Monday, June 13, 2022

জ্বিন আসরের লক্ষণ এবং জ্বিনের ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায়

 

জ্বিন আসরের লক্ষণ এবং জ্বিনের ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায়
----------
আজ শুরুতে আমরা জ্বিন আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ জানবো। গতপর্বে ব্যখা করা হয়েছে, মানুষ কয়েকভাবে জ্বিন দ্বারা আক্রান্ত হয়। আমাদের সমাজে whole body possession বা যেটাকে জ্বিনে ধরা বলে এটাকেই শুধু জ্বিনের সমস্যা ভাবা হয়, পুরো শরীর পজেসড না হলে সচরাচর কেউ বিশ্বাস করে না যে জ্বিন আছে শরীরে। কিন্তু আসলেই এটা সম্ভব যে, কারো শরীরে জ্বিন ঢুকে আছে.. আর দিনের পর দিন ধীরেধীরে সে মানসিক এবং শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখা জরুরী, আমরা যে লক্ষণগুলো আলোচনা করতে যাচ্ছি এক-দুদিন এসব দেখলেই জ্বিন আক্রান্ত হয়েছে ভাববার কারণ নেই, কারণ এগুলো স্বাভাবিক অসুখবিসুখ এর কারণেও হতে পারে। এই লক্ষণগুলো কারো মাঝে যদি দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান থাকে, তাহলে ধরে নিবেন সমস্যা আছে।
আলোচনার সুবিধার্থে পজেসড হওয়ার লক্ষণগুলোকে আমরা দুই ভাগে ভাগ করে নিচ্ছি। ঘুম সংক্রান্ত এবং অন্য সময়ের..।
.
ঘুম সংক্রান্ত লক্ষণ সমূহঃ
১। নিদ্রাহীনতা: যার জন্য সারারাত শুধু বিশ্রাম নেয়াই হয়, ঘুম হয়না
২। উদ্বিগ্নতা: যেজন্য রাতে বার বার ঘুম ভেঙে যাওয়া।
৩। বোবায়ধরা: ঘুমের সময় কেউ চেপে ধরেছে, নড়াচড়া করতে পারছে না। প্রায়ই এমন হওয়া
৪। ঘুমের মাঝে প্রায়শই চিৎকার করা, গোঙানো, হাসি-কান্না করা
৫। ঘুমন্ত অবস্থায় হাটাহাটি করা (Sleepwalking)
৬। স্বপ্নে কোনো প্রাণিকে আক্রমণ করতে বা ধাওয়া করতে দেখা। বিশেষতঃ কুকুর, বিড়াল, ইঁদুর, উট, সিংহ, শিয়াল, সাপ (*)
৭। স্বপ্নে নিজেকে অনেক উঁচু কোনো যায়গা থেকে পড়ে যেতে দেখা
৮। কোনো গোরস্থান বা পরিত্যক্ত যায়গা, অথবা কোনো মরুভূমির সড়কে হাটাচলা করতে দেখা
৯। বিশেষ আকৃতির মানুষ দেখা। যেমন: অনেক লম্বা, খুবই খাটো, খুব কালো কুচকুচে
১০। জ্বিন-ভুত দেখা
দ্রষ্টব্যঃ যদি স্বপ্নে সবসময় দুইটা বা তিনটা প্রাণী আক্রমণ করতে আসছে দেখে, তাহলে বুঝতে হবে সাথে দুইটা বা তিনটা জ্বিন আছে।
ঘুম ব্যতীত অন্য সময়ের লক্ষণ
১। দীর্ঘ মাথাব্যথা (চোখ, কান, দাত ইত্যাদি সমস্যার কারণে নয়, এমনিই)
২। ইবাদত বিমুখতা: নামাজ, তিলাওয়াত, যিকির আযকারে আগ্রহ উঠে যাওয়া। মোটকথা, দিনদিন আল্লাহর থেকে দূরে সরে যাওয়া
৩। মেজাজ বিক্ষিপ্ত হয়ে থাকা, কিছুতেই মন না বসা..
৪। ব্যাপক অলসতা; সবসময় অবসন্নতা ঘিরে রাখা
৫। মৃগীরোগ
৬। শরীরের কোনো অংঙ্গে ব্যাথা কিংবা বিকল হয়ে যাওয়া। ডাক্তাররা যেখানে সমস্যা খুজে পেতে বা চিকিৎসা করতে অপারগ হচ্ছে।
আবারও মনে করিয়ে দেই, শারীরিক রোগের কারণেও এসব হয়ে থাকে। তবে যখন দীর্ঘদিন যাবত যখন এসব লক্ষণ দেখা যাবে, তখন ভাববেন কোনো সমস্যা আছে।
.
জ্বিনের আক্রমণ থেকে বাচার জন্যঃ
আগামী পর্বে হয়তো বাসাবাড়ি থেকে জিন তাড়ানোর পদ্ধতি, এরপর জ্বিনদ্বারা আক্রান্ত রুগীকে রুকইয়াহ করার নিয়ম আলোচনা হবে ইনশাআল্লাহ। তবে পোস্ট অনেক লম্বা হতে পারে। এজন্য দুই পর্বে দেয়ার ইচ্ছা আছে।
যাহোক, আজ সবশেষে খবিস জ্বিনের ক্ষতি থেকে বাঁচতে কয়েকটি মৌলিক বিষয় জেনে নিন।
১। জামা'আতে নামাজ আদায় করা। তাহাজ্জুদ পড়া। এই দুটি আপনার আত্মিক শক্তি বৃদ্ধি করে।
২। গানবাজনা থেকে বিরত থাকা।
৩। সর্বদা পাকপবিত্র থাকা। বিশেষত: ঘুমের আগে অযু করে বিছানায় যাওয়া।
৪। ঘুমের আগে আয়াতুল কুরসি এবং সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়া।
৫। সব কাজে বিসমিল্লাহ বলা, বিশেষত: খাবার সময় এবং ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করতে। এছাড়া উঁচু থেকে লাফ দেয়ার সময়, কিছু ফেলার সময়, অন্ধকারে কিছু করার সময়ও বিসমিল্লাহ বলা ভালো।
৬। কুকুর - বিড়াল না মারা, সাপ মারতে চাইলে আগে জোর আওয়াজে ৩বার বলা "জ্বিন হলে চলে যাও.."
৭। কোনো গর্তে প্রসাব না করা। হাদিসে এব্যাপারে পরিষ্কার নিষেধাজ্ঞা আছে।
৮। ঘরে প্রবেশের এবং বের হওয়ার দোয়া পড়া, দোয়া না জানলে অন্তত বিসমিল্লাহ বলা।
৯। সন্ধ্যার সময় ঘরের জানালা বন্ধ করা, বাচ্চাদের বাহিরে বের হতে না দেয়া। সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পর বাচ্চাদের বের হতে কিংবা জানালা খুলতে পারেন।
১০। স্ত্রী সহবাসের পুর্বে অবশ্যই দু'আ পড়া। বিয়ের প্রথম রাতের দোয়াটি পড়া।
১১। টয়লেটে ঢোকার সময় দু'আ পড়া।
১২। প্রতিদিন "লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা-শারীকালাহ, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হ্ামদ, ওয়াহুওয়া 'আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর" ১০০বার পড়া। একশতবার না হলে, অন্তত সকাল - সন্ধ্যায় ১০বার করে পড়া।
১৩। সকাল সন্ধ্যার অন্যান্য মাসনুন আমলগুলো নিয়মিতভাবে প্রতিদিন করা
১৪। সুরা ইখলাস ফালাক নাস, তথা তিনকুল-এর আমল গুরুত্ব সহকারে করা।
আয়েশা সিদ্দীকা রা. থেকে এব্যাপারে চল্লিশটিরও বেশি সনদে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল সা. জীবনের শেষ পর্যন্ত এর আমল করেছেন।
আমল হলো, রাসূল সা. প্রতিরাতে ঘুমানোর পূর্বে সূরা ইখলাস তিনবার, সূরা ফালাক তিনবার ও সূরা নাস তিনবার পড়ে দুইহাতের তালুতে ফুঁ দিতেন। ফুঁ এর সাথে হালকা থুতু বেরিয়ে আসতো। এরপর সমস্ত শরীরে হাত বুলিয়ে নিতেন।
দ্বিতীয়ত: প্রতিদিন ফজর ও মাগরিবের নামাযের পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার সূরা ইখলাস, একবার সূরা ফালাক ও একবার সূরা নাস এভাবে তিন সূরা তিনবার পড়তেন। এসময়ে ফুঁ দেয়া লাগবে না।
হাদীসের শেষাংশে আল্লাহর রাসূল সা বলেন, এআমলই তোমার জন্য যথেষ্ট।অন্য হাদিসের আছে এই সুরাগুলো পড়ে বাচ্চাদের ফুঁ দিয়ে দিতেন।
উপরে উল্লেখিত পরামর্শ বিভিন্ন হাদিস থেকে নেয়া, লেখা দীর্ঘ হয়ে যাবে এজন্য সবগুলো হাদিস উল্লেখ করা সম্ভব হলো না।
আর উপরে বলা কিছু দুয়া [এখানে] পাবেন। এছাড়া বাকিগুলো প্রসিদ্ধ অনেক বইতে পাবেন, যেমনঃ হিসনে হাসিন, গুলজারে সুন্নাহ, হিসনুল মুসলিম। আরো সহজে পাবেন নুরানী মাদরাসার বাচ্চারা একটা নীল রঙের বই পড়ে (নুরানী পদ্ধতিতে কোরআন শিক্ষা এরকম নাম), বেলায়েত সাহেবের লেখা, সেখানে।
যাহোক, অনেকগুলো ব্যাপার আলোচনা হলো, আল্লাহ আমাদের সতর্ক থাকার তাওফিক দিন, আমিন।

Wednesday, June 1, 2022

যাদুর জিনিস বা তাবিজ নষ্ট করার নিয়মঃ

 

যাদুর জিনিস বা তাবিজ নষ্ট করার নিয়মঃ

-----------

সন্দেহজনক কিছু বা কোন তাবিজ যদি পাওয়া যায় তাহলে সেটা নষ্ট করার জন্য একটি পাত্রে পানি নিন। তারপর সেই পানিতে সুরা আরাফ ১১৭-১২২ নং আয়াত, ইউনুস ৮১-৮২, সুরা ত্বহা ৬৯, সূরা ফালাক্ব ৩ বার, সূরা নাস ৩ বার পড়ে ফুঁ দিন।

আয়াতগুলোর আরবি নিচে দেওয়া হলো। 

১.

وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ مُوسَىٰ أَنْ أَلْقِ عَصَاكَ ۖ فَإِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُونَ - فَوَقَعَ الْحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ - فَغُلِبُوا هُنَالِكَ وَانقَلَبُوا صَاغِرِينَ - وَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سَاجِدِينَ -قَالُوا آمَنَّا بِرَبِّ الْعَالَمِينَ - رَبِّ مُوسَىٰ وَهَارُونَ -

২.

فَلَمَّا أَلْقَوْا قَالَ مُوسَىٰ مَا جِئْتُم بِهِ السِّحْرُ ۖ إِنَّ اللَّهَ سَيُبْطِلُهُ ۖ إِنَّ اللَّهَ لَا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِينَ - وَيُحِقُّ اللَّهُ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُونَ -

৩.

وَأَلْقِ مَا فِي يَمِينِكَ تَلْقَفْ مَا صَنَعُوا ۖ إِنَّمَا صَنَعُوا كَيْدُ سَاحِرٍ ۖ وَلَا يُفْلِحُ السَّاحِرُ حَيْثُ أَتَىٰ -

এরপর সুরা ফালাক্ব, সুরা নাস ৩বার করে পড়ে ফুঁ দিবেন।

 

 

লক্ষণীয়ঃ

১। তাবিজ,পুতুল,কাগজ,যাদুকরের দেয়া যেকোনকিছু উপরের আয়াতগুলো পড়া পানিতে ডুবিয়ে রাখবেন কিছুক্ষণ। কাগজে লেখা থাকলে সেটা ঘষে মুছে ফেলার চেষ্টা করবেন। লেখা মুছার পরে ছিড়ে অনেকগুলো টুকরো করবেন। তারপর শুকিয়ে পুড়িয়ে ফেলবেন। পুড়ানোর সময়ে নিশ্বাসের সাথে সেটার ধোঁয়া নেয়া থেকে বিরত থাকবেন।  

২। তাবিজ খালি হাতে না ধরে গ্লাভস ব্যবহার করতে পারেন। তাবিজ ধরার পূর্বে এবং নষ্ট করার পুরোটা সময়ে ফালাক, নাস পড়বেন।

৩। তামা বা অন্য ধাতুর তাবিজ বা আংটিতে খোদাই করা লেখা থাকলে লেখাটা ঘষে মুছে ফেলবেন। ঘষে মুছতে না পারলে পুড়িয়ে হলেও লেখাটা মুছে ফেলা জরুরী। নিজে করতে না পারলে কোন স্বর্ণকারের কাছে গিয়ে লেখাটা মুছে ফেলবেন।

৪। তাবিজে গিট দেয়া থাকলে সাবধানে প্রতিটা গিট খুলবেন। কোন পুতুল, মূর্তি, পাখি, মাছ ইত্যাদি পাওয়া গেলে সাবধানে খেয়াল করবেন এদের গায়ে কোন পিন আছে কিনা। থাকলে প্রতিটা পিন খুলবেন। পিনগুলোও পানিতে ডুবিয়ে রাখবেন। জীবন্ত কোনকিছু যেমন- পাখি পাওয়া গেলে তার ডানার নিচে এবং শরীরের প্রতিটা জায়গায় খুঁজে দেখবেন কোন তাবিজ,পিন বা সন্দেহজনক কিছু আছে কিনা। থাকলে এগুলো সাবধানে খুলে নিয়ে পাখিকে তাবিজ নষ্টের পানি দিয়ে ভিজিয়ে ছেড়ে দিবেন। তাবিজের ভেতরে কাগজ ছাড়াও অন্যকিছু থাকতে পারে। তাবিজ খুলতে গেলে অনেক সময় খোলস ভেঙ্গে বের করা লাগতে পারে। যাই থাকুক, ভাঙ্গা টুকরোসহ সবটুকুই পানিতে ঢালবেন। একইভাবে যাদুকরের দেয়া তেলপড়া,পানিপড়া ইত্যাদি জিনিসপত্র পানিতে ঢালবেন।  

৫। ব্যবহৃত পানি ফেলার জন্য এবং তাবিজ পুড়ানোর জন্য, সাধারনত মানুষের যাতায়াত হয়না এমন কোন জায়গা ঠিক করে নিন।

৬। কোন জায়গায় তাবিজ রাখা আছে সন্দেহ হলে সেখানে পরপর তিনদিন তাবিজ নষ্টের পানিটা ছিটিয়ে দিন। কারো বাসার দেয়ালে,ফ্লোরে অথবা যেকোন স্থানে তাবিজ আঁকা অথবা খোদাই করা থাকলে লেখাটা ঘষে মুছতে হবে। তারপর তাবিজ নষ্টের পানিটা ওখানে ছিটিয়ে দিতে হবে। অনেক সময় বাসা বানানোর সময়ে প্রতি কোণায় তাবিজ রেখে দেয়া হয়। সেক্ষেত্রে এসব কোণায় তাবিজ নষ্টের পানিটা ছিটিয়ে দিবেন পরপর তিনদিন। আর দোয়া করবেন যেন আল্লাহ তাবিজ নষ্ট করে দেন।

৭। জ্যোতিষীর দেয়া কোন বিশেষ আংটি থাকলে তাবিজ নষ্টের পানিতে ডুবিয়ে রাখবেন। কিছুক্ষণ রেখে পাথরটা ভেঙে তারপর ফেলে দিবেন। জ্যোতিষীরা বিশ্বাস করে পাথরের ক্ষমতা আছে। তাই কোনমতেই এই পাথর রেখে দেয়া যাবেনা।

৮। আপনি তাবিজ ব্যবহার করলে উপরোক্ত নিয়ম অনুযায়ী তাবিজ নষ্ট করবেন। তারপর তাবিজ ব্যবহার করার জন্য তাওবা করবেন।

 

 

 

 

রুকইয়াহ এবং দোয়া

কেউ যাদু আক্রান্ত হলে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে দোয়া করা।

আমরা জানি জাদুর জিনিসগুলো যদি পাওয়া যায় আর সেগুলো নষ্ট করে ফেলা হয়, তাহলে মানুষ খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে যায়। তাই তাহাজ্জুদ পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করা উচিত যেন আল্লাহ জানিয়ে দেন, যাদুর জিনিশগুলো কোথায় পাওয়া যাবে, কিভাবে পাওয়া যাবে, কিভাবে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

এটা কিন্তু রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাহ।

আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে যে ঘটনাটি বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যখন যাদু করা হয়েছিল, উনি কয়েকদিন খুব বেশি বেশি দোয়া করেছেন, এরপর একদিন হঠাৎ বললেন আয়েশা তুমি কি বুঝতে পেরেছ যে ব্যাপারে আমি দোয়া করছিলাম আল্লাহ আমাকে জানিয়ে দিয়েছেন?

ওই সময়েই রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রুকইয়ার জন্য সুরা ফালাক সুরা নাস নাযিল হয়। রাসুলুল্লাহকে জানিয়ে দেয়া হয়, আপনাকে এভাবে যাদু করা হয়েছে, অমুক যায়গায় আছে যাদুর জিনিস। ইত্যাদি (বুখারি ৫৪৩০, মুসলিম, নাসাঈ, ইবনে মাযাহ, মুসনাদে আহমাদ)

তো এখানে মুল যে বিষয়ে আমি ফোকাস করতে চাচ্ছি, তা হচ্ছে দোয়া করা। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওই রুকইয়াহ অসম্পূর্ণ যেখানে দোয়া নেই। তাই আমাদের অবশ্যই দোয়া করা উচিত।

১. বেলাল রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ বলেছেন, তোমাদের সম্পদ হিফাজত কর যাকাত প্রদানের মাধ্যমে, তোমাদের রোগের চিকিৎসা কর সাদকার মাধ্যমে, আর তোমাদের বিপদ দূর কর দুআর মাধ্যমে। (মুজামুল আওসাত ২০০৬, বায়হাক্বি ৩২৭৪)

২. জাবির রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি নবী কে বলতে শুনেছি, রাতে এমন একটি সময় রয়েছে যে, কোন মুসলমান ব্যাক্তি আল্লাহর কাছে দুনিয়া-আখিরাতের কোন কল্যাণের প্রার্থনা করা অবস্থায় যদি সময়টি পেয়ে যায়, তবে আল্লাহ অবশ্যই তাকে তা দান করবেন। আর এই সময় আছে প্রতিটি রাতেই। (মুসলিম ৭৫৭)

৩. আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ বলেছেন, আমাদের বরকতময় ও মহান প্রতিপালক প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকার সময় পৃথিবীর আসমানে নেমে আসেন এবং বলতে থাকেন, কে আছে আমাকে ডাকবে, তাহলে আমি তার ডাকে সাড়া দিব। কে আছে আমার কাছে চাইবে, তবে আমি তাকে দিয়ে দিব। কে আছে আমার কাছে ইস্তিগফার করবে, তবে আমি তাকে মাফ করে দেব। (বুখারি ৫৯৬২, তিরমিযি)

৪. প্রতিদিন সকালে সুরা ফাতিহা, সুরা ইয়াসিন, সুরা সফফাতের তেলাওয়াত করা।

রাতে সুরা জ্বীন, সুরা দুখান, সুরা যিলযাল, ইখলাস, ফালাক, নাস তেলাওয়াত করা।

৫. সুযোগ পেলেই সুরা বাকারা নিজে তেলাওয়াত করবেন বা অডিও শুনবেন নিজের ঘরে একটু উচ্চ সাউন্ডে।

৬. রাতে একা না ঘুমানো, একা একা না থাকা, নির্জনতা পরিহার করা।

 

 

রুকইয়াতে পানি তেল মধু এবং কালোজিরা।

------------------------

বদনজর যাদু ও জ্বিন সংক্রান্ত চিকিৎসায় পানি তেল মধু এবং কালোজিরার ব্যবহারঃ

একটি বোতলে প্রয়োজন মতো পানি (৭দিনের জন্য যে পরিমাণ লাগে), প্রয়োজন মতো তেল, মধু এবং কালোজিরা (৭দিনের জন্য যে পরিমাণ লাগে) এগুলো নিয়ে বসুন এরপর--

-------------------------

(ক)

১. সুরা "সুরা ফাতিহা ৩ বার করে পড়ে বোতলের পানি, তেল, মধু এবং কালোজিরাতে ফুঁ দিন।

২. আয়াতুল কুরসী ৩ বার করে পড়ে বোতলের পানি, তেল, মধু এবং কালোজিরাতে ফুঁ দিন।

৩. সুরা ইখলাস ৩ বার করে পড়ে বোতলের পানি, তেল, মধু এবং কালোজিরাতে ফুঁ দিন।,

৪. সুরা ফালাক ৩ বার করে পড়ে বোতলের পানি, তেল, মধু এবং কালোজিরাতে ফুঁ দিন।

৫. সুরা নাস ৩ বার করে পড়ে বোতলের পানি, তেল, মধু এবং কালোজিরাতে ফুঁ দিন।

৬. দুরুদ শরিফ ৩ বার করে পড়ে বোতলের পানি, তেল, মধু এবং কালোজিরাতে ফুঁ দিন।

(খ)

এরপর নিচের দুয়াগুলো প্রতিটি ৩ বার করে পড়ে বোতলের পানি, তেল, মধু এবং কালোজিরাতে ফুঁ দিন।

১. اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبْ الْبَاسَ اشْفِهِ وَأَنْتَ الشَّافِي لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا (আল্লা-হুম্মা রাব্বান না-ছ, আযহিবিল বা-ছ, ইশফিহি ওয়া আং-তাশ শা-ফী, লা-শিফা-আন ইল্লা-শিফা-উক, শিফা-আল লা-ইউগা-দিরু সাক্বামা-।)

২. بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ اللَّهُ يَشْفِيكَ بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ (বিসমিল্লা-হি আরকীক, মিং কুল্লি শাইয়িই ইউ;'যীক, মিং শাররি কুল্লি নাফছিন আও আইনিন হা-সিদ, আল্লা-হু ইয়াশফীক, বিসমিল্লা-হি আরকীক। )

৩. بِاسْمِ اللَّهِ يُبْرِيكَ وَمِنْ كُلِّ دَاءٍ يَشْفِيكَ وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ وَشَرِّ كُلِّ ذِي عَيْنٍ (বিসমিল্লা-হি ইউবরীক, ওয়া মিং কুল্লি দা-ঈই ইয়াশফীক, ওয়া মিং শাররি হাছিদিন ইযা- হাছাদ, ওয়া শাররি কুল্লি যী "আঈন।)

৪. اسأل الله العظيم، رب العرش العظيم ان يشفيك (আছ আলুল্লাহাল আযীম, রব্বাল আরশিল আযীম, আই ইয়াশ ফি-ক।)

৫. بِسْمِ اللَّهِ بِسْمِ اللَّهِ بِسْمِ اللَّهِ أَعُوذُ بِعِزَّةِ اللَّهِ وَقُدْرَتِهِ مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ (বিছ মিল্লাহ, বিছ মিল্লাহ, বিছ মিল্লাহ, উযু বি ঈঝঝাতিল্লাহি ওয়া ক্কুদরাতিহি মিং শাররি মা- আজিদু ওয়া উহা-যিরু।)

৬. أُعِيْذُكُمْ بِكَلِمَاتِ اللّٰهِ التَّامَّةِ ، مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ (উ ঈযুকুম বিকালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মাহ, মিং কুল্লি শাইত্বা-নিও- ওয়া হা-ম্মাহ, ওয়া মিং কুল্লি আইনিল লা-ম্মাহ।)

(গ)

পানি তেল মধু ও কালোজিরা ব্যবহার করার নিয়মঃ

১.রুকইয়ার জন্য সুরা-আয়াত/দুয়াগুলো পড়ে ফুঁ দেয়া এই পানি, তেল, মধু এবং কালোজিরা যতদিন রুকইয়াহ করতে বলা হবে ততদিন গোসলের পানির সাথে এক বা আধা-গ্লাস করে পানি মিশিয়ে গোসল করবেন প্রতিদিন।

*সকাল-বিকাল দুইবেলা এক বা আধা-গ্লাস পানিতে রুকইয়া'র আয়াত পড়া ৭টি কালোজিরা ও এক চা চামচ মধু মিশিয়ে পান করবেন প্রতিদিন।

*রাতে ঘুমানোর পূর্বে এবং গোসলের পরে রুকইয়া'র আয়াত পড়া তেল সারা শরীরে মালিশ করার। এছাড়া শরীরে কোথাও ব্যাথা থাকলে সেখানে এই তেল মাঝেমাঝে ম্যাসাজ করে দিবেন।

২. রুকইয়ার আয়াত পড়ে ফুঁ দেওয়া পানি, তেল, মধু এবং কালোজিরা যদি শেষ হয়ে যায়, তাহলে আবার এগুলো নিয়ে আগের মত আয়াতগুলো পড়ে তৈরি করে নিতে হবে।

৩. একবার পড়ে নেওয়া পানি, তেল, মধু এবং কালোজিরা সাত দিনের বেশি ব্যবহার না করাই উত্তম, কিছু অবশিষ্ট থাকলে ওগুলোর সাথে আরো পানি, তেল, মধু এবং কালোজিরা মিশিয়ে আগের মত আয়াতগুলো পড়ে তৈরি করে নিলেই হবে।

৪. নিজে শুদ্ধ করে পড়তে না পারলে অন্য কেউ পড়ে ফুঁ দিয়ে দিলেও হবে।

৫. মেয়েদের পিরিয়ডের সময় অন্য কেউ পড়ে দিবে, নিজেরা পড়বে না।

*মেয়েদের পিরিয়ড হলে-

গোছল, পানি, তেল, মধু এবং কালোজিরা অন্য কেউ উপরে বলা সুরা ও দুয়াগুলো পড়ে তৈরি করে দিবে, যদি পড়ে দেওয়ার মতো কেউ না থাকে তাহলে আপনি শুধুমাত্র (খ) নাম্বারে বলা দুয়াগুলো (৬টি দুয়া) কয়েকবার করে পড়ে এগুলো তৈরি করে নিবেন।

[লক্ষনীয়]

*জমজমের পানি হলে সর্বোত্তম, তা নাহলে বৃষ্টির পানি, তা নাহলে পান করার উপযোগি কোনো কুপের (কুয়োর) পানি, অন্যান্য পানি না পাওয়া গেলে সাধারন পান করার উপযোগি যে কোনো পানি হলেও চলবে।

*অলিভ অয়েল সর্বোত্তম, তা নাহলে সরিষার তেল অথবা আপনি যে তেল ব্যবহার করে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। (বিশেষ প্রয়োজনে কালোজিরার তেল)।

* ওরিজিনাল মধু দেখে নিবেন।

* কালোজিরা, আগে পরিষ্কার করে নিবেন৷