Wednesday, September 20, 2023

home schooling

I consider home education an integral part of parenting. 

Having children requires *raising* children, and a big part of raising children is educating them in all kinds of things. 

We as parents naturally love our children, and we nourish them physically with wholesome nutrition, emotionally with wholesome bonds, and intellectually and mentally with wholesome concepts, ideas, and principles. 

We teach our children first how to sit, how to stand, how to walk, how to talk, how to eat, how to throw a ball. Then as they get a bit older, we teach them how to wash their hands, how to brush their teeth, how to dress themselves, how to put away their toys after playing. 

Then they get older still, and ask many questions about the world and their environment, and we answer all their questions. 

We teach them Islam: we talk to them about Allah, our love for Him and our gratitude for His blessings on us, and how He has created the sun and the moon and the stars and mountains and birds and flowers. About the Prophet ﷺ and his beautiful life story. About the dunya and the Akhirah, about the creation of Adam and the plot of Shaytan. The Prophets and their amazing stories. The Sahaba and their heroic strengths. 

We teach them basic fiqh: how to make wudu, how to pray, how to cover the awrah, how to eat the sunnah way, haram and halal. Simple du`as for when we wake up in the morning, when we enter the restroom, when we get in the car, when we get in bed at night. 

Then we instill in their hearts values and begin to shape their character: how to be honest, how to be responsible, how to obey parents, how to respect elders, how to have mercy on the young, how to give in charity, how to set our intentions (نية , niyya), how to express our feelings to others, how to rely on Allah with full tawakkul (توكل, trust). 

After all this, the important underlying foundation has been built. The stage is now set for more learning, more tarbiya, تربية. 

Why stop now?

Why should we, as parents, suddenly stop teaching our children abruptly when we've been teaching them things since the day they were born?

We teach them Quran, first and foremost. We repeat it with them so they memorize it. Then we teach the meanings (تفسير, tafsir), narrate the stories, provide the context of the surahs. We teach hadith, first short simple ones, then longer. We teach the seerah more formally, first of Prophet Muhammad ﷺ then of his Sahaba and the Khulafa' Ar-Rashidun, then progress into the rest of Islamic history. 

We also teach our children more "academic" subjects as well. We teach them math, reading, writing, art, science, geography, and world history. We educate them in multiple languages if we are able: English, Arabic, or whatever our mother tongue is. We pass down this wealth of knowledge to our children, in the richness of traditional Muslim languages and not merely limited to only English. 

This is تربية: tarbiya. Child-rearing. 

Raising a whole human being. 

Addressing the physical, emotional, psychological, mental, spiritual, and intellectual needs of the child. 

Why should we arbitrarily set random limits on what we teach our own children, and what we will hand over our children to strangers to teach? 

We know our own children best, not some stranger!

We parents have been present from the beginning. 

My eldest child is 11 years old alhamdulillah, so in my mind, I have been raising and educating my children for eleven years. 

This is the start of our twelfth year homeschooling, in the larger sense referring to tarbiya and general education. 

But in the more narrow definition of homeschooling using the ideas of the public-school model, where children start "formal schooling" in kindergarten at 5 years old, it's been six years. 

But I don't tend to follow that mass-schooling model anyway. Formal schooling for us starts around seven years of age, or based on the interest and enthusiasm of each child. 

I keep a simple spiral notebook each year as my Homeschool Tracker, kept for my own records over the years. In it, I write down what we accomplish that year. It is a daily log of the subjects for each child, the material we go through, the surahs memorized and the books read and even the field trips or experiments we embark on. It is also partially a journal, documenting my own thoughts, frustrations, struggles, and joys as I work with my children. It helps keep me on track, as well as keep me motivated and consistent. 

Yesterday, as I made my Homeschool Tracker for the new 2023-2024 school year, I looked yesterday through my old notebooks and was hit with a wave of emotion. 

I started the notebook tradition in 2019, when my first child was loosely in first grade. It's amazing to me to go back and read my old notes, the daily logs from so many years ago. To see the general progress and all the changes. What I struggled with that is no longer a problem, and the challenges that remain challenging for me even now. It's always fascinating to pause where you're standing and look back, reviewing the journey you have taken. 

Homeschooling isn't always easy, but it is 100% worthwhile, meaningful, and beautiful. It is the best journey to take with your children, especially for us as Muslims. Alhamdulillah.

