নারীকে গণহারে (বিনাপ্রয়োজনে) চাকুরিতে আসতে উদ্বুদ্ধ করার যে ট্রেন্ডটা, সেটা পুরুষ তৈরি করেছে পুঁজিপতি পুরুষেরই সুবিধার্থে।
নারীকে পুঁজিবাদের ওয়ার্কফোর্সে টেনে আনার একটা ফাঁদ এই স্বাবলম্বিতা, এই ক্ষমতায়ন, এই চাকরির টোটকা। একটু চিন্তা করুন, চাকরির বাজারে শুধু পুরুষ। এবার চাকরির বাজারে সমান সংখ্যক নারী চলে এল। শ্রমের যোগান বেড়ে গেল। চাহিদার চেয়ে যোগান বেড়ে গেলে মূল্য কমে যায়। শ্রম হয়ে গেল সস্তা। কার লাভ? ভেবে বল। যাদের লাভ, ‘নারী, চাকরি করো’— এটাও তাদেরই বুলি।
তাদের—
* নারীশিক্ষা মানে শিক্ষিত হয়ে চাকুরিতে আসো।
* নারী অধিকার মানে ঘরের বাইরে চাকুরি করার অধিকার,
* নারীর ক্ষমতায়ন মানে চাকুরি করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা।
* নারী স্বাধীনতা মানে পরিবারের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে চাকরি করার স্বাধীনতা।
* নারী, তোমার স্বামী তোমার উপর জুলুম করে, ডিভোর্স দিয়ে চাকরি কর, সমাধান।
* তোমার উপর ম্যারিটাল রেপ হয়, চাকরি কর।
* পুরুষতান্ত্রিক সমাজ তোমার ভাল চায় না, চাকরি কর।
সব কিছুর সমাধান হলো, চাকরি কর, অর্থনীতিতে আসো, টাকা কামাও। আমার কাজে লেগে যাও। ব্যস। এটাই সমাধান। এটাই আলাদিনের জাদুর চেরাগ।
কেননা নারীদের শ্রমবাজারে রাখাটা পুঁজিপতিদের পক্ষে ব্যাপক লাভজনক। এতে চাকুরির প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়। মেয়েদের জন্য চাকরি অপশনাল, আর পুরুষের তো ‘না হলেই নয়’। ফলে, পুরুষরা আগের চেয়ে কম বেতনেও শ্রম দিতে তৈরি থাকে। [গ] ১৯৬০-এর দশকের শেষার্ধে কর্মক্ষেত্রে পুরুষের বেতন কমে যায়, বেকারত্ব বেড়ে যায়। (Hernandez 1993, Zill & Nord 1994) । বাংলাদেশে আজও সরকারি হিসেবেই ২৬ লক্ষ পুরুষ বেকার, যাদের চাকরি প্রয়োজন। আজকে আপনার বেকারত্বের পিছনে, কম বেতনে বেশি খাটার পিছনে এইসব নারীবাদী পলিসি দায়ী। মার্কেটে একটা কৃত্রিম প্রতিযোগিতা তারা তৈরি করে রেখেছে।
পুঁজিপতিরা তো চায়, বেতন কম দিলে পুঁজিপতির পকেটে মুনাফা থাকবে বেশি। তাহলে নারীদের এখন শ্রমবাজারে ধরে রাখতে হবে যেকোনো মূল্যে। আর নারীদের শ্রম ধরে রাখতে হলে করতে হবে তিনটি কাজ—
* পরিবার গঠন-কে পেছাতে হবে স্বাবলম্বী হবার নামে। নারীদেরকে পরিবারমুখী থেকে ক্যারিয়ারমুখী করতে হবে। [ঘ] চাকরি, ক্যারিয়ার—এসবকে মর্যাদার কাজ হিসেবে বুঝাতে হবে।
* ‘আগে আগে বিয়ে’-কে ভিলেন বানাতে হবে। [ঙ]
* বিয়ে, গর্ভধারণ, বাচ্চাপালন-কে ছোট ও ঘৃণ্য কাজ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যেন এগুলো করতে নারী অনীহা বোধ করে। [চ]
নারীকে তার জেন্ডার রোল থেকে বাইরে বের করে পুরুষের সাথে প্রতিযোগিতায় লাগিয়ে দিতে হবে।
শারীরিক গঠনের পার্থক্য এমনভাবে এসেছে, যাতে নারী-পুরুষের কেন্দ্রীয় উদ্দেশ্য আলাদা হয়ে গেছে। পুরুষ বাইরে প্রতিকূলতা চষে বেড়াবে, জীবিকা আনবে, প্রতিপত্তি দিয়ে নারী-শিশুর জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করবে। আর নারী ঘরে অনুকূল পরিবেশে সন্তান সামলাবে, সন্তানকে স্বাবলম্বী মানব হিসেবে জীবনযুদ্ধের জন্য রেডি করবে। এটা হচ্ছে আমাদের বায়োলজিক্যাল ভূমিকা। জেন্ডার রোল পুরোটাই সমাজ শেখায় না। আমাদের দেহমনের নকশার ভেতরে আছে জেন্ডার রোল।
৯টা-৫টা চাকুরির নামে বায়োলজিকে অস্বীকার করে নারীরা নিজেদের অসুস্থ করে ফেলছে, পরবর্তী প্রজন্মকে অসুস্থ করে ফেলছে। কীভাবে সেটা দেখবো সামনের পোস্টে। নারীদের গণহারে চাকরিতে আসার দ্বারা লাভবান হয় কিছু লোভী পুরুষ, লোভী স্বামী। আর লুজার হয় নারী নিজে। সেই লসের মাশুল সে দিবে নিজ শরীরের অসুস্থতা দিইয়ে, মানসিক অস্থিরতা দিয়ে, সন্তানের সাথে দূরত্ব দিয়ে এবং সন্তানের অবিকাশ দিয়ে। বিনা প্রয়োজনে নারীর চাকুরির মানসিকতায় ভুক্তভোগী নারীই, অন্য কেউ না।
আমার বউ চাকরি করলে তো আমারই লাভ। যদি আল্লাহকে ভয় না করতাম, তবে স্ত্রীকে অবশ্যই চাকরি করতে বাধ্য করতাম। আল্লাহর দেয়া কর্মবণ্টনকে যদি স্বীকার না করতাম, ২০-৩০ হাজার টাকার লোড অবশ্যই নিজের উপর থেকে কমিয়ে ফেলতাম ।
Dr. Shamsul Arefin