Thursday, June 17, 2021

২৮. প্রসূতি নারী কত দিন নাপাক থাকে? এ সময় কি স্বামীর সাথে এক বিছানায় শোয়া যাবে? Marriage education series

 May be an image of text that says 'প্রসূতি নারী কত দিন নাপাক থাকে? এ সময় কি স্বামীর সাথে এক বিছানায় শোয়া যাবে? আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল'

 

প্রসূতি নারী কত দিন নাপাক থাকে? এ সময় কি স্বামীর সাথে এক বিছানায় শোয়া যাবে?
▬▬▬◆◯◆▬▬▬
প্রশ্ন: সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পরে একজন প্রসূতি নারী কত দিন পর্যন্ত নাপাক থাকে? এ সময় সে যদি তার স্বামীর সাথে এক বিছানায় শোয় তাহলে স্বামীও কি নাপাক হবে?
উত্তর:
❖ ১. সন্তান জন্মের পরে প্রসূতি মহিলাদের নেফাসের মেয়াদ সর্বোচ্চ ৪০ দিন। এই সময় একজন মহিলা নাপাক অবস্থায় থাকে। উম্মে সালামা রা. বর্ণিত হাদিসে এসেছে:
كانتِ النُّفساءُ على عهدِ رسولِ اللَّهِ صلَّى اللَّهُ عليهِ وسلَّمَ تقعدُ بعدَ نفاسِها أربعينَ يومًا أو أربعينَ ليلةً
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে নেফাস তথা প্রসূতি নারীরা চল্লিশ দিন বিরতি নিত”। (সহিহ আবু দাউদ, হা/৩১১-আলবানি)
❖ ২. এই নাপাক অবস্থায় তার জন্য, সালাত, সিয়াম, কাবা ঘরের তওয়াফ, স্বামী সহবাস করা ইত্যাদি বৈধ নয়।
❖ ৩. এ অবস্থায় স্বামী সহবাস ছাড়া স্বামী-স্ত্রী পাশাপাশি শোয়া, একে অপরকে স্পর্শ করা, আদর-সোহাগ ও আনন্দ-বিনোদন করা সবাই জায়েজ। এতে স্বামী নাপাক হবে না। এ সময় তার সাংসারিক সকল কাজ করাই বৈধ। প্রসূতি মহিলা রান্নাবান্না বা বাড়ির কোন কাজ করতে পারবে না...এটা কুসংস্কার। ইসলামে কুসংস্কারের স্থান নাই।
❖ ৪. এই সময় ছুটে যাওয়া নামাজগুলো কাজা করার প্রয়োজন নেই তবে ফরজ রোজা গুলো পরবর্তীতে স্বাভাবিক অবস্থায় কাজা করে নিতে হবে।
হাদিসে এসেছে:
كانت المرأةُ من نساءِ النبيِّ تَقعُدُ في النِّفاسِ أربعين ليلةً لا يَأمُرُها النبيُّ بقضاءِ صلاةِ النِّفاسِ
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদের কারো নিফাস হলে চল্লিশ দিন বিরতি নিতেন। তিনি তাকে নিফাস অবস্থার সালাত কাজা করার নির্দেশ দিতেন না”। (ইরওয়াউল গালিল, হা ২০১-হাসান)
❖ ৫. ৪০ দিনের আগে যখনই রক্ত বন্ধ হয়ে হবে তখনই গোসল করে পবিত্রতা অর্জন করতে হবে এবং যথারীতি নামায, রোযা ইত্যাদি শুরু করতে হবে।
❖ ৬. ৪০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও যদি স্রাব চালু থাকে তাহলে তা রোগ হিসেবে গণ্য হবে। এ সময় সে নিম্নাংশে একটা কাপড় বেঁধে বা আন্ডার ওয়্যার পরিধান করে নিবে- যেন রক্তস্রাব পা দিয়ে নিচে গড়িয়ে না পড়ে এবং প্রত্যেক ওয়াক্তে আলাদাভাবে করে ওযু করে সালাত আদায় করবে। এক ওয়াক্তের ওযু দ্বারা একাধিক ওয়াক্তের সালাত আদায় করবে না।
আল্লাহু আলাম।
 
▬▬▬◆◯◆▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

 

২৭. ইসলামের দৃষ্টিতে অন্ত:স্বত্বা স্ত্রীর সাথে সহবাস এবং তার খাওয়া-দাওয়া ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয় Marriage education series

 No photo description available.

 

ইসলামের দৃষ্টিতে অন্ত:স্বত্বা স্ত্রীর সাথে সহবাস এবং তার খাওয়া-দাওয়া ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়
▰▰▰▰▰◄✪►▰▰▰▰▰
প্রশ্ন: বর্তমানে ডাক্তাররা গর্ভবতী নারীদের উদ্দেশ্যে বলে থাকে যে, গর্ভ ধারণের ১ম তিন মাস এবং শেষ তিন মাস স্বামী সহবাস করা ঠিক নয়। এ সময় বাম কাত হয়ে শুলে গর্ভস্থ সন্তান ভালো থাকে, গর্ভাশয়ে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ হয়। এ ছাড়াও এ সময় দূরে সফর করা এবং ভারি কাজ করা উচিৎ নয়। তাছাড়া মান সম্মত পুষ্টিকর খাবার খেলে প্রসূতি মা ও গর্ভস্থ সন্তান ভালো থাকে ইত্যাদি। আমার প্রশ্ন হল, ইসলাম কি এ সকল বিধিবিধান সমর্থন করে? গর্ভবতী নারীদের কি এ সকল নিয়ম-কানুন মেনে চলা উচিৎ?
উত্তর:
বৈষয়িক ও স্বাস্থ্যগত বিষয়গুলো মানুষের বাস্তব অভিজ্ঞতা, বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণার ওপরে নির্ভরশীল। সুতরাং বৈজ্ঞানিক গবেষণা, ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে সকল আচরণ গর্ভবতী নারীর জন্য ক্ষতিকারক এবং যে সকল কার্যক্রম তাদের জন্য উপকারী বলে প্রমাণিত হয়েছে সেগুলো অনুসরণ করতে ইসলাম বাধা দেয় না। ইসলাম বৈষয়িক ক্ষেত্রে সব সময় উপকারী ও কল্যাণকর বিষয়কে সমর্থন করে-যদি না তাতে শরিয়া বিরোধী কোনো কিছু থাকে।
🌀 গর্ভকালীন স্ত্রী সহবাস করা:
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষ্য হল, “যদি গর্ভকালীন অবস্থা স্বাভাবিক ভাবে চলমান থাকে তাহলে সন্তান গর্ভে থাকা অবস্থায় প্রসব বেদনা শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত সহবাস করা যায়। সহবাসের সময় স্বাভাবিক নড়াচড়া গর্ভের শিশুর কোন ক্ষতি করে না। শিশু তলপেট এবং জরায়ুর শক্ত পেশী দ্বারা সুরক্ষিত থাকে। জরায়ুর মুখ মিউকাস প্লাগ দ্বারা সীল করা থাকে। সহবাসের সময় পুরুষেরে গোপনাঙ্গ গর্ভের শিশু পর্যন্ত পৌঁছায় না। তাই গর্ভে শিশুর ক্ষতির আশঙ্কা নেই।”
আর ইসলামী শরিয়ায় অনুযায়ীও অন্ত:সত্তা নারীর শারীরিক কোন সমস্যা না থাকলে সন্তান গর্ভধারণের প্রথম তিন মাস, শেষ তিন মাস বা এর মধ্যবর্তী সময়ে স্বামী-স্ত্রীর মিলনে সমস্যা নেই। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সর্তকতা অবলম্বন করা নিঃসন্দেহে উত্তম। এ ব্যাপারে হাদিস বর্ণিত হয়েছে:
عَنْ جُدَامَةَ بِنْتِ وَهْبٍ الأَسَدِيَّةِ أَنَّهَا سَمِعَتْ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ "‏ لَقَدْ هَمَمْتُ أَنْ أَنْهَى عَنِ الْغِيلَةِ حَتَّى ذَكَرْتُ أَنَّ الرُّومَ وَفَارِسَ يَصْنَعُونَ ذَلِكَ فَلاَ يَضُرُّ أَوْلاَدَهُمْ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ مُسْلِمٌ وَأَمَّا خَلَفٌ فَقَالَ عَنْ جُذَامَةَ الأَسَدِيَّةِ ‏.‏ وَالصَّحِيحُ مَا قَالَهُ يَحْيَى بِالدَّالِ ‏.
জুদামাহ্ বিনতে ওয়াহব আসাদিয়্যাহ্ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন, “আমি গীলা তথা স্তন্য দায়িনী অথবা অন্ত:সত্তা স্ত্রী সঙ্গম নিষিদ্ধ ঘোষণা করার ইচ্ছে করলাম। এরপর আমার নিকট আলোচনা করা হল যে, রোম ও পারস্যের লোকরা এ সময় সহবাস করে কিন্তু ‌এতে তাদের গর্ভস্থ সন্তানের কোন ক্ষতি হয় না।”
(সহিহ মুসলিম, অধ্যায়: বিবাহ ‘গীলাহ্’ অর্থাৎ স্তন্য দায়িনী স্ত্রীর সাথে সঙ্গমের বৈধতা এবং ‘আয্ল মাকরূহ হওয়া প্রসঙ্গে, হা/৩৪৫৬)
অর্থাৎ তৎকালীন রোম ও পারস্য দেশে সন্তান গর্ভে থাকা অবস্থায় বা সন্তানকে দুধ পান করানোর সময় স্ত্রী সহবাসের বিষয়টি প্রচলিত ছিলো। কিন্তু এতে তাদের কোন ক্ষতি হয় নি - রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম তা জানতে পেরে এই অবস্থায় স্বামী-স্ত্রীর সহবাস করাকে নিষেধ করেন নি।
🌀 গর্ভবতী মহিলার স্বাস্থ্য সম্মত ও পুষ্টিকর খাবার:
গর্ভবতী নারীর জন্য অবশ্যই স্বাস্থ্য সম্মত ও পুষ্টিকর খাদ্যের প্রয়োজন। কেননা, এতে মা ও ভ্রূণের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে বলা হয়েছ: “খাদ্য ঘাটতিতে আক্রান্ত গর্ভবতী মায়ের সন্তান হয় ওজনে কম ও লম্বায় ছোট। বহু ক্ষেত্রে গর্ভেই সন্তান মরে যায়, জন্মের কিছু সময় পর সন্তান মৃত্যুমুখে পতিত হয়, গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ে, সময় হওয়ার আগেই সন্তানের জন্ম হয়ে যায়, ফলে শিশু থাকে অপরিণত।”
এ কারণে ডাক্তার ও পুষ্টিবিদরা গর্ভবতী মায়েদের শরীরের যত্ন নিতে এবং পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যপ্রদ খাবার গ্রহণের সব সময় পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
🌀 গর্ভাবস্থায় দীর্ঘ সফর:
গর্ভ অবস্থায় দীর্ঘ সফর ক্ষতিকারক হতে পারে। তাই যথাসম্ভব এ থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে ডাক্তারগণ পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে বিশেষ প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু নিয়ম-কানুন মেনে আরামদায়ক সফর করা যেতে পারে।
🌀 গর্ভাবস্থায় পরিশ্রম ও ভারী কাজ করা:
গর্ভাবস্থায় একজন মা কতোটা পরিশ্রম করবেন তা সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়৷ সাধারণভাবে বলা যায়, মা গর্ভাবস্থায় তার স্বাভাবিক সংসারের সব কাজই করবেন৷ তবে প্রথম তিন মাস এবং শেষের দু-এক মাস খুব ভারী বা পরিশ্রমের কাজ না করাই ভালো৷ যেমন- কাপড় কঁাচা, ভারী জিনিস তোলা, পানি আনা, ধান ভানা ইত্যাদি না করা৷ গর্ভাবস্থায় সিঁড়িতে ওঠা-নামার সময় যথেষ্ট সতর্ক থাকা উচিত৷
🌀 অন্ত:স্বত্বা নারীর বাম দিকে শোয়ার বিষয়টি যদি বাস্তব অভিজ্ঞতা ও ডাক্তারি নির্দেশনা মোতাবেক তার জন্য উপকারী হয়ে থাকে তাহলে সে ভাবে শুতে কোন সমস্যা নেই। আল্লাহু আলম
▬▬▬💠🌀💠 ▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
fb/AbdullaahilHadi
লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব।