Thursday, June 24, 2021

হায়েযের সর্বোচ্চ মেয়াদ কত দিন? হায়েয থেকে পবিত্র হওয়ার আলামত কি? হায়েয থেকে পবিত্রতা অর্জনের পর যদি হলুদাভ বা ময়লার মত স্রাব দেখা যায় তাহলে কী করণীয়? Marriage education series

 May be an image of flower and text that says 'হায়েযের সর্বোচ্চ মেয়াদ কত দিন? wattn বল ਦ জারন হায়েয থেকে পবিত্র হওয়ার আলামত কি? চ হায়েয থেকে পবিত্রতা অর্জনের ਪਾব পর যদি হলুদাভ বা ময়লার মত স্রাব দেখা যায় তাহলে কী করণীয়? FB/Guidance2TheRightPath'

হায়েযের সর্বোচ্চ মেয়াদ কত দিন?
হায়েয থেকে পবিত্র হওয়ার আলামত কি?
হায়েয থেকে পবিত্রতা অর্জনের পর যদি হলুদাভ বা ময়লার মত স্রাব দেখা যায় তাহলে কী করণীয়?
▬▬▬🔸♦🔸▬▬▬
প্রশ্ন: এক জায়গায় শুনেছি, হায়েযের নির্দিষ্ট সময় পার হলেই (৫,৭, ১০ দিন) সাদা স্রাব না বের হলেও (হলদে, বাদামি রঙ থাকলেও) নামাজ শুরু করে দিতে হবে। যেহেতু ওই নারীর নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গিয়েছে। আবার আরেক জায়গায় শুনলাম, সাদা স্রাব না বের হলে কোনো ভাবেই নামাজ শুরু করা যাবে না। তা নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে ২/৩ দিন বেশি হলেও-এমন কি ১৫ দিন পর্যন্তও হতে পারে। আসলে কোনটা সঠিক?
হায়েযের শেষ এর দিকে সাদা স্রাব বের হওয়ার পরে সাথে সাথেই হলদে স্রাব বের হলে তা কি হায়েয বলেই গণ্য হবে নাকি সাদা স্রাব বের হওয়ার কারণে তার সলাত শুরু করে দিতে হবে?
উত্তর:
♻ প্রথমে আমাদের জানা উচিৎ হায়েযের সর্বোচ্চ মেয়াদ কত দিন। এর সর্বোচ্চ মেয়াদ কি ১৫ দিন না কি অন্য কোনো কিছু?
হায়েযের সর্বোচ্চ মেয়াদ কত দিন সে বিষয়ে বিজ্ঞ আলেমদের মাঝে দ্বিমত রয়েছে। যেমন:
🌀 একদল আলেম বলেন, হায়েয বা ঋতুস্রাবের রক্তের রং, গন্ধ বা ধরণ-প্রকৃতি সুপরিচিত। এটি সাধারণ রক্ত থেকে আলাদা। হায়েযের মেয়াদ বৃদ্ধি হতে পারে বিভিন্ন কারণে। যেমন: জন্মনিরোধক ঔষধ সেবন।
অতএব, কোন মহিলার ঋতুস্রাব যদি তার প্রতি মাসের নিয়মের বাইরেও অব্যাহত থাকে তাহলে যতদিন তা চলতে থাকে ততদিন তা ঋতুস্রাব হিসেবেই গণ্য হবে যত দিন তা বন্ধ না হয়। কেননা, ঋতুস্রাবের বিষয়টি খুবই ব্যাপক ও গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার পরও কুরআন-সুন্নায় এর মেয়াদ নির্ধারণ সম্পর্কে কোন বক্তব্য আসে নি।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
 
وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الْمَحِيضِ ۖ قُلْ هُوَ أَذًى فَاعْتَزِلُوا النِّسَاءَ فِي الْمَحِيضِ ۖ وَلَا تَقْرَبُوهُنَّ حَتَّىٰ يَطْهُرْنَ ۖ فَإِذَا تَطَهَّرْنَ فَأْتُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ أَمَرَكُمُ اللَّـهُ
 
“আর তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে হায়েয (ঋতুস্রাব) সম্পর্কে। বলে দাও, এটা অশুচি। কাজেই তোমরা হায়েয অবস্থায় স্ত্রীগমন থেকে বিরত থাক। তখন পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী হবে না, যতক্ষণ না তারা পবিত্র হয়ে যায়। যখন উত্তম রূপে পরিশুদ্ধ হয়ে যাবে, তখন গমন কর তাদের কাছে, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে হুকুম দিয়েছেন।” (সূরা বাকারা: ২২)
মোটকথা, যতদিন এই হায়েয অব্যাহত থাকবে ততদিন হায়েযের বিধান প্রযোজ্য হবে। আর হায়েজের রক্ত না থাকলে তখন তার বিধানও প্রযোজ্য হবে না।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন (মজমু ফতোয়া ১৯/২৩৭)। আল্লামা উসাইমীন রহ. এ মতকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।
 
🌀 তবে জুমহূর তথা অধিকাংশ বিদ্বানের মত হল, হায়েযের সর্বোচ্চ সময়সীমা ১৫ দিন। ১৫ দিন হয়ে গেলে গোসল করে পবিত্র হতে হবে যদিও রক্তস্রাব চলতেই থাকে। ঐ অবস্থায় প্রত্যেক ফরয সালাতের জন্যে আলাদাভাবে ওযু করবে। আর পোশাক থেকে ইস্তিহাযার রক্তের চিহ্ন ধুয়ে ফেলবে। তখন পনের দিনের পর নির্গত রক্তকে ইস্তেহাযা (রক্তপ্রদর) এর রক্ত বলা হবে।
এই মতকে গ্রহণ করেছেন সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি আল্লামা আব্দুল্লাহ বিন বায রহ.।
১৫ দিন নির্দিষ্ট করার পক্ষে কুরআন-সুন্নাহ থেকে কোনো দলিল না থাকলেও তারা মহিলাদের সাধারণ অবস্থা ও অভ্যাসকে দলিল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তারা বলেন, মহিলাদের ঋতুস্রাব ১৫ দিনের বেশি হয় না।
তবে ১৫ দিন নির্দিষ্ট করার পক্ষে দলিল না থাকায় ১ম অভিমতটিকে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. গ্রহণ করেছেন এবং শাইখ উসাইমীন রহ. এটিকে সমর্থন করেছেন। আর এটাই অধিক বিশুদ্ধ ইনশাআল্লাহ।
সুতরাং কারো নিয়মিত ৫/৭/১০ দিন সময়-সীমার চেয়ে বেশি ১৫ দিন বা ততোধিক সময় ধরে যদি স্রাব অব্যাহত থাকে আর তা যদি অবিকল হায়েজের রক্তের অনুরূপ হয় তাহলে তা হায়েয হিসেবেই ধরতে হবে এবং সে সময় সালাত-সিয়াম থেকে বিরত থাকতে হবে।
♻ হায়েয থেকে পবিত্র হওয়ার আলামত:
হায়েয থেকে পবিত্র হওয়ার আলামত হল, স্রাব সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাওয়া বা লজ্জা স্থান পরিপূর্ণভাবে শুষ্ক হয়ে যাওয়া অথবা বা সাদা স্রাব নির্গত হওয়া। এ দুটি আলামতের কোন একটি পাওয়া গেলে গোসল করে পবিত্রতা অর্জন করবে এবং যথারীতি সালাম-সিয়াম শুরু করবে।
♻ হায়েয বা ঋতুস্রাব থেকে পবিত্রতা অর্জনের পর যদি হলুদাভ বা ময়লার মত স্রাব দেখা যায়:
মহিলারা ঋতুস্রাব থেকে পবিত্র হওয়ার পর সাধারণ দিনগুলোতে যদি বিবর্ণ হলুদাভ বা ময়লাযুক্ত পানির মত ধুসর রঙ্গের স্রাব দেখতে পায় তাহলে তা হায়েয হিসেবে গণ্য হবে না। কেননা, উম্মে আত্বিয়া রা. হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন:
كُنَّا لا نَعُدُّ الْكُدْرَةَ وَالصُّفْرَةَ بَعْدَ الطُّهْرِ شَيْئًا
"আমরা (হায়েয বা ঋতুস্রাব) থেকে পবিত্রতা অর্জনের পর ময়লাযুক্ত ধুসর রঙ্গের পানি ও বিবর্ণ হলুদাভ স্রাবকে কিছুই মনে করতাম না।" (অর্থাৎ এগুলোকে হায়েয হিসেবে গণ্য করতাম না।)
[সুনান আবু দাউদ, শাইখ আলবানী রহ. হাদিসটিকে সহীহ বলেন।]
সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে:
كُنَّا لَا نَعُدُّ الْكُدْرَةَ وَالصُّفْرَةَ شَيْئًا
"আমরা ময়লাযুক্ত ধুসর রঙ্গের পানি ও বিবর্ণ হলুদাভ স্রাবকে কিছুই মনে করতাম না।" (সহীহ বুখারী হা/ ৩২৬)
সুতরাং কোন মহিলার এমনটি হলে, সে স্বাভাবিক নিয়মে নামায-রোযা অব্যাহত রাখবে। এটা পেশাবের মত নাপাকি হিসেবে গণ্য হবে। এ ক্ষেত্রে তা ধৌত করবে এবং প্রত্যেক ওয়াক্তে আলাদা ওযু করে সালাত আদায় করবে। আর রোযা অবস্থায় এমনটি দেখা গেলে স্বাভাবিক নিয়মে রোযা পূর্ণ করবে।
তবে হায়েযের সাথে যুক্ত অবস্থায় অর্থাৎ হায়েয শেষ হওয়ার শেষ দিকে এ ধরণের হলুদ বা ময়লার মত স্রাব নির্গত হলে তা হায়েয হিসেবেই গণ্য করতে হবে।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬◈◉◈▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, KSA
fb/AbdullaahilHadi

 

হিন্দুদেরকে খুশি রাখতে মুসলিমদের গরুর গোস্ত বর্জন কি ইসলাম সম্মত?

 May be an image of text that says 'হিন্দুদেরকে খুশি রাখতে মুসলিমদের নো বীফ" কালচার কি ইসলাম সম্মত?'

হিন্দুদেরকে খুশি রাখতে মুসলিমদের গরুর গোস্ত বর্জন কি ইসলাম সম্মত?
▬▬▬▬◯▬▬▬▬
 
প্রশ্ন: আমাদের হোস্টেলে ২২ জন ছেলে থাকে। ৩ জন হিন্দু বাদে বাকি সবাই মুসলিম। ওই ৩ জনের সমস্যা হয় বলে আমরা মুসলিমরা ফার্স্ট ইয়ার থেকেই হোস্টেলে গরুর মাংস খাই না। এতে (হিন্দুদের সাপোর্ট দেয়ায়) কি আমাদের গুনাহ হচ্ছে? আমাদের করণীয় কী?
উত্তর:
 
ইসলামে গরুর গোস্ত খাওয়া হালাল। ইসলাম ছাড়া ইহুদি ও খৃষ্টান সহ প্রায় সকল ধর্মেই গরুর গোস্ত খাওয়া অনুমোদিত। এমনকি হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, হিন্দু ধর্মেও গরুর গোস্ত খাওয়া নিষিদ্ধ নয়। তাদের দেব-দেবতারা গরুর গোস্ত খেতেন।
 
➧ স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, "এই ভারতবর্ষেই এমন এক দিন ছিল যখন কোন ব্রাহ্মণ গরুর মাংস না খেলে ব্রাহ্মণই থাকতে পারতেন না। যখন কোন সন্ন্যাসী, রাজা, কিংবা বড় মানুষ বাড়ীতে আসতেন, তখন সবচেয়ে ভালো ষাঁড়টিকে কাটা হতো। (Collected works of Swami Vivekananda, Advaita Asharama,1963, Vol III, page 172)।
➧ মহাত্মা গান্ধী বলেছেন,
 
"I know there are scholars who tell us that cow-sacrifice is mentioned in the Vedas. I… read a sentence in our Sanskrit text-book to the effect that Brahmins of old (period) used to eat beef. ( M.K.Gandhi, Hindu Dharma, New Delhi, 1991, p. 120).
 
"আমি জানি (কিছু সংখ্যক পণ্ডিত আমাদের বলেছেন) বেদে গো-উৎসর্গ করার কথা উল্লেখ আছে। আমি আমাদের সংস্কৃত বইয়ে এরূপ বাক্য পড়েছি যে,পূর্বে ব্রাহ্মণরা গো-মাংস ভক্ষণ করতেন।" (হিন্দুধর্ম,এম.কে. গান্ধী,নিউ দিল্লি,১৯৯১,পৃ. ১২০)॥
 
অতএব এবার নিশ্চয়ই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় গরু খাওয়া হিন্দু ধর্ম সম্মত।
[আরও দেখুন: সম্প্রতি গরুর গোস্ত বিষয়ে হিন্দু পণ্ডিতের সাথে ব্রাদার রাহুল ভাইয়ের ডিবেট এবং জাকির নাইকের এ সংক্রান্ত ভিডিও সমূহ। সেখানে সরাসরি তাদের ধর্মীয় বই থেকে প্রমাণ দেখানো হয়েছে]
কিন্তু বর্তমান যুগের কিছু হিন্দু তাদের ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞতা বা ভুল ব্যাখ্যার শিকার হওয়ার ফলে অথবা ধর্মীয় গোঁড়ামি বশত: গরুর গোস্ত খাওয়াকে নিষিদ্ধ মনে করে-যা সম্পূর্ণ ভুল।
এরা আবার গরুর দুধ পান করে, মুত পান করে, গরুর চামড়া দিয়ে জুতা বানায়, গরু দিয়ে চাষাবাদ করে এবং বাজারে বিক্রয় করে। ভারতে হিন্দু ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে পরিচালিত বড় বড় কোম্পানি আছে, যেখান থেকে গরু জবাই করে তার গোস্ত আরব সহ সারা বিশ্বে রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করে।
এখনো বহু হিন্দু পণ্ডিত এবং উচ্চ শিক্ষিত হিন্দুরা নির্দ্বিধায় গরুর গোস্ত খায়। শুধু তাই নয় তারা এর বিরোধিতাকারীদে প্রতিবাদও করে।
 
❑ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ধোঁয়া তুলে গরুর গোশত বর্জন ইসলামি চেতনা পরিপন্থী:
নিচের ঘটনাটি দেখুন:
 
সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রা. ইসলাম গ্রহণ করার আগে ছিলেন ইহুদি পণ্ডিত। ইহুদি ধর্ম তিনি বেশ নিষ্ঠার সাথেই পালন করতেন। ইহুদি ধর্মে উটের গোশত খাওয়া নিষেধ ছিল। মুসলিম হবার পর তিনি যখন দেখলেন, ইসলামের বিধান অনুসারে উটের গোশত খাওয়া জরুরি কোন বিষয় নয়, বরং এটি মুবাহ বা বৈধ এবং এটি খাওয়ার জন্য আলাদা কোন সওয়াবও নেই, তখন তিনি উটের গোশত না খাওয়ার উপরই বহাল রয়ে গেলেন। কারণ এতে করে তার ইসলামের কোন বিধান লঙ্ঘন হচ্ছিল না।
স্বাভাবিক দৃষ্টিতে বিষয়টাকে সাধারণ মনে হলেও গভীরভাবে চিন্তা করলে এতে অন্য বাতিল ধর্মের ধর্মীয় বিধানের প্রতি সূক্ষ্ম সহানুভূতি ও সম্মান প্রদর্শনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ফলে আল্লাহ তাআলার তা পছন্দ হয়নি। তিনি আয়াত নাজিল করলেন,
 
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ادْخُلُوا فِي السِّلْمِ كَافَّةً وَلا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ
 
"হে মুমিনগণ, তোমরা ইসলামে পূর্ণরূপে প্রবেশ করো এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না । নিশ্চয় সে তোমাদের জন্য স্পষ্ট শত্রু।" (বাকারা: ২০৮)
 
روى الواحدي في "أسباب النزول" عن ابن عباس رضي الله عنهما، قال: نزلت هذه الآية في عبد الله بن سلام وأصحابه، وذلك أنهم حين آمنوا بالنبي صلى الله عليه وسلم فآمنوا بشرائعه وشرائع موسى، فعظموا السبت، وكرهوا لحم الإبل وألبانها بعد ما أسلموا، فأنكر ذلك عليهم المسلمون، فقالوا: إنا نقوى على هذا وهذا، وقالوا للنبي صلى الله عليه وسلم: إن التوراة كتاب الله، فدعنا، فلنعمل بها، فأنزل الله تعالى هذه الآية
 
[আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, আসবাবুন নুযূল: আলী বিন আহমদ নিসাপুরি]
উক্ত আয়াতটি নাজিল হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে দুটি মতের মধ্যে এটি একটি।
বাহ্যত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রা. ইসলামের সাথে বিরোধমূলক কিছু না করলেও এটি ছিল ইসলামের মেজাজের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ। ইসলামের দাবি হল, অন্য বাতিল ধর্মের ধর্মীয় বিধানের প্রতি সম্মান বা সহানুভূতি না দেখানো। ফলে আল্লাহ তাকে সতর্ক করলেন। সেই সাথে এই সতর্ক বার্তা আগত সকল মানুষের জন্যও নির্ধারিত হয়ে গেল। [সংগৃহীত ও সংযোজিত]
 
হ্যাঁ, কেউ যদি ব্যক্তিগতভাবে তা না খায় সেটা তার নিজস্ব অভিরুচি। যে খাবে না সে বিরত থাকবে। যেমন: মুসলিমদের মধ্যেও অনেক আছে যারা গরুর গোস্ত খায় না, কেউ মুরগির গোস্ত খায় না, কেউ পাখির গোস্ত ইত্যাদি হালাল প্রাণীর গোস্ত খায় না। কে কি খাবে-না খাবে তা তার ইচ্ছা ও অভিরুচি।
সুতরাং আপনাদের হোস্টেলে ৩ জন হিন্দু গরুর গোস্ত খায় না বলে বাকি সব মুসলিমরা গরুর গোস্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকা সমীচীন মনে করি না। (যেহেতু তা হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থে কোথাও নিষেধ করা হয় নি।) বরং এটা ধর্মীয় অধিকার থেকে মুসলিমদের পিছু হটা এবং হিন্দুদের অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন দাবীর নিকট নতি শিকারের শামিল বরং তা ইসলামি চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক-যেমন উপরে উল্লেখিত আয়াতের শানে নুযূল থেকে প্রমাণিত।
 
আফসোসের বিষয় হল, বাংলাদেশের মত সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলিম দেশে একটি সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলিম হোস্টেলে মাত্র ৩ জন হিন্দুর জন্য ১৯ জন মুসলিম গরুর গোস্ত বর্জন করার পরও কিন্তু মুসলিমদের বিরুদ্ধে হিন্দুদের অভিযোগ থেমে যায় নি। কিছু হিন্দুর জন্য ঢাকার বহু মুসলিম হোটেলে 'নো বীফ' সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়ার পরও কিন্তু মুসলিমরা এখনো 'উদার' হতে পারে নি! বরং তারা মুসলিমদের প্রতি গোঁড়া, সাম্প্রদায়িক, সন্ত্রাসী ইত্যাদি নানা অভিধায় নিরন্তর অভিযোগ করেই যাচ্ছে। আল্লাহ তাআলা যথার্থই বলেছেন,
 
وَلَن تَرْضَىٰ عَنكَ الْيَهُودُ وَلَا النَّصَارَىٰ حَتَّىٰ تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمْ ۗ قُلْ إِنَّ هُدَى اللَّهِ هُوَ الْهُدَىٰ ۗ وَلَئِنِ اتَّبَعْتَ أَهْوَاءَهُم بَعْدَ الَّذِي جَاءَكَ مِنَ الْعِلْمِ ۙ مَا لَكَ مِنَ اللَّهِ مِن وَلِيٍّ وَلَا نَصِيرٍ
 
"ইহুদী ও খ্রিষ্টানরা কখনই আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, যে পর্যন্ত না আপনি তাদের ধর্মের অনুসরণ করেন। বলে দিন, যে পথ আল্লাহ প্রদর্শন করেন তাই হল সরল পথ। যদি আপনি তাদের আকাঙ্ক্ষা সমূহের অনুসরণ করেন- আপনার নিকট জ্ঞান আসার পরও-তবে (স্মরণ রাখবেন) আল্লাহর কবল থেকে কেউ আপনার উদ্ধারকারী ও সাহায্যকারী নেই।" [সূরা বাকারা: ১২০]
 
আর ইসলামের দৃষ্টিতে সকল কু ফ রি শক্তি এক সম্প্রদায়ভুক্ত (الكفر ملة واحدة) অর্থাৎ ইহুদি, খৃষ্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, অগ্নিপূজক ইত্যাদি সকল কা ফে র সম্প্রদায় এক জাতী। তারা মুসলিমদের প্রতি ততক্ষণ খুশি হবে না যতক্ষণ না তারা ইসলাম ছেড়ে তাদের ধর্মে দীক্ষিত হয়-যতই মুসলিমরা তাদেরকে ছাড় দিয়ে চলুক না কেন..যতই তারা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে সরে আসুক না কেন।
 
আল্লাহ তাআলা আত্মভোলা মুসলিমদেরকে তাদের আত্মপরিচয় জানার এবং পুনরায় তাদের হারানো আত্মমর্যাদা, সম্মান ও প্রভাব-প্রতিপত্তি ফিরিয়ে আনার তওফিক দান করুন। আমিন।
আল্লাহু আলাম।
-আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
জুবাইল, সৌদি আরব