প্রসিদ্ধ বিষয়গুলো সব একসাথে
পিরিয়ডের সময়ে রুকইয়া করা যাবে কি?
ইসলাম বহির্ভূত সম্পর্ক এবং রুকইয়াহ
রুকইয়াহ করলেই কি মনের আশা পূর্ণ হবে?
বিয়ে, সন্তান, আয়-রোজগার এবং ডিপ্রেশন সমস্যা
স্বামীকে বশ করার হালাল যাদু
পিরিয়ড চলাকালীন অবস্থায় রুকইয়া করা যাবে কি?
ই বিষয়ে আমি বড়দের সাথে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। তারপরে নিশ্চিত বলতে
পারবো। তবে আমার ছোট্ট জ্ঞানে প্রথম এবং শেষ সিদ্ধান্ত নিম্নরূপ –
প্রশ্নঃ রুকইয়া শোনা যাবে কি না।
.
উত্তরঃ হ্যাঁ যাবে। কোরআন শোনার জন্য পবিত্রতা শর্ত করেনি কেউ, তবে যত বেশি পবিত্র থাকবেন, রুকইয়ার তত বেশি ইফেক্ট হবে।
প্রশ্নঃ পিরিয়ডের সময় রুকইয়া গোসলের জন্য পানিতে হাত ডুবিয়ে ৭বার করে সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, ইখলাস, ফালাক, নাস পড়া যাবে কি না?
উত্তরঃ রুকইয়ার গোসলের জন্য যেহেতু তিলাওয়াত করতে হয়, আর অনেক তিলাওয়াত
করতে হয়। তাই এসব সুরা নিজে না পড়ে, অন্য কারও সহায়তা নিতে হবে। অথবা শুধু
দোয়াগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে গোসল করতে হবে।
এই উত্তরটা আপডেট করা হয়েছে। নোট ১
অর্থাৎ রুকইয়ার গোসলের জন্য নিজে তিলাওয়াত করবে না। তবে অন্য কেউ যদি এই
সুরাগুলো পড়ে দেয়, তবে গোসল করতে সমস্যা নেই। কিন্তু অন্য কাউকে না পান,
তবে রুকইয়ার কিছু দোয়া পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে গোসল করবেন। ইনশাআল্লাহ, উপকার
হবে।
(মুখতাসার রুকইয়া প্রবন্ধে কিছু দোয়া আছে, চাইলে দেখতে পারেন)
অনুগ্রহ করে এর বিপরীতে কোন বেদয়াতি মুজাসসিমা আকিদার কারও ফাতওয়া আনবেন
না। যদি সাহাবা, তাবীঈদের এর বিপরীত ফাতওয়া দেখান, তবে আমার সিদ্ধান্ত
পরিবর্তন করব ইনশাআল্লাহ।
নোট ১
পিরিয়ড অবস্থায় আয়াতুল কুরসি এবং তিনকুল পড়ার বিধান
প্রশ্ন: পিরিয়ড অবস্থায় ঘুমের
আগে আয়াতুল কুরসি এবং চারকুল পড়া যাবে? এটা তো সুন্নাহ। আমি শুনেছি এ
অবস্থায় কেউ একটি আয়াত পড়লেও তাকে অভিশাপ দেওয়া হয়। আমি কি এই আয়াতগুলো
পড়তে পারব? নাকি না? এই অবস্থায় আয়াতে কারীম তেলাওয়াত করা যাবে?
উত্তর:
পিরিয়ডে এমন সব আয়াত পড়া যাবে যেসব দোয়ার
অর্থ প্রকাশ করে। অথবা আল্লাহর জিকির, প্রশংসা, বড়ত্ব বুঝায়। এ অবস্থায় এমন
কোন আয়াত পড়া যাবেনা যা দ্বারা আল্লাহর নির্দেশ এবং নিষেধাজ্ঞা, পূর্বের
অথবা ভবিষ্যতের কোন ঘটনা অথবা ঘটনা সম্পর্কিত তথ্য বুঝায়। মোটকথা, এ
অবস্থায় সাধারণ তেলাওয়াতের উদ্দেশ্যে কোরআন পড়া যাবেনা।
উল্লেখিত মূলনীতি অনুসারে, আপনি যদি নিয়ত রাখেন আল্লাহর প্রশংসাপূর্ণ
আয়াতের মাধ্যমে জিন এবং শয়তানের ক্ষতি থেকে সুরক্ষার জন্য পিরিয়ডের সময়
ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি, তিনকুল (সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস) পড়বেন, তাহলে
দোয়া হিসেবে এটা পড়া যাবে। তবে আপনি সুরা কাফিরুন পড়তে পারবেন না কারণ এটা
উপরের উল্লেখিত শর্ত পূরণ করে না।
আল্লাহ তা’আলাই ভালো জানেন।
দারুল ইফতা
দারুল উলুম দেওবন্দ
(Fatwa: 212/227/N=1433)
ইসলাম বহির্ভূত সম্পর্ক এবং রুকইয়াহ
ইসলাম বহির্ভূত সম্পর্ক এবং রুকইয়াহ
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
আমরা
রুকইয়াহ সাপোর্ট গ্রুপের মাধ্যমে জ্বীন, যাদুর ইত্যাদি চিকিৎসায় ইসলামের
সাথে সাংঘর্ষিক বিভিন্ন পদ্ধতির বদলে শরিয়া সম্মত রুকইয়াহ প্রচার ও
প্রসারের জন্য কাজ করছি। আলহামদুলিল্লাহ, ইতোমধ্যে বিষয়টার ব্যাপারে যথেষ্ট
প্রচার ও সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে যা আশাপ্রদ। তবে লক্ষ করছি অনেকে এমন সব
প্রশ্ন করছেন যার সমাধান দিতে গিয়ে আমাদের বিব্রত হতে হচ্ছে। কারণ বিষয়গুলো
ইসলামের বেঁধে দেয়া সীমা অতিক্রম করে।
.
যেমন কেউ কেউ
চাইছেন হারাম সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে রুকইয়ার সমাধান। আবার কেউ প্রশ্ন
করেছেন স্বামীকে ভুলে থাকতে চাওয়ার রুকইয়া। কেউ বলছেন, স্বামী মায়ের ভক্ত
হয়ে আছে। সে যেন বউয়ের কথায় উঠবস করে, এক কথায় স্বামীকে বশ রুকইয়াহ কি?
এরকম আরো বেশ কিছু প্রশ্ন আমরা পেয়েছি যা ইসলামের মৌলিক শিক্ষার পরিপন্থী।
.
সমাজে
প্রচলন, মিডিয়ার অব্যাহত প্রচারণা বা দ্বীনী জ্ঞানের স্বল্পতা-যে কারণেই
হোক না কেন, উনারা হয়ত বুঝতেই পারছেন না এসব কাজে আমরা সাহায্য করতে অপারগ।
.
কুরানে
কারীমে সুস্পষ্টভাবে আল্লাহ পুরুষ ও নারীদের মধ্যে পর্দার সীমা নির্ধারন
করে দিয়েছেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই সীমানাকে
আরো স্পষ্ট করেছেন সাহাবাদের কাছে। তাই একজন মুসলিম বালেগ পুরুষের সাথে
আরেকজন বালেগ নারীর সাথে দৃষ্টি বিনিময় হতে পারে না, বন্ধুত্ব হতে পারে না,
কথা-বার্তা, হাসি-ঠাট্টা হতে পারে না। এজন্য প্রেমের নামে যেসব সম্পর্ক
প্রচলিত তার সবই ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যভিচারের ভূমিকাস্বরুপ এবং পুরোপুরি
নিষিদ্ধ। আপনার বিয়ের ইচ্ছা থাক বা না থাক তাতে ইসলামের কিছুই আসে যায় না।
ইসলাম বলেছে হারাম, ব্যাস হারাম। সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ!
.
আমাদের
গ্রুপ ইসলামের জন্য কাজ করছে। সুতরাং এজাতীয় হারাম বিষয়ে আমরা কখনই
সাহায্য করব না। যে কুরানে আল্লাহ এইসব কাজের বিরুদ্ধে আমাদের নিষেধ করলেন
সে কুরান দিয়েই ঐসব কাজে সাহায্য করা কি সম্ভব? এই কাজ তো আল্লাহর সাথে
বিদ্রোহের মত হয়ে যায়!
.
তাই মেম্বারদের অনুরোধ করছি, দয়া
করে রুকিয়া করার আগে রুকিয়া কী তা জানুন। শারিরীক ও মানসিকভাবে আল্লাহকে
মানার, আল্লাহর হুকুম আহকামের সামনে পূর্ণ আত্মসমর্পনের প্রস্তুতি গ্রহন
করুন। এরপরে ইসলামের বাধা নেই এমন কাজে সাহায্যের পোস্ট দিন। ইনশাআল্লাহ
আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সহায়তার জন্য। কিন্তু ইসলাম-নিষিদ্ধ কাজে সাহায্য
চেয়ে পোস্ট দিলে তাতে আমাদের পক্ষে সাহায্য করা সম্ভব হবে না।
রুকিয়া করলেই কি বিয়ে হবে, মনের আশা পূর্ণ হবে?
------------------------------------------------
যারা প্রায়ই "মনের আশা পূরণ হওয়ার" বা "দ্রুত বিয়ের হওয়ার" এধরণের আমল/তদবির/ উপায় খুঁজেন, তাদের উদ্দেশ্যে এবং বিশেষত নিজেকে নসীহাহ প্রদানের উদ্দেশ্যে বলছি।
ইসলাম কোন শর্টকাট ধর্ম নয়। ইসলামে শর্টকাট বলে কিছু নেই। ইসলাম খ্রীষ্টিয়ানিটির মত কোন ধর্ম নয়, যেখানে সপ্তাহে ৬ দিন যা খুশি করে বেরাবো আর রবিবার চার্চে গিয়ে ফাদারের কাছে দোষ স্বীকার করে পূণ্যবান হয়ে যাবো।
ইসলাম আপনাকে স্বয়ং স্রষ্টার সাথে একটি কন্টিনিউয়াস কানেকশন বিল্ড আপ করতে বলে। এর সবচে বড় প্রমাণ হলো, স্বলাত। দৈনিক পাচ বার স্বলাত ওয়াক্ত অনুযায়ী আদায় করা ফারদ্ব। একটু চিন্তা করলেই বুঝা যায়, কেন আল্লাহ ৫ বারের বিধান দিলেন? কেন ৫ ওয়াক্তের নামাজ জমিয়ে রেখে এক ওয়াক্তে সব গুলো আদায় করে দিলে নামাজ হবে না? কারণ আল্লাহ আমাদেরকে তার স্মরণ থেকে উদাসীন হতে দিতে চান না। দৈনন্দিন কাজের মাঝে যখন আমরা দুনিয়ার স্রোতে মিশে যাই, তখনই অন্তরে আল্লাহর স্মরণ আনার জন্য আল্লাহ ওয়াক্তে ওয়াক্তে স্বলাতের বিধান রেখেছেন। যেন আপনার অন্তর আল্লাহর স্বরণ বিমুখ না হয়ে যায়। ঠিক তেমনি ইসলামে কোন পীর ধরে কেউ জান্নাতে যেতে পারবে না। ঈমান ও আমলে সলেহ অবশ্যই লাগবে।
তাই যারা মনের আশা পূরণের জন্য দু'আ চাচ্ছেন তাদের বলবোঃ ইসলাম এমন কোন যিকর/দু'আ/স্বলাত দেয় নি যে আমি নির্দিষ্ট কিছু আমল করলাম আর আমার মনের আশা পূরণ হয়ে যাবে। এরপর আমি আবার আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন হয়ে যাবো। বরঞ্চ ইসলাম আপনকে কন্টিনিউয়াস আল্লাহর ইবাদাত করতে বলে। তাই যদি আপনি সত্যিই চান আপনার মনের আশা পূরণ হোক, তাহলে "মনের আশা দ্রুত পূরণ হওয়ার" কনসেপ্ট ঝেড়ে ফেলুন। এর পরিবর্তে আল্লাহর সাথে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। তাহাজ্জুদ পড়ুন। আল্লাহর কাছে কন্টিনিউয়াসলি চাইতে থাকুন। আল্লাহতো আপনার চাওয়া পাওয়া শুনতে শুনতে ক্লান্ত হন না। তাহলে আপনিই বা কেন চাইতে গিয়ে ক্লান্ত বোধ করবেন। গুনাহ থেকে বেচে থাকুন। আপনি আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত থাকবেন, আর আল্লাহ আপনার আশা পূরণ করে দিবেন এটা মরিচীকা ছাড়া আর কিছুই না। দু'আ কবুলের সময়, স্থান, শর্ত গুলো জেনে নিন, সেই শর্ত অনুযায়ী দু'আ করতে থাকুন। হালাল উপার্জন থেকে আহার করুন। কারণ আল্লাহ পবিত্র, এবং তিনি পবিত্রতা ছাড়া কিছুই কবুল করেন না। নিয়মিত স্বলাতুল হাজত পড়ুন। নিজের চাওয়া-পাওয়া, যাবতীয় সমস্যা আল্লাহকে খুলে বলুন। আর সর্বোপরি আল্লাহর সম্পর্কে ভালো ধারণা পোষণ করুন। ইনশাআল্লাহ্, আল্লাহ আপনার মনের হালাল আশা পূরণ করে দিবেন।
এস্তেগফারঃ বিয়ে ও রিযক লাভ এবং পেরেশানী ও ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়।
= = = = = = = =
.
আমি তখন জালালাইন জামাতের ছাত্র। জালালাইন (একটি তাফসীরগ্রন্থ) এর দারসে আমাদের উস্তাদে মুহতারাম মুফতী শাফিকুল ইসলাম একটি ঘটনা শেয়ার করলেন তার নিজের জীবন থেকে। দীর্ঘদিন তার সন্তান হয় না। (তিনি সময়টা বলেছিলেন সম্ভবত ১৭ বছর) একদিন তিনি হাদিসে পেলেন এস্তেগফার এর ফজীলত। আমল শুরু করলেন। দীর্ঘকাল পর যখন স্বামী স্ত্রী প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন সকল চেষতা-প্রচেষ্টার পর, তাদের হয়ত সন্তান হবেই না। তখন এই আমলের বরকতে তাদের কোলজুড়ে সন্তান এলো।
.
আমি আমার ব্যক্তিজীবনের নানা পেরেশানি ও মুসিবত থেকে মুক্তি পেয়েছি এই এস্তেগফার এর সুবাদেই। এতো গেলো একজন গোণাহগারের জীবনের কথা। এবার শুনুন সোনালি যুগের (সাহাবী ও তাবেয়ীনদের যুগ) এর একটি ঘটনা।
.
একবার হাসান বসরী রাহ. এর কাছে এক ব্যক্তি জানালো “ আমার ফসলে খরা লেগেছে। আমাকে আমল দিন” হাসান বসরী তাকে বললেন এস্তেগফার করো। কিছুক্ষণ পর আরেক ব্যক্তি এসে অভিযোগ পেশ করল “আমি গরীব। আমাকে রিজক এর আমল দিন” হাসান রহ. তাকেও বলেলন এস্তেগফার করো। এমনিভাবে অপর এক ব্যক্তি এসে সন্তান হও্য়ার আমল চাইলে তিনি বললেন, এস্তেগফার করো।” উপস্থিত ছাত্ররা জিজ্ঞেস করল, “সবাইকে এক পরামর্শই দিলেন যে?” বিখ্যাত তাবেয়ী হাসান বসরী রহ. বললেন “আমি নিজের পক্ষ থেকে কিছুই বলি নি। এটা বরং আল্লাহ তায়ালা তার কুরআনে শিখিয়েছেন । তারপর তিনি সুরা নুহ এর আয়াতটি তেলাওয়াত করলেন। (তাফসীরে কুরতুবী ১৮/৩০৩)
.
فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا. يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِدْرَارًا. وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَلْ لَكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَلْ لَكُمْ أَنْهَارًا
নুহ আ. বললেন “তোমরা তোমাদের রবের কাছে এস্তেগফার করো। ( ক্ষমা চাও) নিশ্চয় তিনি অতি ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অজস্র বারিধারা বর্ষণ করবেন। তিনি তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বৃদ্ধির মাধ্যমে তোমাদের সাহায্য করবেন। তোমাদের জন্যে উদ্যান তৈরি করবেন, তোমাদের জন্যে নদীনালা প্রবাহিত করবেন।” (সুরা নূহ- ১০-১২)
এই আয়াতের দ্বারা আমরা এস্তেগফার এর যেসব উপকারিতা জানতে পারলাম। তারমধ্যে দুটি হচ্ছে ১- রিজক বৃদ্ধি ২- সন্তান লাভ। যেহেতু সন্তান বিয়ের মাধ্যমেই হয়। সুতরাং এস্তেগফারের দ্বারা বিয়ের ব্যবস্থাও আল্লাহ করে দিবেন।
.
এছাড়া অন্য আয়াতে বলেন,
لَوْلَا تَسْتَغْفِرُونَ اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
সালেহ আ. বলেন “তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কেন করছ না, যাতে করে তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হও।’’ (সুরা নমল-৪৬)
যারা পেরেশানি, হতাশা, ডিপ্রেশন, sadness, loneliness ইত্যাদি নানা সমস্যার সম্মুখীন, তারা এস্তেগফারকে ‘লাযেম’ করে নিন। লাযেম মানে হচ্ছে, আপনি দিনে রাতে যথাসম্ভব এস্তেগফারকে নিজের অবিচ্ছেদ্য অংশ বানিয়ে নিন। উঠতে বসতে এস্তেগফার করতে থাকুন। আল্লাহ তায়ালা সকল পেরেশানি ও মানসিক কষ্ট দূর করে দিবেন ইনশা আল্লাহ।
হাদিসে এসেছে
.
روي عن عبد الله بن عباس رضي الله عنهما قَال : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ( مَنْ لَزِمَ الِاسْتِغْفَارَ جَعَلَ اللَّهُ لَهُ مِنْ كُلِّ ضِيقٍ مَخْرَجًا ، وَمِنْ كُلِّ هَمٍّ فَرَجًا ، وَرَزَقَهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ ) رواه أبو داود (1518) وابن ماجه (3819) ، وأحمد في "المسند" (1/248) ، والطبراني في "المعجم الأوسط" (
6/240)، والبيهقي في "السنن الكبرى" (3/351) ، وغيرهم
وقال أيضا رحمه الله :
" على كل حال فالحديث المذكور يصلح ذكره في الترغيب والترهيب ؛ لكثرة شواهده الدالة على فضل الاستغفار"مجموع فتاوى ابن باز" (26/259) . ،
.
ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা। বলেন “যে ব্যক্তি নিজের জন্যে এস্তেগফারকে লাযেম করে নিল, আল্লাহ তায়ালা তাকে যে কোন সংকটে পথ দেখাবেন। যে কোন ধরনের পেরেশানী ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত করবেন। এবং তাকে এমন উতস থেকে রিযিক দান করবেন, যা সে কল্পনাও করতে পারবে না।
(পরিবর্তন ও পরিবর্ধনযোগ্য)
মাওলানা Abdullah Al Mahmud
স্বামীকে বশ করার হালাল যাদু
---------------
.
অনেকেই অভিযোগ করেন স্বামী তার কথা শুনে না বা পরনারীতে আসক্ত। এজন্যও বিভিন্ন রুকইয়াহও চেয়ে বসেন। কিন্তু আপনি কি জানেন সম্পূর্ণ হালাল ভাবেই আপনি আপনার স্বামীকে যাদু করতে পারেন? এর জন্য দরকার একটু সচেতনতা।
.
আমাদের সমাজে স্বামী-স্ত্রী অমিলের পিছনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একে অপরের প্রতি দায়িত্ব, অধিকার ও ভালোবাসার অভাব কাজ করে। বেশিরভাগ দম্পত্তিই জানেন না তাদের এই “বিবাহ বন্ধনের উদ্দেশ্য কি”।
.
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা সূরাতুর রুম এর ২১ নং আয়াতে বলেনঃ
.
“এবং তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে হচ্ছে তিনি তোমাদের মধ্যে থেকে তোমাদের জন্য সঙ্গী সৃষ্টি করেছেন, যেন তোমরা তাদের মাঝে প্রশান্তি (সুকুন) খুঁজে পাও এবং তিনি তোমাদের মাঝে দয়া ও ভালোবাসা সৃষ্টি করেছেন।”
.
এই আয়াতে আল্লাহ আমাদেরকে বিয়ের উদ্দেশ্য বলে দিয়েছেন। আল্লাহ আমাদের সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন যেন আমরা একে অপরের মাঝে “প্রশান্তি” খুঁজে পাই। এই প্রশান্তি বলতে শারিরীক ও মানসিক দুইধরণের প্রশান্তিকেই অন্তর্ভুক্ত করে। শারিরীক প্রশান্তির কথা সবাইই বুঝি, কিন্তু মানসিক প্রশান্তির ব্যাপারে কতজনই বা সচেতন।
.
আপনি চিন্তা করুন খাদিজাহ বিনতে খুইয়ালিদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহার কথা। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন হিরা গুহাতে জিব্রীল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে প্রথম দেখে ভীত সন্ত্রস্ত ছিলেন, জীবনের প্রথম তিনি এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলেন, একজন মালাকের সম্মুখীন হলেন, সেই মালাক তাঁকে বুকে করে তিনবার চাপ দিলেন। আপনি চিন্তা করুন, একজন না জানা মানুষের জন্য এটি কতটা ভীতিকর অভিজ্ঞতা। এই মূহুর্তে কে তাঁকে সান্তনা দিয়েছিলেন? তিনি হলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সম্মানিতা স্ত্রী, খাদিজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা। তিনিই তাঁকে শান্ত করেছিলেন। বুঝিয়েছিলেন যে তিনি মানুষের সাথে সদাচরণ করেন তাই আল্লাহ তার অমঙ্গল করবেন না। এটাই হচ্ছে সুকুন। যখন আপনার স্বামী বাইরে থেকে হন্তদন্ত হয়ে ফিরে আসবেন, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত আর চরম ব্যস্ততময় দিন পার করে ঘরে ফিরবেন, তখন যেন তিনি আপনার কাছে ফিরে প্রশান্তি পান। তখন যেন তিনি আপনাকে আস্থাভাজন ভেবে সব খুলে বলতে পারেন। তখন যেন তিনি তার প্রয়োজনীয় সামগ্রী হাতের কাছে তৈরী পান। আপনি সমস্যার সমাধান করতে না পারুন, তাকে তো মানসিক ভাবে শান্ত করতে পারেন। আপনি যদি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর মতন স্বামী চান, তাহলে আপনাকে হতে হবে খাদিজাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহার মত।
.
