দীন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে। এ ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় হলে তারপরে তার সৌন্দর্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে। তারপর সৌন্দর্যের ব্যাপারে প্রশংসনীয় না হলে ফিরিয়ে দিবে। তাহলে এ প্রত্যাখ্যান হবে সৌন্দর্যের কারণে; দীনের কারণে নয়। ” (শরহু মুনতাহাল ইরাদাত-ইমাম ভূতি ২/৬২১)
 
❥❥ সৌন্দর্য:
● রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
 
‏ إِذَا خَطَبَ أَحَدُكُمُ الْمَرْأَةَ فَإِنِ اسْتَطَاعَ أَنْ يَنْظُرَ إِلَى مَا يَدْعُوهُ إِلَى نِكَاحِهَا فَلْيَفْعَلْ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ فَخَطَبْتُ جَارِيَةً فَكُنْتُ أَتَخَبَّأُ لَهَا حَتَّى رَأَيْتُ مِنْهَا مَا دَعَانِي إِلَى نِكَاحِهَا وَتَزَوُّجِهَا فَتَزَوَّجْتُهَا ‏.‏
 
“তোমাদের কেউ যখন কোন নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দিবে তখন সম্ভব হলে তার এমন কিছু যেন দেখে নেয় যা তাকে বিবাহে উৎসাহিত করে।”
বর্ণনাকারী বলেন, “আমি একটি মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেবার পর তাকে দেখার আকাঙ্ক্ষা-অন্তরে গোপন রেখেছিলাম। অতঃপর আমি তার মাঝে এমন কিছু দেখি যা আমাকে তাকে বিয়ে করতে আকৃষ্ট করলো। অতঃপর আমি তাকে বিয়ে করি।" 
[সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: বিবাহ, অনুচ্ছেদ-১৯, বিয়ের উদ্দেশে পাত্রী দেখা প্রসঙ্গ, জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত-সনদ-হাসান]
 
● আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত,
ﻗِﻴﻞَ ﻟِﺮَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺃَﻱُّ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀِ ﺧَﻴْﺮٌ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟَّﺘِﻲ ﺗَﺴُﺮُّﻩُ ﺇِﺫَﺍ ﻧَﻈَﺮَ ﻭَﺗُﻄِﻴﻌُﻪُ ﺇِﺫَﺍ ﺃَﻣَﺮَ ﻭَﻻ ﺗُﺨَﺎﻟِﻔُﻪُ ﻓِﻲ ﻧَﻔْﺴِﻬَﺎ ﻭَﻣَﺎﻟِﻬَﺎ ﺑِﻤَﺎ ﻳَﻜْﺮَﻩُ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করা হল, 
 
হে আল্লাহর রাসূল! কোন স্ত্রী সর্বোত্তম?
 
তিনি বলেন: “(স্বামী) যে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে পুলকিত হয়, কোন নির্দেশ দিলে আনুগত্য করে এবং সে তার নিজস্ব ব্যাপারে বা তার অর্থ-সম্পদের ব্যাপারে স্বামী যেটা অপছন্দ করে তার বিপরীত কিছু করে না।” 
 
(মুসনাদে আহমদ। শাইখ আলবানি হাদিসটিকে হাসান বলেছেন। উৎস: সিলসিলা সহিহা, হা/১৮৩৮)
 
উল্লেখ্য যে, সৌন্দর্য বলতে কেবল বাহ্যিক রূপ-সৌন্দর্য বুঝায় না বরং মন ও মননের সৌন্দর্য তথা বিশেষ গুণ-বৈশিষ্ট্য, জ্ঞান, মেধা, যোগ্যতা, বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদিও এর অন্তর্ভুক্ত। যদিও মানুষ কারো গুনাগণ বিচারের পূর্বে তার বাহ্যিক রূপ-সৌন্দর্য অবলোকন করে। আর এ বাহ্যিক সৌন্দর্যের বিষয়টিও আপেক্ষিক। সবার দৃষ্টিভঙ্গি এক নয়। একজনের কাছে কাউকে আকর্ষণীয় মনে হলেও অন্যের কাছে তা নাও হতে পারে। কারো কাছে ফর্সা ভালো লাগে তো কারো কাছে ভালো লাগে শ্যামলা।
 
সুতরাং বিয়ের পূর্বে এ দিকটি দেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বিয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য হল, মনের পরিতৃপ্তি ও প্রশান্তি অর্জন করা-যা চরিত্র হেফাজত ও চোখ অবনমিত রাখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। 
 
সুতরাং আপনি যদি এমন মহিলাকে বিয়ে করেন যার দিকে তাকালে আপনার মনে আকর্ষণ সৃষ্টি হয় বা ভালো লাগে তাহলে স্বভাবতই মনে প্রশান্তি অর্জিত হবে এবং পরনারী থেকে দৃষ্টি অবনমিত রাখতে সহায়ক হবে (তবে এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতি)। এই সৌন্দর্য ও আকর্ষণবোধ ছাড়া দাম্পত্য জীবন বেশি দূর এগুনো সম্ভব নয়।
 
 
❥❥ দীনদারি:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দ্বীনদারী মেয়েকে বিয়ে করার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন:
● হাদিসে এসেছে:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ تُنْكَحُ النِّسَاءُ لأَرْبَعٍ لِمَالِهَا وَلِحَسَبِهَا وَلِجَمَالِهَا وَلِدِينِهَا فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّينِ تَرِبَتْ يَدَاكَ ‏"‏ ‏.‏
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “নারীদেরকে (সাধারণত) চারটি বিষয় দেখে বিয়ে করা হয়। যথা:
ক. তার ধন-সম্পদ।
খ. বংশমর্যাদা।
গ. রূপ-সৌন্দর্য।
ঘ. এবং দীনদারি বা ধার্মিকতা। 
 
তবে তুমি দীনদার (ধার্মিক) নারীকে বিয়ে করে সফল হয়ে যাও; অন্যথায় তুমি লাঞ্ছিত হবে।” [সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: বিবাহ, অনুচ্ছেদ-২ ধার্মিক মহিলা বিয়ে করার নির্দেশ, হা/২০৪৭-সনদ সহিহ]
আর এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ধার্মিকতা ও নীতি- নৈতিকতা হীন নারী একজন পুরুষের জন্য এবং তার পরিবার ও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য মারাত্মক ফিতনা, অশান্তি এবং ধ্বংসের কারণ।
আল্লাহ তাআলা প্রতিটি পুরুষকে তার পছন্দের দীনদার নারীকে বিয়ে করার মাধ্যেম একটি সুস্থ ও সুন্দর দাম্পত্য জীবন গড়ার তওফিক দান করুন। আমিন।
 
▬▬▬ ◈❥◈▬▬▬
লেখক:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব

 

দায়েমি (সার্বক্ষণিক) ফরজ

 May be an image of text

 

 

দায়েমি (সার্বক্ষণিক) ফরজ

 
দায়েমি (সার্বক্ষণিক) ফরজ
▬▬▬▬◢◯◣▬▬▬▬
প্রশ্ন: পুরুষ ও নারীদের দায়েমি (সার্বক্ষণিক) ফরজগুলো কি কি?
উত্তর:
দায়েমি ফরজ অর্থ: এমন ফরজ যা প্রতিনিয়ত, প্রতিদিন এবং সার্বক্ষণিক ভাবে পালন করা আবশ্যক। নারী-পুরুষের প্রকৃতি ও সৃষ্টিগত কিছু পার্থক্য ছাড়া উভয়ের উপর অবশ্য পালনীয় ফরজ বিধানগুলো প্রায় একই রকম।
নিম্নে কুরআন-হাদিসের নির্যাস থেকে উভয়ের জন্য আলাদা আলাদাভাবে কতিপয় সার্বক্ষণিক পালনীয় ফরজ কাজ তুলে ধরা হল:
❑ পুরুষদের দায়েমি ফরজ: (১৮টি)
যেমন:
◈ ১. সার্বক্ষণিক ঈমানের অবস্থায় থাকা।
◈ ২. সর্বাবস্থায় আল্লাহকে ভয় করা।
◈ ৩. সর্বাবস্থায় শিরক, বিদআত এবং সব ধরণের আল্লাহর নাফরমানি ও পাপাচার থেকে দূরে থাকা।
◈ ৪. পরনারী থেকে দৃষ্টি হেফাজত করা
◈ ৫. হালাল স্ত্রী ছাড়া লজ্জা স্থান হেফাজত করা।
◈ ৬. স্ত্রী-সন্তানদের হক আদায় করা এবং যথাসাধ্য ভালোভাবে তাদের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করা
◈ ৭. হালাল পন্থায় অর্থ উপার্জন করা (অর্থ উপার্জনে সব ধরণের হারাম পন্থা পরিহার করা)
◈ ৮. স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিকে অন্যায় কাজ করতে দেখলে বা এ সম্পর্কে অবগত হলে তাদেরকে বাধা দেয়া, তাদেরকে দীনের সঠিক জ্ঞান দান করা ও ইসলামের উপর প্রতিপালন করা। স্ত্রী অন্যায়-পাপাচারে জড়িত থাকলে তাকে নসিহত করা। এতে কাজ না হলে তার বিরুদ্ধে শরিয়ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
◈ ৯. মানুষের সাথে সুন্দর আচরণ করা, ভালো কথা বলা অথবা চুপ থাকা এবং গিবত, চুগলখোরি, গালাগালি, অশ্লীল ও নোংরা কথাবার্তা, মিথ্যা কথা, মিথ্যা সাক্ষ্য, কারও মৃত্যুতে বিলাপ করা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকা।
◈ ১০. সর্বাবস্থায় আল্লাহ, রাসূল ও দীনের প্রতি ভালবাসা অটুট রাখা।
◈ ১১. স্ত্রী সহবাস, স্বপ্নদোষ বা অন্য কোনও কারণে গোসল ফরজ হলে গোসলের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করা।
◈ ১২. পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, রমজান মাসে রোজা এবং অন্যান্য ফরজ ইবাদতগুলো যথা সময়ে সঠিক পদ্ধতিতে আদায় করা।
◈ ১৩. দাড়ি রাখা। (দাড়ি কাটা, ছাঁটা,মুণ্ডন করা হারাম।)
◈ ১৪. নিজের শরীরে হক আদায়ের পাশাপাশি পিতা-মাতার আনুগত্য (যদি তা আল্লাহর নাফরমানি ও সাধ্যাতিরিক্ত না হয়) এবং মুসলিমদের পারস্পারিক হক সমূহ আদায় করা।
◈ ১৫. দীন সম্পর্কে কমপক্ষে এতটুকু জ্ঞান অন্বেষণ করা যা দ্বারা দৈনন্দিন ফরজ ইবাদত সমূহ সুন্দরভাবে সম্পাদন করা করা সম্ভব হয়।
◈ ১৬. সর্বক্ষেত্রে হালাল-হারাম বিধান মেনে জীবন যাপন করা।
◈ ১৭. কাফেরদের সাদৃশ্য অবলম্বন না করা (ধর্মীয়, সংস্কৃতি ও রীতিনীতির ক্ষেত্রে)।
◈ ১৮. কখনো আল্লাহর নাফরমি মূলক কাজ বা পাপাচার ঘটে গেলে অনতিবিলম্বে আন্তরিক অনুশোচনা সহকারে আল্লাহর কাছে তওবা করা ইত্যাদি।
 
 
❑ মহিলাদের দায়েমি ফরজ: (১৬টি)
যেমন:
❂ ১. সার্বক্ষণিক ঈমানের অবস্থায় থাকা।
❂ ২. সর্বাবস্থায় আল্লাহকে ভয় করা।
❂ ৩. সর্বাবস্থায় শিরক, বিদআত এবং সব ধরণের আল্লাহর নাফরমানি ও পাপাচার থেকে দূরে থাকা।
❂ ৪. পরপুরুষের দৃষ্টি থেকে নিজেকে হেফাজত করা (পূর্ণাঙ্গ পর্দা করা)।
❂ ৫. স্বামী ছাড়া নিজের লজ্জা স্থান হেফাজত করা।
❂ ৬. স্বামীর আনুগত্য করা এবং তার সন্তান-সন্ততি, অর্থ-সম্পদ ইত্যাদি রক্ষণাবেক্ষণ করা।
❂ ৭. সন্তান-সন্ততিকে অন্যায় কাজ করতে দেখলে বা এ সম্পর্কে অবগত হলে তাদেরকে বাধা দেয়া, তাদেরকে দীনের সঠিক জ্ঞান দান করা ও ইসলামের উপর প্রতিপালন করা। স্বামীকে অন্যায়-পাপাচারে জড়িত থাকলে তাকে নসিহত করা এবং সংশোধনের চেষ্টা করা।
❂ ৮. মানুষের সাথে সুন্দর আচরণ করা, ভালো কথা বলা অথবা চুপ থাকা। সেই সাথে গিবত, চুগলখোরি, গালাগালি, অশ্লীল ও নোংরা কথাবার্তা, মিথ্যা কথা, মিথ্যা সাক্ষ্য, কারও মৃত্যুতে বিলাপ করা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকা।
❂ ৯. সর্বাবস্থায় আল্লাহ, রাসূল ও দীনের প্রতি ভালবাসা অটুট রাখা।
❂ ১০. স্বামী সহবাস, স্বপ্নদোষ, হায়েজ-নিফাস থেকে মুক্ত হলে বা অন্য কোনও কারণে গোসল ফরজ হলে গোসলের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করা।
❂ ১১. পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, রমজান মাসে রোজা এবং অন্যান্য ফরজ ইবাদতগুলো যথা সময়ে সঠিক পদ্ধতিতে আদায় করা।
❂ ১২. দীন সম্পর্কে কমপক্ষে এতটুকু জ্ঞান অন্বেষণ করা যা দ্বারা দৈনন্দিন ফরজ ইবাদত সমূহ সুন্দরভাবে সম্পাদন করা করা সম্ভব হয়।
❂ ১৩. সর্বক্ষেত্রে হালাল-হারাম বিধান মেনে জীবন যাপন করা ইত্যাদি।
❂ ১৪. নিজের শরীরে হক আদায়ের পাশাপাশি অবিবাহিত অবস্থায় পিতামাতার এবং বিয়ের পর স্বামীর আনুগত্য (যদি তা আল্লাহর নাফরমানি ও সাধ্যাতিরিক্ত না হয়) এবং মুসলিমদের পারস্পারিক হক সমূহ আদায় করা।
❂ ১৫. কাফেরদের সাদৃশ্য অবলম্বন না করা (ধর্মীয়, সংস্কৃতি ও রীতিনীতির ক্ষেত্রে)।
❂ ১৬. কখনো আল্লাহর নাফরমি মূলক কাজ বা পাপাচার ঘটে গেলে অনতিবিলম্বে আন্তরিক অনুশোচনা সহকারে আল্লাহর কাছে তওবা করা ইত্যাদি।
আল্লাহ তাআলা নারী-পুরুষ উভয়কে তাদের উপর অর্পিত অবধারিত দায়েমি ফরজ ইবাদতগুলো পূর্ণ ইখলাসের সাথে সম্পাদন করার তওফিক দান করুন। আমিন। আল্লাহু আলাম।
-আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব
abdullahilhadi