This is not a blog only-you will get almost everything helpful, educational materials and so on here with the passage of time.
‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা ওয়া খাইরা মা যুবিলাত আলাইহি, ওয়া আউযুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা যুবিলাত আলাইহি’।
অর্থ : হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে তার (স্ত্রী) কল্যাণের প্রার্থনা করছি এবং প্রার্থনা জানাই তার সেই কল্যাণময় স্বভাবের যার ওপর আপনি তাকে সৃষ্টি করেছেন। আর আমি আপনার আশ্রয় চাচ্ছি তার অনিষ্ট থেকে এবং তার সেই অকল্যাণময় স্বভাবের অনিষ্ট থেকে যার ওপর আপনি তাকে সৃষ্টি করেছেন। [1]
* আবু উসাইদের মুক্তিপ্রাপ্ত দাস আবু সাঈদ বলেন: আমি দাস অবস্থায় বিবাহ করেছিলাম। এবং সাহাবাদের কয়েকজনাকে দাওয়াত করেছিলাম, যাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ, আবু যার ও হুযাইফা রা. উপস্থিত ছিলেন। সালাতের জন্য ইকামত হয়ে গেল, আবু যার রা. ইমামতির জন্য সামনে এগোলেন। বাকিরা তাঁকে থামিয়ে দিলেন: সাবধান, যাবেন না। আমি ইমামতি করলাম (সাহেবে দাওয়াত বলে), অথচ তখনও আমি দাস। সালাত শেষে তাঁরা আমাকে (নতুন বর হিসেবে) শিক্ষা দিয়ে বললেন:যখন তোমার স্ত্রী তোমার কাছে আসবে তখন দু’রাকাআত সালাত পড়বে। তারপর তার জন্য মঙ্গলের দুয়া করবে এবং তার খারাবি থেকে আল্লাহর পানাহ চাইবে। তারপর তোমার ও তোমার স্ত্রীর ব্যাপার।[2]
* আবু হারীয নামক জনৈক ব্যক্তি একবার এলেন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এর কাছে। এসে জানালেন, নতুন বিয়ে করেছেন এক কুমারীকে, কিন্তু মনে খচখচ লাগছে, যদি তার ভিতরে কোনো অনিষ্টকর কিছু থাকে। সাহাবী পরামর্শ দিলেন: যখন সে কাছে আসবে, তাকে জামাআত সহকারে তোমার পিছনে দু’রাকাআত সালাত পড়ার নির্দেশ দেবে।[3]
* সালমান ফারসী রা. বাসর রাতে নিজ স্ত্রীকে বলেন: ‘নিশ্চয়ই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বলেছেন, যেদিন তুমি বিবাহ করবে, সর্বপ্রথম সাক্ষাত করবে আল্লাহর অনুসরণের মাধ্যমে। সুতরাং তুমি দাঁড়াও, আমরা দু’রাকাআত সালাত পড়ব। যখন আমাকে দুয়া করতে শুনবে, তখন আমীন বলবে’। [4]
‘বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শাইতানা ওয়া জান্নিবিশ শাইতানা মা রাযাকতানা।’[5]
যোনিমুখ (VULVA) দর্শন খুব কমই উত্তেজক হয়। যোনিমুখের পরিবর্তে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ দেখা, (যা যোনিকে বা সেক্স-কে কল্পনায় আনে, যেমন ঠোঁট, স্তন, নাভি) বেশি উত্তেজনাকর।
আমি রাসুলুল্লাহর সা. এর থেকে তা কখনো দেখিনি এবং তিনিও আমার থেকে কখনো তা দেখেননি।[6]
খালি চামড়া অধিকাংশ পুরুষের কাছে বোরিং লাগে। পুরুষের কৌতূহল ধরে রাখা যায়, যদি নারী তার উত্তেজক স্থানগুলো একই সাথে ঢেকেও রাখে, আবার দৃশ্যমানও রাখে। মনে হবে ঢাকা, কিন্তু সেকেন্ড দৃষ্টিপাতে বুঝা যাবে যে আসলে ঢাকা না।
তোমাদের কেউ যখন স্ত্রীর সঙ্গে মিলন করে, তখন সে যেনো আবৃত থাকে, গাধা যুগলের মতো যেনো একেবারে নগ্ন না হয়ে যায়।[8]
- পর্নস্টার একজন বেশ্যা, আর আপনার স্ত্রী একজন ভদ্র পরিবারের ধার্মিক নারী।
- পর্নো ভিডিও একটা অভিনয়। অহেতুক শীৎকার/ তৃপ্তির ভঙ্গি/ ঢংঢাং সব ‘অভিনয়’।
- ওদের ফুল বডি মেকআপ। এমনকি যোনিও। স্বাভাবিক মানুষের ত্বক অত মসৃণ-নির্লোম হয় না।
- পর্নোস্টারদের স্তন সার্জারি করে সিলিকন জেল ঢুকানো। তাই বড় হলেও ঝুলা না। ন্যাচারাল স্তন একটু ঝুলাই থাকে।
- নিতম্ব জিম করে বা সার্জারি করে সুডৌল করা।
- পুরুষ লিঙ্গ সার্জারি করে বড় আর মোটা করা হয় অধিকাংশ ক্ষেত্রে।
- ওরা কিন্তু একটানা ২০/৪০ মিনিট করে না। একটা ২০ মিনিটের ভিডিও বানাতে হয়তো ৭ দিন শুটিং করেছে।
[1] আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ সূত্রে শাইখ নাসিরুদ্দীন আলবানী, আদাবুয যিফাফ
[2] মুসান্নাফে আবী শাইবা, মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, সহীহ ইবনু হিব্বান-এর সূত্রে শাইখ নাসিরুদ্দীন আলবানী, আদাবুয যিফাফ
[3] মুসান্নাফে আবী শাইবা, মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ও তাবারানী সূত্রে শাইখ নাসিরুদ্দীন আলবানী, আদাবুয যিফাফ
[4] মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ও ইবনে আসাকির সূত্রে শাইখ নাসিরুদ্দীন আলবানী, আদাবুয যিফাফ
[5] সহীহ বুখারী[
6] [সুনানে ইবনে মাজাহ]
[7] "Erogenous Zones ." The Oxford Companion To The Body. . Encyclopedia.Com. (June 30, 2020).
[8] [সুনানে ইবনে মাজাহ— ১/৬১৯, ১৯২১] হাদিসগুলো উস্তাদ আলী হাসান উসামা-র সাইট থেকে সংগৃহীত।বুসিরি রহ. মিসবাহুয যুজাজাহ (১/৩৩৭) গ্রন্থে উভয় হাদিসকে যয়িফ বলেছেন। তবে একাধিক হাদিস থেকে এ বিষয়ে প্রমাণ মেলে।
[9] ডা. লিমন ক্লার্ক ও ডা. ইসাডোর রুবিন, মেডিকেল সেক্স গাইড
লিখেছেনঃ নিশাত তামমিম
বিবাহিত জীবনের অভিজ্ঞতা খুব বেশি নয়, এইতো বছর চারেক হলো। শুনেছি, ন্যূণতম দশ বছরের সংসারজীবন না হলে নাকি দাম্পত্যজীবন সম্পর্কে সঠিক ধারণা হয়না। সেই দিক দিয়ে দাম্পত্য বিষয়ে কাউকে পরামর্শ দেয়ার যোগ্য নিজেকে মনে করিনা। তবে টুকটাক ব্যক্তিগত ঘটকালির অভিজ্ঞতা অনেকদিনের, আর অনলাইনে সবক দেয়ার অভিজ্ঞতা তারওচেয়ে বেশিদিনের, সেই সাথে দাম্পত্য নিয়ে অল্পবিস্তর পড়াশোনা আছে, আর আমাদের এক জীবনের চারপাশে আরও অনেক জীবন থাকে, আমরা জীবন চলার পথে তা থেকেও কিছু অভিজ্ঞতা টুকে নিই- এসব সম্বল নিয়েই উত্তম উপদেশ দেয়ার চেষ্টা করি, কেননা হাদিসে এসেছে- একজন মুমিনের কাছে আরেকজন মুমিনের অধিকার হচ্ছে, সে কোন বিষয়ে উত্তম পরামর্শ চাইলে তা দেয়া। সেদিন তেমনই এক প্রশ্নের উত্তরে পরামর্শের ডালি খুলে বসেছিলাম, মনে হলো সেই কথাগুলো নোট আকারে লিখে রাখলে মন্দ হয়না, আল্লাহ চাইলে অন্য কেউ উপকৃতও হতে পারেন-
১. বিয়ে নিয়ে পড়াশোনাঃ
বিয়ের আগে আমি বিবাহোচ্ছুক পাত্র-পাত্রীদের প্রথমেই যে পরামর্শ দিই তা হলো, বিয়ে নিয়ে পড়াশোনা করতে। দাম্পত্য জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা তো আসলে নিজে বিয়ে করার আগে হয়না, তবে অভিজ্ঞদের অভিজ্ঞতার নির্যাস কিছুটা হলেও পাওয়া যায় অভিজ্ঞদের লেখা বই পড়ে, মোটামুটি সুখী দম্পতিদের কাছে পরামর্শ নিয়ে। এই পড়াশোনাটা ঠিক ফিক্বহী নয়, বরং বিপরীত জেন্ডারের সাইকোলজি জানা, বৈপরীত্যগুলো বোঝা। কারণ, একটা সংসার শুধু কল্পনা আর আবেগের উপর টিকে থাকেনা, অনেক অনেক স্যাক্রিফাইস আর কম্প্রোমাইজের প্রয়োজন হয়। এই প্রায়োগিক বিষয়গুলো জানতেই প্রয়োজন কিছু পড়াশোনা, ইউটিউবেও শাইখদের বেশ সুন্দর কিছু লেকচার পাওয়া যায় সেগুলো দেখা। কয়েকটা বইয়ের নাম বলে দিচ্ছি-
ক. বিয়ে, স্বপ্ন থেকে অষ্টপ্রহর: মীর্যা ইওয়ার বেগ
খ. সংসার সুখের হয় দুজনের গুণে: জুলফিকার আলি নকশাবন্দি
গ. কুররাতু আইয়ুন ১, ২ : শামসুল আরেফিন শক্তি
ঘ. বাতিঘর: মাসুদা সুলতানা রুমী
ঙ. সুখের নাটাই: আফরোজা হাসান
চ. YouTube এ ছোট্ট দুটো লেকচার আছে, খুব সুন্দর- What Women Need to Know about Men, What Men Need to Know about Women.
২. বউ-শাশুড়ির কুরুক্ষেত্রঃ
ছেলেদের জন্য খুব খুব জরুরী
একটা প্রস্তুতি হলো (বিশেষ করে যৌথ পরিবারে), স্ত্রী ও মা এর মধ্যে
ব্যালেন্স করতে শেখা, এই কাজটা পৃথিবীর সবচে কঠিন কাজগুলোর মধ্যে একটি বলা
যায়। যে মা এতটা বছর তার ছেলেকে একটু একটু করে বড় করেছেন, সেই সন্তানের উপর
তার অধিকার সবটুক। আবার যে মেয়েটা বাবার বাড়ির সব মায়া ছেড়ে স্বামীর ঘরে
এসেছে এক বুক স্বপ্ন নিয়ে, এই স্বপ্ন সে সাজিয়েছে সেই কৈশোর থেকে একটু একটু
করে, স্বামীর উপর তার আবদারও সবটুক। এই দ্বিমুখী প্রত্যাশা, আবেগ, অনুভূতি
আর অভিমানগুলো সামাল দিতে গিয়ে একটা ছেলেকে অনেক সময় পড়ে যেতে হয়
এক্কেবারে মাঝ নদীতে- এ কূল ও কূল দুকূলেই বিপদ। ছেলেটিকে এই ঝড় সামলে ওঠার
জন্য হতে হয় দক্ষ অভিনেতা, ট্রিক জানতে হয় মাকে খুশি রেখে স্ত্রীকে
ভালোবাসার উপায়। অবিবাহিত ছেলেরা বিয়ের আগে অনেকে জানেও না, বউ-শাশুড়ি
সংক্রান্ত সমস্যা একটা দম্পতির সম্পর্ককে জাহান্নাম বানিয়ে দিতে পারে, যার
worst sufferer হয় সাধারণত ছেলেরা- গোবেচারা ছেলেটি এক দিকে মায়ের অভিশাপ,
আরেক দিকে স্ত্রীর অভিযোগ নিয়ে জীবন নিয়ে এক বুক হতাশায় ডুব দেয়। আবার
অতিরিক্ত মা ন্যাওটা ছেলের স্ত্রীরা হয় নির্যাতিত, খুব স্ত্রৈণ স্বামীর
মায়েরা হন বঞ্চিত। এসব ক্ষেত্রেও অভিজ্ঞ সিনিয়রদের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে,
যারা যৌথ পরিবারের সংকট সমাধানে মোটামুটি জ্ঞান রাখেন।
৩. বিয়ের আগে আফসোস নয়, সবর ও চেষ্টাঃ
মুমিনের জীবনটাই একটা পরীক্ষাগার, আর এই পরীক্ষার একটা পার্ট বিয়ের আগের
পরীক্ষা৷ কঠিন পরীক্ষায় স্বর্ণ খাটি হয়, তাই যেখানে সব উপায় ব্যর্থ,
সেখানে সবর অবলম্বনই শ্রেয়। হতেও পারে, এই সবরের মাধ্যমে আল্লাহ তাকে
পরবর্তী জীবনে আরও অধিক সবরের জন্য প্রস্তুত করছেন। অববাহিতরা মনে করে,
বিয়ে করলেই বুঝি শান্তির বাগান৷ অথচ দেখুন, গত সপ্তাহেই এক স্বামী লাইভে
এসে তার স্ত্রীকে খুন করলো। ভাবাও যায়না এত জঘন্য কাজের কথা, অথচ তারাও তো
কত স্বপ্ন নিয়েই সংসার শুরু করেছিলো, তাইনা? বিয়ের পর অনেক নিয়ামত পাওয়া
যায়, আলহামদুলিল্লাহ। তবে বিয়ের আগে যে অফুরন্ত অবসর তরুণরা পায়, এই অবসর
কিন্তু বিয়ে- বাচ্চা এগুলোর সাথে সাথে কমতে থাকে৷ মুমিন যদি এই অবসরটাকে
গনীমত মনে করে ইল্ম অর্জনের কাজে লাগায়, সেটা কতই না উত্তম! মানুষ কল্পনা
করে, বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী দুজন মিলে একসাথে ইল্ম অর্জন করবে, এই করবে
সেই করবে কত কী! অথচ এই আমরাই দেখেছি- কত কত সিরিয়াস ত্বলিবুল ইল্মও বিয়ের
পর রিযিকের তাগিদে ইল্মের লাইন থেকে একদম ঝরে পড়েছে। তাই মুমিনের জন্য এটা
মাথায় রাখা দরকার যে, বিয়ের আগে যেমন পরীক্ষা আছে, বিয়ের পরেও আছে, দুনিয়া
তো জান্নাত নয়। আবার দুই স্টেইজেরই কিছু নিয়ামতও আছে। কঠিন পরীক্ষার দিনে
যে সবরের স্বাদ নিতে পারে, অঢেল প্রাচুর্যের সময় শোকর সে-ই করতে পারে।
ছোট্ট একটা উদাহরণ দিই-
মেডিকেল লাইফে আমার এক বান্ধবী ছিলো, দেখা হলেই বলতো- দোস্ত, বিয়ে করবো,
বাসা থেকে কোনভাবেই বুঝতেছে না। কী দুয়া পড়লে বিয়ে হবে, শিখায়ে দে তো। ওকে
‘রব্বানা হাবলানা…..’ দুআটা লিখে দিলাম, আমল করতে বললাম, বাবা-মাকে বুঝাতে
বললাম, আর দুয়া কবুলের যে শর্তগুলো আছে, ওগুলো মানার পরামর্শ দিলাম।
আলহামদুলিল্লাহ, ছ’মাসের মধ্যেই ওর বিয়ে হয়ে গেল। মেয়েটা এত্ত খুশি হয়ে এসে
জানালো- তোর দেয়া দুয়া পড়েই আমার বিয়ে হইছে রে। আম্মু আব্বু তো রাজিই
হচ্ছিলোনা এতদিন… বিয়ের কয়েকমাস পরের গল্প, এখন ওর সাথে চলতে ফিরতে দেখা
হলেই নতুন ডায়ালগ শুনি- ধুর, আর ভাল্লাগেনা দোস্ত৷ সারাদিন ঝগড়া হয় তোর
ভাইয়ার সাথে৷ ক্যান যে বিয়ে করসিলাম! আম্মুআব্বুকে ফোন দিয়ে সারাদিন
রাগারাগি করি- কেন তোমরা এখনই আমার বিয়ে দিলা? ক্যান এই বিপদে ফেললা আমাকে?
আমি অবাক হয়ে শুধু ভাবলাম- এজন্যই কুরআনে মানুষকে অকৃতজ্ঞ বলা হয়েছে। দুদিন আগেই যে মেয়ে বিয়ে নিয়ে বাবা-মায়ের মাথা খারাপ করে দিচ্ছিলো, সেই মেয়ে এখন আবার তাদের মাথা নষ্ট করে দিচ্ছে বিয়ে কেন দিলো সেই অভিযোগ তুলে! আসলে এটাই সত্য যে, জীবনের প্রতিটি পর্যায়েই পরীক্ষা আছে। যারা বেসবর, তারা নিয়ামত পেয়েও বেসবর হয়। আর কৃতজ্ঞ বান্দাহ সর্বাবস্থায়ই আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট থাকে। তাই আল্লাহর নেয়া পরীক্ষায় হা-হুতাশ না করে সবর আর দু’আর পথ বেছে নিতে হবে। সেই সাথে বাবা-মাকে সবকিছু খুলে বুঝাতে হবে- আমাদের বাবা-মায়েরা যে জেনারেশনে ছিলেন, তার তুলনায় যুগ যে অনেক বদলে গেছে, তাই তারা হয়তো ইয়াং জেনারেশনের সমস্যাগুলো তাদের মত করে উপলব্ধি করতে পারেন না। তাই তাদের কাছে সঠিক চিত্রটা তুলে ধরতে হবে। এই সবকিছু বাদ দিয়ে শুধু ফেইসবুকে বসে বিয়ে নিয়ে হা হুতাশ মার্কা স্ট্যাটাস দিয়ে কোন লাভ নেই, নিজের ব্যক্তিত্ব নষ্ট করা ছাড়া।
৪. ভাই, নিজের পায়ের মাটি শক্ত করুনঃ
সেদিন এক বোনের কাছে শুনছিলাম, এক ভাই ছাত্রাবস্থায় বিয়ে করতে চাইছে, কিন্তু বাবা কোনভাবেই রাজি হচ্ছেন না ছেলে ছাত্র, কোন কামাই নেই তাই। ব্যাপারটা শুনে মনে মনে দুঃখই লাগলো- আহারে, বাইরের কিছু মুসলিম কান্ট্রির কথা শুনেছি, সেখানে বাবামায়েরা সন্তানদের ছাত্রছাত্রী অবস্থায়ই বিয়ে দিয়ে দেন, পড়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত যার যার বাবা-মাই তার সন্তানের ব্যয়ভার বহন করেন। আমাদের দেশে ছেলেমেয়েরা যে সময় বাবা-মায়ের খেয়ে হারাম সম্পর্কে জড়ায়, ওখানে ছেলেমেয়েরা সেই একই টাকায় খেয়ে বৈধ স্বামী-স্ত্রীর সাথে প্রেম করে। আমাদের দেশের অভিভাবকেরাও যদি এটুকু বুঝতো! আসলেই তো উচিৎ ছিলো সমাজে বিয়ে সহজ করার, আর যিনা কঠিন করার, কিন্তু এই সমাজে যিনা সহজ, বিয়েটাই কঠিন। আমরা সচেতন হলে হয়তো আমাদের সন্তানদের জেনারেশনে গিয়ে আমরা এমনটা করতে পারবো আল্লাহ চাইলে। তবে এখনকার জেনারেশন চাইলেই অভিভাবকদের মানসিকতা রাতারাতি বদলে ফেলতে পারবে না, তাই তাদেরকে হা-হুতাশ না করে বিকল্প পথ খুঁজতে হবে।
বিকল্প পথ হিসেবেই সেইসব ভাইয়ের প্রতি আমার পরামর্শ থাকবে- স্ত্রীর খরচটুকু কামাই করুন অন্তত, এরপর বাবাকে গিয়ে বিয়ে দিয়ে দিতে বলুন। নাহলে আমাদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে বিয়ের পর বেকার স্বামীর বাবার টাকায় খেয়ে কোন মেয়ে সাধারণত আত্মসম্মান নিয়ে থাকতে চাইবেনা, চাইলেও পারবেনা।কারণ, বাবা-মাও ঐ বউকে ভালো চোখে দেখবেনা, কথায় কথায় খোটা দিবে (বেশ কয়েকটা দ্বীনি বিয়ের এরকম অভিজ্ঞতা নিজে দেখেই এই কথাটা বললাম)। তাই বলি, একজন স্ত্রীর মাসে কত আর খরচ? হাইয়েস্ট ৫ হাজার টাকা, আর হিসেবি হলে ২/৩ হাজার টাকাতেও চলে। এইটুকু টাকা কামাই করতে পারবেন না বিয়ের জন্য? আমরা নিজেরাই এরকম ২/৩ টি বিয়ে দিয়েছি, ছেলে-মেয়ে, মেয়ে দুজনই পড়ছিলো.. এই অবস্থায়। সেই ছেলেগুলো এতটা দায়িত্ববান ছিল যে, তখনই ওরা পড়ার পাশাপাশি নিজের খরচ চালাতো, সাথে স্ত্রীর ভরণপোষণও দিতো। কেন সম্ভব না? একটা প্রাইভেট পড়ালেও তো তা দিয়ে দেয়া যায়। ওরা ছাত্রাবস্থা থেকে ফাইট করেছে, সবর করেছে, একটা সময় দুজনেই পাস করে বের হয়ে ভালো চাকরি পেয়েছে, ওদের বাচ্চারাও বড় হয়ে গেছে। দুজনে ছাত্র অবস্থায় পড়াশোনা সামলে বাচ্চাকেও সময় দিয়েছে, যুদ্ধটা হয়তো কঠিন ছিলোনা, কিন্তু ওদের দায়িত্বশীলতা ছিলো, সবর ছিলো, তাই আল্লাহ বারাকাহও দিয়েছেন সংসারে৷ বিয়ে মানে অনেক বড় একটা দায়িত্ব, একটা ছেলে বিয়ে করতে চাইলে আমরা মনে করি, তার এটুকু দায়িত্ব থাকাই উচিত। তেমনি একটা মেয়েরও। আপনি নিজেই চিন্তা করেন তো, বিয়ের পর আপনার স্ত্রীর খরচ আপনি বাবা-মার কাছে চেয়ে দিবেন, আপনার নিজের কি ভালো লাগবে? অভাবী ঘরের কত ছেলে তো ছাত্রাবস্থায় ইনকাম করে বাবা-মায়ের খরচও চালায়, আপনি একটা স্ত্রীর খরচ জোগাড় করতেও পারবেন না? এখনকার শিক্ষিত ছেলেরা দুই-চারটা গার্লফ্রেন্ড চালানোর যোগ্যতা রাখে, আর আমাদের স্বীনি ভাইয়েরা একজন স্ত্রীর খরচ জোগাড় করতে পারবেন না, সত্যিই কি তাই?
৫. বিয়ে মানেই কি দ্বীনের পূর্ণতা?
অনেক দ্বীনি ভাইবোন মনে করে থাকেন, বিয়ে করলেই বুঝি দ্বীন পূর্ণ হয়ে গেল। তার স্পাউজ তাকে তাহাজ্জুদে ডেকে দেবে, কত কত স্বপ্ন। আসলে দ্বীন তো তারই পূর্ণ হয়, যার আগেই অর্ধপূর্ণ ছিলো। বিয়ের আগের জীবনটায় যারা কঠোর দ্বীন পালন করে, তারাও বিয়ের পরে দেখেছি অনেকেই ঢিলে হয়ে যায়। একজন আরেকজনের ভালোটা দেখে শিক্ষা নেয়ার চেয়ে একজন আরেকজনের গাফলতি থেকেই শিক্ষা বেশি নেয়৷ যে মেয়েটা/ছেলেটা আগের জীবনে কোনদিন তাহাজ্জুদ পড়েনি, বিয়ের পর তাহাজ্জুদ শুরু করাটা তার জন্য আরও কঠিন হবে। যে ছেলেটা বিয়ের আগে ফজরে উঠতে পারতোনা, সে কি করে নিশ্চিত হবে যে, তার হবু স্ত্রীও ফজর কাযা করে? বিয়ের আগে খুব ভালো দ্বীনি থাকার পরও ঐটুকু ধরে রাখতে অনেক বেগ পেতে হয় সংসার আর বাচ্চাকাচ্চার প্রেশারে। আর যার আগে থেকেই দুর্বলতা, সে কি রাতারাতি বদলে যাবে? তাই বিয়ের পর আমার স্বামী/ আমার স্ত্রী এসে আমাকে বদলে দেবে, এই আশাটা দুরাশাই মাত্র। আমিতো দেখেছি, আমাদের দ্বীনি বান্ধবীদেরও বেশিরভাগ বিয়ের পর দ্বীনের ব্যাপারে আরও সহজ হয়ে গেছে, যে মেয়েটা বিয়ের আগে দুনিয়া নিয়ে ভাবতোই না, সেও বিয়ের পর দুনিয়া নিয়ে পেরেশান হয়ে যায়। আর যারা বিয়ের আগে পর্দা করতোনা বিয়ের পর করবে ভেবে, তারা বিয়ের পর স্বামীর সাথে আরও বেপর্দা হয়ে ফেইসবুকে ছবি দেয়৷ তাই দ্বীনি সঙ্গী পাওয়ার মূল উপায় হলো, আগে নিজের দ্বীনকে সংশোধন করা৷ আর বিয়ের পর স্রোতের তালে গা না ভাসিয়ে, একে অপরের দ্বীনি ভুলগুলো অগ্রাহ্য না করে ভুলগুলো ভালোবেসে ধরিয়ে দেয়া, দুইজনে মিলে দ্বীনের উপর জমে থাকার চেষ্টা করা। স্ত্রীর প্রতি দুর্বল হয়েও অনেক দ্বীনি ভাই দ্বীন ছেড়ে দেয়, অথচ এই ভালোবাসা মেকি, আল্লাহর ভালোবাসাটাই হওয়া উচিৎ চূড়ান্ত। আর সংসার জীবনে সবসময় যুহদ সংক্রান্ত কোন বই তালীমে রাখা। কেননা, যে দম্পতিকে দুনিয়ার মোহ পেয়ে বসে, তারা নিজের অজান্তেই দ্বীনকে হারিয়ে দুনিয়ার ভেতর ডুবে যায়।
৬. ‘ওকে আমি ঠিক করে নেবো’:
ছেলেরা আরেকটা খুব বড় ভুল করে, সৌন্দর্য দেখে দ্বীনে কমতি থাকার পরও বিয়ে করে ফেলে, বিয়ের পর স্ত্রীকে ঠিক করে ফেলবে, এই চিন্তায়৷ অথচ হিদায়াত আল্লাহর হাতে, মানুষ চাইলেই কাউকে বদলে ফেলতে পারেনা। এমন অনেক দ্বীনি বোনকে দেখেছি, যারা বিয়ের আগে নিক্বাব করতেন, বিয়ের পর স্বামীর সোহবতে হিজাবও ছেড়ে দিয়েছে। এমন অনেক দ্বীনি ভাইকে দেখেছি, স্ত্রীকে দ্বীনি বানিয়ে ফেলবে এই আশায় সুন্দরী অদ্বীনি বিয়ে করেছে। পরবর্তীতে স্ত্রীকে তো বদলাতে পারেই না, উল্টো নিজেই বদদ্বীনের দাওয়াতে দ্বীন ছেড়ে দিয়েছে। সুতরাং, অন্য সব কিছু স্যাক্রিফাইস করা হলেও দ্বীন স্যাক্রিফাইস করা যাবেনা, এই কথাটুকু বিয়ের আগে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। আর দু’আ করে যেতে হবে।
৭. আখলাকবিহীন দ্বীনের খোলস:
বিয়ের আগে অবশ্যই পাত্র-পাত্রীর নিকটজনের কাছে তার আখলাকের খোজ নেয়া উচিৎ। আখলাক খারাপ এমন দ্বীনি মানুষ স্পাউজ হিসেবে খুব খারাপ। কারণ, একজন সাধারণ মানুষের আচরন খারাপ হলে মানুষ কেবল তাকেই দোষ দেয়, বিপরীতে একজন দ্বীনি মানুষের আচরন খারাপ হলে সমাজ আগে আঙ্গুল তোলে তার ধর্মের দিকে, কারণ ঐ দ্বীনি মানুষেরা ধর্মের দোহাই দিয়ে নিজের ভুল আচরনকে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করে থাকেন। তাই একজন ভালো আখলাকের মানুষের দ্বীনে সামান্য ঘাটতি থাকলেও তার সাথে সংসার করা যায়, কিন্তু একজন দ্বীনি মানুষের আখলাকে বড় ধরণের সমস্যা থাকলে তার সাথে সংসার করা খুব কঠিন। এমন অনেক অনেক দ্বীনি বিয়ে ভেঙে যেতে দেখেছি, অনেক দ্বীনি বোন ফোন করেও কান্নাকাটি করেন, তারা স্বামীর লেবাস দেখে বিয়ে করেছিলেন, কিন্তু বিয়ের পর তার আখলাকের কুতসিৎ রূপটা ধরা পড়েছে। স্বামী-স্ত্রী দুজন দ্বীনি হয়েও এখন প্রচুর বিয়ে ডিভোর্স হয় শুধু কোন একজনের আখলাকের সমস্যার কারণে। তাই এই ব্যাপারে অবশ্যই বিয়ের আগে খোজ নেয়া উচিৎ বলে মনে করি। এমন কারোর কাছে খোজ নেয়া উচিৎ, যে ঐ মানুষটাকে কাছে থেকে চিনে এবং যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সত্য কথাটিই বলবে।
আজ তাহলে এটুকুই। আরেকদিন সময়-সুযোগ করে নাহয় বাকিটা বলা যাবে (ইনশাআল্লাহ)। সে পর্যন্ত আমার নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলিও আরেকটু সমৃদ্ধ হোক।
ভূমিকা:
কোন ভূমিকা ছাড়া শুরু করা যাচ্ছে না বলে দুঃখিত। এই লেখা শুধুমাত্র যারা
আল্লাহর বিধান অনুযায়ী পারিবারিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে জীবনকে সাজাতে চান
তাদের জন্য। সেকুলারিস্ট/ফেমিনিস্ট/ওয়েস্টার্ন ইসলামিস্টগণ অহেতুক পড়ে
পছন্দ হবে না। খামোখা হবে ব্যাপারটা।
ক.
এখানে সবকিছুই সুন্নাহ সাব্যস্ত নয়। কিছু আছে দলিলসাব্যস্ত, কিছু আছে
আলিমগণের নিরীক্ষিত কওল, কিছু আছে কমনসেন্স ও আদব। যদি খটকা লাগে ফিকহীভাবে
আস্থাভাজন আলিমের তাহকীক ও পরামর্শ নিবেন। কিতাব যথেষ্ট নহে। কিতাবের সাথে
রিজাল যুক্ত হলেই ইলম পূর্ণতা পায়।
খ.
পাঠ্যপুস্তকে আমাদের শুধু ভাল কেরানী, পুঁজিবাদের ভাল সেবক হওয়া শেখায়। যেন
জীবনে চাকরগিরির ক্যারিয়ারই সব। টাকা কামানোই একমাত্র উদ্দেশ্য। বেশি
বেশি বস্তু কেনাই কামিয়াবি। ভেবে দেখেন চাকরি যেমন একটা মেজর ইভেন্ট আমাদের
জীবনে, বিয়েও কি একটা মেজর ইভেন্ট না? সন্তান জন্ম ও পালনও কিএকটা মেজর
টাস্ক নয়? তাহলে আমাদের প্রচলিত শিক্ষা যদি ভবিষ্যত জীবনের জন্য আমাদের গড়ে
তোলারই দাবি করে, তবে ভালো চাকুরের সাথে ভালো স্বামী/ভালো বাবা/ ভালো
সন্তান হবার সিলেবাস কোথায়? তার মানে ওরা আপনার সুন্দর জীবন চায় না, চায়
শুধু আপনার সু্ন্দর সার্ভিসটুকু। ষাট বছর হলে ছিবড়ে ফেলে দেবে ছুঁড়ে, ব্যস।
দে ডু নট বদার যে আপনার ছেলে মানুষ হল কি না। আপনার ডিভোর্সে ওদের কিসসু
আসে যায় না। আপনি আপনার বৃদ্ধা মা-কে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠালেও ওরা দেখবেনা।
আপনার কাজ নেবার জন্যই এত আয়োজন, এতকিছু। এই নোট সিরিজটা আমাদের সিলেবাসের
সেই অসূ্র্যম্পশ্যা অংশটুকু নিয়েই যেগুলো কখনও আলোর মুখ দেখেনি।
গ.
ফিকহী বা দীনী যেটুকু শিখেছি পেয়েছি, আপনাদের খিদমতে আরজ করলাম। কারো
উপকারে এলে আল্লাহ বান্দাকে সাদাকায়ে জারিয়ার বদলা দিবেন এই আশায় লিখে
দিলেম। অভিজ্ঞতালব্ধ ও দীনী ও আদবগত জিনিসগুলোকে মেডিকেল সাইন্সে গুলিয়ে
আপনাদের জন্য শরবত বানালাম। মন্দ লাগলে উলামা হযরতগণ তো আছেনই আমাদের
সংশোধনে। আলহামদুলিল্লাহ।
ঘ.
কিছু জায়গায় ‘ভালগার’ কথা আসতে পারে। মাফ চাই। বোনদের পড়ার দরকার নেই। অতিরিক্ত কৌতূহল ভাল না কিন্তু। আপনাদের জন্যও লেখবানে। সবর।
লাড্ডু খাওয়ার আগে:
ক. চেষ্টা শুরু করুন আগেই:
অনেকেই আমরা বিয়েকে গুনাহমুক্তির উপায় মনে করি। ভাবি, এক'দিন যেমন চলছে
চলুক, বিয়ে করে একদম দরবেশ হয়ে যাব। তা তো বটেই। নতুন করে গুনাহের সম্ভাবনা
বিয়ে কমিয়ে দেয় বহুলাংশে। তবে পূর্ব থেকেই আপনি যে গুনাহগুলোতে অভ্যস্ত
সেগুলো বিয়ের পরও কাটানো সম্ভব হয় না। যেমন: পর্ণো বা হস্তমৈথুন। এমনকি এসব
কারণে সংসার ভেঙে পর্যন্ত যেতে পারে। বিস্তারিত জানুন “মুক্ত বাতাসের
খোঁজে” বইটি থেকে।
১.
বিয়ের কিছুদিন পরেই আপনি দেখবেন পর্ণোছবিতে আপনি যে বৈচিত্র্য পেতেন,
স্ত্রীর মধ্যে তা পাচ্ছেন না। আপনার ঘরের মেয়েটি একটি পবিত্র দীনদার মেয়ে।
অপরদিকে যেসব পর্ণস্টারদের আপনি দেখে অভ্যস্ত, তারা কামকলায় পারদর্শী।
পর্ণো অভিনেত্রীদের ফুলবডি মেকআপ থাকে, আপনি আপনার স্ত্রীর ত্বকের
ব্যাপারেও হতাশ হবেন। কেননা মানুষের ত্বক অমন মসৃণ হয় না, দাগ থাকে, তিল
থাকে, লোমকূপ থাকে। পর্ণো অভিনেত্রীদের নির্লজ্জ শীৎকার (কামচিৎকার) আপনি
আপনার লজ্জাশীলা স্ত্রীর মধ্যে পাবেন না। ফলে হতাশ হয়ে বৈচিত্রের জন্য আপনি
আবার ফিরে যাবেন পুরনো স্বভাবে। এজন্য বিয়ে আপনাকে এই বদভ্যাস ছাড়তে সহায়ক
হবে, তবে রাতারাতি নিয়ামক নাও হতে পারে। এজন্য বিয়ের আগেই ছাড়ার চেষ্টা
করুন। কিভাবে করবেন পরে বলছি।
২.
