Monday, June 21, 2021

৪২. স্বামী -স্ত্রী একত্রে কিভাবে জামাত করে সালাত আদায় করবে? Marriage education series

 No photo description available.

 

বাড়িতে সালাত সংক্রান্ত মাসায়েল
[বর্তমান প্রেক্ষাপটে সকল মুসলিমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ]
▬▬▬▬▬●●●▬▬▬▬▬
 
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসে মানবিক বিপর্যয়ের প্রেক্ষিতে বেশিরভাগ মানুষ বাড়িতে সালাত আদায় করছে। তাই সঙ্গত কারণে অনেকেই এ বিষয়ে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করছে।
নিম্নে ফেসবুকের ভাইবোনদের বাড়িতে জামাআতে সালাত, একাকী সালাত এবং সালাত সংক্রান্ত খুঁটিনাটি বিষয়ে করা কিছু প্রশ্ন এবং সেগুলোর উত্তর সম্মানিত পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো। হয়ত অনেকেই এখান থেকে উপকৃত হবে আশা করি।
 
❖ ১. প্রশ্ন: পুরুষদের জন্য বাড়িতে মা, বাবা, ভাই, বোন, স্ত্রী-সন্তান ইত্যাদি সবাইকে নিয়ে এক সাথে জামাআতে সালাত আদায় কি জায়েজ আর তার পদ্ধতি কি?
উত্তর:
 
● শরিয়ত সম্মত ওজরের কারণে (যেমন: ঝড়বৃষ্টি, ভয়, নিরাপত্তাহীনতা, ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা ইত্যাদি) যদি মসজিদে সালাত আদায় করা সম্ভব না হয় তাহলে বাড়িতে সালাত আদায় করা জায়েজ। এ ক্ষেত্রে মা, বাবা, ভাই, বোন, স্ত্রী-সন্তান ইত্যাদি পরিবারের সকলকে নিয়ে জামাতের সাথে সালাত আদায় করা উত্তম।
পদ্ধতি হল:
 
● পুরুষদের মধ্য থেকে যার কুরআন তিলাওয়াত সবচেয়ে ভালো সে ইমাম হয়ে সালাত পড়াবে আর তার পেছনে অন্যান্য পুরুষ বা ছেলে-সন্তানরা দাঁড়াবে। সবচেয়ে পেছনে দাঁড়াবে মহিলারা।
 
● যদি পুরুষ/ছেলে মাত্র দু জন হয় তাহলে তারা পাশাপাশি দাঁড়াবে এবং অন্যান্য মহিলারা (এমনকি একজন হলেও) তাদের পেছনে দাঁড়াবে।
 
● স্বামী-স্ত্রী কেবল দু জন হলে স্বামী ইমাম হয়ে সামনে দাঁড়াবে আর স্ত্রী তার পেছনে দাঁড়াবে।
 
● কোন মহিলার জন্য পুরুষের ইমামতি করা জায়েজ নেই। তবে মহিলারা মহিলাদের ইমামতি করতে পারবে।
 
● অনুরূপভাবে পুরুষ এবং মহিলা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে জামাআতের সাথে সালাত আদায় করা জায়েজ নেই।
 
---------------------
❖ ২. প্রশ্ন: দু জন ব্যক্তি মিলে কি জামাআতে সালাত আদায় করা যাবে?
উত্তর: হ্যাঁ, দুজনেও জামাআতে সালাত আদায় করা যাবে এবং এতেও জামাআতের সওয়াব পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ।
 
মালিক ইবনে হুওয়ায়ইরিস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, দু জন লোক সফরে যাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করার জন্য নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর নিকট এলে তিনি তাদেরকে বললেন, 
 
إِذَا أَنْتُمَا خَرَجْتُمَا فَأَذِّنَا ثُمَّ أَقِيمَا ثُمَّ لِيَؤُمَّكُمَا أَكْبَرُكُمَا
 
“তোমরা বের হলে (পথে সালাতের সময় হলে) আজান দিবে। অতঃপর ইক্বামাত দিবে এবং তোমাদের উভয়ের মধ্যে যে বয়সে বড় সে ইমামতি করবে।” 
 (সহিহ বুখারি, অধ্যায়: আজান, অনুচ্ছেদ: মুসাফিরদের জামা’আতের জন্য আযান ও ইক্বামাত দেয়া। হা/ ৬২৮)
---------------------
❖ ৩. প্রশ্ন: দু জন কি এক সাথেই দাঁড়াবে নাকি একজন সামনে এবং একজন পেছনে দাঁড়াবে?
উত্তর:
দু জন সালাত আদায়কারী পুরুষ হলে পাশাপাশি দাঁড়াবে। এ ক্ষেত্রে সমান্তরালভাবে ইমামের ডান পার্শ্বে মুক্তাদি দাঁড়াবে; চার আঙ্গুল আগেপিছে হয়ে নয়।
[আমাদের সমাজে দু ব্যক্তি জামাআতে সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে ইমাম ও মুক্তাদিকে চার আঙ্গুল আগেপিছে হয়ে দাঁড়াতে দেখা যায়। এটা সুন্নতের বরখেলাফ। বিস্তারিত দেখুন পরবর্তী প্রশ্নোত্তর।]
আর একজন পুরুষ ও একজন মহিলা হলে পুরুষ সামনে ইমাম হয়ে আর মহিলা তার পেছনে মুক্তাদি হয়ে সালাত আদায় করবে।
---------------------
❖ ৪. প্রশ্ন: দু জন মিলে জামাআতে সালাত আদায় করলে মুক্তাদি ইমামের ডান পার্শ্বে না কি বাম পার্শ্বে দাঁড়াবে এবং সে ক্ষেত্রে সে কি ইমামের বারাবর দাঁড়াবে না কি কিছুটা পেছনে সরে দাঁড়াবে? এ ব্যাপারে দলিল কি?
উত্তর:
দু জন ব্যক্তি জামাআতে সালাত আদায় করলে মুক্তাদি ইমামের ডান পাশে দাঁড়াবে। এ ক্ষেত্রে ইমাম মুক্তাদি পাশাপাশি পায়ের সাথে পা মিলিয়ে দাঁড়াবে। মুক্তাদি ইমাম থেকে চার আঙ্গুল বা কিছুটা পেছনে সরে দাঁড়ানোর প্রচলিত রীতি সুন্নাহ পরিপন্থী।
ইমাম বুখারী সহিহ বুখারীতে এ মর্মে একটি অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন:
بَاب يَقُومُ عَنْ يَمِينِ الْإِمَامِ بِحِذَائِهِ سَوَاءً إِذَا كَانَا اثْنَيْنِ
“পরিচ্ছেদঃ দু’জন ব্যক্তি সলাত আদায় করলে, মুক্তাদী ইমামের ডানপাশে সোজাসুজি দাঁড়াবে।”
তারপর তিনি নিম্নোক্ত হাদিসটি পেশ করেন:
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ بِتُّ فِي بَيْتِ خَالَتِي مَيْمُونَةَ فَصَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْعِشَاءَ، ثُمَّ جَاءَ فَصَلَّى أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ ثُمَّ نَامَ، ثُمَّ قَامَ فَجِئْتُ فَقُمْتُ عَنْ يَسَارِهِ، فَجَعَلَنِي عَنْ يَمِينِهِ، فَصَلَّى خَمْسَ رَكَعَاتٍ، ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ، ثُمَّ نَامَ حَتَّى سَمِعْتُ غَطِيطَهُ ـ أَوْ قَالَ خَطِيطَهُ ـ ثُمَّ خَرَجَ إِلَى الصَّلاَةِ‏
ইবনু ‘আববাস রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,আমি আমার খালা মায়মুনা রা. এর ঘরে রাত কাটালাম। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘ইশার সালাত আদায় করে আসলেন এবং চার রাক‘আত সালাত আদায় করে শুয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর উঠে সালাতে দাঁড়ালেন। তখন আমিও তাঁর বামপাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমাকে তাঁর ডানপাশে নিয়ে নিলেন এবং পাঁচ রাক‘আত সালাত আদায় করলেন।
অতঃপর আরও দু’রাক‘আত সালাত আদায় করে নিদ্রা গেলেন। এমনকি আমি তাঁর নাক ডাকার শব্দ শুনতে পেলাম। তারপর তিনি (ফজরের) সালাতের জন্য বের হলেন।
[সহীহ বুখারী (তাওহীদ) / অধ্যায়ঃ ১০/ আযান (كتاب الأذان), পরিচ্ছেদঃ ১০/৫৭. দু’জন সলাত আদায় করলে, মুক্তাদী ইমামের ডানপাশে সোজাসুজি দাঁড়াবে। হাদিস নং তাওহীদ প্রকাশনী: ৬৯৭ , আধুনিক প্রকাশনী: ৬৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন: ৬৬৩)]
তাছাড়া হাদিসে কাতার সোজা করার ব্যাপারে যথেষ্ট গুরুত্ব এসেছে এবং কাতারে বক্রতা থাকার ব্যাপারে সতর্কতা বর্ণিত হয়েছে।
এখানে ইমাম ও মুক্তাদি দুজন হলেও যেহেতু এটি একটি কাতার সেহেতু মুক্তাদি এভাবে ইমাম থেকে একটু পেছনে সরে দাঁড়ালে কাতারে বক্রতা সৃষ্টি হলো। সে কারণে তা সুন্নাহ পরিপন্থী কাজ হবে।
সঠিক পদ্ধতি হল, দুজন ব্যক্তি সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে ইমাম ও মুক্তাদি সমান্তরালভাবে পাশাপাশি দণ্ডায়মান হবে। তবে মুক্তাদি সতর্ক থাকবে যেন, সে ইচ্ছাকৃত ভাবে ইমাম থেকে কিছুটা সামনে চলে না যায়। ইচ্ছাকৃত ইমামের সামনে চলে গেলে মুক্তাদির সালাত বাতিল হয়ে যাবে। কিন্তু বেখেয়ালে সামনে চলে গেলে তৎক্ষণাৎ পেছনে সরে আসবে। এতে সালাতের কোন ক্ষতি হবে না ইনশাআল্লাহ।
--------------------
❖ ৫. প্রশ্ন: আমার সাত বছরের ছেলেকে নিয়ে কি আমি ঘরে জামাআতে সালাত আদায় করতে পারব?
উত্তর:
ঝড়বৃষ্টি, ভয়, নিরাপত্তাহীনতা, ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কা ইত্যাদি কারণে পুরুষ ব্যক্তি যদি ঘরে সালাত আদায় করে তাহলে সে তার স্ত্রী-পরিবারকে নিয়ে জামাআতে সালাত আদায় করতে পারবে। ছেলে যদি বয়সে ছোটও হয় তবুও সে বাবার পাশে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতে পারবে।
---------------------
❖ ৬. প্রশ্ন: আমার ছেলের বয়স ৯ বছর। সে কি আমার ইমাম হতে পারবে?
উত্তর:
হ্যাঁ, সে যদি ভালোভাবে কুরআন পড়তে পারে আর ইমামতির যোগ্যতা রাখে তাহলে সে ইমাম হয়ে সালাত পড়াতে পারবে।
বিস্তারিত পড়ুন:
প্রশ্ন: ৭/৮ বছর বয়সের শিশুর ইমামতিতে সালাত আদায় করা কি বৈধ?

 
 
প্রশ্ন:- ৭/৮ বছর বয়সের শিশুর ইমামতিতে সালাত আদায় করা কি বৈধ?
▬▬▬🔸🔹🔸▬▬▬
প্রশ্ন: আমার ছেলের বয়স সাড়ে সাত বছর। মাদরাসায় পড়ে। খুব সুন্দর কুরআন তিলাওয়াত করতে পারে। কুরআনের আম্মা পারা (৩০তম পারা) মুখস্থ হয়েছে। সুতরাং আমরা মহিলারা যদি বাড়িতে তার ইমামতিতে জামাআতের সাথে নামায আদায় করি তাহলে কি শুদ্ধ হবে?
উত্তর:
❑ মূল প্রশ্নের উত্তর জানার আগে আমরা আলোচনা করবো, মূলত: ৭/৮ বছরের শিশুর ইমামতি করা বৈধ কি না?

 

উত্তর হল, কোন শিশু যদি ‘ভাল-মন্দ পার্থক্য করার বয়সে’ উপনীত হয় তাহলে সে যদি সঠিকভাবে সালাত পড়াতে পারে এবং তার কিরাআত বিশুদ্ধ হয় তাহলে (অধিক অগ্রাধিকারযোগ্য মতানুসারে) তার ইমামতিতে নামায আদায় করা জায়েয আছে- (যদিও এ বিষয়ে আলেমদের মাঝে দ্বিমত রয়েছে। )

 

✅ ইসলামী শরীয়তে সর্বনিম্ন ৭ বছর বয়সের শিশুকে مميَّز বা ‘ভালো-মন্দ পার্থক্যকারী’ হিসেবে গণ্য করা হয়। (৭ বছরের শিশু বলতে বুঝায়, যার বয়স ৭ বছর পূর্ণ হয়েছে)
কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৭ বছরের শিশুকে নামাযের আদেশ করতে নির্দেশ প্রদান করেছেন। তিনি বলেন:
«مُرُوا أوْلاَدَكُمْ بِالصَّلاةِ وَهُمْ أبْنَاءُ سَبْعِ سِنينَ، وَاضْرِبُوهُمْ عَلَيْهَا، وَهُمْ أبْنَاءُ عَشْرٍ، وَفَرِّقُوا بَيْنَهُمْ في المضَاجِعِ»
‘‘তোমরা নিজেদের সন্তান-সন্ততিদেরকে নামাযের আদেশ দাও; যখন তারা সাত বছরের হবে। আর তারা যখন দশ বছরের সন্তান হবে, তখন তাদেরকে নামাযের জন্য প্রহার কর এবং তাদের বিছানা পৃথক করে দাও।’’ (আবূ দাউদ, হাসান সূত্রে। রিয়াযুস সালিহীন, হ/306 অধ্যায়: ১/ বিবিধ (كتاب المقدمات) তাওহীদ পাবলিকেশন)
সুতরাং এ বয়সী ছেলের ইমামতিতে নামায পড়া পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্য বৈধ- যদি তার মধ্যে নামায পড়ানোর যোগ্যতা থাকে এবং সে সুন্দরভাবে কুরআন তিলাওয়াত করতে পারে।
➤ এ মর্মে হাদিস হল:
আমর ইবনে সালামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
فَإِذَا حَضَرَتِ الصَّلَاةُ فَلْيُؤَذِّنْ أَحَدُكُمْ وَلْيَؤُمَّكُمْ أَكْثَرُكُمْ قُرْآنًا فَنَظَرُوا فَلَمْ يَكُنْ أَحَدٌ أَكْثَرَ قُرْآنًا مِنِّي لِمَّا كُنْتُ أَتَلَقّى مِنَ الرُّكْبَانِ فَقَدَّمُونِي بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَأَنَا ابْنُ سِتِّ أَوْ سَبْعِ سِنِينَ وَكَانَتْ عَلَيَّ بُرْدَةٌ كُنْتُ إِذَا سَجَدْتُ تَقَلَّصَتْ عَنِّي فَقَالَتِ امْرَأَةٌ مِنَ الْحَيِّ أَلَا تُغَطُّونَ عَنَّا اسْتَ قَارِئِكُمْ فَاشْتَرَوْا فَقَطَعُوْا لِي قَمِيْصًا فَمَا فَرِحْتُ بِشَيْءٍ فَرَحِي بِذلِكَ الْقَمِيْصِ.
“সলাতের সময় হলে তোমাদের একজন আযান দেবে। আর তোমাদের মধ্যে যে বেশি ভালো কুরআন পড়তে জানে সে ইমামতি করবে।”
যাহোক যখন সলাতের সময় হল (জামা‘আত প্রস্তুত হল) লোকজন কাকে ইমাম বানাবে সে ব্যাপারে পরস্পরের প্রতি দেখতে লাগল। কিন্তু আমার চেয়ে ভালো কুরআন পড়ুয়া কাউকে পায় নি। তখন তারা আমাকেই (ইমামতি করার জন্য) আগে বাড়িয়ে দিলো। এ সময় আমার বয়স ছিল ছয় অথবা সাত বছর।” (বুখারী, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) হাদিস নম্বরঃ [1126] অধ্যায়ঃ পর্ব-৪ঃ সলাত (كتاب الصلاة) হাদিস একাডেমী)
- নাসায়ীতে এসেছে, এমতাবস্থায় আমি আট বছরের ছেলে।
- আবূ দাউদে এসেছে, এমতাবস্থায় আমি সাত বা আট বছরের ছেলে।
সুতরাং উপরোল্লিখিত শর্ত সাপেক্ষে সাত বছরের শিশু (অর্থাৎ যার বয়স ৭ বছর পূর্ণ হয়ে ৮ বছরে পদার্পণ করেছে) ইমামতি করতে পারে।
তবে যে মসজিদে তার চেয়ে বড় বয়সের ইলম ও কিরাআতের ক্ষেত্রে যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তি রয়েছে তাকেই ইমামতির দায়িত্ব দেয় উচিৎ। কারণ ইমামতি একটি গুরু দায়িত্ব এবং বিরাট জিম্মাদারি-যা ছোট শিশুর হাতে অর্পন করা সঙ্গত নয়।

 

❑ ৭/৮ বছরের শিশু বাড়িতে তার মা-বোনদেরকে নিয়ে জামাআতে নামায আদায় করা কি শরীয়ত সম্মত?
উত্তর:
আমরা ইতোপূর্বে জেনেছি যে, নামায পড়ানোর যোগ্যতা ও কুরআন তিলাওয়াত ভালো হলে ৭/৮ বছর বয়সের ছেলের ইমামতি করা বৈধ। কিন্তু বাড়িতে তার মা, বোন এবং অন্যান্য মহিলাদেরকে নিয়ে জামাআতে ফরয সালাত পড়ানো ঠিক নয়। বরং তারাবীহ, তাহাজ্জুদ বা অন্যান্য নফল সালাত পড়াতে পারে। অথবা ঝড়-তুফান ও মেঘ-বৃষ্টির দিনে অথবা যদি অন্য কোন বিশেষ পরিস্থিতিতে মসজিদে যাওয়া কষ্টকর হয় তাহলে ফরজ নামাযও পড়াতে পারে। কিন্তু সাধারণ অবস্থায় ফরজ নামাযের জন্য ছেলেদেরকে মসজিদে যাওয়া জরুরি। তাই ফরয সালাতের ক্ষেত্রে মসজিদে না গিয়ে বাড়িতে মহিলাদেরকে নিয়ে ইমামতি করা উচিৎ নয়।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬🔸🔹🔸▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আবদুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার. KSA
 
 
 
---------------------
❖ ৭. প্রশ্ন: যদি কখনো বাড়িতে সালাত (ফরয) পড়া হয় তাহলে কিরাআত এবং তাকবির মনে মনে বললে কি যথেষ্ট হবে?
উত্তর:
একাকী সালাত আদায়ের সময় জেহরি সালাত তথা যে সকল সালাতে কিরাআতে আওয়াজ উঁচু করতে হয় (যেমন: মাগরিব ও ইশার ১ম দু রাকআত ও ফজরের দু রাকআত) সে সকল সালাতে কিরাআতে আওয়াজ উঁচু করা সুন্নত। 
 
তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন, তার পাশের কোন সালাতরত বা কুরআন তেলাওয়াত কারী ব্যক্তি থাকলে তার ডিস্টার্ব না হয়।
 
আর তাকবীরের ব্যাপারে কথা হল, একাকী নামাজের ক্ষেত্রে তাকবীর উঁচু করবে না। কেননা তাকবীর উঁচু করা ইমামের জন্য কতর্ব্য- যখন তার পেছনে অন্যান্য মুক্তাদি থাকবে, যেন তারা তার অনুসরণ করতে পারে। কিন্তু একাকী সালাত আদায়ের সময় তা প্রয়োজন নাই। (এটাই জুমহুর তথা অধিকাংশ আলেমের অভিমত)
 
---------------------
❖ ৮. প্রশ্ন: জেহরি সালাতে চুপিস্বরে কিরাআত পাঠ কলে কি সালাত শুদ্ধ হবে না?
উত্তর:
জেহরি সালাতে চুপিস্বরে কিরাআত পড়লেও সালাত শুদ্ধ হবে। তবে সুন্নত আদায়ের স্বার্থে একটু উঁচুস্বরে কিরাআত পাঠ করা ভালো।
---------------------
 
❖ ৯. প্রশ্ন: একাকী ফরজ সালাত আদায়ের সময় দীর্ঘক্ষণ সেজদা করে তাতে কি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামে এর শিখানো দুআগুলো পড়া যাবে?
 
উত্তর:
ফরজ, সুন্নত, নফল ইত্যাদি যে কোনো সালাতে রুকু ও সেজদাকে লম্বা করা জায়েজ আছে। আর সেজদা অবস্থায় প্রথমে সেজদার তাসহিগুলো পাঠ করার পর কুরআন-হাদিসের যে কোন দুআ পাঠ করা জায়েজ আছে।
উল্লেখ্য যে, সাধারণত: রুকু-সেজদা অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত জায়েজ নয়। তবে সেজদা অবস্থায় কুরআনের দুআ সম্বলিত আয়াতগুলো দুআর নিয়তে পাঠ করতে কোনো আপত্তি নাই ইনশাআল্লাহ।
 
---------------------
❖ ১০. প্রশ্ন: যদি বাইরের কোন পুরুষ মানুষ না থাকে তাহলে মেয়েরা বাড়িতে একাকী সালাত আদায় করার সময় কিছুটা আওয়াজ উুঁচু করে কি কিরাআত পাঠ করতে পারবে?
উত্তর:
 
হ্যাঁ, মহিলারাও জেহরি সালাত (মাগরিব ও ইশার প্রথম দু রাকআত ও ফজরের দু রাকআত) বাড়িতে পড়ার সময় একটু উঁচু আওয়াজে কুরআন তিলাওয়াত করতে করবে- যদি পর পুরুষ তার কণ্ঠ শোনার সম্ভাবনা না থাকে অথবা তার পাশের কোন ঘুমন্ত ব্যক্তির ডিস্টার্ব না হয়।
 
---------------------
❖ ১১. প্রশ্ন: আমি জানতাম যে, নামাযের সময় দুই পা চার আঙ্গুল সমপরিমাণ ফাঁকা রাখতে হয়। কিন্তু একটা বইয়ে দেখলাম যে, দু পায়ের মাঝে কোন ফাঁকা না রাখা চলবে না। সঠিক নিয়ম জানালে উপকার হতো।
উত্তর:
সালাতে একজন মানুষ তার সুবিধা অনুযায়ী মধ্যমপন্থায় স্বাভাবিকভাবে দাঁড়াবে। দু পায়ের মাঝে চার আঙ্গুল বা তার চেয়ে কম বা বেশি ফাঁকা রাখতে হবে হাদিসে এমন কোন নির্দেশনা আসে নি।
 
তবে দু পা’কে একসাথে লাগিয়ে রাখা সুন্নত পরিপন্থী। তাই একটু ফাঁকা রাখা উচিত।
روى النسائي: أن عبد الله بن مسعود رأى رجلاً يصلي قد صف بين قدميه، فقال: (أخطأ السنة)، ولو راوح بينهما كان أحب إلي
---------------------
❖ ১২. প্রশ্ন: ফজরের দু রাকআত সু্ন্নত সালাত কি কি ফরজ নামাজের আগে পড়তে হয় নাকি পরে? আমি কনফিউজড।
উত্তর:
ফজরের দুই রাকাত সুন্নত ফরজের আগে পড়তে হয়। কিন্তু কোন কারণ বশত ফরজের আগে পড়তে না পারলে ফরজের পর অথবা সূর্য উঠার ১৫/২০ মিনিট পর থেকে জোহর সালাতের আগ পর্যন্ত সময়ের মাঝে যে যে কোনো সময় পড়ে নেওয়া যায়।
তবে আমাদের সমাজে যেটা দেখা যায় যে, মসজিদে ইকামত হয়ে যাওয়ার পরে কিছু মানুষ পরে মসজিদে এসে কাতারের পেছনে একাকী সুন্নত শুরু করে। এটা হাদিস পরিপন্থী কাজ। কেননা হাদিসে এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِذَا أُقِيمَتْ الصَّلَاةُ فَلَا صَلَاةَ إِلَّا الْمَكْتُوبَةُ (مسلم)
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যখন ফরয সালাতের ইকামত হয়ে যাবে তখন ফরজ ছাড়া অন্য কোন সালাত নাই।” (সহিহ মুসলিম)
---------------------
❖ ১৩. প্রশ্ন: এক রাকআত অতিবাহিত হওয়ার পর ২য় রাকআতে শরিক হলে মুক্তাদি কি ২য় রাকআতে বসে আত্তাহিয়্যাতু পড়বে?
উত্তর:
হ্যাঁ, ২য় রাকআতে ইমাম বৈঠক করবে। তার সাথে পেছনের মাসবুক (যে পরে এসে জামাআতে শরিক হয়েছে) সেও ইমামের অনুসরণে বসবে এবং আত্তাহিয়াতু পাঠ করবে। 
 
▮ ১৪. প্রশ্ন: ইমামতি করার নিয়তটা জানতে চাই।
উত্তর:
যে ইমাম হবে তার অন্তরে এ বিষয়টা উপস্থিত থাকাই যথেষ্ট যে, সে ইমাম হয়ে নামাজ পড়াচ্ছে আর তার পেছনে মুক্তাদিগণ তাকে অনুসরণ করছেে।
অত:পর সালাত শুরু করার পর তার কর্তব্য হবে, তাকবিরে তাহরিমা, রুকুতে যাওয়া, রুকু থেকে উঠা, সেজদায় যাওয়া, সেজদা থেকে মাথা উঠানো ইত্যাদি ক্ষেত্রে তাকবিরগুলো আওয়াজ করে দেয়া যেন তার পেছনের মুক্তাদিগণ তাকে অনুসরণ করতে পারে।
কিন্তু শরিয়তে ইমাম অথবা মুক্তাদি কারো জন্যই মুখে গদ বাধা নিয়ত উচ্চারণ করার কোন ভিত্তি নাই। সুতরাং তা বিদআত।
 
▮ ১৫. প্রশ্ন: বাড়িতে জামাত করে নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে আজান ও ইকামত দিতে হবে কি?
উত্তর:
বাড়ির পাশে মহল্লার মসজিদের আজান শোনা গেলে সেটাই যথেষ্ট। বাড়িতে আলাদাভাবে আজান দেয়ার প্রয়োজন নাই। কিন্তু যদি মসজিদ বাড়ি থেকে অনেক দূরে হয় অথবা আজান শোনা না যায় তাহলে বাড়িতে আজান দেয়া উত্তম। তবে সর্বাবস্থায় ফরজ সালাত ইকামত দিয়ে পড়া সুন্নত।
 
▮ ১৬. প্রশ্ন: ঘরে জামাতে নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে ঘরে যদি একজন পুরুষ থাকে আর বাকিরা তার মা আর বোন। সে ক্ষেত্রে ইকামত কে দিবে?
উত্তর:
 
এ ক্ষেত্রে পুরুষ ব্যক্তি ইমাম হয়ে সামনের কাতারে দাঁড়াবে আর মহিলারা দাঁড়াবে তার পেছনের কাতারে।
আজান ইকামত যেহেতু কেবল পুরুষদের বৈশিষ্ট্য সেহেতু উক্ত পুরুষ ব্যক্তি নিজেই ইকামত দিয়ে সালাত শুরু করবে; কোন মহিলা ইকামত দিবে না।
 
