Tuesday, July 27, 2021

কুরআন নিয়ে কথা

 

এক লোক প্রচুর কুরআন পড়ত। কুরআন নিয়েই ডুবে থাকতে ভালবাসত। কিন্তু কেন যেন কুরআনের কিছুই সে মুখস্থ রাখতে পারত না। একদিন লোকটির ছোট ছেলে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলল, 'বাবা, আপনি যে এত কুরআন পড়েন, কিছুই তো মনে রাখতে পারেন না। এতে কী লাভ হচ্ছে?'
.
— তোমার এই প্রশ্নের উত্তরটা দিবো। তার আগে এক কাজ করো, তুমি এই বেতের ঝুড়িটা সমুদ্র তীরে নিয়ে যাও এবং পানি ভরে নিয়ে আসো।
— এটা তো বেতের তৈরি, পানি কীভাবে ধরবে?
— আহা, চেষ্টা করে দেখো না!
.
সাধারণত কয়লা আনা-নেওয়ার কাজে তারা এই ঝুড়ি ব্যবহার করে। তবুও বাবার কথায় ছেলেটি ঝুড়ি নিয়ে তীরে গেল এবং পানি ভরল। কিন্তু বাড়ি ফিরে আসতে আসতে সব পানি পথেই শেষ। পড়তে পড়তে একদম খালি হয়ে গেছে।
.
'দেখলেন? কোনো লাভ হলো? পানি একটুও বাঁচেনি।' ছেলে আফসোস নিয়ে বলল।
লোকটি আশ্বাস দিলো, 'চেষ্টা চালিয়ে যাও সোনা। আরও কয়েকবার চেষ্টা করো।'
.
এভাবে দুইবার, তিনবার, চারবার, সবশেষে পাঁচবার পর্যন্ত চেষ্টা করল ছেলেটি। কিন্তু এক মুঠো পানিও আনতে পারল না। অবশেষে হাল ছেড়ে দিয়ে বাবাকে বলল, 'এই ঝুড়ি দিয়ে আমার পক্ষে পানি আনা অসম্ভব।'
.
এবার লোকটি শান্ত গলায় বলল, 'আচ্ছা, তবে তুমি কি ঝুড়িটার ভিতরের দিকে খেয়াল করেছ? ভিতরের অবস্থার কোনো পরিবর্তন দেখেছ?'
— হ্যাঁ, এটা পানি ধরে রাখতে না পারলেও বার বার পানি ভরার কারণে কয়লার ময়লাগুলো সাফ হয়ে গেছে। ভিতরটা বেশ পরিষ্কার দেখাচ্ছে এখন।
— ঠিক ধরেছ। এবার বলি, কুরআনও ঠিক এই কাজটাই করে তোমার অন্তরের ভিতরে। দুনিয়ার পেছনে ছুটতে ছুটতে তোমার অন্তর যখন কলুষিত হয়ে পড়ে, তখন কুরআন সমুদ্রের পানির মতোই তোমাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে দেয়। অন্তরে মুখস্থ রাখতে না পারলেও সে তোমাকে পবিত্র করে দেয়।
বাবারে, একটা কথা মনে রেখো, কুরআনের প্রথম অবতীর্ণ আয়াত 'পড়ো', 'মুখস্থ করো' না। কাজেই মুখস্থ করতে না পারার কারণে শয়তান যেন তোমাকে ধোঁকায় না ফেলে, কুরআন পড়া থেকে দূরে সরিয়ে দিতে না পারে।
.
ড. আলী মুহাম্মাদ আস-সাল্লাবী (হাফি.)-এর পেইজ থেকে অনূদিত।
অনুবাদ: ওয়াফিলাইফ
.

মেয়েদের পর্দা

 

- মেয়েদের পর্দা -
হিজাব, নিকাব, হাত মোজা, পা মোজা পড়া হয়? - আলহামদুলিল্লাহ, বাহিরে সর্বদা এসব পড়া হয়।
মডারেট?
- না, আলহামদুলিল্লাহ, পরিপূর্ণ প্র্যাকটিসিং।
কখনো হিজাব পড়া ছবি ফেসবুক বা সোস্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হয়?
- না, কখনোই না, আলহামদুলিল্লাহ।
নন-মাহরাম মেইনটেইন করা হয়?
- জ্বি আলহামদুলিল্লাহ, সর্বাত্মকভাবে মেইনটেইন করা হয়।
সবই আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
কিন্তু কিন্তু...
ফেসবুকে ছবি পোস্ট করা পর্দার লঙ্ঘন বিধায় আপলোড করেন না কিন্তু আপনার মেয়ে বান্ধবী আপনার মাহরাম বিধায় তার সাথে সেলফি তুলেন যা হয়তো আপনার বান্ধবীর ফোনে থেকে যায়। কিংবা আপনার সাথে আপনার বান্ধবীর গ্রুপ ছবি আপনার বান্ধবীকে ইনবক্সে সেন্ড করেন।
আপনি হয়তো ভাবছেন আমার বান্ধবির ফোনেই তো ছবি স্টোর করা আছে কিংবা আমার বান্ধবির ইনবক্সেই তো পাঠিয়েছি, মেয়ে তো, দোষ কিসের।
আপনার বান্ধবি মেয়ে, তার সাথে আপনার পর্দা করতে হবে না ঠিকই, কিন্তু আপনার বান্ধবির ফোন যে তার স্বামী, ভাই, বাবা, চাচা, মামা কিংবা অন্য কোনো পুরুষ যে ধরবে না এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। আপনার বান্ধবীর ফোন তার মাহরাম পুরুষরা তো ধরতেই পারে কিংবা ইনবক্সেও অ্যাক্সেস থাকতে পারে, অথচ ঐসকল পুরুষ আপনার জন্য নন-মাহরাম। অর্থাৎ আপনার পর্দার লঙ্ঘন হতেই পারে। সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
আপনি হয়তো ভাবছেন আপনি যেসকল বান্ধবীর ফোনো ছবি তুলছেন কিংবা যেসকল বান্ধবির ইনবক্সে ছবি পাঠিয়েছেন, তারা সকলেই পরিপূর্ণ পর্দানশীল, পরিপূর্ণ ইসলাম প্র্যাকটিসিং, আপনার পর্দা লঙ্ঘনের সুযোগ নেই।
সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আপনার বান্ধবী ঠিকই পরিপূর্ণ প্র্যাকটিসিং এবং আপনার পর্দার হেফাজতে সর্বদা সতর্ক। কিন্তু হয়ত তার স্বামী/ভাই/বাবা/চাচা/মামা সহ কোনো না মাহরাম ইসলামিক মাইন্ডেড নয়, তারা হয়ত আপনার তোলা ছবি বা আপনার সেন্ড করা ছবি দেখে ফেলল। স্পষ্ট পর্দার লঙ্ঘন হবে।
একজন মেয়ের সকল মাহরাম যে ইসলামিক মাইন্ডেড হবে এবং ঐসকল মাহরাম পুরুষরা যে ঐ মেয়ের ফোন/ফেসবুক আইডি অ্যাক্সেস পাবে না, এরকম নিশ্চয়তা দেওয়ার সুযোগ নেই।
আর সকল নন-মাহরাম পুরুষরাও ইসলামিক মাইন্ডেড হলেই যে পরিপূর্ণ দ্বীনদার হবে, পরিপূর্ণ প্র্যাকটিসিং হবে, এর নিশ্চয়তাও দেওয়া সম্ভব না। আর পরিপূর্ণ প্র্যাকটিসিং না হলে আপনার পর্দার হেফাজত হবে - এমনটা নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়।
ছবি সেন্ড করার বাইরে আপনার বান্ধবির কাছে "সেনসেটিভ" ম্যাসেজ সেন্ড করাটার ক্ষেত্রেও একই বিষয় ঘটতে পারে।
ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারের ক্ষেত্রে এসব এড়াতে "আনসেন্ড" করার সুযোগ রয়েছে। আনসেন্ড অপশনটি ব্যবহার করে ম্যাসেজের বিষয়টি থেকে পর্দার লঙ্ঘন কিছুটা ঠেকানো সম্ভব, ইন শা আল্লাহ।
কিন্তু ছবি স্টোর করে রাখার ক্ষেত্রে কখনওই ১০০% রিস্ক ফ্রি নয়। অতএব, বিষয়টি অনেকেরই হয়ত মাথায় থাকে নি, বা মাথায় আসেনি। তাকওয়ার পরিচায়ক হবে এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে তা বাস্তবায়ন করা।
লেখাঃ মুহাম্মদ রাহাত