Thursday, April 29, 2021

আমার মা'কে কেন বিশ্বসুন্দরী করা হয়না?

 

আমার বয়স তখন দশ বা এগারো। আবুধাবীতে হুলস্থুল শোরগোল পড়ে গেল। প্রথমবারের মত টেলিভিশনে বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতা সম্প্রচারিত হবে। আমি বুঝিনা কিছুই। কিন্তু সবাই লাফায় তাই আমিও লাফাতে লাগলাম। বাসায় গিয়ে বাবাকে বললাম বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতা দেখব।

অনুষ্ঠান শুরু হবার আগে বাবাকে কানে কানে জিজ্ঞেস করে নিলাম এটি কিসের প্রতিযোগিতা, কাউকে বুঝতে দেয়া যাবেনা আমি এ’ব্যাপারে মহামূর্খ। বাবা বলল, “এই প্রতিযোগিতা হল সৌন্দর্যের প্রতিযোগিতা। পৃথিবীর নানান দেশ থেকে সবচেয়ে সুন্দরী মহিলাদের নির্বাচন করে এখানে নিয়ে আসা হয় এদের মধ্যে কে সবচেয়ে সুন্দর নির্ধারন করার জন্য”। আমি বসে রইলাম দেখার জন্য না জানি এরা কোন স্বর্গের অপ্সরী!

কড়া মিউজিক আর বর্ণাঢ্য আলোকমালার ঝলকানির মাঝে শুরু হয়ে গেল সুন্দরী প্রতিযোগিতা। প্রথমেই সব সুন্দরীদের জড়ো করা হল স্টেজে। তাদের দেখে আমি বিশাল এক ধাক্কা খেলাম। বাংলাদেশের গলি ঘুপচিতে এর চেয়ে অনেক সুন্দরী মেয়ে আছে। আমার মাকে দেখেই তো দেশবিদেশের সবাই মা’র সৌন্দর্যের প্রশংসা করত, জিজ্ঞেস করত মা’র বিবাহযোগ্য বোন আছে কি’না, কার্ড উপহার দিত। বাবাকে বললাম, “এদের চাইতে মাকে বিশ্বসুন্দরী করা হলে ভালো হত”। বাবা হা হা হো হো হাসতে লাগল। আমি বিরক্ত হয়ে উঠে গেলাম।

তখন বুঝিনি কিন্তু একটা পর্যায়ে এসে বুঝলাম এই বিশ্বসুন্দরী নির্বাচন একটা ভূয়া কন্সেপ্ট। প্রত্যেক মানুষের কাছে তার মা পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী মহিলা এবং তার বাবা এই বিশ্বের সবচেয়ে হ্যান্ডসাম পুরুষ তা তারা দেখতে যেমনই হন না কেন। কোন শিশুকে কি বলতে শুনেছেন, “আমার বাবা সুন্দর না, আমি এখন থেকে টম ক্রুজকে বাবা ডাকব” বা “আমার মা সুন্দরী নন, আমি এখন থেকে ঐশ্বর্য রাইকে মা ডাকব”? তাহলে কিসের ভিত্তিতে একজন মানুষকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মানুষ হিসেবে নির্বাচন করা সম্ভব যেখানে পৃথিবীর সব মানুষ এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেনি বা তাদের সাথে সংশ্লিষ্ট অনুভূতিগুলোকে বিবেচনায় আনা হয়নি? তাহলে এমন একটি অসার প্রতিযোগিতার আয়োজন করার অর্থ কি?

একসময় বুঝতে পারলাম এটি মূলত দেহব্যবসার একটি আধুনিক ও যুক্তিযুক্ত সংস্করণ।

ক্ষেপে যাবার আগে একটু চিন্তা করে দেখুন। দেহকে পুঁজি করে যে ব্যবসা তাই তো দেহব্যবসা। একজন সুন্দরী যদি তার দৈহিক সৌন্দর্যকে পুঁজি করে পয়সা কামানোর উদ্যোগ নেন তবে তাকে দেহব্যবসা বলা অযৌক্তিক হয় কোন বিচারে? তবে সুন্দরী প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে দেহব্যবসায় আসা অনেক লাভজনক ও মানবিক। আগেকার দিনে লোকালয় থেকে মেয়েদের অপহরণ করে এ’জাতীয় পেশায় বাধ্য করা হত (উদাহরণঃ ‘উমরাও জান’), কখনো সখনো অভাব বা অসহায়ত্ব তাদের এসব পেশায় ঠেলে দিত (উদাহরণঃ অমর প্রেম)। এখন আমরা জাঁকজমক করে আমাদের মেয়েদের স্বেচ্ছায়, সর্বসমক্ষে এবং বাবামা’র আশীর্বাদসহকারে এই পেশায় যোগ দেয়ার মত পরিবেশ সৃষ্টি করি। তারা ব্যবসায় নামার আগেই নিজেদের অ্যাডভার্টাইজ করার মত একটি প্ল্যাটফর্ম পায়, সুপরিচিত হবার সুযোগ পায়। আর লোকজনও তাদের ছি ছি করেনা বরং বাহবা দেয়।

একদল বুদ্ধিমান এবং সৃষ্টিশীল লোক এই সুন্দরী নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নিয়ে থাকেন, তাদের উদ্দেশ্য থাকে এমন একদল মেয়েকে খুঁজে বের করা যারা নিজেকে পণ্য হিসেবে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে অনাগ্রহী নয় বা খ্যাতির পেছনে ছুটতে গিয়ে তাদের কি বিসর্জন দিতে হচ্ছে তা দেখতে না পাবার মত যথেষ্ট অসচেতন এবং যাদের পরিবার যথেষ্ট লোভী অথবা বোকা। অতঃপর তারা এদের একজনকে শ্রেষ্ঠ সুন্দরী নির্বাচন করে তাকে দিয়ে ফলাও করে নানাপ্রকার আপাতদৃষ্টিতে ভালো কাজ করায়। এটি একপ্রকার মূলা ঝুলানো। কেননা তখন বাকী সুন্দরীরা কে কোথায় গেল বা কি করল তা নিয়ে মানুষ আর মাথা ঘামায়না।

তবে ধন্য মিডিয়া। এ’ যেন শাঁখের করাত। সে নিজেই এই নিষ্পাপ মেয়েগুলোকে পতিত করে আবার এই পতনের কাহিনী নাটক সিনেমা নিউজ আকারে তুলে ধরে- এক্কেবারে “নগদ যা পাও হাত পেতে নাও” ফিলসফির বাস্তব প্রয়োগ। মিডিয়ার কল্যাণে আমরা এখন জানি এই বাকী মেয়েগুলোর কি হয়। সৌন্দর্যের খেতাবপ্রাপ্তির স্বপ্নে বিভোর মেয়েগুলো বাস্তবের জন্য প্রস্তুত থাকেনা মোটেই। ফলে যারা রিজেক্টেড হয় তাদের অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। উপরন্তু যেহেতু নিজের সৌন্দর্যকে বর্ধিত করার মত গুণ ব্যতীত তেমন আর কোন যোগ্যতা অর্জনের সুযোগ বা সময় তাদের হয়না, ভবিষ্যত ক্যারিয়ার গড়ার জন্য এটিই তাদের একমাত্র পুঁজি হয়ে দাঁড়ায়।

যারা শ্রেষ্ঠ সুন্দরী নির্বাচিত হতে ব্যর্থ হয় তাদের প্রথম টার্গেট হয় মডেল বা অভিনেত্রী হওয়া। হায় রে! মডেল মানে তো কাপড়ের হ্যাঙ্গার বা বস্তুকে বিকানোর জন্য মানুষের ব্যবহার! বান্ধবী শিমু বলত, “সিনেমার নামে কি সুকৌশলে আমাদের পর্ণোগ্রাফির টুকরো টুকরো ডোজ গিলিয়ে দেয়া হচ্ছে আমরা নিজেরাও টের পাচ্ছিনা”। একটু ভেবে দেখুন যে মেয়েটি এবং যে ছেলেটি অভিনয় করছে তারা আদতেই কেউ কারো কিছু নয়। অথচ একে অপরকে স্পর্শ করা থেকে অবলীলায় পরস্পরের সাথে শুয়ে যাওয়া পর্যন্ত সবই তারা নির্দ্বিধায় করছে (পয়সার জন্য, কোন মহৎ উদ্দেশ্যে নয়) আর আমরা সব জেনেও না জানার ভান করে সপরিবারে সাড়ম্বরে সামর্থের বাইরে গিয়েও বিশালাকার টিভি, ডিভিডি ইত্যাদি কিনে তাদের কীর্তিকলাপ দেখছি! এই অনুষ্ঠান দেখার জন্য আমরা আত্মীয় স্বজন আসলে বা ফোন করলে বিরক্ত হই, প্রতিবেশী বন্ধুবান্ধবের জন্য আমাদের হাতে কোন সময় নেই, বিয়েবাড়ীতে এখানে সেখানে সিনেমা টেলিভিশনের নায়িকা আর মডেলরাই এখন আমাদের আদর্শ। তাহলে আমাদের সন্তানেরা মডেল হওয়া বা অভিনেত্রী হওয়াকে উত্তম পেশা মনে করবে না কেন? ফলে আমাদের সন্তানদের এখন স্বপ্ন বড় মডেল বা নায়িকা হওয়া। খুব মজা লাগে যখন শোনা যায় অমুক নায়িকা খুব ভালো, সে অভিনয় করার সময় তার মা সাথে থাকে। আহারে, কি পবিত্র কাজে মা তার মেয়েকে সাহচর্য দেন! আরেকবার শুনলাম অমুক নায়িকা খুব ভালো সে শুধু তার স্বামীর সাথেই অভিনয় করে। কি মজা! স্বামীস্ত্রীর প্রেম্ কি সর্বসমক্ষে প্রদর্শনী দেয়ার মত ব্যাপার নাকি পয়সা কামানোর জন্য পুঁজি করার মত পণ্য?!

হলিউডের বিখ্যাত ফন্ডা পরিবারের খ্যাতনামা অভিনেত্রী জেন ফন্ডা থেকে শুরু করে ষাটের দশকের সকল আমেরিকান অভিনেত্রী সাক্ষ্য দিয়েছেন যে যেকোন প্রকার রোল পাবার জন্য তাদের আগে ডাইরেক্টরদের সন্তুষ্ট করতে হত। আর আজকাল তো ঘরের কাছেই বলিউডে নায়িকারা কিভাবে সিনেমায় সুযোগ পান তা নিজেরাই প্রচার করেন। যারা মডেলিং করেন তাদের অবস্থাও তথৈবচ। ব্যতিক্রম আছে তবে তাকে তো আর নিয়মের মধ্যে ধরা যায়না। তবে একটু ভেবে দেখুন যদি একজন অভিনেত্রী, মডেল, গায়িকা বা নর্তকীর গুনই তার আসল পরিচয় হয় তবে তাকে পুতুলের মত সাজিয়ে, ক্যামেরার নানাবিধ পদ্ধতি প্রয়োগ করে তার দৈহিক শৈলীকেই কেন মূল উপজীব্য করে তুলে ধরা হয়? কেন নানাধরনের বিশেষণ প্রয়োগ করে তাদের নিয়তই কনভিন্স করার চেষ্টা করা হয় যে তারা ভারী সুন্দর ইত্যাদি ইত্যাদি যেখানে তারা নিজেরাও জানে কোন মানুষই সবদিক মিলিয়ে সবচেয়ে সুন্দর হতে পারেনা?

এ তো গেল যাদের কোন উপায়ে এইসব ইন্ডাস্ট্রিতে ঠাঁই হয় তাদের কথা। যাদের হয়না তাদের নিয়ে তৈরী ভিক্টোরিয়া প্রিন্সিপাল অভিনীত Mistress মুভিটি দেখুন। সৌন্দর্যের গরবে এবং খরচে তাদের পক্ষে সাধারণ মেয়েদের মত যেমনতেমন কোন চাকরী করে জীবিকা নির্বাহ করা সম্ভব হয়না। ফলে এদের একটা উপায় হয় কোন সুন্দরের পুজারী বড়লোক পুরুষকে বিয়ে করা। যাদের ভাগ্য ততটা ভালো হয়না তারা কেউ স্বেচ্ছায়, কেউ নিরুপায় হয়ে কখনো অন্য মহিলার বড়লোক অথচ লম্পট স্বামীর ঘাড়ে ঝুলে পড়ার কায়দা করে, কেউ ব্যর্থ হয়ে নিজের চরিত্র বিসর্জন দিয়ে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করে।

এই কি জীবনের সার্থকতা?! এই কি রূপের সার্থক ব্যবহার?!

একটি ঘটনা আমার খুব মনে পড়ে। একবার এক বিশাল বড়লোক আত্মীয়ের বাসায় গেছি। খানিক পর শার্টপ্যান্ট পরা এক অসাধারণ সুন্দরী মহিলা এলেন। তাঁর নখের আগা থেকে চুলের ডগা পর্যন্ত সৌন্দর্য চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে যেন। আত্মীয়ার সাথে কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে মুক্তোর মত কিছু অশ্রুবিন্দু তাঁর মসৃণ গাল বেয়ে নেমে এলো। বিয়ের ছ’মাসের মাথায় তাঁর প্রতি স্বামীর সমস্ত আকর্ষণ শেষ। তিনি রান্না পারেন না, ঘরের প্রতি তাঁর কোন সহজাত আকর্ষণ নেই, পার্টির প্রতি স্বামীর আর নেশা নেই, তাঁর নিজের সৌন্দর্য বজায় রাখার জন্য যে বিশাল খরচ তা চালাবার মত যোগ্যতা তাঁর নেই, এদিকে সংসার ভাঙ্গে ভাঙ্গে অবস্থা। সেই অসম্ভব সুন্দর মুখে মক্তোর মত জ্বলজ্বলে অশ্রবিন্দু সেকথাই জানান দিল রূপে নয়, গুনেই পরিচয়। সুতরাং চলুন, আমরা রূপের নয়, বরং জীবনের সকল ক্ষেত্রে গুনের চর্চা করি। আর রূপ? একটি জীবন পার করার জন্য পরিচ্ছন্নতাই যথেষ্ট!

বারসিসা

 

বারসিসা ছিল বনী ঈসরাইলের একজন সুখ্যাত উপাসক, ধর্মযাজক, ‘আবিদ’। তার নিজের মন্দির ছিল আর সেখানে সে একাগ্রভাবে নিজেকে উপাসনায় নিয়োগ করত।

বনী ঈসরাইলের তিনজন পুরুষ জিহাদে যেতে চাচ্ছিল, তাদের একমাত্র বোনকে কোথায় রেখে যাবে বুঝতে পারছিল না। তারা সবাইকে জিজ্ঞেস করতে লাগল, ‘কোথায় আমরা আমাদের বোনকে রেখে যেতে পারি? তাকে তো আমরা একা ফেলে যেতে পারিনা। কোথায় তাকে রেখে যাওয়া যায়?’ তখন তারা তাদেরকে বলল, ‘তাকে রেখে যাওয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান হবে তাকে ঐ উপাসকের কাছে রেখে যাওয়া, সেই-ই সবচেয়ে ধার্মিক ব্যক্তি, আর সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য। তোমাদের বোনকে তার কাছে রেখে যাও, সে তার খেয়াল রাখবে’। তারা আবিদের নিকট গেল। তাকে সব বর্ণনা করে বলল, ‘এই হল অবস্থা - আমরা জিহাদে যেতে চাই, আপনি কি কষ্ট করে আমাদের বোনকে দেখে রাখতে পারবেন?’ সে বলল, ‘আমি তোমাদের থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই। আমার কাছ থেকে চলে যাও’।

তখন শয়তান তাকে প্রলুব্ধ করল, ‘তুমি তাকে কার কাছে রেখে আসবে? তুমি যদি তার খেয়াল না রাখো তাহলে হয়ত কোন দুষ্ট লোক তার খেয়াল রাখবে, আর তারপর তো তুমি জানোই কী ঘটবে! তুমি কি করে এই ভাল কাজটা তোমার হাতছাড়া করে দিতে পার?’