হস্তমৈথুন আরেক বদভ্যাস যা বিয়ের পরও ছাড়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। স্ত্রীর
মাসিকের সময় বা নাইওর গেলে আপনি সুযোগ খুঁজবেন এটা করার। কারণ পুরনো
অভ্যাস/ফ্যান্টাসি আপনার মনে হবে। স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে শয়তান আপনাকে ধোঁকা
দেবে। তাই এটাও বিয়ে আপনাকে ছাড়িয়ে দেবে তা নয়, বরং বিয়ের আগেই ছাড়তে হবে
আপনাকে।
৩.
নজরের হিফাজতে বিয়ে আপনাকে জাস্ট সাহায্য করতে পারে। কিন্তু আপনার নিজের
চেষ্টাই মুখ্য এবং তা শুরু করতে হবে বিয়ের আগে থেকেই। বিয়ে করার পর দিন
থেকেই আপনি বিরাট চক্ষুসাধক হয়ে যাবেন এমনটা নয়।
৪. আল্লাহ বলেছেন, পবিত্র নারী পবিত্র পুরুষের জন্য। আপনি যদি নিজেকে তৈরি
না করেন,পরিপূর্ণ তাওবা করে চোখের পানিতে ধুয়ে সাফ না করেন, অনুশোচনায়
পুড়িয়ে খাঁটি না হন তাহলে পবিত্র নয়নজুড়ানো স্ত্রী তো ফর্মুলামতে পাচ্ছেন
না। তাই নিজেকে নিজের স্ত্রীর জন্য তৈরি করুন। গুনাহ ছাড়ুন।
কীভাবে আগেই ছাড়বেন এগুলোঃ
১. যিকরুল্লাহর অভ্যাস
২. কুরআনের অভ্যাস
৩. নফল রোজা। আমার একদিন কি নফসের একদিন।
৪. বেশি বেশি নফল নামায গুনাহ থেকে বাঁচায় (ইশরাক, চাশত, আাওয়াবীন, তাহাজ্জুদ)
৫. ঐ মুহূর্তে ৩ টার একটা থেকে বেরিয়ে আসুন। হয় ডিভাইস থেকে, না হয় নির্জনতা থেকে, না হয় চিন্তা থেকে (কাউকে ফোন করুন, কথা বলুন)
৬. প্রতি নামাযের শেষে সূরা তাওবার শেষ ২ আয়াত, সূরা নাস, ফজরের পর ১০ বার সূরা ইখলাসের আমল করতে পারেন।
৭. ঘুমের আগে নেট চালানো বাদ।
৮. গুনাহ হয়ে গেলে তাওবা করুন। দুআ, সাদাকা করুন।
৯. পর্নোগ্রাফি যদি দেখেই ফেলেন, হস্তমৈথুনের ইচ্ছা যদি জাগে, প্রস্রাব করে আসুন, কামভাব কমে যাবে।
১০. নিজেকে শাস্তি দিতে পারেন। একবার গুনাহ হলে ২০ রাকাত নফল।
১১. ‘গুনাহ ছাড়া’ এটা আল্লাহর তাওফীক। আমি চাইলাম আর ছেড়ে দিলাম এমন না। আর
আল্লাহ তৌফিক তাকেই দেন যার তলব আছে। যে চায়। এজন্য আমার গুনাহ ছাড়ার নিয়ত
ও চেষ্টার কমতি নেই, এটা আল্লাহকে দেখাতে হবে। আল্লাহ তৌফিক দিবেন।
১২. মনের উপর নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছেন বুঝলে মিসওয়াক করুন। নফসকে কষ্ট না দিয়ে
গুনাহ ছাড়া অসম্ভব। আজকেই শেষ, নেক্সট বার থেকে কষ্ট দিব এমন হলে নেক্সট
বার আর আসবে না জীবনে।
খ. নিয়ত করুন:
১. আল্লাহর রাজির জন্য বিবাহ বসিব।
২. আল্লাহর হুকুম পুরা করার জন্য
৩. নবীজীর সুন্নাহর উপর আমলের জন্য
৪. গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য
৫. দীন পরিপূর্ণ করার জন্য
৬. জান্নাতে একসাথে থাকার জন্য
৭. বিয়ে খাহেশাত না, বিয়ে একটা পবিত্র আমল।
গ. দুআ ও আমাল:
১. সূরা ফুরক্বানের ৭৪ নং আয়াত
২. সূরা ইয়াসীনের নং আয়াত
৩. আাগেপিছে ১১ বার দরুদসহ ১১১১ বার “আল্লাহুম্মা ইয়া জামিউ'”
৪. আপনি যেমন স্ত্রী চান (হার্ডওয়্যার +সফটওয়্যার) পুরো কনফিগারেশন বলে বলে
দুআ করুন। আল্লাহকে সব বলা যায়। কোন লজ্জা করবেন না। চুল কতবড়, চোখ কেমন
চান, হাসি কেমন চান, মনটা কেমন চান, রান্না কেমন চান সব বলুন। দেখবেন
আল্লাহ এমন একটা ব্যালেন্স করে দেবেন, দিলখুশ হয়ে যাবে।
৫. সব চাওয়া শেষে লাস্টে ফয়সালা আল্লাহর উপর ছেড়ে দেন : “রাব্বি ইন্নী লিমা
আনঝালতা ইলাইয়া মিন খাইরিন ফাক্বীর”- আয় আল্লাহ, আপনি আমাকে যেটা দিবেন
ওটাই আমার দরকার, আমি ওটারই কাঙাল। (মূসা আলাইহিস সালামের দুআ)
৬. অনেক আমল আর চেষ্টার পরও বিয়ে হচ্ছেনা, নির্ভরযোগ্য স্থানে শারঈ রুকিয়া করা যেতে পারে।
ঘ. পাত্রী নির্বাচন:
কেমন সন্তান আপনি দুনিয়াতে রেখে যেতে চান প্রথমে এটা ঠিক করুন। তাহলে
সন্তানের মা নির্বাচন সহজ হয়ে যাবে। যেরকম মা দিবেন, সন্তান অমনই হবে।
স্ত্রীসহ তবলীগে গিয়ে এমন অনেক বাসায় দেখেছি ৫ বছরের মেয়ে দাওয়াতের কথাগুলো
বলছে। ৩ বছরের মেয়ে পর্দা বুঝে গেছে, মা যার সামনে যায়না সেও তার সামনে
যায় না। ১৫ মাসের মেয়ে বাচ্চা, মা ঘুমপাড়ানোর সময় আল্লাহ-আল্লাহ বলে ঘুম
পাড়াতো, সেও একটা পুতুল নিয়ে আল্লাহ-আল্লাহ স্পষ্ট বলছে আর ঘরময় ঘুরে
বেড়াচ্ছে। এজন্য নিয়ত ঠিক করুন। একটি দুর্ঘটনা, সারা জীবন-কবর-আখিরাতের
কান্না।
১. আপনি তো আর আপনার স্ত্রীর কামাই খাবেন? না। তাই আপনার স্ত্রীর শিক্ষাগত
ডিগ্রী আপনার কাজে আসবে না। অনেকে বলে বাচ্চাকে পড়ানোর জন্য শিক্ষিত মেয়ে
লাগবে। বাচ্চাকে পড়াতে মাস্টার্স পাশ মা লাগবে না। হাইস্কুলেও মাস্টার্স
টীচার অপ্রতুল। স্ত্রীর ডিগ্রী আপনাকে সুখী করবে না। আপনার প্যারেন্টস হয়ত
সমাজে ডাক্তার/ইঞ্জিনিয়ার/ক্যাডার পুত্রবধূ দেখিয়ে সুখী হতে পারেন। কিন্তু
আপনার সুখ ওতে নেই। বরং হাজার উদাহরণ পাবেন এগুলোই
(উচ্চশিক্ষা/ডিগ্রী/কোর্স/চাকরি) অশান্তির কারণ হয়েছে।
২. বংশ ভাল হওয়া দরকার। বংশ মানে খান-চৌধুরী এগুলা না। এগুলোর ইসলামে অংশ
নেই। বংশ বলতে পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের দীনদারি ও সামাজিক অবস্থান। এটা মানে
দাদা ব্রিটিশ আমলে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন কিনা, বাবা সিএসপি অফিসার
ছিলেন কি না, চৌদ্দগুষ্ঠি পাঠান কি না, আত্মীয়দের দুনিয়াবি যোগ্যতা কেমন
এগুলো বংশ দেখার প্যারামিটার না। বংশ দেখার মিটার হল দীন। কয়েক খানদান ধরে
দীনী মেজাজ আছে, ধরে নিতে পারেন মেয়ের মাঝেও দীনী পাবন্দি আছে। দুইতিন
পুরুষ আলিম বা আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে আলিম/দীনের বুঝসম্পন্ন লোক বেশি, এগুলো
দেখার বিষয়। জাস্ট ধারণার জন্য।
৩. রূপ একটা ভাইটাল বিষয়। যেহেতু আপনি টিভি দেখেন না, নজরের খিয়ানত করেন
না। স্ত্রী কিছুটা সুন্দরী হলে এটা আপনার জন্য সহজ হবে। আমার ঘরেই চাঁদ
আছে, রাস্তায় মোমবাতি দেখে কি করব? তবে এটাও আপনাকে ক্ষণিক তৃপ্তি দিতে
পারে কিন্তু চোখের শীতলতা এর মাঝেও নেই। আল্লাহ না করুন, বউয়ের আগুনরূপ
আপনার বরবাদির কারণও হতে পারে।
৪. নির্মমভাবে মেয়ের দীনদারি দেখবেন। কোন ছাড় দিবেন না। বিয়ের পর মানুষ
করব, এটা শয়তানের ধোঁকা। নিজেই জংলী হয়ে যাবেন শেষে। বিয়ের আগে দীনদারি/
দীনি শিক্ষার কি হালত, বিয়ের পর কেমন দীনদারি মেইনটেইন করতে চান আলোচনা করে
নেবেন। একমাত্র এটাই আপনাকে সুখী করবে। আর যদি কোনটা নাও থাকে দীনদার
স্ত্রীর দীনই আপনার চক্ষু শীতল করবে, নয়নজুড়ানো বউয়ের স্বামী হবেন আপনি।
নয়নজুড়াতে ৩৬-২৪-৩৬ জরুরি না। জরুরি একমাত্র দীন।
দীনদারির লেভেল বুঝবেন কিভাবে?
