Sunday, August 15, 2021

রমাযান মাসের মর্যাদা ও রোযার গুরুত্ব

 

রমাযান মাসের মর্যাদা ও রোযার গুরুত্ব
▬▬▬▬🌐🌐▬▬▬▬
রামাযান হল, বছরের শ্রেষ্ঠতম মাস। অসংখ্য নিয়ামত ও অবারিত সুযোগ সমৃদ্ধ মহিমান্বিত মাস এটি। এ মাসে রয়েছে সিয়াম, কিয়াম, কুরআন তিলাওয়াত, ইতিকাফ, উমরা, দান-সদকা, চরিত্র সংশোধন এবং মহান রবের দরবারে দুআ-আরোধনার মাধ্যমে গুনাহ মোচন করত: জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির এক অতুলনীয় সযোগ।
নিম্নে হাদিসে বর্ণিত এ মাসের কতিপয় বৈশিষ্ট মণ্ডিত দিক ও করণীয় তুলে ধরা হল:
🌀 ১) রমাযানের রোযা রাখা ফরয:
রমাযান মাসে রোযা রাখা ফরজ হওয়ার সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
"হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেজগারি অর্জন করতে পার।" (সূরা বাকারা: ১৮৩)
🌀 ২) রমাযান মাসে রোযা রাখা ইসলামের অন্যতম একটি স্তম্ভ:
➤ ক) আব্দুল্লাহ বিন উমর (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
بني الإسلام على خمس: شهادة أن لا إله إلا الله ، وأن محمداً رسول الله ،وإقامة الصلاة ، وإيتاء الزكاة ، والحج، وصوم رمضان)
"ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত। লা-‘ই-লা-হা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ তথা এ কথার সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই এবং নামায প্রতিষ্ঠা করা, যাকাত প্রদান করা, হজ্জ আদায় করা এবং রমাযান মাসে রোযা রাখা।" [বুখারী ও মুসলিম]
➤ খ) আবু হুরায়রা রাহ. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন মানুষের সামনে ছিলেন এমতাবস্থায় তাঁর নিকট এক লোক এসে জিজ্ঞেস করল: ঈমান কি? তিনি উত্তরে বললেন:
الإيمان أن تؤمن بالله ، وملائكته ، وبلقائه ، ورسله، وتؤمن بالبعث
"ঈমান হল, আল্লাহ, তাঁর ফেরেশ্‌তাগণ, তাঁর সাথে সাক্ষাৎ হওয়াকে এবং তাঁর রাসূলগণকে বিশ্বাস করবে এবং সেই সাথে বিশ্বাস করবে মৃত্যুর পর পুনরুত্থানকে।” সে ব্যক্তি আবার জিজ্ঞেস করল, ইসলাম কি? তিনি বললেন:
الإسلام أن تعبد الله ولا تشرك به وتقيم الصلاة وتؤتي الزكاة المفروضة وتصوم رمضان
ইসলাম হল: এমনভাবে আল্লাহ আল্লাহর এবাদত করবে যে, যেন তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছ। তাঁর সাথে শিরক করবে না, নামায পড়বে, ফরয যাকাত দিবে এবং রমাযান মাসে রোযা রাখবে।”
লোকটি পুনরায় জিজ্ঞেস করল, ইহসান কি? তিনি বললেন:
أن تعبد الله كأنك تراه ، فإن لم تكن تراه فإنه يراك
"ইহসান হল, এমনভাবে আল্লাহ আল্লাহর এবাদত করবে যে, যেন তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছ। আর যদি তাকে দেখতে না পাও তবে (এ মনোভাব রাখবে) যে তিনি তোমাকে দেখতে পাচ্ছেন...।”[বুখারী ও মুসলিম]
➤ গ) আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে এক বেদুইনের কথোপকথন:
ত্বালহা বিন উবায়দুল্লাহ (রাহ:) হতে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এক বেদুঈন আগমন করল। তার মাথার চুল ছিল উসকো-খুসকো। লোকটি বলল: হে আল্লাহর রাসূল, আপনি আমাকে বলুন, আল্লাহ তাআলা আমার জন্য কি পরিমাণ নামায ফরয করেছেন? তিনি বললেন: "পাঁচ ওয়াক্ত নামায। তবে কিছু অতিরিক্ত নফল নামায পড়তে পার।”
লোকটি বলল: আপনি আমাকে বলুন, আল্লাহ তাআলা আমার জন্য কি পরিমাণ রোযা ফরয করেছেন? তিনি বললেন: "রমাযান মাসের রোযা। তবে কিছু অতিরিক্ত নফল রোযা রাখতে পার।"
লোকটি আবার জিজ্ঞেস করল: আপনি আমাকে বলুন, আল্লাহ তাআলা আমার উপর কি পরিমাণ যাকাত ফরয করেছেন?
বর্ণনাকারী বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রশ্নকারীকে ইসলামের বিভিন্ন বিধি-বিধান সম্পর্কে জ্ঞান দান করলেন। অতঃপর লোকটি বলল: সে প্রভুর শপথ করে বলছি, যিনি আপনাকে সত্য দ্বারা সম্মানিত করেছেন, আমি অতিরিক্ত কোন কিছুই করব না এবং আল্লাহ তাআলা আমার উপর যা ফরয করেছেন তা থেকে কোন কিছুই কমও করব না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: "সে সত্য বলে থাকলে সফল হবে।” অথবা তিনি বলছেন: "সে সত্য বলে থাকলে জান্নাতবাসী হবে।” [বুখারী, সওম অধ্যায় ও মুসলিম, ঈমান অধ্যায়।]
🌀 ৩) রমাযান মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়:
আবু হুরায়রা (রাহ:)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যখন রমাযান আগমন করে তখন জান্নাতের দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয়।” অন্য বর্ণনায় রয়েছে: যখন রমাযান আগমন করে তখন আসমানের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানদেরকে শিকল দিয়ে বেঁধে দেয়া হয়।” [সহীহ বুখারী, কিতাবুস সাওম। সহীহ মুসলিম কিতাবুস সিয়াম]
🌀 ৪) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমাযান ছাড়া অন্য কখনো পুরো মাস রোযা রাখতেন না:
আয়েশা (রাহ:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন:
كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يصوم حتى نقول لا يفطر ، ويفطر حتى نقول لا يصوم ، وما رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم استكمل صيام شهر إلا رمضان ، وما رايته أكثر صياماً منه في شعبان)) متفق عليه
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নফল রোযা রাখা শুরু করলে আমরা বলতাম, তিনি হয়ত আর রোযা বাদ দিবে না। আবার রোযা বন্ধ করলে আমরা ধারণা করতাম হয়ত তিনি আর রোযাই রাখবেন না। আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে রমাযান ছাড়া অন্য কখনো সারা মাস ধরে রোযা পালন করতে দেখিনি এবং শাবান মাসে তার চেয়ে বেশি আর কাউকে রোযা রাখতে দেখিনি।”[বুখারী ও মুসলিম]
🌀 ৫) এক রমাযান অন্য রমাযানের মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে সংঘটিত পাপরাশীর জন্য কাফফারা স্বরূপ:
আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন:
الصلوات الخمس ، والجمعة إلى الجمعة ، ورمضان إلى رمضان ، مكفرات ما بينهن ، إذا اجتنب الكبائر
"পাঁচ ওয়াক্ত নামায, এক জুমুআ থেকে আরেক জুমুআ এবং এক রমাযান থেকে আরেক রমাযানের মধ্যবর্তী গুনাহসমূহ মোচন হয়ে যাবে যদি কবিরাগুনাহ থেকে বেঁচে থাকা হয়।” [সহীহ মুসলিম। পবিত্রতা অধ্যায়]
🌀 ৬) রমাযান মাসে শয়তানকে শিকর বন্দী করা হয়, জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজা সমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়:
إذا كان أول ليلة من شهر رمضان صفدت الشياطين ومردة الجن ، وغلقت أبواب النيران فلم يفتح منها باب ، وفتحت أبواب الجنة فلم يغلق منها باب ، وينادي مناد يا باغي الخير أقبل ، ويا باغي الشر أقصر ، والله عتقاء من النار وذلك كل ليلة
"রমাযান মাসের প্রথম রাতেই শয়তান এবং উশৃংখল জিনদেরকে শিকল বন্দী করে ফেলা হয়, জাহান্নামের সবগুলো দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়-যার একটিও খোলা রাখা হয় না এবং জান্নাতের সবগুলো দরজা খুলে দেয়া হয়- যার একটিও বন্ধ রাখা হয় না। আর এক আহ্বানকারী আহবান করতে থাকে, হে কল্যাণ প্রত্যাশী, অগ্রসর হও। হে অন্যায়কারী, বিরত হও। আর আল্লাহ তাআলা অনেক জাহান্নামীকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। আর তা রমাযানের প্রতি রাতেই।” [তিরমিযী, রোযা অধ্যায়। মুসতাদরাক হাকেম। আল্লামা আলবানী (রা.) হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ তারগীব ওয়াত্‌ তারহীব। হাদিস নং ৯৯৮]
🌀 ৭) একই বছরে রমাযান এবং যিল হজ্জ মাস একসাথে অপূর্ণ হবে না:
আবু বাকরা (রা:) হতে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
شهران لا ينقصان ، شهر عيد : رمضان وذو الحجة- متفق عليه
"দুটি মাস (একই বছরে) অপূর্ণ হবে না। সেগুলো হল: ঈদের দু মাস তথা রমাযান এবং যিলহজ।” [সহীহ বুখারী, অধ্যায়: রোযা। সহীহ মুসলিম অধ্যায়: রোযা] অর্থাৎ এ দুটি মাস একই বছরে এক সাথে অসম্পূর্ণ হবেনা। একটি ২৯ দিনে হলে অন্যটি অবশ্যই ৩০ দিনে হবে। আরেকটি মত হল, হাদিসটির অর্থ এ দুটি মাসে আমলের সাওয়াব কম হবে না। [সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যা গ্রন্থ ফাত্‌হুল বারী। অধ্যায়: দু মাস এক সাথে কম হবে না। ১৭৭৯ নং হাদিসের ব্যাখ্যা।]
▬▬▬▬🌐🌐▬▬▬▬
লেখক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলিল
fb/AbdullaahilHadi
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার। KSA

মাহে রামাযান: অসংখ্য কল্যাণের হাতছানি

মাহে রামাযান: অসংখ্য কল্যাণের হাতছানি
▬▬▬▬🌐💡💡🌐▬▬▬▬
খর তপ্ত জমিন। মানুষ-জন, পশু-পাখি, গাছ-পালা, তৃণ-লতা সব কিছু একপশলা বৃষ্টির জন্য হাহাকার করছে। হঠাৎ আকাশ জুড়ে শুরু হল মেঘের আনাগোনা। মুশলধারে বৃষ্টি বর্ষণ হল। প্রাণে প্রাণে জাগল জীবনের স্পন্দন। আবার কলকাকলিতে ভরে উঠল পৃথিবী।
মাহে রমাযানের উদাহরণ অনেকটা এমনই। পৃথিবী যখন পাপ-পঙ্গিলতায় ভারি হয়ে উঠে। গুমোট অস্থিরতায় সমগ্র পৃথিবী কাঁপতে থাকে। ঠিক এমন সময় আল্লাহ তায়ালা মাহে রমাযানকে উপহার হিসেবে দেন বিশ্ববাসীর নিকট। যেন তারা তাদের পেছনে ফেলে আসা পাপরাশীকে সিয়াম, কিয়াম ও অন্যান্য নেকী অর্জনের মাধ্যমে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে নিতে পারে। আল্লাহর অশেষ রহমতের বারি ধারায় সিক্ত হয়ে শুরু করতে পারে নতুন ভাবে পথ চলা।
প্রিয় ভাই ও বোন, এই রমাযান আমাদের মাঝে সমাগত। নিঃসন্দেহে রমাযান মুসলিমদের জন্য এক বিরাট কল্যাণের মাস।
- এ মাসে মুসলিমদের জন্য রোযা পালন করা ফরয।
- এ রোযা ইসলামের ৫টি রোকন (স্তম্ভ) এর মধ্যে অন্যতম।
- আল্লাহ তাআলা এ মাসে মানব জাতির পথ প্রদর্শনের জন্য মহা গ্রন্থ আল কুরআনুল কারীম অবতীর্ণ করেছেন।
- এ মাসে রয়েছে এমন একটি রাত যা এক হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। আর তা হল, রমাযানের শেষ দশকের কদরের রাত বা শবে কদর।
- কুরআন-সুন্নায় এ মাসের মর্যাদা এবং এতে ইবাদত-বন্দেগী করার ব্যাপারে অনেক আলোচনা এসেছে।
তাই আসুন, আমরা রামাযানের যথাযথ আদব রক্ষা করে সিয়াম সাধনা করে আল্লাহ তায়ালার নিকট গুনাহ-খাতা মোচন করিয়ে নেই এবং সেই সাথে দু হাত ভরে উপার্জনের চেষ্টা করি পরকালের পাথেয়। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমীন।
---------------------
লেখক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলিল
fb/AbdullaahilHadi
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার। KSA

 

বিশ্বব্যাপী একসাথে রোযা শুরু এবং একসাথে ঈদ পালন: কতটুকু সঠিক?

 

বিশ্বব্যাপী একসাথে রোযা শুরু এবং একসাথে ঈদ পালন: কতটুকু সঠিক?
▬▬▬▬◆◈◆ ▬▬▬▬
প্রশ্ন : মতোবিরোধপূর্ণ মাসায়েলের ক্ষেত্রে কি যে কোনো একটা মানলেই হবে? যেমন: পৃথিবীর যে কোনো এক স্থানে চাঁদ দেখার উপর ভিত্তি করে সারাবিশ্বে এক দিনে রোযা শুরু করা বা ঈদ পালন করা কিংবা এলাকা ভিত্তিক চাঁদ দেখার উপর ভিত্তি করে এসব ইবাদত করা। এ বিষয়ে সবার পক্ষেই হাদিস সহিহ সনদে বর্ণিত। তাহলে এ ক্ষেত্রে যেকোনো এক ভাবে করলেই কি যথেষ্ট হবে?
উত্তর:
বর্তমানে সারা বিশ্বে একই সাথে রোযা ও ঈদ পালনের বিষয়ে মুসলিমদের মাঝে মতভেদ ব্যাপকতা লাভ করেছে। হচ্ছে যথেষ্ট বিশৃঙ্খলা-যা কোনভাবেই কাম্য নয়।
তবে এ মর্মে কথা হল, ইতিহাস সাক্ষী, কোন কালেই সারা বিশ্বে একই দিন রোযা বা ঈদ পালিত হয় নি। এটা সম্ভব নয়। বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী কুরআন-সুন্নাহর মাধ্যমেও তা প্রমাণিত নয়।
১৪০১ হিজরী সালে মক্কা মুকাররমায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে OIC এর আল ফিকহ একাডেমি এবং সৌদি সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদ সারা বিশ্বে একসাথে সিয়াম ও ঈদ পালনকে শরিয়ত, আকল, যুক্তি সব দিক দিয়ে অসম্ভব বলে মত প্রকাশ করেছে।
এ মর্মে আরও পড়ুন:
💠 প্রশ্ন: পৃথিবীতে মুসলমানরা সকলে একই দিনে রোযা রাখা, ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা পালন করার ব্যাপারে একতাবদ্ধ নয় কেন?
💠 উত্তর:
ডাঃ জাকির নায়েক বলেন, এই ব্যাপারে আলিমদের মধ্যে মতভেদ আছে। একদল বলেন, সারা বিশ্বের মুসলমানদের মক্কার সময় অনুসরণ করা উচিত। অন্য দলের আলেমগণ বলেন, এই সময়টি বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় সময়ে হওয়া উচিৎ।
আল্লাহ কুরআনে ইরশাদ করেছেন,
“রমযান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর।" [বাকারা আয়াত ১৮৫]
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "“তোমরা যখন নতুন চাঁদ দেখ তখন রোযা রাখ এবং নতুন চাঁদ দেখলে রোযা ভেঙ্গে ফেল।" [বুখারী, হাদিস নং ১৯০৭ ও ১৯০৯]
সুতরাং এই হাদিসটির উপর ভিত্তি করে ইবনে তাইমিয়া (রহ) বলেন যে, সারা বিশ্বের সব জায়গা থেকে একই দিনে রমজানের চাঁদ দেখা অসম্ভব। সুতরাং মক্কার সময়টি সারা বিশ্বে একযোগে অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
"মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, “ঐ দিন রোযা আরম্ভ হবে যেদিন সকলে রোযা রাখবে, রোযা ভাঙ্গতে হবে ঐ দিন যেদিন সবাই রোযা ভাঙ্গে আর কুরবানি করতে হবে ঐ দিন যে দিন সকলে কুরবানি করে।" [তিরমিযী, হাদিস নং ৬৯৭]
কুরআনে বলা হয়েছে যে, “আর পানাহার কর যতক্ষণ না কাল রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিষ্কার দেখা যায়। অতঃপর রোযা পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত"
[বাকারাঃ ১৮৭]
কিন্তু সূর্যোদয় সারা বিশ্বে একই সময়ে হয় না বরং একেক দেশে একেক সময়ে হয়। সুতরাং রোযা পালনে স্থানীয় সময় অনুসরণ করতে হবে।
উৎস: সামহোয়্যার ব্লগ