প্রথম কথা হলো, যখন কেউ ইসলামি বইয়ের সাজেশন চায় কিংবা ভালো একটি বইয়ের নাম জানতে চায়, তখন কতিপয় লোক 'কুরআন পড়ুন' লিখে দেয়। তাদের কথায় ভুল নেই, কিন্তু এই জায়গায় তাদের মন্তব্যটা ভুল। কীভাবে?
আমরা জানি, কুরআন-হাদিস হলো শরিয়তের মূল উৎস বা কাঁচামাল; এখান থেকেই ইসলামের যাবতীয় বিধানাবলীর জন্ম। কিন্তু এই কাঁচামালকে উপযুক্ত পন্থায় পরিবেশন করার জন্য ইলমের প্রয়োজন। ঠিক যেমন বাসায় মেহমান এলে তার সামনে আস্ত মুরগি রেখে দিলেই হয় না; বরং যোগ্য রাঁধুনী নিয়ে সেটাকে খাওয়ার উপযোগী করে পরিবেশন করতে হয়।
কুরআন-হাদিস আমাদের সামনেই আছে। কিন্তু সেখান থেকে নিজে নিজে মাসায়েল বের করে আমল করা কিংবা সরাসরি তা থেকে উপকৃত হওয়ার যোগ্যতা আমাদের নেই। এজন্যই ইলম আহরণ করতে হয় কুরআন-হাদিসের নির্যাসরূপে প্রস্তুতকৃত ও সরাসরি পরিবেশনযোগ্য 'ইসলামি কিতাবাদি' থেকে, যা সম্মানিত আলিমরা রচনা করে গেছেন।
এবার ইলম অর্জনের ধারাবাহিকতা বলার আগে আরেকটা কথা বলি। ইলম অর্জন করতে হয় বিষয়ভিত্তিক ভাবে। এলোপাতাড়ি পড়াশোনা করলে দিনশেষে তেমন কিছুই মনে থাকে না, হৃদয়ঙ্গম হয় না। যাইহোক।
১. সবার আগে শিখতে হবে আকিদা। ওজু ও নামাজ ভঙ্গের কারণগুলোর চেয়ে গুরুত্ব দিয়ে শিখতে হবে ঈমান ভঙ্গের কারণগুলো। জানতে হবে তাওহিদ, রিসালাত ও আরকানুল ঈমান প্রভৃতি। নির্ভরযোগ্য কোনো আলিমের কাছে আকিদার ওপর পড়াশোনা করুন। 'ঈমান সবার আগে' 'তাওহিদের মূলনীতি' 'ঈমান ভঙ্গের কারণ' 'আকিদাতুত তহাবি' 'প্রচলিত ভুল' এসব বই পড়ুন।
২. এরপর ইবাদাত, মুআমালাত তথা ব্যবসা ও লেনদেন, মুআশারাত তথা শিষ্টাচার ও বান্দার হক এবং হালাল-হারাম টপিকের ওপর পড়াশোনা করুন।
'নবীজীর নামায' ও যাকাত-সিয়াম ও হজ সংক্রান্ত নির্ভরযোগ্য আলিমদের লেখা ভালো বইগুলো পড়তে পারেন। ব্যবসা, লেনদেন ও ইসলামি অর্থনীতি সম্পর্কে জানতে তাকি উসমানি সাহেবের বইগুলো পড়া যায়। মুআশারাত তথা শিষ্টাচার বিষয়ে 'আদাবুল মুআশারাত' বইসহ অন্যান্য বই পড়তে পারেন। আত্মশুদ্ধি অর্জনের জন্য পড়তে পারেন 'তাসাউফ ও আত্মশুদ্ধি' বইটি।
পাশাপাশি পড়াশোনা করুন হালাল-হারাম বিষয়ে। সমকালীন প্রকাশন থেকে প্রকাশিত 'হালাল-হারামের বিধান' বইটি পড়তে পারেন।
আর এই সবগুলো বিষয় সংক্ষেপে একসাথে পেতে পড়তে পারেন 'ফরজে আইন' বইটি।
৩. ধারাবাহিকভাবে পুরো কুরআনের অনুবাদ ও যেকোনো একটি ভালো তাফসির পড়ুন। 'তাওযীহুল কুরআন' ও 'তাফসীরে উসমানী' পড়তে পারেন। এই পড়াশোনা হবে কুরআনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে, কুরআন নিয়ে তাদাব্বুর করতে ও ভাবতে, কুরআন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে।
৪. বিষয়ভিত্তিক হাদিস পড়ুন। 'রিয়াজুস সালিহিন' 'আদাবুল মুফরাদ' ও প্রসিদ্ধ ছয় কিতাবের নির্যাস 'বিষয়ভিত্তিক বিশুদ্ধ হাদিস সংকলন' বইটি পড়তে পারেন।
৫. নিয়মতান্ত্রিক পড়াশোনা করতে কোনো একাডেমীতে ভর্তি হয়ে যেতে পারেন। যেখানে কুরআন-হাদিস বুঝতে আরবি ভাষা, নাহু-সরফ, বালাগাত ইত্যাদি শিখবেন। ফিকহের কিতাবাদি পড়বেন। হাদিস ও হাদিসের মূলনীতি শিখবেন। তাফসিরের ইলম আহরণ করবেন। সম্ভব হলে এই ধারাবাহিকতায় আলিম হবেন, ইনশাআল্লাহ।
মুফতি আবুল হাসানাত কাসিম (হাফি.)