Wednesday, May 29, 2013

মেয়েদের নিয়ে কিছু তথ্য [Some sexual info about women]

মেয়েদের নিয়ে কিছু তথ্য 



ছেলেরা মেয়েদের যৌনতা নিয়ে খুব কম তথ্য জানে। চটিগুলো পড়লে সেটা বোঝা যায়। চটি লেখক এবং মন্তব্যকারীদের অনেকে মেয়েদের সাথে যৌনকর্ম দুরের কথা কোনদিন মেয়েদের বাস্তব যৌনাংগ দেখেছে কি না সন্দেহ। মেয়েদের সমন্ধে ওনাদের জ্ঞান মনে হয় পর্ন আর ইন্টারনেটের চটি থেকে নেওয়া। যাহোক সবার সুবিধার্থে কিছু তথ্য দিলামঃ

. মেয়েদের যৌন চাহিদা ছেলেদের ৪ ভাগের এক ভাগ। কিশোরী এবং টিনেজার মেয়েদের যৌন ইচ্ছা সবচেয়ে বেশী। ১৮ বছরের পর থেকে মেয়েদের যৌন চাহিদা কমতে থাকে, ৩০ এর পরে ভালই কমে যায়।

. ২৫ এর উর্দ্ধ মেয়েরা স্বামীর প্রয়োজনে যৌনকর্ম করে ঠিকই কিন্তু একজন মেয়ে মাসের পর মাস যৌনকর্ম না করে থাকতে পারে কোন সমস্যা ছাড়া।

. মেয়েরা রোমান্টিক কাজকর্ম যৌনকর্ম চেয়ে অনেক বেশী পছন্দ করে। বেশীরভাগ মেয়ে গল্পগুজব হৈ হুল্লোর করে যৌনকর্মর চেয়ে বেশী মজা পায়।

. মেয়েরা অর্গ্যাজম করে ভগাংকুরের মাধ্যমে, মেয়েদের অর্গ্যাজমে কোন মাল বের হয় না। তবে পেটে প্রস্রাব থাকলে উত্তেজনায় বের হয়ে যেতে পারে।

. ভগাংকুরের মাধ্যমে অর্গ্যাজমের জন্য যৌনকর্মের কোন দরকার নেই।

. যৌনি পথে পুরুষ লিংজ্ঞ ঢুকালে মেয়েরা মজা পায় ঠিকই কিন্তু অর্গ্যাজম হওয়ার সম্ভাবনা ১% এর চেয়েও কম।

. লম্বা লিংজ্ঞের চেয়ে মোটা লিংজ্ঞে মজা বেশী। লম্বা লিংজ্ঞে বেশীরভাগ মেয়ে ব্যাথা পায়।

. মেয়েদের যৌনিতে সামান্য ভেতরেই খাজ কাটা গ্রুভ থাকে, লিংজ্ঞের নাড়াচাড়ায় ঐসব খাজ থেকে মজা তৈরী হয়। এজন্য বড় লিংজ্ঞের দরকার হয় না।

Tuesday, May 28, 2013

সাবধানের কোন মাইর নাই !! [Ghost Tips-1]



সাবধানের কোন মাইর নাই !!


ভূত বলতে নাকি কিছু নেই মানলাম, জ্বীন/বদজ্বীন তো বিশ্বাস করেন নাকি?
 ভৌতিক টিপস◆

অতিরিক্ত ভয় অনেক সময় আপনারবিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আপনি যদি বেশীভয়
পেয়ে নিজেকে বিপদে ফেলতে নাচান, তো নিচের বিষয় গুলো জেনে নিন। কাজে লাগবে......

/ ­ মাগরিবের সময় পুকুর পাড়,বাঁশঝাড়,তালগাছ ­,বটগাছ, সুপাড়ি গাছের আশেপাশে, বাসার ছাদে একা যাবেন না । আপনি এমনকিছু দেখে ফেলতে পারেন এই সময়ে, যা আপনি কখনো আর দেখতে চাইবেন না ।

/ গভীর রাতে একা রাস্তায় হাঁটার সময় যদি দেখেন কালো কোন কুকুর অথবা কালো বিড়াল আপনার বাম পাশথেকে আপনাকে ক্রস করার চেষ্টা করছে,তবে এটাকে কোনো মতেই বাম পাশ দিয়ে ক্রস করতে দিবেন না । আপনার ক্ষতি হতেপারে ।

/ রাতের বেলা নির্জন চার রাস্তার মোড়ে একা একা দাঁড়িয়ে থাকবেন না । আপনি ভূলপথে যাবেন তাহলে ।
অর্থাৎ আপনাকে ভুলপথে নিয়ে যাওয়া হবে।

/ গভীর রাতে যদি দেখেন বাঁশঝাড়ের কোন একটা বাঁশ কোন কারণ ছাড়াই নীচু হয়ে আছে, তো ঐ বাঁশের উপর দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না । যাওয়ার চেষ্টা করলেই আপনাকে উপরে উঠিয়ে নিবে ।

/ রাতের বেলায় কোনো লোকের পিছনে যদি অনেকগুলো কুকুর লাইন বেঁধে যেতে দেখেন,তো ঐ পথে ভূলেও যাবেননা। লোকের পিছে কুকুর ঘোরা ব্যাপারটা অনেক খারাপ কিছু নির্দেশ করে।

/ ঘুম ভাঙার পর যদি মনে হয় আপনার রুমে অদৃশ্য কেউ একজনআছে, সাহসিকতার সাথে ব্যাপারটা অবহেলা করার চেষ্টা করুন অথবা চোখ বন্ধ করে রুমের দরজা আন্দাজ করে বের হয়ে যান।
 
/ বাথরুমে গিয়ে যদি আপনার ভয় লাগা শুরু করে, তাহলে অযথা আয়নার দিকে তাকাবেন না । এটি আপনার বিপদের কারন হতে পারে ।

/ গ্রামে গভীর রাতে যদি আপনার নাম ধরে কেউ ডাকে, তো ভুলেও ঐ ডাকে সাড়া দিয়ে ঘরের বাইরে যাবেন না ।
যদি বাইরে যান তো আর ফিরে নাও আসতে পারেন।এই ডাককে "নিশির ডাক" বলে । আপনার পরিচিত মানুষের গলা নকল করে শুধু একবার ডাকা হবে ।

/ পুরোনো খালি বাড়ি এবং শ্মশান ঘাট যথা সম্ভব এড়িয়েচলুন । এগুলোতে খারাপ কিছুর উপস্থিতি বেশীর ভাগ সময়ই থাকে।
 
১০/ ব্ল্যাক ম্যাজিক নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করবেন না । আপনি কি করছেন তা বোঝার আগেই আপনার অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে।

১১/ রাতের বেলা একা হাটার সময় যদি বুঝতে পারেন কিছু একটা আপনার পিছে পিছে আসছে,অথচ আপনি দেখতে পাচ্ছেন না, তো সাহস সঞ্চয় করে কাছাকাছি কোন মুসলিম কবরস্থানে ঢুকে পড়েন। কবরস্থান খুবই পবিত্র জায়গা, সেখানে আপনার কোন ক্ষতি করতে পারবেনা ।

সর্বাপরি ভয়কে জয় করতে শিখুন । (সংকলিত)

Exam or Examnination ! Examnination !! Examination !!!

Exam or Examnination ! Examnination !! Examination !!!



Examinations are the blessings in the student life.

However, some name's it as something else. But that should NEVER be. If you focus on, set your right strategies, get your pants on everyday washed up, dried up, damn, you gonna sure FUCK all the FUCKING obstacles FUCKING easily ;).




I view exams are one of the most blessings in my life. The confident, energies, enigma-tics, and such other positive factors or elements have installed in my life easily in the exam time. Even once I got PROPOSED by a girl in the exam time. :D
Moreover, in the exam time I get much more attention of my mom, she takes care me of very good or well,simply, in this time. I gain much more insights in this time than ever. Most of the achievements of my life started in the exam time. I can't get why fucking people fucking fears the FUCKIng exams???

I find no clue out !









You know, exams are the time when I can study without fear. I can study with purity && sacredly ! The new ideas comes into my mind in this fucking nice time :*
I love this nice time .

You know ! I just learnt sth new just now. I haven't noticed that even ever before.
The special characters used in the typing, associated with the fonts are not always as we see them !
Some fonts carry more, some don't !
Wow thats a nice magic, Thats I call LIFE .
If you fear the fear, then you fear to live. If you fear to Live, you are DEAD. That's that much simple.

Trust me ! It works Fucking good. And one disclaimer:
Google by: “use of the word fuck”
to know the fucking meaning of the fucking word FUCK.
Otherwise if you fucking get a fucking fucked meaning, then you fucked yourself !
So Fuck OFF !
Thanks a lot for trying to read !

Have a nice time.........perhaps...make ur days urs !


Saturday, May 25, 2013

Make Firefox Faster,better


Tips to make Firefox Faster than ever you have experienced !!


Before I start sharing all the tips && Tricks I wanna make it clear that, all these can be found by searching google or any other search engine. Here my effort is to make a compilation of those tips which I found easy && working. That's all. Enjoy your open world using firefox !

One MOST IMPORTANT thing in writing this – I assume that you know NOTHING about configuring, so I'm explaining each step as clear && vivid as possible.




The basic thing about tweaking the FireFox is to change its internal settings manually to optimize. Most of these tips work very fine with those who have a slower INTERNET connection. Say upto [limit] of 2Mbps [with fluctuation]. Now we move to the tips. Enjoy the ride of customization ! Good LuCK :D

  1. First of all Open a new tab [click on the “+” sign or Ctrl+T]. Now type in the address bar:
about:config

Now press enter. You will be warned of this:

 
Press on “I'll be careful, I promise”. This is a general warning. Nothing to worry !

2. Now set these value to the value provided here. Note that, you will type each entry at a time and then other. That means one by one in the search bar.
If any of the value shown here isn't found, then just add it !

  • Set "network.http.pipelining" to "true"
  • Set "network.http.proxy.pipelining" to "true"
  • Set "network.http.pipelining.maxrequests" to any number you like above 35 but below 250. This is the number of request sent at a time !
  • Now right-click anywhere black of the page you are and select New-> Integer. Name it to "nglayout.initialpaint.delay" and set its value to "0". It indicates the amount of time waited to show information to show as the browser gets it.
  • Set “network.http.keep-alive” to “true”.
  • Set “network.http.version” to “1.1”.
  • Set “browser.display.show_image_placeholders” to “false”. [Stops the display of placeholders while images are loading to speed up the page. Default is True]
  • Set “browser.tabs.animate” to “false”.
[Disables all tab animation features (e.g. when you click the ‘New Tab’ (+) button) to make the tab interface feel quicker. Default is True.]
  • Set “network.prefetch-next” totrue”.
This setting can automatically prefetch (load) the contents of pages linked to by the page you are viewing e.g. to load the homepage in the background, making it quicker for you to view next if you want to.
To take advantage of increased speed when browsing websites which use prefetch, keep this setting at the Default which is True.
[Some view prefetch as a possible security risk and disable it. My current view is that it isn’t a major concern – if a site is bad, it will just load bad stuff on the current page anyway without needing to prefetch it from elsewhere]
  • Set “network.http.max-persistent-connections-per-server” to “8”.
Increases the maximum number of persistent connections per server which can help speed up loading of multimedia rich sites. Default is 6
  • Set “browser.sessionhistory.max_total_viewer to “0”.
  • Set “browser.tabs.animateto “False”.

3. Update your firefox regularly. Since this comes with numerous bugs fixed each time with new features.
4. Use less add-ons.
5. Remove your unused add-ons, this will save huge Megabyte of space on your RAM and Hard Disk as well.
>Select Firefox (or Tools from the menu bar) then Add-ons to open the Add-ons Manager. Click on Extensions and, if you no longer need an extension, Remove it – if in doubt, at least Disable it.



6. Update extensions – the easiest way to always keep extensions up to date is to open the Add-ons Manager and click the Tools ‘cog’ at the top then select (tick) ‘Update Add-ons Automatically’.
To perform a manual update, click the Tools ‘cog’ then select ‘Check for Updates’ and apply any that are found.
7Disable plugins you do not need – as with extensions, the more plugins you have enabled, the more problems Firefox may encounter:
Open the Add-ons Manager. Click on Plugins and, if you do not need a plugin, disable it. If you disable a specific plugin and ever do visit a site that needs it, just re-enable it. [The only plugins enabled on my system are Shockwave Flash and Silverlight for streaming videos. Amongst my disabled plugins are Microsoft DRM x 2, Quicktime, VLC, Windows Media Player and Google Update - none of which I have ever needed].
8. Update plugins plugins from third parties such as Adobe and Oracle are often targeted by malicious websites so it is important to keep them up to date (and new versions often include performance benefits).
9. Don’t Load Tabs Until Selected
If you have set the option to ‘Show my windows and tabs from last time’ (in Options \ General) when Firefox starts, it may have to load multiple tabs – keen users may have dozens of open tabs which Firefox has to load in full each time it starts. This can really slow down the time it takes to open Firefox – a common complaint. To greatly speed up the loading process:
  • In Options \ Tabs tick the ‘Don’t load tabs until selected’ box and press OK – this menu option will still open all your saved tabs when Firefox starts but will only load the current tab which can save a lot of time.




Don’t load tabs until selected’ – in Tabs menu

10. Click on any empty space and add these values:
Right Click –> New– > Integer or String or Boolean
[N.B.: Integer values take numbers, Boolean values are wither True or False]
network.dns.disableIPv6”: set “false”
content.notify.backoffcount”: set “5“; (Five)
plugin.expose_full_path”: set “true”.
ui.submenuDelay”: set “0; (zero)
content.switch.threshold” to “250000” (a quarter of a second)
content.interrupt.parsing” set the value to “False”
 “browser.cache.memory.capacityclick OK, enter “65536”



Now close it and Re-Start your Firefox. You'll damn see the difference with ever faster, smarter firefox ;). It's now too cool to illustrate !

If you have any queries, you can leave that in the comment, we will try our best to answer that.






 ______________________________________________________________________




Wednesday, May 22, 2013

**এক্সিডেন্ট (ভৌতিক গল্প)** [ghost stories 49]


**এক্সিডেন্ট (ভৌতিক গল্প)**


লিখেছেন: এম এস ই শাহীন....


কয়েকদিন থেকে নানা ব্যস্ততার কারনে ঘটনাটি শেয়ার করতে পারিনি। তো যাই হোক, আমার বাড়ী থেকে দক্ষিনপূর্ব কোণে কালসারডাড়া নামক একটি স্থানে মাঝে মধ্যে যেতে হয় আমার ব্যবসায়িক কারনে । আমার বাড়ী থেকে ঐ যায়গার দূরত্ব মাত্র ১০ কিঃমিঃ । আমি অবশ্য বাইকটা নিয়েই চলাচল করি সেখানে । কয়েকদিন আগেও গিয়েছিলাম সেই যায়গায় । নানা কাজ সেরে সেদিন বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত শোয়া এগারোটা বেজে গেল । মনের মধ্যে খানিকটা ভয় ভয় কাজ করছিল । একঃ চোর ডাকাতের দুইঃ জ্বিন ভূতের । ঐ যায়গায় যাওয়ার পথে অনেক পুরাতন কবরস্থান সংলগ্ন একটি ঈদগাহ মাঠ পড়ে । অবশ্য এই ঈদগাহ মাঠ ও কবরস্থানের আশে পাশে কোন জনবসতি নেই । বিশাল বিস্তীর্ন পাথারের মাঝে এটি অবস্থিত । এ যায়গাটি নিয়ে নানাকল্প কাহীনিও ছড়িয়ে আছে মানুষের মাঝে । এখানে নাকি অনেকেই অনেক ভৌতিক ঘটনার সম্মুখিন হয়েছেন । সন্ধ্যার পর তাই এই রাস্তা দিয়ে মানুষের চলাচল কম । চলাচল করলেও দলবেধে বা সাথী ছাড়া কেউ করেনা । । যদিও আমি এগুলোকে তেমন একটা গুরুত্ব দেইনা । হয়তঃ মনে করছেন আমি খুব সাহসী, আসলে তা নয় একটু একটু ভয়ও কিন্তু করি । বাড়ী ফিরছিলাম একা একাই। ঘড়ির কাঁটা রাত ১১:১৫ । যথারীতি ৫০-৬০ কিঃমিঃ বেগে ড্রাইভ করছি । জনমানবহীন রাস্তা,চলছি আমি একা, রাস্তার দু ধারে লাগানো মেহগনি গাছের সারি । রাতের বেলা এমন রাস্তা দিয়ে যেতে ধরলে কার না গাঁ ছমছম করে ।




