আংশিক ভুতুরে গল্পঃ‘কুয়ো’ [ Collection of Stories - 11 ]
মামুন
তার চাকরিটা ভালোই উপভোগ করে, যদিও প্রতিদিন অনেক ট্রাভেল করতে হয়। গাড়ী
থাকার কারণে সেটা অবশ্য উপভোগ্যই হয়। আজ তার রংপুরে থাকার কোন ইচ্ছেই ছিল
না। ভেবেছিল বগুড়া থেকে সকাল সকাল রংপুরে পৌঁছুলে বিকেলের মধ্যেই কাজ শেষ
করে আবার বগুড়ায় ফিরে আসতে পারবে। কিন্তু রংপুরের ডিষ্ট্রিবিউটর কাশেম
সাহেব নাছোড়বান্দা লোক। এদিকে কাজশেষ করতে করতে প্রায় সন্ধ্যা। তাই মামুন
কিছুটা অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভদ্রলোকের আতিথ্য নিতে রাজীহল।
কাশেম সাহেবের
বাড়ীটা শহরের প্রায় মাঝখানেই, একতলা বেশ বড় দালান। খাওয়া-দাওয়া
শেষেগল্প-গুজব করতে করতে কখন রাত ১১টা বেজে গেছে খেয়ালই করেনি কেউ। কাশেম
সাহেব মামুনকে তার শোবার ঘর দেখিয়ে দিয়ে ভেতরে চলে গেলেন। মামুন দেরী না
করে শুয়ে পড়ল। তাড়াতাড়ি ঘুমান দরকার, সকালে উঠেই বগুড়ায় ফিরতে হবে। কিন্তু
ঘুম আর আসছে না; সে কিছুক্ষণ বিছানায় এপাশ-ওপাশ করল। এর মধ্যে কারেণ্ট চলে
গেল।
মামুন লক্ষ্য করল বাইরে বেশ ভালোই জ্যোস্না। কারেণ্ট চলে যাওয়ার
পর তা স্পষ্ট হল।মাঝে মাঝে মেঘ এসে ঢেকে দিচ্ছে চাঁদকে; একটা আলো-আঁধারির
খেলা। সারাদিনের পরিশ্রমে দ্রুতই ঘুম চলে আসার কথা, কিন্তু ঘুমের দেখাই
নেই। বেশ গরম পড়েছে, তবে হালকা বাতাস মাঝেমাঝে জানান দিয়ে যাচ্ছে।
জানালা দিয়ে বাইরে তাকালে একটা গোছান বাগান চোখে পড়ল। আগে খেয়াল করেনি। ঘুম
না আসায় বিছানায় শুয়ে থাকতে ভালো লাগছিল না। তাই দরজা খুলে সে বাগানে চলে
এল। চাঁদের আলোয় একটা অন্যরকম অনুভূতি তাকে ঘিরে ধরল।
হাটছে আর আনমনে
অনির কথা ভাবছে সে। হাটতে হাটতে সে বাগানের ঠিক মাঝখানে কুয়োর পাশে বাধানো
জায়গাটায় বসল। কুয়োটা অনেক আগের দেখেই বোঝা যায়, তবে নিয়মিত যত্নেরদাগ
সুস্পষ্ট। কুয়োর উপর ছাউনিও আছে।
সে একটু অবাক হল। শহরে বাড়ীরপেছনে এই
রকম কুয়ো এবং কুয়োরপাড় সচরাচর দেখা যায় না এ সময়। তবে ভদ্রলোকের রুচির
প্রসংসা করতেই হল মনে মনে। ছোট-বড় গাছ, কুয়ো সব বেশ সুন্দর পরিকল্পনা মাফিক
করাহয়েছে। আলো-আধাঁরির কারণে কোনটা কি গাছ তা বোঝা যাচ্ছেনা। তবে গন্ধরাজ
আছে এটা নিশ্চিত। সে চারিদিকে তাকালগন্ধের উৎসের সন্ধানে, কিন্তু চোখে পড়ল
না।
মেঘগুলো চাঁদের সাথে খেলেই চলেছে। ছোট শহর তাই এত রাতে তেমন কোন
শব্দ বা হট্টগোল নেই। মামুন ভাবল কারেণ্ট না থাকায় একদিক দিয়ে ভালোই হয়েছে।
পরিবেশটা বেশ ভালো লাগছে। গাছগুলোয় কেমন অন্ধকার থোকা থোকা জমাট বেঁধে
আছে। চাঁদের আলো সেই অন্ধকার দূর করতে পারছে না। বাড়ীগুলো কেমন যেন কোমল
মিহি আঁধারের সাথে মিশে দাড়িয়ে আছে।
মামুন উঠে দাড়াল। কুয়োটা তাকে
টানছে। অনির কথা মনে হচ্ছে। অনি থাকলে এরই মধ্যে অন্তঃত কয়েকবার কুয়োর ভেতর
মুখ দিয়ে নিজেই নিজেকে ডাকত। মেয়েটার মধ্যে কেমন একটা আদুরে ভাব আছে। অনি
থাকলে খারাপ হত না।
মামুন কুয়োটার কাছে যেয়ে ভিতরে তাকাল। উপরে ছাউনি
থাকায় একদম ঘুটঘুটে অন্ধকার। শরীরটা শিউরে উঠল।আশে পাশের কোমল আঁধারের সাথে
এই আঁধারটা একেবারেই বেমানান।
রাত অনেক হয়েছে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই
আবার ছুটতে হবে। সে রুমের দিকে পা বাড়াল। কিছুটা এগিয়েই আবার পিছন ফিরে
কুয়োটাকে দেখল। কুয়োটাযেন তাকে ডাকছে। যেন একটা কিছু বাকী রয়ে গেল। মামুন
দ্বিধাগ্রস্তের মত কুয়োটার দিকে ফিরে তাকাল। তারপর কাছে এসে কুয়োর ভিতরে
মুখ রেখে ডাকল ‘অনি’। না, কোন প্রতিধ্বনি হলো না! সে একটু অবাক হল। আর কিছু
চিন্তা না করে সে ঘরে এসে শুয়ে পড়ল।
সকালে উঠে তাড়াহুড়ো করে রেডী হয়েই
বেরুবার উদ্যোগ করল সে। কিন্তু কাশেম সাহেব এই সাত-সকালেই বিশাল আয়োজন করে
বসে আছেন। অগত্যা তাকে বসতেই হল। খেতে খেতে সে বলল,আপনার পেছনের বাগানটা
বেশ সুন্দর। কাশেম সাহেব অবাক হয়ে বললেন, আপনি কখন গেলেন সেখানে। মামুন
বলল, ঘুম আসছিলো না, তাই রাতে একটু ঘুরে দেখলাম। কুয়োটা বেশ লেগেছে। কিন্তু
ওটা মনে হয় বুঁজে গেছে, তাই না? কোন প্রতিধ্বনি হল না!
কাশেম সাহেব
তার বিস্ময় গোপন করার কোন চেষ্টাই করলেন না। বললেন, আপনি ঠিক কোথাও ভুল
করছেন। মামুন বলল,ভুলের কি আছে? কাশেম সাহেব বললেন, বাগানের মাঝে কোন কুয়ো
নেই! এবার মামুনের অবাকহবার পালা। কিন্তু আমি নিজে গত রাতে সেখানে বসেছি,
উপরে ছাউনিও আছে, মামুন জোর গলায় বলল। আমি শব্দ করে প্রতিধ্বনি শুনতে
চেষ্টাও করেছি।
কাশেম সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি বেশ আগে এ বাড়ীতে
কখনও এসেছেন। দেখুন তো মনে করে। মামুন অবাক বিস্ময়ে বলল, না। বলতে পারেন
রংপুরে এবারই প্রথম এলাম! কেন বলুন তো?
কাশেম সাহেব কিছুক্ষণ চুপ থেকে
বললেন, ওখানে এক সময় একটা কুয়ো ছিল বটে, ছাউনিও ছিল ওটার উপর। আগের মালিক
সেটা বুঁজিয়ে ফেলেছেন। তার মেয়েটা কুয়োয় পড়ে মারা গিয়েছিল। এরপরই তিনি বাড়ী
বিক্রি করে চলে যান।
••••••••••••••••••••••••••••••••একটু ভয় লাগলেও লাইক বাটনে ক্লিক
গল্পটি নেয়া : https://www.facebook.com/Golpo143/posts/215537208521511
No comments:
Post a Comment