Showing posts with label পর্দা. Show all posts
Showing posts with label পর্দা. Show all posts

Tuesday, July 27, 2021

মেয়েদের পর্দা

 

- মেয়েদের পর্দা -
হিজাব, নিকাব, হাত মোজা, পা মোজা পড়া হয়? - আলহামদুলিল্লাহ, বাহিরে সর্বদা এসব পড়া হয়।
মডারেট?
- না, আলহামদুলিল্লাহ, পরিপূর্ণ প্র্যাকটিসিং।
কখনো হিজাব পড়া ছবি ফেসবুক বা সোস্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হয়?
- না, কখনোই না, আলহামদুলিল্লাহ।
নন-মাহরাম মেইনটেইন করা হয়?
- জ্বি আলহামদুলিল্লাহ, সর্বাত্মকভাবে মেইনটেইন করা হয়।
সবই আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
কিন্তু কিন্তু...
ফেসবুকে ছবি পোস্ট করা পর্দার লঙ্ঘন বিধায় আপলোড করেন না কিন্তু আপনার মেয়ে বান্ধবী আপনার মাহরাম বিধায় তার সাথে সেলফি তুলেন যা হয়তো আপনার বান্ধবীর ফোনে থেকে যায়। কিংবা আপনার সাথে আপনার বান্ধবীর গ্রুপ ছবি আপনার বান্ধবীকে ইনবক্সে সেন্ড করেন।
আপনি হয়তো ভাবছেন আমার বান্ধবির ফোনেই তো ছবি স্টোর করা আছে কিংবা আমার বান্ধবির ইনবক্সেই তো পাঠিয়েছি, মেয়ে তো, দোষ কিসের।
আপনার বান্ধবি মেয়ে, তার সাথে আপনার পর্দা করতে হবে না ঠিকই, কিন্তু আপনার বান্ধবির ফোন যে তার স্বামী, ভাই, বাবা, চাচা, মামা কিংবা অন্য কোনো পুরুষ যে ধরবে না এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। আপনার বান্ধবীর ফোন তার মাহরাম পুরুষরা তো ধরতেই পারে কিংবা ইনবক্সেও অ্যাক্সেস থাকতে পারে, অথচ ঐসকল পুরুষ আপনার জন্য নন-মাহরাম। অর্থাৎ আপনার পর্দার লঙ্ঘন হতেই পারে। সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
আপনি হয়তো ভাবছেন আপনি যেসকল বান্ধবীর ফোনো ছবি তুলছেন কিংবা যেসকল বান্ধবির ইনবক্সে ছবি পাঠিয়েছেন, তারা সকলেই পরিপূর্ণ পর্দানশীল, পরিপূর্ণ ইসলাম প্র্যাকটিসিং, আপনার পর্দা লঙ্ঘনের সুযোগ নেই।
সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আপনার বান্ধবী ঠিকই পরিপূর্ণ প্র্যাকটিসিং এবং আপনার পর্দার হেফাজতে সর্বদা সতর্ক। কিন্তু হয়ত তার স্বামী/ভাই/বাবা/চাচা/মামা সহ কোনো না মাহরাম ইসলামিক মাইন্ডেড নয়, তারা হয়ত আপনার তোলা ছবি বা আপনার সেন্ড করা ছবি দেখে ফেলল। স্পষ্ট পর্দার লঙ্ঘন হবে।
একজন মেয়ের সকল মাহরাম যে ইসলামিক মাইন্ডেড হবে এবং ঐসকল মাহরাম পুরুষরা যে ঐ মেয়ের ফোন/ফেসবুক আইডি অ্যাক্সেস পাবে না, এরকম নিশ্চয়তা দেওয়ার সুযোগ নেই।
আর সকল নন-মাহরাম পুরুষরাও ইসলামিক মাইন্ডেড হলেই যে পরিপূর্ণ দ্বীনদার হবে, পরিপূর্ণ প্র্যাকটিসিং হবে, এর নিশ্চয়তাও দেওয়া সম্ভব না। আর পরিপূর্ণ প্র্যাকটিসিং না হলে আপনার পর্দার হেফাজত হবে - এমনটা নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়।
ছবি সেন্ড করার বাইরে আপনার বান্ধবির কাছে "সেনসেটিভ" ম্যাসেজ সেন্ড করাটার ক্ষেত্রেও একই বিষয় ঘটতে পারে।
ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারের ক্ষেত্রে এসব এড়াতে "আনসেন্ড" করার সুযোগ রয়েছে। আনসেন্ড অপশনটি ব্যবহার করে ম্যাসেজের বিষয়টি থেকে পর্দার লঙ্ঘন কিছুটা ঠেকানো সম্ভব, ইন শা আল্লাহ।
কিন্তু ছবি স্টোর করে রাখার ক্ষেত্রে কখনওই ১০০% রিস্ক ফ্রি নয়। অতএব, বিষয়টি অনেকেরই হয়ত মাথায় থাকে নি, বা মাথায় আসেনি। তাকওয়ার পরিচায়ক হবে এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে তা বাস্তবায়ন করা।
লেখাঃ মুহাম্মদ রাহাত

হিজাব নিয়ে কথা

 হিজাব নিয়ে কথা

হিজাব বা পর্দা করার অন্যতম শর্ত হল 'বডি হাগিং' বা টাইট কিছু না পরা, যেটাতে শরীরের শেপ বুঝা যাবে। পায়ের শেপ এর মাঝে ইনক্লুসিভ। তাই উপরে ঢোলা টপ্স আর নিচে চাপা জিন্স পরে পর্দার কন্ডিশন ফুলফিল হয় না। দেশবিশেষে এটা 'ভ্যারি' করবে না। বাংলাদেশেও যে নিয়ম, ক্যানাডাতেও তাই, উজবেকিস্তানেও। সাইজ ৮ আপনার আইডিয়াল মাপ হলে ১১ বা ১২ পরলে খুব অসুবিধা হবার কথা না। মুসলিম দেশে হিজাব করা লাগবে আর অমুসলিম দেশে সব মাফ, এটা খুব অদ্ভুত ধারণা। উৎপত্তি কার উর্বর মাথা থেকে হয়েছে ইবলিশ বলতে পারবে since he helped out.
.
হিজাব সবার জন্য ফরজ, শুধু হুজুরনীদের জন্য না। যে পরিবারের ছেলে সদস্যরা তাদের রেসপন্সিবিলিটির আন্ডারে থাকা মেয়ে/মহিলাদের এ বিষয়ে সাবধান করে না, শিক্ষা দেয় না, তাকে দাইয়ুস বলে। উনার স্থান জাহান্নামে।
.
হিজাব মানে শুধু মাথায় কাপড় দেয়া না। এটা মডেস্টি, হায়া। হিজাব একটা এটিচ্যুড, লাইফস্টাইল। চাপা জিন্স ফতুয়া পরতে সমস্যা নেই, উপরে এমন ভাবে কিছু দিয়ে ঢেকে ফেলতে হবে যেন এসব বডি হাগিং ক্লোথ কারো নজরে না পড়ে। এনি আউটার লেয়ার। নিতান্তই না পারলে খুব ঢোলা, একেবারে আনরিভিলিং কাপড় পরতে হবে। টাইট জিন্স/লেগিং উইথ টপস পরলে যেহুতু হিজাব হবে না, ঢোলা টিউনিক পরতে পারেন। সিম্পল, লুজ, এলিগেন্ট। খেয়াল করেছেন কখনো যে কোমর পর্যন্ত টপ্স পরে হেঁটে গেলে পাশের বাড়ির বুড়া মোখলেস দাদাও আপনার পেছন পানে চেয়ে থাকে? Basic human instinct, কিচ্ছু করবার নেই।
.
হাত বের করে মাথা ঢেকে রাখার ব্যাপারটা হিজাবের নিয়ম লংঘন করে। হাফ হাতা, থ্রি কোয়াটার হাতা, বা টাইট স্লিভ পরে শুধু চুল কভার করাটা ভ্রান্তিজনক। হাত, পা (একেবারে পায়ের পাতা পর্যন্ত) আওরার অন্তর্ভুক্ত।
.
হিজাব কেন করব?
.
ফরজ তাই। জাহান্নামি না হওয়ার জন্য। কন্সেপ্টটা বুঝে নিতে হবে আগে যে it is obligatory. Optional ব্যাপার স্যাপার নাই এখানে। যেটার বিধান স্পষ্টত ফরজ সেখানে প্রপার হিজাব না করাটা সিম্পলি বেয়াদবি, এখানে কোন এক্সকিউয খাটে না। নূন্যতম ঢোলা কাপড়টা পরেন যাতে মামা চাচা দুলাভাই আপনার বডি ডাইমেনশন্স মানসপটে এঁকে ফেলতে না পারে। সবাই যে ওঁৎ পেতে আছে আপনার শরীর মাপার জন্য তা না, কিন্তু কে কে মাপবে না তার নিশ্চয়তা কে দিচ্ছে?
.
'কেন আমাকে ঢেকেঢুকে চলতে হবে? ছেলেরা কেন হিজাব করবে না? আমি এত হুজুর না। এত কি মানা সম্ভব? দেবর, দুলাভাই তো নিজের ভাইয়ের মতন। ওদের সামনে হিজাব কেন করা লাগবে?' এসব বাচ্চা বাচ্চা প্রশ্ন আমাকে করবেন না প্লিয। এখনো যদি we can't grow up, তাহলে আল্লাহ্‌ মাফ করুক, হয়ত আমাদের অন্তরে সিল মারা হয়ে গেছে।
.
হিজাব না করলে কি হবে?
.
সেটা আল্লাহ্‌ আর আপনার মাঝের ব্যাপার। তবে যে জেনেশুনে তার প্রভুর কথা অমান্য করল, তার প্রভু তাকে অনুগ্রহ করবেন এটা আশা করা বিশাল লিপ অফ 'ফেইথ'। এতটা সিলি কারই হওয়া উচিত না।
.
পরে করব, মন থেকে আসলে করব, বুড়া হয়ে করব এসব খুব দুঃখজনক কথা। আপনার 'মন থেকে না আসলে' নিশ্চয়ই আপনি খাওয়া, টয়লেট বন্ধ করে রাখেন না। It's not optional.
.
বর্তমানে হিজাব করে আগের এলোমেলো বাতাসে উড়ানো খোলা চুলের ছবি দিলে হিজাব করার মানেটাই তো 'The End' হয়ে গেল, তাই না? সবাই তো আপনার লুকায়িত সৌন্দর্য দেখেই ফেলল।
.
'আমার মা হিজাব করে না, কিন্তু অনেক পরহেজগার।' Well, আল্লাহ্‌ কাস্টোমাইজড রুলিং দেন নাই, ছাড় দিয়েছে ক্ষেত্রবিশেষে করুণা করে। To think we are inclusive in that ছাড়, কি ভয়ংকর এক আশা!
.
নিজে হিজাব করে সন্তানকে মিনি মিনি বারবি জামা পরাবেন না প্লিজ। ভয়ংকর কিছু মানসিক রোগী সবখানেই বিচরণ করে। শালীনতা has no age limit, so the earlier you start, the better.
বইঃ হিজাব আমার পরিচয় 🖤

Sunday, July 25, 2021

গায়েরে_মাহরাম_বলতে_কি_বুঝায়,

 

গায়েরে_মাহরাম_বলতে_কি_বুঝায়,
 
 
তা আমরা অনেকেই জানি না?
যে সকল পুরুষের সামনে যাওয়া তাদের সাথে বিনা প্রয়োজনে কথা বলা, দুষ্টামি মজা রসিকতা করা ইসলামি শারিয়্যাহতে জায়েজ নয় হারাম এবং যাদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বৈধ তাদের কে গায়রে মাহরাম বলে। বস্তুতঃ গায়রে মাহরামের সামনে একান্ত অপারগ হয়ে যদি যাওয়াই লাগে তবে নারী ইসলামিক ভাবে পরিপূর্ণ পর্দা করে সামনে যেতে হবে এবং নম্র কোমল কন্ঠে / ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলা যাবে না।
জানেন কি, গায়রে মাহরাম কারা?
সহজ ভাষায় মাহরাম পুরুষ বাদে সমস্ত বিশ্বে-মহাবিশ্বে যত পুরুষ আছে সবাই গায়রে মাহরাম।
নিজ পরিবারে (কাজিন) চাচাত/খালাত/মামাত/­ফুপাত ভাই, দুলাভাই, দেবর, ভাসুর, সমস্ত চাচা শ্বশুর, মামা শ্বশুর, খালু ও ফুপা শ্বশুর, নিজ খালু/ফুপা এরা সবাই গায়রে মাহরাম। শুধু (আপন দাদা,নানা,শ্বশুর বাদে)
তাদের সামনে নিজেকে প্রদর্শন করা আল্লাহর হুকুমের অবাধ্যতা করা। মাহরাম ছাড়া সকল পুরুষের সামনে পর্দা করতে হবে।
ভাবছেন, এরা তো আপনার ফ্যামিলি, আপনার নিকটাত্মীয়, এদের সামনে যাওয়া কেন নিষেধ হবে....? নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা যা জানেন, অবশ্যই আপনি তা জানেন না।
ইসলামের এই বিধান শুধুমাত্র আখিরাতের নাজাতেরই উপায় নয় বরং আমাদের দুনিয়ার জীবনের শান্তি, স্বস্তি এবং পবিত্রতারও রক্ষাকবচ।
নারীর ১৪ জন মাহরাম পুরুষ কারা এক নজরে দেখে নিন-
১. স্বামীঃ (দেখা দেওয়া, সৌন্দর্য প্রদর্শনের প্রেক্ষিতে মাহরাম)
২. পিতা, দাদা, নানা ও তাদের উর্ধ্বতন পুরুষগণ মাহরাম।
৩. শ্বশুর, আপন দাদা শ্বশুর ও নানা শ্বশুর এবং তাদের উর্ধ্বতন পুরুষগণ মাহরাম।
৪. আপন ছেলে, ছেলের ছেলে, মেয়ের
ছেলে ও তাদের ঔরসজাত পুত্র সন্তান এবং আপন মেয়ের স্বামী মাহরাম।
৫. স্বামীর অন্য স্ত্রীর গর্ভজাত পুত্র অর্থাৎ সৎ ছেলে মাহরাম।
৬. আপন ভাই, সৎ ভাই মাহরাম।
৭. ভাতিজা অর্থাৎ, আপন ভাইয়ের ছেলে এবং সৎ ভাইয়ের ছেলে মাহরাম।
৮. ভাগ্নে অর্থাৎ, আপন বোনের ছেলে এবং সৎ বোনের ছেলে মাহরাম।
৯. এমন বালক যার মাঝে মহিলাদের প্রতি কোন আকর্ষণ নেই অর্থাৎ পাগল ও শিশু।
১০. দুধ সম্পর্কীয় পিতা, দাদা, নানা, চাচা, মামা এবং তাদের উর্ধ্বতন পুরুষগণ মাহরাম।
১১. দুধ ভাই, দুধ ভাইয়ের ছেলে, দুধ বোনের ছেলে এবং তাদের ঔরসজাত যে কোন পুত্র সন্তান মাহরাম।
১২. দুধ সম্পর্কীয় ছেলে, তার ছেলে, দুধ সম্পর্কীয় মেয়ের ছেলে এবং তাদের ঔরসজাত যে কোন পুত্র সন্তান। এবং দুধ সম্পর্কীয় মেয়ের স্বামী মাহরাম। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ৫০৯৯, মুসলিম শরীফ হাদীস নং ১১৪৪)
১৩. আপন চাচা, সৎ চাচা।
১৪. আপন মামা, সৎ মামা।
উপরোক্ত পুরুষ যাদের সাথে দেখা দিতে পারবে তারা ছাড়া অন্য সমস্ত পুরুষকে দেখা দেওয়া সম্পূর্ণ নাজায়েয এবং সৌন্দর্য প্রদর্শন হারাম।
ভাবছেন, মাহরাম/গায়রে মাহরাম কি শুধু মেয়েদের জন্যই প্রযোজ্য, পুরুষরা স্বাধীন?
না, মোটেও তা নয়। পুরুষের জন্যও মাহরাম/গায়রে মাহরাম বিধান প্রযোজ্য।
পুরুষদের জন্যও মাহরাম নারী ১৪ জন। তারা হল-
মায়ের মত ৫ জন,
মা, খালা, ফুফু, শাশুড়ি, দুধ-মা।
বোনের মত ৫ জন,
বোন, দাদি, নানি, নাতনি, দুধ-বোন।
মেয়ের মত ৪ জন,
মেয়ে, ভাই-এর মেয়ে, বোনের মেয়ে, ছেলের বউ।
"মুমিন পুরুষদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয় তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত।" [সূরা আন্-নূর(২৪), আয়াত: ৩০]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আমাদের সকলকে তাঁর বিধি-বিধান মেনে চলার তৌফিক দান করুন।

Saturday, July 17, 2021

দাম্পত্যজীবন, অজ্ঞতা ও পরিণাম -মাওলানা আবু তাহের মেসবাহ Marriage education series

 May be an image of ‎text that says '‎(হ যুবক! বিয়ে করবে? বিবাহ করবেন বা বিবাহ ന উপযুক্ত এমন সকল যুবকেরই উচিত পোস্টটি পড়া! ফ্যান্টাসিযুক্ত হাজার পোস্ট অনলাইনে ঘুরাঘুরি করলেও এমন মূল্যবান লিখনী খুব কমই পাবেন! [বিস্তারিত মূল পোস্টে, লেখকঃমাওলানা আবু তাহের মিসবা] أخلاق আখলাক WWW.FACEBOOK.COM/BDAKHLAQ‎'‎

 

