Wednesday, April 28, 2021

ইসলামী পদ্ধতিতে রাত্রিযাপন !!

 

ইসলামী পদ্ধতিতে রাত্রিযাপন !!
____________________________________________
____________________________________________
.
মুমিনের সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহর জন্য নিবেদিত। তাঁর প্রতিটি মুহূর্ত অতিবাহিত হবে আল্লাহর স্মরণে, আল্লাহর বিধান পালনের মাধ্যমে। যেভাবে ইসলাম ঈমানদারের দিন অতিবাহিত করার নিয়ম শিক্ষা দিয়েছে, অনুরূপ রাত্রিযাপনেরও আদব-শিষ্টাচার শিক্ষা দিয়েছে।
রাত আল্লাহর সৃষ্টির নিদর্শন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি রাত ও দিনকে নিদর্শনস্বরূপ সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা : বনি ইসরাইল, আয়াত : ১২)
.
অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তিনি রাতকে মানুষের প্রশান্তির উপায় হিসেবে সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৯৬)
.
∆ সন্ধ্যাকালীন কাজ:
যখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসবে, শিশুদের ঘরে ঢুকিয়ে নেবে এবং ‘বিসমিল্লাহ’ বলে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেবে। রাসুল (সা.) বলেন, “যখন রাতের আঁধার নেমে আসবে, তখন তোমরা তোমাদের শিশুদের আটকে রাখবে, কেননা এ সময় শয়তানরা ছড়িয়ে পড়ে। আর যখন রাতের কিছু অংশ অতিক্রান্ত হবে, তখন তাদের ছাড়তে পারো। তোমরা ঘরের দরজা বন্ধ করবে এবং এ সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলবে, কেননা শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারে না।” (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৩০৪)
.
∆ এশার নামাজের আগে ঘুমাবে না:
এশার নামাজের আগে ঘুমানো ইসলামের দৃষ্টিতে অপছন্দনীয় কাজ। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) এশার আগে ঘুমাতে নিষেধ করেছেন। আর তিনি এশার পর না ঘুমিয়ে গল্পগুজব করা পছন্দ করতেন না। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৯৯)
.
∆ এশার পরে অপ্রয়োজনে রাত্রি জাগরণ করবে না :
মহানবী (সা.) এশার নামাজের পর গল্পগুজব ও গভীর রাত পর্যন্ত অযথা জেগে থাকা অপছন্দ করতেন। তবে দ্বীনি শিক্ষা দিতে তিনি কখনো কখনো রাত জাগতেন। মুসলমানদের সম্পর্কে কল্যাণকর পরামর্শের জন্য অনেক সময় রাতে তিনি আবু বকর (রা.)-এর বাসায় যেতেন। (তাহাবি শরিফ, হাদিস : ৭২০৩)
.
হজরত আয়েশা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, আমি রাসুল (সা.)-কে কখনো এশার আগে ঘুমাতে ও এশার পর গল্পগুজব করতে দেখিনি। এশার পর হয়তো জিকিরে মশগুল থাকতেন, নয়তো ঘুমিয়ে পড়তেন। এর দ্বারা সব অপ্রয়োজনীয় কাজ থেকে মুক্ত থাকা যায়। আয়েশা (রা.) বলেন, তিন ধরনের মানুষের জন্য রাত জাগার অনুমতি রয়েছে : বিয়ের রাতে নবদম্পতি, মুসাফির ও নফল নামাজ আদায়কারী। (মুসনাদে আবি ইয়ালা, হাদিস : ৪৮৭৯)
.
∆ ঘুমানোর আগের প্রয়োজনীয় কাজ:
একটি হাদিসে ঘুমানোর আগে সতর্কতাস্বরূপ প্রয়োজনীয় কয়েকটি কাজের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা রাতে পানাহারের পাত্রগুলো ঢেকে রেখো। ঘরের দরজাগুলো বন্ধ রেখো। আর সাঁঝের বেলায় তোমাদের বাচ্চাদের ঘরে আটকে রেখো, কারণ এ সময় জিনেরা ছড়িয়ে পড়ে এবং কোনো কিছুকে দ্রুত পাকড়াও করে। নিদ্রাকালে বাতিগুলো নিভিয়ে দেবে। কেননা অনেক সময় ছোট ক্ষতিকারক ইঁদুর প্রজ্বলিত সলতেযুক্ত বাতি টেনে নিয়ে যায় এবং গৃহবাসীকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৩১৬)
.
∆ শোয়ার জায়গায় সতর্কতা :
একাকী ঘরে রাত যাপনেরর ব্যাপারে হাদিসে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নবী করিম (সা.) কোনো ঘরে একাকী রাতযাপন ও একাকী সফর করতে নিষেধ করেছেন।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৫৬৫০)
.
অনুরূপ ছাদে শোবে না। নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি বেষ্টনীবিহীন ছাদে রাতে ঘুমাল, (কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে) তার সম্পর্কে (আল্লাহর) কোনো জিম্মাদারি নেই।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৪১)
.
∆ পবিত্রতা অর্জন:
রাতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র হয়ে শোয়া সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যদি কোনো মুসলমান রাতে আল্লাহকে স্মরণ করে অজু শেষে শয়ন করে এবং রাতে জাগ্রত হয়ে দুনিয়া ও আখিরাতের কোনো কল্যাণ আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাআলা তা দান করেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৪২)
.
তাই ঘুমানোর আগে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নেবে, যাতে খাবারের কোনো কিছু লেগে না থাকে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘শয়তান ঘ্রাণ নিতে খুবই দক্ষ ও লোভী। তোমরা নিজেদের ব্যাপারে শয়তান থেকে সতর্ক হও। কোনো ব্যক্তি খাদ্যের চর্বি ইত্যাদির ঘ্রাণ হাত থেকে দূর না করে রাত যাপন করলে এবং এতে তার কোনো ক্ষতি হলে সে এ জন্য নিজেকেই যেন তিরস্কার করে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৮৫৯)
.
∆ শয্যা গ্রহণের কিছু আদব:
• শয্যা গ্রহণের আগে বিছানা ঝেড়ে নেওয়া উচিত। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যদি তোমাদের কেউ শয্যায় যায়, তখন সে যেন তার লুঙ্গির দ্বারা বিছানাটা ঝেড়ে নেয়। কারণ সে জানে না যে বিছানার ওপর তার অনুপস্থিতিতে পীড়াদায়ক কোনো কিছু আছে কি না। তারপর এ দোয়া পড়বে—হে আমার রব! আপনারই নামে আমার শরীরটা বিছানায় রাখলাম এবং আপনারই নামে আবার উঠব।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৩২০)
.
• চোখে বেজোড় সংখ্যায় সুরমা লাগানো সুন্নত।
.
• ডান কাতে শয়ন করা সুন্নত।
.
• শয়নকালে দোয়া পড়া সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি শয়নের পর আল্লাহর নাম নেয় না, তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে বঞ্চনা নেমে আসবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৫৬)
.
হাদিস শরিফে ঘুমানোর আগে কয়েকটি দোয়া বর্ণিত হয়েছে। সবগুলো দোয়া পড়তে না পারলে ছোট এ দোয়াটি পড়া যায় : ‘আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহ্ইয়া’—অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! তোমার নামে আমি শয়ন করছি এবং তোমারই দয়ায় আমি পুনর্জাগ্রত হব।’
.
• সুরা এখলাস ও নাস-ফালাক পড়ে শরীরে ফুঁ দেওয়া সুন্নত। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতি রাতে যখন বিছানায় যেতেন, তখন দুই হাত একত্রিত করে তাতে সুরা এখলাছ, ফালাক ও নাস পড়ে ফুঁক দিতেন। অতঃপর মাথা ও চেহারা থেকে শুরু করে যত দূর সম্ভব দেহে তিনবার দুই হাত বুলাতেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৫০১৭)
.
• আয়াতুল কুরসি পাঠ করা সুন্নত : রাসুল (সা.) বলেন, “তুমি যখন শয্যা গ্রহণ করবে, তখন ‘আয়াতুল কুরসি’ পড়বে। তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বদা তোমার জন্য একজন রক্ষক থাকবে এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার কাছে আসতে পারবে না।” (বুখারি, হাদিস : ২৩১১)
.
‌‌∆ রাত্রিকালীন কিছু কুসংস্কার ও অহেতুক বিশ্বাস:
ইসলামপূর্ব আরবে অনেক ধরনের কুসংস্কার ও অহেতুক বিশ্বাস প্রচলিত ছিল। রাসুলুল্লাহ (সা.) কোরআন-সুন্নাহর শিক্ষার মাধ্যমে সমাজ থেকে সব কুসংস্কার দূর করেন। আরবরা গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজে বের হওয়ার আগে পাখি উড়াত, পাখিটি উড়ে ডান দিকে গেলে যাত্রা শুভ মনে করত, আর বাঁ দিকে গেলে অশুভ মনে করত। কারো বাড়িতে প্যাঁচা বসলে মনে করত গৃহবাসীদের নিকটতম কারো মৃত্যু হবে অথবা ঘর বিরান হয়ে যাবে। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘এসব কুলক্ষণের কোনো বাস্তবতা নেই।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৭০৭)
.
ইসলামী জ্ঞানের অভাবে আমাদের সমাজেও নানা কুসংস্কার ছড়িয়ে আছে। অনেক এলাকায়ই রাতকেন্দ্রিক কিছু অহেতুক বিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে। নিচে এর কিছু উদাহরণ দেওয়া হলো,
.
• রাতে নখ, চুল, দাঁড়ি, গোফ ইত্যাদি কাটতে নেই।
• রাতে আয়না দেখতে নেই।
• ঘরের ময়লা পানি রাতে বাইরে ফেললে সংসারে অমঙ্গল হয়।
• রাতে বাঁশ কাটা যাবে না।
• রাতে ফল পাড়া ও গাছের পাতা ছেঁড়া যাবে না।
• রাতে কাউকে সুইসুতা দিতে নেই।
• রাতে কোনো কিছুর লেনদেন করা ভালো নয়।
• রাতের বেলা কালোজিরার ভর্তা খেলে মায়ের জানাজা পায় না।
• খালি ঘরে সন্ধ্যায় বাতি দিতে হয়, না হলে বিপদ আসে।
• রাতে কাক বা কুকুর ডাকলে বিপদ আসে।
• রাতে প্যাঁচার ডাককে বিপদ সংকেত মনে করে।
.
এ ছাড়া এলাকাভেদে আরো অনেক কুসংস্কারের প্রচলন রয়েছে। এসব মনগড়া কথা, ইসলামে এর কোনো ভিত্তি নেই। একজন মুসলমানের কাজ হলো, সব ধরনের কুসংস্কার বাদ দিয়ে সব ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলার ওপর দৃঢ় ঈমান ও সুদৃঢ় আস্থা রাখবে। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমার উম্মতের ৭০ হাজার লোক বিনা হিসেবেই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তারা হবে এমন লোক, যারা শরিয়তে নিষিদ্ধ ঝাড়ফুঁকের আশ্রয় নেয় না, কোনো বস্তুর শুভ-অশুভ মানে না। একমাত্র প্রতিপালকের ওপরই ভরসা রাখে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪৭২)
লেখাঃ সাইদ মুকসিত

ঘুম যদি না আসে!

 

ঘুম যদি না আসে!
দিনভর পরিশ্রমের শেষে আমরা বিছানায় আশ্রয় খুঁজে ফিরি৷ বালিশে মাথা রেখে ঝেড়ে ফেলতে চাই সকল ক্লান্তি, সারদিনের শ্রান্তি এবং যাবতীয় ক্লেদ৷ এবং ঘুম এমনই এক লিটমাস পেপার যা ক্ষার শুষে নেবার মতো করে শরীর থেকে টেনে বের করে নেয় যাবতীয় ক্লান্তি৷ ঘুম হলো শান্তির আলয়৷ যেখানে আশ্রয় নিলে আপনার দেহ-মনে ফিরে আসবে প্রশান্তি৷ আপনি হারানো কর্মোদ্দীপনা নতুন করে ফিরে পাবেন ঘুমের জগতে৷ রাব্বে কারীম বলেছেন— আমি তোমাদের নিদ্রাকে করেছি ক্লান্তি দূরকারী৷
(সূরা নাবা)
কিন্তু তার জন্য ঘুমটা তো জরুরী৷ যদি আপনার চোখে ঘুমই নেমে না আসে! চোখ বুজে রইলেন সারারাত৷ কিন্তু ঘুমের শীতল জগতে প্রবেশই করতে পারলেন না! তবে! এমন হলে শরীরের অবসাদ দূর হবে কী উপায়ে? শরীরে হারানো এনার্জি ফিরে পেতে ঘুম তো আসতে হবে!
চিকিৎসকেরা বলেন— মানুষের জটিল সব রোগের সূত্রপাত ঠিকমতো এবং পরিমিত ঘুম না হওয়া থেকে৷ মানুষের সুস্থতার জন্য যতটুকু ঘুম দরকার সেটা না হওয়ার কারণে কঠিন সব ব্যাধির সূচনা হয়ে থাকে৷
সত্যিই তাই৷ আমরা আজ এমন দৌড়ঝাপে মেতে উঠেছি সময় করে ঘুমোনো ভুলে গেছি৷ দিনভর অর্জিত সব উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা-দুশ্চিন্তা মাথায় পুরে নিয়ে বিছানায় যখন যাই চোখে ঘুম নামে না আর৷ অস্থির পার হয়ে যায় আমাদের নির্ঘুম রাত৷ আর আমাদের এতসব অস্থিরতা-উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার পেছনের কারণ সন্ধানে নামলে দেখবেন একটি বড় কারণ— আমাদের ভেতরে লুকিয়ে রাখা হিংসা৷ অপরের প্রতি বিদ্বেষ৷ এবং আমাদের ঈর্ষাপরায়ণতা৷ নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাই সহজেই চোখে ঘুম নেমে আসার প্রেসক্রিপশন দিচ্ছেন ঘুমোতে যাবার আগে সব ঈর্ষা-হিংসা-দ্বেষ মন থেকে ঝেড়ে ফেলা৷
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর খাদেম হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলছেন—
হে বৎস! তুমি যদি সকাল-সন্ধ্যা এমনভাবে কাটাতে পার যে, তোমার অন্তরে কারো প্রতি কোন রকম বিদ্বেষ নেই, তাহলে তাই কর।
এ কথা বলার পর নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে আবার বলছেন—
হে বৎস! এটা হল আমার সুন্নত। আর যে ব্যক্তি আমার সুন্নতকে জীবিত করল সে আমাকেই ভাল বাসল, আর যে ব্যক্তি আমাকে ভালবাসল সে তো জান্নাতে আমার সাথেই থাকবে।
(তিরমিযী)
এ হাদীসকে সামনে রেখে উলামায়ে কেরাম বলেছেন— হিংসামুক্ত রাত্রি যাপন করলে রাতের ঘুম হবে আরামদায়ক৷ তা ছাড়া এটা তো সবাই স্বীকার করবে যে— কারুর প্রতি হিংসা বিদ্বেষ যে হৃদয়ে থাকে না সে হৃদয়ের মতো প্রশান্ত হয় না আর কোনো হৃদয়৷ আর নিরবচ্ছিন্ন ঘুম তো প্রশান্ত হৃদয়বানের চোখেই নেমে আসে৷
ঘুম আসতে যদি বিলম্ব হয়; যদি এমন হয় যে, অনেকটা সময় বিছানায় গড়াগড়ি করে কেটে যাচ্ছে কিন্তু তারপরও চোখে ঘুম নেমে আসছে না তখন আমরা কী করবো! এমতাবস্থার একটি চিকিৎসা আমার নবিজীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জীবনে পাই৷
গল্পটি বিখ্যাত সাহাবী খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর৷ একবার তিনি নবিজীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে এসে জানালেন যে, দুশ্চিন্তা ও স্নায়ুবিক চাপের কারণে রাতে তার ঘুম হয় না৷ তখন নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে একটি দুয়াবাক্য শিখিয়ে দিলেন৷ আর বললেন— যখন ঘুমোনোর জন্য বিছানায় যাবে তখন দুয়াটি পাঠ করবে৷
দুয়া বাক্যটি হলো—
اللَّهُمَّ رَبَّ السَّمَاوَاتِ السَّبْعِ وَمَا أَظَلَّتْ، وَرَبَّ الْأَرَضِينَ وَمَا أَقَلَّتْ، وَرَبَّ الشَّيَاطِينِ وَمَا أَضَلَّتْ، كُنْ لِي جَارًا مِنْ شَرِّ خَلْقِكَ كُلِّهِمْ جَمِيعًا ؛ أَنْ يَفْرُطَ عَلَيَّ أَحَدٌ مِنْهُمْ، أَوْ أَنْ يَبْغِيَ، عَزَّ جَارُكَ، وَجَلَّ ثَنَاؤُكَ، وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ، وَلَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ
উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মা রাব্বিস সামা ওয়াতিসসাব'ই ওয়া মা আজাল্লাত৷ ওয়া রাব্বাল আরাদীনা ওয়া মা আক্বাল্লাত৷ ওয়া রাব্বাশ শায়াত্বীনা ওয়া মা আদ্বাল্লাত৷ কুন লী জারান মিন শাররি খালকিকা কুল্লিহিম জামিআ' আয় য়াফরুতা আলাইয়া আহাদুম মিনহুম আও আয় য়াবগিয়া৷ আজ্জা যা রুক৷ ওয়া জাল্লা ছানাউক৷ ওয়ালা ইলাহা গইরুক৷ ওয়ালা ইলাহা ইল্লা আনতা৷
তরজমা:
হে আল্লাহ্‌! সাত আকাশের প্রতিপালক এবং যা কিছুর উপর তা ছায়া বিস্তার করেছে, সাত যমিনের প্রতিপালক এবং যা কিছু তা উত্থাপন করেছে, আর শাইতানদের প্রতিপালক এবং এরা যাদেরকে বিপথগামী করেছে! তুমি আমাকে তোমার সকল সৃষ্টিকুলের খারাবী হতে রক্ষার জন্য আমার প্রতিবেশী হয়ে যাও, যাতে সেগুলোর কোনটি আমার উপর বাড়াবাড়ি করতে না পারে অথবা আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে না পারে। সম্মানিত তোমার প্রতিবেশী, সুমহান তোমার প্রশংসা। তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তুমি ব্যতীত আর কোন মাবূদ নেই।
(তিরমিযী)
চোখবুজে আছেন অনেক সময়৷ কিন্তু ঘুম আসছেই না৷ এমন রোগ নিয়ে মনোবিজ্ঞানিদের কাছে গেলে তারা আপনাকে চিকিৎসা হিসাবে একটা কাজ দেবে৷ তারা বলবে— ঘুম না এলে চোখ বন্ধ করে সংখ্যা কাউন্ট করতে৷ অনেকে অনেক পদ্ধতিতে সংখ্যা গণনা করার পরামর্শ আপনাকে দেবে৷ এবং আপনি দেখবেন যে, সংখ্যা গুনতে গুনতে কখন যেন আপনি ঘুমের কোলে ঢলে পড়েছেন৷
আসলে এখানে বিষয়টা কিন্তু সংখ্যার নয়৷ মনোচিকিৎসকেরা আপনার সাথে একটা মাইন্ডগেম খেলেন৷ তারা জানে যে আপনার ঘুম আসতে বিলম্ব হওয়ার কারণ— আপনার মানসিক অস্থিরতা৷ আপনার অস্থির মনে স্থীরতা আনার জন্য তারা সংখ্যার সাহায্য নিতে বলেন৷ যখন আপনি সংখ্যা গুনতে থাকেন কোনো অভিনব পদ্ধতিতে, যেমন একশ থেকে উল্টো দিকে এক পর্যন্ত গুনে আসা, তখন কিন্তু আপনার মনোযোগ সংখ্যার দিকে রাখতে হয়৷ যে কারণে মনের অস্থিরতা ভুলে আপনি আপনার মনকে স্থির করেন সংখ্যা গণনার প্রতি৷ যার ফলে অস্থিরতার কথা আপনার মনে আর থাকে না৷ ফলশ্রুতিতে ঘুম নেমে আসে আপনার ক্লান্ত চোখে৷
সংখ্যা গণনার বিকল্প হিসাবে আমি আপনাকে বলবো তাসবিহ পাঠ করার কথা৷ এ ক্ষেত্রে আপনি একটি পদ্ধতি ফলো করতে পারেন৷ সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার৷ তিনটিকে উল্টে পাল্টে আওড়াতে থাকেন৷ এতে করে আপনার অস্থির মন তাসবিহ পাঠের প্রতি মনযোগী হয়ে উঠবে৷ আর চোখে নেমে আসবে রাজ্যের ঘুম৷
তা ছাড়া তাসবিহ কিন্তু অন্তরে প্রশান্তি এনে দেয়৷ আল্লাহ তায়ালা নিজে বলেছেন— জেনে রাখো! আল্লাহর জিকির দ্বারা অন্তর প্রশান্ত হয়৷
(আল কুরআন)
সুতরাং মনের অস্থিরতা দূর করতে, হৃদয়কে প্রশান্ত করতে আল্লাহ তায়ালার জিকিরের আশ্রয় নেয়াটাই আমাদের জন্য অধিক কল্যাণকর নয় কি!
আল্লাহ তায়ালা আমাদের অন্তরের সকল অস্থিরতা দূর করে দিন৷ আমাদের ঘুমকে করে দিন আমাদের জন্য প্রশান্তিদায়ক৷ ক্লান্তি নিবারক৷