Wednesday, May 26, 2021

রাসূলের উপর দরুদ ও সালাম পাঠ

 রাসূলের উপর দরুদ ও সালাম পাঠ

 

প্রথম পর্ব: দরুদের পরিচয়, দরুদ পাঠের উদ্দেশ্য ও এর পেছনে প্রজ্ঞা

দরুদ এমন একটি আমল, যার মধ্যে আছে জীবনের যেকোনো সমস্যার সমাধান। মানুষ এই মহান আমলটিকে তেমন গুরুত্ব দেয় না।
.
প্রথমেই জেনে রাখি: দরুদ শব্দটি ফার্সি; কুরআন-হাদিসে ‘সালাত’ শব্দটি এসেছে দরুদ বোঝাতে। আল্লাহ্ বলেন, ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি সালাত (দরুদ) প্রেরণ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি প্রচুর পরিমাণে সালাত (দরুদ) ও সালাম প্রেরণ করো।’’ [সূরা আহযাব, আয়াত: ৫৬]
.
আল্লাহ্ ঈমানদারদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘তিনি (আল্লাহ্) তোমাদের প্রতি সালাত প্রেরণ করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণও।’’ [সূরা আহযাব, আয়াত: ৪৩]
.
সালাতের অর্থ ও মর্ম কী এ নিয়ে আলিমগণ বিভিন্ন মত দিয়েছেন। সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ও উত্তম মত হলো: আল্লাহ্ যখন সালাত প্রেরণ করেন, এর উদ্দেশ্য হলো রহমত বর্ষণ করা, সম্মানিত করা; ফেরেশতারা যখন কারো উপর সালাত প্রেরণ করেন, তখন উদ্দেশ্য হলো, তার জন্য আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করা এবং ঈমানদাররা যখন সালাত প্রেরণ করেন, তখন এর উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহর কাছে রহমত বর্ষণ ও মর্যাদা বৃদ্ধির দু‘আ করা।
.
সুতরাং আমরা যে নবীজির উপর দরুদ প্রেরণ করি, এর মানে হলো, আমরা আল্লাহর নিকট তাঁর জন্য রহমত কামনা করি ও মর্যাদা বৃদ্ধির দু‘আ করি।
.
নবীজির উপর দরুদ পাঠের উদ্দেশ্য ও এর পেছনে কী হিকমাহ (প্রজ্ঞা) আছে?
.
আল্লামা হালিমি (রাহিমাহুল্লাহ্) তাঁর ‘শু‘আবুল ঈমান’ গ্রন্থে বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর সালাত বা দরুদ পাঠের উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহর আদেশ পালনের মাধ্যমে (উপরে বর্ণিত আয়াতে আল্লাহ আদেশ করছেন দরুদ পড়তে) আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা এবং আমাদের উপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যে অধিকার আছে, তা আদায় করা।’ [ফাতহুল বারি: ১৪/৩৯২, মির‘আতুল মাফাতিহ: ৩/২৫২]
.
প্রকৃত অর্থেই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতের জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন এবং হাশরের মাঠেও যেভাবে (আল্লাহর ইচ্ছায়) উম্মতের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করবেন, সেই হিসেবে আমাদের উপর তাঁর অনুগ্রহ সীমাহীন। সুতরাং, আমাদের উচিত সাধ্যানুযায়ী খুব বেশি পরিমাণে তাঁর উপর সালাত (দরুদ) প্রেরণ করা।
.
আরেকটি বিষয় হলো, নবীজির উপর সালাম প্রেরণ করা। এটি আমরা সবাই বুঝি। তবুও এ সংক্রান্ত সুস্পষ্ট আলোচনা সামনে আসবে। 
 
 
 
 
দ্বিতীয় পর্ব: রাসূলের উপর দরুদ পাঠ করার অপরিসীম গুরুত্ব; দরুদ না পড়ার পরিণতি ও শাস্তি
 
 
রাসূলের উপর দরুদ পাঠ করার অপরিসীম গুরুত্ব এবং দরুদ না পড়ার পরিণতি ও শাস্তি
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘কোন সম্প্রদায় যখন কোন মজলিসে (বৈঠকে) বসে, সেখানে যদি তারা আল্লাহর যিকর না করে এবং তাদের নবীর উপর দরুদ পাঠ না করে, তবে তা তাদের জন্য আফসোস ও ক্ষতির কারণ হবে। ইচ্ছা করলে আল্লাহ্ তাদের শাস্তি দিবেন আর ইচ্ছা করলে তাদের তিনি মাফ করে দিবেন।’’ [তিরমিযি: ৩৩৮০, সহিহাহ: ৭৪, (সহিহ)]
.
অন্য হাদিসে দরুদ পাঠ না করা ব্যক্তিকে কৃপণ হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘কৃপণ ঐ ব্যক্তি, যার সামনে আমার আলোচনা করা হলো, অথচ সে আমার জন্য দরুদ পাঠ করলো না।’’ [বুখারি, আল-আদাবুল মুফরাদ: ৫/১৪৮, তিরমিযি: ৩৫৪৬, (হাসান)]
.
আমাদের দু‘আ কবুল হওয়ার অন্যতম একটি মাধ্যম হলো দু‘আর পূর্বে রাসূলের উপর দরুদ পাঠ করা।
.
উমার (রা.) ও আলী (রা.)— তাঁরা দুজনই বলেছেন, ‘সকল দু‘আ পর্দার আড়ালে থাকবে, যতক্ষণ না নবীর উপর দরুদ পাঠ করা হবে।’ [তিরমিযি: ৪৮৬, সহিহাহ: ২০৩৫, (হাসান)]
.
কারো সামনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আলোচনা করা হলে, তার উপর কর্তব্য হলো, সে দরুদ পাঠ করবে।
.
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশ কঠিন ভাষায় বলেছেন, ‘‘অপদস্থ হোক ঐ ব্যক্তি, যার সামনে আমার আলোচনা করা হলো, অথচ সে আমার জন্য দরুদ পাঠ করলো না।’’ [তিরমিযি: ৩৫৪৫, (হাসান)]
.
এগুলো তো গেলো দরুদ পাঠের গুরুত্ব ও না পড়ার ধমকি। আর দরুদ পাঠ করার বিরাট বিরাট ফজিলত ও লাভ রয়েছে। সেগুলো আমরা দুই পর্বে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ্। আজ একটি ফজিলত তুলে ধরবো।
.
কেউ যদি একবার মাত্র নবীজির উপর দরুদ পড়ে, তবে এর বিনিময় হিসেবে নবীজি তার জন্য ১০ বার দু‘আ করেন! সুবহানাল্লাহ্।
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরুদ পাঠ করে, আমি তার জন্য ১০ বার দরুদ পাঠ করি (দু‘আ করি)।’’ [তাবারানি: ২৬৯২, মাজমাউয যাওয়াইদ: ১০/১৬৩, (বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য)]
 
 
 
 
তৃতীয় পর্ব: নবীজির উপর দরুদ পাঠের অনন্য ১০ টি লাভ ও উপকারিতা (সহিহ হাদিস থেকে)