যখন ভৌতিক যায়গা থেকে মাত্র ১ কিঃমি দূরে ঠিক তখনই আমার শরীরটা অজানা এক ভয়ে শিউরে উঠলো । যায়গাটি তাড়াতাড়ি পার হওয়ার জন্য বাইকের গতি বাড়ালাম । প্রায় ৮০ কিঃমিঃ বেগে চলছে , মিটারে লক্ষ্য করলাম । এখন আমি যায়গাটির ঠিক ১৫-২০ গজ দূরে । কলিজাটা আরেকবার মোচড় দিয়ে উঠলো । কবরস্থান ক্রস করছি ঠিক এমন সময় কোন কারন ছাড়াই গাড়ীর হেডলাইট অফ হয়ে গেল ।কথায় আছে যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই রাত হয় । আমার ক্ষেত্রেও তাই ঘটলো । চলন্ত গাড়ীর এভাবে হেডলাইট অফ হওয়াতে আমি নিজের উপর আস্থা হারালাম । ঘুঁটঘুঁটে অন্ধকার চারিদিকে । কিছুই বুঝার উপায় নেই । মাত্র ১ হাত দূরেও কিছু দেখা যাচ্ছেনা । আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় । প্রচন্ড ভয়ের পাশাপাশি জীবনের প্রথম এক্সিডেন্ট করতে যাচ্ছি তাও আবার জনমানবহীন এক ভুতুড়ে যায়গায় । এখানে এক্সিডেন্ট করে আহত হয়ে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় সারারাত পড়ে থাকলেও উদ্ধার করার কাউকে পাওয়া যাবেনা । এমতাবস্তায় একজন ড্রাইভারের যা করনীয় ছিল আমিও ঠিক তাই করলাম । দ্রুত কড়া ব্রেক করলাম । এত স্পীডের গাড়ী ব্রেক করতে করতে খানিকটা পথ চলে গেল । ঠাস করে একটা শব্দ হলো আর একটা ঝাকুনি দিয়ে সাথে সাথেই গাড়ীর স্টার্ট বন্ধ হলো । একটা মেহগনি গাছের সাথে আচমকা ধাক্কা খেয়ে থেমে গেলাম । নাহ্ পড়ে যাইনি । গাড়ীর উপরেই আছি । আমি নিজেকে পাঁকা রাস্তা ও সাইডের কাঁচা যায়গা পার হয়ে মেহগনি গাছের গোড়ায় আবিস্কার করলাম রাস্তার একদম ঢালু কিনারে । হাত, পা, শরীর থরথর করে কাঁপতে লাগলো । সব যেন অবশ হয়ে গেছে । কোন দিকে তাকাতেও পারছিনা ভয়ে । তবুও বাঁচার আশা ছিল মনে । এমন যায়গায় বেশিক্ষন থাকাটাও নিরাপদ না ভেবে দ্রুত গাড়ী নিউটাল করলাম । গাড়ী থেকে নেমে ওটাকে ঠেলে পাকায় তুললাম । এরপর কোন দিকে না তাকিয়ে তড়িঘড়ি করে গাড়ীতে উঠে বসলাম । ভেবেছিলাম গাড়ী হয়তো স্টার্ট হবে না । কিন্তু কি আশ্চর্য্য প্রথম চেষ্টায় সফল । মানে গাড়ী স্টার্ট হয়েছে আর হেডলাইটও জ্বলছে । তারমানে হেডলাইট নষ্ট হয়নি ? তাহলে হঠাত্‍ এরকম হেডলাইট অফ হলো কেন ? এসব নিয়ে চিন্তা করার সময় নেই । আলো জ্বলায় খুশিতে মনটা নেচে উঠলো । আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানালাম । তিনি আমাকে তার কুদরতি ক্ষমতায় এতবড় একটা দূর্ঘটনা থেকে রক্ষা করেছেন । হয়তঃ আপনাদের মাঝে ফিরে আসবো বলে. . . . .


সওদা প্রথম খন্ড [Ghost stories - 48]




সওদা- ১ম খন্ড



(গল্পটি বেশ বড় বিধায় দুটি খন্ডে শেয়ার করা হবে)


*এক*


খুব দ্রুত জামাটা গায় দিয়ে আমি তৈরি হয়ে নিলাম । দেয়ালে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি প্রায় সাড়ে নটা বাজে । দেরি হয়ে গেছে । ইদানিং কোন কাজই সময় মতো করতে পারছিনা। সব কাজে কোন না কোন কারণে দেরি হয়ে যায় । বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ সব কাজগুলো । সাড়ে দশটার মধ্যে এফডিসিতে পৌছতে হবে । অনেক ধরাধরির পর বিখ্যাত পরিচালক এহতে সামস্ সময় দিয়েছেন, তাও আবার পাঁচ মিনিট । মানুষের সময়ের মূল্য যে কতো, তা এ সব বিখ্যাত মানুষগুলোকে না দেখলে বোঝা যায় না। এই পাঁচ মিনিট সময়ের
মধ্যে তাকে পুরো চিত্র নাট্যটি বোঝাতে হবে । যদি তার পছন্দ হয়, তা হলে তিনি তার পরবর্তি ছবির জন্য আমার লেখাটি নেবেন । এটাই কোন পরিচালকের সঙ্গে আমার চিত্রনাট্য নিয়ে প্রথম সাক্ষাত নয় । এর আগেও
অসংখ্য বার অসংখ্য পরিচালক আমার চিত্রনাট্য দেখেছেন । এবং প্রতিবারই আমি প্রত্যাক্ষিত হয়ে যন্ত্রনার শেষ সীমায় পৌছে পার মাতাল হয়ে মেসে ফিরেছি । বাংলা সিনামায় চাকবুম চাকবুম বিষয় না থাকলে ঠিক জমে না । অথচ আমি সেই চাকবুম চাকবুম জিনিষটাকে আমার চিত্রনাট্য থেকে পুরোপুরি বাদ দিয়ে দিয়েছি । চিত্রনাট্য নেড়ে চেড়ে সিগারেটের পেছনে দম দিতে দিতে এক এক জন বলছেন, মিয়া নাচ-গান নাই এইটা কোন
সিনামা হইলো ? নাচে গানে ভরপুর কিছু নিয়া আস, পার্বলিক নায়িকার উত্তাল নাচ দেখতে চায় । নায়িকারে বৃস্টিতে ভিজাও পানিতে চুবাও , প্রয়োজনে বন জঙ্গলে নিয়া হাটুর উপড়ে সাপের কামড় খাওয়াও তা হইলেই না সিনামা হিট হইবো আমি নায়িকারে বৃস্টিতেও ভিজাতে পারছিনা আবার পানিতেও চুবাতে পারছি না । না পারছি হাটুর উপড় সাপের কামড় খাওয়াইতে । তাই কোন পরিচালক আমার চিত্রনাট্য গিলছে না । কাজেই
প্রত্যাক্ষিত হয়ে মাতাল হয়ে পরিচালকদের চৌদ্দগোস্টিকে গালিগালাজ করে মেসে ফেরা ছাড়া আমার কোন উপায় নাই ।


মধুমিতা মেসের মালিক সদু ভাই আমাকে বিশেষ ভালবাসেন বিধায় ঐ অবস্থায় আমি মেসে ফিরতে পারি । তা না হলে যে কি হতো কে জানে । তা ছাড়া এ জগতের মানুষের এ অভ্যাসটাকে লোকে অনেকটা মেনে নিয়েছে । আজও হয়তো ভাংঙ্গা মন নিয়ে মাতাল হয়ে আমাকে গভীর রাত্রিরে মেসে ফিরতে হবে । যতোটা উৎসাহ নিয়ে যাচ্ছি; হয়তো তার চাইতেই ঢের বেশি মনকষ্ট নিয়ে ফিরে আসবো । তাই বলে হাল ছেড়ে দেবার পাত্র আমি নই । একবার না পারিলে দেখ শতবার নীতিতে বিশ্বাস রেখে এগিয়ে চলেছি ।


টেবিলের উপরে রাখা ব্যাগটা আরেকবার পরীক্ষা করে নিলাম । লেখাটি ঠিক মতো আছে কিনা । গত রাতে পুরো চিত্রনাট্যটি বেশ কয়েকটি জায়গায় কাটাছেড়া করেছি। পরে ফ্রেশ করে নেওয়া যাবে । এখন সময় নেই । আলমারি খুলে এ মাসের বেতনের শেষ পাঁচশ টাকার নোটটা বের করে মানিব্যাগে নিলাম। মাসের বাকি এখন ও দশ দিন । বাকি দিনগুলো কিভাবে কাটবে কে জানে ।


দরজায় তালা দিয়ে । সিড়ি দিয়ে নীচে নামতেই কাউন্টারের সামনে দেখি সদু ভাই দাঁড়িয়ে কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলছেন । খুব সম্ভব এরা মেসের বাবুচি হবে আমাকে সিঁড়ি দিয়ে তারাহুরো করে নামতে দেখে সদু ভাই আমার দিকে একবার তাকিয়ে-কাউন্টারের উপড় রাখা পিক দানিতে পানের পিক ফেলে বললেন, কি রাইটার সাব , আবারও মনে হয় যাইতাছ ? আমি একটু থেমে মাথা নেড়ে বললাম , জি সদু ভাই, দোয়া করবেন ?
তা এইবার কারে দেখাইবা ?
এহতে সামস্ । আমি ছোট্র করে নামটা বললাম ।
ক ও কি মিঞা ? ঐ ব্যাটা তো হুনছি হিটের পর হিট । ঠিক লোকরেই ধরছো মনে হয় । তোমার দিয়া হইবোই হইবো এইডা আমি কইয়া দিলাম । সদু ভাই এগিয়ে এসে আমার কাঁধে চাপর দিলেন । সঙ্গে সঙ্গে জর্দ্দার কড়া গন্ধ নাক এসে নাকে লাগল । আমি চলে যাবার ভঙি করে, বললাম, দোয়া করবেন সদু ভাই ।
দোয়া তো করমুই, এইডাই তো এখন আমাগো বাংলাদেশে একমাত্র ফ্রি জিনিষ । তা কুনহানে দেহা করবা ওনার লগে ? যাইবা কই ?
এফডিসিতে ?
কও কি ?
জ্বি, ওনার একটা সুটিং আছে. ফাঁকে আমার সঙ্গে কথা বলবেন ।
বা: বেশ ভাল । হাতে সময় থাকলে তোমার লগে যাইতাম । এফডিসির ভেতরটা দেহনের আমার খুব সখ ।
সদু ভাই, আমি তাহলে আসি, দেরি হয়ে যাচ্ছে, হাতে একদম সময় নাই । সাড়ে দশটার মধ্যে পৌছাতে হবে । আমি হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বিনয়ের সঙ্গে বললাম । আরে তাইলে তো আসলেই সময় নাইকা । এহনতো অফিস টাইম । এখন গাড়ি ঘোড়াও পাওয়া কঠিন; চলো আমার লগে দেহি নাসিরার গ্যারেজে গাড়ি আছে কিনা । আমি চমকে উঠলাম । কেননা সদু ভাই এর সঙ্গে যাওয়া মানে আরেক যন্ত্রনা । দেখা যাবে গাড়ি পেতে পেতেই সাড়ে দশটা বেজে যাবে । আমি তারাতারি না,না করতে করতে বললাম, আপনাকে কষ্ঠ করতে হবে না সদু ভাই, আমি খুঁজে নিবো ।
আরে মিঞ খুঁইজা নিবা বললেই হইলো নাকি ? গাড়ি পাইতে হইবো না ? চলো আমার লগে। সদু ভাই তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকগুলোর দিকে তাকিয়ে বলল, রাতের জন্য পোলাও গোস্ত করিস । আজ রাইটার সাহেবের জয় হইবোই হইবো। আমি সদু ভাইয়ের এই স্নেহের কাছে পরাস্ত হয়ে তার পিছু পিছু মেস থেকে বের হয়ে এলাম । বুক চিরে বের হয়ে এলো একটা দীর্ঘশ্বাস ।


নাসিরের গ্যারেজে অতি সহজেই গাড়ি পাওয়া গেল । গ্যারেজের দিকে হাঁটতে হাঁটতে সদু ভাই বললেন; চলো আইজকা তুমি সফল হইবা কি হইবা না তার একটা ছোট্র পরীক্ষা কইরা ফেলাই ?
কিভাবে ? আমি দ্রুত পা ফেলে হাঁটতে হাঁটতে জিজ্ঞাসা করলাম । যদি নাসিরার গ্যারেজে যাইয়াই গাড়ি পাইয়া যাই তাইলেই মনে করুম তুমি আজ সফল । ঐ পরিচালক ব্যাটা তোমার বই লইবোই লইবো ।
আমি এসব বিশ্বাস করি না । তাই মুখে কিছু বললাম না । কিন্তু তবুও দেখা গেল সত্যিই
গ্যারেজে গাড়ি পাওয়া যায় কিনা সেটা দেখার জন্য মনে মেনে বেশ উৎগ্রীব হয়ে উঠলাম ।


নাসিরের গ্যারেজে ঢুকতেই দেখি, দরজার সামনে একটা সিএনজি দাঁড়িয়ে আছে। সদু ভাই
আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন, আলহামদুলিল্লাহ, তুমি জিতা গেছ । যাও, আইজকা
তোমারে আর কেউ আটকাইতে পরবোনা কইয়া দিলাম । প্রাথমিক বিজয়ে আমার মনটাও খুশিতে
ভরে উঠল ।
গ্যারজের মালিক নাসির একটা ময়লা বিছানার উপড়ে বসে চা খাচ্ছিল, সদু ভাইকে দেখে
তারাহুরো করে নেমে এসে সালাম দিয়ে জিজ্ঞাসা করল, কিছু লাগবো ভাই ? আমারে খবর
পাঠাইলে তো আমিই যাইতাম ।
তা,তো যাইতিই। এখন দেখ একটা গাড়িটারি আছে কিনা,আমাগো রাইটার সাব এফডিসিতে
যাইবো ।
এই সিএনজিতে গেলে হয় না ভাই, নাকি গাড়িই লাগবো ? নাসির আমার দিকে তাকিয়ে
দরজার সামনে দাড়িয়ে থাকা সিএনজিটা দেখিয়ে বলল ।
গাড়ি লাগবে না, সিএনজিতে হলেও চলবে । বলে আমি সদুভাইয়ের দিকে তাকালাম ।
তোর ড্রাইবার কই ?
আছে, মনে হয় মুততে গেছে । দাঁড়ান আমি ওরে লইয়া আইতাছি । বলেই নাসির দৌড়ে
গ্যারেজের পেছনে চলে গেল ।
নাসিরারা কামডা দেখলা, এইসব পোলাপান হালায় ম্যানার জানে না; তোমার সামনে
ক্যামনে কইলো মুততে গেছে । তুমি কিছু মনে কইরো না । আইউক দিমুনে কানের পেছনে
দুইডা ভনচটকোনা, হালায় পুতে কইবোনা, বার্থরুমে গেছে । যাও যাও তুমি জিএনজিতে
যাইয়া বও । রাইতে তারাতারি আইয়া পইরো পোলাও গোস্ত হইবো কিন্তু । আমি মাথা
নেড়ে সিএনজিতে উঠে বসলাম । প্রায় সঙ্গে সঙ্গে সতেরো কি আঠারো বছরের একটা ছেলে
এসে , সিএনজি স্ট্যাট দিল ।
সদু ভাই কাছে এসে বলল, এক্কেবারে ঝড়ের বেগে লইয়া যাবি । সময় মতো পৌছাইতে না
পারলে কিন্তু ঘারে খাবি । সদু ভাই এর এই বাড়াবারি দৃস্টিকটু, অনেক সময় অসহ্য লাগে।
কিন্তু প্রচুর অর্থ কড়ি , উদারতা আর সান শওকতের জন্য সবাই সদু ভাইকে বেশ সমিহ করে
চলতে বাধ্য হয় ।


ছেলেটা আমায় সত্যিই ঝড়ের বেগে নিয়ে এলো । আজ সবই দেখি বেশ ভালয় ভালয় হচ্ছে। রাস্তাতে জ্যাম ছিল না বললেই চলে । এফডিসির গেটে বিশাল ভীর । নায়ক নায়িকাকে দেখার জন্য উৎসুক ভক্তদের অভাব নাই । অনেক কষ্টে ভীড় ঠেলে গেটে পৌছে গেট পাস দেখাতেই আমাকে ভেতরে ঢুকতে দিল ।


১১ নম্বর ফ্লোরে এহতে সামস্ সাহেবের সূটিং চলার কথা । ১১ নম্বরটা কোথায় তা কয়েক জনকে জিজ্ঞাসা করে ১১ পৌছে দেখি বিশাল এক তালা ঝুলছে । গেটের সামনে কয়েকজন গার্ড বসে গল্প করছে । মনটা খারাপ হয়ে গেল । অনেকটা অনিচ্ছা সত্যেও গার্ডদের এহতে সামস্ কথা জিজ্ঞাসা করতেই একজন বলল, স্যার, ইউনিট নিয়ে ১৩ নম্বর গেছে । ঐ হানে যান, ১১ নম্বরের জেনারেটার খারাপ হইছে তাই এইহানে সুটিং বন্ধ । ১৩ নন্বরটা কোন দিকে তা জেনে নিয়ে আমি জোরে পা চালালাম ।


*দুই*


১৩ নম্বরে পৌছে আমি এহতে সামস্ সাহেবকে সালাম দিলাম । তিনি আমাকে হাতের ইশারায় বসতে বললেন । আমি পেছনে দিকে একটা চেয়ার টেনে বসে পরলাম । এটা সেটা করে পুরো সেট রেডি করতে করতে ২টা বেজে গেল । লাঞ্চের পর সূটিং শুরু হলো । সূটিং মানে এক এলাহিকান্ড । আমি বেশ আগ্রহ নিয়ে সুটিং দেখতে লাগলাম । এক একটা সট তিন চারবার করে নেওয়া হচ্ছে । যে সটটা আমার কাছে ওকে মনে হচ্ছে, দেখা যাচ্ছে সেটাই পরিচালক সাহেব কাট করে আবার নতুন করে টেক করছেন । টানা রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত
সূটিং চলে প্যাক আপ করা হলো । আমার অবস্থা ততোখনে কাহিল । এতো দীর্ঘ সময় প্রতিক্ষা আমাকে আর কখন ও করতে হয়নি । কয়েকবার মনে হয়েছিল চলে যাবার কথা । কিন্তু নিজের স্বপ্ন , নিজের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে চলে যেতে পারিনি । আর তাছাড়া চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিলাম মানুষটা ব্যস্ত । নিজেকে এই বলে শান্তনা দিয়ে বেধে রেখেছি যে, কস্ট না করলে, কেস্ট মেলে না ।


প্রায় পৌনে ১২টার সময় আমার ডাক পরলো । পুরো সেট তখন প্রায় খালি হয়ে গেছে । কয়েকজন সেট থেকে এটা সেটা খুলে ব্যাগে ঢুকাচ্ছে । এহতে সামস সাহেব বেশ রাশ গম্ভীর মানুষ । অপরিচিত জনের সঙ্গে খুব একটা কথা বলেন না । পুরো সূটিং চলাকালীন সময় আমি তাকে একবারের জন্যও হাসতে দেখিনি । আমাকে নিয়ে তিনি বসলেন পরিচালকদের রুমে । ওনার হাতে ছোট একটা গ্লাস । আমি রুমে ঢুকে আবারও সালাম দিতে উনি , মাথা নেড়ে বসতে বললেন । তারপর গ্লাসে আলতো করে একটা চুমুক দিয়ে বললেন
কতো দিন ধরে লেখালেখি করছো ?
জ্বী,ছোটবেলা থেকেই ।
ছোটবেলা থেকে ? তিনি ঠোট উল্টে তাচ্ছিল্যের একটা ভঙ্গি করে আমার কথাটা রিপিট
করলেন ।
তা দুএকটা নাটক টাটক কি টিভিতে গিয়েছে ?
জ্বি না , আমি টিভির জন্য কোন নাটক লিখিনি ।
টিভিতে না লিখে একেবারে চলচিত্রে ? ছোট থেকে না শুরু করতে হয় । 
বলে তিনি আবারও গ্লাসে চুমুক দিলেন ।
আমি কিছু বললাম না । আমি মনে মনে বললাম, আমি বড় থেকে ছোটর দিকে যাবো বলে ঠিক
করেছি । সুযোগ পেলেই মানুষ উপদেশ ঝারতে শুরু করে । তার উপড়ে হাতে যদি রঙ্গিন পানির গ্লেলাস থাকে তা হলে তো আর কথাই নেই । আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে তিনি গ্লাসে আরেকটা চুমুক দিয়ে বললেন ,দেখি কি এনেছো আমার জন্য ? বলে তিনি হাত বাড়ালেন । আমি ব্যাগ থেকে চিত্রনাট্যটা বের করে হাতে
দিলাম ।
গ্লাসটা টেবিলে রেখে তিনি চিত্রনাট্যটার একটা একটা করে পাতা উল্টাতে লাগলেন আমার বুক তখন ধুকধুক করছে । আমি মনে মনে আল্লাহ, আল্লাহ করছি এই জন্য যে, এবার যেন আমাকে আর প্রত্যাক্ষিত হতে না হয় । এবার যেন খুশি মনে ফিরতে পারি । এ লাইনের নিয়মই হচ্ছে একবার যদি কোন পরিচালক একটা লেখা নিয়ে কাজ শুরু করেন তা হলে আর বসে থাকতে হয় না। একেরপর এক কাজ আসতেই থাকে । যতো সময় যাচ্ছিল তোতোই উত্তেজনার আমার হাত পা কাঁপতে লাগল । আমি কোন রকম বসে রইলাম । তিনি খুব মনোযোগ দিয়ে একটার পর একটা পাতা উল্টিয়ে যাচ্ছেন । আর আমার অস্থিরতা বেড়ে যাচ্ছে । অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে আছি। আমি যেন আমার সাফল্যের হাতছানি দেখতে পাচ্ছি।


একসময় তিনি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন এটা তুমি লিখেছো ?
জ্বি ? আমি ছোট করে উত্তর দিলাম ।
তোমার লেখাটা এক কথায় চমৎকার প্রচুর কাজ করেছো বুঝা যাচ্ছে । কিন্তু এ লেখা নিয়ে তো আমি কাজ করতে পারবো না । তোমার এ গল্পটা হলিউডে হলে লুফে নিত । কিন্তু আমাদের দেশের পারিপাশ্বিক অবস্থার জন্য এ গল্প চলবে না । আমি দু:খিত । তুমি অন্য একটা গল্প নিয়ে আস ।
আমার মন ভেঙ্গে গেল । আমি কিছু বললাম না । উঠে দাঁড়ালাম ।
আমাকে উঠতে দেখে তিনি বললেন তোমার হাতের টার্ন ভাল , আমি তোমাকে একটা থিম দিচ্ছি তুমি এটা নিয়ে কাজ করো ।
সরি স্যার, আমি শুধু নিজের থিম নিয়েই স্টরি তৈরি করি । আমি ওনার হাত থেকে চিত্রনাট্যটা নিয়ে স্টুডিও থেকে বের হয়ে এলাম । সঙ্গে সঙ্গে একঝাক হতাশা আমায় ঝেকে ধরলো । মনে হলো এ জীবনের কোন মানে হয় না । এ জীবনের জন্য শুধু ব্যর্থতা পর ব্যর্থতাই অপেক্ষা করছে ।


অনেক রাত হয়ে গেছে । পথ ঘাট একেবারে জন শুন্য । কিভাবে মেসে পৌছাব আমার সে চিন্তা নেই । এফডিসি থেকে বের হয়ে হাঁটতে লাগলাম । কয়েক কদম হেঁটে মাছের আড়ৎটার সামনে আসতেই একটা লোককে দেখতে পেলাম । একটা খুটির সঙ্গে হেলাম দিয়ে একপায়ে দাঁড়িয়ে আছেপুরানো কালো একটা কোট গায়ে দিয়ে আছে । পাদুটো খালি । মাথাটা কেমন অস্বাভিক রকমের বড় । লোকটাকে দেখে আমার পাগল বলে মনে হলো । আমি না দেখার ভান করে সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম । লোকটার সামনে যেতেই লোকটা গলা খাকারি দিল । আমি ফিরে তাকালাম লোকটা সোজা হয়ে দাঁড়াল, তারপর আমার দিকে এগিয়ে এসে কোন রকম জড়তা ছাড়াই বলল কি কিছু হলো ?
আমি বেশ অবাক হয়ে লোকটার দিকে তাকালাম । লোকটা আবারও বলল, কিছুই হয়নি তাই না?
কি হয়নি ? আমি চরম বিরক্তি নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করলাম ।
তোর চিত্রনাট্য তো ঐ বুড়ো ভামটা নেয়নি, তাই না ?
আমি বেশ অবাক হয়ে লোকটার দিকে তাকালাম । এহতে সামস্ এর সঙ্গে আমার কি কথা হয়েছে তা তো এই পথের লোকটার জানার কথা নয় । আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞিস করলাম, কে আপনি ?
আমি কে ? সেটা বড় কথা না , আমার কথা সত্য কিনা সেটা বল ।
আমি অনিচ্ছা সত্বেও মাথা নাড়লাম । যার অর্থ হলো , হ্যা , তিনি আমার লেখাটি নেননি ।
ঐ বুড়ো ভামটা যে নিবে না তা আমি আগেই জানতাম । বলে লোকটা খেক খেক করে হেসে উঠলো। হাসির শব্দে আমি কেমন জানি ভয় পেয়ে গেলাম । মাছের আশটে গন্ধ তীব্র হয়ে নাকে এসে লাগল ।
দুপা পিছিয়ে এসে প্রশ্ন করলাম আপনি কে , কি করে এসব জানলেন ?
বললাম না , আমি কে সেটা বড় ব্যাপার না । আমি সব জানি । তোর অতীত জানি, তোর বর্তমান জানি; আবারও তোর ভবিষ্যতও জানি । লোকটা আবারও ভয়াল ভাবে হাসতে লাগল এবার আমি সত্যি সত্যি ভয় পেয়ে গেলাম । কোন এক অজানা ভয়ে ভেতরটা কেপে কেঁপে উঠল । আমি কোনরকম তোতলাতে তোতলাতে বললাম, কি চাই আপনার, কি চাই?
তোর সঙ্গে সওদা করতে করতে চাই ? লোকটা হাসি থামিয়ে সরাসরি আমার চোখের দিকে
তাকিয়ে বলল । ভয়ন্কর হলুদ দুটো চোখের দিকে তাকিয়ে আমার পুরো শরীর কাপতে লাগল ।
হঠাৎ আমার মনে হলো আমার বমি পেয়েছে । বমি করতে পারলে ভাল হতো । আমি আবারও
তোতলাতে তোতলাতে বললাম, কিসের সওদা ?
তোর খ্যাতি, যশ্, প্রতিস্ঠা তোর সকল স্বপ্ন পুরণের সওদা ।
মানে ?
মানে সোজা ,তুই উঠে যাবি খ্যাতির চুড়ান্তে যেখান থেকে সব কিছু অতি তুচ্ছ বলে মনে হয়। যেখান থেকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয় না । করবি এমন সওদা ? আমি তোকে সব সব দেবো । লোকটা আমার মুখের কাছে এসে ফিসফিস করে কথাগুলো বলল । বিশ্রী মাছের আশটে গন্ধটার জন্য আমি আবারও পিছিয়ে গেলাম । টের পেলাম তীব্র ভয়ে আবার হাত পা থরথর করে কাঁপছে । ভয়ন্কর কিছুর শন্কায় আমি ছুটে পালাতে চাইলাম । লোকটা মনে হয় আমার মনোভাব বুঝতে পেরে খপকরে আমার বাম হাতের কব্জির উপড়ে চেপে ধরল । আমি তীব্র ব্যর্থায় উহু করে শব্দ করে উঠলাম । লোকটা হাসতে হাসতে বলল , রাজি আছিস ?
রাজি আছিস ? তুই মনে মনে যেমনটা চেয়েছিস ঠিক তেমনটাই হবে,তরতর করে উঠে যাবি
খ্যাতির চুড়ায় । এসব বুড়ো ভামরা লাইন দিয়ে পরে থাকবে তোর লেখার জন্যে , বল রাজি
আছিস কিনা । বলে ফেল, বলে ফেল ।
আমি কয়কে মিনিটের মধ্যে যেন আমার ভবিষ্যত দেখে ফেললাম । সকল ভয়কে উপেক্ষা করে
বললাম , তাতে আপনার কি লাভ ?
আমার কি লাভ ? বলে লোকটা হো হো করে হাসতে লাগল । তাতে আমার পুরো শরীর আবারও
কাঁটা দিয়ে উঠল ।
আমি ভয়ে ভয়ে বললাম, দেবার মতো তো আমার কিছু নেই ।
তোর সব আছে, আমার প্রয়োজনে আমি চেয়ে নেবে । তোর প্রয়োজনে তুই চেয়ে নিবি । আছিস
রাজি ? বলে ফেল , বলে ফেল ।
আমি মনে মনে চিন্তা করলাম । হারাবার মতো আমার কিছুই নেই । আবার দেবার মতোও
নেই কিছু । তা হলে লোকটা কি চাচ্ছে ?
ঠিক তখনি আমার ভেতর থেকে কেউ একজন বলে উঠল রাজি; আমি রাজিতোর তো আপন কেউ
নেই, তাই হারাবারও কিছু নেই ।
তুই তাহলে রাজি ? লোকটা আমার দিকে অদ্ভূত ঘোর লাগা চোখে তাকাল ।
আমি মাথা নেড়ে বললাম, রাজি । সঙ্গে সঙ্গে লোকটা আমার হাত ছেড়ে দিল আমার কাছে
মনে হলো পুরো হাতটা অবশ হয়ে গেছে । আমি হাতটা ঝারতে ঝারতে লোকটার চোখের দিকে
তাকালাম । মনে হলো, আমার পুরো শরীর গুলিয়ে উঠলো । সঙ্গে সঙ্গে আমি বর্মি করে
ফেললাম । অনেকক্ষন বর্মি করার পর একটু আরাম হলো । আমি লোকটার দিকে তাকাতেই
দেখি কেউ নেই। কালো খুঁটিটা যেন আমার দিকে তাকিয়ে হাঁসছে । আমি মাতালের মতো
টলতে টলতে মেসের দিকে পা বাড়ালাম ।


*তিন*


মধুমিতা মেসের সামনে ভীড়টা চোখে পরার মতো । মূল রাস্তায় দুটো পুলিশের গাড়ী দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম । অনেকক্ষন হাঁটার ফলে প্রচন্ড ক্লান্তি অনুভব করছি । মনে হচ্ছে গোসল করতে পারলে ফ্রেস লাগত । কিন্তু এতো রাতে মেসের সামনে এতো লোকজন কি করছে বুঝতে পারলাম না । কৌতুহল নিয়ে মেসের ভেতরে ঢোকার জন্য পা বাড়াতেই গেটের কাছে একজন এসআই আমার পথ রোধ করে দাঁড়াল । আমাকে আপাত মস্তক এক নজর দেখে নিয়ে প্রশ্ন করল, কে আপনি ?
জ্বি, আমার নাম রন্জু । এখানেই থাকি ।
এতো রাতে কোথা থেকে এলেন ?
জ্বি কাজ ছিল একটা ।
কি কাজ ?
এফডিসিতে একজনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম ।
করেন কি ?
লেখালেখি করি ? গল্প, উপন্যাস , চিত্রনাট্য লিখি ।
ও বই লিখেন ?
লোকটা কি বুঝে প্রশ্ন করল বুঝলাম না, মাথা নেড়ে বললাম, হ্যা ।
তা, কতো দিন ধরে এখানে আছেন ?
বছর তিনেক হলো ।
কাউন্টারের কাছে ম্যানেজার বদরুলকে দেখলাম, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছে । এতো বড় একজন
মানুষের কান্না দেখতে ভাল লাগেনা । তার উপরে বদরুলকে তো আরো না । আমাকে দেখে
বদরুল রন্জু ভাই বলে ছুটে এসে জরিয়ে ধরল ।
বদরুল লোকটাকে আমার বিশেষ পছন্দ না । আমি পারত পক্ষে ওর সঙ্গে কথা বলি না ।
বদরুলও আমাকে সব সময় এড়িয়ে চলে । সেই বদরুলের এভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরায় আমি
অবাক না হয়ে পারলাম না । মানুষের আবেক কে কখনও উপেক্ষা করতে নেই । হোক না সে
যেমনই মানুষ । কিন্তু বদরুলের ব্যাপারটা ভিন্ন । আমি বদরুলকে ছাড়িয়ে দিতে দিতে নরম
অথচ শক্তভাবে প্রশ্ন করলাম;কি হয়েছে বদরুল ?
সদু ভাই ; বলে বদরুল আবারও কাঁদতে লাগল । আমার কাছে মনে হলো বদরুল অভিনয় করছে ।
আমি দাঁতে দাঁত চেপে জিজ্ঞাসা করলাম, সদু ভাই কি ?
সদু ভাই আর নেই ।
নেই মানে কি? কোথায় গেছেন ? ভনিতা না করে আসল কথা বলো । আমি আস্থির হয়ে উঠলাম ।
সদু ভাই, সদু ভাই আত্মহত্যা করেছেন । বলে বদরুল ছেলে মানুষের মতো কাঁদতে লাগলো।
এবার আর ওর কান্নাটাকে অভিনয় বলে মনে হলো না ।
আমি প্রায় চিৎকার করে বলে উঠলাম, কোথায়, কেন ?
উপড়ে বলে, বদরুল আঙুল দিয়ে দোতালাটা দেখিয়ে দিল।


দোতালার শেষ মাথায় সদু ভাইয়ের একটা রুম আছে । সদু সেটাকে অফিস হিসাবেই ব্যবহার
করেন । পাশে একটা বিছানা পাতা আছে মাঝে মাঝে রাতে থেকে গেলে সেটাতে সদু ভাই
ঘুমান ।
আমি এসআইয়ের দিকে উপড়ে যাবার অনুমতি পাবার দৃস্টিতে তাকালাম । এসআই আমার কাঁধে
হাত রেখে বললেন, যান। তবে কিছু স্পর্শ করবেন না । এটা মার্ডার কেসও হতে পারে।
ঠিক আছে, বলে দ্রুত উপড়ে উঠে এলাম । বারান্দায় চেনা অচেনা অনেক মানুষ । কয়েকজন
পুলিশ ও রয়েছে । আমার রুমটা মাঝামাঝি । আমার রুমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময়
দেখলাম তালা দেয়া ।
যারা আমাকে চেনে তারা আমাকে দেখে সরে গিয়ে ভেতরে যারার রাস্তা করে দিল । সদু
ভাইয়ের রুমে ঢুকতেই আমি ভয়ন্কর রকমের ভয় পেয়ে গেলাম, ফ্যানের সঙ্গে বিশ্রী ভাবে
সদু ভাইয়ের দেহটা ঝুলছে । জ্বিবটা মুখ থেকে বের হয়ে আছে । চোখ দুটো খোলা ।
বিশাল দুটো হাত দুপাশে ছড়ান । পুরো শরীরে কোন কাপড় নেই । আমি প্রচন্ড ভয় পেয়ে
গেলাম । হঠাৎ টের পেলাম আমার মাথা ঘুরছে। আমি কোন রকম বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম।


থানা থেকে ওসি সাহেব আসার পর সুরতহাল রিপোট তৈরি করে পোস্টমটেমের জন্য লাশ
নামিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো । পুলিশ মেসের বোর্ডারদের থানাতে না জানিয়ে কোথাও না
যাবার নির্দেশ দিয়ে চলে গেল । ঘড়িতে তখন সাড়ে তিনটা বাজে। ইতিমধ্যে আমি একটু
ধাতস্ত হতে পেরেছি । সদু ভাই নেই । কথাটা ভাবতেই বুকের ভেতটা কেমন জানি করে
উঠছে। বারবার সদু ভাইয়েই মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে ।


রুমে ঢুকে দেখি টেবিলের উপড় আমার খাবার ঢেকে রাখা । তারমানে হচ্ছে সদু ভাইয়ের কাছ থেকে চাবি নিয়ে আমার খাবারটা রুমে দিয়ে গেছে । আহা: সদু ভাই, আমি হঠাৎ কান্নায় ভেঙ্গে পরলাম । বুক চেপে ধরে খাটের উপড় বসে পরলাম। হঠাৎ এফডিসির বাইরে দেখা লোকটার কথাটা কানে ভাসতে লাগল, তোর তো আপন কেউ নেই , তাই হারাবারও কিছু নেই । তুই তাহলে রাজি ? তুই তাহলে রাজি ? আমার মনে হলো সদু ভাই আমার আত্মীয় না হয়েও অনেক বেশি আপন ছিল । অনেক, অনেক বেশি ।


পরের দিন সাড়ে ১২টার সময় দরজার প্রচন্ড শব্দে ঘুম ভাংলো । তারাহুরো করে উঠে দরজা খুলে দেখলাম বদরুল দাঁড়িয় আছে ওর পাশেই পরিচালক এহতে সামস্ । আমি বেশ অবাক হয়ে তাকালাম । আমার মেসে এহতে সামস্ এর মতো পরিচালক আসবে এতোটা আশা করিনি । 
আমি একটু ঘাবরে গিয়ে বললাম স্যার আপনি ?
দেখ, দেখি তোমাকে না জানিয়েই চলে আসলাম; তা তুমি কি ফ্রি আছো ? তাহলে তোমার সঙ্গে কয়েকটা কথা বলে নিতাম ।
জ্বি স্যার, আসুন ভেতরে আসুন । বলে আমি দরজা থেকে সড়ে দাঁড়ালাম । এই প্রথম রুমের ভেতরের অবস্থা দেখে নিজের কাছে লজ্জা লাগল । এহতে সামস্ চারিদিকে একবার নজর বুলিয়ে টেবিল থেকে চেয়ারটা টেনে নিয়ে বসে পরলেন । আমি বললাম, স্যার যদি কিছু মনে না করেন ; আমি হাত মুখটা ধুয়ে আসি । তিনি মাথা নেড়ে বললেন, সিওর । তারপর এগিক ওগিক তাকিয়ে বললেন, তোমার এখানে এসট্টে নেই ? সিগারেট ছাড়া আমি আবার একদম চলতে পারি না। আমি খাটের নীচ থেকে একটা ভাঙা চায়ের কাপ অনিচ্ছা সত্বেও বের করে টেবিলের উপর রাখলাম । এহতে সামস্ কাপটা দেখে হেসে সিগারেট ধরালেন । আমি বদরুলকে চা বলে বার্থরুমে ঢুকে গেলাম ।


এহতে সামস্ সাহেব আমাকে দুলাখ টাকার একটা ক্যাশ চেক দিয়ে একটা কাগজে সাইন
করিয়ে নিলেন । আমার চিত্রনাট্যটি নিয়ে তিনি কাজ করবেন । সূটিং শুরু হবে মাস
দুয়েকের মধ্যেই । তখন আরো তিন লাখ পেমেন্ট করবেন । জীবনের প্রথম সাফল্যে আমি
থরথর করে কাঁপতে লাগলাম । উত্তেজনায় কাগজটার মধ্যে কি লেখা আছে সেটাও ভাল করে
পড়তে পারলাম না । এহতে সামস্ এর দেখানো জায়গাতে সাইন করে চেকটা হাতে নিলাম
হঠাৎ সদু ভাইয়ের জন্য আবারও মনটা কেদে উঠল । মানুষটা বেঁচে থাকলে আজ সব চাইতে
বেশি খুশি হতো । এহতে সামস্ সাহেব বিদায় নেবার পর আমি ব্যাংকে ছুটলাম। সদু
ভাইয়ের আত্মার শান্তির জন্য কিছু টাকা খরচ করবো ।


সদু ভাইয়ের মৃত্যুর পর পুরো মেসটা যেন অতিরিক্ত নীরব হয়ে গেছে । দোতালার বেশ
কয়েকজন বোর্ডার পুলিশের অনুমতি নিয়ে মেস ছেড়ে চলে গেছে । অনেকেই বলাবলি করছে
রাতের বেলা তারা নাকি সদু ভাইকে দেখেছে মেসের বারান্দা দিয়ে খুরিয়ে খুরিয়ে
হাঁটতে । কথাটা এ কান ওকান হয়ে আমার কানে এসে পৌছলে আমি সেটাকে মোটেও গুরুত্ব দেলাম না । বেঁচে থাকতে যে মানুষটাকে বুক ফুলিয়ে হাঁটতে দেখেছি, মরে গিয়ে সে কিনা খুরিয়ে খুরিয়ে হাঁটবে ? সব চাইতে বেশি কথা ছড়াচ্ছে কাজের বুয়া রেহানার মা । বুয়াটা রীতিমতো গল্প ফেঁদে বসেছে । সদু ভাইকে বুয়া নাকি রান্না ঘরে দেখেছে । সকাল বেলা বুয়া থালা বাসন ধুচ্ছিল, তখন হঠাৎ রান্না ঘরে খটর মটর শব্দ শুনে বুয়া রান্না ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে দেখে, সদু ভাই খালি গায়ে চুলার কাছে কি যেন খুঁছছে । বুয়া দরজার কাছেযেতেই, সদু ভাই নাকি বলে উঠেছে, ও রেহানার মা ম্যাচটা কোথায় রেখেছো
 ম্যাচটা দাও, সিগারেট খামু ।


বুয়ার এ গল্পটাই সব চাইতে বেশি ছড়িয়ে পরেছে । আশে পাশের দশ বাড়িতেও এ নিয়ে
বিস্তর আলোচনা চলছে । আমি এসব কথাবার্তাকে মোটেও গুরুত্ব দেচ্ছি না। কারো সঙ্গে এ
প্রসঙ্গে আলোচনা ও করছি না । বার দুয়েক বদরুল এসেছিল আমার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা
বলবে । এর কথার শুরুতেই আমি ওকে থামিয়ে দিয়ে বলেছি, বদরুল বাজে বিষয় নিয়ে কথা
বলে আমার সময় নস্ট করবে না, যাও নিজের কাজ করো গিয়ে । বদরুল আর কিছু বলেনি
মাথা নীচু করে চলে গেছে । যতোসব বাকোয়াস কথাবার্তা । আমি পূর্ণ উদ্যোমে লেখা
লেখি চালিয়ে যাচ্ছি । ইতিমধ্যে একটি পত্রিকায় আমার ছোটখাটো ইন্টারভিউও ছাপা
হয়েছে । অন্যান্য কাজকর্ম ছেড়ে দিয়ে বিদ্যূতের গতিতে নতুন চিত্রনাট্য লিখে চলেছি ।
পরপর দুটো ফিকুয়েন্সের কাজও শেষ করে ফেলেছি । ঝামেলা বাঁধল তৃতীয়টার সময় । সদু
ভাইকে মেসে দেখার ঘটনাগুলো আমি গুরুত্ব না দিলেও আমার অজান্তেই মেসের ভেতর একটা
কিছু ঘটে যাচ্ছিল তার প্রমান পেলাম আরো দুদিন পর । আমার পাশের রুমে থাকেন
ব্যাংক কর্মকতা ওমর ফারুক সাহেব । সাদাসিদে অমায়িক লোক । কারো আগে পিছে নেই ।
তিনি কিনা রাতের বেলায় কি দেখে ভয় পেয়ে হার্ট এ্যটাক করে হাসপাতালে ভর্তি
হলেন । ভদ্রলোকের সঙ্গে আমার খুব একটা কতাবার্তা না হলেও আমি তাকে হাসপাতালে
দেখতে গেলাম ।


ইদানিং বাংলাদেশের প্রাইভেট হাসপাতালগুলোর চেহারা বদলে গেছে । ঝকঝকে তকতকে
হাসপাতাল দেখলেই মন ভাল হয়ে যায়। ওমর ফারুক সাহেব আছেন হাসপাতালের দোতালার
একটি কেবিনে । আমি তার কাছে পৌছে দেখি তিনি আঙুর খাচ্ছেন । দশ কি বারো বছরের
একটি মেয়ে তার মুখে একটা একটা করে আঙুর তুলে দিচ্ছে । আমাকে দেখে ওমর ফুরুক সাহেব
একটু লজ্জা পেলেও হেসে বললেন, আসেন লেখক সাহেব । আমি ভেতরে ঢুকে হেসে জিজ্ঞেস
করলাম, তা এখন কেমন আছেন ?
জ্বি ভাল । ওমর ফারুক সাহেবকে দেখে মনে হলো তিনি আবারও লজ্জা পেলেন ।
ও কি আপনার মেয়ে নাকি ? আমি মেয়েটার মাথায় হাত রেখে জিজ্ঞাসা করলাম ।
জ্বি । দেখুনতো কতো করে বলছি হাসপাতালে ছোটদের আসার দরকার নেই, কিন্তু তবুও
নাছোড়বান্দা আমাকে দেখতে নাকি আসতেই হবে । মেয়েটার গায়ের রং শ্যামলা কিন্তু
অনেক মিস্টি । আমি মেয়েটাকে কাছে টেনে জিজ্ঞাসা করলাম, তোমার নাম কি মা ?
মেয়েটা ছোট করে বললো, মায়া ।
বাঃ সুন্দর নাম ।
তা, তুমি কোন ক্লাসে পড় ?
ক্লাস থ্রি তে ।
আমিও তো থ্রি তে পড়ি । যাক তুমি আর আমি একই ক্লাসে পড়ি । আমি হেসে বললাম ।
তুমি মিথ্যা বলছো । তুমি তো বড় । তুমি আব্বুর লেখক বন্ধু । আব্বুর সঙ্গে থাকো । আমি সব
জানি ।
ওমা তাই নাকি ? তুমিতো দেখছি তোমার আব্বুর বুড়ি মা ।
আমি বুড়ি না আমার বয়স তো মাত্র এগারো বছর । এমন সময় ওমর ফারুক সাহেবের স্ত্রী
আসলেন । তিনি মেয়েকে নিয়ে বাহীরে গেলে ওমর ফারুক সাহেব আমাকে বললেন, ভাই
আমি আর ঐ মেসে যাবো না । একটু সুস্থ্য হলে জিনিষ পত্র সব নিয়ে আসবো ।
কিন্তু কেন ?
মেসটার দোষ হয়েছে । ওখানে খারাপ আত্মা বাসা বেঁধেছে । আমি বলতে যাচ্ছিলাম এসব
বাজে কথা। কিন্তু কিছু বলার আগেই ওমর ফারুক সাহেব বলে উঠলেন, আমি জানি আপনি এসব
বিশ্বাস করেন না । তবুও বলছি, সম্ভব হলে আপনিও মেসটা ছেড়ে দিন ।
আপনি ভয় পেলেন কি দেখে ? আমি সরাসরি ওমর ফারুক সাহেবের চোখের দিকে তাকিয়ে
প্রশ্ন করলাম ।
ওমর ফারুক সাহেব একটু স র্সত নিয়ে বললেন, সদু ভাইকে দেখে ।
সদু ভাইকে ?
জ্বি ।
তা কি দেখলেন ?
বার্থরুমে যাবার জন্য দরজা খুলে বারান্দায় বের হয়েছ দেখি সদু ভাইয়ের রুমের দরজা
খোলা । আলো জ্বলছে । এতোরাতে সদুভাইয়ের রুমে কে, কি করছে তা দেখার জন্য আমি
এগিয়ে গেলাম । দরজার দাঁড়িয়ে ভেতরে উকি দিতেই দেখি; সদু ভাই হাতে একটা মোটা
দড়ি নিয়ে ফ্যানের নিচে একটা চেয়ারে দাঁড়িয়ে আছেন । দড়িটা ফ্যানে বাঁধার চেস্টা
করছেন। আমি, কে ? বলার সঙ্গে সঙ্গে সদু ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,
ব্যান্কার ভাই চেয়ারটা একটু শক্ত করে ধরো তো দেখি । মনে হচ্ছে পইড়া যামু । আমার
আর কিছু মনে নেই । সঙ্গে সঙ্গে বুকে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করি । তারপর বুক চেপে ধরে
পরে গেলাম। চোখ খুলে দেখি আমি হাসপাতালে ।


ওমর ফারুক সাহেবের কথা ফেলে দিতে পারলাম না । একেবারে মনের মধ্যে গেঁথে গেল ।
ভয় হচ্ছে সংকামক ব্যধির মতো একবার কারো ভেতর ঢুকে গেলে ডাল পালা ছড়ায় অন্যের
ভেতরে ঢোকার জন্য । নানান যুক্তি দিয়েও এর কোন কূল কিনারা করতে পারলাম না ।
একরাশ চিন্তা নিয়ে এলোমেলো ভাবে হাঁটতে হাঁটতে মেসে ফিরলাম রাত ১১টার সময় ।