Saturday, March 23, 2024

Parenting tips

একটা প্যারেন্টিং টিপস শেয়ার করি।

বাচ্চাদের তারবিয়াতে যতটা সময় দিবেন তার থেকে বেশি সময় দিবেন দুয়াতে।

আল্লাহ যেন বাচ্চাকে আদব- আখলাক, শান্ত-ভদ্র, অনুগত, গুনধর, সুস্থ-সবল, ঈমান ও তাকওয়া দিয়ে পূর্ণ করে দেন। বাচ্চা যদি কান্না করে, ঘুম-খাবার নিয়ে জ্বালাতন করে, এসব ঠিক করতে তার পেছন যতটা সময় দিবেন তার থেকে বেশি সময় দিবেন দুয়াতে, আল্লাহ যেন তার এসব দূর করে দেন।

জন্মের আগেও দুয়া করবেন, পরেও করবেন, প্রতিদিন করবেন। বাচ্চা পালায় আপনার একমাত্র হেল্পার যদি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা হয়ে যান তবে আপনার আর পেরেশানি কিসে?

বাচ্চার জন্য ঘুমাতে পারেন না, বা কাচা ঘুম ভেংগে যাচ্ছে, মাথা ব্যথা করছে, মেজাজ চটে যাচ্ছে, আল্লাহর কাছে দুয়া করেন, আল্লাহ যেন কাচা ঘুম থেকে উঠলেও আপনাকে সম্পূর্ণ সুস্থ রাখেন, আল্লাহ যেন মাথা ব্যথা না দেন, আল্লাহ যেন আপনার মাথা ও দিলে সুকুন দেন, বাচ্চার প্রতি যেন অনেক মায়া দেন। 

সন্তান মা-বাবার উপর ভয়াবহ কঠিন এক দায়িত্ব। বাবা থেকে মায়ের বেশি, এই দায়িত্ব আমরা একা কোনোদিন সুন্দরভাবে পালন করতে পারব না যদি না আল্লাহ আমাদের সহায়তা করেন। 
লা হাওলা ওয়ালা ক্বুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ এই দুয়াটা বেশি বেশি পড়বেন যখন বাচ্চার প্রতি কোনো কারণে অধৈর্য হয়ে পড়েন৷ 

১০ বছরের আগে বাচ্চার শরীরে আঘাত করা, তাকে খুব তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে বকা দেওয়া এটা তার প্রতি জুলুম, তার হক নষ্ট করার শামিল। হাদিসে বাচ্চাদের শাসন করার কথা এসেছে সর্বপ্রথম নামাজের জন্য৷ যদি ১০ বছর হয়ে যায় তাও নামাজে গাফেল থাকে তবে তখন তাকে প্রহার করা যাবে। আর সেটা কীভাবে? মিসওয়াক দিয়ে হাতে বা পিঠে। তাও প্রথম ২ মাইর নিজের হাতে দিয়ে এরপর ৩য় মাইর বাচ্চাকে দিতে হবে। প্রথম ২ মাইর কেন নিজের হাতে জানেন? এর হিকমা কী?

আমাদের যখন রাগ উঠে, আমরা প্রহার করতে চাই তখন আমাদের হিতাহিতজ্ঞান লোপ পায়। আমরা জোরে আঘাত করি। আর সেই জোরে আঘাতটা যাতে নিজের হাতেই হয় তাই প্রথম ২ আঘাত নিজেকে করতে হবে, এতে রাগও কমবে, ব্যথাটা নিজে পেলে হিতাহিতজ্ঞানও ফিরে আসবে যে বাচ্চার উপর জুলুম যেন না হয়। 

আবারও বলি, সন্তান আমাদের কাছে আল্লাহর আমানত। আমরা তাদেরকে কিনে নেই না আল্লাহর থেকে৷ তাদেরকে উত্তম তারবিয়াত দেওয়া, উত্তম আচরণ করা, সমর্থ্য অনুযায়ী তাদের ভরনপোষণ করা আমাদের দায়িত্ব, এইগুলো পাওয়া তাদের হক।

তাই আমরা বাচ্চার জন্মের আগে থেকে তাদের তারবিয়াত শুরু করব, যাতে তারা শয়তানের প্ররোচনায় না পড়ে। অবাধ্য, বেয়াদব, অশান্ত, ঈমানহীন ইত্যাদি না হয়৷ 

তারা যেন ছোটো থেকেই মা-বাবার বাধ্য থাকে, তাদের জীবনের প্রতিটা গতিপথে যেন মা-বাবার নজর থাকে। কী করছে, কী ভাবছে, কী করবে, কার সাথে মিশবে ইত্যাদি সব কিছুতে সব সময় মা-বাবার তদারকি, সাপোর্ট ও নাসিহা থাকবে। সব সময় কড়া শাসন, রাগ প্রকাশ, লঘু পাপে গুরু দন্ড, তাচ্ছিল্য, নিচু করা এসব যেন না থাকে। বাচ্চাদের সবচেয়ে কাছের বন্ধুটা, আশ্রয়ের জায়গা, শান্তির জায়গাটা যেন মা-বাবা হয় সেটা নিশ্চিত করা মা-বাবার দায়িত্ব। 

আমাদের সময়গুলোর হকদার আমাদের সন্তানরা। দৈনন্দিন যত জরুরী কাজকর্ম আছে, সব শেষে যে সময়টুকু থাকে তা শুধুমাত্র তাদেরই প্রাপ্য। তাদের শরীর ও মনের স্পর্শে থাকা খুব জরুরী।

আর এই সমস্ত কিছু আল্লাহ সহজ করে দিবেন যখন আপনি প্রতিনিয়ত আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবেন। বাচ্চা পালার ক্ষেত্রে সবর চাইবেন না। বরং সাহায্য চাইবেন ও যে সমস্যা সেটা থেকে দ্রুত মুক্তি চাইবেন। 

#Zain

Wednesday, March 20, 2024

বাচ্চা পালন

যে কথা গুলো কখনই আপনার শিশুকে বলবেন না।

১। “তুমি পচা” --শিশুরা অবুঝ। তারা স্বর্গের সন্তান। তারা নিষ্পাপ। কিন্তু তাই বলে তাদের আত্মসম্মানবোধের কোন কমতি নেই। তারা ভুল করবে এটাই স্বাভাবিক। তার জন্যে তিরস্কারও করা যেতে পারে, তবে তা মোটেও নেতিবাচক ভঙ্গিতে নয়। “তুমি খারাপ”, এই সাধারণ কথাটাও তার মধ্যে হীনম্মন্যতা সৃষ্টি করতে পারে। নেগেটিভ কথা বলতে হবে পজেটিভ ভঙ্গিতে। যেমন, “তুমি তো অনেক ভালো। ভালো বাবুরা কি অমন আচরণ করে? এতে অন্যেরা কষ্ট পায় না?”। এতে তার প্রশংসা করে উৎসাহও দেয়া হলো, এবং অন্যকে কষ্ট দেয়া ঠিক নয়, এই বোধও তার মাঝে জাগ্রত হলো। 
২। ‘না’ --সবসময় না শুনতে শুনতে তারা আপনার প্রতি শ্রদ্ধা এবং বিশ্বাস হারাতে পারে। একদম চাছাছোলা না এর বদলে তাকে বিকল্প কিছু ব্যবহারের সুযোগ দিতে পারেন। যেমন, “এ্যাই, চিৎকার করবা না” এর দলে বলতে পারেন, “একটু আস্তে কথা বলতে পারো না সোনা!” অথবা “বাসার মধ্যে খেলবে না” এর বদলে বলুন, “বাইরে গিয়ে খেলো লক্ষ্ণী বাবা”। 
৩। “চুপ কর, আর একটি কথাও নয়” -এই কথাটি আপনার এবং তার মধ্যিকার সেতুটা গুড়িয়ে দেয়। তাকে বলতে দিন, যুক্তি উপস্থাপনের সুযোগ দিন, হোক না খানিক তর্ক! তার ভুলটা ধরিয়ে দিন। তার কথাও মন দিয়ে শুনুন। এই আচরণ তার মধ্যে একটা বোধ সৃষ্টি করবে, “আমার কথারও গুরুত্ব আছে”। সেই সাথে আপনার প্রতি সম্মানও বৃদ্ধি পাবে। জোর করে চাপিয়ে দেয়া যে কোন কিছুই শিশুর জন্যে ক্ষতিকর। 
 ৪। “তুমি কেন ওর মত হতে পারো না?”
-এটা খুব কমন এবং মারাত্মক ক্ষতিকর একটা বাক্য। এতে যার সাথে তুলনা করে বলা হচ্ছে, তার প্রতি সে ঈর্ষান্বিত হবে এবং সম্পর্কের মান নেমে যাবে। নিজেকে সে ব্যর্থ মনে করবে। তার আত্মবিশ্বাস কমে যাবে। 
৫। “যাও তো এখান থেকে!” --আপনার শিশুর কাছে আপনিই সব। সে আপনার কাছ থেকে ভালোবাসা চায়, মনোযোগ চায়। তাকে চলে যেতে বলা, অথবা তার কাছ থেকে চলে যেতে চাওয়া, এসব তার কোমল মনে গভীর প্রভাব ফেলে। 
৬। “কেউ তোমার মত বাচ্চা চায় না”-- সমস্যাগ্রস্ত শিশুরা কিন্তু আমাদের আচরণেরই বাইপ্রোডাক্ট। তারা যদি ভালো আচরণ শিখতে না পারে, তবে তার দায় আমাদেরই। কারণ আমাদের দেখেই তারা শেখে। আমাদের কারণেই তারা পৃথিবীতে এসেছে এবং জীবন যাপন করছে। তাই কোনভাবেই তাদের কে এমন কথা বলা উচিত নয়। 
৭। “তুমি এটা পারবে না” --অনেক সময় তারা সাধ্যের অতীত কিছু করতে চায়। সেক্ষেত্রে সরাসরি না বলে ব্যাপারটা অন্যভাবে সমাধা করতে পারেন। ধরুন, সে একটি ভারী চেয়ার তুলতে চাইলো। তাকে এভাবে বলুন, “দেখো পারো কি না”, অথবা “তুমি ব্যথা পাবে সোনা, আমি করে দিই”। সবচেয়ে ভালো হয় যদি বলেন, “ চলো দুজনে মিলে করি”। এতে করে চেয়ারও তোলা যাবে, সাথে সে দলগতভাবে কাজ করার শিক্ষাও পাবে। 
৮। “ছেলেরা/মেয়েরা এটা করে না” --শিশুরা তো শিশুই। তাদের মধ্যে লিঙ্গবিভেদ করা ঠিক না। সে তার মত করে চলুক। বাধা দিলে সে বরং জীবনের নব নব রূপ দেখা থেকে বঞ্চিত হবে। তারা হোক আরো কৌতুহলী, জিজ্ঞাসু এবং দক্ষ। 
৯। “দাঁড়াও, তোমার বাবা/মা আসুক!” --এটা বহুলচর্চিত একটি ভুল। এতে শিশুরা উদ্বিগ্ন এবং শঙ্কিত হয়ে পড়ে, বিশেষ করে বারবার যদি এমন বলা হয়। যদি সে বারবার কোন একটা ভুল করতেই থাকে তাহলে আপনার অর্ধাঙ্গী/অর্ধাঙ্গীনিকে জানান ব্যাপারটা এবং আলোচনা করুন। অথবা বাচ্চাকে জিজ্ঞেস করুন, “তোমার বাবা/মা’কে তুমি বলবে নাকি আমি তাকে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলবো?” । এভাবে আপনার শিশুকে তার ভুলের দায়ভার নিতে শেখান। 
১০। “এটা করো না, তুমি বড় হয়ে গেছ” --শৈশব তো একবার গেলে আর ফিরে আসবে না। তাই তাকে উপভোগ করার স্বাধীনতা দিন। সময় হলে বয়সের ভার সে নিজেই উপলব্ধি করবে। তার ওপর বয়স চাপিয়ে দেয়ার দরকার নেই। চাইলে আপনিও তার সাথে খেলায় মেতে উঠুন। আপনার শিশুকে আনন্দে রাখার দায়িত্ব তো আপনারই, তাই না?