নবীজির উপর দরুদ পাঠের অনন্য ১০ টি লাভ ও উপকারিতা (সহিহ হাদিস থেকে)
➖➖➖➖➖◄❖►➖➖➖➖➖
❑ |১| সকল দুশ্চিন্তামুক্তি ও প্রয়োজন পূরণ:
.
একজন সাহাবি রাসূলকে বলেছিলেন, তিনি তাঁর উপর সর্বদা দরুদ পাঠ করবেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলেছিলেন, ‘‘যদি তুমি তাই করো, তবে তোমার সকল চিন্তা ও উৎকণ্ঠা দূর করা হবে (প্রয়োজন পূরণ হবে) এবং তোমার পাপসমূহ ক্ষমা করা হবে।’’ [তিরমিযি: ২৪৫৭, হাকিম: ২/৪৫৭, হাদিসটি সহিহ]
.
❑ |২| রহমতপ্রাপ্তি, গুনাহমুক্তি ও মর্যাদাবৃদ্ধি:
.
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার উপর দশবার রহমত বর্ষণ করবেন।”
[সহিহ মুসলিম: ৪০৮]
.
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যত্র বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ্ তার প্রতি ১০ বার রহমত বর্ষণ করবেন, ১০ টি গুনাহ মোচন করবেন এবং তার জন্য ১০ টি স্তর উন্নীত করবেন।’’ [নাসায়ি: ১২৯৭, মুসতাদরাক হাকিম: ১/৫৫০, সহিহ ইবনু হিব্বান: ৯০৪, হাদিসটি সহিহ]
.
অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে, একবার দরুদ পাঠ করলে আল্লাহ্ ৭০ বার তার প্রতি রহমত পাঠাবেন এবং ফেরেশতাগণ ৭০ বার রহমতের দু‘আ করবেন। [মুসনাদ আহমাদ: ২/১৭২, আত তারগিব: ৬৮০, হাদিসটি হাসান]
.
❑ |৩| দরুদ মুমিনের জন্য যাকাতস্বরূপ:
.
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমার উপর দরুদ পড়ো। কেননা এটা তোমাদের জন্য যাকাতস্বরূপ।’’ (এ সংক্রান্ত একটি সহিহ দরুদ পরবর্তী কোনো পর্বে আসবে ইনশাআল্লাহ্) [মুসনাদ আহমাদ: ৩/৩৬৫, ইবনু আবি শাইবাহ: ৮৭৯৬, হাদিসটি নির্ভরযোগ্য]
.
❑ |৪| কিয়ামতের মাঠে নবীজির সান্নিধ্য:
.
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কিয়ামতের দিন সেই ব্যক্তি সব লোকের চাইতে আমার বেশি নিকটবর্তী হবে, যে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমার উপর দরুদ পড়বে।” [সুনানে তিরমিযি: ৪৮৪, সহিহ আত তারগিব: ২/১৩৬, হাদাসটি হাসান]
.
❑ |৫| রাসূলের কাছে দরুদ পেশ করা হয়:
.
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম দিন হচ্ছে জুমুআর দিন। সুতরাং এই দিনে তোমরা আমার উপর বেশি করে দরুদ পড়ো। কেননা, তোমাদের দরুদ আমার কাছে উপস্থাপন করা হয়।” [আবু দাউদ: ১০৪৭, নাসায়ি: ১৩৭৪, হাদিসটির সনদ সহিহ]
.
❑ |৬| নবীজির শাফায়াত লাভ:
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি সকালে দশবার এবং বিকেলে দশবার দরুদ পাঠ করবে, সে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন আমার শাফা‘আত (সুপারিশ) লাভ করবে।’’ [মাজমাউয যাওয়াইদ: ১৭০২২, সহিহ আত তারগিব: ১/২৭৩, জামি‘উস সগির: ৬/১৬৯, হাদিসটি হাসান]
.
অন্য বর্ণনায় ‘নিষ্ঠার সাথে’ পড়ার কথা বলা হয়েছে। (এ সংক্রান্ত একটি সহিহ দরুদ পরবর্তী কোনো পর্বে আসবে ইনশাআল্লাহ্) [তাবারানি, কাবির: ৫১৩, আল কাউলুল বাদি’: ১৬০, রাবিগণ নির্ভরযোগ্য]
.
❑ |৭| দরুদ দু‘আ কবুলের অন্যতম উপায়:
.
একবার ইবনু মাস‘উদ (রা.) সালাতের বৈঠকে বসে প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণ বর্ণনা করেন, অতঃপর রাসূলের উপর দরুদ পাঠ করেন, তারপর নিজের জন্য দু‘আ করেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘এখন চাও, তোমার (প্রার্থিত বস্তু) তোমাকে দেওয়া হবে; এখন চাও, তোমার (প্রার্থিত বস্তু) তোমাকে দেওয়া হবে।’’ [তিরমিযি: ২/৪৮৮, হাসান]
.
আরেকজন ব্যক্তি প্রথমেই নিজের জন্য চাওয়া শুরু করেন। তাকে দেখে নবীজি বলেন, ‘‘সে অনেক বেশি তাড়াহুড়া করে ফেলেছে।’’ [আবু দাউদ: ১৪৮১, হাসান]
.
❑ |৮| রাসূলের দু‘আ লাভের সুযোগ:
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরুদ পাঠ করে, আমি তার জন্য ১০ বার দরুদ পাঠ করি (দু‘আ করি)।’’ [তাবারানি: ২৬৯২, মাজমাউয যাওয়াইদ: ১০/১৬৩, (বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য)]
.
❑ |৯| দরুদ (গুনাহর) কাফফারাস্বরূপ:
.
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমরা আমার উপর দরুদ পড়ো। কেননা, আমার উপর দরুদ পড়া তোমাদের জন্য কাফফারা (প্রায়শ্চিত্য)।’’ [ইবনু আবি আসিম, আস সলাতু ‘আলান নাবিয়্যি: ৭৮, ইবনু হাজারের মতে, সনদের রাবিগণ সহিহ হাদিসের রাবি]
.
❑ |১০| অনন্য মর্যাদা ও বৈশিষ্টপূর্ণ আমল:
.
কুরআনুল কারিমে এসেছে, ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি সালাত (দরুদ) প্রেরণ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি সালাত (দরুদ) ও সালাম প্রেরণ করো।’’ [সূরা আহযাব, আয়াত: ৫৬]
.
আল কুরআনে অন্য কোনো আমলের ক্ষেত্রে এমনটি বলা হয়নি যে, ‘স্বয়ং আল্লাহ্ ও তাঁর ফেরেশতাগণ এরূপ করেন, সুতরাং তোমরাও করো।’ নিঃসন্দেহে এটি দরুদের বিশেষ মর্যাদা ও অনন্য বৈশিষ্টের প্রমাণ।
.
আল্লাহ্ তা‘আলা আমাদের তাওফিক দিন, যেন আমরা সর্বাবস্থায় রাসূলের উপর দরুদ পাঠ করতে পারি এবং দরুদময় জীবন গঠন করতে পারি। 
 
 
 
 
 
চতুর্থ পর্ব: ৬ টি ছোট ও সহজ সহিহ দরুদ
 
সহজ ৬ টি সহিহ দরুদ উপস্থাপন করছি। সবগুলোই ছোট, সহজ ও সহিহ হাদিসে বর্ণিত
➖➖➖➖➖◄❖►➖➖➖➖➖
❑ দরুদ: [০১]
.
কা’ব বিন উজরাহ (রা.) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেন, ‘কীভাবে আমরা (আপনার উপর) দরুদ পাঠ করব, তা বলুন।’ তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দরুদে ইবরাহিম পাঠ করতে বলেন, যা আমরা প্রত্যেক নামাযের শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ (আত্তাহিয়্যাতু...)-এর পর পড়ি। সেটি হলো: আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা.....হামীদুম মাজীদ। সবারই মুখস্থ আছে, তাই এখানে উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই। এই দরুদটিই সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ। [সহিহ বুখারি: ৩৩৭০, মুসনাদ আহমাদ: ৪/২৪৪]
.
❑ দরুদ: [০২]
.
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ، وَعَلٰى آلِ مُحَمَّدٍ
.
[আল্লাহুম্মা সল্লি আলা মুহাম্মাদ, ওয়া ‘আলা আ~লি মুহাম্মাদ]
.
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ এবং মুহাম্মাদের পরিবারের উপর রহমত বর্ষণ করুন।
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমরা আমার প্রতি দরুদ পড়ো এবং সাধ্যানুযায়ী দু‘আ করো ও বলো (উপরের দরুদটি)।’’ [নাসাঈ: ১২৯১; শায়খ আলবানি (রাহ.) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
.
❑ দরুদ: [০৩]
.
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ، وَأَنْزِلْهُ الْمَقْعَدَ الْمُقَرَّبَ عِنْدَكَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
.
[আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদ, ওয়া আনযিলহুল মাক্ব‘আদাল মুক্বাররবা ‘ইনদাকা ইয়াওমাল ক্বিয়া-মাহ্]
.
(হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদের উপর রহমত বর্ষণ করুন এবং কিয়ামতের দিন আপনার নিকটেই তাঁকে স্থান দিন)
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে এটি বলবে, তার জন্য আমার সুপারিশ ওয়াজিব হয়ে যাবে।’’ [মুসনাদ আহমাদ: ২/৩৫২, মাজমাউয যাওয়াইদ: ১৭৩০৪; ইমাম হাইসামি ও মুনযিরি (রাহিমাহুমাল্লাহ্) হাদিসটির সনদ হাসান (গ্রহণযোগ্য) বলেছেন]
.
❑ দরুদ: [০৪]
.
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ عَبْدِكَ وَرَسُوْلِكَ، وَصَلِّ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ، وَالْمُسْلِمِيْنَ وَالْمُسْلِمَاتِ
.
[আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন ‘আবদিকা ওয়া রাসূলিক, ওয়া সল্লি ‘আলাল মুঅ্মিনী-না ওয়াল মুঅ্মিনা-ত, ওয়াল মুসলিমী-না ওয়াল মুসলিমা-ত]
.
(হে আল্লাহ! আপনি আপনার বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদের উপর রহমত প্রেরণ করুন এবং সকল মুমিন-মুমিনা ও মুসলিম-মুসলিমার উপরও রহমত প্রেরণ করুন)
.
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে-মুসলমানের দান-সাদাকাহ করার মতো কিছু নেই, সে যেন দু'আ করার সময় এটি বলে। এটি তার জন্য যাকাতস্বরূপ।’’ [সহিহ ইবনে হিব্বান: ৯০৩, হাকিম: ৪/১৩০, মুসনাদে আবু ইয়ালা: ১৩৯৭; হাকিম ও যাহাবি (রাহিমাহুমাল্লাহ) হাদিসটির সনদ সহিহ বলেছেন, হাইসামি (রাহ.) হাসান বলেছেন]
.
❑ দরুদ: [০৫]
.
صَلَّى اللّٰهُ عَلَى النَّبِيِّ مُحَمَّدٍ
.
[সল্লাল্লাহু 'আলান্নাবিয়্যি মুহাম্মাদ]
.
অর্থ: নবী মুহাম্মাদের উপর আল্লাহ্ রহমত বর্ষণ করুন। (নবীজির নাতি হাসান (রা.) হতে বর্ণিত কুনুতের শেষ অংশ এটি) [নাসাঈ: ১৭৪৫, ইমাম নববি (রাহ.) হাদিসটির সনদ সহিহ বলেছেন (মাজমু‘উ: ৩/৪৯৯), অবশ্য অনেকেই দুর্বল বলেছেন। তবে, নিঃসন্দেহে এটি আমলযোগ্য।]
.
❑ দরুদ: [০৬]
.
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ النَّبِيِّ الْأُمِّيِّ، وَعَلٰى آلِ مُحَمَّدٍ
.
[আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি, ওয়া ‘আলা আ~লি মুহাম্মাদ]
.
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি উম্মি নবী মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের পরিবারের উপর রহমত বর্ষণ করুন। [আবু দাউদ: ৯৮১, শায়খ আলবানি (রাহ.) ও অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ হাদিসটিকে হাসান (ও সহিহ) বলেছেন]
.
দরুদের বাক্য নিয়ে অসংখ্য হাদিস বর্ণিত হয়েছে। বিশেষত দরুদে ইবরাহিম শাব্দিক পরিবর্তনে অসংখ্য রেওয়ায়াতে সহিহ সনদে বর্ণিত হয়েছে। আমরা সেগুলো উল্লেখ করিনি। কারণ এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ সেটিই, যেটি আমরা নামাজে পড়ি।
 
 
 
পঞ্চম পর্ব: দরুদ পড়ার বিশেষ পরিস্থিতি ও সময়

নবীজির উপর দরুদ পড়ার অপরিসীম লাভের কথা আমরা জেনেছি। এবার দরুদ পাঠের বিশেষ পরিস্থিতি ও সময়গুলো জানবো।
▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬
মূলত, দিনে-রাতে সবসময়, সব অবস্থায় দরুদ পাঠ করা জায়েয। তবে, বিশেষ কিছু সময়ে এর গুরুত্ব ও মর্যাদা অনেক বেশি।
.
❑ কোনো মজলিসে বসলে:
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘কোন সম্প্রদায় যখন কোন মজলিসে (বৈঠকে) বসে, সেখানে যদি তারা আল্লাহর যিকর না করে এবং তাদের নবীর উপর দরুদ পাঠ না করে, তবে তা তাদের জন্য আফসোস ও ক্ষতির কারণ হবে। ইচ্ছা করলে আল্লাহ্ তাদের শাস্তি দিবেন আর ইচ্ছা করলে তাদের তিনি মাফ করে দিবেন।’’ [তিরমিযি: ৩৩৮০, সহিহাহ: ৭৪, (সহিহ)]
.
❑ দু‘আ শুরু করার পূর্বে:
.
উমার (রা.) ও আলী (রা.)— তাঁরা দুজনই বলেছেন, ‘সকল দু‘আ পর্দার আড়ালে থাকবে, যতক্ষণ না নবীর উপর দরুদ পাঠ করা হবে।’ [তিরমিযি: ৪৮৬, সহিহাহ: ২০৩৫, (হাসান)]
.
❑ রাসূলের আলোচনা বা নাম উচ্চারিত হলে:
.
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘কৃপণ ঐ ব্যক্তি, যার সামনে আমার আলোচনা করা হলো, অথচ সে আমার জন্য দরুদ পাঠ করলো না।’’ [বুখারি, আল-আদাবুল মুফরাদ: ৫/১৪৮, তিরমিযি: ৩৫৪৬, (হাসান)]
.
❑ দুশ্চিন্তা ও বিপদ-মুসিবতে:
.
একজন সাহাবি রাসূলকে বলেছিলেন, তিনি তাঁর উপর সর্বদা দরুদ পাঠ করবেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলেছিলেন, ‘‘যদি তুমি তাই করো, তবে তোমার সকল চিন্তা ও উৎকণ্ঠা দূর করা হবে (প্রয়োজন পূরণ হবে) এবং তোমার পাপসমূহ ক্ষমা করা হবে।’’ [তিরমিযি: ২৪৫৭, হাকিম: ২/৪৫৭, হাদিসটি সহিহ]
.
❑ জুমু‘আর দিনে ও রাতে:
.
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম দিন হচ্ছে জুমুআর দিন। সুতরাং এই দিনে তোমরা আমার উপর বেশি করে দরুদ পড়ো। কেননা, তোমাদের দরুদ আমার কাছে উপস্থাপন করা হয়।” [আবু দাউদ: ১০৪৭, নাসায়ি: ১৩৭৪, হাদিসটির সনদ সহিহ]
.
❑ মসজিদে প্রবেশ ও বের হতে:
.
আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করার সময় বলতেন, তখন বলতেন, ‘বিসমিল্লাহি, আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদ’ এবং বের হওয়ার সময়ও বলতেন, ‘বিসমিল্লাহি, আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদ’। [ইবনুস সুন্নি: ৮৮, (হাসান)]
.
ইবনু মাজাহর হাদিসেও দরুদ পড়ে মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়ার কথা বলা হয়েছে।
.
❑ আজানের পর:
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যখন তোমরা মুআযযিনকে আজান দিতে শুনবে তখন সে যেরূপ বলে, তোমরাও তদ্রুপ বলবে। অতঃপর তোমরা (আজান শেষে) আমার প্রতি দরুদ পাঠ করবে। কেননা যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরুদ পাঠ করবে আল্লাহ তা‘আলা তার উপর দশটি রহমত নাযিল করবেন। অতঃপর তোমরা আল্লাহর নিকট আমার জন্য ওসিলা প্রার্থনা কর...।’’ [সহিহ মুসলিম: ৩৮৪]
.
❑ সকাল-সন্ধ্যায় ১০ বার করে:
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি সকালে দশবার ও সন্ধ্যায় দশবার আমার জন্য দরুদ পড়বে, কিয়ামতের দিন সে আমার সুপারিশের নাগাল পাবে।’’ [হাইসামি, মাজমাউয যাওয়াইদ: ১০/১২০, সহিহ আত তারগিব: ১/৩৪৫, (হাসান)]
.
এছাড়াও—
◗প্রত্যেক নামাজের শেষ বৈঠকে দরুদ পড়তে হয়।
◗জানাযার নামাজের দ্বিতীয় তাকবিরের পর দরুদ পড়তে হয়।
◗নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর জিয়ারতে দরুদ পড়তে হয়।
◗দু‘আ কুনুতেও দু‘আ করা যায়।
◗এছাড়াও যেকোনো সময়ে, যেকোনো অবস্থায় দরুদ পাঠ করা যায়। অজু ছাড়াও পড়া যায়।
.
 
 
 
ষষ্ঠ পর্ব: রাসূলের উপর দরুদ পাঠ-সংক্রান্ত ১০ টি জরুরি বিষয় প্রত্যেকের জানা দরকার
 
 
 

রাসূলের উপর দরুদ পাঠ: ১০ টি জরুরি বিষয় প্রত্যেকের জেনে রাখা দরকার।
▬▬▬▬▬▬◄◾►▬▬▬▬▬▬
(১) যে নবীজির নাম উচ্চারণ করবে এবং যে শুনবে, উভয়ের উপর ওয়াজিব হলো, দরুদ পাঠ করা। যদি এক বৈঠকে একাধিকবার উচ্চারিত হয় বা একাধিকবার শোনা হয়, তবে একবার দরুদ পড়লেই ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। তবে, ইমাম ত্বহাবি (রাহ.)-সহ অনেকের মতে, প্রতিবারই দরুদ পড়া ওয়াজিব। [ফাতাওয়া শামি: ২/২৩২, ২/২২৭]
.
(২) শুধু উচ্চারণই নয়, লেখার সময়েও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম আসলে দরুদ পড়া ওয়াজিব। [মুফতি শফি, মা‘আরিফুল কুরআন: ৭/২২৫]
.
(৩) দরুদ সর্বদা আস্তে পড়া উত্তম। তবে, যখন আমরা সম্মিলিত অবস্থায় থাকবো এবং তখন নবীজির নাম উচ্চারিত হবে, তখন একটু জোরে পড়ার চেষ্টা করবো। তাহলে অন্যরাও দরুদ পড়বে। অনেক সময় স্মরণ থাকে না।
.
(৪) মুয়াযযিন যখন আযানে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্’ পড়েন, তখন আমরা এর জবাব হিসেবে দরুদ পড়বো না। বরং হুবহু মুয়াযযিনের মতই বলবো। কারণ হাদিসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা যখন মুয়াযযিনের আজান শুনবে, তখন তাই বলবে, যা মুয়াযযিন বলে।’ [সহিহ মুসলিম: ৩৮৪]
.
অবশ্য অন্য হাদিসে বলা হয়েছে, কেবল দুটো বাক্য ব্যতীত। সেগুলো হলো: হাইয়া আলাস সলাহ/ফালাহ। এ দুটোর জবাবে বলতে হয়, ‘লা হাউলা ওয়া লা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।’
.
[নোট: আজান শেষ হওয়ার পর দরুদ পড়তে বলা হয়েছে সহিহ হাদিসে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ আমল।]
.
(৫) জুমু‘আর খুতবার সময় রাসূলের নাম শুনলে দরুদ পড়া ওয়াজিব নয়। কারণ সহিহ বর্ণনায় এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবার সময় চুপ থাকতে বলেছেন। তবে, কোনো কোনো ফকিহ এই সময় মনে মনে দরুদ পড়ে নিতে বলেছেন। এটিই উত্তম। [ফাতাওয়া শামি: ২/২৩১, ৩/৩৬]
.
(৬) তিলাওয়াতের সময় রাসূলের নাম শুনলে তিলাওয়াত চালিয়ে যাওয়াই ভালো। এ অবস্থায় দরুদ পড়া জরুরি নয়। তবে, তিলাওয়াত শেষে দরুদ পড়া উত্তম। [ফাতাওয়া শামি: ২/২৩১]
.
(৭) অন্যান্য নবি-রাসূলগণের নাম শুনলে বা পড়লে দরুদ পড়া জরুরি নয়। তবে উত্তম। এ ব্যাপারে মোটামুটি গ্রহণযোগ্য স্তরের হাদিস আছে। [আস সলাতু ‘আলান নাবিয়্যি, ইমাম ইবনু আবি আসিম, পৃ: ৩০; ইমাম সাখাবি, আল কাউলুল বাদী’, পৃ: ৭৯]
.
(৮) নামাজের শেষ বৈঠক ব্যতীত নামাজের অন্য কোনো অবস্থায় দরুদ পড়া মাকরুহ তথা অপছন্দনীয়। তাই, যারা নামাজের সিজদাহর সময় দু‘আ করতে চান, তারা দরুদ না পড়েই দু‘আ করবেন। তাছাড়া, বিতরের কুনুত পড়ার পরও দরুদ পড়া জায়েয। [ফাতাওয়া শামি: ২/২৩০-২৩১]
.
(৯) দরুদে ইবরাহিম শুধু নামাজেই নয়, যেকোনো সময় পাঠ করা যায়। বরং, এই দরুদটিই সর্বশ্রেষ্ঠ। তাই, দরুদের আমল করার ক্ষেত্রে এটি অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত।
.
(১০) অনেকেই সংক্ষেপে (সা.) লিখেন। এভাবে লেখা উচিত নয়। এ প্রসঙ্গে অন্য পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ্।
.
 
