অন্যান্য চুক্তির মত নিকাহনামাও একটা চুক্তি। আপনি যেমন না পড়ে কোনো চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন না, তেমনই আপনার উচিত আপনার নিকাহনামার ফর্ম নিজে পূরণ করা । ফর্ম পূরণের সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লক্ষ্য রাখবেন:
(১) এই ফর্মে ১৩ নং ঘর মোহরের পরিমাণ লেখার জন্য। একজন দায়িত্বশীল পুরুষ বিয়ের আগেই নেগোশিয়েট করে মোহরের পরিমাণ নির্ধারণ করে, অন্যদিকে দায়িত্বজ্ঞানহীন পুরুষের উপর বিয়ের আসরে একটা পরিমাণের মোহর চাপিয়ে দেওয়া হয় ।
(২) ১৪ নম্বর ঘরে লিখতে হবে মোহরের কত অংশ মুয়াজ্জল ও কত অংশ মুঅজ্জল। মুয়াজ্জল হলো সেই অংশ যা যত দ্রুত সম্ভব পরিষোধ করতে হবে, পরিশোধ করতে দেরী হলে শাস্তি হতে পারে। অন্যদিকে মুয়াজ্জল হলো যা দেরিতে পরিশোধ করলে কোনো সমস্যা নেই। এই বিষয়গুলো পূর্বেই নেগোশিয়েট করে ঠিক করতে হয়।
(৩) ১৮ নম্বর ঘরে স্বামী স্ত্রীকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা অর্পণ করেছে কিনা সেই বিষয়ে লিখতে হয়। এই বিষয়টা আমার কাছে খুবই সন্দেহজন মনে হয়। ইসলামী শরীয়তে শুধুমাত্র পুরুষ তার স্ত্রীকে তালাক দিতে পারেন, এর একটা কারণ হলো মোহর পুরুষ ব্যাক্তি দিয়ে থাকেন। স্ত্রী চাইলে কোর্টের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে পারেন অথবা খুলা করতে পারেন, কিন্তু স্ত্রী চাইলেই খুশিমত তালাক দিতে পারেন না। এখন বাংলাদেশে যে আইনের মারপ্যাচ দিয়ে শরীয়তের একটা নর্মকে পাল্টে ফেলা হচ্ছে এটা আদৌ হালাল কিনা প্রশ্ন থেকে যায়।
যেমন ধরুন একজন পুরুষ চাইলে একাধিক স্ত্রী রাখতে পারেন, কিন্তু একজন নারী চাইলে একাধিক স্বামী গ্রহণ করতে পারেন না। কিন্তু ধরুন নিকাহনামায় স্বামী তার স্ত্রী কে একাধিক স্বামী গ্রহণের অধিকার দিলো, সেটা কি ভ্যালিড হবে?!!
শুধু তাই না এই ঘরটা একটা পুরুষ ব্যাক্তি পূরণ করার আগেই কাজিসাহেব হ্যা লিখে রেখে দেয়! মানে বিয়ে করবেন আপনি, আর আপনার বউ আপনাকে তালাক দিবে কি দিবে না, সেটা কাজিসাহেব ঠিক করে দেবেন!!
(৪) ১৯ নম্বর ঘরে "স্বামীর তালাক প্রদানের অধিকার খর্ব হয়েছে কিনা", এইটাও অনেক সিগনিফিক্যান্ট। ইসলামী শরীয়তে সব পুরুষ তালাক দেওয়ার অধিকার রাখে, সেটা কীভাবে খর্ব হয় সেটা একটা প্রশ্ন, আবার আপনার হয়ে কাজিসাহেব এই ঘরটা পূরণ করলে আপনার কী হবে সেটাও আরেকটা প্রশ্ন।
সবাইকে ধন্যবাদ এতদূর পড়ার জন্য, শুভকামনা রইল