Friday, May 14, 2021

সেলফ রুকইয়াহ সিরিজ সব একসাথে

 

সেলফ রুকইয়াহ সিরিজ সব একসাথে

 

 

  1. কিভাবে বদনজরের রুকইয়াহ করবেন?
  2. কিভাবে যাদুর রুকইয়াহ করবেন?
  3. বাচ্চাদের নানান সমস্যার জন্য কিভাবে রুকইয়াহ করবেন?
  4. বিচ্ছদের যাদুর জন্য সেলফ রুকইয়াহ

 

বদনজর ও বদনজরের চিকিৎসা
[ক]
যারা নিজেদের বদনজরে আক্রান্ত ভাবছেন বা যারা যাচাই করতে চান যে তিনি আসলেই বদনজরে আক্রান্ত কিনা তাদের জন্য এই পোস্ট উপকারী হবে ইন শা আল্লাহ। প্রথমেই নিচের লক্ষনগুলো থেকে মিলিয়ে দেখেন কতগুলো লক্ষন আপনার সাথে মিলেঃ
১। শরীরে জ্বর থাকা, কিন্তু থার্মোমিটারে না উঠা।
২। কোনো কারণ ছাড়াই কান্না আসা..
৩। প্রায়সময় কাজে মন না বসা, নামায যিকর ক্লাসে মন না বসা।
৪। প্রায়শই শরীর দুর্বল থাকা, ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব লাগা।
৫। চেহারা ধুসর/হলুদ হয়ে যাওয়া।
৬। বুক ধড়পড় করা, দমবন্ধ অস্বস্তি লাগা।
৭। অহেতুক মেজাজ বিগড়ে থাকা।
৮। আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধুদের সাথে দেখা হলেই ভালো না লাগা।
৯। অতিরিক্ত চুল পড়া। শ্যাম্পুতে কাজ না করা।
১০। পেটে প্রচুর গ্যাস হওয়া।
১১। বিভিন্ন সব অসুখ লেগে থাকা যা দীর্ঘদিন চিকিৎসাতেও ভালো হয় না। (সর্দিকাশি, মাথাব্যথা ইত্যাদি)
১২। হাত-পায়ে মাঝেমধ্যেই ব্যাথা করা, পুরো শরীরে ব্যাথা দৌড়ে বেড়ানো।
১৩। ব্যবসায় ঝামেলা লেগে থাকা।
১৪। আপনি যে কাজে অভিজ্ঞ সেটা করতে গেলেই অসুস্থ হয়ে যাওয়া।
প্রথমত, এসব লক্ষণ যদি দুই একটা মিলে তাহলে ইনশাআল্লাহ আপনার রুকইয়াহ করা লাগবে না। পাচ ওয়াক্ত নামায, প্রতিদিনের মাসনুন আমল এবং বেশি বেশি দোয়া করাই যথেষ্ট হবে।
মাসনুন আমল সম্পর্কে এখানে দেখুন-
দ্বিতীয়ত, যদি ৪-৫ টা লক্ষন মিলে যায় তাহলে কমপক্ষে ১ সপ্তাহ বদনজরের রুকইয়াহ করা উচিত। এতে সুস্থ হলে আরও কয়েকদিন করা উচিত।
তৃতীয়ত, যদি আরও বেশি লক্ষন মিলে যায় তাহলে ২ থেকে ৩ সপ্তাহ নজরের রুকইয়াহ করলে ইনশাআল্লাহ সুস্থ হয়ে উঠবেন।
বদনজরের রুকইয়াহ করার নিয়ম এই লিংকে দেখুন
[খ]
নজরের লক্ষনগুলো সাথে সাথে যদি আপনার জ্বিন সংক্রান্ত সমস্যা থাকে তাহলে এডমিনদের পরামর্শ নিবেন। নিচের লিংকে জ্বিন সংক্রান্ত সমস্যার লক্ষন দেখে নিন
এখান থেকে যদি ২-১ টা মিলে তাহলে ইনশাআল্লাহ নজরের রুকইয়াহ করতে কোন অসুবিধা নেই। আর যদি বেশি মিলে তাহলে গ্রুপ এডমিনদের পরামর্শ অবশ্যই নিবেন।
[গ]
কারও কারও নজরের সমস্যা সাথে সাথে ওয়াসওয়াসার সমস্যা থাকে। ওয়াসওয়াসার সমস্যা সম্বন্ধে জানতে এই লিংক দেখুন।
এখান থেকে যদি কিছু মিলে যায় তাহলে নজরের রুকইয়াহর পাশাপাশি ওয়াসওয়াসার জন্য রুকইয়াহ করবেন। ওয়াসওয়াসার রুকইয়াহ এখানে পাবেন।
[ঘ]
যাদের রাতে ঘুমের সমস্যা হয়, ঘুমুতে ভয় পান, কোন ছায়া দেখেন, মনে হয় কেউ আছে তারা নজরের রুকইয়াহ করার পাশাপাশি আটসুরার রুকইয়াহ শুনবেন। ডাউনলোড পেইজে পাবেন আটসুরার রুকইয়াহ।
[ঙ]
উপরের কথাগুলো প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য। যদি নাবালেগ কারও, ছোট বাচ্চা, দুধের বাচ্চার নজর লাগে তাহলে কিভাবে বুঝবেন? যদি ব্যবসা বা ঘরবাড়িতে, গবাদি পশু, ফসলে নজর লাগে তাহলে?
বাচ্চারা খেতে না চাওয়া, পেটে সমস্যা হওয়া, অসুখ বিসুখ লেগেই থাকা, বদমেজাজি হয়ে যাওয়া, শরীর-স্বাস্থ্য না হওয়া, পড়াশুনায় ভাল ছিল হুট করে খারাপ হয়ে গিয়েছে, কথাবার্তায় চটপটে ছিল কিন্তু এখন কথা আটকে যাচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি হলে নজরের রুকইয়াহ করে ইন শা আল্লাহ উপকার পাবেন। নিচের পদ্ধতিগুলো যেটা আপনার বাচ্চার জন্য প্রযোজ্য হবে সেটাই ফলো করবেন। তবে আমার রিকমেন্ডেশন হবে প্রথমে ঘরের সবার ওযুর পানি একটি পাত্রে নিয়ে বাচ্চার গায়ে ঢেলে দিন। এরপরও যদি সমস্যা থাকে তাহলে অন্য পদ্ধতিগুলো ফলো করবেন। তিনদিন করার পর অবশ্যই একবার আপডেট দিবেন।
ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, গবাদি পশুর ব্যাপারেও এখানে আলোচনা করা হয়েছে।
 
[বদনজরের জন্য রুকইয়াহ - ২]
-------------------
বাচ্চাদের নজর লাগলে কি করবেন? কিংবা যদি নজর লাগে আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে? আপনার দোকানে, খামারে? ঘর-বাড়িতে? গাছে? বা অন্য কোথাও?
নিচে একে একে পদ্ধতিগুলো লেখা হল।
[১ম পদ্ধতি]
যদি জানা যায় কার নজর লেগেছে তাহলে সাহল ইবনে হুনাইফ রা. এর হাদিসটা অনুসরণ করলেই হবে।
অর্থাৎ যার নজর লেগেছে তাকে অযু করতে বলবে, অযুর পানিগুলো একটা পাত্রে জমা করবে, এরপর সেটা আক্রান্ত ব্যাক্তির গায়ে ঢেলে দিবে। তাহলেই নজর কেটে যাবে ইনশাআল্লাহ।
এই পদ্ধতিতে সাধারণ একবারেই বদনজরের প্রভাব দূর হয়ে যায়। তবেঁ, প্রয়োজনে ২-৩দিন করা লাগতে পারে। আর হ্যাঁ! অনেকের ক্ষেত্রে এই ওযু করার পানি ঢালার পর, প্রচণ্ড পায়খানা বা প্রসাবের বেগ আসে, সেটা হয়ে গেলে আলহামদুলিল্লাহ সুস্থ হয়ে যায়।
প্রশ্ন হচ্ছে, কুলির পানিও কি জমা করবে?
উত্তরঃ যদিওবা এক হাদিসে আছে কুলির কথা, তবে না নিলেও সমস্যা নেই। এমনকি অধিকাংশের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র একজনের হাতমুখ ধোয়া পানি নিয়ে অপরজন হাতমুখ ধৌত করলেই বদনজর নষ্ট হয়ে যায়।
উহ্য প্রশ্ন-২: যদি নিজের নজর নিজেকেই লাগে?
উত্তরঃ তাহলে ওযু করবে, এবং পানিগুলো জমা করবে, এরপর সেটা নিজের গায়ে ঢালবে।
[নোটঃ এই পদ্ধতি বাচ্চা-বয়স্ক, ছেলে-মেয়ে সবার জন্য। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে যদি জানা না যায় কার নজর লেগেছে তাহলে নিচের দ্বিতীয় পদ্ধতি ফলো করতে হবে। ]
[২য় পদ্ধতি]
রোগীর মাথায় হাত রেখে এই দুয়াগুলো পড়বেন। এবং মাঝেমাঝে রোগীর গায়ে ফুঁ দিবেন, এভাবে কয়েকবার করবেন। নিজের সমস্যা থাকলে নিজের মাথায় বা বুকে হাত রেখেই পড়তে পারেন। অথবা পড়ার পর হাতে ফুঁ দিয়ে পুরা শরীরে হাত বুলিয়ে নিতে পারেন।
১.
أُعِيْذُكُمْ بِكَلِمَاتِ اللّٰهِ التَّامَّةِ ، مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ
উ"ঈযুকুম বিকালিমা-তিল্লা-হিত্তা-ম্মাহ। মিং কুল্লি শাইত্বা-নিও- ওয়াহা-ম্মাহ। ওয়ামিং কুল্লি "আঈনিল্লা-ম্মাহ।
২.
بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللَّهُ يَشْفِيكَ، بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ
বিসমিল্লা-হি আরকীক। মিং কুল্লি শাইয়িই ইউ'যীক। মিং শাররি কুল্লি নাফসিন আও "আইনি হাসিদ। আল্লা-হু ইয়াশফীক। বিসমিল্লা-হি আরকীক।
৩.
بِاسْمِ اللَّهِ يُبْرِيكَ، وَمِنْ كُلِّ دَاءٍ يَشْفِيكَ، وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ، وَشَرِّ كُلِّ ذِي عَيْنٍ
বিসমিল্লা-হি ইউবরীক। ওয়ামিং কুল্লি দা-ঈই ইয়াশফীক। ওয়ামিং শাররি হাসিদিন ইযা- হাসাদ। ওয়া শাররি কুল্লি যী "আঈন ।
৪.
اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبْ الْبَاسَ، اشْفِ وَأَنْتَ الشَّافِي لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا
আল্লা-হুম্মা রাব্বান না-স। আযহিবিল বা'স । ইশফি ওয়াআংতাশ শা-ফী। লা-শিফাআ ইল্লা-শিফাউক। শিফাআল লা-ইউগা-দিরু সাক্বামা-।
এরপর সুরা ফাতিহা এবং আয়াতুল কুরসি ১বার। এবং সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস ৩ বার পড়বেন এরপর রুগীকে/নিজেকে ফুঁ দিবেন। চাইলে সুরা ফালাক নাস অনেকবার পুনরাবৃত্তি করতে পারেন, সবধরনের রুকইয়ায় এগুলো বিশেষভাবে উপকারী।
সমস্যা বেশি হলে উল্লেখিত পদ্ধতিতে রুকইয়া করা শেষে, আরেকবার এগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে প্রতিদিন খাবেন এবং গোসল করবেন। সমস্যা ভালো হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন করবেন এই দুটো কাজ। এছাড়া কোন অঙ্গে ব্যাথা থাকলে এসব দোয়া-কালাম পড়ে তেলে ফুঁ দিয়ে প্রতিদিন মালিশ করতে পারেন।
বদনজর আক্রান্ত কারো কারো ওপর রুকইয়া করতে চাইলে এই পদ্ধতিটা অনুসরণ করা উচিত। অনুরূপভাবে ছোট বাচ্চাদের বিবিধ সমস্যা / রোগবালাইয়ের জন্য রুকইয়া করতে চাইলেও এটা অনুসরণ করা যায়।
আর হ্যাঁ! উল্লেখিত সবগুলো দোয়া রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত হাদিস থেকে নেয়া।
[৩য় পদ্ধতি]
যদি কোনো গাছ, খামার, দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অথবা বাড়িতে নজর লাগে তাহলে প্রথমে এগুলোর মালিক নিজের জন্য বদনজরের রুকইয়াহ করবেন। আর এসব সম্পত্তির জন্য উপরের দু'আ এবং কোরআনের আয়াতগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিবেন, এরপর ওই পানিটা গাছে, ঘরে অথবা দোকানে ছিটিয়ে দিবেন। গৃহপালিত পশুপাখির ওপর নজর লাগলে তাদের মাথায় হাত রেখে এসব পড়তে পারেন, কিংবা কোন খাদ্যের ওপর এসব পড়ে ফুঁ দিয়ে খাইয়ে দিতে পারেন।
তাহলে ইনশাআল্লাহ বদনজর নষ্ট হয়ে যাবে। প্রয়োজনে এভাবে পরপর কয়েকদিন রুকইয়া করুন।
 
কেউ যদি বুঝতে পারেন যে তার নজর লেগেছে তাহলে নিজে নিজে চিকিৎসা করার জন্য নিচের লিংক ফলো করুন। 


[বদনজরের জন্য রুকইয়াহ - ১]
---------
[ক]
যদি জানা যায় কার নজর লেগেছে তাহলে সাহল ইবনে হুনাইফ রা. এর হাদিসটা অনুসরণ করলেই হবে।
অর্থাৎ যার নজর লেগেছে তাকে অযু করতে বলবে, অযুর পানিগুলো একটা পাত্রে জমা করবে, এরপর সেটা আক্রান্ত ব্যাক্তির গায়ে ঢেলে দিবে। তাহলেই নজর কেটে যাবে ইনশাআল্লাহ। যেমন, যদি মনে করেন আপনার বাবুর উপর মেহমানের নজর লেগেছে (যদিও ইচ্ছা করে বদনজর দেয়নি) তাহলে মেহমানকে অযুর করতে বলবেন বা উনার অযুর পানি নিয়ে আপনার বাবুর গায়ে ঢেলে দিবেন। ইন শা আল্লাহ সে সুস্থ হয়ে যাবে।
এই পদ্ধতিতে সাধারণ একবারেই বদনজরের প্রভাব দূর হয়ে যায়। তবেঁ, প্রয়োজনে ২-৩দিন করা লাগতে পারে। আর হ্যাঁ! অনেকের ক্ষেত্রে এই ওযু করার পানি ঢালার পর, প্রচণ্ড পায়খানা বা প্রসাবের বেগ আসে, সেটা হয়ে গেলে আলহামদুলিল্লাহ সুস্থ হয়ে যায়।
প্রশ্ন হচ্ছে, কুলির পানিও কি জমা করবে?
উত্তরঃ যদিওবা এক হাদিসে আছে কুলির কথা, তবে না নিলেও সমস্যা নেই। এমনকি অধিকাংশের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র একজনের হাতমুখ ধোয়া পানি নিয়ে অপরজন হাতমুখ ধৌত করলেই বদনজর নষ্ট হয়ে যায়।
উহ্য প্রশ্ন-২: যদি নিজের নজর নিজেকেই লাগে?
উত্তরঃ তাহলে ওযু করবে, এবং পানিগুলো জমা করবে, এরপর সেটা নিজের গায়ে ঢালবে।
[খ]
আর যদি আপনি না জানেন আপনার উপর কার নজর লেগেছে, যদি অনেক দিনের সমস্যা হয়, কিংবা যদি অনেকজনের নজর লাগে, তাহলে এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন। বদনজরের সেলফ রুকইয়া হিসেবে এই পদ্ধতি সাজেসটেড।
১. রুকইয়ার আয়াতগুলো প্রতিদিন তিলাওয়াত করবেন অথবা শুনবেন, সরাসরি শোনা সম্ভব না হলে অডিও রেকর্ড শুনবেন।
রুকইয়াহর আয়াত নিজেই তেলাওয়াত করা সর্বোত্তম। কাজেই আপনার তেলাওয়াত শুদ্ধ হলে সম্ভব হলে রুকইয়াহ আয়াত তেলাওয়াত করবেন। তা না হলে অডিও শুনবেন। বদনজরের রুকইয়াহর পিডিএফ নিচের লিংকে পাবেন।
পিডিএফ পড়তে সমস্যা হলে বা অডিও শুনলে যদি ঘুম আসে তাহলে কুরআন থেকে দেখে দেখে তেলাওয়াত করতে পারেন। আয়াতের লিস্ট নিচের লিংকে পাবেন।
 
বদনজরের রুকইয়াহর আয়াতের তালিকা
বদনজরের রুকইয়াহ যারা করেন তাদের একটি কমন সমস্যা হল অডিও শোনার সময় ঘুম পাওয়া। এই সমস্যার সমাধান হল তেলাওয়াত করা। তেলাওয়াতের পিডিএফ পাবেন https://ruqyahbd.org/ayat
যারা কুরআনুল কারীম থেকে বদনজরের আয়াত তেলাওয়াত করতে চান তাদের জন্য এই পোস্ট। নিজে নিজে তেলাওয়াত সর্বোত্তম রুকইয়াহ। প্রতিটি আয়াত এক বা একাধিকবার তেলাওয়াত করতে পারেন। বদনজরের লক্ষন এবং বদনজরের রুকইয়াহ করার বিস্তারিত পদ্ধতি কমেন্টে দেয়া হল।
আয়াতের তালিকাঃ
১। সুরা ফাতিহা
২। সুরা বাকারা। আয়াত নং- ৫, ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ৫০, ৫৫, ৬০, ৬৯, ৭৬, ১০৫, ১০৯, ২৪৭, ২৫৫, ২৬৯, ২৮৫, ২৮৬।
৩। সুরা আলে ইমরান। আয়াত নং- ১৩, ১৪, ২৬, ২৭, ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৩৭, ১১৮, ১১৯, ১২০, ১৬৯, ১৭০, ১৭১, ১৭২, ১৭৩, ১৭৪, ১৮৬।
৪। সুরা আন-নিসা। আয়াত নং- ২৭, ৩২, ৫৩, ৫৪, ৭৩, ১০৮, ১১৩, ১৪১।
৫। সূরা মায়েদা। আয়াত নং- ৪৫, ৭৩।
৬। সুরা আনআম। আয়াত নং- ৩৩, ৫৩, ৯৩, ১০৩, ১১০, ১৩৯, ১৬৫।
৭। সুরা আরাফ। আয়াত নং- ৪৩, ১০৮, ১১৬, ১৭৯, ১৯৫, ১৯৮।
৮। সুরা আনফাল। আয়াত নং- ৬, ৪৪, ৫৩।
৯। সুরা তওবা। আয়াত নং- ৮, ৫০, ৫১, ৫৫, ৯২, ৯৮, ১২৭, ১২৮, ১২৯।
১০। সুরা ইউনুস। আয়াত নং- ৪৩, ১০১, ১০৭।
১১। সুরা হুদ। আয়াত নং- ৫, ৩১।
১২। সুরা ইউসুফ। আয়াত নং- ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১৮, ২১, ৩১, ৩৮, ৪৬, ৬৮, ৬৯, ৭৭, ৮৪, ৮৯, ৯০, ৯১, ৯২, ৯৩, ৯৯, ১০০।
১৩। সুরা রা'দ। আয়াত নং- ৫।
১৪। সুরা হিজর। আয়াত নং- ১৬, ১৭, ৫১, ৫২, ৮৮।
১৫। সুরা নাহল। আয়াত নং- ৬, ১৮, ৫৩, ৭১।
১৬। সুরা আল ইসরা (বনী ইসরাঈল)। আয়াত নং- ২০, ২১, ৭৬।
১৭। সুরা কাহাফ। আয়াত নং- ৫, ১৯, ২৮, ৩৫, ৩৯, ৪০, ৪১, ৪৬, ৮২, ৮৬।
১৮। সুরা ত্বহা। আয়াত নং- ৫৯, ১৩১।
১৯। সুরা আম্বিয়া। আয়াত নং- ১৮, ৬১, ৯৬, ১১২।
২০। সুরা হজ্জ্ব। আয়াত নং- ১৫, ৭২।
২১। সুরা মু'মিনুন। আয়াত নং- ৯১, ৯৬।
২২। সুরা নুর। আয়াত নং- ৩০, ৩১, ৩৮।
২৩। সুরা ফুরকান। আয়াত নং- ৪১, ৭৪।
২৪। সুরা শু'আরা। আয়াত নং- ২১৮।
২৫। সুরা নামল। আয়াত নং- ১০, ১৫, ১৬, ১৯, ২৩, ২৭, ২৮, ৩৩, ৩৫, ৪০, ৪৪।
২৬। সুরা কাসাস। আয়াত নং- ১৩, ৬০, ৭৬, ৭৯, ৮০, ৮১, ৮২, ৮৩।
২৭। সুরা আহযাব। আয়াত নং- ১৯, ৫১, ৫২।
২৮। সুরা ইয়াসিন। আয়াত নং- ৯, ৬৬।
২৯। সুরা সফফাত। আয়াত নং- ১৯, ৪৬, ৫৭, ৮৮, ১৭৮, ১৭৯, ১৮০।
৩০। সুরা যুমার। আয়াত নং- ৬৮।
৩১। সুরা মু'মিন। আয়াত নং- ১৯, ২৫।
৩২। সুরা শু'রা। আয়াত নং- ১২, ২৭, ৪৫।
৩৩। সুরা আয-যুখরুফ। আয়াত নং- ৩১, ৩২, ৭১, ৮০।
৩৪। সুরা মুহাম্মাদ। আয়াত নং- ২০, ২৯, ৩০।
৩৫। সুরা ফাতাহ। আয়াত নং- ১৫।
৩৬। সুরা হুজুরাত। আয়াত নং- ১১, ১২।
৩৭। সুরা ক্বফ। আয়াত নং- ৬।
৩৮। সুরা আযযারিয়াত। আয়াত নং- ৪৪।
৩৯। সুরা তুর। আয়াত নং- ৪৮।
৪০। সুরা ক্বামার। আয়াত নং- ৮, ১২, ৩৫, ৩৭।
৪১। সুরা আর রাহমান। আয়াত নং- ৩৭, ৫০, ৭০।
৪২। সুরা ওয়াক্বিয়াহ। আয়াত নং- ৮৩, ৮৪।
৪৩। সুরা হাদিদ। আয়াত নং- ২০, ২৯।
৪৪। সুরা হাশর। আয়াত নং- ৯, ১০, ১৮।
৪৫। সুরা মুমতাহিনা। আয়াত নং- ২।
৪৬। সুরা মুনাফিকুন। আয়াত নং- ৪।
৪৭। সুরা মুলক। আয়াত নং- ৩, ৪, ২৮।
৪৮। সুরা ক্বলম। আয়াত নং- ৯, ১০, ১১, ১২, ২৬, ২৭, ৪৯, ৫০, ৫১, ৫২।
৪৯। সুরা মুদ্দাস্‌সির। আয়াত নং- ২১, ২২।
৫০। সুরা ক্বিয়ামাহ। আয়াত নং- ২২ ২৩, ২৪, ২৫।
৫১। সুরা দাহর (ইনসান)। আয়াত নং- ১৯।
৫২। সুরা নাবা। আয়াত নং- ৪০।
৫৩। সুরা নাযিয়াত। আয়াত নং- ৪৬।
৫৪। সুরা আবাসা। আয়াত নং- ২৩।
৫৫। সুরা আল ইনশিকাক। আয়াত নং- ৯, ১৩।
৫৬। সুরা গাশিয়া। আয়াত নং- ১২।
৫৭। সুরা আল ফাজর। আয়াত নং- ১৫, ১৬।
৫৮। সুরা বালাদ। আয়াত নং- ৮, ৯।
৫৯। সুরা আশ শামস। আয়াত নং- ৮, ৯, ১০।
৬০। সুরা আদ্‌-দুহা।
৬১। সুরা হুমাযাহ।
৬২। সুরা আল কাওসার।
৬৩। সুরা নাসর।
৬৪। সুরা লাহাব।
৬৫। সুরা ইখলাস।
৬৬। সুরা ফালাক।
৬৭। সুরা নাস
 

২. আর প্রতিদিন রুকইয়ার গোসল করবেন।
রুকইয়াহ অডিওর ডাউনলোড পেজের লিংক: http://ruqyahbd.org/download (সেখান থেকে "বদনজর Evil Eye অথবা Eye Hasad যেকোনোটি শুনতে পারেন। এছাড়া সা'দ আল গামিদীর আধাঘণ্টার রুকয়াটাও শুনতে পারেন। যেটাই শুনবেন, শোনার সময় নিয়ত রাখবেন, আমি বদনজরের জন্য রুকইয়াহ করছি।
যদি আপনার কোনো সমস্যা থাকে তাহলে আপনি ফিজিক্যালি এর প্রভাব টের পাবেন। যেমনঃ প্রচণ্ড ঘুম আসবে, মাথাব্যথা করতে পারে, হাত-পা কামড়াতে পারে, হার্টবিট বেড়ে যেতে পারে, শরীর ঘামতে পারে, বেশি বেশি প্রসাব হতে পারে- ইত্যাদি ইত্যাদি।
তবে এরপরেও শুনতে থাকবেন, ঘুম আসলে জেগে থাকতে চেষ্টা করবেন। আর একান্তই না পেরে ঘুমিয়ে গেলেও দুশ্চিন্তার কিছু নাই। আর সমস্যা সমাধান হলেই ভালো ফিল করতে লাগবেন ইনশাআল্লাহ! দুশ্চিন্তার কারণ নাই।
.
আর আপনি কয়েকবার মনোযোগ দিয়ে শোনার পরেও যদি কোনোই ইফেক্ট না বুঝতে পারেন, তাহলে আলহামদুলিল্লাহ্‌ আপনার কোনো সমস্যা নাই। আপনার যদি প্রবলেম থাকে তাহলে রুকইয়াহ শুনলে অবশ্যই প্রভাব টের পাবেন।
.
[গ]
রুকইয়ার গোসলের পদ্ধতি হচ্ছে-
একটা বালতিতে পানি নিবেন, তারপর ওই পানিতে দুইহাত ডুবিয়ে পড়বেন -
"দরুদ শরিফ, ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, চারকুল (কাফিরুন, ইখলাস, ফালাক্ব, নাস) প্রত্যেকটা ৭ বার। শেষে আবার দরুদ শরিফ ৭ বার পড়বেন।
লক্ষণীয়ঃ
১. পড়ার পর হাত উঠাবেন এবং পানি দিয়ে গোসল করবেন। এগুলা পড়ে পানিতে ফু দিবেন না, এমনিই গোসল করবেন।
২. যদি টয়লেট আর গোসলখানা একসাথে হয় তখন এসব অবশ্যই বাহিরে এনে পড়তে হবে।
৩. কোনদিন হাতে সময় কম থাকলে এসবের মধ্যে সুরা কাফিরুন বাদ দিতে পারেন আর দরুদ শরিফ ৩বার করে পড়তে পারেন।
৪. প্রথমে এই পানি দিয়ে গোসল করলেন পরে অন্য পানি দিয়ে ভালোমতো করলেন অসুবিধে নেই।
৫. যার সমস্যা সে যদি পড়তে না পারে, তাহলে অন্যজন পানিতে হাত রেখে পড়ে দিবে, এরপর গোসল করবেন।
৬. উত্তম হচ্ছে, প্রথমে রুকইয়াহ শুনে এরপর গোসল করতে যাবেন। গোসলের আগে শুনতে না পারলে সমস্যা নাই, দিনের যেকোন সময় শুনলেই হবে ইনশাআল্লাহ।
৭. রুকইয়ার গোসল বাদ দিয়ে, খালি অডিও শোনা থেকে নিরুৎসাহিত করছি। এতে কষ্ট বেশি কিন্তু উপকার কম হওয়ার আশংকা রয়েছে।
.
[ঘ]
মোটকথা, প্রতিদিন রুকইয়া শুনবেন এবং উপরের নিয়ম অনুযায়ী রুকইয়ার গোসল করবেন। সমস্যা অনুযায়ী ৩-৭ থেকে দিন লাগতে পারে। সমস্যা বেশি মনে হলে ২১দিন করতে পারেন।
সমস্যা কম হলে কখনো একদিনেও ভালো হয়ে যায়। তবে ভালো হওয়ার পরেও ২-৩দিন করা উচিত।
[লেখাঃ আব্দুল্লাহ আলমাহমুদ]
 
 
[চ]
নোটঃ
১। মেয়েদের পিরিয়ড শুরু হলেও রুকইয়াহ করতে পারবে। গোসলের পানি অন্য কেউ পড়ে দিবে।
২। একজন পানি তৈরি করে দিলে অন্য জন গোসল করতে পারবে।
৩। নজরের রুকইয়াহ করলে প্রথমদিকে শরীর খারাপ করতে পারে। তখন বন্ধ করা যাবে না। ধৈর্য্য ধরে রুকইয়াহ চালিয়ে যেতে হবে। ইন শা আল্লাহ সাফল্য আসবে।
৪। গায়ে/ঘরে কোন তাবিজ থাকলে অবশ্যই নষ্ট করে ফেলতে হবে আগে। কোন মূর্তি, পুতুল, ছবি ইত্যাদি থাকলে সরিয়ে ফেলতে হবে। ঘরে কুকুর থাকা চলবে না।
তাবিজ নষ্টের জন্যঃ
 
যাদুর জিনিস বা তাবিজ নষ্ট করার নিয়ম
সন্দেহজনক কিছু বা কোন তাবিজ যদি পাওয়া যায় সেটা নষ্ট করার জন্য একটি পাত্রে পানি নিন। এরপর সেই পানিতে
১। সুরা আ'রাফ ১১৭-১২২ নং আয়াত
وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ مُوسَىٰ أَنْ أَلْقِ عَصَاكَ ۖ فَإِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُونَ - فَوَقَعَ الْحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ - فَغُلِبُوا هُنَالِكَ وَانقَلَبُوا صَاغِرِينَ - وَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سَاجِدِينَ -قَالُوا آمَنَّا بِرَبِّ الْعَالَمِينَ - رَبِّ مُوسَىٰ وَهَارُونَ -
২। ইউনুস ৮১-৮২ নং আয়াত
فَلَمَّا أَلْقَوْا قَالَ مُوسَىٰ مَا جِئْتُم بِهِ السِّحْرُ ۖ إِنَّ اللَّهَ سَيُبْطِلُهُ ۖ إِنَّ اللَّهَ لَا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِينَ - وَيُحِقُّ اللَّهُ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُونَ -
৩। সুরা ত্বহা ৬৯ নং আয়াত
وَأَلْقِ مَا فِي يَمِينِكَ تَلْقَفْ مَا صَنَعُوا ۖ إِنَّمَا صَنَعُوا كَيْدُ سَاحِرٍ ۖ وَلَا يُفْلِحُ السَّاحِرُ حَيْثُ أَتَىٰ -
৪। সূরা ফালাক্ব ৩ বার
৫। সূরা নাস ৩ বার
পড়ে ফুঁ দিন। সেই পানিতে তাবিজের কাগজ কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখুন। ইনশাআল্লহ যাদু নষ্ট হয়ে যাবে। এরপর সেগুলো পুড়িয়ে ফেলুন বা অন্য কোন ভাবে নষ্ট করে ফেলুন।
আর ব্যবহৃত পানি মানুষের যাতায়াতের রাস্তা থেকে দূরে কোথাও ফেলে দিতে হবে।
 
 
 
পুরো লেখাটা মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। একবার না বুঝলে কয়েকবার পড়ুন। আল্লাহ চায়তো এরপর নিজেই নজরের রুকইয়াহ করতে পারবেন। কাউকে জিজ্ঞেস করতে হবে না, বরং অন্যদেরও পরামর্শ দিতে পারবেন।
তবে আপনার অভিজ্ঞতা আমাদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
আল্লাহ আপনাকে এমন আরোগ্য দান করুন যাতে আর কোন রোগ বাকি না থাকে। আমীন।
 
 
 
 
[সেলফ রুকইয়াহ গাইড-২]

যাদু এবং যাদুর রুকইয়াহ

[ক] যারা নিজেদেরকে যাদুগ্রস্থ মনে করছেন অথবা বুঝতে পারছেন না কিভাবে যাচাই করবেন আসলেই আপনি যাদুগ্রস্থ কিনা তাদের জন্য এই পোস্ট উপকারী হবে ইনশাআল্লাহ। নিচের লক্ষণগুলো মিলিয়ে দেখুন আপনার সাথে কতগুলো লক্ষণ মিলেঃ
১। চোখের অবস্থা অস্বাভাবিক বা অসুন্দর লাগা।
২। কোন কারণ ছাড়াই শরীর গরম থাকা।
৩। ব্যাকপেইন। বিশেষত মেরুদণ্ডের নিচের দিকে ব্যথা করা।
৪। (মহিলাদের ক্ষেত্রে) অনিয়মিত মাসিক (পুরুষদের ক্ষেত্রে) প্রস্রাবে ইনফেকশন এর সমস্যা।
৫। প্রায়সময় পেট ব্যথা থাকা।
৬। দীর্ঘদিন চিকিৎসা করেও কোন রোগ ভালো না হওয়া।
৭। তীব্র মাথা ব্যথা, ঔষধ খেয়েও তেমন লাভ হয়না।
৮। হঠাৎ করে কারো প্রতি তীব্র ঘৃণা বা তীব্র ভালোলাগা অনুভব হওয়া।
৯। পরিবার, বাসা, সমাজের প্রতি তীব্র বিতৃষ্ণা থাকা।
১০। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত খুব অস্বস্তিতে ভুগা অথবা মেজাজ খারাপ থাকা।
১১। কোন কারণ ছাড়াই বাড়ি থেকে দৌড় দিয়ে বের হয়ে যেতে ইচ্ছা হওয়া।
১২। শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে অতিরিক্ত ব্যথা হওয়া।
১৩। ঠিকমত ঘুমাতে না পারা। ঘুমালেও ভয়ংকর স্বপ্ন দেখা।
১৪। স্বপ্নে কোনো গাড়ি বা প্রাণিকে আক্রমণ করতে বা ধাওয়া করতে দেখা (যেমনঃ কুকুর, বিড়াল, গরু, মহিষ, বাঘ, সিংহ, সাপ)।
১৫। স্বপ্নে কোন ফাঁকা বাড়ি, মরুভূমি বা গোরস্থানে হাঁটাচলা করতে দেখা।
১৬। স্বপ্নে বিভিন্ন যায়গায় পানি দেখা (যেমন সাগর, নদী, পুকুর, ইত্যাদি)।
১৭। স্বপ্নে ঘনঘন কোথাও আগুন জ্বলতে বা কিছু পোড়াতে দেখা।
১৮। স্বপ্নে নিজেকে উড়তে দেখা বা কোন পাখি অথবা বড়বড় গাছ দেখা।
[খ] এসব লক্ষণ যদি দুই একটা মিলে যায় তাহলে ইনশাআল্লাহ আপনার রুকইয়াহ করা লাগবেনা। ফরজ কাজগুলোর পাশাপাশি নিয়মিত সকাল-সন্ধ্যা এবং ঘুমানোর আগের মাসনুন আমল এবং বেশি বেশি দোয়া করলেই যথেষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ।
মাসনুন আমল সম্পর্কে এখানে দেখুন-
 

[গ] এসব লক্ষণ যদি ৫ টা বা তারও বেশি মিলে যায় তাহলে আপনার উচিত টেস্ট করার জন্য রুকইয়ার আয়াতগুলো কয়েকবার তিলাওয়াত করা।
এখানে রুকইয়ার আয়াতের পিডিএফ পাওয়া যাবে ruqyahbd.org/d
অথবা এই পিডিএফটা ( bit.ly/ayatsihr ) তিলাওয়াত করবেন। প্রতিটা আয়াত বেশ কয়েকবার করে তিলাওয়াত করবেন।
তিলাওয়াত করতে না পারলে রুকইয়াহ অডিও শুনেও টেস্ট করতে পারবেন। নিচের লিংকে গিয়ে “বিভিন্ন ক্বারিদের সাধারণ রুকইয়াহ” শিরোনামে যেকোন অডিও শুনে টেস্ট করা যাবে।
এক্ষেত্রে শাইখ সুদাইস(১১ নাম্বার), এবং শাইখ লুহাইদানের (২০ নাম্বার) অডিও শুনতে পারেন।
গায়ে বা ঘরে তাবিজ থাকলে, সেটা খুলে নষ্ট করে তাওবা করার পর রুকইয়াহ শুনবেন। তাবিজ নষ্ট করার জন্য এই লিংক ফলো করবেন
 
 
যাদুর জিনিস বা তাবিজ নষ্ট করার নিয়মঃ
-----------
সন্দেহজনক কিছু বা কোন তাবিজ যদি পাওয়া যায় তাহলে সেটা নষ্ট করার জন্য একটি পাত্রে পানি নিন। তারপর সেই পানিতে সুরা আ’রাফ ১১৭-১২২ নং আয়াত, ইউনুস ৮১-৮২, সুরা ত্বহা ৬৯, সূরা ফালাক্ব ৩ বার, সূরা নাস ৩ বার পড়ে ফুঁ দিন।
লক্ষণীয়ঃ
১। তাবিজ,পুতুল,কাগজ,যাদুকরের দেয়া যেকোনকিছু উপরের আয়াতগুলো পড়া পানিতে ডুবিয়ে রাখবেন কিছুক্ষণ। কাগজে লেখা থাকলে সেটা ঘষে মুছে ফেলার চেষ্টা করবেন। লেখা মুছার পরে ছিড়ে অনেকগুলো টুকরো করবেন। তারপর শুকিয়ে পুড়িয়ে ফেলবেন। পুড়ানোর সময়ে নিশ্বাসের সাথে সেটার ধোঁয়া নেয়া থেকে বিরত থাকবেন।
২। তাবিজ খালি হাতে না ধরে গ্লাভস ব্যবহার করতে পারেন। তাবিজ ধরার পূর্বে এবং নষ্ট করার পুরোটা সময়ে ফালাক, নাস পড়বেন।
৩। তামা বা অন্য ধাতুর তাবিজ বা আংটিতে খোদাই করা লেখা থাকলে লেখাটা ঘষে মুছে ফেলবেন। ঘষে মুছতে না পারলে পুড়িয়ে হলেও লেখাটা মুছে ফেলা জরুরী। নিজে করতে না পারলে কোন স্বর্ণকারের কাছে গিয়ে লেখাটা মুছে ফেলবেন।
৪। তাবিজে গিট দেয়া থাকলে সাবধানে প্রতিটা গিট খুলবেন। কোন পুতুল, মূর্তি, পাখি, মাছ ইত্যাদি পাওয়া গেলে সাবধানে খেয়াল করবেন এদের গায়ে কোন পিন আছে কিনা। থাকলে প্রতিটা পিন খুলবেন। পিনগুলোও পানিতে ডুবিয়ে রাখবেন। জীবন্ত কোনকিছু যেমন- পাখি পাওয়া গেলে তার ডানার নিচে এবং শরীরের প্রতিটা জায়গায় খুঁজে দেখবেন কোন তাবিজ,পিন বা সন্দেহজনক কিছু আছে কিনা। থাকলে এগুলো সাবধানে খুলে নিয়ে পাখিকে তাবিজ নষ্টের পানি দিয়ে ভিজিয়ে ছেড়ে দিবেন। তাবিজের ভেতরে কাগজ ছাড়াও অন্যকিছু থাকতে পারে। তাবিজ খুলতে গেলে অনেক সময় খোলস ভেঙ্গে বের করা লাগতে পারে। যাই থাকুক, ভাঙ্গা টুকরোসহ সবটুকুই পানিতে ঢালবেন। একইভাবে যাদুকরের দেয়া তেলপড়া,পানিপড়া ইত্যাদি জিনিসপত্র পানিতে ঢালবেন।
৫। ব্যবহৃত পানি ফেলার জন্য এবং তাবিজ পুড়ানোর জন্য, সাধারনত মানুষের যাতায়াত হয়না এমন কোন জায়গা ঠিক করে নিন।
৬। কোন জায়গায় তাবিজ রাখা আছে সন্দেহ হলে সেখানে পরপর তিনদিন তাবিজ নষ্টের পানিটা ছিটিয়ে দিন। কারো বাসার দেয়ালে,ফ্লোরে অথবা যেকোন স্থানে তাবিজ আঁকা অথবা খোদাই করা থাকলে লেখাটা ঘষে মুছতে হবে। তারপর তাবিজ নষ্টের পানিটা ওখানে ছিটিয়ে দিতে হবে। অনেক সময় বাসা বানানোর সময়ে প্রতি কোণায় তাবিজ রেখে দেয়া হয়। সেক্ষেত্রে এসব কোণায় তাবিজ নষ্টের পানিটা ছিটিয়ে দিবেন পরপর তিনদিন। আর দোয়া করবেন যেন আল্লাহ তাবিজ নষ্ট করে দেন।
৭। জ্যোতিষীর দেয়া কোন বিশেষ আংটি থাকলে তাবিজ নষ্টের পানিতে ডুবিয়ে রাখবেন। কিছুক্ষণ রেখে পাথরটা ভেঙে তারপর ফেলে দিবেন। জ্যোতিষীরা বিশ্বাস করে পাথরের ক্ষমতা আছে। তাই কোনমতেই এই পাথর রেখে দেয়া যাবেনা।
৮। আপনি তাবিজ ব্যবহার করলে উপরোক্ত নিয়ম অনুযায়ী তাবিজ নষ্ট করবেন। তারপর তাবিজ ব্যবহার করার জন্য তাওবা করবেন।
 
 
 
 
যাদুর সমস্যা থাকলে রুকইয়াহ তিলাওয়াত করে অথবা অডিও শুনে বেশকিছু প্রতিক্রিয়া হতে পারে। যেমন- বমি হওয়া অথবা বমি বমি ভাব হওয়া, পেটে অথবা ঘারে অথবা মাথায় তীব্র ব্যথা হওয়া, কান্না পাওয়া ইত্যাদি। রুকইয়াহ শুনে যদি এরকম যেকোন প্রতিক্রিয়া হয় তাহলে আপনার উচিত অন্তত দুই সপ্তাহ যাদুর রুকইয়াহ করা। যাদু বা সিহরের রুকইয়াহ এই নিয়মে করবেন-
 
যাদু / ব্ল্যাক ম্যাজিক / বান মারার জন্য রুকইয়া:
যাদুর প্রকারভেদ অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকার রুকইয়া করা হয়। তবে কমন সেলফ রুকইয়া হচ্ছে-
প্রথমে সমস্যার জন্য নিয়াত ঠিক করে নিন, ইস্তিগফার, দরুদ শরিফ পড়ে শুরু করুন। এরপর একটি বোতল ভর্তি পানি নিয়ে ক. সুরা আ'রাফ ১১৭-১২২ খ. ইউনুস ৮১-৮২ গ. সুরা ত্বহা ৬৯নং আয়াত পড়ে ফুঁ দিন।আপনাদের সুবিধার্থে এই আয়াতগুলো এখানে দেয়া হল। কেউ চাইলে কুরআনুল কারীম দেখেও পড়তে পারবেন।
ক.
وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ مُوسَىٰ أَنْ أَلْقِ عَصَاكَ ۖ فَإِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُونَ - فَوَقَعَ الْحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ - فَغُلِبُوا هُنَالِكَ وَانقَلَبُوا صَاغِرِينَ - وَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سَاجِدِينَ -قَالُوا آمَنَّا بِرَبِّ الْعَالَمِينَ - رَبِّ مُوسَىٰ وَهَارُونَ -
খ.
فَلَمَّا أَلْقَوْا قَالَ مُوسَىٰ مَا جِئْتُم بِهِ السِّحْرُ ۖ إِنَّ اللَّهَ سَيُبْطِلُهُ ۖ إِنَّ اللَّهَ لَا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِينَ - وَيُحِقُّ اللَّهُ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُونَ -
গ.
وَأَلْقِ مَا فِي يَمِينِكَ تَلْقَفْ مَا صَنَعُوا ۖ إِنَّمَا صَنَعُوا كَيْدُ سَاحِرٍ ۖ وَلَا يُفْلِحُ السَّاحِرُ حَيْثُ أَتَىٰ -
ঘ. এরপর সুরা ফালাক্ব, সুরা নাস ৩বার পড়ে ফুঁ দিন।
তিন থেকে সাতদিন সকাল-বিকাল এই পানি খেতে হবে এবং গোসলের পানিতে মিশিয়ে গোসল করতে হবে।
আর ৩/৪ সপ্তাহ প্রতিদিন কমপক্ষে দুইঘণ্টা রুকইয়া শুনতে হবে। একঘণ্টা সাধারণ রুকইয়া (ডাউনলোড পেইজের ১১ থেকে ২৩ নং পর্যন্ত রুকয়াহ গুলো সাধারণ রুকইয়াহ। আপনার যেটা ইচ্ছা ডাউনলোড করে শুনবেন) আর একঘণ্টা সুরা ইখলাস, ফালাক, নাসের (ডাউনলোড পেইজের ৯ নং) রুকইয়াহ। (ডাউনলোড লিংক www.ruqyahbd.org/download )। আর পাশাপাশি তাহাজ্জুদ পড়ে আল্লাহর কাছে দোআ করতে হবে।
বেশীরভাগ ক্ষেত্রে প্রথম সপ্তাহেই উন্নতি টের পাওয়া যায়, তবে এরপরের কয়েক সপ্তাহ একঘন্টা করে হলেও রুকইয়া শুনে যেতে হবে। বাদ দেয়া যাবে না। তাহলে ইনশাআল্লাহ খুব দ্রুতই সুস্থ হয়ে যাবে। যদি দুই-তিন সপ্তাহ পরেও সমস্যা শেষ না হয়, তবে আবার অনুরূপ করতে হবে।
যাদুর কোন জিনিশ অথবা তাবিজ খুঁজে পেলে:
কি দিয়ে যাদু করেছে যদি পাওয়া যায়, অথবা সন্দেহজনক কোন তাবিজ পেলে উপরে বলা আয়াতগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিন, এরপর তাবিজ অথবা যাদুর জিনিশগুলো ডুবিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ, তাহলে ইনশাআল্লাহ যাদু নষ্ট হয়ে যাবে। পরে সেগুলো পুড়িয়ে বা নষ্ট করে দিন।
যাদু আক্রান্ত হলে বোঝার উপায়ঃ
রুকইয়ার আয়াতগুলো যাদু আক্রান্ত ব্যক্তির ওপর পড়লে, অথবা রুকইয়ার আয়াতের অডিও শুনলে যাদুগ্রস্তের অস্বাভাবিক অনুভূতি হয়। যেমন, প্রচণ্ড মাথাব্যথা, পেট ব্যথা, বুক ধড়ফড় করা ইত্যাদি।
যাদু, জ্বিন, বদনজর সম্পর্কিত একাধিক সমস্যায় আক্রান্ত হলে:
একসাথে একাধিক সমস্যায় আক্রান্ত হলে প্রথমে বদনজরের জন্য রুকইয়া করতে হবে, এরপর জ্বিনের রুকইয়া এবং যাদুর জন্য রুকইয়া।

 
 
দুই সপ্তাহ করে পুরোপুরি ভালো না হলে প্রয়োজনে তিন সপ্তাহ করতে পারেন। দুই বা তিন সপ্তাহ করে গ্রুপে নতুন পোস্ট দিয়ে আপনার আপডেট জানাতে পারেন।
[ঘ]
উপরে উল্লেখিত যাদুগ্রস্থ হওয়ার লক্ষনগুলোর সাথে যদি আপনার জ্বিন সংক্রান্ত সমস্যা থাকে তাহলে রুকইয়াহ শুরুর পূর্বে এডমিনদের পরামর্শ নিবেন। নিচের লিংকে জ্বিন সংক্রান্ত সমস্যার লক্ষন দেখে নিন
 
 
জ্বিন দ্বারা আক্রান্ত হবার লক্ষনসমূহ
জ্বিন দ্বারা আক্রান্ত হবার লক্ষনগুলোকে দু'ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ
ক) ঘুম সংক্রান্ত লক্ষনসমূহ
১। নিদ্রাহীনতা: যার জন্য সারারাত শুধু বিশ্রাম নেয়াই হয়, ঘুম হয়না।
২। উদ্বিগ্নতা: যার জন্য রাতের বেশিরভাগ সময়ই না ঘুমিয়ে কাটানো।
৩। বোবায় ধরা: ঘুমের সময় কেউ চেপে ধরেছে, নড়াচড়া করতে পারছে না। প্রায়ই এমন হওয়া।
৪। ঘুমের মাঝে প্রায়শই চিৎকার করা, গোঙানো, হাসি-কান্না করা
৫। ঘুমন্ত অবস্থায় হাটাহাটি করা (Sleepwalking)
৬। স্বপ্নে কোনো প্রাণিকে আক্রমণ করতে বা ধাওয়া করতে দেখা। বিশেষতঃ কুকুর, বিড়াল, ইঁদুর, উট, সিংহ, শিয়াল, সাপ
৭। স্বপ্নে নিজেকে অনেক উঁচু কোনো যায়গা থেকে পড়ে যেতে দেখা।
৮। কোনো গোরস্থান বা পরিত্যক্ত স্থান অথবা কোনো মরুভূমির সড়কে হাটাচলা করতে দেখা।
৯। বিশেষ আকৃতির মানুষ দেখা। যেমন: অনেক লম্বা, খুবই খাটো, খুব কালো কুচকুচে ইত্যাদি।
১০। জ্বিন-ভুত দেখা।
খ) জাগ্রত অবস্থার লক্ষনসমূহ
১। দীর্ঘ মাথাব্যথা (চোখ, কান, দাত ইত্যাদি সমস্যার কারণে নয়, এমনিই)
২। ইবাদত বিমুখতা: নামাজ, তিলাওয়াত, যিকির আযকারে আগ্রহ উঠে যাওয়া। মোটকথা, দিনদিন আল্লাহর থেকে দূরে সরে যাওয়া।
৩। মেজাজ বিক্ষিপ্ত হয়ে থাকা, কিছুতেই মন না বসা..
৪। ব্যাপক অলসতা; সবসময় অবসন্নতা ঘিরে রাখা
৫। মৃগীরোগ।
৬। শরীরের কোনো অংঙ্গে ব্যাথা কিংবা বিকল হয়ে যাওয়া। ডাক্তাররা যেখানে সমস্যা খুজে পেতে বা চিকিৎসা করতে অপারগ হচ্ছে।
সতর্কতাঃ এখান থেকে দুই-চারটি লক্ষণ মিলে গেলে নিজেকে জিনের রোগী ভাবার কোন কারণ নেই। যদি দীর্ঘদিন ধরে এই ধরনের সমস্যা থাকে তাহলে ভিন্ন কথা।
 
 
 
 
 
 
এখান থেকে যদি ৪-৫ টা মিলে তাহলে ইনশাআল্লাহ সিহরের রুকইয়াহ করতে কোন অসুবিধা নেই। তারও বেশি লক্ষণ মিলে গেলে সিহরের পোস্টে বলা নিয়মে রুকইয়ার পাশাপাশি প্রতিদিন একঘন্টা আয়াতুল কুরসি তিলাওয়াত করবেন অথবা অডিও শুনবেন। আর প্রায় সব লক্ষণ মিলে গেলে অবশ্যই এডমিন ভাইদের পরামর্শ নিবেন।
[ঙ]
নোটঃ
১। মেয়েদের পিরিয়ড শুরু হলেও রুকইয়াহ করতে পারবে। গোসলের পানি অন্য কেউ পড়ে দিবে।
২। একজন পানি তৈরি করে দিলে অন্য জন গোসল করতে পারবে।
৩। রুকইয়াহ শুরু করলে প্রথমদিকে শরীর খারাপ করতে পারে। তখন বন্ধ করা যাবে না। ধৈর্য্য ধরে রুকইয়াহ চালিয়ে যেতে হবে। ইনশা আল্লাহ সাফল্য আসবে।
৪। গায়ে/ঘরে কোন তাবিজ থাকলে অবশ্যই নষ্ট করে ফেলতে হবে আগে। কোন মূর্তি, পুতুল, ছবি ইত্যাদি থাকলে সরিয়ে ফেলতে হবে। ঘরে কুকুর থাকা চলবে না।
৫। রুকইয়া শুরুর পূর্বে এই পোস্ট পড়ে নিবেন
 
 
 
রুকইয়া শুরুর পূর্বে
------------------------
যারা রুকইয়া শুরু করবেন অথবা রুকইয়া করছেন নিচের বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন ইনশাআল্লাহ।
১। রুকইয়া একপ্রকার ইবাদত। দুয়াতে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া হয়, একইভাবে রুকইয়ার মাধ্যমেও আল্লাহর সাহায্য চাওয়া হয়। এটাকে কখনোই হেলাফেলার বিষয় মনে করবেন না। “রুকইয়া করে দেখি কাজ হয় কিনা। কাজ নাহলে কবিরাজের কাছেই যেতে হবে” এরকম মানসিকতা নিয়ে রুকইয়া করবেন না। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“আর আমি কুরআন নাযিল করি যা মুমিনদের জন্য শিফা ও রহমত, কিন্তু তা যালিমদের ক্ষতিই বাড়িয়ে দেয়।” (বনী ইসরাঈল ৮২)
আল্লাহর কালামে শিফা আছে এই কথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা রেখে রুকইয়া শুরু করবেন।
২। “রুকইয়া করব এবং কবিরাজের চিকিৎসাও চালিয়ে যাব” এরকম মন মানসিকতা থাকলে রুকইয়া করবেন না। রুকইয়ার পাশাপাশি ডাক্তারী চিকিৎসা নিতে পারেন। কিন্তু কবিরাজের চিকিৎসা,জীন হাজির করে জবাব নেয়া এমন কিছু করা যাবেনা। রুকইয়া শুরুর পূর্বে গায়ে/বাসার সকল তাবিজ নষ্ট করবেন। তাবিজ নষ্ট করে তাওবা করার পর রুকইয়া শুরু করবেন। তাবিজ নষ্টের জন্য এই পোস্ট ফলো করবেন, 

 

যাদুর জিনিস বা তাবিজ নষ্ট করার নিয়মঃ
-----------
সন্দেহজনক কিছু বা কোন তাবিজ যদি পাওয়া যায় তাহলে সেটা নষ্ট করার জন্য একটি পাত্রে পানি নিন। তারপর সেই পানিতে সুরা আ’রাফ ১১৭-১২২ নং আয়াত, ইউনুস ৮১-৮২, সুরা ত্বহা ৬৯, সূরা ফালাক্ব ৩ বার, সূরা নাস ৩ বার পড়ে ফুঁ দিন।
লক্ষণীয়ঃ
১। তাবিজ,পুতুল,কাগজ,যাদুকরের দেয়া যেকোনকিছু উপরের আয়াতগুলো পড়া পানিতে ডুবিয়ে রাখবেন কিছুক্ষণ। কাগজে লেখা থাকলে সেটা ঘষে মুছে ফেলার চেষ্টা করবেন। লেখা মুছার পরে ছিড়ে অনেকগুলো টুকরো করবেন। তারপর শুকিয়ে পুড়িয়ে ফেলবেন। পুড়ানোর সময়ে নিশ্বাসের সাথে সেটার ধোঁয়া নেয়া থেকে বিরত থাকবেন।
২। তাবিজ খালি হাতে না ধরে গ্লাভস ব্যবহার করতে পারেন। তাবিজ ধরার পূর্বে এবং নষ্ট করার পুরোটা সময়ে ফালাক, নাস পড়বেন।
৩। তামা বা অন্য ধাতুর তাবিজ বা আংটিতে খোদাই করা লেখা থাকলে লেখাটা ঘষে মুছে ফেলবেন। ঘষে মুছতে না পারলে পুড়িয়ে হলেও লেখাটা মুছে ফেলা জরুরী। নিজে করতে না পারলে কোন স্বর্ণকারের কাছে গিয়ে লেখাটা মুছে ফেলবেন।
৪। তাবিজে গিট দেয়া থাকলে সাবধানে প্রতিটা গিট খুলবেন। কোন পুতুল, মূর্তি, পাখি, মাছ ইত্যাদি পাওয়া গেলে সাবধানে খেয়াল করবেন এদের গায়ে কোন পিন আছে কিনা। থাকলে প্রতিটা পিন খুলবেন। পিনগুলোও পানিতে ডুবিয়ে রাখবেন। জীবন্ত কোনকিছু যেমন- পাখি পাওয়া গেলে তার ডানার নিচে এবং শরীরের প্রতিটা জায়গায় খুঁজে দেখবেন কোন তাবিজ,পিন বা সন্দেহজনক কিছু আছে কিনা। থাকলে এগুলো সাবধানে খুলে নিয়ে পাখিকে তাবিজ নষ্টের পানি দিয়ে ভিজিয়ে ছেড়ে দিবেন। তাবিজের ভেতরে কাগজ ছাড়াও অন্যকিছু থাকতে পারে। তাবিজ খুলতে গেলে অনেক সময় খোলস ভেঙ্গে বের করা লাগতে পারে। যাই থাকুক, ভাঙ্গা টুকরোসহ সবটুকুই পানিতে ঢালবেন। একইভাবে যাদুকরের দেয়া তেলপড়া,পানিপড়া ইত্যাদি জিনিসপত্র পানিতে ঢালবেন।
৫। ব্যবহৃত পানি ফেলার জন্য এবং তাবিজ পুড়ানোর জন্য, সাধারনত মানুষের যাতায়াত হয়না এমন কোন জায়গা ঠিক করে নিন।
৬। কোন জায়গায় তাবিজ রাখা আছে সন্দেহ হলে সেখানে পরপর তিনদিন তাবিজ নষ্টের পানিটা ছিটিয়ে দিন। কারো বাসার দেয়ালে,ফ্লোরে অথবা যেকোন স্থানে তাবিজ আঁকা অথবা খোদাই করা থাকলে লেখাটা ঘষে মুছতে হবে। তারপর তাবিজ নষ্টের পানিটা ওখানে ছিটিয়ে দিতে হবে। অনেক সময় বাসা বানানোর সময়ে প্রতি কোণায় তাবিজ রেখে দেয়া হয়। সেক্ষেত্রে এসব কোণায় তাবিজ নষ্টের পানিটা ছিটিয়ে দিবেন পরপর তিনদিন। আর দোয়া করবেন যেন আল্লাহ তাবিজ নষ্ট করে দেন।
৭। জ্যোতিষীর দেয়া কোন বিশেষ আংটি থাকলে তাবিজ নষ্টের পানিতে ডুবিয়ে রাখবেন। কিছুক্ষণ রেখে পাথরটা ভেঙে তারপর ফেলে দিবেন। জ্যোতিষীরা বিশ্বাস করে পাথরের ক্ষমতা আছে। তাই কোনমতেই এই পাথর রেখে দেয়া যাবেনা।
৮। আপনি তাবিজ ব্যবহার করলে উপরোক্ত নিয়ম অনুযায়ী তাবিজ নষ্ট করবেন। তারপর তাবিজ ব্যবহার করার জন্য তাওবা করবেন।

 

 

 

শরীয়ত সমর্থন করেনা এমনকিছু বাসায় রেখে রুকইয়া করবেন না। যেমন- কুকুর, প্রাণির উন্মুক্ত ছবি, মূর্তি, জ্যোতিষীদের দেয়া কোনকিছু। প্রশ্ন করতে পারেন, তাবিজ থাকলে সমস্যা কি? সমস্যা আছে, তাবিজ রেখে রুকইয়া করলে অনেক সময় উলটাপালটা প্রতিক্রিয়া দেখা যায়, সমস্যা থাকলেও রুকইয়া করে কোন উপকার হয়না।
৩। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “বান্দা আমার সম্পর্কে যেমন ধারণা করে আমি তার নিকট তেমনই”। (বুখারী, ৬৯০১)
আল্লাহ সম্পর্কে সর্বোচ্চ সুধারণা রাখতে হবে। যাবতীয় সমস্যার জন্য বেশি বেশি দোয়া করতে হবে। বিশেষত দোয়া কবুলের সময়গুলোতে (যেমন- তাহাজ্জুদের সময়ে)। আল্লাহ আপনার দোয়া কবুল করবেন কিনা সেটা নিয়ে কনফিউজড থাকা যাবেনা। আল্লাহ দোয়া কবুল করবেন এমন ধারণা রেখেই দোয়া করতে হবে। এটা দোয়ার আদব।
৪। ফরজ ইবাদতে (যেমন নামাজ,পর্দা ইত্যাদি) সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। রুকইয়া করছেন এজন্য বা অন্যকোন কারণে না, আল্লাহ করতে বলেছেন তাই আপনাকে নামাজ পড়তে হবে, পর্দা করতে হবে। ফরজ ইবাদত নিয়মিত না থাকলে কি রুকইয়া শুরু করা যাবেনা? যাবে, তবে ফরজ ইবাদতের দিকে বেশি মনযোগ দিতে হবে। রুকইয়া যেহেতু এক প্রকার ইবাদত তাই রুকইয়া থেকে ভালো ফলাফল আশা করলে ফরজ ইবাদত ঠিক হওয়া জরুরি। পাপ কাজ থেকে বেঁচে থাকতে হবে যথাসম্ভব। সুস্থ এবং অসুস্থ সবারই উচিত হিফাজতের জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিখিয়ে দেয়া সকাল সন্ধ্যা ও ঘুমানোর আগের আমলগুলো করা। যারা রুকইয়া করবেন এসব আমল করা তাদের জন্য আরো জরুরী। হিফাজতের জন্য বলা মাসনুন আমল এখানে পাওয়া যাবে,

https://allzinone.blogspot.com/2021/05/blog-post_21.html

 

৫। কিছু মানুষ বলে বেড়ায়, “কোরআন দিয়ে হবেনা। কুফরি কাটানোর জন্য কুফরিই করতে হবে।” নাউযুবিল্লাহ! জেনেশুনে কুফরি করা এবং মানুষকে কুফরির দিকে আহবান করা মারাত্মক গুনাহের কাজ। কুফরি কাটানোর জন্য কোরআন দিয়েই চিকিৎসা করতে হবে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“আল্লাহ কোন হারাম বস্তুতে তোমাদের জন্য আরোগ্য রাখেননি।” (সহীহ ইবনে হিব্বান)
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“যদি আমি এই কোরআন পাহাড়ের উপর অবতীর্ণ করতাম, তবে তুমি দেখতে যে, পাহাড় বিনীত হয়ে আল্লাহ তা’আলার ভয়ে বিদীর্ণ হয়ে গেছে। আমি এসব দৃষ্টান্ত মানুষের জন্যে বর্ণনা করি, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে।” (সুরা আল হাশর ২১)
কোরআন কোন পাহাড়ের উপর নাজিল করলে আল্লাহর ভয়ে পাহাড়টাই মাটিতে মিশে যেত! সুবহানাল্লাহ! সৃষ্টিকুলের মালিক আল্লাহ তায়ালার কালামের সামনে দাঁড়াতে পারে এমন কিছু আসমান জমীনে নাই। আল্লাহর কোন সৃষ্টি, আপনার অসুখ এসবেরও কোন ক্ষমতা নাই আল্লাহর কালামের সামনে টিকে যেতে পারে।
প্রচলিত কুফরি কবিরাজি সম্পর্কে জানুন এবং এসব থেকে দূরে থাকুন। কুফরি কবিরাজি সম্পর্কে জানতে এই পোস্ট পড়ুন,
 

 

 রুকইয়াহ vs কবিরাজি
অনেকের ধারনা রুকইয়াহ এবং কবিরাজি একই। গ্রুপ এডমিনদের প্রতিও ধারনা তারা কবিরাজি করেন। রুকইয়াহ সম্পর্কে যার ন্যূণতম জ্ঞান আছে, সে অন্তত এই ধারণা করবে না। সাধারন মানুষ কবিরাজের কাছে যায়, কিছু টাকা দেয় বা না দেয়; কবিরাজ বলে হয়ে যাবে। কিন্তু কিভাবে হবে সেটা আর বলে না। ভয়ে তাকে জিজ্ঞেসও করা যায় না। এত্তবড় কবিরাজ/হুজুর। জিজ্ঞেস করলে যদি আবার আমার কোন ক্ষতি হয়! ইমাম সাহেব উনি, উনি খতিব, উনি মুফতি সাহেব! উনি কি আর ভুল কিছু করবেন?
কাজেই আমরা যখন "বদনজর, জ্বিন, যাদুর" ব্যাপারে কথা বলতে যাই তখন স্বাভাবিক ইম্প্রেশনে মানুষ কবিরাজ/হুজুরই মনে করে। কারন তারা ভাবে কবিরাজ/হুজুররা কুরআন দিয়েই চিকিৎসা করে। আমরাও সে কথাই বলি। কেউ খতিয়ে দেখার কথা ভাবে না যে, তলে তলে কি হচ্ছে।
এই কারনে কুফরী করা, শিরক করা, ভণ্ড কবিরাজ/হুজুর চেনা জরুরী।
লন্ডনের এক বিখ্যাত রাক্বি (যিনি রুকইয়াহ করেন) কবিরাজ/হুজুর চেনার কিছু উপায় বলেছিলেন। আপনাদের জন্য সেখান থেকে তুলে দেয়া হলঃ
১. যদি জিজ্ঞেস করে আপনার মায়ের নাম কি,বাবার নাম কি, দাদার নাম কি, বংশ পরিচয় জানতে চায়-ইত্যাদি।
২. যদি বলে আপনার কাপড়ের অংশ লাগবে/আন্ডারগার্মেন্টেসের অংশ লাগবে/ চুল লাগবে/ দাড়ি লাগবে/কানের দুলটা/গলার চেইনটা লাগবে/হাতের চুড়ি লাগবে।
৩. যদি সে বলে "একগ্লাস পানি আনেন। আর একটা ছুড়ি আনেন। এবার গ্লাসের পানিতে ছুড়ি চালান।" আপনি চালাবেন আর আপনার মনে হবে আপনি ছুড়ি পানিতে না গোশতের মধ্যে চালাচ্ছেন।
৪. যদি সে আপনার বাসায় আসে, বসে পড়ে এদিক সেদিক তাকায় আর কি যেন বিড়বিড় করে। সুন্দর সুন্দর কথা বলে কিন্তু সেগুলো কুরআনের আয়াত নয়, হাদীসের দোয়াও নয়।
৫. যদি এমন বলে (সাধারনত মেয়েদের বলে) যে, আপনি যদি সুস্থ হতে চান তাহলে "এই জিনিস"টা আমাকে আপনার গোপন অঙ্গে ঘষতে হবে। যদি সুস্থ হত চান তাহলে আপনার এই এই অঙ্গ আমাকে ধরতে হবে/ আপনাকে উলঙ্গ হতে হবে -ইত্যাদি ইত্যাদি। (নাউজুবিল্লাহ)
৬. যদি বলে যে, এক বোতল পানি আনেন। বোতলটা টেবিলের উপর/ওয়ারড্রোবের উপর রাখুন। অথবা বলে যে, বোতলের মুখ খুলে হাতে রাখুন। আমি যখন বলব তখন সাথে সাথে মুখ লাগিয়ে দিবেন।
৭. যদি বলে যে, এই নেন এই তাবিজটা/কবচটা গলায়/হাতে/কোমড়ে পড়েন। কারণ প্রায় ৯৯% তাবিজেই শিরক, কুফর বিদ্যমান। 
৮. যদি বলে, চোখ বন্ধ করুন। কিছু একটা দেখতে পাবেন। যখন দেখতে পাবেন তখনই ধরে ফেলবেন। অথবা বলবে যখনই দেখবেন তখনই দু'হাতে মশা মারার মত করে মারবেন।
৯. আপনারা হয়তো অনেক কবিরাজকে দেখে থাকবেন, যারা বলে গরু লাগবে, মুরগি লাগবে, ছাগল লাগবে তাহলে আপনার কাজ হবে। তাদের অনেকে নিজে এসব শয়তানের নামে বলি দেয়, আর অনেকে বলে “জবাই করার পর রক্তটা দিবেন।" তাঁরা এই রক্ত শয়তানের উপাসনায় ব্যবহার করে। যাদুবিদ্যায় বিভিন্ন মৃত প্রাণীর রক্ত ব্যবহার করা খুবই কমন ব্যাপার।
বাংলাদেশের কবিরাজ/হুজুররা আরও কিছু কাজ করে থাকে যেমনঃ
১। কাপড় মাপে, কাপড় ছোট বড় করে দেখায়। একই ভাবে হাত মেপে হাত ছোট বড় দেখায়।
২। মুখে দেখেই অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের কথা বলে এবং কিছু কিছু মিলেও যায়।
৩। জ্যোতিষিদের মত হাত দেখে।
৪। কোন কিছু পুতে রাখার জন্য বলে।
৫। জ্বিন বোতলে বন্দি করে রেখেছে, জ্বিনকে অমুক জায়গায় পাঠিয়ে দিয়েছে, জ্বিন রক্তে মিশে গেছে -এই জাতীয় উদ্ভট কথা বলে।
৬। কবিরাজদের একদল নিজের নামের শেষ "শাজলী" যোগ করে। ওরা বলে "সাহাবি জিন" নাকি ওদের খেদমত করে।
৭। সাত ঘাটের পানি লাগবে, অমুক জায়গায় মাটি লাগবে ইত্যাদি অর্থহীন কাজ করবে।
৮। অন্য জনের উপর জ্বিন হাজির করে তাকে দিয়ে কথা বলাবে ।
৯। শনিবারে যেতে হবে, মঙ্গলবার যেতে হবে, মাগরিবের পর যেতে হবে -ইত্যাদি অনর্থক শর্ত আরোপ করবে।
১০। নির্দিষ্ট জিনিস খাওয়া নিষেধ করতে পারেন। যেমন,কলা খাওয়া নিষেধ, গোশত খাওয়া যাবে যাবে না- খেলে ওষুধ কাজ করবে না। অন্যকোন ওষুধ খাওয়া যাবে না -ইত্যাদি বলতে পারে।
১১। তুলা রাশির লোক লাগবে -এসব বলতে পারে।
কাজেই যারা আমাদের সম্পর্কে এমন গর্হিত ধারনা পোষন করেন তাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে আমরা এই ধরনের কথা বলে থাকি, এই ধরনের কাজ করি থাকি, তার প্রমান দিবেন। আর যদি প্রমান দিতে না পারেন তবে তওবা করে নিজের ধারনা সংশোধন করে নিবেন।
কবিরাজির বাস্তবতা সম্পর্কে কয়েকটা কথা বলি।
১) এদের কাছে গেলে আপনার সমস্যার সমাধান হবে না বরং আপনি জটিল থেকে জটিলতর সমস্যায় আক্রান্ত হবেন। অনেক মানুষ আছেন যার হয়ত সামান্য একটা সমস্যা ছিল। কিন্তু নানান কবিরাজের কাছে দৌড়াতে দৌড়াতে সেই সামান্য সমস্যাকে ভয়াবহ আকারে নিয়ে গিয়েছেন।
২) মেম্বাররা প্রায়ই বলেন, অমুক কবিরাজের কাছে গিয়েছিলাম, তাবিজ দিয়েছিল, এরপর এক মাস ভাল ছিলাম। এরপর আবার এই সমস্যা, ঐ সমস্যা শুরু হয়েছে। আসল কথা হল, শয়তানের একটা কাজ করে দিয়েছেন আপনি তাই একমাস আপনাকে বিরক্ত করেনি। একমাস পরে আবার শয়তানি করবে যেন আমি আবার নতুন করে কোন শয়তানি কুফরীতে লিপ্ত হন। প্রতিবার বড় থেকে বড় গোনাহে আপনি লিপ্ত হয়ে যাবেন। ক্ষুধার্থ কুকুরের মত। মাংস দিবেন, পেট ভরবে, চুপ থাকবে। হজম হয়ে গেলেই আবার ঘেঊ ঘেউ শুরু করবে।
৩) কবিরাজের/হুজুরের দেয়া তাবিজ কিছুদিন পর পর হারিয়ে যায়। ঘটনা একই আপনাকে আবার তাবিজ/টোটকা নিতে হবে। আবারও কোন গোনাহ করতে দিতে হবে।
৪) কেউ কেউ বলে জ্বিন নাকি নিজেই খেদমত করে। ডাহা মিথ্যে কথা। প্রথম দিকে হয়ত ছোট ছোট সমস্যার ব্যাপারে সহায়তা করে আপনার বিশ্বস্ততা অর্জন করতে চাইবে। পরে আপনাকে ঈমানহারা করে ফেলবে। আর পাশাপাশি ভয়ভীতি দেখাবে। আপনিও দেখবেন অমুক কাজ হয়েছে, তমুক কাজ হয়েছে এখন কথা না শুনলে না জানি আমার কি ক্ষতি করে। আমার ফ্যামিলির কি ক্ষতি করে! এ এক ভয়াবহ দুষ্টচক্র।
৫) ঈমানের ন্যুনতম নূর যার অন্তরে আছে তার কাছে কুফরী করা, শিরক করা কবিরাজ/হুজুর/যাদুকরের কাছে গেলেই মনেহবে "আমি ভুল কিছু করলাম নাতো"। মনে অশান্তি, খচখচানি থাকবে সারাজীবন।
অথচ রুকইয়াহ! কুরআনী চিকিৎসা, হাদিসের দোয়া নির্ভর চিকিৎসা। গোপনীয় কোন কিছু নেই। এমন না আমরা গ্রুপে এককথা বলি আর ইনবক্সে অন্য কথা বলি। যারা আমাদের ইনবক্স করেছেন তারা ভাল করেই জানেন কি অবস্থা। এখনো মনে হয় একেক জন্য এডমিনের ৩-৪ শ' মেসেজ রিকুয়েস্ট ঝুলে আছে।
এগুলো ঝুলেই থাকবে।
আপনি নিজেই করেন নিজের চিকিৎসা। কারও কাছে যেতে হবে না। আপনার জ্বিন সংক্রান্ত সমস্যা হলে আপনার বাবা, মা, ভাই, বোন, যেকাউকে (যার কুরআন তেলাওয়াত শুদ্ধ আছে) বলেন আপনাকে রুকইয়াহ করতে। চার আনা পয়সাও আপনাকে খরচ করতে হবে না। রুকইয়াহ ইনডেক্সে (bit.ly/ruqyahindex) সবই আছে। তবুও যদি আমাদের পরামর্শ চান তাহলে গ্রুপে ( facebook.com/groups/ruqyahbd ) তে পোস্ট করেন। একটা পয়সাও আমাদের দিতে হবে না। শুধু একটু ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে।
এরপরও যারা "বিচার মানি তালগাছ আমার" টাইপ তাদের জন্য আল্লাহর কাছে দু'আ। আল্লাহ যেন তাদের হেদায়াত দান করেন।

 

 

৬। আল্লাহর উপর ভরসা রেখে রুকইয়া চালিয়ে যাবেন। পরিপূর্ণ সুস্থ হওয়া পর্যন্ত রুকইয়া করবেন। রুকইয়া কতদিন করলে সুস্থ হবেন? আল্লাহ যেদিন চান সেদিন আপনি সুস্থ হয়ে যাবেন, দিনক্ষণ হিসেব করে বলা যাচ্ছেনা। যাদের সমস্যা একটু বেশি তাদের উচিত নিয়মিত রুকইয়াতে দৃঢ় থাকা।
আল্লাহ আপনাদের রুকইয়াহ সফল করুন এবং যাবতীয় রোগব্যধি থেকে শিফা করুন।
 
 
 
 
পুরো লেখাটা মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। একবার না বুঝলে কয়েকবার পড়ুন। আল্লাহ চায়তো এরপর নিজেই সিহরের রুকইয়াহ করতে পারবেন। কাউকে জিজ্ঞেস করতে হবে না, বরং অন্যদেরও পরামর্শ দিতে পারবেন। তবে আপনার অভিজ্ঞতা আমাদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
আল্লাহ আপনাকে এমন আরোগ্য দান করুন যাতে আর কোন রোগ বাকি না থাকে। আমিন
 
 
 
 
[সেলফ রুকইয়াহ গাইড-৩]

বাচ্চাদের সমস্যা ও করনীয়

-----------
[ক]
বাচ্চা কারা?
- জন্মের পর থেকে এখনো বালেগ হয়নি যারা তারাই বাচ্চা।
বাচ্চাদের সমস্যাগুলোঃ
১। খাওয়া-দাওয়া করতে চায় না।
২। রাগ-জিদ বেশি।
৩। কথা শোনে না, বেয়াদব।
৪। পড়াশুনা করতে চায় না।
৫। টিভি, কার্টুন, মোবাইল, গেম নিয়ে সারাদিন পড়ে থাকে।
৬। বয়সের তুলনায় কথা বলতে পারে না।
৭। বয়সের তুলনায় বুঝে কম।
৮। খাওয়া-দাওয়া ঠিক থাকার পরেও স্বাস্থ্য খারাপ
৯। কথা বেশি বলে কিন্তু কখন কি বলতে হবে বুঝে না।
১০। মারামারি করে
১১। বড় হয়েছে, তারপরও ঘুমালে বিছানা নষ্ট করে
১২। দুধের বাচ্চা মায়ের বুকের দুধ খেতে চায় না। মুখের কাছে নিলে ঠেলে সরিয়ে দেয়, কাঁদে।
১৩। রাতে ঘুমের মধ্যে ছটফট করে, চিৎকার দিয়ে জেগে উঠে কাঁদতে থাকে।
১৪। অকারনেই ভয় পায়, কিছু একটা দেখে ও সেদিকে ইশারা করে, তাকিয়ে থাকে।
১৫। সময় সময় চেহাড়ার রঙ পরিবর্তন হয়ে যায়, চেনা যায় না।
১৬। রেগে গেলে শরীরে অস্বাভাবিক শক্তি চলে আসে যা বয়সের সাথে মানানসই নয়।
১৭। অটিজমে আক্রান্ত।
[খ]
বাচ্চাদের মোটামুটিভাবে এই সমস্যাগুলোই হয়। এখন কথা হল, ১ থেকে ৭ নং সমস্যাগুলো বেশ কমন সমস্যা। জাতীয় সমস্যা টাইপ। যেসব বাচ্চাদের কেবল এই সমস্যাগুলোই আছে তাদের অভিভাবকদের জন্য পরামর্শ হল, বাচ্চাদের অধিক সময় দিন। বাবা-মার মনোযোগ আকর্ষন করার জন্য বাচ্চারা রাগ জিদ করে। কাজেই তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। সে যেটা চাইছে সেটা যদি তার জন্য ভাল না হয় তাহলে তাকে বুঝিয়ে বলুন। বার বার বুঝিয়ে বলুন। তারপরও মানতে না চাইলে তার মনোযোগ অন্য কোনদিকে ঘুড়িয়ে দিন। তার জিদের কাছে যদি হার মানেন তাহলে সে নিজের চাহিদা পূরণের জন্য বার বার জিদ করবে। যেটা তার জন্য ক্ষতিকর সেটা তাকে কখনই দিবেন না, সে যতই জিদ করুক। কাঁদতে কাঁদতে বমি করে দিলেও না।
খাবারে বৈচিত্র আনতে হবে। ফল খেতে চায় না? জুস করে দিন। ভাত খেতে চায় না? তাকে নিজে নিজে খেতে দিন। ছড়িয়ে ছিটিয়ে খেলেও খেতে দিন। বিকল্প পুষ্টিকর খাবার খেতে দিতে পারেন। ছাতু, আখের গুড় খেতে দিতে পারেন। বাইরের খাবার পছন্দ করলে সেগুলো ঘরেই বানিয়ে দিন। এভাবে বিভিন্ন কিছু চিন্তা করতে পারেন। এভাবে বাকি পয়েন্টগুলো নিয়েও চিন্তা-ভাবনা করে দেখতে পারেন।
[গ]
কিন্তু এই সমস্যাগুলোই যদি হঠাৎ করে দেখা দেয় তবে নজরের রুকইয়াহ করা উচিত। আর পরের সমস্যাগুলো যদি কোন বাচ্চার দেখা দেয় তাহলে নজরের রুকইয়াহ করবেন। ইনশাআল্লাহ উপকার পাবেন। তবে রুকইয়াহ প্রসঙ্গে যাবার আগে আরও দুই-একটা কথা বলি।
আক্বিকাঃ অনেক অভিভাবক আছেন বাচ্চার হবার পর আক্বিকা দিতে দেরি করেন। এটা মোটেও ঠিক না। বরং গর্ভাবস্থার জটিলতার জন্য আমরা যেভাবে প্রস্তুতি নেই বাচ্চার আক্বিকার জন্যও সেভাবে প্রস্তুতি থাকা উচিত। এতে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ হল। কেউ কেউ আক্বিকাকে সন্তানের দীর্ঘায়ু ও সুস্থতার জন্য সহায়কও বলেছেন। হাদিসের ভাবার্থ অনুযায়ী শিশুর হিফাজতের জন্য আকিকার গুরুত্ব রয়েছে।
মায়ের সমস্যাঃ বিশেষত ছোট বাচ্চার জন্য ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে মায়ের সমস্যা বাচ্চাকে প্রভাবিত করে। যেমন, বুকের দুধ খাওয়া বাচ্চার স্বাস্থ্য অনেক সময় মায়ের খাদ্যাভ্যাসের উপর নির্ভর করে। মার পেটে সমস্যা হলে বাচ্চারও হয়। একইভাবে, মায়ের যদি বদনজর, জ্বিন, যাদু সংক্রান্ত সমস্যা থাকে তাহলে তা বাচ্চাকে প্রভাবিত করতে পারে। কাজেই বাচ্চার রুকইয়াহ করার সাথে সাথে অভিভাবকদের নিজেদের সমস্যার ব্যাপারেও চিন্তা-ভাবনা করা উচিত।
কৃমিঃ বাচ্চার স্বাস্থ্য না বাড়ার অন্যতম কারন এটি। কাজেই ডাক্তারের পরামর্শে সময় সময় মা এবং বাচ্চা দুজনেরইর কৃমি ওষুধ খাওয়া উচিত।
তাবিজঃ অনেক গর্ভবতী মা ইচ্ছায় হোক বা চাপে পড়ে হোক গর্ভাবস্থায় তাবিজ ব্যবহার করে থাকেন। তাদেরকে বলা হয় এই তাবিজ হল বাচ্চার যেন কোন ক্ষতি না হয় তার তাবিজ। অনেকটা বাচ্চার জন্য আল্লাহ তায়ালা যথেষ্ঠ নন। (নাউযুবিল্লাহ) জন্মের আগেই বাচ্চার পিছনে শয়তান লাগানোর অনেক বড় একটা ষড়যন্ত্র এই তাবিজ। দেখা যায়, একজন মা কোন ধরনের প্যারানরমাল সমস্যায় আক্রান্ত ছিলেন না। কিন্তু এসব কুফরী/শিরকি তাবিজের প্রভাবে তিনি এবং তার সন্তান নানা ধরনের জটিলতায় আক্রান্ত হচ্ছেন। কাজেই রুকইয়াহ করার আগে তাবিজ অবশ্যই নষ্ট করে ফেলতে হবে। বিস্তারিত নিচের লিংকেঃ
 
 
যাদুর জিনিস বা তাবিজ নষ্ট করার নিয়ম
সন্দেহজনক কিছু বা কোন তাবিজ যদি পাওয়া যায় সেটা নষ্ট করার জন্য একটি পাত্রে পানি নিন। এরপর সেই পানিতে
১। সুরা আ'রাফ ১১৭-১২২ নং আয়াত
وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ مُوسَىٰ أَنْ أَلْقِ عَصَاكَ ۖ فَإِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُونَ - فَوَقَعَ الْحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ - فَغُلِبُوا هُنَالِكَ وَانقَلَبُوا صَاغِرِينَ - وَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سَاجِدِينَ -قَالُوا آمَنَّا بِرَبِّ الْعَالَمِينَ - رَبِّ مُوسَىٰ وَهَارُونَ -
২। ইউনুস ৮১-৮২ নং আয়াত
فَلَمَّا أَلْقَوْا قَالَ مُوسَىٰ مَا جِئْتُم بِهِ السِّحْرُ ۖ إِنَّ اللَّهَ سَيُبْطِلُهُ ۖ إِنَّ اللَّهَ لَا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِينَ - وَيُحِقُّ اللَّهُ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُونَ -
৩। সুরা ত্বহা ৬৯ নং আয়াত
وَأَلْقِ مَا فِي يَمِينِكَ تَلْقَفْ مَا صَنَعُوا ۖ إِنَّمَا صَنَعُوا كَيْدُ سَاحِرٍ ۖ وَلَا يُفْلِحُ السَّاحِرُ حَيْثُ أَتَىٰ -
৪। সূরা ফালাক্ব ৩ বার
৫। সূরা নাস ৩ বার
পড়ে ফুঁ দিন। সেই পানিতে তাবিজের কাগজ কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখুন। ইনশাআল্লহ যাদু নষ্ট হয়ে যাবে। এরপর সেগুলো পুড়িয়ে ফেলুন বা অন্য কোন ভাবে নষ্ট করে ফেলুন।
আর ব্যবহৃত পানি মানুষের যাতায়াতের রাস্তা থেকে দূরে কোথাও ফেলে দিতে হবে।
 
 
 
[ঙ]
এবার রুকইয়াহ নিয়ে কথা বলি।
প্রথম ধাপঃ
বাচ্চাদের রুকইয়াহ করার জন্য প্রথমে যে কাজটা করবেন তা হল ঘরের সবার অযুর ব্যবহার করা পানি একটি পাত্রে জমা করবেন। তারপর গোসলের আগে সেই পানি বাচ্চার গায়ে ঢেলে দিবেন। এরপর ইচ্ছামত যেভাবে গোসল করানোর করবেন। বাচ্চাদের অনেকসময় ঘরের লোকদেরই নজর লাগে। তাই এই ব্যবস্থা। আর যদি জানা থাকে বা অনুমান করতে পারে বাচ্চার ওপর কার নজর লেগেছে, তাহলে শুধু তার অযুর পানি নিবেন। এই পদ্ধতি একবার করাই যথেষ্ঠ হবে ইনশাআল্লাহ।
দ্বিতীয় ধাপঃ
প্রথম ধাপ পার করার পরও যদি তেমন উন্নতি চোখে না পড়ে তাহলে এই পদ্ধতি অনুসরন করতে পারেন। বাবুর মাথায় হাত রেখে এই দুয়াগুলো পড়বেন এবং মাঝেমাঝে বাবুর গায়ে ফুঁ দিবেন, এভাবে কয়েকবার করবেন। বাবু যদি নিজেই পড়তে পারে তাহলে নিজের মাথায় বা বুকে হাত রেখেই পড়বে। অথবা পড়ার পর দু'হাতের তালুতে ফুঁ দিয়ে পুরো শরীরে হাত বুলিয়ে নিলেও হবে।
১.
أُعِيْذُكُمْ بِكَلِمَاتِ اللّٰهِ التَّامَّةِ ، مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ
উ"ঈযুকুম বিকালিমা-তিল্লা-হিত্তা-ম্মাহ। মিং কুল্লি শাইত্বা-নিও- ওয়াহা-ম্মাহ। ওয়ামিং কুল্লি "আঈনিল্লা-ম্মাহ।
২.
بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللَّهُ يَشْفِيكَ، بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ
বিসমিল্লা-হি আরকীক। মিং কুল্লি শাইয়িই ইউ'যীক। মিং শাররি কুল্লি নাফসিন আও "আইনি হাসিদ। আল্লা-হু ইয়াশফীক। বিসমিল্লা-হি আরকীক।
৩.
بِاسْمِ اللَّهِ يُبْرِيكَ، وَمِنْ كُلِّ دَاءٍ يَشْفِيكَ، وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ، وَشَرِّ كُلِّ ذِي عَيْنٍ
বিসমিল্লা-হি ইউবরীক। ওয়ামিং কুল্লি দা-ঈই ইয়াশফীক। ওয়ামিং শাররি হাসিদিন ইযা- হাসাদ। ওয়া শাররি কুল্লি যী "আঈন ।
৪.
اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبْ الْبَاسَ، اشْفِ وَأَنْتَ الشَّافِي لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا
আল্লা-হুম্মা রাব্বান না-স। আযহিবিল বা'স । ইশফি ওয়াআংতাশ শা-ফী। লা-শিফাআ ইল্লা-শিফাউক। শিফাআল লা-ইউগা-দিরু সাক্বামা-।
এরপর সুরা ফাতিহা এবং আয়াতুল কুরসি ১বার। এবং সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস ৩ বার পড়বেন এরপর বাবুকে ফুঁ দিবেন। চাইলে সুরা ফালাক নাস অনেকবার পুনরাবৃত্তি করতে পারেন। এটা আম রুকইয়াহ। সবধরনের সমস্যার ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি উপকারী।
তৃতীয় ধাপঃ
সমস্যা বেশি হলে উল্লেখিত পদ্ধতিতে রুকইয়া করা শেষে, এগুলো আরেকবার পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে প্রতিদিন কয়েকবার বাবুকে খাওয়াবেন এবং বালতির পানিতে ফু দিয়ে সেই পানি দিয়ে গোসল করাবেন। তবে বাথরুমে বসে এসব দোয়া/আয়াত পড়বেন না। বালতি বাইরে নিয়ে এসে পড়বেন। সমস্যা ভালো হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন করবেন এই দুটো কাজ। এছাড়া কোন অঙ্গে ব্যাথা থাকলে এসব দোয়া-কালাম পড়ে তেলে ফুঁ দিয়ে প্রতিদিন মালিশ করতে পারেন।
উল্লেখিত সবগুলো দোয়া রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত হাদিস থেকে নেয়া।
[চ]
রুকইয়াহর ইফেক্টঃ
বাবুর রুকইয়াহ করলে অনেক সময় সাথে সাথে টয়লেট হতে পারে, বমি হতে পারে। এমন হলে ইনশাআল্লাহ দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে। আবার অনেক সময় জ্বর, সর্দি ইত্যাদি হতে পারে। মোট কথা রুকইয়াহ করার পর যদি কোন অবস্থার অবনতি হয় তাহলে বুঝতে হবে রুকইয়াহ কাজ করা শুরু করেছে। তখন আরও ধৈর্য্যের সাথে যত্ন নিয়ে রুকইয়াহ চালিয়ে যেতে হবে পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। এভাবে কমপক্ষে ৭ দিন করা উচিত (দ্বিতীয় ও তৃতীয় নিয়মের রুকইয়ার ক্ষেত্রে) ।
নোটঃ
১) যদি বুঝতে না পারেন বদনজরের সমস্যা কিনা তবুও বদনজরের রুকইয়াহ করতে পারেন। এর কোন ক্ষতি নেই। যদি নজর সংক্রান্ত কোন সমস্যা থাকে তাহলে ইনশাআল্লাহ চলে যাবে। আর যদি না থাকে তাহলেতো নেই-ই। এর কোন সাইড ইফেক্ট নেই।
২) অন্যান্য রোগের জন্যও এই নিয়মে রুকইয়া করতে পারেন, ইনশাআল্লাহ উপকারী হবে।
৩) ডাক্তারী সমস্যার জন্য অবশ্যই এর পাশাপাশি ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
[ছ]
বয়স হয়ে যাবার পরেও যারা বিছানা নষ্ট করেঃ
তাদের ক্ষেত্রে পরামর্শ হল, রাতে বিছানায় যাবার কমপক্ষে এক ঘন্টা আগে রাতে খাবার শেষ করবেন। এরপর বিছানায় যাবার আগে টয়লেট সেরে অযু করাবেন। এরপর নিচের লিংকে দেয়া ঘুমের আগের আমলগুলো করাবেন। যারা নিজেরা পড়তে পারে না তাদেরকে অন্য কেউ পড়ে ফু দিবে। একইভাবে সকালে ও সন্ধ্যায় উল্লেখিত দোয়াগুলো পড়ে ফু দিবে। ইনশাআল্লাহ ধীরে ধীরে সমস্যা চলে যাবে।
 
 

যাদু এবং অন্যান্য ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায়

-------------------------------
ক. বিসমিল্লাহ্‌! …যারা যাদু আক্রান্ত হয়েছেন তাঁরা তো বটেই, তাঁদের সাথে আমাদের সবারই যাদু এবং জ্বিন-শয়তানের ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিখিয়ে দেয়া আমলগুলো যত্নসহকারে করা উচিত। এগুলোকে মাসনুন আমল অর্থাৎ সুন্নাহসম্মত আমল বলে। এসবের অসাধারণ সব উপকারিতার পাশাপাশি বড় যে লাভ রয়েছে, তা হচ্ছে আল্লাহর ওপর তাওয়াককুল বাড়ে।
সব সুন্নাতই গুরুত্বপূর্ণ, আর সারাদিনের; বিশেষত সকাল-সন্ধ্যার ফযিলতপূর্ণ অনেক দুয়া ও যিকর হাদিসে আছে, সবকিছু বিস্তারিত এখানে উল্লেখ করা তো সম্ভব না। আর সবসময় সবগুলোর ওপর আমলও সম্ভব না। তাই আমরা এখানে অল্প কিছু মাসনুন দোয়া এবং আমল নিয়ে আলোচনা করবো। আল্লাহ আমাদের এসবের প্রতি যত্নবান হবার তাওফিক দেন। আমিন...
সংযুক্তি-
➫ প্রতিদিনের মাসনুন আমলগুলো করার সুবিধার্থে এই প্রবন্ধের দোয়াগুলোর সাথে অতিরিক্ত আরও অনেক দোয়াসহ একটি অ্যা‌ন্ড্রয়েড অ্যাপ বানানো হয়েছে। যা পাওয়া যাবে এই লিংকে- http://bitly.com/masnun-app
➫ অ্যাপের ওয়েব সংস্করণ আছে এই লিংকে- http://ruqyahbd.org/dua
⋆ আরেকটা কথা, আরবি দোয়া অথবা কোরআনের আয়াতের উচ্চারণ বাংলায় আমরা অপছন্দ করি! কিন্তু অতীতে এই ধরনের পোস্টে অনেকেই উচ্চারণ চেয়ে পীড়াপীড়ি করেছে, তাই কয়েকটার উচ্চারণ লিখে দিলাম।
.

খ. সকাল-সন্ধ্যার আমল

১. আ’উযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত্তা-ম্মা-তি, মিং-শাররি মা-খলাক্ব।
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ
সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার পড়া। বিষ, যাদু এবং অন্যান্য ক্ষতি থেকে বাঁচতে। (জামে তিরমিযী, ৩৫৫৯)
.
২. বিসমিল্লা-হিল্লাযী লা-ইয়াদ্বুররু মা‘আসমিহী, শাইউং ফিলআরদ্বী ওয়ালা- ফিসসামা-ই, ওয়াহুওয়াস সামি’উল ‘আলীম।
بِسْمِ اللهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ العَلِيمُ
সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার পড়া। সব ধরনের ক্ষতি এবং বিপদ-আপদ থেকে নিরাপদ থাকতে..। (জামে তিরমিযী, ৩৩৩৫)
.
৩. জিন-শয়তানের ক্ষতি থেকে বাঁচতে সকাল সন্ধ্যায় আয়াতুল কুরসি (সুরা বাকারা ২৫৫নং আয়াত) পড়া। (হাকিম ১/৫৬২)
.
৪. সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস: প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার করে পড়া। সব ধরনের অনিষ্ট থেকে বাঁচতে এটা রাসুল স. এর শিখানো আমল। (সুনানে আবি দাউদ)
.
৫. লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা-শারীকালাহ, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হ্ামদ, ওয়াহুওয়া 'আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর
لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ ، وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ ، لَهُ الْمُلْكُ ، وَلَهُ الْحَمْدُ ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
প্রতিদিন সকালে ১০০বার পড়া। এর অনেক বেশি ফজিলত, এবং জ্বিন-শয়তানের ক্ষতি থেকে বাঁচতে এটা পরিক্ষিত আমল। (বুখারি, মুসলিম হাদিস নং ৪৮৫৭) একশতবার না পারলে, অন্তত ফজর ও আসরের পর ১০বার করে পড়া। (আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ)
.
৬. সুরা তাওবাহ ১২৯ নং আয়াতের অংশ-
حَسْبِيَ اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ، عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ
যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় সাতবার এটি পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তাঁর জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবেন। (সুনানে আবি দাউদ)
.

গ. ঘুমের আগের আমল

১. ওযু করে ঘুমানো, তাহলে ফিরিশতারা হিফাজতের জন্য দুয়া করতে থাকে। ডান কাত হয়ে ঘুমানো। এমনিতেও সর্বদা ওযু অবস্থায় থাকা সুন্নাত। (মু’জামুল আওসাত; সনদ হাসান-জায়্যিদ)
২. শোয়ার পূর্বে কোন কাপড় বা ঝাড়ু দিয়ে বিছানা ঝেড়ে নেয়া। (মুসলিম)
৩. আয়াতুল কুরসি পড়া। (বুখারী) সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়া। (বুখারী)
৪. সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস পড়ে হাতের তালুতে ফু দেয়া, এরপর পুরো শরীরে হাত বুলিয়ে নেয়া। (বুখারী)
.

ঘ. অন্যান্য সময়ের আমল

১. বিসমিল্লাহ্‌ বলে দরজা-জানালা লাগানো। ঘরে প্রবেশ করতে এবং খাওয়ার আগে বিসমিল্লাহ্‌ বলা।
.
২. সম্ভব হলে মদিনার আজওয়া খেজুরের ব্যবস্থা করা, না হয় যে কোন আজওয়া খেজুরেও হবে। রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সাতটি আজওয়া খেজুর সকাল বেলায় আহার করবে সেদিন তাকে কোন বিষ ও যাদু ক্ষতি করতে পারবে না। (বুখারী)
.
৩. টয়লেটে ঢুকার পূর্বে দোয়া পড়া-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ الْخُبْثِ وَالْخَبَائِثِ
আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ’উযুবিকা, মিনাল খুবসি ওয়াল খবা-ইছ।
অর্থ: হে আল্লাহ আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি খারাপ পুরুষ ও মহিলা জ্বিন থেকে। (সহীহ মুসলিম, ৩৭৫)
.
৪. বিয়ের প্রথম রাতে স্ত্রীর কাছে গিয়ে পড়া [*]
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا وَخَيْرَ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ
[⋆] এবিষয়ে প্রচলিত একটি ভুল ধারণা হচ্ছে, অনেকে এটি স্ত্রীর মাথায় হাত রেখেই পড়তে হবে। কিছু হাদিসে মাথায় হাত রেখে পড়ার কথা থাকলেও, প্রসিদ্ধ হাদিসগুলোতে কিন্তু স্ত্রীর কাছে গিয়ে শুধু পড়ার কথা আছে। (সুনানে আবি দাউদ ২২৪৩ এবং ইবনে মাযাহ ১৯০৮ দ্রষ্টব্য)
.
৫. স্ত্রী সহবাসের পূর্বে দোয়া পড়া।
بِسْمِ اللَّهِ، اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ، وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا
বিসমিল্লাহি আল্লা-হুম্মা জান্নিবনাশ শাইত্বা-না, ওয়া জান্নিবিশ্-শাইত্বানা মা-রযাকতানা। (বুখারী, ৪৮৭০)
.
৬. দৈনিক একবার হলেও মসজিদে প্রবেশের দোয়া পড়া
أَعُوذُ بِاللَّهِ الْعَظِيمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيْمِ مِنْ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: মসজিদে প্রবেশের সময় কেউ এটা পড়লে শয়তান বলে, এই ব্যক্তি আজ সারাদিনের জন্য আমার থেকে রক্ষা পেয়ে গেল। (সুনানে আবি দাউদ, ৩৯৩)
.
7. ঘুমের সময় ভয় পেলে বা অন্যসময় খারাপ অনুভূতি হলে এই দোয়াটি পড়া
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ الله التَّامَّاتِ مِنْ غَضَبِهِ وَعِقَابِهِ وشَرّ عِبَادِهِ ، ومِنْ هَمَزَاتِ الشّيَاطِينِ وأَنْ يَحْضُرُونِ
উচ্চারণঃ আ‘ঊযু বিকালিমা-তিল্লাহিত্তা-ম্মাতি মিন্ গাদ্বাবিহি ওয়া ইক্বা-বিহি ওয়া শাররি ‘ইবা-দিহি ওয়ামিন হামাযা-তিশ্শায়া-ত্বীনি ওয়া আন ইয়াহ্দুরূন।
(আবু দাউদ ৩৮৯৩)
...
এগুলো সব ঠিকমত অনুসরণ করুন, ইনশাআল্লাহ্‌ জাদু, জিন, বদনজর, ইত্যাদি সহ সব ধরনের ক্ষতি থেকে হেফাজতে থাকবেন।

May be an image of text
 
 
 
 
[জ]
অটিজমে আক্রান্তঃ
১। প্রথমে ৭ দিন ডিটক্স করাবেন।
পাশাপাশি নিচের লিংকের বিভিন্ন কারীদের সাধারন রুকইয়াহ (১১ থেকে ২১ পর্যন্ত) থেকে যেকোন একটা শোনাতে পারেন।
একই সাথে সুরা আর-রাহমান শোনাবেন। যদি আপনি নিজে তেলাওয়াত করে শোনাতে পারেন তাহলে আরও ভাল। নাহলে অডিও ডাউনলোড করে নিন।
২। ডিটক্স শেষ হলে সাধারন অসুস্থতার রুকইয়াহ করবেন। এর নিয়ম উপরের ২ এবং ৩নং পদ্ধতির মতই। নিচের লিংকে এবিষয়ে আরও বিবরণ পাবেন। এভাবে রুকইয়াহ চালিয়ে যেতে থাকবেন। আল্লাহ চাইলে উপকার পাবেন।
 
 
[৩] সাধারণ অসুস্থতার জন্য রুকইয়াহ:
বিভিন্ন অসুখ-বিসুখের জন্য রাসুল স. থেকে অনেক দু’আ কালাম পাওয়া যায়, সেসব গুরুত্বের সাথে করা। এছাড়া কোরআন থেকে প্রসিদ্ধ কয়েকটি রুকইয়া হচ্ছে-
সুরা ফাতিহা, সুরা ফালাক, সুরা নাস, ৬টি আয়াতে শিফা (৯/১৪, ১০/৫৭, ১৬/৬৯, ১৭/৮২, ২৬/৮০, ৪১/৪৪)
১.وَيَشْفِ صُدُورَ قَوْمٍ مُّؤْمِنِينَ
২. وَشِفَاء لِّمَا فِي الصُّدُورِ
৩. يخْرُجُ مِن بُطُونِهَا شَرَابٌ مُّخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ فِيهِ شِفَاء لِلنَّاسِ
৪. وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاء وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ
৫. وَإِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِينِ
৬. قُلْ هُوَ لِلَّذِينَ آمَنُوا هُدًى وَشِفَاء
এছাড়া রুকইয়া হিসেবে রাসুল স. থেকে বর্ণিত অনেক দো’আ আছে, যেমন-
১. اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبْ الْبَاسَ اشْفِهِ وَأَنْتَ الشَّافِي لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا
২. بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ اللَّهُ يَشْفِيكَ بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ
৩. بِاسْمِ اللَّهِ يُبْرِيكَ وَمِنْ كُلِّ دَاءٍ يَشْفِيكَ وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ وَشَرِّ كُلِّ ذِي عَيْنٍ
৪. اسأل الله العظيم، رب العرش العظيم ان يشفيك
৫. بِسْمِ اللَّهِ بِسْمِ اللَّهِ بِسْمِ اللَّهِ أَعُوذُ بِعِزَّةِ اللَّهِ وَقُدْرَتِهِ مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ
এসব আয়াত এবং দোয়াগুলো ৩বার করে পড়ুন, ব্যাথার যায়গায় অথবা রুগীর মাথায় হাত রেখে পড়ুন, অথবা এসব পড়ার পর ফুঁ দিন। পানিতে ফুঁ দিয়ে পান করুন এবং অলিভ অয়েলে ফুঁ দিয়ে মালিশ করুন। পাশাপাশি শাইখ হুজাইফির রুকইয়াহ, এবং সা’দ আল গামিদির আধাঘণ্টার রুকইয়া শোনা যেতে পারে। (ডাউনলোড লিংক ruqyahbd.org/download)।
 
 
 
 
 
 
 
[ঝ]
সবশেষে একটি জরুরী কথা বলি। আপনি রুকইয়াহ করেন বা না করেন, আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দু'আ করবেন নিজের সন্তানের জন্য। নিজের কৃত পাপের জন্য তওবা ইস্তেগফার করবেন। সাধ্যমত দান-সদকা করবেন। ঘরে ইসলামী পরিবেশ কায়েক করবেন আর নামায ও পর্দার দিকে বিশেষ মনোযোগ দিবেন। ইনশাআল্লাহ অনেক বিপদ-আপদ, রোগবালাই থেকে বেচে যাবেন।
 
 
 
 
 
 
 
[সেলফ রুকইয়াহ গাইড-৪]

সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটানোর যাদুর চিকিৎসার রুকইয়াহ

------------------
[ক]
পৃথিবীতে প্রচলিত যাদুগুলর মধ্যে এই যাদুটি অনেক পুরাতন। এমনকি আল-কুরআনে ব্যাবিলনীয় সভ্যতার যুগে লোকেরা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটাতে এই যাদু শিক্ষা করত বলে বর্ণিত আছে। [সুরা বাকারা-১০২]
যদিও স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক নষ্ট করতে এই যাদু সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়, তবে অন্যান্য সম্পর্ক নষ্ট করার জন্যও এই যাদু করা হতে পারে। আলোচনার সুবিধার্থে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের কথা বলা হল।
এই যাদুতে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষনঃ
১. স্বামী বাহিরে থাকলে দু'জন ভালো থাকে, বাড়িতে আসলেই দু'জন বা একজনের মন-মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।
২. দু'জনের কেউ খুব বেশি সন্দেহপ্রবন হয়ে যায়।
৩. ছোট ছোট বিষয়ে ছাড় দিতে চায়না, ঝগড়া বেধে যায়।
৪. স্ত্রী দেখতে যেমনই হোক, স্বামীর কাছে খারাপ লাগে, ভালো আচরণ করলেও ভালো লাগেনা।
৫. স্বামী কোন জায়গায় বসেছে বা একটা জিনিশ ব্যবহার করেছে -এটাও স্ত্রী অপছন্দ করে।
৬. অন্যদের সাথে আচরণ স্বাভাবিক কিন্তু স্বামী-স্ত্রী কথা বার্তা বলতে গেলেই ঝগড়া শুরু হয়ে যায়।
এখন কথা হল, এসব যদি কদাচিৎ ঘটে থাকে তাহলে চিন্তার কিছু নেই ইনশাআল্লাহ। কিন্তু যদি প্রায়ই এমন হয় তাহলে খতিয়ে দেখা উচিত সমস্যা যাদুর জন্য হচ্ছে কিনা। তবে প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই সব লক্ষণ মিলবে তেমন না! তবে সমস্যা থাকলে অন্তত ২-৩টা মিলে যাওয়ার কথা।
বিশেষভাবে লক্ষনীয়ঃ
এই যাদু অনেক সময়েই জিনের সাহায্য নিয়ে করে, তাই কারও কারও ক্ষেত্রে সরাসরি রুকইয়াহ করানোর প্রয়োজন হতে পারে। যদি জ্বিনের লক্ষনের মধ্যে ৫-৬ টি মিলে যায় অথবা যদি প্রয়োজন মনে করেন তাহলে সেলফ রুকইয়াহ করতে করতে যেকোন সময় আপনি সরাসরি রুকইয়াহ কাউকে দিয়ে করাতে পারবেন। সরাসরি রুকইয়াহ মানে হল কেউ একজন আপনার উপর কুরআন তেলাওয়াত করবেন। যদি জ্বিন হাজির হয় তাহলে বুঝিয়ে শুনিয়ে জ্বিন বিদায় করবেন। এবিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা জিন সিরিজে বা রুকইয়াহ বইয়ের জিনের স্পর্শ অধ্যায়ে পাবেন (বিশেষ করে জিনের আসর বিষয় সিরিজের ৪ থেকে ৮ পর্ব) জিন সিরিজের লিংক:
তবে আপনি সেই অপেক্ষায় বসে না থেকে আল্লাহর ওপর ভরসা করে সেলফ রুকইয়াহ শুরু করে দিলেই সবচেয়ে ভালো হবে।
[খ]
বিচ্ছেদের যাদুর জন্য সেলফ রুকইয়া:
১। তাবিজ বা কোন কবিরাজি জিনিস থাকলে সবার আগে নিচের নিয়মে নষ্ট করে নিবেন। তাবিজ ব্যবহার করার জন্য তওবা করবেন।
 
 
 
যাদুর জিনিস বা তাবিজ নষ্ট করার নিয়মঃ
-----------
সন্দেহজনক কিছু বা কোন তাবিজ যদি পাওয়া যায় তাহলে সেটা নষ্ট করার জন্য একটি পাত্রে পানি নিন। তারপর সেই পানিতে সুরা আ’রাফ ১১৭-১২২ নং আয়াত, ইউনুস ৮১-৮২, সুরা ত্বহা ৬৯, সূরা ফালাক্ব ৩ বার, সূরা নাস ৩ বার পড়ে ফুঁ দিন।
লক্ষণীয়ঃ
১। তাবিজ,পুতুল,কাগজ,যাদুকরের দেয়া যেকোনকিছু উপরের আয়াতগুলো পড়া পানিতে ডুবিয়ে রাখবেন কিছুক্ষণ। কাগজে লেখা থাকলে সেটা ঘষে মুছে ফেলার চেষ্টা করবেন। লেখা মুছার পরে ছিড়ে অনেকগুলো টুকরো করবেন। তারপর শুকিয়ে পুড়িয়ে ফেলবেন। পুড়ানোর সময়ে নিশ্বাসের সাথে সেটার ধোঁয়া নেয়া থেকে বিরত থাকবেন।
২। তাবিজ খালি হাতে না ধরে গ্লাভস ব্যবহার করতে পারেন। তাবিজ ধরার পূর্বে এবং নষ্ট করার পুরোটা সময়ে ফালাক, নাস পড়বেন।
৩। তামা বা অন্য ধাতুর তাবিজ বা আংটিতে খোদাই করা লেখা থাকলে লেখাটা ঘষে মুছে ফেলবেন। ঘষে মুছতে না পারলে পুড়িয়ে হলেও লেখাটা মুছে ফেলা জরুরী। নিজে করতে না পারলে কোন স্বর্ণকারের কাছে গিয়ে লেখাটা মুছে ফেলবেন।
৪। তাবিজে গিট দেয়া থাকলে সাবধানে প্রতিটা গিট খুলবেন। কোন পুতুল, মূর্তি, পাখি, মাছ ইত্যাদি পাওয়া গেলে সাবধানে খেয়াল করবেন এদের গায়ে কোন পিন আছে কিনা। থাকলে প্রতিটা পিন খুলবেন। পিনগুলোও পানিতে ডুবিয়ে রাখবেন। জীবন্ত কোনকিছু যেমন- পাখি পাওয়া গেলে তার ডানার নিচে এবং শরীরের প্রতিটা জায়গায় খুঁজে দেখবেন কোন তাবিজ,পিন বা সন্দেহজনক কিছু আছে কিনা। থাকলে এগুলো সাবধানে খুলে নিয়ে পাখিকে তাবিজ নষ্টের পানি দিয়ে ভিজিয়ে ছেড়ে দিবেন। তাবিজের ভেতরে কাগজ ছাড়াও অন্যকিছু থাকতে পারে। তাবিজ খুলতে গেলে অনেক সময় খোলস ভেঙ্গে বের করা লাগতে পারে। যাই থাকুক, ভাঙ্গা টুকরোসহ সবটুকুই পানিতে ঢালবেন। একইভাবে যাদুকরের দেয়া তেলপড়া,পানিপড়া ইত্যাদি জিনিসপত্র পানিতে ঢালবেন।
৫। ব্যবহৃত পানি ফেলার জন্য এবং তাবিজ পুড়ানোর জন্য, সাধারনত মানুষের যাতায়াত হয়না এমন কোন জায়গা ঠিক করে নিন।
৬। কোন জায়গায় তাবিজ রাখা আছে সন্দেহ হলে সেখানে পরপর তিনদিন তাবিজ নষ্টের পানিটা ছিটিয়ে দিন। কারো বাসার দেয়ালে,ফ্লোরে অথবা যেকোন স্থানে তাবিজ আঁকা অথবা খোদাই করা থাকলে লেখাটা ঘষে মুছতে হবে। তারপর তাবিজ নষ্টের পানিটা ওখানে ছিটিয়ে দিতে হবে। অনেক সময় বাসা বানানোর সময়ে প্রতি কোণায় তাবিজ রেখে দেয়া হয়। সেক্ষেত্রে এসব কোণায় তাবিজ নষ্টের পানিটা ছিটিয়ে দিবেন পরপর তিনদিন। আর দোয়া করবেন যেন আল্লাহ তাবিজ নষ্ট করে দেন।
৭। জ্যোতিষীর দেয়া কোন বিশেষ আংটি থাকলে তাবিজ নষ্টের পানিতে ডুবিয়ে রাখবেন। কিছুক্ষণ রেখে পাথরটা ভেঙে তারপর ফেলে দিবেন। জ্যোতিষীরা বিশ্বাস করে পাথরের ক্ষমতা আছে। তাই কোনমতেই এই পাথর রেখে দেয়া যাবেনা।
৮। আপনি তাবিজ ব্যবহার করলে উপরোক্ত নিয়ম অনুযায়ী তাবিজ নষ্ট করবেন। তারপর তাবিজ ব্যবহার করার জন্য তাওবা করবেন।
 
 
 
 
২। ভালোভাবে পাক-পবিত্র হয়ে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ুন। এরপর দু’হাত তুলে আল্লাহর কাছে আপনার সমস্যা থেকে 'পরিত্রাণের' জন্য এবং সুস্থতার জন্য দু'আ করে ইস্তিগফার, দরুদ শরিফ পড়ে রুকইয়াহ শুরু করুন। হাতের কাছে এক বোতল পানি নিয়ে বসুন। প্রথমে সিহরের রুকইয়া (ruqyahbd.org/download এখানে ৩ নাম্বারেরটা) অথবা শাইখ সুদাইসের বা অন্য কোনো ক্বারির সাধারণ রুকইয়া (ruqyahbd.org/download লিংকের ১১ থেকে ২০ মধ্যে যেকোনটা) শুনুন। আপনার যদি রুকইয়াহ সংক্রান্ত কোন সমস্যা থেকে থাকলে তাহলে কিছু ইফেক্ট হতে পারে। যেমন: অনেক ঘুম ধরবে, মাথাব্যথা করতে পারে। কিছু খাইয়ে যাদু করলে পেটব্যথা করবে, বমি বমি লাগতে পারে, হাত-পা ব্যথা করতে পারে, খুব ক্লান্ত লাগতে পারে। এরকম কিছু হলে বুঝে নিবেন সমস্যা আছে। আর উপরে তো লক্ষণ বলেছিই, যদি ২-৩টা মিলে যায়, তবে নিচের প্রেসক্রিপশন ফলো করুন।
[গ]
প্রেসক্রিপশন:
১. একটা বোতলে পানি নিয়ে "সুরা বাক্বারা ১০২, আ'রাফ ১১৭-১২২, ইউনুস ৮১-৮২, সুরা ত্বহা ৬৯" আয়াতগুলো পড়ে ফুঁ দিন। এখনি কিছুটা খেতে হবে, বাকিটা রেখে দিবে। আর এরপর এই পানি দুইবেলা কমপক্ষে আধগ্লাস করে খেতে হবে। আর প্রতিদিন গোসলের পানিতে আধ গ্লাস পানি মিশিয়ে গোসল করতে হবে।
২. সুরা ইয়াসিন, সফফাত, দুখান, জ্বিন, যিলযাল, ইখলাস, ফালাক, নাস - তেলাওয়াত করতে পারেন। উচ্চারন শুদ্ধ না হলে আট সুরার রুকইয়াহ শুনবেন প্রতিদিন তিনবার (ruqyahbd.org/download থেকে ৮ নং) কোনো দিন খুব ব্যস্ত থাকলে অন্তত একবার হলেও শুনবেন। চাইলে প্রতিদিন শোনার ক্ষেত্রে অন্য কারো হেল্প নিতে পারেন অর্থাৎ অন্য কেউ যদি আপনার সমস্যার নিয়াতে রুকইয়াহ শোনে তবুও আপনি উপকার পাবেন।
৩. তবে যদি যাদুর সাথে জ্বিনের সমস্যাও থাকে তাহলে প্রতিদিন এই আট সুরার রুকইয়াহ একবার শুনবেন এবং আয়াতুল কুরসি শুনবেন ১ থেকে দেড় ঘণ্টা।
৪. প্রতিদিন ১০০বার ইস্তিগফার এবং “লা-হাওলা ওয়ালা ক্বুওওয়াতা ইল্লা-বিল্লাহ” পড়বেন। বেশি পড়লে আরো ভালো।
৫. রুকইয়া ভালোভাবে কাজ করার জন্য গানবাজনা শোনা যাবেনা। নামাজ-কালাম ঠিকঠাক পড়তে হবে। ফরজ ইবাদাতে যেন ত্রুটি না হয়। (মেয়েদের পর্দা করাও ফরজ)
৬. ঘুমের আগে আয়াতুল কুরসি পড়বেন। আর ৩ ক্বুল তিনবার পড়ে হাতে ফুঁ দিয়ে পুরো শরীরে হাত বুলিয়ে নিবেন। ফজর এবং মাগরিবের পর ৩কুল (সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস)তিনবার করে পড়বেন।
৭. প্রতিদিন সুরা তাগাবুন তেলাওয়াত করবেন।
.৮. সকাল সন্ধ্যার মাসনুন দোয়া, বিশেষত ৩ ক্বুল এর আমল ঠিকঠাক করবেন।
মাসনুন আমল সম্পর্কে জানতেঃ    https://allzinone.blogspot.com/2021/05/blog-post_21.html
[ঘ]
গুরুত্বপূর্ণ নোট:
১। এই বিচ্ছেদের যাদু একদম ভালো হতে হতে কয়েক সপ্তাহ থেকে শুরু করে মাসখানেক, কারও ক্ষেত্রে কয়েক মাস পর্যন্ত লাগতে পারে। তখন ধৈর্যহারা হওয়া যাবেনা। সবরের সাথে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে, আপনার শত্রু আপনার ক্ষতি করলেই সফল হয়ে যায়না। সে তখনই সফল হয়, যখন আপনি সমাধানের ব্যাপারে হাল ছেড়ে দেন। শয়তান আপনাকে দিয়ে গুনাহ করালেই সফল হয়না। বরং শয়তান তখনই সফল হয়, যখন আপনি নিরাশ হয়ে তাওবা করা ছেড়ে দেন। এজন্য একবার যদি বুঝতে পারেন সমস্যা আছে, তবে এর শেষ না দেখে ছাড়বেন না, চালিয়ে যাবেন। আর সম্ভব হলে কাউকে বিষয়টা জানিয়ে রাখবেন যেন আপনি হত্যোদম হয়ে গেলে তিনি আপনাকে উৎসাহ দিতে পারেন।
২। রুকইয়া শুনতে থাকলে, সাথে পানি খেতে এবং গোসল করতে থাকলেও প্রথম ১০ থেকে ১৫ দিন সমস্যা বাড়তে পারে, এরপর আস্তে আস্তে কমতে কমতে মাসের শেষের দিকে একদম ভালো হয়ে যায়। সবার ক্ষেত্রেই এমন হয় যে তা বলছি না। তবে অনেকের ক্ষেত্রেই হয়, কাজেই সমস্যা বাড়লে রুকইয়া করা বাদ দেয়া যাবে না। প্রথম প্রথম সমস্যা বাড়তে পারে, পরে আস্তে আস্তে ভালো হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
৩। পিরিয়ড থাকলেও রুকইয়াহ করা যায়। গোসল ও খাবার পানি আগে থেকেই বেশি করে তৈরি করে রাখবেন যেন পিরিয়ড চলাকালীন পানি শেষ হয়ে না যায়। আর শেষ হয়ে গেলেও অসুবিধা নেই, অন্য কেউ তৈরি করে দিলে আপনি ব্যবহার করতে পারবেন।
৪। সেলফ রুকইয়াহ করার সময় আপনি চাইলে যেকোন একদিন বা একাধিক দিন কাউকে দিয়ে সরাসরি রুকইয়াহ করাতে পারেন। কোন অসুবিধা নেই।
অন্য কাউকে রুকইয়াহ করতে যখন বলবেন তখনও বিশেষভাবে এই কথাগুলো বলে দিবেন।
[ঙ]
সফলতাঃ
আল্লাহর রহমতে যদি আপনি থেকে মুক্তি পান তাহলে উপরোক্ত লক্ষনগুলো আপনার মধ্যে আর দেখা যাবে না। স্বামী কাছে আসতে চাইলে রাগ উঠবে না, স্ত্রীকে অসুন্দর মনে হবে না। বরং স্বাভাবিক ভালবাসা জন্ম নিবে। তখন আপনি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করবেন যে, আল্লাহ আপনাকে মুক্তি দিয়েছেন। তবে সতর্কতাস্বরুপ, সুস্থ হবার পরে আরও ৭ দিন রুকইয়াহ করবেন। এরপর আবার যেন কেউ যাদু করতে না পারে সেদিকে লক্ষ রাখবেন। কাপড়-চোপড় সাবধানে রাখবেন, যাদেরকে সন্দেহ হয় তারা কোণ খাবার দিলে খাবেন না। মাসনুন আমল প্রতিদিন করবেন। মেয়েদের ক্ষেত্রে পিরিয়ড থাকলেও করতে থাকবেন মাসনুন আমল।
আল্লাহ আপনাকে এমন আরোগ্য দান করুন যাতে আর কোন রোগ বাকি না থাকে। আমীন।
 
 
 
 
 

অন্যান্য রুকইয়াহ বিষয়ক সব একসাথে

 অন্যান্য রুকইয়াহ বিষয়ক সব একসাথে

 

 

  1. সারসংক্ষেপ রুকইয়াহ শারইয়্যাহ
  2. ৭ দিনের রুকইয়াহ ডিটক্স প্রোগ্রাম
  3. শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতার জন্য রুকইয়াহ
  4. ব্যাথার জন্য রুকইয়াহ
  5. রুকইয়ার সাইড ইফেক্ট কিভাবে সামলাবেন
  6. বাচ্চাদের রুকইয়ার ক্ষেত্রে লক্ষণীয়
  7. রুকইয়াহ শুরুর পূর্বে লক্ষণীয়

 

 

মুখতাসার রুকইয়াহ শারইয়্যাহ | সারসংক্ষেপ রুকইয়াহ শারইয়্যাহ!

[১] অবতরণিকা-

রুকইয়া শারইয়াহ বিষয়ে অনেক লম্বা চওড়া লেখা আছে, ইতোমধ্যে আমাদের রুকইয়াহ শারইয়াহ সিরিজও শেষ। আল্লাহর অনুগ্রহে “রুকইয়াহ” (আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ) নামে একটি বইও প্রকাশ হয়েছে। এসব যায়গায় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আজ আমরা সংক্ষেপে রুকইয়াহ পরিচিতি এবং বিভিন্ন সমস্যার জন্য রুকইয়াহ করার পদ্ধতি সম্পর্কে জানবো। বলতে পারেন এই লেখাটি অতীত ও ভবিষ্যতের পুরো রুকইয়াহ সিরিজের সারাংশ।

প্রবন্ধটির প্রথম সংস্করণ ১৭ই জুন ২০১৭তে প্রকাশ হয়েছিল। এরপর অনেক কিছু সংশোধন এবং সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে। এটি পঞ্চম সংস্করণ। এখানে আরও কিছু যোগ করার পরামর্শ থাকলে জানাবেন, আর কোনো পুস্তক-পত্রিকা অথবা ফেসবুকের বাহিরে অন্য কোথাও প্রকাশ করতে চাইলে অনুগ্রহ করে অনুমতি নিবেন।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে হিফাজত করুন। আমীন!

[২] প্রাথমিক ধারণা-

রুকইয়া, রুকইয়াহ, রুকিয়া, রুকিয়াহ, রুকাইয়া সহ বিভিন্ন উচ্চারণ প্রচলিত রয়েছে, যার মূল হচ্ছে আরবি শব্দ (رقية) আর শুদ্ধ বাংলা উচ্চারণ রুকইয়াহ অথবা রুকইয়া।

রুকইয়াহ কী? - রুকইয়াহ অর্থ ঝাড়ফুঁক করা, মন্ত্র পড়া, তাবিজ-কবচ, মাদুলি ইত্যাদি। আর রুকইয়াহ শারইয়্যাহ (رقية شرعية) মানে শরিয়াত সম্মত রুকইয়াহ, কোরআনের আয়াত অথবা হাদিসে বর্ণিত দোয়া দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা। তবে স্বাভাবিকভাবে ‘রুকইয়া’ শব্দটি দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা বুঝায়। এই ঝাড়ফুঁক সরাসরি কারো ওপর হতে পারে, অথবা কোনো পানি বা খাদ্যের ওপর করে সেটা খাওয়া অথবা ব্যাবহার করা হতে পারে। এক্ষেত্রে রুকইয়ার পানি, অথবা রুকইয়ার গোসল ইত্যাদি পরিভাষা ব্যবহার হয়। আর সবগুলোই সালাফে সালেহিন থেকে বর্নিত আছে।

রুকইয়ার বিধানঃ রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “রুকইয়াতে যদি শিরক না থাকে, তাহলে কোনো সমস্যা নেই।” (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৫৪৪)

বিশুদ্ধ আক্বিদাঃ উলামায়ে কিরামের মতে রুকইয়া করার পূর্বে এই আক্বিদা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া উচিত ‘রুকইয়া বা ঝাড়ফুঁকের নিজস্ব কোনো ক্ষমতা নেই, সব ক্ষমতা আল্লাহ তা’আলার, আল্লাহ চাইলে শিফা হবে, নইলে নয়।’

ফিক্বহী বিধানঃ ফক্বিহদের মতে রুকইয়াহ বৈধ হওয়ার জন্য ৪ শর্ত পূরণ হওয়া আবশ্যক, যথা-

১. এতে কোন শিরক বা কুফরির সংমিশ্রণ না থাকা।
২. ঝাড়ফুঁকের নিজের কোন সক্ষমতা আছে; এমন কোন বিশ্বাস না রাখা। বরং বিশ্বাস করা, আল্লাহর ইচ্ছাতেই এর প্রভাব হয়, আল্লাহর হুকুমেই এর দ্বারা আরোগ্য হয়।
৩. এখানে পাঠ করা জিনিসগুলো স্পষ্ট আরবি ভাষায় হওয়া।
৪. যদি অন্য ভাষায় হয়, তবে এমন হওয়া; যার অর্থ স্পষ্টভাবে বোঝা যাবে।

রুকইয়া প্রকারভেদঃ বিভিন্ন ভাবে রুকইয়া করা হয়, যেমনঃ দোয়া বা আয়াত পড়ে ফুঁ দেয়া হয়, মাথায় বা আক্রান্ত স্থানে হাত রেখে দোয়া/আয়াত পড়া হয়। এছাড়া পানি, তেল, খাদ্য বা অন্য কিছুতে দোয়া অথবা আয়াত পড়ে ফুঁ দিয়ে খাওয়া এবং ব্যাবহার করা হয়।

পূর্বশর্তঃ রুকইয়া করে উপকার পেতে তিনটি জিনিসের প্রয়োজন।

১. নিয়্যাত (কেন রুকইয়া করছেন, সেজন্য নির্দিষ্টভাবে নিয়াত করা)
২. ইয়াক্বিন (এব্যাপারে ইয়াকিন রাখা যে, আল্লাহর কালামে শিফা আছে)
৩. মেহনত (অনেক কষ্ট হলেও, সুস্থ হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য ধরে রুকইয়া চালিয়ে যাওয়া)।

লক্ষণীয়ঃ রুকইয়ার ফায়দা ঠিকমতো পাওয়ার জন্য দৈনন্দিনের ফরজ অবশ্যই পালন করতে হবে, পাশাপাশি সুন্নাতের প্রতিও যত্নবান হতে হবে। যথাসম্ভব গুনাহ থেকে বাঁচতে হবে। (মেয়েদের জন্য পর্দার বিধানও ফরজ) ঘরে কোনো প্রাণীর ছবি / ভাস্কর্য রাখা যাবেনা। আর সুরক্ষার জন্য সকাল-সন্ধ্যার মাসনুন আমলগুলো অবশ্যই করতে হবে। আর ইতিমধ্যে শারীরিক ক্ষতি হয়ে গেলে, সেই ঘাটতি পোষানোর জন্য রুকইয়ার পাশাপাশি ডাক্তারের চিকিৎসাও চালিয়ে যেতে হবে।

[৩] বদনজর সমস্যা-

আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ:

বদনজর আক্রান্ত হওয়ার অনেকগুলো লক্ষণ রয়েছে, এরমাঝে কয়েকটি হচ্ছে-

  1. পড়ালেখা বা কোন কিছুতে অনেক ভাল ছিল, হঠাৎ ধ্বস নামা।
  2. কোন কাজে মনোযোগ না থাকা। নামায, যিকর, পড়াশোনাতে মন না বসা।
  3. প্রায়শই শরীর দুর্বল থাকা, ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব লাগা।
  4. বুক ধড়পড় করা, দমবন্ধ অস্বস্তি লাগা। মেজাজ বিগড়ে থাকা।
  5. অতিরিক্ত চুল পড়া। পেটে প্রচুর গ্যাস হওয়া।
  6. একেরপর এক অসুখ লেগে থাকা, দীর্ঘ চিকিৎসাতেও ভালো না হওয়া।
  7. ব্যবসায়-লেনদেনে ঝামেলা লেগেই থাকা। সব কিছুতেই লস হওয়া।

বদনজরের জন্য রুকইয়াহ:

যদি বুঝা যায় অমুকের জন্য নজর লেগেছে, তাহলে তাকে অযু করতে বলুন, এবংওযুর পানি গুলো আক্রান্তের গায়ে ঢেলে দিন। এরপর চাইলে ভালো পানি দিয়ে গোসল করুন। এতটুকুতেই নজর ভালো হয়ে যাবে ইনশা-আল্লাহ।

আর বদনজরের সেলফ রুকইয়া হচ্ছে, বদনজরের রুকইয়া তিলাওয়াত করবেন, অথবা তিলাওয়াত শুনবেন (ডাউনলোড লিংক নিচে)। এর পাশাপাশি ১ম অথবা ২য় নিয়মে রুকইয়ার গোসল করবেন। আর এভাবে লাগাতার ৩ থেকে ৭ দিন করবেন। প্রয়োজনে কয়েকদিন বিরতি দিয়ে আবার শুরু করুন, প্রতিদিন কয়েকবার রুকইয়া শুনুন, আর একবার রুকইয়ার গোসল করুন। এভাবে সমস্যা ভালো হওয়া পর্যন্ত করতে থাকুন। সমস্যা ভালো হওয়ার পরেও কয়েকদিন রুকইয়াহ করা উচিত।

[৪] রুকইয়ার গোসল-

১ম নিয়ম: একটা বালতিতে পানি নিবেন। তারপর পানিতে দুইহাত ডুবিয়ে যেকোনো দরুদ শরিফ, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, সুরা ইখলাস, ফালাক্ব, নাস, শেষে আবার কোনো দরুদ শরিফ-সব ৭বার করে পড়বেন। পড়ার পর হাত উঠাবেন এবং এই পানি দিয়ে গোসল করবেন।

২য় নিয়ম: একটা বালতিতে পানি নিন। ওপরের দোয়া-কালামগুলো পড়ুন আর মাঝেমাঝে ফুঁ দিন। এরপর ওই পান ইদিয়ে গোসল করুন।

৩য় নিয়ম: (জাদুর সমস্যার জন্য বিশেষভাবে উপকারী বরই পাতার গোসল) ৭টা বরই পাতা বেটে পানিতে গুলিয়ে নিন, এবং সেখানে আয়াতুল কুরসি, সূরা ইখলাস, ফালাক, নাস- ৩বার করে পড়ে ফুঁ দিন। এরপর এই পানি থেকে তিন ঢোক পান করুন, আর বাকিটা দিয়ে গোসল করুন।

(যদি টয়লেট আর গোসলখানা একসাথে থাকে, তাহলে অবশ্যই বালতি বাহিরে এনে এসব পড়বেন। প্রথমে এই পানি দিয়ে গোসল করে এরপর চাইলে অন্য পানি দিয়ে ইচ্ছামত গোসল করতে পারেন। যার সমস্যা সে পড়তে না পারলে অন্য কেউ তার জন্য পড়বে, এবং অসুস্থ ব্যক্তি শুধু গোসল করবে।)

[৫] জিনের স্পর্শ-

আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ:

জিন দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার অনেকগুলো লক্ষণ রয়েছে, এরমাঝে কয়েকটি হচ্ছে-

  1. রাতে ঠিকমত ঘুমাতে না পারা। ঘুমালেও বারবার জেগে ওঠা।
  2. প্রায়শই ঘুমের মাঝে বোবা ধরা।
  3. ভয়ংকর স্বপ্ন দেখা। উঁচু থেকে পড়ে যেতে, কোন প্রাণীকে আক্রমণ করতে দেখা।
  4. দীর্ঘ মাথাব্যথা, অথবা অন্য কোন অঙ্গে সবসময় ব্যাথা থাকা।
  5. নামাজ, তিলাওয়াত, যিকির আযকারে আগ্রহ উঠে যাওয়া।
  6. মেজাজ বিক্ষিপ্ত হয়ে থাকা, একটুতেই রেগে যাওয়া।
  7. আযান বা কোরআন তিলাওয়াত সহ্য না হওয়া।

জ্বিনের আসরের জন্য রুকইয়াহ:

যিনি রুকইয়া করবেন তিনি প্রথমে সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস পড়ে হাতে ফুঁ দিয়ে নিজের শরীরে হাত বুলিয়ে নিবেন। এরপর রুকইয়া শুরু করবেন। রুগীর পাশে বসে জোর আওয়াজে রুকইয়ার আয়াতগুলো পড়তে থাকুন। রুকইয়ার অনেক আয়াত আছে সেগুলো শেষে বলা হবে। তবে জ্বিনের রোগীর রুকইয়ার জন্য স্বাভাবিকভাবে-

১. সুরা ফাতিহা
২. আয়াতুল কুরসি
৩. বাকারার শেষ ২ আয়াত
৪. সুরা ইখলাস, ফালাক, সুরা নাস। সম্ভব হলে এর সাথে-
৫. সুরা মু’মিনুনের ১১৫-১১৮ নং আয়াত
৬. সুরা সফফাতের প্রথম ১০ আয়াত এবং
৭. সুরা জিনের ১-৯ আয়াত পড়া যেতে পারে।

জ্বিন ছেড়ে দেয়া পর্যন্ত এগুলো বারবার পড়তে থাকুন, পড়ার মাঝেমাঝে রুগীর ওপর ফুঁ দিতে পারেন, (বৈধ ক্ষেত্রে) মাঝেমাঝে রুগীর মাথায় হাত রেখে পড়ুন। আর পানিতে ফুঁ দেয়ার পর মুখে এবং হাতে-পায়ে ছিটিয়ে দিন। জিন কথা বলতে শুরু করলে মাঝেমাঝে তাকে চলে যাওয়ার ব্যাপারে নির্দেশ দিতে হবে, এরপর আবার অবিরত তিলাওয়াত চালু রাখতে হবে। জ্বিনের রুগীর ক্ষেত্রে সাধারণত কথাবার্তা বলে জ্বিন বিদায় করতে হয়। এক্ষেত্রে জ্বিনের কথায় ঘাবড়ানো যাবেনা, তার কথা সহজে বিশ্বাসও করা যাবে না। হুমকিধামকি দিলে তাকেই উল্টা ধমক দিতে হবে। মোট কথা, যিনি রুকইয়া করবেন তাঁকে উপস্থিতবুদ্ধির পরিচয় দিতে হবে। একদিনে না গেলে পরপর কয়েকদিন কয়েকঘন্টা করে এভাবে রুকইয়া করে যেতে হবে। ইনশাআল্লাহ এক পর্যায়ে জ্বিন পালাতে বাধ্য হবে।

[৬] বাড়িতে জ্বিনের উৎপাত থাকলে-

বাড়িতে জ্বিনের কোনো সমস্যা থাকলে পরপর তিনদিন পূর্ন সুরা বাক্বারা তিলাওয়াত করুন, এরপর আযান দিন। তাহলে ইনশাআল্লাহ সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে। তিলাওয়াত না করে প্রতিদিন যদি সুরা বাক্বারা প্লে করা হয় তাহলেও ফায়দা পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ। তবে সবচেয়ে ভালো ফল পেলে তিলাওয়াত করা উচিত। এরপর প্রতিমাসে অন্তত এক দুইদিন সুরা বাকারা পড়বেন। অধিক ফায়দার জন্য চাইলে সুরা বাকারা পড়া শেষে পানিতে ফুঁ দেয়ার পর পুরো বাড়িতে ছিটিয়ে দিতে পারেন।

আর ঘরে প্রবেশের সময়, বের হবার সময়, দরজা-জানালা বন্ধের সময় বিসমিল্লাহ বলবেন। সন্ধ্যা বেলায় জানালা বন্ধ রাখবেন। ঘরে কোন প্রাণী বা মানুষের ছবি অথবা মূর্তি ঝুলিয়ে রাখবেন না। ইনশাআল্লাহ খুব শীঘ্রই সমস্যা কেটে যাবে।

[৭] যাদুগ্রস্ত-

জাদু বা ব্ল্যাক ম্যাজিকে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ:

অনেক সময় যাদু করতে জ্বিনের সাহায্য নেয়া হয়, তাই যাদুগ্রস্ত রোগীর মাঝে জিন আক্রান্তের কিছু লক্ষণও দেখা যেতে পারে। এছাড়াও যাদুগ্রস্ত রোগীর মাঝে কিছু বিশেষ লক্ষণ দেখা যেতে পারে। যেমন:

  1. হঠাৎ কারও প্রতি বা কোন কিছুর প্রতি তীব্র ভালবাসা অথবা ঘৃণা তৈরি হওয়া, যা আগে ছিল না।
  2. বিশেষ কোন কারন ছাড়াই জটিল-কঠিন রোগে ভোগা। যার চিকিৎসা করলেও সুস্থ না হওয়া।
  3. পরিবারের মধ্যে ঝগড়া-ঝাটি লেগেই থাকা। বিশেষতঃ স্বামীস্ত্রীর মাঝে।
  4. দৃষ্টিভঙ্গি বা ব্যক্তিত্বে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যাওয়া। যাতে নিজেও ক্ষতিগ্রস্থ হয়, চারপাশের মানুষও কষ্ট পায়।
  5. অদ্ভুত আচরণ করা। যেমন, কোন কাজ একদমই করতে না চাওয়া। কিংবা দিন-রাতের নির্দিষ্ট কোন সময়ে ঘরের বাইরে যেতে না চাওয়া।
  6. মেরুদণ্ডের নিচের দিকে ব্যাথা করা।
  7. বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত মেজাজ খারাপ, মাথা ব্যথা অথবা অসুস্থ থাকা।

যাদু আক্রান্ত হলে বুঝার উপায়:

ওপরের এক বা একাধিক লক্ষণের সাথে মিল পাওয়া যাবে। আর যাদু আক্রান্ত ব্যক্তির ওপর রুকইয়ার আয়াতগুলো পড়লে, অথবা অডিও শুনলে অস্বাভাবিক অনুভূতি হবে। যেমন, প্রচণ্ড মাথা ব্যথা, বমি আসা, বুক ধড়ফড় করা, শরীর অবশ হয়ে আসা ইত্যাদি।

জাদুর সমস্যার জন্য রুকইয়া:

সমস্যার ধরণ অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকার রুকইয়াহ করতে পরামর্শ হয়। তবে প্রসিদ্ধ সেলফ রুকইয়া হচ্ছে- প্রথমে সমস্যার জন্য নিয়াত ঠিক করে, ইস্তিগফার দরুদ শরিফ পড়ে শুরু করুন। তারপর রুকইয়ার আয়াতগুলো পাঠ করে অথবা কোন রুকইয়া শুনে নিশ্চিত হয়ে নিন আসলেই সমস্যা আছে কি না! শাইখ সুদাইস অথবা লুহাইদানের রুকইয়া শুনতে পারেন (ডাউনলোড লিংক নিচে)। সবশেষে একটি পাত্রে পানি নিন, এরপর নিচের আয়াতগুলো ৩বার অথবা ৭বার করে পড়ুন, পড়ার মাঝেমাঝে পানিতে ফুঁ দিন-

ক. সুরা ফাতিহা এবং আয়াতুল কুরসি
খ. সুরা আ'রাফ ১১৭-১২২, ইউনুস ৮১-৮২ সুরা ত্বহা ৬৯নং আয়াত

١. وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ مُوسَىٰ أَنْ أَلْقِ عَصَاكَۖ فَإِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُوْنَ - فَوَقَعَ الْحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُوْا يَعْمَلُونَ - فَغُلِبُوْا هُنَالِكَ وَانقَلَبُوْا صَاغِرِيْنَ - وَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سَاجِدِيْنَ -قَالُوْا آمَنَّا بِرَبِّ الْعَالَمِيْنَ - رَبِّ مُوسَىٰ وَهَارُوْنَ -

٢. فَلَمَّا أَلْقَوْا قَالَ مُوسَىٰ مَا جِئْتُمْ بِهِ السِّحْرُۖ إِنَّ اللّٰهَ سَيُبْطِلُهُۖ إِنَّ اللّٰهَ لَا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِيْنَ - وَيُحِقُّ اللّٰهُ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ وَلَوْكَرِهَ الْمُجْرِمُونَ -

٣. وَأَلْقِ مَافِي يَمِيْنِكَ تَلْقَفْ مَا صَنَعُوْاۖ إِنَّمَا صَنَعُوْا كَيْدُ سَاحِرٍۖ وَلَا يُفْلِحُ السَّاحِرُ حَيْثُ أَتٰى -

গ. এরপর সুরা ইখলাস, ফালাক্ব, নাস- সব ৩বার করে।

সমস্যা অনুযায়ী সাতদিন অথবা এরচেয়ে বেশি সময় যাবত প্রতিদিন সকাল-বিকাল এই পানি খেতে হবে, এবং গোসলের পানিতে মিশিয়ে গোসল করতে হবে। আর জাদুর সমস্যার থেকে সুস্থতা লাভের নিয়াত করে প্রতিদিন রুকইয়ার আয়াতগুলো তিলাওয়াত করতে হবে, অথবা দেড়-দুইঘণ্টা রুকইয়ার অডিও শুনতে হবে। কোন ক্বারির সাধারণ রুকইয়া একবার, আর সুরা ইখলাস, ফালাক, নাসের রুকইয়াহ একাধিকবার (ডাউনলোড লিংক নিচে)। এর পাশাপাশি আল্লাহর কাছে সুস্থতার জন্য দোয়া করতে হবে।

এভাবে রুকইয়াহ করার পর সপ্তাহ শেষে আপনার অবস্থা পর্যালোচনা করুন, প্রয়োজনে চিকিৎসার মেয়ার বাড়িয়ে নিন। রুকইয়াহ চলাকালীন সমস্যা বেড়ে গেলেও বাদ দিবেন না, হাল ছাড়বেন না। সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া পর্যন্ত রুকইয়া অবিরত রাখুন।

দ্বিতীয়ত: শুরুতে বর্ণনা করা রুকইয়ার গোসলগুলোর মাঝে ৩য় পদ্ধতিটি জাদুর চিকিৎসায় খুব উপকারী। সমস্যা বেশি হলে প্রথমে কয়েকদিন উল্লেখিত নিয়মে বরই পাতার গোসল করে এরপর সেলফ রুকইয়াহ শুরু করা যেতে পারে। ইনশাআল্লাহ খুব দ্রুতই জাদুর সমস্যা থেকে মুক্ত হয়ে যাবেন।

যাদুর কোন জিনিশ অথবা তাবিজ খুঁজে পেলে:

সন্দেহজনক কোন তাবিজ পেলে অথবা কি দিয়ে যাদু করেছে যদি পাওয়া যায়, তাহলে সেসব বের করে আলাদা আলাদা করে ফেলুন, কোন গিরা বা বাধন থাকলে কেটে ফেলুন, শক্ত কিছু দিয়ে বাধা থাকলে ভেঙ্গে ফেলুন। এরপর একটা পাত্রে পানি নিয়ে ওপরে বলা জাদুর রুকইয়ার আয়াতগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিন, এরপর তাবিজ অথবা যাদুর জিনিশগুলো ডুবিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ, তাহলে ইনশাআল্লাহ যাদু নষ্ট হয়ে যাবে। পরে সেগুলো পুড়িয়ে বা নষ্ট করে ফেলুন।

[৮] একাধিক সমস্যায় আক্রান্ত হলে:

একসাথে যাদু, জ্বিন কিংবা বদনজর সম্পর্কিত একাধিক সমস্যায় আক্রান্ত হলে প্রথমে কিছুদিন বদনজরের জন্য রুকইয়া করতে হবে, এরপর জ্বিনের জন্য এবং যাদুর জন্য রুকইয়া করতে হবে। এর মাঝেমাঝে শারীরিক রোগব্যাধির জন্য চিকিৎসা নেয়া বা ডাক্তারের ঔষধ সেবন করতেও কোন সমস্যা নেই। কিন্তু রুকইয়াহ করার কারণে ব্যাথা শুরু হলে এজন্য ঔষধ খাবেন না। বরং রুকইয়ার গোসল করলে অনেকটা স্বস্তি পাবেন ইনশাআল্লাহ।

[৯] ওয়াসওয়াসা রোগ-

আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ:

  1. অকারণে সর্বদা চিন্তিত থাকা। মাথায় বিক্ষিপ্ত চিন্তা ঘোরাঘুরি করার কারণে কোন কিছুতে মন দিতে না পারা।
  2. ওযু-গোসল অথবা নামাজের বিশুদ্ধতা নিয়ে অতিরিক্ত দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকা।
  3. পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করা। টয়লেট বা গোসলখানায় অতিরিক্ত সময় ব্যয় করা। এক অঙ্গ বারবার ধোয়া, এরপরেও তৃপ্ত হতে না পারা।
  4. বারবার মনে হওয়া ওযু ভেঙ্গে যাচ্ছে, অথবা প্রসাবের ফোঁটা পড়ছে, অথবা বায়ু বের হয়ে যাচ্ছে। বিশেষতঃ নামাজের সময় এমন হওয়া।
  5. আল্লাহ তা’আলা, রাসুল ﷺ অথবা ইসলামের ব্যাপারে বারবার মাথায় অবমাননাকর চিন্তা আসা।
  6. বারবার নামাজের রাকাত ভুলে যাওয়া, কিরাত, রুকু-সাজদা ইত্যাদির ব্যাপারে সন্দেহে ভোগা।

সমস্যা বেশিদিন পুরনো হয়ে গেলে এসব থেকে আরও শারীরিক-মানসিক সমস্যা তৈরি হতে পারে। আর জিন সংক্রান্ত কোন সমস্যা (জিনের বদনজর বা জিনের আসর) থাকলেও ওয়াসওয়াসার সমস্যা প্রকট হতে পারে।

ওয়াসওয়াসার প্রতিকার-

১. এই দোয়াটি বেশি বেশি পড়া। প্রতি নামাজের আগে-পরে, অন্যান্য ইবাদতের সময়, কোন গুনাহের জন্য ওয়াসওয়াসা অনুভব করলে এটা পড়া -

أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ، مِنْ غَضَبِهٖ وَعِقَابِهِ، وَشَرِّ عِبَادِهِ، وَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِيْنِ، وَأَنْ يَّحْضُرُوْنِ

ঈমান নিয়ে সংশয় উদিত হলে পড়া (সুরা হাদীদ, আয়াত নং ৩)

هُوَ الْأَوَّلُ وَالْآخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ ۖ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْم

[এছাড়া "আমানতু বিল্লাহ বলা" এবং "সুরা ইখলাস পড়ার" কথাও বর্ণিত হয়েছে] এবং এরপর ওয়াসওয়াসা পাত্তা না দিয়ে অন্য কিছুতে ব্যস্ত হয়ে যাওয়া।

২. পুরুষ হলে জামাআতের সাথে নামাজ পড়া, মুত্তাকী পরহেজগারদের সাথে উঠাবসা করা।

৩. নামাজে ওয়াসওয়াসা হলে বামে হালকা করে ৩বার থুতু ফালানো। আর রাকাত ভুলে গেলে- মনে থাকা কম সংখ্যাটা ধরে, এরপর প্রতি রাকাতে আত্তাহিয়্যাতু পড়া, আর নামাজের শেষে সাহু সাজদা দেয়া।

৫. সকাল-সন্ধ্যায় ও ঘুমের আগের আমলগুলো গুরুত্বের সাথে করা। টয়লেটে প্রবেশের দোয়া পড়া।

৬. আয়াতুল হারক (আযাব এবং জাহান্নাম সংক্রান্ত আয়াত) বেশি বেশি তিলাওয়াত করা। এবং প্রতিদিন এসবের তিলাওয়াত শোনা। (ডাউনলোড লিংক নিচে)

৭. সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, ইখলাস, ফালাক, নাস - ৩বার করে। এরপর শুধু সুরা নাস অনেক বার (৭বার/৩৩বার/আরও বেশি) পড়ে পানি আর অলিভ অয়েলে ফুঁ দেয়া। এরপর সুস্থতার নিয়াতে প্রতিদিন ২-৩ বেলা এই পানি পান করা। মাথায় এবং বুকে অলিভ অয়েল ব্যবহার করা।

৮. বদনজর বা জিনের সমস্যা থাকলে সে অনুযায়ী রুকইয়াহ করা। যথাসম্ভবত ওয়াসওয়াসা পাত্তা না দেয়া; ইগনোর করা, এমনকি মুখে বিরক্তির ভাবও প্রকাশ না করা। আর আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকা।

[১০] সাধারণ অসুস্থতার জন্য রুকইয়াহ:

বিভিন্ন অসুখ-বিসুখের রুকইয়ার জন্য রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কিরাম রা. এবং বিভিন্ন যুগের সালাফদের থেকে অনেক দু’আ-কালাম পাওয়া যায়, সুস্থতা লাভের নিয়াতে সেসব গুরুত্বের সাথে পড়া।

যেমন, কোরআন থেকে প্রসিদ্ধ কয়েকটি রুকইয়া হচ্ছে- সুরা ফাতিহা, ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস এবং ৬টি আয়াতে শিফা- (সূরা তাওবাহ/১৪, ইউনূস/৫৭, নাহল/৬৯, বানী ইসরাইল/৮২, শু’আরা/৮০, ফুসসিলাত/৪৪)

١. وَيَشْفِ صُدُورَ قَوْمٍ مُّؤْمِنِينَ
٢. وَشِفَاء لِّمَا فِي الصُّدُورِ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ
٣. يخْرُجُ مِن بُطُونِهَا شَرَابٌ مُّخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ فِيهِ شِفَاء لِلنَّاسِ
٤. وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاء وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ
٥. وَإِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِينِ
٦. قُلْ هُوَ لِلَّذِينَ آمَنُوا هُدًى وَشِفَاء

এছাড়া রাসুল স. থেকে বর্ণিত রুকইয়ার উপযোগী অনেক দো’আ আছে, যেমন-

١.اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبْ الْبَاسَ، اشْفِهِ وَأَنْتَ الشَّافِي لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا
٢. بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللَّهُ يَشْفِيكَ بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ
٣. بِاسْمِ اللَّهِ يُبْرِيكَ، وَمِنْ كُلِّ دَاءٍ يَشْفِيكَ، وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ، وَشَرِّ كُلِّ ذِي عَيْنٍ
٤. اَسْأَلُ اللهَ الْعَظِيْم، رَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيْم، اَنْ يَّشْفِيَكْ
٥. بِسْمِ اللَّه، بِسْمِ اللَّه، بِسْمِ اللَّه، أَعُوذُ بِعِزَّةِ اللَّهِ وَقُدْرَتِهِ، مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ

এসব আয়াত এবং দোয়াগুলো ৩বার অথবা ৭বার পড়ুন, ব্যাথার যায়গায় অথবা রুগীর মাথায় হাত রেখে পড়ুন, অথবা এসব পড়ার পর রুগীর ওপর ফুঁ দিন। পানিতে ফুঁ দিয়ে পান করুন, গোসল করুন অথবা অলিভ অয়েলে ফুঁ দিয়ে মালিশ করুন। মধু-কালোজিরায় ফুঁ দিয়ে প্রতিদিন পানিতে গুলিয়ে খান। এসবের পাশাপাশি শাইখ লুহাইদান অথবা সা’দ আল গামিদির রুকইয়াহ শোনা যেতে পারে। (ডাউনলোড লিংক নিচে)

[১১] শিশুদের জন্য রুকইয়ার নিয়ম:

শুরুতে মনে মনে নিয়াত করে নিন কোন সমস্যার জন্য রুকইয়াহ করবেন, এরপর শিশুর মাথায় হাত রেখে কয়েকবার এই দুয়াটি পড়ুন, আর মাঝেমাঝে দিন। চাইলে সাথে ওপরের দোয়াগুলোও পড়া যেতে পারে।

أُعِيْذُكُمْ بِكَلِمَاتِ اللّٰهِ التَّامَّةِ ، مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ

এরপর সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি এবং সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস - ৩ বার করে পড়া।

সমস্যার মাত্রা বেশি হলে উল্লেখিত পদ্ধতিতে রুকইয়া করা শেষে আরেকবার এগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে পান করান এবং গোসল করান। সমস্যা ভালো হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন রুকইয়াহ এবং এই কাজগুলো করতে থাকুন। এছাড়া কোন অঙ্গে বিশেষ রোগব্যাধি থাকলে এসব দোয়া-কালাম পড়ে অলিভ অয়েল বা কালোজিরার তেলে ফুঁ দিয়ে প্রতিদিন মালিশ করা।

ছোটদের পাশাপাশি বড়দের মাঝে কেউ নিজে নিজে রুকইয়াহ করতে অক্ষম হলে তার ওপরেও একই নিয়মে রুকইয়াহ করা যায়।

[১২] রুকইয়ার আয়াত:

কোরআন মাজিদের বিভিন্ন আয়াত দ্বারা রুকইয়া করা হয়, তন্মধ্যে প্রসিদ্ধ কিছু আয়াত হচ্ছে-

  1. সুরা ফাতিহা
  2. সুরা বাকারা ১-৫
  3. সুরা বাকারাহ ১০২
  4. সুরা বাকারাহ ১৬৩-১৬৪
  5. সুরা বাকারাহ ২৫৫
  6. সুরা বাকারাহ ২৮৫-২৮৬
  7. সুরা আলে ইমরান ১৮-১৯
  8. সুরা আ'রাফ ৫৪-৫৬
  9. সুরা আ'রাফ ১১৭-১২২
  10. সুরা ইউনুস ৮১-৮২
  11. সুরা ত্বহা ৬৯
  12. সুরা মু'মিনুন ১১৫-১১৮
  13. সুরা সফফাত ১-১০
  14. সুরা আহকাফ ২৯-৩২
  15. সুরা আর-রাহমান ৩৩-৩৬
  16. সুরা হাশর ২১-২৪
  17. সুরা জিন ১-৯
  18. সুরা ইখলাস
  19. সুরা ফালাক
  20. সুরা নাস

এই আয়াতগুলো একসাথে পিডিএফ করা অবস্থায় নিচে লিংক দেয়া ওয়েবসাইটে পাবেন।

[১৩] যাদু, জিন, শয়তান ইত্যাদির ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায়:

১. প্রতিটি কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা। যেমন, খাবার পূর্বে, ঘরে ঢুকতে - বের হতে, দরজা-জানালা বন্ধ করতে ইত্যাদি।

২. বিষ, যাদু এবং অন্যান্য ক্ষতি থেকে বাঁচতে সকাল-সন্ধ্যায় এই দোয়া তিনবার পড়াঃ

أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ

আ’উযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত্তা-ম্মা-তি, মিং-শাররি মা-খলাক্ব। (জামে তিরমিযী, ৩৫৫৯)

৩. সব ধরনের ক্ষতি এবং বিপদ-আপদ থেকে নিরাপদ থাকতে এই দোয়া সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার পড়াঃ

بِسْمِ اللهِ الَّذِيْ لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِه شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيْعُ العَلِيْمُ

বিসমিল্লা-হিল্লাযী লা-ইয়াদ্বুররু মা‘আসমিহী, শাইউং ফিলআরদ্বী ওয়ালা- ফিসসামা-ই, ওয়াহুওয়াস সামি’উল ‘আলীম। (জামে তিরমিযী, ৩৩৩৫)

৪. প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস তিনবার করে পড়া। এবং এটা বিশেষ গুরুত্বের সাথে করা। (সুনানে আবি দাউদ)

৫. ঘুমের আগে আয়াতুল কুরসি এবং সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়া। সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস পড়ে হাতের তালুতে ফু দিয়ে পুরো শরীরে হাত বুলিয়ে নেয়া। (বুখারী)

৬. টয়লেটে ঢোকার পূর্বে দোয়া পড়া-

اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَالْخَبَائِثِ

আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ’উযুবিকা, মিনাল খুবসি ওয়াল খবা-ইছ। (মুসলিম, ৩৭৫)

৭. তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া। প্রতিদিনের অন্যান্য মাসনুন আমল করতে থাকা। এবং আল্লাহর কাছে সবসময় দোয়া করতে থাকা।

___________

(সংক্ষেপে বিভিন্ন সমস্যার জন্য ইসলাম সম্মত ঝাড়ফুঁক)
- রচনায়: আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ
- প্রথম প্রকাশ: ১৭ – জুন – ২০১৭
- সর্বশেষ আপডেট: (৫.০) পঞ্চম সংস্করণ, ০৭ – আগস্ট – ২০১৯
- রুকইয়াহ অডিও ডাউনলোড: https://ruqyahbd.org/download
- রুকইয়াহ সাপোর্ট গ্রুপ: https://facebook.com/groups/ruqyahbd
- রুকইয়াহ বিষয়ক অন্যান্য তথ্যের জন্য: www.ruqyahbd.org

 

 

আল-আশফিয়া: ৭ দিনের ডিটক্স রুকইয়াহ

 

আশফিয়া – শিফাউন এর বহুবচন, যার অর্থ আরোগ্য। কোরআনুল কারিম এবং হাদিসে যেসব মেডিসিন এবং হার্বসকে শিফা এবং বরকতময় বলা হয়েছে, আমাদের এই ৭দিনের কোর্সটি হচ্ছে সেগুলোর একটি সম্মিলিত প্রয়োগ। এজন্যই এটার নাম রাখা হয়েছে ‘আল-আশফিয়া’ The Collection of cures!

এটি শাইখ আদিল বিন তাহির মুকবিল হাফিযাহুল্লাহুর দেয়া প্রেসক্রিপশন। উনার চাকুরীই হচ্ছে যাদুকরদের গ্রেফতার করে অথরিটির হাতে তুলে দেয়া আর যাদুর জিনিসপত্র ধ্বংস করা। অর্থাৎ ডিরেক্টর অব ডেস্ট্রয়িং ম্যাজিক!

আমাদের আলোচ্য প্রেসক্রিপশনটি বিশেষভাবে যাদু, জিন, বদনজর এবং এর পাশাপাশি অন্যান্য কঠিন শারীরিক ব্যাধির চিকিৎসাতে খুবই ফলপ্রসূ। কারও সমস্যা যদি অনেক প্রকারের কিংবা অনেক বেশি হয়, তখন সেটাকে একটা মাত্রায় আনার জন্য আমরা ডিটক্স সাজেস্ট করে থাকি। এছাড়া এই রুটিনটা “সার্বজনীন পূর্ণ রুকইয়াহ প্রোগ্রামে” প্রোগ্রামের মাঝেও প্রেসক্রাইব করা হয়েছে।

 “সার্বজনীন পূর্ণ রুকইয়াহ প্রোগ্রামে”

 

শুরুর কথা

আজ আমরা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি। এটাকে বলা যায় “কমন রুকইয়াহ রুটিন।”
আরেকটু বিস্তারিত বললে, এটি একটি সার্বজনীন রুকইয়াহ গাইড, যা যাদু – জিন – বদনজর অথবা অন্যান্য যেসব রোগের জন্য রুকইয়াহ রিকমেন্ড হয়, সবগুলোতে আক্রান্তরা আমভাবে এটা অনুসরণ করতে পারেন। তাই যাদের সমস্যা অনেক বেশি এবং অনেক প্রকারের, তারা চাইলে প্রতিটা সমস্যার জন্য বিশেষ বিশেষ রুকইয়ার নিয়ম না ফলো করে, একভাবে এই রুটিন অনুসরণ করে দেখুন, ইনশাআল্লাহ যথেষ্ট উপকার হবে।

উল্লেখ্য, আজকে আলোচ্য সাজেশনগুলো উস্তায তিম হাম্বল সচরাচর দিয়ে থাকেন। আমি উনার পদ্ধতি হুবহু ভাষান্তর না করে, প্রয়োজন মাফিক কিছু করা যোগ-বিয়োগ করব। এবং নিজের ভাষায় বর্ণনা করবো।
চলুন, আমরা এবার আলোচনা শুরু করি।

যিনি রুকইয়াহ করবেন 

১. আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলার ওপর তাকে পূর্ণ ভরসা রাখতে হবে।
২. অবশ্যই প্রতিদিনের ফরজ ইবাদাতগুলো করতে হবে, আর যথাসম্ভব রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতের প্রতি যত্নবান হতে হবে।
৩. প্রতিদিনের মাসনুন আমলগুলো গুরুত্বের সাথে করতে হবে, এবং এগুলোকে অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। (এবিষয়ে আলাদা লেখা আছে)
৪. রুগীর সাথে কোন তাবিজ রাখা যাবে না। আগে ব্যবহার করেছে এরকম কোন তাবিজ থাকলে, পুড়িয়ে নষ্ট করে ফেলতে হবে।
৫. বাড়ীর পরিবেশ যতদূর সম্ভব পবিত্র রাখতে হবে। কোন প্রাণীর ছবি, ভাস্কর্য, কুকুর বা এমন কিছু রাখা যাবে না, যা রহমতের ফেরেশতা প্রবেশে বাঁধা হয়, আর শয়তান প্রবেশের কারণ হয়।
৬. সমস্যা একদম দূর হওয়া পর্যন্ত আল্লাহর ওপর ভরসা করে, সবরের সাথে রুকইয়া চালিয়ে যেতে হবে।
৭. যথাসম্ভব গুনাহ থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে হবে, আর সুস্থতার জন্য আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করতে হবে।

 প্রতিদিন যা করবেন 

১. প্রতিদিন সকাল–সন্ধ্যা এবং ঘুমের আগের মাসনুন আমল সঠিকভাবে করা। (মেয়েদের অনেকে পিরিয়ডের সময় এসব দোয়া পড়ে না। এটা বড় ধরনের ভুল কাজ। সেসময় আরও গুরুত্ব দিয়ে আমল করা উচিত। পিরিয়ডের সময় দোয়া পড়তে কোন মানা নেই।)
২. [রুকইয়া করার নিয়াতে] প্রতিদিন কমপক্ষে পৌনে একঘণ্টা কোরআন তিলাওয়াত করা। একবারে এতক্ষণ না পড়তে পারলে দুই-তিন বারে পড়া। সম্ভব হলে আরও বেশি পড়া। সম্ভব হলে সুরা বাকারা পুরাটা পড়ুন, কিংবা বিভিন্ন রুকইয়ার আয়াত রাখুন আপনার তিলাওয়াত লিস্টে, অথবা কোরআনের যেখান থেকে ইচ্ছা পড়ুন।
আর সুযোগ কম পেলে “সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, ইখলাস, ফালাক, নাস” এগুলো বারবার পড়ে উল্লেখিত সময় পূরণ করবেন। নিজে তিলাওয়াত করতে না পারলে অন্য কেউ রুগীর ওপর রুকইয়া হিসেবে পড়বে। একান্ত অপারগ হলে অডিও শুনবে, এক্ষেত্রে দিগুণ সময় শোনা উচিত। চাইলে কিছুক্ষণ নিজে পড়ে, কিছুক্ষণ অডিও শোনা যেতে পারে।
৩. বেশি বেশি ইস্তেগফার করা। প্রতিদিন কমপক্ষে ৭০ থেকে ১০০বার ইস্তেগফার করা উচিত।
৪. সুস্থতার জন্য প্রতিদিনই দোয়া করা। এক্ষেত্রে আয়াতে শিফা পড়ে দুয়া করা যেতে পারে, সুস্থতার কিংবা রুকইয়ার জন্য রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত দোয়াগুলো পড়া যেতে পারে।

প্রতি সপ্তাহে যা করবেন 

আক্রান্ত ব্যক্তি অথবা অন্য কেউ প্রতি সপ্তাহে বাড়িতে সুরা বাকারা তিলাওয়াত করবে। উত্তম হচ্ছে, প্রতি তিনদিনে কমপক্ষে একবার পড়া। যদি প্রতিদিন তিলাওয়াতে সুরা বাকারা শেষ করে, তাহলে সবচেয়ে ভালো।
যদি পূর্ণ সুরা পড়ার মত কাউকে না পাওয়া যায়, তাহলে অপারগতা হেতু অডিও প্লে করা যেতে পারে। কিন্তু পড়ার মত কেউ থাকলে অবশ্যই তিলাওয়াত করা উচিত।

প্রতি মাসে যা করবেন 

রোগীকে প্রতিমাসে কমপক্ষে ১ বার “সুস্থতার পথে ৭দিন; ডিটক্স প্রোগ্রাম” করতে হবে। আরও ভালো ভালো হয় যদি দুইবার করতে পারে। এক্ষেত্রে সুবিধা মত এক সপ্তাহ করার পর কিছুদিন ব্রেক দিয়ে আবার শুরু করতে পারে, অথবা লাগাতার দুই সপ্তাহ করতে পারে।

যে কাজ মাঝে-মধ্যেই করা উচিত

১. হিজামা করা – খুবই উপকারী চিকিৎসা, রুকইয়াহ করে করে যেসব যায়গায় ব্যথা থাকবে, যেসব অঙ্গে রুকইয়ার বেশি ইফেক্ট হবে, সেগুলোতে হিজামা করানো উচিত। রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদের বলেছিলেন, “তোমরা যেসব চিকিৎসা করো এর মধ্যে হিজামা সবচেয়ে সেরা।” রাসুলুল্লাহ বিভিন্ন রোগের জন্য হিজামা করিয়েছেন। এক্ষেত্রে হিজামা বা কাপিং থেরাপিতে অভিজ্ঞ কারও সহায়তা নিতে পারেন।

২. আমাদেরকে আপডেট জানানো! – যারা এটা শুরু করবেন, তাদের উচিত হবে একটি ডায়েরি বা নোটবুক হাতের কাছে রাখা, এবং যিনি আপনাকে রুকইয়ার ব্যাপারে গাইড করবেন তাকে অথবা রুকইয়াহ সাপোর্ট গ্রুপে মাঝেমাঝে আপনার অবস্থার আপডেট জানানো।

আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে হিফাজত করেন এবং সুস্থতা দান করেন। আমিন!

_____

নোট: এই ৭দিনের ডিটক্স রুকইয়াহ নিয়ে প্লেস্টোরে আমাদের একটি সুন্দর অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ আছে। চাইলে দেখতে পারেন, আশা করি ভালো লাগবে। লিংক- https://play.google.com/store/apps/details?id=org.ruqyahbd.detox

_____

আমাদের যা যা দরকার হবে –

১. পানি। সাড়ে তিন থেকে চার লিটার।

  • জমজমের পানি হলে সবচেয়ে ভালো। রাসূল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এর মাঝে শিফা আছে।
  •  নইলে বৃষ্টির পানি – আল্লাহ তা’আলা এটাকে বরকতময় বলেছেন।
  •  এসব না পেলে সাধারণ পানি – রাসূল স. সাধারণ পানিও রুকইয়ার জন্য ব্যবহার করেছেন।
    (জমজম বা বৃষ্টির পানি অল্প থাকলে বরকতের জন্য সাধারণ পানির সাথে মিক্স করা যেতে পারে)

২. অলিভ অয়েল। কোরআনুল কারিমে যাইতুনের তেলকে বরকতময় বলা হয়েছে। ১০০মিলি. হলে যথেষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ।

  •  সবচেয়ে ভালো হয় মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশের এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল হলে।
  •  নইলে এমনি সাধারণ ভালো কোন অলিভ অয়েল।

৩. মধু। ২৫০ গ্রাম। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, মধুর মাঝে মানুষের জন্য শিফা রয়েছে।

  •  যথাসম্ভব পিওর মধু। এক্ষেত্রে পরিচিত কারও থেকে বা নির্ভরযোগ্য অনলাইন শপের সহায়তা নেয়া যায়।

৪. কালোজিরা। ৫০গ্রাম। রাসূল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কালোজিরা মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের শিফা।

  • এটাও ভালো হওয়া উচিত, ব্যবহারের আগে সম্ভব হলে ময়লা ঝেড়ে ফেলা।

৫. তিলাওয়াতের জন্য কোরআন । আল্লাহ তা’আলা বলেছেন- বিশ্বাসীদের জন্য কোরআনের মাঝে শিফা এবং রহমত রয়েছে।

এসব যদি সংগ্রহ করা হয়ে যায়, তাহলে আমরা শুরু করতে পারি। উপকরণগুলো হাতের কাছে রেখে নিম্নের আয়াতগুলো পড়ুন এবং সেগুলোতে ফুঁ দিন ।

১. সুরা ফাতিহা – ৭বার
২. আয়াতুল কুরসি – ৭বার
৩. সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস – সব তিনবার করে।
৪. সুরা বাক্বারা সম্পূর্ণ।

এক বসাতেই পুরাটা পড়ে শেষ করতে হবে এমন না, একবারে যতটুকু পারবেন পড়বেন, ফুঁ দিবেন। এরপর কোন কাজ থাকলে সেটা শেষ করে এসে বাকিটা পড়বেন, প্রয়োজনে দুই-তিন দিনে প্রস্তুত করবেন, এরপর কোর্স শুরু করবেন। সমস্যা নাই। 

এসব পড়ুন আর মাঝে মাঝে পানি অলিভ অয়েল ফুঁ দিন। এরপর মধু ও কালোজিরায় ফু দিন।

এই স্টেপগুলো ঠিকভাবে অনুসরণ করে থাকলে আপনি “সুস্থতার পথে ৭ দিন” প্রোগ্রাম শুরু করার জন্য প্রস্তুত!

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

১. প্রথম ৩দিন ঘুমের আগে মাথা থেকে পায়ের তালু পর্যন্ত, পুরো শরীরে রুকইয়া করা অলিভ অয়েল মালিশ করবেন। পরের ৪দিন শরীরের যেসব যায়গায় ব্যথা আছে, শুধু সে জায়গাগুলোতে অলিভ অয়েল ব্যবহার করুন।
২. এরপর আধা গ্লাস রুকইয়ার পানিতে এক চা চামচ মধু দিন। এর সাথে সাতটা কালোজিরা মিশিয়ে এটাকে গুলিয়ে খেয়ে ফেলুন। এটাকে শরবত না, বরং ঔষধ মনে করে খাবেন।
৩. পরেরদিন সকালে ভালোভাবে গোসল করবেন, এই গোসলের পানিতে এক গ্লাস রুকইয়ার পানি মিশিয়ে নিবেন।
(সাবান-শ্যাম্পু ব্যবহার করতে মানা নেই, শীতকালে হালকা গরম পানি ব্যবহার করতে পারেন বা একটু বেলা হলে গোসল দিতে পারেন, কোন সমস্যা নেই।)
৪. সকালে গোসলের পর আবার আধা গ্লাস রুকইয়ার পানিতে, ১ চামচ মধু এবং ৭টা কালোজিরা গুলিয়ে খেয়ে নিন।

এই কয়দিনে কি ঘটতে পারে?

১. প্রথম দিন হয়তো তেমন কিছুই অনুভব করবেন না। তবে কারো কারো প্রথম দিন থেকেই ইফেক্ট শুরু হয়।
২. দ্বিতীয় এবং তৃতীয়দিন সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। হয়তো অসুস্থ হয়ে পড়বেন, প্রচণ্ড দুর্বল লাগবে। অথবা পুরো শরীর বা বিভিন্ন অঙ্গ ব্যথা হয়ে থাকবে। ভারি ব্যায়াম করলে যেমন ব্যথা হয়, সেরকম হতে পারে।
৩. চতুর্থ দিন থেকে সমস্যা কমতে শুরু হবে ইনশাআল্লাহ, এবং ৭দিনের প্রোগ্রাম শেষ হতে হতে আল্লাহ চায়তো আপনি একদম ফ্রেশ হয়ে যাবেন।
৪. যদি (আল্লাহ না করুক) ৭ দিন পরেও আপনার যথেষ্ট উন্নতি দেখা না যায়, তাহলে আপনার উচিত হবে অভিজ্ঞ কারও পরামর্শ নিয়ে নির্দিষ্ট পরামর্শ ফলো করা, অথবা লাগাতার কয়েকমাস “সর্বজনীন পূর্ণ রুকইয়াহ প্রোগ্রাম” অনুসরণ করা।
৫. আপনার উচিত হবে এই কয়দিন নিজের গুনাহ থেকে ক্ষমা চেয়ে ইস্তেগফার করতে থাকা। প্রতিদিনের মাসনুন আমলগুলো করা। আর বেশি বেশি দোয়া করা, যেন সপ্তাহ শেষে আপনি একদম সুস্থ হয়ে যান।
৬. এই কয়দিন চাইলে “রুকইয়াহ অডিও ডাউনলোড” পেজ থেকে কোন কারির সাধারণ রুকইয়াহ শুনতে পারেন। নিজে তিলাওয়াত করলে আরও ভালো, সম্ভব হলে রুকইয়ার নিয়াতে প্রতিদিন সুরা বাক্বারা তিলাওয়াত করুন অথবা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। ইনশাআল্লাহ অনেক উপকার হবে।
৭. আর হ্যাঁ! এই রুটিন ফলো করার সময় একটা ডায়েরি বা নোটবুক রাখুন, খুব সংক্ষেপে আপনার অবস্থা নোট করুন। যেন প্রোগ্রাম শেষে সেটা আপডেট জানাতে পারেন।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে সুস্থ এবং নিরাপদ রাখুন, আমিন।

 

শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতার জন্য রুকইয়াহ

বিভিন্ন অসুখ-বিসুখের জন্য রুকইয়া করতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনেক দু’আ-কালাম পাওয়া যায়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুগীর মাথায়/কপালে হাত রেখে এসব পড়তেন, কখনো এসব পড়ে অসুস্থ ব্যক্তিকে ফুঁ দিতেন। সব এখানে লেখা সম্ভব না, কমন একটা রুকইয়া বলা হচ্ছে। এটা ফলো করলে ইনশাআল্লাহ উপকার পাওয়া যাবে।

কোরআন থেকে প্রসিদ্ধ কয়েকটি আয়াতে রুকইয়া- “সুরা ফাতিহা, সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস, ৬টি আয়াতে শিফা, ৮টি আয়াতে সালাম” এগুলো তিনবার বা সাতবার করে পড়া ।

এর সাথে রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত রুকইয়ার দোয়াগুলো পড়া।

৬টি আয়াতে শিফা (৯/১৪, ১০/৫৭, ১৬/৬৯, ১৭/৮২, ২৬/৮০, ৪১/৪৪)

১.وَيَشْفِ صُدُورَ قَوْمٍ مُّؤْمِنِينَ 
২. وَشِفَاء لِّمَا فِي الصُّدُورِ
৩. يخْرُجُ مِن بُطُونِهَا شَرَابٌ مُّخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ فِيهِ شِفَاء لِلنَّاسِ
৪. وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاء وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ
৫. وَإِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِينِ
৬. قُلْ هُوَ لِلَّذِينَ آمَنُوا هُدًى وَشِفَاء

এরপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত অনেক দো’আ আছে, এর মাঝে কয়েকটি হল-

১. اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبْ الْبَاسَ، اشْفِهِ وَأَنْتَ الشَّافِي لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا
২. بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللَّهُ يَشْفِيكَ بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ
৩. بِاسْمِ اللَّهِ يُبْرِيكَ، وَمِنْ كُلِّ دَاءٍ يَشْفِيكَ، وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ، وَشَرِّ كُلِّ ذِي عَيْنٍ
৪. اَسْأَلُ اللهَ الْعَظِيْم، رَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيْم، اَنْ يَّشْفِيَكْ
৫. بِسْمِ اللَّه، بِسْمِ اللَّه، بِسْمِ اللَّه، أَعُوذُ بِعِزَّةِ اللَّهِ وَقُدْرَتِهِ، مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ

আয়াতগুলোর উচ্চারণ https://facebook.com/ruqyahdhaka/videos/376534342782043/

শারীরিক অসুস্থতার জন্য রুকইয়ার বিভিন্ন পদ্ধতি- 

১. এগুলো সরাসরি পড়ে রুগীকে ফুঁ দেয়া, বিশেষত আক্রান্ত স্থানে ফুঁ দেয়া।
২. রুগীর মাথায় হাত রেখে পড়া, অথবা ব্যাথার যায়গায় হাত রেখে পড়া।
৩. এসব পড়ার পর কালোজিরার তেল বা অলিভ অয়েলের ওপর ফুঁ দিয়ে ব্যবহার করতে পারেন, মালিশ করতে পারেন।
৪. পুষ্টিকর কোন খাদ্য, কালোজিরা, মধু, পানি, ভিটামিন অথবা ডাক্তারের দেয়া ঔষধে এগুলো পড়ে ফুঁ দিয়ে খেতে পারেন।
৫. আর এর পাশাপাশি রুকইয়া শুনতে চাইলে “শাইখ হুযাইফি” রুকইয়া এবং সা’দ আল গামিদির আধাঘণ্টার রুকইয়া শুনতে পারেন। এসবের মাঝে অনেক অনেক দোয়া, আয়াতে শিফা আছে। (অডিও লিংক – http://bit.ly/ruqyahdownload#qari)
৬. আর রুকইয়ার গোসলও বিভিন্ন অসুখের জন্য খুব উপকারী। (গোসলের পানিতে হাত রেখে সাতবার করে দরুদ শরিফ, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, ইখলাস, ফালাক, নাস পড়া। সেই পানি দিয়ে গোসল করা।)

ডাক্তারের চিকিৎসা নেয়ার পাশাপাশি পরপর কয়েকদিন উপরোক্ত এক বা একাধিক রুকইয়ার টিপস অনুসরণ করা। এর সাথে আল্লাহর কাছে তাহাজ্জুদ এবং নফল নামাজ পড়ে বেশি বেশি দোয়া করা। সাদকাহ করা।

মানসিক সমস্যার জন্য সুরা ইয়াসিন, সফফাত, দুখান, জ্বিন, তিনকুল – এসব তিলাওয়াত করা খুব উপকারী। এসব হয়তো তিলাওয়াত করেছেন আগেও, কিন্তু এমনি তিলাওয়াত করা আর রুকইয়াহ বা চিকিৎসার নিয়াতে তিলাওয়াত করার মাঝে পুর্ব-পশ্চিম ফারাক।

তো, রুগীর ওপর এসব তিলাওয়াত করা। সমস্যা নিজের হলে, নিজে তিলাওয়াত করলে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়। পাশাপাশি রুকইয়ার গোসল করা যেতে পারে। নিদ্রাহীনতার চিকিৎসাতে এই সুরাগুলোর রুকইয়া আলহামদুলিল্লাহ খুব বেশি উপকারী। তিলাওয়াত করার দুর্বল বিকল্প হিসেবে শোনা যেতে পারে। (অডিও লিংক – http://bit.ly/ruqyahdownload#6)

 

 

যেকোন ব্যথার জন্য রুকইয়াহ

 উসমান ইবনে আবিল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, একবার আমার শরীরে ব্যাথা অনুভব করছিলাম, তখন আমি রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এর কাছে এব্যাপারে অনুযোগ করলাম। রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- তোমার হাতটি ব্যাথার যায়গায় রাখো, এরপর তিনবার বল “বিসমিল্লাহ”। তারপর ৭বার বল- “আ’ঊযু বি’ইঝঝাতিল্লা-হি ওয়াক্বুদরাতিহ, মিন শাররি মা-আজিদু ওয়াউহ্‌া-যির”। : أَعُوذُ بِعِزَّةِ اللَّهِ وَقُدْرَتِهِ مِنْ […]

 ব্যথার জন্য রুকইয়ান

 

রুকইয়াহ করার পর সাইড ইফেক্ট সামলানো

-----------------
রুকইয়াহ করার সময় অনেকের বেশ ধকল যায়। কেউ এতটা ক্লান্ত হয়ে যান, ফিরে হেটে বাড়ী যাওয়ার মত অবস্থা থাকে না। নিজে রুকইয়াহ করলে দেখা যায়, রুকইয়াহ করে এমন ক্লান্ত হয়ে গেছেন, যে পরিবারের জন্য রান্না করতে পারছে না। এরকম সবসময়ই যে হয় তা না, বরং কখনও কখনও এমন হয়ে থাকে। তাই রুকইয়া করার পর কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখা উচিত।
১. রুকইয়ার পর ওযু করা বা হাত-মুখ ধুয়ে নেয়া। এতে অনেক হালকা বোধ হয়।
২. প্রস্রাব-পায়খানা করা। অনেকের ভেতরের এভিল থিংগস রুকইয়ার পর টয়লেটে গেলে বের হয়ে যায়।
৩. সময় দেয়া। আপনি যদি রাকী হন, তবে রুকইয়াহ করার পর রুগীকে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে দিন। অবস্থা বিবেচনায় ১৫ থেকে ৩০ মিনিট হতে পারে।
৪. রুকইয়ার গোসল করা। এটা খুব উপকারী। বিশেষত: অনেকের রুকইয়াহ করতে গিয়ে মাথাব্যথা, পুরো শরীর ব্যথা, কেউ কেউ অনেকটা অসুস্থ হয়ে যান। এক্ষেত্রে রুকইয়াহ শেষে (পানিতে হাত রেখে ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, ৩কুল সব ৭বার করে পড়ে) গোসল করে নেয়া উচিত। তাহলে অনেক আরাম পাওয়া যায়। জিনের রুগীর ক্ষেত্রে যদি কখনও কয়েকদিন রুকইয়াহ করা লাগে, তাহলে প্রতিদিনের রুকইয়াহ শেষে রুকইয়ার গোসল করানো উচিত।
৫. আরেকটা কাজ করা যেতে পারে, তাৎক্ষনিক সুস্থতার নিয়াতে সুরা ফাতিহা এবং আয়াতে শিফা (৯/১৪, ১০/৫৭, ১৬/৬৯, ১৭/৮২, ২৬/৮০, ৪১/৪৪) তিনবার করে পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে খেয়ে নিন। ইনশাআল্লাহ আরাম পাবেন।

 

৬টি আয়াতে শিফা (৯/১৪, ১০/৫৭, ১৬/৬৯, ১৭/৮২, ২৬/৮০, ৪১/৪৪)

১.وَيَشْفِ صُدُورَ قَوْمٍ مُّؤْمِنِينَ 
২. وَشِفَاء لِّمَا فِي الصُّدُورِ
৩. يخْرُجُ مِن بُطُونِهَا شَرَابٌ مُّخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ فِيهِ شِفَاء لِلنَّاسِ
৪. وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاء وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ
৫. وَإِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِينِ
৬. قُلْ هُوَ لِلَّذِينَ آمَنُوا هُدًى وَشِفَاء

 

 

প্রশ্নঃ বাচ্চাদের জন্য কিভাবে রুকইয়াহ করব এবং এক্ষেত্রে লক্ষনীয় বিষয়গুলো কি কি?

-----
উত্তরঃ
.
বাচ্চাদের জন্য রুকইয়াহ করা বড়দের রুকইয়াহ করার চেয়ে তুলনামূলকভাবে সহজ, আবার ফলাফল পাওয়া যায়ও তাড়াতাড়ি। বাচ্চাদের জন্য রুকইয়াহকে আমরা তিনটি ভাগে ভাগ করতে পারি-
.
১) বাচ্চার মধ্যে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলো নিশ্চিতভাবে পাওয়া না যায়ঃ
.
যদি বাচ্চাদের ক্ষেত্রে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলো নিশ্চিত হওয়া না যায় যেমন- “এমন কোন শারীরিক সমস্যা যেটা “দেখে মনে হয়” মেডিক্যালে এর কোন “ব্যাখা নেই” অথবা “মনে হচ্ছে” যে নজর লেগেছে অথবা বাচ্চারা তাদের স্বাভাবিক আচরণ করছে না” এক্ষেত্রে আমরা বাচ্চাদের জন্য “সার্বজনীন পূর্ণ রুকইয়াহ প্রোগ্রাম” বা দীর্ঘ মেয়াদি কোন রুকইয়ার পরামর্শ দিবো না। বরঞ্চ এই পর্যায়ে আমরা “বদনজরের সাধারণ রুকইয়া” অথবা “৭ দিনের ডিটক্স প্রোগ্রাম” করার পরামর্শ দিবো। বাচ্চার বয়স যদি এক বছরের নিচে হয় তাহলে ডিটক্স প্রোগ্রাম থেকে মধু বাদ দিবেন। ছোট বাচ্চা এক কাপ বা আধা গ্লাস পানি না খেতে পারলে সেটারও অর্ধেক খাওয়ান। আর তিলাওয়াত বাবা অথবা মা করে দিতে পারেন। ৭ দিনের ডিটক্স প্রোগ্রাম সাধারণত সব বয়সের মানুষের জন্যই উপযোগী।
.
২) বাচ্চার মধ্যে নিশ্চিতভাবে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলো পাওয়া যাচ্ছে কিন্তু জ্বিনও হাজির হচ্ছে না এবং বাচ্চার খুব বেশি ইফেক্টও হচ্ছে নাঃ
.
যদি আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলো নিশ্চিত হওয়া যায় কিন্তু বাচ্চা শক্ত কোন প্রতিক্রিয়াও না দেখায় আবার জ্বিন দ্বারা আসর নাও হয় তাহলে সেটা হতে পারে উপরে উল্লিখিত চিকিৎসা পদ্ধতি নেওয়ার কারণে (৭ দিনের ডিটক্স প্রোগ্রাম)। এক্ষেত্রে আমরা পরামর্শ দিবো সার্বজনীন রুকইয়াহ প্রোগ্রাম করার জন্য। কিন্তু রুকইয়াহ করতে হবে আরমাদায়ক ভাবে। অর্থাৎ বাচ্চাকে জোর করে মূর্তির মত এক জায়গায় বসিয়ে রাখা যাবে না, বাচ্চা ভয় পায় এমন কিছু করা যাবে না। আর এসব ক্ষেত্রে সাধারণত হিজামাও করার দরকার পরে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এত টুকুতেই বাচ্চা ভাল হয়ে যায়। এতে বাচ্চার কোন অসুবিধাও হয় না আবার জ্বিনের আসরের মত কিছুও ঘটে না।
.
৩) যদি সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে, যেমন বাচ্চা আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে বা চিৎকার চেঁচামেচি করে, বাচ্চার ওপর জ্বিন হাজির হয়ে যায় বা আসর করে বসে তাহলে এক্ষেত্রে প্রতিদিন সরাসরি রুকইয়ার পাশাপাশি আমরা সার্বজনীন রুকইয়াহ প্রোগ্রাম অনুসরণ করার পরামর্শ দিবো। এক্ষেত্রে অভিজ্ঞ কাউকে দিয়ে প্রয়োজনে হিজামাহ করানো যেতে পারে। আর একটু খেয়াল রেখে (সতর্কভাবে) রুকইয়াহ করতে হবে। যেমন বাচ্চাকে কাছে বসিয়ে রাখতে হবে, রুকইয়াহ এর আয়াতগুলোতে বেশি বেশি জোর দিতে হবে।
.
.
বিশেষ জ্ঞাতব্যঃ
-------------------
.
ক) বাচ্চার নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্য সবসময়ই সর্বোচ্চ গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হবে। যেহেতু বাচ্চার আচরণ ও মানসিকতা পূর্ণবয়স্ক মানুষের মত নয়, তাই বাচ্চার সাথে পূর্ণবয়স্ক মানুষের মত আচরণ করা যাবে না। রুকইয়াহ করার সময় বাচ্চা যেন পরিপূর্ণ আরামদায়ক ও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। রুকইয়াহ করার সময় একটু পর পরে চেক করতে হবে, বাচ্চারা রিল্যাক্সড ও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে কিনা। তাদের সাথে হালকা খেলাধূলাও করতে পারেন, তাদেরকে বলতে পারেন “আমার সাথে সাথে পড়।” যদি আপনি বাচ্চার অপরিচিত কেউ হয়ে থাকেন, তাহলে রুকইয়াহ করার আগে ও পরে তার সাথে কিছু সময় কাটান। যেন সে আপনাকে সহজ ভাবে নিতে পারে।
.
খ) কখনোই, কখনোই বাচ্চাকে প্রহার বা আঘাত করবেন না। সত্যিকার অর্থে রুগী যেই হোক না কেন, বাচ্চা অথবা পূর্ণবয়স্ক, তাকে প্রহার করা সাধারণত ভালো রেজাল্ট দেয় না। বরং এর কারণে অনেক সময় জ্বিন আরো দীর্ঘ সময় শরীরে ঘাপটি মেরে বসে থাকতে পারে। আর বাচ্চার গায়ে আঘাত করা হলে, বাচ্চা সিরিয়াস ইনজুরিতে পড়ে যেতে পারে। অনেকক্ষেত্রে রুকইয়াহ চলাকালীন সময়ে “জ্বিনকে” প্রহার করার কারণে বাচ্চা মারাও যায়। তাই প্রহার করা এক্ষেত্রে জ্বিনকে সাহায্য করারই নামান্তর।
যদি বুঝতে পারেন জ্বিন শরীরের এখানে সেখানে ছুটোছুটি করছে, তাহলে মৃদুভাবে সেই জায়গায় মালিশ করবেন। ফলে বাচ্চাও আরাম বোধ করবে আর জ্বিনও প্রেশারে থাকবে।
.
গ) বাচ্চাদের রুকইয়াহ করার সবচেয়ে জটিল বিষয় হচ্ছে, বাচ্চারা বড়দের মত তাদের অনুভূতি আর অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করতে পারে না। স্বভাবগত ভাবেই বাচ্চারা একটু ছুটোছুটি বা দৌড়াদৌড়ি পছন্দ করে। এটাকে জ্বিনের লক্ষণের সাথে গুলিয়ে ফেললে হবে না। সময় নিয়ে বাচ্চার আচরণ পর্যবেক্ষণ করতে হবে; বিশেষ করে রুকইয়াহ করার সময় ও রুকইয়াহ করার আগে বা পরের সময়ের আচরণে পার্থক্য ভালো করে খেয়াল করতে হবে। তাহলে আপনি বাচ্চার স্বাভাবিক আচরণ আর অস্বাভাবিক আচরণের মাঝে পার্থক্য ধরতে পারবেন।
.
ঘ) যদি বাচ্চা বয়সে একটু বড় হয়, নিজের কথা বুঝিয়ে বলতে পারে; তাহলে বাচ্চার সাথে তার সমস্যা নিয়ে আলোচনা করুন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, তার মন থেকে শয়ত্বান জ্বিনের ভয় দূর করতে হবে। বাচ্চাদের মনে বড়দের তুলনায় শয়ত্বান জ্বিনের ভয় বেশি প্রভাব ফেলে। এমন যেন না হয়, জ্বিনের ভয়ে বাচ্চা ঘুমাতেই পারছে না। বাচ্চার কাছে শয়ত্বান জ্বিনের দূর্বলতাগুলো তুলে ধরবেন। তাদেরকে বুঝান শয়ত্বান জ্বিন কিভাবে কুর’আনের ভয়ে পালিয়ে বেড়ায়। বাচ্চাদেরকে শয়ত্বান জ্বিন থেকে সুরক্ষার জন্য মাসনূন দু’আ গুলো শিখিয়ে দিন।
.
ঙ) যদি জ্বিন হাজির হয়েই যায় এবং কথাও বলা শুরু করে, তাহলে জ্বিনের সাথে অপ্রয়োজনীয় ও বেশি কথা বার্তা বলবেন না। জ্বিনকে “ইসলাম গ্রহণ করে বাচ্চার শরীর থেকে বের” হয়ে যেতে বলবেন। আর যদি “ইসলাম” গ্রহণ করতে না চায়, তাহলে বলবেন যেন “চলে যায় এবং আর ফিরে না আসে।” জ্বিনের কোন গাল-গল্পই বিশ্বাস করবেন না, তাদের সাথে কোন বোঝাপড়াতেও যাবেন না।
.
চ) রুকইয়াহ করার জন্য নির্দিষ্ট কোন সময় ধরাবাঁধা নেই। কিন্তু আপনি যদি দেখেন কোন নির্দিষ্ট সময়ে বাচ্চার মধ্যে লক্ষণগুলো প্রকট হয় (যেমনঃ মাগরিবের পর), তাহলে সে সময়ে রুকইয়াহ করাটাই সবচেয়ে ভালো। অন্যথায় যে সময় বাচ্চা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, সে সময়ই রুকইয়াহ করবেন।
.
ছ) অবস্থা বুঝে রুকইয়াহ করার পদ্ধতি ও সময় পরিবর্তন করতে পারেন। তবে খুব দ্রুত রুকইয়াহর পদ্ধতি পরিবর্তন করবেন না, কারণ এতে জ্বিন শয়তান আপনাকে নিয়ে খেলা করার বা ম্যানুপুলেট করার সুযোগ পাবে।
.
আল্লাহই ভালো জানেন।

 

 

রুকইয়া শুরুর পূর্বে
------------------------
যারা রুকইয়া শুরু করবেন অথবা রুকইয়া করছেন নিচের বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন ইনশাআল্লাহ।
১। রুকইয়া একপ্রকার ইবাদত। দুয়াতে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া হয়, একইভাবে রুকইয়ার মাধ্যমেও আল্লাহর সাহায্য চাওয়া হয়। এটাকে কখনোই হেলাফেলার বিষয় মনে করবেন না। “রুকইয়া করে দেখি কাজ হয় কিনা। কাজ নাহলে কবিরাজের কাছেই যেতে হবে” এরকম মানসিকতা নিয়ে রুকইয়া করবেন না। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“আর আমি কুরআন নাযিল করি যা মুমিনদের জন্য শিফা ও রহমত, কিন্তু তা যালিমদের ক্ষতিই বাড়িয়ে দেয়।” (বনী ইসরাঈল ৮২)
আল্লাহর কালামে শিফা আছে এই কথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা রেখে রুকইয়া শুরু করবেন।
২। “রুকইয়া করব এবং কবিরাজের চিকিৎসাও চালিয়ে যাব” এরকম মন মানসিকতা থাকলে রুকইয়া করবেন না। রুকইয়ার পাশাপাশি ডাক্তারী চিকিৎসা নিতে পারেন। কিন্তু কবিরাজের চিকিৎসা,জীন হাজির করে জবাব নেয়া এমন কিছু করা যাবেনা। রুকইয়া শুরুর পূর্বে গায়ে/বাসার সকল তাবিজ নষ্ট করবেন। তাবিজ নষ্ট করে তাওবা করার পর রুকইয়া শুরু করবেন। 
শরীয়ত সমর্থন করেনা এমনকিছু বাসায় রেখে রুকইয়া করবেন না। যেমন- কুকুর, প্রাণির উন্মুক্ত ছবি, মূর্তি, জ্যোতিষীদের দেয়া কোনকিছু। প্রশ্ন করতে পারেন, তাবিজ থাকলে সমস্যা কি? সমস্যা আছে, তাবিজ রেখে রুকইয়া করলে অনেক সময় উলটাপালটা প্রতিক্রিয়া দেখা যায়, সমস্যা থাকলেও রুকইয়া করে কোন উপকার হয়না।
৩। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “বান্দা আমার সম্পর্কে যেমন ধারণা করে আমি তার নিকট তেমনই”। (বুখারী, ৬৯০১)
আল্লাহ সম্পর্কে সর্বোচ্চ সুধারণা রাখতে হবে। যাবতীয় সমস্যার জন্য বেশি বেশি দোয়া করতে হবে। বিশেষত দোয়া কবুলের সময়গুলোতে (যেমন- তাহাজ্জুদের সময়ে)। আল্লাহ আপনার দোয়া কবুল করবেন কিনা সেটা নিয়ে কনফিউজড থাকা যাবেনা। আল্লাহ দোয়া কবুল করবেন এমন ধারণা রেখেই দোয়া করতে হবে। এটা দোয়ার আদব।
৪। ফরজ ইবাদতে (যেমন নামাজ,পর্দা ইত্যাদি) সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। রুকইয়া করছেন এজন্য বা অন্যকোন কারণে না, আল্লাহ করতে বলেছেন তাই আপনাকে নামাজ পড়তে হবে, পর্দা করতে হবে। ফরজ ইবাদত নিয়মিত না থাকলে কি রুকইয়া শুরু করা যাবেনা? যাবে, তবে ফরজ ইবাদতের দিকে বেশি মনযোগ দিতে হবে। রুকইয়া যেহেতু এক প্রকার ইবাদত তাই রুকইয়া থেকে ভালো ফলাফল আশা করলে ফরজ ইবাদত ঠিক হওয়া জরুরি। পাপ কাজ থেকে বেঁচে থাকতে হবে যথাসম্ভব। সুস্থ এবং অসুস্থ সবারই উচিত হিফাজতের জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিখিয়ে দেয়া সকাল সন্ধ্যা ও ঘুমানোর আগের আমলগুলো করা। যারা রুকইয়া করবেন এসব আমল করা তাদের জন্য আরো জরুরী। হিফাজতের জন্য বলা মাসনুন আমল এখানে পাওয়া যাবে,
৫। কিছু মানুষ বলে বেড়ায়, “কোরআন দিয়ে হবেনা। কুফরি কাটানোর জন্য কুফরিই করতে হবে।” নাউযুবিল্লাহ! জেনেশুনে কুফরি করা এবং মানুষকে কুফরির দিকে আহবান করা মারাত্মক গুনাহের কাজ। কুফরি কাটানোর জন্য কোরআন দিয়েই চিকিৎসা করতে হবে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“আল্লাহ কোন হারাম বস্তুতে তোমাদের জন্য আরোগ্য রাখেননি।” (সহীহ ইবনে হিব্বান)
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“যদি আমি এই কোরআন পাহাড়ের উপর অবতীর্ণ করতাম, তবে তুমি দেখতে যে, পাহাড় বিনীত হয়ে আল্লাহ তা’আলার ভয়ে বিদীর্ণ হয়ে গেছে। আমি এসব দৃষ্টান্ত মানুষের জন্যে বর্ণনা করি, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে।” (সুরা আল হাশর ২১)
কোরআন কোন পাহাড়ের উপর নাজিল করলে আল্লাহর ভয়ে পাহাড়টাই মাটিতে মিশে যেত! সুবহানাল্লাহ! সৃষ্টিকুলের মালিক আল্লাহ তায়ালার কালামের সামনে দাঁড়াতে পারে এমন কিছু আসমান জমীনে নাই। আল্লাহর কোন সৃষ্টি, আপনার অসুখ এসবেরও কোন ক্ষমতা নাই আল্লাহর কালামের সামনে টিকে যেতে পারে।
প্রচলিত কুফরি কবিরাজি সম্পর্কে জানুন এবং এসব থেকে দূরে থাকুন। 
৬। আল্লাহর উপর ভরসা রেখে রুকইয়া চালিয়ে যাবেন। পরিপূর্ণ সুস্থ হওয়া পর্যন্ত রুকইয়া করবেন। রুকইয়া কতদিন করলে সুস্থ হবেন? আল্লাহ যেদিন চান সেদিন আপনি সুস্থ হয়ে যাবেন, দিনক্ষণ হিসেব করে বলা যাচ্ছেনা। যাদের সমস্যা একটু বেশি তাদের উচিত নিয়মিত রুকইয়াতে দৃঢ় থাকা।
আল্লাহ আপনাদের রুকইয়াহ সফল করুন এবং যাবতীয় রোগব্যধি থেকে শিফা করুন।

 

 

 মাসনুন আমল
https://allzinone.blogspot.com/2021/05/blog-post_21.html



বদনজর বিষয়ক সবকিছু একসাথে

https://allzinone.blogspot.com/2021/05/blog-post_56.html



জ্বীন বিষয়ক সব একসাথে

https://allzinone.blogspot.com/2021/05/blog-post_13.html


প্রসিদ্ধ বিষয়গুলো সব একসাথে
https://allzinone.blogspot.com/2021/05/blog-post_9.html


শয়তানি ওয়াসওয়াসা বিষয়ে সবকিছু একসাথে
https://allzinone.blogspot.com/2021/05/blog-post_25.html


যাদু বিষয়ক সবকিছু একসাথে Treatment relating to magic illness in a single place

https://allzinone.blogspot.com/2021/05/treatment-relating-to-magic-illness-in.html