সপ্তম পর্ব: শুধু দরুদ নয়, সালামও পাঠ করতে হয়; সালাম পাঠানোর পদ্ধতি

রাসূলের উপর শুধু দরুদই নয়, সালাম প্রেরণ করাও জরুরি। আজ আমরা রাসূলের উপর সালাম পাঠের গুরুত্ব ও সালামের কিছু বাক্য আলোচনা করব। এছাড়াও দরুদ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ৫ টি বিষয়ে কথা থাকবে পোস্টের শেষে, যেগুলো সবার জানা থাকা দরকার।
▬▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬▬
আল্লাহ্ বলেন, ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবির প্রতি সালাত (দরুদ) প্রেরণ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি প্রচুর পরিমাণে সালাত (দরুদ) ও সালাম প্রেরণ করো।’’ [সূরা আহযাব, আয়াত: ৫৬]
.
সুতরাং, রাসূলের উপর দরুদ ও সালাম প্রেরণ করা জরুরি। এটি আল্লাহর আদেশ।
.
❖ রাসূলের উপর সালাম পাঠের গুরুত্ব:
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যমিনে বিচরণকারী আল্লাহর কিছু ফেরেশতা আছেন, তাঁরা আমার নিকট উম্মতের পক্ষ থেকে প্রেরিত সালাম পৌঁছিয়ে থাকেন।’’ [নাসাঈ, আস-সুনান: ১২১৫, আলবানি, সহিহুল জামি’: ২১৭৪, হাদিসটি সহিহ]
.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্যত্র বলেন, “কোনো ব্যক্তি যখন আমার উপর সালাম পেশ করে, তখন আল্লাহ আমার মধ্যে আমার রুহ ফিরিয়ে দেন, ফলে আমি তার সালামের জবাব দিই।” [আবূ দাউদ, আস-সুনান: ২০৪১, আহমাদ, আল-মুসনাদ: ১০৪৩৪, হাদিসটি সহিহ]
.
সহিহ হাদিসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দরুদের একাধিক বাক্য জানা গেলেও, সালামের বাক্য খুব একটা পাওয়া যায় না। আমার সংক্ষিপ্ত পড়াশুনায় তেমন কিছু পাইনি। দরুদ ও সালাম একসঙ্গে কোনো নির্ভরযোগ্য হাদিসে এসেছে বলেও জানা যায় না। পূর্বে আমরা দরুদের সহিহ ৬ টি বাক্য আলোচনা করেছিলাম। আজ আমরা সালাম পাঠানোর কয়েকটি বাক্য তুলে ধরব।
.
❂ রাসূলের শ্যালিকা আবু বকর (রা.)-এর কন্যা আসমা (রা.) যে বাক্য দিয়ে রাসূলের উপর একই সাথে দরুদ ও সালাম পাঠ করতেন, সেটি আমরা পড়তে পারি।
.
صَلَّى اللّٰهُ عَلٰى رَسُوْلِهِ وَسَلَّمْ
.
(সল্লাল্লাহু ‘আলা রাসূলিহি ওয়া সাল্লাম)
.
অর্থ: আল্লাহ্ তাঁর রাসূলের উপর দরুদ ও সালাম বর্ষণ করুন। [মুসলিম, আস-সহিহ: ১২৩৭]
.
❂ ইবনু ‘উমার (রা.)-এর সালামটিও পড়া যায়, যা তিনি তাশাহহুদে পড়তেন।
.
اَلسَّلَامُ عَلَى النَّبِيِّ وَرَحْمَةُ اللّٰهِ وَبَرَكَاتُهُ
.
(আসসালামু ‘আলান নাবিয়্যি ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু)
.
অর্থ: নবির উপর সালাম, আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। [মালিক, আল-মুয়াত্তা; হাদিসটি সহিহ]
.
❂ এভাবেও পড়তে পারি (তবে, এটি হাদিস নয়)
.
اَللّٰهُمَّ سَلِّمْ عَلٰى مُحَمَّد
(আল্লাহুম্মা সাল্লিম ‘আলা মুহাম্মাদ)
.
অর্থ: হে আল্লাহ! মুহাম্মাদের উপর আপনি সালাম প্রেরণ করুন।
