Monday, May 31, 2021

ইসলাম গ্রহণের পর নাম পরিবর্তন এবং অমুসলিম পিতামাতার সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা করা ও পানাহারের বিধান

 May be an image of text that says 'ইসলাম প্রহণের পর নাম পরিবর্তন এবং অমুসলিম পিতামাতার সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা করা বিধান 9 পানাহারের'

 

ইসলাম গ্রহণের পর নাম পরিবর্তন এবং অমুসলিম পিতামাতার সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা করা ও পানাহারের বিধান
▬▬▬▬◈◍◈▬▬▬▬
প্রশ্ন: কোনও অমুসলিম যদি ইসলাম গ্রহণ করার পরও পূর্বের নাম পরিবর্তন না করে এবং তার অমুসলিম বাবা-মা ও আত্মীয়দের সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখে এবং তাদের সাথে খানাপিনা করে তবে কি তাকে মুসলিম বলা যাবে? কুরআন-হাদিসের আলোকে এই নাম পরিবর্তন এবং অমুসলিমদের সাথে সম্পর্ক রাখার বিধান কি?
উত্তর:
নিম্নে এ সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর প্রদান করা হল:
◆ ১. মুসলিম কাকে বলে?
যে ব্যক্তি এ সাক্ষ্য প্রদান করবে যে, "আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনও উপাস্য নাই এবং মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ রাসূল" সে ব্যক্তি মুসলিম। ইসলাম গ্রহণের পর তার উপর অপরিহার্য হচ্ছে, আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা এবং ইসলামের মৌলিক বিধিবিধান তথা সালাত, সিয়াম, যাকাত, হজ্জ ইত্যাদি এবং পাক-নাপাক, হালাল-হারাম ইত্যাদি মেনে চলা। তৎসঙ্গে শিরক ও মুশরিকদের থেকে আন্তরিক সম্পর্কচ্ছেদ করা।
 
◆ ২. নাম পরিবর্তন:
নাম পরিবর্তনের ব্যাপারে কথা হল, ইসলামপূর্ব নামটি যদি শিরক, কুফর বা খারাপ অর্থবোধক না হয় তাহলে তা পরিবর্তন করা জরুরি নয়। যেমন: অধিকাংশ সাহাবি ইসলাম গ্রহণের পর পূর্বের নাম পরিবর্তন করেন নি। আবু বকর, উমর, উসমান, আলি, তালহা, আবু সুফিয়ান, খাদিজা, মাইমুনা, যয়নব ইত্যাদি নামগুলো ইসলাম গ্রহণের পূর্বের নাম। ইসলামে আসার পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লাম সেগুলো পরিবর্তন করার নির্দেশ দেন নি।
তবে যদি শিরক-কুফরি ও খারাপ অর্থবোধক নাম হয়, তাহলে তা পরিবর্তন করা অপরিহার্য। যেমন: আবু হুরায়রা রা. এর প্রকৃত নাম ছিল, আব্দুশ শামস (কিরণ দাস)। ইসলাম গ্রহণের পর তার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় আব্দুর রাহমান (পরম করুনাময় আল্লাহর দাস)।
 
◆ ৩. অমুসলিম পিতামাতা ও অন্যান্য আত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা করা:
ইসলাম গ্রহণের পর অমুসলিম পিতামাতা, ভাই-বোন ও অন্যান্য রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক রাখা এবং তাদের সাথে সদাচরণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর উদ্দেশ্য হবে, তাদেরকেও জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করে মুক্তি ও কল্যাণের পথে দাওয়াত দেয়া। অথবা বিশেষ কোনও জরুরি প্রয়োজনে থাকলেও তাদের সাথে সম্পর্ক রাখা জায়েজ। কিন্তু শিরক, কুফরি এবং আল্লাহর নাফরমানি এর ক্ষেত্রে পিতামাতার আনুগত্য করা যাবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন,
 
وَإِن جَاهَدَاكَ عَلَىٰ أَن تُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا ۖ وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا ۖ
 
"পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন বিষয়কে শরিক স্থির করতে পীড়াপীড়ি করে, যার জ্ঞান তোমার নেই; তবে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহবস্থান করবে।" (সূরা লোকমান: ১৫)
অর্থাৎ পিতামাতা যদি সন্তানকে ইসলাম ত্যাগ করতে বলে বা মূর্তিপূজায় অংশ গ্রহণ বা
শরীরে ক্রুশ ঝুলানোর নির্দেশ দেয় তাহলে তাদের আনুগত্য করা যাবে না। কিন্তু তারপরও তাদের সাথে সদাচরণ অব্যাহত রাখতে হবে। কোনও অবস্থায় তাদের সাথে খারাপ আচরণ করা যাবে না। পাশাপাশি যথাসাধ্য তাদের সেবা-শুশ্রুষা, আর্থিক সহায়তা, চিকিৎসার ব্যবস্থা, বিপদে সাহায্য করা ইত্যাদি অব্যাহত রাখবে। এর মাধ্যমে পিতামাতার সাথে সদাচরণ (ইহসান) সংক্রান্ত কুরআনের নির্দেশ বাস্তবায়িত হবে।
তবে মনে রাখতে হবে যে, কোনও মুসলিমের জন্য বিধর্মীদের ধর্ম, তাদের রীতিনীতি, আচার-বিশ্বাস, শিরক, কুফরি এবং ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক কোনও কিছুর প্রতি ভালবাসা পোষণ করা বা এগুলোকে সত্য বলে বিশ্বাস করা জায়েজ নাই। কেউ যদি ইসলাম গ্রহণের পরও তার পূর্বের ধর্ম বা ধর্মীয় রীতিনীতিকে সত্য বলে বিশ্বাস করে বা ভালবাসে তাহলে সে প্রকৃত মুসলিম হতে পারে নি। তার জন্য অবশ্য কর্তব্য হল, পুনরায় নতুনভাবে ইসলাম গ্রহণ করা।
আরও মনে রাখা জরুরি যে, কাফের আত্মীয়-স্বজনের সাথে কুফরি পরিবেশে বসবাসের কারণে যদি ইসলাম পালন করতে বাধাগ্রস্ত হতে হয় অথবা আল্লাহ, রাসূল ও ইসলাম সম্পর্কে মনে সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে অথবা আবার কুফরিতে ফিরে যাওয়ার ভয় থাকে অথবা নানা হারাম ও শরিয়া বিরোধী কার্যক্রমে জড়িয়ে ঈমান ও চরিত্র নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে কিংবা জুলুম নির্যাতনের সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে তাদের সাথে অবস্থান, বসবাস ও সম্পর্ক রাখা বিরাট হুমকির বিষয়।
এ ক্ষেত্রে তার করণীয় হল, নিজের দীন, ঈমান ও আখলাক হেফাজতের স্বার্থে তাদের সঙ্গ ত্যাগ করা এবং দূরে থেকে ফোনে বা লেখালেখির মাধ্যমে অথবা বিভিন্ন উপলক্ষে মাঝেমধ্যে দেখা করতে এসে তাদেরকে কুফরির অন্ধকার থেকে বের করে আলোর পথের সন্ধান দেয়ার চেষ্টা করা।
 
◆ ৪. অমুসলিম পিতামাতার সাথে খাবার গ্রহণ:
ইসলামের দৃষ্টিতে অমুসলিমদের সাথে পানাহার করা নাজায়েজ নয়। কেননা হাদিসে সাব্যস্ত হয়েছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইহুদির দাওয়াত কবুল করেছেন এবং তাদের খাবার খেয়েছেন।
তবে শর্ত হল, এমন কোনও কিছু পানাহার করা যাবে না যা ইসলামে হারাম। যেমন: কুকুর-শুকরের গোস্ত, মদ, মৃত প্রাণী ইত্যাদি। অনুরূপভাবে অমুসলিমদের হাতের জবাই করা প্রাণীর গোস্ত ভক্ষণ করাও হারাম। আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةَ وَالدَّمَ وَلَحْمَ الْخِنزِيرِ وَمَا أُهِلَّ بِهِ لِغَيْرِ اللَّهِ ۖ فَمَنِ اضْطُرَّ غَيْرَ بَاغٍ وَلَا عَادٍ فَلَا إِثْمَ عَلَيْهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
"তিনি তোমাদের উপর হারাম করেছেন, মৃত জীব, রক্ত, শুকর মাংস এবং সেসব জীব-জন্তু যা আল্লাহ ব্যতীত অপর কারো নামে উৎসর্গ করা হয়। অবশ্য যে লোক অনন্যোপায় হয়ে পড়ে এবং নাফরমানী ও সীমা লঙ্ঘনকারী না হয়, তার জন্য কোন পাপ নেই। নিঃসন্দেহে আল্লাহ মহান ক্ষমাশীল, অত্যন্ত দয়ালু। এ ছাড়া সাধারণ ভাত, রুটি, মুড়ি, চিড়া, মিষ্টান্ন দ্রব্য, সবজি, ফল, মূল, মাছ, ডিম ইত্যাদি খেতে কোনও আপত্তি নাই ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬◈◍◈▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

 

 

 

 

 

নবদম্পতি যদি সূর্য উদিত হওয়ার পর ফরজ গোসল করে ফজর সালাত আদায় করে তাহলে তার হুকুম

 May be an image of text that says 'নবদস্পতি যদি সূর্য উদিত হওয়ার পর ফরজ গোসল করে ফজর সালাত আদায় করে তাহলে তার বিধান'

 

নবদম্পতি যদি সূর্য উদিত হওয়ার পর ফরজ গোসল করে ফজর সালাত আদায় করে তাহলে তার হুকুম
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
প্রশ্ন: নতুন বিয়ে হয়েছে। এখন ফরজ গোসল করে নামাজ পড়তে পড়তে যদি সকাল ৭/৮ টা বাজে তাহলে কি নামাজ হবে?
উত্তর:
আল্লাহ তাআলা ইমানদারদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে সালাত আদায় করাকে ফরজ করেছেন।
তিনি বলেন,
إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَّوْقُوتًا ‎
"নিশ্চয় সালাত ফরজ করা হয়েছে মুমিনদের উপর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে।" [সূরা নিসা: ১০৩]
সুতরাং শরিয়ত সম্মত ওজর (যেমন: সফর, বৃষ্টি, ভুলে যাওয়া, ঘুম ইত্যাদি) ব্যতিরেকে তা সময় অতিক্রম করে আদায় করা জায়েজ নাই।
সুতরাং নব দম্পতীর জন্য ফরজ হল, রাতে সহবাস করলে ফজর সালাতের জন্য ফরজ গোসল করে যথাসময়ে সালাত আদায় করা। তারা যদি ইচ্ছাকৃত ভাবে সূর্য উদিত হওয়ার পর গোসল করে সালাত কাজা করে তাহলে ইসলামের ২য় বৃহত্তম ইবাদতে অবহেলা প্রদর্শনের কারণে নিশ্চিতভাবে গুনাহগার হবে। ইসলামের দৃষ্টিতে এটি কুফরি পর্যায়ের গুনাহ।
অনেক আলেমের মতে, এভাবে ইচ্ছাকৃত ভাবে নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হওয়ার পর সালাত আদায় করলেও তা মহান আল্লাহ কবুল করবেন না। কারণ সে শরিয়ত সম্মত ওজর ছাড়া সালাত কাজা করেছে। (আল্লাহ ক্ষমা করুন।)
যাহোক, কেউ অজ্ঞতা বা অলসতা বশত: এমন টি করে থাকলে তার জন্য অপরিহার্য হল, অনতিবিলম্বে মহান আল্লাহর কাছে লজ্জিত অন্তরে খাঁটি ভাবে তওবা করত: ভবিষ্যতে জেনে-বুঝে আর কখনো এমনটি না করার জন্য আল্লাহর নিকট অঙ্গীকার করা। তাহলে দয়াময় আল্লাহ ক্ষমা করবেন বলে আশা করা যায় ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহু আলাম।
 
▬▬▬▬◯◍◯▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব