Thursday, May 13, 2021

শয়তান যাদুকর/কবিরাজ প্রসঙ্গে সবকিছু একসাথে

শয়তান যাদুকর/কবিরাজ প্রসঙ্গে সবকিছু একসাথে

 

 

  1. রুকইয়াহ শিরকিয়্যাহ
  2. যাদুকরের হাজিরা দেখা, আপনাদের বিভ্রান্তি
  3. ঝাড়ফুঁক জায়েজ তাই তাবিজও জায়েজ?
  4. কুফরি কাটাতে কুফরি করা লাগবে?
  5. যেসব মুত্তাকী ব্যক্তি বাতিল কবিরাজি করেন...
  6. ফেরেশতা হাজির করার আমল নাকি শয়তান পুঁজা?
  7. জিনদের সাহায্য নেয়া যাবে কি?
  8. রুকয়াইয়হ vs কবিরাজি

 

 

রুকইয়াহ শিরকিয়্যাহ!

----------
আজকাল কবিরাজ নামের ভণ্ড যাদুকররাও বলছে "রুকইয়া করি"
শয়তানি আগেরগুলোই আছে, শুধু নাম দিচ্ছে রুকইয়া!
গতকাল একজনের খবর পেলাম উনাকে বলেছে রুকইয়া করবে, পরে- উনার নাম আর মায়ের নাম জিজ্ঞেস করেছে। মায়ের নাম জিজ্ঞেস করার কারন হচ্ছে, শয়তানী যাদু করবে তাই কবিরাজরা বাপের পরিচয় স্বীকার করতে চায় না।
এক ফেসবুক পেইজে দেখলাম রুকইয়া করার নামে প্রেমভালবাসার তাবিজ বিক্রি চলছে!! রিলেশন ব্রেকআপ হওয়া ছেলেমেয়েরা ভিড় জমাচ্ছে কুফরি করার জন্য।
কিন্তু এই কুফরি করছে রুকইয়ার নাম দিয়ে।
হ্যাঁ! এসব (শাব্দিক অর্থে) রুকইয়া তো বটে! কিন্তু সেটা হল জাহেলী জামানার কুফরি-শিরকি রুকইয়াহ!
সহজ ট্রিক শিখিয়ে দেই, যে লোক তাবিজ লেখবে, তাবিজ ভেঙে ওর সামনে গিয়ে খুলবেন, জিজ্ঞেস করবেন - পড়েন কি লেখেছেন, এই তাবিজে কয়জন শয়তানের নামের যিকর করছেন বলেন।
শয়তান পূজারি যাদুকর চেনার সহজ উপায় হচ্ছে, চিকিৎসা করতে গেলে আপনার কাপড় চাইবে, অথবা আপনার কোন অংশ (যেমন চুল চাইবে)। আর আপনার নাম এবং মায়ের নাম জিজ্ঞেস করবে।

 

 

যাদুকরের হাজিরা দেখা, আপনাদের বিভ্রান্তি

যাদুর একটা ধরন হচ্ছে শয়তান ও যাদুকরের মাঝে এক ধরনের চুক্তি, যেখানে শর্ত থাকে যে যাদুকর কতিপয় হারাম বা শিরকী কাজে লিপ্ত হবে, আর বিনিময়ে শয়তান তাকে সহযোগিতা করবে ও তার অনুসরণ করবে। শয়তানের নিকটবর্তী হওয়ার জন্য যাদুকরেরা ঘৃণ্য কিছু উপায় অবলম্বন করে। যেমনঃ
  • কুরআনের আয়াত উল্টো করে লিখা, 
  • কুরআন পায়ের নিচে দলিত করে টয়লেটে নিয়ে যাওয়া বা নোংরা কিছু দিয়ে কোরআনের আয়াত লিখা, 
  • সর্বদা নাপাক থাকা বা বিনা অযুতে সালাত আদায় করা, 
  • শয়তানের উদ্দেশ্যে পশু জবাই করে জবাইকৃত পশু শয়তানের নির্ধারিত স্থানে অর্পণ করা, ইত্যাদি। 
  • অনেকে আবার মাহরাম (আপনজন, যাদের সাথে বিয়ে হারাম) এমন মানুষের সাথে জিনা করা বা সংখ্যাতাত্ত্বিক চিহ্ন ব্যবহার করে ছক কেটে নক্সা এঁকে শয়তানের উপাসনা করে থাকে।
অর্থাৎ, যে যাদুকর যত বেশি কুফরিতে লিপ্ত হতে পারবে, শয়তান তাকে ততবেশি সাহায্য করবে।
আমাদের দেশে আমরা হরহামেশাই বিভিন্ন হুজুর, তান্ত্রিক সাধু, বা জ্যোতিষীর দেখা পাই যারা দাবি করে যে মুখ দেখেই আপনার অতীত বর্তমান ভবিষ্যত বলে দেবে। মূলত তারা এসব করে নিজেদের অনুগত শয়তান জীনের সাহায্যে আপনার ক্বারীন জ্বীনের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে। ক্বারিন অর্থ হচ্ছে সংগী, প্রত্যেক মানুষের সাথেই শয়তান জ্বীন লেগে থাকে, সংগী হিসেবে। এরা সবসময় মানুষের অন্তরে খারাপ চিন্তা ঢুকিয়ে দিয়ে পাপ কাজ করতে উৎসাহিত করে।
তো যা বলছিলাম...
কিছুদিন আগে এক ভাই/বোন গ্রুপে এই ছবিটা পোস্ট করেছিলেন। এটাচমেন্টে দেখেন।
 
No photo description available.
 
ওনার ভাষ্যমতে স্বপ্নের মাধ্যমে কোন এক ওয়ালী (আল্লাহর প্রিয় বান্দা) নাকি এই মহিলাকে গায়েবী ক্ষমতা দান করেছেন, সেই ওয়ালির সাহায্যেই এই মহিলা হাজিরা দেখা আর মানুষের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের কাজ করেন।প্রকৃত পক্ষে এই গায়েবী ওয়ালি এক শয়তান জ্বীন, অন্য কিছু নয়। আর হাজিরা বা উপস্থিতিও জ্বীনের, অর্থাৎ জ্বীন উপস্থিত হয়ে তাকে অদৃশ্যের খবর বলে যায়।
ওয়াক্তিয়া নামাজের পর এই মহিলা জায়নামাজের সামনে দু-পাশে দুটি মোম বাতি জ্বালান, মাঝখানে একগ্লাস পানি রাখেন, আর আগর বাতির ধোয়া ছড়ান.. এরপর উনি জায়নামাজে বসে মনে মনে ওয়ালিআল্লাহ'কে স্মরণ করলে ওয়ালীআল্লাহ নাকি উনার সামনে আসেন এবং ওয়ালিআল্লাহ মহিলার মাধ্যমে রোগীর নাম, পিতা-মাতার নাম, কি সমস্যা (রোগ) ইত্যাদি জিজ্ঞেস করেন। তারপর রোগীকে বলে দেন যে রোগী অমুক অমুক জায়গায় গিয়েছে, আর অমুক জায়গায় তাকে জ্বীন আক্রমণ করেছে।
সবশেষে সিজদা করে উঠে সামনে রাখা গ্লাসের পানি রোগীকে পান করতে বলেন, মাথায় ঝাড়ফুঁক করেন আর তাবিজ লিখে দেন। তারপর বলেন ওয়ালিআল্লাহর দরবার জিয়ারত করে আসতে। সাধারণত এই দরবার মানে কোন একটা মাজার বা দরগাহ হয়।
ঠিক একই রকম ঘটনা কিছুক্ষণ আগে আমি আমার এক আত্নীয়ের কাছ থেকে শুনলাম। তাঁর এক কাজিনের প্রেগন্যান্সির শুরুর দিকে ডাক্তারি পরীক্ষায় কিছুই ধরা পড়ছিল না, কিন্তু সব লক্ষণ দেখে মনে হচ্ছিল যে সে প্রেগন্যান্ট। তো এমনই এক বয়স্ক মহিলা ছিল পরিচিত, যার সাথে জ্বীন আছে বলেই সবাই জানতো। এই মহিলাকে বলার পর তিনি মাগরিবের নামাজের পর জায়নামাজে থেকেই কিছু দোয়া দরুদ পড়লেন, সামনে যথারীতি আগরবাতি/মোমবাতি আর গ্লাস ভর্তি পানি ছিল। যেহেতু পূর্ব পরিচয় ছিল, সেহেতু আর তিনি রোগীর নামধাম বা সমস্যার বিবরণ জানতে চান নি। কিছুক্ষণ পর সিজদা করে উঠে রোগীকে পানি খেতে বললেন আর জানিয়ে দিলেন সে আসলেই প্রেগন্যান্ট, তাঁর সাথের জ্বীন তাকে বলেছে। সাথে কিছু ঝাড়ফুঁক করে দিলেন, তবে তাবিজ দিয়েছিলেন কিনা তা আর সেই আত্নীয়া মনে করতে পারেন নি।তবে এই বয়স্ক মহিলা ছিলেন নিঃসন্তান।
চিত্তাকর্ষক বর্ণনা, তাই না?
এবারে ব্যাখ্যায় আসি। এই দু’জন মহিলাই স্রেফ শয়তানের পূজারি যাদুকর। তারা শয়তানকে সিজদা করেছেন, আগুন/ধোঁয়ার মাধ্যমে যাদুর নিয়মকানুন পালন করেছেন। বিনিময়ে শয়তান তাঁদেরকে গোপন তথ্য দিয়ে সাহায্য করেছে। আর শয়তানের এই তাঁবেদারি জঘন্যতম শিরক।
তবে মজা দেখতে চাইলে এরপর যখনই এমন কারো ওপর ‘আল্লাহর ওলী’ (?) ভর করবে, তখন আপনার কানে আঙুল দিয়ে জোরে আজান দিবেন। এরপর দেইখেন সার্কাস 😛
মনে প্রশ্ন আসছে না? কেন সেই মহিলা নিঃসন্তান ছিলেন? এর উত্তর দিতে হলে একটু পেছনে যেতে হবে। সাধারণত যাদুকর এবং জ্বীনের গোত্র প্রধানের মধ্যে এই মর্মে চুক্তি হয় যে, যাদুকরের কিছু প্রকাশ্য কুফরি বা শিরকী কাজের বিনিময়ে জ্বীনের গোত্র প্রধান তাকে নিজে সাহায্য করবে, বা কোন এক জ্বীনকে যাদুকরের কার্যসিদ্ধির জন্য নিযুক্ত করে দিবে। তো, এই প্রতিনিধি জ্বীন যদি কখনো আনুগত্য না করে, তাহলে যাদুকরের অভিযোগের প্রেক্ষিতে জ্বীনের গোত্র প্রধান তাকে শাস্তিও দিয়ে থাকে। এই শাস্তি অনেক সময় প্রতিনিধি জ্বীনের ক্রোধের কারণ হয়ে যায়, আর ক্রোধের কারণে জ্বীন যাদুকরের সন্তান সন্ততি ও সম্পদের ক্ষতির কারণ হয়ে যায়। যাদুকরকে জ্বীন অনেক কষ্টও দিয়ে থাকে, আর সাধারণত যাদুকরের সন্তানও হয় না, কারণ জ্বীন মাতৃগর্ভের শিশুকে মেরে ফেলে। এজন্য দেখবেন অনেক যাদুকর সন্তানের আশায় যাদু করা থেকে সাময়িকভাবে বিরত থাকে।
“কেন জ্বীনরা কবিরাজদের ক্ষতি করে” তাঁর একটা কারণ রয়েছে এখানে।
আল্লাহ্‌ আমাদের এসব শিরক - কুফর থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দিন, আমীন।

 

 

ঝাড়ফুঁক জায়েজ তাই তাবিজও জায়েজ?

---------
কুফরি তাবিজের ব্যাপারে বলতে লাগলেই আমাদের যেসব ভাইয়েরা ঝাড়ফুঁকের কথা টেনে ওটাকে জায়েজ করার চেষ্টা করেন। তাদেরকে আমি সচরাচর কিছু প্রশ্ন করে থাকি-
ঝাড়ফুঁকের ব্যাপারে সহীহ মুসলিমে যাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রা. এর সাফ হাদিস আছে, রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে ঝাড়ফুঁক নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন। এরপর যাচাই করার পর শর্তসাপেক্ষে অনুমতি দিয়েছেন।
আমার প্রশ্ন হচ্ছে,
১. আজকাল যেসব "২৪৬৮ ৭৬৮ ৫৮০ ইয়া ফিরাউন ইয়া জিবরাইল" তাবিজ আমাদের হুজুররা লেখে। এসব তাবিজের ব্যাপারে রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবে অনুমতি দিয়েছেন?
২. আপনারা শর্ত সাপেক্ষে তাবিজ জায়েজ বলেন - ভালো কথা। তো তাবিজ জায়েজ হওয়ার শর্তের সাথে মিলে এরকম তাবিজ জীবনে কয়টা দেখেছেন?
৩. যেসব তাবিজের চর্চা হয়, এর শতকরা ৯৯.৯৯% আপনাদের ফাতওয়ার হিসেবেই হারাম কুফর। এরপরেও এই ফিতনার ব্যাপারে আপনারা নিশ্চুপ কেন? ফিতনার দরজা বন্ধ করা না ওয়াজিব?
৪. গাইরে মাহরামের সাথে অহেতুক চ্যাট করা, পত্রালাপ করা, ফোনে কথা বলা - এটার হুরমত তো নফসান বা ক্বাত'আন না, তবুও আলেমরা এটা নিষিদ্ধ বলেন কেন? কারণ এটা হচ্ছে হারাম কাজে পৌঁছানোর রাস্তা, শুরুতেই ফিতনার দরজার বন্ধ না করলে এটা যিনা পর্যন্ত পৌছাবে। সবাই তো আর যিনা করে না, তবুও ফোনে প্রেম করা হারাম বলেন কেন? কারণ এটা হারাম পর্যন্ত পৌঁছানোর মাধ্যম। খুতুওয়াতিশ শাইত্বান।
তাবিজের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা, আপনি প্রথমে না থামালে তাঁরা কুফরি-শিরকি তাবিজে পৌঁছাবে। আর এমনটাই হচ্ছে আমাদের সমাজে।
৫. এক মাযহাব মানা আবশ্যক বলেন, কারণ সাধারণ মানুষকে ইচ্ছামত মাযহাব মানতে দিলে তাঁরা ফিতনার জন্ম দিবে। আওয়ামরা উসুল বুঝবে না, একেক মাজহাবের সব সহজ বিষয় নিয়ে ধর্মকে জগাখিচুড়ী বানাবে। তা ভাই আপনার তাবিজের উসুলগুলা কজন আওয়াম বুঝে? তাদেরকে যে ফিতনার রাস্তায় ছেড়ে দিচ্ছেন, এরপর যখন সে স্বয়ং শয়তানের লেখা তাবিজ নিবে, তখন এর দায় আপনি নিবেন? দোষ তো আপনার! ফিতনার দরজা খালি মাজহাবের সময়েই বন্ধ করেছেন, তাবিজের সময় আরও রাস্তা দেখাইছেন।
রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঝাড়ফুঁকের ক্ষেত্রেও বলেছেন- "তোমাদের ঝাড়ফুঁক করার মন্ত্র আমাকে দেখাও, যদি শিরক না থাকে সমস্যা নাই" (মুসলিম)
তখনও কুফরি শিরকির প্রচলন ছিল বিধায় ঝাড়ফুঁকের ক্ষেত্রে রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাচাই করে তারপর অনুমতি দিয়েছেন আমভাবে দেননি। সাহাবায়ে কিরাম সুরা ফাতিহা দিয়ে রুকইয়াহ করেও নিশ্চিত হননি, রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে জিজ্ঞেস করেছেন- কাজটা ঠিক হয়েছে তো?
আমার প্রশ্ন হচ্ছে,
৬. আপনারা তাবিজ নিলে কি সেটা যাচাই করেন? উম্মতকে কখনও বলেন যাচাই করার কথা? নাকি উল্টা পরামর্শ দেন "সমস্যা হইছে? কবিরাজের কাছে যান!"
৭. শেষ প্রশ্ন, আপনারাও তো কবিরাজদের কাছে যান। তাবিজ নেন। জীবনে কয়টা তাবিজ ভেঙ্গে দেখেছেন এটা জায়েজ নাকি নাজায়েজ?
অথচ আল্লাহ তা'আলা বলেছেন -
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن جَاءَكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَإٍ فَتَبَيَّنُوا
হে ইমানদাররা! কোন পাপাচারী ব্যক্তি যখন তোমাদের কাছে কোন সংবাদ নিয়ে আসে তখন সেটা যাচাই কর। ভেরিফাই কর। (সুরা হুজুরাত-৬)
তাবিজের ব্যাপারে আমার দর্শন উস্তায মুহাম্মাদ তিম হাম্বলের অনুরূপ।
আমি বলব, তাবিজ পাইলে সবার আগে ভাঙবেন! দেখবেন ভেতরের লেখাটা কি খালি কোরআনের আয়াত, নাকি সাথে প্রাইমারির ২৪৬৮ নামতা লেখা আছে? খালি কোরআন আঁকা আছে, নাকি সাথে যাদুকরদের নকশাও আছে? খালি আল্লাহর যিকর আছে, নাকি চিপা দিয়ে ফেরাউন শয়তানের যিকরও আছে। যদি কোন সমস্যা না পান, অস্পষ্ট কিছু না থাকে। তখন আপনার সিদ্ধান্তে ছেড়ে দিলাম সেটা যা ইচ্ছা করতে পারেন।
আল্লাহ যেন আমাদের হিদায়াত দেয়।

 

কুফরি কাটাতে কুফরি করা লাগবে?

-------------------
বহুল প্রচলিত জঘন্য আকিদাগুলোর মাঝে এটা একটা। নিঃসন্দেহে এটা কোরআন বিরোধী আকিদা, বাস্তবতা পরিপন্থী আকিদা, মুর্খতাসুলভ কুফরি আকিদা। আমি কাউকে তাকফির করছি না, কিন্তু বাস্তবেই এটা ইসলাম বিরোধী বাতিল আকিদা।
কোরআন এর কথা হচ্ছে – “মন্দ প্রতিরোধ সেটা দিয়েই করুন, যা উত্তম। তারা যা বলে, আমি সে বিষয়ে সবিশেষ অবগত। আর বলুনঃ হে আমার পালনকর্তা! আমি শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আর হে আমার রব! তাদের উপস্থিতি থেকেও আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি।” [মুমিনুন, ৯৬-৯৮]
সুতরাং আপনি যদি শয়তানি যাদুতে আক্রান্ত হন, তবে আপনার কাজ হবে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া। রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কিরামও যাদুতে আক্রান্ত হয়েছে। তাঁরা তো আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়েছেন, শয়তানের কাছে না। সুরা ফালাকের মাঝে আল্লাহ আমাদের সেটাই শিখিয়েছেন।
"আর (আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি) গিরায় ফুঁ দিয়ে জাদুকারিনীদের অনিষ্ট থেকে" [আয়াত ৪]
আর বাস্তবতা এটাই, ঈমান আসবে; কুফর চলে যাবে। হক আসবে; বাতিল চলে যাবে। কোরআনের এই আয়াতটা তো সবার মুখস্ত -
وَقُلْ جَاءَ الْحَقُّ وَزَهَقَ الْبَاطِلُ ۚ إِنَّ الْبَاطِلَ كَانَ زَهُوقًا
"বলুন, সত্য এসেছে; মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল।"
এর পরের আয়াতটা কি জানেন?
وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاءٌ وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ ۙ وَلَا يَزِيدُ الظَّالِمِينَ إِلَّا خَسَارًا
“আমি কোরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত, গোনাহগারদের তো এতে শুধু ক্ষতিই বৃদ্ধি পায়..। [বানি ইসরাইল, ৮১-৮২]
সুতরাং যদি ক্ষতি থেকে বাঁচতে চান আর আল্লাহর রহমত আশা করেন, তবে কুফর থেকে দূরে থাকেন, এবং কোরআন দিয়ে রুকইয়াহ করেন।
আল্লাহ আমাদেরকে জানার, বুঝার এবং মানার তাওফিক দিক, আমিন!

 

মুত্তাকী / আলেম ব্যক্তি যারা কবিরাজি করেন, তাদের ব্যাপারে কি বলব?

--------------------------
যাদুটোনা ব্যবহার করা কবিরাজ চেনার কিছু পদ্ধতি বলা হয়েছিল। যথাঃ

  • আপনার কাপড় চাইবে
    আপনার কোন অংশ (যেমন চুল চাইবে)
    আপনার নাম এবং মায়ের নাম জিজ্ঞেস করবে।

এটা দেখার পর অনেকে প্রশ্ন করছেন, অনেক আলেম মানুষও তো এরকম করেন। তাদের ব্যাপারে কি বলব?
কেউ বলছেন - অমুক বড় মাদরাসা থেকে ইফতা পড়া মুফতি সাহেব এভাবে এভাবে করেন, তার ব্যাপারে কি বলব?
তাবিজ নিয়ে কথা বলতে গেলেও এরকম মন্তব্য শোনা যায়, খুব পরিচিত একজন মুত্তাকী আলেম আছেন, যিনি সংখ্যা দিয়ে তাবিজ লেখেন, এবং টাকাও নেন না। তাকে আমি কিভাবে ভুল বলব?
প্রিয় ভাই! এখানে কয়েকটা পয়েন্ট মাথায় ঢুকিয়ে নিলে আশা করি ব্যাপারটা সহজ হয়ে যাবে-
১. 'রুকইয়া শারইয়্যাহ এবং শিরকিয়্যাহ' একটা স্বতন্ত্র বিষয়। এই বিষয়ে ক্লাস নিতে চাইলে, ৪ মাসের এক সেমিস্টার পুরোটা ক্লাস নিয়েও আলোচনা শেষ করা মুশকিল।
২. একজন ব্যক্তি মুহাদ্দিস সাহেব অথবা মুফতি সাহেব হতে পারেন, কিন্তু তার মানেই উনি তাবিজ-কবচ বিষয়ে খুব গভীর ধারণা রাখবেন এমন তো না। উনি মাদরাসায় পড়েছেন ফিকহে ইসলামি অথবা উলুমে হাদিস বিষয়ে, বদনা চালান দেয়া তো দারুল ইফতায় শিখেননি।
৩. “উনি কাওমি মাদরাসায় পড়েছেন, উনি যে তাবিজ লেখেন!” – এর উত্তরে আমি বলি “দুঃখিত ভাই! কাওমি মাদরাসায় তাবিজ লেখা শিখানো হয় না। এটা উনি অন্য কোথাও শিখেছেন।”
৪. বাস্তবতা হচ্ছে, যারা এসব করেন, তাদের খুবই কম সংখ্যক এসবের গভীর জ্ঞান রাখেন। হয়তো একটা বই পেয়েছে কোন দোকানে বা ফুটপাথে, পড়ার পর আগ্রহ জন্মেছে। ব্যস! শুরু করে দিয়েছেন। এজন্যই আমরা অহরহ দেখি “বশ করার তাবিজ (পড়ুন যাদু) করতে গিয়ে ভুল করেছিল, এখন পাগল হয়ে গেছে, কিংবা মারাত্মক অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছে।”
৫. গভীর জ্ঞান না রাখা একটা কারণ, দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে- এব্যাপারে বিজ্ঞ আলেমদের মতামত জানতে না চাওয়া, তাদের শরণাপন্ন না হওয়া।
৬. তৃতীয় কারণ হচ্ছে, এব্যাপারে শরিয়ত সমর্থিত পদ্ধতির প্রচলন না থাকা। যার কারণে, লোকেরা ধীরে ধীরে কুফরি যাদুটোনা আর তাবিজের প্রতি ঝুঁকে পড়েছে।
স্মরণ করুন, আলী রা. এর প্রসিদ্ধ উক্তি -
"আহলে হক যখন চুপ থাকে, তখন আহলে বাতিল ধারণা করে, তারাই হক!"

 

 

ফেরেশতা হাজির করার আমল? নাকি শয়তান পুঁজা?

------------------
[ক]
আল্লাহ তা'আলা শিরকের ব্যাপারে অনেক কঠোর। স্বাভাবিক! একজন মানুষই তো তার ভালোবাসা, তার প্রভাব প্রতিপত্তিতে অন্যের ভাগ বসানো পছন্দ করবে না, আর আল্লাহর সুবহানাহু তা'আলা তো রাজাধিরাজ। আমাদের কল্পনাও যার নাগাল পেতে অক্ষম, কিভাবে সেই রাব্বুল আলামিনের ব্যপারে অংশিদারিত্ব সহ্য করা যায়?
“নিশ্চয় শিরক বিরাট বড় জুলুম” [সুরা লুকমান:১২]
[খ]
শিরকের ক্ষেত্রে এজন্য আল্লাহ তা’আলার শাস্তি অনেক ভয়াবহ। “নিশ্চয় যে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না। এছাড়া যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করে দেন।” [সুরা নিসা:১১৬]
আমরা জানি ঈসা আ.কে যখন মানুষেরা কিয়ামত দিবসে আল্লাহর নিকট সুপারিশের জন্য বলবে, তিনি চিন্তাগ্রস্ত থাকবেন। কারণ, মানুষ তার সাথে আল্লাহকে সাজদা করেছিল। মুর্তিপুজারিদের সাথে মুর্তিও জাহান্নামে পুড়ানো হবে মর্মে কোথাও পড়েছিলাম।
মোটকথা, আল্লাহ শিরকের ব্যাপারে কোন ছাড় দিবেন না।
[গ]
আমরা সেদিন একটি তাবিজের পোস্টমর্টেম দেখলাম, যেখানে সুরা ইখালাসের সাথে শিরক মিশিয়ে ভয়াবহতম শিরক করা হয়েছে। আচ্ছা সেসব কবিরাজ বা যাদুকররা “ইয়া জিবরাইল ইয়া মিকাইল” তাবিজ লেখে, তারাও তো শিরক করছে। তাইনা? ফিরিশতাদের সাথে শিরক। নিজে তো করছে, অন্যকেও শিরকি কালাম বিতরণ করছে!
মূলতঃ শয়তানকে সন্তষ্ট করার জন্য তাঁরা ফেরেশতাদের নাম নিয়ে আল্লাহর সাথে শিরক করে। কোন এক শয়তানি কবিরাজির বইয়ে সুরা ইখলাসের ওঁই শিরকি এডিশন লিখা ছিল, এরপর কিছু নিয়মকানুন বলা ছিল। এভাবে এভাবে এত হাজার বার লিখবেন পড়বেন এতদিন, এরপর “তিনজন মক্কেল আসবে আপনার খেদমতে!!!”
এই তিনজনের মধ্যে একজনের ব্যাপারে লিখেছে – সে বলবে আমার নাম আব্দুর রহমান, "সুরা ইখলাস পাঠ করিয়া আমাকে ডাকিলে" আমি হাজির হইব। আমি আপনাকে “বহুবিধ জ্ঞান ও আশ্চর্য বিদ্যা” শিক্ষা দিব। এরপর তাহারা সিজদা করিতে বলিলে আল্লাহর নামে সিজদা করিবে!
এবার আমি ব্যাখ্যা করি শোনেন – “সুরা ইখলাসের সাথে কয়েক হাজার বার জঘন্যভাবে শিরক মিশ্রিত করে বড় শয়তান সন্তুষ্ট করতে পারলে, সে তিনটা চামচা পাঠাবে। এই তিনজনের মধ্যে এক শয়তান এসে যাদু শিখাবে, আর এসব স্যাটানিক রিচ্যুয়াল পালন শেষে এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে, যখন শয়তানকে সিজদা করতে হবে।”
এই কবিরাজদেরকেই মানুষ বিরাট বুজুর্গ মনে করে, তাই না?
[ঘ]
দেখুন আমাদের প্রভু আল্লাহ তা'আলা কি বলছেন -
“যেদিন তাদের সবাইকে একত্রিত করবেন এবং ফেরেশতাদেরকে বলবেন, এরা কি তোমাদেরই পূজা করত? ফেরেশতারা বলবে, আপনি পবিত্র, আমরা আপনার পক্ষে, তাদের পক্ষে নই, বরং তারা জিনদের পূজা করত। তাদের অধিকাংশই শয়তানে বিশ্বাসী।” [সুরা সাবা:৪০-৪১]

 

জিনদের সাহায্য নেয়া যাবে কি?

----------
[ক]
অনেক কবিরাজ আছে, যারা জিনদের সাহায্য নিয়ে চিকিৎসা করে। আর শোনা যায় এসব কবিরাজদেরই ডিমান্ড বেশি!
বেশ কয়েক বছর আগের কথা, এক নিকটাত্মীয়ার চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন যায়গায় খোঁজ করছিলাম, তখন রুকইয়াহ বিষয়ে কোন ধারণা ছিল না। কক্সবাজারের এক কবিরাজের খবর পেলাম, যে নাকি জিন দিয়ে চিকিৎসা করে। উনি ১০০টাকা নিলেন আর 'রুগীর এবং মায়ের নাম' নিয়ে টেস্ট করে বলেছিলেন - ২০ হাজার টাকা লাগবে!
আমাকে যে লোক খোঁজ দিয়েছিল তাঁকে বললাম, উনি এত চাচ্ছেন কেন? উত্তরটা ছিল লিখে রাখার মত - "আসলে এই হুজুরের সিস্টেমই এরকম। উনাকে জিনেরা বলেছে, আপনি যত বেশি টাকা নিবেন, ততবেশি উপকার হবে!!"
কবিরাজদের এক গ্রুপ আছে, যারা নিজের নামের শেষ "শাজলী" যোগ করে। ওরা বলে "সাহাবি জিন" নাকি ওদের খেদমত করে। (কোন ফাইজলামি এটা আল্লাহই জানে)
হাসবেন না প্লিজ.. এসব ভন্ডদের পিছেই মানুষ বেশি দৌড়ায়।
তো আমাকে জিনদের সাহায্য নেয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করলে বলি - "ভাই আমিতো মুফতি না, তাই ফাতওয়া দিতে পারছি না। তবে আমার জানামতে জিনদের সাহায্য চাওয়া কখনও শুধু হারাম, কখনও এর সাথে শিরক, কখনও কুফর। এটা কিভাবে সাহায্য চাইছে, কিভাবে সাহায্য করছে এর ওপর নির্ভর করে।"
.
[খ]
আজ চলুন কিছু চলুন দলিল দেখা যাক। হাদিসে এব্যাপারে কি আছে আমার জানা নাই, তবে কোরআনুল কারিমে দুইটা আয়াত পেয়েছি।
প্রথম আয়াটি সবাই জানেন, সুরা জিনে আল্লাহ বলছেন -
وَأَنَّهُ كَانَ رِجَالٌ مِّنَ الْإِنسِ يَعُوذُونَ بِرِجَالٍ مِّنَ الْجِنِّ فَزَادُوهُمْ رَهَقًا
অনেক মানুষ অনেক জিনের আশ্রয় নিত, ফলে তাঁরা জিনদের অহংকার বাড়িয়ে দিত। (সুরা জিন, আয়াত ৬)
 
এই আয়াতের আলোকে আলেমরা বলেন "জিনদের সাহায্য চাওয়া হারাম"। তবে স্বাভাবিকভাবেই শয়তান/জিনরা তো হুদাই আপনার কাজ করবে না। শয়তান বা জিনদের থেকে ফায়দা নিতে হলে, তাদের কথা অনুযায়ী স্যাটানিক রিচ্যুয়াল পালন করতে হয়, সেক্রিফাইস করতে হয়, আল্লাহর নামে না করে তাঁদের নামে পশু জবাই করতে হয়। ইত্যাদি ইত্যাদি।
আপনারা হয়তো অনেক কবিরাজকে দেখে থাকবেন, যারা বলে- গরু লাগবে, মুরগি লাগবে, ছাগল লাগবে। তাঁদের অনেকে নিজে এসব শয়তানের নামে বলি দেয়, আর অনেকে বলে “জবাই করার পর রক্তটা আমাকে দিয়েন।" তাঁরা এই রক্ত শয়তানের উপাসনায় ব্যবহার করে। যাদুবিদ্যায় বিভিন্ন মৃত প্রাণীর রক্ত ব্যবহার করা খুবই কমন ব্যাপার।
ওহ! আরেকটা কথা! আমরা শুনে থাকি, জিনেরা কবিরাজদের বিভিন্ন ক্ষতি করেছে। এটা করার বড় একটা কারণ হচ্ছে, এই বুঝাপড়ায় সমস্যা হওয়া। অর্থাৎ শয়তানের মর্জি মাফিক ইবাদত বা অর্চনা করতে পারেনি, সেক্রিফাইস করে শয়তানদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি। ব্যাস! দেয় প্যাদানি!
.
[গ]
কোন কোন আলেম বলেন- "কোন কুফর শিরক ছাড়া, স্রেফ আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মানুষের খিদমাতের জন্য যদি কোন জিন সাহায্য করে। তবে নাকি জায়েজ হবে।"
এর জবাব হচ্ছে-
১। এসব বিষয়ে যাদের অভিজ্ঞতা আছে তারা ভালোভাবেই জানেন, জিনেরা প্রচণ্ড মিথ্যাবাদী আর ধোকাবাজ হয়। অতএব, আপনি যাকে পূণ্যবান জিন ভাবছেন, হতে পারে সে আসলে একটা শয়তান। আপনাকে কৌশলে ফিতনায় ফেলছে।
২। আমাদের চিকিৎসার জন্য কোরআন আছে। সুন্নাহস্মত রুকইয়াহ আছে। কেন আমরা সুন্নাহ ছেড়ে সন্দেহজনক বিষয়ে পতিত হব?
৩। আর আওয়ামুন নাস যেহেতু পেছনের খবর জানে না, তাঁদেরকে মুসতাগিস মিনাল জিনের কাছে পাঠানো মানে হচ্ছে "নিজ হাতে ফিতনার দরজা খুলে দেয়া।"
সুতরাং তাঁদের জন্য নিরাপদ হচ্ছে এসব সন্দেহজনক বিষয় থেকে দূরে থাকা, আর সুন্নাহসম্মত রুকইয়াহ করা।
.
[ঘ]
এবার আমি আপনাদের একটা ঝাটকা দেই! দেখুন এসব কবিরাজদের ব্যাপারে কোরআনে কি আছে -
 
وَيَوْمَ يَحْشُرُهُمْ جَمِيعًا يَا مَعْشَرَ الْجِنِّ قَدِ اسْتَكْثَرْتُم مِّنَ الْإِنسِ ۖ وَقَالَ أَوْلِيَاؤُهُم مِّنَ الْإِنسِ رَبَّنَا اسْتَمْتَعَ بَعْضُنَا بِبَعْضٍ وَبَلَغْنَا أَجَلَنَا الَّذِي أَجَّلْتَ لَنَا ۚ قَالَ النَّارُ مَثْوَاكُمْ خَالِدِينَ فِيهَا إِلَّا مَا شَاءَ اللَّهُ ۗ إِنَّ رَبَّكَ حَكِيمٌ عَلِيم.
 
যেদিন আল্লাহ সবাইকে একত্রিত করবেন, হে জিন সম্প্রদায়, তোমরা মানুষের মাঝে অনেককে তোমাদের অনুগামী করে নিয়েছ। মানুষদের মাঝে তাঁদের বন্ধুরা বলবেঃ হে আমাদের পালনকর্তা, "আমরা পরস্পরে পরস্পরের মাধ্যমে উপকার লাভ করেছি।" আর এখন আপনি আমাদের জন্যে যে সময় নির্ধারণ করেছিলেন, আমরা তাতে উপনীত হয়েছি।
তখন তাঁদের বলা হবে “আগুন হল তোমাদের বাসস্থান। সেখানে তোমরা চিরকাল অবস্থান করবে; আর আল্লাহ যেমন চাইবে..।” নিশ্চয় আপনার পালনকর্তা প্রজ্ঞাময়, মহাজ্ঞানী। (সুরা আন’আম, আয়াত ১২৮)

 

 

রুকইয়াহ vs কবিরাজি

অনেকের ধারনা রুকইয়াহ এবং কবিরাজি একই। গ্রুপ এডমিনদের প্রতিও ধারনা তারা কবিরাজি করেন। রুকইয়াহ সম্পর্কে যার ন্যূণতম জ্ঞান আছে, সে অন্তত এই ধারণা করবে না। সাধারন মানুষ কবিরাজের কাছে যায়, কিছু টাকা দেয় বা না দেয়; কবিরাজ বলে হয়ে যাবে। কিন্তু কিভাবে হবে সেটা আর বলে না। ভয়ে তাকে জিজ্ঞেসও করা যায় না। এত্তবড় কবিরাজ/হুজুর। জিজ্ঞেস করলে যদি আবার আমার কোন ক্ষতি হয়! ইমাম সাহেব উনি, উনি খতিব, উনি মুফতি সাহেব! উনি কি আর ভুল কিছু করবেন?
কাজেই আমরা যখন "বদনজর, জ্বিন, যাদুর" ব্যাপারে কথা বলতে যাই তখন স্বাভাবিক ইম্প্রেশনে মানুষ কবিরাজ/হুজুরই মনে করে। কারন তারা ভাবে কবিরাজ/হুজুররা কুরআন দিয়েই চিকিৎসা করে। আমরাও সে কথাই বলি। কেউ খতিয়ে দেখার কথা ভাবে না যে, তলে তলে কি হচ্ছে।
এই কারনে কুফরী করা, শিরক করা, ভণ্ড কবিরাজ/হুজুর চেনা জরুরী।
লন্ডনের এক বিখ্যাত রাক্বি (যিনি রুকইয়াহ করেন) কবিরাজ/হুজুর চেনার কিছু উপায় বলেছিলেন। আপনাদের জন্য সেখান থেকে তুলে দেয়া হলঃ
১. যদি জিজ্ঞেস করে আপনার মায়ের নাম কি,বাবার নাম কি, দাদার নাম কি, বংশ পরিচয় জানতে চায়-ইত্যাদি।
২. যদি বলে আপনার কাপড়ের অংশ লাগবে/আন্ডারগার্মেন্টেসের অংশ লাগবে/ চুল লাগবে/ দাড়ি লাগবে/কানের দুলটা/গলার চেইনটা লাগবে/হাতের চুড়ি লাগবে।
৩. যদি সে বলে "একগ্লাস পানি আনেন। আর একটা ছুড়ি আনেন। এবার গ্লাসের পানিতে ছুড়ি চালান।" আপনি চালাবেন আর আপনার মনে হবে আপনি ছুড়ি পানিতে না গোশতের মধ্যে চালাচ্ছেন।
৪. যদি সে আপনার বাসায় আসে, বসে পড়ে এদিক সেদিক তাকায় আর কি যেন বিড়বিড় করে। সুন্দর সুন্দর কথা বলে কিন্তু সেগুলো কুরআনের আয়াত নয়, হাদীসের দোয়াও নয়।
৫. যদি এমন বলে (সাধারনত মেয়েদের বলে) যে, আপনি যদি সুস্থ হতে চান তাহলে "এই জিনিস"টা আমাকে আপনার গোপন অঙ্গে ঘষতে হবে। যদি সুস্থ হত চান তাহলে আপনার এই এই অঙ্গ আমাকে ধরতে হবে/ আপনাকে উলঙ্গ হতে হবে -ইত্যাদি ইত্যাদি। (নাউজুবিল্লাহ)
৬. যদি বলে যে, এক বোতল পানি আনেন। বোতলটা টেবিলের উপর/ওয়ারড্রোবের উপর রাখুন। অথবা বলে যে, বোতলের মুখ খুলে হাতে রাখুন। আমি যখন বলব তখন সাথে সাথে মুখ লাগিয়ে দিবেন।
৭. যদি বলে যে, এই নেন এই তাবিজটা/কবচটা গলায়/হাতে/কোমড়ে পড়েন। কারণ প্রায় ৯৯% তাবিজেই শিরক, কুফর বিদ্যমান। 
৮. যদি বলে, চোখ বন্ধ করুন। কিছু একটা দেখতে পাবেন। যখন দেখতে পাবেন তখনই ধরে ফেলবেন। অথবা বলবে যখনই দেখবেন তখনই দু'হাতে মশা মারার মত করে মারবেন।
৯. আপনারা হয়তো অনেক কবিরাজকে দেখে থাকবেন, যারা বলে গরু লাগবে, মুরগি লাগবে, ছাগল লাগবে তাহলে আপনার কাজ হবে। তাদের অনেকে নিজে এসব শয়তানের নামে বলি দেয়, আর অনেকে বলে “জবাই করার পর রক্তটা দিবেন।" তাঁরা এই রক্ত শয়তানের উপাসনায় ব্যবহার করে। যাদুবিদ্যায় বিভিন্ন মৃত প্রাণীর রক্ত ব্যবহার করা খুবই কমন ব্যাপার।
বাংলাদেশের কবিরাজ/হুজুররা আরও কিছু কাজ করে থাকে যেমনঃ
১। কাপড় মাপে, কাপড় ছোট বড় করে দেখায়। একই ভাবে হাত মেপে হাত ছোট বড় দেখায়।
২। মুখে দেখেই অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের কথা বলে এবং কিছু কিছু মিলেও যায়।
৩। জ্যোতিষিদের মত হাত দেখে।
৪। কোন কিছু পুতে রাখার জন্য বলে।
৫। জ্বিন বোতলে বন্দি করে রেখেছে, জ্বিনকে অমুক জায়গায় পাঠিয়ে দিয়েছে, জ্বিন রক্তে মিশে গেছে -এই জাতীয় উদ্ভট কথা বলে।
৬। কবিরাজদের একদল নিজের নামের শেষ "শাজলী" যোগ করে। ওরা বলে "সাহাবি জিন" নাকি ওদের খেদমত করে।
৭। সাত ঘাটের পানি লাগবে, অমুক জায়গায় মাটি লাগবে ইত্যাদি অর্থহীন কাজ করবে।
৮। অন্য জনের উপর জ্বিন হাজির করে তাকে দিয়ে কথা বলাবে ।
৯। শনিবারে যেতে হবে, মঙ্গলবার যেতে হবে, মাগরিবের পর যেতে হবে -ইত্যাদি অনর্থক শর্ত আরোপ করবে।
১০। নির্দিষ্ট জিনিস খাওয়া নিষেধ করতে পারেন। যেমন,কলা খাওয়া নিষেধ, গোশত খাওয়া যাবে যাবে না- খেলে ওষুধ কাজ করবে না। অন্যকোন ওষুধ খাওয়া যাবে না -ইত্যাদি বলতে পারে।
১১। তুলা রাশির লোক লাগবে -এসব বলতে পারে।
কাজেই যারা আমাদের সম্পর্কে এমন গর্হিত ধারনা পোষন করেন তাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে আমরা এই ধরনের কথা বলে থাকি, এই ধরনের কাজ করি থাকি, তার প্রমান দিবেন। আর যদি প্রমান দিতে না পারেন তবে তওবা করে নিজের ধারনা সংশোধন করে নিবেন।
কবিরাজির বাস্তবতা সম্পর্কে কয়েকটা কথা বলি।
১) এদের কাছে গেলে আপনার সমস্যার সমাধান হবে না বরং আপনি জটিল থেকে জটিলতর সমস্যায় আক্রান্ত হবেন। অনেক মানুষ আছেন যার হয়ত সামান্য একটা সমস্যা ছিল। কিন্তু নানান কবিরাজের কাছে দৌড়াতে দৌড়াতে সেই সামান্য সমস্যাকে ভয়াবহ আকারে নিয়ে গিয়েছেন।
২) মেম্বাররা প্রায়ই বলেন, অমুক কবিরাজের কাছে গিয়েছিলাম, তাবিজ দিয়েছিল, এরপর এক মাস ভাল ছিলাম। এরপর আবার এই সমস্যা, ঐ সমস্যা শুরু হয়েছে। আসল কথা হল, শয়তানের একটা কাজ করে দিয়েছেন আপনি তাই একমাস আপনাকে বিরক্ত করেনি। একমাস পরে আবার শয়তানি করবে যেন আমি আবার নতুন করে কোন শয়তানি কুফরীতে লিপ্ত হন। প্রতিবার বড় থেকে বড় গোনাহে আপনি লিপ্ত হয়ে যাবেন। ক্ষুধার্থ কুকুরের মত। মাংস দিবেন, পেট ভরবে, চুপ থাকবে। হজম হয়ে গেলেই আবার ঘেঊ ঘেউ শুরু করবে।
৩) কবিরাজের/হুজুরের দেয়া তাবিজ কিছুদিন পর পর হারিয়ে যায়। ঘটনা একই আপনাকে আবার তাবিজ/টোটকা নিতে হবে। আবারও কোন গোনাহ করতে দিতে হবে।
৪) কেউ কেউ বলে জ্বিন নাকি নিজেই খেদমত করে। ডাহা মিথ্যে কথা। প্রথম দিকে হয়ত ছোট ছোট সমস্যার ব্যাপারে সহায়তা করে আপনার বিশ্বস্ততা অর্জন করতে চাইবে। পরে আপনাকে ঈমানহারা করে ফেলবে। আর পাশাপাশি ভয়ভীতি দেখাবে। আপনিও দেখবেন অমুক কাজ হয়েছে, তমুক কাজ হয়েছে এখন কথা না শুনলে না জানি আমার কি ক্ষতি করে। আমার ফ্যামিলির কি ক্ষতি করে! এ এক ভয়াবহ দুষ্টচক্র।
৫) ঈমানের ন্যুনতম নূর যার অন্তরে আছে তার কাছে কুফরী করা, শিরক করা কবিরাজ/হুজুর/যাদুকরের কাছে গেলেই মনেহবে "আমি ভুল কিছু করলাম নাতো"। মনে অশান্তি, খচখচানি থাকবে সারাজীবন।
অথচ রুকইয়াহ! কুরআনী চিকিৎসা, হাদিসের দোয়া নির্ভর চিকিৎসা। গোপনীয় কোন কিছু নেই। এমন না আমরা গ্রুপে এককথা বলি আর ইনবক্সে অন্য কথা বলি। যারা আমাদের ইনবক্স করেছেন তারা ভাল করেই জানেন কি অবস্থা। এখনো মনে হয় একেক জন্য এডমিনের ৩-৪ শ' মেসেজ রিকুয়েস্ট ঝুলে আছে।
এগুলো ঝুলেই থাকবে।
আপনি নিজেই করেন নিজের চিকিৎসা। কারও কাছে যেতে হবে না। আপনার জ্বিন সংক্রান্ত সমস্যা হলে আপনার বাবা, মা, ভাই, বোন, যেকাউকে (যার কুরআন তেলাওয়াত শুদ্ধ আছে) বলেন আপনাকে রুকইয়াহ করতে। চার আনা পয়সাও আপনাকে খরচ করতে হবে না। রুকইয়াহ ইনডেক্সে (bit.ly/ruqyahindex) সবই আছে। তবুও যদি আমাদের পরামর্শ চান তাহলে গ্রুপে ( facebook.com/groups/ruqyahbd ) তে পোস্ট করেন। একটা পয়সাও আমাদের দিতে হবে না। শুধু একটু ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে।
এরপরও যারা "বিচার মানি তালগাছ আমার" টাইপ তাদের জন্য আল্লাহর কাছে দু'আ। আল্লাহ যেন তাদের হেদায়াত দান করেন।
কবিরাজ/হুজুরদের সম্পর্কে আরও কিছু লেখা রুকইয়াহ ইন্ডেক্সে পাবেন। আগ্রহ থাকলে পড়ে দেখতে পারেন। ইন্ডেক্সের লিংকতো আগেই দিয়েছি। যারা জানেন না রুকইয়াহ কি তারাও ইন্ডেক্সে যান।

 

No comments:

Post a Comment