.
আমরা প্রতি নামাজেই তাশাহহুদ (আত্তাহিয়্যাতু....) পাঠ করার সময় রাসূলের উপর সালাম পেশ করে বলি: আসসালামু ‘আলাইকা আইয়ুহান নাবিয়্যু... (হে নবি! আপনার উপর সালাম, আল্লাহর রহমত ও আল্লাহর বরকত বর্ষিত হোক)।
.
❖ চারটি বিষয় জেনে রাখা দরকার:
.
(১) রাসূলের নাম লিখলে অনেকেই ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ না লিখে ‘(সা.)’ বা এরকম সংক্ষিপ্ত করে লিখেন। এটি অনুচিত, এটি মাকরুহ। বরং পরিপূর্ণ দরুদ লিখতে হবে। পূর্বের ও পরের বিশিষ্ট আলিমগণ এ ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন হলেন: ইমাম নববি, ইমাম সাখাবি, ইমাম সুয়ূতি, ইবনু হাজার হাইতামি (রাহিমাহুমুল্লাহ্)। [নববি, আত তাকরিব: ১/৫০৭, সাখাবি, ফাতহুল মুগিস: ৩/৪৭, তাকি উসমানি, ইসলাহি খুতুবাত: ৬/৮৮]
.
(২) দরুদ ও সালাম একসাথেও পাঠ করা যাবে আবার এগুলো আলাদা আলাদা পাঠ করতেও কোনো সমস্যা নেই।
.
(৩) ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ [আল্লাহ্ তাঁর (মুহাম্মাদের) উপর দরুদ ও সালাম বর্ষণ করুন] বললে দরুদ ও সালাম পাঠ করা হয়ে যায়। এটি সালাফে সালিহিনের সময় থেকে আজ অবধি মুসলিম উম্মাহ প্র্যাকটিস করে আসছে। তবে, হুবহু ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলে দরুদ পড়তে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন বলে জানা যায় না। তবে, এটি দিয়েও দরুদ পড়া সম্পূর্ণ বৈধ। এ ব্যাপারে কারও কোনও সন্দেহ নেই। উত্তম হলো, দরুদের জন্য সহিহ হাদিসে নির্দেশিত বাক্য দিয়ে দরুদ পড়া। এরকম ৬ টি সহিহ দরুদ পূর্বেই আমরা আলোচনা করেছি।
.
(৪) সরাসরি নবিজির কবরে গিয়ে তাঁকে সালাম জানাতে চাইলে এভাবে জানানো যায়—আসসালামু ‘আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ! (হে আল্লাহর রাসূল! আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)
.
সাহাবি আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রা.) এভাবে সালাম জানাতেন। [ইবনু আবি শাইবাহ, আল-মুসান্নাফ: ১১৯১৫, মুহাক্কিক আওয়ামা (হাফিযাহুল্লাহ্) বলেন, এর সনদ সহিহ]
.
(৫) ‘আল্লাহুম্মা সল্লি ওয়া সাল্লিম আলা নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদ’ হুবহু এই বাক্যে নবিজি থেকে কোনো দরুদ পাওয়া যায় না। হিসনুল মুসলিম অ্যাপে মূলত এটিকে দরুদের একটি নমুনা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। মূল হাদিসটি ছিলো সকাল-সন্ধ্যায় ১০ বার করে দরুদ পড়া সংক্রান্ত। রেফারেন্সও মূলত এটিরই দেওয়া। কিন্তু অনেকেই ভুল বুঝেছেন; ভেবেছেন, এটিই বুঝি সহিহ হাদিসে বর্ণিত একটি দরুদ। না, এটি নয়। হ্যাঁ, এই বাক্যটি দিয়ে দরুদ পড়া জায়েয়; তবে, উত্তম হবে সহিহ হাদিসের দরুদগুলো অগ্রাধিকার দেওয়া।
 
 
Courtesy: Tasbeeh













No comments:

Post a Comment