নামাযী মানেই দীনদার, নিকাব করলেই দীনপ্রাণা? আই ওয়াজ রিজেক্টেড বাই আ ফুল
শারঈ পর্দানশীন গার্ল বিকজ আই ওয়্যার জুব্বা এন্ড পাগড়ি। পরে জেনেছি। নামায
পড়ার চেয়ে ফুল পর্দা করা কঠিন। বোরকা পড়ার চেয়ে পর্দা লাইফস্টাইল মেনে চলা
কঠিন। দাড়িওয়ালা ছেলে বিয়ে করা আরও কঠিন। সুন্নাতের প্রতি ভালোবাসা আছে কি
না দেখবেন। পীর সহীহ কি না বুঝার মাপকাঠি হল সুন্নাহর পাবন্দি। বউও তো
একজাতীয় পীর-ই। সম্ভব হলে পুরো সুন্নাহ শইল্যে নিয়ে মেয়ে দেখতে যাবেন।
যেটুকু নিয়ে মেয়ে দেখতে যাবেন, বিয়ের পর এর চেয়ে কমবে আপনার সুন্নতগিরি।
তাই লেভেল হাই তুলে যাবেন যাতে কমলেও বেশি না কমে।
৫. আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ‘কুফু' বা সাদৃশ্য। এক হাদিসে নবীজীও কুফু
রক্ষা করতে বলেছেন। রূপে তো আপনার থেকে বেশি হতেই হবে। আর দীনদারি (এলেম
বেশি থাকাই দীনদারি না, দীন মানার যোগ্যতা/আমল হল দীনদারির মাপকাঠি) যত
বেশি ততই আপনার চোখ শীতল হবে। বাকি দুনিয়াবি বিষয়গুলো যেমন মালসম্পদ,
আভিজাত্য, শিক্ষাগত ডিগ্রী (জেনারেল/দীনী) এগুলো যেন আপনার থেকে বেশি না
হয়। সমস্যা হবে পরে। আপনার লেভেল থেকে ঠিক একটু কম বা কমসে কম সমতা যেন
থাকে, বেশি যেন না হয়। আমার খুব কাছের একজনের ঘটনা। ছেলের বাপ মেয়ের বাপকে
‘স্যার’ সম্বোধন করত, ডেকোরামে উপরে বলে। তো স্বামীস্ত্রী ঝগড়ায় এটা উঠত।
পরস্পরকে অপমানই তো করা হয় ঝগড়ায়। বিয়েটা টেকেনি। এজন্যই মোটা মোটা বিষয়ে
কুফুর ব্যাপারটা খেয়াল রাখা চাই। জেনারেল শিক্ষিতরা আলিমা কমপ্লিট বিয়ে না
করাই সাবধানতা। ইলমের কুফু। সমস্যা হতে শুনেছি, হলেও দোষ দেয়া যায় না। আমার
এই কথাগুলো মানতে কষ্ট হতে পারে, কিন্তু এটা বাস্তব, বিবাহিতরা ভাল
বুঝবেন। তবে ব্যতিক্রম যে নেই তা নয়। বহু ব্যতিক্রম আছে। আমার জানাতেই অনেক
আলিমা-জাহেল সুখে ঘর কচ্ছেন। আপাত সতর্কতার একটা ফর্মুলা বল্লাম। এক্সেপশন
ইজ নট এক্সাম্পল। (ব্যক্তিগত মত, ইগনোর করুন)
ঙ. নয়নে নয়ন:
১. পয়লা আপনার মা-বোন-ভাবীদের পাঠাবেন দেখতে। আমরা ছেলেরা রূপ দেখেই কাইত।
আর মা-বোনেরা যেয়ে খুঁটিয়ে দেখবে, মেয়ে তো মেয়ে, মেয়ের দাদীকে পর্যন্ত
খুঁটিয়ে দেখবে। আর মেয়েদের একটা কঠিন সিফত আছে। আভাসে অনেক বুঝে ফেলে।
দুএকটা প্রশ্ন করেই ভিতরের খবর বুঝে নিবে। এজন্য মা-বোনের পছন্দ হলে পরে
আপনি দেখবেন। আর না হলে আপনি না দেখেই না করে দেবেন। এতে মেয়েটার বেপর্দাও
হওয়া লাগল না আপনার সামনে খামোখা।
২. আপনার মহিলারা দেখে আসার পর বা আগে ইস্তিখারা করবেন। নবীজী যেমন গুরুত্ব
সহকারে সূরা শেখাতেন, তেমনই গুরুত্ব দিয়ে আত্তাহিয়্যাতু শেখাতেন (হাদিস)।
যেমন গুরুত্ব দিয়ে আত্তাহিয়্যাতু শেখাতেন, তেমনই গুরুত্ব দিয়ে ইস্তিখারার
দুআ শেখাতেন (হাদিস)। ওহী বন্ধ, কিন্তু ইস্তিখারা বন্ধ হয়নাই। সাতদিন
পর্যন্ত ২ রাকাত পড়ে ইস্তিখারার দুআ চলবে। স্বপ্ন দেখবেন এটা জরুরি না, তবে
কোন একদিকে মন ঝুঁকে পড়বে, পজিটিভ বা নেগেটিভ। প্রত্যেক কাজে ইস্তিখারা
করা চাই চাকরি/ব্যবসা/সাবজেক্ট চয়েস/বিয়ে/সন্তানের বিয়ে, যেকোন
গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের আগে।
৩. মেয়ের সকল তথ্যাদি, মা-বোনের রিপোর্ট, ইস্তিখারার রেজাল্ট, মেয়ের
পরিবার-আত্মীয় সম্পর্কিত ডেটা নিয়ে কোন প্রিয় ভারি বয়সের আলিমের সাথে
পরামর্শ/মাশওয়ারা করুন। ওহীর অবর্তমানে আল্লাহর পক্ষ থেকে খায়েরের ফয়সালার
জন্য নবীজী আমাদের ২ জিনিস শিখিয়েছেন- ইস্তিখারা ও আলিমের পরামর্শ। ভারি
অভিজ্ঞ আলিমের ইশারায় কাজে কনফিডেন্স পাবেন, কলিজা আর কলিজা।
৪. আপনার বাবা কিন্তু এখন মেয়ে দেখবে না। আপনার বাবা দেখবেন বিয়ের পর। যতখন
মেয়েটা আপনার বউ না হচ্ছে, ততখন সে আপনার দীনী বোন। দীনী বোনের পর্দা যেন
নষ্ট না হয়।
৫. আপনার মা/বোন কিংবা মেয়ের ভাই/মাহরামের উপস্থিতিতে আপনি মেয়েকে দেখবেন।
নবীজী তাগিদ দিয়েছেন বিয়ের আগে পরস্পরকে দেখার ব্যাপারে। একজন মুসলিমার
প্রাপ্য সম্মান বজায় রেখে কথা বলবেন। এমন কোন প্রশ্ন করবেন না যাতে সে আহত
হয়/লজ্জা পায়। কঠোর কোন দাবী করবেন না যে, বিয়ের এটা করতে হবে, ওটা করতে
হবে, রাজি আছো কি না। এক বোন আমাকে দাবি পেশ করেছিলেন, বেডরুমের পাশাপাশি
তাঁর শুধু পড়াশুনোর জন্য আরেকটা রুম লাগবে, দিতে পারবো কি না। কোনমতে মানে
মানে কেটে পড়েছি। অবশ্যই ‘আপনি’ সম্বোধনে কথা বলবেন। তাঁকেও আপনার ব্যাপারে
জানার সুযোগ দিবেন। খালি নিজেই ইন্টারভিউ নিয়ে এসে পড়বেন না। প্রশ্ন করার
সুযোগ দিবেন ম্যাডামকে।
৬. আপনার ভাল লাগলে আপনার অভিভাবকদের দ্রুত জানান। কারো একটা একটা জিনিস
সুন্দর হয় না। প্রতিটা মানুষই সামগ্রিকভাবে সুন্দর। একটা কমি পূরণ করে দেয়
আরেকটা কিছু। রূপ+কথা+দীনদারি+স্বামীকে নিয়ে স্বপ্ন সব কিছু মিলিয়েই একজন
মেয়ে সুন্দর। শুধু রূপসী বহু পাবেন যাদের বাকিগুলোয় ভয়ানক কমতি আছে। তাই
ওভারঅল নিয়ে চিন্তা করে সামগ্রিক সিদ্ধান্তে আসুন।
৭. সবার তকদীরে সবাই নেই। আপনার ভালো নাও লাগতে পারে। আপনি আপনার লোকজনকে
জানান, তাঁরা ডিপ্লোমেটিক্যালি জানিয়ে দিবেন। মেয়েটিরও আপনাকে ভাল না লাগতে
পারে। কষ্ট পাওয়ার কিছু নেই। আসল জনের জন্য দুআ করুন, আল্লাহ তাড়াতাড়ি
উহাকে আমার বুকে আনিয়া দাও।
৮. মিয়া-বিবি রাজি হয়ে গেলে শানাই বাজাবেন না। মিউজিক জায়েজ নাই। তবে দেরি
করতে নবীজী নিষেধ করেছেন। যে কারো দিল ঘুরে যেতে পারে। তাই দ্রুত তারিখ ঠিক
করার চেষ্টা করুন। আর হ্যাঁ, পছন্দের পর বিয়ের আগে মেয়ের সাথে আবার দেখা
করা তো দূর কি বাত, ফোনে গল্পগুজবও জায়েজ নেই।
আন-নিকাহ:
১.
বিয়ের তারিখ ঠিক হয়ে যাবার পর আপনাকে কঠোর কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে। একটা
সম্পর্কের শুরুটা মোটেও সমীচীন হবে না আল্লাহর নারাজি দিয়ে শুরু করা।
সুন্নাতের খেলাফ আল্লাহর হুকুম নষ্ট করে যে সম্পর্কের শুরু তা বারাকাতময়
হবে কিভাবে। খায়েশাতের বিয়ে যারা করে তারা খায়েশ পুরো করে, হৈহুল্লোড়,
ফটোগ্রাফি, ভিডিও, গায়ে হলুদ, ডিজে-ডান্স, সাউন্ড সিস্টেম, লৌকিকতা। মনে
রাখবেন, আপনি করছেন আমল, আল্লাহর খুশির জন্য। শুরুতেই ছাড় দিবেন না। নিজের
পরিবার, কনের পরিবারের সামনে স্পষ্ট করে আপনার চাওয়া জানিয়ে দিন।
ক. গায়ে হলুদ:
হবে না। এটা এবং বাগদান (এনগেজমেন্ট) দিনের আলোর মত স্পষ্ট হিন্দু
সংস্কৃতি থেকে প্রবিষ্ট। গায়ের মাহরামের ইনভলভমেন্টে ফরজ পর্দা নষ্ট হওয়া
থেকে নিয়ে ফটোগ্রাফি, ডান্স, ডিজে, লোকদেখানো অহেতুক খরচ, ফ্রিমিক্সিং
অনেকগুলো হারাম কাজের উপলক্ষ। যা কোনভাবেই আপনার দাম্পত্যজীবনে আল্লাহর
লানত ছাড়া বারাকাহ টেনে আনবে না। হুঁশিয়ার।
খ. পর্দা:
ওয়ালীমাতে নারীপুরুষ আলাদা ব্যবস্থা হবে। কনে পর্দার সাথে থাকবে। নন-মাহরাম
কেউ কনে দেখবে না। কনের ছবি কেউ তুলবে না, ভিতরের মহিলারাও না। বদদীন
মহিলারাও ছবি তুলে স্বামীকে গিয়ে দেখায়। শুরুতেই ফরজের সাথে কম্প্রোমাইজ
করবেন না। কমপক্ষে কনের পর্দা রক্ষায় কঠোর থাকুন। আল্লাহ খুশি হবেন।
গ. বিয়ে মসজিদে:
বাংলাদেশে ওপেন হার্ট সার্জারির পথিকৃৎ প্রফেসর ডা. এস. আর. খান স্যার এক
বয়ানে বলেছিলেন, মুসলমানের আবার ক্লাব-কমিউনিটি সেন্টার এগুলা কি?
