Wednesday, May 5, 2021

ঝগড়া সমগ্র

 

দুইদিন যাবত রাগ করে বরের সাথে কথা বলছি না।ঘরটা বেশ শান্ত হয়ে আছে।এবার আমি প্রমান করে ছাড়বো ঝগড়াঝাঁটি ছাড়াও আমার পেটের ভাত হজম হতে পারে।
রান্নাঘরে কাজ করছিলাম এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো।আমি যাওয়ার আগেই জনাব নিজে গিয়ে দরজা খুলল।
উঁকিঝুকি মেরে দেখার চেষ্টা করলাম কে এসেছে।কিছুক্ষন পরে জনাব একাই দরজার ওপাশ থেকে একটা প্যাকেট হাতে নিয়ে ভেতরে এলো।
আমি না দেখার ভান করে রান্না করতে শুরু করলাম।
সে আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলল,কারো নামে কুরিয়ার থেকে গিফট এসেছে।প্যাকেটটা টেবিলে রাখা আছে।
অবাক হয়ে রান্নাঘর থেকে ড্রয়িং রুমে এসে প্যাকেটটা হাতে নিলাম।গিফট কে পাঠালো! নাম ঠামও তো লেখা নেই।অদ্ভুত! প্যাকেটটা খুলে দেখি শাড়ি,চুরি,পারফিউম,রজনীগন্ধা ফুল,চকলেট এতো কিছু!! চোখ কপালে তুলে বললাম,এসব আবার কে পাঠালো! জনাবের সাথে তো ঝগড়া চলছে।সে আনলে তো তার কথা বলেই আমাকে দিতো।কে হতে পারে!
কিছুক্ষন পরে জনাব আমার দিকে সন্দেহ নজরে তাকিয়ে বলল,আজকাল এতো গিফট ও আসছে বাসায়।বাহ ভালোই তো।কি যে হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না।এজন্যই বোধহয় এখন আর আমার সাথে কথা বলার প্রয়োজন হচ্ছে না।
বরের খোঁচা মারা কথার জবাব দিয়ে বললাম,কি বলতে চাইছো! তুমি কি ভাবছো আমাকে আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড গিফট গুলো পাঠিয়েছে?!
সে গল্পের বইয়ে মুখ গুজে বলল,আমি কখন বললাম এসব! তুমি নিজেই তো বললা।আমার কি দোষ?
মাথায় একটা শয়তানি বুদ্ধি এলো।জনাবকে খ্যাপানোর জন্য বললাম,ওয়েট ওয়েট আমাকে মনে করতে দাও তো।আমি যদি খুব ভুল না করি তাহলে এই গিফট গুলো 'আয়মান' পাঠিয়েছে।আর যদি আয়মান না হয় তবে 'রেজওয়ান' তো হবেই।
বর টেবিলের ওপর ধপাস করে গল্পের বইটা রেখে বলল,লেট মি ক্লিয়ার।এই আয়মান,রেজওয়ান এরা কারা! এরা তোমাকে গিফট কেনো পাঠাবে?
আমি মুচকি হাসি দিয়ে বললাম,কলেজে এরা সবাই আমার উপর ক্রাশ খেয়ে বাশ খেয়েছিলো।তাদের কেউই হবে হয়তো।দেখো এরা না হলে আর কে হতে পারে যে আমার জন্য এতো সুন্দর গিফট পাঠাবে।বাহ ভালোই তো এখনো আমাকে মনে রেখেছে।সত্যিই বোধহয় আমাকে অনেক ভালোবাসতো।কেনো যে তোমার মতো ঝগড়ুটের সাথে দেখা হলো।
আড় চোখে জনাবের দিকে তাকিয়ে তার মুখের এক্সপ্রেশন বোঝার ট্রাই করলাম।রেগে যাচ্ছে,রেগে আগুন হয়ে যাচ্ছে।
সে দেয়ালে একটা ঘুষি মেরে বলল,ক্রাশ ফ্রাশ আরো কত কিছু যে শুনতে হবে।এসব তো আমাকে আগে কখনও বলোনি।
আরেকটু রাগানোর জন্য বললাম,তোমাকে বলার কি আছে! বিয়ের আগে এমন কত ছেলে ছোকরাই তো আমাকে প্রপোজ করেছে।সবার নাম কি আমি মনে রেখেছি! নেহাত তোমার কপাল ভালো ছিলো তাই চান্স পেয়ে গেছো।
বেচারা রাগে জিদে কিছুই বলতে পারছে না।রাগটাকে আরেকটু বাড়ানো দরকার।ঘরের চারপাশে তাকিয়ে বললাম,জেলাসির আগুনে সব কিছু পুড়ে যাচ্ছে।কেমন যেনো পোড়া পোড়া গন্ধ বেড়োচ্ছে।কারো হৃদয় পোড়া গন্ধ।
সে রাগি চোখে আমার দিকে তাকাতেই বললাম, ইয়ে মানে মনে হয় রান্নাঘর থেকে গন্ধ আসছে।তবে যাই বলো গিফট গুলো দারুন হয়েছো।একটা থেংক্স তো পাওনাই থাকে আমার তরফ থেকে।যাই ফেসবুকে ওদের নাম লিখে সার্চ দিয়ে আইডি বের করি।ম্যাসেজ দিয়ে দেখি একচুয়েলি কে পাঠালো গিফট গুলো।সিউর হতে হবে তো কি বলো?
মোবাইলটা হাতে নেওয়া মাত্রই সে আমার হাত থেকে টান দিয়ে মোবাইলটা নিয়ে গেলো।রাগি স্বরে বলল,কেউ পাঠায় নাই গিফট।এগুলো আমিই আনিয়েছি আদনান কে দিয়ে।
চোখ কপালে তুলে বললাম,তুমি এনেছো!!
সে নিচু স্বরে বলল,দুইদিন যাবত কথা বলছো না ঝগড়াও করছো না।তাই ভাবলাম কিভাবে তোমার সাথে কথা বলে ঝগড়া করা যায়।আদনানকে বলার পর বলল,এগুলো কিনে আমার নাম লুকিয়ে তোমাকে দিতে আর এসব বলতে শিখিয়ে দিছে।তাহলে তুমি রেগে যাবে আর রেগে গিয়ে আমার সাথে ঝগড়া শুরু করে দেবে।
আমি কপাল কুচকে বললাম,পেটে পেটে এতো শয়তানি!
সে অভিমান স্বরে বলল, গিফট গুলো না এলে তো জানতেই পারতাম না এতো ক্রাশ,ফ্রাস আর প্রপোজালের কথা।
আমি চকলেট গুলো খেতে খেতে বললাম,ক্রাশ-ফ্রাশ আর প্রপোজালের কথা না বললে তো তোমার পেট থেকে বের করতেই পারতাম না যে তুমিই এসব এনেছো।তুমি কি ভাবছো আমি কিছুই জানিনা! আদনান ভাই যে তোমাকে ফেসবুকে ম্যাসেজ করে এসব শয়তানি আইডিয়া দিছে তা আমি কাল রাতেই তোমার মোবাইল চেক করে দেখে ফেলছি।
আমার কথা শুনে বরের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো।অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, মানে!!
আমি হাসতে হাসতে বললাম,এবার প্রমান হলো তো ঝগড়া ছাড়া কার পেটের ভাত হজম হয় না? তবে যাই বলো ঝগড়া থেকে যদি এতো দারুণ দারুন গিফট পাওয়া যায় তবে ঝগড়াই ভালো।
ঝগড়া সমগ্র
Zannatul Eva

Monday, May 3, 2021

ইফতারের পূর্বে সম্মিলিত দুআ-মুনাজাত করা বিদআত

 May be an image of text

 

ইফতারের পূর্বে সম্মিলিত দুআ-মুনাজাত করা বিদআত
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
প্রশ্ন: ইফতারের পূর্বমুহূর্তে দুআ করার জন্য কি হাত তুলে মোনাজাত করা জরুরি? সহকর্মী সবাই একসাথে ইফতার করতে বসি। সেখানে কেউ মোনাজাত করে না। এখন আমি যদি হাত না তুলে মনে মনে দুআ করি তাতে কি কোনও সমস্যা আছে?
উত্তর:
হাদিসে সাব্যস্ত হয়েছে, যে রোজাদারের দুআ কবুল হয়। তাছাড়া ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে মানুষ ক্ষুধার্ত, পিপাসার্ত ও ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত অবস্থায় থাকে। তাই এসময় দুআ করলে কবুলের সম্ভাবনা বেশি থাকে।
সুতরাং এ সময় অধিক পরিমাণে দুআ করা উত্তম। কিন্তু তা হবে ব্যক্তিগত ভাবে। প্রত্যেকেই নিজে নিজে তার ইচ্ছা অনুযায়ী আল্লাহর নিকট দুআ করবে। চাই তা হাত উঠিয়ে হোক অথবা হাত উঠানো ছাড়া হোক-তাতে কোনও সমস্যা নাই। তবে হাত উঠিয়ে দুআ করা বেশি ভালো। কারণ এটি দুআর অন্যতম একটি আদব।
কিন্তু ইফতার সামনে নিয়ে সম্মিলিত দুআ করা দলিল সমর্থিত নয়। কেননা হাদিসে সম্মিলিত দুআ করার যে সকল ক্ষেত্র পাওয়া যায় এটি তার অন্তর্ভুক্ত নয়।
সুতরাং আমাদের সমাজে বিভিন্ন ইফতার মাহফিলে ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে ইফতারির নানা আইটেমের খাদ্য-পানীয় সামনে নিয়ে বসে একজন মাওলানা বা ইমাম কর্তৃক দুআ করা আর বাকি সব রোজাদার আমিন আমিন বলার যে প্রথা চালু আছে তা সুন্নাহ সমর্থিত না হওয়ার কারণে মুহাক্কিক আলেমগণ তাকে ‘বিদআত’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
সুতরাং ইফতারের পূর্বে প্রচলিত সম্মিলিত দুআ-মুনাজাত পরিত্যাজ্য।
◈ মিসরের প্রসিদ্ধ ইসলামি দাঈ ডক্টর মুহাম্মদ হাসসান (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন,
“ইফতারের পূর্বে সম্মিলিত দুআ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং আমাদের সালাফগণ (পূর্বসূরী) থেকে সাব্যস্ত হয় নি। অর্থাৎ এমনটা জানা যায় না যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো সাহাবিদেরকে নিয়ে মসজিদে বা অন্য কোথাও একত্রিত হয়ে ইফতারের পূর্বে সম্মিলিতভাবে দুআ করেছেন। অনুরূপভাবে সালাফগণও এমনটি করেন নি। সুতরাং আল্লাহ যতটুকু তওফিক দান করেন নিজে নিজে দুআ করুন।” (ভিডিও থেকে নেয়া)
◈ শাইখ মুহাম্মদ বিন হাদী আল মাদখালি (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, "ইফতারের পূর্বে সম্মিলিত দুআ করার কোনও ভিত্তি আছে বলে জানা নাই। বরং মূল হল, প্রত্যেক ব্যক্তি নিজে নিজে দুআ করবে যা খুশি। কিন্তু সম্মিলিত দুআ করার বিষয়টির কোনও ভিত্তি জানা নাই। এটি বিদআত।” (ভিডিও থেকে নেয়া-সংক্ষেপায়িত)
আল্লাহ তাআলা সুন্নাহ আমাদেরকে অনুযায়ী আমল করার এবং বিদআত থেকে দূরে থাকার তওফিক দান করুন। আমিন। আল্লাহু আলাম।
 
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার সউদী আরব