Wednesday, May 26, 2021

রাসূলের উপর দরুদ ও সালাম পাঠ

 রাসূলের উপর দরুদ ও সালাম পাঠ

 

প্রথম পর্ব: দরুদের পরিচয়, দরুদ পাঠের উদ্দেশ্য ও এর পেছনে প্রজ্ঞা

দরুদ এমন একটি আমল, যার মধ্যে আছে জীবনের যেকোনো সমস্যার সমাধান। মানুষ এই মহান আমলটিকে তেমন গুরুত্ব দেয় না।
.
প্রথমেই জেনে রাখি: দরুদ শব্দটি ফার্সি; কুরআন-হাদিসে ‘সালাত’ শব্দটি এসেছে দরুদ বোঝাতে। আল্লাহ্ বলেন, ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি সালাত (দরুদ) প্রেরণ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি প্রচুর পরিমাণে সালাত (দরুদ) ও সালাম প্রেরণ করো।’’ [সূরা আহযাব, আয়াত: ৫৬]
.
আল্লাহ্ ঈমানদারদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘তিনি (আল্লাহ্) তোমাদের প্রতি সালাত প্রেরণ করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণও।’’ [সূরা আহযাব, আয়াত: ৪৩]
.
সালাতের অর্থ ও মর্ম কী এ নিয়ে আলিমগণ বিভিন্ন মত দিয়েছেন। সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ও উত্তম মত হলো: আল্লাহ্ যখন সালাত প্রেরণ করেন, এর উদ্দেশ্য হলো রহমত বর্ষণ করা, সম্মানিত করা; ফেরেশতারা যখন কারো উপর সালাত প্রেরণ করেন, তখন উদ্দেশ্য হলো, তার জন্য আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করা এবং ঈমানদাররা যখন সালাত প্রেরণ করেন, তখন এর উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহর কাছে রহমত বর্ষণ ও মর্যাদা বৃদ্ধির দু‘আ করা।
.
সুতরাং আমরা যে নবীজির উপর দরুদ প্রেরণ করি, এর মানে হলো, আমরা আল্লাহর নিকট তাঁর জন্য রহমত কামনা করি ও মর্যাদা বৃদ্ধির দু‘আ করি।
.
নবীজির উপর দরুদ পাঠের উদ্দেশ্য ও এর পেছনে কী হিকমাহ (প্রজ্ঞা) আছে?
.
আল্লামা হালিমি (রাহিমাহুল্লাহ্) তাঁর ‘শু‘আবুল ঈমান’ গ্রন্থে বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর সালাত বা দরুদ পাঠের উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহর আদেশ পালনের মাধ্যমে (উপরে বর্ণিত আয়াতে আল্লাহ আদেশ করছেন দরুদ পড়তে) আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা এবং আমাদের উপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যে অধিকার আছে, তা আদায় করা।’ [ফাতহুল বারি: ১৪/৩৯২, মির‘আতুল মাফাতিহ: ৩/২৫২]
.
প্রকৃত অর্থেই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতের জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন এবং হাশরের মাঠেও যেভাবে (আল্লাহর ইচ্ছায়) উম্মতের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করবেন, সেই হিসেবে আমাদের উপর তাঁর অনুগ্রহ সীমাহীন। সুতরাং, আমাদের উচিত সাধ্যানুযায়ী খুব বেশি পরিমাণে তাঁর উপর সালাত (দরুদ) প্রেরণ করা।
.
আরেকটি বিষয় হলো, নবীজির উপর সালাম প্রেরণ করা। এটি আমরা সবাই বুঝি। তবুও এ সংক্রান্ত সুস্পষ্ট আলোচনা সামনে আসবে। 
 
 
 
 
দ্বিতীয় পর্ব: রাসূলের উপর দরুদ পাঠ করার অপরিসীম গুরুত্ব; দরুদ না পড়ার পরিণতি ও শাস্তি
 
 
রাসূলের উপর দরুদ পাঠ করার অপরিসীম গুরুত্ব এবং দরুদ না পড়ার পরিণতি ও শাস্তি
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘কোন সম্প্রদায় যখন কোন মজলিসে (বৈঠকে) বসে, সেখানে যদি তারা আল্লাহর যিকর না করে এবং তাদের নবীর উপর দরুদ পাঠ না করে, তবে তা তাদের জন্য আফসোস ও ক্ষতির কারণ হবে। ইচ্ছা করলে আল্লাহ্ তাদের শাস্তি দিবেন আর ইচ্ছা করলে তাদের তিনি মাফ করে দিবেন।’’ [তিরমিযি: ৩৩৮০, সহিহাহ: ৭৪, (সহিহ)]
.
অন্য হাদিসে দরুদ পাঠ না করা ব্যক্তিকে কৃপণ হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘কৃপণ ঐ ব্যক্তি, যার সামনে আমার আলোচনা করা হলো, অথচ সে আমার জন্য দরুদ পাঠ করলো না।’’ [বুখারি, আল-আদাবুল মুফরাদ: ৫/১৪৮, তিরমিযি: ৩৫৪৬, (হাসান)]
.
আমাদের দু‘আ কবুল হওয়ার অন্যতম একটি মাধ্যম হলো দু‘আর পূর্বে রাসূলের উপর দরুদ পাঠ করা।
.
উমার (রা.) ও আলী (রা.)— তাঁরা দুজনই বলেছেন, ‘সকল দু‘আ পর্দার আড়ালে থাকবে, যতক্ষণ না নবীর উপর দরুদ পাঠ করা হবে।’ [তিরমিযি: ৪৮৬, সহিহাহ: ২০৩৫, (হাসান)]
.
কারো সামনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আলোচনা করা হলে, তার উপর কর্তব্য হলো, সে দরুদ পাঠ করবে।
.
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশ কঠিন ভাষায় বলেছেন, ‘‘অপদস্থ হোক ঐ ব্যক্তি, যার সামনে আমার আলোচনা করা হলো, অথচ সে আমার জন্য দরুদ পাঠ করলো না।’’ [তিরমিযি: ৩৫৪৫, (হাসান)]
.
এগুলো তো গেলো দরুদ পাঠের গুরুত্ব ও না পড়ার ধমকি। আর দরুদ পাঠ করার বিরাট বিরাট ফজিলত ও লাভ রয়েছে। সেগুলো আমরা দুই পর্বে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ্। আজ একটি ফজিলত তুলে ধরবো।
.
কেউ যদি একবার মাত্র নবীজির উপর দরুদ পড়ে, তবে এর বিনিময় হিসেবে নবীজি তার জন্য ১০ বার দু‘আ করেন! সুবহানাল্লাহ্।
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরুদ পাঠ করে, আমি তার জন্য ১০ বার দরুদ পাঠ করি (দু‘আ করি)।’’ [তাবারানি: ২৬৯২, মাজমাউয যাওয়াইদ: ১০/১৬৩, (বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য)]
 
 
 
 
তৃতীয় পর্ব: নবীজির উপর দরুদ পাঠের অনন্য ১০ টি লাভ ও উপকারিতা (সহিহ হাদিস থেকে)

নবীজির উপর দরুদ পাঠের অনন্য ১০ টি লাভ ও উপকারিতা (সহিহ হাদিস থেকে)
➖➖➖➖➖◄❖►➖➖➖➖➖
❑ |১| সকল দুশ্চিন্তামুক্তি ও প্রয়োজন পূরণ:
.
একজন সাহাবি রাসূলকে বলেছিলেন, তিনি তাঁর উপর সর্বদা দরুদ পাঠ করবেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলেছিলেন, ‘‘যদি তুমি তাই করো, তবে তোমার সকল চিন্তা ও উৎকণ্ঠা দূর করা হবে (প্রয়োজন পূরণ হবে) এবং তোমার পাপসমূহ ক্ষমা করা হবে।’’ [তিরমিযি: ২৪৫৭, হাকিম: ২/৪৫৭, হাদিসটি সহিহ]
.
❑ |২| রহমতপ্রাপ্তি, গুনাহমুক্তি ও মর্যাদাবৃদ্ধি:
.
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার উপর দশবার রহমত বর্ষণ করবেন।”
[সহিহ মুসলিম: ৪০৮]
.
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যত্র বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ্ তার প্রতি ১০ বার রহমত বর্ষণ করবেন, ১০ টি গুনাহ মোচন করবেন এবং তার জন্য ১০ টি স্তর উন্নীত করবেন।’’ [নাসায়ি: ১২৯৭, মুসতাদরাক হাকিম: ১/৫৫০, সহিহ ইবনু হিব্বান: ৯০৪, হাদিসটি সহিহ]
.
অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে, একবার দরুদ পাঠ করলে আল্লাহ্ ৭০ বার তার প্রতি রহমত পাঠাবেন এবং ফেরেশতাগণ ৭০ বার রহমতের দু‘আ করবেন। [মুসনাদ আহমাদ: ২/১৭২, আত তারগিব: ৬৮০, হাদিসটি হাসান]
.
❑ |৩| দরুদ মুমিনের জন্য যাকাতস্বরূপ:
.
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমার উপর দরুদ পড়ো। কেননা এটা তোমাদের জন্য যাকাতস্বরূপ।’’ (এ সংক্রান্ত একটি সহিহ দরুদ পরবর্তী কোনো পর্বে আসবে ইনশাআল্লাহ্) [মুসনাদ আহমাদ: ৩/৩৬৫, ইবনু আবি শাইবাহ: ৮৭৯৬, হাদিসটি নির্ভরযোগ্য]
.
❑ |৪| কিয়ামতের মাঠে নবীজির সান্নিধ্য:
.
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কিয়ামতের দিন সেই ব্যক্তি সব লোকের চাইতে আমার বেশি নিকটবর্তী হবে, যে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমার উপর দরুদ পড়বে।” [সুনানে তিরমিযি: ৪৮৪, সহিহ আত তারগিব: ২/১৩৬, হাদাসটি হাসান]
.
❑ |৫| রাসূলের কাছে দরুদ পেশ করা হয়:
.
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম দিন হচ্ছে জুমুআর দিন। সুতরাং এই দিনে তোমরা আমার উপর বেশি করে দরুদ পড়ো। কেননা, তোমাদের দরুদ আমার কাছে উপস্থাপন করা হয়।” [আবু দাউদ: ১০৪৭, নাসায়ি: ১৩৭৪, হাদিসটির সনদ সহিহ]
.
❑ |৬| নবীজির শাফায়াত লাভ:
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি সকালে দশবার এবং বিকেলে দশবার দরুদ পাঠ করবে, সে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন আমার শাফা‘আত (সুপারিশ) লাভ করবে।’’ [মাজমাউয যাওয়াইদ: ১৭০২২, সহিহ আত তারগিব: ১/২৭৩, জামি‘উস সগির: ৬/১৬৯, হাদিসটি হাসান]
.
অন্য বর্ণনায় ‘নিষ্ঠার সাথে’ পড়ার কথা বলা হয়েছে। (এ সংক্রান্ত একটি সহিহ দরুদ পরবর্তী কোনো পর্বে আসবে ইনশাআল্লাহ্) [তাবারানি, কাবির: ৫১৩, আল কাউলুল বাদি’: ১৬০, রাবিগণ নির্ভরযোগ্য]
.
❑ |৭| দরুদ দু‘আ কবুলের অন্যতম উপায়:
.
একবার ইবনু মাস‘উদ (রা.) সালাতের বৈঠকে বসে প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণ বর্ণনা করেন, অতঃপর রাসূলের উপর দরুদ পাঠ করেন, তারপর নিজের জন্য দু‘আ করেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘এখন চাও, তোমার (প্রার্থিত বস্তু) তোমাকে দেওয়া হবে; এখন চাও, তোমার (প্রার্থিত বস্তু) তোমাকে দেওয়া হবে।’’ [তিরমিযি: ২/৪৮৮, হাসান]
.
আরেকজন ব্যক্তি প্রথমেই নিজের জন্য চাওয়া শুরু করেন। তাকে দেখে নবীজি বলেন, ‘‘সে অনেক বেশি তাড়াহুড়া করে ফেলেছে।’’ [আবু দাউদ: ১৪৮১, হাসান]
.
❑ |৮| রাসূলের দু‘আ লাভের সুযোগ:
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরুদ পাঠ করে, আমি তার জন্য ১০ বার দরুদ পাঠ করি (দু‘আ করি)।’’ [তাবারানি: ২৬৯২, মাজমাউয যাওয়াইদ: ১০/১৬৩, (বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য)]
.
❑ |৯| দরুদ (গুনাহর) কাফফারাস্বরূপ:
.
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমরা আমার উপর দরুদ পড়ো। কেননা, আমার উপর দরুদ পড়া তোমাদের জন্য কাফফারা (প্রায়শ্চিত্য)।’’ [ইবনু আবি আসিম, আস সলাতু ‘আলান নাবিয়্যি: ৭৮, ইবনু হাজারের মতে, সনদের রাবিগণ সহিহ হাদিসের রাবি]
.
❑ |১০| অনন্য মর্যাদা ও বৈশিষ্টপূর্ণ আমল:
.
কুরআনুল কারিমে এসেছে, ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি সালাত (দরুদ) প্রেরণ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি সালাত (দরুদ) ও সালাম প্রেরণ করো।’’ [সূরা আহযাব, আয়াত: ৫৬]
.
আল কুরআনে অন্য কোনো আমলের ক্ষেত্রে এমনটি বলা হয়নি যে, ‘স্বয়ং আল্লাহ্ ও তাঁর ফেরেশতাগণ এরূপ করেন, সুতরাং তোমরাও করো।’ নিঃসন্দেহে এটি দরুদের বিশেষ মর্যাদা ও অনন্য বৈশিষ্টের প্রমাণ।
.
আল্লাহ্ তা‘আলা আমাদের তাওফিক দিন, যেন আমরা সর্বাবস্থায় রাসূলের উপর দরুদ পাঠ করতে পারি এবং দরুদময় জীবন গঠন করতে পারি। 
 
 
 
 
 
চতুর্থ পর্ব: ৬ টি ছোট ও সহজ সহিহ দরুদ
 
সহজ ৬ টি সহিহ দরুদ উপস্থাপন করছি। সবগুলোই ছোট, সহজ ও সহিহ হাদিসে বর্ণিত
➖➖➖➖➖◄❖►➖➖➖➖➖
❑ দরুদ: [০১]
.
কা’ব বিন উজরাহ (রা.) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেন, ‘কীভাবে আমরা (আপনার উপর) দরুদ পাঠ করব, তা বলুন।’ তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দরুদে ইবরাহিম পাঠ করতে বলেন, যা আমরা প্রত্যেক নামাযের শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ (আত্তাহিয়্যাতু...)-এর পর পড়ি। সেটি হলো: আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা.....হামীদুম মাজীদ। সবারই মুখস্থ আছে, তাই এখানে উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই। এই দরুদটিই সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ। [সহিহ বুখারি: ৩৩৭০, মুসনাদ আহমাদ: ৪/২৪৪]
.
❑ দরুদ: [০২]
.
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ، وَعَلٰى آلِ مُحَمَّدٍ
.
[আল্লাহুম্মা সল্লি আলা মুহাম্মাদ, ওয়া ‘আলা আ~লি মুহাম্মাদ]
.
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ এবং মুহাম্মাদের পরিবারের উপর রহমত বর্ষণ করুন।
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমরা আমার প্রতি দরুদ পড়ো এবং সাধ্যানুযায়ী দু‘আ করো ও বলো (উপরের দরুদটি)।’’ [নাসাঈ: ১২৯১; শায়খ আলবানি (রাহ.) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
.
❑ দরুদ: [০৩]
.
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ، وَأَنْزِلْهُ الْمَقْعَدَ الْمُقَرَّبَ عِنْدَكَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
.
[আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদ, ওয়া আনযিলহুল মাক্ব‘আদাল মুক্বাররবা ‘ইনদাকা ইয়াওমাল ক্বিয়া-মাহ্]
.
(হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদের উপর রহমত বর্ষণ করুন এবং কিয়ামতের দিন আপনার নিকটেই তাঁকে স্থান দিন)
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে এটি বলবে, তার জন্য আমার সুপারিশ ওয়াজিব হয়ে যাবে।’’ [মুসনাদ আহমাদ: ২/৩৫২, মাজমাউয যাওয়াইদ: ১৭৩০৪; ইমাম হাইসামি ও মুনযিরি (রাহিমাহুমাল্লাহ্) হাদিসটির সনদ হাসান (গ্রহণযোগ্য) বলেছেন]
.
❑ দরুদ: [০৪]
.
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ عَبْدِكَ وَرَسُوْلِكَ، وَصَلِّ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ، وَالْمُسْلِمِيْنَ وَالْمُسْلِمَاتِ
.
[আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন ‘আবদিকা ওয়া রাসূলিক, ওয়া সল্লি ‘আলাল মুঅ্মিনী-না ওয়াল মুঅ্মিনা-ত, ওয়াল মুসলিমী-না ওয়াল মুসলিমা-ত]
.
(হে আল্লাহ! আপনি আপনার বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদের উপর রহমত প্রেরণ করুন এবং সকল মুমিন-মুমিনা ও মুসলিম-মুসলিমার উপরও রহমত প্রেরণ করুন)
.
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে-মুসলমানের দান-সাদাকাহ করার মতো কিছু নেই, সে যেন দু'আ করার সময় এটি বলে। এটি তার জন্য যাকাতস্বরূপ।’’ [সহিহ ইবনে হিব্বান: ৯০৩, হাকিম: ৪/১৩০, মুসনাদে আবু ইয়ালা: ১৩৯৭; হাকিম ও যাহাবি (রাহিমাহুমাল্লাহ) হাদিসটির সনদ সহিহ বলেছেন, হাইসামি (রাহ.) হাসান বলেছেন]
.
❑ দরুদ: [০৫]
.
صَلَّى اللّٰهُ عَلَى النَّبِيِّ مُحَمَّدٍ
.
[সল্লাল্লাহু 'আলান্নাবিয়্যি মুহাম্মাদ]
.
অর্থ: নবী মুহাম্মাদের উপর আল্লাহ্ রহমত বর্ষণ করুন। (নবীজির নাতি হাসান (রা.) হতে বর্ণিত কুনুতের শেষ অংশ এটি) [নাসাঈ: ১৭৪৫, ইমাম নববি (রাহ.) হাদিসটির সনদ সহিহ বলেছেন (মাজমু‘উ: ৩/৪৯৯), অবশ্য অনেকেই দুর্বল বলেছেন। তবে, নিঃসন্দেহে এটি আমলযোগ্য।]
.
❑ দরুদ: [০৬]
.
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ النَّبِيِّ الْأُمِّيِّ، وَعَلٰى آلِ مُحَمَّدٍ
.
[আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি, ওয়া ‘আলা আ~লি মুহাম্মাদ]
.
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি উম্মি নবী মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের পরিবারের উপর রহমত বর্ষণ করুন। [আবু দাউদ: ৯৮১, শায়খ আলবানি (রাহ.) ও অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ হাদিসটিকে হাসান (ও সহিহ) বলেছেন]
.
দরুদের বাক্য নিয়ে অসংখ্য হাদিস বর্ণিত হয়েছে। বিশেষত দরুদে ইবরাহিম শাব্দিক পরিবর্তনে অসংখ্য রেওয়ায়াতে সহিহ সনদে বর্ণিত হয়েছে। আমরা সেগুলো উল্লেখ করিনি। কারণ এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ সেটিই, যেটি আমরা নামাজে পড়ি।
 
 
 
পঞ্চম পর্ব: দরুদ পড়ার বিশেষ পরিস্থিতি ও সময়

নবীজির উপর দরুদ পড়ার অপরিসীম লাভের কথা আমরা জেনেছি। এবার দরুদ পাঠের বিশেষ পরিস্থিতি ও সময়গুলো জানবো।
▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬
মূলত, দিনে-রাতে সবসময়, সব অবস্থায় দরুদ পাঠ করা জায়েয। তবে, বিশেষ কিছু সময়ে এর গুরুত্ব ও মর্যাদা অনেক বেশি।
.
❑ কোনো মজলিসে বসলে:
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘কোন সম্প্রদায় যখন কোন মজলিসে (বৈঠকে) বসে, সেখানে যদি তারা আল্লাহর যিকর না করে এবং তাদের নবীর উপর দরুদ পাঠ না করে, তবে তা তাদের জন্য আফসোস ও ক্ষতির কারণ হবে। ইচ্ছা করলে আল্লাহ্ তাদের শাস্তি দিবেন আর ইচ্ছা করলে তাদের তিনি মাফ করে দিবেন।’’ [তিরমিযি: ৩৩৮০, সহিহাহ: ৭৪, (সহিহ)]
.
❑ দু‘আ শুরু করার পূর্বে:
.
উমার (রা.) ও আলী (রা.)— তাঁরা দুজনই বলেছেন, ‘সকল দু‘আ পর্দার আড়ালে থাকবে, যতক্ষণ না নবীর উপর দরুদ পাঠ করা হবে।’ [তিরমিযি: ৪৮৬, সহিহাহ: ২০৩৫, (হাসান)]
.
❑ রাসূলের আলোচনা বা নাম উচ্চারিত হলে:
.
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘কৃপণ ঐ ব্যক্তি, যার সামনে আমার আলোচনা করা হলো, অথচ সে আমার জন্য দরুদ পাঠ করলো না।’’ [বুখারি, আল-আদাবুল মুফরাদ: ৫/১৪৮, তিরমিযি: ৩৫৪৬, (হাসান)]
.
❑ দুশ্চিন্তা ও বিপদ-মুসিবতে:
.
একজন সাহাবি রাসূলকে বলেছিলেন, তিনি তাঁর উপর সর্বদা দরুদ পাঠ করবেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলেছিলেন, ‘‘যদি তুমি তাই করো, তবে তোমার সকল চিন্তা ও উৎকণ্ঠা দূর করা হবে (প্রয়োজন পূরণ হবে) এবং তোমার পাপসমূহ ক্ষমা করা হবে।’’ [তিরমিযি: ২৪৫৭, হাকিম: ২/৪৫৭, হাদিসটি সহিহ]
.
❑ জুমু‘আর দিনে ও রাতে:
.
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম দিন হচ্ছে জুমুআর দিন। সুতরাং এই দিনে তোমরা আমার উপর বেশি করে দরুদ পড়ো। কেননা, তোমাদের দরুদ আমার কাছে উপস্থাপন করা হয়।” [আবু দাউদ: ১০৪৭, নাসায়ি: ১৩৭৪, হাদিসটির সনদ সহিহ]
.
❑ মসজিদে প্রবেশ ও বের হতে:
.
আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করার সময় বলতেন, তখন বলতেন, ‘বিসমিল্লাহি, আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদ’ এবং বের হওয়ার সময়ও বলতেন, ‘বিসমিল্লাহি, আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদ’। [ইবনুস সুন্নি: ৮৮, (হাসান)]
.
ইবনু মাজাহর হাদিসেও দরুদ পড়ে মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়ার কথা বলা হয়েছে।
.
❑ আজানের পর:
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যখন তোমরা মুআযযিনকে আজান দিতে শুনবে তখন সে যেরূপ বলে, তোমরাও তদ্রুপ বলবে। অতঃপর তোমরা (আজান শেষে) আমার প্রতি দরুদ পাঠ করবে। কেননা যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরুদ পাঠ করবে আল্লাহ তা‘আলা তার উপর দশটি রহমত নাযিল করবেন। অতঃপর তোমরা আল্লাহর নিকট আমার জন্য ওসিলা প্রার্থনা কর...।’’ [সহিহ মুসলিম: ৩৮৪]
.
❑ সকাল-সন্ধ্যায় ১০ বার করে:
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি সকালে দশবার ও সন্ধ্যায় দশবার আমার জন্য দরুদ পড়বে, কিয়ামতের দিন সে আমার সুপারিশের নাগাল পাবে।’’ [হাইসামি, মাজমাউয যাওয়াইদ: ১০/১২০, সহিহ আত তারগিব: ১/৩৪৫, (হাসান)]
.
এছাড়াও—
◗প্রত্যেক নামাজের শেষ বৈঠকে দরুদ পড়তে হয়।
◗জানাযার নামাজের দ্বিতীয় তাকবিরের পর দরুদ পড়তে হয়।
◗নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর জিয়ারতে দরুদ পড়তে হয়।
◗দু‘আ কুনুতেও দু‘আ করা যায়।
◗এছাড়াও যেকোনো সময়ে, যেকোনো অবস্থায় দরুদ পাঠ করা যায়। অজু ছাড়াও পড়া যায়।
.
 
 
 
ষষ্ঠ পর্ব: রাসূলের উপর দরুদ পাঠ-সংক্রান্ত ১০ টি জরুরি বিষয় প্রত্যেকের জানা দরকার
 
 
 

রাসূলের উপর দরুদ পাঠ: ১০ টি জরুরি বিষয় প্রত্যেকের জেনে রাখা দরকার।
▬▬▬▬▬▬◄◾►▬▬▬▬▬▬
(১) যে নবীজির নাম উচ্চারণ করবে এবং যে শুনবে, উভয়ের উপর ওয়াজিব হলো, দরুদ পাঠ করা। যদি এক বৈঠকে একাধিকবার উচ্চারিত হয় বা একাধিকবার শোনা হয়, তবে একবার দরুদ পড়লেই ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। তবে, ইমাম ত্বহাবি (রাহ.)-সহ অনেকের মতে, প্রতিবারই দরুদ পড়া ওয়াজিব। [ফাতাওয়া শামি: ২/২৩২, ২/২২৭]
.
(২) শুধু উচ্চারণই নয়, লেখার সময়েও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম আসলে দরুদ পড়া ওয়াজিব। [মুফতি শফি, মা‘আরিফুল কুরআন: ৭/২২৫]
.
(৩) দরুদ সর্বদা আস্তে পড়া উত্তম। তবে, যখন আমরা সম্মিলিত অবস্থায় থাকবো এবং তখন নবীজির নাম উচ্চারিত হবে, তখন একটু জোরে পড়ার চেষ্টা করবো। তাহলে অন্যরাও দরুদ পড়বে। অনেক সময় স্মরণ থাকে না।
.
(৪) মুয়াযযিন যখন আযানে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্’ পড়েন, তখন আমরা এর জবাব হিসেবে দরুদ পড়বো না। বরং হুবহু মুয়াযযিনের মতই বলবো। কারণ হাদিসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা যখন মুয়াযযিনের আজান শুনবে, তখন তাই বলবে, যা মুয়াযযিন বলে।’ [সহিহ মুসলিম: ৩৮৪]
.
অবশ্য অন্য হাদিসে বলা হয়েছে, কেবল দুটো বাক্য ব্যতীত। সেগুলো হলো: হাইয়া আলাস সলাহ/ফালাহ। এ দুটোর জবাবে বলতে হয়, ‘লা হাউলা ওয়া লা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।’
.
[নোট: আজান শেষ হওয়ার পর দরুদ পড়তে বলা হয়েছে সহিহ হাদিসে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ আমল।]
.
(৫) জুমু‘আর খুতবার সময় রাসূলের নাম শুনলে দরুদ পড়া ওয়াজিব নয়। কারণ সহিহ বর্ণনায় এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবার সময় চুপ থাকতে বলেছেন। তবে, কোনো কোনো ফকিহ এই সময় মনে মনে দরুদ পড়ে নিতে বলেছেন। এটিই উত্তম। [ফাতাওয়া শামি: ২/২৩১, ৩/৩৬]
.
(৬) তিলাওয়াতের সময় রাসূলের নাম শুনলে তিলাওয়াত চালিয়ে যাওয়াই ভালো। এ অবস্থায় দরুদ পড়া জরুরি নয়। তবে, তিলাওয়াত শেষে দরুদ পড়া উত্তম। [ফাতাওয়া শামি: ২/২৩১]
.
(৭) অন্যান্য নবি-রাসূলগণের নাম শুনলে বা পড়লে দরুদ পড়া জরুরি নয়। তবে উত্তম। এ ব্যাপারে মোটামুটি গ্রহণযোগ্য স্তরের হাদিস আছে। [আস সলাতু ‘আলান নাবিয়্যি, ইমাম ইবনু আবি আসিম, পৃ: ৩০; ইমাম সাখাবি, আল কাউলুল বাদী’, পৃ: ৭৯]
.
(৮) নামাজের শেষ বৈঠক ব্যতীত নামাজের অন্য কোনো অবস্থায় দরুদ পড়া মাকরুহ তথা অপছন্দনীয়। তাই, যারা নামাজের সিজদাহর সময় দু‘আ করতে চান, তারা দরুদ না পড়েই দু‘আ করবেন। তাছাড়া, বিতরের কুনুত পড়ার পরও দরুদ পড়া জায়েয। [ফাতাওয়া শামি: ২/২৩০-২৩১]
.
(৯) দরুদে ইবরাহিম শুধু নামাজেই নয়, যেকোনো সময় পাঠ করা যায়। বরং, এই দরুদটিই সর্বশ্রেষ্ঠ। তাই, দরুদের আমল করার ক্ষেত্রে এটি অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত।
.
(১০) অনেকেই সংক্ষেপে (সা.) লিখেন। এভাবে লেখা উচিত নয়। এ প্রসঙ্গে অন্য পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ্।
.
 
সপ্তম পর্ব: শুধু দরুদ নয়, সালামও পাঠ করতে হয়; সালাম পাঠানোর পদ্ধতি

রাসূলের উপর শুধু দরুদই নয়, সালাম প্রেরণ করাও জরুরি। আজ আমরা রাসূলের উপর সালাম পাঠের গুরুত্ব ও সালামের কিছু বাক্য আলোচনা করব। এছাড়াও দরুদ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ৫ টি বিষয়ে কথা থাকবে পোস্টের শেষে, যেগুলো সবার জানা থাকা দরকার।
▬▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬▬
আল্লাহ্ বলেন, ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবির প্রতি সালাত (দরুদ) প্রেরণ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি প্রচুর পরিমাণে সালাত (দরুদ) ও সালাম প্রেরণ করো।’’ [সূরা আহযাব, আয়াত: ৫৬]
.
সুতরাং, রাসূলের উপর দরুদ ও সালাম প্রেরণ করা জরুরি। এটি আল্লাহর আদেশ।
.
❖ রাসূলের উপর সালাম পাঠের গুরুত্ব:
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যমিনে বিচরণকারী আল্লাহর কিছু ফেরেশতা আছেন, তাঁরা আমার নিকট উম্মতের পক্ষ থেকে প্রেরিত সালাম পৌঁছিয়ে থাকেন।’’ [নাসাঈ, আস-সুনান: ১২১৫, আলবানি, সহিহুল জামি’: ২১৭৪, হাদিসটি সহিহ]
.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্যত্র বলেন, “কোনো ব্যক্তি যখন আমার উপর সালাম পেশ করে, তখন আল্লাহ আমার মধ্যে আমার রুহ ফিরিয়ে দেন, ফলে আমি তার সালামের জবাব দিই।” [আবূ দাউদ, আস-সুনান: ২০৪১, আহমাদ, আল-মুসনাদ: ১০৪৩৪, হাদিসটি সহিহ]
.
সহিহ হাদিসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দরুদের একাধিক বাক্য জানা গেলেও, সালামের বাক্য খুব একটা পাওয়া যায় না। আমার সংক্ষিপ্ত পড়াশুনায় তেমন কিছু পাইনি। দরুদ ও সালাম একসঙ্গে কোনো নির্ভরযোগ্য হাদিসে এসেছে বলেও জানা যায় না। পূর্বে আমরা দরুদের সহিহ ৬ টি বাক্য আলোচনা করেছিলাম। আজ আমরা সালাম পাঠানোর কয়েকটি বাক্য তুলে ধরব।
.
❂ রাসূলের শ্যালিকা আবু বকর (রা.)-এর কন্যা আসমা (রা.) যে বাক্য দিয়ে রাসূলের উপর একই সাথে দরুদ ও সালাম পাঠ করতেন, সেটি আমরা পড়তে পারি।
.
صَلَّى اللّٰهُ عَلٰى رَسُوْلِهِ وَسَلَّمْ
.
(সল্লাল্লাহু ‘আলা রাসূলিহি ওয়া সাল্লাম)
.
অর্থ: আল্লাহ্ তাঁর রাসূলের উপর দরুদ ও সালাম বর্ষণ করুন। [মুসলিম, আস-সহিহ: ১২৩৭]
.
❂ ইবনু ‘উমার (রা.)-এর সালামটিও পড়া যায়, যা তিনি তাশাহহুদে পড়তেন।
.
اَلسَّلَامُ عَلَى النَّبِيِّ وَرَحْمَةُ اللّٰهِ وَبَرَكَاتُهُ
.
(আসসালামু ‘আলান নাবিয়্যি ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু)
.
অর্থ: নবির উপর সালাম, আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। [মালিক, আল-মুয়াত্তা; হাদিসটি সহিহ]
.
❂ এভাবেও পড়তে পারি (তবে, এটি হাদিস নয়)
.
اَللّٰهُمَّ سَلِّمْ عَلٰى مُحَمَّد
(আল্লাহুম্মা সাল্লিম ‘আলা মুহাম্মাদ)
.
অর্থ: হে আল্লাহ! মুহাম্মাদের উপর আপনি সালাম প্রেরণ করুন।
.
আমরা প্রতি নামাজেই তাশাহহুদ (আত্তাহিয়্যাতু....) পাঠ করার সময় রাসূলের উপর সালাম পেশ করে বলি: আসসালামু ‘আলাইকা আইয়ুহান নাবিয়্যু... (হে নবি! আপনার উপর সালাম, আল্লাহর রহমত ও আল্লাহর বরকত বর্ষিত হোক)।
.
❖ চারটি বিষয় জেনে রাখা দরকার:
.
(১) রাসূলের নাম লিখলে অনেকেই ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ না লিখে ‘(সা.)’ বা এরকম সংক্ষিপ্ত করে লিখেন। এটি অনুচিত, এটি মাকরুহ। বরং পরিপূর্ণ দরুদ লিখতে হবে। পূর্বের ও পরের বিশিষ্ট আলিমগণ এ ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন হলেন: ইমাম নববি, ইমাম সাখাবি, ইমাম সুয়ূতি, ইবনু হাজার হাইতামি (রাহিমাহুমুল্লাহ্)। [নববি, আত তাকরিব: ১/৫০৭, সাখাবি, ফাতহুল মুগিস: ৩/৪৭, তাকি উসমানি, ইসলাহি খুতুবাত: ৬/৮৮]
.
(২) দরুদ ও সালাম একসাথেও পাঠ করা যাবে আবার এগুলো আলাদা আলাদা পাঠ করতেও কোনো সমস্যা নেই।
.
(৩) ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ [আল্লাহ্ তাঁর (মুহাম্মাদের) উপর দরুদ ও সালাম বর্ষণ করুন] বললে দরুদ ও সালাম পাঠ করা হয়ে যায়। এটি সালাফে সালিহিনের সময় থেকে আজ অবধি মুসলিম উম্মাহ প্র্যাকটিস করে আসছে। তবে, হুবহু ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলে দরুদ পড়তে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন বলে জানা যায় না। তবে, এটি দিয়েও দরুদ পড়া সম্পূর্ণ বৈধ। এ ব্যাপারে কারও কোনও সন্দেহ নেই। উত্তম হলো, দরুদের জন্য সহিহ হাদিসে নির্দেশিত বাক্য দিয়ে দরুদ পড়া। এরকম ৬ টি সহিহ দরুদ পূর্বেই আমরা আলোচনা করেছি।
.
(৪) সরাসরি নবিজির কবরে গিয়ে তাঁকে সালাম জানাতে চাইলে এভাবে জানানো যায়—আসসালামু ‘আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ! (হে আল্লাহর রাসূল! আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)
.
সাহাবি আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রা.) এভাবে সালাম জানাতেন। [ইবনু আবি শাইবাহ, আল-মুসান্নাফ: ১১৯১৫, মুহাক্কিক আওয়ামা (হাফিযাহুল্লাহ্) বলেন, এর সনদ সহিহ]
.
(৫) ‘আল্লাহুম্মা সল্লি ওয়া সাল্লিম আলা নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদ’ হুবহু এই বাক্যে নবিজি থেকে কোনো দরুদ পাওয়া যায় না। হিসনুল মুসলিম অ্যাপে মূলত এটিকে দরুদের একটি নমুনা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। মূল হাদিসটি ছিলো সকাল-সন্ধ্যায় ১০ বার করে দরুদ পড়া সংক্রান্ত। রেফারেন্সও মূলত এটিরই দেওয়া। কিন্তু অনেকেই ভুল বুঝেছেন; ভেবেছেন, এটিই বুঝি সহিহ হাদিসে বর্ণিত একটি দরুদ। না, এটি নয়। হ্যাঁ, এই বাক্যটি দিয়ে দরুদ পড়া জায়েয়; তবে, উত্তম হবে সহিহ হাদিসের দরুদগুলো অগ্রাধিকার দেওয়া।
 
 
Courtesy: Tasbeeh













দু‘আ করার সঠিক পদ্ধতি, দু‘আ কবুলের বিভিন্ন উপলক্ষ এবং প্রতিবন্ধকতা

 দু‘আ করার সঠিক পদ্ধতি, দু‘আ কবুলের বিভিন্ন উপলক্ষ এবং প্রতিবন্ধকতা 

 

স্বার্থক মুনাজাত সিরিজের সকল পর্বের লিংক একত্রে দেওয়া হলো। সবাই কপি বা শেয়ার করে রাখতে পারেন। এখানে পাবেন দু‘আ করার নিয়ম, দু‘আ কবুলের উপায় ও সময়, কবুল না হওয়ার কারণ, ইসমে আযম, যাদের দু‘আ কবুল হয়, একটি হাদিসসম্মত দু‘আর নমুনা ইত্যাদি।
.
❂ প্রথম পর্ব: যে পাঁচটি কারণে আমাদের দু‘আ কবুল হয় না এবং দু‘আ কবুলের আবশ্যকীয় শর্তগুলো
 
 
৫ টি কারণে আমাদের দু‘আ কবুল হয় না। আসুন, জেনে নিই সেসব কারণ। পাশাপাশি দু‘আ কবুলের আবশ্যকীয় শর্তগুলো সম্পর্কেও জেনে রাখা দরকার।
.
❑ যেসব কারণে দু‘আ কবুল হয় না:
.
[এক.] খাবার, পানীয় ও পোষাক হালাল না হওয়া।
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আল্লাহ পবিত্র; তিনি কেবল পবিত্র বস্তুই গ্রহণ করেন।...তিনি এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেন—দীর্ঘ সফরের ফলে যার চুল উশকোখুশকো, চেহারা ধুলোবালিমাখা। সে হাত দুটো আকাশের দিকে উঠিয়ে বলছে, ‘হে আমার রব! হে আমার রব!’, কিন্তু তার খাবার হারাম, পানীয় হারাম, পোষাক হারাম আর তার পরিপুষ্টি হয়েছে হারাম দিয়ে; (এমতাবস্থায়) কীভাবে তার দু‘আয় সাড়া দেওয়া হবে?’’ [সহিহ মুসলিম: ১০১৫]
.
সফরে দু‘আ কবুল হয়, হাত উঠিয়ে দু‘আ করলে কবুল হয় এবং নিজেকে হীনজ্ঞান করে আল্লাহকে কায়মনোবাক্যে ডাকলেও দু‘আ কবুল হয়। এতগুলো শর্ত লোকটি পূরণ করার পরও তার দু‘আ কবুল হচ্ছে না, কেবল হারাম খাবার, পানীয় ও পোষাকের জন্য। [ইবনু রজব হাম্বলী, জামি‘উল ‘উলূম ওয়াল হিকাম]
.
[দুই.] সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ হতে নিষেধ করা বন্ধ করে দেওয়া।
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘শপথ সেই সত্তার, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! তোমরা অবশ্যই ভালো কাজের আদেশ দিবে ও অন্যায় কাজ হতে বাধা প্রদান করবে। নতুবা, অচিরেই এর ফলে আল্লাহ্ তোমাদের উপর শাস্তি পাঠাবেন। এরপর তোমরা তাঁর কাছে দু‘আ করবে, কিন্তু তোমাদের দু‘আয় সাড়া দেওয়া হবে না।’’ [তিরমিযি: ২১৬৯, হাদিসটি হাসান]
.
[তিন.] দ্রুত ফল না পাওয়ায় দু‘আ বন্ধ করে দেওয়া।
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমাদের কেউ আল্লাহকে ডাকলে, তার ডাকে সাড়া দেওয়া হবে, যতক্ষণ না সে অধৈর্য হয়ে বলে ওঠে—‘আল্লাহকে তো ডাকলাম, কিন্তু কোনো সাড়া তো পাওয়া গেলো না।’ [সহিহ বুখারি: ৬৩৪০]
.
[চার.] গুনাহ বা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নের দু‘আ করা।
.
[পাঁচ.] মহান আল্লাহর প্রজ্ঞা: তিনি দু‘আ সাথে সাথে কবুল না করে প্রার্থিত বস্তুর চেয়েও অধিক দেওয়ার জন্য রেখে দেন।
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যখনই কোনো মুসলিম পাপ ও আত্মীয়তা সম্পর্ক নষ্ট করা ছাড়া অন্য যে কোনো বিষয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, তখনই আল্লাহ তার প্রার্থনা পূরণ করে তাকে তিনটি বিষয়ের একটি দান করেন: হয় তার প্রার্থিত বস্তুই তাকে দিয়ে দেন অথবা তার দু'আকে (দু'আর নেকি) তার আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে রাখেন কিংবা দু'আর পরিমাণ অনুসারে তার অন্য কোনো (অনাগত) বিপদ তিনি দূর করে দেন।’’ [তিরমিযি: ৫/৫৬৬, আহমাদ: ৩/১৮, সহিহ সনদ]
.
❑ দু‘আ কবুলের আবশ্যকীয় শর্তগুলো:
.
❖ শির্কমুক্ত দু‘আ: শর্তহীনভাবে শুধু আল্লাহর কাছেই বলা, মানুষকে দেখানো বা শোনানোর উদ্দেশ্য না থাকা।
.
আল্লাহ্ বলেন, ‘‘দ্বীনকে (ইসলামকে) আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠ করে শুধু আল্লাহকেই ডাকো।’’ [সূরা গাফির, আয়াত: ১৪]
.
❖ দু‘আ কবুলের পূর্ণ বিশ্বাস রেখে দু‘আ করা
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমরা দু'আ কবুলের দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে আল্লাহর কাছে দু'আ করো।" [সহিহ আল জামে': ২৪৫, হাদিসটি হাসান]
.
❖ অন্তরকে সজাগ রাখা ও উদাসীনতা পরিহার করা।
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘...কোনো বান্দা অমনোযোগী অন্তরে দু'আ করলে, আল্লাহ তার দু'আ কবুল করেন না।’’ [সহিহ আত তারগিব: ২/১৩৩, হাদিসটি হাসান]
.
❖ রাসূলের উপর দরুদ পাঠ করা।
.
আলি (রা.) বলেন, ‘‘সকল দু'আ পর্দার আড়ালে থাকবে, যতক্ষণ না নবির উপর সালাত পাঠ করবে।’’ [সিলসিলা সহিহাহ: ৫/৫৪-৫৮, সহিহ আত তারগিব: ২/১৩৮, হাদিসটি হাসান]
.
অন্য রেওয়ায়েতে এই কথাটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে।
.
❖ আল্লাহ্ যেকোনো দু‘আ কবুল করতে পারেন, (বৈধ) যেকোনো কিছু দিতে পারেন, এই বিশ্বাস রাখা।
.
এভাবে দু‘আ করতে হাদিসে নিষেধ করা হয়েছে যে, ‘হে আল্লাহ! তোমার ইচ্ছা হলে আমাকে দাও।’ [সহিহ বুখারি: ৬৩৩৮] সুতরাং, এভাবে দু‘আ করা যাবে না।
.
অন্য হাদিসে এসেছে, ‘‘আল্লাহর জন্য কোনো কিছুই এত বড় নয় যে, তিনি তা দিতে পারবেন না।’’ [সহিহ মুসলিম: ২৬৭৯]
.
সুতরাং, দু‘আ করতে হবে দৃঢ়তার সাথে।
 
ফরজ নামাজ শেষে পড়তে হয় যেসব দু‘আ ও যিকর
 
 
ফরজ নামাজ শেষে পড়ার দু‘আ ও যিকর (গুরুত্বপূর্ণ ১০ টি যিকর ও দু‘আ উপস্থাপন করা হলো, সহিহ হাদিস থেকে)
➖➖➖➖◄◖◉◗►➖➖➖➖
.
■ [১] তিনবার ইস্তিগফার এবং একটি বিশেষ যিকর একবার পাঠ করা। (সালাম ফেরানোর পর প্রথম আমল হবে এটি)
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম ফেরানোর পর তিনবার ইস্তিগফার করতেন।
.
(আস্তাগফিরুল্লাহ্, আস্তাগফিরুল্লাহ্, আস্তাগফিরুল্লাহ্)
.
অতপর বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম, ওয়া মিনকাস সালাম, তাবারাকতা ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম।’
.
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি শান্তিময়, আপনার নিকট হতেই আসে শান্তি। হে মহত্ত্ব ও সম্মানের অধিকারী! আপনি বরকতময়। [সহিহ মুসলিম: ৫৯১]
.
■ [২] একবার নিচের দু‘আটি পড়া।
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম ফেরানোর পর এই দু‘আটি পড়তেন—
.
لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللّٰهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ
.
اللّٰهُمَّ لاَ مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ وَلاَ مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ وَلاَ يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ
.
[মোটামুটি উচ্চারণ: লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুওয়া 'আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর। আল্লাহুম্মা লা মা-নি‘আ লিমা আ‘অ্ত্বয়তা, ওয়া লা মু‘অ্ত্বিয়া লিমা মানা‘অ্তা, ওয়া লা ইয়ানফা‘উ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু]
.
অর্থ: আল্লাহ্ ব্যতীত কোনো সার্বভৌম সত্তা নেই। তিনি এক; তাঁর কোনো অংশীদার নেই। তাঁর জন্যই সকল প্রশংসা ও রাজত্ব; তিনি সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান।
.
হে আল্লাহ্! তুমি যা দাও, তা কেউ রুখতে পারে না আর তুমি যা রুখে দাও, তা কেউ দিতে পারে না। তোমার বিপরীতে কোনো সম্মানিত ব্যক্তির সম্মান কোনো উপকারে আসে না। [সহিহ বুখারি: ৮৪৪]
.
■ [৩] ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ্, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ ও ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পাঠ করা।
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ফরজ নামাজের পরপর পাঠ করার এমন কিছু বাক্য আছে, যেগুলোর পাঠকারী কখনো ব্যর্থ হবে না। সেগুলো হলো: সুবহানাল্লাহ্ ৩৩ বার, আলহামদুলিল্লাহ্ ৩৩ বার এবং আল্লাহু আকবার ৩৪ বার (পাঠ করা)। [সহিহ মুসলিম: ৫৯৬, তিরমিযি: ৩৪১২]
.
অন্য বর্ণনায় এসেছে, ৩৩ বার করে সুবহানাল্লাহ্, আলহামদুলিল্লাহ ও আল্লাহু আকবার। মোট ৯৯ বার। আর একবার পড়া—
.
لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللّٰهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ
.
[উচ্চারণ ও অর্থ দেখুন উপরের হাদিসে]
.
অন্য বর্ণনায় এসেছে, প্রত্যেকটি ১০ বার করে পড়া। [সহিহুল কালিমিত ত্বইয়িব: ৯৩]
.
তবে, কষ্টকর না হলে ১০ বার করে না পড়ে পূর্বের হাদিস অনুসারে ৩৩, ৩৩, ৩৩ বা ৩৩, ৩৩, ৩৪ বার পড়া উচিত। একদম না পড়ার চেয়ে ১০ বার করে পড়া অবশ্যই অনেক অনেক উত্তম।
.
■ [৪] আয়াতুল কুরসি (১ বার) পাঠ করা। আয়াতুল কুরসি হলো, সূরা বাকারার ২৫৫ নং আয়াত।
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক (ফরজ) নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করে, তার জান্নাতে প্রবেশের ক্ষেত্রে একমাত্র প্রতিবন্ধকতা হলো তার মৃত্যু।’’ [নাসাঈ, সুনানুল কুবরা: ৬/৩০, মুনযিরি, আত তারগিব: ২/৪৪৮, হাদিসটি সহিহ]
.
■ [৫] সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাস ১ বার করে পাঠ করা।
.
উকবাহ্ ইবনু আমির (রা.) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে প্রত্যেক (ফরজ) নামাজের শেষে সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাস পড়তে নির্দেশ দিয়েছেন। [আবু দাউদ: ১৫২৩, হাদিসটি হাসান]
.
অন্য বর্ণনায় সূরা ইখলাসের কথাও এসেছে। [সিলসিলা সহিহাহ]
.
■ [৬] একটি বিশেষ দু‘আ (১ বার)।
.
মু‘আয (রা.) বলেন, (একদিন) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার হাত ধরে বলেন, ‘‘মু'আয, আল্লাহর শপথ! আমি তোমাকে ভালোবাসি।... মু'আয! আমি তোমাকে ওসিয়ত করছি—প্রত্যেক সালাতের পর এ দু'আটি বলা কখনো বাদ দিও না।’’ (দু'আটি হলো)—
.
اللّٰهُمَّ أَعِنِّيْ عَلٰى ذِكْرِكَ، وَشُكْرِكَ، وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ.
.
[মোটামুটি উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আ‘ইন্নি '
‘আলা যিকরিকা, ওয়া শুকরিকা, ওয়া ‘হুসনি ‘ইবাদাতিকা]
.
[অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমাকে সাহায্য করুন—আপনার যিকর করতে, আপনার শুকরিয়া আদায় করতে এবং উত্তমরূপে আপনার ইবাদত করতে।’’
[আবু দাউদ: ১৫২২, হাকিম: ৬৭৭, সহিহ আত-তারগিব: ২/২১৯; হাদিসটি সহিহ]
.
■ [৭] এই দু‘আটি ১০০ বার পড়া।
.
একজন আনসার সাহাবি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নামাজের পর এই দু‘আটি ১০০ বার পড়তে শুনেছি।
.
اَللّٰهُمَّ ﺍﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲْ ﻭَﺗُﺐْ ﻋَﻠَﻲَّ ﺇِﻧَّﻚَ ﺃﻧْﺖَ ﺍﻟﺘَّﻮَّﺍﺏُ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴْﻢُ
.
[আল্লাহুম্মাগফিরলি ওয়া তুব ‘আলাইয়া, ইন্নাকা আনতাত তাওয়াবুর রাহীম]
.
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে মাফ করুন; আমার তাওবাহ্ কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি তাওবাহ্ কবুলকারী পরম দয়াময়। [সিলসিলা সহিহাহ: ২৬০৩, হাদিসটি সহিহ]
.
■ [৮] এই দু‘আটি পাঠ করা।
.
বারা ইবনু ‘আযিব (রা.) বলেন, আমি শুনলাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজ শেষে আমাদের দিকে ফিরে এই দু‘আটি পড়েছেন।
.
رَبِّ قِنِيْ عَذَابَكَ يَوْمَ تَبْعَثُ عِبَادَكَ
.
[মোটামুটি উচ্চারণ: রাব্বি ক্বিনী ‘আযা-বাকা, ইয়াউমা তাব‘আসু ‘ইবা-দাকা]
.
অর্থ: (হে আমার) রব! যেদিন তোমার বান্দাদের পুনরুত্থান ঘটাবে, সেদিন আমাকে আযাব থেকে রক্ষা করো। [সহিহ মুসলিম: ৭০৯]
.
■ [৯] নিচের দু‘আটি পড়া।
.
আবু বাকরা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের পর এই দু‘আটি পড়তেন।
.
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْكُفْرِ وَالْفَقْرِ وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ
.
[মোটামুটি উচ্চারণ: ‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘উ-যু বিকা মিনাল কুফরি, ওয়াল ফাকরি, ওয়া আ‘উ-যু বিকা মিন ‘আযা-বিল ক্বাবরি]
.
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি কুফুরি, দারিদ্র্য ও কবরের আজাব থেকে তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। [নাসাঈ: ২/৮৩, আহমাদ: ৫/৪৪, হাদিসটি সহিহ]
.
■ [১০] আরো একটি দু‘আ, যা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজে সালাম ফেরানোর পূর্বে, অন্য বর্ণনা মতে, সালাম ফেরানোর পর পাঠ করতেন।
.
اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ وَمَا أَسْرَفْتُ وَمَا أَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ مِنِّيْ أَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَأَنْتَ الْمُؤَخِّرُ، لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ
.
[আল্লাহুম্মাগফিরলি মা ক্বাদ্দামতু ওয়া-মা আখখারতু, ওয়া-মা আসরারতু ওয়া-মা আ’লানতু, ওয়া-মা আসরাফতু, ওয়া-মা আনতা আ’লামু বিহি মিন্নী, আনতাল মুক্বাদ্দিমু ওয়া আনতাল মুআখখিরু, লা ইলা-হা ইল্লা আনতা]
.
অর্থ: হে আল্লাহ্, আমি আগে-পরে যত গুনাহ করেছি, তা মাফ করে দাও। যেসব গুনাহ গোপনে করেছি এবং যেগুলো প্রকাশ্যে করেছি (সব) মাফ করে দাও। যত বাড়াবাড়ি করেছি, সেগুলো ক্ষমা করে দাও এবং যেগুলো তুমি আমার চেয়ে ভালো জানো, সেগুলোও মাফ করে দাও। তুমি অগ্রবর্তী করো, তুমিই পিছিয়ে দাও। তুমি ব্যতীত কোনো সার্বভৌম সত্তা নেই। [সহিহ মুসলিম: ১/২৬৩, আবু দাউদ: ৭৬০]
.
এই দশটির মধ্যে যতগুলোর উপর আমল করা সম্ভব হয় করবেন। তবে, যেগুলো আমল করবেন, সেগুলোর উপর অটল-অবিচল থাকার চেষ্টা করবেন। হাদিসে এসেছে, আল্লাহর কাছে সেই আমল বেশি প্রিয়, যা নিয়মিত করা হয়; যদিও তা পরিমাণে কম হয়।
 
❂ দ্বিতীয় পর্ব: কুরআন-হাদিসে বর্ণিত দু‘আ কবুলের কতিপয় নিয়ম-কানুন

দু‘আ করার কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম-কানুন [কুরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে]
➖➖➖▶◄◖◉◗►◀➖➖➖
.
[১] দু‘আর শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণ বর্ণনা করা এবং এরপর রাসূলের উপর দরুদ পাঠ করা। একইভাবে দু‘আ শেষ করা।
.
একবার ইবনে মাস'ঊদ (রা.) সালাতের বৈঠকে বসে প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণ বর্ণনা করেন, অতঃপর রাসূলের উপর দরুদ পাঠ করেন, তারপর নিজের জন্য দু‘আ করেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘এখন চাও, তোমার প্রার্থিত বস্তু তোমাকে দেয়া হবে; এখন চাও, তোমার প্রার্থিত বস্তু তোমাকে দেয়া হবে।’’ [তিরমিযি: ২/৪৮৮, হাসান]
.
আরেকজন ব্যক্তি প্রথমেই নিজের জন্য চাওয়া শুরু করেন। তাকে দেখে নবীজি বলেন, ‘‘সে অনেক বেশি তাড়াহুড়া করে ফেলেছে।’’ [আবু দাউদ: ১৪৮১, হাসান]
.
দু‘আর শেষদিকে আবারও প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণ বর্ণনা করা অতঃপর নবীজির উপর দরুদ পড়ার মাধ্যমে দু‘আ শেষ করা। [ইবনুল কায়্যিম, জালাউল আফহাম: ৩৭৫]
.
[২] প্রথমে নিজের জন্য দু'আ করা
.
আবু আইয়ূব আনসারি (রা.) বলেন, ‘‘নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন দু‘আ করতেন, তখন নিজেকে দিয়ে শুরু করতেন।’’ [আহমাদ: ৫/১২১, মাজমাউয যাওয়াইদ: ১০/১৫২, হাসান]
.
[৩] দৃঢ় বিশ্বাস রেখে দু'আ করা
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘হে মানুষেরা! তোমরা যখন আল্লাহর কাছে চাইবে তখন কবুল হওয়ার দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে চাইবে; কারণ কোনো বান্দা অমনোযোগী অন্তরে দু'আ করলে আল্লাহ তার দু'আ কবুল করেন না।’’ [সহিহ আত তারগিব: ২/১৩৩, হাসান]
.
[৪] সম্ভব হলে প্রথমে অজু করে নেওয়া
.
একবার নবীজিকে আবু আমির (রা.)-এর জন্য দু‘আ করতে অনুরোধ করা হলে, তিনি প্রথমে অজু করে নেন, এরপর দু‘আ করেন। [সহিহ বুখারি: ৪৩২৩]
.
[৫] তিনবার করে বলা (বিশেষত গুরুত্বপূর্ণ কিছু চাওয়ার ক্ষেত্রে)
.
ইবনু মাস‘ঊদ (রা.) বলেন, ‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু‘আ করলে (কখনো) তিনবার করে দু‘আ করতেন, কোনো কিছু (আল্লাহর কাছে) চাইলে তিনবার চাইতেন।’’ [সহিহ মুসলিম: ১৭৯৪]
.
[৬] কিবলামুখী হওয়া
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৃষ্টির জন্য দু‘আ করতে চাইলে, তখন তিনি কিবলামুখী হতেন। [সহিহ বুখারি: ১০০৫]
.
[৭] দু‘আর মধ্যে ছন্দময় কথা না বলা
.
ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন, আমি দেখেছি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবাগণ ছন্দময় কথা দু‘আর মধ্যে এড়িয়ে চলতেন। [সহিহ বুখারি: ৬৩৩৭]
.
[৮] দু‘আর মধ্যে আল্লাহপ্রদত্ত নিয়ামত ও নিজ অপরাধের স্বীকৃতি দেওয়া
.
সাইয়িদুল ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ দু‘আ)-র মধ্যে আমরা এমনটি দেখি, সেখানে বলা হচ্ছে—‘‘আমার উপর তুমি যে অনুগ্রহ করেছ, তা স্বীকার করছি এবং আমার কৃত পাপের কথাও স্বীকার করছি।’’ [সহিহ বুখারি: ৬৩০৬]
.
[৯] নেক আমলের উসিলা দিয়ে দু‘আ করা, পাশাপাশি আল্লাহর রহমত ও বড়ত্বের উসিলায় দু‘আ করা। এছাড়া ইসমে আযম দিয়েও দু‘আ করা উত্তম। (এ প্রসঙ্গে স্বতন্ত্র পোস্ট দেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ)
.
একবার তিন ব্যক্তি একটি গুহায় আটকা পড়েছিলো। একটি বিশাল পাথর গুহার মুখে এসে আটকে যায়। এমন কঠিন অবস্থায় তিনজনই তাদের বিভিন্ন নেক আমলের উসিলা দিয়ে আল্লাহর কাছে দু‘আ করেছিলো, আল্লাহ তাদের দু‘আ কবুল করে পাথরটি সড়িয়ে দিয়েছিলেন। [সহিহ বুখারি: ২২১৫]
.
[১০] আল্লাহর প্রভুত্ব, মহত্ত্ব, বড়ত্ব, অমুখাপেক্ষিতা, তাঁর সার্বভৌমত্ব ইত্যাদি বিষয়গুলো দু‘আর মধ্যে বারবার স্মরণ করা এবং বলতে থাকা। এটি দু‘আ কবুলের গুরুত্বপূর্ণ উপায়। [ইবনু রজব, জামি‘উল উলূম ওয়াল হিকাম]
.
হাদিসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমরা (দু‘আর মধ্যে) এ বাক্য উচ্চারণ করা বন্ধ করো না—
يا ذا الجلال والإكرام
.
[ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম]
হে রাজকীয়তা ও মহানুভবতার অধিকারী!’’ [বুখারি, আত তারিখুল কাবির: ৩/২৮০, সহিহ]
.
[১১] স্বাচ্ছন্দ্য ও প্রাচুর্যের সময় বেশি বেশি দু‘আ করা
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যার মন চায়—তার কষ্ট ও দুশ্চিন্তার সময় তার দু‘আ কবুল হোক, সে যেন প্রাচুর্যের সময় বেশি বেশি দু‘আ করে।’’ [তিরমিযি: ৩৩৮২, হাসান]
.
[১২] নীচু স্বরে দু‘আ করা; খুব জোরে দু‘আ না করা; কারণ এটি সীমালঙ্ঘন
.
আল্লাহ্ বলেন, ‘‘তোমার রবকে ডাকো কান্নাজড়িত কণ্ঠে এবং চুপে চুপে। অবশ্যই তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।’’ [সূরা আ’রাফ, আয়াত: ৫৫]
.
[১৩] কাতর কণ্ঠে, ভীত-বিহ্ববলচিত্তে দু‘আ করা [সূরা আ’রাফ, আয়াত: ২০৫]
.
[১৪] দু‘আর মধ্যে হাত উত্তোলন করা [সহিহ বুখারি: ২৮৮৪, আবু দাউদ: ১৪৮৮]
.
[১৫] আল্লাহর সামনে নিজের অসহায়ত্ব পেশ করা [সূরা আম্বিয়া, আয়াত: ৮৯, সূরা ইবরাহিম, আয়াত: ৩৭]
.
[১৬] দু‘আর মধ্যে অপ্রয়োজনীয় শব্দ না বলা [আবু দাউদ: ১৪৮০ ও ৯৬, সহিহ]
যেমন: ‘‘হে আল্লাহ! আমাকে জান্নাতের অমুক ফলটা দিয়ো, তমুক জিনিসটা দিয়ো’’ এভাবে না বলে শুধু জান্নাত চাওয়া। কারণ জান্নাতে গেলে তো সবই পাওয়া যাবে।
.
[১৭] দু‘আর মধ্যে নিজ পিতা-মাতা, সকল মুসলিমদের জন্য দু‘আ করা [সূরা ইসরা, আয়াত: ২৪, সূরা ইবরাহিম, আয়াত: ৪১, সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ১৯]
.
[১৮] বেশি বেশি করে চাওয়া
.
হাদিসে এসেছে, ‘‘তোমাদের কেউ যখন কামনা বা প্রার্থনা করবে, তখন সে যেন বেশি করে প্রার্থনা করে। কারণ সে তো তার মালিকের কাছেই চাচ্ছে!’’ [মাজমাউয যাওয়াইদ: ১০/১৫০, সনদ সহিহ]
.
[১৯] দু‘আর সময় দৃষ্টি নত রাখা [মাজমাউয যাওয়াইদ: ১০/১৬৭-১৬৮]
.
[২০] আমীন বলে দু‘আ শেষ করা [আবু দাউদ: ১/৯৩৮]
তবে, এটি দিয়েই শেষ করতে হবে, এমন নয়। মাঝেমধ্যে সূরা ফাতিহার প্রথম আয়াত, কখনো কালিমা তাইয়িবাহ্ ইত্যাদি দিয়েও দু‘আ শেষ করা যাবে।
 
 
 
❂ তৃতীয় পর্ব: দু‘আ কবুলের ২০ টি সময় ও যেভাবে দু‘আ করলে কবুল হয় দু‘আ  
 
দু‘আ কবুলের ২০ টি গুরুত্বপূর্ণ সময় এবং যেভাবে দু‘আ করলে আল্লাহ্ কবুল করেন
▬▬▬▬▬▬◄◖❂◗►▬▬▬▬▬▬
✪ আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময় দু‘আ করলে তা কবুল করা হয়।
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে দু‘আ ফেরত দেওয়া হয় না। অতএব, তোমরা এ সময়ে দু‘আ করো।’’ [আবু দাঊদ: ১২৭৭, মাজমা‘উয যাওয়াইদ: ১/৩৩৪, সহিহুত তারগিব: ১/১৮০, হাদিসটি সহিহ]
.
✪ মুআযযিনের সাথে আযানের জবাব দেওয়ার পর যে দু‘আ করা হয়, তা কবুল হয়।
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘মুয়াযযিনগণ যা বলে, তুমি তা বলো (আযানের জবাব দাও)। যখন শেষ করবে, তখন আল্লাহর কাছে চাও; তুমি যা চাইবে, তোমাকে তা দেওয়া হবে।’‘ [আবু দাউদ: ১/১৪২, সহিহুত তারগিব: ১/১৭৭, ১৮১, হাদিসটি হাসান]
.
✪ রাতের শেষভাগে দু‘আ কবুল হয়।
✪ ফরজ নামাজের পর দু‘আ কবুল হয়।
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করা হলো, ‘‘কোন (সময়) দু‘আ সবচেয়ে বেশি শোনা হয় বা কবুল করা হয়?’’ তিনি উত্তরে বলেন, ‘‘রাতের শেষাংশে ও ফরজ নামাজসমূহের পর।’’ [তিরমিযি: ৩৪৯৯, হাদিসটি হাসান]
.
✪ আযানের সময় দু‘আ কবুল হয়।
✪ জিহাদের উত্তপ্ত ময়দানে দু‘আ কবুল হয়।
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘দুটি (সময়ের দু‘আ) ফিরিয়ে দেওয়া হয় না অথবা খুব কমই ফিরিয়ে দেওয়া হয়: আযানের সময় দু‘আ এবং যখন যুদ্ধ তীব্র রূপ ধারণ করে, (তখনকার দু‘আ)।’’ [আবু দাউদ: ২৫৪০, হাদিসটি সহিহ]
.
✪ ইকামাতের সময় দু‘আ কবুল হয়।
✪ জিহাদে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ানোর পর:
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘দুটি সময় কোনও দু‘আকারীর দু‘আ ফিরিয়ে দেওয়া হয় না: নামাজের ইকামাতের সময় এবং আল্লাহর রাস্তায় (জিহাদে) সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ানোর সময়।’’ [সহিহ ইবনু হিব্বান: ১৭৬৪, হাদিসটি সহিহ]
.
✪ জমজমের পানি পান করার সময়:
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘জমজমের পানি ওই উদ্দেশ্য হাসিলে সহায়ক, যে উদ্দেশ্য নিয়ে তা পান করা হয়।’’ [ইবনু মাজাহ: ৩০৬২, হাদিসটি হাসান]
.
✪ সিজদায় দু‘আ কবুল হয়।
.
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘বান্দা যখন সিজদারত থাকে, তখন সে তার রবের সবচেয়ে নিকটবর্তী হয়। কাজেই তোমরা (এ সময়ে) বেশি বেশি দু'আ করবে।’’ [সহিহ মুসলিম: ৪৮২]
.
✪ দু‘আ ইউনুস দিয়ে দু‘আ করা:
.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যুন্নুন (ইউনুস আ.) মাছের পেটে দু‘আ করেছিলেন—
لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحٰنَكَ إِنِّيْ كُنْتُ مِنَ الظّالِمِيْنَ
—কোনো মুসলিম যে বিষয়েই এভাবে (আল্লাহকে) ডেকেছে, তিনি তার ডাকে সাড়া দিয়েছেন।’’ [তিরমিযি: ৫/৪৯৫, মাজমাউয যাওয়াইদ: ৭/৬৮, হাদিসটি সহিহ]
.
✪ স্বাচ্ছন্দ্য ও প্রাচুর্যের সময় বেশি বেশি দু‘আ করলে কঠিন সময়ে দু‘আ কবুল হয়।
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যার মন চায়—তার কষ্ট ও দুশ্চিন্তার সময় তার দু‘আ কবুল হোক, সে যেন প্রাচুর্যের সময় বেশি বেশি দু‘আ করে।’’ [তিরমিযি: ৩৩৮২, হাদিসটি হাসান]
.
✪ বৃষ্টির সময় দু‘আ কবুল হয়।
.
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “দুটি দু‘আ প্রত্যাখ্যান করা হয় না। আযানের সময়ের দু‘আ ও বৃষ্টির নীচের দু‘আ।” [সহিহ আল জামি’: ৩০৭৮, হাদিসটি সহিহ]
.
✪ আল্লাহর ইসমে ‘আযম (মহিমান্বিত নাম) দিয়ে দু‘আ করলে দু‘আ কবুল হয়।
.
এক ব্যক্তি নামাজের বৈঠকে আল্লাহর ইসমে ‘আযম দিয়ে দু‘আ করছিলেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘নিশ্চয়ই সে আল্লাহর কাছে তাঁর ইসমে আযম ধরে দু‘আ করেছে, যে নামে ডাকলে তিনি সাড়া দেন এবং যে নামে চাইলে তিনি প্রদান করেন।’’ [সহিহু সুনানিন নাসাঈ: ১/২৭৯, হাদিসটি সহিহ]
.
 
.
✪ মুসিবতের সময় বিশেষ দু‘আ পড়লে তা কবুল হয়। শিখে নিন দু‘আটি।
.
উম্মে সালামাহ্ (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,
.
إِنَّا لِلّٰهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ، اَللّٰهُمَّ اَجُرْنِي فِي مُصِيْبَتِي ، وَأَخْلِفْ لِي خَيْرًا مِنْهَا
.
[মোটামুটি উচ্চারণ: ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রা-জি‘ঊন। আল্লাহুম্মা আজুরনি ফী মুসী-বাতি, ওয়া আখলিফ লি খাইরাম মিনহা]
.
[অর্থ: নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং তাঁর দিকেই আমাদের প্রত্যাবর্তন। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আমার এই মুসিবতে প্রতিদান দিন। আমাকে এর পরিবর্তে এর চেয়েও উত্তম কিছু দিন।]
.
‘‘যদি কোনো মুসলিম বিপদগ্রস্ত হয়ে এ কথাগুলো বলে, তবে আল্লাহ্ তাকে অবশ্যই উক্ত ক্ষতির পরিবর্তে উত্তম বিষয় দান করবেন।’’
.
উম্মে সালামাহ্ বলেন, ‘আমার স্বামী আবু সালামার মৃত্যুর পর আমি চিন্তা করলাম, আবু সালামার চেয়ে আর কে ভালো হতে পারে? তারপরও আমি এই (উপরে বর্ণিত) কথাগুলো বললাম। তখন আল্লাহ্ আমাকে আবু সালামার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে স্বামী হিসেবে প্রদান করেন।’ [সহিহ মুসলিম: ১/৬৩১-৬৩২]
.
✪ দু‘আর শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণ বর্ণনা করা এবং এরপর রাসূলের উপর দরুদ পাঠ করা। একইভাবে দু‘আ শেষ করা।
.
একবার ইবনে মাস'ঊদ (রা.) সালাতের বৈঠকে বসে প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণ বর্ণনা করেন, অতঃপর রাসূলের উপর দরুদ পাঠ করেন, তারপর নিজের জন্য দু‘আ করেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘চাও, তোমাকে দেয়া হবে; চাও, তোমাকে দেয়া হবে।’’ [তিরমিযি: ৫৯৩, হাদিসটি হাসান]
.
আরেকজন ব্যক্তি প্রথমেই নিজের জন্য চাওয়া শুরু করেন। তাকে দেখে নবীজি বলেন, ‘‘সে অনেক বেশি তাড়াহুড়া করে ফেলেছে।’’ [আবু দাউদ: ১৪৮১, হাসান]
.
দু‘আর শেষদিকে আবারও প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণ বর্ণনা করা অতঃপর নবীজির উপর দরুদ পড়ার মাধ্যমে দু‘আ শেষ করা। [ইবনুল কায়্যিম, জালাউল আফহাম: ৩৭৫]
.
✪ নেক আমলের উসিলা দিয়ে দু‘আ করলে আল্লাহ্ কবুল করেন।
.
একবার তিন ব্যক্তি একটি গুহায় আটকা পড়েছিলো। একটি বিশাল পাথর গুহার মুখে এসে আটকে যায়। এমন কঠিন অবস্থায় তিনজনই তাদের বিভিন্ন নেক আমলের উসিলা দিয়ে আল্লাহর কাছে দু‘আ করেছিলো, আল্লাহ তাদের দু‘আ কবুল করে পাথরটি সড়িয়ে দিয়েছিলেন। [সহিহ বুখারি: ২২১৫]
.
✪ রাতে ঘুম থেকে ওঠার পর বিশেষ একটি দু‘আ পড়া এবং এরপর যা দু‘আ করা হয়, তা কবুল হয়।
.
আমরা অন্য কোনো পোস্টে এটি নিয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ্। [সহিহ বুখারি: ১১৫৪]
.
✪ জুমু‘আর দিনে আসরের পর, মাগরিবের পূর্বে দু‘আ কবুল হয়।
.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “জুমু‘আর দিনের বারো ঘন্টার মধ্যে একটি বিশেষ মুহূর্ত রয়েছে, তখন কোনো মুসলিম আল্লাহর নিকট যে দু‘আই করে, আল্লাহ তা-ই কবুল করেন। তোমরা সেই মুহূর্তটিকে আসরের শেষ দিকে সন্ধান করো।” [নাসাঈ, আবু দাউদ: ১০৪৮, হাদিসটি সহিহ]
.
✪ যিকরের মজলিসে দু‘আ কবুল হওয়ার অধিক সম্ভাবনা রাখে। [সহিহ বুখারি: ৬৪০৮]
.
✪ আরাফার দিনে দু‘আ কবুল হওয়ার অত্যন্ত সম্ভাবনা থাকে। [তিরমিযি: ৩৫৮৫, হাদিসটি হাসান গারিব]
.
✪ জোরে কিরাতবিশিষ্ট নামাজে ইমাম যখন সূরা ফাতিহার পর ‘আমীন’ বলেন, তখন মুক্তাদিও যদি একই সাথে আমীন বলে, তখন সেটি কবুল হওয়ার সম্ভাবনা রাখে। [সহিহ বুখারি: ৭৮০ ও ৭৮২]
.
✪ কারো মৃত্যুর পর মৃত ব্যক্তির জন্য মানুষের দু‘আ কবুল হওয়ার সম্ভাবনা রাখে। [সহিহ মুসলিম: ৯২০]

 
 
❂ চতুর্থ পর্ব: ইসমে আযম দিয়ে যেভাবে দু‘আ করতে হয় এবং ইসমে আযমের পরিচয়
 
 
‘ইসমে আযম’ দিয়ে দু‘আ করলে নিশ্চিত কবুল হয়। জানতে হবে—‘ইসমে আযম’ কী? এটি দিয়ে কীভাবে দু‘আ করতে হয়?
▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬
❑ ইসমে আযমের পরিচয়:
.
ইসমে আযম দুটো আরবি শব্দ; এদের সম্মিলিত অর্থ: মহান নাম, শ্রেষ্ঠ নাম। অর্থাৎ, ইসমে আযম হলো, আল্লাহর মহান ও বিশিষ্ট নাম, যে নামের উসিলায় দু‘আ করা আল্লাহ্ ভীষণ পছন্দ করেন এবং সেই দু‘আ তিনি কবুল করেন।
.
❑ ইসমে আযম কোনগুলো?
.
এ ব্যাপারে কুরআন ও হাদিসে বিভিন্ন শব্দ ও বাক্য এসেছে। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:
.
◉ আল্লাহ্ (الله) আল্লাহ
◉ আর রাব্ব (اَلرَّبُّ) [প্রতিপালক]
◉ আল ‘হাইয়ূ (اَلْحَيُّ) [চিরঞ্জীব]
◉ আল ক্বাইয়ূম (اَلْقَيُّوْمُ) [চিরস্থায়ী]
◉ আল মান্নান (اَلْمَنَّانُ) [সীমাহীন দাতা]
◉ যুল জালালি ওয়াল ইকরাম (ذُوْ الْجَلَالِ والْإِكْرَام) [মহত্ত্ব ও মহানুভবতার অধিকারী]
◉ আসমাউল হুসনা (সুন্দর নামসমূহ) তথা হাদিসে বর্ণিত আল্লাহর সুন্দর গুণবাচক ৯৯ টি নামকেও আলিমগণ ইসমে আযম বলেছেন।
.
➤ আল্লাহ্ বলেন, “আর (সব) সুন্দর সুন্দর নাম তো আল্লাহ্‌ তা‘আলার জন্য, সুতরাং তাঁকে এসব নামেই ডাক।” [সূরা আ’রাফ, আয়াত: ১৮০]
.
➤ রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ্‌ তা‘আলার রয়েছে—১০০ থেকে ১টি কম—৯৯টি নাম; যে এগুলোর হিসাব রাখবে (মুখস্থ রাখবে), সে জান্নাতে যাবে।” [সহিহ বুখারি: ২৫৮৫, সহিহ মুসলিম: ৪/২০৬৩]
.
❑ কুরআন থেকে ইসমে আযম:
.
➤ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আল্লাহর ইসমে ‘আযম কুরআনের তিনটি সূরার মধ্যে রয়েছে: সূরা বাকারাহ, সূরা আলে ইমরান ও সূরা ত্ব-হা।’’ [ইবনু মাজাহ: ৩৮৫৬, হাদিসটি হাসান]
.
সেগুলো হলো: সূরা বাকারার ২৫৫ নং আয়াত—আয়াতুল কুরসির প্রথম বাক্যটি, সূরা আলে ইমরানের ২ নং আয়াত ও সূরা ত্ব-হার ১১১ নং আয়াত।
.
➤ অন্য একটি হাদিসে সূরা বাকারার ১৬৩ নং আয়াতকেও ইসমে আযম বলা হয়েছে। [আবু দাউদ: ১৪৯৬, হাদিসটি সহিহ]
.
➤ একটি হাদিসে ইউনুস (আ.)-এর দু‘আটিকে ইসমে আযম বলা হয়েছে। সেটি আমরা সবাই জানি: লা ইলা-হা ইল্লা আনতা সুব‘হা-নাকা ইন্নী কুনতু মিনায যোয়ালিমীন। [মুসতাদরাক হাকিম: ১/৬৮৫]
.
❑ হাদিস থেকে ইসমে আযমের একটি দৃষ্টান্ত:
.
➤ বুরাইদাহ্ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন ব্যক্তিকে বলতে শুনেন—
.
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ أَنِّيْ أَشْهَدُ أَنَّكَ أَنْتَ اللّٰهُ لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ الْأَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِيْ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُوْلَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ
.
[মোটামুটি উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা, আন্নী আশহাদু আন্নাকা আনতাল্লাহ্, লা ইলা-হা ইল্লা আনতাল আহাদুস সমাদ, আল্লাযী লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ, ওয়া লাম ইয়াকুল্লাহু কুফুওয়ান আ‘হাদ (মূল আরবি টেক্সটের সাথে মিলিয়ে পড়ুন)]
.
অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার নিকট চাচ্ছি। নিশ্চয়ই আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আপনিই আল্লাহ। আপনি ছাড়া কোনো সার্বভৌম সত্তা নেই, যিনি একক, অমুখাপেক্ষী। যিনি কাউকে জন্ম দেন নি, তার থেকে কেউ জন্ম নেয়নি এবং তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই।
.
তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তুমি আল্লাহর ওই নাম নিয়ে দু‘আ করেছো, যার মাধ্যমে কিছু চাওয়া হলে তিনি তা দান করেন এবং দু‘আ করা হলে কবুল করেন।’’ [আবু দাউদ: ১৪৯৩ তিরমিযি: ৩৪৭৫, হাদিসটি সহিহ]
.
ইসমে আযমের বিভিন্ন বাক্য বেশ কিছু সহিহ হাদিসে এসেছে। আপনাদের সুবিধার্থে আমরা সেগুলো শব্দে শব্দে অর্থসহ খুব সহজ করে উপস্থাপন করার চেষ্টা করব আমাদের #মহান_রবের_আশ্রয়ে দু‘আ সিরিজে, ইনশাআল্লাহ্। ইতোমধ্যে সেখানে ১৭ টি পর্ব প্রকাশিত হয়েছে। আজ কেবল একটি দু‘আ উল্লেখ করলাম (উপরে) বুঝানোর সুবিধার্থে।
.
❑ ইসমে আযম দিয়ে দু‘আ করার নিয়ম:
.
প্রথমেই বলি: ইসমে আযম দিয়ে দু‘আ করার অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থান হলো সালাম ফেরানোর পূর্ব মুহূর্ত। অর্থাৎ, নামাজের শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু, দরুদ, দু‘আ মাসুরা (দু‘আ মাসূরা পড়া ঐচ্ছিক) পাঠ শেষ করার পর ইসমে আযম পড়বেন, অতঃপর নিজের চাওয়াগুলো বলবেন।
.
প্রথমে আপনি উপরের দু‘আটি অর্থের দিকে লক্ষ রেখে আগ্রহ ও আন্তরিকতা নিয়ে পড়বেন। এরপর নিজের চাওয়াগুলো বলতে থাকবেন। আলেমদের বড় একটি অংশ যেহেতু নামাজে বাংলা ভাষায় দু‘আ করা নাজায়েয বলেছেন, সেহেতু নামাজের সিজদায় এবং সালাম ফেরানোর পূর্বে ইসমে আযম দিয়ে দু‘আ করতে চাইলে প্রথমে উপরের দু‘আটি পড়বেন। এরপর আরবিতে বিভিন্ন দু‘আ করবেন। বিশেষত হাদিসে বর্ণিত দু‘আ করবেন। কুরআনের দু‘আও করতে পারবেন; তবে তা তিলাওয়াত মনে করে পড়বেন না, বরং দু‘আ হিসেবে পড়বেন। এছাড়া নিজের মত আরবি ভাষায় যেকোনো বৈধ দু‘আ করতে পারেন।
.
আর, যদি সাধারণ দু‘আর মধ্যে ইসমে আযম পড়েন, তবে ইসমে আযমের পর যেকোনো ভাষায় দু‘আ করতে পারেন।
 
 
❂ পঞ্চম পর্ব: যাদের দু‘আ কবুল হয়
 
যাদের দু‘আ কবুল হয়, তাদের বৈশিষ্ট ও পরিচয় (প্রায় ২০ শ্রেণির মানুষ তাঁরা)
➖➖➖➖◄◖❂◗►➖➖➖➖
■ অসহায়-নিরুপায় ব্যক্তির দু‘আ:
.
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, ‘‘কে তিনি, যিনি নিরুপায় ব্যক্তির ডাক শুনেন, যখন সে তাঁকে কাতরভাবে ডাকে আর কে তার দুঃখ দূর করেন?’’ [সূরা নামল, আয়াত: ৬২]
.
■ মজলুম (যার উপর জুলুম করা হয়েছে) ব্যক্তির দু‘আ:
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘মজলুমের ফরিয়াদ থেকে সাবধান থেকো! কারণ মজলুমের ফরিয়াদ এবং আল্লাহর মাঝে কোনো পর্দা থাকে না (সরাসরি কবুল হয়)।’’ [সহিহ বুখারি: ১৩৯৫]
.
■ রোযাদার ব্যক্তির দু‘আ:
■ ন্যায়পরায়ণ শাসকের দু‘আ:
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তিন ব্যক্তির দু‘আ ফিরিয়ে দেওয়া হয় না: ইফতারের আগ পর্যন্ত রোযাদারের, ন্যায়পরায়ণ শাসকের ও মজলুমের দু‘আ।’’ [তিরমিযি: ৩৫৯৮, হাদিসটি হাসান]
.
■ এক মুসলিমের অনুপস্থিতিতে অন্য মুসলিমের দু‘আ:
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘কোনো মুসলিম যদি তার অনুপস্থিত (মুসলিম) ভাইয়ের জন্য দু’আ করে অথবা ক্ষমা চায়, তবে তা কবুল করা হয় এবং তার মাথার কাছে একজন ফেরেশতা নিযুক্ত থাকে। যখনই কোন ব্যক্তি তার ভাইয়ের কল্যাণার্থে দু’আ করে তখন সে নিযুক্ত ফেরেশতা বলে, আমীন। অর্থাৎ- হে আল্লাহ! কবুল করুন এবং তোমার জন্য অনরূপ (অর্থাৎ তোমার ভাইয়ের জন্য যা চাইলে আল্লাহ তা’আলা তোমাকেও তা-ই দান করুন)।’’ [সহিহ মুসলিম: ২৭৩৩]
.
■ বাবা-মার জন্য নেক সন্তানের দু‘আ:
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যখন মানুষ মৃত্যুবরণ করে, তখন তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়; কেবল তিনটি ব্যতীত—এক. সদাকাহ্ জারিয়াহ (এমন দান, যা চলমান থাকে); দুই. এমন জ্ঞান, যা মানুষকে উপকৃত করে এবং তিন. নেককার সন্তান, যে তার জন্য দু'আ করে।’’ [সহিহ মুসলিম: ১৬৩১]
.
■ মুসাফির ব্যক্তির দু‘আ:
■ সন্তানের জন্য পিতা-মাতার দু‘আ:
■ সন্তানের বিরুদ্ধে পিতা-মাতার বদদু‘আ:
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তিনটি দু‘আ কবুল হয়, তাতে কোনো সন্দেহ নেই: মজলুমের দু‘আ, মুসাফিরের দু‘আ এবং সন্তানের জন্য পিতা-মাতার দু‘আ’’ আহমাদ ও তিরমিযির বর্ণনায় আছে, ‘‘সন্তানের বিরুদ্ধে পিতা-মাতার বদদু‘আ।’‘ [বুখারি, আল-আদাবুল মুফরাদ: ৩২, হাদিসটি হাসান]
.
■ অযু করে যিকর করতে করতে ঘুমিয়ে পড়া ব্যক্তি জাগ্রত হওয়ার পর দু‘আ:
.
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘কোনো মুসলিম যদি ওযু করে আল্লাহর যিকর করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে, তারপর রাতে ওঠে আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের কোনো কল্যাণ চায়, আল্লাহ তাকে অবশ্যই তা দেবেন।’’ [আবু দাউদ: ৫০৪২, হাদিসটি সহিহ]
.
■ ইসমে আযম দিয়ে দু‘আকারী ব্যক্তির দু‘আ:
.
বুরাইদাহ্ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন ব্যক্তিকে বলতে শুনেন—
.
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ أَنِّيْ أَشْهَدُ أَنَّكَ أَنْتَ اللّٰهُ لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ الْأَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِيْ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُوْلَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ
.
[মোটামুটি উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা, আন্নী আশহাদু আন্নাকা আনতাল্লাহ্, লা ইলা-হা ইল্লা আনতাল আহাদুস সমাদ, আল্লাযী লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ, ওয়া লাম ইয়াকুল্লাহু কুফুওয়ান আ‘হাদ (মূল আরবি টেক্সটের সাথে মিলিয়ে পড়ুন)]
.
অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার নিকট চাচ্ছি। নিশ্চয়ই আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আপনিই আল্লাহ। আপনি ছাড়া কোনো সার্বভৌম সত্তা নেই, যিনি একক, অমুখাপেক্ষী। যিনি কাউকে জন্ম দেন নি, তার থেকে কেউ জন্ম নেয়নি এবং তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই।
.
তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তুমি আল্লাহর ওই নাম নিয়ে দু‘আ করেছো, যার মাধ্যমে কিছু চাওয়া হলে তিনি তা দান করেন এবং দু‘আ করা হলে কবুল করেন।’’ [আবু দাউদ: ১৪৯৩ তিরমিযি: ৩৪৭৫, হাদিসটি সহিহ]
.
■ দু‘আ ইউনুস দিয়ে দু‘আকারীর দু‘আ:
.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যুন্নুন (ইউনুস আ.) মাছের পেটে দু‘আ করেছিলেন—
لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحٰنَكَ إِنِّيْ كُنْتُ مِنَ الظّالِمِيْنَ
—কোনো মুসলিম যে বিষয়েই এভাবে (আল্লাহকে) ডেকেছে, তিনি তার ডাকে সাড়া দিয়েছেন।’’ [তিরমিযি: ৩৫০৫, হাদিসটির সনদ সহিহ]
.
■ হজ্ব আদায়কারীর দু‘আ
■ উমরাহ্ আদায়কারীর দু‘আ
■ আল্লাহর রাস্তায় জিহা.দকারীর দু‘আ
.
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আল্লাহর রাস্তায় জিহা.দকারী, হজ্ব আদায়কারী ও উমরাহ্ পালনকারী—তারা হলেন আল্লাহর প্রতিনিধি; তিনি তাদের ডেকেছেন আর তারা তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছেন। (সুতরাং) তারা আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে, তিনি তাদের দেবেন।’’ [ইবনু মাজাহ: ২৮৯৩, হাদিসটি হাসান]
.
■ আল্লাহকে অধিক পরিমাণ স্মরণকারীর দু‘আ কবুল করা হয়। [মুসনাদ বাযযার, হাদিসটি হাসান]
.
■ আল্লাহর ওলির দু‘আ কবুল হয়। (হাদিসটি আমরা আজ রাতেই পোস্ট করেছি। পূর্বের পোস্টটি পড়ে নিন)। [সহিহ বুখারি: ৬৫০২]
.
■ ইফতারের সময় রোযাদারের দু‘আ কবুল হয়। [তিরমিযি: ২৫২৬, ইবনু মাজাহ: ১৭৫৩, হাদিসটি সহিহ]
.
■ রাতের শেষাংশে ও ফরজ নামাজসমূহের পর দু‘আকারীর দু‘আ কবুল হয়। [তিরমিযি: ৩৪৯৯, হাদিসটি হাসান]
.
 
 
 
❂ ষষ্ঠ পর্ব: আল্লাহর কাছে কী কী বিষয়ে দু‘আ করতে হয়? (অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো)


 
আল্লাহর কাছে কী বিষয়ে দু‘আ করবো? (আমরা অনেকেই ভুলের মধ্যে আছি—গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো দু‘আর মধ্যে বলতে ভুলে যাই)
➖➖➖➖➖◄❖►➖➖➖➖➖
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমাদের কেউ যখন কামনা বা প্রার্থনা করবে, তখন সে যেন বেশি করে প্রার্থনা করে। কারণ সে তো তার মালিকের কাছেই চাচ্ছে!’’ [মাজমাউয যাওয়াইদ: ১০/১৫০, সনদ সহিহ]
.
আল্লাহর ভাণ্ডার অফুরন্ত। সুতরাং, আমাদের সব চাওয়াই আল্লাহর কাছে বলতে হবে। আল্লাহর ভাণ্ডারে কোনো কিছুর কমতি নেই। এজন্য হাদিসে এসেছে, জুতার ফিতা ছিঁড়ে গেলেও তা মহান রবের কাছে চাওয়া। [তিরমিযি: ৩৬০৭, হাদিসটি হাসান]
.
তবে, মানুষের জীবনে চাহিদার শেষ নেই, প্রয়োজনেরও সীমা নেই। এতসব কিছুর মধ্যে কয়েকটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি। না হয়, আল্লাহর কাছে দু‘আর সময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ চাওয়া বাকি থেকে যাবে। এবং এমনটিই হয় অনেকের। তাই, যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বেশি বেশি চাওয়া দরকার সেগুলো উল্লেখ করা হলো।
.
❑ হিদায়াত তথা সঠিক পথনির্দেশনা:
.
একজন মুমিনের জীবনে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সঠিকভাবে হিদায়াতের উপর চলা। সাধারণভাবে প্রত্যেক মুসলিমই মৌলিকভাবে হিদায়াতপ্রাপ্ত। তবে, পূর্ণাঙ্গ হিদায়াত অনেক ব্যাপক। সেজন্য আল্লাহর কাছে এটি বেশি করে চাইতে হবে। আল্লাহ্ বলেন, ‘‘যাকে আল্লাহ্ সঠিক পথ দেখান, সে-ই সঠিক পথ পায়; আর যাকে আল্লাহ্ পথভ্রষ্ট করেন, তার জন্য তুমি কোনো অভিভাবক এবং পথনির্দেশক পাবে না।’’ [সূরা কাহফ, আয়াত: ১৭]
.
মানুষ নিজেই যখন হিদায়াতের পথ চায় না এবং তা থেকে দূরে সরে যায়, তখন তাকে আল্লাহ্ পথভ্রষ্ট করেন। আল্লাহ্ বলেন, ‘‘কিন্তু তারা যখন বাঁকা পথ ধরলো, তখন আল্লাহ্‌ও তাদের অন্তরকে বাঁকা করে দিলেন।’’ [সূরা আস-সফ আয়াত: ০৫]
.
এজন্য আমরা সূরা ফাতিহাতে প্রতিবার হিদায়াত তথা সরল পথের প্রার্থনা করি। [সূরা ফাতিহা, আয়াত: ০৫ দ্রষ্টব্য]
.
❑ গুনাহ থেকে ক্ষমা চাওয়া:
.
নিঃসন্দেহে এটি আমাদের জীবনের প্রধান কামনা। এজন্য রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘লোকসকল! তোমরা আল্লাহর দিকে ফিরে আসো এবং তাঁর কাছে ক্ষমা চাও। আমি প্রতিদিন ১০০ বার তাওবাহ্ করি এবং ক্ষমা প্রার্থনা করি।’’ [মুসনাদ আহমাদ: ৪/২৬০, হাদিসটি সহিহ]
.
❑ জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত কামনা:
.
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, ‘‘অতঃপর যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সে-ই তো সফল হবে। আর দুনিয়ার জীবন তো ধোঁকার সামগ্রী ছাড়া কিছুই নয়।’’ [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৮৫]
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সহচরবৃন্দ নিয়মিত জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত কামনা করতেন।
.
❑ দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ কামনা:
.
আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিকাংশ সময় এই দু‘আ করতেন—
.
اَللّٰهُمَّ آتِنَا فِيْ الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِيْ الآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
.
[মোটামুটি উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা আ-তিনা ফিদ্দুন্‌ইয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আ-খিরাতি হাসানাতাও ওয়াক্বিনা আযা-বান্ নার]
.
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দান করুন, আখেরাতে কল্যাণ দান করুন এবং জাহান্নামের শাস্তি থেকে আমাদের বাঁচান। [সহিহ মুসলিম: ২৬৯০]
.
এই একটি দু‘আ এতই ব্যাপক যে, এতে দুনিয়া ও আখিরাতের সকল কল্যাণ অন্তর্ভূক্ত হয়ে যায়।
.
❑ দ্বীনের উপর অটল-অবিচল থাকা:
.
উম্মে সালামা (রা.) বলেন—রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে দু'আটি সবচেয়ে বেশি পড়তেন, তা হলো–
.
يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلٰي دِيْنِكَ
.
[মোটামুটি উচ্চারণ: ইয়া মুক্বাল্লিবাল ক্বুলূব! সাব্বিত ক্বালবী ‘আলা দীনিকা]
.
অর্থ: হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী! আপনি আমার অন্তরকে আপনার দ্বীনের (ইসলামের) উপর অটল রাখুন।[তিরমিযি: ৩৫২২, হাদিসটি হাসান]
.
❑ ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করার দু‘আ:
.
اللَٰهُمَّ تَوَفَّنَا مُسْلِمِينَ، وَأَحْيِنَا مُسْلِمِينَ، وَأَلْحِقْنَا بِالصَّالِحِينَ، غَيرَ خَزَايَا وَلَا مَفْتُونِينَ
.
[মোটিমুটি উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা তাওয়াফফানা মুসলিমীন, ওয়া আ‘হয়িনা মুসলিমীন, ওয়া আল‘হিক্বনা বিস স-লিহীন, গায়রা খাযা-য়া ওয়া লা মাফতূ-নীন]
.
অর্থ: হে আল্লাহ! মুসলিম অবস্থায় আমাদের মৃত্যু দিও; মুসলিম অবস্থায় বাঁচিয়ে রাখো; (মৃত্যুর পর) ভালো মানুষদের সাথে আমাদের জুড়ে দিয়ো; আমাদের অপদস্থ করো না এবং পরীক্ষায় ফেলো না। [বুখারি, আল-আদাবুল মুফরাদ: ৬৯৯, হাদিসটি সহিহ]
.
❑ নিয়ামতের স্থায়িত্ব এবং আল্লাহর প্রতিটি সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকতে পারা:
.
اللّٰهُمَّ أَسْأَلُكَ نَعِيْماً لَا يَنْفَدُ وَأَسْأَلُكَ الرِّضٰى بَعْدَ الْقَضَاءِ وَأَسْأَلُكَ بَرْدَ الْعَيْشِ بَعْدَ الْمَوْتِ
.
[মোটামুটি উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আসআলুকা না‘ঈ-মান লা ইয়ানফাদ, ওয়া আসআলুকার রিদ্বা বা‘অদাল ক্বাদ্বা, ওয়া আসআলুকা বারদাল ‘আইশি বা‘অদাল মাওত]
.
(আরবি ع ‘আইন’সহ অনেকগুলো হরফের উচ্চারণ বাংলায় লেখা যায় না। সুতরাং আমরা অনুরোধ করব—আপনারা আরবির সাথে মিলিয়ে পড়ুন। না হয়, নিশ্চিত ভুল শিখবেন)
.
অর্থ: হে আল্লাহ! তোমার কাছে এমন নিয়ামত (অনুগ্রহ) চাই, যা কখনো শেষ হবে না; তোমার কাছে চাই, যেন তোমার সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকতে পারি এবং তোমার কাছে মৃত্যুর পর আরামদায়ক জীবন চাই। [নাসাঈ: ১৩০৪, হাদিসটি সহিহ]
.
❑ এছাড়াও শির্ক থেকে আশ্রয় চাওয়া জরুরি। কারো উপর জুলুম করা এবং জুলুমের শিকার হওয়া থেকে দু‘আ করতে হবে। সুস্থতা কামনায়, ইবাদতের তাওফিক লাভ, বিপদ-মুসিবত ও মন্দ পরিণতি থেকে রেহাই পাওয়ার দু‘আ করাও কর্তব্য।

 
❂ সপ্তম পর্ব (শেষ পর্ব): একটি হাদিসসম্মত দু‘আর নমুনা (শুরু থেকে শেষ)
 
 
কীভাবে দু‘আ করবো? যেভাবে দু‘আ কবুল হবে ইনশাআল্লাহ (দু‘আর একটি নমুনা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উপস্থাপন করছি)
▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬
এক.
একদম নিরিবিলি একটি পরিবেশ ও সময়কে বেছে নিন দু‘আর জন্যে, যেখানে কেউ আপনার দিকে তাকিয়ে থাকবে না, কেউ ডাকবে না। মোবাইল অবশ্যই সাইলেন্ট করে দূরে রাখুন।
.
দুই.
প্রথমেই অযু করে নিন ভালোভাবে। এরপর কিছু সময় বসে বিশ্রাম নিন। এই সময়টিতে দু‘আর ব্যাপারে মানসিকভাবে পরিপূর্ণ প্রস্তুতি শেষ করুন। মনকে স্থির করার জন্য কিছু সময় যিকর বা তিলাওয়াত করতে পারেন। কিংবা আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে ভাবতে পারেন। এগুলো জরুরি নয়।
.
তিন.
এবার আপনার দু‘আ করার সময়। প্রথমেই কিবলার দিকে মুখ করে নামাজের বৈঠকের মত করে বসুন। এরপর বুক বারবর হাত তুলুন। মনোযোগ ঠিক রাখতে দৃষ্টি রাখুন হাতের দিকেই। তবে সামনে দৃষ্টি দিলেও সমস্যা নেই। ইমাম শুরাইহ ও কোনো কোনো আলেম আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করাকে ভুল বলেছেন।
.
চার.
প্রথমেই আল্লাহর প্রশংসাসূচক কোনো বাক্য, এরপর নবীজির উপর দরুদ পড়ুন। সবসময় একই বাক্য দিয়ে প্রশংসা বা একই দরুদ না পড়ে ভিন্নতা আনুন। এরপর নিজের যত যা বলার বলুন। দু‘আ শেষও করবেন প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা, এরপর নবীজির উপর দরুদ দিয়ে। সর্বশেষ বলবেন ‘আমীন।’
.
এবার হুবহু দু‘আর নমুনা উপস্থাপন করা হচ্ছে, ইনশাআল্লাহ্। হাত উঠাচ্ছি দু‘আর জন্য—
.
আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল ‘আলামিন। আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদ, ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ। (খুবই সংক্ষেপে আল্লাহর প্রশংসা ও দরুদ পড়ে দু‘আ শুরু করা হলো।)
.
[প্রথমে নিজের পাপ থেকে মুক্তির দু‘আগুলো পড়তে থাকব, (অবশ্য এভাবে সিরিয়াল মেন্টেইন করা জরুরি কিছু না]
.
বিশেষত সাইয়িদুল ইস্তিগফার, লাইলাতুল কদরে পাঠ করার দু‘আ, সূরা আলে ইমরানের ১৬ নং আয়াতের দু‘আ ও সূরা আরাফের ২৩ নং আয়াতের দু‘আ—এগুলো দিয়ে নিজের গুনাহের জন্য ক্ষমা চাওয়া যেতে পারে। অর্থের দিক থেকে এগুলো খুবই হৃদয়গ্রাহী। নিজের ভাষাতেও গুনাহের জন্য ক্ষমা চাইতে কোনো অসুবিধা নেই।
.
[এরপর অন্যান্য দু‘আ করতে থাকবো]
.
বিশেষভাবে যেসব দু‘আ করবো:
.
◉ কঠিন রোগ-ব্যাধি, মানুষের মুখাপেক্ষী হওয়া ও ঋণ থেকে মুক্তির জন্য দু‘আ করবো;
◉ হালাল রুযি, উত্তম কর্মসংস্থান ও অল্পেতুষ্টির তাওফিক লাভের জন্য দু‘আ করবো;
◉ নির্যাতিত মুসলিম উম্মাহর জন্য সাহায্য ও কল্যাণ কামনা করবো এবং মুসলিমদের পক্ষে কাজ করা সেসব ভাইদের জন্য দু‘আ করবো, যাদের ব্যাপারে মিডিয়া ‘জঙ্গি’ ‘সন্ত্রাসী’ ইত্যাদি বলে।
◉ নিজের সকল কাজে সফলতার ও দ্বীনের উপর অটল থাকার জন্য দু‘আ করবো;
◉ হাশরে হিসাব সহজ হওয়ার জন্য দু‘আ করবো, যাতে আল্লাহ্ বিনা হিসাবে জান্নাত দেন;
◉ সুন্দর ও ঈমানি মৃত্যুর জন্য দু‘আ করবো;
◉ মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন ও মৃত সকল মুসলিমের জন্য মাগফিরাত কামনা করবো;
◉ জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকত ও সাহায্য কামনা করবো;
◉ গুনাহ থেকে যাতে বাঁচতে পারি, তার জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবো;
◉ দুনিয়াতে কাউকে জুলুম করা এবং কারো দ্বারা জুলুমের শিকার হওয়া থেকে বাঁচার জন্য দু‘আ করবো;
◉ আল্লাহর আনুগত্য সঠিকভাবে পালন করা ও সর্বাবস্থায় যিকরের অবস্থায় থাকার জন্য আল্লাহর সাহায্য চাইবো।
এছাড়াও নিজের যা যা প্রয়োজন সব বলবো।
.....
পুরো দু‘আর মধ্যেই একটু পরপর এই বাক্যগুলো বলব—
√ ইয়া হাইয়ু ইয়া কাইয়ূমু
√ লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনায যোয়ালিমিন
√ ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম।
.
এগুলোর পাশাপাশি আল্লাহর গুণবাচক নামগুলো ধরেও ডাকতে থাকবো অনবরত (যেমন: ইয়া গাফফার! ইয়া রাহমান!)। আমি আরবিতে যত দু‘আ বলবো, তা অবশ্যই অর্থের দিকে খেয়াল রেখে কাকুতিমিনতি করে বলবো। কারণ এতে দু‘আ কবুলের সম্ভাবনা বাড়বে।
.
পাঁচ.
দু‘আয় সব বলা শেষ। এবার শেষ করতে হবে। আবারো আল্লাহর প্রশংসাসূচক যেকোনো বাক্য বলবো। (যেমন: ইন্নাল হামদা লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন বা রাব্বানা লাকাল হামদ হামদান কাসিরান ত্বইয়িবান মুবারাকান ফীহি অথবা সূরা ফাতিহার প্রথম আয়াত)
.
এরপর নবীজির উপর যেকোনো একটি দরুদ পড়বো। সর্বশেষ ‘আমীন’ অথবা ‘ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম’ বলে দু‘আ শেষ করবো।
.
দু‘আ শেষে মুখমণ্ডলে হাত মোছার ব্যাপারে যদিও সহিহ কোনো হাদিস পাওয়া যায় না, তবে আলেমগণ এটি বৈধ বলেছেন। না মোছাই উত্তম। কেবল ‘আমীন’ বা ‘ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম’ বলে হাত ছেড়ে দেওয়া যায়। আমার দু‘আ শেষ।
.
[আমরা দু‘আর মাসনুন (হাদিসসম্মত) পদ্ধতি এবং দু‘আর আদবগুলো লক্ষ রেখে পুরো দু‘আর চিত্রটি তুলে ধরেছি। আমাদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে, তবে আল্লাহর নিকট মাফ চাই।]
 
Courtesy: Tasbeeh