Umm Khalid 

প্রথম দেখা

প্রথম দেখা
বিয়ে উপলক্ষ্যে পাত্র-পাত্রী একে অপরকে দেখা সুন্নত। এই দেখাদেখি বিয়ে করার চেয়ে কম আকর্ষণীয় আর উত্তেজনাকর নয়। কয়েকজনের স্মৃতি তোলা রইল,

আঁধারকন্যা
১ঃ পাত্রপক্ষ এসেছে। আমাকে সংবাদ দেয়া হল। লজ্জায় পা চলছিল না। আব্বু আমাকে ধরে নিয়ে বসালেন। চোখ তুলে চাইতে পারছিলাম না। অনেক চেষ্টা করে চোখ তুলে তাকালাম। দেখার পর মন ভেঙে গেল। আর সেখানে বসে থাকতে ইচ্ছা হচ্ছিল না। পছন্দ যেহেতু হয়নি, বিয়ে তো হবে না। শুধু শুধু বসে থেকে কী লাভ। সরাসরি পছন্দ হয়নি বলতেও সংকোচ হচ্ছিল। একজন মানুষ আমাদের বাড়ি থেকে কষ্ট নিয়ে ফিরে যাক, সেটা চাইছিলাম না। মাথায় একটা বুদ্ধি এল। কথা শুরু হওয়ার আগেই আব্বুকে বলে উঠে চলে এলাম। এসে মেইনসুইস বন্ধ করে দিলাম। অন্যবাড়িতে আলো শুধু আমাদের বাড়ি অন্ধকার। পাত্রপক্ষ বেশ বুদ্ধিমান। অন্ধকারেই আব্বুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। আর যোগাযোগ করেননি।

চোরাদৃষ্টি
২: খুবই লজ্জা হচ্ছিল। আব্বু আর ভাইয়া সেখানে বসা ছিলেন। আম্মু আমার হাতে কফি দিয়ে পাঠালেন। কামরায় প্রবেশ করেই আমি রীতিমতো বিমোহিত। এত সুন্দর মানুষও হয়। লাজলজ্জা ভুলে তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। আমাকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকতে দেখে আব্বু আর ভাইয়া বিব্রত বোধ করছিলেন। ভাইয়া কয়েকবার ইশারা দিলেন। আমি খেয়াল করিনি। যেভাবে তার দিকে তাকিয়ে হাঁটছিলাম, যে কোনো মুহূর্তে চেয়ারের সাথে ধাক্কা খেয়ে কফির ট্রেসহ হোঁচট খেয়ে পড়ার আশংকা ছিল। ভাইয়া দ্রুত উঠে এসে ট্রেটা হাতে নিয়ে টেবিলে রেখে আমাকে ভেতরে ফিরিয়ে এনে বকুনি দিলেন। ভাইয়ার বকুনি আমার কানে গেলে তো! কারণ আমার হৃদয়টা দরজার ওপাশে রেখে এসেছি যে। বিয়ের এতবছর পরও স্বামী সেদিনের ঘটনাটা নিয়ে আমার সাথে মস্করা করতে ছাড়েন না।

গোয়েন্দা জেরা
৩ঃ পাত্রী দেখতে গিয়েছি। একটু পর সদর্পে এসে আমার মুখোমুখি হয়ে বসলেন। যে সে বসা নয়, রীতিমতো পায়ের ওপর পা তুলে বসেছেন। বসেই কালবিলম্ব না করে জেরার ভঙ্গিতে প্রশ্ন করতে শুরু করলেন। পাত্রীর ড্যামকেয়ার ভাবভঙ্গি দেখে ভড়কে গেলাম। কত বেতন পাই, বাসাভাড়া কত লাগে, খরচের খাত কী কী, আরো নানা প্রশ্ন। কোনোরকমে গোয়েন্দা জেরাপর্ব শেষ করলাম। নিরাপদে বিদায় নিয়ে হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম।