"যারা বিয়ে করেছেন বা বিয়ে করেন নি তারা লেখাটা একবার হলেও পড়বেন এবং শেয়ার করে দিবেন দয়া করে, একটিই লেখায় আপনার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।"
দাম্পত্যজীবন, অজ্ঞতা ও পরিণাম
-মাওলানা আবু তাহের মেসবাহ
===========================
(১৪৩৩ হি. শা‘বান মাসে এক খাছ মজলিসে এক বিশেষ উপলক্ষে আদীব হুজুরের একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা। মুসাজ্জিলা থেকে তা পত্রস্থ করা হল)
কিছু দিন আগে আমার এক প্রিয় তালিবে ইলম দেখা করতে এসে বললো, হুযূর, আগামী পরশু আমার বিবাহ। চমকে উঠে তাকালাম। বড় ‘বে-চারা’ মনে হলো। কারণ আমিও একদিন বড় অপ্রস্ত্তত অবস্থায় জেনেছিলাম, আগামীকাল আমার বিবাহ! ভিতর থেকে হামদরদি উথলে উঠলো। ইচ্ছে হলো তাকে কিছু বলি, যিন্দেগির এই নতুন রাস্তায় চলার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু পাথেয়, আল্লাহর তাওফীকে তাকে দান করি। আল্লাহর তাওফীক ছাড়া আমরা কেই বা কী করতে পারি!
তো তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, বিবাহের জন্য কী প্রস্ত্ততি নিয়েছো? বড় ভোলাভালা নও জোয়ান! সরলভাবে বললো, আমার কিছু করতে হয়নি, সব প্রস্ত্ততি আববা -আম্মাই নিয়েছেন। কেনা-কাটা প্রায় হয়ে গেছে, শুধু বিয়ের শাড়ীটা বাকি।
অবাক হলাম না, তবে দুঃখিত হলাম, আমার এই প্রিয় তালিবে ইলম এখন একজন যিম্মাদার আলিমে দ্বীন। দীর্ঘ কয়েক বছর আমাদের ছোহবতে ছিলো, তার কাছে বিবাহের প্রস্ত্ততি মানে হলো জিনিসপত্র এবং বিয়ের শাড়ী! তাহলে অন্যদের অবস্থা কী?!
বড় মায়া লাগলো; বললাম, দেখো, মানুষ যে কোন কাজ করতে চায়, প্রথমে সে ঐ বিষয়ে প্রয়োজনীয় শিক্ষা গ্রহণ করে। কাজটির হাকীকত ও উদ্দেশ্য কী? কাজটি আঞ্জাম দেয়ার সঠিক পন্থা কী? শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কী কী সমস্যা হতে পারে, সেগুলোর সমাধান কী? এগুলো জেনে নেয়। এজন্য দস্ত্তর মত আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার আয়োজন আছে, এমনকি বাস্তব প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা আছে।
অথচ জীবনের সবচে’ কাঠিন ও জটিল অধ্যায়ে মানুষ প্রবেশ করে, বরং বলতে পারো ঝাঁপ দেয়, কিছু না শিখে, না জেনে এবং না বুঝে একেবারে অপ্রস্ত্তত অবস্থায়। ফল কী হতে পারে?! কী হয়?! অন্যদের কথা থাক, চোখের সামনে আমার ক’জন ছাত্রের ঘর ভেঙ্গে গেলো! একজনের তো এমনকি দু’জন সন্তানসহ। কিংবা ঘর হয়ত টিকে আছে, কিন্তু শান্তি নেই। স্বাভাবিক শান্তি হয়ত বজায় আছে, কিন্তু বিবাহ যে দুনিয়ার বুকে মানবের জন্য আল্লাহর দেয়া এক জান্নাতি নেয়ামত, সুকূন ও সাকীনাহ, সে খবর তারা পায়নি, শুধু অজ্ঞতার কারণে, শুধু শিক্ষার অভাবে।
আশ্চর্য, মা-বাবা সন্তানকে কত বিষয়ে কত উপদেশ দান করেন; উস্তাদ কত কিছু শিক্ষা দেন, নছীহত করেন, কিন্তু জীবনের সবচে’ কঠিন ও জটিল বিষয়টি কেন যেন তারা সযত্নে এড়িয়ে যান!
তাকে বললাম, যদিও তুমি এ উদ্দেশ্যে আসোনি তবু তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই, যা ইনশাআল্লাহ আগামী জীবনে তোমার কাজে আসবে।
খুব জযবা ছিলো, অবেগের তোড় ছিলো, ‘দিল কো নিচোড় ক্যর’, বাংলায় যদি বলি তাহলে বলবো, হৃদয় নিংড়ে, কিন্তু দিল কো নিচোড়না-এর ভাব হৃদয় নিংড়ানোতে আসবে কোত্থেকে! যাক, বলছিলাম, হৃদয়টাকে নিংড়ে কিছু কথা তাকে বলেছিলাম। পরে আফসোস হলো যে, কথাগুলো তো সব হাওয়ায় উড়ে গেলো, যদি বাণীবদ্ধ করে রাখা যেতো কত ভালো হতো! হয়ত আল্লাহর বহু বান্দার উপকারে আসতো। শেষে বললাম, এককাজ করো, এ কথাগগুলোর খোলাছা কাগজে লিখে আমাকে দেখিও।
আগামী পরশুর বিয়ের খবর দিয়ে ছেলেটা সেই যে গেলো, তিন বছরে আর দেখা নেই! দাম্পত্য জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিভিন্ন সময় দরসেও আমি অনেক কথা বলেছি। ‘সবচে’ বেশী বলেছি আমার নূরিয়ার জীবনের প্রিয় ছাত্র (বর্তমানের হাতিয়ার হুযূর)
মাওলানা আশরাফ হালীমীকে, আশা করি তিনি সাক্ষ্য দেবেন, অনেকবার বলেছেন, আমার কথাগুলো তার জীবনে বে-হদ উপকারে এসেছে। আরো অনেকে বলেছে, কিন্তু কথাগুলো কেউ ‘কলমবন্দ’ করেনি।
তো এখন এই উপলক্ষকে কেন্দ্র করে তোমাদের মজলিসে ঐ কথাগুলো আবার বলতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু আফসোস, সেই আবেগ ও জযবা তো এখন নেই যা ঐ প্রিয় তালিবে ইলমকে বলার সময় ছিলো।
আবেগভরা দিলের কথা তো রসভরা ইক্ষু, আর শুধু চিন্তা থেকে বলা কথা হলো রস নিংড়ে নেয়া ইক্ষুর ছোবা! তবু কিছু না কিছু ফায়দা তো ইনশাআল্লাহ হবে।
আমি আমার প্রিয় ছাত্রটিকে বলেছিলাম, এখন তোমার জীবনের এই যে নতুন অধ্যায় শুরু হচ্ছে উর্দূতে এটাকে বলে ইযদিওয়াজী যিন্দেগী, বাংলায় বলে দাম্পত্য জীবন, অর্থাৎ এটা জীবন ও যিন্দেগির খুবই এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ, শুধু গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং অত্যন্ত জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ। এটা তোমাকে ঘাবড়ে দেয়ার জন্য বলছি না; প্রয়োজনীয় প্রস্ত্ততি গ্রহণ ও পাথেয় সংগ্রহ করার জন্য বলছি, যাতে পূর্ণ আস্থা ও সাহসের সঙ্গে তুমি তোমার এই নতুন জীবন শুরু করতে পারো। আল্লাহ যদি সাহায্য করেন তাহলে সবই সহজ।
এটা যে শুধু তোমার ক্ষেত্রে হচ্ছে তা নয়! আমার জীবনেও হয়েছে, আমার মা-বাবার জীবনেও হয়েছে! তোমার মা-বাবাও একদিন এ জীবন শুরু করেছিলেন। যদি সহজ ও অন্তরঙ্গ সম্পর্ক থাকে তাহলে তোমার মাকে, বাবাকে জিজ্ঞাসা করতে পারো, কীভাবে তারা এ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এসেছেন? জীবনের শুরুতে তারা কী ভেবেছিলেন, কী চেয়েছিলেন, কী পেয়েছেন?
কখন কী সমস্যা হয়েছে, সেগুলো কীভাবে সমাধান করেছেন। এই জীবনের শুরুতে তোমার প্রতি তাদের কী উপদেশ? এধরনের সহজ আন্তরিক আলোচনায় সংসার জীবনের পথচলা অনেক সহজ হয়ে যায়। অবশ্য সব মা-বাবার সঙ্গে সব সন্তানের এমন সহজ সম্পর্ক থাকে না, তবে থাকা উচিত। জীবনের যে কোন সমস্যার সমাধানের জন্য সন্তান মা-বাবার কাছেই আসবে, মা-বাবাকেই নিরাপদ আশ্রয় মনে করবে, বন্ধুবান্ধবকে নয়। কঠিন সমস্যার মুখে একজন অপরিপক্ব বন্ধু কীভাবে সঠিক পথ দেখাতে পারে! কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটাই ঘটে। সন্তান মা-বাবাকে ভয় করে, হয়ত কোন জটিলতায় পড়েছে; তখন তাদের প্রথম চেষ্টা হয় যে, মা-বাবা যেন জানতে না পারে, কারণ তাদের কানে গেলে সর্বনাশ! ছেলে তার বন্ধুর শরণাপন্ন হয়, মেয়ে তার বান্ধবীর কাছে বলে, তারা তাদের মত করে পরামর্শ দেয়। ফলে অবস্থা আরো গুরুতর হয়।
অতীতে যাই ছিলো, এখন তো অপরিহার্য হয়ে পড়েছে, মা-বাবার জন্য সন্তানের বন্ধু হওয়া। বিপদে সমস্যায় সন্তানকে তিরস্কার পরে করা, আগে তার পাশে দাঁড়ানো। তাহলে সন্তান আরো বড় অন্যায় করা থেকে এবং আরো গুরুতর অবস্থায় পড়া থেকে বেঁচে যায়। কিন্তু এখন অবস্থা হলো, সন্তান মা-বাবাকে ভয় করে, বন্ধুকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল মনে করে। আমার ছেলেকে আমি এটা বোঝাতে চেয়েছি এবং আশা করি, কিছুটা বোঝাতে পেরেছি। অনেক সমস্যা থেকে সে রক্ষা পেয়েছে, কারণ সবার আগে সে আমার কাছে এসেছে, আর আমি বলেছি, ভয় নেই, আমি তোমার পাশে আছি। আগে তাকে সাহায্য করেছি, তারপর প্রয়োজনে দরদের সঙ্গে তিরস্কার করেছি, বা শিক্ষা দিয়েছি। বন্ধুর কাছে আগে পাওয়া যায় সাহায্য, মা-বাবার কাছ থেকে আগে আসে তিরস্কার। তাই সন্তান সমস্যায় পড়ে মা-বাবার কাছে আসে না, বন্ধুর কাছে আসে। এভাবে নিজের কারণেই সবচে’ কাছের হয়েও মা-বাবা হয়ে যায় দূরের, আর দূরের হয়েও বন্ধু হয়ে যায় কাছের। সন্তানের সমস্যা বন্ধু জানে সবার আগে। মা-বাবা জানে সবার পরে, পানি যখন মাথার উপর দিয়ে চলে যায় তখন।
তো আমি আশা করছি, জীবনের অন্যসকল ক্ষেত্রে যেমন তেমনি, আল্লাহ না করুন দাম্পত্যজীবনে যদি কোন রকম সমস্যার সম্মুখীন হয় তাহলে সন্তান সবার আগে আমার কাছে আসবে, তার মায়ের কাছে আসবে, আমাদের উপদেশ, পরামর্শ নেবে।
আলহামদু লিল্লাহ, সেই রকমের সহজ অন্তরঙ্গ সম্পর্কই সন্তানের সঙ্গে আমার, আমাদের।
আমার প্রিয় ছাত্রটিকে বললাম, কথা অন্য দিকে চলে গেছে, তো এই প্রসঙ্গে তোমাকে একটি আগাম নছীহত করি; আজ তোমরা স্বামী-স্ত্রী, দু’দিন পরেই হয়ে যাবে, মা এবং বাবা। সেটা তো জীবনের আরো কঠিন, আরো জটিল অধ্যায়। আমি প্রায় বলে থাকি, প্রাকৃতিক নিয়মে মা-বাবা হয়ে যাওয়া খুব সহজ। কিন্তু আদর্শ মা-বাবা হওয়ার জন্য প্রয়োজন দীর্ঘ শিক্ষা ও দীক্ষা। তো তোমরা দু’জন জীবনের শুরু থেকেই শিক্ষা গ্রহণ করতে শুরু করো যে, একটি মেয়ে কীভাবে একজন আদর্শ মা হতে পারে এবং একটি ছেলে কীভাবে একজন আদর্শ বাবা হতে পারে! আগে বলেছিলাম একটি নছীহত, এখন বলছি দু’টি নছীহত।
সন্তানের সামনে কখনো তার মাকে অসম্মান করো না। তোমাকে মনে রাখতে হবে, সে তোমার স্ত্রী, কিন্তু তোমার সন্তানের মা, তোমার চেয়েও অধিক শ্রদ্ধার পাত্রী। সন্তান যেন কখনো, কখনোই মা-বাবাকে ঝগড়া-বিবাদ করতে না দেখে। এ নছীহত আমি তোমাকে করছি, আল্লাহর শোকর নিজে আমল করে। আমার বড় সন্তানের বয়স ত্রিশ বছর, এর মধ্যে কখনো সে আমাদের বিবাদ করতে এমনকি তর্ক করতেও দেখেনি। দ্বিতীয়ত তোমরা উভয়ে সন্তানের বন্ধু হওয়ার চেষ্টা করো, এমন বন্ধু যাকে নিজের মনের কথা, সব কথা নিঃসঙ্কোচে জানাতে পারে।
আগের কথায় ফিরে আসি; আগামীপরশু তোমার বিবাহ। তার মানে, আজ তুমি নিছক একটি যুবক ছেলে, অথচ আগামী পরশু হয়ে যাচ্ছো, একজন দায়িত্ববান স্বামী। কত বিরাট পার্থক্য তোমার আজকের এবং আগামী পরশুর জীবনের মধ্যে। বিষয়টি তোমাকে বুঝতে হবে। কেন তুমি বিবাহ করছো? বিবাহের উদ্দেশ্য কী? দেখো, আমাদের দেশে পারিবারিক পর্যায়ে একটা নিন্দনীয় মানসিকতা হলো, সংসারের প্রয়োজনে, আরো খোলামেলা যদি বলি, কাজের মানুষের প্রয়োজনে ছেলেকে বিয়ে করানো। সবাই যে এমন করে তা নয়, তবে এটা প্রবলভাবে ছিলো, এখনো কিছু আছে। আমি নিজে সাক্ষী, আমার একজন মুহতারাম তাঁর মেয়েকে বিয়ে দিলেন, বিয়ে হওয়ামাত্র ছেলের বাবা স্বমূর্তি ধারণ করে বলতে লাগলেন, আর দেরী করা যাবে না, তাড়াতাড়ি মেয়ে বিদায় করেন। মেয়ের মা ও বাবা তো হতবাক!
মেয়ে বিদায় হলো। শশুরবাড়ীতে রাত পোহালো, আর পুত্রবধুর সামনে কাপড়ের স্ত্তপ নিক্ষেপ করে শাশুড়ী আদেশ করলেন, কাপড়ে সাবান লাগাও, দেখি, মায়ের বাড়ী থেকে কেমন কাজ শিখে এসেছো!
আমার এক ছাত্রের কথা, বিয়ের প্রয়োজন। কেন? কারণ মা-বাবার খেদমত করার কেউ নেই।
এটা কিন্তু বিবাহের উদ্দেশ্য বা মাকছাদ হতে পারে না। মা-বাবার খেদমত মূলত তোমার দায়িত্ব। এখন সে যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে তোমার সাথে এতে শরীক হয়, তবে সেটা তোমাদের উভয়ের জন্য সৌভাগ্যের কারণ হতে পারে। দেখো, আল্লাহ চাহে তো অচিরেই আমাদেরও ঘরে পুত্রবধু আসবে। আমরা আমাদের না দেখা সেই ছোট্ট মেয়েটির প্রতীক্ষায় আছি। কিন্তু আমি আমার পুত্রকে অবশ্যই বলবো, বিবাহের উদ্দেশ্য মা-বাবার খেদমত করা হতে পারে না।
আমি দু’আ করি, তোমার মা-বাবা তোমার যেমন, তেমনি তোমার স্ত্রীরও যেন মেহেরবান মা-বাবা হতে পারেন। আমার দুই মেয়ের শশুর, দু’জনই এখন জান্নাতবাসী (ইনশাআল্লাহ)। আল্লাহর কাছে আমার সাক্ষ্য এই যে, সত্যি সত্যি তারা আমার মেয়েদু’টির ‘বাবা’ ছিলেন। আমার ছোট মেয়ের শশুর বড় আলিম ছিলেন, তাঁকে আমার একটি বই হাদিয়া দিয়েছিলাম এভাবে, ‘সাফফানার আববুর পক্ষ হতে সাফফানার আববাকে’। তিনি খুশী হয়ে অনেক দু’আ করেছিলেন, আর বলেছিলেন, ‘আপনি তো এই ছোট্ট একটি বাক্যে সম্পর্কের মহামূল্যবান এক দর্শন তুলে ধরেছেন!
আমার বড় মেয়ের অবস্থা হলো, মায়ের বাড়ী থেকে যাওয়ার সময় সে কাঁদে না, কাঁদে ‘আম্মার’ বাড়ী থেকে আসার সময়।
দুআ’ করি, আমার দেশের প্রতিটি মেয়ে যেন মা-বাবার ঘর থেকে এমন মা-বাবার ঘরে প্রবেশ করতে পারে। আর তুমি দু’আ করো, আমরা দু’জন যেন আমাদের অনাগত মেয়েটির জন্য তেমন মা-বাবাই হতে পারি।
তো বলছিলাম বিবাহের উদ্দেশ্যের কথা। বৈধ উপায়ে স্ত্রীপরিচয়ে কাউকে ভোগ করা, এটাও বিবাহের উদ্দেশ্য বা মাকছাদ হতে পারে না।
স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে বলা হয় শরীকে হায়াত, জীবনসঙ্গী এবং জীবনসঙ্গিনী। বস্ত্তত এই শব্দটির মধ্যেই দাম্পত্য জীবনের সুমহান উদ্দেশ্যটি নিহিত রয়েছে। আর যদি কোরআনের ভাষায় বলি তাহলে বিবাহের উদ্দেশ্য হল,
هن لباس لكم وانتم لباس لهن
তুমি তো কোরআন বোঝো। ভেবে দেখো, দাম্পত্য-সম্পর্কের কী গভীর তাৎপর্য এখানে নিহিত!
পেয়ারা হাবীব ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বিবাহ হচ্ছে আমার সুন্নত। আর বলেছেন, যে আমার সুন্নতের প্রতি বিমুখ হবে সে আমার উম্মতভুক্ত নয়।
বিবাহ নবীর সুন্নত! সুতরাং সহজেই বোঝা যায়, বিরাট ও মহান কোন মাকছাদ রয়েছে এর পিছনে।
বিবাহের আসল মাকছাদ বা উদ্দেশ্য হলো স্বামী ও স্ত্রী- এই পরিচয়ে একটি নতুন পরিবার গঠন করা এবং মা ও বাবা- এই পরিচয়ে সন্তান লাভ করা। তারপর উত্তম লালন-পালন এবং আদর্শ শিক্ষা-দীক্ষা ও তারবিয়াতের মাধ্যমে নেক সন্তানরূপে গড়ে তুলে দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণ করা, যাতে নস্লে ইনসানি বা মানববংশ কেয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর পছন্দমত আগে বাড়তে থাকে।
এটাই হলো বিবাহের আসল উদ্দেশ্য; অন্য যা কিছু আছে তা সব পার্শ্ব-উদ্দেশ্য। তো এখনই তুমি নিয়ত ঠিক করে নাও যে, কেন কী উদ্দেশ্যে বিবাহ করবে। উদ্দেশ্য যদি ঠিক হয়ে যায় তাহলে দেখতে পাবে, আল্লাহ চাহে তো এখনই তোমার ভিতরে কত সুন্দর পরিবর্তন আসছে! কী আশ্চর্য এক পরিপূর্ণতা নিজের মধ্যে অনুভূত হচ্ছে! আগামী জীবনের সকল দায়দায়িত্ব পালন করার জন্য গায়ব থেকে তুমি আত্মিক শক্তি লাভ করছো। আল্লাহ তাওফীক দান করেন।
এবার আসো জীবনের
বাস্তবতার কথা বলি, এতদিন তোমার জীবনে ছিলেন শুধু তোমার মা, যিনি তোমাকে গর্ভে ধারণ করেছেন, প্রসববেদনা ভোগ করেছেন। নিজেকে তিলে তিলে ক্ষয় করে তোমাকে প্রতিপালন করেছেন। এতদিন তোমার উপর ছিলো তাঁর অখন্ড অধিকার। হঠাৎ তিনি দেখছেন, তাঁর আদরের ধন, তাঁর অাঁচলের রত্ন পুত্রের জীবনে স্ত্রীপরিচয়ে অন্য এক নারীর প্রবেশ (অনুপ্রবেশ?) ঘটেছে! এভাবে পুত্রের উপর তার অখন্ড অধিকার খন্ডিত হতে চলেছে। যে পুত্র ছিলো এতদিন তাঁর একক অবলম্বন, এখন সে হতে চলেছে অন্য এক নারীর অবলম্বন। এ বাস্তবতা না তিনি অস্বীকার করতে পারছেন, না মেনে নিতে পারছেন। সংসারে প্রত্যেক মায়ের জীবনে এ কঠিন সময়টি আসে। এমন এক অর্ন্তজ্বালা শুরু হয় যা শুধু তিনি নিজেই ভোগ করেন, কাউকে বোঝাতে পারেন না, এমনকি এতদিনের আদরের ধন পুত্রকেও না। ফলে সামান্য সামান্য কারণে, এমনকি অকারণেও তিনি খুব সংবেদনশীল হয়ে পড়েন; তাঁর অনুভূতি আহত হয়। এমন সময় ছেলে (এবং তার স্ত্রী অজ্ঞতা, অনভিজ্ঞতা ও অপিরপক্বতার কারণে) যদি অসঙ্গত কিছু বলে বা করে বসে তাহলে তো মায়ের মনে কষ্টের শেষ থাকে না। প্রসববেদনা থেকে শুরু করে প্রতিপালনের সব কষ্ট একসঙ্গে মনে পড়ে যায়।
আম্মার কাছে শুনেছি, গ্রামের এক মা তার পুত্রবধুকে বলেছিলেন, ‘ততা ফানি আমি খাইছিলাম, না তুই খাইছিলি?’
তখনকার যুগে প্রসবপরবর্তী বেশ কিছু দিন মা ও শিশুর স্বাস্থ্যগত কল্যাণ চিন্তা করে মাকে গরম পানি খেতে দেয়া হতো, ঠান্ডা পানি দেয়া হতো না।
তো কথাটা কিন্তু নির্মম। আমার জন্য ‘তাতানো পানি’ আমার মা খেয়েছেন, আমার সব আবর্জনা আমার মা পরিস্কার করেছেন। নিজের জীবন তিলে তিলে ক্ষয় করে তিনি আমাকে বড় করেছেন, উপযুক্ত করেছেন। সেই সব কষ্টের সুফল হঠাৎ করে অন্য একটি মেয়ে এসে অধিকার করে বসেছে। তখন সব হারানোর একটা বেদনা তাকে কুরে কুরে খায়। তো তোমার মায়ের অন্তরেও এরকম অনুভূতি হওয়া স্বাভাবিক। মায়ের মনের এই কষ্টের উপশম, এই বেদনার সান্ত্বনা তোমাকেই চিন্তা করতে হবে।
মায়ের পর দ্বিতীয় পর্যায়ে আসে বাবার কথা, তারপর ভাই-বোনদের কথা। (এসম্পর্কেও ছাত্রটিকে বিশদভাবে বলেছিলাম।)
তৃতীয়ত তোমার স্ত্রী। যদিও তৃতীয় বলছি, কিন্তু বাস্তবে এটাই হলো সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ এবং সবচে’ নাযুক। তবে এটা থাকবে তোমার দিলে, তোমার অন্তরে। মা-বাবার সামনে মুখের কথায় বা আচরণে এটা প্রকাশ করা প্রজ্ঞার পরিচায়ক হবে না।
কেন বলছি স্ত্রীর বিষয়টি সবচে’ নাযুক? তার আগে আমার একটি প্রশ্নের উত্তর দাও; কোন বিবাহে কোন ছেলেকে কাঁদতে দেখেছো?! কোন ছেলের মা-বাবাকে বিষণ্ণ দেখেছো?! দেখোনি; (হয়তো ব্যতিক্রম এক দুইটি ঘটনা থাকতে পারে। কিন্তু সাধারণ অবস্থা এটিই, এদের কেউ কাঁদে না।) কেন? কারণ বিবাহের মাধ্যমে ছেলে কিছু হারায় না, ছেলের মা-বাবা কিছু হারায় না, বরং অর্জন করে। তাই তাদের মুখে থাকে অর্জনের হাসি এবং প্রাপ্তির তৃপ্তি।
বিবাহের আসরে কাঁদে শুধু মেয়ে, আর মেয়ের মা-বাবা। কেন কাঁদে একটি মেয়ে? কারণ তাকে সবকিছু হারাতে হয়, সবকিছু ত্যাগ করতে হয়। মা-বাবাকে ছেড়ে আসতে হয়, শৈশবের সব স্মৃতি তাকে মুছে ফেলতে হয়। একটি ছোট্ট মেয়ের জীবনে এটি অনেক বড় আঘাত। এ যেন একটি ছোট্ট গাছের চারাকে শিকড়শুদ্ধ উপড়ে ফেলে বহু দূরে ভিন্ন পরিবেশে নতুন মাটিতে এনে রোপণ করা। বাকি জীবন তাকে এই মাটি থেকেই রস আহরণ করে বেঁচে থাকতে হবে।
হিন্দিতে বলে, ‘আওর‌্যত কী ডোলী যাহা উত্যরতী হ্যয়, উসকী আর্থী ওহীঁ সে উঠতি হ্যয়।’ অর্থাৎ মেয়েদের পালকি যেখানে গিয়ে নামে, সেখান থেকেই তার জানাযা ওঠে।
কত বড় নির্মম সত্য! তো তোমার স্ত্রীরূপে তোমার ঘরে আসা এই ছোট্ট মেয়েটির যখমি দিলে তাসাল্লির মরহম তোমাকেই রাখতে হবে। একমাটি থেকে উপড়ে এনে আরেক মাটিতে রোপণ করা একটি চারাগাছ থেকে দু’দিন পরেই ফল দাবী করা কতটা নিষ্ঠুরতা! ফল পেতে হলে তোমাকে ধৈর্য ধরতে হবে। চারা গাছটির পরিচর্যা করতে হবে, সকাল-সন্ধ্যা তার গোড়ায় পানি দিতে হবে। ধীরে ধীরে শিকড় যখন মাটিতে বসবে এবং মাটি থেকে রস সংগ্রহ করার উপযুক্ত হবে, তখন তোমাকে ফল চাইতে হবে না; সজীব বৃক্ষ নিজে থেকেই ফল দিতে শুরু করবে।
কত আফসোসের বিষয়, দাম্পত্য জীবনের শুরুতে যত আদেশ-উপদেশ সব ঐ ছোট্ট মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বর্ষিত হয়। প্রথম দিনেই তাকে শুনতে হয়, এখন থেকে তাকে স্বামীর মন জয় করতে হবে, শশুর-শাশুড়ি সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে, শশুর বাড়ীর সবার মন যুগিয়ে চলতে হবে। তার নিজের যেন কোন ‘মন’ নেই। সুতরাং সেটা জয় করারও কারো গরজ নেই।
তো মায়ের মন তোমাকেই রক্ষা করতে হবে, আবার স্ত্রীর মনোরঞ্জনও তোমাকেই করতে হবে। সবদিক তোমাকেই শামাল দিয়ে চলতে হবে। কত কঠিন দায়িত্ব! অথচ না শিক্ষাঙ্গনে, না গৃহপ্রাঙ্গণে, কোথাও এ সম্পর্কে শিক্ষার নূন্যতম কোন ব্যবস্থা নেই। সম্পূর্ণ অপ্রস্ত্তত অবস্থায় দু’টি অপরিপক্ব তরুণ-তরুণীকে যেন সংসার সমুদ্রে ভাসিয়ে দেয়া! মেয়েটিও জানে না, আজ থেকে সে আর ছোট্ট মেয়েটি নেই। সে এখন স্ত্রী হয়ে একটি অপরিচিত মানুষের জীবনে প্রবেশ করছে, যার মা আছে, বাবা আছে, ভাইবোন আছে এবং তাদের প্রতি তার স্বামীর অনেক দায়-দায়িত্ব আছে। সহানুভূতির সঙ্গে কোমলাতার সঙ্গে এই দায়িত্ববোধ কেউ তার মধ্যে জাগ্রত করে দেয়নি। এ দোষ কার!
তো আমার প্রিয় ছাত্রটিকে বলেছিলাম, কথা দ্বারা আচরণ দ্বারা তোমার মাকে তুমি বোঝাবে, মা, আমি আপনারই ছিলাম, আছি এবং থাকবো। স্ত্রী হলো আমার জীবনের নতুন প্রয়োজন; আপনি আমার প্রাণ, আপনার সঙ্গে আমার নাড়ির টান।
অন্যদিকে স্ত্রীকে বোঝাতে হবে, এই সংসার সমুদ্রে তুমি একা নও; আমি তোমার পাশে আছি। নতুন জীবনে চলার পথে আমারও অনেক কষ্ট হবে, তোমারও অনেক কষ্ট হবে। তবে সান্ত্বনা এই যে, তুমিও একা নও, আমিও একা নই। আমার পাশে তুমি আছো, তোমার পাশে আমি আছি। আমার কষ্টের সান্ত্বনা তুমি, তোমার কষ্টের সান্ত্বনা আমি। আমরা পরস্পরের কষ্ট হয়ত দূর করতে পারবো না, তবে অনুভব করতে পারবো এবং হয়ত কিছুটা লাঘব করতে পারবো।
আল্লাহর কসম, এমন কোন নারিহৃদয় নেই যা এমন কোমল সান্ত্বনায় বিগলিত হবে না।
তোমার স্ত্রীকে তুমি এভাবে বলবে, আমাদের জীবন তো আলাদা ছিলো। আমরা তো একে অপরকে চিনতামও না। আল্লাহ আমাদের কেন একত্র করেছেন জানো?! একা একা জান্নাতে যাওয়া কঠিন। আল্লাহ আমাদের একত্র করেছেন একসঙ্গে জান্নাতের পথে চলার জন্য। আমি যদি পিছিয়ে পড়ি, তুমি আমাকে টেনে নিয়ে যাবে; তুমি যদি পিছিয়ে পড়ো, আমি তোমাকে টেনে নিয়ে যাবো। তুমি সতর্ক থাকবে, আমার দ্বারা যেন কারো হক নষ্ট না হয়; আমিও সতর্ক থাকবো, তোমার দ্বারা যেন কারো প্রতি যুলুম না হয়।
প্রিয় ছাত্রটিকে আমি আরো বললাম, স্ত্রীকে বোঝানোর জন্য তার সন্তানকে সামনে আনতে হবে। অর্থাৎ তুমি তাকে বলবে, দেখো, জীবন কত গতিশীল! সবকিছু কত দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে! দু’দিন আগে আমরা শুধু যুবক-যুবতী ছিলাম, আজ হয়ে গেছি স্বামী-স্ত্রী। দু’দিন পরেই হয়ে যাবো মা-বাবা। আমি বাবা, তুমি মা! আল্লাহর কাছে একজন মায়ের মর্যাদা কত! তোমার কদমের নীচে হবে তোমার সন্তানের জান্নাত! যেমন আমার মায়ের কদমের নীচে আমার জান্নাত। তো তোমার সন্তান কেমন হলে তুমি খুশী হবে? আমাকেও আমার মায়ের ঐরকম সন্তান হতে তুমি সাহায্য করো। আমি যদি ভুল করি, মায়ের কোন হক নষ্ট করি, মায়ের সামনে ‘উফ’ করি, তুমি আমাকে সাবধান করো, আমাকে সংশোধন করো। তাহলে ইনশাআল্লাহ তোমার সন্তানও তুমি যেমন চাও তেমন হবে।
প্রয়োজন হলে স্ত্রীকে মা-বাবার সামনে তিরস্কার করবে, তবে ঘরে এসে একটু আদর, একটু সোহাগ করে বোঝাতে হবে, কেন তুমি এটা করেছো?! বোঝানোর এই তরযগুলো শিখতে হবে, আর এটা দু’একদিনের বিষয় নয়, সারা জীবনের বিষয়। কিন্তু আমরা ক’জন এভাবে ভারসাম্যপূর্ণ জীবন যাপন করি?! হয় মাতৃভক্তিতে স্ত্রীর প্রতি অবিচার করি, না হয়, স্ত্রীর ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে মা-বাবার দিলে আঘাত দেই, আর দুনিয়া-আখেরাত বরবাদ হয়। আমার একটা কথা মনে রেখো, মায়ের পক্ষ নিয়ে স্ত্রীর প্রতি অবিচার করা মূলত মায়ের প্রতি যুলুম, তদ্রূপ স্ত্রীর পক্ষ নিয়ে মায়ের হক নষ্ট করা আসলে স্ত্রীর প্রতি যুলুম। আমার একথার উৎস হলো,
أنصر أخاك ظالما أو مظلوما
অবশ্য সবকিছু হতে হবে হিকমত ও প্রজ্ঞার সঙ্গে।
একটি ঘটনা তোমাকে বলি, তোমার মত আলিমে দ্বীন নয়, সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত একজন মানুষ আমাকে বলেছেন, একবার তার মা তাকে বললেন, তোর বউ আজ তোর এত আপন হয়ে গেলো কীভাবে!