▮ ১৭. প্রশ্ন: কোন ব্যক্তির কারণ বশত: জামাআত ছুটে গেলে বাড়িতে স্বামী-স্ত্রী দুজনে জামাআতে সালাত আদায় করতে পারে কি? এবং স্বামী -স্ত্রী একত্রে কিভাবে জামাত করে সালাত আদায় করবে?
উত্তর:
পুরুষের জন্য মসজিদে গিয়ে জামাআতের সাথে সালাত আদায় করা সুন্নতে মুআক্কাদা। (অনেক আলেমের মতে ওয়াজিব)। তাই কোন কারণে ১ম জামাআত ছুটে গেলে মসজিদে গিয়ে ২য় জামাআত, ৩য় জামাআতে...সালাত আদায় করবে। অন্যথায় একাকী সালাত আদায় করবে।
কিন্তু ঝড়-বৃষ্টি, রাস্তার নিরাপত্তা হীনতা, ভয়-ভীতি, রোগ ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ইত্যাদি কারণে যদি বাড়িতে সালাত আদায় করতে হয় তাহলে স্বামী-স্ত্রী এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরকে নিয়ে জামাআতে সালাত আদায় করবে। এ ক্ষেত্রে স্বামী ইমাম হিসেবে সামনের কাতারে থাকবে, ছেলে সন্তানরা তার পরের কাতারে আর স্ত্রী ও মেয়েরা শেষ কাতারে দাঁড়াবে।
কেবল স্বামী-স্ত্রী মিলে জামাআত করলে স্বামী সামনে আর স্ত্রী তার পেছনে দাঁড়াবে। এটাই সঠিক পদ্ধতি।
 
▮ ১৮. প্রশ্ন: বাবা, মা, এক ছেলে ও এক মেয়ে হলে জামাআতে দাঁড়ানোর পদ্ধতি কি দলিল সহ জানাবেন।
উত্তর:
বাবা ইমাম হবে আর ছেলে তার ডান পাশে দাঁড়াবে। অথবা ছেলে ইমাম হবে আর বাবা তার ডান পাশে দাঁড়াবে। (এ ক্ষেত্রে ইমাম-মুক্তাদি বরাবর থাকবে। চার আঙ্গুল বা আধহাত আগে-পিছে হওয়া ঠিক নয়-যেমনটি আমাদের সমাজে প্রচলিত)
আর মা ও মেয়ে দাঁড়াবে তাদের পেছনে। অর্থাৎ বাবা ও ছেলে দু জন দাঁড়াবে সামনের কাতারে আর মা ও মেয়ে দুজন দাঁড়াবে পেছনের কাতারে।:
হাদিসে এসেছে:
عَنْ أنَسِ بنِ مَالِكٍ، أنَّ جَدَّتَهُ مُلَيْكَةَ دَعَتْ رَسولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ لِطَعَامٍ صَنَعَتْهُ له، فأكَلَ منه، ثُمَّ قالَ: قُومُوا فَلِأُصَلِّ لَكُمْ قالَ أنَسٌ: فَقُمْتُ إلى حَصِيرٍ لَنَا، قَدِ اسْوَدَّ مِن طُولِ ما لُبِسَ، فَنَضَحْتُهُ بمَاءٍ، فَقَامَ رَسولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ، وصَفَفْتُ واليَتِيمَ ورَاءَهُ، والعَجُوزُ مِن ورَائِنَا، فَصَلَّى لَنَا رَسولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ رَكْعَتَيْنِ، ثُمَّ انْصَرَفَ.
আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত যে, তাঁর দাদী মুলায়কাহ রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে খাওয়ার দাওয়াত দিলেন, যা তাঁর জন্যই তৈরি করেছিলেন। তিনি তা থেকে খেলেন, এরপর বললেন: উঠ, তোমাদের নিয়ে আমি সালাত আদায় করি।
আনাস রা. বলেনঃ আমি আমাদের একটি চাটাই আনার জন্য উঠলাম, তা অধিক ব্যাবহারে কাল হয়ে গিয়েছিল। তাই আমি সেটি পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিলাম। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের জন্য দাঁড়ালেন। আমি ও একজন এতিম বালক (যুমায়রা) তাঁর পেছনে দাঁড়ালাম আর বৃদ্ধা দাদী আমার পেছনে ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে দু রাকআত সালাত আদায় করলেন। তারপর তিনি চলে গেলেন।
[সহিহ বুখারি (ইফাঃ) হা/৩৭৩, অধ্যায়: ৮/ সালাত, পরিচ্ছদ: ২৬১- চাটায়ের উপর সালাত আদায় করা।]
 
▮ ১৯. প্রশ্ন: দু ভাই জামাতে নামাজ পড়লে এক ভাই ইমাম হবে। কিন্তু আরেক ভাই তার পাশে দাঁড়াবে না কি পেছনে? আর তারা তিন জন হলে কে কোথায় দাঁড়াবে?
উত্তর:
দু ভাই জামাতে নামাজ পড়লে দুজনের মধ্যে যে ভালো কুরআন পড়তে পারে সে ইমাম হবে আর আরেক ভাই তার পাশে সমান্তরাল ভাবে দাঁড়াবে (চার আঙ্গুল বা আধা হাত আগে পিছে নয়)।
আর তিন বা ততোধিক (ভাই বা অন্য যে কোনো পুরুষ) হলে, তাদের মধ্যে যে সবচেয়ে ভালো কুরআন তিলাওয়াত করতে পারে সে ইমাম হয়ে সামনে দাঁড়াবে আর বাকিরা তার পেছনে দাঁড়াবে।
 
▮ ২০. প্রশ্ন: বোনেরা কি ভাইয়ের সাথে জামাতে সালাত আদায় করতে পারবে?
উত্তর:
হ্যাঁ, ভাই-বোন একসাথে বাড়িতে জামাআতে সালাত আদায় করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে ভাই ইমাম হিসেবে সামনে দাঁড়াবে আর বোন দাঁড়াবে তার পেছনে। জামাআতে সালাত পড়ার সময় পুরুষ-মহিলা পাশাপাশি দাঁড়ানো জায়েজ নাই।
 
▮ ২১. প্রশ্ন: জায়গা স্বল্পতার কারণে কি স্বামী-স্ত্রী একসাথে দাঁড়িয়ে জামাতে সালাত আদায় করতে পারবে।
উত্তর:
জায়গা স্বল্পতার কারণে স্বামী-স্ত্রী পাশাপাশি দাঁড়ালেও জুমহুর বা অধিকাংশ আলেমের মতে সালাত সহিহ হবে। কেননা এতে সালাত বাতিল হওয়ার দলিল নাই। যদিও হানাফি মাজহাব অনুযায়ী এভাবে দাঁড়াতে সালাত বাতিল হয়ে যাবে। কিন্তু এর পক্ষে কোন দলিল নাই।
 
▮ ২২. প্রশ্ন: জামাআত ছাড়া একাকী নামাযের সময় স্ত্রী যদি স্বামীর সামনে বা পাশে থাকে তাহলে কি সলাত শুদ্ধ হবে?
উত্তর:
জামাআত ছাড়া একাকী সালাত আদায়ের সময় স্ত্রী যদি স্বামীর সামনে থাকে বা পাশে থাকে তাহলে ইনশাআল্লাহ উভয়ের সালাত শুদ্ধ হবে। হাদিসে কেবল নারী-পুরুষ জামাআতে সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে নারীকে পুরুষের পেছনের কাতারে দাঁড়াতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাই জামাআত ছাড়া একাকী সালাতের ক্ষেত্রে তা আবশ্যক নয়।
 
▮ ২৩. প্রশ্ন: নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয়েছে কিন্তু মসজিদে এখনো আযান হয় নি। সেক্ষেত্রে একাকী নামাজ আদায় করলে কি আযান দিতে হবে নাকি শুধু ইকামত দিলেই হবে?
উত্তর:
যদি নামাজের ওয়াক্ত হয়ে যায় এবং বিশেষ কারণে মসজিদে যাওয়া সম্ভব না হলে আপনি একাকী কিংবা বাড়ির লোকজন সহ জামাতে সালাত আদায় করতে পারেন-যদিও কোন কারণে মুয়াজ্জিন তখনো আজান দেয় নি। কেননা সালাতের জন্য সময় হওয়া শর্ত; আজান হওয়া নয়।
এ ক্ষেত্রে বাড়িতে আলাদাভাবে আজান দেয়ার প্রয়োজন নাই। কারণ মহল্লার মসজিদে নির্ধারিত মুয়াজ্জিন আছে। আজান দেয়া তার দায়িত্ব। তবে আপনারা বাড়িতে কেবল একামত দিয়ে সালাত আদায় করবেন।
 
বি: দ্র: এখানে ফেসবুকের দ্বীনী ভাইবোনদের পক্ষ থেকে করা এ সংক্রান্ত প্রশ্নোত্তরগুলো একত্রিত করা হয়েছে। পোস্টের কলেবর বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কায় উত্তরের সাথে দলিল উল্লেখ করা হয় নি। কেউ প্রয়োজন মনে করলে লেখকের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা যাচ্ছে। জাযাকুমুল্লাহু খাইরান।
▬▬▬🔸🔹🔸▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আবদুল জলীল
 
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার. KSA

 

৪১. স্বামী বা স্ত্রী মারা গেলে কি একে অপরকে দেখতে বা গোসল দিতে পারে? Marriage education series

 May be an image of text that says 'স্বামী বা স্ত্রী মারা গেলে কি একে অপরকে দেখতে বা গোসল দিতে পারে? আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানী'

 

স্বামী বা স্ত্রী মারা গেলে কি একে অপরকে দেখতে বা গোসল দিতে পারে?
▬▬▬▬●◈●▬▬▬▬
প্রশ্ন: মৃত্যুর পর স্বামী মারা গেলে স্ত্রী দেখতে পারে না। মাহরাম যে সকল মহিলারা রয়েছে তারাও দেখা দেয় না। স্বামী স্ত্রীকে এবং স্ত্রী স্বামীকে গোসল দিতে পারে না। আমাদের সমাজে এ সকল কুসংস্কার চালু আছে। দয়া করে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবেন। কারণ অনেকেই এই ধরণের কথা বলে থাকে।
উত্তর:
 
আমাদের সমাজে কুধারণা চালু আছে যে, স্বামী বা স্ত্রী কেউ মারা গেলে অপরের জন্য তালাক হয়ে যায়! তাই তাকে গোসল দেয়া কিংবা দেখতে দেয়া নাজায়েয! সমাজে উক্ত রীতি ব্যাপকভাবে প্রচলিত। এক শ্রেণীর আলেমরাও এ ফতওয়া জারি করে রেখেছে। অথচ এটা মূর্খতা ও সুন্নাতের বিরুদ্ধাচরণ। কারণ উক্ত মর্মে একাধিক স্পষ্ট সহীহ হাদীছ এসেছে। যেমন,
🔰 একটি হাদীস
 
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ رَجَعَ رَسُوْلُ اللهِ مِنَ الْبَقِيْعِ فَوَجَدَنِىْ وَأَنَا أَجِدُ صُدَاعًا فِىْ رَأْسِىْ وَأَنَا أَقُوْلُ وَارَأْسَاهُ فَقَالَ بَلْ أَنَا يَا عَائِشَةُ وَارَأْسَاهُ ثُمَّ قَالَ مَا ضَرَّكِ لَوْ مِتِّ قَبْلِىْ فَقُمْتُ عَلَيْكِ فَغَسَّلْتُكِ وَكَفَّنْتُكِ وَصَلَّيْتُ عَلَيْكِ وَدَفَنْتُكِ.
 
 
আয়েশা রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাক্বীউল গারক্বাদ (মদীনার বাকি গোরস্থান) থেকে যখন ফিরে আসলেন, তখন তিনি আমাকে মাথার যন্ত্রণা অবস্থায় পেলেন। আমি বলছিলাম, উফ! আমার মাথাব্যথা! তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলছিলেন, আয়েশা! বরং আমারও মাথা ব্যথা করছে। 
 
অতঃপর তিনি বলেন, তোমার কোন সমস্যা নেই। তুমি যদি আমার পূর্বে মারা যাও তবে আমি তোমার পাশে থাকব, তোমাকে গোসল দিব, তোমাকে কাফন পরাব এবং তোমার জানাযার সালাত আদায় করব।[1]
🔰 আরেকটি হাদীস:
عَنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ عُمَيْسٍ قَالَتْ غَسَّلْتُ أَنَا وَعَلِىٌّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ فَاطِمَةَ بِنْتَ رَسُوْلِ اللهِ
আসমা বিনতে উমাইস (রাঃ) বলেন, আমি এবং আলী (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কন্যা ফাতেমাকে গোসল দিয়েছি।[2]
🔰 অন্য দিকে আয়েশা রা. বলেন,
لَوِ اسْتَقْبَلْتُ مِنْ أَمْرِىْ مَا اسْتَدْبَرْتُ مَا غَسَّلَهُ إِلاَّ نِسَاؤُهُ
‘পরে যা জানলাম তা যদি আগে জানতাম, তবে রাসূল (ছাঃ)-কে তাঁর স্ত্রীরা ছাড়া কেউ গোসল দিতে পারত না’।[3]
 
অতএব স্বামী আগে মারা গেলে স্ত্রী, কিংবা স্ত্রী আগে মারা গেলে স্বামী উভয় উভয়কে গোসল দেয়ার বেশি হকদার। এর বিরুদ্ধাচরণ করার অর্থই হল শরী‘আতের মর্যাদা নষ্ট করা। মৃত্যুর পর সম্পদের ভাগাভাগি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে অথচ তাকে দেখতে পারবে না, গোসল দিতে পারবে না কেন?
 
-----------
টিকা:
[1]. ইবনু মাজাহা হা/১৪৬৫, পৃঃ ১০৫, ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৯; সনদ হাসান, ইরওয়াউল গালীল হা/৭০০, ৩/১৬০ পৃঃ। [2]. হাকেম হা/৪৭৬৯; বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৬৯০৭; বায়হাক্বী, মা‘রেফাতুস সুনান ওয়াল আছার হা/২১৫৭; দারাকুৎনী হা/১৮৭৩; সনদ হাসান, ইওয়াউল গালীল হা/৭০১। [3]. আবুদাঊদ হা/৩১৪১, ২/৪৪৮ পৃঃ, ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩২; সনদ হাসান, ইরওয়াউল গালীল হা/৭০২, ৩/১৬২ পৃঃ।
(সংগৃহীত-সামান্য পরিবর্তন সহ)
🖌🖌🖌🖌🖌
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানী
লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আর

 

৪০. ফেসবুক-ইউটিউবে ​স্বামী-স্ত্রীর ভিডিও আপলোড করার বিধান Marriage education series

 No photo description available.

 

ফেসবুক-ইউটিউবে ​স্বামী-স্ত্রীর ভিডিও আপলোড করার বিধান
▬▬▬🔹♦🔹▬▬▬
প্রশ্ন: ফেসবুকে আজকাল দেখা যাচ্ছে, অনেক মুসলিম দম্পতি ফেসবুকে তাদের ভিডিও পোস্ট করে। সেখানে অবশ্য স্ত্রী পূর্ণ পর্দা অবস্থায় থাকে। হয়তো তারা এ জন্য যে এসব পোস্ট করে যে, মানুষ যেন বুঝতে পারে পর্দা করেও রোমান্স করা যায় এবং এ থেকে অন্যদের পর্দা করা বা নেক সঙ্গী নির্বাচন করার জন্য উৎসাহিত হয়। এখন প্রশ্ন হল, এ গুলো ভিডিও করে অনলাইনে পোস্ট করা কি বৈধ? আর যারা শেয়ার করছে তারা কি বৈধ কাজটা করছে?
উত্তর:
আল্লাহ তাআলা মহিলাদেরকে ঘরে থাকতে নির্দেশ প্রদান করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَىٰ
“আর তোমাদের বাড়িতে তোমরা অবস্থান করবে, আর -মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না।“ (সূরা আহযাব: ৩৩)
 
হ্যাঁ, প্রয়োজনে একজন মহিলার জন্য পূর্ণ পর্দা রক্ষা করে বাইরে যাওয়া জায়েয আছে। তাই বলে তাকে বোরকা পরিয়ে ইচ্ছাকৃত ভাবে হাজার হাজার দর্শকের সমানে “প্রদর্শনী” বানানো জায়েয নাই। 
 
কারণ একথা স্বতঃসিদ্ধ যে, বোরকা পরলেও একজন যুবতী মহিলার দেহের গঠন, সৌন্দর্য অনেকটা উপলব্ধি করা যায়। আর একজন পুরুষ যখন তার স্ত্রীকে বোরকা পরিয়ে তাদের দুষ্টুমি ও খুনসুটির ভিডিও ফেসবুক বা ইউটিউবে পাবলিকের উদ্দেশ্য ছড়িয়ে দেয় তখন সে যেন সকল দর্শকের জন্য তার স্ত্রীকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা বা তার দেহের গঠন, সৌন্দর্য, হাসি, দুষ্টুমি ইত্যাদি মনে মনে উপভোগ করার জন্য অনুমতি দিয়ে দিলো! 
 
লা হাওলা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। আত্মমর্যাদা সম্পন্ন কোনো পুরুষ এমনটি করতে পারে না। এটি নিতান্ত ব্যক্তিত্বহীন ব্যক্তির দ্বারাই সম্ভব।
 
তাছাড়া স্বামী-স্ত্রীর খুনসুটি,দুষ্টামি, রোমান্স ইত্যাদিগুলো জনসম্মুখ প্রকাশ করার বিষয় নয়। বরং এগুলো হতে হবে নিতান্ত গোপনে-লোকচক্ষুর আড়ালে। 
 
সুতরাং এভাবে স্বামী-স্ত্রীর দুষ্টামি, হাসাহাসি, দৌড়াদৌড়ি, দোলনায় উঠা, একসাথে আইসক্রিম আর ফুচকা খাওয়ার ভিডিও আপলোড করা বা শেয়ার করা কোনটাই আত্মমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তির জন্য শোভনীয় নয়। এসব ভিডিওর ফলে স্বামী-স্ত্রী উভয়ে ফেতনায় পড়ে তাদের সুখের সংসার নষ্ট হতে পারে। তারা শিকার হতে পারে হিংসা, বদ নজর ও নানা ফেতনার।
আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন।
 
▬▬▬🔹♦🔹▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
fb/AbdullaahilHadi
দাঈ জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

 

৩৯. বদমেজাজি ও অহংকারী ব্যক্তির পরিণতি এবং এমন স্বামীর সাথে আচরণের ১৫টি কৌশল Marriage education series

 No photo description available.

 

বদমেজাজি ও অহংকারী ব্যক্তির পরিণতি এবং এমন স্বামীর সাথে আচরণের ১৫টি কৌশল
▬▬▬◄❖►▬▬▬
প্রশ্ন: আমার স্বামীকে নিয়ে অনেক বিপদে আছি। আমাদের একটা ছেলে আছে।আমাদের দুজনের সাথে সারাদিন সাধারণ কোনো বিষয় নিয়ে ঝগড়া হতে থাকে। সারাদিন কিছু না কিছু নিয়ে তর্ক হতে থাকে। এক পর্যায় মারামারি। সে আমাকে মারে। স্বামী পরকীয়া করে না কিন্তু তার রাগ-জিদটা একটু বেশী। আমি কি করব বুঝতে পারি না।
আমার মা নাই। আমাদের কেউ যাদু গ্রস্ত কি না কিভাবে বুঝব? প্লিজ আমাকে হেল্প করুন। আমাদের সংসার না টিকার মত অবস্থা।
উত্তর:
আল্লাহ আপনাকে হেফাজত করুন এবং আপনার স্বামীকে হেদায়েত ও সুবুদ্ধি দান করুন। আমীন।
নিচে বদমেজাজি ব্যক্তিদের করুণ পরিণতি এবং এ জাতীয় স্বামীর সাথে ঘর-সংসার ও আচরণের ১৫টি কৌশল তুলে ধরা হল:
🌀 বদমেজাজি কাকে বলে এবং তাদের কী পরিণতি?
বদমেজাজি বলতে বুঝায় যে ব্যক্তি, সামান্য বিষয়ে রাগারাগি করে, বকাঝকা ও গালাগালি করে। সে যা বলে সেটাই করে। যার মধ্যে কারো মতামত শুনা বা আপোষ-মীমাংসার মনোভাব নাই। এরা অহংকারী, উদ্ধত, রুক্ষ, নির্দয় ও একগুঁয়ে স্বভাবের হয়ে থাকে।
এ ধরণের স্বামীর সাথে ঘর সংসার করার ক্ষেত্রে স্ত্রীকে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয় এবং মানসিক কষ্ট-যাতনা ও অসহনীয় পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। দাম্পত্য জীবন থেকে ভালবাসা, হৃদ্যতা ও সুসম্পর্ক বিদায় নেয়। সর্বদা ঝগড়া-ঝাটি ও ধন্ধ-কলহ লেগে থাকে।
সত্যি বলতে, এ জাতীয় লোকের কারণে সমাজে প্রচুর সমস্যা ও অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বন্ধু ও কলীগরা পর্যন্ত তার ব্যাপারে বিরক্ত ও মানসিকভাবে অস্বস্তিতে থাকে।
এরা আল্লাহর কাছেও ঘৃণিত মানুষের কাছেও ঘৃণিত।
কুরআন-সুন্নাহয় এ জাতীয় লোকদের সম্পর্কে কী বলা হয়েছে তা দেখি:
✪ আল্লাহ তাআলা বলেন:
إِنَّ اللَّـهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُورٍ
“নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না।” সূরা লোকমান: ১৮)
✪ হাদিসে এসেছে:
হারিস ইবনে ওয়াহাব রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ الْجَوَّاظُ وَلَا الْجَعْظَرِيُّ قَالَ وَالْجَوَّاظُ الْغَلِيْظُ الْفَظُّ.
"কঠোর ও রুক্ষ স্বভাবের মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে না ।" (আবু দাউদ, মিশকাত হা/৫০৮০)।
✪ তিনি আরও বলেন:
أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِأَهْلِ النَّارِ كُلُّ جَوَّاظٍ زَنِيْمٍ مُتَكَبِّرٍ
“আমি তোমাদেরকে কি জাহান্নামীদের কথা বলব না? তারা হল, যারা অনর্থক কথা নিয়ে বিবাদ করে, আর যারা বদমেজাজি অহংকারী।” (মুসলিম, মিশকাত হা/৫১০৬)।
✪ আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
الْمُؤْمِنُ غِرٌّ كَرِيْمٌ وَالْفَاجِرُ خِبٌّ لَئِيْمٌ
“ইমানদার মানুষ সরল ও ভদ্র হয়। পক্ষান্তরে পাপী মানুষ ধূর্ত ও হীন চরিত্রের হয়।” (তিরমিযী হা/১৯৬৪; মিশকাত হা/৫০৮৫)।
✪ জারীর রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:
مَنْ يُحْرَمِ الرِّفْقَ يُحْرَمِ الْخَيْرَ
“যাকে কোমলতা ও নম্রতা হতে বঞ্চিত করা হয়, তাকে যাবতীয় কল্যাণ হতে বঞ্চিত করা হয়।” (মুসলিম, মিশকাত হা/৫০৬৯)।
✪ একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আয়েশা রা.কে বলেন:
عَلَيْكِ بِالرِّفْقِ وَإِيَّاكِ وَالْعُنْفَ وَالْفُحْشَ إِنَّ الرِّفْقَ لَا يَكُونُ فِي شَيْءٍ إِلَّا زَانَهُ وَلَا يُنْزَعُ مِنْ شَيْء إِلَّا شَانَهُ»
“কোমলতা নিজের জন্য বাধ্যতামূলক করে নাও এবং কঠোরতা ও নির্লজ্জতা হতে নিজেকে বাঁচাও। কারণ যাতে নম্রতা ও কোমলতা থাকে তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি হয়। আর যাতে কোমলতা থাকে না, তা দোষণীয় হয়ে পড়ে।” (মুসলিম, মিশকাত হা/৫০৬৮)।
🌀 বদমেজাজি ও অহংকারী স্বামীর সাথে ঘর-সংসার করা ও আচরণের ১৫টি কৌশল ও পদ্ধতি:
এ ধরণের স্বামীর সাথে দাম্পত্য জীবন চালিয়ে যেতে চাইলে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে বুদ্ধিমতী স্ত্রীর জন্য কতিপয় করণীয় রয়েছে। নিম্নে এ বিষয়ে ১৫টি নির্দেশনা দেয়া হল:
১) মানুষের সাথে আচরণের মূলমন্ত্র হল, মানুষের স্বভাব ও প্রকৃতি বুঝে আচরণ করা। সুতরাং অহংকারী ও বদমেজাজি স্বামী যে কাজে রাগ করে বা বিরক্ত হয় সে কাজ মোটেও করবেন না।
২) কোন বিষয়টা তার অ পছন্দনীয় আর কোন বিষয়টা পছন্দনীয়, কোন কাজটা ভালোবাসে আর কোন কাজটা ঘৃণা করে ইত্যাদি জেনে সেভাবে তার সাথে আচরণ করুন।
৩) তার পছন্দমত খাবার প্রস্তুত, পছন্দমত পোশাক পরিধান ও সাজগোজ করার চেষ্টা করুন।
৪) তার মেজাজ বুঝে কথা বলুন। নরম ভাষায় কথা বলুন। শক্ত ও কঠিন ভাষা পরিহার করুন। কেননা শক্ত ভাষা তাকে আরও ক্রুদ্ধ করে তুলবে।
৫) পৃথিবীর সব মানুষ প্রশংসা শুনতে পছন্দ করে। তাই প্রায়ই তার প্রশংসা করুন। প্রশংসা করুন তার সামনে এবং আপনার আত্মীয় ও তার আত্মীয়দের সামনে। তবে তার যে গুণটা সত্যি প্রশংসা পাওয়ার মত সেটাই বলুন। মিথ্যা প্রশংসা থেকে দূরে থাকুন। অন্যথায় হিতে বিপরীত হতে পারে।
আর কখনো সরাসরি তার ভুল ধরতে যাবেন না বা মানুষের সামনে তার দোষ গেয়ে বেড়াবেন না।
কোনো বিষয় সংশোধনের প্রয়োজন মনে হলে তার মেজাজ যখন ভালো ও হাসিখুশি থাকে তখন সুন্দরভাবে তাকে সে বিষয়ে বুঝিয়ে বলুন।
৬) যখন তার মেজাজ খারাপ থাকে, তখন তার মনোভাব বুঝে তাকে কিছুক্ষণ একাকী বিশ্রাম নিতে দিন। হয়ত কিছুক্ষণ পর তার মেজাজ ঠিক হয়ে যাবে।
৭) তার ব্যক্তিগত বিষয়ে বেশি খরবদারি করতে যাবেন না। কারণ এতে সে বিরক্ত হতে পারে।
৮) তার রাগের সময় তর্ক করবেন না। নীরবতা অবলম্বন করুন। তার মনের রাগ বা ক্ষোভ ঝাড়তে দিন। শান্ত হলে আন্তরিকতার সাথে কোনো কিছু বলার থাকলে বলুন।
৯) সে যদি কোনো সমস্যায় থাকে তাহলে তা বুঝার চেষ্টা করুন এবং তাকে এ ব্যাপারে যথাসম্ভব সহযোগিতা করুন। তার কাছে এমন কোন আবদার করবেন না যা সংগ্রহ করা তার জন্য কষ্টকর। তাকে বুঝতে দিন যে, আপনি তার সংসারের একজন সহযোগী এবং আপনি তার কষ্ট ও সমস্যাগুলো বুঝেন।
১০) কোন ভুল করে ফেললে ভুল স্বীকার করুন এবং তার নিকট ক্ষমা চান।
১১) আপনার আচরণের মধ্যে কোন যদি কোনো দোষ থাকে যা পরিবর্তন করা উচিৎ তাহলে তা সংশোধন করুন। যেমন: অতিরিক্ত কথা বলা, উচ্চস্বরে কথা বলা, বেশি বেশি অভিযোগ করা, আওয়াজ করে হাঁটা, অপরিচ্ছন্ন থাকা ইত্যাদি।
১২) পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি থাকুন এবং পোশাক-পরিচ্ছদ, সাজগোজ ও স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিন। অপরিচ্ছন্ন ও অপরিপাটি পোশাক-পরিচ্ছদ, ঘর-বাড়ি ও আসবাব-পত্র মানুষের মনের উপর প্রভাব ফলে।
১৩) সে যদি অত্যাচার করে এবং পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে যায় তাহলে আপনার পরিবার এবং সমাজের সর্বগ্রাহ্য ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের মাধ্যমে সালিসের ব্যবস্থা করুন বা আইনের আশ্রয় নিন।
১৪) সর্বোপরি নামাযের সেজদা অবস্থায়, ভোর রাতে তাহাজ্জুদ সালাতের পরে ও অন্যান্য দুআ কবুলের আশাব্যঞ্জক সময়গুলোতে তার হেদায়েত ও সংশোধনের জন্য আল্লাহর নিকট দুআ করুন।
১৫) তবে যদি এমন হয় যে, স্বামীর আচার-আচরণ ইতোপূর্বে ভালো ছিল কিন্তু হঠাৎ করেই তার মধ্যে আমূল পরিবর্তন। হঠাৎ করেই সে আপনাকে দেখতে পারে না, সহ্য করতে পারে না। সামান্যতেই উত্তেজিত হয় ও প্রচণ্ড রাগ করে তাহলে এটা যাদুর আলামত। এ ক্ষেত্রে শরিয়ত সম্মত উপায়ে যাদুর চিকিৎসা করতে হবে।
পরিশেষে দুআ করি, আল্লাহ তাআলা আপনাদের দাম্পত্য জীবনের সমস্যাগুলো দূরভীত করে শান্তি ও সুখের সুবাতাস বইয়ে দেন এবং বিশ্বাস, ভালবাসা, দয়া ও মমতায় আপনাদের গৃহাঙ্গণ ভরপুর করে দেন। আল্লাহ তাওফিক দান করুন।আমীন।
▬▬▬◄❖►▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
জুবাইল, সৌদি আরব
fb id: AbdullaahilHadi

 

৩৮. স্বামী যদি স্ত্রীকে তার ভাই-বোন, খালা, খালাতো বোন ইত্যাদি রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়দের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করতে নির্দেশ দেয় তাহলে কি তা মানা আবশ্যক? Marriage education series

 No photo description available.

 

 

 

স্বামী যদি স্ত্রীকে তার ভাই-বোন, খালা, খালাতো বোন ইত্যাদি রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়দের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করতে নির্দেশ দেয় তাহলে কি তা মানা আবশ্যক?
▬▬▬🔹♦🔹▬▬▬
প্রশ্ন: স্বামী যদি পারিবারিক কলহ বা মনোমালিন্যের কারণে স্ত্রীকে তার ভাই-বোন, খালা-খালাতো বোন ইত্যাদি রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়দের বাড়ি যেতে এবং সম্পর্কচ্ছেদ করতে নির্দেশ দেয় তাহলে স্ত্রীর জন্য তা পালন করা জরুরি কি?
উত্তর:
রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়দের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করা হারাম। কেননা, প্রখ্যাত সাহাবী জুবাইর ইবনে মুতয়িম রা. হতে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
لا يَدْخُلُ الجَنَّةَ قَاطِعٌ، قَالَ سفيان في روايته: يَعْني: قاطِع رحِم. متفقٌ عَلَيهِ
“সম্পর্কচ্ছেদ কারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” সুফিয়ান বলেন, অন্য বর্ণনায় আছে: রক্ত সম্পর্কচ্ছেদ কারী (জান্নাতে প্রবেশ করবে না।) (বুখারী ও মুসলিম)
সুতরাং স্বামীর জন্য এ ধরণের হারাম কাজের নির্দেশ প্রদান করা হারাম আর যদি সে নিষেধ করেও থাকে তবে স্ত্রীর জন্য তা পালন করা বৈধ নয়। কেননা, ইসলামের দৃষ্টিতে আল্লাহর অবাধ্যতা করে তার সৃষ্টির আনুগত্য করা অবৈধ।
জ্ঞাতব্য যে, স্ত্রী যদি মনে মনে তাদেরকে ভালোবাসে, তাদের কল্যাণ কামনা করে এবং কখনও সুযোগ হলে বাড়ির বাইরে তাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করে, কথাবার্তা বলে বা মাঝে-মধ্যে ফোন কল-মেসেজ ইত্যাদির মাধ্যমে যোগাযোগ রাখে তাহলে তা ‘আত্মীয়তার সম্পর্কচ্ছেদ’ হিসেবে গণ্য হবে না-যদিও স্বামীর নিষেধাজ্ঞার কারণে তাদের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া না হয়।
উল্লেখ্য যে, স্বামী যেহেতু তাদের বাড়ি যেতে নিষেধ করেছে সেহেতু দাম্পত্য জীবনের বৃহত্তর স্বার্থে সে বোনের জন্য স্বামীর কথা অমান্য করে তাদের বাড়ি বেড়াতে যাওয়া ঠিক হবে না-যতদিন না তাদের মাঝে সুসম্পর্ক ফিরে আসে এবং প্রকাশ্যে স্বামীর কথার লঙ্ঘন করে সে সরাসরি তাদের সাথে যোগাযোগও করবে না বরং একটু কৌশল অবলম্বন করে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করবে এবং আল্লাহর নিকট দুআ করবে, তিনি যেন তাদের মাঝে ভালোবাসা ও সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে দেন।
দুআ করি, মহান আল্লাহ যেন পারিবারিক মনোমালিন্য ও সমস্যা দূরভীত করে পুনরায় তাদের মাঝে সুসম্পর্ক সৃষ্টি করে দেন। আমীন।
 
▬▬▬🔹♦🔹▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
লিসান্স, মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব

 

৩৭. কী কী কারণে স্ত্রীর জন্য তার স্বামীর নিকট খোলা তালাক চওয়া বৈধ? Marriage education series

 May be an image of text that says 'সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'কোনো মহিলা যদি বিনা দোষে স্বামীর নিকট তালাক প্রার্থনা করে, তাহলে জান্নাতের সুগন্ধি তার জন্য হারাম হয়ে যাবে"। [মুসনাদে আহমদ; তিরমিযী; মিশকাত, হাদীস নং ৩২৭৯]'

 

 

 

কী কী কারণে স্ত্রীর জন্য তার স্বামীর নিকট খোলা তালাক চওয়া বৈধ?
▬▬▬✪✪✪▬▬▬
উত্তর:
🔰 ইসলামের দৃষ্টিতে একান্ত জরুরি কারণ ছাড়া স্বামীর নিকট তালাক চাওয়া বৈধ নয়। হাদিসে এ ব্যাপারে কঠিন পরিণতির কথা বর্ণিত হয়েছ। যেমন,
সাওবান রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‏ أَيُّمَا امْرَأَةٍ سَأَلَتْ زَوْجَهَا طَلاَقًا فِي غَيْرِ مَا بَأْسٍ فَحَرَامٌ عَلَيْهَا رَائِحَةُ الْجَنَّةِ ‏‏
“যদি কোন মহিলা অহেতুক তার স্বামীর নিকট তালাক চায় তার জন্য জান্নাতের সুগন্ধও হারাম হয়ে যায়।” (আবু দাউদ, অধ্যায়: তালাক, অনুচ্ছেদ: খোলার বর্ণনা, হা/২২২৬, সহীহ)
🔰 প্রাসঙ্গিক ভাবে উল্লেখ্য যে, অনেক সময় কিছু খারাপ চরিত্রের মানুষ কোন সহজ-সরল স্ত্রীর নিকট তার স্বামীর বদনাম গেয়ে তার ব্যাপারে বিতৃষ্ণা সৃষ্টি করার অপপ্রয়াস চালায় অথচ ইসলামে এ ব্যাপারে কঠোর হুমকি এসেছে। যেমন,
আবূ হুরাইরাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‏ لَيْسَ مِنَّا مَنْ خَبَّبَ امْرَأَةً عَلَى زَوْجِهَا أَوْ عَبْدًا عَلَى سَيِّدِهِ ‏
“যে ব্যক্তি কোন স্ত্রীকে তার স্বামীর বিরুদ্ধে অথবা দাসকে তার মনিবের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।” (আবু দাউদ, অধ্যায়: তালাক, অনুচ্ছেদ: অনুচ্ছেদ-১ যে ব্যক্তি কোন স্ত্রীকে স্বামীর বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে হা/২১৭৫, সহীহ)
🔰 অনেক সময় স্ত্রী তার সতীনকে তালাক দেয়ার জন্য স্বামীর নিকট দাবি করে অথবা বাইরে কোন মহিলা কোন পুরুষকে বিবাহ করার জন্য শর্ত দেয় যে, তার আগের স্ত্রীকে তালাক দিতে হবে তাহলে তার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে। অথচ এ ধরণের দাবি বা শর্তারোপ কোনটাই ইসলামে বৈধ নয়।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
لاَ تَسْأَلِ الْمَرْأَةُ طَلاَقَ أُخْتِهَا لِتَسْتَفْرِغَ صَحْفَتَهَا وَلْتَنْكِحْ فَإِنَّمَا لَهَا مَا قُدِّرَ لَهَا ‏"‏ ‏
“কোন নারী যেন নিজ স্বার্থের জন্য এবং বিয়ে বসার জন্য তার বোনের তালাক না চায়। কেননা সে তাই পাবে যা তার জন্য নির্ধারিত আছে।” ( সহীহুল বুখারী, অধ্যায়: বিবাহ। অনুচ্ছেদ, বিয়েতে যে সকল শর্ত করা বৈধ নয়। সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: তালাক, অনুচ্ছেদ: কোন মহিলার স্বামীর নিকট তার সতীনের তালাক দাবি করা হা/২১৭৬, সহীহ)
➰ যে সব কারণে স্ত্রীর জন্য তার স্বামীর নিকট তালাক চাওয়া জায়েয:
সম্মানিত ফিকহবিদগণ বলেন, স্ত্রী যদি স্বামীর পক্ষ থেকে ক্ষয়-ক্ষতির সম্মুখীন হয় বা হওয়ার আশংকা করে তাহলে তার স্বামীর নিকট তালাক চাওয়া জায়েয রয়েছে। এই ক্ষয়-ক্ষতি শারীরিক, মানসিক, আমল-আখলাক, ইবাদত-বন্দেগি ইত্যাদি বিভিন্ন দিক দিয়ে হতে পারে।
নিম্নে এ বিষয়ে মৌলিক ১০টি দিক তুলে ধরা হল:
----------------
১. স্বামী যদি স্ত্রীর ভরণ-পোষণের হক আদায় করতে অপারগ হয়।
২. স্বামী যদি স্ত্রীর জৈবিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়।
৩. স্বামী যদি পরকীয়া, পাপাচারিতা এবং অন্যায়-অপকর্মে লিপ্ত হয়।
৪. স্বামীর প্রতি মনে প্রচণ্ড ঘৃণা সৃষ্টি হলে ( তা যে কারণেই হোক না কেন)।
৫. স্বামী দীর্ঘ সময় জেলে বন্দি থাকার কারণে স্ত্রী যদি নিজের নিরাপত্তা হীনতা অনুভব করে বা ক্ষয়-ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
৬. স্বামী দীর্ঘ সময় অনুপস্থিত থাকার কারণে স্ত্রী যদি এতে নিজের ঈমান-আখলাকের ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা করে।
৭. স্বামী যদি স্ত্রীকে শরীয়ত সম্মত কারণ ব্যতিরেকে মারপিট, জুলুম-নির্যাতন, অপমান-অপদস্থ, অভিসম্পাত ও গালাগালি করে।
৮. স্বামী যদি এমন কোন দুরারোগ্য রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয় যার কারণে স্ত্রী তাতে সংক্রমিত হওয়ার আশংকা করে।
৯. স্বামী যদি স্ত্রীকে তার পরিবার-পরিজন বিশেষ করে পিতামাতার সাথে দেখা-সাক্ষাতে সম্পূর্ণভাবে বাধা দেয়।
১০. স্বামী যদি নিজে তাওহীদ ভিত্তিক জীবন গঠন, নামায, রোযা, যাকাত, হজ্জ ইত্যাদি ইসলামের মৌলিক বিধি-বিধান পালন না করে অথবা ইসলামের কোন বিষয়কে অস্বীকার করে অথবা ইসলাম সম্পর্কে কটূক্তি করে অথবা স্ত্রীকে নামায, রোযা, পর্দা ইত্যাদি ফরয ইবাদতে বাধা দেয়...ইত্যাদি।
♻ মোটকথা, স্বামীর অন্যায়-অপকর্ম ও পাপাচারের কারণে স্ত্রী নিজের ঈমান-আমল, আখলাক ইত্যাদি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা করলে এবং স্ত্রীর প্রতি অবধারিত হক আদায়ে ব্যর্থতার পরিচয় দিলে সেই স্বামীর নিকট স্ত্রীর খোলা তালাক চাওয়া বৈধ।
স্বামী খোলা তালাক দিতে অস্বীকার করলে সে কোর্টের আশ্রয় নিয়ে বিবাহ ভঙ্গ করতে পারে। তবে একজন বুদ্ধিমান নারীর করণীয় হল, স্বামীর মাঝে দোষ-ত্রুটি দেখলে তাকে ধৈর্যের সাথে সংশোধন করার চেষ্টা করা, নিজে না পারলে অন্যের মাধ্যমে চেষ্টা করা, স্বামীকে তার আচার-আচরণ পরিবর্তনের জন্য পর্যাপ্ত সময় ও সুযোগ দেয়া।
সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাড়াহুড়া করবে না এবং সন্তান-সন্ততির কথা বিবেচনা করে সবর অবলম্বন করবে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে বিজ্ঞজনদের পরামর্শ গ্রহণের পাশাপাশি ইস্তিখারার সালাত আদায় করবে। তাহলে আশা করা যায়, আল্লাহ তাকে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সাহায্য করবেন।আল্লাহু আলাম
আল্লাহু তাওফিক দান করুন। আমীন।
▬▬▬✪✪✪▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব

 

৩৬. বৃদ্ধ মহিলার স্বামী মারা গেলে তার ইদ্দত পালনের মেয়াদ ও বিধি-বিধান Marriage education series

 

বৃদ্ধ মহিলার স্বামী মারা গেলে তার ইদ্দত পালনের মেয়াদ ও বিধি-বিধান
➖➖➖➖➖➖➖➖➖
প্রশ্ন: পঞ্চাশোর্ধ বা মাসিক বন্ধ হয়ে গেছে এমন মহিলার স্বামী মারা গেলে তারও কি ইদ্দত পালন করতে হবে ? ইদ্দত পালনের বিধি-নিষেধগুলো জানতে চাই।
উত্তর:
কোন মহিলার স্বামী মারা গেলে তার জন্য ইদ্দত পালন করা আবশ্যক। চাই উক্ত মহিলা যুবতী হোক বা বৃদ্ধা হোক এতে কোন পাথর্ক্য নেই।
 
এর মেয়াদ হল, চার মাস দশ দিন যদি সে গর্ভবতী না হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন:
 
وَالَّذِينَ يُتَوَفَّوْنَ مِنكُمْ وَيَذَرُونَ أَزْوَاجًا يَتَرَبَّصْنَ بِأَنفُسِهِنَّ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرً
 
“আর তোমাদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করবে এবং নিজেদের স্ত্রীদেরকে ছেড়ে যাবে,তখন স্ত্রীদের কর্তব্য হলো নিজেদেরকে চার মাস দশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করিয়ে রাখা। “[সূরা বাকারা: ২৩৪]
 
আর গর্ভবতী হলে সন্তান ভূমিষ্ট হওয়া পর্যন্ত ইদ্দত পালন করবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন:
 
وَأُولَاتُ الْأَحْمَالِ أَجَلُهُنَّ أَنْ يَضَعْنَ حَمْلَهُنَّ
 
“গর্ভবর্তী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত। ” [সূরা তালাক: ৪]
 
❐ ইদ্দত পালনের সময় করণীয়:
 
ইদ্দত পালনকারী মহিলার জন্য করণীয় হল, সে সকল প্রকার সৌন্দর্য ও সাজসজ্জা থেকে দূরে থাকবে।
🔹 আতর-সুগন্ধি ব্যবহার করবে না। তবে তৈল, সাবান, রোগ-ব্যাধীর জন্য ঔষধ ইত্যাদি ব্যবহারে অসুবিধা নাই যদিও তাতে সুগন্ধি থাকে। কারণ এগুলো মূলত: সুগন্ধি হিসেবে ব্যবহৃত হয় না। অনুরূপভাবে চুল আঁচড়াতেও কোন অসুবিধা নাই।
🔹 সৌন্দর্য বর্ধক পোশাক পরবে না। বরং স্বামী মারা যাওয়ার আগে স্বাভাবিকভাবে যে পোশাক পরিধান করত তাই পরিধান করবে। তবে শুধু সাদা বা শুধু কালো পোষাক পরিধান করতে হবে এমন ধারণা ঠিক নয়।
🔹 সুরমা, কাজল ইত্যাদি ব্যবহার করবে না।
🔹 মেহেদী, খেযাব বা আলাদা রং ব্যবহার করবে না।
🔹 কোন ধরণের অলংকার যেমন, দুল, চুরি, নাকফুল, আংটি, নুপুর ইত্যাদি ব্যবহার করবে না।
🔹 শোক পালনের দিন শেষ পর্যন্ত নিজের বাড়িতে থাকবে। এমনকি সে সময় যদি সে তার পিতার বাড়িতেও থাকে তবে স্বামীর মৃত্যুর খবর পেলে নিজ বাড়িতে ফিরে আসবে। তবে একান্ত প্রয়োজন যেমন, বিপদের আশংকা, বাড়ি পরিবর্তন, চিকিৎসা বা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনা ইত্যাদি জরুরী কাজে বাড়ির বাইরে যেতে পারবে।
মোটকথা, স্বামী মারা যাওয়ার পর স্ত্রী এমন সব আচরণ করবে না বা এমন সৌন্দর্য অলম্বন করবে না যা তাকে বিয়ের দিকে আকৃষ্ট করতে পারে। এটা এ কারণে যে, এর মাধ্যমে স্বামীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়, স্বামীর পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করা হয় এবং তাদের বেদনা বিধুর অনুভূতির প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ হয়। সর্বপরি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নির্দেশের আনুগত্য করা হয়।
 
🔻🔻🔻🔻🔻
👇👇👇👇👇👇
উত্তর প্রদানে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।