হাইহিল
৪ঃ আম্মু বারবার নিষেধ করেছেন: হাইহিল পরে পাত্রের সামনে যাস না। আমি বেঁটে। হাইহিল না পরলে খুবই খাটো দেখায়। আম্মুর নিষেধ ডিঙ্গিয়ে হাইহিল পরেই গেলাম। আসার সময় আম্মু জোর করে আমার হাতে চা-নাস্তার ট্রে ধরিয়ে দিলেন। উত্তেজনায় হাত-পা কাঁপছিল। হাইহিল পরার অভ্যেস ছিল না। কামরায় প্রবেশ করার পর হিলের তলায় শাড়ি আটকে হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেলাম। ট্রের চা-নাস্তা পুরো ঘরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ল। কামরার কয়েকজন উচ্চস্বরে হেসে উঠল। পাত্র সবার আগে উঠে এলেন। তাকে হাসতে দেখিনি। তবে সেদিনের ঘটনা নিয়ে বিয়ের পর থেকে সেই যে দুষ্টুমির হাসি শুরু করেছেন, আজো থামেনি। এখন পিনপিনে পাতলা চপ্পল পরলেও টিপ্পনী কাটতে ছাড়েন না: দেখো আবার না হোঁচট খেয়ে পড়ে যাও।

ললাটচুম্বন
৫ঃ সকাল থেকেই প্রচণ্ড উত্তেজনা। পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে জোহরের পর। খাবারের অগেই দেখাদেখি হবে। আব্বু পাত্রপক্ষকে অভ্যর্থনা জানিয়ে ঘরে এনে বসালেন। আমি নাস্তার ট্রে হাতে কামরায় প্রবেশ করলাম। অভ্যেশবশত আব্বুর কপালে চুমু খেলাম। আব্বুর পাশেই পাত্র বসে ছিলেন। আমি ঘোরের মধ্যে ছিলাম। লজ্জায় কোনো দিকে তাকাতে পারছিলাম না। আব্বুর কপালে চুমু খাওয়ার পর পাশে বসা পাত্রকে ভাইয়া মনে করে তার কপালেও চুমু খেয়ে বসলাম। পরক্ষণেই বুঝতে পারলাম কী ভয়ানক কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেছি। লজ্জায় পারলে সেখানেই মরে যাই। একদৌড়ে ছুটে এসে আমার রূমে এসে দরজা বন্ধ করে দিলাম। বাসররাতে বর দুষ্টুহাসি দিয়ে বললেন, তোমাকে বিয়ে করার জন্যই তুমি ষড়যন্ত্র করে আমার কপালে.....। এত বছর পরও স্বামী সেদিনের ঘটনা বলে আমাকে রাগানোর চেষ্টা করেন।

মা শা আল্লাহ
৬ঃ বন্ধুর বোনের সাথে বিয়ের কথাবার্তা হয়েছে। রূয়তে শরয়ি বা প্রথম দেখার জন্য আমাকে বন্ধুর বাড়িতে নিমন্ত্রণ করা হল। আগে কতবার এসেছি। আজকের আসা সম্পূর্ণ ভিন্ন। পাত্রীকে আগে কখনো দেখিনি। আমি সাক্ষাতের কামরায় বসে আছি। পাত্রীকে নিয়ে আসা হল। তাকে দেখেই আমার কী যে হল, বুঝতে পারলাম না। মুখ দিয়ে অজান্তে সুবহানাল্লাহ, মা শা আল্লাহ বেরিয়ে গেল। এমন অপার্থিব সৌন্দর্য দেখে আমি ঘোরের জগতে চলে গিয়েছিলাম। মুখ দিয়ে ক্রমাগত ‘মা শা আল্লাহ’ বেরোচ্ছিল। আমার অভিব্যক্তিতে পাত্রী লজ্জা পেয়ে ছুটে পালিয়ে গেল। একটু পর তাকে আবার জোর করে ধরে আনা হল। তারও পাত্র দেখা উচিত। আমি তখনো চোখ বন্ধ করে একনাগাড়ে ‘মা শা আল্লাহ’ বলে যাচ্ছিলাম।

রাব্বে কারীম সবার জন্য উত্তম জীবনসঙ্গীর ব্যবস্থা করে দিন। আমীন।

- শায়খ আতিক উল্লাহ্ হাফি.

পর্ব ২স্ত্রী চাকরি করলে সন্তানের হক আদায় হয় না...। দেখা যাক, কথাটা ভুল না ঠিক?


পর্ব ২

স্ত্রী চাকরি করলে সন্তানের হক আদায় হয় না...। দেখা যাক, কথাটা ভুল না ঠিক? 
 
[ক]
সুতরাং গত পর্বে আমরা দেখেছি, কীভাবে ও কেন একই পরিমাণ স্ট্রেস পুরুষের চেয়ে নারী শরীর ও মনের উপর বেশি প্রভাব ফেলে। আবার একটু স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। 
নারীর নিজের ক্ষতি : 
- পুরুষের চেয়ে স্ট্রেসে থাকা একজন নারীর শারীরিক ক্ষতি বেশি হয়, মানসিক অসুখও বেশি হয়। [Stress and your health, Office on Women’s Health, U.S. Department of Health and Human Services] 
- স্ট্রেসের প্রভাবে লক্ষণগুলো নারীদের বেশি প্রকাশ পায়। কারণ, একই স্ট্রেসে নারীদের স্ট্রেস-হরমোন কর্টিসল বেশি বের হতে থাকে’(Verma, 2011)

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, টেনশন-জাতীয় মাথাব্যথা ও মানসিক রোগগুলো নারীদের বেশি হয়। (Hammen, 2009) এবং কমবয়েসী নারীদের হার্টের সমস্যাগুলো মূলত হার্টের ওপর এই স্ট্রেসের কারণেই হয়। (Vaccarino, 2014)

এবং আমরা আরও দেখেছি, পুরুষের তুলনায় একে তো তাদের স্ট্রেস সামলানোর শারীরিক প্রক্রিয়াগুলো দুর্বল। তার উপর আবার পুরুষের তুলনায় তারা অধিক স্ট্রেসে এক্সপোজড। নারীদের এই অতিরিক্ত স্ট্রেসের উৎস আমরা দেখেছি। আবার বলছি। নারীর এই অতিরিক্ত স্ট্রেসের উৎস কর্মস্থল :
- অফিসে ও বাসায় নারীর ‘দ্বৈত ভূমিকাই’ তাদের কর্মস্থলে পুরুষের চেয়ে বেশি স্ট্রেস অনুভব করার মূল কারণ। (Prasad, 2016) 
- পুরুষের মাঝে কাজ করতে সে বেশি স্ট্রেস ফিল করে, সেখানেই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ২০১২ সালে ২২,০০০ নারীর ওপর এক রিসার্চে এসেছে, যেসব নারীদের চাকুরি-কেন্দ্রিক স্ট্রেস (job-related stress) বেশি, তাদের ৪০% বেশি সম্ভাবনা হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক (cardiovascular event) হওয়ার [Alexandra Sifferlin (August 25, 2015) Women in Male-Dominated Jobs Have More Stress, TIME] 
- নারী কর্মকর্তারা বেশি স্ট্রেস, উদ্‌বেগ ও মানসিক সমস্যার সম্মুখীন [Why Women Feel More Stress at Work (Harvard Business Review 2016)] 
- ব্রিটেনের মতো দেশেই ৭৯% নারী কর্মক্ষেত্রের স্ট্রেসে ভুগছেন, ৭৮% নারী কর্মজীবীর ঘুমে সমস্যা, মোটের ওপর ৮৭% নারী চাকুরি নিয়ে স্ট্রেসে আছেন বলে জানিয়েছেন। [Louise Chunn (Mar 26, 2019) Women Are at Breaking Point Because of Workplace Stress : Wellbeing Survey from Cigna, Forbes.com]

কিন্তু গর্ভকালে এই অতিরিক্ত স্ট্রেসটা সন্তানের জন্য বিপুল ক্ষতি নিশ্চিত করে। স্ট্রেসের কারণে মায়ের হৃদস্পন্দন থেকে শুরু করে স্ট্রেস হরমোন, অতিমাত্রায় অক্সিডেন্ট তৈরি, রক্তচাপের বৃদ্ধি সকল জিনিস গর্ভস্থ শিশুর গঠন ও বৃদ্ধিতে নেগেটিভ প্রভাব ফেলে। যেমন: [University of Missouri-Columbia. (2016, June 7). Stress exposure during pregnancy observed in mothers of children with autism : More research needed to understand gene-stress interaction. ScienceDaily.] 
- গর্ভকালীন নানান জটিলতা যেমন আগে আগেই ব্যথা ওঠা, আগে আগেই বাচ্চা হয়ে যাওয়া, কম ওজনের বাচ্চা, প্রি-এক্লাম্পশিয়া, গর্ভকালীন ডায়বেটিস ইত্যাদি এখন বেশি হচ্ছে (Coussons-Read, 2013) এই স্ট্রেসের দরুন। 
- আগের চেয়ে বাচ্চাদের জন্মগত ত্রুটিও বেশি হচ্ছে। বাচ্চা হওয়ার পরও বাচ্চার সমস্যা রয়ে যাচ্ছে তার গর্ভকালীন স্ট্রেসের ফল হিসেবে। (Carmichael, 2007) বাচ্চার সম্পর্ক স্থাপনে সমস্যা, খিটখিটে মেজাজ, আবেগিক সমস্যা, অ্যাজমা, অ্যালার্জি, কম রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা, বুদ্ধিবিকাশে বাধা, স্মৃতিস্বল্পতা ইত্যাদি। (Coussons-Read, 2013) 
- অটিজম রোগাক্রান্ত শিশুও বেশি জন্মাচ্ছে এই গর্ভকালীন স্ট্রেসের কারণে। (Varcin, 2017) 

সিজারের জন্য শুধু ডাক্তারদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। আমাদের লাইফস্টাইল সিজারের ইন্ডিকেশন (প্রয়োজন) নির্মাণ করে, প্রসবকে জটিল করে ফেলে। এবং এই ইস্যুগুলো প্রতিরোধযোগ্য ছিল। নারীরা পুরুষের সাথে প্রতিযোগিতায় না নামলেই এই অঘটনগুলো প্রতিরোধ সম্ভব। বিশেষত ১ম ট্রাইমেস্টার, যখন সন্তানের মূল গঠন হচ্ছে, তখন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে মেয়েরা যায় না। হরমোনের ওঠানামায় অভ্যস্ত হয়ে ওঠে না শুরুর সময়টা। ফলে স্ট্রেস বেশি পড়ে, যেসময় তার বিশ্রাম বেশি প্রয়োজন ছিল। অনেক মেয়ে সন্তান হবার পর মাতৃত্বকালীন ছুটিতে যায়। ততদিনে যা হবার হয়ে গেছে। শরীরের বিরুদ্ধে গিয়ে কর্মঘন্টা চালিয়ে যাওয়া, কর্মস্থলে স্ট্রেস-পলিটিক্স-প্রেসার পুরুষের সমানই তাকে সহ্য করতে হয়। পুরুষকে টেক্কা দিতে তারা সেটা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে করে শরীর সায় না দিলেও। এভাবেই অনাগত সন্তানের হক নষ্ট হয় মায়ের উচ্চাভিলাষের দ্বারা। 

[খ] 
এবার আগত সন্তান। মানুষের বাচ্চা গরুছাগলের বাচ্চার মত না। জন্তু-জানোয়ারের বাচ্চা হয়েই দৌড় দেয়। আর মানুষের বাচ্চা? কত দুর্বল, কত অসহায় থাকে ৩-৪ বছর পর্যন্ত, তাই না? এমনকি বান্দরের বাচ্চার সাথেও মানুষের বাচ্চার তুলনা চলে না। বাঁদরের বাচ্চাও এটলিস্ট মাকে আঁকড়ে ধরে রাখতে পারে। মানুষের বাচ্চার সেটুকু শক্তিও থাকে না। মানুষের বাচ্চার তুলনা করতে পারেন ক্যাঙ্গারু ইত্যাদি মারসুপিয়াল প্রাণীদের বাচ্চার, যারা অপরিণত হয়ে তৈরি হয়। এজন্য থলে দেওয়া থাকে মায়ের পেটে। বা ইঁদুর-কুকুরের বাচ্চার মত, যাদের চোখ ফোটে না। মানুষের বাচ্চারও হবার পর বেশ কিছুদিন সময় লাগে ক্লিয়ার দেখতে। তাই তার আরও বেশি দরকার মা-কে। দরকার আরও ক্লোজ টাচ। আমরা দেখব এই সময়টা দাদী-নানী-বুয়া দিয়ে কাজ চালানো যায় কিনা।  

১৯৮৬, ১৯৮৮ ও ১৯৯০ সালে পর পর ৩ টি রিসার্চের ফলাফলের উপর University of London-এর প্রোফেসর Jay Belsky সিদ্ধান্তে আসেন: বাচ্চার ১ম বছরে যেসব মায়েরা জবে থাকে ফুলটাইম, সেসব বাচ্চার ৩ বছর, ৪ বছর ও গ্রেড-১ এ বুদ্ধিবৃত্তিক গ্রোথ তুলনামূলক কম। এবং এসব মায়েদেরও ডিপ্রেশন হবার হার ‘বেকার’ মায়েদের চেয়ে বেশি। 

