Wednesday, May 22, 2013

**এক্সিডেন্ট (ভৌতিক গল্প)** [ghost stories 49]


**এক্সিডেন্ট (ভৌতিক গল্প)**


লিখেছেন: এম এস ই শাহীন....


কয়েকদিন থেকে নানা ব্যস্ততার কারনে ঘটনাটি শেয়ার করতে পারিনি। তো যাই হোক, আমার বাড়ী থেকে দক্ষিনপূর্ব কোণে কালসারডাড়া নামক একটি স্থানে মাঝে মধ্যে যেতে হয় আমার ব্যবসায়িক কারনে । আমার বাড়ী থেকে ঐ যায়গার দূরত্ব মাত্র ১০ কিঃমিঃ । আমি অবশ্য বাইকটা নিয়েই চলাচল করি সেখানে । কয়েকদিন আগেও গিয়েছিলাম সেই যায়গায় । নানা কাজ সেরে সেদিন বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত শোয়া এগারোটা বেজে গেল । মনের মধ্যে খানিকটা ভয় ভয় কাজ করছিল । একঃ চোর ডাকাতের দুইঃ জ্বিন ভূতের । ঐ যায়গায় যাওয়ার পথে অনেক পুরাতন কবরস্থান সংলগ্ন একটি ঈদগাহ মাঠ পড়ে । অবশ্য এই ঈদগাহ মাঠ ও কবরস্থানের আশে পাশে কোন জনবসতি নেই । বিশাল বিস্তীর্ন পাথারের মাঝে এটি অবস্থিত । এ যায়গাটি নিয়ে নানাকল্প কাহীনিও ছড়িয়ে আছে মানুষের মাঝে । এখানে নাকি অনেকেই অনেক ভৌতিক ঘটনার সম্মুখিন হয়েছেন । সন্ধ্যার পর তাই এই রাস্তা দিয়ে মানুষের চলাচল কম । চলাচল করলেও দলবেধে বা সাথী ছাড়া কেউ করেনা । । যদিও আমি এগুলোকে তেমন একটা গুরুত্ব দেইনা । হয়তঃ মনে করছেন আমি খুব সাহসী, আসলে তা নয় একটু একটু ভয়ও কিন্তু করি । বাড়ী ফিরছিলাম একা একাই। ঘড়ির কাঁটা রাত ১১:১৫ । যথারীতি ৫০-৬০ কিঃমিঃ বেগে ড্রাইভ করছি । জনমানবহীন রাস্তা,চলছি আমি একা, রাস্তার দু ধারে লাগানো মেহগনি গাছের সারি । রাতের বেলা এমন রাস্তা দিয়ে যেতে ধরলে কার না গাঁ ছমছম করে ।




যখন ভৌতিক যায়গা থেকে মাত্র ১ কিঃমি দূরে ঠিক তখনই আমার শরীরটা অজানা এক ভয়ে শিউরে উঠলো । যায়গাটি তাড়াতাড়ি পার হওয়ার জন্য বাইকের গতি বাড়ালাম । প্রায় ৮০ কিঃমিঃ বেগে চলছে , মিটারে লক্ষ্য করলাম । এখন আমি যায়গাটির ঠিক ১৫-২০ গজ দূরে । কলিজাটা আরেকবার মোচড় দিয়ে উঠলো । কবরস্থান ক্রস করছি ঠিক এমন সময় কোন কারন ছাড়াই গাড়ীর হেডলাইট অফ হয়ে গেল ।কথায় আছে যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই রাত হয় । আমার ক্ষেত্রেও তাই ঘটলো । চলন্ত গাড়ীর এভাবে হেডলাইট অফ হওয়াতে আমি নিজের উপর আস্থা হারালাম । ঘুঁটঘুঁটে অন্ধকার চারিদিকে । কিছুই বুঝার উপায় নেই । মাত্র ১ হাত দূরেও কিছু দেখা যাচ্ছেনা । আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় । প্রচন্ড ভয়ের পাশাপাশি জীবনের প্রথম এক্সিডেন্ট করতে যাচ্ছি তাও আবার জনমানবহীন এক ভুতুড়ে যায়গায় । এখানে এক্সিডেন্ট করে আহত হয়ে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় সারারাত পড়ে থাকলেও উদ্ধার করার কাউকে পাওয়া যাবেনা । এমতাবস্তায় একজন ড্রাইভারের যা করনীয় ছিল আমিও ঠিক তাই করলাম । দ্রুত কড়া ব্রেক করলাম । এত স্পীডের গাড়ী ব্রেক করতে করতে খানিকটা পথ চলে গেল । ঠাস করে একটা শব্দ হলো আর একটা ঝাকুনি দিয়ে সাথে সাথেই গাড়ীর স্টার্ট বন্ধ হলো । একটা মেহগনি গাছের সাথে আচমকা ধাক্কা খেয়ে থেমে গেলাম । নাহ্ পড়ে যাইনি । গাড়ীর উপরেই আছি । আমি নিজেকে পাঁকা রাস্তা ও সাইডের কাঁচা যায়গা পার হয়ে মেহগনি গাছের গোড়ায় আবিস্কার করলাম রাস্তার একদম ঢালু কিনারে । হাত, পা, শরীর থরথর করে কাঁপতে লাগলো । সব যেন অবশ হয়ে গেছে । কোন দিকে তাকাতেও পারছিনা ভয়ে । তবুও বাঁচার আশা ছিল মনে । এমন যায়গায় বেশিক্ষন থাকাটাও নিরাপদ না ভেবে দ্রুত গাড়ী নিউটাল করলাম । গাড়ী থেকে নেমে ওটাকে ঠেলে পাকায় তুললাম । এরপর কোন দিকে না তাকিয়ে তড়িঘড়ি করে গাড়ীতে উঠে বসলাম । ভেবেছিলাম গাড়ী হয়তো স্টার্ট হবে না । কিন্তু কি আশ্চর্য্য প্রথম চেষ্টায় সফল । মানে গাড়ী স্টার্ট হয়েছে আর হেডলাইটও জ্বলছে । তারমানে হেডলাইট নষ্ট হয়নি ? তাহলে হঠাত্‍ এরকম হেডলাইট অফ হলো কেন ? এসব নিয়ে চিন্তা করার সময় নেই । আলো জ্বলায় খুশিতে মনটা নেচে উঠলো । আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানালাম । তিনি আমাকে তার কুদরতি ক্ষমতায় এতবড় একটা দূর্ঘটনা থেকে রক্ষা করেছেন । হয়তঃ আপনাদের মাঝে ফিরে আসবো বলে. . . . .


No comments:

Post a Comment