Saturday, June 9, 2012

চতুরঙ্গ (১৬তম পর্ব) [Ghost Stories - p16 ]



চতুরঙ্গ -(১৬তম পর্ব)
লেখক:নিথর শ্রাবণ শিহাব


[ বিঃদ্রঃ বাকী পর্বের লিঙ্ক এই পর্বের শেষে দেওয়া আছে ]

আমি প্রায় শোনা যায়
না এমনভাবে আস্তে আস্তে বললাম, “অ্যাক্সিডেন্টট
া আসলে আপনার Split personality’র ঐ
অংশটা ঘটিয়েছে- তাই না স্যার?” গলার স্বরই
বলে দিলো আমি ভয় পাচ্ছি।
ডাঃ এমরান কাঁশলেন খুঁক খুঁক করে, “ দুঃখজনক হলেও
ব্যাপারটা সত্যি। সেরাতে আমি তোমাকে বারবার
চলে যেতে বলেছিলাম, ভয় পাচ্ছিলাম রাতে আমার ওই
অংশটা জেগে উঠলে তোমার হ্মতি করতে পারে। তাই।
কিন্তু তুমিই শুনলে না কথাটা।
আমি ভয়ার্ত চোখে তাকালাম তাঁর দিকে, “ অন্যদিন
হ্মতি না করে সে রাতেই করতে গেলেন কেন?” নিজের
কাছেই নিজের কন্ঠটা কেমন বেখাপ্পা শোনালো।
সে রাতে জয়নাবের ডোর বেলটা ভেঙ্গেছিলে তুমি,
আর আমি কষ্ট পেয়েছিলাম তখন-তাই।নির্লিপ্ত গলায়
বললেন।
আমি ঢোক গিললাম, “
তাহলে আমাকে মিথ্যা বলেছিলেন
কেন,যে আমি সম্মোহিত হয়েছি?”
ভয় পাবে তাই বলতে চাই নি।পানির গ্লাসটার
দিকে হাত বাড়ালেন। খালি ছিল সেটা।
আমি উঠে গিয়ে জগ থেকে পানি ঢেলে দিলাম তাঁকে।
এসে আবার বসলাম টুলে, “ আর জাহিদের
ব্যাপারটা কি?” জিজ্ঞেস করলাম।
পানি খেতে খেতেই বললেন, “ এখনো বোঝোনি? ওর-ও
একই সমস্যা আছে। স্প্লিট
পারসোন্যালিটি ডিসওর্ডার। বিচিত্র
কোনো কারণে ওর অন্য অস্তিত্বটা আমার
সঙ্গে দাবা খেলে। মানে আমার অন্য অস্তিত্বের
সাথে দাবা খেলে। হারানোর জন্য। সেদিন
হাসপাতালে পরিচয়ের সময়েই বোধ হয় ওর অন্য
সত্ত্বাটা আমাকে চিনেছিল।
আমি আপনার কথা বুঝতে পারছি না স্যার।
বিভ্রান্ত গলায় বললাম।
জাহিদের অন্য সত্ত্বাটা অসম্ভব স্ট্রং।
বলতে পারো ওর হ্মমতাটার সামনে আমার
কোনো শক্তিই নেই। গ্র্যাভিটিকে ফোর্স
বানিয়ে হাইপার ডাইভ দেয়ায় রীতিমত ওস্তাদ
জাহিদের অন্য অস্তিত্বটা। এ জন্যই ওকে হঠাৎ করেই
এখানে সেখানে চলে আসতে দেখা যায়। নিজের
অজান্তেই করে। অবশ্য
তুমি দেখেছো কিনা সেটা জানি না।এক মুহূর্ত
থামলেন। ছাদের বিশাল দাবা বোর্ডে ওর
সঙ্গে খেলা হওয়ার কথা ছিল। অনেক ছোট বেলা থেকে।
ওর দাদুই সেটা বলে গিয়েছিলেন। কখন,
কিভাবে বলেছেন জানি না। জাহিদ ভুলে গেলেও ওর
অন্য অস্তিত্বটা ভোলেনি। সেটাই খেলবে জাহিদ।
কবে?”
আজ রাতেই হওয়ার কথা ছিল। অন্তত আমার
ডায়েরীতে আমার অন্য অস্তিত্বটা সে কথাই
লিখে গেছে।টেবিলের ওপর থেকে তাঁর
ডায়েরীটা তুলে একটা পাতা খুলে দেখালেন।
দেখতে পাচ্ছি এখান থেকেই, সেখানে অন্য
কারো হাতের লেখাঃ
২৬ আগস্ট রাত সাড়ে আটটায় জাহিদের সঙ্গে বড়
বোর্ডে দাবা খেলা হবে।
আমি বিড়বিড় করে বললাম, “ এটা আপনার অন্য অংশের
লেখা?”
হ্যা।হাসতে লাগলেন হঠাৎ, চিকচিক করে উঠল
ডাঃ এমরানের চোখ।
আমি মূর্তির মত বসে রয়েছি। মাথা কাজ
করছে না আমার। আবার বিড়বিড় করলাম, এসব কেন
হচ্ছে স্যার?”
হাসতে লাগলেন মিটিমিটি। চোখের দৃষ্টিটা কেমন
যেন রহস্যময়। আমি টুল
ছেড়ে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালাম। আমার মাথা ঘুরছে,
অসুস্থ গলায় বললাম, “ আপনি এর ব্যাখ্যাটাও
জানেন?”
উনি জবাব না দিয়ে বসে রইলেন কাঠের চেয়ারে।
চোখে রহস্যময় সেই হাসি।
স্যার প্লিজ?” অনুনয় করে বললাম,
চোখে পানি এসে গেল।
সব কটা জিনিসের ব্যাখ্যা জানতে নেই নোভেরা।
মানুষকে তার জ্ঞান আর
মেধা খাঁটিয়ে সেটা আবিষ্কার করার সুযোগ
দেয়া উচিত। তুমি আসতে পারো- আমার নামাযের সময়
হয়ে গেছে।
আমি নিজের অজান্তেই ঠোঁট
কামড়ে কান্না আটকে দৌড়ে চলে এলাম।
০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০
সে রাতে হল রুমে তালা লাগিয়ে যখন চলে আসবো-
ছাদের দিক থেকেই একামাত দেয়ার শব্দ শোনা গেল।
কন্ঠটা খুব পরিচিত লাগলো। কিন্তু কার মনে পড়ল না।
আমি ফিরে তাকালাম। অন্ধকারের মাঝে দেখা যাচ্ছে,
ছাদের দাবা বোর্ডে উল্টো হয়ে অসংখ্য সাদা পোশাক
পরা মানুষ জামাতে নামাযে দাঁড়িয়েছে! কোথাও
কোনো মূর্তি নেই! ইমামের পেছনে নীল শার্ট
পরা কেউ একজন দাঁড়িয়েছে, নিচ থেকেও
চিনতে পারলাম- জাহিদ! এবং ইমাম আর কেউ নন-
ডাঃ এমরান!
আমি জানি নামাযের পরেই হয়ত সেই বড় খেলাটা শুরু
হবে...... আমি দাঁড়িয়ে রইলাম দরজার কাছে।
দেখতে পাচ্ছি লম্বা নামাযটা শেষে সাদা পোশাক
পরা মানুষগুলো মিলিয়ে যাচ্ছে..... দাবা বোর্ডে আগের
মূর্তিগুলো একে একে ফিরে আসছে...... যেন বোর্ড
ফূঁড়ে গজিয়ে উঠল।
আমি অসুস্থ হয়ে পড়ছি দ্রুত।
দেখতে পাচ্ছি দাবা খেলার শুরুর সমত
যেভাবে ঘুটি সাজানো হয়- তেমন ভাবে ঘুটি সজ্জিত
হচ্ছে আপনা আপনি। অভাব থাকা ঘুটিটা হিসেবে হল
রুম থেকে বেশ কিছু মূর্তি শূণ্যে উথে যাচ্ছে!
গিয়ে ছাদের ওই ঘরগুলোতে বসছে নিজে নিজে!
আমি নিজের পায়ের ওপর ভর রাখতে পারছি না।
ওপরে খেলা শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে বাহিরে প্রকৃতিও
যেন ঝড়ের তান্ডব লীলা শুরু করেছে!বজ্রপাতের আলোয়
দেখা যাচ্ছে মূর্তিগুলো যুদ্ধের ময়দানের মত
একটা আরেকটাকে গিয়ে প্রচন্ড জোরে আঘাত
করে গুড়িয়ে দিচ্ছে। উপর থেকে ভেঙ্গে সেগুলো হল
রুমের ফ্লোরে আছড়ে পড়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ হচ্ছে!
চারপাশে ধূলো-বালুর ঝড় হল রুমের ভেতর! যেন যুদ্ধ
লেগেছে!
ডাঃ এমরান ছাদের এক মাথায় ঝুলে আছেন- অন্য
মাথায় জাহিদ। দু জনের চোখেই অদ্ভূত উল্লাস
ভরা রহস্যময় একটা হাসি.....!!
¤¤ চলবে ¤¤








চতুরঙ্গ - (শেষ পর্ব) [Ghost Stories - p- last ]


চতুরঙ্গ -(শেষ পর্ব)
লেখক:নিথর শ্রাবণ শিহাব


[ বিঃদ্রঃ বাকী পর্বের লিঙ্ক এই পর্বের শেষে দেওয়া আছে ]

সমস্ত বাড়ির জিনিস পত্রগুলো মাটি থেকে দু তিন হাত
ওপরে উঠে যাচ্ছে, আবার নেমে বসে যাচ্ছে...... আমার
ভয়টা ছড়িয়ে পরছে দ্রুত সারা শরীরে.....
ওপরে ছাদের দাবা বোর্ডের অতিপ্রাকৃত
খেলাটা আমার ভেতরে আতংকের
সৃষ্টি করছে ক্রমশ......তার থেকেও ভয়ংকর ব্যপার হল
হল রুমের অল্প আলোতে দেখা যাচ্ছে শাড়ি পরা,
মাথায় স্কার্ফ দেয়া একজন মহিলা এলোমেলো জিনিস
পত্রগুলোকে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখছেন..... জয়নাব
আরা!
আমি অস্বাভাবিক রকম আতংকিত হয়ে পাগলের মত
দৌড়াতে লাগলাম। মিউজিয়ামের পরিধি যেন
বাড়ছেই..... পথ আর শেষ হচ্ছে না......
লনের সব গ্রীক
দেবতা মূর্তিগুলো সে রাতে মাটি থেকে দু তিন
তলা উঁচুতে ভাসছিল লনের ওপর- আমি যখন
পালাচ্ছিলাম.......







