Thursday, May 13, 2021

শয়তান যাদুকর/কবিরাজ প্রসঙ্গে সবকিছু একসাথে

শয়তান যাদুকর/কবিরাজ প্রসঙ্গে সবকিছু একসাথে

 

 

  1. রুকইয়াহ শিরকিয়্যাহ
  2. যাদুকরের হাজিরা দেখা, আপনাদের বিভ্রান্তি
  3. ঝাড়ফুঁক জায়েজ তাই তাবিজও জায়েজ?
  4. কুফরি কাটাতে কুফরি করা লাগবে?
  5. যেসব মুত্তাকী ব্যক্তি বাতিল কবিরাজি করেন...
  6. ফেরেশতা হাজির করার আমল নাকি শয়তান পুঁজা?
  7. জিনদের সাহায্য নেয়া যাবে কি?
  8. রুকয়াইয়হ vs কবিরাজি

 

 

রুকইয়াহ শিরকিয়্যাহ!

----------
আজকাল কবিরাজ নামের ভণ্ড যাদুকররাও বলছে "রুকইয়া করি"
শয়তানি আগেরগুলোই আছে, শুধু নাম দিচ্ছে রুকইয়া!
গতকাল একজনের খবর পেলাম উনাকে বলেছে রুকইয়া করবে, পরে- উনার নাম আর মায়ের নাম জিজ্ঞেস করেছে। মায়ের নাম জিজ্ঞেস করার কারন হচ্ছে, শয়তানী যাদু করবে তাই কবিরাজরা বাপের পরিচয় স্বীকার করতে চায় না।
এক ফেসবুক পেইজে দেখলাম রুকইয়া করার নামে প্রেমভালবাসার তাবিজ বিক্রি চলছে!! রিলেশন ব্রেকআপ হওয়া ছেলেমেয়েরা ভিড় জমাচ্ছে কুফরি করার জন্য।
কিন্তু এই কুফরি করছে রুকইয়ার নাম দিয়ে।
হ্যাঁ! এসব (শাব্দিক অর্থে) রুকইয়া তো বটে! কিন্তু সেটা হল জাহেলী জামানার কুফরি-শিরকি রুকইয়াহ!
সহজ ট্রিক শিখিয়ে দেই, যে লোক তাবিজ লেখবে, তাবিজ ভেঙে ওর সামনে গিয়ে খুলবেন, জিজ্ঞেস করবেন - পড়েন কি লেখেছেন, এই তাবিজে কয়জন শয়তানের নামের যিকর করছেন বলেন।
শয়তান পূজারি যাদুকর চেনার সহজ উপায় হচ্ছে, চিকিৎসা করতে গেলে আপনার কাপড় চাইবে, অথবা আপনার কোন অংশ (যেমন চুল চাইবে)। আর আপনার নাম এবং মায়ের নাম জিজ্ঞেস করবে।

 

 

যাদুকরের হাজিরা দেখা, আপনাদের বিভ্রান্তি

যাদুর একটা ধরন হচ্ছে শয়তান ও যাদুকরের মাঝে এক ধরনের চুক্তি, যেখানে শর্ত থাকে যে যাদুকর কতিপয় হারাম বা শিরকী কাজে লিপ্ত হবে, আর বিনিময়ে শয়তান তাকে সহযোগিতা করবে ও তার অনুসরণ করবে। শয়তানের নিকটবর্তী হওয়ার জন্য যাদুকরেরা ঘৃণ্য কিছু উপায় অবলম্বন করে। যেমনঃ
  • কুরআনের আয়াত উল্টো করে লিখা, 
  • কুরআন পায়ের নিচে দলিত করে টয়লেটে নিয়ে যাওয়া বা নোংরা কিছু দিয়ে কোরআনের আয়াত লিখা, 
  • সর্বদা নাপাক থাকা বা বিনা অযুতে সালাত আদায় করা, 
  • শয়তানের উদ্দেশ্যে পশু জবাই করে জবাইকৃত পশু শয়তানের নির্ধারিত স্থানে অর্পণ করা, ইত্যাদি। 
  • অনেকে আবার মাহরাম (আপনজন, যাদের সাথে বিয়ে হারাম) এমন মানুষের সাথে জিনা করা বা সংখ্যাতাত্ত্বিক চিহ্ন ব্যবহার করে ছক কেটে নক্সা এঁকে শয়তানের উপাসনা করে থাকে।
অর্থাৎ, যে যাদুকর যত বেশি কুফরিতে লিপ্ত হতে পারবে, শয়তান তাকে ততবেশি সাহায্য করবে।
আমাদের দেশে আমরা হরহামেশাই বিভিন্ন হুজুর, তান্ত্রিক সাধু, বা জ্যোতিষীর দেখা পাই যারা দাবি করে যে মুখ দেখেই আপনার অতীত বর্তমান ভবিষ্যত বলে দেবে। মূলত তারা এসব করে নিজেদের অনুগত শয়তান জীনের সাহায্যে আপনার ক্বারীন জ্বীনের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে। ক্বারিন অর্থ হচ্ছে সংগী, প্রত্যেক মানুষের সাথেই শয়তান জ্বীন লেগে থাকে, সংগী হিসেবে। এরা সবসময় মানুষের অন্তরে খারাপ চিন্তা ঢুকিয়ে দিয়ে পাপ কাজ করতে উৎসাহিত করে।
তো যা বলছিলাম...
কিছুদিন আগে এক ভাই/বোন গ্রুপে এই ছবিটা পোস্ট করেছিলেন। এটাচমেন্টে দেখেন।
 
No photo description available.
 
ওনার ভাষ্যমতে স্বপ্নের মাধ্যমে কোন এক ওয়ালী (আল্লাহর প্রিয় বান্দা) নাকি এই মহিলাকে গায়েবী ক্ষমতা দান করেছেন, সেই ওয়ালির সাহায্যেই এই মহিলা হাজিরা দেখা আর মানুষের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের কাজ করেন।প্রকৃত পক্ষে এই গায়েবী ওয়ালি এক শয়তান জ্বীন, অন্য কিছু নয়। আর হাজিরা বা উপস্থিতিও জ্বীনের, অর্থাৎ জ্বীন উপস্থিত হয়ে তাকে অদৃশ্যের খবর বলে যায়।
ওয়াক্তিয়া নামাজের পর এই মহিলা জায়নামাজের সামনে দু-পাশে দুটি মোম বাতি জ্বালান, মাঝখানে একগ্লাস পানি রাখেন, আর আগর বাতির ধোয়া ছড়ান.. এরপর উনি জায়নামাজে বসে মনে মনে ওয়ালিআল্লাহ'কে স্মরণ করলে ওয়ালীআল্লাহ নাকি উনার সামনে আসেন এবং ওয়ালিআল্লাহ মহিলার মাধ্যমে রোগীর নাম, পিতা-মাতার নাম, কি সমস্যা (রোগ) ইত্যাদি জিজ্ঞেস করেন। তারপর রোগীকে বলে দেন যে রোগী অমুক অমুক জায়গায় গিয়েছে, আর অমুক জায়গায় তাকে জ্বীন আক্রমণ করেছে।
সবশেষে সিজদা করে উঠে সামনে রাখা গ্লাসের পানি রোগীকে পান করতে বলেন, মাথায় ঝাড়ফুঁক করেন আর তাবিজ লিখে দেন। তারপর বলেন ওয়ালিআল্লাহর দরবার জিয়ারত করে আসতে। সাধারণত এই দরবার মানে কোন একটা মাজার বা দরগাহ হয়।
ঠিক একই রকম ঘটনা কিছুক্ষণ আগে আমি আমার এক আত্নীয়ের কাছ থেকে শুনলাম। তাঁর এক কাজিনের প্রেগন্যান্সির শুরুর দিকে ডাক্তারি পরীক্ষায় কিছুই ধরা পড়ছিল না, কিন্তু সব লক্ষণ দেখে মনে হচ্ছিল যে সে প্রেগন্যান্ট। তো এমনই এক বয়স্ক মহিলা ছিল পরিচিত, যার সাথে জ্বীন আছে বলেই সবাই জানতো। এই মহিলাকে বলার পর তিনি মাগরিবের নামাজের পর জায়নামাজে থেকেই কিছু দোয়া দরুদ পড়লেন, সামনে যথারীতি আগরবাতি/মোমবাতি আর গ্লাস ভর্তি পানি ছিল। যেহেতু পূর্ব পরিচয় ছিল, সেহেতু আর তিনি রোগীর নামধাম বা সমস্যার বিবরণ জানতে চান নি। কিছুক্ষণ পর সিজদা করে উঠে রোগীকে পানি খেতে বললেন আর জানিয়ে দিলেন সে আসলেই প্রেগন্যান্ট, তাঁর সাথের জ্বীন তাকে বলেছে। সাথে কিছু ঝাড়ফুঁক করে দিলেন, তবে তাবিজ দিয়েছিলেন কিনা তা আর সেই আত্নীয়া মনে করতে পারেন নি।তবে এই বয়স্ক মহিলা ছিলেন নিঃসন্তান।
চিত্তাকর্ষক বর্ণনা, তাই না?
এবারে ব্যাখ্যায় আসি। এই দু’জন মহিলাই স্রেফ শয়তানের পূজারি যাদুকর। তারা শয়তানকে সিজদা করেছেন, আগুন/ধোঁয়ার মাধ্যমে যাদুর নিয়মকানুন পালন করেছেন। বিনিময়ে শয়তান তাঁদেরকে গোপন তথ্য দিয়ে সাহায্য করেছে। আর শয়তানের এই তাঁবেদারি জঘন্যতম শিরক।
তবে মজা দেখতে চাইলে এরপর যখনই এমন কারো ওপর ‘আল্লাহর ওলী’ (?) ভর করবে, তখন আপনার কানে আঙুল দিয়ে জোরে আজান দিবেন। এরপর দেইখেন সার্কাস 😛
মনে প্রশ্ন আসছে না? কেন সেই মহিলা নিঃসন্তান ছিলেন? এর উত্তর দিতে হলে একটু পেছনে যেতে হবে। সাধারণত যাদুকর এবং জ্বীনের গোত্র প্রধানের মধ্যে এই মর্মে চুক্তি হয় যে, যাদুকরের কিছু প্রকাশ্য কুফরি বা শিরকী কাজের বিনিময়ে জ্বীনের গোত্র প্রধান তাকে নিজে সাহায্য করবে, বা কোন এক জ্বীনকে যাদুকরের কার্যসিদ্ধির জন্য নিযুক্ত করে দিবে। তো, এই প্রতিনিধি জ্বীন যদি কখনো আনুগত্য না করে, তাহলে যাদুকরের অভিযোগের প্রেক্ষিতে জ্বীনের গোত্র প্রধান তাকে শাস্তিও দিয়ে থাকে। এই শাস্তি অনেক সময় প্রতিনিধি জ্বীনের ক্রোধের কারণ হয়ে যায়, আর ক্রোধের কারণে জ্বীন যাদুকরের সন্তান সন্ততি ও সম্পদের ক্ষতির কারণ হয়ে যায়। যাদুকরকে জ্বীন অনেক কষ্টও দিয়ে থাকে, আর সাধারণত যাদুকরের সন্তানও হয় না, কারণ জ্বীন মাতৃগর্ভের শিশুকে মেরে ফেলে। এজন্য দেখবেন অনেক যাদুকর সন্তানের আশায় যাদু করা থেকে সাময়িকভাবে বিরত থাকে।
“কেন জ্বীনরা কবিরাজদের ক্ষতি করে” তাঁর একটা কারণ রয়েছে এখানে।
আল্লাহ্‌ আমাদের এসব শিরক - কুফর থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দিন, আমীন।