আমি বললাম, দেখো মা, তোমাকে আমি মা বলি; এই ‘মা’ ডাকটুকু পাওয়ার জন্য তোমাকে কত কষ্ট করতে হয়েছে! অথচ ‘পরের বাড়ীর মেয়েটি’র মুখ থেকে তুমি বিনা কষ্টে ‘মা’ ডাক শুনতে পাও! তোমাকে যে মা বলে ডাকে সে আমার আপন হবে না কেন মা?
আরেকটা ঘটনা, এক মা তার মেয়ের শাশুড়ী সম্পর্কে বললেন, মানুষ না, মেয়েটাকে আনতে পাঠালাম, দু’টো পিঠে বানিয়ে খাওয়াবো, দিলো না, ফেরত পাঠিয়ে দিলো!
দু’দিন আগে তিনিও একই কাজ করেছিলেন, ছেলের বউকে নিতে এসেছিলো মায়ের বাড়ী থেকে। তিনি বললেন, দু’দিন পরে আমার মেয়েরা আসবে এখন তুমি গেলে কীভাবে চলবে!
ভদ্রমহিলাকে বললাম, আপনার কাজটা কি ঠিক হয়েছিলো? আপনাকে কষ্ট দেয়া আমার উদ্দেশ্য নয়, সতর্ক করা উদ্দেশ্য। আল্লাহর কাছে যদি আটকা পড়েন তখন তো আপনিই বলবেন, তুমি তো হাদীছ-কোরআন পড়েছো, আমাকে সতর্ক করোনি কেন?
মোটকথা, মেয়েদেরকে তারবিয়াত করতে হবে যাতে তারা আদর্শ স্ত্রী, আদর্শ মা এবং আদর্শ শাশুড়ীরূপে আদর্শ জীবন যাপন করতে পারে। পুরুষ হচ্ছে কাওয়াম ও পরিচালক। সুতরাং তারবিয়াত ও পরিচালনা করা পুরুষেরই দায়িত্ব। স্ত্রী, মা ও শাশুড়ী, জীবনের এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ও কঠিন ধাপের জন্য ঘরে ঘরে আমরা যদি আমাদের মেয়েদের গড়ে তুলতে পারি, আদেশ দ্বারা, উপদেশ, সর্বোপরি নিজেদের আচরণ দ্বারা তাহলেই সংসার হতে পারে সুখের, শান্তির।
প্রিয় ছাত্রটিকে আরেকটি কথা বললাম, তোমার স্ত্রীর কোন আচরণ তোমার অপছন্দ হতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রথমে তোমাকে ভাবতে হবে, তোমার সব আচরণ কি সুন্দর, তোমার স্ত্রীর পছন্দের? তাছাড়া তোমার স্ত্রীর ভালো দিক কি কিছু নেই। সেই ভালো দিকগুলোর জন্য শোকর করো, আর যা তোমার কাছে মন্দ লাগে তার উপর ছবর করো। আর যদি সংশোধন করতে চাও তাহলে ভালো দিকগুলোর প্রশংসা করো, তারপর কোমল ভাষায় বলো, তোমার এই বিষয়টা যদি না থাকতো তাহলে তুমি আরো অনেক ভালো হতে। তবে আল্লাহর পেয়ারা হাবীব ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সেই প্রজ্ঞাপূর্ণ উপদেশ মনে রাখতে হবে, একটু বাঁকা থাকবেই, এই বক্রতা, সাহিত্যের ভাষায় যাকে বলে নায, আন্দায, মান, অভিমান, লাস্যতা, এই বক্রতা নারীর সৌন্দর্য, নারীর শক্তি। এটাকে সেভাবেই গ্রহণ করে তার সঙ্গে জীবন যাপন করতে হবে, পূর্ণ সোজা করতে চাইলে ভেঙ্গে যাবে, আর সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাবে।
সত্যি সত্যি যদি তোমার স্ত্রীর গুরুতর কোন ত্রুটি থাকে তবে সেটা সংশোধনের দায়িত্ব ও কর্তব্য অবশ্যই তোমার। তবে সেক্ষেত্রেও সংশোধনের জন্য অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে দিনের পর দিন চেষ্টা করে যেতে হবে। ধমক দিয়ে, জোর খাটিয়ে সংশোধন করা যায় না, ঘরে অশান্তি আনা যায়, ঘর ভাঙ্গা যায়, আর সন্তানদের জীবনে বিপর্যয় আনা যায়।
ইসলামপুরে আমার আব্বার দোকানের অপর দিকে এক ভদ্রলোকের দোকান ছিলো। অবস্থা ছিলো এই যে, দোকানে বসেই মদ খেতো। আব্বা তাকে দাওয়াত দিলেন, আর সে খুব দুর্ব্যবহার করলো, কিন্তু আব্বা ধৈর্যের সঙ্গে দাওয়াত চালিয়ে গেলেন। দু’বছর পর তিনি মসজিদমুখী হলেন এবং এমন মুবাল্লিগ হলেন যে, বউকে তালাক দেবেন। কারণ সে দ্বীনের উপর আসছে না।
আব্বা তাকে এভাবে বুঝালেন, ‘আমার সঙ্গে আপনার আচরণ কি মনে আছে? আমি যদি ধৈর্যহারা হয়ে আপনাকে ত্যাগ করতাম! এই পুরো কথাটা যেহেনে রেখে স্ত্রীকে তালিম করতে থাকেন। ছবর করেন, ছবর করলে আমার প্রতি আপনার যুলুম আল্লাহ মাফ করবেন। আল্লাহ যদি প্রশ্ন করেন আমার বান্দা তোমাকে আমার ঘরের দিকে ডেকেছে, তুমি তার প্রতি যুলুম করেছো কেন? তখন আপনি বলতে পারবেন, হে আল্লাহ, আমিও আপনার বান্দীর পিছনে ছবরের সঙ্গে মেহনত করেছি।’
সেই লোকের স্ত্রী কিন্তু পরবর্তী সময়ে পরদানশীন হয়েছিলো। অথচ জোশের তোড়ে লোকটা তো ঘরই ভেঙ্গে ফেলছিলো।
আসলে দোষ আমাদের। আমরা তারবিয়াত করার তরীকা শিখিনি। বোঝানোর তরয আয়ত্ত্ব করিনি।
প্রিয় ছাত্রটিকে আরো অনেক কথা বলেছিলাম, প্রায় দু’ঘণ্টা সময় তার জন্য ব্যয় করেছিলাম। সবকথা এখন মনেও নেই।
তবে একটা কথা তাকে বলা হয়নি, এখন তোমাদের মজলিসে বলি, স্ত্রীর সঙ্গে আচরণ কেমন হবে, এ সম্পর্কে একজনকে যা বলতে শুনেছিলাম, তা ছিল খুবই মর্মান্তিক। তিনি বলেছিলেন, ‘মেয়েলোক যেন তোমার মাথায় চড়ে না বসে, তাই প্রথম দিন থেকেই তাকে শাসনের মধ্যে রাখবা। পূর্ণ ইতা‘আত ও আনুগত্য আদায় করে নিবা, গোরবা কুশতান দর শবে আওয়াল।’
এ প্রবাদ এমনই বিশ্ববিশ্রুত যে, আমাদের নিরীহ বাংলাভাষায়ও বলে, ‘বাসর রাতেই বেড়াল মারতে হবে’। কিন্তু জীবনের সর্বক্ষেত্রের মত এক্ষেত্রেও আমাদের অনুসরণীয় হলো সুন্নাতে রাসুল, আর তিনি ইরশাদ করেছেন,
خيركم خيركم لأهله وأنا خيركم لأهلي
তো জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শরীয়তের সীমারেখায় থেকে স্ত্রীর সঙ্গে এমন আচরণই আমাকে করতে হবে, যাতে সে মনে করে, আমি সর্বোত্তম স্বামী, আমার মতো উত্তম স্বামী হয় না, হতে পারে না।
স্ত্রীগণের সঙ্গে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আচরণ কী ছিলো তা জানতে হবে এবং অনুসরণ করতে হবে। স্বামীর খেদমত করার মাধ্যমে স্ত্রী অনেক আজর ও ছাওয়াবের অধিকারিণী হতে পারে, এটা আলাদা কথা। তবে আমাকে মনে রাখতে হবে যে, এটা স্ত্রীর মহত্ত্ব, স্বামীর অধিকার নয়। তারা যদি কখনো মায়ের বাড়ী যেতে চায়, আমরা প্রশ্ন করি, ‘আমার খাওয়া-দাওয়ার কী হবে?’ অথচ এটা তার বিবেচনার বিষয় হতে পারে, আমার প্রশ্ন করার বিষয় নয়।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সামান্য কথা বলেই মজলিস শেষ করছি। সহবাস দাম্পত্য জীবনের একটি অপরিহার্য সত্য। এ বিষয়ে আলোচনাকে হায়া-শরমের খেলাফ মনে করা হয়। ফলে বিষয়টি অজ্ঞতার মধ্যে থেকে যায়। একারণে এমনকি অনেক সময় দাম্পত্য জীবন বিষাক্ত হয়ে পড়ে।
স্ত্রী তোমার সারা জীবনের সম্পদ এবং সেরা সম্পদ।
متاع মানে সম্পত্তি নয়, ভোগের বস্ত্ত নয় متاع মানে সম্পদ, ঐশ্বর্য। বিষয়টি বুঝতে না পেরে আধুনিক বুদ্ধিজীবীরা হাদীছের সমালোচনা করেন। আমরা হাদীছটির তরজমা ও ব্যাখ্যা এমন খন্ডিতভাবে করি যে, তারাও সুযোগ পেয়ে যায়।
তো স্ত্রী তোমার সম্পত্তি নয়, স্ত্রী হলো তোমার জীবনের সর্বোত্তম সম্পদ, যা যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে তোমাকে রাখতে হবে এবং ব্যবহার করতে হবে।
প্রথমেই বর্বর ও পাশবিকরূপে নিজেকে স্ত্রীর সামনে তুলে ধরা বিরাট মুর্খতা ছাড়া আর কিছু নয়। স্ত্রী স্বামীর ভোগের পাত্রী নয়, বরং স্বামী-স্ত্রী হলো পরস্পরকে উপভোগ করার জন্য। যত দিন লাগে, দীর্ঘ সাধনা করে প্রথমে হৃদয় জয় করো, মনের দুয়ার খোলো, অন্তরের গভীরে প্রবেশ করো।
যিন্দেগীর এই কঠিন মারহালা সম্পর্কে কত কিছু যে বলার আছে, কত কিছু যে শেখার আছে! দেখি, যদি আবার কখনো সুযোগ হয়।
[দাম্পত্যজীবন সুখময় হওয়ার জন্য শুধু পুরুষের প্রচেষ্টা ও সচেতনতাই যথেষ্ট নয়, নারীরও সদিচ্ছা ও সচেতনতা অতি প্রয়োজন।
এ বিষয়ে তারও আছে অনেক দায়িত্ব। কিন্তু নারীর তালীম-তরবিয়তের ভারও তো পুরুষেরই উপর। বিয়ের আগে পিতামাতা তার তরবিয়ত করবেন, বিয়ের পর স্বামী। দাম্পত্যজীবনে নারীর দায়িত্ব কী কী, সেই সকল দায়িত্ব সম্পর্কে তাকে সচেতন করার পদ্ধতি কী এবং তার তালীম-তরবিয়ত কীভাবে করতে হবে-এটি আলাদা একটি বিষয়।

 

 

 

Friday, May 14, 2021

স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য

 

স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য

সূরা নিসার যে আয়াতটি বিবাহের খোতবায় তেলাওয়াত করা হয়, সে আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, দেখ! তুমি ও তোমার স্ত্রীর মাঝে জন্মগতভাবে কোনো পার্থক্য নেই। আল্লাহ্পাক হাওয়া (আ.)- কে হজরত আদম (আ.) এর বুকের বাম পাশের হাড় থেকে সৃষ্টি করেছেন। তাই বলা হয় নারী পুরুষেরই অংশ। তোমার শরীরের যেকোনো স্থানে আঘাত লাগলে তুমি কষ্ট পাও। আঘাত যেন না লাগে, সে ব্যবস্থা কর। সে কারণে তোমার স্ত্রীর প্রতিও লক্ষ রাখবে, সে-ও তোমার শরীরের একটি অংশ। ইজাব কবুলের মাধ্যমে সে তোমার কাছে এসেছে, তুমি তোমার শরীরের সঙ্গে যেমন ব্যবহার কর, স্ত্রীর সঙ্গেও সেরূপ ব্যবহার কর। তুমি স্ত্রীর কাছ থেকে যেমন মহব্বতপূর্ণ মুলায়েম ও ভক্তিপূর্ণ কথা আশা কর, স্ত্রীর সঙ্গে তুমিও এমন কথা বল যেন তোমার কথা থেকে মহব্বত ও ভালোবাসা ঝরে পড়ে।

 

মহান আল্লাহ পাক বলেন, হে ঈমাণদারগণ! বলপূর্বক নারীদেরকে উত্তরাধিকারে গ্রহন করা তোমাদের জন্যে হালাল নয় এবং তাদেরকে আটক রেখো না যাতে তোমরা তাদেরকে যা প্রদান করেছ তার কিয়দংশ নিয়ে নাও; কিন্তু তারা যদি কোন প্রকাশ্য অশ্লীলতা করে! নারীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর। অতঃপর যদি তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে হয়ত তোমরা এমন এক জিনিসকে অপছন্দ করছ, যাতে আল্লাহ, অনেক কল্যাণ রেখেছেন। (সূরা: নিসা, আয়াত: ১৯)

 

রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, 'কোনো মুমিন পুরুষ মুমিন নারীর ওপর রাগান্বিত হবে না। কেননা যদি তার কোনো কাজ খারাপ মনে হয়, তাহলে তার এমন গুণও থাকবে, যার জন্য সে তার ওপর সন্তুষ্ট হতে পারবে'। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৪৬৯)

 

অন্য আরেক হাদিসে এসেছে যে, 'তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক ভালো মানুষ তারাই, যারা তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১১৬২)

 

রাসূলুল্লাহ (সা.) পুরুষদের নির্দেশ দিয়েছেন যে, 'তুমি যখন খাবে, তাকেও খাওয়াবে এবং তুমি যখন পরিধান করবে, তাকেও পরাবে। তার চেহারায় কখনো প্রহার করবে না। তার সঙ্গে অসদাচরণ করবে না। (আবু দাউদ, হাদিস: ২১৪২; মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৮৫০১)

 

স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য:

 

(১) দেনমোহর পরিশোধ: 

 

নারীর দেনমোহর পরিশোধ করা ফরজ। এ হক তার নিজের, পিতা-মাতা কিংবা অন্য কারো নয়। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন মাজীদে বলেন, আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশীমনে। তারা যদি খুশী হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর। (সূরা: নিসা, আয়াত: ৪)

 

(২) বাসস্থান:

 

নিরাপদ বাসস্থান বা নিরাপদ আবাসন। অর্থাৎ, স্বামী-স্ত্রীকে থাকার জন্য এমন একটি ঘর বা কক্ষ দেবেন, যে ঘর বা কক্ষে স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া (স্বামী ব্যতীত) কেউই প্রবেশ করতে পারবেন না। এমনকি স্বামীর মা-বাবা, ভাই-বোনও না। স্ত্রীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে প্রয়োজনে এই ঘরে বা কক্ষে তিনি তালাচাবিও ব্যবহার করতে পারেন। স্ত্রীর ব্যক্তিগত বা গোপনীয় বিষয়ে স্বামী ছাড়া কেউই নাক গলাতে পারবেন না। স্ত্রীর স্যুটকেট, ট্রাঙ্ক ও আলমারি স্বামী ছাড়া কেউ তল্লাশি করতে পারবেন না। কোনো স্ত্রীর চলাফেরা বা আচার-আচরণ শ্বশুর-শাশুড়ির অপছন্দ হলে তাকে আলাদা বাড়ি বা ঘর করে দেওয়া উচিত। (শরহে বেকায়া, কিতাবুন নিকাহ)

 

(৩) স্ত্রীর ভরন পোষণ:

 

সামর্থ্য ও প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী স্ত্রীর ভরন-পোষণ করা স্বামীর কর্তব্য। স্বামীর সাধ্য ও স্ত্রীর চাহিদার ভিত্তিতে এ ভরন-পোষণ কম বেশি হতে পারে। অনুরূপ ভাবে সময় ও স্থান ভেদে এর মাঝে তারতম্য হতে পারে।মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআন মাজীদে বলেন, বিত্তশালী ব্যক্তি তার বিত্ত অনুযায়ী ব্যয় করবে। যে ব্যক্তি সীমিত পরিমাণে রিযিকপ্রাপ্ত, সে আল্লাহ যা দিয়েছেন, তা থেকে ব্যয় করবে। আল্লাহ যাকে যা দিয়েছেন, তদপেক্ষা বেশী ব্যয় করার আদেশ কাউকে করেন না। আল্লাহ কষ্টের পর সুখ দেবেন। (সূরা: তালাক, আয়াত: ৭)

 

(৪) স্ত্রীর প্রতি স্নেহশীল ও দয়ালু থাকা: 

 

স্ত্রীর প্রতি রূঢ় আচরণ না করা। তার সহনীয় ভুল সমূহকে ক্ষমা করে ধৈর্যধারণ করা। স্বামী হিসেবে সকলের জানা উচিত, নারীরা মর্যাদার সম্ভাব্য সবকটি আসনে অধিষ্ঠিত হলেও, পরিপূর্ণ রূপে সংশোধিত হওয়া সম্ভব নয়।

 

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন যে, তোমরা নারীদের ব্যাপারে কল্যাণকামী হও। কারণ, তারা পাঁজরের হাড় দ্বারা সৃষ্ট। পাঁজরের ওপরের হাড়টি সবচেয়ে বেশি বাঁকা। (যে হাড় দিয়ে নারীদের সৃষ্টি করা হয়েছে) তুমি একে সোজা করতে চাইলে, ভেঙে ফেলবে। আবার এ অবস্থায় রেখে দিলে, বাঁকা হয়েই থাকবে। তাই তোমরা তাদের কল্যাণকামী হও, এবং তাদের ব্যাপারে সৎ-উপদেশ গ্রহণ কর। (সহীহ বুখারি)

 

(৫) স্ত্রীর প্রতি যত্নশীল ও সতর্ক হওয়া: 

 

হাতে ধরে ধরে তাদেরকে হেফাজত ও সুপথে পরিচালিত করা। কারণ, তারা সৃষ্টিগতভাবে দুর্বল, স্বামীর যেকোনো উদাসীনতায় নিজেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে, অপরকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এ কারণে রাসূল (সা.) নারীর ফেতনা হতে খুব যত্ন সহকারে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন, আমার অবর্তমানে পুরুষদের জন্য নারীদের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর কোনো ফেতনা রেখে আসিনি। (সহীহ বুখারী,হাদীস নং: ৪৭০৬)

 

(৬) স্ত্রীর প্রতি আত্মমর্যাদাশীল হওয়া:

 

স্ত্রীলোকদের ব্যাপারে আত্মম্ভরিতার প্রতি লক্ষ্য করে রাসূল (সা.) বলেছেন যে, তোমরা সাআদ এর আবেগ ও আত্মসম্মানবোধ দেখে আশ্চর্যান্বিত হচ্ছো । আমি তার চেয়ে বেশি আত্মসম্মানবোধ করি, আবার আল্লাহ আমার চেয়ে বেশি অহমিকা সম্পন্ন। (সহীহ মুসলিম,হাদীস নং: ২৭৫৫)

 

শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, যার মাঝে আত্মমর্যাদাবোধ নেই সে দাইয়ূছ (অসতী নারীর স্বামী, যে নিজ স্ত্রীর অপকর্ম সহ্য করে)। হাদিসে এসেছে: দাইয়ূছ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (দারামি: ৩৩৯৭) 

 

(৭) স্ত্রীর কথার মর্যাদা দেওয়া এবং স্ত্রীর পিতা-মাতাকে সম্মান করা। স্ত্রীকে আঘাত কিংবা মারধর করা যাবে না। সবসময় স্ত্রীর সাথে হাসিমুখে কথা বলতে হবে।

 

উক্ত বিষয়গুলো ছাড়াও একজন স্বামীর ওপর স্ত্রীর আরো কিছু হক বা অধিকার রয়েছে যেগুলো নিচে তুলে ধরা হলো:

 

১। সামর্থ্য অনুযায়ী ভরণ-পোষণ ও খরচাদি দিতে কোনো প্রকার অবহেলা না করা। স্ত্রীকে দ্বীনি মাসআলা-মাসায়েল শিক্ষা প্রদান করা। ভালো কাজের প্রতি উদ্ভূত করা।

 

২। যাদের সঙ্গে দেখা দেয়ার ব্যাপারে ইসলামের অনুমতি রয়েছে, তাদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করার সুযোগ প্রদান করা। আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার তাগিদ প্রদান করা।

 

৩। কোনো প্রকার ভুল বা অসাবধানতা হলে ধৈর্য ধারণ করা। শাসন ও সংশোধনের ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখা।

 

৪। মাহরাম আত্মীয়-স্বজনের সাথে মাঝে মাঝে দেখা-সাক্ষাৎ করার সুযোগ দেয়া এবং তাদের অসাবধানতা ও বুদ্ধিমত্তার অভাবে কোন ভুল-ত্রুটি হয়ে গেলে ধৈর্য্য ধারণ করা। কখনো শাসন ও সংশোধনের প্রয়োজন হলে ভারসাম্য রক্ষা করা। 

 

৫। ইসলামি শরিয়তের সীমার মধ্যে থেকে স্ত্রীর মন জয় করা। একাধিক স্ত্রী থাকলে তাদের মধ্যে সমতা বজায় রাখা। নির্যাতন না করা, ইত্যাদি ।

 

পরিশেষে বলা যায় যে, স্ত্রী হলেন সহধর্মিণী

অর্ধাঙ্গিনী, সন্তানের জননী; তাই তো স্ত্রী সম্মানের পাত্রী। স্ত্রীর রয়েছে বহুমাত্রিক অধিকার; সঙ্গে সঙ্গে রয়েছে কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য। যদি স্বামী ও স্ত্রী উভয়ে এবং উভয়ের পরিবার প্রত্যেকে নিজ নিজ অধিকারের সীমানা ও কর্তব্যের পরিধি জেনে তা চর্চা করে তাহলে তা সংসারের জন্য মঙ্গলজনক হবে। 

 

|| স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য ||

মোহাম্মদ সালেহ্।