Thursday, June 24, 2021

৬৪. ছেলেটিকে তার বাবা-মার পক্ষ থেকে বিয়ে বিলম্ব করতে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে অথচ... Marriage education series

 No photo description available.

ছেলেটিকে তার বাবা-মার পক্ষ থেকে বিয়ে বিলম্ব করতে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে অথচ...
▬▬▬▬◢◯◣▬▬▬▬
প্রশ্ন: আমার এক দীনি বন্ধুর বিয়ে করা খুবই প্রয়োজন। কিন্তু তার ফ্যামিলি তাকে বিভিন্ন কথা বলে আরও অপেক্ষা করতে বলে। এখন তার করণীয় কি?
উত্তর:
কোন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি যদি বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে (দৈহিক ও আর্থিক) এবং বিয়ে না করলে অবৈধ যৌনাচার বা হারাম কর্মে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করে তাহলে তার বাবা-মা, পরিবার, লেখাপড়া, ক্যারিয়ার গঠন, চাকরি ইত্যাদি ওজুহাতে বিয়ে বিলম্ব করা জায়েজ নাই। বরং হারাম থেকে বাঁচতে এবং চরিত্রকে সংরক্ষণ করতে অনতিবিলম্বে তার জন্য বিয়ে করা ফরজ।
 
পক্ষান্তরে যদি দৈহিক সামর্থ্য থাকে কিন্তু আর্থিক অবস্থা এত খারাপ হয় যে, এ মূহুর্তে স্ত্রীর ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করতে অক্ষম তাহলে তার জন্য করণীয় হল, রোজা রাখা। কেননা, রোজার মাধ্যমে মানুষের জৈবিক চাহিদা অবদমিত থাকে।
 
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
 
يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ، مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ، فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ، وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ، وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ؛ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ.
 
“হে যুব সম্প্রদায়, তোমাদের মধ্যে যার সামর্থ্য আছে, সে যেন বিয়ে করে নেয়। কেননা বিয়ে চোখকে নিচু রাখতে এবং লজ্জা স্থানকে সংযত করতে সব চেয়ে বেশি সহায়ক। আর যার সামর্থ্য নেই, সে যেন সওম (রোজা) পালন করে। কেননা তা প্রবৃত্তিকে দমন করে।” [বুখারী ১৯০৫, ৫০৬৫ ও মুসলিম ১৪০০].
 
উল্লেখ্য যে, ইসলামে কোন পুরুষের জন্য বিয়ের ক্ষেত্রে পিতা-মাতার সম্মতি নেয়াকে আবশ্যক করা হয় নি। 
 
সুতরাং বাবা-মা যদি তার বিয়ে দিতে রাজি হয় তাহলে তো ভালো কিন্তু যদি তারা বিয়ে দিতে রাজি না হয় তাহলে নিজের ঈমান, আখলাক ও ইজ্জত হেফাজতের স্বার্থে সে নিজে নিজে কোন মেয়েকে তার বাবা বা অভিভাবকের সম্মতি ক্রমে বিয়ে করে ঘর-সংসার শুরু করতে পারে। 
 
এতে বাবা-মা যদি তার উপর রাগ করে বা বদ দু্আ করে তাহলে তাতে সন্তান গুনাহগার হবে না এবং উক্ত বদদুআ আল্লাহর নিকট কার্যকর হবে না। কারণ সে আল্লাহর বিধান মেনে বিয়ে করেছে।
 
বরং এ ক্ষেত্রে পিতা-মাতা যদি বাধা দেয়, রাগ, গালাগালি বা বদদুআ করে তাহলে তারা গুনাহগার হবে। কারণ তারা এ ক্ষেত্রে অন্যায় করেছে; সন্তান নয়।
 
তবে পিতা-মাতাকে রাজি-খুশি করে বিয়ে করা উত্তম তাতে কোন সন্দেহ নাই।
আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমীন।
 
▬▬▬▬◢◯◣▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
FB ID: AbdullaahilHadi
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

 

৬৩. ক্রসিং বিয়ে: কখন বৈধ কখন অবৈধ Marriage education series

 No photo description available.

ক্রসিং বিয়ে: কখন বৈধ কখন অবৈধ
▬▬▬❣💚❣▬▬▬
প্রশ্ন: এক দীনি ভায়ের এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। অন্য আরেক দীনি ভায়ের এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। তারা দুই ছেলে মেয়ের সাথে দুই ছেলে মেয়েকে বিয়ে দিতে চায়। এভাবে কি বিয়ে দেয়া যাবে? শরিয়তে কি এমন ক্রসিং বিয়ে নিষিদ্ধ?
উত্তর:
নিকাহে শিগার বা ক্রসিং বিয়ে (যাকে অদল-বদল বিয়েও বলা হয়) এর তিনটি পদ্ধতি আছে। সেগুলোর মধ্যে একটি হারাম, আরেকটি বিরোধপূর্ণ হলেও সঠিক মতানুযায়ী হারাম এবং আরেকটি হালাল।
নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল:
➰ ১ম পদ্ধতি-হারাম:
যদি কোনো ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে বলে যে, আমি আমার ছেলেকে তোমার মেয়ের সাথে বিয়ে দিব। তবে শর্ত হল, তোমার ছেলেকে আমার মেয়ের সাথে বিয়ে দিতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে কোনো মোহর থাকবে না।
অথবা এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে প্রস্তাব দিলো, তুমি আমার সাথে তোমার মেয়েকে অথবা বোনকে বিয়ে দাও এবং তার পরিবর্তে আমি আমার মেয়েকে অথবা বোনকে তোমার সাথে বিয়ে দিবো। আর এতে কোন মোহর থাকবে না।
অর্থাৎ এখানে দুটি বিষয় থাকবে। যথা:
▪ এক. বিয়েতে এই শর্ত থাকবে যে, 'একে অপরের ছেলে/মেয়ের বিয়ে দিবে বা অদল-বদল বিয়ে হবে। এই শর্ত পূরণ না হলে বিয়ে হবে না।
▪ দুই. উপরোক্ত শর্তানুযায়ী বিয়েকেই মোহরের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে গণ্য করা হবে। আলাদা কোনো আর্থিক মোহর নির্ধারণ করা হবে না।
এটি নিষিদ্ধ শিগার বা ক্রসিং বিবাহের অন্তর্ভুক্ত। এটি হারাম।
এ মর্মে একাধিক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। 
 
💠 তন্মধ্যে একটি হল:
 
حديث ابْنِ عُمَرَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهى عَنِ الشِّغَارِ الشِّغَارُ أَنْ يُزَوِّجَ الرَّجُلُ ابْنَتَهُ عَلَى أَنْ يُزَوِّجَهُ الآخَرُ ابْنَتَهُ، لَيْسَ بَيْنَهُمَا صَدَاقٌ
 
ইবনে ‘উমার (রা:) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিগার নিষিদ্ধ করেছেন।
‘শিগার’ হলোঃ "কোন ব্যক্তি নিজের কন্যাকে অন্য এক ব্যক্তির পুত্রের সাথে বিয়ে দিবে এবং তার কন্যা নিজের পুত্রের সাথে বিয়ে দিবে এবং এক্ষেত্রে কোনো মোহর থাকবে না।" (বুখারী পর্ব ৬৭/২৭ হাঃ ৫১১২, মুসলিম ১৬/৬ হাঃ ১৪১৫)
 
💠 আরেকটি হাদিস হল:
عَنْ ابْنِ عُمَرَ قَالَ نَهَى رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ الشِّغَارِ وَالشِّغَارُ أَنْ يَقُولَ الرَّجُلُ لِلرَّجُلِ زَوِّجْنِي ابْنَتَكَ أَوْ أُخْتَكَ عَلَى أَنْ أُزَوِّجَكَ ابْنَتِي أَوْ أُخْتِي وَلَيْسَ بَيْنَهُمَا صَدَاقٌ
 
ইবনে উমর (রা:) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিগার বিবাহ নিষিদ্ধ করেছেন।
বর্ণনাকারী বলেন, শিগার বিবাহ এই যে, এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে প্রস্তাব দিলো, তুমি আমার সাথে তোমার মেয়েকে অথবা বোনকে বিয়ে দাও এবং তার পরিবর্তে আমি আমার মেয়েকে অথবা বোনকে তোমার সাথে বিয়ে দিবো, আর এতে কোন মাহর থাকে না। [সহীহুল বুখারী ৫১১২, ৬৯২০, মুসলিম ১৪১৫]
 
➰ ২য় পদ্ধতি- অগ্রাধিকার যোগ্য মতে হারাম:
উপরে বর্ণিত হুবহু একই পদ্ধতি। তবে পার্থক্য হল, এখানে আর্থিক মোহর নির্ধারণ করা হবে (কম বেশি যাই হোক)।
অর্থাৎ এখানে 'একে অপরের ছেলে/মেয়ের বিয়ে বা আদল-বদল বিয়ের' শর্ত ঠিক থাকবে। কিন্তু পাশাপাশি মোহরও নির্ধারণ করা হবে।
এ বিয়ের ব্যাপারে দ্বিমত থাকলেও সঠিক কথা হল, এটিও নিষিদ্ধ শিগার বা ক্রসিং বিয়ের অন্তর্ভুক্ত। এটি হারাম। কেননা, এখানে বদল বিয়ের শর্তারোপ করা হয়েছে। সুতরাং তা ‘শিগার’ বিয়ে হিসেবে গণ্য হওয়ার জন্য যথেষ্ট। এ পক্ষে মত দিয়েছেন আল্লামা বিন বায এবং সৌদি আরবের ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটি (লাজনাহ দায়েমা)। 
 
➰ ৩য় পদ্ধতি- বৈধ/হালাল:
উপরে বর্ণিত পদ্ধতি অনুযায়ী একে অপরের মেয়ে বা বোনের বিবাহ দিবে। কিন্তু এখানে উপরোক্ত দুটি জিনিস থাকবে না। যথা:
▪ এক. একে অপরের মেয়ে বা বোনের বিয়ের শর্ত থাকবে না। অর্থাৎ এক বিয়ের সাথে অপর বিয়ে নির্ভরশীল হবে না।
▪ দুই. উভয় পক্ষের ছেলে/মেয়ের বিয়ে যথারীতি মোহর থাকবে।
 
এই বিয়ে হালাল। এটি নিষিদ্ধ শিগার বা ক্রসিং বিয়ের অন্তর্গত নয়।
 
সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত বিয়ে যদি ৩য় পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় তাহলে তা বৈধ; অন্যথায় বৈধ নয়। অর্থাৎ উক্ত বিয়েতে অদল-বদল বিয়ের শর্তারোপ থাকবে না এবং শরিয়ত সম্মত পদ্ধতিতে মোহর নির্ধারণ করা হবে। তাহলে তা বৈধ হবে।
আল্লাহু সবচেয়ে ভালো জানেন।
▬▬▬❣💚❣▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
শাইখ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
fb/AbdullaahilHadi
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব