Wednesday, June 23, 2021

৬২. পিতা সুদি কারবার বা অন্যান্য হারাম কর্মে যুক্ত থাকলে তার মেয়েকে বিয়ে করা উচিৎ কি? Marriage education series

 May be an image of text that says 'পিতা সুদি কারবার বা অন্যান্য হারাম কর্মে যুক্ত থাকলে তার মেয়েকে বিয়ে করা উচিৎ কি?'

পিতা সুদি কারবার বা অন্যান্য হারাম কর্মে যুক্ত থাকলে তার মেয়েকে বিয়ে করা উচিৎ কি?
▬▬▬❖✪❖▬▬▬
প্রশ্ন: এক ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে কিন্তু তার সুদের ব্যবসা আছে। তার মেয়েকে বিয়ে করা উচিত হবে কি?
উত্তর:
নি:সন্দেহে সুদি কারবার করা হারাম ও ইসলামের ভয়াবহ গুনাহ সমূহের অন্যতম। কোন মুসলিমের জন্য সুদের সাথে সম্পর্ক রাখা জায়েজ নাই। কিন্তু আপনি যে মেয়েটিকে বিয়ে করতে চান তাকে যদি আপনার ভাল লাগে বা পছন্দ হয় এবং তার মধ্যে দীনদারি, পরহেজগারিতা ইত্যাদি বিদ্যমান থাকে তাহলে তাকে বিয়ে করতে কোন আপত্তি নেই। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
تُنْكَحُ الْمَرْأَةُ لِأَرْبَعٍ : لِمَالِهَا ، وَلِحَسَبِهَا ، وَلِجَمَالِهَا ، وَلِدِينِهَا ، فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّينِ تَرِبَتْ يَدَاكَ
“মহিলাকে চারটি দিক দেখে বিয়ে করা হয়। যথা: বংশমর্যাদা, সৌন্দর্য, অর্থ-সম্পদ এবং দ্বীনদারী। অত:এব তুমি দ্বীনদারী নারীকে বিয়ে করে সফল হয়ে যাও...।" (বুখারি ও মুসলিম)
◍ আর পিতার পাপাচার, হারাম উপার্জন ও অন্যায়-কর্মেরে জন্য মেয়ে দায়ী নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَىٰ
"কেউ অপরের বোঝা বহন করবে না।" (সূরা ইসরা: ১৫)
তিনি আরও বলেন,
كُلُّ نَفْسٍ بِمَا كَسَبَتْ رَهِينَةٌ
"প্রত্যেক ব্যক্তি তার কৃতকর্মের জন্য দায়ী।" (সূরা আল মুদ্দাসসির: ৩৮)
বিদায় হজ্জের ঐতিহাসিক অভিভাষণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
أَلاَ لاَ يَجْنِي جَانٍ إِلاَّ عَلَى نَفْسِهِ لاَ يَجْنِي وَالِدٌ عَلَى وَلَدِهِ وَلاَ مَوْلُودٌ عَلَى وَالِدِهِ
‘‘জেনে রাখ, যে অপরাধ করবে তাকে তার দায় বহন করতে হবে। পিতার অপরাধের জন্য পুত্রকে এবং পুত্রের অপরাধের জন্য পিতাকে দায়ী করা যাবে না।" [ইবনে মাজাহ, শাইখ আলবানি হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
সুতরাং কনো পিতা যদি সুদি কারবার, হারাম উপার্জন, মদপান বা অন্যান্য পাপাচার করে কিন্তু তার মেয়ে যদি ভালো, সৎ ও দীনদার হয় তাহলে তাকে বিয়ে করতে কনো বাধা নেই ইনশাআল্লাহ।
তবে আপনি যৌতুক নিবেন না বা বিয়ের পরও শ্বশুরের দেয়া দান ব্যবহার থেকে যথাসাধ্য বিরত থাকবেন। পাশাপাশি আপনার শ্বশুরকে সুদি কারবার ও হারাম কর্মকাণ্ড পরিত্যাগ করতে নসিহত করার চেষ্টা করবেন।
আল্লাহ তাওফিক দান করুন।
▬▬▬❖✪❖▬▬▬
উত্তর প্রদান:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

 

৬১. নিকটাত্মীয় বা স্বামীর মৃত্যুতে মহিলাদের শোক পালন করার বিধিবিধান Marriage education series

 No photo description available.

নিকটাত্মীয় বা স্বামীর মৃত্যুতে মহিলাদের শোক পালন করার বিধিবিধান:
▬▬▬▬◖◯◗▬▬▬▬
 
যদি পিতা, মাতা, ভাই, বোন, সন্তান, স্বামী বা অন্য কোন নিকটাত্মীয় মারা যায় তবে মহিলার জন্য শোক পালন করা বৈধ। স্বামীর ক্ষেত্রে চার মাস দশ দিন ওয়াজিব (আবশ্যক)। আর অন্যদের ক্ষেত্রে সবোর্চ্চ তিন দিন বৈধ; আবশ্যক নয়। তবে স্ত্রী স্বামীকে খুশি রাখতে যদি অন্য কোন মানুষের মৃত্যুতে স্ত্রী শোক পালন না করে তবে সেটাই উত্তম। কারণ, স্বামীর সুখ কামনাতেই নারীর জন্য অজস্র কল্যাণ নিহিত রয়েছে।
◈◈ শোক পালনের দলিল:
 
স্বামীর মৃত্যুতে শোক পালনের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
 
وَالَّذِينَ يُتَوَفَّوْنَ مِنكُمْ وَيَذَرُونَ أَزْوَاجًا يَتَرَبَّصْنَ بِأَنفُسِهِنَّ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرً
 
"আর তোমাদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করবে এবং নিজেদের স্ত্রীদেরকে ছেড়ে যাবে, তখন সে স্ত্রীদের কর্তব্য হলো, নিজেকে চার মাস দশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করিয়ে রাখা।" (সূরা বাকারা: ২৩৪)
 
আবু সালামার মেয়ে যয়নব বলেন, শাম থেকে আবু সুফিয়ান রা. এর মৃত্যু সংবাদ আসার পর তৃতীয় দিন (তাঁর মেয়ে উম্মুল মুমিনিন) উম্মে হাবিবা রা. কিছু হলুদ বা জাফরান (অন্য বর্ণনায় সুগন্ধি) আনতে বললেন। অত:পর তা আনা হলে তিনি তা তার চেহারার দু পাশে ও দু গালে এবং দু বাহুতে মাখলেন। অত:পর বলেন, এটা করার আমার কোন দরকার ছিল না। কিন্তু আমি এজন্যই এমনটি করলাম যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
 
« لاَ يَحِلُّ لاِمْرَأَةٍ تُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ أَنْ تُحِدَّ عَلَى مَيِّتٍ فَوْقَ ثَلاَثٍ ، إِلاَّ عَلَى زَوْجٍ ، فَإِنَّهَا تُحِدُّ عَلَيْهِ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرًا »
 
"যে মহিলা আল্লাহ ও পরকালের উপর বিশ্বাস রাখে তার জন্য স্বামী ছাড়া কারও মৃত্যুতে তিন দিনের বেশি শোক পালন করা বৈধ নয়। স্বামীর মৃত্যুতে সে চার মাস দশ দিন শোক পালন করবে।" (সহিহ বুখারি, অনুচ্ছেদ: স্বামী ছাড়া অন্যের মৃত্যুতে মহিলার শোক পালন করা)।
 
◈◈ শোক পালনের পদ্ধতি:
● ১) মৃতের প্রতি শোক প্রকাশের উদ্দেশ্যে মহিলা সকল প্রকার সৌন্দর্য গ্রহণ থেকে দূরে থাকবে।
● ২) আতর-সুগন্ধি ব্যবহার না করা। তবে তৈল, সাবান, রোগ-ব্যাধির জন্য ঔষধ ইত্যাদি ব্যবহারে অসুবিধা নাই যদিও তাতে সুগন্ধি থাকে। কারণ এগুলো মূলত: সুগন্ধি হিসেবে ব্যবহৃত হয় না।
● ৩) সৌন্দর্য বর্ধক পোশাক না পরা। বরং স্বামী মারা যাওয়ার আগে স্বাভাবিকভাবে যে পোশাক পরিধান করত তাই পরিধান করবে। তবে শুধু সাদা বা শুধু কালো পোশাক পরিধান করতে হবে-এমন ধারণা ঠিক নয়।
● ৪) সুরমা, কাজল ইত্যাদি ব্যবহার না করা।
● ৫) মেহেদী, খেজাব বা আলাদা রং ব্যবহার না করা।
● ৬) কোন ধরণের অলংকার-যেমন: দুল, চুরি, নাক ফুল, আংটি, নূপুর ইত্যাদি ব্যবহার না করা।
● ৭) বিয়ের প্রস্তাব বা বিয়ে থেকে বিরত থাকা।
● ৮) শোক পালনের দিন শেষ পর্যন্ত নিজের বাড়িতে থাকবে। এমনকি সে সময় যদি সে তার পিতার বাড়িতেও থাকে তবে স্বামীর মৃত্যুর খবর পেলে নিজ বাড়িতে ফিরে আসবে। তবে একান্ত প্রয়োজন-যেমন: বিপদের আশংকা, প্রয়োজন বশত: বাড়ি পরিবর্তন, চিকিৎসা বা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনা ইত্যাদি জরুরি কাজে অন্যত্র যেতে পারবে।
● ৯) স্ত্রী যদি গর্ভবতী হয়ে থাকে তবে সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে অথবা চার মাস দশ দিন অতিবাহিত হলে তখন উপরোক্ত নিষেধাজ্ঞা সমূহ উঠে যাবে এবং অন্যত্র বিয়ের ব্যবস্থা করা যাবে।
মোটকথা, স্বামী মারা যাওয়ার পর স্ত্রী এমন সব ধরণের আচরণ বা সৌন্দর্য অবলম্বন করবে না যা তাকে বিয়ের দিকে আকৃষ্ট করতে পারে।
 
এটা এ কারণে যে এর মাধ্যমে, স্বামীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়, স্বামীর পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়দের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করা হয়, তাদের বেদনা বিধুর অনুভূতিতে সহমর্মিতা প্রকাশ হয় সর্বোপরি আল্লাহ এবং তার রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নির্দেশের আনুগত্য করা হয়।
আল্লাহু আলাম।
 
▬▬▬▬◖◯◗▬▬▬▬
গ্রন্থনায়:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

 

৭১. প্রশ্ন: বন্ধ্যা ব্যক্তির জন্য কি বিয়ে করা জায়েজ? খাসি হওয়ার বিধান কি? Marriage education series

 No photo description available.

প্রশ্ন: বন্ধ্যা ব্যক্তির জন্য কি বিয়ে করা জায়েজ?
খাসি হওয়ার বিধান কি?
▬▬▬▬◢◯◣▬▬▬▬
উত্তর:
 
কেউ যদি নিজের সম্পর্কে জানতে পারে যে সে বন্ধ্যা, তারপরেও সে বিয়ে করতে পারবে। তবে শর্ত হল, যদি সে স্ত্রীর ভরণপোষণ এবং জৈবিক চাহিদা পূরণে সামর্থ্যবান হয়। অন্যথায় বিয়ে করা বৈধ নয়। কেননা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
 
يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ، مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ، فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ، وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ، وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ؛ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ.
 
“হে যুব সম্প্রদায়, তোমাদের মধ্যে যার সামর্থ্য আছে, সে যেন বিয়ে করে নেয়। কেননা বিয়ে চোখকে নিচু রাখতে এবং লজ্জা স্থানকে সংযত করতে সব চেয়ে বেশি সহায়ক। আর যার সামর্থ্য নেই, সে যেন সওম (রোজা) পালন করে। কেননা তা প্রবৃত্তিকে দমন করে।” [বুখারী ১৯০৫, ৫০৬৫ ও মুসলিম ১৪০০]
 
বন্ধ্যত্ব দূর করার জন্য যথাসাধ্য অভিজ্ঞ ডাক্তারের নিকট চিকিৎসা করার পাশাপাশি আল্লাহর নিকট দুয়া ও কান্নাকাটি করতে হবে। আল্লাহর রহমত থেকে হতাশ হওয়া যাবে না। কারণ জীবনের একটা সুদীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও মহান আল্লাহ মানুষকে সন্তান দান করেছেন-এর বহু নজির আছে।
 
মহান আল্লাহ সম্মানিত রসূল ইবরাহীম আলাইস সালাম কে বহু বছর বন্ধ্যত্ব কাটানোর পর বৃদ্ধ বয়সে তাঁর স্ত্রীর সারা আ. এর গর্ভে ইসহাক আ. কে দান করেছিলেন।
 
মনে রাখতে হবে, আল্লাহ তাআলা যাকে ইচ্ছে সন্তান দান করেন আর যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করেন। এটা সম্পূর্ণ আল্লাহর এখতিয়ার ভুক্ত বিষয়। আল্লাহ তা'আলা বলেন:
 
لِّلَّـهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ ۚ يَهَبُ لِمَن يَشَاءُ إِنَاثًا وَيَهَبُ لِمَن يَشَاءُ الذُّكُورَ أَوْ يُزَوِّجُهُمْ ذُكْرَانًا وَإِنَاثًا ۖ وَيَجْعَلُ مَن يَشَاءُ عَقِيمًا ۚ إِنَّهُ عَلِيمٌ قَدِيرٌ
 
“নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের রাজত্ব আল্লাহ তা’আলারই। তিনি যা ইচ্ছা, সৃষ্টি করেন। যাকে ইচ্ছা কন্যা-সন্তান এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন। অথবা তাদেরকে দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন। নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ, ক্ষমতাশীল।” (সূরা শূরা: ৪৯ ও ৫০)
 
সুতরাং বিয়ের পর আল্লাহর রহমত থেকে হতাশ না হয়ে যথাসম্ভব চিকিৎসা গ্রহণের পাশাপাশি আল্লাহর নিকট দুআ করতে হবে। দয়াময় আল্লাহ ইচ্ছা করলে অবশ্যই সন্তান দানের মাধ্যমে তাদের প্রত্যাশা পূরণ করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ পরম প্রজ্ঞাবান ক্ষমতাশীল।
 
প্রশ্ন: খাসি হওয়া কি জায়েজ?
উত্তর:
 
প্রথমে আমরা জানব, খাসি করা বলতে কী বুঝায়?
সহজ কথায়, পুরুষের অণ্ডকোষে অস্ত্রোপচার করে অথবা মেডিসিন বা কেমিক্যাল প্রয়োগের মাধ্যমে তার যৌন ক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত করাকে খাসি করা বলা হয়। 
 
পূর্ব যুগে বিভিন্ন দেশে ধর্ষণ এবং বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি হিসেবে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির অথবা দাস যেন তার মহিলা মনিবের প্রতি যৌন বাসনা অনুভব করতে না পারে সে উদ্দেশ্যে বা আরও বিভিন্ন উদ্দেশ্যে তাদের যৌন ক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হতো। 
 
আবার কিছু মানুষ হয়তো বিশেষ কারণে যেন নারীর প্রতি আকর্ষণ অনুভব না করে সে উদ্দেশ্যে স্বেচ্ছায় এমনটি করত। 
 
ইসলামের দৃষ্টিতে এটি নিষিদ্ধ কাজ।
 
খাসি হওয়া জায়েজ নয়। কেননা এ মর্মে হাদিসে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। যেমন:
 
حديث عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ رضي الله عنه، قَالَ: كُنَّا نَغْزُو مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَلَيْسَ مَعَنَا نِسَاءٌ، فَقُلْنَا: أَلاَ نَخْتَصِي فَنَهَانَا عَنْ ذَلِكَ،
 
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে যুদ্ধে বের হতাম। তখন আমাদের সাথে স্ত্রীগণ থাকত না। বিধায় আমরা একবার তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম: আমরা কি খাসি হয়ে যাব না? 
 
তখন তিনি আমাদেরকে এ থেকে নিষেধ করেছেন। 
(বুখারী পর্ব ৬৫/৫ হা/৬১৫, মুসলিম পর্ব ১৬/২, হাঃ ১৪০৪)
আল্লাহু আলাম
 
▬▬▬▬◢◯◣▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
fb id: AbdullaahilHadi
Daee at jubail dawah & guidance center. KSA

 

অভিমানে বিয়ে থেকে বিরত থাকা Marriage education series

 No photo description available.

 

অভিমানে বিয়ে থেকে বিরত থাকা
▬▬▬▬◆◈◆ ▬▬▬▬
 
প্রশ্ন: জনৈক ব্যক্তি কোনো এক মেয়ের সাথে প্রেম করতো। কিন্তু কোনো কারণে তার সাথে বিয়ে না হওয়ায় সে দু:খ-অভিমানে জীবনে আর বিয়ে করে নি। এ ব্যাপার ইসলামের কী বলে?
উত্তর:
 
বিয়ের সামর্থ্য এবং চাহিদা থাকার পরও কেউ যদি কেবল রাগ বা অভিমান বশত: বিয়ে না করে সে গুনাহগার হবে। কারণ তখন ভিন্নপন্থায় জৈবিক চাহিদা পূরণের দিকে ধাবিত হওয়ার এবং বিভিন্ন ধরণের পাপকর্মে লিপ্ত হওয়ার পর্যাপ্ত সম্ভাবনা রয়েছে।
 
অবৈধ প্রেম-প্রীতি করার পর তার প্রত্যাশিত মেয়ে/ছেলেকে বিয়ে করতে না পেরে রাগ-অভিমানে সারা জীবন বিয়ে থেকে বিরত থাকার পাপ দ্বিগুণ। একটি হল, অবৈধ প্রেমের পাপ। অন্যটি বিয়ের মত এত গুরুত্বপূর্ণ ইসলামের বিধানকে উপেক্ষা করার পাপ। 
 
দুআ করি, মহান আল্লাহ যেন উক্ত ব্যক্তিকে সুবুদ্ধি দান করেন। আমীন।
এখন তার কর্তব্য হল, অতীত জীবনের পাপাচারের জন্য অনতিবিলম্বে তওবা করা। অত:পর অন্য কোনো মেয়েকে বিয়ে করে নতুনভাবে জীবন-সংসার শুরু করে। এটাই তার উপর আবশ্যক-যদি সে বিয়েতে সামর্থ্য বান হয়ে থাকে।
আল্লাহ তাওফিক দানকারী।
 
▬▬▬▬◆◈◆ ▬▬▬▬
উত্তর প্রদান:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

 

৭২. ইসলামে বিয়ের গুরুত্ব ও বিধান Marriage education series

 No photo description available.

 

ইসলামে বিয়ের গুরুত্ব ও বিধান
▬▬▬▬🧡🌀🧡▬▬▬▬
প্রশ্ন: যদি কোনো ছেলে বা মে‌য়ে জীবনেও বি‌য়ে না ক‌রে তাহলে সে কি জাহান্নামে যাবে অথবা সে কি গুনাহগার হবে?
উত্তর:
 
বিয়ে ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে একাধিক বিয়ে করেছেন এবং তার উম্মতকে বিয়ের প্রতি উৎসাহিত করেছেন। এই উম্মতের শ্রেষ্ঠ সন্তান সাহাবায়ে কেরাম বিবাহ করে ঘর-সংসার করেছেন। বিয়ের মাধ্যমে বৈধ সান্তান দ্বারা বংশ বিস্তার হয় এবং এই পৃথিবী আবাদ হয়। এর মাধ্যমে সমাজ থেকে অনেক অন্যায়-অপকর্ম বিদূরিত হয়। গড়ে উঠে একটি সুস্থ সমাজ ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে বৈধ পন্থায় মাুনষ নিজেদের প্রবৃত্তির চাহিদা পূরণ করে। এতে মানুষের হৃদয়পটে ঈমান ও তাকওয়া অর্জনের পাশাপাশি আল্লাহর ইচ্ছায় ভালবাসা, দয়া ও পারস্পারিক সৌহার্দপূর্ণ সুস্থ ও সুন্দর জীবন লাভে ধন্য হয় মানব সমাজ।
তাই এই চমৎকার বিধানটির ব্যাপারে কোনরূপ অবহেলা প্রদর্শন করা কাম্য নয়।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে ইবাদতের ব্যাঘাত সৃষ্টির ওজুহাতে এক ব্যক্তি জীবনে কখনো বিয়ে করবে না বলে ওয়াদা করলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে সাবধান করেন। দেখুন নিম্নোক্ত হাদীসটি:
 
عنْ عِبَادَةِ النَّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم ، فَلَمَّا أُخبِروا كأَنَّهُمْ تَقَالَّوْها وقالُوا : أَين نَحْنُ مِنْ النَّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم قَدْ غُفِر لَهُ ما تَقَدَّم مِنْ ذَنْبِهِ وما تَأَخَّرَ . قالَ أَحَدُهُمْ : أَمَّا أَنَا فأُصلِّي الليل أَبداً ، وقال الآخَرُ : وَأَنا أَصُومُ الدَّهْرَ أبداً ولا أُفْطِرُ ، وقالَ الآخرُ : وأَنا اعْتَزِلُ النِّساءَ فلا أَتَزوَّجُ أَبداً، فَجاءَ رسول اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم إلَيْهمْ فقال : ্র أَنْتُمُ الَّذِينَ قُلْتُمْ كذا وكذَا ؟، أَما واللَّهِ إِنِّي لأَخْشَاكُمْ للَّهِ وَأَتْقَاكُم له لكِني أَصُومُ وَأُفْطِرُ ، وَأُصلِّي وَأَرْقُد، وَأَتَزَوّجُ النِّسَاءَ، فمنْ رغِب عن سُنَّتِي فَلَيسَ مِنِّى: متفقٌ عليه.
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তিনজন লোক নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের ঘরে আসল। তারা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইবাদত-বন্দেগী সম্পর্কে জানতে চাইল। যখন তাদেরকে এ সম্পর্কে জানানো হল, তখন তারা যেন এটাকে অপ্রতুল মনে করল। আর বলল, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোথায় আর আমরা কোথায়? তাঁর আগের পরের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে।
- তাদের একজন বলল, আমি সম্পূর্ণ রাত নামাজ পড়তে থাকব।
- আরেকজন বলল, আমি সারা জীবন রোযা রাখব। কখনো রোযা ছাড়ব না।
- আরেকজন বলল, আমি মেয়েদের থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখব, কখনো বিয়ে করব না।
ইতোমধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাছে আসলেন। আর বললেন, তোমরা তো এ রকম সে রকম কথা বলেছ? আল্লাহর কসম! তোমাদের চেয়ে আমি আল্লাহকে বেশী ভয় করি। তাঁর সম্পর্কে বেশী তাকওয়া অবলম্বন করি। কিন্তু আমি রোযা রাখি আবার রোযা ছেড়ে দেই। আমি নামায পড়ি আবার নিদ্রা যাই। আবার মহিলাদেরকে আমি বিয়েও করি।
সুতরাং যে ব্যক্তি আমার আদর্শ (সুন্নাত) থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে সে আমার দলভুক্ত নয়।” (বুখারী ও মুসলিম)
বিয়ে করার বিধান:
ব্যক্তির অবস্থার আলোক বিয়ে করার বিধান ভিন্ন ভিন্ন হয়। এ ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য একই কথা।
▪ কেউ যদি ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করে তাহলে তা জন্যে বিয়ে করা ফরয। না করলে গুনাহগার হবে।
▪ এ অবস্থায় কেউ অর্থনৈতিক দিক থেকে সমর্থ না হয় তাহলে সে রোযা পালন করবে। কেননা, রোযা প্রবৃত্তিকে দমন করতে সহয়তা করে। তবে সামর্থ হলে অনতি বিলম্বে বিয়ে করবে। কিন্তু তথাকথিত অর্থনৈতিক দুর্বলতার অজুহাতে বিয়ে বিলম্ব করা অগ্রহনযোগ্য।
▪ কেউ যদি শারীরিক দিক থেকে বিয়ে করতে সমর্থ থাকে কিন্তু বিয়ে না করলেও যৌন সংক্রান্ত বিভিন্ন পাপাচার ও ব্যভিচারে লিপ্ত হবার আশঙ্কা না করে তাহলে তার জন্য বিয়ে করা মুস্তাহাব।
▪ কেউ যদি জৈবিক চাহিদা পূরণে অক্ষম হয় তাহলে তার জন্য বিবাহ করা বৈধ নয়। কেনানা, এতে করে অন্যের অধিকার নষ্ট করা হয়।
▪ কিন্তু যদি কেউ সার্বিক দিক থেকে সমর্থ হওয়া সত্ত্বেও রসূল সা. এর সুন্নাতের প্রতি অনীহা ও অবহেলার কারণে বিয়ে পরিত্যাগ করে, তাহলে সে রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর তরীকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গুনাগার হবে।
▪ আর কোন নারী বা পুরুষ যদি ইচ্ছা থাকার পরও বহুচেষ্টা সত্বেও কোন কারণে বিয়ে করতে ব্যার্থ হয় বা বিশেষ কোন ওজরের কারণে বিবাহ করতে না পারে তাহলে ইনশাআল্লাহ এতে সে গুনাহ থেকে বেঁচে যাবে। কেননা, বিয়ের ক্ষেত্রে তার পক্ষ থেকে চেষ্টার ত্রুটি ছিল না।
তবে ইসলামের বিধান এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত পালনের উদ্দেশ্যে বিয়ের চেষ্টা অব্যহত রাখা কতর্ব্য। আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমীন।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬🧡🌀🧡▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

 

৬০. বিয়ে নিয়ে ভয়!​ সংসারের দায়-দায়িত্ব পালনে অপারগতা এবং স্বামীর অসন্তুষ্টি কুড়ানোর ভয়ে বিয়ে থেকে বিরত থাকা কি ইসলাম সমর্থন করে? Marriage education series

 May be an image of ‎text that says '‎"হে আমাদের পালনকর্তা, যদি আমরা ভুলে যাওয়ার কারণে কিংবা অনিচ্ছাবশত: অন্যায় করে ফেলি তবে আমাদেরকে অপরাধী করো না I" (সূরা বাকারা: ২৮৬) ربنا لاتواحِدنا أوأخطانا نسينا إن Fb page: Guidance2TheRightPa‎'‎

 
বিয়ে নিয়ে ভয়!​
সংসারের দায়-দায়িত্ব পালনে অপারগতা এবং স্বামীর অসন্তুষ্টি কুড়ানোর ভয়ে বিয়ে থেকে বিরত থাকা কি ইসলাম সমর্থন করে?
▬▬▬◆◯◆▬▬▬
প্রশ্ন: কোন নারী যদি এরূপ ভয় করে যে, সে হয়ত স্বামীর আনুগত্য করতে পারবে না এবং স্বামী-সংসারের দায়িত্ব পালনে অপারগ হয়ে যাবে- যার কারণে স্বামীর অসন্তুষ্টির মাঝে থাকবে। এমতাবস্থায় সে যদি বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নেয় তবে সেটা কি জায়েজ হবে?
উত্তর:
 
মনে রাখতে হবে, ইসলামের দৃষ্টিতে প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক ও সামর্থ্যবান যুবক-যুবতীর বিয়ে করার গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা বিয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য হল, হালাল পন্থায় জৈবিক চাহিদা পূরণের মাধ্যমে পবিত্র জীবন গঠন করা এবং সন্তান-সন্ততি জন্ম দেয়ার মাধ্যমে আল্লাহর জমিন আবাদ রাখা। 
 
তা ছাড়া হাদিসে বিয়েকে দ্বীনের অর্ধেক বলা হয়েছে। আল্লাহর নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যুবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যে, তারা যেন বিয়ের উপযুক্ত ও সামর্থ্যবান হলে বিয়ে করে নেয়। তিনি বলেন,
 
يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ، مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ، فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ، وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ، وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ؛ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
 
“হে যুব সম্প্রদায়, তোমাদের মধ্যে যার সামর্থ্য আছে, সে যেন বিয়ে করে নেয়। কেননা বিয়ে চোখকে নিচু রাখতে এবং লজ্জা স্থানকে সংযত করতে সব চেয়ে বেশি সহায়ক। আর যার সামর্থ্য নেই, সে যেন সওম (রোজা) পালন করে। কেননা তা প্রবৃত্তিকে দমন করে।” [বুখারী ১৯০৫, ৫০৬৫ ও মুসলিম ১৪০০]
 
তাই দ্বীনের পূর্ণাঙ্গতা, চারিত্রিক পবিত্রতা এবং মানব জাতির বংশ পরম্পরার ধারাবাহিকতার বজায় রাখার মাধ্যমে পৃথিবী আবাদ করার স্বার্থে বিয়ের উপযুক্ত হলে অনতি বিলম্বে বিয়ে করা কর্তব্য। শরিয়ত সম্মত ওজর ব্যতিরেকে...এটা ওটা ওজুহাত দেখিয়ে বিয়ে থেকে বিরত থাকা মোটেও সঙ্গত নয়।
 
আর এ কথা বলার অপেক্ষ রাখে না যে, “হয়ত স্বামীর আনুগত্য করতে পারব না...সংসারের দায়িত্ব পালন করতে পারব না...স্বামীর অসন্তুষ্টির মাঝে থাকব...” এগুলো শরিয়ত সম্মত ও গ্রহণযোগ্য ওজর নয় বরং এ সব হল, শয়তানের পক্ষ থেকে প্ররোচনা, অনর্থক ভয় ও হীনমন্যতা। এ সব কথা মনে জাগ্রত হলে, আউযুবিল্লাহি মিনাশ শয়তানির রাজীম পাঠ করতে হবে। 
 
আল্লাহ তাআলা বলেন,
 
إِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللَّـهِ ۚ
 
“আর যদি শয়তানের প্ররোচনা তোমাকে প্ররোচিত করে, তাহলে'আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করো।” (সূরা আ’রাফ: ২০০) 
 
অর্থাৎ আউযুবিল্লাহি মিনাশ শায়ত্বনির রাজীম (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি) পাঠ করো।
 
সুতরাং কোন নারী যদি শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকে (বিয়ের উপযুক্ত হয়) তাহলে তার উচিৎ, এ সব দ্বিধা, সংশয় ও শয়তানী কুমন্ত্রণাকে পাত্তা না দিয়ে নিজের ইজ্জত-সম্ভ্রম রক্ষা, মনের পবিত্রতা, গুনাহ থেকে বাঁচা, সন্তান জন্মদানের মাধ্যমে আল্লাহর পৃথিবীকে আবাদ এবং সর্বোপরি আল্লাহর বিধান ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহকে বাস্তবায়ন করার স্বার্থে আল্লাহর উপর ভরসা করে এবং তার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করে বিয়ে করা। 
 
আর অবিবাহিত থাকার ফলে অবৈধ যৌনাচার, গোপন বদ অভ্যাস ও বিভিন্ন পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে বিয়ে করা ফরজ; অন্যথায় গুনাহগার হতে হবে। তবে শারীরিক অক্ষমতা বা মানসিকভাবে অসুস্থ তথা পাগল কিংবা মস্তিষ্ক বিকৃত হলে ভিন্ন কথা।
 
পরিশেষে বলব, শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করুন এবং দ্বিধা, সংশয় ও হীনমন্যতাকে প্রশ্রয় না দিয়ে আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নের স্বার্থে বিয়ের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হোন ও মনকে শক্ত করুন। সেই সাথে আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করুন যে, তিনি যেন আপনার দাম্পত্য জীবনকে জান্নাত লাভের মাধ্যমে পরিণত করেন এবং এ ক্ষেত্রে সব ধরণের বিশৃঙ্খলা ও অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি থেকে হেফাজত করেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট সাহায্য চায় তাকে তিনি সাহায্য করেন। নিশ্চয় তিনি সর্বোত্তম সাহায্যকারী।
 
আল্লাহ তাওফিক দান করুন।
 
আরও পড়ুন:
◆ ইসলামে বিয়ের গুরুত্ব ও বিধান
 
◆ অভিমানে বিয়ে থেকে বিরত থাকা
 
◆ বন্ধ্যা ব্যক্তির জন্য কি বিয়ে করা জায়েজ? খাসি হওয়ার বিধান কি?
 
▬▬▬◆◯◆▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব
 
 
 
ইসলামে বিয়ের গুরুত্ব ও বিধান
▬▬▬▬🧡🌀🧡▬▬▬▬
প্রশ্ন: যদি কোনো ছেলে বা মে‌য়ে জীবনেও বি‌য়ে না ক‌রে তাহলে সে কি জাহান্নামে যাবে অথবা সে কি গুনাহগার হবে?
উত্তর:
বিয়ে ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে একাধিক বিয়ে করেছেন এবং তার উম্মতকে বিয়ের প্রতি উৎসাহিত করেছেন। এই উম্মতের শ্রেষ্ঠ সন্তান সাহাবায়ে কেরাম বিবাহ করে ঘর-সংসার করেছেন। বিয়ের মাধ্যমে বৈধ সান্তান দ্বারা বংশ বিস্তার হয় এবং এই পৃথিবী আবাদ হয়। এর মাধ্যমে সমাজ থেকে অনেক অন্যায়-অপকর্ম বিদূরিত হয়। গড়ে উঠে একটি সুস্থ সমাজ ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে বৈধ পন্থায় মাুনষ নিজেদের প্রবৃত্তির চাহিদা পূরণ করে। এতে মানুষের হৃদয়পটে ঈমান ও তাকওয়া অর্জনের পাশাপাশি আল্লাহর ইচ্ছায় ভালবাসা, দয়া ও পারস্পারিক সৌহার্দপূর্ণ সুস্থ ও সুন্দর জীবন লাভে ধন্য হয় মানব সমাজ।
তাই এই চমৎকার বিধানটির ব্যাপারে কোনরূপ অবহেলা প্রদর্শন করা কাম্য নয়।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে ইবাদতের ব্যাঘাত সৃষ্টির ওজুহাতে এক ব্যক্তি জীবনে কখনো বিয়ে করবে না বলে ওয়াদা করলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে সাবধান করেন। দেখুন নিম্নোক্ত হাদীসটি:
عنْ عِبَادَةِ النَّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم ، فَلَمَّا أُخبِروا كأَنَّهُمْ تَقَالَّوْها وقالُوا : أَين نَحْنُ مِنْ النَّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم قَدْ غُفِر لَهُ ما تَقَدَّم مِنْ ذَنْبِهِ وما تَأَخَّرَ . قالَ أَحَدُهُمْ : أَمَّا أَنَا فأُصلِّي الليل أَبداً ، وقال الآخَرُ : وَأَنا أَصُومُ الدَّهْرَ أبداً ولا أُفْطِرُ ، وقالَ الآخرُ : وأَنا اعْتَزِلُ النِّساءَ فلا أَتَزوَّجُ أَبداً، فَجاءَ رسول اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم إلَيْهمْ فقال : ্র أَنْتُمُ الَّذِينَ قُلْتُمْ كذا وكذَا ؟، أَما واللَّهِ إِنِّي لأَخْشَاكُمْ للَّهِ وَأَتْقَاكُم له لكِني أَصُومُ وَأُفْطِرُ ، وَأُصلِّي وَأَرْقُد، وَأَتَزَوّجُ النِّسَاءَ، فمنْ رغِب عن سُنَّتِي فَلَيسَ مِنِّى: متفقٌ عليه.
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তিনজন লোক নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের ঘরে আসল। তারা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইবাদত-বন্দেগী সম্পর্কে জানতে চাইল। যখন তাদেরকে এ সম্পর্কে জানানো হল, তখন তারা যেন এটাকে অপ্রতুল মনে করল। আর বলল, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোথায় আর আমরা কোথায়? তাঁর আগের পরের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে।
- তাদের একজন বলল, আমি সম্পূর্ণ রাত নামাজ পড়তে থাকব।
- আরেকজন বলল, আমি সারা জীবন রোযা রাখব। কখনো রোযা ছাড়ব না।
- আরেকজন বলল, আমি মেয়েদের থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখব, কখনো বিয়ে করব না।
ইতোমধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাছে আসলেন। আর বললেন, তোমরা তো এ রকম সে রকম কথা বলেছ? আল্লাহর কসম! তোমাদের চেয়ে আমি আল্লাহকে বেশী ভয় করি। তাঁর সম্পর্কে বেশী তাকওয়া অবলম্বন করি। কিন্তু আমি রোযা রাখি আবার রোযা ছেড়ে দেই। আমি নামায পড়ি আবার নিদ্রা যাই। আবার মহিলাদেরকে আমি বিয়েও করি।
সুতরাং যে ব্যক্তি আমার আদর্শ (সুন্নাত) থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে সে আমার দলভুক্ত নয়।” (বুখারী ও মুসলিম)
বিয়ে করার বিধান:
ব্যক্তির অবস্থার আলোক বিয়ে করার বিধান ভিন্ন ভিন্ন হয়। এ ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য একই কথা।
▪ কেউ যদি ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করে তাহলে তা জন্যে বিয়ে করা ফরয। না করলে গুনাহগার হবে।
▪ এ অবস্থায় কেউ অর্থনৈতিক দিক থেকে সমর্থ না হয় তাহলে সে রোযা পালন করবে। কেননা, রোযা প্রবৃত্তিকে দমন করতে সহয়তা করে। তবে সামর্থ হলে অনতি বিলম্বে বিয়ে করবে। কিন্তু তথাকথিত অর্থনৈতিক দুর্বলতার অজুহাতে বিয়ে বিলম্ব করা অগ্রহনযোগ্য।
▪ কেউ যদি শারীরিক দিক থেকে বিয়ে করতে সমর্থ থাকে কিন্তু বিয়ে না করলেও যৌন সংক্রান্ত বিভিন্ন পাপাচার ও ব্যভিচারে লিপ্ত হবার আশঙ্কা না করে তাহলে তার জন্য বিয়ে করা মুস্তাহাব।
▪ কেউ যদি জৈবিক চাহিদা পূরণে অক্ষম হয় তাহলে তার জন্য বিবাহ করা বৈধ নয়। কেনানা, এতে করে অন্যের অধিকার নষ্ট করা হয়।
▪ কিন্তু যদি কেউ সার্বিক দিক থেকে সমর্থ হওয়া সত্ত্বেও রসূল সা. এর সুন্নাতের প্রতি অনীহা ও অবহেলার কারণে বিয়ে পরিত্যাগ করে, তাহলে সে রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর তরীকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গুনাগার হবে।
▪ আর কোন নারী বা পুরুষ যদি ইচ্ছা থাকার পরও বহুচেষ্টা সত্বেও কোন কারণে বিয়ে করতে ব্যার্থ হয় বা বিশেষ কোন ওজরের কারণে বিবাহ করতে না পারে তাহলে ইনশাআল্লাহ এতে সে গুনাহ থেকে বেঁচে যাবে। কেননা, বিয়ের ক্ষেত্রে তার পক্ষ থেকে চেষ্টার ত্রুটি ছিল না।
তবে ইসলামের বিধান এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত পালনের উদ্দেশ্যে বিয়ের চেষ্টা অব্যহত রাখা কতর্ব্য। আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমীন।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬🧡🌀🧡▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।
 
 
অভিমানে বিয়ে থেকে বিরত থাকা
▬▬▬▬◆◈◆ ▬▬▬▬
প্রশ্ন: জনৈক ব্যক্তি কোনো এক মেয়ের সাথে প্রেম করতো। কিন্তু কোনো কারণে তার সাথে বিয়ে না হওয়ায় সে দু:খ-অভিমানে জীবনে আর বিয়ে করে নি। এ ব্যাপার ইসলামের কী বলে?
উত্তর:
বিয়ের সামর্থ্য এবং চাহিদা থাকার পরও কেউ যদি কেবল রাগ বা অভিমান বশত: বিয়ে না করে সে গুনাহগার হবে। কারণ তখন ভিন্নপন্থায় জৈবিক চাহিদা পূরণের দিকে ধাবিত হওয়ার এবং বিভিন্ন ধরণের পাপকর্মে লিপ্ত হওয়ার পর্যাপ্ত সম্ভাবনা রয়েছে।
অবৈধ প্রেম-প্রীতি করার পর তার প্রত্যাশিত মেয়ে/ছেলেকে বিয়ে করতে না পেরে রাগ-অভিমানে সারা জীবন বিয়ে থেকে বিরত থাকার পাপ দ্বিগুণ। একটি হল, অবৈধ প্রেমের পাপ। অন্যটি বিয়ের মত এত গুরুত্বপূর্ণ ইসলামের বিধানকে উপেক্ষা করার পাপ।
দুআ করি, মহান আল্লাহ যেন উক্ত ব্যক্তিকে সুবুদ্ধি দান করেন। আমীন।
এখন তার কর্তব্য হল, অতীত জীবনের পাপাচারের জন্য অনতিবিলম্বে তওবা করা। অত:পর অন্য কোনো মেয়েকে বিয়ে করে নতুনভাবে জীবন-সংসার শুরু করে। এটাই তার উপর আবশ্যক-যদি সে বিয়েতে সামর্থ্য বান হয়ে থাকে।
আল্লাহ তাওফিক দানকারী।
▬▬▬▬◆◈◆ ▬▬▬▬
উত্তর প্রদান:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব
 
 
 
প্রশ্ন: বন্ধ্যা ব্যক্তির জন্য কি বিয়ে করা জায়েজ?
খাসি হওয়ার বিধান কি?
▬▬▬▬◢◯◣▬▬▬▬
উত্তর:
কেউ যদি নিজের সম্পর্কে জানতে পারে যে সে বন্ধ্যা, তারপরেও সে বিয়ে করতে পারবে। তবে শর্ত হল, যদি সে স্ত্রীর ভরণপোষণ এবং জৈবিক চাহিদা পূরণে সামর্থ্যবান হয়। অন্যথায় বিয়ে করা বৈধ নয়। কেননা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ، مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ، فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ، وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ، وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ؛ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ.
“হে যুব সম্প্রদায়, তোমাদের মধ্যে যার সামর্থ্য আছে, সে যেন বিয়ে করে নেয়। কেননা বিয়ে চোখকে নিচু রাখতে এবং লজ্জা স্থানকে সংযত করতে সব চেয়ে বেশি সহায়ক। আর যার সামর্থ্য নেই, সে যেন সওম (রোজা) পালন করে। কেননা তা প্রবৃত্তিকে দমন করে।” [বুখারী ১৯০৫, ৫০৬৫ ও মুসলিম ১৪০০]
বন্ধ্যত্ব দূর করার জন্য যথাসাধ্য অভিজ্ঞ ডাক্তারের নিকট চিকিৎসা করার পাশাপাশি আল্লাহর নিকট দুয়া ও কান্নাকাটি করতে হবে। আল্লাহর রহমত থেকে হতাশ হওয়া যাবে না। কারণ জীবনের একটা সুদীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও মহান আল্লাহ মানুষকে সন্তান দান করেছেন-এর বহু নজির আছে।
মহান আল্লাহ সম্মানিত রসূল ইবরাহীম আলাইস সালাম কে বহু বছর বন্ধ্যত্ব কাটানোর পর বৃদ্ধ বয়সে তাঁর স্ত্রীর সারা আ. এর গর্ভে ইসহাক আ. কে দান করেছিলেন।
মনে রাখতে হবে, আল্লাহ তাআলা যাকে ইচ্ছে সন্তান দান করেন আর যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করেন। এটা সম্পূর্ণ আল্লাহর এখতিয়ার ভুক্ত বিষয়। আল্লাহ তা'আলা বলেন:
لِّلَّـهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ ۚ يَهَبُ لِمَن يَشَاءُ إِنَاثًا وَيَهَبُ لِمَن يَشَاءُ الذُّكُورَ أَوْ يُزَوِّجُهُمْ ذُكْرَانًا وَإِنَاثًا ۖ وَيَجْعَلُ مَن يَشَاءُ عَقِيمًا ۚ إِنَّهُ عَلِيمٌ قَدِيرٌ
“নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের রাজত্ব আল্লাহ তা’আলারই। তিনি যা ইচ্ছা, সৃষ্টি করেন। যাকে ইচ্ছা কন্যা-সন্তান এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন। অথবা তাদেরকে দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন। নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ, ক্ষমতাশীল।” (সূরা শূরা: ৪৯ ও ৫০)
সুতরাং বিয়ের পর আল্লাহর রহমত থেকে হতাশ না হয়ে যথাসম্ভব চিকিৎসা গ্রহণের পাশাপাশি আল্লাহর নিকট দুআ করতে হবে। দয়াময় আল্লাহ ইচ্ছা করলে অবশ্যই সন্তান দানের মাধ্যমে তাদের প্রত্যাশা পূরণ করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ পরম প্রজ্ঞাবান ক্ষমতাশীল।
প্রশ্ন: খাসি হওয়া কি জায়েজ?
উত্তর:
প্রথমে আমরা জানব, খাসি করা বলতে কী বুঝায়?
সহজ কথায়, পুরুষের অণ্ডকোষে অস্ত্রোপচার করে অথবা মেডিসিন বা কেমিক্যাল প্রয়োগের মাধ্যমে তার যৌন ক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত করাকে খাসি করা বলা হয়।
পূর্ব যুগে বিভিন্ন দেশে ধর্ষণ এবং বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি হিসেবে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির অথবা দাস যেন তার মহিলা মনিবের প্রতি যৌন বাসনা অনুভব করতে না পারে সে উদ্দেশ্যে বা আরও বিভিন্ন উদ্দেশ্যে তাদের যৌন ক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হতো।
আবার কিছু মানুষ হয়তো বিশেষ কারণে যেন নারীর প্রতি আকর্ষণ অনুভব না করে সে উদ্দেশ্যে স্বেচ্ছায় এমনটি করত।
ইসলামের দৃষ্টিতে এটি নিষিদ্ধ কাজ।
খাসি হওয়া জায়েজ নয়। কেননা এ মর্মে হাদিসে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। যেমন:
حديث عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ رضي الله عنه، قَالَ: كُنَّا نَغْزُو مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَلَيْسَ مَعَنَا نِسَاءٌ، فَقُلْنَا: أَلاَ نَخْتَصِي فَنَهَانَا عَنْ ذَلِكَ،
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে যুদ্ধে বের হতাম। তখন আমাদের সাথে স্ত্রীগণ থাকত না। বিধায় আমরা একবার তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম: আমরা কি খাসি হয়ে যাব না?
তখন তিনি আমাদেরকে এ থেকে নিষেধ করেছেন। (বুখারী পর্ব ৬৫/৫ হা/৬১৫, মুসলিম পর্ব ১৬/২, হাঃ ১৪০৪)
আল্লাহু আলাম
▬▬▬▬◢◯◣▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
fb id: AbdullaahilHadi
Daee at jubail dawah & guidance center. KSA
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
এক মেয়েকে বিয়ে করার পর একটি বাচ্চাও ভূমিষ্ঠ হয়েছে। তারপর জানা গেছে সে তার দুধবোন! এ ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান কি?
▬▬▬▬◢◯◣▬▬▬▬
প্রশ্ন: আমার পরিচিত এক ভাইয়ের দাম্পত্য জীবন আজ আট বছর প্রায়। তার স্ত্রী সম্পর্কে আপন খালাতো বোন। তাদের তিন বছরের একটি কন্যা সন্তানও রয়েছে। কিন্তু বর্তমান সময়ে জানা গেছে যে, বিশেষ প্রয়োজনে বা নিরুপায় হয়ে আমার সেই ভাইয়ের মা’ র দুগ্ধ পান করেছিলো তার উক্ত খালাতো বোন বর্তমানে যে তার স্ত্রী। তাদের বিয়ের সময় অভিভাবকদের অজ্ঞতা হোক বা ধর্মীয় জ্ঞানের অভাবের কারণেই হোক বিষয়টি তখন দৃষ্টিগোচর হয় নি। কিন্তু বর্তমানে বিষয়টি জানাজানি হয়েছে। ইসলাম এক্ষেত্রে কী বলে? পুনরায় উল্লেখ করা যাচ্ছে যে, তাদের তিন বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
তাই এক্ষেত্রে ইসলামের শরিয়ত অনুযায়ী সঠিক করণীয় বলে দিলে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ থাকবো।
উত্তর:
ইসলামের দৃষ্টিতে দুধ ভাই-বোনের মাঝে বিবাহ বন্ধন চিরকালের জন্য হারাম। কেননা আল্লাহ তাআলা যে সকল মহিলার সাথে বিবাহ বন্ধন হারাম করেছেন সেগুলোর মধ্য একজন হল, দুধবোন। যেমন: আল্লাহ বলেন,
وَأُمَّهَاتُكُمُ اللَّاتِي أَرْضَعْنَكُمْ وَأَخَوَاتُكُم مِّنَ الرَّضَاعَةِ
"(তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে) তোমাদের সে মা’ দেরকে যারা তোমাদেরকে দুধ পান করিয়েছে (দুধ মাগণ) এবং তোমাদের দুধ বোনদেরকে।" (সূরা নিসা: ২৩)
এ ব্যাপারে একাধিক সহিহ হাদিসও বিদ্যমান রয়েছে।
সুতরাং যদি কোন পুরুষ এবং নারী নির্দিষ্ট কতিপয় শর্ত সাপেক্ষে একই মায়ের ‘দুধ পান’ করেছে বলে সাব্যস্ত হয় তাহলে তাদের মাঝে বিবাহ বন্ধন চিরকালের জন্য হারাম।
সম্মানিত ফকিহগণ উল্লেখ করেছেন যে, রাযআত বা দুগ্ধ পান এর কারণে বিবাহ হারাম হওয়ার বিষয়টি সাব্যস্ত হওয়ার জন্য কতিপয় শর্ত রয়েছে। সেগুলো হল:
● ক. দু বছর বয়সের মধ্যে শিশুর দুধ পান করা।
● খ. কমপক্ষে পাঁচ বার তৃপ্তি সহকারে দুধ পান করা।
● গ. পাঁচ বার দুধ পান করার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া।
● ঘ. দুধ শিশুর পাকস্থলী পর্যন্ত পৌঁছা।
● ঙ. এবং এ বিষয়ে কমপক্ষে একজন বিশ্বস্ত মহিলা সাক্ষ্য প্রদান করা। (এ বিষয়ে বিস্তারিত আলাদা একটি পোস্ট দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ)
.
যদি উপরোক্ত শর্তাবলী অনুযায়ী কোন শিশু কোন মহিলার দুধ পান করেছে বলে সাব্যস্ত হয় তাহলে তাদের মাঝে রাযআত বা দুধ পান জনিত কারণে মাহরামিয়াত সাব্যস্ত হবে। অর্থাৎ উক্ত শিশুর সাথে ওই মহিলা ও তার স্বামীর সাথে সম্পর্ক হবে হুবহু নিজের জন্মদাতা পিতামাতার অনুরূপ এবং তাদের সন্তানাদির সাথে সম্পর্ক হবে হুবহু জন্মসূত্রের ভাই-বোনের অনুরূপ। অর্থাৎ তাদের মাঝে পর্দা করা আবশ্যক নয় এবং তাদের মাঝে চিরতরে বিবাহ বন্ধন হারাম। (এতে সম্পদের উত্তরাধিকার সাব্যস্ত হবে না।)
কিন্তু যদি কোনো পুরুষ ও নারীর মাঝে বিয়ে সংঘটিত হওয়ার পরে জানা যায় যে, তারা শিশুকালে একই মায়ের দুধ পান করেছিলো (এবং তা যথাযথ শর্তাবলীর আলোকে সুসাব্যস্ত হয়) তাহলে সাথে সাথে তাদের বিয়ে বাতিল বলে গণ্য হবে এবং তাদেরকে তৎক্ষণাৎ পৃথক হতে হয়ে যেতে হবে।
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগেও এমন একটি ঘটনা ঘটেছিলো। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে, তিনি তাদেরকে আলাদা করে দেন। এ মর্মে হাদিস হল:
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ الْحَارِثِ، أَنَّهُ تَزَوَّجَ ابْنَةً لأَبِي إِهَابِ بْنِ عَزِيزٍ، فَأَتَتْهُ امْرَأَةٌ فَقَالَتْ قَدْ أَرْضَعْتُ عُقْبَةَ وَالَّتِي تَزَوَّجَ‏.‏ فَقَالَ لَهَا عُقْبَةُ مَا أَعْلَمُ أَنَّكِ أَرْضَعْتِنِي وَلاَ أَخْبَرْتِنِي‏.‏ فَأَرْسَلَ إِلَى آلِ أَبِي إِهَابٍ يَسْأَلُهُمْ فَقَالُوا مَا عَلِمْنَا أَرْضَعَتْ صَاحِبَتَنَا‏.‏ فَرَكِبَ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم بِالْمَدِينَةِ فَسَأَلَهُ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ كَيْفَ وَقَدْ قِيلَ ‏"‏‏.‏ فَفَارَقَهَا، وَنَكَحَتْ زَوْجًا غَيْرَهُ‏.‏
উকবা ইবনে হারিস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি আবু ইহাব ইবনে আজিজের কন্যাকে বিবাহ করলেন। পরে এক মহিলা এসে বলল, আমি তো উকবাহ এবং যাকে সে বিয়ে করেছে দু জনকেই দুধ পান করিয়েছি। উকবাহ রা. তাকে বললেন, এটা তো আমার জানা নেই যে, আপনি আমাকে দুধ পান করিয়েছেন আর আপনিও এ বিষয়ে আমাকে অবহিত করেন নি।
অতঃপর আবু ইহাব পরিবারের নিকট লোক পাঠিয়ে তিনি তাদের নিকট জানতে চাইলেন। তারা বলল, সে আমাদের মেয়েকে দুধ পান করিয়েছে বলে তো আমাদের জানা নেই। তখন তিনি মদিনার উদ্দেশে সওয়ার হলেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “যখন এরূপ বলা হয়েছে তখন এ (বিবাহ) কিভাবে সম্ভব?”
অত:পর উকবাহ রা. তাকে ত্যাগ করলেন। আর সে অন্য জনকে বিয়ে করল।
(সহিহ বুখারি, অধ্যায়: সাক্ষ্যদান, অনুচ্ছেদ: ৫২/৪. অধ্যায়: এক বা একাধিক ব্যক্তি কোন বিষয়ে সাক্ষ্য প্রদান করলে আর অন্যরা এ বিষয়ে অজ্ঞতা প্রকাশ করলে সাক্ষ্য দাতার কথা অনুযায়ী ফায়সালা হবে।)
অজ্ঞতা বশত: এমন বিয়ে হওয়ার পর যদি তাদের সন্তান হয় তাহলে তা পিতার সন্তান হিসেবে গণ্য হবে এবং সন্তান হিসেবে বাবার মৃত্যুর পর সে উত্তরাধিকারী সম্পদ ভাগ পাবে। কারণ এখানে বিবাহটি ছিল শুবহা তথা সংশয়পূর্ণ। (যা অজ্ঞতাবশত সংঘটিত হয়েছিল)
এ কথাই বলেছেন ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহ.। তিনি বলেন:
فإن المسلمين متفقون على أن كل نكاح اعتقد أنه نكاح سائغ إذا وطئ فيه فإنه يلحقه فيه ولده ويتوارثان باتفاق المسلمين، وإن كان ذلك النكاح باطلاً في نفس الأمر باتفاق المسلمين. انتهى
আর যেহেতু বিষয়টি তাঁদের অজানা বশত: হয়েছিল সেহেতু ইনশাআল্লাহ তারা গুনাহগার হবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন:
رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا
"হে আমাদের পালনকর্তা, যদি আমরা ভুলে যাওয়ার কারণে কিংবা অনিচ্ছাবশত: অন্যায় করে ফেলি তবে আমাদেরকে অপরাধী করো না।" (সূরা বাকারা: ২৮৬)
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬◢◯◣▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
fb id: AbdullaahilHadi
Daee at jubail dawah & guidance center. KSA

 

৬০. প্রশ্ন: স্বামী যদি পাগল হয়ে যায় তাহলে স্ত্রী কি তালাক দিয়ে অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে? না কি তালাক ছাড়াই তা বৈধ হবে? Marriage education series

 No photo description available.

প্রশ্ন: স্বামী যদি পাগল হয়ে যায় তাহলে স্ত্রী কি তালাক দিয়ে অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে? না কি তালাক ছাড়াই তা বৈধ হবে?
▬▬▬▬▬✪✪✪▬▬▬▬▬
উত্তর:
স্বামী যদি বদ্ধ পাগল হয়ে যায় আর সহসা সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে এমতাবস্থায় স্ত্রী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করলে তার জন্য বিবাহ বিচ্ছেদ করা জায়েয। এ ক্ষেত্রে কোর্টের মাধ্যমে বিচ্ছেদের ব্যবস্থা করতে হবে। তারপর অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে। বিবাহ বিচ্ছেদ ব্যতিরেকে তা বৈধ হবে না।
এ বিষয়ে কোন কোন আলেম বলেন, স্ত্রীকে এ জন্য নূন্যতম ১ বছর অপেক্ষা করতে হবে। এ সময়ের মধ্যে যদি সুস্থ হয়ে যায় তাহলে বিবাহ বিচ্ছেদ বৈধ হবে না। তবে এ সময় নির্ধারণের ব্যাপারে কোন দলীল আছে কি না তা আমার জানা নাই।
মোটকথা, যদি আল্লাহর ফয়সালা অনুযায়ী স্বামী পাগল বা মস্তিষ্ক বিকৃত হয়ে যায় তাহলে প্রথমত: স্ত্রীর উচিৎ ধৈর্যের সাথে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো না করা। এরপর যদি সুস্থ হওয়ার কোন সম্ভাবনা না দেখা যায় এবং সে নিজে ও তার সন্তান-সন্ততি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করে তাহলে তখন কোর্ট এর মাধ্যমে আইনগত ভাবে বিবাহ বিচ্ছেদ করবে।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দুরারোগ্য ব্যাধি থেকেে হেফাজত করুন। আমীন।
🖊🖊🖊🖊
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

 

৫৯. এক মেয়েকে বিয়ে করার পর একটি বাচ্চাও ভূমিষ্ঠ হয়েছে। তারপর জানা গেছে সে তার দুধবোন! এ ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান কি? Marriage education series

 May be an image of ‎text that says '‎"হে আমাদের পালনকর্তা, যদি আমরা ভুলে যাওয়ার কারণে কিংবা অনিচ্ছাবশত: অন্যায় করে ফেলি তবে আমাদেরকে অপরাধী করো না I" (সূরা বাকারা: ২৮৬) ربنا لاتواحِدنا أوأخطانا نسينا إن Fb page: Guidance2TheRightPa‎'‎

এক মেয়েকে বিয়ে করার পর একটি বাচ্চাও ভূমিষ্ঠ হয়েছে। তারপর জানা গেছে সে তার দুধবোন! এ ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান কি?
 
▬▬▬▬◢◯◣▬▬▬▬
প্রশ্ন: আমার পরিচিত এক ভাইয়ের দাম্পত্য জীবন আজ আট বছর প্রায়। তার স্ত্রী সম্পর্কে আপন খালাতো বোন। তাদের তিন বছরের একটি কন্যা সন্তানও রয়েছে। কিন্তু বর্তমান সময়ে জানা গেছে যে, বিশেষ প্রয়োজনে বা নিরুপায় হয়ে আমার সেই ভাইয়ের মা’ র দুগ্ধ পান করেছিলো তার উক্ত খালাতো বোন বর্তমানে যে তার স্ত্রী। তাদের বিয়ের সময় অভিভাবকদের অজ্ঞতা হোক বা ধর্মীয় জ্ঞানের অভাবের কারণেই হোক বিষয়টি তখন দৃষ্টিগোচর হয় নি। কিন্তু বর্তমানে বিষয়টি জানাজানি হয়েছে। ইসলাম এক্ষেত্রে কী বলে? পুনরায় উল্লেখ করা যাচ্ছে যে, তাদের তিন বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
তাই এক্ষেত্রে ইসলামের শরিয়ত অনুযায়ী সঠিক করণীয় বলে দিলে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ থাকবো।
উত্তর:
ইসলামের দৃষ্টিতে দুধ ভাই-বোনের মাঝে বিবাহ বন্ধন চিরকালের জন্য হারাম। কেননা আল্লাহ তাআলা যে সকল মহিলার সাথে বিবাহ বন্ধন হারাম করেছেন সেগুলোর মধ্য একজন হল, দুধবোন। যেমন: আল্লাহ বলেন,
وَأُمَّهَاتُكُمُ اللَّاتِي أَرْضَعْنَكُمْ وَأَخَوَاتُكُم مِّنَ الرَّضَاعَةِ
 
"(তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে) তোমাদের সে মা’ দেরকে যারা তোমাদেরকে দুধ পান করিয়েছে (দুধ মাগণ) এবং তোমাদের দুধ বোনদেরকে।" (সূরা নিসা: ২৩)
এ ব্যাপারে একাধিক সহিহ হাদিসও বিদ্যমান রয়েছে।
সুতরাং যদি কোন পুরুষ এবং নারী নির্দিষ্ট কতিপয় শর্ত সাপেক্ষে একই মায়ের ‘দুধ পান’ করেছে বলে সাব্যস্ত হয় তাহলে তাদের মাঝে বিবাহ বন্ধন চিরকালের জন্য হারাম।
সম্মানিত ফকিহগণ উল্লেখ করেছেন যে, রাযআত বা দুগ্ধ পান এর কারণে বিবাহ হারাম হওয়ার বিষয়টি সাব্যস্ত হওয়ার জন্য কতিপয় শর্ত রয়েছে। সেগুলো হল:
● ক. দু বছর বয়সের মধ্যে শিশুর দুধ পান করা।
● খ. কমপক্ষে পাঁচ বার তৃপ্তি সহকারে দুধ পান করা।
● গ. পাঁচ বার দুধ পান করার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া।
● ঘ. দুধ শিশুর পাকস্থলী পর্যন্ত পৌঁছা।
● ঙ. এবং এ বিষয়ে কমপক্ষে একজন বিশ্বস্ত মহিলা সাক্ষ্য প্রদান করা। (এ বিষয়ে বিস্তারিত আলাদা একটি পোস্ট দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ)
.
যদি উপরোক্ত শর্তাবলী অনুযায়ী কোন শিশু কোন মহিলার দুধ পান করেছে বলে সাব্যস্ত হয় তাহলে তাদের মাঝে রাযআত বা দুধ পান জনিত কারণে মাহরামিয়াত সাব্যস্ত হবে। অর্থাৎ উক্ত শিশুর সাথে ওই মহিলা ও তার স্বামীর সাথে সম্পর্ক হবে হুবহু নিজের জন্মদাতা পিতামাতার অনুরূপ এবং তাদের সন্তানাদির সাথে সম্পর্ক হবে হুবহু জন্মসূত্রের ভাই-বোনের অনুরূপ। অর্থাৎ তাদের মাঝে পর্দা করা আবশ্যক নয় এবং তাদের মাঝে চিরতরে বিবাহ বন্ধন হারাম। (এতে সম্পদের উত্তরাধিকার সাব্যস্ত হবে না।)
কিন্তু যদি কোনো পুরুষ ও নারীর মাঝে বিয়ে সংঘটিত হওয়ার পরে জানা যায় যে, তারা শিশুকালে একই মায়ের দুধ পান করেছিলো (এবং তা যথাযথ শর্তাবলীর আলোকে সুসাব্যস্ত হয়) তাহলে সাথে সাথে তাদের বিয়ে বাতিল বলে গণ্য হবে এবং তাদেরকে তৎক্ষণাৎ পৃথক হতে হয়ে যেতে হবে।
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগেও এমন একটি ঘটনা ঘটেছিলো। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে, তিনি তাদেরকে আলাদা করে দেন। এ মর্মে হাদিস হল:
 
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ الْحَارِثِ، أَنَّهُ تَزَوَّجَ ابْنَةً لأَبِي إِهَابِ بْنِ عَزِيزٍ، فَأَتَتْهُ امْرَأَةٌ فَقَالَتْ قَدْ أَرْضَعْتُ عُقْبَةَ وَالَّتِي تَزَوَّجَ‏.‏ فَقَالَ لَهَا عُقْبَةُ مَا أَعْلَمُ أَنَّكِ أَرْضَعْتِنِي وَلاَ أَخْبَرْتِنِي‏.‏ فَأَرْسَلَ إِلَى آلِ أَبِي إِهَابٍ يَسْأَلُهُمْ فَقَالُوا مَا عَلِمْنَا أَرْضَعَتْ صَاحِبَتَنَا‏.‏ فَرَكِبَ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم بِالْمَدِينَةِ فَسَأَلَهُ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ كَيْفَ وَقَدْ قِيلَ ‏"‏‏.‏ فَفَارَقَهَا، وَنَكَحَتْ زَوْجًا غَيْرَهُ‏.‏
 
উকবা ইবনে হারিস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি আবু ইহাব ইবনে আজিজের কন্যাকে বিবাহ করলেন। পরে এক মহিলা এসে বলল, আমি তো উকবাহ এবং যাকে সে বিয়ে করেছে দু জনকেই দুধ পান করিয়েছি। উকবাহ রা. তাকে বললেন, এটা তো আমার জানা নেই যে, আপনি আমাকে দুধ পান করিয়েছেন আর আপনিও এ বিষয়ে আমাকে অবহিত করেন নি।
অতঃপর আবু ইহাব পরিবারের নিকট লোক পাঠিয়ে তিনি তাদের নিকট জানতে চাইলেন। তারা বলল, সে আমাদের মেয়েকে দুধ পান করিয়েছে বলে তো আমাদের জানা নেই। তখন তিনি মদিনার উদ্দেশে সওয়ার হলেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “যখন এরূপ বলা হয়েছে তখন এ (বিবাহ) কিভাবে সম্ভব?”
অত:পর উকবাহ রা. তাকে ত্যাগ করলেন। আর সে অন্য জনকে বিয়ে করল।
(সহিহ বুখারি, অধ্যায়: সাক্ষ্যদান, অনুচ্ছেদ: ৫২/৪. অধ্যায়: এক বা একাধিক ব্যক্তি কোন বিষয়ে সাক্ষ্য প্রদান করলে আর অন্যরা এ বিষয়ে অজ্ঞতা প্রকাশ করলে সাক্ষ্য দাতার কথা অনুযায়ী ফায়সালা হবে।)
অজ্ঞতা বশত: এমন বিয়ে হওয়ার পর যদি তাদের সন্তান হয় তাহলে তা পিতার সন্তান হিসেবে গণ্য হবে এবং সন্তান হিসেবে বাবার মৃত্যুর পর সে উত্তরাধিকারী সম্পদ ভাগ পাবে। কারণ এখানে বিবাহটি ছিল শুবহা তথা সংশয়পূর্ণ। (যা অজ্ঞতাবশত সংঘটিত হয়েছিল)
এ কথাই বলেছেন ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহ.। তিনি বলেন:
 
فإن المسلمين متفقون على أن كل نكاح اعتقد أنه نكاح سائغ إذا وطئ فيه فإنه يلحقه فيه ولده ويتوارثان باتفاق المسلمين، وإن كان ذلك النكاح باطلاً في نفس الأمر باتفاق المسلمين. انتهى
 
আর যেহেতু বিষয়টি তাঁদের অজানা বশত: হয়েছিল সেহেতু ইনশাআল্লাহ তারা গুনাহগার হবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন:
رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا
 
"হে আমাদের পালনকর্তা, যদি আমরা ভুলে যাওয়ার কারণে কিংবা অনিচ্ছাবশত: অন্যায় করে ফেলি তবে আমাদেরকে অপরাধী করো না।" (সূরা বাকারা: ২৮৬)
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬◢◯◣▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
fb id: AbdullaahilHadi
Daee at jubail dawah & guidance center. KSA

 

৫৮. ‘স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেশত’ এ কথা কি হাদিস সম্মত? Marriage education series

 No photo description available.

‘স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেশত’ এবং ‘মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত’ কোনটি সঠিক?
➖➖➖➖➖➖➖➖
প্রশ্ন: মানুষকে বলতে শোনা যায় যে, “মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত”। আবার এটাও শোনা যায় যে, “স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেশত।” এ দুটি কথার মধ্যে মূলত: কোন হাদিসটি সঠিক দয়া করে জানাবেন।
উত্তর:
💠 “স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেশত” এ কথাটা কোন হাদিস নয়। বরং বানোয়াট কথা। কিন্তু হাদিস হিসেবে আমাদের সমাজে প্রচলিত রয়েছেে!!
তবে স্ত্রীর কাছে স্বামীর সম্মানের কথা হাদিসে এভাবে উল্লিখিত হয়েছে,
لَوْ كُنْتُ آمِرًا أَحَدًا أَنْ يَسْجُدَ لِغَيْرِ اللهِ لأَمَرْتُ الْمَرْأَةَ أَنْ تَسْجُدَ لِزَوْجِهَا وَالَّذِى
نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لاَ تُؤَدِّى الْمَرْأَةُ حَقَّ رَبِّهَا حَتَّى تُؤَدِّىَ حَقَّ زَوْجِهَا وَلَوْ سَأَلَهَا نَفْسَهَا وَهِىَ عَلَى قَتَبٍ لَمْ تَمْنَعْهُ
“যদি আমি কাউকে নির্দেশ দিতাম আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে সিজদা করার, তাহ’লে স্ত্রীকে নির্দেশ দিতাম তার স্বামীকে সিজদা করার জন্য।” (ইবনে মাজাহ হা/১৮৫৩; সহীহাহ হা/১২০৩।)
💠 "মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত” হুবহু এ শব্দে বর্ণিত হাদিসটি খুব দুর্বল মতান্তরে বানোয়াট। কিন্তু তার অর্থটি সঠিক- যেমনটি বর্ণিত হয়েছে নিম্নোক্ত হাদিস সমূহে:
🔰 মু‘আবিয়া ইবনে জাহিমা রা. হতে বর্ণিত। একদা আমার পিতা জাহিমা রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এসে বললেন,
يَا رَسُولَ اللهِ أَرَدْتُ الْغَزْوَ وَجِئْتُكَ أَسْتَشِيْرُكَ فَقَالَ هَلْ لَكَ مِنْ أُمٍّ قَالَ نَعَمْ فَقَالَ الْزَمْهَا فَإِنَّ الْجَنَّةَ عِنْدَ رِجْلِهَا
‘হে আল্লাহর রাসূল, আমি জিহাদে যেতে ইচ্ছুক। আমি আপনার নিকট পরামর্শ নিতে এসেছি। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, তোমার মা আছে কি? লোকটি বললেন, হ্যাঁ।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “তুমি তার পদযুগল জড়িয়ে থাকো (অর্থাৎ তার সেবা করো), কেননা তাঁর পায়ের নিকটেই জান্নাত রয়েছে।” [আহমদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৪৯৩৯; সহীহুল জামে‘ হা/১২৪৯, সহীহু তারগীব ওয়াত তারহীব।]
অন্য বর্ণনায় এসেছে,
فالزَمها فإنَّ الجنَّةَ تحتَ رِجلَيها
“তুমি তার পদযুগল জড়িয়ে থাকো (অর্থাৎ তার সেবা করো), কেননা তাঁর পায়ের নিচেই জান্নাত রয়েছে।” [সহিহ নাসাঈ, হা/৩১০৪]
অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জাহিমা রা. তাকে জিজ্ঞাসা করলেন,
أَلكَ والِدَانِ . قُلْتُ : نَعَمْ . قال : الزَمْهُما ، فإنَّ الجنةَ تَحْتَ أَرْجُلِهما
"তোমার কি পিতামাতা আছে?"
আমি বললাম, হ্যাঁ।
তিনি বললেন, "তুমি তাদেরকে আঁকড়িয়ে থাকো। কারণ জান্নাত রয়েছে, তাদের পায়ের নিচে।" [সহিহ তারগিব, হাসান সহিহ, ২৪২৫]
এ বর্ণনায় পাওয়া গেলো, পিতামাতা উভয়ের পায়ের নিচেই জান্নাত রয়েছে।
🔰 আবু উমামা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর খিদমতে হাজির হয়ে বললেন,
يَا رَسُولَ اللهِ مَا حَقُّ الْوَالِدَيْنِ عَلَى وَلَدِهِمَا قَالَ هُمَا جَنَّتُكَ وَنَارُكَ
“হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সন্তানের উপর পিতামাতার কি হক? তিনি বললেন, “তারা উভয় তোমার জান্নাত ও জাহান্নাম’। [ইবনে মাজাহ, মিশকাত হা/৪৭২৪।] অর্থাৎ মায়ের সেবা করা জান্নাতে যাওয়ার একটি মাধ্যম।
❌ ‘মায়ের পদতলে সন্তানের জান্নাত’ মর্মে নিন্মোক্ত শব্দে বর্ণিত দুটি হাদিস সহিহ নয়। যথা:
((الجنة تحت أقدام الأمهات)). وفي لفظ: ((الجنة تحت أقدام الأمهات، مَنْ شِئن أدخلن، ومَن شِئن أخرجن!))
ক. “বেহেশত রয়েছে মায়েদের পদতলে ।”
খ. অন্য শব্দে “বেহেশত রয়েছে মায়েদের পদতলে। যাকে খুশি তারা জান্নাতে প্রবেশ করাবে আর যাকে খুশি বের করবে।”
এই শব্দে বর্ণিত হাদিস দুটি মুহাদ্দিসদের মতানুসারে জঈফ (দুর্বল) আর কারো মতে মউযু (বানোয়াট)।
তবে ‘মায়ের পায়ের নিকট জান্নাত’ এর মর্মার্থটি পূর্বোল্লিখিত হাদিস দ্বয়ের আলোক সহিহ।
আল্লাহু আলাম
-----------------
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার , সৌদি আরব
FB/AbdullaahilHadi

 

৫৭. প্রশ্ন: স্বামীর নাম ধরে ডাকা কি জায়েজ? Marriage education series

No photo description available.

প্রশ্ন: স্বামীর নাম ধরে ডাকা কি জায়েজ?
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
উত্তর:
বিষয়টি সামাজিক রীতিনীতি, ভদ্রতা এবং প্রচলন এর উপর নির্ভরশীল। যে সমাজে এটিকে অসম্মানজনক মনে করা হয় না সেখানে তাতে আপত্তি নেই কিন্তু যেখানে এটিকে সম্মানহানি ও বেয়াদবি মনে করা হয় সেখানে তা করা উচিত নয়।
 
আমাদের ভারত উপমহাদেশে সাধারণত স্বামীর নাম ধরে ডাকাকে অসম্মানজনক ও বেয়াদবি মনে করা হয়। সুতরাং এখানে স্বামীকে নাম ধরে ডাকা উচিত নয়। কেননা স্ত্রীর কর্তব্য, স্বামীর প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখা এবং এমন আচরণ না করা যাতে তার সম্মানহানী হয়। অন্যথায় তাদের মাঝে মনোমালিন্য এবং দাম্পত্য জীবনে কুপ্রভাব পড়তে পারে। তাছাড়া সাধারণ ভদ্রতা হল, মানুষকে এমন শব্দ প্রয়োগে সম্বোধন করা যাতে সে খুশি হয়। বিশেষ করে দাম্পত্য জীবনে এটাই ভালবাসার দাবী এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
অবশ্য স্বামী যদি এতে মনে কষ্ট না পায় বা নিজের সম্মানহানী মনে না করে তাহলে নাম ধরে ডাকায় কোন সমস্যা নেই ইনশাআল্লাহ। যেমন: বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে, যখন আল্লাহর রাসূল ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম তার স্ত্রী হাজের এবং শিশু পুত্র ইসমাইলকে মক্কার জনমানবহীন প্রান্তরে রেখে চলে যাচ্ছিলেন তখন পেছন থেকে তার স্ত্রী তাকে ডাকলেন এভাবে:
يَا إِبْرَاهِيمُ أَيْنَ تَذْهَبُ وَتَتْرُكُنَا بِهَذَا الْوَادِي الَّذِي لَيْسَ فِيهِ إِنْسٌ وَلَا شَيْءٌ ؟
“হে ইব্রাহিম, তুমি আমাদেরকে এমন জনমানবহীন উপত্যকায় রেখে কোথায় যাচ্ছ?” (সহিহ বুখারী)
এছাড়া বিভিন্ন দেশে স্বামীর নাম ধরে ডাকার প্রচলন রয়েছে। সুতরাং এ বিষয়ে সামাজিক নিয়ম-নীতি, সম্মান ও ভদ্রতার প্রতি লক্ষ্য রাখা জরুরি।
 
প্রশ্ন: কেউ যদি বিনা প্রয়োজনে স্বামীর নাম মুখে নিয়ে কারো সাথে গল্প করে তাহলে কি গুনাহ হবে?
উত্তর:
যদি কোথাও স্বামীর নাম উল্লেখ করার প্রয়োজন দেখা দেয় তাহলে উচ্চারণ করতে কোন সমস্যা নেই। তবে বিনা প্রয়োজনে কারো সাথে গল্প করার সময় তার নাম নিলেও সম্মানের সাথে নেয়া কতর্ব্য। বার বার নাম উচ্চারণের ফলে মানুষের নিকট যেন তার প্রতি আপনার শ্রদ্ধাহীনতা প্রকাশ না পায় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, KSA
fb/AbdullaahilHadi

 

৫৬. স্বামীকে পরকীয়া থেকে রক্ষা করার উপায় Marriage education series

May be an image of text that says 'স্বামীকে পরকীয়া থেকে রক্ষা করার উপায় আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানী'

স্বামীকে পরকীয়া থেকে রক্ষা করার উপায়
▬▬▬▬●◈●▬▬▬▬
প্রশ্ন: এক বোনের পক্ষ থেকে প্রশ্নঃ
আমার হাজবেন্ড অন্য মেয়ের সাথে পরকীয়া করে। তার সাথে আমার তেমন শারীরিক সম্পর্কও হয় না। আমার মনে হয়, পরকীয়ার কারণে সে আমার প্রতি আগ্রহী নয়। তবে সে আমাকে খাওয়া-পরা নিয়ে কোনো অভাবে রাখে না। আমার দুটা সন্তান আছে। এই যন্ত্রণা আমার সহ্য হয় না। সে একবার আমার কাছে ধরা পড়ার পর ক্ষমাও চায়। কিন্তু ঐ মেয়ের পাল্লায় পড়ে আবারও তার সাথে সম্পর্ক করে। এই ক্ষেত্রে আমার করণীয় কী?
উত্তর:
আল্লাহ তাআরা আমাদেরকে ক্ষমা করুন।
পরকীয়া নি:সন্দেহে দাম্পত্য জীবন, সন্তান-সন্ততির ভবিষ্যৎ এবং সামাজিক সুস্থতা ও স্থিতিশীলতার বিরাট হুমকি। এটি নিজের হালাল স্ত্রীর সাথে আমানতের খেয়ানত, প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতার শামিল এবং আল্লাহ তাআলা ক্রোধের কারণ।
যাহোক, কোন স্বামী এই ফিতনায় জড়িয়ে গেলে স্ত্রীর করণীয় হল:
◼ ১. কুরআন-হাদিসের আলোকে তাকে পরকীয়া, অবৈধ প্রেমপ্রীতি ও যিনাব্যাভিচারের ভয়াবহতা, ইসলামী আইন অনুযায়ী দুনিয়াতে এর কঠিন শাস্তি, আখিরাতের আযাব, আল্লাহর অসন্তুষ্টি ইত্যাদি বিষয়গুলো বুঝানো। এ বিষয়ে কুরআন-হাদীসে পর্যাপ্ত ব্ক্তব্য রয়েছে। তাই এ সংক্রান্ত যে কোন ভালো ইসলামী বই বা ইসলামী আলোচনার ভিডিও কাজে লাগানো যেতে পারে।
◼ ২. তার হেদায়েতের জন্য দয়াময় আল্লাহর নিকট দুআ করা।
◼ ৩. স্ত্রীর মাঝে স্বামীর নিকট অপছন্দীয় কোন আচার-আচরণ থাকলে তা পরিবর্তন করা এবং যথাসাধ্য তাকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা। দাম্পত্য জীবনে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অনেক স্বামী-স্ত্রী এ বিষয়ে অজ্ঞতা বা অবহেলার কারণে সময়ের ব্যবধানে তারা দাম্পত্য জীবনের উষ্ণতা ও আবেদন হারায়। ফলে দুজনের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি হয় এবং অবশেষে ঈমানী দূর্বলতা, কুপ্রবৃত্তির তাড়না এবং শয়তানের কুমন্ত্রণায় তারা ভিন্ন পথ খুঁজা শুরু করে।
◼ ৪. প্রয়োজনে স্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বামীকে ‌আরেকটি বিয়ে করার সম্মতি দেয়া।
উল্লেখ্য যে, আল্লাহর দেয়া এ বিধানটির ব্যাপারে অনেক স্ত্রীর কঠোর ও ভয়াবহ আক্রমণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে অনেক দুর্বল ইমানদার স্বামী অবৈধ পথের দিকে পা বাড়ায়। এ ক্ষেত্রে স্ত্রীও এই অন্যায়ের জন্য দায়ী হিসেবে বিবেচিত হবে।
◼ ৫. সম্ভব হলে সাক্ষ্য-প্রমাণ সাপেক্ষে পারিবারিক বা সামাজিক সালিশ অথবা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
◼ ৬. এগুলোর মাধ্যমে কোন উপকার না হলে হয় স্ত্রীকে ধৈর্য ধারণ করে স্বামীকে এ পথ থেকে ফিরানোর প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হবে। অন্যথায় সবশেষে তার সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ করে পৃথক হয়ে যেতে হবে।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬●◈●▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল (মাদানী)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব