Wednesday, December 14, 2011

আংশিক ভুতুরে গল্পঃ‘কুয়ো’ [ Collection of Stories - 11 ]

মামুন তার চাকরিটা ভালোই উপভোগ করে, যদিও প্রতিদিন অনেক ট্রাভেল করতে হয়। গাড়ী থাকার কারণে সেটা অবশ্য উপভোগ্যই হয়। আজ তার রংপুরে থাকার কোন ইচ্ছেই ছিল না। ভেবেছিল বগুড়া থেকে সকাল সকাল রংপুরে পৌঁছুলে বিকেলের মধ্যেই কাজ শেষ করে আবার বগুড়ায় ফিরে আসতে পারবে। কিন্তু রংপুরের ডিষ্ট্রিবিউটর কাশেম সাহেব নাছোড়বান্দা লোক। এদিকে কাজশেষ করতে করতে প্রায় সন্ধ্যা। তাই মামুন কিছুটা অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভদ্রলোকের আতিথ্য নিতে রাজীহল।
কাশেম সাহেবের বাড়ীটা শহরের প্রায় মাঝখানেই, একতলা বেশ বড় দালান। খাওয়া-দাওয়া শেষেগল্প-গুজব করতে করতে কখন রাত ১১টা বেজে গেছে খেয়ালই করেনি কেউ। কাশেম সাহেব মামুনকে তার শোবার ঘর দেখিয়ে দিয়ে ভেতরে চলে গেলেন। মামুন দেরী না করে শুয়ে পড়ল। তাড়াতাড়ি ঘুমান দরকার, সকালে উঠেই বগুড়ায় ফিরতে হবে। কিন্তু ঘুম আর আসছে না; সে কিছুক্ষণ বিছানায় এপাশ-ওপাশ করল। এর মধ্যে কারেণ্ট চলে গেল।
মামুন লক্ষ্য করল বাইরে বেশ ভালোই জ্যোস্না। কারেণ্ট চলে যাওয়ার পর তা স্পষ্ট হল।মাঝে মাঝে মেঘ এসে ঢেকে দিচ্ছে চাঁদকে; একটা আলো-আঁধারির খেলা। সারাদিনের পরিশ্রমে দ্রুতই ঘুম চলে আসার কথা, কিন্তু ঘুমের দেখাই নেই। বেশ গরম পড়েছে, তবে হালকা বাতাস মাঝেমাঝে জানান দিয়ে যাচ্ছে।
জানালা দিয়ে বাইরে তাকালে একটা গোছান বাগান চোখে পড়ল। আগে খেয়াল করেনি। ঘুম না আসায় বিছানায় শুয়ে থাকতে ভালো লাগছিল না। তাই দরজা খুলে সে বাগানে চলে এল। চাঁদের আলোয় একটা অন্যরকম অনুভূতি তাকে ঘিরে ধরল।
হাটছে আর আনমনে অনির কথা ভাবছে সে। হাটতে হাটতে সে বাগানের ঠিক মাঝখানে কুয়োর পাশে বাধানো জায়গাটায় বসল। কুয়োটা অনেক আগের দেখেই বোঝা যায়, তবে নিয়মিত যত্নেরদাগ সুস্পষ্ট। কুয়োর উপর ছাউনিও আছে।
সে একটু অবাক হল। শহরে বাড়ীরপেছনে এই রকম কুয়ো এবং কুয়োরপাড় সচরাচর দেখা যায় না এ সময়। তবে ভদ্রলোকের রুচির প্রসংসা করতেই হল মনে মনে। ছোট-বড় গাছ, কুয়ো সব বেশ সুন্দর পরিকল্পনা মাফিক করাহয়েছে। আলো-আধাঁরির কারণে কোনটা কি গাছ তা বোঝা যাচ্ছেনা। তবে গন্ধরাজ আছে এটা নিশ্চিত। সে চারিদিকে তাকালগন্ধের উৎসের সন্ধানে, কিন্তু চোখে পড়ল না।
মেঘগুলো চাঁদের সাথে খেলেই চলেছে। ছোট শহর তাই এত রাতে তেমন কোন শব্দ বা হট্টগোল নেই। মামুন ভাবল কারেণ্ট না থাকায় একদিক দিয়ে ভালোই হয়েছে। পরিবেশটা বেশ ভালো লাগছে। গাছগুলোয় কেমন অন্ধকার থোকা থোকা জমাট বেঁধে আছে। চাঁদের আলো সেই অন্ধকার দূর করতে পারছে না। বাড়ীগুলো কেমন যেন কোমল মিহি আঁধারের সাথে মিশে দাড়িয়ে আছে।
মামুন উঠে দাড়াল। কুয়োটা তাকে টানছে। অনির কথা মনে হচ্ছে। অনি থাকলে এরই মধ্যে অন্তঃত কয়েকবার কুয়োর ভেতর মুখ দিয়ে নিজেই নিজেকে ডাকত। মেয়েটার মধ্যে কেমন একটা আদুরে ভাব আছে। অনি থাকলে খারাপ হত না।
মামুন কুয়োটার কাছে যেয়ে ভিতরে তাকাল। উপরে ছাউনি থাকায় একদম ঘুটঘুটে অন্ধকার। শরীরটা শিউরে উঠল।আশে পাশের কোমল আঁধারের সাথে এই আঁধারটা একেবারেই বেমানান।
রাত অনেক হয়েছে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই আবার ছুটতে হবে। সে রুমের দিকে পা বাড়াল। কিছুটা এগিয়েই আবার পিছন ফিরে কুয়োটাকে দেখল। কুয়োটাযেন তাকে ডাকছে। যেন একটা কিছু বাকী রয়ে গেল। মামুন দ্বিধাগ্রস্তের মত কুয়োটার দিকে ফিরে তাকাল। তারপর কাছে এসে কুয়োর ভিতরে মুখ রেখে ডাকল ‘অনি’। না, কোন প্রতিধ্বনি হলো না! সে একটু অবাক হল। আর কিছু চিন্তা না করে সে ঘরে এসে শুয়ে পড়ল।
সকালে উঠে তাড়াহুড়ো করে রেডী হয়েই বেরুবার উদ্যোগ করল সে। কিন্তু কাশেম সাহেব এই সাত-সকালেই বিশাল আয়োজন করে বসে আছেন। অগত্যা তাকে বসতেই হল। খেতে খেতে সে বলল,আপনার পেছনের বাগানটা বেশ সুন্দর। কাশেম সাহেব অবাক হয়ে বললেন, আপনি কখন গেলেন সেখানে। মামুন বলল, ঘুম আসছিলো না, তাই রাতে একটু ঘুরে দেখলাম। কুয়োটা বেশ লেগেছে। কিন্তু ওটা মনে হয় বুঁজে গেছে, তাই না? কোন প্রতিধ্বনি হল না!
 

কাশেম সাহেব তার বিস্ময় গোপন করার কোন চেষ্টাই করলেন না। বললেন, আপনি ঠিক কোথাও ভুল করছেন। মামুন বলল,ভুলের কি আছে? কাশেম সাহেব বললেন, বাগানের মাঝে কোন কুয়ো নেই! এবার মামুনের অবাকহবার পালা। কিন্তু আমি নিজে গত রাতে সেখানে বসেছি, উপরে ছাউনিও আছে, মামুন জোর গলায় বলল। আমি শব্দ করে প্রতিধ্বনি শুনতে চেষ্টাও করেছি।
 

কাশেম সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি বেশ আগে এ বাড়ীতে কখনও এসেছেন। দেখুন তো মনে করে। মামুন অবাক বিস্ময়ে বলল, না। বলতে পারেন রংপুরে এবারই প্রথম এলাম! কেন বলুন তো?
কাশেম সাহেব কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, ওখানে এক সময় একটা কুয়ো ছিল বটে, ছাউনিও ছিল ওটার উপর। আগের মালিক সেটা বুঁজিয়ে ফেলেছেন। তার মেয়েটা কুয়োয় পড়ে মারা গিয়েছিল। এরপরই তিনি বাড়ী বিক্রি করে চলে যান।
••••••••••••••••••••••••••••••••একটু ভয় লাগলেও লাইক বাটনে ক্লিক 
 
গল্পটি নেয়া :   https://www.facebook.com/Golpo143/posts/215537208521511

আমার জীবনে ঘটে যাওয়া ভুতুরে গল্প [ Collection of Stories - 10 ]