দেখুন! শয়তান তাকে ভাল কাজে উৎসাহিত করছে! তো সে তাদেরকে আবার ডেকে এনে বলল, ‘ঠিক আছে, আমি তার খেয়াল রাখব, কিন্তু সে আমার সাথে আমার মন্দিরে থাকতে পারবে না, আমার আরেকটা বাড়ি আছে সে সেই ঘরে থাকবে’।

সে মেয়েটিকে বলল, ‘তুমি ওখানে থাক, আমি আমার মন্দিরে থাকব’।

তো মেয়েটা সেই বাড়িতে একটা ঘরে থাকত, আর সেই ধর্মযাজক তার জন্য প্রতিদিন খাবার নিয়ে এসে তার নিজের দরজার বাইরে রেখে দিত। সে মেয়েটির বাড়িতে পর্যন্ত যেত না, নিজের দরজার বাইরেই খাবার রেখে দিত আর মেয়েটিকে ঘর থেকে বের হয়ে এসে খাবার নিয়ে যেতে হত; সে মেয়েটির দিতে তাকিয়ে দেখতে পর্যন্ত ও চাইত না।

তখন শয়তান আবার তার কাছে এসে বলল, ‘তুমি করছটা কি? তুমি কি জানো না মেয়েটা যখন তার ঘর থেকে বের হবে আর তোমার মন্দির পর্যন্ত আসবে লোকে তাকে দেখতে পাবে? তোমার উচিত তার দরজায় যেয়ে খাবারটা রেখে আসা’। ‘সে বলল, ‘হ্যাঁ, আসলেই’।

শয়তান কিন্তু তার সাথে সামনা-সামনি কথা বলছেনা, তাকে ওয়াসওয়াসা বা কুমন্ত্রণা দিচ্ছে। ধর্মযাজক 'আবিদ তাই এবার খাবার নিয়ে মেয়েটির দরজা পর্যন্ত রেখে আসতে শুরু করল।

এভাবে কিছুদিন চলল, এরপর শয়তান তাকে বলল, ‘মেয়েটা এখনও তার দরজা খুলছে আর বাইরে বের হয়ে আসছে প্লেট নেয়ার জন্য, কেউ তাকে দেখে ফেলতে পারে, তোমার উচিত প্লেটটা তার ঘরে গিয়ে দিয়ে আসা’। শয়তান কিনা তাকে বলছে আরো ভাল কাজ করতে! তাই সে খাবারের প্লেটটা ঘরে রাখা আরম্ভ করল, সেখানে রেখেই সে সঙ্গে সঙ্গে চলে আসত। এভাবে আরো কিছুদিন পার হলো। আর ওদিকে জিহাদ চলতে থাকায় ভাইদের ফিরে আসতে বিলম্ব হচ্ছিল।

শয়তান আবারো তার কাছে আসলো। বলল, ‘আচ্ছা, তুমি তাকে এভাবে একা ছেড়ে দিবে, কেউ তো নেই যে তার দিকে একটু খেয়াল রাখবে, একটু কথা বলবে। সে যেন জেলখানায় আবদ্ধ হয়ে আছে, কথা বলার কেউ নেই। তুমি কেন ওর দায়িত্ব নিচ্ছ না? ওর সাথে একটু সামাজিকতা বজায় রেখে তো চলতে পারো, গিয়ে একটু কথা বলো যাতে করে তুমি তার খোঁজখবর রাখতে পারো। তা না হলে দেখা যাবে সে বাইরে যেয়ে কোন পরপুরুষের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়বে’। তাই সে মেয়েটির সাথে ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে কথা বলতে শুরু করলো, মেয়েটা ঘরের মধ্য থেকেই কথা বলত; দুজনকে প্রায় চিৎকার করে কথা বলতে হতো যেন তারা একজন অন্য জনকে শুনতে পায়।

শয়তান এবার তাকে বলল, ‘তুমি এরকম দূর থেকে একজন আরেকজনের উপর চিৎকার না করে কেন ব্যাপারটাকে নিজের জন্য আরেকটু সুবিধাজনক করে নিচ্ছোনা? কেন তার সাথে একই ঘরে বসে কথা বলছ না?’ তো এবার সে মেয়েটার সাথে একই ঘরে বসে কিছুসময় ব্যয় করতে শুরু করল। তারপর ধীরে ধীরে তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা একসাথে কাটাতে লাগল, আর আস্তে আস্তে তারা পরস্পরের আরো কাছাকাছি আসতে লাগল। এক সময় এমন হল যখন সেই আবিদ, ধর্মযাজক, উপাসক সেই মেয়ের সাথে যিনায় (ব্যাভিচার) লিপ্ত হল। ফলে মেয়েটা অন্তসত্ত্বা হয়ে পড়ল।

কাহিনী এখানেই শেষ নয়। মেয়েটি একটি সন্তানের জন্ম দিল। শয়তান ধর্মযাজকের কাছে এসে বলল, ‘একি করেছ তুমি! তুমি কি জানো যখন ওর ভাইরা ফিরে আসবে তখন কি হবে? তারা তোমাকে মেরে ফেলবে, এমনকি তুমি যদি এটাও বলো যে – “এটা আমার বাচ্চা না”, তারা তোমাকে বলবে যে “তোমার বাচ্চা না হলেও তুমি তার দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলে, তাই এটা এখন তোমারই দায়ভার। বাচ্চার বাবা কে আমরা তার পরোয়া করি না, তুমিই এর জন্য দায়ী”। সুতরাং এখন একটাই উপায়, তুমি বাচ্চাটাকে মেরে তাকে পুঁতে ফেল’। বারসিসা বলল, ‘এটা কি গোপন থাকবে আমি তার ছেলেকে মেরে ফেলার পরে?’ শয়তান বলল, ‘তোমার কি মনে হয় ও এটাকে গোপনে রাখবে? তুমি যদি এরকম ভাব, তাহলে তুমি মস্ত বড় বোকা’। সে জিজ্ঞেস করল, ‘তাহলে আমি কি করব?’। শয়তান জবাব দিল, ‘তোমার ঐ মেয়েটাকেও মেরে ফেলা উচিত’। তাই সে মেয়েটাকে আর বাচ্চাকে মেরে ফেলল, এরপর দুজনকে একই ঘরের নিচে কবর দিয়ে দিল।

ভাইয়েরা একসময় ফিরে আসল, তারপর জানতে চাইল, ‘আমাদের বোন কোথায়?’, সে উত্তরে বলল, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, সে অসুস্থ হয়ে পড়ে এরপর মারা যায়, তাকে ওখানে কবর দেয়া হয়েছে’ এই বলে সে মনগড়া একটা কবর দেখিয়ে দিল তাদেরকে। তারা বলে উঠল, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহিরাজি’উন’, তারা বোনের জন্য দু’আ করলো, আর নিজেদের বাসায় ফিরে গেল।

রাতের বেলা, তিনজনের মাঝে এক ভাই একটা স্বপ্ন দেখলো, কে তার সেই স্বপ্নে এসেছিল? শয়তান! সে তাকে বলল, ‘তুমি বারসিসা কে বিশ্বাস করো? তুমি কি তাকে বিশ্বাস করো? সে মিথ্যা বলেছে। সে তোমার বোনের সাথে ব্যাভিচার করেছে, তারপর তাকে আর তার ছেলেকে মেরে ফেলেছে। আর এই কথার প্রমাণ হল সে তোমাদেরকে যেখানে কবর দেখিয়েছে তোমাদের বোন সেখানে নেই, আছে তার ঘরের পাথরের নিচে’। তার ঘুমভেঙ্গে গেল আর সে তার বাকি ভাইদেরকে স্বপ্নের কথা জানালো। তারা বলল, ‘আমরাও তো একই স্বপ্নই দেখেছি, তাহলে এটা নিশ্চয়ই সত্যি’। পরদিন তারা সেই মিথ্যা কবরটা খুড়ল কিন্তু কিছুই পেল না, এরপর তারা তাদের বোনের ঘরে গিয়ে মাটি সরাল তখন দেখতে পেল তার বোনের মৃতদেহ সাথে একটা শিশু। তারা যেয়ে বারসিসাকে ধরল, ‘মিথ্যুক! এইসব করেছ তুমি?’ তারা তাকে ধরে টেনে হিঁচড়ে রাজার কাছে নিয়ে গেল।

এমন সময় শয়তান আসল বারসিসার কাছে, এবারে কিন্তু সে মনের ওয়াসওয়াসা হিসেবে আসেনি, সে আসল মানুষের রূপ ধরে। তাকে বলল, ‘বারসিসা, তুমি কি জানো আমি কে? আমি শয়তান, আমিই সে, যে তোমাকে এতো ঝামেলার মধ্যে ফেলেছি। আর আমিই সে একজন, যে তোমাকে এখন এই বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারবো। আমিই এসব ঘটনা ঘটিয়েছি আর আমার কাছেই আছে এসবের সমাধান। এখন তোমার উপর নির্ভর করে, তুমি যদি মরতে চাও তো ঠিক আছে। তুমি যদি চাও আমি তোমাকে রক্ষা করি, তাহলে আমি করতে পারি’। বারসিসা বলল, ‘দয়া করে আমাকে বাঁচাও’। শয়তান বলল, “আমাকে সিজদাহ করো”। বারসিসা শয়তানের প্রতি সিজদাহ করল। কিন্তু শয়তান কি বললো? সে বললো, ‘তোমাকে অনেক ধন্যবাদ, তোমার সাথে দেখা হয়ে ভাল লাগল’। এরপর সে তাকে আর কোনদিন দেখতে পেল না। বারসিসা শয়তানের উদ্দেশ্যে সিজদাহ করলো, আর এটাই ছিল তার জীবনে করা শেষ কাজ, কারণ এর কিছুক্ষণ পরেই তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। সুতরাং তার জীবনের শেষ কাজটা তাহলে ছিল-শয়তানকে সিজদাহ করা, সে ছিল সেই উপাসক যে কিনা ছিল সরল পথের উপর, কিন্তু যেহেতু সে সেপথ থেকে বাঁক নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যদিও খুব খুব ছোট্ট একটা বাঁক, প্রথমদিকে যেটাকে একেবারেই তুচ্ছ মনে হচ্ছিল, একটু সুবিধার নামে, দ্বীনের মাসআলার নামেই সে এগুলো করেছিল। সরলপথ থেকে তার বিচ্যুতির পরিমাপটা ছিল একদমই নগণ্য কিন্তু দেখুন তার শেষ পরিণতি! নিজের ইচ্ছাকে অনুসরণ করার বিপত্তিটা এখানেই; আমরা আমাদের জ্ঞান, কোরআনের যতখানি জানি, আমাদের ইবাদত ইত্যাদি নিয়ে বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে যাই। সুবহানাল্লাহ! আমাদের তো সব সময় উচিত নিজেদের নিয়ে শঙ্কায় থাকা, আমরা কখনই অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হবো না বরং আমাদের সব সময় উদ্বিগ্ন থাকতে হবে, আর এটাই হল আল্লাহ-ভীতি, এটাই সত্যিকার অর্থে ‘জ্ঞান’। আল্লাহ বলেন,

“আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই কেবল তাঁকে ভয় করে” [৩৫:২৮]

আসুন এবার আমরা দেখি বারসিসার এই কাহিনী থেকে আমাদের জন্য কি কি রয়েছে।

[১]

প্রথমেই খেয়াল করে দেখুন শয়তান বারসিসার সাথে কোন নীতি গ্রহণ করেছিল? যদি শয়তান বারসিসার কাছে এসে সরাসরি বলত, ‘আমাকে সিজদাহ করো’ বারসিসা কি কখনো তা করত? না, করত না। শয়তান step by step ‘ধাপে ধাপে’ মানুষকে দ্বীন থেকে বিমুখ করার নীতি গ্রহণ করেছিল। শয়তানের কাজই হল এটা যে সে সারাজীবন আপনার আমার পেছনে লেগে থাকবে এবং তার জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য মানুষকে বিভ্রান্ত করা, ঈমান থেকে বিচ্যুত করে মুশরিক অবস্থায় মৃত্যুমুখে পতিত করা। সুবাহানাল্লাহ বারসিসার করুণ পরিণতি থেকে আমরা সেটা উপলব্ধি করতে পারি! এখানে ইমাম আহমেদের মৃত্যুর সময়টার কথা বলা যেতে পারে। আবদুল্লাহ ইবন ইমাম আহমেদ বলেন, তার পিতা যখন অবচেতন পর্যায়ে পৌঁছে যান আর বলতে থাকেন, ‘লা বা’আদ, লা বা’আদ’ – ‘না এখনও নয়, না এখনও নয়’। একথা শুনে আবদুল্লাহ প্রচন্ড চিন্তিত বোধ করলেন! চিন্তা করে দেখুন, আপনি যদি আপনার বাবাকে তার মৃত্যুকালীন সময়ে বলতে শুনেন, ‘না এখনও না, না এখনও না’, আপনি কিভাবে এটাকে ব্যাখ্যা করবেন? এটার অর্থ কী বলে আপনার কাছে মনে হবে? ‘না এখনও না, আমি এখনও মরতে চাইনা’ এমনই মনে হওয়ার কথা, তাইনা?

তো ইমাম আহমেদ জেগে উঠলে, আবদুল্লাহ উদ্বিগ্ন হয়ে পিতাকে জিজ্ঞেস করল, ‘হে আমার পিতা, কেন আপনি বলছিলেন – “এখনও না, এখনও না”?’ ইমাম আহমেদ বললেন, ‘শয়তান আমার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল, সে তার অঙ্গুলি কামড়ে বলছিল, “হে আহমেদ, তুমিতো আমার হাত ফসকে বের হয়ে গেলে! হে আহমেদ, তুমি তো আমার হাত ফসকে বের হয়ে গেলে”! তাই আমি তাকে বলছিলাম, “না, এখনও না, যতক্ষণ না পর্যন্ত আমি মারা যাচ্ছি। তোমার আর আমার যুদ্ধ এখনও চলছে, যখন আমি মারা যাব, একমাত্র তখনই আমি তোমার হাত থেকে রক্ষা পাব”।’

ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ বলেন, ‘এরকম হওয়ার কারণটা হলো এই যে, শয়তান বুঝতে পারে আপনার সাথে এটাই তার শেষ সুযোগ, যদি এবার আপনি তার হাত থেকে ছুটে যান তো আপনি চিরকালের জন্যই তার কাছ থেকে পার পেয়ে গেলেন। শেষ সময়ে আপনাকে পথভ্রষ্ট করতে না পারার অর্থ সে আপনাকে আর ধরতে পারল না। এজন্যই শয়তান আপনার জীবনের শেষ সময়ের দিকে বিশেষ নজর দেয় আর আপনার বিরুদ্ধে তার কাজকে আরো জোরদার করে তুলে’। সুবাহানাল্লাহ! আল্লাহ আমাদের উপলব্ধি করার তৌফিক দান করুণ যে শয়তান আমাদের পেছনে কি পরিমাণ পরিশ্রম করে যাচ্ছে শুধু আমাদের পথভ্রষ্ট করে মৃত্যুমুখে পতিত করার জন্য।

[২]

খালি চোখে বারসিসার কাহিনী থেকে যে শিক্ষাটা আমাদের প্রথমে মনে আসে সেটা হল “নারী ফিতনা”। নারী ফিতনার প্রকটতা বুঝতে হলে আমাদের উপলব্ধি করতে হবে কেন, রাসুল (সঃ) বলে গেছেন, “আমি আমার উম্মতের জন্য নারীর চেয়ে অধিক বড় কোন ফিতনা রেখে যাচ্ছি না”। রাসুল (সঃ) বলেছেন, ‘যখন দুইজন নারী পুরুষ একাকী অবস্থান করে তাদের মাঝে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে শয়তান অবস্থান করে”। শুধু তাই নয় স্বয়ং আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেছেন, “মানুষকে দুর্বল করে সৃষ্টি করা হয়েছে (নারীদের প্রতি)”। [৪:২৮] যখন এখানে নারীদের প্রতি দুর্বলতার কথা বলা হয়েছে এটা বলা হয় তখন নলেজেবল ভাই বোনেরাও অবাক হন! কিন্তু তাফসীরে নারীর প্রতি দুর্বলতার কথাই বলা হয়েছে। এছাড়াও আল্লাহ তায়ালা সূরা আলে ইমরানের ১৪ নং আয়াতে আল্লাহর রাহে যুদ্ধ করা থেকে যেসব বিষয় মানুষকে বিরত রেখেছে তার কথা বলতে গিয়ে প্রথমেই বলেছেন, “মানবকূলকে মোহগ্রস্ত করেছে নারী...” [৩:১৪]

[৩]

বারসিসার এই কাহিনী থেকে আরেকটা জিনিস লক্ষণীয় সেটা হল “good intention”। আমি তো ভালোর জন্যই কাজটা করছি এই সান্ত্বনা দিয়ে শয়তান আমাদের ফাঁদে ফেলে। একটু লক্ষ্য করলেই আমরা দেখব শয়তান বারবার বারসিসাকে মেয়েটির ভালোর জন্য ওয়াসওয়াসা দিয়েছে। তুমি এমন না করলে মেয়েটির এই হবে, তুমি তেমন না করলে মেয়েটির সেই হবে এই ওয়াসওয়াসা। এবং বারসিসা প্রতিবার সেই ফাঁদে পা দিয়েছে আর তার ফল সে পেয়েছে অবশেষে! এই বিষয়টা খুব সূক্ষ্মভাবে আমাদের লক্ষ্য করা উচিত। আমাদের মধ্যে একটা কমন tendency থাকে আমরা ইসলাম পালনের চেয়ে এক ধাক্কায় দাঈ হয়ে যেতে চাই। একটু আধটু জেনে মানুষজনকে ধুমাইয়া দাওয়াহ করে বেড়াই। সেখানে শয়তানের এসব ওয়াসওয়াসা আর নারী ফিতনার বিষয়ে কোন ধারণা না থাকায় এরকম অসংখ্য উদাহরণ আছে হারাম সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার।

আমরা যেটা মাথায় রাখবো দাওয়াহ’র কিছু rules and regulations আছে। নিজে জানার এবং মানার বিষয় আছে। শয়তানের ফাঁদ নিয়ে উপলব্ধির বিষয় আছে। অনেক ভাই বোনদের আমি দেখেছি তাদের ফেসবুক পোষ্টের কমেন্ট অপশন পাবলিক থাকলেও সেখানে কোন নন মাহরাম কমেন্ট করেনা। কেন?? কেন তারা সেই সুযোগটা কখনো দেন না! আপনি একটা ফান পোস্ট দিলেন। আপনার ফ্রেন্ড লিস্টে নন মাহরাম না থাকলেও কমেন্ট অপশন পাবলিক থাকার কারণে নন মাহরামরা সেখানে ফান কমেন্ট করা শুরু করল! জাহেলরা যে কায়দায় কথাবার্তা বলে অবিকল সেই কায়দায় লুতুপুতু আর ইমোশনের জোয়ার! এখানে শয়তানের সাথে আপনার বোঝাপড়া! সেই নন মাহরাম ছেলে কিংবা মেয়ে একবার কমেন্ট করবে, দুইবার কমেন্ট করবে কিন্তু যখন দেখবে আপনি তাতে কোন রেসপন্সই দিচ্ছেন না তখন সে বুঝে যাবে এবং কেটে পড়বে। কিন্তু আপনি যদি তার সমান তালে রেস্পন্স করা শুরু করেন তাহলে কি ঘটনা গড়াতে থাকবে না এবং শয়তান কি আপনাদের নিয়ে খেলতে থাকবে না?

নেট জগত দিয়ে উদাহরণ দিলাম মাত্র এবার এটাকে বাস্তব জীবনের সাথে মিলিয়ে দেখতে পারেন ফলাফল এক ও অভিন্ন! আপনাকে মনে রাখতে হবে শয়তান স্বভাবতই বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আপনাকে আকৃষ্ট করবে তাই শয়তান যার দিকে আপনাকে আকৃষ্ট করছে তার দিকে “দাওয়াহ’র” অজুহাত নিয়ে এগিয়ে যাবেন না! সবাইকে দাওয়াহ দেওয়ার জন্য আপনি responsible নয়। এটা মনে করার কোন কারণ নেই যে আপনি দাওয়াহ না নিলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। বরং সর্বনাশটা হবে আপনি শয়তানের ফাঁদে পা দিলে। সর্বনাশ হবে আপনি ফিতনায় জড়িয়ে গেলে! শয়তানের হাতে নিজের প্রবৃত্তিকে সঁপে দেওয়ার আগে তাই খুব গভীর দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবা উচিত। সামনে তো বারসিসার কাহিনী আছেই reminder হিসেবে!

[৪]

সর্বশেষ একটা lesson আমরা বারসিসার কাহিনী থেকে নিতে পারি সেটা হল বৈরাগ্য বা একাকীত্বের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন হয়ে। একটু চিন্তা করুন মেয়েটি যদি বারসিসার স্ত্রী হত, কিংবা বারসিসার যদি পরিবার থাকত তাহলে হয়ত শয়তান এত সুযোগ পেত না তাকে পথভ্রষ্ট করার। একটি কথা আমার খুব ভাল লাগে__আপনি একা থাকলে যা করেন সেটাই আপনার চরিত্র!

একাকীত্ব শয়তানকে খুব বেশী সুযোগ করে দেয় তার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার। যে কারণে দ্বীনের পথে থাকতে চাওয়া ভাই বোনদের সবসময় একটা motivation এর মধ্যে থাকা উচিত। বারসিসার ক্ষেত্রে শয়তান এই সুযোগটা নিয়েছিল! তাকে ওয়াসওয়াসা দিয়েছিল যা বারসিসা এড়িয়ে চলতে পারেনি। একাকিত্বের সময়ের শয়তানী ওয়াসওয়াসা মানুষের তাক্বওয়ার লেভেলকেও নিচে নামিয়ে দেয় খুব সহজে। আল্লাহ ক্ষমা করুন আমাদের। আমাদের উপর রহম করুন।

শেষকথাঃ যেহেতু সবাই মূলত ইন্টারনেট জগতের সাথে বর্তমানে পরিচিত, তাই ইন্টারনেট জগতের বিভিন্ন উদাহরণ ব্যবহার করা হয়েছে বুঝার সুবিধার্থে! একটা বিষয় ইদানীং আমাকে খুব ভাবায় সেটা হল ইসলামের ব্যাপারটা আসলে পুরোটা উপলব্ধির! যে কারণে অনেক নলেজেবল ভাই বোনকেও দেখবেন ইসলামের অনেক কিছু জানা সত্বেও আমল করার ব্যাপারে তারা উদাসীন। সেসব ভাই বোনদের জন্য আমরা দোয়া করি যাদের অর্জিত জ্ঞান তাদের জীবনবোধের কোন পরিবর্তন করতে পারেনি। যারা কোরআন অধ্যয়ন করেছে, ইসলামের অনেক জ্ঞান অর্জন করেছে আর এই জ্ঞান জাহির করে বেড়িয়েছে কিন্তু নিজের জীবনে তার কোন reflection পড়েনি। আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন। আল্লাহ আমাদের ভুলগুলো শুধরে সত্যকে আঁকড়ে ধরার তৌফিক দান করুন।

বারসিসার যে কাহিনীটা বর্ণনা করলাম এটা হয়ত অনেকেই জানেন। কিন্তু হয়ত এভাবে ভেবে দেখেননি। এখান থেকে প্রাপ্ত শিক্ষাটুকু আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশগুলোকে purify করার কাজে লাগতে পারে ইনশাআল্লাহ। ভুলকে মেনে নিয়ে তার জন্য অনুতপ্ত হয়। মানুষ আর ভুলের উপর অবিচল থেকে তার জন্য অজুহাত দেখায় শয়তান। আমরা আশরাফুল মাখলুকাত আমরা আমাদের ভুলের জন্য মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইব ইনশাআল্লাহ।

এই লেখায় উপলব্ধি করার মত কিছু থাকলে আল্লাহ যেন আমাদেরকে তা উপলব্ধি করার তৌফিক দেন। যেন আমাদের পাপগুলো মুছে দেন। বিগতদিনের ভুলগুলো যেন আজকের দিনের শুদ্ধতার অনুপ্রেরণা হয় ইনশাআল্লাহ! ইসলামের শিক্ষা আর উপলব্ধি যেন আমাদের জান্নাতের পথের পথিক হতে সাহায্য করে। শয়তান যেন দুর্ভাগা বারসিসার মত আমাদেরকে টেনে হিঁচড়ে জাহান্নামের কঠিন আগুনে নিয়ে না যায়।

সর্বাবস্থায় আল্লাহর সাহায্য চাই। আল্লাহ রহম করুন। আল্লাহ ক্ষমা করুন। ইহদিনাস সিরাত্বাল মুস্তাকিম, আমীন।