০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০
সেদিনের পর আমি ডাঃ এমরানের মিউজিয়ামের
চাকরি ছেড়ে দেই। বলা বাহুল্য ডাঃ এমরানের সঙ্গেও
আর দেখা করিনি। আমি সুস্থ থাকতে চাই। পাগল
হয়ে মরতে চাই না। আমার ধারণা ওই বাড়ির
বাকি তিন জন মানুষ ডাঃ এমরানের এই
অস্বাভাবিকতা সম্পর্কে জানে। নইলে কখনই
তাদেরকে কাছে পাই নি কেন?
আমি চাকরি ছেড়ে চলে আসার অনেক দিন পর
আমাকে চিঠি দিয়েছিলেন ডাঃ এমরান।
তিনি হাসপাতালে ভর্তি তখন। খুব অসুস্থ।
মেরুদন্ডে ভর রাখতে পারেন না এখন আর।
শুয়ে শুয়ে থাকতে হয় তাঁকে। এসব ফোনে জেনেছিলাম
নার্গিসের কাছ থেকে। দেখা করতে যাইনি।
ডাঃ এমরান এক পৃষ্ঠায় কাঁপা হাতে পেন্সিল
দিয়ে চিঠি লেখেছিলেন। শুয়ে থেকে কলম
দিয়ে লিখতে পারেননি।
মা নোভেরা, জানি হয়ত এ বুড়োর ওপর তোমার
অভিমান কিংবা ভয় এ জীবনে যাবে না। তবুও
বলি জয়নাবকে হারানোর এতবছরের
বন্দী জীবনে তুমি ছাড়া কেউ আমার কাছে কখনো জেদ
ধরে বাচ্চাদের মত কেঁদে ফেলত না।কখনো কেউ
জিজ্ঞেস করত না শুঁকিয়ে এ কি অবস্থা করেছেন
শরীরের?’ তুমি যখন জিজ্ঞেস করতে বড় মায়া লাগত।
খুব কষ্টে চোখের পানি আড়াল করতাম। কাঠ
খোট্টা মানুষের চোখে পানি মানায় না। তোমার
সাথে জয়নাবের একটা মিল ছিল- সে যখন তখন আমার
সাথে কথা বলার জন্য টুল টেনে বসে পড়ত।
সেখানে চেয়ার থাকলেও টুলেই বসত।
সারা বাড়িতে টুল আর টুল ছড়িয়ে রেখেছিল সে। অবাক
লাগছে? এই বুড়ো এত কিছু খেয়াল করত? হাঃ হাঃ!
তাহলেই বোঝ, আমি কতটা চুপচাপ একা একা সময়
কাটাতাম যে তোমাকে এতটা লহ্ম্য করার সময়
পেয়েছি। ব্যস্ত হবার জন্য বোধ হয় মিল খোঁজাই ছিল
আমার এক মাত্র কাজ।আমি জানি আমাকে তুমি ভয়
না পেলেও আমার চারপাশটাকে খুব ভয় পাও। কিন্তু
ভয়ের কিছু নেই। আজ যা রহস্য- কাল
তা সাধারণে পরিণত হবে। তুমি জাহিদ বিষয়ক
একটা দোটানায় আছো জানি। তাই তোমাকে বলি।
আমরা বিভক্ত। আমাদের আরো অস্তিত্ব রয়েছে। অনেক
তুমিআছো, অনেক আমিআছি, অনেক আমরাআছে।
তুমি এগুলোকে যতই অস্বীকার করো না কেন,
এড়াতে পারবে না। তাই এদের নিয়েই বসবাস
করতে হয় আমাদের। কারণ এরাও ভালবাসার কাঙ্গাল।
অনেক স্নেহ আর ভালবাসা রেখে গেলাম তোমার জন্য।
কে জানে এই অনেকেরমাঝে নিশ্চই কোথাও
না কোথাও তুমি আমার সন্তান ছিলে। নইলে এতটা কষ্ট
লাগে কেন? -ডাঃ এমরান চৌধুরী
চিঠি পাওয়ার তিন মাস পর মারা যান ডাঃ এমরান।
আমি দেখা করতে যাইনি তখনো। কেবল
একা একা কাঁদতাম। আমার দেখা পৃথিবীর সব
চেয়ে ভাল মানুষটা মারা যাবার সময়
আমাকে কাছে পাননি।
০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০
জাহিদের সঙ্গে আমার বিয়েটা হল আরো এক বছর পর। ও
তখন একটা মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে চিফ
ইঞ্জিনিয়ার পদে কাজ করছে।
রাতে জাহিদকে প্রায়ই বলি, “ তোমার সেই পথের
শেষকবিতাটা শোনাবে?”
হঠাৎ?” খুশি খুশি গলায় বলে ও।
কটন বার্ডের প্যাকেটটা খুঁজে পাচ্ছি না।
কানে ময়লা হয়েছে। পরিষ্কার করা দরকার। তোমার
কবিতার মূল্য পাবলিক বুঝলে এতদিনে কটন বার্ডের
কোম্পানিগুলো উঠে গিয়ে তোমার কবিতার ক্যাসেট
বের করত।
অ!হতাশ গলায় বলে জাহিদ।
কি হল? বল?”
ও!গলা খাকারি দেয় জাহিদ, বলা শুরু করে-
কতই শত টানা পোড়েন
নিত্য এ সংসার,
অশ্রু জলে সাজিয়ে তুমি
হারিয়ে যাবে আর?
একাই অনেক পথ হেটে আজ
হাত বাড়ালাম তাই,
পথের শুরুয় পাইনি তো কি?
পথের শেষে চাই।
কবিতাটা তো অন্য রকম ছিল! শেষের লাইন
দুটো বাদে।অবাক হয়ে বলি।
মাথা চুলকায় জাহিদ, “ অ! তাই নাকি?
ভুলে গেছি আগের লাইনগুলো। শেষের লাইন
দুটো মনে থাকে কেবল।
অসুবিধা নেই। প্রত্যেক রাতে নতুন নতুন লাইন
বানিও তুমি, কেবল শেষের লাইন দুটো ঠিক রেখো।
কেন? শেষের লাইন দুটো বেশি ভাল?”
নাহ। ও দুটো শুনলে মনে হয় কানের
পোঁকা বেরিয়ে গেল। তাই।হেসে ওর
চুলগুলো এলোমেলো করে দেই। জাহিদও হাসতে থাকে।
ঠিক এই সময়েই পাশের দোলনা থেকে আমাদের
বাবুটা ওয়া ওয়াশুরু করে দেয়। বলিনি তো, আমার
একটা বাবু হয়েছে। ছয় মাস বয়স। নাম
রেখেছি বাবাই। ভাল নামটা বলবো না। বাবুদের
বড় হওয়ার আগ পর্যন্ত ডাক নামেই ভাল শোনায়। বড়
নাম বললে মনে হয় বড় বড় মানুষ!বাবাই ওয়া ওয়া শুরু
করলে জাহিদ কৃত্রিম বিরক্তি নিয়ে বলে, “ ওহহো রে!
মাম্মি- ডেডির রোমান্সের মাঝখানে ওয়া ওয়া
ব্যাক গ্রাউন্ড মিউজিক ক্যান? তোমার ছেলে তো বড়
হলে ডি.জে. হবে দেখছি!
তখন উঠে লাইট জ্বালিয়ে গিয়ে দেখি বাবাই
মহা আনন্দে একটা নতুন দাবার ঘুটি নিয়ে খেলছে।
ফোকলা মাড়ি দিয়ে সেটাকে কামড়াচ্ছে। আমাদের
বাবাই প্রতি রাতে একটা করে দাবার ঘুটি পায়।
আমি জানি কে দেয়। খুব যত্ন
করে সেগুলোকে জমিয়ে রাখি আমি। আমাদের বাবাই বড়
হলে দাবা খেলবে। আমি জানি, কেউ
ওকে হারাতে পারবে না। অন্তত বাবাইয়ের
দ্বিগ্বীজয়ী ফোকলা হাসিটা সেটাই বলে দেয়!
(সমাপ্ত)

রাজসাক্ষী [ghost stories - 145]


****রাজসাক্ষী ***

অতনুর পুরো নাম শিহাব শাহিন অতনু, ওর নানার রাখা নাম। ওদের বাড়ি উত্তর বঙ্গে, বর্ডারের কাছে। জায়গাটা ভয়াবহ রকমের দুর্গম। ইলেক্ট্রিসিটি তো দূরের কথা, একটা খাম্বাও নেই। যাতায়াতের মাধ্যম পায়ে হাঁটা পথ। প্রায় ১০মাইল হাঁটলে পাকা রাস্তা পাওয়া যায়। অতনুর এই অজপাড়াগাঁয়ে জন্ম হলেও ওর আধুনিক নামই বলে দেয় ওদের পরিবার গ্রামের আর ১০টা পরিবার থেকে আলাদা। ছোটবেলা বাবা মারা যাওয়ার পর নানা বাড়িতেই 
...বেড়ে ওঠে। ওর নানারা ওপারের লোক, যুদ্ধের পর এপারে চলে আসে। পরিবারের নামটাই যা ছিল, এছাড়া একেবারে নিঃস্ব হয়ে এপারে আসতে হয়। ও আবছা ভাবে জানে যে নানারা নাকি শুদ্ধ ব্রাহ্মণ ছিলেন, পরে ধর্মান্তরিত হয়েছেন।

ওর পরিবারে ৩টা আজব ঘটনা ঘটেছে। ওর বড় মামা, মেজ খালু আর মেজ নানা তিনজনই খুন হন। বর্ডার এলাকায় এসব স্বাভাবিক ঘটনা, তাই কোন থানা পুলিশ হয়নি। লাশ পাওয়ার পর ২-৪ দিন চোখের পানি ফেলে আবার কাজে মন দিয়েছে সবাই। এইসব ঘটনা যখন ঘটে তখন ওর বয়স ১১, আজ থেকে ১৭ বছর আগের কথা। তারপর ও বড় হয়ে এখন ঢাকায় থাকে। তিন দিন হল গ্রামে এসেছে শেষ যেটুকু ভিটামাটি ছিল তা বেঁচে দিতে।

শনিবার রাত। গ্রামে এখন এক ছোট মামা ছাড়া আর কেউ থাকে না। বিশ রুমের একটা টিনশেড দোতলা বাড়ি পুরো ফাঁকা পড়ে থাকে। ও উপরের ঘরটা নিলো। রাতে বেশ চাঁদ দেখতে দেখতে ঘুমানো যাবে। গ্রামে কতদিন রাত কাটানো হয়না।

রাত তিনটায় একটু টয়লেট পেলো ওর। এখানের একটা সমস্যা হচ্ছে টয়লেট করতে নিচে নামতে হয়। কি আর করা, নেমে টয়লেট সারলো। কলপাড়ে এসে হাত ধুতে যাবে, দেখল দুজন লোক বসে আছে নিচতলার বারান্দায়। কিছু নিয়ে তর্কাতর্কি হচ্ছে ওদের মধ্যে বোঝা গেল। খেয়াল করলো টর্চ আনতে ভুলে গেছে ও। কিন্তু এত রাতে এখানে বসে ঝগড়া করছে কারা? ভালমত তাকালো, দেখলো একটা লোক উঠে দাঁড়িয়েছে। তীব্র রেগে গেছে সে, আচমকা একটা ছুরি বের করে আমুল বসিয়ে দিল সে অপর লোকটার বুকে। পিচ করে একটা শব্দ হল। আঁতকে উঠল ও, খুন!! দ্রুত লুকানোর জায়গা খুঁজল ও, পেলোনা। ওদিকে লোকটা এদিকেই এগিয়ে আসছে। মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে ঠায় দাঁড়িয়ে রইল ও। কিন্তু লোকটা ওর চোখের সামনে দিয়ে চলে গেল, ওর দিকে তাকালও না। লোকটা একটু দূরে ডোবার ধারে গেলে চাঁদের আলো পড়লো লাশটার মুখে। চাঁদের আলোয় চিনতে কোন সমস্যা হলনা। বড় মামা!! লাশটা আর কারো না, বড় মামার!!
সারা গা ঝিমঝিম করে উঠল ওর। দ্রুত ছুটল বাম পাশের ঝোপের দিকে, ওখানে বড় মামার কবর আছে। গিয়ে যা দেখল তা এক কথায় অবিশ্বাস্য।
কবরটা খোঁড়া, চারিদিকে মাটি ছড়িয়ে আছে, একটা রক্ত মাখা ইট পড়ে আছে পাশে!!
গ্রামের লোকদের ডাকে জ্ঞান ফেরে অতনুর। কবরের পাশে পড়ে আছে ও। চারিদিকে অনেক লোকজন, এক এক জনের এক এক জিজ্ঞাসা। তার মাঝেই কবরের দিকে তাকাল ও, সব সুস্থ, স্বাভাবিক, শান্ত। কবরের মাটি দেখে সহজেই বোঝা যায় গত ১৭ বছরে কেউ তা খোঁড়েনি। তবে কি দুঃস্বপ্ন দেখছিল ও? তাই হবে হয়ত। ধীরে ধীরে লোকের কাঁধে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়াল ও, তখুনি চোখ আটকাল একটা ইটের দিকে। গোল, একপাশে রক্ত মাখা। বুকটা ছাঁৎ করে উঠল ওর! ঠিক তখুনি, একটু গড়িয়ে পাশের ডোবাটায় পড়ে গেলো সেটা।

এই ঘটনার ২ ঘণ্টা পরেই বাসে করে ঢাকায় চলে আসে ও। কাউকে কিছু জানায় না। সবকিছু একটা দুঃস্বপ্ন বলে ভেবে নেয়।
দুই দিন পর। বাসায় কেউ নেই। একা ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছিল ও, এমন সময় কারেন্ট চলে গেলো। মোম জ্বালাতে রান্নাঘরে যায় ও, আইপিএস টাও আবার নষ্ট।
ফিরে এসে দেখে ড্রয়িংরুম ভর্তি ৬-৭ জন লোক। সবার মুখে লাল কাপড় বাঁধা। একটা লোককে বেঁধে রেখেছে তারা। মোমের আলোয় চিনতে কষ্ট হয়না, ওটা মেজ খালু!!!
হটাৎ লোকগুলো ঝাঁপিয়ে পড়ে খালুর উপর। মুহূর্তে টুকরো টুকরো করে ফেলে ছুরি দিয়ে। শুধু ধড় আর মাথাটা রেখে বাকি হাত,পা আলাদা হয়ে যায়। এক ফোঁটা রক্ত ছিটে এসে লাগে ওর শার্টে। ওখানেই জ্ঞান হারায় ও।
জ্ঞান ফেরে পরদিন হসপিটালে। ঘরে ফেরার পর দেখে সব ঠিক আছে, তবে তার শার্টে রক্তের দাগ লাগলো কিভাবে, স্ত্রীর এই প্রশ্নের জবাব সে দিতে পারলনা।

চাকরি ছেড়ে দিয়ে এখন একটা মানুষিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ও। তীব্র কঠিন ওষুধ খেয়ে স্রেফ বেঁচে আছে। দুটি মৃত্যু ঘটনার রাজসাক্ষী হয়ে, তৃতীয় ঘটনাটি ঘটার অপেক্ষায়।

শেয়ার করেছেনঃ
Kallîum Cyanîde Pîxel


এও কি সম্ভব? [Ghost Stories - 0310]



এমন অনেক কাহিনী হয়তো আপনারা শুনেছেন বিভিন্ন জায়গায় তাও বলি ।

চাদপুরে আমার এক ফুপাতো বোনের কাছ থেকে শুনা ।
এক জন মহিলা মারা যায় বিদেশে । যথারীতি তাকে কবর দেওয়া হয়। জানাজা দেওয়ার সময় মহিলাকে উল্টা করে শোয়ানো হয় ভুলে । এটা তেমন বড় কোন কিছু না তাই তোয়াক্কা না করে কবর দেওয়া হল । কয়দিন পর খবর আসল যেই কাফনের কাপড় পড়ে কবর দেওয়া হয়েছিল তাতে মহিলার স্বর্নের কিছু জিনিস দেওয়া হয়েছিল যখন লাশ বিদেশ থেকে আসে । ...তাই সবাই সিদ্ধান্ত নিল লাশটা আবার তোলা হবে । এবং পারলে জানাজাটা ঠিক করে আবার দেওয়া হবে । ৫ দিন পর কবর খুড়া শুরু করা হল । যখন পুরোপুরি খুড়া শেষ তখন দেখা গেল লাশের দেহে কাপড় প্রায় অর্ধেকটা মুখে গুজে দেওয়া আছে । হাত ২ টা পেরেক দিয়ে যেন ২ পাশে বাধা আছে এমনভাবে রাখা । জিহবা বের করে বাম হাতের পাশ দিয়ে গর্তে ঢুকানো । এসব দেখে যারা প্রথমে কবরে নামছিল তারা অজ্ঞান হয়ে যায় চিত্‍কার দিয়ে । আশেপাশে যারা ছিল তাদের ও কেউ কেউ এই বিভত্‍স্য দৃশ্য দেখে মাথা ঘুরে পড়ে যায় । তখন স্থানীয় হুজুর এসে দোয়া দুরুদ পড়ে সবাইকে অভয় দেখালে আর ও ৩ জন নীচে নামে এবং আগের ৩ জনকে উপরে তুলে । এরপর ঐ লাশ তুলা হয় । গয়নাগুলো লাশের পাশেই পাওয়া যায় । পরে জানাজা দিয়ে আবার কবর দেওয়া হল|

অবিশ্বাস্য [Ghost Stories - 1246]



**তখন রাত একটা বাজে। চারিদিক নিঃস্তব্ধ। ফ্লাটের সকলেই গভীর ঘুমে মগ্ন। হাত করাতে কাঠ কাটার শব্দে গৃহকর্তার ঘুম ভাংলো। চোর, ডাকাত হয়তো দরজা কেটে ঘরে ঢুকার চেষ্টা করছে। চাপা ভয় মনে নিয়ে বেড রুমের দরজা খুললো। চারিদিকে তাকায়ে দেখল না কোন কিছু নেই। আবার শুতে গেল। ঠিক দশ মিনিট পর আবার হাত করাতের ঘস ঘস শব্দ। এবার গৃহকর্তা এবং গৃহকর্ত্রী দুইজনেই দরজা খুলে ড্রইং রুমে আসল। দেখল ড্রইং রুমের একটা সো...ফাও আস্ত নেই। কেটে ফালি ফালি করে ফেলেছে। জানালার পর্দা গুলো কেটে ফালি ফালি করে ফ্লোরে ফেলে রেখেছে। কোথাও মানুষের কোন চিহ্ন নেই।
সদর দরজা বন্ধ, সব গুলো জানালা বন্ধ। বাচ্চাটাকে নিয়ে ড্রইং রুমের মেঝেতে সকলে বসে থাকল। ৫ মিনিট যেতেই বেড় রুমের খাট কাটার শব্দ ঘসা ঘস। সকলে আবার বেড রুমে গিয়ে দাড়িয়ে থাকল। এবার অন্য রুমের ওয়ারড্রপ, শোকেচ সব কাটা শুরু করল ঘসা ঘস। কাপড় চোপর সব কেটে সাবার। ভয়ে কারো মুখে কোন কথা নেই। গায়ের লোম সব গুলো খাড়া হয়ে আছে।
থানায় ফোন করল। পুলিশ তো অবাক। পুলিশ বিশ্বাস করতে পারছেনা। পুলিশ যখন আসল তখন আজান দিচ্ছে। গৃহকর্তা দরজা খুলে দিল। পুলিশ দেখে বিশ্বাসই করতে পাড়ছিল না এটা একটা ভুতের কাজ। এক কাপড়ে সকলে ফ্লাট থেকে বেড় হয়ে গেল। কারণ ঘরের সব কাপড় এবং আসবাবপত্র ভুত কেটে নষ্ট করে ফেলেছে।

**আমি আগাগোঁড়াই রাজধানীতে বেড়ে উঠা মানুষ। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সব ঢাকাতেই ছিল। কিন্তু বর্তমানে চাকুরী করছি ঢাকার বাইরে। মূলত ভালো বেতন এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধার লোভেই এখানে আসা। আমার পরিচিত বলতে এখানে কেউ নেই। বা-মা, বন্ধু-বান্ধব, আত্নীয়-স্বজন সবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন আছি গত মাস-চারেক ধরে। প্রথম প্রথম কয়েকদিন খুব খারাপ লেগেছিল। পরিবারের মানুষগুলোর কাছ থেকে কখনো দূরে থাকতে হয়নি বলে তাদের অভাবও কোনোদিন অনুভব করিনি। আসলে মানুষ যখন নিয়মিত কাউকে দেখে, কারো সাথে মেশে...তার অভাব কখনো বোধ করেনা বরং তার নিয়মিত উপস্থিতিই মাঝে মধ্যে একঘেঁয়ে লাগে।
আমাদের কোম্পানীতে স্টাফদের থাকার জন্য একটি আলাদা কোয়াটারের ব্যবস্থা আছে। সমস্যা একটাই, তা হল-এক রুম দুজনকে শেয়ার করতে হয়। আমার রুমমেট হলেন আদিল ভাই। তিনি আমার ডিপার্টমেন্টেই কাজ করেন। আদিল ভাইকে পছন্দ করে এমন একজন লোকও অফিসে নেই। অপছন্দের কারনটা ২-১দিনের মাথায় বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছিলাম। উনি কখনোই কোনো কথা সোজা ভাবে বলেন না। প্রত্যেকটা কথার মধ্যে একটা খোঁচা থাকবেই। আকার-ইঙ্গিতে, ভাব-ভঙ্গিতে সবসময় বোঝাতে চেষ্টা করেন যে তার চেয়ে জ্ঞানী এবং দক্ষ লোক এই অফিসে আর কেউ নেই। আর চোখে মুখে সর্বদাই কেমন যেন একটা রহস্যের আঁভা দেখতে পাওয়া যায়। ভাবখানা এমন যে উনি কোনো আধ্যাত্নিক টাইপের লোক। অফিসের মোটামুটি সব কলিগের সাথেই নাকি অন্তত একবার হলেও তার কথা কাটাকাটি হয়েছে। ইদানিং অবশ্য সবাই তাকে যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন। আমার এমনই পোঁড়া কপাল যে এই লোকই আমার রুমমেট!
একসাথে একই রুমে থাকলে মানুষের ভীমরতিগুলো খুব চোখে পড়ে। প্রত্যেকটা মানুষেরই অবশ্য কিছু না কিছু ভীমরতি থাকে সেটা মেনে নেয়াই যায় কিন্তু এই লোকের ভীমরতির কোনো শেষ নেই। তাছাড়া মাঝে-মধ্যে এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথাবার্তা বলেন যে হজম করা খুব কষ্ট হয়ে পড়ে। মোট কথা কোনো সুস্থ মানুষের পক্ষে তার সাথে একরুমে থাকা প্রায় অসম্ভব। ৩-৪ দিনের মাথায় আমার নাভিশ্বাস উঠে গেল। আমি অফিসের আর একজন সিনিয়র কলিগ রেহান ভাইয়ের সাথে আমার সমস্যার কথা শেয়ার করলাম। রেহান ভাইয়ের সাথে প্রথম দিন থেকেই আমার একটা সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে। উনি জানালেন যে কেউই নাকি আদিলের রুমে বেশিদিন টিকতে পারে নাই। ঐ রুমে নাকি একটা বেড বেশিরভাগ সময় ফাঁকাই থাকে । তবে তিনি আমাকে হুট করে রুম না ছাড়ার পরামর্শ দিলেন। কারন হিসেবে বললেন যে, আদিল মারাত্নক গিরিঙ্গিবাজ ও ঝঁগড়াটে লোক। রুম ছাড়ার মত ছোট একটা ঘটনাকে বিশাল ইস্যু বানিয়ে গ্যাঞ্জাম-ক্যাচাল সৃষ্টি করবে এটা মোটামুটি নিশ্চিত। আমার মত একজন নতুন ইমপ্লয়ীর জন্য সেটা নাকি মোটেও সুখকর হবেনা।
কিন্তু এদিকে তো আমার জান যায় যায় অবস্থা। মাঝে মাঝে আদিলের উপর মেজাজ এমন খারাপ হয় যে ইচ্ছে করে বাম হাতে একটা থাপ্পর লাগাই। এই তো সেদিন...কথা নাই বার্তা নাই রাত তিনটার দিকে হঠাৎ আমাকে ডাকতেছে, তাও আবার উচ্চস্বরে! আমি তো হুরমুর করে জেগে উঠলাম। উঠে দেখি উনি একটা নিভানো সিগারেট মুখে নিয়ে বসে আছেন। আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, "আপনি কি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন? হঠাৎ সিগারেট ধরাতে গিয়ে দেখি ম্যাচ নেই। আপনার কাছে ম্যাচ হবে?” আমার মেজাজটা এত খারাপ হয়েছিল যে বলার মত না! নিজেকে অনেক কষ্টে সামলালাম। তাকে কোনো উত্তর না দিয়েই আবার ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরদিন অফিসে গিয়ে রেহান ভাইকে বললাম, "ভাই আপনি আমাকে এই ভেজাল থেকে উদ্ধার করেন নাহলে আমার চাকরিই ছাড়তে হবে”"। আমার কথা শুনে রেহান ভাই কিছুক্ষন হাসলেন। তারপর বললেন, “আসলে আপনাকে আগে কোনোদিন রুম শেয়ার করতে হয়নি তো তাই আপনি একটু বেশিই বেকায়দায় পড়ে গেছেন। তাছাড়া আপনার ভাগ্যটাও এত খারাপ যে আদিলের সাথেই আপনাকে রুম শেয়ার করতে হচ্ছে। যাকগে টেনশনের কিছু নেই। আপনার একটা ব্যবস্থা আমি করবই। রেহান ভাইয়ের কথায় আমি আশ্বস্ত হতে পারলাম না। উনি কিইবা ব্যবস্থা করবেন? হয়ত আমাকে একটু সান্ত্বনা দিলেন। হয়ত তিনি ধরে নিয়েছেন কদিন পর আমার এমনিতেই এডজাস্ট হয়ে যাবে। মানুষ পারে না এমন কি কিছু আছে?
এভাবেই আরো বেশকটা দিন পার হয়ে গেলো। আদিলের সাথে এডজাস্ট করা কোনোদিনই সম্ভব হবে না তা আমি ভালোভাবেই জানতাম। পরিবার পরিজন থেকে দূরে থাকায় এমনিতেই মন খুব একটা ভালো থাকে না তার উপর আদিলের মত একটা পেইন! মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম...আমার সমস্যার কথা বসকেই জানাবো। তিনি কোনো ব্যবস্থা না করলে চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে যাবো।
এর মাঝে তিনদিনের টানা ছুটি পেয়ে একদিন ঢাকায় চলে গেলাম। ছুটি কাটিয়ে যখন আবার কোয়াটারে ফিরলাম তখন দেখি আদিল নামক পেইনটা নেই। আশেপাশের কলিগদের কাছে জানতে পারলাম সে নাকি ৭দিনের ছুটি নিয়েছে। কথাটা শুনে মনে মনে ঈদের আনন্দ পেলাম। যাক ৭দিন অন্তত মহাসুখে কাটানো যাবে। কিন্তু সেদিন রাতেই ঘটল আমার জীবনে এক স্মরনীয় ঘটনা। বলে রাখা ভালো যে, আমি যে রুমে থাকি তা নিচতলায় অবস্থিত। নিচতলায় মশার উপদ্রপ বেশি বলে কখনোই জানালা খুলে ঘুমাই না। সেদিন কেন জানি মনে হচ্ছিল জানালা খুলেই ঘুমাবো। পরে আবার চিন্তা করলাম...থাক দরকার নেই। দরজা-জানালা সবকিছু লক করা আছে কিনা তা চেক করে একসময় ঘুমিয়ে পড়লাম।
মাঝরাতে হঠাৎ নিম্নচাপ অনুভব করায় ঘুম থেকে জেগে উঠলাম। উঠে যা দেখলাম তা দেখে তো আমার চক্ষু ছানাবড়া। নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে যা দেখছি তা ঠিক দেখছি কিনা! ভালো করে চোখ ডলতে লাগলাম। দেখলাম...আদিল ভাইয়ের খাটের উপর যে তোশক এবং চাঁদর ছিলো তা মেঝেতে ফালানো। খাটের এক কোনার দিকে তা স্তুপাকৃতি হয়ে আছে। কিন্তু কে করলো এই কাজ? বাসায় তো আমি একা! চোর ডাকাত ঢুকলো নাতো বাসায়? আমি উঠে দরজা-জানালা সবকিছু আবার চেক করলাম। কই সবই তো ঠিক আছে। চোর ডাকাত ঢুকলে তো দরজা-জানালা ভেঙ্গে ঢুকতে হবে। সব দরজা-জানালা ভিতর থেকে লক করা। তাহলে চোর ঢুকলো কিভাবে? তাছাড়া আমার দুটা দামী মোবাইল সেট, নেটবুক ছাড়াও আরো অনেক জিনিসপত্র আছে বাসায়। চোর ঢুকে থাকলে সেগুলো রেখে যাবে কেনো? তার মানে কি দাড়ালো এটা কোনো ভুত-প্রেতের কাজ?...এছাড়া এই ঘটনার আর কোনো ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে পারলাম না। আমি ছোটবেলা থেকেই ভুত-প্রেতে বিশ্বাস করিনা। কিন্তু এখন চোখের সামনে যা দেখছি তাই বা অবিশ্বাস করি কিভাবে? মনে মনে ঠিক করলাম অন্য কলিগদের এত রাতে আর বিরক্ত করবনা। একটু পরেই তো সকাল হবে তখন সবাইকে পুরো ব্যাপারটা খুলে বলব।
ভোরের আলো ফুটতেই আমি নক করলাম লিমন ভাইদের ফ্ল্যাটে। আমার ঠিক পাশের ফ্ল্যাট। এত সকালে আমাকে দেখে একটু অবাকই হলেন লিমন ভাই। আমি লিমন ভাইকে রুমে নিয়ে আসলাম। পুরো ব্যাপারটা খুলে বললাম। উনি আমার কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেলেন। আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন..."তার মানে আপনি বোঝাতে চাচ্ছেন এগুলা ভুতের কাজ? দেখেন...