সহজ করে ওনার ফাইন্ডিং-গুলো বলি: ছোটবয়েস থেকে দীর্ঘসময় বাচ্চাকে মা ছাড়া অন্য কারও কাছে রেখে পাললে (early and extensive nonmaternal care), পরবর্তীতে পিতামাতার সাথে সন্তানের দূরত্ব বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। সন্তানের ভিতরে রাগ-জেদ ইত্যাদি আগ্রাসী স্বভাব বৃদ্ধি পায়। বাচ্চা বয়সে, স্কুলে যাবার আগের বয়সে এবং প্রাথমিক ক্লাসগুলোতে কাঙ্ক্ষিত স্বাভাবিক বিকাশ হয় না (noncompliance)। 

পুঁজিবাদী-নারীবাদী মতের বিরুদ্ধে গেল তো? এরপর বেচারাকে ধুয়ে দেয়া হল। কেচে নিঙড়ে রোদে মেলে দেয়া হল। তারপরও ২০০১ সালে Journal of Child Psychiatry and Psychology-তে তিনি নিজ মতের উপর অটল থাকেন। 

আগ্রহীরা মূল পেপার দেখতে পারেন:
Belsky J. Emanuel Miller lecture developmental risks (still) associated with early child care. J Child Psychol Psychiatry. 2001 Oct;42(7):845-59.  
Brooks-Gunn, J., Han, W. J., & Waldfogel, J. (2010). First-Year Maternal Employment and Child Development in the First Seven Years. Monographs of the Society for Research in Child Development, 75(2), 7–9.

[গ] 
অনেকে বলেন: বাবার দায়িত্বটা কি? সন্তান কি বাবার নয়? মা-ই কেন স্যাক্রিফাইস করবে? সন্তান অবশ্যই দুজনের। এবং সন্তানের স্বার্থেই বাবা বাইরে বাইরে কাজ করবে এবং মা সন্তানের সাথে লেপ্টে থাকবে ঘরে। এটাই শিশু-নারী-পুরুষের বায়োলজি। এবং বায়োলজির স্রষ্টা (ইভোল্যুশন মনে করলে করেন) সেই দায়িত্বই তাদের বণ্টন করেছেন যেটা বায়োলজির অনুকূল। এখানে কোনো কম্প্রোমাইজ, কোনো স্যাক্রিফাইস-এর প্রশ্নই নেই। মা মায়ের কাজটা করছে, বাবা বাবার। এখানে কোনো স্যাক্রিফাইস-টাইস নেই। 

রিসার্চ বলছে— মাতৃস্নেহ বিষয়টা সরাসরি অক্সিটোসিন হরমোনের সাথে রিলেটেড (Babchuk, 1985), যা একজন নারীর শরীরে থাকে অনেক বেশি। প্রসবের সময় জরায়ুর ক্রমাগত সংকোচনের ফলে ব্রেইন থেকে বন্যা-জলোচ্ছ্বাসের মত অক্সিটোসিন হরমোন নির্গত হতে থাকে। আবার চক্রাকারে এই হরমোন উত্তরোত্তর জরায়ু সংকচন বাড়াতে থাকে যে পর্যন্ত না বাচ্চা বের হচ্ছে। এই হরমোনের সাইকো-ইফেক্ট হল: বাচ্চার প্রতি মায়া। হরমোন নিঃসরণ চলতেই থাকে বাচ্চার স্তনপানের প্রতিটি চোষণে। অর্থাৎ মা-শিশুর টান কেবল মানসিক না। টান শরীরে, রক্তে, হরমোনে। এজন্য মিলিয়ে নিন: 
- বাচ্চার কান্নায় মায়ের অক্সিটোসিন হরমোনে বান ডাকে, ফলে মায়া উথলে ওঠে, মা ব্যাকুল হয়ে ওঠে। 
- বাচ্চাকে ছাড়া মায়ের খালি-খালি লাগে, মনে হয় শরীরের একটা অঙ্গ নেই। 
- বাচ্চার অস্ফুট কান্না-নড়াচড়া-চেহারার ভঙ্গি-কান্নার অর্থ মা বুঝতে পারে।   
- কর্মস্থলে গিয়ে বাচ্চার টান, আবার বাচ্চার কাছে থাকলে কর্মস্থলের টেনশন মাকে একটা দ্বন্দে ফেলে দেয়। না এটা হয়, না ওটা। জবের প্রোডাক্টিভিটিও কমে, ওদিকে মায়ের কাজটাও আধখেঁচড়া হল। 
  
এখানে কারও দোষ নেই। এটাই আমাদের বায়োলজিক্যাল নকশা। মেয়েদের ব্রেইনম্যাপ এভাবে হয়ে ওঠে। একে অস্বীকার করলেই ব্রেইনম্যাপ বদলে যায় না। ছেলেদের ব্রেইনম্যাপ এমন না। একজন বাবা বড়োজোর সন্তানের সাথে খেলতে পারে। ছেলেদের ব্রেনের নকশা সবকিছুকে ‘অবজেক্ট’ হিসেবে নেয়, বাচ্চাকেও সে একটা খেলনার মতোই মনে করে। বড়োজোর কষ্ট করে কয়েকদিন কিছু যত্ন নিতে পারে, যা বাপকে শিখিয়ে পড়িয়ে দিতে হয়। কিন্তু মা-শিশু যে স্পেশাল বন্ধন, সেটা মেয়েদের শিখিয়ে দিতে হয় না। এগুলো সব মেয়েদের ব্রেনের নকশায়ই থাকে।
ছেলেদের টেস্টোস্টেরন হরমোন এই ‘বাচ্চা-পালা’-র ঝোঁক কমিয়ে দেয়, যা বাবাদের বেশি (Udry, 2000)। উদাহরণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, একজন কর্মজীবী বাবা নিজের ছেলের সাথে যে পরিমাণ সময় দিয়েছে, কর্মজীবী দাদা হবার পর নাতিকে সময় দেয় বেশি। কারণ তার টেস্টোস্টেরন এখন পড়তির দিকে।

সুতরাং সন্তানের মায়ের প্রয়োজন বাবা-বুয়া-দাদী-নানী দিয়ে হবেনা, এটা বিজ্ঞান বলছে। কিছু মানুষ আছে যারা ধর্মও মানে না, বিজ্ঞানও মানে না। কৌন হ্যায় ইয়ে? কাঁহা সে আতে হ্যায় ইয়ে লোগ? 

[ঘ] 
 অনেক মা বুকের দুধ বের করে রেখে কর্মস্থলে যান। ভাবেন, দায় শেষ। দেখা যাক। 
১.
বুকের দুধের উপাদানগুলোর যে অনুপাত, পুরো দিনের নানা অংশে তার বৈচিত্র হয় শিশুর প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য রেখে (circadian variation)। সন্ধ্যার দুধে ফ্যাট ও ট্রিপ্টোফ্যান বেশি থাকে। এমনি করে প্রোটিন-শর্করা-ক্যালসিয়াম-ফসফরাস-ম্যাগনেসিয়াম-আয়রন-নিউক্লিওটাইড- কর্টিসল – মেলাটোনিনের উঠানামা হয়। একেক সময় শিশুর একেক লেভেলের চাহিদা থাকে যা ঐ সময়কার কম্পোজিশন ঠিক করে দেয়। আমি আসলে জানিনা ৯টা-৫টা ডিউটি করলে শিশুর এই চাহিদা কীভাবে মেটে? অনেকে তো চাকরির জন্য ২ বছরের আগেই দুধ ছাড়িয়ে দেন। বাহ। 
২.
অনেক মা কমপ্লেইন করেন, বাচ্চা যথেষ্ট দুধ পায় না বা দুধ উৎপাদন কমে গেছে। নানান কারণেই হতে পারে। আমাদের আলাপের সাথে প্রাসঙ্গিক যেটা সেটা হল, যখন স্তন দুধে পূর্ণ থাকে তখন দুধ উৎপাদনের গতি কমে আসে। খালি অবস্থায় দুধ তৈরি হয় বেশি বেশি। মানে, মা যত বেশি বার বাচ্চাকে খাইয়ে খালি করবে, ততবেশি দুধ উৎপাদন হবে। লম্বা সময় না খাওয়াতে খাওয়াতে এটাই স্বাভাবিক ফেনোমেনা যে, প্রোডাকশন কমে যাবে। ২ বছরব্যাপী যে পরিমাণ দুধ বাচ্চার জন্য জরুরি ছিল, তা সে আর পেল না। 
৩.
আমরা যদি খরগোশের দুধের উদাহরণ দিই, মা-খরগোশের দুধে চর্বি ও প্রোটিনের ঘনত্ব এতটাই বেশি থাকে যে, বাচ্চা-খরগোশকে দিনে একবার দুধ পান করালেই চলে। অন্য স্তন্যপায়ীদেরও ঘনঘন দুধ পান করানোর প্রয়োজন পড়ে না। তবে মানুষের ব্যাপারটি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। যেহেতু মানুষের বুকের দুধে পুষ্টি কম থাকে এবং খুব দ্রুতই হজম হয়ে যায়, ফলে মায়ের তার শিশুকে দিনে কয়েকবার (কমসে কম দিনে ৮-১২ বার বা তারও বেশি হলে ভালো) বুকের দুধ পান করাতে হয়। কারও কারও মতে প্রতি ২০ মিনিটে একবার। কেননা দ্রুত হজম হয়ে যায়। 

মানুষের দুধে ফ্যাটের পরিমাণ ৩-৫%, যেখানে অন্যান্য প্রাণীর ৪০% এর উপরে। সুতরাং আমরা এমন একটা প্রজাতি যাদের বেশি ঘন ঘন দুধপানের দরকার পড়ে। এভাবেই আমরা তৈরি। এজন্যই বারংবার দুধপান করানোর গুরুত্ব এতো বেশি। যত বেশি দুধপান করানো হবে, মায়ের তত বেশি প্রোডাকশন হবে। তত বেশি ফ্যাট বাচ্চা পাবে, যা তার মস্তিষ্ক বিকাশের জন্য জরুরি। 
 [Emma Pickett, Guest blog: breastfeeding - the dangerous obsession with the infant feeding interval, www.unicef.org.uk]

এই ব্যাপারটির গুরুত্ব সম্পর্কে ইনস্টিটিউট অফ হিউম্যানিস্টিক সাইন্সের (Institute of Humanistic Science) মনোবিজ্ঞানী ড. জেমস ডাব্লিউ. প্রেসকট (James W. Prescott PhD) বলেন,

"আমরা কেবল মানুষের মধ্যেই দেখতে পাই, জন্মগ্রহণের সময় নবজাতককে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে এবং মা তার সন্তানকে স্তন্যপান করাচ্ছেন না। আমরা আবিষ্কার করেছি, লাখ লাখ বছর বিবর্তনের ফলে গঠিত দৈহিক ও মনোদৈহিক গঠনকে লঙ্ঘন করে এ জাতীয় আচরণগুলো। ফলে শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে নবজাতককে তার শৈশব-কৈশোর-তারুণ্যে এক ভয়ানক মূল্য চুকাতে হচ্ছে— যেমন বিষণ্ণতা, নিয়ন্ত্রণহীন আবেগ, সহিংসতা এবং মাদকসেবন"।
[Prescott, James W. (Spring 1997). Breastfeeding: Brain Nutrients in Brain Development for Human Love and Peace. Touch The Future Newsletter.]

আমি আসলে জানিনা, বিনা প্রয়োজনে, নিজ আত্মতৃপ্তির জন্য সন্তানকে বঞ্চিত করা মায়েরা কীভাবে এই পরিণতি জাস্টিফাই করবেন। (বাধ্য হয়ে করা বা উম্মাহর খেদমতের জন্য করাটা একটা সাউন্ড জাস্টিফিকেশন। মেয়েদের চাকুরি কেমন হওয়া দরকার, সেটা নিয়ে আলাপ করবো সামনে ইনশাআল্লাহ)

আরও বহুকিছু আছে। মায়ের গন্ধ, মায়ের টাচ, মায়ের হার্টবিট, মায়ের স্বর শিশু মিস করে। এবং শিশুর ভবিষ্যত মনোজগত গঠনে এর ভূমিকা কী, তার ব্রেইনের সাইন্যাপস (কানেকশন) তৈরিতে এসবের কী রোল, তা নিয়ে আগ্রহীরা অনুসন্ধান করতে পারেন।

পরবর্তী পর্ব 
(চাকরি করলে নারীর কমনীয়তা নষ্ট হয়)

Dr. Shamsul Arefin