 

 

ঝাড়ফুঁক জায়েজ তাই তাবিজও জায়েজ?

---------
কুফরি তাবিজের ব্যাপারে বলতে লাগলেই আমাদের যেসব ভাইয়েরা ঝাড়ফুঁকের কথা টেনে ওটাকে জায়েজ করার চেষ্টা করেন। তাদেরকে আমি সচরাচর কিছু প্রশ্ন করে থাকি-
ঝাড়ফুঁকের ব্যাপারে সহীহ মুসলিমে যাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রা. এর সাফ হাদিস আছে, রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে ঝাড়ফুঁক নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন। এরপর যাচাই করার পর শর্তসাপেক্ষে অনুমতি দিয়েছেন।
আমার প্রশ্ন হচ্ছে,
১. আজকাল যেসব "২৪৬৮ ৭৬৮ ৫৮০ ইয়া ফিরাউন ইয়া জিবরাইল" তাবিজ আমাদের হুজুররা লেখে। এসব তাবিজের ব্যাপারে রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবে অনুমতি দিয়েছেন?
২. আপনারা শর্ত সাপেক্ষে তাবিজ জায়েজ বলেন - ভালো কথা। তো তাবিজ জায়েজ হওয়ার শর্তের সাথে মিলে এরকম তাবিজ জীবনে কয়টা দেখেছেন?
৩. যেসব তাবিজের চর্চা হয়, এর শতকরা ৯৯.৯৯% আপনাদের ফাতওয়ার হিসেবেই হারাম কুফর। এরপরেও এই ফিতনার ব্যাপারে আপনারা নিশ্চুপ কেন? ফিতনার দরজা বন্ধ করা না ওয়াজিব?
৪. গাইরে মাহরামের সাথে অহেতুক চ্যাট করা, পত্রালাপ করা, ফোনে কথা বলা - এটার হুরমত তো নফসান বা ক্বাত'আন না, তবুও আলেমরা এটা নিষিদ্ধ বলেন কেন? কারণ এটা হচ্ছে হারাম কাজে পৌঁছানোর রাস্তা, শুরুতেই ফিতনার দরজার বন্ধ না করলে এটা যিনা পর্যন্ত পৌছাবে। সবাই তো আর যিনা করে না, তবুও ফোনে প্রেম করা হারাম বলেন কেন? কারণ এটা হারাম পর্যন্ত পৌঁছানোর মাধ্যম। খুতুওয়াতিশ শাইত্বান।
তাবিজের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা, আপনি প্রথমে না থামালে তাঁরা কুফরি-শিরকি তাবিজে পৌঁছাবে। আর এমনটাই হচ্ছে আমাদের সমাজে।
৫. এক মাযহাব মানা আবশ্যক বলেন, কারণ সাধারণ মানুষকে ইচ্ছামত মাযহাব মানতে দিলে তাঁরা ফিতনার জন্ম দিবে। আওয়ামরা উসুল বুঝবে না, একেক মাজহাবের সব সহজ বিষয় নিয়ে ধর্মকে জগাখিচুড়ী বানাবে। তা ভাই আপনার তাবিজের উসুলগুলা কজন আওয়াম বুঝে? তাদেরকে যে ফিতনার রাস্তায় ছেড়ে দিচ্ছেন, এরপর যখন সে স্বয়ং শয়তানের লেখা তাবিজ নিবে, তখন এর দায় আপনি নিবেন? দোষ তো আপনার! ফিতনার দরজা খালি মাজহাবের সময়েই বন্ধ করেছেন, তাবিজের সময় আরও রাস্তা দেখাইছেন।
রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঝাড়ফুঁকের ক্ষেত্রেও বলেছেন- "তোমাদের ঝাড়ফুঁক করার মন্ত্র আমাকে দেখাও, যদি শিরক না থাকে সমস্যা নাই" (মুসলিম)
তখনও কুফরি শিরকির প্রচলন ছিল বিধায় ঝাড়ফুঁকের ক্ষেত্রে রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাচাই করে তারপর অনুমতি দিয়েছেন আমভাবে দেননি। সাহাবায়ে কিরাম সুরা ফাতিহা দিয়ে রুকইয়াহ করেও নিশ্চিত হননি, রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে জিজ্ঞেস করেছেন- কাজটা ঠিক হয়েছে তো?
আমার প্রশ্ন হচ্ছে,
৬. আপনারা তাবিজ নিলে কি সেটা যাচাই করেন? উম্মতকে কখনও বলেন যাচাই করার কথা? নাকি উল্টা পরামর্শ দেন "সমস্যা হইছে? কবিরাজের কাছে যান!"
৭. শেষ প্রশ্ন, আপনারাও তো কবিরাজদের কাছে যান। তাবিজ নেন। জীবনে কয়টা তাবিজ ভেঙ্গে দেখেছেন এটা জায়েজ নাকি নাজায়েজ?
অথচ আল্লাহ তা'আলা বলেছেন -
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن جَاءَكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَإٍ فَتَبَيَّنُوا
হে ইমানদাররা! কোন পাপাচারী ব্যক্তি যখন তোমাদের কাছে কোন সংবাদ নিয়ে আসে তখন সেটা যাচাই কর। ভেরিফাই কর। (সুরা হুজুরাত-৬)
তাবিজের ব্যাপারে আমার দর্শন উস্তায মুহাম্মাদ তিম হাম্বলের অনুরূপ।
আমি বলব, তাবিজ পাইলে সবার আগে ভাঙবেন! দেখবেন ভেতরের লেখাটা কি খালি কোরআনের আয়াত, নাকি সাথে প্রাইমারির ২৪৬৮ নামতা লেখা আছে? খালি কোরআন আঁকা আছে, নাকি সাথে যাদুকরদের নকশাও আছে? খালি আল্লাহর যিকর আছে, নাকি চিপা দিয়ে ফেরাউন শয়তানের যিকরও আছে। যদি কোন সমস্যা না পান, অস্পষ্ট কিছু না থাকে। তখন আপনার সিদ্ধান্তে ছেড়ে দিলাম সেটা যা ইচ্ছা করতে পারেন।
আল্লাহ যেন আমাদের হিদায়াত দেয়।

 

কুফরি কাটাতে কুফরি করা লাগবে?

-------------------
বহুল প্রচলিত জঘন্য আকিদাগুলোর মাঝে এটা একটা। নিঃসন্দেহে এটা কোরআন বিরোধী আকিদা, বাস্তবতা পরিপন্থী আকিদা, মুর্খতাসুলভ কুফরি আকিদা। আমি কাউকে তাকফির করছি না, কিন্তু বাস্তবেই এটা ইসলাম বিরোধী বাতিল আকিদা।
কোরআন এর কথা হচ্ছে – “মন্দ প্রতিরোধ সেটা দিয়েই করুন, যা উত্তম। তারা যা বলে, আমি সে বিষয়ে সবিশেষ অবগত। আর বলুনঃ হে আমার পালনকর্তা! আমি শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আর হে আমার রব! তাদের উপস্থিতি থেকেও আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি।” [মুমিনুন, ৯৬-৯৮]
সুতরাং আপনি যদি শয়তানি যাদুতে আক্রান্ত হন, তবে আপনার কাজ হবে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া। রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কিরামও যাদুতে আক্রান্ত হয়েছে। তাঁরা তো আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়েছেন, শয়তানের কাছে না। সুরা ফালাকের মাঝে আল্লাহ আমাদের সেটাই শিখিয়েছেন।
"আর (আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি) গিরায় ফুঁ দিয়ে জাদুকারিনীদের অনিষ্ট থেকে" [আয়াত ৪]
আর বাস্তবতা এটাই, ঈমান আসবে; কুফর চলে যাবে। হক আসবে; বাতিল চলে যাবে। কোরআনের এই আয়াতটা তো সবার মুখস্ত -
وَقُلْ جَاءَ الْحَقُّ وَزَهَقَ الْبَاطِلُ ۚ إِنَّ الْبَاطِلَ كَانَ زَهُوقًا
"বলুন, সত্য এসেছে; মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল।"
এর পরের আয়াতটা কি জানেন?
وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاءٌ وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ ۙ وَلَا يَزِيدُ الظَّالِمِينَ إِلَّا خَسَارًا
“আমি কোরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত, গোনাহগারদের তো এতে শুধু ক্ষতিই বৃদ্ধি পায়..। [বানি ইসরাইল, ৮১-৮২]
সুতরাং যদি ক্ষতি থেকে বাঁচতে চান আর আল্লাহর রহমত আশা করেন, তবে কুফর থেকে দূরে থাকেন, এবং কোরআন দিয়ে রুকইয়াহ করেন।
আল্লাহ আমাদেরকে জানার, বুঝার এবং মানার তাওফিক দিক, আমিন!

 

মুত্তাকী / আলেম ব্যক্তি যারা কবিরাজি করেন, তাদের ব্যাপারে কি বলব?

--------------------------
যাদুটোনা ব্যবহার করা কবিরাজ চেনার কিছু পদ্ধতি বলা হয়েছিল। যথাঃ

  • আপনার কাপড় চাইবে
    আপনার কোন অংশ (যেমন চুল চাইবে)
    আপনার নাম এবং মায়ের নাম জিজ্ঞেস করবে।

এটা দেখার পর অনেকে প্রশ্ন করছেন, অনেক আলেম মানুষও তো এরকম করেন। তাদের ব্যাপারে কি বলব?
কেউ বলছেন - অমুক বড় মাদরাসা থেকে ইফতা পড়া মুফতি সাহেব এভাবে এভাবে করেন, তার ব্যাপারে কি বলব?
তাবিজ নিয়ে কথা বলতে গেলেও এরকম মন্তব্য শোনা যায়, খুব পরিচিত একজন মুত্তাকী আলেম আছেন, যিনি সংখ্যা দিয়ে তাবিজ লেখেন, এবং টাকাও নেন না। তাকে আমি কিভাবে ভুল বলব?
প্রিয় ভাই! এখানে কয়েকটা পয়েন্ট মাথায় ঢুকিয়ে নিলে আশা করি ব্যাপারটা সহজ হয়ে যাবে-
১. 'রুকইয়া শারইয়্যাহ এবং শিরকিয়্যাহ' একটা স্বতন্ত্র বিষয়। এই বিষয়ে ক্লাস নিতে চাইলে, ৪ মাসের এক সেমিস্টার পুরোটা ক্লাস নিয়েও আলোচনা শেষ করা মুশকিল।
২. একজন ব্যক্তি মুহাদ্দিস সাহেব অথবা মুফতি সাহেব হতে পারেন, কিন্তু তার মানেই উনি তাবিজ-কবচ বিষয়ে খুব গভীর ধারণা রাখবেন এমন তো না। উনি মাদরাসায় পড়েছেন ফিকহে ইসলামি অথবা উলুমে হাদিস বিষয়ে, বদনা চালান দেয়া তো দারুল ইফতায় শিখেননি।
৩. “উনি কাওমি মাদরাসায় পড়েছেন, উনি যে তাবিজ লেখেন!” – এর উত্তরে আমি বলি “দুঃখিত ভাই! কাওমি মাদরাসায় তাবিজ লেখা শিখানো হয় না। এটা উনি অন্য কোথাও শিখেছেন।”
৪. বাস্তবতা হচ্ছে, যারা এসব করেন, তাদের খুবই কম সংখ্যক এসবের গভীর জ্ঞান রাখেন। হয়তো একটা বই পেয়েছে কোন দোকানে বা ফুটপাথে, পড়ার পর আগ্রহ জন্মেছে। ব্যস! শুরু করে দিয়েছেন। এজন্যই আমরা অহরহ দেখি “বশ করার তাবিজ (পড়ুন যাদু) করতে গিয়ে ভুল করেছিল, এখন পাগল হয়ে গেছে, কিংবা মারাত্মক অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছে।”
৫. গভীর জ্ঞান না রাখা একটা কারণ, দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে- এব্যাপারে বিজ্ঞ আলেমদের মতামত জানতে না চাওয়া, তাদের শরণাপন্ন না হওয়া।
৬. তৃতীয় কারণ হচ্ছে, এব্যাপারে শরিয়ত সমর্থিত পদ্ধতির প্রচলন না থাকা। যার কারণে, লোকেরা ধীরে ধীরে কুফরি যাদুটোনা আর তাবিজের প্রতি ঝুঁকে পড়েছে।
স্মরণ করুন, আলী রা. এর প্রসিদ্ধ উক্তি -
"আহলে হক যখন চুপ থাকে, তখন আহলে বাতিল ধারণা করে, তারাই হক!"

 

 

ফেরেশতা হাজির করার আমল? নাকি শয়তান পুঁজা?

------------------
[ক]
আল্লাহ তা'আলা শিরকের ব্যাপারে অনেক কঠোর। স্বাভাবিক! একজন মানুষই তো তার ভালোবাসা, তার প্রভাব প্রতিপত্তিতে অন্যের ভাগ বসানো পছন্দ করবে না, আর আল্লাহর সুবহানাহু তা'আলা তো রাজাধিরাজ। আমাদের কল্পনাও যার নাগাল পেতে অক্ষম, কিভাবে সেই রাব্বুল আলামিনের ব্যপারে অংশিদারিত্ব সহ্য করা যায়?
“নিশ্চয় শিরক বিরাট বড় জুলুম” [সুরা লুকমান:১২]
[খ]
শিরকের ক্ষেত্রে এজন্য আল্লাহ তা’আলার শাস্তি অনেক ভয়াবহ। “নিশ্চয় যে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না। এছাড়া যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করে দেন।” [সুরা নিসা:১১৬]
আমরা জানি ঈসা আ.কে যখন মানুষেরা কিয়ামত দিবসে আল্লাহর নিকট সুপারিশের জন্য বলবে, তিনি চিন্তাগ্রস্ত থাকবেন। কারণ, মানুষ তার সাথে আল্লাহকে সাজদা করেছিল। মুর্তিপুজারিদের সাথে মুর্তিও জাহান্নামে পুড়ানো হবে মর্মে কোথাও পড়েছিলাম।
মোটকথা, আল্লাহ শিরকের ব্যাপারে কোন ছাড় দিবেন না।
[গ]
আমরা সেদিন একটি তাবিজের পোস্টমর্টেম দেখলাম, যেখানে সুরা ইখালাসের সাথে শিরক মিশিয়ে ভয়াবহতম শিরক করা হয়েছে। আচ্ছা সেসব কবিরাজ বা যাদুকররা “ইয়া জিবরাইল ইয়া মিকাইল” তাবিজ লেখে, তারাও তো শিরক করছে। তাইনা? ফিরিশতাদের সাথে শিরক। নিজে তো করছে, অন্যকেও শিরকি কালাম বিতরণ করছে!
মূলতঃ শয়তানকে সন্তষ্ট করার জন্য তাঁরা ফেরেশতাদের নাম নিয়ে আল্লাহর সাথে শিরক করে। কোন এক শয়তানি কবিরাজির বইয়ে সুরা ইখলাসের ওঁই শিরকি এডিশন লিখা ছিল, এরপর কিছু নিয়মকানুন বলা ছিল। এভাবে এভাবে এত হাজার বার লিখবেন পড়বেন এতদিন, এরপর “তিনজন মক্কেল আসবে আপনার খেদমতে!!!”
এই তিনজনের মধ্যে একজনের ব্যাপারে লিখেছে – সে বলবে আমার নাম আব্দুর রহমান, "সুরা ইখলাস পাঠ করিয়া আমাকে ডাকিলে" আমি হাজির হইব। আমি আপনাকে “বহুবিধ জ্ঞান ও আশ্চর্য বিদ্যা” শিক্ষা দিব। এরপর তাহারা সিজদা করিতে বলিলে আল্লাহর নামে সিজদা করিবে!
এবার আমি ব্যাখ্যা করি শোনেন – “সুরা ইখলাসের সাথে কয়েক হাজার বার জঘন্যভাবে শিরক মিশ্রিত করে বড় শয়তান সন্তুষ্ট করতে পারলে, সে তিনটা চামচা পাঠাবে। এই তিনজনের মধ্যে এক শয়তান এসে যাদু শিখাবে, আর এসব স্যাটানিক রিচ্যুয়াল পালন শেষে এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে, যখন শয়তানকে সিজদা করতে হবে।”
এই কবিরাজদেরকেই মানুষ বিরাট বুজুর্গ মনে করে, তাই না?
[ঘ]
দেখুন আমাদের প্রভু আল্লাহ তা'আলা কি বলছেন -
“যেদিন তাদের সবাইকে একত্রিত করবেন এবং ফেরেশতাদেরকে বলবেন, এরা কি তোমাদেরই পূজা করত? ফেরেশতারা বলবে, আপনি পবিত্র, আমরা আপনার পক্ষে, তাদের পক্ষে নই, বরং তারা জিনদের পূজা করত। তাদের অধিকাংশই শয়তানে বিশ্বাসী।” [সুরা সাবা:৪০-৪১]

 

জিনদের সাহায্য নেয়া যাবে কি?

----------
[ক]
অনেক কবিরাজ আছে, যারা জিনদের সাহায্য নিয়ে চিকিৎসা করে। আর শোনা যায় এসব কবিরাজদেরই ডিমান্ড বেশি!
বেশ কয়েক বছর আগের কথা, এক নিকটাত্মীয়ার চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন যায়গায় খোঁজ করছিলাম, তখন রুকইয়াহ বিষয়ে কোন ধারণা ছিল না। কক্সবাজারের এক কবিরাজের খবর পেলাম, যে নাকি জিন দিয়ে চিকিৎসা করে। উনি ১০০টাকা নিলেন আর 'রুগীর এবং মায়ের নাম' নিয়ে টেস্ট করে বলেছিলেন - ২০ হাজার টাকা লাগবে!
আমাকে যে লোক খোঁজ দিয়েছিল তাঁকে বললাম, উনি এত চাচ্ছেন কেন? উত্তরটা ছিল লিখে রাখার মত - "আসলে এই হুজুরের সিস্টেমই এরকম। উনাকে জিনেরা বলেছে, আপনি যত বেশি টাকা নিবেন, ততবেশি উপকার হবে!!"
কবিরাজদের এক গ্রুপ আছে, যারা নিজের নামের শেষ "শাজলী" যোগ করে। ওরা বলে "সাহাবি জিন" নাকি ওদের খেদমত করে। (কোন ফাইজলামি এটা আল্লাহই জানে)
হাসবেন না প্লিজ.. এসব ভন্ডদের পিছেই মানুষ বেশি দৌড়ায়।
তো আমাকে জিনদের সাহায্য নেয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করলে বলি - "ভাই আমিতো মুফতি না, তাই ফাতওয়া দিতে পারছি না। তবে আমার জানামতে জিনদের সাহায্য চাওয়া কখনও শুধু হারাম, কখনও এর সাথে শিরক, কখনও কুফর। এটা কিভাবে সাহায্য চাইছে, কিভাবে সাহায্য করছে এর ওপর নির্ভর করে।"
.
[খ]
আজ চলুন কিছু চলুন দলিল দেখা যাক। হাদিসে এব্যাপারে কি আছে আমার জানা নাই, তবে কোরআনুল কারিমে দুইটা আয়াত পেয়েছি।
প্রথম আয়াটি সবাই জানেন, সুরা জিনে আল্লাহ বলছেন -
وَأَنَّهُ كَانَ رِجَالٌ مِّنَ الْإِنسِ يَعُوذُونَ بِرِجَالٍ مِّنَ الْجِنِّ فَزَادُوهُمْ رَهَقًا
অনেক মানুষ অনেক জিনের আশ্রয় নিত, ফলে তাঁরা জিনদের অহংকার বাড়িয়ে দিত। (সুরা জিন, আয়াত ৬)
 
এই আয়াতের আলোকে আলেমরা বলেন "জিনদের সাহায্য চাওয়া হারাম"। তবে স্বাভাবিকভাবেই শয়তান/জিনরা তো হুদাই আপনার কাজ করবে না। শয়তান বা জিনদের থেকে ফায়দা নিতে হলে, তাদের কথা অনুযায়ী স্যাটানিক রিচ্যুয়াল পালন করতে হয়, সেক্রিফাইস করতে হয়, আল্লাহর নামে না করে তাঁদের নামে পশু জবাই করতে হয়। ইত্যাদি ইত্যাদি।
আপনারা হয়তো অনেক কবিরাজকে দেখে থাকবেন, যারা বলে- গরু লাগবে, মুরগি লাগবে, ছাগল লাগবে। তাঁদের অনেকে নিজে এসব শয়তানের নামে বলি দেয়, আর অনেকে বলে “জবাই করার পর রক্তটা আমাকে দিয়েন।" তাঁরা এই রক্ত শয়তানের উপাসনায় ব্যবহার করে। যাদুবিদ্যায় বিভিন্ন মৃত প্রাণীর রক্ত ব্যবহার করা খুবই কমন ব্যাপার।
ওহ! আরেকটা কথা! আমরা শুনে থাকি, জিনেরা কবিরাজদের বিভিন্ন ক্ষতি করেছে। এটা করার বড় একটা কারণ হচ্ছে, এই বুঝাপড়ায় সমস্যা হওয়া। অর্থাৎ শয়তানের মর্জি মাফিক ইবাদত বা অর্চনা করতে পারেনি, সেক্রিফাইস করে শয়তানদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি। ব্যাস! দেয় প্যাদানি!
.
[গ]
কোন কোন আলেম বলেন- "কোন কুফর শিরক ছাড়া, স্রেফ আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মানুষের খিদমাতের জন্য যদি কোন জিন সাহায্য করে। তবে নাকি জায়েজ হবে।"
এর জবাব হচ্ছে-
১। এসব বিষয়ে যাদের অভিজ্ঞতা আছে তারা ভালোভাবেই জানেন, জিনেরা প্রচণ্ড মিথ্যাবাদী আর ধোকাবাজ হয়। অতএব, আপনি যাকে পূণ্যবান জিন ভাবছেন, হতে পারে সে আসলে একটা শয়তান। আপনাকে কৌশলে ফিতনায় ফেলছে।
২। আমাদের চিকিৎসার জন্য কোরআন আছে। সুন্নাহস্মত রুকইয়াহ আছে। কেন আমরা সুন্নাহ ছেড়ে সন্দেহজনক বিষয়ে পতিত হব?
৩। আর আওয়ামুন নাস যেহেতু পেছনের খবর জানে না, তাঁদেরকে মুসতাগিস মিনাল জিনের কাছে পাঠানো মানে হচ্ছে "নিজ হাতে ফিতনার দরজা খুলে দেয়া।"
সুতরাং তাঁদের জন্য নিরাপদ হচ্ছে এসব সন্দেহজনক বিষয় থেকে দূরে থাকা, আর সুন্নাহসম্মত রুকইয়াহ করা।
.
[ঘ]
এবার আমি আপনাদের একটা ঝাটকা দেই! দেখুন এসব কবিরাজদের ব্যাপারে কোরআনে কি আছে -
 
وَيَوْمَ يَحْشُرُهُمْ جَمِيعًا يَا مَعْشَرَ الْجِنِّ قَدِ اسْتَكْثَرْتُم مِّنَ الْإِنسِ ۖ وَقَالَ أَوْلِيَاؤُهُم مِّنَ الْإِنسِ رَبَّنَا اسْتَمْتَعَ بَعْضُنَا بِبَعْضٍ وَبَلَغْنَا أَجَلَنَا الَّذِي أَجَّلْتَ لَنَا ۚ قَالَ النَّارُ مَثْوَاكُمْ خَالِدِينَ فِيهَا إِلَّا مَا شَاءَ اللَّهُ ۗ إِنَّ رَبَّكَ حَكِيمٌ عَلِيم.
 
যেদিন আল্লাহ সবাইকে একত্রিত করবেন, হে জিন সম্প্রদায়, তোমরা মানুষের মাঝে অনেককে তোমাদের অনুগামী করে নিয়েছ। মানুষদের মাঝে তাঁদের বন্ধুরা বলবেঃ হে আমাদের পালনকর্তা, "আমরা পরস্পরে পরস্পরের মাধ্যমে উপকার লাভ করেছি।" আর এখন আপনি আমাদের জন্যে যে সময় নির্ধারণ করেছিলেন, আমরা তাতে উপনীত হয়েছি।
তখন তাঁদের বলা হবে “আগুন হল তোমাদের বাসস্থান। সেখানে তোমরা চিরকাল অবস্থান করবে; আর আল্লাহ যেমন চাইবে..।” নিশ্চয় আপনার পালনকর্তা প্রজ্ঞাময়, মহাজ্ঞানী। (সুরা আন’আম, আয়াত ১২৮)

 

 

রুকইয়াহ vs কবিরাজি

অনেকের ধারনা রুকইয়াহ এবং কবিরাজি একই। গ্রুপ এডমিনদের প্রতিও ধারনা তারা কবিরাজি করেন। রুকইয়াহ সম্পর্কে যার ন্যূণতম জ্ঞান আছে, সে অন্তত এই ধারণা করবে না। সাধারন মানুষ কবিরাজের কাছে যায়, কিছু টাকা দেয় বা না দেয়; কবিরাজ বলে হয়ে যাবে। কিন্তু কিভাবে হবে সেটা আর বলে না। ভয়ে তাকে জিজ্ঞেসও করা যায় না। এত্তবড় কবিরাজ/হুজুর। জিজ্ঞেস করলে যদি আবার আমার কোন ক্ষতি হয়! ইমাম সাহেব উনি, উনি খতিব, উনি মুফতি সাহেব! উনি কি আর ভুল কিছু করবেন?
কাজেই আমরা যখন "বদনজর, জ্বিন, যাদুর" ব্যাপারে কথা বলতে যাই তখন স্বাভাবিক ইম্প্রেশনে মানুষ কবিরাজ/হুজুরই মনে করে। কারন তারা ভাবে কবিরাজ/হুজুররা কুরআন দিয়েই চিকিৎসা করে। আমরাও সে কথাই বলি। কেউ খতিয়ে দেখার কথা ভাবে না যে, তলে তলে কি হচ্ছে।
এই কারনে কুফরী করা, শিরক করা, ভণ্ড কবিরাজ/হুজুর চেনা জরুরী।
লন্ডনের এক বিখ্যাত রাক্বি (যিনি রুকইয়াহ করেন) কবিরাজ/হুজুর চেনার কিছু উপায় বলেছিলেন। আপনাদের জন্য সেখান থেকে তুলে দেয়া হলঃ
১. যদি জিজ্ঞেস করে আপনার মায়ের নাম কি,বাবার নাম কি, দাদার নাম কি, বংশ পরিচয় জানতে চায়-ইত্যাদি।
২. যদি বলে আপনার কাপড়ের অংশ লাগবে/আন্ডারগার্মেন্টেসের অংশ লাগবে/ চুল লাগবে/ দাড়ি লাগবে/কানের দুলটা/গলার চেইনটা লাগবে/হাতের চুড়ি লাগবে।
৩. যদি সে বলে "একগ্লাস পানি আনেন। আর একটা ছুড়ি আনেন। এবার গ্লাসের পানিতে ছুড়ি চালান।" আপনি চালাবেন আর আপনার মনে হবে আপনি ছুড়ি পানিতে না গোশতের মধ্যে চালাচ্ছেন।
৪. যদি সে আপনার বাসায় আসে, বসে পড়ে এদিক সেদিক তাকায় আর কি যেন বিড়বিড় করে। সুন্দর সুন্দর কথা বলে কিন্তু সেগুলো কুরআনের আয়াত নয়, হাদীসের দোয়াও নয়।
৫. যদি এমন বলে (সাধারনত মেয়েদের বলে) যে, আপনি যদি সুস্থ হতে চান তাহলে "এই জিনিস"টা আমাকে আপনার গোপন অঙ্গে ঘষতে হবে। যদি সুস্থ হত চান তাহলে আপনার এই এই অঙ্গ আমাকে ধরতে হবে/ আপনাকে উলঙ্গ হতে হবে -ইত্যাদি ইত্যাদি। (নাউজুবিল্লাহ)
৬. যদি বলে যে, এক বোতল পানি আনেন। বোতলটা টেবিলের উপর/ওয়ারড্রোবের উপর রাখুন। অথবা বলে যে, বোতলের মুখ খুলে হাতে রাখুন। আমি যখন বলব তখন সাথে সাথে মুখ লাগিয়ে দিবেন।
৭. যদি বলে যে, এই নেন এই তাবিজটা/কবচটা গলায়/হাতে/কোমড়ে পড়েন। কারণ প্রায় ৯৯% তাবিজেই শিরক, কুফর বিদ্যমান। 
৮. যদি বলে, চোখ বন্ধ করুন। কিছু একটা দেখতে পাবেন। যখন দেখতে পাবেন তখনই ধরে ফেলবেন। অথবা বলবে যখনই দেখবেন তখনই দু'হাতে মশা মারার মত করে মারবেন।
৯. আপনারা হয়তো অনেক কবিরাজকে দেখে থাকবেন, যারা বলে গরু লাগবে, মুরগি লাগবে, ছাগল লাগবে তাহলে আপনার কাজ হবে। তাদের অনেকে নিজে এসব শয়তানের নামে বলি দেয়, আর অনেকে বলে “জবাই করার পর রক্তটা দিবেন।" তাঁরা এই রক্ত শয়তানের উপাসনায় ব্যবহার করে। যাদুবিদ্যায় বিভিন্ন মৃত প্রাণীর রক্ত ব্যবহার করা খুবই কমন ব্যাপার।
বাংলাদেশের কবিরাজ/হুজুররা আরও কিছু কাজ করে থাকে যেমনঃ
১। কাপড় মাপে, কাপড় ছোট বড় করে দেখায়। একই ভাবে হাত মেপে হাত ছোট বড় দেখায়।
২। মুখে দেখেই অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের কথা বলে এবং কিছু কিছু মিলেও যায়।
৩। জ্যোতিষিদের মত হাত দেখে।
৪। কোন কিছু পুতে রাখার জন্য বলে।
৫। জ্বিন বোতলে বন্দি করে রেখেছে, জ্বিনকে অমুক জায়গায় পাঠিয়ে দিয়েছে, জ্বিন রক্তে মিশে গেছে -এই জাতীয় উদ্ভট কথা বলে।
৬। কবিরাজদের একদল নিজের নামের শেষ "শাজলী" যোগ করে। ওরা বলে "সাহাবি জিন" নাকি ওদের খেদমত করে।
৭। সাত ঘাটের পানি লাগবে, অমুক জায়গায় মাটি লাগবে ইত্যাদি অর্থহীন কাজ করবে।
৮। অন্য জনের উপর জ্বিন হাজির করে তাকে দিয়ে কথা বলাবে ।
৯। শনিবারে যেতে হবে, মঙ্গলবার যেতে হবে, মাগরিবের পর যেতে হবে -ইত্যাদি অনর্থক শর্ত আরোপ করবে।
১০। নির্দিষ্ট জিনিস খাওয়া নিষেধ করতে পারেন। যেমন,কলা খাওয়া নিষেধ, গোশত খাওয়া যাবে যাবে না- খেলে ওষুধ কাজ করবে না। অন্যকোন ওষুধ খাওয়া যাবে না -ইত্যাদি বলতে পারে।
১১। তুলা রাশির লোক লাগবে -এসব বলতে পারে।
কাজেই যারা আমাদের সম্পর্কে এমন গর্হিত ধারনা পোষন করেন তাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে আমরা এই ধরনের কথা বলে থাকি, এই ধরনের কাজ করি থাকি, তার প্রমান দিবেন। আর যদি প্রমান দিতে না পারেন তবে তওবা করে নিজের ধারনা সংশোধন করে নিবেন।
কবিরাজির বাস্তবতা সম্পর্কে কয়েকটা কথা বলি।
১) এদের কাছে গেলে আপনার সমস্যার সমাধান হবে না বরং আপনি জটিল থেকে জটিলতর সমস্যায় আক্রান্ত হবেন। অনেক মানুষ আছেন যার হয়ত সামান্য একটা সমস্যা ছিল। কিন্তু নানান কবিরাজের কাছে দৌড়াতে দৌড়াতে সেই সামান্য সমস্যাকে ভয়াবহ আকারে নিয়ে গিয়েছেন।
২) মেম্বাররা প্রায়ই বলেন, অমুক কবিরাজের কাছে গিয়েছিলাম, তাবিজ দিয়েছিল, এরপর এক মাস ভাল ছিলাম। এরপর আবার এই সমস্যা, ঐ সমস্যা শুরু হয়েছে। আসল কথা হল, শয়তানের একটা কাজ করে দিয়েছেন আপনি তাই একমাস আপনাকে বিরক্ত করেনি। একমাস পরে আবার শয়তানি করবে যেন আমি আবার নতুন করে কোন শয়তানি কুফরীতে লিপ্ত হন। প্রতিবার বড় থেকে বড় গোনাহে আপনি লিপ্ত হয়ে যাবেন। ক্ষুধার্থ কুকুরের মত। মাংস দিবেন, পেট ভরবে, চুপ থাকবে। হজম হয়ে গেলেই আবার ঘেঊ ঘেউ শুরু করবে।
৩) কবিরাজের/হুজুরের দেয়া তাবিজ কিছুদিন পর পর হারিয়ে যায়। ঘটনা একই আপনাকে আবার তাবিজ/টোটকা নিতে হবে। আবারও কোন গোনাহ করতে দিতে হবে।
৪) কেউ কেউ বলে জ্বিন নাকি নিজেই খেদমত করে। ডাহা মিথ্যে কথা। প্রথম দিকে হয়ত ছোট ছোট সমস্যার ব্যাপারে সহায়তা করে আপনার বিশ্বস্ততা অর্জন করতে চাইবে। পরে আপনাকে ঈমানহারা করে ফেলবে। আর পাশাপাশি ভয়ভীতি দেখাবে। আপনিও দেখবেন অমুক কাজ হয়েছে, তমুক কাজ হয়েছে এখন কথা না শুনলে না জানি আমার কি ক্ষতি করে। আমার ফ্যামিলির কি ক্ষতি করে! এ এক ভয়াবহ দুষ্টচক্র।
৫) ঈমানের ন্যুনতম নূর যার অন্তরে আছে তার কাছে কুফরী করা, শিরক করা কবিরাজ/হুজুর/যাদুকরের কাছে গেলেই মনেহবে "আমি ভুল কিছু করলাম নাতো"। মনে অশান্তি, খচখচানি থাকবে সারাজীবন।
অথচ রুকইয়াহ! কুরআনী চিকিৎসা, হাদিসের দোয়া নির্ভর চিকিৎসা। গোপনীয় কোন কিছু নেই। এমন না আমরা গ্রুপে এককথা বলি আর ইনবক্সে অন্য কথা বলি। যারা আমাদের ইনবক্স করেছেন তারা ভাল করেই জানেন কি অবস্থা। এখনো মনে হয় একেক জন্য এডমিনের ৩-৪ শ' মেসেজ রিকুয়েস্ট ঝুলে আছে।
এগুলো ঝুলেই থাকবে।
আপনি নিজেই করেন নিজের চিকিৎসা। কারও কাছে যেতে হবে না। আপনার জ্বিন সংক্রান্ত সমস্যা হলে আপনার বাবা, মা, ভাই, বোন, যেকাউকে (যার কুরআন তেলাওয়াত শুদ্ধ আছে) বলেন আপনাকে রুকইয়াহ করতে। চার আনা পয়সাও আপনাকে খরচ করতে হবে না। রুকইয়াহ ইনডেক্সে (bit.ly/ruqyahindex) সবই আছে। তবুও যদি আমাদের পরামর্শ চান তাহলে গ্রুপে ( facebook.com/groups/ruqyahbd ) তে পোস্ট করেন। একটা পয়সাও আমাদের দিতে হবে না। শুধু একটু ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে।
এরপরও যারা "বিচার মানি তালগাছ আমার" টাইপ তাদের জন্য আল্লাহর কাছে দু'আ। আল্লাহ যেন তাদের হেদায়াত দান করেন।
কবিরাজ/হুজুরদের সম্পর্কে আরও কিছু লেখা রুকইয়াহ ইন্ডেক্সে পাবেন। আগ্রহ থাকলে পড়ে দেখতে পারেন। ইন্ডেক্সের লিংকতো আগেই দিয়েছি। যারা জানেন না রুকইয়াহ কি তারাও ইন্ডেক্সে যান।

 

প্রসিদ্ধ বিষয়গুলো সব একসাথে

 

প্রসিদ্ধ বিষয়গুলো সব একসাথে

     পিরিয়ডের সময়ে রুকইয়া করা যাবে কি?
    ইসলাম বহির্ভূত সম্পর্ক এবং রুকইয়াহ
    রুকইয়াহ করলেই কি মনের আশা পূর্ণ হবে?
    বিয়ে, সন্তান, আয়-রোজগার এবং ডিপ্রেশন সমস্যা
    স্বামীকে বশ করার হালাল যাদু

পিরিয়ড চলাকালীন অবস্থায় রুকইয়া করা যাবে কি?

 ই বিষয়ে আমি বড়দের সাথে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। তারপরে নিশ্চিত বলতে পারবো। তবে আমার ছোট্ট জ্ঞানে প্রথম এবং শেষ সিদ্ধান্ত নিম্নরূপ –

প্রশ্নঃ রুকইয়া শোনা যাবে কি না। 
.
উত্তরঃ হ্যাঁ যাবে। কোরআন শোনার জন্য পবিত্রতা শর্ত করেনি কেউ, তবে যত বেশি পবিত্র থাকবেন, রুকইয়ার তত বেশি ইফেক্ট হবে।

প্রশ্নঃ পিরিয়ডের সময় রুকইয়া গোসলের জন্য পানিতে হাত ডুবিয়ে ৭বার করে সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, ইখলাস, ফালাক, নাস পড়া যাবে কি না?

উত্তরঃ রুকইয়ার গোসলের জন্য যেহেতু তিলাওয়াত করতে হয়, আর অনেক তিলাওয়াত করতে হয়। তাই এসব সুরা নিজে না পড়ে, অন্য কারও সহায়তা নিতে হবে। অথবা শুধু দোয়াগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে গোসল করতে হবে।

এই উত্তরটা আপডেট করা হয়েছে।  নোট ১

 

অর্থাৎ রুকইয়ার গোসলের জন্য নিজে তিলাওয়াত করবে না। তবে অন্য কেউ যদি এই সুরাগুলো পড়ে দেয়, তবে গোসল করতে সমস্যা নেই। কিন্তু অন্য কাউকে না পান, তবে রুকইয়ার কিছু দোয়া পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে গোসল করবেন। ইনশাআল্লাহ, উপকার হবে।

(মুখতাসার রুকইয়া প্রবন্ধে কিছু দোয়া আছে, চাইলে দেখতে পারেন)

অনুগ্রহ করে এর বিপরীতে কোন বেদয়াতি মুজাসসিমা আকিদার কারও ফাতওয়া আনবেন না। যদি সাহাবা, তাবীঈদের এর বিপরীত ফাতওয়া দেখান, তবে আমার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করব ইনশাআল্লাহ।

 

 

নোট ১

 

পিরিয়ড অবস্থায় আয়াতুল কুরসি এবং তিনকুল পড়ার বিধান

 

প্রশ্ন: পিরিয়ড অবস্থায় ঘুমের আগে আয়াতুল কুরসি এবং চারকুল পড়া যাবে? এটা তো সুন্নাহ। আমি শুনেছি এ অবস্থায় কেউ একটি আয়াত পড়লেও তাকে অভিশাপ দেওয়া হয়। আমি কি এই আয়াতগুলো পড়তে পারব? নাকি না? এই অবস্থায় আয়াতে কারীম তেলাওয়াত করা যাবে?

উত্তর:

পিরিয়ডে এমন সব আয়াত পড়া যাবে যেসব দোয়ার অর্থ প্রকাশ করে। অথবা আল্লাহর জিকির, প্রশংসা, বড়ত্ব বুঝায়। এ অবস্থায় এমন কোন আয়াত পড়া যাবেনা যা দ্বারা আল্লাহর নির্দেশ এবং নিষেধাজ্ঞা, পূর্বের অথবা ভবিষ্যতের কোন ঘটনা অথবা ঘটনা সম্পর্কিত তথ্য বুঝায়। মোটকথা, এ অবস্থায় সাধারণ তেলাওয়াতের উদ্দেশ্যে কোরআন পড়া যাবেনা।

উল্লেখিত মূলনীতি অনুসারে, আপনি যদি নিয়ত রাখেন আল্লাহর প্রশংসাপূর্ণ আয়াতের মাধ্যমে জিন এবং শয়তানের ক্ষতি থেকে সুরক্ষার জন্য পিরিয়ডের সময় ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি, তিনকুল (সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস) পড়বেন, তাহলে দোয়া হিসেবে এটা পড়া যাবে। তবে আপনি সুরা কাফিরুন পড়তে পারবেন না কারণ এটা উপরের উল্লেখিত শর্ত পূরণ করে না।
আল্লাহ তা’আলাই ভালো জানেন।

দারুল ইফতা
দারুল উলুম দেওবন্দ
(Fatwa: 212/227/N=1433)

 

 ইসলাম বহির্ভূত সম্পর্ক এবং রুকইয়াহ

 

ইসলাম বহির্ভূত সম্পর্ক এবং রুকইয়াহ


আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।

আমরা রুকইয়াহ সাপোর্ট গ্রুপের মাধ্যমে জ্বীন, যাদুর ইত্যাদি চিকিৎসায় ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক বিভিন্ন পদ্ধতির বদলে শরিয়া সম্মত রুকইয়াহ প্রচার ও প্রসারের জন্য কাজ করছি। আলহামদুলিল্লাহ, ইতোমধ্যে বিষয়টার ব্যাপারে যথেষ্ট প্রচার ও সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে যা আশাপ্রদ। তবে লক্ষ করছি অনেকে এমন সব প্রশ্ন করছেন যার সমাধান দিতে গিয়ে আমাদের বিব্রত হতে হচ্ছে। কারণ বিষয়গুলো ইসলামের বেঁধে দেয়া সীমা অতিক্রম করে।

.

যেমন কেউ কেউ চাইছেন হারাম সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে রুকইয়ার সমাধান। আবার কেউ প্রশ্ন করেছেন স্বামীকে ভুলে থাকতে চাওয়ার রুকইয়া। কেউ বলছেন, স্বামী মায়ের ভক্ত হয়ে আছে। সে যেন বউয়ের কথায় উঠবস করে, এক কথায় স্বামীকে বশ রুকইয়াহ কি? এরকম আরো বেশ কিছু প্রশ্ন আমরা পেয়েছি যা ইসলামের মৌলিক শিক্ষার পরিপন্থী।

.

সমাজে প্রচলন, মিডিয়ার অব্যাহত প্রচারণা বা দ্বীনী জ্ঞানের স্বল্পতা-যে কারণেই হোক না কেন, উনারা হয়ত বুঝতেই পারছেন না এসব কাজে আমরা সাহায্য করতে অপারগ।

.

কুরানে কারীমে সুস্পষ্টভাবে আল্লাহ পুরুষ ও নারীদের মধ্যে পর্দার সীমা নির্ধারন করে দিয়েছেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই সীমানাকে আরো স্পষ্ট করেছেন সাহাবাদের কাছে। তাই একজন মুসলিম বালেগ পুরুষের সাথে আরেকজন বালেগ নারীর সাথে দৃষ্টি বিনিময় হতে পারে না, বন্ধুত্ব হতে পারে না, কথা-বার্তা, হাসি-ঠাট্টা হতে পারে না। এজন্য প্রেমের নামে যেসব সম্পর্ক প্রচলিত তার সবই ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যভিচারের ভূমিকাস্বরুপ এবং পুরোপুরি নিষিদ্ধ। আপনার বিয়ের ইচ্ছা থাক বা না থাক তাতে ইসলামের কিছুই আসে যায় না। ইসলাম বলেছে হারাম, ব্যাস হারাম। সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ!

.

আমাদের গ্রুপ ইসলামের জন্য কাজ করছে। সুতরাং এজাতীয় হারাম বিষয়ে আমরা কখনই সাহায্য করব না। যে কুরানে আল্লাহ এইসব কাজের বিরুদ্ধে আমাদের নিষেধ করলেন সে কুরান দিয়েই ঐসব কাজে সাহায্য করা কি সম্ভব? এই কাজ তো আল্লাহর সাথে বিদ্রোহের মত হয়ে যায়!

.

তাই মেম্বারদের অনুরোধ করছি, দয়া করে রুকিয়া করার আগে রুকিয়া কী তা জানুন। শারিরীক ও মানসিকভাবে আল্লাহকে মানার, আল্লাহর হুকুম আহকামের সামনে পূর্ণ আত্মসমর্পনের প্রস্তুতি গ্রহন করুন। এরপরে ইসলামের বাধা নেই এমন কাজে সাহায্যের পোস্ট দিন। ইনশাআল্লাহ আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সহায়তার জন্য। কিন্তু ইসলাম-নিষিদ্ধ কাজে সাহায্য চেয়ে পোস্ট দিলে তাতে আমাদের পক্ষে সাহায্য করা সম্ভব হবে না।

 

 

রুকিয়া করলেই কি বিয়ে হবে, মনের আশা পূর্ণ হবে?

------------------------------------------------
যারা প্রায়ই "মনের আশা পূরণ হওয়ার" বা "দ্রুত বিয়ের হওয়ার" এধরণের আমল/তদবির/ উপায় খুঁজেন, তাদের উদ্দেশ্যে এবং বিশেষত নিজেকে নসীহাহ প্রদানের উদ্দেশ্যে বলছি।
ইসলাম কোন শর্টকাট ধর্ম নয়। ইসলামে শর্টকাট বলে কিছু নেই। ইসলাম খ্রীষ্টিয়ানিটির মত কোন ধর্ম নয়, যেখানে সপ্তাহে ৬ দিন যা খুশি করে বেরাবো আর রবিবার চার্চে গিয়ে ফাদারের কাছে দোষ স্বীকার করে পূণ্যবান হয়ে যাবো।
ইসলাম আপনাকে স্বয়ং স্রষ্টার সাথে একটি কন্টিনিউয়াস কানেকশন বিল্ড আপ করতে বলে। এর সবচে বড় প্রমাণ হলো, স্বলাত। দৈনিক পাচ বার স্বলাত ওয়াক্ত অনুযায়ী আদায় করা ফারদ্ব। একটু চিন্তা করলেই বুঝা যায়, কেন আল্লাহ ৫ বারের বিধান দিলেন? কেন ৫ ওয়াক্তের নামাজ জমিয়ে রেখে এক ওয়াক্তে সব গুলো আদায় করে দিলে নামাজ হবে না? কারণ আল্লাহ আমাদেরকে তার স্মরণ থেকে উদাসীন হতে দিতে চান না। দৈনন্দিন কাজের মাঝে যখন আমরা দুনিয়ার স্রোতে মিশে যাই, তখনই অন্তরে আল্লাহর স্মরণ আনার জন্য আল্লাহ ওয়াক্তে ওয়াক্তে স্বলাতের বিধান রেখেছেন। যেন আপনার অন্তর আল্লাহর স্বরণ বিমুখ না হয়ে যায়। ঠিক তেমনি ইসলামে কোন পীর ধরে কেউ জান্নাতে যেতে পারবে না। ঈমান ও আমলে সলেহ অবশ্যই লাগবে।
তাই যারা মনের আশা পূরণের জন্য দু'আ চাচ্ছেন তাদের বলবোঃ ইসলাম এমন কোন যিকর/দু'আ/স্বলাত দেয় নি যে আমি নির্দিষ্ট কিছু আমল করলাম আর আমার মনের আশা পূরণ হয়ে যাবে। এরপর আমি আবার আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন হয়ে যাবো। বরঞ্চ ইসলাম আপনকে কন্টিনিউয়াস আল্লাহর ইবাদাত করতে বলে। তাই যদি আপনি সত্যিই চান আপনার মনের আশা পূরণ হোক, তাহলে "মনের আশা দ্রুত পূরণ হওয়ার" কনসেপ্ট ঝেড়ে ফেলুন। এর পরিবর্তে আল্লাহর সাথে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। তাহাজ্জুদ পড়ুন। আল্লাহর কাছে কন্টিনিউয়াসলি চাইতে থাকুন। আল্লাহতো আপনার চাওয়া পাওয়া শুনতে শুনতে ক্লান্ত হন না। তাহলে আপনিই বা কেন চাইতে গিয়ে ক্লান্ত বোধ করবেন। গুনাহ থেকে বেচে থাকুন। আপনি আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত থাকবেন, আর আল্লাহ আপনার আশা পূরণ করে দিবেন এটা মরিচীকা ছাড়া আর কিছুই না। দু'আ কবুলের সময়, স্থান, শর্ত গুলো জেনে নিন, সেই শর্ত অনুযায়ী দু'আ করতে থাকুন। হালাল উপার্জন থেকে আহার করুন। কারণ আল্লাহ পবিত্র, এবং তিনি পবিত্রতা ছাড়া কিছুই কবুল করেন না। নিয়মিত স্বলাতুল হাজত পড়ুন। নিজের চাওয়া-পাওয়া, যাবতীয় সমস্যা আল্লাহকে খুলে বলুন। আর সর্বোপরি আল্লাহর সম্পর্কে ভালো ধারণা পোষণ করুন। ইনশাআল্লাহ্‌, আল্লাহ আপনার মনের হালাল আশা পূরণ করে দিবেন।
কৃতজ্ঞতাঃ আনা ফুলান ভাই।

 

 

এস্তেগফারঃ বিয়ে ও রিযক লাভ এবং পেরেশানী ও ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়।

= = = = = = = =
.
আমি তখন জালালাইন জামাতের ছাত্র। জালালাইন (একটি তাফসীরগ্রন্থ) এর দারসে আমাদের উস্তাদে মুহতারাম মুফতী শাফিকুল ইসলাম একটি ঘটনা শেয়ার করলেন তার নিজের জীবন থেকে। দীর্ঘদিন তার সন্তান হয় না। (তিনি সময়টা বলেছিলেন সম্ভবত ১৭ বছর) একদিন তিনি হাদিসে পেলেন এস্তেগফার এর ফজীলত। আমল শুরু করলেন। দীর্ঘকাল পর যখন স্বামী স্ত্রী প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন সকল চেষতা-প্রচেষ্টার পর, তাদের হয়ত সন্তান হবেই না। তখন এই আমলের বরকতে তাদের কোলজুড়ে সন্তান এলো।
.
আমি আমার ব্যক্তিজীবনের নানা পেরেশানি ও মুসিবত থেকে মুক্তি পেয়েছি এই এস্তেগফার এর সুবাদেই। এতো গেলো একজন গোণাহগারের জীবনের কথা। এবার শুনুন সোনালি যুগের (সাহাবী ও তাবেয়ীনদের যুগ) এর একটি ঘটনা।
.
একবার হাসান বসরী রাহ. এর কাছে এক ব্যক্তি জানালো “ আমার ফসলে খরা লেগেছে। আমাকে আমল দিন” হাসান বসরী তাকে বললেন এস্তেগফার করো। কিছুক্ষণ পর আরেক ব্যক্তি এসে অভিযোগ পেশ করল “আমি গরীব। আমাকে রিজক এর আমল দিন” হাসান রহ. তাকেও বলেলন এস্তেগফার করো। এমনিভাবে অপর এক ব্যক্তি এসে সন্তান হও্য়ার আমল চাইলে তিনি বললেন, এস্তেগফার করো।” উপস্থিত ছাত্ররা জিজ্ঞেস করল, “সবাইকে এক পরামর্শই দিলেন যে?” বিখ্যাত তাবেয়ী হাসান বসরী রহ. বললেন “আমি নিজের পক্ষ থেকে কিছুই বলি নি। এটা বরং আল্লাহ তায়ালা তার কুরআনে শিখিয়েছেন । তারপর তিনি সুরা নুহ এর আয়াতটি তেলাওয়াত করলেন। (তাফসীরে কুরতুবী ১৮/৩০৩)
.
فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا. يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِدْرَارًا. وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَلْ لَكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَلْ لَكُمْ أَنْهَارًا
নুহ আ. বললেন “তোমরা তোমাদের রবের কাছে এস্তেগফার করো। ( ক্ষমা চাও) নিশ্চয় তিনি অতি ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অজস্র বারিধারা বর্ষণ করবেন। তিনি তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বৃদ্ধির মাধ্যমে তোমাদের সাহায্য করবেন। তোমাদের জন্যে উদ্যান তৈরি করবেন, তোমাদের জন্যে নদীনালা প্রবাহিত করবেন।” (সুরা নূহ- ১০-১২)
এই আয়াতের দ্বারা আমরা এস্তেগফার এর যেসব উপকারিতা জানতে পারলাম। তারমধ্যে দুটি হচ্ছে ১- রিজক বৃদ্ধি ২- সন্তান লাভ। যেহেতু সন্তান বিয়ের মাধ্যমেই হয়। সুতরাং এস্তেগফারের দ্বারা বিয়ের ব্যবস্থাও আল্লাহ করে দিবেন।
.
এছাড়া অন্য আয়াতে বলেন,
 لَوْلَا تَسْتَغْفِرُونَ اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
সালেহ আ. বলেন “তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কেন করছ না, যাতে করে তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হও।’’ (সুরা নমল-৪৬)
যারা পেরেশানি, হতাশা, ডিপ্রেশন, sadness, loneliness ইত্যাদি নানা সমস্যার সম্মুখীন, তারা এস্তেগফারকে ‘লাযেম’ করে নিন। লাযেম মানে হচ্ছে, আপনি দিনে রাতে যথাসম্ভব এস্তেগফারকে নিজের অবিচ্ছেদ্য অংশ বানিয়ে নিন। উঠতে বসতে এস্তেগফার করতে থাকুন। আল্লাহ তায়ালা সকল পেরেশানি ও মানসিক কষ্ট দূর করে দিবেন ইনশা আল্লাহ।
হাদিসে এসেছে
.
روي عن عبد الله بن عباس رضي الله عنهما قَال : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ( مَنْ لَزِمَ الِاسْتِغْفَارَ جَعَلَ اللَّهُ لَهُ مِنْ كُلِّ ضِيقٍ مَخْرَجًا ، وَمِنْ كُلِّ هَمٍّ فَرَجًا ، وَرَزَقَهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ ) رواه أبو داود (1518) وابن ماجه (3819) ، وأحمد في "المسند" (1/248) ، والطبراني في "المعجم الأوسط" (
6/240)، والبيهقي في "السنن الكبرى" (3/351) ، وغيرهم
وقال أيضا رحمه الله :
" على كل حال فالحديث المذكور يصلح ذكره في الترغيب والترهيب ؛ لكثرة شواهده الدالة على فضل الاستغفار"مجموع فتاوى ابن باز" (26/259) . ،
.
ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা। বলেন “যে ব্যক্তি নিজের জন্যে এস্তেগফারকে লাযেম করে নিল, আল্লাহ তায়ালা তাকে যে কোন সংকটে পথ দেখাবেন। যে কোন ধরনের পেরেশানী ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত করবেন। এবং তাকে এমন উতস থেকে রিযিক দান করবেন, যা সে কল্পনাও করতে পারবে না।
(পরিবর্তন ও পরিবর্ধনযোগ্য)
মাওলানা Abdullah Al Mahmud

 

 

 

স্বামীকে বশ করার হালাল যাদু

---------------
.
অনেকেই অভিযোগ করেন স্বামী তার কথা শুনে না বা পরনারীতে আসক্ত। এজন্যও বিভিন্ন রুকইয়াহও চেয়ে বসেন। কিন্তু আপনি কি জানেন সম্পূর্ণ হালাল ভাবেই আপনি আপনার স্বামীকে যাদু করতে পারেন? এর জন্য দরকার একটু সচেতনতা।
.
আমাদের সমাজে স্বামী-স্ত্রী অমিলের পিছনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একে অপরের প্রতি দায়িত্ব, অধিকার ও ভালোবাসার অভাব কাজ করে। বেশিরভাগ দম্পত্তিই জানেন না তাদের এই “বিবাহ বন্ধনের উদ্দেশ্য কি”।
.
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা সূরাতুর রুম এর ২১ নং আয়াতে বলেনঃ
.
“এবং তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে হচ্ছে তিনি তোমাদের মধ্যে থেকে তোমাদের জন্য সঙ্গী সৃষ্টি করেছেন, যেন তোমরা তাদের মাঝে প্রশান্তি (সুকুন) খুঁজে পাও এবং তিনি তোমাদের মাঝে দয়া ও ভালোবাসা সৃষ্টি করেছেন।”
.
এই আয়াতে আল্লাহ আমাদেরকে বিয়ের উদ্দেশ্য বলে দিয়েছেন। আল্লাহ আমাদের সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন যেন আমরা একে অপরের মাঝে “প্রশান্তি” খুঁজে পাই। এই প্রশান্তি বলতে শারিরীক ও মানসিক দুইধরণের প্রশান্তিকেই অন্তর্ভুক্ত করে। শারিরীক প্রশান্তির কথা সবাইই বুঝি, কিন্তু মানসিক প্রশান্তির ব্যাপারে কতজনই বা সচেতন।
.
আপনি চিন্তা করুন খাদিজাহ বিনতে খুইয়ালিদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহার কথা। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন হিরা গুহাতে জিব্রীল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে প্রথম দেখে ভীত সন্ত্রস্ত ছিলেন, জীবনের প্রথম তিনি এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলেন, একজন মালাকের সম্মুখীন হলেন, সেই মালাক তাঁকে বুকে করে তিনবার চাপ দিলেন। আপনি চিন্তা করুন, একজন না জানা মানুষের জন্য এটি কতটা ভীতিকর অভিজ্ঞতা। এই মূহুর্তে কে তাঁকে সান্তনা দিয়েছিলেন? তিনি হলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সম্মানিতা স্ত্রী, খাদিজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা। তিনিই তাঁকে শান্ত করেছিলেন। বুঝিয়েছিলেন যে তিনি মানুষের সাথে সদাচরণ করেন তাই আল্লাহ তার অমঙ্গল করবেন না। এটাই হচ্ছে সুকুন। যখন আপনার স্বামী বাইরে থেকে হন্তদন্ত হয়ে ফিরে আসবেন, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত আর চরম ব্যস্ততময় দিন পার করে ঘরে ফিরবেন, তখন যেন তিনি আপনার কাছে ফিরে প্রশান্তি পান। তখন যেন তিনি আপনাকে আস্থাভাজন ভেবে সব খুলে বলতে পারেন। তখন যেন তিনি তার প্রয়োজনীয় সামগ্রী হাতের কাছে তৈরী পান। আপনি সমস্যার সমাধান করতে না পারুন, তাকে তো মানসিক ভাবে শান্ত করতে পারেন। আপনি যদি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর মতন স্বামী চান, তাহলে আপনাকে হতে হবে খাদিজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহার মত।
.
এই বোধটারই চরম অভাব আজকের দম্পত্তিরদের মাঝে। এছাড়াও বোনেরা আরো কিছু ভুল করেন যার কারণে স্বামীরা দূরে সরে যায়। সংক্ষেপে এমনঃ
.
-------------------
.
→→ স্বামী হিসেবে একজন পুরুষ তার স্ত্রীর কাছ থেকে আনুগত্য কামনা করে। এবং এই আনুগত্যই হচ্ছে “মূল অস্ত্র” যেটা দিয়ে স্ত্রী তার স্বামীকে পুরোপুরি নিজের করে পেতে পারে। শরীয়াহ অনুমোদিত সমস্ত কাজে স্বামীর আনুগত্য করা ওয়াজিব। শাইখ আল আলবানী তার আদাবুল যিফাফ গ্রন্থে বলেনঃ
.
“স্বামীর কামনা পূরণ করার ক্ষেত্রে স্বামীর আনুগত্য করা স্ত্রীর জন্য ওয়াজিব। তাই এটা আরো বেশি জরুরী যে স্বামীর কামনা পূরণ করার চেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ কাজ যেমন তার সন্তান লালন পালন করা, তার পরিবারের হিফাযত করা ও অন্যান্য দায়িত্বগুলো পালন করার ক্ষেত্রে স্বামীর আনুগত্য করা।”
.
স্বামীর প্রতি আনুগত্য কোন পর্যায়ের হওয়া উচিত ইবনে মাজাহতে বর্ণিত একটি হাদীসে থেকেই বুঝা যায়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ
.
“যদি আমাকে আল্লাহ ব্যাতীত অন্য কাউকে সিজদাহ করার আদেশ দেওয়া হতো, তাহলে আমি স্ত্রীদের নির্দেশ দিতাম তাদের স্বামীকে সিজদাহ করতে। ” (আলবানি হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।)
.
.
→→বিয়ে নামক সামাজিক বন্ধনের অন্যতম মূল উদ্দেশ্যই হল নিজের কামনা বাসনাকে হালাল উপায়ে পূরণ করা। এক্ষেত্রেও ইসলাম নারীদেরকে স্বামীর আনুগত্য জরুরী করেছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
.
“সেই স্বত্তার কসম যার হাতে আছে মুহাম্মাদের (ﷺ) প্রাণ। কোন নারী আল্লাহর প্রতি দায়িত্ব সম্পূর্ণ করতে পারে না, যতক্ষণ না সে তার স্বামীর প্রতি দায়িত্ব পূর্ণ করে। যদি কোন স্বামী তার স্ত্রীকে আহবান করে, আর স্ত্রী যদি উটের জিনের উপরও থাকে তার (স্ত্রীর) প্রত্যাখ্যান করা উচিত নয়। ”
.
.
→→বোনদের মাঝে যে ঘাটতি ভয়াবহ আকারে দেখা যায় সেটি হচ্ছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করা। ইউনিভার্সিটিতে আমাদের স্যার বলতেন, “পৃথিবীর বুকে এমন কোন স্বামী নেই, যে কিনা এ কথা শুনেনি যে আমি বলেই তোমার সংসার করেছি। অন্য কেউ হলে কবেই চলে যেত।”
.
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একটি হাদীসে নারীদের বেশি জাহান্নামী হওয়ার পিছনে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন (ভাবানুবাদ) “তারা স্বামীদের প্রতি অল্পই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। দশটা জিনিস পাওয়ার পর, একটি জিনিস না পেলেই তারা অকৃতজ্ঞতা স্বরূপ বলে বসে আমি কিছুই পাইনি।”
.
.
শাইখ ওয়াহিদ বিন আবদুস সালাম তাঁর “কুর’আনিক চিকিৎসা” বইতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার উল্লেখ করেন। সেটির ভাব কথা এমনঃ
.
“এ পর্যায়ে আমি মুসলিম নারীদের জন্য একটি উপদেশ পেশ করছি। আর তা হল সে ইচ্ছা করলে তার স্বামীকে হালাল যাদু করতে পারে। নারী স্বামীকে আকৃষ্ট করার জন্য অধিক সৌন্দৰ্য্য ও সাজ-সজ্জা করবে, তাহলে তার স্বামীর দৃষ্টি অসুন্দর ও কুশ্রী বস্তুর প্রতি যাবে না। এমনিভাবে মুচকি হাসি, উত্তম কথা, কোমল আচরণ, স্বামীর সম্পদ সংরক্ষণ, তার সন্তানাদির প্রতি অত্যধিক যত্নবান হওয়া এবং আল্লাহর নাফরমানী ব্যতিত সকল ক্ষেত্রে স্বামীর আনুগত্য করা ইত্যাদি দ্বারা সে স্বামীর উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
.
পরিতাপের বিষয় যে, আমরা যদি আমাদের আধুনিক সমাজের দিকে তাকাই তাহলে এর সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থা দেখতে পাই। বর্তমান সমাজে নারীরা তাদের উত্তম পোষাক-পরিচ্ছদ ও শাড়ি-গহনা ইত্যাদি পরিধান করে কোন অনুষ্ঠানে বা কোন বন্ধু-বান্ধবের সাক্ষাতের সময় বা বিশেষ কোন কমিউনিটি সেন্টারে কোন আয়োজনে। সে এমনভাবে নিজেকে সাজায় যেন আজকেই তার বাসর উদযাপনের দিন। আর যখন সে তার স্বামীর ঘরে ফিরে আসে তার সকল সৌন্দর্য ও অলংকারাদি খুলে এবং আরেকটি অনুষ্ঠানের জন্য রেখে দেয় ।
.
অথচ তার অসহায় যে স্বামী তাকে এসব পোষাক ও অলংকার ক্রয় করে দিল, সে তাকে একটি দিনের জন্যও এগুলো পরিহিত অবস্থায় দেখতে পায় না। তার সামনে সর্বদা এমন পুরাতন কাপড় পরিধান করে যা থেকে ঘাম, পেয়াজ ও রসূনের দূর্গন্ধ বের হয়। এই নারীর যদি সামান্য বিবেক থাকত তাহলে সে বুঝতে পারত যে, তার স্বামীই এ সৌন্দর্যের অধিক উপযোগী।
.
হে নারী! তোমার স্বামী যখন তার কর্মে বেরিয়ে পড়ে তুমি ঘরের কাজকর্ম জলদি গুছিয়ে ফেল । অতঃপর গোসল করে নিজেকে সৌন্দর্যমণ্ডিত কর এবং স্বামীর অপেক্ষা কর । যখন তোমার স্বামী তার কাজ হতে ঘরে ফিরে সুন্দর স্ত্রী, প্রস্তুতকৃত খাবার, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ দেখতে পাবে তখন তোমার প্রতি তার ভালবাসা ও আন্তরিকতা বৃদ্ধি পাবে। বিশেষত এসব যখন তুমি স্বামীর জন্য সৌন্দর্যের ব্যাপারে আল্লাহর হুকুম পালন করবে ও তাকে হারাম হতে রক্ষা করার নিয়তে করবে।
.
কেননা উদরপূর্ণ লোক খাবারের প্রতি আসক্ত থাকে না। খাবারের প্রতি আকর্ষণ থাকে একমাত্র তারই, যে খাবার হতে বঞ্চিত হয়েছে।”
.
আলহামদুলিল্লাহ কতই না উত্তম নসীহাহ দিয়েছেন শাইখ!!