মুসলমানের ক্লাব-কমিউনিটি সেন্টার হল মসজিদ। মুসলমানের অবসর কাটবে মসজিদে।
মুসলমানের বিয়েশাদী, বিচারসালিশ সকল সামাজিক কর্মকাণ্ডের মারকাজ/কেন্দ্র
হবে মসজিদ। আজ আমাদের সাথে মসজিদের কত দূরত্ব। এজন্যই আমাদের জীবনে বারাকাহ
নেই।
মুসলমানের বিয়ে মসজিদে। সুন্নাহ এটাই। মেয়ের বাবা মেয়ের অনুমতি নিয়ে মসজিদে
আসবে। মেয়ে আসবে না। ছেলের কাছে প্রস্তাব পেশ করবেন ইমাম সাহেব। ছেলে জোরে
বলবে, আলহামদুলিল্লাহ আমি কবুল করছি। ৩ বার বলা জরুরি না। চিড়িয়ার মত
দাঁড়িয়ে সবাইকে সালাম দেয়াও অদরকারি প্রথা। ব্যস, হো গ্যায়া। পুরো সমাজ,
মানে উপস্থিত মুসল্লীরা সাক্ষী হয়ে গেল যে আপনি অমুকের এত নং বেটিকে শাদী
করেছেন। ওয়ালীমা করলে সাক্ষীর সংখ্যা আরও বাড়ল। কাবিন, রেজিস্ট্রি, ২
সাক্ষী এগুলো সরকারি হিসাব। পরে করে নেবেন। আল্লাহর খাতায় আপনারা
স্বামী-স্ত্রী, মেয়েটি আপনার জন্য হালাল। সাক্ষী পুরো সমাজ।
খেজুর ছিটানো সুন্নাহ। যেহেতু বিয়ে একটা আনন্দের উপলক্ষ, নবীজী ছিটিয়ে দিতে
বলেছেন। সবাই লাফিয়ে ধরবে। ভিজা ভিজা আঠালো খেজুর নিবেন না, খোরমা নিবেন,
তাহলে ছিটালে মসজিদ ময়লা হবে না। আর পাবলিক ধরবে হাতে, মুখে চিল্লাপাল্লা
হবে না। তবে ইমাম/মসজিদের খাদিম নিষেধ করলে হাতে হাতে খেজুর বণ্টন রতে
পারেন।
ঘ. কাবিন:
কাবিননামা দ্রুত করে ফেলবেন। এখন আমাদের ঈমান দুর্বল, তাকওয়ার অভাব। কাবিন,
রেজিস্ট্রি মেয়ের নিরাপত্তার জন্য। ছেলে কিছুদিন সংসার করে পালিয়ে গেল। বা
লজ্জা ভুলে বেহায়ার মত অস্বীকার করল। তখন? মেয়েটা যেন আইনের দ্বারস্থ হতে
পারে, বিচার পায়। এজন্য বিয়ের মজলিসেই, না হয় পরে যত দ্রুত সম্ভব।
ঙ. বরযাত্রী:
৫০০ বরযাত্রী যাবে মেয়ের বাপকে খসাতে। তারপর এসে খাবার নিয়ে সমালোচনা, গেট
ধরা, শ্যালিকা হাত ধুয়ে দেয়া এসবের ইসলামে অনুমোদন নেই। হুজুর সা. নিজে
মেয়েকে আলীর রা. ঘরে দিয়ে আসেন। আবু বকর রা. গিয়ে দিয়ে আসেন আম্মাজান
আয়িশাকে রা.। মেয়ের বাড়িতে খানাপিনা হবে না। উত্তম তো কনের বাপ গিয়ে কনেকে
দিয়ে আসবে। না হয় দীনদার ছেলে সাথে ২/৩ জন গিয়ে মেয়েকে উঠিয়ে নিয়ে আসে,
মেয়ের বাসায় কিচ্ছুই খায় না। মোট কথা মেয়ের বাপের কোন খরচ নেই মেয়ে বিয়ে
দিতে। মাহর, ওয়ালীমা সব ছেলেপক্ষের খরচ। ইসলামে মেয়ে পিতার জন্য বারাকাহ।
আর আমরা হিন্দুয়ানি প্রথা ঢুকিয়ে জাহেলিয়াতের মত মেয়েকে পিতার জন্য বোঝা
বানিয়ে দিয়েছি। একান্তই মেয়ের বাবা লৌকিকতার তাগিদে খানাপিনার চাপাচাপি
করলে অনূর্ধ্ব দশ গিয়ে খেয়ে আসবেন। ইসলাম সহজ, খায়েশাতই কঠিন।
চ. যৌতুক:
প্রশ্নই ওঠে না। আগেই বলেছি মেয়ের বিয়েতে মেয়ের বাবার কোন খরচ ইসলাম
রাখেনি। খবরদার। কোন চাপাচাপি/দাবি করবেন না। শ্বশুর জামাইকে হাদিয়া দিবে
ভাল কথা। এজন্য সারা জীবন পড়ে আছে। বহুত হাদিয়া দিবে। জাস্ট বিয়ের সময়
নিবেন না। এমনকি বরের বাসায় কাপড়চোপড় পাঠানো, তা নিয়ে আবার গীবতের মজমা
বসে। আপনি একটু কঠোর হলে কত গুনাহ রোধ করতে পারেন।
অনেকে যৌতুক নেন না ঠিকই, আবার বউকে কথাও শোনান। বরযাত্রী যান না, আবার
শাশুড়ি বউকে খোঁটাও দেয়, তোমার বাপের তো কোন খরচই হয়নি, খালি মেয়েটা দিয়েই
খালাস। অনেকসময় এই খোঁটার ভয়েই মেয়ের বাপ অনুষ্ঠান করে/যৌতুক দিতে চায়।
মুসলিমকে এই খোঁটা দেয়া/উপহাস ভয়াবহ রকমের কবিরা গুনাহ। তাওবা ছাড়া মাফ না
হবার সম্ভাবনা।
কিছু বিষয়ে আল্লাহর জন্য কঠোর হয়ে যেতে হয়। যারা বেজার হবে, তাদের খুশি
করার দায়িত্ব আল্লাহর (হাদিস)। আপনার কাজ শুধু আল্লাহকে খুশি করা। যত
পরিমাণ সুন্নাহর উপর আমল হবে ধরে নিবেন আপনার দাম্পত্য জীবন তত সুখের হবে
ইনশাআল্লাহ।
২.
অনেক সময় এত স্ট্রিক্ট থাকা সম্ভব হয় না। আপনি শুরুতেই ছাড় দিলে আপনার সব
যেত, ফরজও যেত। এখন শুরুতে কঠোর হলেন, ছাড় দিলেও কিছু তো হবে। আল্লাহর কিছু
ফরজ হুকুম তো রাখতে পারবেন। এখন আলিমগণের সাথে পরামর্শ করে ঠিক করুন
কতটুকু ছাড় দিবেন। ফরজ পর্দা প্রভৃতির সাথে আপোস প্রশ্নই আসে না। তুলনামূলক
কম সিরিয়াস বিষয়গুলো আলিমের পরামর্শক্রমে ছাড় দিতে পারেন।
ছ. মাহর:
আমার আগে ১ জন মাত্র রাবী, সহীহ সনদ। মেয়ের বাপ মাহর চেয়েছে ৪০ লাখ টাকা।
কেন? আমার মেয়েকে যদি ছেলে ছেড়ে দেয়। ঠিকই ৬ মাসের মধ্যে ৪০ লাখ টাকা পে
করেই ডিভোর্স হয়েছে।
বেশি মাহর বিয়ে টেকার ইনসিওরেন্স না। বরং যে বিয়ে মাহর কম, সে বিয়েতে
বারাকাহ বেশি (হাদিস)। মাহর বিষয়টার অনেক সামাজিক প্রভাব আছে। উলামাগণের
অনেক কিতাবও পাবেন। প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখি, হঠাৎ যদি আপনি মারা যান, আপনার
স্ত্রীসন্তান যেন পথে বসে না যায়, কিছুটা আর্থিক সিকিউরিটি ইস্যু। তাই বরের
সামর্থ্যানুযায়ী যতটা সম্ভব মাহর নির্ধারণ করুন। সামর্থ্যের মধ্যেই
বেশিটা। লোক দেখানোর জন্য সামর্থ্যের অতিরিক্ত মাহর দাম্পত্য বিপর্যয়ের
কারণ হতে পারে।
অনেকে মাহরে ফাতেমী নির্ধারণ করেন। আলী রা. যে মাহরে ফাতিমা রা. কে বিয়ে
করেছিলেন। আলী-ফাতিমা রা. কেমিস্ট্রির বারাকাহ পাবার জন্য এটা করা হয়,
কেননা এতে স্বয়ং নবীজীর অনুমোদন ছিল, সেই হিসেবে। তবে এটাও জরুরি না। জরুরি
হল সামর্থ্যের ভিতরে লৌকিকতা বিবর্জিত হওয়া। আলিমগণের সাথে পরামর্শ করতে
ভুলবেন না এ বিষয়ে।
জ. বাসর-রাত/ প্রথম-রাত:
কিছু ইলমের জন্য নির্ধারিত সময় আছে। অসময়ে শিখলে তা ভাল ফল বয়ে আনে না। ফিতনার কারণ হয়। বান্দা পরীক্ষায় পড়ে যায়।
- বাসররাতের আগ পর্যন্ত যারা পৌঁছে গেছেন বাস্তব জীবনে
- ঈদের পর বাসররাতে পৌঁছবেন
- অলরেডি বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করেছেন
- সুন্দর দাম্পত্য জীবন কাটাচ্ছেন
- যৌনজীবন নিয়ে সমস্যায় আছেন,
এই চ্যাপ্টারটা শুধুই তাদের জন্য। বাকিরা পড়া মানে নিজের ‘অবিবাহিত জীবন' আরও কঠিন করে ফেলবেন এবং ফিতনায় পড়ে যাবেন।
তাই নোটের এই অংশটুকু ঈদের পর দেয়া হবে শুধু উপরের ক্রাইটেরিয়ার ভাইদেরকে
ইনবক্সে। কোন ঈদ তা পরে জানিয়ে দেব না, এখনই জানিয়ে দিচ্ছি। এই বছর রোজার
ঈদের পর ইনশাআল্লাহ। সমাপ্তিও ওখানেই টানব খন।
অধিক কৌতূহলবশত কেউ মিথ্যা হলফ করে নিজেকে বিবাহিত দাবি করে কেউ যদি নোট
চান, এবং নিজেকে জটিল পরীক্ষায় আবিষ্কার করেন, লেখক তা থেকে দায়মুক্ত
ইনশাআল্লাহ। যারা নোটটা নিবেন তারাও তাঁদেরকেই দিবেন যারা উপরের শর্ত পুরা
করেন। প্লিজ অধমকে গুনাহগার বানাবেন না। অনেক বিশ্বাস করে আপনাদেরকে দিব
জিনিসটা।
ডাক্তার হবার সুবাদে অনেক মানুষ, তাবলীগের সাথী, সমবয়েসী উলামাগণ যৌনজীবনের
বিভিন্ন সমস্যায় পরামর্শ চেয়েছেন নানান সময়। সেগুলো সামনে নিয়ে কিছু
পড়াশুনা করেছি, বিভিন্ন তথ্য তাদের থেকে নিয়েছি, সমাধান প্রস্তাব করে
ফিডব্যাক নিয়েছি, কৌশল শিখিয়ে ফিডব্যাক নিয়েছি। আলিমগণের এ বিষয়ে তেমন লেখা
চোখে পড়েনি। পরবর্তী নোটের টপিক মোটামুটি এমন: যৌনমিলন, যৌনসমস্যা ও
প্রতিকার (ওষুধ ছাড়া) এবং সন্তান ধারণ। নিজের চিকিৎসা বিদ্যা, আলিমগণের
পরামর্শ ও জনাত্রিশেক মানুষকে দেয়া সমাধান (নন-মেডিসিন) ও নেয়া ফিডব্যাক
থেকে লব্ধ কৌশল আপনাদের সামনে তুলে আনব। ইনবক্সে চাহিবামাত্র ঈদের পর দেয়া
হইবে। সেকুলার বিজ্ঞান আসলেই পূর্ণ ফলাফল দেয় না যতক্ষণ তাওহীদ/ আল্লাহর
দেয়া সমাধান না মেশানো হয়। সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি।
ঝ. সারাজীবনসাথী:
আর দাম্পত্য জীবনে আচরণ কেমন হবে সে বিষয়ে নিচের বইগুলো পড়ার প্রস্তাব থাকবে।
১. দুজন দুজনার, মাওলানা আতীক উল্লাহ দা. বা.
২. ওগো শুনছো, ঐ
৩. আই লাভ ইউ, ঐ
৪. প্রিয়তমা, মাওলানা সালাহউদ্দিন জাহাঙ্গীর দা.বা.
