Friday, May 26, 2023

true manship

#৫

Invincible ignorance fallacy এর ভিক্টিমেরা একেবারে স্পষ্ট সত্য ইগনোর করে অন্য যায়গায় সলিউশন খুঁজতে থাকে। আইনস্টাইনের স্পেশাল রিলেটিভিটি আসলে কোন ব্রেইন রেকিং সমাধান ছিল না, একটা হাইস্কুল পড়ুয়াও সিম্পল এলজেব্রা দিয়ে এটা বুঝতে পারে। অনেকেই এর কাছাকাছি গিয়েছিল যেমন "লরেঞ্জ ট্রান্সফরমেশন", কিন্তু নিউটনীয়ান আইডিয়াতে আটকে থাকার জন্য লরেঞ্জ "সময়"কে সন্দেহ করেনি, ভুল যায়গায় যায়গায় সমাধান খুঁজে চলেছিল অনেকদিন।

১৯৫০ এর পরে ক্রাউড ম্যানিপুলেশনের স্বর্ণযুগ চলে আসে, কারণ টিভি মিডিয়া ও তথ্যেপ্রযুক্তির পপুলাইজেশন। মানুষকে ঘরে বসিয়ে সম্মোহনের এহেন যন্ত্র আগের সভ্যতাগুলোয় ছিল না। ২য় কারণ হলো প্রধানতম দুই বন্ধুকযুদ্ধ শেষ হয়ে বিজয়ী দল নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল, ফলে নতুন এক যুদ্ধ শুরু হয়, "স্নায়ুর যুদ্ধ"। 

ইহুদি এডওয়ার্ড বার্নাইস যাকে ক্রাউড ম্যানিপুলেশনের জনক বলা হয়, দেখান চাইলে কিভাবে পাবলিকের অভ্যাস থেকে শুরু করে অপিনিয়নও ইঞ্জিনিয়ারিং করা যেতে পারে। এই ফর্মূলা গণহারে বিজনেস স্ট্র্যাটেজিতে কাজে লাগানো হয়। গনতান্ত্রিক উপায়ে রাষ্ট্র চালানোর অভিনয় করা ম্যাট্রিক্সের কাছেও এই সিক্রেট ফর্মুলা দরকারি হয়ে উঠে। 

একটা বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে পুরুষ দূর্বলকরণের প্রতি জোড় প্রদান করা হয়। কারণ সবাই জানে একটা সভ্যতার সমস্ত পুরুষ ক্ষেপে গেলে মসনদ উল্টে যেতে পারে, পুনরায় নতুন শক্তির উত্থান ঘটতে পারে। সমস্ত সভ্যতায় পুরুষেরাই ছিল অজেয় শক্তির আঁধার। তারা চাইলে সভ্যতা তৈরি করতে পারত, চাইলে সভ্যতা ধ্বংসও করতে পারত। প্রায় হাজার বছর আগের মোঙ্গল ইনভেশন, দেড় শতাব্দি আগের ফরাসি বিপ্লব থেকে শুরু করে রাশিয়ার জারতন্ত্রের বিলুপ্তি এই ঘটনাই জানান দেয়।  

ম্যাট্রিক্স পুরুষদের দূর্বলতা জানতে পারে, ঘোড়ার লাগাম খুঁজে পায়। সেই লাগাম ধরেই প্রথম টানটা দেয়। ফেমিনিজমের উত্থান হয়। বাচ্চাদের স্কুলে রেখে যখন বাবা-মা দুজনেই ইন্ডাস্ট্রিতে কামলা দিতে ব্যস্ত, তখন সফট ও বোক্সদ পুরুষদের প্রথম জেনারেশন Gen X দেরকে ম্যাট্রিক্স নিজ হাতে ধরে ধরে তৈরি করতে থাকে। মাসকিউলিনিটি টক্সিক হিসেবে দেখানো শুরু হয়। "গুড বয়" "ব্যাড বয়" আর্কিটাইপ করা হয়। যে ভৃত্যের মত ম্যাট্রিক্সের সব কথা শুনে সেই ছেলে হলো গুডবয়। গায়ের জোর হলো নির্বুদ্ধিতা, তাই গুড বয়রা কখনোই মারামারি করে না। 

এই গুড বয়রা বড় হয়ে ম্যান হয়, রিয়েল ম্যান ও নাইনটিজ কিডদের পাপা। রিয়েল ম্যানরা হার্ম করতে অক্ষম হয়, নিজের ইমোশোনের সাথে টাচে থাকে ও বউয়ের সামনে ভেও ভেও করে কাঁদে। নিজেদের বাচ্চার স্ট্রং রোল মডেল বা সুপারহিরো না হয়ে বন্ধু হতে চায়। নাইন্টিজ কিডরা এসব ড্যাডদের জোক বলার অক্ষমতা নিয়ে রসিকতা করে, ইচ্ছা হলে মুড দেখায় আবার অন্যসময় ইচ্ছা হলে জড়িয়ে ধরে। মানে নিজের বন্ধু স্টিফেন বা টমের সাথে যেরকম বাপের সাথেও একই রকম। 

সামান্য পরিমানে T-লেভেল থাকার জন্য হলেও এসব অপমান Gen Xদের গায়ে লাগে, কিন্তু এটাইতো রিয়েল ম্যানের জীবন তাই না? ম্যাট্রিক্স বলেছে যেহুতু সত্যিতো হবেই। যুদ্ধ পরবর্তী সেইফ লাইফ ও ম্যাট্রিক্স দ্বারা ইনডকট্রিনেটেড হবার জন্য Gen Xদের ম্যানলি স্কিল বুমারদের থেকে কম থাকে। এরা বিপদের পড়লে ডিসিশন নিতে গড়িমসি করে। সারাজীবন গুডবয় হয়ে থাকার দরুন এই একই ম্যানলি স্কিলগুলো বাইরে থেকে (যেমন পুলিশ) থেকে আউটসোর্স করা শুরু হয়। স্ট্রং ফ্রেম না থাকার জন্য বাচ্চারা বাপকে রোল মডেল হিসেবে বিশ্বাস করে না ও বাপের ডিসিশনকে শ্রদ্ধা করতে পারে না। 

মেয়েদের বায়োলজি সবসময় একটা ম্যাসকিউলিন ফিগার ক্রেইভ করে সাবকনশাসলি। এটা তাদের প্রটেকটেড ফিল করায়। Gen Xদের কণ্যারা একজন স্ট্রং বাপ পায় না, তাই তারা স্ট্রং ম্যাসকিউলিন ফিগারের অভাব পূরণ করে টক্সিক চ্যাডদের সাথে হুকাপ করার মাধ্যমে। চ্যাডরা তাদের ফেলে চলে যায়, মাঝে মাঝে পেটে বাচ্চাও রেখে যায়। তাদের বিনা প্রশ্নে দেবীর আসনে গ্রহন করে তাদের পরের ভার্সন, বোক্সদ ২.০, মানে সিম্পরাজ মিলেনিয়াল ও কাকলর্ড Gen-Z ছেলেরা।  

এই নতুন জেনারেশনে T-লেভেল আরো আশঙ্কাজনক হারে নেমে যায়। ম্যাট্রিক্স এদের আরো বেশী কাক মাইন্ডেড করে তৈরি করে। Gen Xদের সাথে এত বড় মনস্তাত্ত্বিক পার্থক্যকে ওরা "জেনারেশন গ্যাপ" নাম দেয়, Gen Xদের চিন্তার অসারতাকে একমাত্র দায়ী করে, যেহুতু আগেই বলা হয়েছে বাপদের প্রতি এদের বিশেষ শ্রদ্ধা থাকে না। বউয়ের দেরী করে বাড়ি আসা ও ইচ্ছামত ছেলেফ্রেন্ড ওরা মাইন্ড করে না, কারণ ম্যাট্রিক্স বলেছে এগুলো হলো ইনসিকিউরিটি। তাছাড়া বিয়ে করলেই কি তুমি তার মালিক হয়ে যাচ্ছ নাকি? এরা বউয়ের কোশ্চেনেবল অতীত মেনে নেয় ও অন্ধভাবে বিশ্বাস করে। কারণ ম্যাট্রিক্স বলেছে মানুষ চেঞ্জ হয় আর বিশ্বাস ছাড়া সব সম্পর্কই বৃথা।  

এদের বউয়েরা চ্যাডদের না পেয়ে বা ধোঁকা খেয়ে সেকেন্ড-থার্ড অপশন Beta বয়কে বেছে নেয়। কিন্তু মনে মনে সেই চ্যাডকে ভুলতে পারে না ও রিলেশনশিপের জন্য ডিসফাংশনাল হয়। ম্যাট্রিক্স বলেছে, "You deserve better" তাই চরমভাবে Entitled থাকে। Beta স্বামী তার যতই কেয়ার করুক না কেন, যতই তার করা বাজে ব্যবহারকে ইগনোর করুক না কেন, তত বেশী ঘৃণা জন্মায় স্বামীর প্রতি। এই ঘৃণা আসলে প্রকৃতি প্রদত্ত দূর্বল পুরুষদের শাস্তি দেয়ার মেকানিজম। পান থেকে চুন খসলেই স্বামীকে সেক্সের জন্যে সপ্তাহ-মাসব্যাপী অপেক্ষা করায়। "বিয়ে কি শুধুই সেক্স করার জন্য নাকি?" "বউকি শুধু সেক্স করা ও বাচ্চা পয়দার মেশিন?" এভাবে ইউনিভার্সাল স্বাভাবিক দৈহিক চাহিদার জন্য Beta দের শেইম করা হয়। যদি কখনো এক্সিডেন্টালি কোন চ্যাডের দেখা পেয়ে যায়, তাহলে মাংকি ব্রাঞ্চিং করে সেই ডালে ঝুলে পরে। ৭০% ডিভোর্স মেয়েরাই ইনিশিয়েট করে, তার উপর আগের জামাইর অর্থেক সম্পত্তি বাগিয়ে নেয়।  

এত দিনের এই দূর্বল হয়ে বেড়ে উঠার কারণে ২.০ জেনারেশনের রিজেকশন নেবার ক্ষমতা থাকে না। পরেরদিনই যেয়ে অন্য মেয়েকে এপ্রোচ করার সাহসও থাকে না, থাকলেতো এতদিন বুলশিট সহ্য করত না। এদের কেউ কেউ ওভার এগ্রেসিভ হয়ে যায়, কেউ মেয়েটার উপর প্রতিশোধ নেয়, কেউ নিজেকে শেষ করে দেয়। ম্যাট্রিক্স এটাকে "প্যাট্রিয়ার্কির সমস্যা" হিসেবে টিভিতে প্রচার করে। 

এই বোক্সদ ২.০ রা দুমড়ে মুচড়ে শেষ হবার পর ভাবতে বসে। সেতো সব কিছুই ঠিকমত করেছিল, তাহলে তার সাথেই কেন এমন হলো? বৌ/গার্লফ্রেন্ড নিজেও যাবার আগে বলেছিল, "It's not about you, its about me" তাহলে? 

সাইকোলজিস্ট গাদা টাকা নেবার পর বলেছিল "নিজেকে শুধু শুধু দোষ দিও না। তোমাকে এই আবেগটা একেবারে গভীরে যেয়ে ভালোভাবে বোঝার ট্রাই করতে হবে। তুমি এই একই কাহিনী আমাকে আরো পঞ্চাশবার বলবে এসে এসে তাহলেই হবে"। স্পিরিচুয়াল মানব-ওয়্যারওলফ জয় শেট্টি বলেছে "তুমি ওদের ক্ষমা করে দাও, মানুষ পথ হারায় ওরা পথ হারিয়েছে"। সাধগুড়ুও কিছু একটা বলেছে, কিন্তু সেটার মাথা মুন্ডু না বুঝলেও ভালো লেগেছে। 

আসলে এই সব কিছুই ভুল যায়গায় সমাধান খোঁজা, এক কঠিন গোলকধাঁধায় ঘুরপাক খাবার মতন। কেউই মূল সমস্যায় ফোকাস করতে পারছিল না। আসল সমাধানকে ম্যাট্রিক্স "টক্সিক ও এবিউসিভ" তকমা দিয়ে রেখেছিল। প্যাট্রিয়ার্কিকে এমনভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিল যে, সেখানে হাত দিতে হবে এমনটা কারো মাথায় আসে নি। 

ঠিক এমন সময় আবির্ভাব ঘটেছে, Andrew Tate ও অন্যান্যদের। যেই Invincible ignorance fallacy তে পুরুষেরা আটকে ছিল সেটাই চোখের সামনে Tate ডিবাংক করেছে একের পর এক। পুরুষেরা অবাক হয়েছে, মুগ্ধ হয়েছে আবার রাগে ফুঁসেছেও। কিভাবে এই চোখের সামনেই এতদিন সত্যিটা ঢাকা পড়েছিল? কিভাবে সমাজ সিনেমা নেটফ্লিক্স তাদের একের পর এক ভুল তথ্য দিয়ে সাইকোলজিক্যালি ভঙ্গুর করে রেখেছিল? আসল মুক্তি ছিল, ট্র্যাডিশনাল Masculinity Embrace করার মধ্যে। 

টেইট এমন এক লোক যে কিনা এক সত্যিকারের স্ট্রং বাপের দ্বারা ইনফ্লুয়েন্সড ও বড় হয়েছে। তাই ম্যাট্রিক্সের বুলশিটিং তাকে কাবু করতে পারে নি। সত্যিকারের আলফা ম্যান কেমন হয়, ম্যাট্রিক্সের কথামত না চললে একজন পুরুষ কত গর্বের জীবন লিড করতে পারে তার চাক্ষুশ প্রমাণ টেইট নিজের জীবনে প্রতিফলিত করছে। ছেলেরা আবার তাদের ন্যাচারাল বায়োলজিক্যাল ট্রেইট আলিঙ্গন করা শুরু করেছে।  

চলবে

ওমর বিন মাহতাব 

জুতা কাহিনী

জুতা কাহিনী

১. আমি যখন বাসায় থাকি তখন গোসল বা অজু করতে বাথরুমে যাওয়ার সময় বের হয়ে পরার জুতা নেই না। সরাসরি বাথরুমের দরজায় থাকা জুতা পরে ঢুকে যাই। কাজ সেরে বের হয়ে বাথরুমের দরজায় দাঁড়িয়ে আমার মেয়েকে ডাক দেই। ছেলেরা সাধারণত মাদরাসায় থাকে। তো ডাক শুনে মেয়ে দৌড়ে এসে এক জোড়া জুতা পায়ের সামনে রেখে যায়। ছেলেরা বাসায় থাকলে তাদের কেউ একজন এসে রেখে যায়। আমি তখন তাদের জন্য দুআ করি,

اَللّٰهُمَّ عَلِّمْهُمُ الْكِتَابَ وَفَقِّهْهُمْ فِي الدِّيْنِ
(আল্লাহুম্মা আল্লিমহুমুল কিতাবা ওয়া ফাক্কিহ্হুম ফিদ দীন) 
হে আল্লাহ, আপনি তাদেরকে কিতাবের (কুরআনের) ইলম এবং দীনের গভীর বুঝ দান করেন। [১]

হাদিসে দুআটি এক বচনে আছে। বাসায় জুতাও একজনই এগিয়ে দেয়। কিন্তু ছেলে মেয়েরা সবাই যেহেতু কাজটি করতে চায়, তাই সবার জন্য দুআ করা। 

২. দুই বছর আগের কথা। আম্মাকে নিয়ে মগবাজারের এক চক্ষু হাসপাতালে গেলাম। আম্মা আপাদমস্তক বোরকায় ঢাকা। মহিলা ডাক্তার দেখিয়ে চেম্বার থেকে বের হয়ে আসলেন। আমি দেখলাম, আম্মার জুতা জোড়া একটু দূরে সরে গিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই আমি এগিয়ে গিয়ে জুতা জোড়া আম্মার পায়ের সামনে রাখলাম। আম্মা জুতা পরে হাঁটা দিলেন। আমিও চললাম। পিছন থেকে আওয়াজ শুনলাম, এক মহিলা তার ছেলেকে বলছেন,
 দেখছস, এত বড় বেডাও মায়ের জুতা আগায়া দেয়! 

৩. আমার খালা বাসা পালটে খিলগাঁও থেকে মতিঝিল ওঠলেন। নতুন বাসা বহুতল ভবনের ৮ম তলায়। কয়েকজন দিনমজুর কুলি তাদের মালপত্র ওঠিয়ে দিল। কুলিরা নেমে যাওয়ার পর দেখা গেলো, একজন তার জুতা ওপরে রেখেই লিফট বেয়ে নেমে গেছেন। 
খালা তার বড় ছেলেকে জুতা জোড়া দিয়ে নিচে পাঠালেন। 
আমার খালাতো ভাই নিচে এসে জুতা জোড়া দিনমজুর মুরুব্বির পায়ের সামনে রাখলেন। 
মুরুব্বী আবেগপ্রবণ হয়ে গেলেন। তিনি ছোট ছেলেটার মাথায় হাত রেখে দিল থেকে দুআ করে দিলেন। 

আসলে জুতা সামান্য বিষয়। কিন্তু এর মাধ্যমে অর্জন করার অনেক কিছু আছে। তাই নিজেরা অন্যের জুতার খিদমাত করি। সন্তানকেও শিক্ষা দেই। আর কেউ খিদমাত করলে দিল থেকে দুআ করি। 

বি: দ্র: দিনমজুরের সামনে জুতা এগিয়ে দেয়া আমার সেই খালাতো ভাইয়ের বাবা অর্থাৎ আমার খালু মারাত্মক এক্সিডেন্ট করে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি আছে। লাইফ সাপোর্টে আছে। সকলের কাছে ওনার সুস্থতা, হেদায়েত এবং আমলী জিন্দেগীর জন্য দুআর দরখাস্ত। 

[১] দ্রষ্টব্য: সহীহ বুখারী, ৭৫, ১৪৩; সহীহ মুসলিম, ২৪৭৭।

- আহমাদ ইউসুফ শরীফ