••••••••••••••••••••••••••••••••এটি একটি সত্যি ঘটনা যা বছরচারেক আগে আমার সাথে ঘটেছিলো।। সে রাতে আমি আমার গ্রামের বাড়ি চট্রগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশে ফিরছিলাম।। প্রায় ঘণ্টা তিনেক একটানাগাড়ি চালিয়ে কিছুটা ক্লান্ত ছিলাম।। কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটার চিন্তায় একমুহূর্তের জন্যও অসতর্ক হই নি।। 
 
রাত তখন প্রায় ২ টার মতো বাজে।।এতো রাতে ঢাকায় ফেরার মূল কারণ হল, তারপরের দিন সকাল ১০ টায় আমার অফিসে একটা জরুরী মিটিং আছে।। যাই হোক,আসার পথে খাজা বাবার মাজার নামে একটা জায়গা পড়ে।। সেই জায়গা নিয়ে অনেক কুসংস্কাররয়েছে, যে সেখানে নাকি প্রচুর পরিমাণ দুর্ঘটনা ঘটে।। চালক প্রায়ই গাড়ির ব্যাল্যান্ স হারিয়ে ফেলে,অথবা ব্রেক জ্যাম হয়ে যায় ইত্যাদি ইত্যাদি।। রাস্তা মোটামুটি ফাঁকা ছিল।। শুধুমাত্র রাস্তায় কিছু ট্রাক আর গুটিকয়েক প্রাইভেট কার।। আমি আনুমানিক ৭০-৮০ কিমি বেগে গাড়ি ছুটাচ্ছিলা ম।। রাস্তার উপর তীক্ষ্ণ নজর।।হটাত একটা মোড় ঘোরার সময় আচমকা দেখলাম একটা লোক রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে আছে।। লোকটার পড়নে একটা ছেড়া ফাটা হাফ প্যান্ট।। গায়ে কোনো কাপড়নেই।। মুখে জঙ্গলের মতো দাড়ি।। চোখগুলো আলো পড়ে ঝিকঝিক করছে।। হলদে দাঁতগুলো দেখে অন্য সময় হয়তো ঘেন্না লাগতো।। কিছুক্ষণের মধ্যে আমার গাড়ি তার গায়ে আঘাত করবে অথচ মুখে হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছে আমার গাড়ির দিকে।। ক্ষণিকের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলাম।। ব্রেকচেপে ধরবো যে, সেই চিন্তাওতখন মাথায় আসছিলো না।। সত্যি করে বলতে গেলে, যেই স্পীডে গাড়ি চালাচ্ছিলা ম,সেই স্পীডে ব্রেক করলেও তা ঐ লোকটাকে সজোরে ধাক্কা দিবে।। নিজেকে ফিরে পেলাম হটাত।। প্রানপ্রনে ব্রেক চেপে ধরলাম।। কিন্তু শেষ রক্ষাহলো না।। গাড়িটি হেঁচড়ে যেতে লাগলো লোকটির দিকে!! একদম শেষ মুহূর্তে চোখটা আপনাআপনি বন্ধ হয়ে গেলো।।আশা করছিলাম, গগন বিদারি কোনো চিৎকার শুনবো, কিন্তু অবাক করে দিয়ে কানে এলো কেউ যেনও পাগলের মতো হেসে উঠলো।। আমার গাড়ি লোকটাকে বেধ করে চলে গেলো।। বেধ করে বলছি কারন, আঘাতের কোনো শব্দ আমি পাই নি।। যাই হোক, সজোরে ব্রেক চাপায় গাড়িটি ২০-২৫ মিটার সামনেগিয়ে থেমে গেলো।। দ্রুত দরজা খুলে বের হলাম।। আশ্চর্য, এতক্ষণ রাস্তায় অনেক গাড়িকেই সাইডকাটিয়েছি।। অনেক গাড়িই আমাকে পাশ করে সামনে এসেছে,কিন্তু এই মুহূর্তে যতদূর দৃষ্টি যায় কোনো গাড়ি দেখতে পাচ্ছি না।। যাই হোক,এতো কিছু ভাবার মতো শক্তি তখনছিল না।। প্রায় দৌড়ে সেই জায়গায় এলাম যেখানে লোকটিকে দেখতে পেয়েছিলাম। । কিন্তু, এসে কাউকে দেখলামনা।। ভাবলামধাক্কা খেয়ে হয়তো ছিটকে দূরে গিয়ে পড়েছে।। প্রায় মিনিট দশেক আঁতিপাঁতি করেখুজলাম।। কিছুই দেখলাম না।। আমাকে আরো অবাক করে দিয়ে রাস্তাটা নির্জনই রইলো।। একটা গাড়ি দেখলাম না।। একরকম অমানুষিক কষ্ট উপলদ্ধি করলাম মনের ভেতর।।একটা মানুষকে মেরেফেলেছি!! সে রাতে বহু কষ্টে গাড়ি চালিয়ে বাসায় ফিরেছিলাম। ।অফিসের মিটিংটা জয়েন করে এরপর একসপ্তাহের ছুটি নেই।। আমার ঢাকার বাসায় আমি এবং আমার ওয়াইফ থাকতাম।। তাকে কিছু বলিনি।। পাছে, ভয় পায় বা আমাকে খারাপ ভাবে।। আমার আচার আচরণ দেখে আমারওয়াইফের মনে সন্দেহ দানা বাঁধতে লাগলো।। এদিকে আমি মোটামুটি শপথ করেছি যে তাকে কিছু বলবো না।। যাই হোক, আমার ওয়াইফের পিড়াপীড়িতে পড়ে অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম আবার দেশের বাড়িতে যাবো।। সেদিন সকালেই আবারো চট্রগ্রামে রউদ্দেশে রওনা হই আমরা।। এবার আমার বউ ছিল সাথে।। দেশের বাড়িতে আমরা ২দিন ছিলাম।। হটাত একদিন বিকেলে ফোন এলো অফিস থেকে।। কিছু বিদেশী ক্লায়েন্ট এসেছে।। আমার উপস্থিতি খুব করে দরকার।।আমার ছুটির তখনো ২দিন বাকি।। তাই প্রথমে আমার বউ খুব করে আপত্তি জানালো।। কিন্তু, তাকে বুঝিয়ে বলতে সে মেনে নিলো।। বুঝতে এবং বুঝাতে ভালোই সময় ব্যায় হলো।। সেদিন রাত ১১টার দিকে পুনরায় ঢাকার উদ্দেশে রওনাহই আমরা।। এদিন আমি গাড়ি খুব ধীরে চালাচ্ছিলা ম।। স্পীড কোনো অবস্থাতেই ৪০-৫০ এর বেশি উঠাচ্ছিলাম না।। আমিগাড়ি চালাচ্ছি।। আমার বউ পাশে বসে গান শুনছে।। আস্তে আস্তে আবারো সেই রাস্তায় চলে এলাম, যেখানে গতদিন এক্সসিডেন্ টটা করেছিলাম!! খারাপ লাগা ভাবটা ফিরে এলো আবার।। রাস্তার উপর তীক্ষ্ণ নজর রাখছি।। হটাত আমাকে চমকে দিয়ে রাস্তার ঠিক ঐখানটায় আজকেও ঐ লোকটিকে দেখতে পেলাম।। সাথে সাথে আমার বউকে ধাক্কা দিয়ে বললাম, সে কি কিছু দেখতে পাচ্ছে কিনা!! গান শুনতে থাকলেও তার চোখ খোলা ছিল।। আমি ধাক্কা দিতেই কান থেকে হেডফোন নামিয়ে বলল, “আশ্চর্য!! এই লোক হটাত করেকোত্থেকে উদয় হলো!!” আমার আর প্রশ্ন করা লাগলোনা।। যা জিজ্ঞেস করতে নিয়েছিলামতার উত্তর এমনিতেই পেয়ে গেলাম।। ব্রেক করে গাড়ি থামালাম।। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, গাড়ি থামানোর সাথে সাথে লোকটা যেনো হাওয়ায় মিলিয়েগেলো।। আমার বউয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও নিজেও ব্যাপারটা ধরতে পেরেছে।। ভয় সতন্ত্র গলায় বলল, “লোকটা কোনদিকে গেলো??” আমার কাছে কোনো উত্তর ছিলনা।। শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম খোলা রাস্তার দিকে।
 
