Thursday, June 17, 2021

১৯. যে স্ত্রীর স্বামী বিদেশে থাকে তার জন্য ১০টি দিকনির্দেশনা Marriage education series

 May be an image of text that says 'যে স্ত্রীর স্বামী বিদেশে থাকে তার জন্য ১০টি দিকনির্দেশনা'

 

যে স্ত্রীর স্বামী বিদেশে থাকে তার জন্য ১০টি দিকনির্দেশনা
▬▬▬▬◢◯◣▬▬▬▬
প্রশ্ন: স্বামী বিদেশে থাকা অবস্থায় স্ত্রী যদি জিনায় লিপ্ত হয় তাহলে তার শাস্তি কী? এ ক্ষেত্রে সে কিভাবে জিনা-ব্যাভিচার ও পাপাচার থেকে নিজেকে রক্ষা করবে?
উত্তর:
ইসলামের দৃষ্টিতে পরকীয়া ও জিনা-ব্যভিচার অত্যন্ত জঘন্য কবিরা গুনাহ, দণ্ডনীয় অপরাধ এবং ঘৃণিত কাজ। ইসলামের যত প্রকার শাস্তি আছে, জিনার শাস্তি সবচেয়ে কঠিন। আর তা হল, বিবাহিত ব্যক্তি জিনায় লিপ্ত হলে আদালতের মধ্যে যথোপযুক্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ বা স্বীকারোক্তি সাপেক্ষে অপরাধ প্রমাণিত হলে জিনাকারিকে পাথর নিক্ষেপ করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা আর অবিবাহিত হলে একশত বেত্রাঘাত ও এক বছর দেশান্তর (বর্তমানে জেল)।
সুতরাং স্বামী দেশে থাকুক বা বিদেশে থাকুক স্ত্রী যদি পরকীয়ায় লিপ্ত হয় তাহলে সে গুনাহগার হওয়ার পাশাপাশি শাস্তিযোগ্য অপরাধে অপরাধী বলে গণ্য হবে। প্রবাসী পুরুষের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
❐ স্বামী বিদেশে থাকা অবস্থায় স্ত্রীর প্রতি ১০টি দিকনির্দেশনা:
স্বামী বিদেশে থাকা অবস্থায় শরঈ দৃষ্টিকোণ থেকে স্ত্রীর করণীয় সংক্রান্ত ১০টি দিকনির্দেশনা তুলে ধরা হল:
✪ ১) স্ত্রী যদি প্রবল আশঙ্কা করে যে, স্বামীর অনুপস্থিতিতে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে না বা জিনা-ব্যভিচার ও পাপাচারে জড়িয়ে পড়বে তাহলে শরিয়তের দৃষ্টিতে স্বামীর কাছে তার এ দাবী করার অধিকার আছে যে, হয় সে তাকে সাথে করে বিদেশে নিবে অথবা তাকে রেখেে একাকী বিদেশ সফর থেকে বিরত থাকবে। কারণ বিয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য হল, নিজের ইজ্জত-সম্ভ্রম হেফাজত করা এবং গুনাহ থেকে আত্মরক্ষা করা।
✪ ২) স্বামী যদি স্ত্রীর দাবী বা নিষেধ উপেক্ষা করে অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে বিদেশ গমন করে তাহলে স্ত্রীর জন্য ‘খোলা তালাক’ নেয়া জায়েজ আছে। কেননা এতে বিয়ের অন্যতম মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয় এবং ঈমান ও চরিত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
✪ ৩) তা যদি সম্ভব না হয় তাহলে ধৈর্য ধারণ করবে, নিয়মিত নফল রোজা রাখবে এবং নিজেকে ইবাদত বন্দেগি, কুরআন তিলাওয়াত, জ্ঞানার্জন, সাংসারিক ও অন্যান্য উপকারী কাজকর্মে ব্যস্ত রাখবে।
✪ ৪) স্বামীর সাথে ফোন, ইন্টারনেটে ইত্যাদির মাধ্যমে যথাসম্ভব নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করবে।
✪ ৫) নাটক, সিনেমা, গানবাজনা, অশ্লীলতা ও অসৎসঙ্গ থেকে দূরে থাকবে। কারণ এগুলো মানুষের মনে কু প্রবৃত্তি ও কামনা-বাসনার আগুন প্রজ্বলিত করে দেয়।
✪ ৬) চারিত্রিক নির্মলতা ও মানসিক পবিত্রতা রক্ষায় কোনও পরপুরুষ ও নন মাহরাম ব্যক্তিকে-বিশেষ করে স্বামীর বা নিজের নিকটাত্মীয় নন মাহরাম পুরুষ যেমন: দেবর, ভাসুর, চাচাতো, ফুফাতো, মামাতো খালাতো ভাই, দুলাভাই, ভগ্নীপতি, বিয়াই ইত্যাদি ব্যক্তিকে তার ঘরে প্রবেশের সুযোগ দিবে না এবং তাদের সাথে নির্জনে দেখা-সাক্ষাত করবে না। তাদের সাথে কথা বলার প্রয়োজন হলে, পর্দার আড়াল থেকে কথা বলবে এবং এ ক্ষেত্রে কোমল কণ্ঠ পরিহার করবে।
✪ ৭) নন মাহরাম পুরুষদের সাথে হাসি, দুষ্টামি, স্পর্শ এবং নিষ্প্রয়োজনীয় দৃষ্টিপাত, কথাবার্তা, ফোনালাপ, মেসেজিং, ভিডিও চ্যাটিং ইত্যাদি থেকে দূরে থাকবে। কারণ শয়তান এই সুযোগে দুজনের মাঝে ফিতনার বীজ বপন করে।
✪ ৮) শয়তানের কুমন্ত্রণা ও কু প্রবৃত্তির তাড়না থেকে বাঁচার স্বার্থে যে স্ত্রীর স্বামী প্রবাসে থাকে (প্রােষিতভর্তৃকা) তার একাকী বসবাস না করাই ভালো। তাই সন্তানদের সাথে রাখার চেষ্টা করতে হবে। সন্তান না থাকলে সম্ভব হলে মা, বোন, ভাতিজী, ভাগ্নি, ননদ, শাশুড়ি ইত্যাদি কোনও নিকটাত্মীয় মহিলা সাথে থাকা উত্তম।
✪ ৯) একান্ত প্রয়োজনে বাইরে যাওয়ার দরকার হলে, পূর্ণ পর্দা রক্ষা করবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই সুগন্ধি ব্যবহার ও সাজসজ্জা প্রদর্শনী থেকে দুরে থাকবে।
✪ ১০) সর্বোপরি আল্লাহর ভয় এবং জাহান্নামের শাস্তির কথা অন্তরে জাগ্রত রেখে ফিতনা থেকে দূরে থেকে সৎ ভাবে জীবন যাপন করবে।
আল্লাহ তাআলা প্রতিটি পুরুষ ও নারীকে পাপাচার থেকে রক্ষা করুন। আমিন।
▬▬▬▬◢◯◣▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
fb id: AbdullaahilHadi
জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

 

১৮. স্বামীর ইবাদত-বন্দেগিতে অনীহা এবং খারাপ আচরণে স্ত্রী যখন চরম বিরক্ত ও বীতশ্রদ্ধ....​ Marriage education series

 May be an image of text that says 'স্বামীর ইবাদত- বন্দেগিতে অনীহা এবং খারাপ আচরণে স্ত্রী যখন চরম বিরক্ত ও বীতশ্রদ্ধ....'

 

 

স্বামীর ইবাদত-বন্দেগিতে অনীহা এবং খারাপ আচরণে স্ত্রী যখন চরম বিরক্ত ও বীতশ্রদ্ধ....​
▬▬▬▬◆◈◆ ▬▬▬▬
প্রশ্ন: স্বামীর আনুগত্য করা ফরজ। কিন্তু স্বামী যদি সালাতের ব্যাপারে যত্নশীল না হয়, মানুষকে নিয়ে অত্যধিক সমালোচনা, বাজে ব্যবহার করা, রুঢ় হওয়া,অপমান করে কথা বলা, মানুষ সম্পর্কে বাজে ধারণা করা ইত্যাদির কারণে স্ত্রী যদি তার এসব ব্যাপার পছন্দ না করে এবং তার প্রতি শ্রদ্ধা হারিয়ে ফেলে যা তাকে তার কথা মানতে অনুৎসাহিত করে; ফলে বিভিন্ন বিষয়ে মতানৈক্য শুরু হয়; তাহলে কি গুনাহ হবে? স্ত্রীর কী করণীয় সেক্ষেত্রে?
উত্তর:
স্বামীর মধ্যে যদি শরিয়া বিরোধী কার্যক্রম দেখা যায় তাহলে স্ত্রীর করণীয় হল, তাকে ধৈর্য ও আন্তরিকতার সাথে বুঝানোর চেষ্টা করা। এজন্য দীর্ঘ সময়ও লাগতে পারে। সেই সাথে আল্লাহর কাছে তার হেদায়েতের জন্য দোয়া করা। এতে যদি সে সংশোধিত হয় তাহলে তো ভালো। অন্যথায় সেই স্বামীর প্রতি একজন ইমানদার স্ত্রীর শ্রদ্ধা-ভক্তি উঠে যাওয়া স্বাভাবিক।
এখন সে যদি তার ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিরাশ হয়ে যায় এবং তার সাথে ঘর-সংসার করাকে নিজের ঈমান ও আমল-আখলাকের জন্য বিপদজনক মনে করে এবং তার সাথে সংসার করার প্রতি রুচি হারিয়ে ফেলে তাহলে এ ক্ষেত্রে ইসলাম তাকে অসহ্য মানসিক যন্ত্রণা ও অরুচি নিয়ে এই স্বামীর সাথে ঘর-সংসার করাকে বাধ্যতামূলক করে নি। বরং তার জন্য খোলা তালাক নেয়ার সুযোগ রেখেছে। ইচ্ছে করলে সে তা গ্রহণ করতে পারে।
والله أعلم بالصواب
▬▬▬▬◆◈◆ ▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব