Showing posts with label বিয়ে নিয়ে কথা. Show all posts
Showing posts with label বিয়ে নিয়ে কথা. Show all posts

Tuesday, July 27, 2021

মেয়েদের পর্দা

 

- মেয়েদের পর্দা -
হিজাব, নিকাব, হাত মোজা, পা মোজা পড়া হয়? - আলহামদুলিল্লাহ, বাহিরে সর্বদা এসব পড়া হয়।
মডারেট?
- না, আলহামদুলিল্লাহ, পরিপূর্ণ প্র্যাকটিসিং।
কখনো হিজাব পড়া ছবি ফেসবুক বা সোস্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হয়?
- না, কখনোই না, আলহামদুলিল্লাহ।
নন-মাহরাম মেইনটেইন করা হয়?
- জ্বি আলহামদুলিল্লাহ, সর্বাত্মকভাবে মেইনটেইন করা হয়।
সবই আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
কিন্তু কিন্তু...
ফেসবুকে ছবি পোস্ট করা পর্দার লঙ্ঘন বিধায় আপলোড করেন না কিন্তু আপনার মেয়ে বান্ধবী আপনার মাহরাম বিধায় তার সাথে সেলফি তুলেন যা হয়তো আপনার বান্ধবীর ফোনে থেকে যায়। কিংবা আপনার সাথে আপনার বান্ধবীর গ্রুপ ছবি আপনার বান্ধবীকে ইনবক্সে সেন্ড করেন।
আপনি হয়তো ভাবছেন আমার বান্ধবির ফোনেই তো ছবি স্টোর করা আছে কিংবা আমার বান্ধবির ইনবক্সেই তো পাঠিয়েছি, মেয়ে তো, দোষ কিসের।
আপনার বান্ধবি মেয়ে, তার সাথে আপনার পর্দা করতে হবে না ঠিকই, কিন্তু আপনার বান্ধবির ফোন যে তার স্বামী, ভাই, বাবা, চাচা, মামা কিংবা অন্য কোনো পুরুষ যে ধরবে না এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। আপনার বান্ধবীর ফোন তার মাহরাম পুরুষরা তো ধরতেই পারে কিংবা ইনবক্সেও অ্যাক্সেস থাকতে পারে, অথচ ঐসকল পুরুষ আপনার জন্য নন-মাহরাম। অর্থাৎ আপনার পর্দার লঙ্ঘন হতেই পারে। সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
আপনি হয়তো ভাবছেন আপনি যেসকল বান্ধবীর ফোনো ছবি তুলছেন কিংবা যেসকল বান্ধবির ইনবক্সে ছবি পাঠিয়েছেন, তারা সকলেই পরিপূর্ণ পর্দানশীল, পরিপূর্ণ ইসলাম প্র্যাকটিসিং, আপনার পর্দা লঙ্ঘনের সুযোগ নেই।
সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আপনার বান্ধবী ঠিকই পরিপূর্ণ প্র্যাকটিসিং এবং আপনার পর্দার হেফাজতে সর্বদা সতর্ক। কিন্তু হয়ত তার স্বামী/ভাই/বাবা/চাচা/মামা সহ কোনো না মাহরাম ইসলামিক মাইন্ডেড নয়, তারা হয়ত আপনার তোলা ছবি বা আপনার সেন্ড করা ছবি দেখে ফেলল। স্পষ্ট পর্দার লঙ্ঘন হবে।
একজন মেয়ের সকল মাহরাম যে ইসলামিক মাইন্ডেড হবে এবং ঐসকল মাহরাম পুরুষরা যে ঐ মেয়ের ফোন/ফেসবুক আইডি অ্যাক্সেস পাবে না, এরকম নিশ্চয়তা দেওয়ার সুযোগ নেই।
আর সকল নন-মাহরাম পুরুষরাও ইসলামিক মাইন্ডেড হলেই যে পরিপূর্ণ দ্বীনদার হবে, পরিপূর্ণ প্র্যাকটিসিং হবে, এর নিশ্চয়তাও দেওয়া সম্ভব না। আর পরিপূর্ণ প্র্যাকটিসিং না হলে আপনার পর্দার হেফাজত হবে - এমনটা নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়।
ছবি সেন্ড করার বাইরে আপনার বান্ধবির কাছে "সেনসেটিভ" ম্যাসেজ সেন্ড করাটার ক্ষেত্রেও একই বিষয় ঘটতে পারে।
ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারের ক্ষেত্রে এসব এড়াতে "আনসেন্ড" করার সুযোগ রয়েছে। আনসেন্ড অপশনটি ব্যবহার করে ম্যাসেজের বিষয়টি থেকে পর্দার লঙ্ঘন কিছুটা ঠেকানো সম্ভব, ইন শা আল্লাহ।
কিন্তু ছবি স্টোর করে রাখার ক্ষেত্রে কখনওই ১০০% রিস্ক ফ্রি নয়। অতএব, বিষয়টি অনেকেরই হয়ত মাথায় থাকে নি, বা মাথায় আসেনি। তাকওয়ার পরিচায়ক হবে এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে তা বাস্তবায়ন করা।
লেখাঃ মুহাম্মদ রাহাত

হিজাব নিয়ে কথা

 হিজাব নিয়ে কথা

হিজাব বা পর্দা করার অন্যতম শর্ত হল 'বডি হাগিং' বা টাইট কিছু না পরা, যেটাতে শরীরের শেপ বুঝা যাবে। পায়ের শেপ এর মাঝে ইনক্লুসিভ। তাই উপরে ঢোলা টপ্স আর নিচে চাপা জিন্স পরে পর্দার কন্ডিশন ফুলফিল হয় না। দেশবিশেষে এটা 'ভ্যারি' করবে না। বাংলাদেশেও যে নিয়ম, ক্যানাডাতেও তাই, উজবেকিস্তানেও। সাইজ ৮ আপনার আইডিয়াল মাপ হলে ১১ বা ১২ পরলে খুব অসুবিধা হবার কথা না। মুসলিম দেশে হিজাব করা লাগবে আর অমুসলিম দেশে সব মাফ, এটা খুব অদ্ভুত ধারণা। উৎপত্তি কার উর্বর মাথা থেকে হয়েছে ইবলিশ বলতে পারবে since he helped out.
.
হিজাব সবার জন্য ফরজ, শুধু হুজুরনীদের জন্য না। যে পরিবারের ছেলে সদস্যরা তাদের রেসপন্সিবিলিটির আন্ডারে থাকা মেয়ে/মহিলাদের এ বিষয়ে সাবধান করে না, শিক্ষা দেয় না, তাকে দাইয়ুস বলে। উনার স্থান জাহান্নামে।
.
হিজাব মানে শুধু মাথায় কাপড় দেয়া না। এটা মডেস্টি, হায়া। হিজাব একটা এটিচ্যুড, লাইফস্টাইল। চাপা জিন্স ফতুয়া পরতে সমস্যা নেই, উপরে এমন ভাবে কিছু দিয়ে ঢেকে ফেলতে হবে যেন এসব বডি হাগিং ক্লোথ কারো নজরে না পড়ে। এনি আউটার লেয়ার। নিতান্তই না পারলে খুব ঢোলা, একেবারে আনরিভিলিং কাপড় পরতে হবে। টাইট জিন্স/লেগিং উইথ টপস পরলে যেহুতু হিজাব হবে না, ঢোলা টিউনিক পরতে পারেন। সিম্পল, লুজ, এলিগেন্ট। খেয়াল করেছেন কখনো যে কোমর পর্যন্ত টপ্স পরে হেঁটে গেলে পাশের বাড়ির বুড়া মোখলেস দাদাও আপনার পেছন পানে চেয়ে থাকে? Basic human instinct, কিচ্ছু করবার নেই।
.
হাত বের করে মাথা ঢেকে রাখার ব্যাপারটা হিজাবের নিয়ম লংঘন করে। হাফ হাতা, থ্রি কোয়াটার হাতা, বা টাইট স্লিভ পরে শুধু চুল কভার করাটা ভ্রান্তিজনক। হাত, পা (একেবারে পায়ের পাতা পর্যন্ত) আওরার অন্তর্ভুক্ত।
.
হিজাব কেন করব?
.
ফরজ তাই। জাহান্নামি না হওয়ার জন্য। কন্সেপ্টটা বুঝে নিতে হবে আগে যে it is obligatory. Optional ব্যাপার স্যাপার নাই এখানে। যেটার বিধান স্পষ্টত ফরজ সেখানে প্রপার হিজাব না করাটা সিম্পলি বেয়াদবি, এখানে কোন এক্সকিউয খাটে না। নূন্যতম ঢোলা কাপড়টা পরেন যাতে মামা চাচা দুলাভাই আপনার বডি ডাইমেনশন্স মানসপটে এঁকে ফেলতে না পারে। সবাই যে ওঁৎ পেতে আছে আপনার শরীর মাপার জন্য তা না, কিন্তু কে কে মাপবে না তার নিশ্চয়তা কে দিচ্ছে?
.
'কেন আমাকে ঢেকেঢুকে চলতে হবে? ছেলেরা কেন হিজাব করবে না? আমি এত হুজুর না। এত কি মানা সম্ভব? দেবর, দুলাভাই তো নিজের ভাইয়ের মতন। ওদের সামনে হিজাব কেন করা লাগবে?' এসব বাচ্চা বাচ্চা প্রশ্ন আমাকে করবেন না প্লিয। এখনো যদি we can't grow up, তাহলে আল্লাহ্‌ মাফ করুক, হয়ত আমাদের অন্তরে সিল মারা হয়ে গেছে।
.
হিজাব না করলে কি হবে?
.
সেটা আল্লাহ্‌ আর আপনার মাঝের ব্যাপার। তবে যে জেনেশুনে তার প্রভুর কথা অমান্য করল, তার প্রভু তাকে অনুগ্রহ করবেন এটা আশা করা বিশাল লিপ অফ 'ফেইথ'। এতটা সিলি কারই হওয়া উচিত না।
.
পরে করব, মন থেকে আসলে করব, বুড়া হয়ে করব এসব খুব দুঃখজনক কথা। আপনার 'মন থেকে না আসলে' নিশ্চয়ই আপনি খাওয়া, টয়লেট বন্ধ করে রাখেন না। It's not optional.
.
বর্তমানে হিজাব করে আগের এলোমেলো বাতাসে উড়ানো খোলা চুলের ছবি দিলে হিজাব করার মানেটাই তো 'The End' হয়ে গেল, তাই না? সবাই তো আপনার লুকায়িত সৌন্দর্য দেখেই ফেলল।
.
'আমার মা হিজাব করে না, কিন্তু অনেক পরহেজগার।' Well, আল্লাহ্‌ কাস্টোমাইজড রুলিং দেন নাই, ছাড় দিয়েছে ক্ষেত্রবিশেষে করুণা করে। To think we are inclusive in that ছাড়, কি ভয়ংকর এক আশা!
.
নিজে হিজাব করে সন্তানকে মিনি মিনি বারবি জামা পরাবেন না প্লিজ। ভয়ংকর কিছু মানসিক রোগী সবখানেই বিচরণ করে। শালীনতা has no age limit, so the earlier you start, the better.
বইঃ হিজাব আমার পরিচয় 🖤

Sunday, July 25, 2021

❝ আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ লিখেছেন, একজন স্ত্রীর মধ্যে চারটি গুণ থাকা আবশ্যক। four must have qualities in a wife

 

❝ আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ লিখেছেন, একজন স্ত্রীর মধ্যে চারটি গুণ থাকা আবশ্যক।
.
প্রথম গুণ: চেহারায় লাজুকতা থাকা।
.
বলাবাহুল্য, যে নারীর চেহারায় লাজুকতা থাকবে, তার অন্তরেও নিশ্চিত লজ্জা থাকবে। প্রবাদে বলে, চেহারা মনের আয়না। চেহারায় তাই ফুটে ওঠে যা অন্তরে বিদ্যমান থাকে৷ চেহারায় লজ্জা থাকলে বোঝা যাবে তার অন্তরে লাজুকতা রয়েছে।
.
হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) এর বিখ্যাত বাণী, 'পুরুষদের জন্য লজ্জা উত্তম আর নারীদের জন্য লজ্জা অতি উত্তম'।
.
দ্বিতীয় গুণ: মুখে মিষ্টতা থাকা।
.
অর্থাৎ তার কথা শুনলে মন জুড়িয়ে যাবে। স্বামীর সাথে কড়া কথা বলবে না। বাচ্চাদেরকে ধমক দেবে না। সবসময় শান্ত ও মিষ্টি সুরে কথা বলবে। আচরণ ও উচ্চারণে মাধুর্য থাকবে।
.
তৃতীয় গুণ : অন্তর সৎ হওয়া।
.
চতুর্থ গুণ : হাত সর্বদা কাজে ব্যস্ত থাকা।
.
যার মধ্যে এই গুণগুলো থাকবে, সে-ই উত্তম স্ত্রী। ❞
- শাইখ যুলফিকার আহমদ নকশবন্দী (হাফি.)
[ তাকওয়া ও আত্মশুদ্ধি, পৃ:৩৬; অনু: আবু জারীর আবদুল ওয়াদুদ, মাকতাবাতুল আযহার ]

ভুল

 

" আপনার মেয়ে বিয়ের পরে অন্য একটা ছেলের জন্য বিষ খেয়েছে, ওরকম মেয়ে তো থাকার থেকে না থাকাই ভালো! ভালোই হয়েছে মরে গেছে। এরকম মেয়েদের মরাই উচিৎ। খুব তো হুজুরগীরি দেখাতো অথচ তলে তলে এতো কিছু। আমি আগেই বুঝতে পেরেছিলাম ঘুমটার নিচে যে খ্যামটা নাচে। কেন যে আম্মা রনি ভাইয়ের জন্য এরকম একটা দুশ্চরিত্রা ক্ষ্যাত মেয়ে পছন্দ করেছিলেন? রনি ভাইয়ের জীবনটা একেবারে নরক হয়ে গেলো। এতো সুন্দর স্মার্ট একটা ছেলে তাকে রেখে যদি বউ বাইরে গিয়ে আকাম-কুকাম করে তাহলে তার জীবনটা কি আর জীবন থাকে!" কথাগুলো বলে একটা তৃপ্তির ঢেকুর তুলল সুমুর বড় জা মালিহা। মনে মনে বেশ ভালো লাগছে তার। এই মেয়ে একেবারে শাশুড়ীর প্রাণ বায়ু ছিলো এবার দেখুক মালিহার থেকে ভালো আর কেউ নেই! ট্রেনে উঠে সুমুর বাবাকে দেখতে না দেখতেই এতো গুলো কথা বলে ফেলল সুমুর বড় জা।
সুমুর বাবা নাদিম শেখ নিরব দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করলেন সুমুর শশুড়বাড়ির প্রতিটি মানুষকে। সুমুর শাশুড়ীর মুখ বেশ গম্ভীর। সুমুর শশুর, শাশুড়ী, বড় জা আর বড় ভাসুর । নাদিম শেখ ভেবে পায়না মানুষ এতোটা কান্ডজ্ঞাণহীন হয় কিভাবে? সুমু তার একটা মেয়েই। সেই মেয়েটা কাল রাতে মারা গেছে সেই কষ্টটা সামলাতেই পাথর হয়ে গেছেন তিনি আর এই মানুষগুলো এসেছে তার নিত্য তৈরি হওয়া কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিতে। হায় মানুষ, কবে তোমরা আসল মানুষ হবে? কবে তোমাদের ছোটো ছোটো কথার আঘাতে অন্যের হ্রদয়ের ক্ষত বিক্ষত হওয়া দেখবে?
একবুক কষ্ট নিয়ে সুমুর মায়ের দিকে তাকালো নাদিম শেখ। তার কোলের উপরে চুপটি করে ঘুমিয়ে আছে সুমুর মা। কান্না করতে করতে চোখমুখ ফুলে গেছে একদম। কয়েকটা ঘন্টায় যেনো কতো বড় ঝড় বয়ে গেছে চেনা পরিচিত মুখটায়। তাও ভালো হয়েছে সুমুর মা ঘুমে নাহলে কথা গুলো শুনে আরো বেশি কষ্ট পেতো।
আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা বড় দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন নাদিম শেখ। হটাৎ খেয়াল হলো তিনি আজ জানালার পাশের সিটটাতে বসেছেন। অথচ বিয়ের এতোগুলা বছরে সবসময় সুমুর মা বাচ্চাদের মতো জেদ করে জানালার পাশের সিটটাতে বসেছে। এই দীর্ঘ ৩১ বছরে কখনোই এই নিয়মের ব্যাঘাত ঘটেনি। আর আজ? সুমুর মায়ের এতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার মাথায় নেই!
বিয়ের ৯ বছর পরে কোনো এক বৃষ্টিমুখর রাতে সুমুর অস্তিত্বের খবর জানতে পেরেছিলেন নাদিম শেখ । এতোটা খুশি তিনি জীবনে আর কবে হয়েছিলো মনে পড়ে না। তারপর আস্তে আস্তে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ! যেদিন সুমু জন্ম নিলো। সেইদিনটা এখনো স্পষ্ট মনে পড়ে নাদিম শেখের। তার মা ছোট্ট একটা পরী এনে দিলেন তার কোলে। পাখির ছানার মতো ছোটো ছোটো হাত পা, ছোট্ট একটা মাথা। নাদিম শেখের আনন্দের দিনের তো সেই শুরু।
সুমুর ছোটো বেলা থেকে শুরু করে বিয়ে দেয়ার আগে পর্যন্ত এই একুশ বছরের প্রতিটা প্রতিক্রিয়া মনে করার চেষ্টা করলো নাদিম শেখ। খুব বেশি চেষ্টাও করতে হলো না তাকে স্মৃতি যেনো হরহর করে জানান দিচ্ছে তাদের উপস্থিতি। তার মেয়ে ছোটো থেকেই বেশ বুদ্ধিমতি ছিলো কিন্তু মনটা ছিলো তুলোর মতো নরম। আজ সুমুর বড় জা যেভাবে কথাগুলো বললো সুমুকে কেউ ভয়াবহ কষ্ট দিলেও সে এরকম কথা কখনোই বলতো না। ছোটো থেকেই মেয়েটার ছিলো ইসলামের প্রতি বেশ ঝোক। নামাজ, রোজা, আমল আর উত্তম আখলাক এর সুন্দর একটা উদাহরণ ছিলো সুমু। এক ওয়াক্ত নামাজ বাদ দিয়ে পার পেতো না নাদিম শেখ অমনি সুমুর হাজারটা যুক্তির ফেরে বিপদে পড়ে যেতেন তিনি।
একদিন তার সুমুটা একটা পাখির ছানা নিয়ে বাসায় আসলো। প্রশ্ন করলাম, " এটা কোথা থেকে এনেছো মা?" সুমু কিছুটা অপরাধী ও উৎফুল্লের সাথে পাখি আনার ঘটনা বললো। ছাদে চিলেকোঠার অইখানে একটা পাখির বাসা ছিলো। সেখানে চারটা পাখির ছানা দেখেছিলো সুমু আর নিচের ফ্ল্যাটের মেয়ে রাহা। তারপর অনেক কসরত করে সেই পাখির বাসা নিচে নামিয়ে দুইটা ছানা রাহা আর দুইটা এনেছে সুমু। নাদিম শেখ সেদিন সুমুকে বলেছিলো," সুমু মা তোমাকে যদি আমাদের কাছে থেকে কেউ অন্যকোথাও নিয়ে যায় আমাদের অনেক কষ্ট হবে না ? তোমরা যে পাখির ছানা গুলো নিয়ে এসেছো এখন পাখির আব্বু আম্মু যখন বাসায় এসে দেখবে তাদের ছানা গুলো সেখানে নেই পাখিগুলো অনেক কষ্ট পাবে না? আর কোনো জীবজন্তকে কষ্ট দিলে আল্লাহ যে অনেক গুনাহ দিবে মা। "
আর বেশি কিছু বলার প্রয়োজন পড়েনি সেদিন সুমুকে। সুমু নাদিম শেখকে নিয়ে চিলেকোঠায় গিয়ে পাখির ছানা গুলো দিয়ে এসেছিলো। বাসায় এসেই সুমুর সেকি মন খারাপ! ওর মাকে বারবার জিজ্ঞাসা করছিলো কি করলে আল্লাহ ওকে গুনাহ দিবে না? কোন কাজগুলো করলে আল্লাহ ওকে মাফ করে দিবে? ওর বারবার প্রশ্নের কারণে ওর মা হয়তো বলেছিলো, " আল্লাহর কাছে তওবা করে অই কাজ আর না করলে আল্লাহ মাফ করে দিবেন। "
তারপর ওর দাদুর কাছে জিজ্ঞাসা করেছে তওবা কিভাবে করে? ও তওবা করবে। ওর দাদু সেভাবে বুঝতে না পারাতে আমার কাছে জিজ্ঞাসা করেছে, " তওবা কিভাবে করে বাবা ?"
আমি বেশ অবাক হয়েছিলাম ওর প্রশ্নে। তওবা কিভাবে করে সেটা ও জেনে কি করবে? পরে বুঝতে পারলাম ঘটনা। ওকে বললাম, "অজু করে আসো তো সুমু মা।" সুমু অজু করে একদম জায়নামাজ হিজাব নিয়ে এসেছে দেখলাম। ওকে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়তে বললাম। নামাজ শেষ হলে বললাম, " এখন আল্লাহ তোমাকে যে নেয়ামত গুলো দিয়েছে সেগুলোর শুকরিয়া আদায় করো। আল্লাহর যে নাম গুলো তুমি মুখস্থ করেছো সেগুলো বলে আল্লাহকে ডাকো। আল্লাহকে বলো তুমি নিজের উপর জুলুম করেছো এখন তওবা করছো আর কখনো অই কাজ করবে না। তারপর আল্লাহর কাছে মাফ চাও।" তারপর আমার কথা মতো ও অনেকক্ষণ ধরে মোনাজাত করলো। কান্নাও করলো দেখলাম। এরপর বড় হয়েও এই অভ্যেসটা বজায় রেখেছিলো সুমু।
তারপর ঘুমাতে যাওয়ার আগে পরে যখন মনে পড়ে তখনই ওর মাকে আর আমাকে এসে প্রশ্ন করছে ওকে আল্লাহ মাফ করে দিয়েছে কিনা। যখন বলি আল্লাহ অনেক দয়ালু মা। আল্লাহ তোমাকে অবশ্যই মাফ করে দিবে। তখন খুব খুশি হয়ে যায় ওর মায়া মায়া মুখটা। এখনো চোখ বন্ধ করলে সব যেনো স্পষ্ট হয়ে উঠে নাদিম শেখের কাছে। দিনে কতোবার যে এই একই প্রশ্ন করতো আর যখন বলা হতো আল্লাহ অনেক দয়ালু তোমাকে অবশ্যই মাফ করে দিবে প্রতিবারই খুশিতে জ্বলজ্বল করতো সুমুর মুখটা।
সুমুর হয়েছিলো একদম ওর মায়ের মতো দেখতে। শুধুমাত্র ওর নাকটা হয়েছিলো নাদিম শেখের নাকের মতো বেশ তীক্ষ্ণ। নাক তীক্ষ্ণ হয় কিভাবে সেটা জানা নেই নাদিম শেখের তবে ওর নাক নিয়ে কথা উঠলে সবাই এটাই বলতো। তাই নাদিম শেখও সুমুর বেলায় ঠিক সেই উদাহরণটাই ভাবতো। আরেকটা জিনিসের সাথে সুমুর সাথে নাদিম শেখের বেশ মিল ছিলো সেটা হচ্ছে হাত পায়ের নখ। নাদিম শেখ মাঝে মাঝেই সুমুর সাথে বসে ওর হাত পায়ের নখের সাথে নিজের নখ মিলিয়ে দেখতো। একদম নাদিম শেখের নখের মতো নখ শুধু মাত্র আকারে হালকা ছোটো এই যা।
অনেক রাত হয়ে এসেছে ঠিক কয়টা বাজে তা ঠাওর করতে পারছে না নাদিম শেখ। ট্রেন চলছে একটা খটখট শব্দ করে। তাছাড়া আর তেমন কোনো শব্দ নেই আশেপাশে। সুমুর শশুরবাড়ির সবাই ঘুমে। তাদের কারো কোনো বিকার নেই এই মানুষদুটোর কষ্ট সম্পর্কে। তারা তাদের মতো অভিযোগ করেই যাচ্ছে। সুমুকে নিয়ে যে কথা গুলো বলছে ওরা যে অপবাদ গুলো দিচ্ছে তার মেয়েটার উপর অন্যসময় হলে হয়তো এদের মাথা ফাটিয়ে ফেলতো নাদিম শেখ। কিন্তু আজকে তার কিছুই বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না। প্রবাদে আছে না,
" অল্প সুকে কাতর, অধিক সুকে পাথর "। পাথরই হয়ে গেছে নাদিম শেখ। অনেক চেষ্টা করেও একফোঁটা পানি আসছে না চোখে। কান্না আসলেই এক অদ্ভুত ব্যাপার। কখনো না চাইতেই চোখের কোনে উঁকি দেয় আর কখনো অনেক চেষ্টার পরেও দেখা মেলে না তাদের। নাদিম শেখ আল্লাহর প্রত্যেকটা ফয়সালাই হাসি মুখে মেনে নেয়। যুদ্ধ যতো কঠিন হোক আত্মবিশ্বাসের সাথে লড়ে যায় একজন লড়াকু সৈনিকের মতো। কিন্তু আজ যে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না নাদিম শেখ। সুমু কি শুধু তার মেয়ে সুমু তো তার বেঁচে থাকার অক্সিজেন। আজ সেই অক্সিজেন টাই নাকি নেই। নেই মানে কোথাও নেই। আর কখনোই নাদিম শেখের অক্সিজেন হবে না তার সুমু মা।
নাদিম শেখ অনেক চেষ্টা করেও তার অবচেতন মনকে বিশ্বাস করাতে পারছে না যে সুমু আত্মহত্যা করেছে তাও আবার পর পুরুষের জন্য। নাদিম শেখের কেনো বেশি কষ্ট হচ্ছে সুমুকে হারানোর জন্য নাকি সুমু সম্পর্কে এসব বাজে কথা শোনার জন্য? ঠিক বুঝতে পারছে না নাদিম শেখ। অন্তরটা যেনো ফালা হয়ে গেছে সুমু নেই খবরটা শোনার পরে থেকে। আর তাতে নুন আর মরিচের গুঁড়ো ছিটানোর জন্য তো কথার অভাব নেই।
কিছুদিন পর পর নাদিম শেখের কাছে রনি ফোন দিয়ে সুমুর নামে বিচার দিতো। সুমু নাকি ওর কোনো কথা শুনে না। তারপর সুমুর সাথে কথা বলার সময় ওর মা আর নাদিম শেখ সুমুকে খুব বোঝাতো জামাইয়ের কথার অবাধ্য না হতে। কিছুদিন পর পর জামাইয়ের বিচারে অতিষ্ঠ হয়ে গেছিলো নাদিম শেখ। লাস্টে সুমুকে বলেছে জামাইয়ের কথা না শুনলে তোর সাথে আমরা কেউ কথায় বলবো না। সুমু বরাবরই চুপ করে থাকে আর শুনে যায়। কোনটা যে ঠিক আর কোনটা বেঠিক সেটা বোঝার উপায় নেই। সুমুকে কোনো ফোন ইউজ করতে দিতো না রনি। আর রনি বেশ রাতে ফেরার কারণে শুক্রবার ছাড়া কথা বলতে পারতো না সুমুর সাথে। পঁচিশ দিন যাবত সুমুর সাথে কথা হয়না নাদিম শেখের। জামাইয়ের কথা শুনে না তাই একটু শাসন তো করতেই হয়। অবশ্য নাদিম শেখের কলিজাটা ছিন্নভিন্ন হয়ে যেতো সপ্তাহে একটা দিন সুমু মায়ের সাথে কথা না বলে।
নাদিম শেখের কাছে ব্যাপারটা কেমন রহস্যময় লাগছে। এতোক্ষণ মনের সাথে যতোই যুদ্ধ করুক তার ভেতরটা বারবার জানান দিচ্ছে সুমু কখনোই এরকম কাজ করতে পারে না। যে মেয়ে আল্লাহর ভয়ে একটা ছেলের দিকে পর্যন্ত তাকাতো না সেই মেয়ে মাত্র ১১ টা মাসে এতো পরিবর্তন হতে পারে না। যদিও কোনো ভাবেই ব্যাপারটা নাদিম শেখের বিশ্বাস হচ্ছে না কারণ সুমুর মা তো শোনার পরে থেকেই কেঁদে বুক ভাসাচ্ছে তার মেয়ে এরকম না এটা বলে। ঠিক এই একই কথাও নাদিম শেখ নয় নাদিম শেখের পুরো অস্তিত্ব জানে। তার মেয়ে কোনোভাবেই আত্মহত্যা করতে পারে না। কিন্তু তাহলে কেনো তার জামাই এরকম বললো। শুধু তাই নয় ওর জামাই এটাও বললো যে শুধু মাত্র এই ঘটনাটার জন্যই নাদিম শেখের কাছে জানাতো যে সুমু কথা শুনে না। কারণ এটা বলতে নাকি তার রুচিতে বাধতো। ভাবতো সময় দিলে হয়তো ঠিক হয়ে যাবে। নাদিম শেখ যেনো এক সাগরের অতলে হাড়িয়ে যাচ্ছে কাকে বিশ্বাস করবে সে এতোগুলো বছরের দেখা সুমুকে না তার তার যুক্তিসংগত ভাবে কথা বলা মেয়ের জামাইকে।
সারারাত কষ্টের সাগরে সাতরে সাতরে অবশেষে তবে সকাল হলো। অবশেষে তার সুমুকে সে দেখতে পাবে। ট্রেন থেকে নেমে সবাই পৌছালো সুমুদের বাসায়। তিনরুমের একটা আলিশান ফ্ল্যাটে থাকতো সুমু আর রনি। বিছানার একটা চাদর দিয়ে ঢেকে রাখা তার মেয়েটা হ্যা অইতো তার মেয়ে। কষ্টগুলো যেনো দলা পাকিয়ে বুকের ভেতর একটা ধাক্কা দিয়ে উঠলো।
সুমুদের লাইব্রেরীর মতো রুমটাতে ঢুকলো নাদিম শেখ। তার মেয়েটার বই পড়ার প্রতি ছিলো অদম্য আগ্রহ। হঠাৎই চোখ পড়লো কালো চামড়ার মোটা ডাইরিটার উপর। নাদিম শেখ যদি খুব ভুল না করেন তাহলে এটা সুমুর ডাইরি। হ্যা এটা অবশ্যই সুমুর ডাইরি। ডাইরিটা নিয়ে নিলো নাদিম সাহেব।
ফিরতি ট্রেনের পথ ধরেছে সবাই। আলাদা একটা কামরা বুক করা হয়েছে নাদিম শেখদের জন্য। সুমুর শশুড়বাড়ির কেউ এই কামরায় আসেনি। তাদের নাকি লাশের সাথে এক কামরায় যেতে ভয় লাগে। শুধু ভয় পান না এই দুটো মানুষ। যাদের নয়নের মণি আজ লাশ হয়ে গেছে। সুমুর মায়ের কান্নার আওয়াজে আর ট্রেনের খটখট শব্দে অদ্ভুত এক শব্দ তৈরি হয়েছে কামরার ভেতরে । মেয়েটার মাথা কোলে নিয়ে অনেকক্ষণ যাবত তাকিয়ে রইলো নিষ্পাপ মুখটার দিকে। আবারো খুব চেষ্টা করছে নাদিম শেখ একটু কান্না করতে। সুমুর মায়ের মতো কেদে একটু হালকা হতে। হঠাৎ করেই নাদিম শেখের মনে পড়লো ডাইরিটার কথা। পাশের ব্যাগটা থেকে ডাইরিটা হাতে নিলো।
প্রথম পেইজ উল্টাতেই চোখে পড়লো সুমুর হাতের ছোটো ছোটো লেখাগুলো। এটা ২০১৯ এর মে মাসের একটা দিন। যেদিন সুমুর পা কেটে গিয়েছিলো। সেটা লিখে রেখেছে সুমু। নাদিম শেখ মনে করার চেষ্টা করলো সুমুর বিয়ের ডেট। হ্যা ২০২০ এর ফেব্রুয়ারি মাসের ১৭ তারিখ বিয়ে হয়েছিলো সুমুর। পাতা উল্টে নাদিম শেখ চলে গেলো সেই ফেব্রুয়ারী মাসটাতে।
১১ ই ফেব্রুয়ারি,
" সেদিন যে ছেলেটা দেখতে এসেছিলো সেই ছেলের সাথে বিয়ে দিতে যেনো রাজি না হয় বাবা। ছেলেটাকে আমার মোটেও ভালো লাগে নি। দাড়ি তো নেই আর না আছে টাকনুর উপর প্যান্ট। আল্লাহ একটা দ্বীনদার জীবনসঙ্গী দিও আমাকে। রাব্বানা হাবলানা,,,,,,"
১৪ ফেব্রুয়ারি,
"বাবা কিভাবে যেনো রাজি হয়ে গেলো। মাকে বললাম ছেলেটা তো দ্বীনদার না মা। মা বললো সমস্যা কি বিয়ের পরে বানিয়ে নিবি। মা বাবা দুজনেই মুটামুটি ইসলাম মেনে চলে। তাদের কাছে আমি এরকমটা একদমই আশা করিনি। আল্লাহ হেদায়েত না দিলে কিভাবে মানুষ দ্বীনের পথে আসবে? আমার বিশ্বাস শেষ পর্যন্ত হলেও বাবা বুঝবে। "
১৭ ই ফেব্রুয়ারি,
"আজ আমার বিয়ে। বিয়ে নিয়ে কতো কতো স্বপ্ন দেখেছি, কতো ভাবনা সেগুলো আর তেমন একটা কাজ করছে না আজ। কিভাবে কাজ করবে স্বপ্নের মানুষটার সাথে যে বাস্তব মানুষটার কোনই মিল নেই। তাছাড়া কিভাবে একজন মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকবো আমি এটাও ভাবনার ব্যাপার। বাবা শেষ পর্যন্ত আর বুঝেনি। আমিও পারলাম না এতোদিনের ইচ্ছেটা প্রকাশ করতে। বাবা মা যা করবে আমার ভালোর জন্যই নিশ্চয়ই এই ভেবে চুপচাপ মেনে নিলাম সব। কেনো যে টাকাওয়ালা ছেলের জন্য আমাদের বাবারা দ্বীনদার ছেলেদের রিজেক্ট করে। "
লিখাটুকু পড়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো নাদিম শেখ। সুমু রাজি ছিলো না বিয়েতে। তিনি কিভাবে এতোবড় একটা ভুল করলেন? দোষ তো তারই ছেলেদের অবস্থা দেখে তিনি যেনো পাগলই হয়ে গেছিলেন।
৭ ই মার্চ,
" আল্লাহগো তুমি জানো কি চলছে আমার ভেতর। মানুষটা নামাজ ও পড়ে না। শুধু জুমাবারে মসজিদে যায়। আমিতো এরকম ছেলে চাইনি আল্লাহ। "
১০ ই আগস্ট,
" এই নিয়ে তিনবার উনি আমার গায়ে হাত তুলেছে। কি করবো আমি? পর্দা যে আমার জন্য ফরজ কি করে আমি তোমার অবাধ্য হয়ে ওনার কথা শুনি? ওনার ফ্রেন্ডদের সামনে বোরকা পড়ে গিয়েছি বলে ওনার নাকি সব প্রেস্টিজ লো করে দিয়েছি আমি। "
১৬ অক্টোবর,
" আমি আল্লাহর উপর ভরসা করে দুনিয়ার সব শখ আহ্লাদ ছেড়ে দিলাম। আমার আর প্রয়োজন নেই অন্যকারো ভালোবাসার। আমি আর কষ্ট পাবো না। ভেংগেও পড়বো না। যতো মারধর করে করুক আমি কোনোভাবেই বেপর্দা হয়ে কারো সামনে যাবো না।"
ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন নাদিম শেখ। তার ছোট্ট একটা ভুলের জন্য এতোটা কষ্ট পেয়েছে তার সুমু। অথচ এই নিষ্পাপ মেয়েটাকে নিয়ে এরকম একটা ঘটনা তৈরি করেছে ছি!
যে মেয়েটাকে ফুলের টোকা লাগতে দেননি এতোগুলা বছর সেই মেয়েটাকে এতোটা অত্যাচার করেছে পাষন্ডটা।
আপনা আপনি ধৈয্য হাড়িয়ে ডাইরিটার শেষ লিখাটায় চলে গেলেন নাদিম শেখ।
২৮ ই ডিসেম্বর
" এতো কিছুর মাঝেও আল্লাহ আমার জন্য একটা স্বস্তির খবর পাঠালো। আলহামদুলিল্লাহ আমি কনসিভ করেছি। এইতো আমার বেচে থাকতে আর কি লাগে। এইতো অনেক প্রশান্তি আমার!"
৬ ই জানুয়ারি, ২০২১
" আল্লাহগো আমার বাবুটার কিছু হতে দিও না। আমি অনেক দূরে চলে যাবো তবুও বাবুটার যেনো কিছু না হয়। আজকে অনেক মেরেছে আমাকে। বাচ্চাটা এবরশন করাতে বলে। বয়স হয়ে গেছে ৩২ এর উপরে এখনো নাকি বাবা হওয়ার বয়স হয়নি। থ্রেট দিয়েছে এবরশন না করালে আমাকে বিষ খায়িয়ে মেরে ফেলবে। আমি বাবার কাছে চলে যাবো। যদিও বাবা মার কাছে আমার নামে উল্টো পাল্টা বলেছে বলুক। অবশ্যই বাবা মা আমাকে বুঝবে। আমার সোনাটার তো কোনো দোষ নেই ওকে পৃথিবীর আলো দেখানোর পথে বাধা হয়ে দাড়াবো না আমি। সুস্থ একটা পরিবেশ পাবে আমার সোনাটা। এরকম অসুস্থ পরিবেশে না থাকাই ভালো আমার বাবুর। কোন সন্তান মেনে নিতে পারবে যে তার বাবা চরিত্রহীন! আল্লাহগো বাবার সাথে কথা বলার ব্যাবস্থা করে দাও। আমি আর পারছি না এই অসুস্থ পরিবেশে থাকতে। যখন তখন আমার পেটে লাত্থি দিতে পারে। আমার বাবুটা যে তাহলে আর পৃথিবীর আলো দেখবে না।
ট্রেন চলছে নিস্তব্ধ রাতের অন্ধকার চিড়ে। তার মাঝে ডুকরে কেঁদে উঠছে এক বুড়ো। সে তার জীবনের অনেক বড় একটা ভুল বুঝতে পেরেছে কিন্তু সময় হাড়িয়ে। আকাশের দিকে তাকিয়ে বুড়োটা চিল্লিয়ে বলে উঠলো, " আল্লাহগো সারাজীবন নিজেকে খুব দ্বীনদার মনে হতো। নামাজ, রোজা, নফল আমল, সুন্নাত ইবাদাত কতো ইবাদতই না করেছি। আজ সেসব তুচ্ছ মনে হচ্ছে আল্লাহ। আমিতো তোমাকে সত্যি ভালো বাসতে পারনি আল্লাহ। যদি পারতাম তাহলে তোমার উপর ভরসা করে মেয়েটাকে একটা দ্বীনদার পাত্রের হাতে তুলে দিতে পারতাম। আমার একটা ভুলের জন্য আমার মেয়েটার জীবন যে নরক হয়ে গিয়েছিলো আল্লাহ ভুলের মাসুল ও আমার সুমু মা দিলো। আজ পৃথিবীর প্রত্যাকটা বাবাকে বলতে ইচ্ছে করছে আপনারা নিজেদের ঈমানের পরিক্ষা এই যায়গাটাতে এসে দিন। আপনার মেয়েটাকে কম আয়ের হলেও একটা দ্বীনদার পাত্রের হাতে তুলে দিন। আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। নাহলে আমার মতো হ্যা আমার মতো অনেক পরে এসে বুঝতে পারবেন। আপনাদের সুমুরা সবাই হয়তো আমার সুমুর মতো মারা যাবে না তবে যতোদিন বেচে থাকবে এক নরকের মতো জীবন যাপন করতে হবে।
আচ্ছা সুমু মার মৃত্যুর জন্য কে বেশি অপরাধী ? রনি নাকি নাদিম শেখ নিজে!
ভুল
Taiyeeba Tania

দ্বিনদার মেয়ে চিনবো কি ভাবে?

 

দ্বিনদার মেয়ে চিনবো কি ভাবে?
>>আমার খুব যানতে ইচ্ছা করছিলো দ্বিনদার মেয়ের ভিতর কি কি গুন থাকে?
<<বর্তমানে সোসাল মিডিয়ায় ৯৫%মেয়েরা তো নিজেকে দ্বিনদার বলে দাবি করে আসলেই কি এরা সবাই দ্বিনদার?
একদিন আমার উস্তাদের কাছে প্রশ্ন করলাম হুজুর আপনি যে বিবাহ করলেন কি কি গুন দেখে বিবাহ করলেন যদি আমাদের কেও বলতেন আমরাও বিয়ে শাদীর সময় ঐ সব বিষয় গুলো অনুসরন করতাম|
এরপর হুজুর আমাকে বল্ল আমি প্রথম সর্তে বলছিলাম
•আমার ঘর বাড়ি নাই|
•মাটি দিয়ে ঘর বানবো সেখানে আমার সাথে এক সাথে থাকতে হবে|
•একটা কাপর এক বৎসর পরিধান করতে হবে||
•শরীরে ব্যবহার করার জন্য কোন সাবান দেয়া হবে নাহ|
•জামা কাপর ধোয়ার সাবান ব্যবহার করতে হবে|
•স্বর্ন জীবনেও চোখে দেখতে পাবে না|
কিন্ত এখন তার যে পরিমান স্বর্ন আছে এত পরিমান স্বর্ন অনেক ধনীর ঘরেও নাই|
•আর হুজুর মোহরনা দরছিলেন মাত্র ৩০০০\=হাজার টাকা আমি ভাবতেও অবাক হই এই যুগে এমন সর্তে কোন বাবা,মা মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হয়?মেয়ে বা কি ভাবে রাজি হয়?
নিশ্চই পূর্ব যুগের সমস্ত দ্বীনদার মহীয়সি নারীরা অনেক কষ্টে এই সামান্য ও নগন্য জগত অতিবাহিতো করছেন| যেমন ইব্রাহীম (আ:) প্রথম স্ত্রী সারা (আ:) যদিও রাঁজ কন্যা ছিলো বাট বিয়ের পরে ইব্রাহীম (আ:)সঙ্গে থাকা অবস্থায় মৃত্যেুর আগ পর্যন্ত অনেক কষ্টে অতীবাহিতো হয়েছে তার জীবন আল্লাহ তায়ালা এই কষ্টের বিনিময় দুনিয়ায় উত্তম প্রতিদান হিসাবে তাকে একজন নবী দান করছিলেন হযরত ইসহাক (আ:) ইব্রাহিম (আ:) ২য় স্ত্রী হাজেরা (আ:) ছোট বেলা থেকেই অনেক কষ্টে বড় হয়েছেন তিনি সারা (আ:)থেকে বেশি কষ্ট করেছিলেন যার প্রতিফল স্বরুপ ইসমাইল (আ:)কে দান করছিলেন
তাছারা খাদিজা (রা:) ফাতেমা (রা:) ফেরউনের স্ত্রী আসিয়া,রাবেয়া বৎসি সকলে অনেক কষ্টে জীবন যাপন করছেন|
এখন নিজেকে নিজে প্রশ্ন করেন আপনের ভিতর যে গুন আছে এগুলো দ্বিনদার নারীর গুনের সাথে মিল আছে কি না?
একজন দ্বিনদার নারীর বড় গুন হলো অল্পতেই সন্তষ্ট থাকা এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা বিপদ আপদে ধৈর্য ধারন করা|
::;;আমি দেখলাম হুজুরের অনেক সমস্যা থাকা সত্যেও তাদের সাথে কখনো ঝগড়া,রাগারাগি হয় না এত ধৈর্য কি ভাবে একজন মানুষের ভিতর থাকে?
"আমি তাদের এমন সংসার দেখে মাঝে মাঝে আফসোস করি আল্লাহ যদি আমাকেও এমন একজন জীবন সঙ্গী দান করিক এটা আল্লাহ কাছে আরজি জানাই।
<আল্লাহ আমাদেরকে দ্বীনদার মহীয়সি লাইফ পার্টনার দান করুন>>
<<পোস্ট কপিকৃত,,অন্যের বাস্তবতা থেকে লেখা>>

আপনার সন্তান উসামা ইবনে যায়িদের (রাদিআল্লাহু আনহু) মতো হচ্ছে না। কারণ, আপনি তাকে তাঁর মতো গড়ে তুলতে পারছেন না।

 