৫. মুফতি আবদুল্লাহ আল- মাসুম দা. বা. রচিত একটা বই আছে দারুণ।
৬. মাওলানা যুলফিকার আহমদ নকশবন্দী দা.বা. এর একটা বই আছে।
সবগুলোর নির্যাস নিয়ে একটা নোট লেখার ইচ্ছা রইল। আল্লাহ কবুল ফরমান।
* Shamsul Arefin Shakti
পাত্রী সৌন্দর্যে যতই প্রসিদ্ধ হোক তবুও তাকে বিবাহের পূর্বে এক ঝলক দেখে নেওয়া উত্তম। ঘটকের চটকদার কথায় সম্পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা না রেখে জীবন-সঙ্গিনীকে জীবন তরীতে চড়াবার পূর্বে সবচক্ষে যাচাই করে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। এতে বিবাহের পর স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বন্ধনে মধুরতা আসে, অধিক ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। একে অপরকে দোষারোপ করা থেকে বাঁচা যায় এবং বিবাহের পর পস্তাতে হয় না।
পাত্রী দেখতে গিয়ে পাত্র যা দেখবে তা হল, পাত্রীর কেবল চেহারা ও কব্জি পর্যন্ত হস্তদ্বয়। অন্যান্য অঙ্গ দেখা বা দেখানো বৈধ নয়। কারণ, এমনিতে কোন গম্য নারীর প্রতি দৃক্পাত করাই অবৈধ। তাই প্রয়োজনে যা বৈধ, তা হল পাত্রীর ঐ দুই অঙ্গ।
এই দর্শনের সময় পাত্রীর সাথে যেন তার বাপ বা ভাই বা কোন মাহরাম থাকে। তাকে পাত্রের সাথে একাকিনী কোন রুমে ছেড়ে দেওয়া বৈধ নয়। যদিও বিয়ের কথা পাক্কা হয়।
পাত্র যেন পাত্রীর প্রতি কামনজরে না দেখে।[1] আর দর্শনের সময় তাকে বিবাহ করার যেন পাক্কা ইরাদা থাকে।
পাত্রীকে পরিচয় জিজ্ঞাসা বৈধ। তবে লম্বা সময় ধরে বসিয়ে রাখা বৈধ নয় এবং বারবার বহুবার অথবা অনিমেষনেত্রে দীর্ঘক্ষণ তার প্রতি দৃষ্টি রাখাও অবৈধ। অনুরূপ একবার দেখার পর পুনরায় দেখা বা দেখতে চাওয়া বৈধ নয়।[2]
পাত্রীর সাথে মুসাফাহা করা, রসালাপ ও রহস্য করাও অবৈধ। কিছুক্ষণ তাদের মাঝে হৃদয়ের আদান-প্রদান হোক, এই বলে সুযোগ দেওয়া অভিভাবকের জন্য হারাম।
এই সময় পাত্রীর মন বড় করার জন্য কিছু উপহার দেওয়া উত্তম। কারণ,
‘‘স্মৃতি দিয়ে বাঁধা থাকে প্রীতি, প্রীতি দিয়ে বাঁধা থাকে মন,
উপহারে বাঁধা থাকে স্মৃতি, তাই দেওয়া প্রয়োজন।’’
অবশ্য পাত্রীর গলে নিজে হার পরানো বা হাত ধরে ঘড়ি অথবা আংটি পরানো হারাম। পরন্তু পয়গামের আংটি বলে কিছু নেই। এমন অঙ্গুরীয়কে শুভাশুভ কিছু ধারণা করা বিদআত ও শির্ক। যা পাশ্চাত্য-সভ্যতার রীতি।[3]
এরপর পছন্দ-অপছন্দের কথা ভাবনা-চিন্তা করে পরে জানাবে।
অনুষ্ঠান করে ক্ষণেকের দেখায় পাত্রী আচমকা সুন্দরী মনে হতে পারে অথবা প্রসাধন ও সাজসজ্জায় ধোঁকাও হতে পারে। তাই যদি কেউ বিবাহ করার পাক্কা নিয়তে নিজ পাত্রীকে তার ও তার অভিভাবকের অজান্তে গোপনে থেকে লুকিয়ে দেখে, তাহলে তাও বৈধ। তবে এমন স্থান থেকে লুকিয়ে দেখা বৈধ নয়, যেখানে সে তার একান্ত গোপনীয় অঙ্গ প্রকাশ করতে পারে। অতএব স্কুলের পথে বা কোন আত্মীয়র বাড়িতে থেকেও দেখা যায়।
প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,
إِذَا خَطَبَ أَحَدُكُمْ امْرَأَةً فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ أَنْ يَنْظُرَ إِلَيْهَا إِذَا كَانَ إِنَّمَا يَنْظُرُ إِلَيْهَا لِخِطْبَتِهِ وَإِنْ كَانَتْ لَا تَعْلَمُ.
‘‘যখন তোমাদের কেউ কোন রমণীকে বিবাহ প্রস্তাব দেয়, তখন যদি প্রস্তাবের জন্যই তাকে দেখে, তবে তা দূষণীয় নয়; যদিও ঐ রমণী তা জানতে না পারে।’’[4]
সাহাবী জাবের বিন আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমি এক তরুণীকে বিবাহের প্রস্তাব দিলে তাকে দেখার জন্য লুকিয়ে থাকতাম। শেষ পর্যন্ত আমি তার সেই সৌন্দর্য দেখলাম যা আমাকে বিবাহ করতে উৎসাহিত করল। অতঃপর আমি তাকে বিবাহ করলাম।[5]
পাত্রী দেখার সময় কালো কলপে যুবক সেজে তাকে ধোঁকা দেওয়া হারাম। যেমন পাত্রীপক্ষের জন্য হারাম, একজনকে দেখিয়ে অপরজনের সাথে পাত্রের বিয়ে দেওয়া। প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন,
لَيْسَ مِنَّا مَنْ غَشَّ.
‘‘যে (কাউকে) ধোঁকা দেয়, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’’ (ইর ১৩১৯নং)
পক্ষান্তরে একজনের সাথে বিবাহের কথাবার্তা হয়ে বিবাহ-বন্ধনের সময় অন্যের সাথে ধোঁকা দিয়ে বিয়ে দিলে সে বিবাহ শুদ্ধ নয়। এমন করলে মেয়েকে ব্যভিচার করতে দেওয়া হবে।[6]
পাত্রের বাড়ির যে কোন মহিলা বউ দেখতে পারে। তবে পাত্র ছাড়া কোন অন্য পুরুষ দেখতে পারে না; পাত্রের বাপ-চাচাও নয়। সুতরাং বুনাই বা বন্ধু সহ পাত্রের পাত্রী দেখা ঈর্ষাহীনতা ও দ্বীন-বিরোধিতা। পাত্রী ও পাত্রীপক্ষের উচিৎ, একমাত্র পাত্র ছাড়া অন্য কোন পুরুষকে পাত্রীর চেহারা না দেখানো। নচেৎ এতে সকলেই সমান গোনাহগার হবে। কিন্তু যে নারীকে না চাইলেও দেখা যায়, সে (টোঁ-টোঁ কোম্পানী) নারী ও তার অভিভাবকের অবস্থা কি তা অনুমেয়।
পাত্রী দেখার আগে অথবা পরে বাড়ির লোককে দেখানোর জন্য পাত্রীর ফটো বা ছবি নেওয়া এবং পাত্রীপক্ষের তা দেওয়া ইসলামে নিষিদ্ধ। বিশেষ করে বিবাহ না হলে সে ছবি রয়ে যাবে এ বেগানার কাছে। তাছাড়া ঈর্ষাহীন পুরুষ হলে সেই ছবি তার বন্ধু-বান্ধব ও অন্যান্য পুরুষ তৃপ্তির সাথে দর্শন করবে। যাতে পাত্রী ও তার অভিভাবকের লজ্জা হওয়া উচিৎ।
অবশ্য প্রগতিশীল (দুর্গতিশীল) অভিভাবকের কাছে এসব ধর্মীয় বাণী হাস্যকর। কিন্তু আল্লাহর আযাব তার জন্য ভয়ংকর।
﴿فَلْيَحْذَرِ الَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَنْ تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ﴾
‘‘সুতরাং যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় অথবা কঠিন শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করবে।’’[7]
পক্ষান্তরে পাত্রীকে সরাসরি না দেখে তার ছবি দেখে পছন্দ সঠিক নাও হতে পারে। কারণ, ছবিতে সৌন্দর্য বর্ধন এবং ত্রুটি গোপন করা যায় সে কথা হয়তো প্রায় সকলেই জানে।
পাত্রীরও পছন্দ-অপছন্দের অধিকার আছে। সুতরাং পাত্রকে ঐ সময় দেখে নেবে। (বিবাহের দিন বিবাহবন্ধনের পূর্বে বাড়িতে দেখায় বিশেষ লাভ হয় না।) তার পছন্দ না হলে সেও রদ্ করতে পারে।[8]
বিশেষ করে অপাত্র, বিদআতী, মাযারী, বেনামাযী, ফাসেক, ধূমপায়ী, মদ্যপায়ী, বদমেজাজী প্রভৃতি দেখে ও শুনে তাকে বিয়ে করতে রাজী না হওয়াই ওয়াজেব। কিন্তু হায়! সে সুপাত্র আর ক’জন সুশীলার ভাগ্যে জোটে। আর সে সুশীলাই বা আছে ক’জন? পক্ষান্তরে দ্বীন ও চরিত্রের অনুকূল কোন বিষয় অপছন্দ করে অমত প্রকাশ করা আধুনিকাদের নতুন ফ্যাশান। তাই তো কেউ পাত্র অপছন্দ করে এই জন্যে যে, পাত্রের দাড়ি আছে! অথবা বোরকা পরতে হবে। বাইরে যেতে পাবে না! সিনেমা ও মেলা-খেলা দেখতে পাবে না। পাত্র প্যান্ট্ পরে না, পাত্রের হিপ্পি নেই, সোজা টাইপের তাই -যদিও সে খোজা নয়! তাই তো যুবকরা আল্লাহ ও তদীয় রসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে তাদের প্রিয়তমা ও প্রণয়িনীদের একান্ত অনুগত হতে শুরু করেছে। নচেৎ হয়তো বিয়েই হবে না অথবা প্রেয়সীর মনসঙ্গ পাবে না! পণের গরম বাজারেও এরূপ উদাহরণ যথেষ্ট পরিদৃষ্ট হয়! কানা বেগুনের ডোগলা খদ্দেরের অভাব নেই কোথাও! বরং এই বেগুন ও তার খদ্দের দিয়েই হাটের প্রায় সমস্ত স্থান পূর্ণ। সুতরাং আল্লাহর পানাহ।
একশ্রেণীর সভ্য (?) মানুষ যারা বউ দেখতে গিয়ে দ্বীন বিষয়ে কোন প্রশ্ন করে না। ‘নামায পড়ে কি না, কুরআন পড়তে জানে কি না’--এসব বিষয় জানার কোন প্রয়োজনই মনে করে না। পক্ষান্তরে নাচ-গান জানে কি না, সেতারা-বেহালা বাজাতে পারে কি না---সে সব বিষয়ে প্রধান প্রশ্ন থাকে! আহা! পাঁচজনকে খোশ করতে পারলে তবেই তো বউ নিয়ে গর্ব হবে! এই শ্রেণীর মানুষ সভ্য (?) হতে পারে, কিন্তু প্রকৃত ‘মুসলিম’ নয়।
পাত্রী পছন্দ না হলে পাত্র বা পাত্রপক্ষ ইঙ্গিতে জানিয়ে দেবে যে, এ বিয়ে গড়া তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। স্পষ্টরূপে পাত্রীর কোন দোষ-ত্রুটি তার অভিভাবক বা অন্য লোকের সামনে বর্ণনা করবে না। যে উপহার দিয়ে পাত্রীর মুখ দেখেছিল তা আর ফেরৎ নেওয়া বৈধ নয়, উচিৎও নয়। তবে বিয়ে হবেই মনে করে যদি অগ্রিম কিছু মোহরানা (ব’লে উল্লেখ করে) দিয়ে থাকে তবে তা ফেরৎ নেওয়া বৈধ এবং পাত্রীপক্ষের তা ফেরৎ দেওয়া কর্তব্য।[9]
পরন্তু সামান্য ত্রুটির কারণে বিবাহে জবাব দিয়ে অঙ্গীকার ভঙ্গ করা বৈধ নয়। কারণ অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে তা ভঙ্গ করা মুনাফিকের লক্ষণ।[10]
যেমন কোন ‘থার্ড পার্টি’র কথায় কান দিয়ে অথবা কোন হিংসুকের কান-ভাঙ্গানি শুনে বিয়ে ভেঙ্গে পাত্রীর মন ভাঙ্গা উচিৎ নয়।
অনুরূপ মনে পছন্দ হলেও ‘পণে’ পছন্দ না হয়ে পাত্রীর কোন খুঁত বের করে বিয়েতে জবাব দেওয়া নির্ঘাত ডবল অন্যায়। নও-সম্বন্ধের ভোজের ডালে লবণ কম হয়েছিল বলে ‘ওরা মানুষের মান জানে না’ দুর্নাম দিয়ে দ্বীনদার পাত্রী রদ্ করাও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। পেটুকের মত খেয়ে বেড়ানো অভ্যাস হলে, বিয়ের পাক্কা ইরাদা না নিয়ে (যে মেয়ে হারাম সে) পাত্রী দেখে বেড়ালে, নিশ্চয় তা সচ্চরিত্রবান মানুষের রীতি নয়।
বৈবাহিক সম্পর্ক কায়েম করার ব্যাপারে কোন দ্বীনদার মানুষ যদি কারো কাছে পরামর্শ নেয় তবে পাত্র বা পাত্রীর দোষ-গুণ খুলে বলা অবশ্যই উচিৎ।[11] যেহেতু মুসলিম ভাই যদি তার সমক্ষে, তার জানতে-শুনতে কোন বেদ্বীন বা বিদআতী ও নোংরা পরিবেশে প্রেমসূত্র স্থাপন করে বিপদে পড়ে তবে নিশ্চয় এর দায়িত্ব সে বহন করবে। যেহেতু সঠিক পরামর্শ দেওয়া এক আমানত। অবশ্য অহেতুক নিছক কোন ব্যক্তিগত স্বার্থে বা হিংসায় অতিরঞ্জন করে বা যা নয় তা বলে বিয়ে ভাঙ্গানোও মহাপাপ। তাছাড়া পরহিতৈষিতা দ্বীনের এক প্রধান লক্ষ্য।[12] এ লক্ষ্যে পৌঁছনো সকল মুসলিমের কর্তব্য।
পরন্তু ‘‘যে ব্যক্তি কোন মুসলিম ভায়ের কোন বিপদ বা কষ্ট দূর করে আল্লাহ কিয়ামতে তার বিপদ ও কষ্ট দূর করবেন।’’[13] কন্যাদায় আমাদের দেশের বর্তমান সমাজে এক চরম বিপদ। এ বিপদেও মুসলিম ভাইকে সাহায্য করা মুসলিমের কর্তব্য। অর্থ, সুপরামর্শ ও সুপাত্রের সন্ধান দিয়ে উপকার, বড় উপকার। অবশ্য এমন উপকারে নিজের ক্ষতি এবং বদনামও হতে পারে। কারণ, পাত্র দেখে দিয়ে মেয়ের সুখ হলে তার মা-বাবা বলবে, ‘আল্লাহ দিয়েছে।’ পক্ষান্তরে দুখ বা জবালা-জবলন হলে বলবে, ‘অমুক দিলে বা বিপদে ফেললে।’ অথচ সুখ-দুঃখ উভয়ই আল্লাহরই দান; ভাগ্যের ব্যাপার। তাছাড়া জেনে-শুনে কেউ কষ্টে ফেলে দেয় না। কিন্তু অবুঝ মানুষ অনিচ্ছাকৃত এসব বিষয়ে উপকারীকেও অপকারীরূপে দোষারোপ করে থাকে; যা নির্ঘাত অন্যায়। আর এ অন্যায়ে সবর করায় উপকারীর অতিরিক্ত সওয়াব লাভ হয়।
দ্বীনদার সুপাত্র পেলে অভিভাবকের উচিৎ বিলম্ব না করা। বাড়িতে নিজেদের খিদমত নেওয়ার উদ্দেশ্যে, আরো উঁচু শিক্ষিতা করার উদ্দেশ্যে (যেহেতু বিয়ের পরও পড়তে পারে) অথবা তার চাকুরির অর্থ খাওয়ার স্বার্থে অথবা গাফলতির কারণে মেয়ে বা বোনের বিয়ে পিছিয়ে দেওয়া বা ‘দিচ্ছি-দিব’ করা তার জন্য বৈধ নয়।[14]
প্রিয় নবী (সাঃ) বলেন, ‘‘তোমাদের নিকট যদি এমন ব্যক্তি (বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে) আসে যার দ্বীন ও চরিত্রে তোমরা সন্তুষ্ট তবে তার (সাথে কন্যার) বিবাহ দাও। যদি তা না কর তবে পৃথিবীতে ফিৎনা ও বড় ফাসাদ সৃষ্টি হয়ে যাবে।’’[15] তখন ঐ মেয়ের পদস্খলন ঘটলে কোর্টকাছারি বা দাঙ্গা-কলহও হতে পারে।
প্রকাশ যে, যুবতীর বয়স হলে উপযুক্ত মোহর, সুপাত্র ও দ্বীনদার বর থাকা সত্ত্বেও অভিভাবক নিজস্ব স্বার্থের খাতিরে অন্যায়ভাবে তার বিবাহে বাধা দিলে সে নিজে কাজীর নিকট অভিযোগ করে বিবাহ করতে পারে।[16] নচেৎ কেবলমাত্র কারো প্রেমে পড়ে, কোন অপাত্রের সাথে অবৈধ প্রণয়ে ফেঁসে বের হয়ে গিয়ে কোর্টে ‘লাভ ম্যারেজ’ করা এবং অভিভাবককে জানতেও না দেওয়া অথবা তার অনুমতি না নিয়ে বিবাহ করা হারাম ও বাতিল। সাধারণতঃ ব্যভিচারিণীরাই এরূপ বিবাহ করে চিরজীবন ব্যভিচার করে থাকে।[17]
পরন্তু প্রেম হল ধূপের মত; যাতে সুবাসের আমেজ থাকলেও তার সূত্রপাত হয় জবলন্ত আগুন দিয়ে, আর শেষ পরিণতি হয় ছাই দিয়ে। তাই প্রেমে পড়ে আগা-পিছা চিন্তা না করে স্বামী বা স্ত্রী নির্বাচন করায় ঠকতে হয় অধিকাংশে।
ছেলের বয়স হলেও সত্বর বিবাহ দেওয়া অভিভাবকের কর্তব্য। ছেলেকে ছোট ভেবে অবজ্ঞা করা উচিৎ নয়। ছেলে ‘বিয়ে করব না’ বললেও তারা কর্তব্যে পিছপা হবে না। কারণ, ‘‘পুরুষের একটা বয়স আছে; যখন নারী-নেশা গোপনে মনকে পেয়ে বসে। অবস্থার চাপে সে বিয়ে করবে না বললেও, সত্যি সত্যি ‘না’ করলেও ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নারী-সান্নিধ্যের কথা পরের মুখ দিয়ে শুনতেও মন্দ লাগে না। মন বলে, ‘চাই চাই’, মুখ বলে, ‘চাইনে।’’ অবস্থা এই হলে তার বন্ধু-বান্ধবের নিকট থেকেও সে রহস্য উদ্ঘাটিত হতে পারে। সুতরাং অভিভাবক সতর্ক হলে পাপ থেকে রেহাই পেয়ে যাবে।
পক্ষান্তরে অভিভাবক যদি যুবককে বিয়েতে বাধা দেয় অথবা দ্বীনদার সুপাত্রীকে বিয়ে করতে না দিয়ে তার কোন আত্মীয় অপাত্রীকে বউ করে আনতে চায় অথবা পণে পছন্দ না হয়ে বিয়েতে অস্বাভাবিক বিলম্ব করেই যায় তবে সে ক্ষেত্রে মা-বাপের অবাধ্য হওয়া পাপ নয়। ব্যভিচারের ভয় হলে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বাধ্য হওয়াই মুসলিম যুবকের উচিৎ।
তবে নিছক কারো প্রেমে পড়ে সুপাত্রী দ্বীনদার যুবতী ছেড়ে মা-বাপের কথা না মেনে নিজের ইচ্ছামত অপাত্রী বিবাহ করা বা ‘লাভ ম্যারেজ’ করায় পিতামাতার তথা আল্লাহ ও রসূলের অবাধ্যতা হয়। আল্লাহ যাতে রাজী, তাতে মা-বাপ বা সাতগুষ্ঠি রাজী না হলেও কোন ক্ষতি হয় না। পক্ষান্তরে যাতে আল্লাহ রাজী নন, তাতে মা-বাপ ও চৌদ্দগুষ্ঠিকে রাজী করা যুবকের আত্মীয় ও মাতৃপিতৃভক্তি নয় বরং প্রবৃত্তি ও আত্মতৃপ্তির পরিচয়।
কোন পাত্রের ব্যাপারে পাত্রী বা পাত্রীপক্ষের অথবা কোন পাত্রীর ব্যাপারে পাত্র বা পাত্রপক্ষের সন্দেহ হলে এবং সম্পর্ক গড়তে সংশয় ও দ্বিধা হলে ইস্তিখারা করলে ফল লাভ হয়। আল্লাহ তাঁর দ্বীনদার বান্দা-বান্দীকে সঠিক পথ নির্দেশ করেন।[18]
সুপাত্রে কন্যা পড়লে সত্যিই সৌভাগ্যের বিষয়। ‘দশ পুত্রসম কন্যা; যদি সুপাত্রে পড়ে।’
পাত্র-পাত্রী পছন্দ এবং বাগদানের পর তাদের আপোসের মধ্যে আসা-যাওয়া, পত্রালাপ, টেলিফোনে দূরালাপ, একান্তে ভ্রমণ, একে অপরকে বিশেষভাবে পরীক্ষা করার জন্য অবাধ মিলামিশা, কোর্ট্শিপ বা ইউরোপীয় প্রথায় তাদের আপোসের মধ্যে মন দেওয়া-নেওয়া প্রভৃতি ইসলামে বৈধ নয়। ‘বিয়ে তো হবেই’ মনে ক’রে বিবাহ-বন্ধনের পূর্বে বাগদত্তার সাথে স্ত্রীরূপ ব্যবহার, নির্জনতা অবলম্বন, একাকী কুরআন শিক্ষা দেওয়া প্রভৃতিও হারাম।[19] অবশ্য বিবাহ আক্দ সম্পন্ন হয়ে থাকলে তার সাথে (সারার পূর্বেও) স্ত্রীর মত ব্যবহার করতে এবং কুরআন ও দ্বীন শিক্ষা ইত্যাদি দিতে পারে। সমাজে তা নিন্দনীয় হলেও শরীয়তে নিন্দনীয় নয়।[20]
বিবাহের পূর্বে ভালোরূপে ভেবে নিনঃ-
আপনি কি ভালোবাসার মর্মার্থ জানেন? কেবল যৌন-সুখ লুটাই প্রকৃত সুখ নয়---তা জানেন তো? আপনি কি আপনার তাকে সুখী ও খুশী করতে পারবেন?
আপনি তাকে চিরদিনের জন্য নিজের অর্ধেক অঙ্গ মনে করতে পারবেন? আপনার স্বাস্থ্যরক্ষার চেয়ে দাম্পত্য-সুখ রক্ষা করতে কি অধিক সচেষ্ট হতে পারবেন?
আপনাদের উভয়ের মাঝে কোন ভুল বুঝাবুঝির সময় সন্ধির উদ্দেশ্যে একটুও নমনীয়তা স্বীকার করতে পারবেন তো? বিবাহ আপনার বহু স্বাধীনতা হরণ করে নেবে, সে কথা জানেন তো? দাম্পত্য কেবল কয়েক দিনের সফর নয় তা জানেন তো?
বলা বাহুল্য, বিবাহ কোন মজার খেলা নয়। বিবাহ কাঁধের জোঁয়াল। বিবাহ একটি অনুষ্ঠানের নাম, যাতে কনের আঙ্গুলে আংটি এবং বরের নাকে লাগাম পরানো হয়। স্ত্রীর গলায় হার এবং স্বামীর গলায় বেড়ি পরানো হয়। বিবাহ ‘দিল্লী কা লাড্ডু; (হাওয়া-মিঠাই) যো খায়েগা ওহ ভী পছতায়েগা, আওর যো নেহীঁ খায়েগা ওহ ভী পছতায়েগা!