Tuesday, October 3, 2023

বাচ্চাদের বিয়ে ভাবনা

চার বাচ্চা একসাথে খেতে বসেছে। বয়স যথাক্রমে চার, পাঁচ, ছয় এবং সাত। ওদের সাথে নানান প্রসঙ্গে আলোচনা করতে করতে একসময় এলো বিয়ের কথা। 
 
 
যায়নাব বলল, উমার আর উসমান বড় হলে শুধু বাবা আর বাবা হবে। আমি আর মুসআব বড় হলে মা আর বাবা হতে পারব৷ 
 
 
আমি বললাম, এভাবে তো মা-বাবা হওয়া যায় না। বড় হলে তোমরা সবাই মা-বাবা হতে পারবে৷ যখন উমার বড় হবে, তখন ও বাবা হবে৷ আর ও যেই মেয়েটাকে বিয়ে করবে, সেই মেয়েটা ওদের বেবিদের মা হবে। আবার যখন তোমার বড় হয়ে বিয়ে হবে, তখন তুমি মা হবে, আর তুমি যাকে বিয়ে করবে সেই ছেলেটা বাবা হবে৷ 
 
 
ওরা বুঝতে পেরেছে নাকি জানার জন্য প্রশ্ন করলাম, আচ্ছা বলো তো, আমার সাথে কার বিয়ে হয়েছে?
 
 
সবার উত্তর -- জিম বাবার।
 
 
যায়নাব এবার সেই প্রশ্নটা করল, যেটা আমরা বাচ্চাদের মুখে প্রায় সবাই শুনেছি। ছোটবেলায় বাচ্চারা তাদের প্রিয় মানুষকে বিয়ে করতে চায়। তাই যায়নাবও তার বেস্ট ফ্রেন্ড উমারের কথা জিজ্ঞেস করল। লাল্লামণি, আমি কি বড় হয়ে উমারকে বিয়ে করতে পারব? 
 
 
উমারও কিছুদিন আগে আমাকে একই প্রশ্ন করেছিল, আর আমি তখন ওকে ভাইবোন ও দুধ-ভাইবোনের ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলেছি। তাই বোনের প্রশ্ন শুনেই উমার বিজ্ঞের মতো দুইপাশে মাথা নেড়ে দ্রুত গতিতে বলল, না, না! করা যাবে না। 
 
 
এরপর আমি যায়নাবকেও বুঝিয়ে বললাম, কেন উমারকে বিয়ে করা যাবে না। ও বুঝতে পারল উমারকে বিয়ে করা যাবে না, যেহেতু তারা দুজনেই দুধ ভাইবোন। তখন জানতে চাইল, তাহলে কি আমার অন্য বেস্ট ফ্রেন্ড, খাদিজাকে বিয়ে করা যাবে? 
 
 
ওর কথা শুনে না হেসে পারলাম না, বললাম, মেয়ে আর মেয়ে কক্ষণো বিয়ে করা যায় না। তেমন ছেলে আর ছেলেও কখনোই বিয়ে করা যায় না। 
 
 
কেন? ওদের সবারই প্রশ্ন। 
 
 
বললাম, কারণ, মেয়ে আর মেয়ে যদি বিয়ে করে তাহলে দুইজনেই মাম্মা হয়ে যাবে। তখন ওদের বেবিরা বলবে, আমাদের বাবা কই? 
 
 
তখন আরেকজন বলল, হ্যাঁ, আর যদি দুইজন ছেলে বিয়ে করে তাহলে ওরা বলবে মাম্মা কই? 
 
 
আমি বললাম, হ্যাঁ। এজন্যই আল্লাহ ওনলি ছেলে আর মেয়ে বিয়ে করাই এলাউড করেছে। মেয়ে-মেয়ে বিয়ে করা হারাম। আর ছেলে-ছেলে বিয়ে করাও হারাম। 
 
 
এই কথা শুনে যায়নাব একটু চিন্তায় পড়ে গেল। ওর কোনো বেস্ট ফ্রেন্ডকেই বিয়ে করা যাচ্ছে না। এখন কী হবে! আমি ওর দুখী চেহারা দেখে বললাম, চিন্তা কোরো না। হয়তো তুমি বড় হয়ে উমার ভাইয়ার কোনো ফ্রেন্ডকে বিয়ে করতে পারবা, যদি সে একটা গুড ম্যান হয়। আবার উমার বড় হয়ে তোমার কোনো ফ্রেন্ডকে বিয়ে করতে পারবে৷ আমার কথা শুনে ও কিছুটা চিন্তামুক্ত হল। 
 
 
এবার ওদের মাথায় আরেক প্রশ্ন আসল, আচ্ছা, স্ট্রেঞ্জারকে কি বিয়ে করা যায়? 
 
 
আমি বললাম, হ্যাঁ যায় তো। স্ট্রেঞ্জারকেও বিয়ে করা যায়। কিন্তু ফার্স্টে জেনে নিতে হয় সে গুড মুসলিম কিনা। 
 
 
জিমবাবা কি স্ট্রেঞ্জার ছিল? 
 
 
বললাম, হ্যাঁ বাবাও আগে স্ট্রেঞ্জার ছিল। এরপর আরও কিছু ব্যক্তিগত প্রশ্নোত্তর চলল৷ 
 
 
আলোচনার মোড় ঘোরানোর জন্য বললাম, আচ্ছা বলো তো, কা-ফে-র-দেরকে কি বিয়ে করা যাবে?
 
 
ওরা বললো, না, কা-ফে-র বিয়ে করা যাবে না।
 
 
অমুসলিমদের যে বিয়ে করা যাবে না, এটা কিন্তু আমি শেখাই নি। তাই অবাক হওয়ার ভান করে বললাম, কেন, কা-ফে-র-কে কেন বিয়ে করা যাবে না? কা-ফে-র-দের বিয়ে করলে কী প্রবলেম বলো তো?
 
 
তখন যায়নাব বলল, কারণ কা-ফে-র হলে ওরা বলবে এখন প্রে করা যাবে না, মূর্তিপূজা করতে হবে। তখন আমাদেরকেও ওটাই করতে হবে। 
 
 
আমি বললাম, হুম। সেটা তো করা যাবে না। খুব ভালো বলেছ।
 
 
মুসআব আবার মাঝখান থেকে জানতে চাইল, কা-ফে-র মানে কী? বুঝিয়ে বললাম কারা কাফের। 
 
 
এরপর প্রশ্ন করলাম, যদি একজন আল্লাহর কাছে নামাজ পড়ে, আর একজন মূর্তিপূজা করে তাহলে তো ওদের বেবিরা কনফিউজড হয়ে যাবে, তাইনা? 
 
  
ওরা বিজ্ঞের মতো মাথা নাড়াল। উমার আগ্রহ পেয়ে বলল, আর কাফেরকে বিয়ে করলে একজন বলবে কুরআন পড়া যাবে না। আর একজন বলবে কুরআন পড়া যাবে। তখন ওদের ভেতর ফাইটিং হবে। 
 
 
বললাম, সেটাই তো। একদম ঠিক বলেছ। 
 
 
এভাবেই নানা কথোপকথনের মধ্য দিয়ে ওদের খাওয়াদাওয়া পর্ব শেষ হয়। আমি মনে মনে ভাবি, এই ছোট বাচ্চারা যা বুঝে আজকাল অনেক বড়রাই তা বোঝে না। আল্লাহ যদি আমাদের সবার বুঝ অন্তত ছোটদের মতো সোজাসাপ্টা, নির্মল আর পবিত্র বানিয়ে দিত, তাহলে কতই না ভালো হতো! আল্লাহুম্মা বারিকলাহুম।

- আনিকা তুবা