এই বোধটারই চরম অভাব আজকের দম্পত্তিরদের মাঝে। এছাড়াও বোনেরা আরো কিছু ভুল করেন যার কারণে স্বামীরা দূরে সরে যায়। সংক্ষেপে এমনঃ
.
-------------------
.
→→ স্বামী হিসেবে একজন পুরুষ তার স্ত্রীর কাছ থেকে আনুগত্য কামনা করে। এবং এই আনুগত্যই হচ্ছে “মূল অস্ত্র” যেটা দিয়ে স্ত্রী তার স্বামীকে পুরোপুরি নিজের করে পেতে পারে। শরীয়াহ অনুমোদিত সমস্ত কাজে স্বামীর আনুগত্য করা ওয়াজিব। শাইখ আল আলবানী তার আদাবুল যিফাফ গ্রন্থে বলেনঃ
.
“স্বামীর কামনা পূরণ করার ক্ষেত্রে স্বামীর আনুগত্য করা স্ত্রীর জন্য ওয়াজিব। তাই এটা আরো বেশি জরুরী যে স্বামীর কামনা পূরণ করার চেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ কাজ যেমন তার সন্তান লালন পালন করা, তার পরিবারের হিফাযত করা ও অন্যান্য দায়িত্বগুলো পালন করার ক্ষেত্রে স্বামীর আনুগত্য করা।”
.
স্বামীর প্রতি আনুগত্য কোন পর্যায়ের হওয়া উচিত ইবনে মাজাহতে বর্ণিত একটি হাদীসে থেকেই বুঝা যায়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ
.
“যদি আমাকে আল্লাহ ব্যাতীত অন্য কাউকে সিজদাহ করার আদেশ দেওয়া হতো, তাহলে আমি স্ত্রীদের নির্দেশ দিতাম তাদের স্বামীকে সিজদাহ করতে। ” (আলবানি হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।)
.
.
→→বিয়ে নামক সামাজিক বন্ধনের অন্যতম মূল উদ্দেশ্যই হল নিজের কামনা বাসনাকে হালাল উপায়ে পূরণ করা। এক্ষেত্রেও ইসলাম নারীদেরকে স্বামীর আনুগত্য জরুরী করেছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
.
“সেই স্বত্তার কসম যার হাতে আছে মুহাম্মাদের (ﷺ) প্রাণ। কোন নারী আল্লাহর প্রতি দায়িত্ব সম্পূর্ণ করতে পারে না, যতক্ষণ না সে তার স্বামীর প্রতি দায়িত্ব পূর্ণ করে। যদি কোন স্বামী তার স্ত্রীকে আহবান করে, আর স্ত্রী যদি উটের জিনের উপরও থাকে তার (স্ত্রীর) প্রত্যাখ্যান করা উচিত নয়। ”
.
.
→→বোনদের মাঝে যে ঘাটতি ভয়াবহ আকারে দেখা যায় সেটি হচ্ছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করা। ইউনিভার্সিটিতে আমাদের স্যার বলতেন, “পৃথিবীর বুকে এমন কোন স্বামী নেই, যে কিনা এ কথা শুনেনি যে আমি বলেই তোমার সংসার করেছি। অন্য কেউ হলে কবেই চলে যেত।”
.
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একটি হাদীসে নারীদের বেশি জাহান্নামী হওয়ার পিছনে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন (ভাবানুবাদ) “তারা স্বামীদের প্রতি অল্পই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। দশটা জিনিস পাওয়ার পর, একটি জিনিস না পেলেই তারা অকৃতজ্ঞতা স্বরূপ বলে বসে আমি কিছুই পাইনি।”
.
.
শাইখ ওয়াহিদ বিন আবদুস সালাম তাঁর “কুর’আনিক চিকিৎসা” বইতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার উল্লেখ করেন। সেটির ভাব কথা এমনঃ
.
“এ পর্যায়ে আমি মুসলিম নারীদের জন্য একটি উপদেশ পেশ করছি। আর তা হল সে ইচ্ছা করলে তার স্বামীকে হালাল যাদু করতে পারে। নারী স্বামীকে আকৃষ্ট করার জন্য অধিক সৌন্দৰ্য্য ও সাজ-সজ্জা করবে, তাহলে তার স্বামীর দৃষ্টি অসুন্দর ও কুশ্রী বস্তুর প্রতি যাবে না। এমনিভাবে মুচকি হাসি, উত্তম কথা, কোমল আচরণ, স্বামীর সম্পদ সংরক্ষণ, তার সন্তানাদির প্রতি অত্যধিক যত্নবান হওয়া এবং আল্লাহর নাফরমানী ব্যতিত সকল ক্ষেত্রে স্বামীর আনুগত্য করা ইত্যাদি দ্বারা সে স্বামীর উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
.
পরিতাপের বিষয় যে, আমরা যদি আমাদের আধুনিক সমাজের দিকে তাকাই তাহলে এর সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থা দেখতে পাই। বর্তমান সমাজে নারীরা তাদের উত্তম পোষাক-পরিচ্ছদ ও শাড়ি-গহনা ইত্যাদি পরিধান করে কোন অনুষ্ঠানে বা কোন বন্ধু-বান্ধবের সাক্ষাতের সময় বা বিশেষ কোন কমিউনিটি সেন্টারে কোন আয়োজনে। সে এমনভাবে নিজেকে সাজায় যেন আজকেই তার বাসর উদযাপনের দিন। আর যখন সে তার স্বামীর ঘরে ফিরে আসে তার সকল সৌন্দর্য ও অলংকারাদি খুলে এবং আরেকটি অনুষ্ঠানের জন্য রেখে দেয় ।
.
অথচ তার অসহায় যে স্বামী তাকে এসব পোষাক ও অলংকার ক্রয় করে দিল, সে তাকে একটি দিনের জন্যও এগুলো পরিহিত অবস্থায় দেখতে পায় না। তার সামনে সর্বদা এমন পুরাতন কাপড় পরিধান করে যা থেকে ঘাম, পেয়াজ ও রসূনের দূর্গন্ধ বের হয়। এই নারীর যদি সামান্য বিবেক থাকত তাহলে সে বুঝতে পারত যে, তার স্বামীই এ সৌন্দর্যের অধিক উপযোগী।
.
হে নারী! তোমার স্বামী যখন তার কর্মে বেরিয়ে পড়ে তুমি ঘরের কাজকর্ম জলদি গুছিয়ে ফেল । অতঃপর গোসল করে নিজেকে সৌন্দর্যমণ্ডিত কর এবং স্বামীর অপেক্ষা কর । যখন তোমার স্বামী তার কাজ হতে ঘরে ফিরে সুন্দর স্ত্রী, প্রস্তুতকৃত খাবার, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ দেখতে পাবে তখন তোমার প্রতি তার ভালবাসা ও আন্তরিকতা বৃদ্ধি পাবে। বিশেষত এসব যখন তুমি স্বামীর জন্য সৌন্দর্যের ব্যাপারে আল্লাহর হুকুম পালন করবে ও তাকে হারাম হতে রক্ষা করার নিয়তে করবে।
.
কেননা উদরপূর্ণ লোক খাবারের প্রতি আসক্ত থাকে না। খাবারের প্রতি আকর্ষণ থাকে একমাত্র তারই, যে খাবার হতে বঞ্চিত হয়েছে।”
.
আলহামদুলিল্লাহ কতই না উত্তম নসীহাহ দিয়েছেন শাইখ!!
No comments:
Post a Comment