গল্পটি নেয়া :   https://www.facebook.com/Golpo143/posts/215595451849020

• •।। চার বছরের একটি শিশুর করা প্রতিজ্ঞা এবং তার অকৃত্রিমভালোবাসা ।।•• [ Collection of Stories - 09 ]

স্কুল - কলেজের পাঠ চুকিয়েছি তাও অনেক দিন হল। স্কুল জীবনের ব্যাপ্তিটি বিশাল। স্কুলজীবনের কমপক্ষে দশটি বছর পার করেই আমরা সবাই এগিয়ে যায় আগামীর পথে। আর আমার মত যারা নার্সারী - কেজি পড়েছেন , তাদের তো আরো দুই বছরের অভিজ্ঞতা আছে। ধারালো স্মরণশক্তি যাদের আছে, তারা সেই দিনগুলোর স্মরণীয় ঘটনাগুলোকে আজও স্মরণ করতে পারে। স্মৃতি কখনো আমাদের হাসায়, কখনও বা কাঁদায়। এই নিয়ে আমাদের পথচলা। এখন যা বর্তমান, একটু পর তাই অতীত এবং তা চলে যায় স্মৃতির মণিকোঠায়।
ছোটবেলার অনেক স্মৃতি আছে আমার। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি স্মৃতি আছে, যা আমাকে মাঝে মাঝে হাসায়, ভালো লাগায়।
আমি তখন স্কুলে পড়ি। এস,এস,সি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে খুব ব্যস্ত ছিলাম আমি। কোচিং করতে যেয়ে নিজের জন্য আর সময় হচ্ছিল না। আমার নিচের তলায় একটি ছোট বাচ্চা এসেছিল। বয়স আনুমানিক চার কি সাড়ে চার হবে। এত মায়াবী চেহারা, দেখলেই মায়া লাগে। ওর মাকে আমি ডাকতাম ‘আপু’ বলে। তাহলে আমি ওর সম্পর্কে ‘খালামণি’ হবার কথা ছিল। কিন্তু বাবুটা কি মনে করে আমাকে ‘আপু’ বলে ডাকতো।
বাবুটার নাম ছিল ‘অংকন’। যখন কোচিং-এ যাবার জন্য তড়িঘড়ি করে বের হতাম তখন বাবুটার সাথে আমার দেখা হত।আমার দরজা খোলার শব্দ পেলেই দৌঁড়ে আসতো। নিষ্পাপ  হাসি দিয়ে বলতো, ‘কেমন আছো, প্রীতি আপু?’ । ‘ ভালো আছি অংকন। তুমি ভালো আছো?’ - এই বলেই আমাকে ছুটতে হত আমার প্রয়োজনে। কোচিং থেকে বাসায় যখন ফিরতাম তখন বাবুটার সাথে আমার দেখা হত।তখন ওর সাথে কমপক্ষে পাঁচ -দশ মিনিট করে কথা হত। বাবুটার সাথে কথা বলতে আমার খুব ভালোলাগতো। কত মিষ্টি করে ‘আপু’ বলে ডাকতো। ছোট মানুষের কত কল্পনা, কত যে কথা, সকল জানার সীমাহীন আগ্রহ।
“ আপু, আকাশ কেন নীল?’’ – ‘আকাশ কাঁদে কেন?’ – ‘পড়াশোনা করলে কি হয়?’ – ‘আকাশ কত উঁচু?’ – ‘আমি কবে আকাশ ছুঁতে পারবো?’...ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের প্রশ্ন ছিল তার। একটার পর একটা উত্তর দিতে দিতে মাঝে মাঝে আমি ক্লান্ত হয়ে যেতাম। আপুকে একদিন বলেছিলাম, ‘আপু,অংকন-এর তো অনেক বুদ্ধি। জীবনে অনেক বড়মাপের মানুষ হবে। শুধু ওর জন্য এখন দরকারএকটু বাড়তি মনোযোগ।’
এমনি করে আমার এস,এস,সি পরীক্ষা শেষ হয়ে গেল। তখন দু-তিন দিন তো ছিল অফুরন্ত সময়। শুধু ঘুম, ঘুম আর ঘুম। তৃতীয় দিন থেকে শিক্ষকদের কাছে পড়ার জন্য উচ্চ মাধ্যমিকের বই নিয়ে তৈরী হওয়া। বান্ধবীরা সবাই এক সাথে অনেক পরিকল্পনা হল। কোথায় কোথায় বেড়াতে যাব তা ঠিক হল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমাদের যাওয়া হয়নি। পরিকল্পনার বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি অনেক কারণেই। এরমধ্যে আপু আর অংকন মণি দাদুবাড়ি গেছে। প্রায় সাতদিন পর বাসায় এসেছিল ওরা। এসেই আমাকে ডাক দিচ্ছিল, “প্রীতি আপু, প্রীতি আপু, কতদিন তোমাকে দেখি না। একটু নিচে এস না প্লিজ”। কথাগুলো শুনে অনেক বড় মানুষের কথার মত লাগছিল আমার কছে। ছোট্ট একটা বাবু এত গুছিয়ে কিভাবে যে কথা বলতো, ভাবতেই খুব অবাক লাগে।
পরীক্ষা শেষ হবার পর বাড়িতেযেতে হল। যাবার সময় দেখেছিলাম ছোট্ট অংকন মণির চোঁখে জল। কান্নার কারণ জিজ্ঞাস করতেই বলেছিল, “তুমি তাড়াতাড়ি চলে আসবে প্রীতি আপু”। তাড়াতাড়ি ফিরেআসার কথা দিয়ে বাসের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলাম।
প্রায় দশদিন পর এসে দেখেছিলাম, অংকন মণির খুব জ্বর। এর মধ্যেও সে আমাকে দেখে খুব আনন্দিত হয়েছিল। সে বলেছিল, ‘প্রীতি আপু, তোমাকে খুব মিস করেছি। তোমাকে আমি সবসময় খুঁজেছি। আর কোথাও যাবে না, কথা দাও’।
আসতে না আসতেই পড়ার চাপ বেড়েগিয়েছিল। পড়া, পরীক্ষা -- এভাবেই চলছিল দিনগুলো। বাসায় ফেরার পথে অংকন মণির সাথে দেখা হত। বরাবরের মত তার ছোট্ট মনে কথাগুলো আমাকে বলতো। এই বাবুটার সাথে কথা বলতে আমার খুব ভালো লাগতো তখন। ওর সাথে প্রতিদিন কথা বলাটাও আমার রুটিনের আওতায় এসে গিয়েছিল।বাসায় ফেরার সময় ওকে না দেখলে নিজেও কয়েকদিন বাবুটার বাসার কলবেল দিয়েছি। ও তখন মিষ্টি করে বলতো, ‘ ভাগ্যিস তুমি আমাকে ডেকেছো, নয়তো তোমার সাথে তো আজ আমার দেখাও হত না’।
দেখতে দেখতে আরও একটি বছর কেটে গেল। একদিন আমি আর আমারএক বান্ধবী আমাদের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এমন সময় অংকন মণি ওদের বাগান থেকে আমার জন্য একটি লাল গোলাপ ছিঁড়ে নিয়ে এসেছিল। আমার হাতে দিতেই আমার বান্ধবী তার নিজের জন্য বাবুটার কাছে আর একটি ফুল চেয়েছিল। বাবুটি বললো “আমি তো প্রীতি আপুকে ভালোবাসি, তাই ফুল দিয়েছি। তোমাকে তো আমি ভালোবাসি না”। এমন উত্তর শুনে আমার বান্ধবী অবাক হয়ে গিয়েছিল।
হঠাৎ করে আমাদের বাসা পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। নতুন বাসায় যাবার দিন যখন খুব নিকটে ছিল, তখন অংকন মণি একদিন আমাকে বলেছিল না যাবার জন্য। আরেকদিন বলেছিল, “প্রীতি আপু, তুমি যদি নতুন বাড়িতে যাও তবে আমি আর তোমারসাথে কথা বলবো না ”। আমার তখন কিছুই করার ছিল না। বাসা আমাদের পরিবর্তন করতেই হয়েছে। আমিও খুব কষ্ট পেয়েছিলাম বাবুটার জন্য। আমরা যখন চলে আসছিলাম তখন বাবুটার চোঁখ বেয়ে জল গাল গড়িয়ে পড়ছিল। আমি নিজেও সেদিন চোঁখের জল ধরে রাখতে পারিনি ।
 

আজ বাবুটার সাথে আমার দেখা হয়েছিল। সে এখন বেশ বড় হয়েছে। তবে আমার কাছে সেই ছোট্ট বাবুটিই আছে অংকন। আমাকে চিনতে পেরেছে কিনা জানতে চাওয়ায় সে অভিমানমুখে খালি ঘাড় কাত করে হ্যাঁ বোধক উত্তর দিল। সে আমার সাথে একটি কথাও বললো না। সেগুলো প্রশ্ন করলাম তার সবগুলোই সে ঘাড় নেড়ে উত্তর দিল। জানতে পারলাম তার সেদিনের প্রতিজ্ঞার কথা মনে আছে। আমি বাসা পরিবর্তন করেছি বলে সে আমার সাথে কথা বললো না।
অনেকগুলো দিন চলে গেছে। তবুও এই ছোট্ট শিশুটি তার প্রতিজ্ঞার কথা ভোলেনি। শিশুরা নিষ্পাপ, তাদের মনজুড়ে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। কচি মনে কত ভাবনার আনাগোনা, কানামাছি খেলা। ছোট্ট বাবুদের মায়ার টান খুব গভীর, এদের ভালোবাসা সদ্য ফুটন্ত ফুলের মত। বাগানে ফোটা ফুল আর ওদের মনের ভাবনা গুলো একইরকম।
 
গল্পটি নেয়া :   https://www.facebook.com/Golpo143/posts/215852461823319

অনুগল্প [ Collection of Stories - 08 ]

••••••••• •••••••••••••••
বয়স মাত্র দশ বছর। সদ্য কারামুক্ত মাকে দেখতে আকুলবলিভিয়ান এই বালক কোচাবাম্বায় যাওয়ার উদ্দেশে গোপনে খনিজ পদার্থবাহী একটি ট্রাকে চড়ে বসে। কিন্তু কে জানত, এই ট্রাক তাকে নিয়ে যাবে ভিন দেশে। মাকে দেখতে কোচাবাম্বায় যেতে বলিভিয়ার অরুরো শহর থেকে ট্রকে উঠেছিল ফ্রাঙ্কলিন ভিলসা।
তিন দিন তিন রাত এক ফোটা পানি, খাবার না খেয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে তিন হাজার মিটার উচু র্দূগম আন্দিজ পর্বত পাড়ি দিয়ে ফ্রাঙ্কলিন যখন নামে, তখন আরেক দেশ, চিলি। এ সময় সে পাড়ি দিয়েছে ৫০০ কিলোমিটার র্দূগম পাহাড়ি পথ। ক্ষুধা তৃষ্ণায় কাতর ফ্রাঙ্কলিন চিলির রাজধানী সান্তিয়াগো থেকে এক হাজার১০০ মাইল উত্তরে ইকুইকিউয়ের আলতো হোস পিসিও শহরের রাস্তায় নেমেহতবিহবল। কী করবে বুঝতে পারছে না।
পরে ইকুইকিউ কর্তৃপক্ষ শিশুটিকে স্থানীয় একটি পরিবারের সঙ্গে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। পরিবারের কর্তী মার্গারিতা ফ্লরস শিশুটিকে নেওয়ার আগে প্রচার মাধ্যমগুলোকে বলেন,"আমি একজন মা এবং হতে পারে, শিশুটির মা দূর্দশা ভোগ করছেন।
 

চিলির টিভিএনকে ফ্রাঙ্কলিন বলেছে, "আমি আর কিছুই চাইনি। শুধু মাকে দেখতে চেয়েছিলাম।" শিশুটির এই আকুতি কড়ানাড়া দিয়ে গেছে দুই দেশের মানুষের হৃদয়কে। দুই দেশের কর্তৃপক্ষই মা ও ছেলের মিলন ঘটাতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছে।ফ্রাঙ্কলিনের মায়ের দেশ ত্যাগের ওপর নিষেধাঙ্ঘা আছে। তই ছেলেটিকেই ফিরিয়ে নিতে ইতিমধ্যো চিলি গেছেন বিলিভিয়ার কর্মকর্তা। চিলির এটিবি টেলিভিশন নেটওর্য়াকের মাধ্যমে মা ওছেলের মধ্যো কথা বলা ও পর্দায় দুজনের দেখার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। ছেলে মা'কে বলছিল,"আমি তোমাকে দেখতে চাই। আমি কেবল কাচাবাম্বায় যেতে চেয়েছিলাম। তুমি দ্রুত এসে আমাকে নিয়ে যাও মা।" কাদতে কাদতে মা বললেন,"আমি কারাগারে ছিলাম। এখন আমি মুক্ত।আর আমি তোমাকে তোমার বাবা বা ভাইদের কাছে রেখে কোথাও যাবো না। তুমি আমার কাছেই থাকবে।
(সত্য ঘটনা)••••••••• •••••••••••••••
 
গল্পটি নেয়া :  https://www.facebook.com/Golpo143

Tuesday, December 13, 2011

"অনন্ত প্রেমগাঁথা" Collection of Stories - 07

"অনন্ত প্রেমগাঁথা"

তোমার মনে আছে অনন্ত, দীর্ঘ ১৫ টি বছর পর যেদিন তোমার খোঁজ পেলেম আমি ...!
ফোন কল টা অবশ্য তুমিই করেছিলে.........
কার থেকে যে আমার নাম্বার টা নিয়েছিলে আনন্দের অতিশজ্জে টা জানাই হয়নি...... তুমি
বলেছিলে, শিমুল__ আমায় তোমার বাসায় নিবে,আমি তোমার সংসার করা দেখবো ।।
কি ভাবে তুমি ঘর শাজিয়েছ, কি ভাবে তুমি রান্না কর, র কি ভাবেই বা তুমি তোমার ওই বাবু টাকে সামলাও আমি দেখবো শিমুল, আমায় দেখাবে না........................?
আমি বলেছিলেম চলে এসো আমার ছোট্ট পুতুল খেলার মতো বাবুই পাখির সম বাসাটিতে ।।
ভীষণ আনন্দ হচ্ছিলো তুমি নিজে থেকেই আসতে চাইছিলে বলে ...... ভেতরে এক অস্থির
চঞ্চলতা অনুভব ক্করছিলেম...... কি জানি আবার না মত পালটিয়ে ফেল......!!!
কথা হবার দুদিন পর তুমি জানালে, তুমি আজ আসবে; আমি তোমায় আমার বাসার ঠিকানা লোকেশন সব ঠিক মতো বুঝিয়ে বললেম, তুমি বুঝলেও ; আমার বাবুর বাবা কেও বলে রেখেছিলেম যে তুমি আমার বাসায় আসতে চেয়েছ ......
কিন্তু বাসার একটু অদূরে এসে কল করে জানালে তোমায় এগিয়ে আনতে হবে, তুমি নাকি
সব তালগোল পাকিয়ে ফেলেছ .........
এত্ত বছর পরও এক নজরেই চিনেছিলেম তোমায়.................................।

তোমায় নিয়ে ফেরার পথে জানিনে কোথা হতে এক পশলা বৃষ্টি তোমায় আমায় ভিজিয়ে দিয়ে
গেলো ......
অনেকটা সময় ছিলে তুমি, ঘণ্টা দুয়েক .........
তারপর আর এক দিন এসে ছিলে তুমি, সেদিনও তোমায় এগিয়ে আনতে হয় র মনে আছে,
অনন্ত__ সে দিনও বৃষ্টি আমাদের ভিজিয়ে দিয়েছিলো ।।
তুমি জানাতে এসে ছিলে তুমি এই শহর ছেড়ে চলে জাচ্ছ, আর আমি শুধালেম পালাচ্ছ ...???
তুমি বললে এক শহরে থেকে শিমুল, তোমায় ছেঁড়ে, তোমায় না দেখে আমি যে থাকতে পারবোনা ... তার চেয়ে সেই ভাল দূরে থাকা .........।
হটাৎ কোথায় যেন শুন্যতা অনুভব করলেম একটুখানি ......
অনন্ত__ আজো বৃষ্টি হয়, কিন্তু কাউকে আর এগিয়ে আনতে হয়না ......
অনন্ত__ আজো আমি ঘর সাজাই কিন্তু কেউ দেখতে আসেনা !!!
অনন্ত__ সেই যে গেলে অনন্তেরই পথ ধরে আর একটি বারের
তরে ফিরলেনা ___!!!
 
 
 
Written by : Simi Reaj
গল্পটি নেয়া :  https://www.facebook.com/Golpo143