আমি এসব অতিপ্রাকৃ্তিক ব্যাপার স্যাপার একদমই বিশ্বাস করিনা। আপনার নিশ্চয়ই কোনো ভুল হচ্ছে। হয়ত আপনি ঠিকমত দরজা লক করে ঘুমান নি। দরজা খোলা ছিল এবং খোলা দরজা দিয়ে কেউ ঢুকে এই কাজ করেছে। আমি লিমন ভাইকে বললাম, “ভাই, আমারও আপনার মতই এরকম কিছু একটা সন্দেহ হচ্ছিল। তাই সবার প্রথমে দরজা খোলা আছে কি না তা চেক করেছি। আর খামাখা তো আমার এরকম একটা নাটক সাজানোর কোনো দরকার নেই, তাই না?” লিমন ভাই হেসে বললেন, “আমি কি বলেছি নাকি আপনি নাটক সাজিয়েছেন? তবে আমার মনে হচ্ছে ঘুমের ঘোরে কাজটা আপনিই করেছেন কিন্তু এখন আর মনে করতে পারছেন না। লিমন ভাইয়ের কথা শুনে আমার মেজাজ প্রচন্ড খারাপ হয়ে গেলো। আমি চিৎকার করে বললাম, "তার মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন আমি সিজোফ্রেনিক?” আমার চিৎকার শুনে দেখি রেহান ভাই হাজির। উনি আমার সব কথা শুনে বললেন, “আচ্ছা আপনি কি নিশ্চিত যে আপনার কোনো কিছুই খোয়া যায় নি? আপনি একটু ভালো করে দেখবেন সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা?" আমি রেহান ভাইকে বললাম, "ভাই আপ্নারা কেনো বিশ্বাস করছেন না যে এখানে চোর ঢোকেনি। এখানে অন্যরকম কিছু একটা ঘটেছে। রেহান ভাই বললেন..."আপনি এই মূহুর্তে মেন্টাল স্ট্রেসের মধ্যে আছেন। এই অবস্থায় স্বাভাবিক চিন্তা করাটা কঠিন। আমি যা বলি শুনুন। একটু ভালো করে খোজ করুন যে আপনার কিছু খোয়া গেছে কিনা!" রেহান ভাইয়ের কথা শুনে মাথা ঠান্ডা করার চেষ্টা করলাম। হঠাৎ মনে হল যে আমার মানিব্যাগটা চোখে পড়ছে না। তন্ন তন্ন করে সারা রুম খুজলাম কিন্তু মানিব্যাগটা আর খুজে পেলাম না। আমার মনে পড়ল যে কাল রাতে আমি আমার মানিব্যাগটা রেখেছিলাম আদিল ভাইয়ের খাটের উপর। রেহান ভাই বললেন, “কাল রাতে একটা চোর আমার রুমের জানালাও খোলার চেষ্টা করেছে কিন্তু ভিতর থেকে লক করা ছিল বলে খুলতে পারেনি। আমার অবশ্য সেই সময় চিৎকার করা উচিৎ ছিল তাহলে হয়ত চোরটা পালিয়ে যেত আর আপনার উপর দিয়ে এই শনির দশা যেত না। ভুল হয়ে গেছে। আমি খুবই সরি। আমি বললাম..."ভাই আমার জানালাও তো লক করা তাহলে চুরির ঘটনা কিভাবে ঘটল? আমি বা আদিল ভাই তো কখনো জানালা খুলিনা। এই দেখেন এখনো জানালা লক করা। রেহান ভাই লক করা অবস্থায় আমার থাই জানালা খোলার চেষ্টা করলেন এবং অবাক বিস্ময়ে দেখলাম জানালাটি খুলে গেলো। রেহান ভাই হেসে বললেন, “আপনার জানালার লক নষ্ট। চোর ঠিকই জানালা খুলেছে এবং হাত বাড়িয়ে আস্তে আস্তে আদিলের তোশকটি টেনে এনেছে। তার চুরির লক্ষ্যবস্তু ছিল আপনার মানিব্যাগটি যা আপনি ভুলে আদিলের বিছানার উপর রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। তবে রসিক চোর চৌর্যকর্ম শেষে জানালাটা টেনে ঠিক আগের অবস্থায় রেখে গেছে। তাই তাৎক্ষনিকভাবে চুরির ব্যাপারটা আপনার মাথাতেই আসেনি
রেহান ভাইয়ের কথা শুনে লিমন ভাই হো হো করে হাসতে লাগলেন। আমাকে টিটকিরির সুরে বললেন, “ভাই আমি আপনার কথা শুনে কিন্তু একটা সময় বিশ্বাসই করে ফেলছিলাম যে এটা ভুতের কান্ড। আপনি আমার এতদিনের লালিত বিশ্বাস মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই প্রায় ভেঙ্গে ফেলেছিলেন...হাহাহাহাহাহা!উনার কথা শুনে আমিও হেসে দিলাম।
রেহান ভাই আমাকে বললেন, “এখন অফিসে গিয়ে পুরো ব্যাপারটা বসকে জানান। গিয়ে বলেন যে এই রুমে আপনি মোটেও নিরাপদ না। আর দোতালায় জহির সাহেবের রুমে একটা বেড খালি আছে। আপনি বসকে বলে আজকেই সেখানে উঠে যান
আমি বসকে পুরো ব্যাপারটা জানালাম। উনি কোয়াটারটির সিকিউরিটি ম্যাটার নিয়ে খুবই কনসার্ন্ড হলেন এবং পুরো ব্যাপারটার জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেন। আমি সেদিনই আমার রুম চেঞ্জ করে ফেললাম। সেদিন থেকে আজ অবধি বেশ শান্তিতে আছি। যদিও আমার মানিব্যাগে হাজার পাঁচেক টাকা ছিল এবং বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাগজ ছিল কিন্তু এটা কোনো ব্যাপারই না। আদিল থেকে মুক্ত হয়েছি এটাই আসল কথা। চুরি না হলে তো আর আদিলের মত মহাপেইন থেকে মুক্ত হতে পারতাম না এত সহজে!
ঐ ঘটনার সপ্তাহখানেক পর একদিন রেহান ভাই আমার সেই হারানো মানিব্যাগ আমার হাতে তুলে দিলেন। আমি অবাক হয়ে উনাকে জিজ্ঞেস করলাম..."এটা আপনি এতদিন পর কোথায় পেলেন?” উনি রহস্যমাখা একটা হাসি দিয়ে বললেন, “আমি কিন্তু কথা দিয়েছিলাম যে আপনাকে আদিল থেকে মুক্ত করার একটা ব্যবস্থা করবই