Saturday, June 3, 2023

সুইং মুড

❝ আপু জানেন, আমার মুড সুইং টা এত দ্রুত ব্যালেন্সের দিকে যাচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ! সূরা বাকারাহ কন্টিনিউ করার পর থেকে।

আপনার সেশনে শিখিয়ে দেওয়া "নিজেকে ক্রেডিট দেওয়ার" বিষয়টা যতটুকু করতে পারছি, সেটাও আমাকে অনেক চেঞ্জ করেছে আপু, আলহামদুল্লিলাহ।

বিগত অনেক রাত ঘুমাতে পারতাম না। সারাদিন শুধু কানতাম। নিজেকে লস্ট মনে হতো। দুনিয়াটা জঘন্য লাগতো। 

গভীর রাতে বুক ধরফর করে উঠে বসে থাকতাম। নামাজ পড়ার এনার্জি ছিল না। কিন্তু নিজেকে দোষ দেইনি। আমি বুঝতাম আমার যতটুকু সামর্থ্য ততটুকুই তো পারবো। ঐ এলোমেলো অবস্থায় পাগলের মতো দুয়া করতাম, "আল্লাহ আমাকে গাইড করো! আমি কি করবো! নিজেকে ভীষণ লস্ট লাগে!"

তারপর হঠাৎ সূরা বাকারাহ পড়তে ইচ্ছা করলো। বাকারাহ পুরোটা পড়ে ১ সপ্তাহে শেষ করলাম। মনে হলে অনেক বড় একটা বোঝা নেমে গেছে। আপু জানেন গত দুই মাস ধরে সূরা বাকারাহ পড়েই যাচ্ছি।

কখনো ৭ দিনে শেষ করেছি। কখনো ১০ দিনে কখনো ১৫ দিনে। 

কুরআন পড়া শেষ হলেই আল্লাহর কাছে দুয়া করেছি। আল্লাহ আমাকে গাইড করো, আমাকে গাইড করো!

আস্তে আস্তে দেখলাম আমার কাজে ফোকাস বাড়ছে আলহামদুলিল্লাহ। মুড সুইং অনেকটাই ঠিক হচ্ছে। জীবনের সমস্যাগুলো রয়ে গেছে কিন্তু নিজেকে আর লস্ট লাগছে না।

কুরআন মানুষের জীবনে এত বিষ্ময়কর পরিবর্তন করতে পারে‌ আপু!! এটা যার জীবনে না ঘটছে সে কখনো বুঝবে না।

আমি আগে অনেক বড় বড় টার্গেট নিতাম যে, একদিনেই শেষ করবো সূরা বাকারাহ। বা তার চেয়েও বড় কিছু!

অনেক কষ্ট লাগতো তাজউইদ টা ঠিক করতে পারছি না বলে। তবে কখনো দুয়া করা ছাড়িনি আপু। বারবার দুয়া করতাম আল্লাহ যেন কুরআনের জন্য আমাকে কবুল করেন। 

তারপর আস্তে আস্তে শুরু করলাম। বড় টার্গেট না। সাধ্যের মাঝে টার্গেট।

এক আয়াত পড়ি‌ ... ৫ আয়াত পড়ি‌। এভাবে ১ পেইজ ২ পেইজ এরকম করে একটু একটু করে আগাই।

আলহামদুলিল্লাহ ! আলহামদুলিল্লাহ!! 

আপু আমার এই জার্নিটা যদি আর ১০ জন‌বোনকে অনুপ্রাণিত করে, তাহলে তো এটা আমার জন্য অনেক ভালো হবে, ইনশাআল্লাহ। 

২০২০-২০২২ এই দুই বছর আমার মুড সুইং ছিল। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম জ্বীন/বদনজরের সমস্যা। টানা ২ বছর নজরের রুকইয়াহ করেছি। পরে বুঝলাম এসব কিছুইনা। সমস্যা অন্য জায়গায়। 

তারপরেই কাউন্সেলিং নিলাম। 

এবং সুস্থ হওয়ার জন্য আমার হাতে যা যা ছিল সবই করেছি। কুরআন পড়েছি, প্রচুর দুয়া করেছি, এক মাস মোবাইল ইউজ করিনি, তাড়াতাড়ি ঘুমানোর চেষ্টা করেছি এরকম অনেক কিছু। এবং আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর ইচ্ছায় জীবনে অনেকটাই ব্যালেন্স চলে আসলো।

তবে যেভাবে সুরা বাকারাহ আমার শূন্যতা ভরে দিয়েছে, যেভাবে আল্লাহ রব্বুল আলামিন তাঁর কালাম দিয়ে আমার অন্তরকে শান্ত করে দিয়েছেন, সেই ক্ষমতা এই দুনিয়ার আর কোন কিছুর কাছে নেই। এমন কোন কিছু কোনদিন হবেও না। ❞

আপুর জন্য অসংখ্য বারাকাহর দুয়া, বারাকাল্লাহু ফিকুম।
________________________________

আল্লাহু আকবার! আমি আপুর মেসেজ পড়ছি এবং ঝর ঝর করে কাঁদছি। কারণ এই মেয়েটা জীবনে কিনা সহ্য করেছে! এমন কোন ট্রমা মনে হয় বাকি নেই, যা দিয়ে তার ধৈর্যের পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। অথচ এরকম একটা ভাঙ্গা অন্তরকেও আল্লাহ রব্বুল আলামীন, আল-জাব্বার কুরআন দিয়ে জোড়া লাগিয়ে দিয়েছেন। সুবহান আল্লাহ!

তাহলে বলেন, আমার আপনার অজুহাতটা কি কুরআন থেকে দূরে থাকার? 

রাইটিং_থেরাপি
আমার_ক্লায়েন্টদের_জীবন_গল্প
রবিউল আউয়াল ১৪৪৪

©শারিন শফি আদৃতা

কপি