আপনি আপনার ১৭ বছর বয়সী ছেলেকে বলতে পারবেন- এই মাসের পরিবারের খরচ তুমি চালাও? আপনি কি আপনার ১৭ বছর বয়সী ছেলেকে বলতে পারবেন- তুমি ঢাকা থেকে দোকানের মালামাল নিয়ে এসো? আপনি কি আপনার ১৭ বছর বয়সী ছেলেকে বলতে পারবেন- অন্ধকার মধ্য রাতে পাশের গ্রামে একটি প্রয়োজনে যেতে?
কেনো পারবেন না?
কারণ, আপনি আপনার ছেলেকে ননীর পুতুল করে গড়ে তুলেছেন। তাকে শুধু আদর করেছেন, দায়িত্ব দেননি কখনো। তাকে দায়িত্ব গ্রহণে উপযোগী করে গড়ে তুলেননি।
অথচ রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সময় মাত্র ১৭ বছরের উসামা ইবনে যায়িদকে (রাদিআল্লাহু আনহু) তিনি মুসলিম বাহিনীর সেনাপতি বানান। উসামা ইবনে যায়িদের (রাদিয়াল্লাহু আনহু) অধীনে ছিলেন আবু বকর, উমরের (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) মতো সাহাবী; যারা বয়সে তাঁর বাবার বড়ো।
আপনার সন্তান উসামা ইবনে যায়িদের (রাদিআল্লাহু আনহু) মতো হচ্ছে না। কারণ, আপনি তাকে তাঁর মতো গড়ে তুলতে পারছেন না।
[শায়খ তাওফিক চৌধুরীর লেকচার অবলম্বনে]
© আরিফুল ইসলাম

Saturday, July 17, 2021

দাম্পত্যজীবন, অজ্ঞতা ও পরিণাম -মাওলানা আবু তাহের মেসবাহ Marriage education series

 May be an image of ‎text that says '‎(হ যুবক! বিয়ে করবে? বিবাহ করবেন বা বিবাহ ന উপযুক্ত এমন সকল যুবকেরই উচিত পোস্টটি পড়া! ফ্যান্টাসিযুক্ত হাজার পোস্ট অনলাইনে ঘুরাঘুরি করলেও এমন মূল্যবান লিখনী খুব কমই পাবেন! [বিস্তারিত মূল পোস্টে, লেখকঃমাওলানা আবু তাহের মিসবা] أخلاق আখলাক WWW.FACEBOOK.COM/BDAKHLAQ‎'‎

 

"যারা বিয়ে করেছেন বা বিয়ে করেন নি তারা লেখাটা একবার হলেও পড়বেন এবং শেয়ার করে দিবেন দয়া করে, একটিই লেখায় আপনার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।"
দাম্পত্যজীবন, অজ্ঞতা ও পরিণাম
-মাওলানা আবু তাহের মেসবাহ
===========================
(১৪৩৩ হি. শা‘বান মাসে এক খাছ মজলিসে এক বিশেষ উপলক্ষে আদীব হুজুরের একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা। মুসাজ্জিলা থেকে তা পত্রস্থ করা হল)
কিছু দিন আগে আমার এক প্রিয় তালিবে ইলম দেখা করতে এসে বললো, হুযূর, আগামী পরশু আমার বিবাহ। চমকে উঠে তাকালাম। বড় ‘বে-চারা’ মনে হলো। কারণ আমিও একদিন বড় অপ্রস্ত্তত অবস্থায় জেনেছিলাম, আগামীকাল আমার বিবাহ! ভিতর থেকে হামদরদি উথলে উঠলো। ইচ্ছে হলো তাকে কিছু বলি, যিন্দেগির এই নতুন রাস্তায় চলার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু পাথেয়, আল্লাহর তাওফীকে তাকে দান করি। আল্লাহর তাওফীক ছাড়া আমরা কেই বা কী করতে পারি!
তো তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, বিবাহের জন্য কী প্রস্ত্ততি নিয়েছো? বড় ভোলাভালা নও জোয়ান! সরলভাবে বললো, আমার কিছু করতে হয়নি, সব প্রস্ত্ততি আববা -আম্মাই নিয়েছেন। কেনা-কাটা প্রায় হয়ে গেছে, শুধু বিয়ের শাড়ীটা বাকি।
অবাক হলাম না, তবে দুঃখিত হলাম, আমার এই প্রিয় তালিবে ইলম এখন একজন যিম্মাদার আলিমে দ্বীন। দীর্ঘ কয়েক বছর আমাদের ছোহবতে ছিলো, তার কাছে বিবাহের প্রস্ত্ততি মানে হলো জিনিসপত্র এবং বিয়ের শাড়ী! তাহলে অন্যদের অবস্থা কী?!
বড় মায়া লাগলো; বললাম, দেখো, মানুষ যে কোন কাজ করতে চায়, প্রথমে সে ঐ বিষয়ে প্রয়োজনীয় শিক্ষা গ্রহণ করে। কাজটির হাকীকত ও উদ্দেশ্য কী? কাজটি আঞ্জাম দেয়ার সঠিক পন্থা কী? শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কী কী সমস্যা হতে পারে, সেগুলোর সমাধান কী? এগুলো জেনে নেয়। এজন্য দস্ত্তর মত আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার আয়োজন আছে, এমনকি বাস্তব প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা আছে।
অথচ জীবনের সবচে’ কাঠিন ও জটিল অধ্যায়ে মানুষ প্রবেশ করে, বরং বলতে পারো ঝাঁপ দেয়, কিছু না শিখে, না জেনে এবং না বুঝে একেবারে অপ্রস্ত্তত অবস্থায়। ফল কী হতে পারে?! কী হয়?! অন্যদের কথা থাক, চোখের সামনে আমার ক’জন ছাত্রের ঘর ভেঙ্গে গেলো! একজনের তো এমনকি দু’জন সন্তানসহ। কিংবা ঘর হয়ত টিকে আছে, কিন্তু শান্তি নেই। স্বাভাবিক শান্তি হয়ত বজায় আছে, কিন্তু বিবাহ যে দুনিয়ার বুকে মানবের জন্য আল্লাহর দেয়া এক জান্নাতি নেয়ামত, সুকূন ও সাকীনাহ, সে খবর তারা পায়নি, শুধু অজ্ঞতার কারণে, শুধু শিক্ষার অভাবে।
আশ্চর্য, মা-বাবা সন্তানকে কত বিষয়ে কত উপদেশ দান করেন; উস্তাদ কত কিছু শিক্ষা দেন, নছীহত করেন, কিন্তু জীবনের সবচে’ কঠিন ও জটিল বিষয়টি কেন যেন তারা সযত্নে এড়িয়ে যান!
তাকে বললাম, যদিও তুমি এ উদ্দেশ্যে আসোনি তবু তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই, যা ইনশাআল্লাহ আগামী জীবনে তোমার কাজে আসবে।
খুব জযবা ছিলো, অবেগের তোড় ছিলো, ‘দিল কো নিচোড় ক্যর’, বাংলায় যদি বলি তাহলে বলবো, হৃদয় নিংড়ে, কিন্তু দিল কো নিচোড়না-এর ভাব হৃদয় নিংড়ানোতে আসবে কোত্থেকে! যাক, বলছিলাম, হৃদয়টাকে নিংড়ে কিছু কথা তাকে বলেছিলাম। পরে আফসোস হলো যে, কথাগুলো তো সব হাওয়ায় উড়ে গেলো, যদি বাণীবদ্ধ করে রাখা যেতো কত ভালো হতো! হয়ত আল্লাহর বহু বান্দার উপকারে আসতো। শেষে বললাম, এককাজ করো, এ কথাগগুলোর খোলাছা কাগজে লিখে আমাকে দেখিও।
আগামী পরশুর বিয়ের খবর দিয়ে ছেলেটা সেই যে গেলো, তিন বছরে আর দেখা নেই! দাম্পত্য জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিভিন্ন সময় দরসেও আমি অনেক কথা বলেছি। ‘সবচে’ বেশী বলেছি আমার নূরিয়ার জীবনের প্রিয় ছাত্র (বর্তমানের হাতিয়ার হুযূর)
মাওলানা আশরাফ হালীমীকে, আশা করি তিনি সাক্ষ্য দেবেন, অনেকবার বলেছেন, আমার কথাগুলো তার জীবনে বে-হদ উপকারে এসেছে। আরো অনেকে বলেছে, কিন্তু কথাগুলো কেউ ‘কলমবন্দ’ করেনি।
তো এখন এই উপলক্ষকে কেন্দ্র করে তোমাদের মজলিসে ঐ কথাগুলো আবার বলতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু আফসোস, সেই আবেগ ও জযবা তো এখন নেই যা ঐ প্রিয় তালিবে ইলমকে বলার সময় ছিলো।
আবেগভরা দিলের কথা তো রসভরা ইক্ষু, আর শুধু চিন্তা থেকে বলা কথা হলো রস নিংড়ে নেয়া ইক্ষুর ছোবা! তবু কিছু না কিছু ফায়দা তো ইনশাআল্লাহ হবে।
আমি আমার প্রিয় ছাত্রটিকে বলেছিলাম, এখন তোমার জীবনের এই যে নতুন অধ্যায় শুরু হচ্ছে উর্দূতে এটাকে বলে ইযদিওয়াজী যিন্দেগী, বাংলায় বলে দাম্পত্য জীবন, অর্থাৎ এটা জীবন ও যিন্দেগির খুবই এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ, শুধু গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং অত্যন্ত জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ। এটা তোমাকে ঘাবড়ে দেয়ার জন্য বলছি না; প্রয়োজনীয় প্রস্ত্ততি গ্রহণ ও পাথেয় সংগ্রহ করার জন্য বলছি, যাতে পূর্ণ আস্থা ও সাহসের সঙ্গে তুমি তোমার এই নতুন জীবন শুরু করতে পারো। আল্লাহ যদি সাহায্য করেন তাহলে সবই সহজ।
এটা যে শুধু তোমার ক্ষেত্রে হচ্ছে তা নয়! আমার জীবনেও হয়েছে, আমার মা-বাবার জীবনেও হয়েছে! তোমার মা-বাবাও একদিন এ জীবন শুরু করেছিলেন। যদি সহজ ও অন্তরঙ্গ সম্পর্ক থাকে তাহলে তোমার মাকে, বাবাকে জিজ্ঞাসা করতে পারো, কীভাবে তারা এ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এসেছেন? জীবনের শুরুতে তারা কী ভেবেছিলেন, কী চেয়েছিলেন, কী পেয়েছেন?
কখন কী সমস্যা হয়েছে, সেগুলো কীভাবে সমাধান করেছেন। এই জীবনের শুরুতে তোমার প্রতি তাদের কী উপদেশ? এধরনের সহজ আন্তরিক আলোচনায় সংসার জীবনের পথচলা অনেক সহজ হয়ে যায়। অবশ্য সব মা-বাবার সঙ্গে সব সন্তানের এমন সহজ সম্পর্ক থাকে না, তবে থাকা উচিত। জীবনের যে কোন সমস্যার সমাধানের জন্য সন্তান মা-বাবার কাছেই আসবে, মা-বাবাকেই নিরাপদ আশ্রয় মনে করবে, বন্ধুবান্ধবকে নয়। কঠিন সমস্যার মুখে একজন অপরিপক্ব বন্ধু কীভাবে সঠিক পথ দেখাতে পারে! কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটাই ঘটে। সন্তান মা-বাবাকে ভয় করে, হয়ত কোন জটিলতায় পড়েছে; তখন তাদের প্রথম চেষ্টা হয় যে, মা-বাবা যেন জানতে না পারে, কারণ তাদের কানে গেলে সর্বনাশ! ছেলে তার বন্ধুর শরণাপন্ন হয়, মেয়ে তার বান্ধবীর কাছে বলে, তারা তাদের মত করে পরামর্শ দেয়। ফলে অবস্থা আরো গুরুতর হয়।
অতীতে যাই ছিলো, এখন তো অপরিহার্য হয়ে পড়েছে, মা-বাবার জন্য সন্তানের বন্ধু হওয়া। বিপদে সমস্যায় সন্তানকে তিরস্কার পরে করা, আগে তার পাশে দাঁড়ানো। তাহলে সন্তান আরো বড় অন্যায় করা থেকে এবং আরো গুরুতর অবস্থায় পড়া থেকে বেঁচে যায়। কিন্তু এখন অবস্থা হলো, সন্তান মা-বাবাকে ভয় করে, বন্ধুকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল মনে করে। আমার ছেলেকে আমি এটা বোঝাতে চেয়েছি এবং আশা করি, কিছুটা বোঝাতে পেরেছি। অনেক সমস্যা থেকে সে রক্ষা পেয়েছে, কারণ সবার আগে সে আমার কাছে এসেছে, আর আমি বলেছি, ভয় নেই, আমি তোমার পাশে আছি। আগে তাকে সাহায্য করেছি, তারপর প্রয়োজনে দরদের সঙ্গে তিরস্কার করেছি, বা শিক্ষা দিয়েছি। বন্ধুর কাছে আগে পাওয়া যায় সাহায্য, মা-বাবার কাছ থেকে আগে আসে তিরস্কার। তাই সন্তান সমস্যায় পড়ে মা-বাবার কাছে আসে না, বন্ধুর কাছে আসে। এভাবে নিজের কারণেই সবচে’ কাছের হয়েও মা-বাবা হয়ে যায় দূরের, আর দূরের হয়েও বন্ধু হয়ে যায় কাছের। সন্তানের সমস্যা বন্ধু জানে সবার আগে। মা-বাবা জানে সবার পরে, পানি যখন মাথার উপর দিয়ে চলে যায় তখন।
তো আমি আশা করছি, জীবনের অন্যসকল ক্ষেত্রে যেমন তেমনি, আল্লাহ না করুন দাম্পত্যজীবনে যদি কোন রকম সমস্যার সম্মুখীন হয় তাহলে সন্তান সবার আগে আমার কাছে আসবে, তার মায়ের কাছে আসবে, আমাদের উপদেশ, পরামর্শ নেবে।
আলহামদু লিল্লাহ, সেই রকমের সহজ অন্তরঙ্গ সম্পর্কই সন্তানের সঙ্গে আমার, আমাদের।
আমার প্রিয় ছাত্রটিকে বললাম, কথা অন্য দিকে চলে গেছে, তো এই প্রসঙ্গে তোমাকে একটি আগাম নছীহত করি; আজ তোমরা স্বামী-স্ত্রী, দু’দিন পরেই হয়ে যাবে, মা এবং বাবা। সেটা তো জীবনের আরো কঠিন, আরো জটিল অধ্যায়। আমি প্রায় বলে থাকি, প্রাকৃতিক নিয়মে মা-বাবা হয়ে যাওয়া খুব সহজ। কিন্তু আদর্শ মা-বাবা হওয়ার জন্য প্রয়োজন দীর্ঘ শিক্ষা ও দীক্ষা। তো তোমরা দু’জন জীবনের শুরু থেকেই শিক্ষা গ্রহণ করতে শুরু করো যে, একটি মেয়ে কীভাবে একজন আদর্শ মা হতে পারে এবং একটি ছেলে কীভাবে একজন আদর্শ বাবা হতে পারে! আগে বলেছিলাম একটি নছীহত, এখন বলছি দু’টি নছীহত।
সন্তানের সামনে কখনো তার মাকে অসম্মান করো না। তোমাকে মনে রাখতে হবে, সে তোমার স্ত্রী, কিন্তু তোমার সন্তানের মা, তোমার চেয়েও অধিক শ্রদ্ধার পাত্রী। সন্তান যেন কখনো, কখনোই মা-বাবাকে ঝগড়া-বিবাদ করতে না দেখে। এ নছীহত আমি তোমাকে করছি, আল্লাহর শোকর নিজে আমল করে। আমার বড় সন্তানের বয়স ত্রিশ বছর, এর মধ্যে কখনো সে আমাদের বিবাদ করতে এমনকি তর্ক করতেও দেখেনি। দ্বিতীয়ত তোমরা উভয়ে সন্তানের বন্ধু হওয়ার চেষ্টা করো, এমন বন্ধু যাকে নিজের মনের কথা, সব কথা নিঃসঙ্কোচে জানাতে পারে।
আগের কথায় ফিরে আসি; আগামীপরশু তোমার বিবাহ। তার মানে, আজ তুমি নিছক একটি যুবক ছেলে, অথচ আগামী পরশু হয়ে যাচ্ছো, একজন দায়িত্ববান স্বামী। কত বিরাট পার্থক্য তোমার আজকের এবং আগামী পরশুর জীবনের মধ্যে। বিষয়টি তোমাকে বুঝতে হবে। কেন তুমি বিবাহ করছো? বিবাহের উদ্দেশ্য কী? দেখো, আমাদের দেশে পারিবারিক পর্যায়ে একটা নিন্দনীয় মানসিকতা হলো, সংসারের প্রয়োজনে, আরো খোলামেলা যদি বলি, কাজের মানুষের প্রয়োজনে ছেলেকে বিয়ে করানো। সবাই যে এমন করে তা নয়, তবে এটা প্রবলভাবে ছিলো, এখনো কিছু আছে। আমি নিজে সাক্ষী, আমার একজন মুহতারাম তাঁর মেয়েকে বিয়ে দিলেন, বিয়ে হওয়ামাত্র ছেলের বাবা স্বমূর্তি ধারণ করে বলতে লাগলেন, আর দেরী করা যাবে না, তাড়াতাড়ি মেয়ে বিদায় করেন। মেয়ের মা ও বাবা তো হতবাক!
মেয়ে বিদায় হলো। শশুরবাড়ীতে রাত পোহালো, আর পুত্রবধুর সামনে কাপড়ের স্ত্তপ নিক্ষেপ করে শাশুড়ী আদেশ করলেন, কাপড়ে সাবান লাগাও, দেখি, মায়ের বাড়ী থেকে কেমন কাজ শিখে এসেছো!
আমার এক ছাত্রের কথা, বিয়ের প্রয়োজন। কেন? কারণ মা-বাবার খেদমত করার কেউ নেই।
এটা কিন্তু বিবাহের উদ্দেশ্য বা মাকছাদ হতে পারে না। মা-বাবার খেদমত মূলত তোমার দায়িত্ব। এখন সে যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে তোমার সাথে এতে শরীক হয়, তবে সেটা তোমাদের উভয়ের জন্য সৌভাগ্যের কারণ হতে পারে। দেখো, আল্লাহ চাহে তো অচিরেই আমাদেরও ঘরে পুত্রবধু আসবে। আমরা আমাদের না দেখা সেই ছোট্ট মেয়েটির প্রতীক্ষায় আছি। কিন্তু আমি আমার পুত্রকে অবশ্যই বলবো, বিবাহের উদ্দেশ্য মা-বাবার খেদমত করা হতে পারে না।
আমি দু’আ করি, তোমার মা-বাবা তোমার যেমন, তেমনি তোমার স্ত্রীরও যেন মেহেরবান মা-বাবা হতে পারেন। আমার দুই মেয়ের শশুর, দু’জনই এখন জান্নাতবাসী (ইনশাআল্লাহ)। আল্লাহর কাছে আমার সাক্ষ্য এই যে, সত্যি সত্যি তারা আমার মেয়েদু’টির ‘বাবা’ ছিলেন। আমার ছোট মেয়ের শশুর বড় আলিম ছিলেন, তাঁকে আমার একটি বই হাদিয়া দিয়েছিলাম এভাবে, ‘সাফফানার আববুর পক্ষ হতে সাফফানার আববাকে’। তিনি খুশী হয়ে অনেক দু’আ করেছিলেন, আর বলেছিলেন, ‘আপনি তো এই ছোট্ট একটি বাক্যে সম্পর্কের মহামূল্যবান এক দর্শন তুলে ধরেছেন!
আমার বড় মেয়ের অবস্থা হলো, মায়ের বাড়ী থেকে যাওয়ার সময় সে কাঁদে না, কাঁদে ‘আম্মার’ বাড়ী থেকে আসার সময়।
দুআ’ করি, আমার দেশের প্রতিটি মেয়ে যেন মা-বাবার ঘর থেকে এমন মা-বাবার ঘরে প্রবেশ করতে পারে। আর তুমি দু’আ করো, আমরা দু’জন যেন আমাদের অনাগত মেয়েটির জন্য তেমন মা-বাবাই হতে পারি।
তো বলছিলাম বিবাহের উদ্দেশ্যের কথা। বৈধ উপায়ে স্ত্রীপরিচয়ে কাউকে ভোগ করা, এটাও বিবাহের উদ্দেশ্য বা মাকছাদ হতে পারে না।
স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে বলা হয় শরীকে হায়াত, জীবনসঙ্গী এবং জীবনসঙ্গিনী। বস্ত্তত এই শব্দটির মধ্যেই দাম্পত্য জীবনের সুমহান উদ্দেশ্যটি নিহিত রয়েছে। আর যদি কোরআনের ভাষায় বলি তাহলে বিবাহের উদ্দেশ্য হল,
هن لباس لكم وانتم لباس لهن
তুমি তো কোরআন বোঝো। ভেবে দেখো, দাম্পত্য-সম্পর্কের কী গভীর তাৎপর্য এখানে নিহিত!
পেয়ারা হাবীব ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বিবাহ হচ্ছে আমার সুন্নত। আর বলেছেন, যে আমার সুন্নতের প্রতি বিমুখ হবে সে আমার উম্মতভুক্ত নয়।
বিবাহ নবীর সুন্নত! সুতরাং সহজেই বোঝা যায়, বিরাট ও মহান কোন মাকছাদ রয়েছে এর পিছনে।
বিবাহের আসল মাকছাদ বা উদ্দেশ্য হলো স্বামী ও স্ত্রী- এই পরিচয়ে একটি নতুন পরিবার গঠন করা এবং মা ও বাবা- এই পরিচয়ে সন্তান লাভ করা। তারপর উত্তম লালন-পালন এবং আদর্শ শিক্ষা-দীক্ষা ও তারবিয়াতের মাধ্যমে নেক সন্তানরূপে গড়ে তুলে দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণ করা, যাতে নস্লে ইনসানি বা মানববংশ কেয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর পছন্দমত আগে বাড়তে থাকে।
এটাই হলো বিবাহের আসল উদ্দেশ্য; অন্য যা কিছু আছে তা সব পার্শ্ব-উদ্দেশ্য। তো এখনই তুমি নিয়ত ঠিক করে নাও যে, কেন কী উদ্দেশ্যে বিবাহ করবে। উদ্দেশ্য যদি ঠিক হয়ে যায় তাহলে দেখতে পাবে, আল্লাহ চাহে তো এখনই তোমার ভিতরে কত সুন্দর পরিবর্তন আসছে! কী আশ্চর্য এক পরিপূর্ণতা নিজের মধ্যে অনুভূত হচ্ছে! আগামী জীবনের সকল দায়দায়িত্ব পালন করার জন্য গায়ব থেকে তুমি আত্মিক শক্তি লাভ করছো। আল্লাহ তাওফীক দান করেন।
এবার আসো জীবনের
বাস্তবতার কথা বলি, এতদিন তোমার জীবনে ছিলেন শুধু তোমার মা, যিনি তোমাকে গর্ভে ধারণ করেছেন, প্রসববেদনা ভোগ করেছেন। নিজেকে তিলে তিলে ক্ষয় করে তোমাকে প্রতিপালন করেছেন। এতদিন তোমার উপর ছিলো তাঁর অখন্ড অধিকার। হঠাৎ তিনি দেখছেন, তাঁর আদরের ধন, তাঁর অাঁচলের রত্ন পুত্রের জীবনে স্ত্রীপরিচয়ে অন্য এক নারীর প্রবেশ (অনুপ্রবেশ?) ঘটেছে! এভাবে পুত্রের উপর তার অখন্ড অধিকার খন্ডিত হতে চলেছে। যে পুত্র ছিলো এতদিন তাঁর একক অবলম্বন, এখন সে হতে চলেছে অন্য এক নারীর অবলম্বন। এ বাস্তবতা না তিনি অস্বীকার করতে পারছেন, না মেনে নিতে পারছেন। সংসারে প্রত্যেক মায়ের জীবনে এ কঠিন সময়টি আসে। এমন এক অর্ন্তজ্বালা শুরু হয় যা শুধু তিনি নিজেই ভোগ করেন, কাউকে বোঝাতে পারেন না, এমনকি এতদিনের আদরের ধন পুত্রকেও না। ফলে সামান্য সামান্য কারণে, এমনকি অকারণেও তিনি খুব সংবেদনশীল হয়ে পড়েন; তাঁর অনুভূতি আহত হয়। এমন সময় ছেলে (এবং তার স্ত্রী অজ্ঞতা, অনভিজ্ঞতা ও অপিরপক্বতার কারণে) যদি অসঙ্গত কিছু বলে বা করে বসে তাহলে তো মায়ের মনে কষ্টের শেষ থাকে না। প্রসববেদনা থেকে শুরু করে প্রতিপালনের সব কষ্ট একসঙ্গে মনে পড়ে যায়।
আম্মার কাছে শুনেছি, গ্রামের এক মা তার পুত্রবধুকে বলেছিলেন, ‘ততা ফানি আমি খাইছিলাম, না তুই খাইছিলি?’
তখনকার যুগে প্রসবপরবর্তী বেশ কিছু দিন মা ও শিশুর স্বাস্থ্যগত কল্যাণ চিন্তা করে মাকে গরম পানি খেতে দেয়া হতো, ঠান্ডা পানি দেয়া হতো না।
তো কথাটা কিন্তু নির্মম। আমার জন্য ‘তাতানো পানি’ আমার মা খেয়েছেন, আমার সব আবর্জনা আমার মা পরিস্কার করেছেন। নিজের জীবন তিলে তিলে ক্ষয় করে তিনি আমাকে বড় করেছেন, উপযুক্ত করেছেন। সেই সব কষ্টের সুফল হঠাৎ করে অন্য একটি মেয়ে এসে অধিকার করে বসেছে। তখন সব হারানোর একটা বেদনা তাকে কুরে কুরে খায়। তো তোমার মায়ের অন্তরেও এরকম অনুভূতি হওয়া স্বাভাবিক। মায়ের মনের এই কষ্টের উপশম, এই বেদনার সান্ত্বনা তোমাকেই চিন্তা করতে হবে।
মায়ের পর দ্বিতীয় পর্যায়ে আসে বাবার কথা, তারপর ভাই-বোনদের কথা। (এসম্পর্কেও ছাত্রটিকে বিশদভাবে বলেছিলাম।)
তৃতীয়ত তোমার স্ত্রী। যদিও তৃতীয় বলছি, কিন্তু বাস্তবে এটাই হলো সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ এবং সবচে’ নাযুক। তবে এটা থাকবে তোমার দিলে, তোমার অন্তরে। মা-বাবার সামনে মুখের কথায় বা আচরণে এটা প্রকাশ করা প্রজ্ঞার পরিচায়ক হবে না।
কেন বলছি স্ত্রীর বিষয়টি সবচে’ নাযুক? তার আগে আমার একটি প্রশ্নের উত্তর দাও; কোন বিবাহে কোন ছেলেকে কাঁদতে দেখেছো?! কোন ছেলের মা-বাবাকে বিষণ্ণ দেখেছো?! দেখোনি; (হয়তো ব্যতিক্রম এক দুইটি ঘটনা থাকতে পারে। কিন্তু সাধারণ অবস্থা এটিই, এদের কেউ কাঁদে না।) কেন? কারণ বিবাহের মাধ্যমে ছেলে কিছু হারায় না, ছেলের মা-বাবা কিছু হারায় না, বরং অর্জন করে। তাই তাদের মুখে থাকে অর্জনের হাসি এবং প্রাপ্তির তৃপ্তি।
বিবাহের আসরে কাঁদে শুধু মেয়ে, আর মেয়ের মা-বাবা। কেন কাঁদে একটি মেয়ে? কারণ তাকে সবকিছু হারাতে হয়, সবকিছু ত্যাগ করতে হয়। মা-বাবাকে ছেড়ে আসতে হয়, শৈশবের সব স্মৃতি তাকে মুছে ফেলতে হয়। একটি ছোট্ট মেয়ের জীবনে এটি অনেক বড় আঘাত। এ যেন একটি ছোট্ট গাছের চারাকে শিকড়শুদ্ধ উপড়ে ফেলে বহু দূরে ভিন্ন পরিবেশে নতুন মাটিতে এনে রোপণ করা। বাকি জীবন তাকে এই মাটি থেকেই রস আহরণ করে বেঁচে থাকতে হবে।
হিন্দিতে বলে, ‘আওর‌্যত কী ডোলী যাহা উত্যরতী হ্যয়, উসকী আর্থী ওহীঁ সে উঠতি হ্যয়।’ অর্থাৎ মেয়েদের পালকি যেখানে গিয়ে নামে, সেখান থেকেই তার জানাযা ওঠে।
কত বড় নির্মম সত্য! তো তোমার স্ত্রীরূপে তোমার ঘরে আসা এই ছোট্ট মেয়েটির যখমি দিলে তাসাল্লির মরহম তোমাকেই রাখতে হবে। একমাটি থেকে উপড়ে এনে আরেক মাটিতে রোপণ করা একটি চারাগাছ থেকে দু’দিন পরেই ফল দাবী করা কতটা নিষ্ঠুরতা! ফল পেতে হলে তোমাকে ধৈর্য ধরতে হবে। চারা গাছটির পরিচর্যা করতে হবে, সকাল-সন্ধ্যা তার গোড়ায় পানি দিতে হবে। ধীরে ধীরে শিকড় যখন মাটিতে বসবে এবং মাটি থেকে রস সংগ্রহ করার উপযুক্ত হবে, তখন তোমাকে ফল চাইতে হবে না; সজীব বৃক্ষ নিজে থেকেই ফল দিতে শুরু করবে।
কত আফসোসের বিষয়, দাম্পত্য জীবনের শুরুতে যত আদেশ-উপদেশ সব ঐ ছোট্ট মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বর্ষিত হয়। প্রথম দিনেই তাকে শুনতে হয়, এখন থেকে তাকে স্বামীর মন জয় করতে হবে, শশুর-শাশুড়ি সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে, শশুর বাড়ীর সবার মন যুগিয়ে চলতে হবে। তার নিজের যেন কোন ‘মন’ নেই। সুতরাং সেটা জয় করারও কারো গরজ নেই।
তো মায়ের মন তোমাকেই রক্ষা করতে হবে, আবার স্ত্রীর মনোরঞ্জনও তোমাকেই করতে হবে। সবদিক তোমাকেই শামাল দিয়ে চলতে হবে। কত কঠিন দায়িত্ব! অথচ না শিক্ষাঙ্গনে, না গৃহপ্রাঙ্গণে, কোথাও এ সম্পর্কে শিক্ষার নূন্যতম কোন ব্যবস্থা নেই। সম্পূর্ণ অপ্রস্ত্তত অবস্থায় দু’টি অপরিপক্ব তরুণ-তরুণীকে যেন সংসার সমুদ্রে ভাসিয়ে দেয়া! মেয়েটিও জানে না, আজ থেকে সে আর ছোট্ট মেয়েটি নেই। সে এখন স্ত্রী হয়ে একটি অপরিচিত মানুষের জীবনে প্রবেশ করছে, যার মা আছে, বাবা আছে, ভাইবোন আছে এবং তাদের প্রতি তার স্বামীর অনেক দায়-দায়িত্ব আছে। সহানুভূতির সঙ্গে কোমলাতার সঙ্গে এই দায়িত্ববোধ কেউ তার মধ্যে জাগ্রত করে দেয়নি। এ দোষ কার!
তো আমার প্রিয় ছাত্রটিকে বলেছিলাম, কথা দ্বারা আচরণ দ্বারা তোমার মাকে তুমি বোঝাবে, মা, আমি আপনারই ছিলাম, আছি এবং থাকবো। স্ত্রী হলো আমার জীবনের নতুন প্রয়োজন; আপনি আমার প্রাণ, আপনার সঙ্গে আমার নাড়ির টান।
অন্যদিকে স্ত্রীকে বোঝাতে হবে, এই সংসার সমুদ্রে তুমি একা নও; আমি তোমার পাশে আছি। নতুন জীবনে চলার পথে আমারও অনেক কষ্ট হবে, তোমারও অনেক কষ্ট হবে। তবে সান্ত্বনা এই যে, তুমিও একা নও, আমিও একা নই। আমার পাশে তুমি আছো, তোমার পাশে আমি আছি। আমার কষ্টের সান্ত্বনা তুমি, তোমার কষ্টের সান্ত্বনা আমি। আমরা পরস্পরের কষ্ট হয়ত দূর করতে পারবো না, তবে অনুভব করতে পারবো এবং হয়ত কিছুটা লাঘব করতে পারবো।
আল্লাহর কসম, এমন কোন নারিহৃদয় নেই যা এমন কোমল সান্ত্বনায় বিগলিত হবে না।
তোমার স্ত্রীকে তুমি এভাবে বলবে, আমাদের জীবন তো আলাদা ছিলো। আমরা তো একে অপরকে চিনতামও না। আল্লাহ আমাদের কেন একত্র করেছেন জানো?! একা একা জান্নাতে যাওয়া কঠিন। আল্লাহ আমাদের একত্র করেছেন একসঙ্গে জান্নাতের পথে চলার জন্য। আমি যদি পিছিয়ে পড়ি, তুমি আমাকে টেনে নিয়ে যাবে; তুমি যদি পিছিয়ে পড়ো, আমি তোমাকে টেনে নিয়ে যাবো। তুমি সতর্ক থাকবে, আমার দ্বারা যেন কারো হক নষ্ট না হয়; আমিও সতর্ক থাকবো, তোমার দ্বারা যেন কারো প্রতি যুলুম না হয়।
প্রিয় ছাত্রটিকে আমি আরো বললাম, স্ত্রীকে বোঝানোর জন্য তার সন্তানকে সামনে আনতে হবে। অর্থাৎ তুমি তাকে বলবে, দেখো, জীবন কত গতিশীল! সবকিছু কত দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে! দু’দিন আগে আমরা শুধু যুবক-যুবতী ছিলাম, আজ হয়ে গেছি স্বামী-স্ত্রী। দু’দিন পরেই হয়ে যাবো মা-বাবা। আমি বাবা, তুমি মা! আল্লাহর কাছে একজন মায়ের মর্যাদা কত! তোমার কদমের নীচে হবে তোমার সন্তানের জান্নাত! যেমন আমার মায়ের কদমের নীচে আমার জান্নাত। তো তোমার সন্তান কেমন হলে তুমি খুশী হবে? আমাকেও আমার মায়ের ঐরকম সন্তান হতে তুমি সাহায্য করো। আমি যদি ভুল করি, মায়ের কোন হক নষ্ট করি, মায়ের সামনে ‘উফ’ করি, তুমি আমাকে সাবধান করো, আমাকে সংশোধন করো। তাহলে ইনশাআল্লাহ তোমার সন্তানও তুমি যেমন চাও তেমন হবে।
প্রয়োজন হলে স্ত্রীকে মা-বাবার সামনে তিরস্কার করবে, তবে ঘরে এসে একটু আদর, একটু সোহাগ করে বোঝাতে হবে, কেন তুমি এটা করেছো?! বোঝানোর এই তরযগুলো শিখতে হবে, আর এটা দু’একদিনের বিষয় নয়, সারা জীবনের বিষয়। কিন্তু আমরা ক’জন এভাবে ভারসাম্যপূর্ণ জীবন যাপন করি?! হয় মাতৃভক্তিতে স্ত্রীর প্রতি অবিচার করি, না হয়, স্ত্রীর ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে মা-বাবার দিলে আঘাত দেই, আর দুনিয়া-আখেরাত বরবাদ হয়। আমার একটা কথা মনে রেখো, মায়ের পক্ষ নিয়ে স্ত্রীর প্রতি অবিচার করা মূলত মায়ের প্রতি যুলুম, তদ্রূপ স্ত্রীর পক্ষ নিয়ে মায়ের হক নষ্ট করা আসলে স্ত্রীর প্রতি যুলুম। আমার একথার উৎস হলো,
أنصر أخاك ظالما أو مظلوما
অবশ্য সবকিছু হতে হবে হিকমত ও প্রজ্ঞার সঙ্গে।
একটি ঘটনা তোমাকে বলি, তোমার মত আলিমে দ্বীন নয়, সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত একজন মানুষ আমাকে বলেছেন, একবার তার মা তাকে বললেন, তোর বউ আজ তোর এত আপন হয়ে গেলো কীভাবে!
আমি বললাম, দেখো মা, তোমাকে আমি মা বলি; এই ‘মা’ ডাকটুকু পাওয়ার জন্য তোমাকে কত কষ্ট করতে হয়েছে! অথচ ‘পরের বাড়ীর মেয়েটি’র মুখ থেকে তুমি বিনা কষ্টে ‘মা’ ডাক শুনতে পাও! তোমাকে যে মা বলে ডাকে সে আমার আপন হবে না কেন মা?
আরেকটা ঘটনা, এক মা তার মেয়ের শাশুড়ী সম্পর্কে বললেন, মানুষ না, মেয়েটাকে আনতে পাঠালাম, দু’টো পিঠে বানিয়ে খাওয়াবো, দিলো না, ফেরত পাঠিয়ে দিলো!
দু’দিন আগে তিনিও একই কাজ করেছিলেন, ছেলের বউকে নিতে এসেছিলো মায়ের বাড়ী থেকে। তিনি বললেন, দু’দিন পরে আমার মেয়েরা আসবে এখন তুমি গেলে কীভাবে চলবে!
ভদ্রমহিলাকে বললাম, আপনার কাজটা কি ঠিক হয়েছিলো? আপনাকে কষ্ট দেয়া আমার উদ্দেশ্য নয়, সতর্ক করা উদ্দেশ্য। আল্লাহর কাছে যদি আটকা পড়েন তখন তো আপনিই বলবেন, তুমি তো হাদীছ-কোরআন পড়েছো, আমাকে সতর্ক করোনি কেন?
মোটকথা, মেয়েদেরকে তারবিয়াত করতে হবে যাতে তারা আদর্শ স্ত্রী, আদর্শ মা এবং আদর্শ শাশুড়ীরূপে আদর্শ জীবন যাপন করতে পারে। পুরুষ হচ্ছে কাওয়াম ও পরিচালক। সুতরাং তারবিয়াত ও পরিচালনা করা পুরুষেরই দায়িত্ব। স্ত্রী, মা ও শাশুড়ী, জীবনের এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ও কঠিন ধাপের জন্য ঘরে ঘরে আমরা যদি আমাদের মেয়েদের গড়ে তুলতে পারি, আদেশ দ্বারা, উপদেশ, সর্বোপরি নিজেদের আচরণ দ্বারা তাহলেই সংসার হতে পারে সুখের, শান্তির।
প্রিয় ছাত্রটিকে আরেকটি কথা বললাম, তোমার স্ত্রীর কোন আচরণ তোমার অপছন্দ হতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রথমে তোমাকে ভাবতে হবে, তোমার সব আচরণ কি সুন্দর, তোমার স্ত্রীর পছন্দের? তাছাড়া তোমার স্ত্রীর ভালো দিক কি কিছু নেই। সেই ভালো দিকগুলোর জন্য শোকর করো, আর যা তোমার কাছে মন্দ লাগে তার উপর ছবর করো। আর যদি সংশোধন করতে চাও তাহলে ভালো দিকগুলোর প্রশংসা করো, তারপর কোমল ভাষায় বলো, তোমার এই বিষয়টা যদি না থাকতো তাহলে তুমি আরো অনেক ভালো হতে। তবে আল্লাহর পেয়ারা হাবীব ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সেই প্রজ্ঞাপূর্ণ উপদেশ মনে রাখতে হবে, একটু বাঁকা থাকবেই, এই বক্রতা, সাহিত্যের ভাষায় যাকে বলে নায, আন্দায, মান, অভিমান, লাস্যতা, এই বক্রতা নারীর সৌন্দর্য, নারীর শক্তি। এটাকে সেভাবেই গ্রহণ করে তার সঙ্গে জীবন যাপন করতে হবে, পূর্ণ সোজা করতে চাইলে ভেঙ্গে যাবে, আর সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাবে।
সত্যি সত্যি যদি তোমার স্ত্রীর গুরুতর কোন ত্রুটি থাকে তবে সেটা সংশোধনের দায়িত্ব ও কর্তব্য অবশ্যই তোমার। তবে সেক্ষেত্রেও সংশোধনের জন্য অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে দিনের পর দিন চেষ্টা করে যেতে হবে। ধমক দিয়ে, জোর খাটিয়ে সংশোধন করা যায় না, ঘরে অশান্তি আনা যায়, ঘর ভাঙ্গা যায়, আর সন্তানদের জীবনে বিপর্যয় আনা যায়।
ইসলামপুরে আমার আব্বার দোকানের অপর দিকে এক ভদ্রলোকের দোকান ছিলো। অবস্থা ছিলো এই যে, দোকানে বসেই মদ খেতো। আব্বা তাকে দাওয়াত দিলেন, আর সে খুব দুর্ব্যবহার করলো, কিন্তু আব্বা ধৈর্যের সঙ্গে দাওয়াত চালিয়ে গেলেন। দু’বছর পর তিনি মসজিদমুখী হলেন এবং এমন মুবাল্লিগ হলেন যে, বউকে তালাক দেবেন। কারণ সে দ্বীনের উপর আসছে না।
আব্বা তাকে এভাবে বুঝালেন, ‘আমার সঙ্গে আপনার আচরণ কি মনে আছে? আমি যদি ধৈর্যহারা হয়ে আপনাকে ত্যাগ করতাম! এই পুরো কথাটা যেহেনে রেখে স্ত্রীকে তালিম করতে থাকেন। ছবর করেন, ছবর করলে আমার প্রতি আপনার যুলুম আল্লাহ মাফ করবেন। আল্লাহ যদি প্রশ্ন করেন আমার বান্দা তোমাকে আমার ঘরের দিকে ডেকেছে, তুমি তার প্রতি যুলুম করেছো কেন? তখন আপনি বলতে পারবেন, হে আল্লাহ, আমিও আপনার বান্দীর পিছনে ছবরের সঙ্গে মেহনত করেছি।’
সেই লোকের স্ত্রী কিন্তু পরবর্তী সময়ে পরদানশীন হয়েছিলো। অথচ জোশের তোড়ে লোকটা তো ঘরই ভেঙ্গে ফেলছিলো।
আসলে দোষ আমাদের। আমরা তারবিয়াত করার তরীকা শিখিনি। বোঝানোর তরয আয়ত্ত্ব করিনি।
প্রিয় ছাত্রটিকে আরো অনেক কথা বলেছিলাম, প্রায় দু’ঘণ্টা সময় তার জন্য ব্যয় করেছিলাম। সবকথা এখন মনেও নেই।
তবে একটা কথা তাকে বলা হয়নি, এখন তোমাদের মজলিসে বলি, স্ত্রীর সঙ্গে আচরণ কেমন হবে, এ সম্পর্কে একজনকে যা বলতে শুনেছিলাম, তা ছিল খুবই মর্মান্তিক। তিনি বলেছিলেন, ‘মেয়েলোক যেন তোমার মাথায় চড়ে না বসে, তাই প্রথম দিন থেকেই তাকে শাসনের মধ্যে রাখবা। পূর্ণ ইতা‘আত ও আনুগত্য আদায় করে নিবা, গোরবা কুশতান দর শবে আওয়াল।’
এ প্রবাদ এমনই বিশ্ববিশ্রুত যে, আমাদের নিরীহ বাংলাভাষায়ও বলে, ‘বাসর রাতেই বেড়াল মারতে হবে’। কিন্তু জীবনের সর্বক্ষেত্রের মত এক্ষেত্রেও আমাদের অনুসরণীয় হলো সুন্নাতে রাসুল, আর তিনি ইরশাদ করেছেন,
خيركم خيركم لأهله وأنا خيركم لأهلي
তো জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শরীয়তের সীমারেখায় থেকে স্ত্রীর সঙ্গে এমন আচরণই আমাকে করতে হবে, যাতে সে মনে করে, আমি সর্বোত্তম স্বামী, আমার মতো উত্তম স্বামী হয় না, হতে পারে না।
স্ত্রীগণের সঙ্গে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আচরণ কী ছিলো তা জানতে হবে এবং অনুসরণ করতে হবে। স্বামীর খেদমত করার মাধ্যমে স্ত্রী অনেক আজর ও ছাওয়াবের অধিকারিণী হতে পারে, এটা আলাদা কথা। তবে আমাকে মনে রাখতে হবে যে, এটা স্ত্রীর মহত্ত্ব, স্বামীর অধিকার নয়। তারা যদি কখনো মায়ের বাড়ী যেতে চায়, আমরা প্রশ্ন করি, ‘আমার খাওয়া-দাওয়ার কী হবে?’ অথচ এটা তার বিবেচনার বিষয় হতে পারে, আমার প্রশ্ন করার বিষয় নয়।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সামান্য কথা বলেই মজলিস শেষ করছি। সহবাস দাম্পত্য জীবনের একটি অপরিহার্য সত্য। এ বিষয়ে আলোচনাকে হায়া-শরমের খেলাফ মনে করা হয়। ফলে বিষয়টি অজ্ঞতার মধ্যে থেকে যায়। একারণে এমনকি অনেক সময় দাম্পত্য জীবন বিষাক্ত হয়ে পড়ে।
স্ত্রী তোমার সারা জীবনের সম্পদ এবং সেরা সম্পদ।
متاع মানে সম্পত্তি নয়, ভোগের বস্ত্ত নয় متاع মানে সম্পদ, ঐশ্বর্য। বিষয়টি বুঝতে না পেরে আধুনিক বুদ্ধিজীবীরা হাদীছের সমালোচনা করেন। আমরা হাদীছটির তরজমা ও ব্যাখ্যা এমন খন্ডিতভাবে করি যে, তারাও সুযোগ পেয়ে যায়।
তো স্ত্রী তোমার সম্পত্তি নয়, স্ত্রী হলো তোমার জীবনের সর্বোত্তম সম্পদ, যা যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে তোমাকে রাখতে হবে এবং ব্যবহার করতে হবে।
প্রথমেই বর্বর ও পাশবিকরূপে নিজেকে স্ত্রীর সামনে তুলে ধরা বিরাট মুর্খতা ছাড়া আর কিছু নয়। স্ত্রী স্বামীর ভোগের পাত্রী নয়, বরং স্বামী-স্ত্রী হলো পরস্পরকে উপভোগ করার জন্য। যত দিন লাগে, দীর্ঘ সাধনা করে প্রথমে হৃদয় জয় করো, মনের দুয়ার খোলো, অন্তরের গভীরে প্রবেশ করো।
যিন্দেগীর এই কঠিন মারহালা সম্পর্কে কত কিছু যে বলার আছে, কত কিছু যে শেখার আছে! দেখি, যদি আবার কখনো সুযোগ হয়।
[দাম্পত্যজীবন সুখময় হওয়ার জন্য শুধু পুরুষের প্রচেষ্টা ও সচেতনতাই যথেষ্ট নয়, নারীরও সদিচ্ছা ও সচেতনতা অতি প্রয়োজন।
এ বিষয়ে তারও আছে অনেক দায়িত্ব। কিন্তু নারীর তালীম-তরবিয়তের ভারও তো পুরুষেরই উপর। বিয়ের আগে পিতামাতা তার তরবিয়ত করবেন, বিয়ের পর স্বামী। দাম্পত্যজীবনে নারীর দায়িত্ব কী কী, সেই সকল দায়িত্ব সম্পর্কে তাকে সচেতন করার পদ্ধতি কী এবং তার তালীম-তরবিয়ত কীভাবে করতে হবে-এটি আলাদা একটি বিষয়।

 

 

 

Monday, July 5, 2021

সন্তান লালন পালনের সঠিক পদ্ধতিঃ how to raise children

 

সন্তান লালন পালনের সঠিক পদ্ধতিঃ
 
★স্ত্রী হিসেবে পুণ্যবতী স্ত্রী চয়ন করা।
★আল্লাহর নিকট নেক সন্তানের জন্য দোয়া করা।
★সন্তান লালন-পালনে আল্লাহর নিকট সাহায্য চাওয়া।
★ সন্তানের জন্য দোয়া করা এবং বদ দোয়া করা থেকে বিরত থাকা।
★সুন্দর নাম এবং উপনাম ব্যবহার করা।
★ তাদের অন্তরে ঈমান, সঠিক আক্বীদা এবং উত্তম চরিত্র গেঁথে দেয়া।
★ তাদেরকে মন্দ চরিত্র থেকে দূরে রাখা।
★তাদেরকে শরয়ী আযকার এর মাধ্যমে ( বিশেষ করে ছোটদেরকে) সুরক্ষিত করা।
★ আল্লাহর কুরআন মুখস্থের ব্যপারে তাদেরকে উৎসাহিত করা।
★ তাদের প্রতিভা বিকাশে যেটা তাদের জন্য প্রযোজ্য, সে ব্যাপারে দিক নির্দেশনা দেয়া।
★ ঘর থেকে চরিত্র বিধ্বংসী সামগ্রী দূর করে তার পরিবর্তে উপকারী কিছু রাখা।
★অতিরিক্ত সাজসজ্জা এবং চলমান চরিত্র বিধ্বংসী বস্তু থেকে বিরত রাখা, সাহসিকতা এবং সাদাসিধে জীবনে অভ্যস্ত করা।
★ অযথা কথা বলা, অতিরিক্ত ঘুমান এবং অনর্থক মানুষের সাথে মেলামেশা থেকে বিরত রাখা।
★ ছোট থেকেই মসজিদে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করা। বড় হলে তাদেরকে মসজিদে নিয়ে যাওয়া।
★ তারবিয়তের ব্যাপারে আদর্শ অনুসরণ করা, কথার বরখেলাফ হওয়া থেকে বিরত থাকা।
★ তাদেরকে কথা বলার শালীনতা শেখাতে হবে। নির্লজ্জতা ও অসামঞ্জস্য কথা বলা থেকে দূরে রাখা।
★ তাদের সাথে পরামর্শ করা, বিভিন্ন দায়িত্ব পালনে তাদেরকে অভ্যস্ত করা। সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়া।
★ তাদের মেজাজ বুঝে তাদের সাথে আচরণ করা।
★ তাদের বয়স অনুপাতে তাদের সাথে ব্যবহার করা।
★ তাদের সাথে বসা, তাদের মধ্যে ইনসাফ করা এবং তাদের সহানুভূতি বা আকর্ষণকে মূল্যায়ন করা।
★ উত্তমভাবে তাদের প্রতি খরচ করা।
★ মনযোগ সহকারে তাদের কথা শোনা।
★ নিয়মিত তাদের খোঁজখবর নেয়া।
★ সন্তানের সৎসংগীদের মর্যাদা দেয়া। সন্তানকে খারাপ সংগ থেকে দূরে রাখা।
★ সন্তানের ভুলগুলো বড় করে না দেখা।
★ ভুল করলে তাদেরকে সংশোধনের সূযোগ দেয়া।
★ প্রয়োজন অনুযায়ী শাস্তির বিধান রাখা।
★তাদের জন্য উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করা। তাদের ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা।
★ তাদের মান অনুযায়ী ঘরে লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা এবং তাদের উপযুক্ত করে মজলিসের ব্যবস্থা করা।
★ মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়া। মাহরাম ব্যতীত একাকী ঘরের বাইরে যাইতে না দেয়া।
★ মেয়েরা ছেলেদের মতো, ছেলেরা মেয়েদের মতো করে চলবে না। সবাইকে কাফিরদের সাদৃশ্য হয়ে চলতে নিষেধ করবে।
★দ্বীনদার, চরিত্রবান বিয়ের প্রস্তাব এলে, মেয়েদের বিয়ের ব্যবস্থা করা। আর ছেলেরা প্রাপ্তবয়স্ক হলে যোগ্যতা, সামর্থ্য বিবেচনা করে বিয়ের ব্যবস্থা করা।
★ সন্তানের সংশোধনের ব্যাপারে হতাশ না হওয়া। দ্রুত ফলাফল পাওয়া থেকে বিরত থাকা।
★ ভালো কাজে সন্তানকে সহযোগিতা করা। উৎসাহিত করা ও তাদেরকে পুরস্কৃত করা।
★তারবিয়ত সম্পর্কে যাদের অভিজ্ঞতা আছে তাদের সাথে পরামর্শ করা। এ বিষয়ে লিখিত ভালো বই অধ্যয়ন করা।
★ তারবিয়তের ফজিলত জানা এবং তারবিয়ত না থাকলে এর পরিণাম সম্পর্কে ধারণা রাখা।
★মোটকথা একজন পিতা তার সন্তানের দ্বীন এবং দুনিয়ার উপকারে যা করণীয় তাই করবে। আর যা তাদের জন্য ক্ষতিকর তা প্রতিহত করবে।
আল্লাহ তা'য়ালা সবাইকে নেক সন্তান দান করুন। সন্তানদেরকেও নেক সন্তান হিসেবে কবুল করুন। আমীন।
মুহাম্মদ ইউসুফ।

বিয়ে কেনো করবেন, কখন করবেন? - when to marry, whom to marry, why to marry?

 May be an image of text that says 'বিয়ে নিয়ে কিছু কথা [বিয়ে কেন করবেন? কখন করবেন?] বিয়ে: অর্ধেক দ্রীন'

 

বিয়ে কেনো করবেন, কখন করবেন?
.
ইদানিং নানা কারণে আমি পাবলিক থেকে আড়ালে থাকছি। তারপরও মাঝে মধ্যে ভাই বেরাদারদের সাথে দেখা হয়ে যায়। এমনি (নতুন পরিচিত) একজনের সাথে সাক্ষাত হল। অবশ্য আমি নিজেই তাকে হুট করে দাওয়াত দিয়েছিলাম।
খাওয়া দাওয়ার পর বলল, হুজুর, বিয়ের ব্যাপারে একটু পরামর্শ দেন।
- বলেন কী? এখনো বিয়ে করেননি?
- জি না। এখনো করা হয়নি।
- তা এখন কেনো বিয়ে করতে চাচ্ছেন?
- বিয়ে তো করতেই হবে। এই ফিতনার যুগে ঈমান বাঁচাতে বিয়ে না করে উপায় আছে?
- হুমম, এটাও ঠিক। আবার এমনও তো হতে পারে, আপনার ঈমান বাঁচানো বিয়ে ১০ জনের ঈমানকে সংকটে ফেলে দিল!
- এইটা আবার কী বলেন হুজুর, আমার বিয়ে ১০ জনের ঈমান নিয়ে টানাটানির কারণ হবে কেনো?
- দেখা গেলো আপনি বিয়ের পর বিবি, বাচ্চা, মা বাবা সহ অন্যান্যদের হক ঠিকমতো আদায় করলেন না, তখন সংসারে ঝগড়াঝাটি, কান্নাকাটি, পরস্পর দোষারোপ আর আপনার দীনদারী নিয়ে নানা কথা উঠবে। এতে এক সাথে অনেক মানুষের ঈমানের মধ্যে ফাটল দেখা দিতে পারে।
- তাহলে এখন আমি কী করব? বিয়ে করব না?
- কেনো করবেন না? অবশ্যই করবেন। তবে বুঝেশুনে। আবেগে নয়। নিজেকে প্রস্তুত করে। হুট করে নয়
- এই বিষয়েই একটু পরামর্শ দেন। 
 
𝌆 তাহলে শুনেন। বিয়ের আগে কমপক্ষে চারটা জিনিস মাথায় রাখবেন। 
 
১. কেনো বিয়ে করছি? :
 
শুধু শারীরিক চাহিদা বা সাময়িক আবেগ দমনে বিয়ের প্রতি আগ্রহ তৈরি হলে একটু থামুন। 
 
লম্বা দাম্পত্যজীবনে শারিরীক চাহিদার স্থায়িত্ব খুব কম। সময়ের সাথে এই চাহিদা কমতে থাকে। সেক্ষেত্রে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও দায়িত্ববোধ ছাড়া সংসার টিকে না। তাই রাসুল সা. সামর্থ্য থাকলে বিয়ে করতে বলেছেন। না থাকলে রোজা রাখতে বলেছেন। 
 
তাই সামর্থ্য বিচার করে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিন। এবং সেটা নূন্যতম হলেও চলবে। সেক্ষেত্রে পাত্রীও তেমন বুঝমান হতে হবে।
 
মনে রাখবেন, পিতার সামর্থ্য আপনার সামর্থ্য নয়।  
 
পিতার দায়িত্ব আপনাকে বিয়ে করানো, আপনার সংসার চালানো নয়। তিনি যদি আপনার সংসার চালানোর সামর্থ্য রাখেন, তবে তার উচিত নিজেই মাসনা করা।
 
 
২. কাকে বিয়ে করবেন? :
 
অনেকে দীন পালন শুরু করেই নিজের অবস্থার চেয়ে উঁচু পরিবারে বিয়ে করতে চায়। অনেকে আবার একেবারে আবেগী হয়ে অবস্থান থেকে অনেক নিচে নেমে যায়। আলেমরা উচ্চবিত্ত জেনারেল পরিবারে বিয়ে করে বসে। আবার অনেক জেনারেল ভাই দরিদ্র দীনদার পরিবারের মেয়ে বিয়ে করে।
 
এখানে বুঝার বিষয় হল, বিয়ে তো দু জনের। কিন্তু সম্পর্কটা দুটি পরিবার বা খান্দানের। তাই ইসলামের দেয়া কুফু তথা সমতা রক্ষা না করে অতি আবগের পরিচয় দিলে পস্তানোর সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। 
 
 
৩. বিয়ের আগে পরিবারে দায়িত্বশীল আচরণ করুন :
 
আপনার মা বাবা আপনাকে কেনো বিয়ে করাবে? আপনার মধ্যে কি সংসারের প্রতি দায়িত্ববোধ আছে? টাকা কামিয়ে পরিবারে দেয়া এক জিনিস আর দায়িত্ব নেয়া আরেক জিনিস।
 
সংসারের দায়িত্ব নিন। বাজার করুন। বিলগুলো দিন। কাকে ডাক্তার দেখাতে হবে, কার ঔষধ লাগবে, কার কী সমস্যা, এগুলোর খোঁজ রাখুন। 
 
আপনার মা বাবা ভালো মানুষ হলে আপনাকে শীঘ্রই বিয়ে করিয়ে দেবে।
 
 
৪. দ্বীনি পরিবেশ তৈরি করুন :
 
আপনি কি চান, আপনার স্ত্রী পর্দা করুক? আপনার বাসার সবাই তাকে পর্দা করতে সাহায্য করুক? আপনার স্ত্রী গুনাহমুক্ত থাকুক? 
 
তাহলে বিয়ের আগে আপনাকে আপনার পরিবারের মধ্যে এসব চর্চা করতে হবে। 
 
চাচী, মামী, ভাবী, খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোন, বিয়াইন ইত্যাদি গাইরে মাহরামের সাথে কঠোরভাবে পর্দা করতে হবে। পরিবারে কোনো গুনাহযুক্ত অনুষ্ঠান হলে তা জায়েজ উপায়ে করার জোড় চেষ্টা করতে হবে। না হলে নিজেকে দূরে রাখতে হবে। এমনকি গুনাহযুক্ত অনুষ্ঠানের পাঠানো খাবারও এড়িয়ে যেতে হবে।
 
যদি তা করতে পারেন, তাহলে আপনার স্ত্রীর ব্যাপারে সবাই সতর্ক থাকবে।
 
আর না পারলে আপনি যখন স্ত্রীর পর্দা ইত্যাদির কথা বলবেন, তখন নানা টিপ্পনী শুনতে হবে। 
 
আর হ্যাঁ, একটা বিষয় সব সময় মাথায় রাখবেন। বিয়ের ব্যাপারে মোটেও ফ্যান্টাসিতে ভোগা যাবে না। এ ব্যাপারে পুরোদস্তুর বাস্তববাদী থাকতে হবে। 
 
সবশুনে ভাই আমার বিদায় নিয়ে চলে গেলো। আর যোগাযোগ নাই। দেখি, সুযোগ বুঝে আমিই খোঁজ নিব।
 
—লেখা : আহমাদ ইউসুফ শরীফ 
 
𝌆 দ্বীনি পাত্র—পাত্রী সহজে খুঁজে পেতে ভিজিট করুন : Al-Yaqeen Marriage Media, https://ordhekdeen.com তে।

 

Friday, June 25, 2021

পরিবার ও বিয়ে নিয়ে বিভিন্ন টিপস সংকলন Various tips collection for marriage and family issues

 পরিবার ও বিয়ে নিয়ে বিভিন্ন টিপস সংকলন Various tips collection for marriage and family issues

 

 দায়েমি (সার্বক্ষণিক) ফরজ
https://allzinone.blogspot.com/2021/06/blog-post.html

১. পাত্রী নির্বাচনের সঠিক মানদণ্ড
https://allzinone.blogspot.com/2021/06/blog-post_15.html

 ২. পাত্র নির্বাচনের মানদণ্ড কী?

https://allzinone.blogspot.com/2021/06/blog-post_80.html

 ৩. দাম্পত্য জীবনে মধুর সম্পর্ক এবং ভালবাসা ​বিনিময়ের অভাবনীয় মর্যাদা​

https://allzinone.blogspot.com/2021/06/blog-post_68.html

 ৪. স্বামী-স্ত্রী মহান আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত ও অন্যতম নিদর্শন। সুতরাং এ ব্যাপারে যত্নশীল হোন:

https://allzinone.blogspot.com/2021/06/blog-post_9.html


 ৫. নবদম্পতির মাঝে মিল-মোহাব্বত সৃষ্টির ১০ উপায়


https://allzinone.blogspot.com/2021/06/blog-post_65.html


 যাদু-টোনা থেকে সুরক্ষায় সহিহ সুন্নাহ ভিত্তিক আমল


https://allzinone.blogspot.com/2021/06/blog-post_16.html



 ▌প্রশ্নোত্তরে 'আক্বীদাহ ও মানহাজ [১ম পর্ব]


https://allzinone.blogspot.com/2021/06/blog-post_17.html


 ৬. স্বামী-স্ত্রী একে অপরের প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায়ের আবশ্যকতা এবং পদ্ধতি


https://allzinone.blogspot.com/2021/06/blog-post_86.html


 ৭. স্বামীর আনুগত্য করার আবশ্যকতা এবং তার অনুমতি ছাড়া বাইরে যাওয়ার বিধান


https://allzinone.blogspot.com/2021/06/blog-post_72.html


 ৮. প্রশ্ন: স্বামীর আনুগত্য আমরা কীভাবে করবো? কী কী কাজ করলে স্বামীর আনুগত্য করা হবে? Marriage education series



https://allzinone.blogspot.com/2021/06/marriage-education-series.html



 ৯. প্রশ্ন: বিয়ের পরে একটা মেয়ে কতটুকু স্বাধীনভাবে চলতে পারবে? Marriage education series



https://allzinone.blogspot.com/2021/06/marriage-education-series_17.html


 ১০. স্বামীর অনুমতি ছাড়া রক্ত দান করার বিধান Marriage education series


https://allzinone.blogspot.com/2021/06/marriage-education-series_95.html

 ১১. স্বামী-স্ত্রী: কে কোন পাশে হাঁটবে, বসবে বা ঘুমাবে? Marriage education series



https://allzinone.blogspot.com/2021/06/marriage-education-series_3.html


 ১২. প্রশ্ন: স্বামী যদি স্ত্রীকে দ্বীনের জ্ঞার্নাজনে নিষেধ করে তাহলে কী করণীয়? Marriage education series



https://allzinone.blogspot.com/2021/06/marriage-education-series_56.html


 ১৩. স্বামীর আনুগত্য এবং তার সীমা Marriage education series


https://allzinone.blogspot.com/2021/06/marriage-education-series_91.html


 ১৪. প্রশ্ন: আল্লাহর নাফরমানীতে লিপ্ত স্বামীর আনুগত্য করা আবশ্যক কি? Marriage education series


https://allzinone.blogspot.com/2021/06/marriage-education-series_61.html

 ১৫. স্ত্রীর জন্য কি স্বামীর অসম্মতিতে তার নিকটে না থেকে তার শশুর-শাশুড়ির খেদমতের উদ্দেশ্যে তাদের কাছে থাকা ঠিক হবে? Marriage education series


https://allzinone.blogspot.com/2021/06/marriage-education-series_29.html


 ১৬. আজানের সময় আজানের জবাব আগে না কি স্বামীর ডাকে সাড়া দেয়া আগে? সহবাসের সময় আজানের জবাব দেয়া যাবে কি? Marriage education series


https://allzinone.blogspot.com/2021/06/marriage-education-series_46.html


 ১৭. আমার স্বামীর অক্ষমতার দরুন আমি আমার দেবরের সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে যাই। এতে কি আমার জন্য আমার স্বামী হারাম হয়ে গেছে? এখন আমার কী করণীয়? Marriage education series



https://allzinone.blogspot.com/2021/06/marriage-education-series_78.html


 শালী-দুলাভাই, দেবর-ভাবী, বেয়াই-বেয়াইন ইত্যাদির মাঝে পারস্পারিক সম্পর্ক, যোগাযোগ ও পর্দা Marriage education series


https://allzinone.blogspot.com/2021/06/marriage-education-series_89.html


 কী কী কারণে স্ত্রীর জন্য তার স্বামীর নিকট খোলা তালাক চওয়া বৈধ? Marriage education series



https://allzinone.blogspot.com/2021/06/marriage-education-series_32.html


 20. স্বামী-স্ত্রী কত দিন আলাদা থাকলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটে? Marriage education series


https://allzinone.blogspot.com/2021/06/marriage-education-series_97.html


 ১৮. স্বামীর ইবাদত-বন্দেগিতে অনীহা এবং খারাপ আচরণে স্ত্রী যখন চরম বিরক্ত ও বীতশ্রদ্ধ....​ Marriage education series



https://allzinone.blogspot.com/2021/06/marriage-education-series_33.html


 ১৯. যে স্ত্রীর স্বামী বিদেশে থাকে তার জন্য ১০টি দিকনির্দেশনা Marriage education series


https://allzinone.blogspot.com/2021/06/marriage-education-series_45.html

 ২১. বিবাহ বিচ্ছেদের কয়েকটি কারণ: বাঁচতে হলে জানতে হবে Marriage education series



https://allzinone.blogspot.com/2021/06/marriage-education-series_22.html


 ২২. দাম্পত্য জীবনে ভালবাসা বৃদ্ধির কয়েকটি সহজ উপায়: Marriage education series



https://allzinone.blogspot.com/2021/06/marriage-education-series_93.html

Thursday, June 24, 2021

হায়েযের সর্বোচ্চ মেয়াদ কত দিন? হায়েয থেকে পবিত্র হওয়ার আলামত কি? হায়েয থেকে পবিত্রতা অর্জনের পর যদি হলুদাভ বা ময়লার মত স্রাব দেখা যায় তাহলে কী করণীয়? Marriage education series

 May be an image of flower and text that says 'হায়েযের সর্বোচ্চ মেয়াদ কত দিন? wattn বল ਦ জারন হায়েয থেকে পবিত্র হওয়ার আলামত কি? চ হায়েয থেকে পবিত্রতা অর্জনের ਪਾব পর যদি হলুদাভ বা ময়লার মত স্রাব দেখা যায় তাহলে কী করণীয়? FB/Guidance2TheRightPath'

হায়েযের সর্বোচ্চ মেয়াদ কত দিন?
হায়েয থেকে পবিত্র হওয়ার আলামত কি?
হায়েয থেকে পবিত্রতা অর্জনের পর যদি হলুদাভ বা ময়লার মত স্রাব দেখা যায় তাহলে কী করণীয়?
▬▬▬🔸♦🔸▬▬▬
প্রশ্ন: এক জায়গায় শুনেছি, হায়েযের নির্দিষ্ট সময় পার হলেই (৫,৭, ১০ দিন) সাদা স্রাব না বের হলেও (হলদে, বাদামি রঙ থাকলেও) নামাজ শুরু করে দিতে হবে। যেহেতু ওই নারীর নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গিয়েছে। আবার আরেক জায়গায় শুনলাম, সাদা স্রাব না বের হলে কোনো ভাবেই নামাজ শুরু করা যাবে না। তা নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে ২/৩ দিন বেশি হলেও-এমন কি ১৫ দিন পর্যন্তও হতে পারে। আসলে কোনটা সঠিক?
হায়েযের শেষ এর দিকে সাদা স্রাব বের হওয়ার পরে সাথে সাথেই হলদে স্রাব বের হলে তা কি হায়েয বলেই গণ্য হবে নাকি সাদা স্রাব বের হওয়ার কারণে তার সলাত শুরু করে দিতে হবে?
উত্তর:
♻ প্রথমে আমাদের জানা উচিৎ হায়েযের সর্বোচ্চ মেয়াদ কত দিন। এর সর্বোচ্চ মেয়াদ কি ১৫ দিন না কি অন্য কোনো কিছু?
হায়েযের সর্বোচ্চ মেয়াদ কত দিন সে বিষয়ে বিজ্ঞ আলেমদের মাঝে দ্বিমত রয়েছে। যেমন:
🌀 একদল আলেম বলেন, হায়েয বা ঋতুস্রাবের রক্তের রং, গন্ধ বা ধরণ-প্রকৃতি সুপরিচিত। এটি সাধারণ রক্ত থেকে আলাদা। হায়েযের মেয়াদ বৃদ্ধি হতে পারে বিভিন্ন কারণে। যেমন: জন্মনিরোধক ঔষধ সেবন।
অতএব, কোন মহিলার ঋতুস্রাব যদি তার প্রতি মাসের নিয়মের বাইরেও অব্যাহত থাকে তাহলে যতদিন তা চলতে থাকে ততদিন তা ঋতুস্রাব হিসেবেই গণ্য হবে যত দিন তা বন্ধ না হয়। কেননা, ঋতুস্রাবের বিষয়টি খুবই ব্যাপক ও গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার পরও কুরআন-সুন্নায় এর মেয়াদ নির্ধারণ সম্পর্কে কোন বক্তব্য আসে নি।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
 
وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الْمَحِيضِ ۖ قُلْ هُوَ أَذًى فَاعْتَزِلُوا النِّسَاءَ فِي الْمَحِيضِ ۖ وَلَا تَقْرَبُوهُنَّ حَتَّىٰ يَطْهُرْنَ ۖ فَإِذَا تَطَهَّرْنَ فَأْتُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ أَمَرَكُمُ اللَّـهُ
 
“আর তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে হায়েয (ঋতুস্রাব) সম্পর্কে। বলে দাও, এটা অশুচি। কাজেই তোমরা হায়েয অবস্থায় স্ত্রীগমন থেকে বিরত থাক। তখন পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী হবে না, যতক্ষণ না তারা পবিত্র হয়ে যায়। যখন উত্তম রূপে পরিশুদ্ধ হয়ে যাবে, তখন গমন কর তাদের কাছে, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে হুকুম দিয়েছেন।” (সূরা বাকারা: ২২)
মোটকথা, যতদিন এই হায়েয অব্যাহত থাকবে ততদিন হায়েযের বিধান প্রযোজ্য হবে। আর হায়েজের রক্ত না থাকলে তখন তার বিধানও প্রযোজ্য হবে না।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন (মজমু ফতোয়া ১৯/২৩৭)। আল্লামা উসাইমীন রহ. এ মতকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।
 
🌀 তবে জুমহূর তথা অধিকাংশ বিদ্বানের মত হল, হায়েযের সর্বোচ্চ সময়সীমা ১৫ দিন। ১৫ দিন হয়ে গেলে গোসল করে পবিত্র হতে হবে যদিও রক্তস্রাব চলতেই থাকে। ঐ অবস্থায় প্রত্যেক ফরয সালাতের জন্যে আলাদাভাবে ওযু করবে। আর পোশাক থেকে ইস্তিহাযার রক্তের চিহ্ন ধুয়ে ফেলবে। তখন পনের দিনের পর নির্গত রক্তকে ইস্তেহাযা (রক্তপ্রদর) এর রক্ত বলা হবে।
এই মতকে গ্রহণ করেছেন সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি আল্লামা আব্দুল্লাহ বিন বায রহ.।
১৫ দিন নির্দিষ্ট করার পক্ষে কুরআন-সুন্নাহ থেকে কোনো দলিল না থাকলেও তারা মহিলাদের সাধারণ অবস্থা ও অভ্যাসকে দলিল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তারা বলেন, মহিলাদের ঋতুস্রাব ১৫ দিনের বেশি হয় না।
তবে ১৫ দিন নির্দিষ্ট করার পক্ষে দলিল না থাকায় ১ম অভিমতটিকে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. গ্রহণ করেছেন এবং শাইখ উসাইমীন রহ. এটিকে সমর্থন করেছেন। আর এটাই অধিক বিশুদ্ধ ইনশাআল্লাহ।
সুতরাং কারো নিয়মিত ৫/৭/১০ দিন সময়-সীমার চেয়ে বেশি ১৫ দিন বা ততোধিক সময় ধরে যদি স্রাব অব্যাহত থাকে আর তা যদি অবিকল হায়েজের রক্তের অনুরূপ হয় তাহলে তা হায়েয হিসেবেই ধরতে হবে এবং সে সময় সালাত-সিয়াম থেকে বিরত থাকতে হবে।
♻ হায়েয থেকে পবিত্র হওয়ার আলামত:
হায়েয থেকে পবিত্র হওয়ার আলামত হল, স্রাব সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাওয়া বা লজ্জা স্থান পরিপূর্ণভাবে শুষ্ক হয়ে যাওয়া অথবা বা সাদা স্রাব নির্গত হওয়া। এ দুটি আলামতের কোন একটি পাওয়া গেলে গোসল করে পবিত্রতা অর্জন করবে এবং যথারীতি সালাম-সিয়াম শুরু করবে।
♻ হায়েয বা ঋতুস্রাব থেকে পবিত্রতা অর্জনের পর যদি হলুদাভ বা ময়লার মত স্রাব দেখা যায়:
মহিলারা ঋতুস্রাব থেকে পবিত্র হওয়ার পর সাধারণ দিনগুলোতে যদি বিবর্ণ হলুদাভ বা ময়লাযুক্ত পানির মত ধুসর রঙ্গের স্রাব দেখতে পায় তাহলে তা হায়েয হিসেবে গণ্য হবে না। কেননা, উম্মে আত্বিয়া রা. হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন:
كُنَّا لا نَعُدُّ الْكُدْرَةَ وَالصُّفْرَةَ بَعْدَ الطُّهْرِ شَيْئًا
"আমরা (হায়েয বা ঋতুস্রাব) থেকে পবিত্রতা অর্জনের পর ময়লাযুক্ত ধুসর রঙ্গের পানি ও বিবর্ণ হলুদাভ স্রাবকে কিছুই মনে করতাম না।" (অর্থাৎ এগুলোকে হায়েয হিসেবে গণ্য করতাম না।)
[সুনান আবু দাউদ, শাইখ আলবানী রহ. হাদিসটিকে সহীহ বলেন।]
সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে:
كُنَّا لَا نَعُدُّ الْكُدْرَةَ وَالصُّفْرَةَ شَيْئًا
"আমরা ময়লাযুক্ত ধুসর রঙ্গের পানি ও বিবর্ণ হলুদাভ স্রাবকে কিছুই মনে করতাম না।" (সহীহ বুখারী হা/ ৩২৬)
সুতরাং কোন মহিলার এমনটি হলে, সে স্বাভাবিক নিয়মে নামায-রোযা অব্যাহত রাখবে। এটা পেশাবের মত নাপাকি হিসেবে গণ্য হবে। এ ক্ষেত্রে তা ধৌত করবে এবং প্রত্যেক ওয়াক্তে আলাদা ওযু করে সালাত আদায় করবে। আর রোযা অবস্থায় এমনটি দেখা গেলে স্বাভাবিক নিয়মে রোযা পূর্ণ করবে।
তবে হায়েযের সাথে যুক্ত অবস্থায় অর্থাৎ হায়েয শেষ হওয়ার শেষ দিকে এ ধরণের হলুদ বা ময়লার মত স্রাব নির্গত হলে তা হায়েয হিসেবেই গণ্য করতে হবে।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬◈◉◈▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, KSA
fb/AbdullaahilHadi