Thursday, June 24, 2021

সুলাইমান আ. এর আসরের সালাত ছুটে যাওয়া এবং ঘোড়া জবাই এর ঘ্টনা: প্রসঙ্গ: নামায ছুটে গেলে আমাদের করণীয়

 May be an image of text that says 'সালাত ছুটে গেলে করণীয় কি? "যে ব্যক্তি নামাযের কথা ভুলে যায় কিংবা নামায না পড়ে ঘুমিয়ে থাকে তার কাফফারা হল, যখন নামাযের কথা স্মরণ হবে তখন তা আদায় করা l" সহীহ বুখারী, হাদীস:৫৯৭৬ হাদীস:'

সুলাইমান আ. এর আসরের সালাত ছুটে যাওয়া এবং ঘোড়া জবাই এর ঘ্টনা:
প্রসঙ্গ: নামায ছুটে গেলে আমাদের করণীয়
▬▬▬▬▬▬▬▬
 
প্রশ্ন: সুলাইমান আ. কি নামায miss করার কারণে নিজের ঘোড়াগুলো জবাই করে ফেলেছিলেন?
আমরা তো অনেক কারণে গুনাহ করে ফেলি, নামায মিস করে ফেলি। কখনও নিজের পড়াশোনার কারণে, কখনও নিজেরদের স্বামী-সন্তানদের কারণে। কখনও আমরা নিজেদের লেখাপড়া অথবা সন্তান-সন্তুতি নিয়ে এত busy হয়ে যাই যে, ভুলে নামায মিস করে ফেলি। অবশ্যই এটা আমাদের উচিত নয়। কিন্তু যদি এমন হয়ে যায়, তখন কি আমাদের সেই জিনিসগুলো sacrifices করে দেয়া উচিত? নাকি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে চেষ্টা করা উচিত যেন আমরা যেন আর ভুল না করি।?
 
উত্তর:
প্রথমে আমরা সুলাইমান আ. এর আসলে কী ঘটেছিল সে সম্পর্কেে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করার পর সালাত ছুটে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় বিষয় আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
 
❒ আল্লাহর নবী সুলাইমান আলাইহিস সালাম আসর নামায ছুটে যাওয়ার কারণে কি সত্যি তাঁর ঘোড়াগুলো জবাই করে দিয়েছিলেন?
 
এ বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে কুরআনের নিন্মোক্ত আয়াতগুলোতে:
আল্লাহ বলেন:
 
وَوَهَبْنَا لِدَاوُودَ سُلَيْمَانَ ۚ نِعْمَ الْعَبْدُ ۖ إِنَّهُ أَوَّابٌ ﴿٣٠﴾ إِذْ عُرِضَ عَلَيْهِ بِالْعَشِيِّ الصَّافِنَاتُ الْجِيَادُ ﴿٣١﴾ فَقَالَ إِنِّي أَحْبَبْتُ حُبَّ الْخَيْرِ عَن ذِكْرِ رَبِّي حَتَّىٰ تَوَارَتْ بِالْحِجَابِ ﴿٣٢﴾ رُدُّوهَا عَلَيَّ ۖ فَطَفِقَ مَسْحًا بِالسُّوقِ وَالْأَعْنَاقِ ﴿٣٣
 
“আমি দাউদকে সোলায়মান দান করেছি। সে একজন উত্তম বান্দা। সে ছিল প্রত্যাবর্তনশীল। যখন তার সামনে অপরাহ্নে উৎকৃষ্ট অশ্বরাজি পেশ করা হল, তখন সে বললঃ আমি তো আমার পরওয়ারদেগারের স্মরণে বিস্মৃত হয়ে সম্পদের মহব্বতে মুগ্ধ হয়ে পড়েছি-এমনকি সূর্য ডুবে গেছে। এগুলোকে আমার কাছে ফিরিয়ে আন। অতঃপর সে তাদের পা ও গলদেশ ছেদন করতে শুরু করল।” [সূরা সাদ: ৩০-৩৩]
 
❒ সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা:
কোন কোন মুফাসসিরের মতে, সম্ভবত: তিনি এ ঘোড়াগুলো তার পিতা দাউদ আ. এর নিকট থেকে পৈত্রিক সম্পত্তি হিসেবে লাভ করেছিলেন। ওয়াহাব বিন মুনাব্বিস এবং মুকাতিল রহ. বলেন, তিনি যুদ্ধ জয়ের মাধ্যমে তিনি এসব লাভ করেছিলেন।
এগুলোর সংখ্যা নিয়ে দ্বিমত আছে। কেউ বলেন, তিন হাজার, কেউ বলেন, বিশ হাজার, কেউ বলেন, এক হাজার, কেউ বলেন, বিশটি।
যাহোক তিনি ঘোড়া প্রচণ্ড ভালোবাসতেন এবং এগুলোর প্রতি খুব যত্ন নিতেন। ইবনে কাসীর রহ. বলেন, এসব ঘোড়ার দেখভাল ও সেবা-যত্নে ব্যস্ত থাকায় তিনি একবার আসরের সালাত ভুলে গিয়েছিলেন। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত ত্যাগ করেন নি। যেমন আমাদের নবী মুহাম্মদ সা. খন্দক যুদ্ধে লিপ্ত থাকায় আসরের সালাত আদায় করতে ভুলে গিয়েছিলেন। পরে তিনি মাগরিবের পরে তা আদায় করেন। এটি সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে।
 
❒ আসরের সালাত ছুটে যাওয়ায় তিনি কী করেছিলেন?
আসরের সালাত ছুটে যাওয়ার পর তিনি ঘোড়াগুলোর কী করেছেন সেটি নিয়ে মুফাসসিরদের মতে দ্বিমত রয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে উপরোক্ত আয়াতের দু ধরণের ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। যথা:
🔸 আলী ইবনে আবী তালহা এবং ইবনে আব্বাস রা. বলেন, جعل يمسح أعراف الخيل، وعراقيبها حبالها.أه
অর্থাৎ “তিনি ঘোড়াগুলোর গর্দান এবং পায়ে নলাগুলো হাত দ্বারা মাসেহ করতে লাগলেন।” এমনটি করেছেন, সেগুলোর প্রতি ভালবাসা ও যত্নের বর্হিপ্রকাশ হিসেবে।
ইবনে হাযম রহ. বলেন, ঘোড়ার গর্দান ও পায়ের নলা কাটার বিষয়টি নাস্তিক-যিন্দিকদের বানোয়াট কাহিনী ও মিথ্যাচার। (আল মিলাল ওয়ান নিহাল গ্রন্থ)
তার মতে, আসরের সালাত ছুটে যাওয়ার কারণে, এভাবে নির্দোষ ঘোড়াগুলোর গলা ও পা কেটে ফেলা এবং এতগুলো মূল্যবান সম্পদ নষ্ট করার মত আচরণ আল্লাহ সম্মানিত নবী দ্বারা ঘটা শোভনীয় হতে পারে না। বরং এটি অহঙ্কারী রাজা-বাদশাহদের কাজ। বরং তিনি ঘোড়াগুলোর প্রতি ভালবাসা ও সম্মান প্রদর্শনার্থে সেগুলোর গলা ও পায়ের নলাগুলোতে হাত বুলিয়ে দিয়েছিলেন-যেমনটি ইবনে আব্বাস ও আলী ইবনে আবী তলহা এর বক্তব্যে উল্লেখিত হয়েছে।
 
🔸 অরেকদল মুফাসসির উপরোক্ত আয়াতের অর্থ করেছেন, তিনি ঘোড়াগুলো গলা ও পায়ের নলাগুলো কেটে দিয়েছিলেন।
তারা বলেন, আসরের সালাত ছুটে যাওয়ার কারণে তিন আল্লাহর ক্রোধ থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে সেগুলো জবাই করে ছিলেন গরীব-অসাহায় মানুষদেরকে খাওয়ানোর জন্য। আর জবাইর পদ্ধতি ছিল তার শরীয়ত অনুযায়ী। গরীব-অসহায়দের জন্য এ কাজ করা দোষ নয়। বরং প্রশংসনীয় গুণ। আর ঘোড়ার গোস্ত খাওয়া ইসলামে জায়েয।
তাই যখন আল্লাহর ক্রোধ থেকে রক্ষা পাওয়ার উদ্দেশ্যে তিনি ঘোড়াগুলো জবাই করে দিলেন, আল্লাহ তাআলা খুশি হয়ে তাঁকে তার চেয়ে উত্তম জিনিস দান করলেন। আর তা হল, বাতাসকে তার আধীনস্ত করে দিলেন। যা ঘোড়ার চেয়ে তাকে আরও বহু দ্রুত গতিতে তার উদ্দিষ্ট স্থানে পৌঁছিয়ে দিত। (এ মর্মে দেখুন: সুরা সাবা: ১২)
যা হোক, এ হল উক্ত আয়াতের সংক্ষিপ্ত তাফসীর। এবার আসি, নামায ছুটে গেলে আমরা কী করব সে বিষয়ে।
 
❒ সালাত ছুটে গেলে আমাদের করণীয় কি?
এ ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কি? যে জিনিসে ব্যস্ত থাকার কারণে সালাত ছুটে গিয়েছে সে জিনিসটিকে নষ্ট করে দেয়া, দান করে দেয়া বা বিসর্জন করা না কি তওবা-ইস্তিগফার করা?
এর উত্তর হল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 
 
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « إِذَا رَقَدَ أَحَدُكُمْ عَنِ الصَّلاَةِ أَوْ غَفَلَ عَنْهَا فَلْيُصَلِّهَا إِذَا ذَكَرَهَا فَإِنَّ اللَّهَ يَقُولُ أَقِمِ الصَّلاَةَ لِذِكْرِى ».
 
“যখন তোমাদের কেউ নামাযের সময় ঘুমিয়ে থাকে বা নামায থেকে গাফেল থাকে তাহলে যখন তার বোধোদয় হবে তখন সে যেন তা আদায় করে নেয়। কেননা আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, আমাকে স্মরণ হলে নামায আদায় কর।” (সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৬৮৪, ৩১৬)
অন্য হাদীসে এসেছে-
 
من نسي صلاة أو نام عنها فكفارتها أن يصليها إذا ذكرها
 
“যে ব্যক্তি নামাযের কথা ভুলে যায় কিংবা নামায না পড়ে ঘুমিয়ে থাকে তার কাফফারা হল, যখন নামাযের কথা স্মরণ হবে তখন তা আদায় করা।” (সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫৯৭৬)
তবে দুনিয়াবী ব্যস্ততায় নামায ছুটে গেলে করণীয় হল, তা কাযা করার পাশাপাশি আল্লাহর নিকট তওবা করা এবং ভবিষ্যতে আ যেন না ছুটে সে জন্য সতর্ক হওয়া। তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুল করবেন এবং ক্ষমা করবেন বলে আশা করা যায়।
 
আরও করণীয় হল, বিশেষ কোন কারণে নামায ছুটলে কারণ চিহ্নিত পূর্বক সমাধান করা। যদি সম্ভব হয় সে কারণ যেন আর না ঘটে সে জন্য চেষ্টা করা। যেমন, চাকুরীর কারণে সালাত কাযা হলে উক্ত চাকুরী বাদ দিয়ে অন্য চাকুরী খোঁজ করবে যেখানে ভালোভাব সালাত আদায় করা যায়, বিশেষ কোন ব্যস্ততা হলে সেটা অন্য সময় করা বা সম্ভব হলে সে কাজটা সম্পূর্ণ পরিত্যাগ করা...ইত্যাদি।
 
মোটকথা, একজন মানুষকে জীবন চলার পথে নানাকাজ করবার করতে হয়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যস্ত থাকতে হয়। এটা স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের করণীয় হবে, শত কাজের ভীড়েও নামাযকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ মনে করে যথাসময়ে তা আদায় কর এবং সর্বাত্তকভাবে চেষ্টা করা যেন, কোনভাবেই নামায কাজা না হয়। আল্লাহ তাওফিক দান করুন।
 
▬ ▬ ▬ ▬ ▬ ▬ ▬ ▬ ▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদি আরব

 

পাত্রী নির্বাচনের সঠিক মানদণ্ড Marriage education series

May be an image of text

 

পাত্রী নির্বাচনের সঠিক মানদণ্ড
▬▬▬ ◈❥◈▬▬▬
আপনি কি কোন মেয়েকে বিয়ের কথা ভাবছেন? তাহলে জেনে নিন, পাত্রী নির্বাচনের সঠিক মানদণ্ড।
পাত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সঠিক মানদণ্ড হল দুটি। যথা: সৌন্দর্য এবং দীনদারি। অর্থাৎ কোন নারীকে বিয়ের পূর্বে সর্ব প্রথম তার সৌন্দর্য অত:পর দীনদারি দেখা উচিৎ।
 
সুতরাং যদি কোনও মেয়ের প্রতি মনে প্রবল আকর্ষণ অনুভব করেন তাহলে শরিয়ত সম্মত পন্থায় বিয়ের জন্য অগ্রসর হোন। তারপর যদি তার দ্বীনদারি ঠিক থাকে তাহলে বিয়ে করুন; অন্যথায় বর্জন করুন। অর্থাৎ তাকে গ্রহণ ও বর্জন যেন হয় দ্বীনদারিকে কেন্দ্র করে-যেমনটি বলেছেন ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রাহ.।
তিনি বলেছেন:
 
إذا خطب رجل امرأة سأل عن جمالها أولا ، فإن حُمد سأل عن دينها ، فإن حمد تزوج، وإن لم يحمد يكون ردها لأجل الدين ، ولا يسأل أولا عن الدين ، فإن حُمد سأل عن الجمال ، فان لم يحمد ردَّها للجمال لا للدين
 
“কোন পুরুষ যদি কোনও নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় তাহলে সর্বপ্রথম তার সৌন্দর্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে। যদি এ ব্যাপারে তার প্রশংসা করা হয় তাহলে তার দ্বীন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে। দ্বীনের ক্ষেত্রে যদি প্রশংসিত হয় তাহলে বিয়ে করবে; অন্যথায় দীনের কারণে প্রত্যাখ্যান করবে। কিন্তু এমনটি করা ঠিক নয় যে, প্রথমেই দীন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে। এ ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় হলে তারপরে তার সৌন্দর্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে। তারপর সৌন্দর্যের ব্যাপারে প্রশংসনীয় না হলে ফিরিয়ে দিবে। তাহলে এ প্রত্যাখ্যান হবে সৌন্দর্যের কারণে; দীনের কারণে নয়। ” (শরহু মুনতাহাল ইরাদাত-ইমাম ভূতি ২/৬২১)
 
❥❥ সৌন্দর্য:
● রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
 
‏ إِذَا خَطَبَ أَحَدُكُمُ الْمَرْأَةَ فَإِنِ اسْتَطَاعَ أَنْ يَنْظُرَ إِلَى مَا يَدْعُوهُ إِلَى نِكَاحِهَا فَلْيَفْعَلْ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ فَخَطَبْتُ جَارِيَةً فَكُنْتُ أَتَخَبَّأُ لَهَا حَتَّى رَأَيْتُ مِنْهَا مَا دَعَانِي إِلَى نِكَاحِهَا وَتَزَوُّجِهَا فَتَزَوَّجْتُهَا ‏.‏
 
“তোমাদের কেউ যখন কোন নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দিবে তখন সম্ভব হলে তার এমন কিছু যেন দেখে নেয় যা তাকে বিবাহে উৎসাহিত করে।”
 
বর্ণনাকারী বলেন, “আমি একটি মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেবার পর তাকে দেখার আকাঙ্ক্ষা-অন্তরে গোপন রেখেছিলাম। অতঃপর আমি তার মাঝে এমন কিছু দেখি যা আমাকে তাকে বিয়ে করতে আকৃষ্ট করলো। অতঃপর আমি তাকে বিয়ে করি।" [সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: বিবাহ, অনুচ্ছেদ-১৯, বিয়ের উদ্দেশে পাত্রী দেখা প্রসঙ্গ, জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত-সনদ-হাসান]
 
● আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত,
 
ﻗِﻴﻞَ ﻟِﺮَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺃَﻱُّ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀِ ﺧَﻴْﺮٌ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟَّﺘِﻲ ﺗَﺴُﺮُّﻩُ ﺇِﺫَﺍ ﻧَﻈَﺮَ ﻭَﺗُﻄِﻴﻌُﻪُ ﺇِﺫَﺍ ﺃَﻣَﺮَ ﻭَﻻ ﺗُﺨَﺎﻟِﻔُﻪُ ﻓِﻲ ﻧَﻔْﺴِﻬَﺎ ﻭَﻣَﺎﻟِﻬَﺎ ﺑِﻤَﺎ ﻳَﻜْﺮَﻩُ
 
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! কোন স্ত্রী সর্বোত্তম?
তিনি বলেন: “(স্বামী) যে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে পুলকিত হয়, কোন নির্দেশ দিলে আনুগত্য করে এবং সে তার নিজস্ব ব্যাপারে বা তার অর্থ-সম্পদের ব্যাপারে স্বামী যেটা অপছন্দ করে তার বিপরীত কিছু করে না।” (মুসনাদে আহমদ। শাইখ আলবানি হাদিসটিকে হাসান বলেছেন। উৎস: সিলসিলা সহিহা, হা/১৮৩৮)
 
উল্লেখ্য যে, সৌন্দর্য বলতে কেবল বাহ্যিক রূপ-সৌন্দর্য বুঝায় না বরং মন ও মননের সৌন্দর্য তথা বিশেষ গুণ-বৈশিষ্ট্য, জ্ঞান, মেধা, যোগ্যতা, বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদিও এর অন্তর্ভুক্ত। যদিও মানুষ কারো গুনাগুণ বিচারের পূর্বে তার বাহ্যিক রূপ-সৌন্দর্য অবলোকন করে। 
 
বাহ্যিক সৌন্দর্যের বিষয়টিও আপেক্ষিক। সবার দৃষ্টিভঙ্গি এক নয়। একজনের কাছে কাউকে আকর্ষণীয় মনে হলেও অন্যের কাছে তা নাও হতে পারে। কারো কাছে ফর্সা ভালো লাগে তো কারো কাছে ভালো লাগে শ্যামলা।
 
সুতরাং বিয়ের পূর্বে এ দিকটি দেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বিয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য হল, মনের পরিতৃপ্তি ও প্রশান্তি অর্জন করা-যা চরিত্র হেফাজত ও চোখ অবনমিত রাখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
সুতরাং আপনি যদি এমন মহিলাকে বিয়ে করেন যার দিকে তাকালে আপনার মনে আকর্ষণ সৃষ্টি হয় বা ভালো লাগে তাহলে স্বভাবতই মনে প্রশান্তি অর্জিত হবে এবং পরনারী থেকে দৃষ্টি অবনমিত রাখতে সহায়ক হবে (তবে এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতি)।
এই সৌন্দর্য ও আকর্ষণবোধ ছাড়া দাম্পত্য জীবন বেশি দূর এগুনো সম্ভব নয়।
 
❥❥ দীনদারি:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দ্বীনদারী মেয়েকে বিয়ে করার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন:
● হাদিসে এসেছে:
 
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ تُنْكَحُ النِّسَاءُ لأَرْبَعٍ لِمَالِهَا وَلِحَسَبِهَا وَلِجَمَالِهَا وَلِدِينِهَا فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّينِ تَرِبَتْ يَدَاكَ ‏"‏ ‏.‏
 
 
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “নারীদেরকে (সাধারণত) চারটি বিষয় দেখে বিয়ে করা হয়। যথা: 
 
ক. তার ধন-সম্পদ।
খ. বংশমর্যাদা।
গ. রূপ-সৌন্দর্য।
ঘ. এবং দীনদারি বা ধার্মিকতা। 
 
তবে তুমি দীনদার (ধার্মিক) নারীকে বিয়ে করে সফল হয়ে যাও; অন্যথায় তুমি লাঞ্ছিত হবে।” [সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: বিবাহ, অনুচ্ছেদ-২ ধার্মিক মহিলা বিয়ে করার নির্দেশ, হা/২০৪৭-সনদ সহিহ]
আর এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ধার্মিকতা ও নীতি- নৈতিকতা হীন নারী একজন পুরুষের জন্য এবং তার পরিবার ও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য মারাত্মক ফিতনা, অশান্তি এবং ধ্বংসের কারণ।
আল্লাহ তাআলা প্রতিটি পুরুষকে তার পছন্দের দীনদার নারীকে বিয়ে করার মাধ্যেম একটি সুস্থ ও সুন্দর দাম্পত্য জীবন গড়ার তওফিক দান করুন। আমিন।
 
▬▬▬ ◈❥◈▬▬▬
লেখক:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব