Showing posts with label রুকইয়াহ. Show all posts
Showing posts with label রুকইয়াহ. Show all posts

Saturday, May 15, 2021

জিন বেশিরভাগ সময় মেয়েদের উপর আছর করে মূলত শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য

[১]
জিন বেশিরভাগ সময় মেয়েদের উপর আছর করে মূলত শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য। তদ্রুপ কিছু কিছু ছেলের সাথেও নারী জিন শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য আছর করে।

এর সত্যতার প্রমাণ হলো  প্রায় ৮/৯ মাস পূর্বে  আমার এক বন্ধুবর আমাকে বললো,
 -- মাহমুদ, আমাকে একটা হেল্প করবি?
 -- কি হেল্প?
 -- আসলে গতকাল এক মহিলা আমার কাছে বার্তা পাঠিয়েছে এই যে "" আসসালামুআলাইকুম হুজুর, আমি একজন বিবাহিত মহিলা বিগত কয়েক মাস ধরে কোন এক জিন আমার ওপর আছর করেছে। সে প্রায় সময়ই আমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে। ঘুমন্ত অবস্থায় অথবা জাগ্রত অবস্থায় সে আমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে। আমি তার অত্যাচারে একদম অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। এখন হুজুরের কাছে আমার আকুল আবেদন আমি কিভাবে এর থেকে পরিত্রান পেতে পারি আমাকে একটু বলবেন""। এ বার্তাটি আমার কাছে সে পাঠায় । এখন তুই বল আমি এই মহিলাকে কি জবাব দিব কিভাবে সে এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাবে? 

 -- আসলে দেখ আমি এই ব্যাপারে অনেকটাই অজ্ঞ! সুতরাং তুই অমুক হুজুরের কাছে গিয়ে এ ব্যাপারে আলাপ কর।

আমি তার কথা শুনে অনেকটা সন্দিহানে পড়ে গিয়েছিলাম যার কারণে তাকে অন্য এক হুজুরের সাথে আলাপ করতে বললাম।এবং এই ব্যাপারটা নিয়ে অনেকটা চিন্তিত হয়ে পড়লাম। তারপর এটা নিয়ে  ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে এই আয়াতটি সামনে আসে।  সূরা আর রহমানের ৫৬ নং আয়াত, "সেখানে রয়েছে আনতনয়না রমণীগণ, যাদেরকে তাদের পূর্বে কোন মানুষ বা জিন স্পর্শ করেনি"’এর ব্যাখ্যায় ইবনু জাওজী বলেন, এই আয়াতে দলীল রয়েছে যে, জিনের সাথে মানুষের এবং মানুষের সাথে জিনের শারীরিক মিলন সম্ভব।

এ আয়াতের ব্যাখ্যা জানার পর আমার কাছে সুস্পষ্ট হয়ে গেল মানুষের সাথে জিনের শারীরিক সম্পর্ক সম্ভব। এবং ওই মহিলার সাথে যা যা ঘটেছে তাও সত্য।
.

বলে রাখি আমার যে বন্ধু  সে একজন হাফেজ, এবং সে এখন দাওরা হাদিস পড়ছে তার পাশাপাশি একটি মসজিদের মোয়াজ্জিন। সে বিবাহিত তার একটি ছেলেও আছে।ইমাম মোয়াজ্জেন এর কাছে আশেপাশে মানুষ অনেকেই অনেক কিছু জানতে চায়। সেই সুবাদে উক্ত মহিলা তার কাছে এই বার্তা পাঠায়।পরবর্তিতে ঐ মহিলার সাথে কি হয়েছে তা আমি জানিনা।এই ব্যাপারে আমার বন্ধুর সাথে কোন ধরণের কথা হয়নি।

[২]

জিনেরা বেশিরভাগ মেয়েদের হায়েযের সময় আছর করে যখন তারা নাপাকি অবস্থায় থাকে এবং আল্লাহ তায়ালার জিকির থেকে গাফেল থাকে। কেননা হায়েযের সময়ে অনেক মেয়েরাই একাকী থাকে। এমনকি হায়েযের কাপড় এখানে
সেখানে ফালায়,মাথায় কাপড় দেয় না, একাকী অন্ধকারে ঘুমায়,বন জঙ্গল দিয়ে চলাচল করে। এজন্যই উক্ত সময়ে তাদের উপরে বেশি আছর করে।

আবার অনেক মেয়েরাই আছে যারা বাথরুমে ঢোকার দোয়া পড়ে না। এমনকি পুরো উলঙ্গ হয়ে গোসল করে। এর ফলে দুষ্টু জিনেরা তার গোপন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দেখে লালচে হয়ে যায়।এবং তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য পায়তারা করে।

মেয়েদের উপর জিনের আছর করার প্রধান কারণ হচ্ছে এই দুটি। তাই আপুরা এই দুটি ব্যাপারে সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি।
.

আর ছেলেদের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় দুষ্টু female জিনেরা আছর করে তাদের নাপাকি অবস্থায়। অর্থাৎ অনেক ছেলেরাই আছে, যারা স্ত্রী সহবাস করে সাথে সাথে গোসল না করে অন্যান্য দিনের ন্যায় দুপুরবেলা গোসল করে। অথচ তার জন্য উচিত ছিল সাথে সাথে গোসল করে নেওয়া । কিন্তু সে এটা না করে সারাদিন নাপাক অবস্থায় এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়ায়। এই অবস্থায় নারী জিনেরা তাদের উপর আছর করে।এমনকি তাদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক ও করতে চায়।

আবার অনেকেই আছে যারা অবিবাহিত।  তাদের স্বপ্নদোষ হওয়ার পর সাথে সাথে গোসল করার কথা ছিল। কিন্তু তা না করে নাপাক অবস্থায় এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়ায় এমতাবস্থায় তাদের উপর জিনেরা আছর করে। আবার অনেকে আছে যেখানে সেখানে প্রস্রাব করে । যার কারণে ছেলেদের গোপনাঙ্গ তাদের চোখে দৃশ্যমান হয় । আর তারা তখন তাদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করার নিমিত্তে তাদের উপর আছর করে। অতএব ছেলেদের উপর আছর করার প্রধান কারণগুলো মধ্য থেকে এগুলো কয়েকটি। তাই আমার ভাইদের কাছে আকুল আবেদন এগুলোর প্রতি সতর্ক হওয়া চাই।

[৩]

শারীরিক সম্পর্কের উদ্দেশ্যে জিনের আছর আপনার যে ক্ষতি করতে পারে তা হল আপনি যদি অবিবাহিত হন তাহলে সে নানান উপায়ে আপনার বিয়েতে বাধা দিতে থাকবে। কেননা সে চায়না আপনার অন্য যায়গায় বিয়ে হয়ে যাক আর আপনি অন্য কারো সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে যান। কেননা সে আপনার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করতে করতে আপনার প্রতি আশেক হয়ে যায়।  এজন্য এই জিনের আছরের কারণে অনেক মেয়েদের বিয়ে হতে বিলম্ব হয়ে থাকে। 

আবার আপনি যদি বিবাহিত হন তাহলে সব সময় আপনার সংসারের মাঝে ঝগড়া লাগানোর চেষ্টা করে। সব সময় আপনার হাজব্যান্ড থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করবে। আপনাদের উভয়ের মাঝে সব সময় ধন্দ লাগিয়ে রাখবে। এই কারণে অনেক সংসারে ঝগড়া লেগেই থাকে।
.

শারীরিক সম্পর্ক করলে বুঝার উপায় হলো,কোন জিন যদি কোন মেয়ের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করার উদ্দ্যেশেই আছড় করে। তখন মেয়েটির গায়ের বিভিন্ন জায়গায় দাগ পরিলক্ষিত হয়।
এই দাগ মাঝে মাঝেই মেয়েটির গায়ে দেখা যায়। শারীরিক সম্পর্ক না হলেও এরকম দাগ দেখা যাবে,লাল দাগ, খামচি বা কামড়ের দাগ ইত্যাদি।বিশেষ করে গলার নিচের দিকে।

 কোন জিন যদি কোন মেয়েকে পছন্দ করে তখন ওই জিন সবসময় ওই মেয়ের আশেপাশে থাকে। যখন ঘুমায় তখন তার কাছে আসে, অতঃপর ঘুমের মধ্যেই শারীরিক সম্পর্ক করে।মেয়েটি তখন বাস্তবতা অনুভব করতে পারে, কিন্তু কাউকে দেখতে পায় না।

আর ছেলেদের ক্ষেত্রে জেগে থাকা অবস্থায় ( হস্তমৈথুনের মাধ্যমে) এসময় জিন রোগির হাত,মস্তিষ্ক পজেস করে ইন্দ্রিয়তৃপ্তি লাভ করে।এটা তখনই বোঝা যাবে যখন কেউ আগে থেকে গুপ্ত অভ্যাসে লিপ্ত ছিল না কিন্তু ধীরে ধীরে যৌন চাহিদা বৃদ্ধির ফলে হস্তমৈথুনে লিপ্ত হয়ে যায়।  অথবা আগে থেকেই গুপ্ত অভ্যাসে লিপ্ত ছিল কিন্তু তা অল্প পরিমানে,হঠাৎ করে যদি মাত্রাতিরিক্ত ভাবে যৌন চাহিদা বেড়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে আশিক জিনের কাজ এটা। 

আবার কেউ কেউ বলেন জিন মানুষের সঙ্গে মিলনের সময় যৌনাঙ্গে গরম বাতাসের মত অনুভূত হয়। এমনকি জিনরা দীর্ঘক্ষণ সঙ্গম করে। তাই এই সঙ্গমের পরে মেয়ে ছেলেরা খুব দুর্বল হয়ে যায় । এবং দিন দিন শরীর শুকিয়ে যায়। এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ব্যথা অনুভূত হয়।

[৪]

এই সমস্যাগুলো থেকে বেঁচে থাকতে  প্রতিনিয়ত আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করা। প্রতিদিন কোরআন তিলাওয়াত করা, সাওয়াবের কাজ করা, রোজা রাখা, আল্লাহর জিকিরে নিজেকে ব্যস্ত রাখা এবং কথা বলার সময়ে জিহ্বাকে সংযত রাখা, প্রতিনিয়ত আল্লাহর সাহায্য চাওয়া এবং বেশি বেশি তাওবা ইস্তেগফার করা।

সুরা বাকারা, নূর, ইউসুফ তিলাওয়াত করা। তিলাওয়াত করতে না পারলে অডিও শোনা।

যতই ভয় দেখাক, ঝামেলা করুক, বিভিন্ন কথাবার্তা বলে একজনের প্রতি আরেকজনকে বিষিয়ে তোলার চেষ্টা করুক, জিনকে কোন প্রকার পাত্তা না দেয়া। এসব জিনরা চায় আমরা তাদের গুরুত্ব দেই। তারা নিজেদেরকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবতে ভালোবাসে, এজন্য বিভিন্ন মিথ্যা কিচ্ছা কাহিনী বর্ণনা করে।

সবচেয়ে জরুরী বিষয়! দোয়া করা। দোয়া মুমিনের সবচেয়ে বড় অস্ত্র। দিনের অধিকাংশ সময়ে দোয়া করা। দোয়ার জন্য আলাদা সময় বের করে নেয়া। দুই হাত তুলে রবের নিকট দোয়া করা, যেন আল্লাহ এই সমস্যা পুরোপুরি ভালো করে দেন এবং তাদেরকে যেন আল্লাহর উপর ভরসা করে ধৈর্য্য ধরার তৌফিক দেন। 
--------------------------

লেখনীতে - Mahmud Bin Noor
 
 
 
মাসনুন আমল
https://allzinone.blogspot.com/2021/05/blog-post_21.html



বদনজর বিষয়ক সবকিছু একসাথে

https://allzinone.blogspot.com/2021/05/blog-post_56.html



জ্বীন বিষয়ক সব একসাথে

https://allzinone.blogspot.com/2021/05/blog-post_13.html


প্রসিদ্ধ বিষয়গুলো সব একসাথে
https://allzinone.blogspot.com/2021/05/blog-post_9.html


শয়তানি ওয়াসওয়াসা বিষয়ে সবকিছু একসাথে
https://allzinone.blogspot.com/2021/05/blog-post_25.html


যাদু বিষয়ক সবকিছু একসাথে Treatment relating to magic illness in a single place

https://allzinone.blogspot.com/2021/05/treatment-relating-to-magic-illness-in.html

অন্যান্য রুকইয়াহ বিষয়ক সব একসাথে

https://allzinone.blogspot.com/2021/05/blog-post_14.html


শয়তান যাদুকর/কবিরাজ প্রসঙ্গে সবকিছু একসাথে

https://allzinone.blogspot.com/2021/05/blog-post_76.html


রিযিকের ব্যাপারে রুকইয়াহ
https://allzinone.blogspot.com/2021/05/blog-post_43.html
 

 

Friday, May 14, 2021

চার ধরণের রুকইয়াহ

 

চার ধরণের রুকইয়াহ

-----------------
[ক]
শাইখ খালিদ হিবশি হাফিযাহুল্লাহু বলেছেন, রুকইয়াহ ৪ প্রকার-
১. রুকইয়াহ শারইয়াহ
২. রুকইয়াতুল মুবাহাহ
৩. রুকইয়াতুল মাকরূহা
৪. রুকইয়াতুল মুহাররামা
- মিনাসসাতুয যাদি, রুকইয়াহ শারইয়াহ; আহকাম ওয়া তাওজিহাত কোর্স, অধ্যায় ১, পর্ব ৭
 
--------------------
[খ]
সংক্ষিপ্ত পরিচয়-
১. রুকইয়াতুশ শারইয়াহ
- রাসূল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অথবা জিবরীল আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণিত দোয়া ইত্যাদি দ্বারা রুকইয়াহ করা। (রুকইয়াহ বইয়ে আমরা যেটাকে মাসনুন বলেছি)
 
২. রুকইয়াতুল মুবাহাহ (জায়েজ রুকইয়াহ)
- উলামায়ে কিরামের বর্ণিত সেই ৪ শর্ত অনুযায়ী বৈধ রুকইয়াহ। সিহরের আয়াত, নজরের আয়াত, শিফার আয়াত- এমন বিভিন্ন ক্যাটাগরির আয়াত তিলাওয়াত করে রুকইয়াহ করাও এর মাঝে অন্তর্ভুক্ত।
 
৩. রুকইয়াতুল মাকরূহাহ (অপছন্দিয় বা মাকরুহ রুকইয়াহ)
- জাদুকর তান্ত্রিকদের সাথে, কিংবা কাফির এক্সোরসিস্টদের ঝাড়ফুঁকের সাথে যেসব ঝাড়ফুঁকের কার্যাবলি সাদৃশ্য রাখে, অথবা যেসব রুকইয়ার মাঝে উদ্ভট কার্যাবলী সম্পৃক্ত থাকে। 
 
৪. রুকইয়াতুল মুহাররামাহ (নিষিদ্ধ বা হারাম রুকইয়াহ)
- অন্যান্য হারাম-কুফর-শিরক মিশ্রিত নিষিদ্ধ রুকইয়াহ।
 
[গ]
আমাদের করণীয়: আমরা চেষ্টা করব রুকইয়াহ শারইয়াহ অর্থাৎ মাসনুন রুকইয়ার মাঝে সীমাবদ্ধ থাকতে। অপারগ হলে বা বিশেষ প্রয়োজনে জায়েজ রুকইয়াও অনুসরণ করব। কিন্তু এরচেয়ে নিচে কখনওই নামবো না। যারা অপছন্দনিয় বা নিষিদ্ধ পদ্ধতি অনুসরণ করবে, প্রোমোট করবে, বৈধ এবং অবৈধ রুকইয়ার মিশ্রণ ঘটাবে। তাদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখবো। এমন কোন কাজ করব না, যাতে তাদের প্রচার-প্রসার ঘটে।
.
উল্লেখ্য, ইসলাম কিউএর মত মিনাসসাতুয যাদি-ও একটি অসাধারণ ওয়েবসাইট। যেখানে শাইখ সালিহ আল মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহু তা’আলা ওয়া ফাক্কাল্লাহু আসরাহু) প্রধান দিক নির্দেশক ছিলেন। এখানে আরবি ভাষায় দ্বীনি ইলমের বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন শাইখের উন্মুক্ত-অবমুক্ত কোর্স রয়েছে।

তিন স্তরের রুকইয়াহ

 

তিন স্তরের রুকইয়াহ

-------
রুকইয়াহ শারইয়ার মাঝে যা কিছু পড়া হয়, সেগুলোকে আমরা তিনস্তরে ভাগ করতে পারি:
 
১. সর্বোত্তম
২. উত্তম
৩. বৈধ।
 
আমরা এগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
তবে এর আগে জেনে রাখা ভালো, আপনাকে প্রতিটি ক্যাটাগরি থেকেই পড়তে হবে, এটা আবশ্যক না। আপনি চাইলে উল্লেখিত সর্ব প্রকারের আয়াত এবং দোয়া থেকে পড়তে পারেন, অথবা চাইলে যেকোন এক প্রকার যেমন, শুধু আফদ্বাল বা খায়ের রুকইয়াহ থেকে পড়তে পারেন। তবে বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে, শুধুমাত্র মাসনুন রুকইয়াহগুলো বারবার পড়ে দীর্ঘক্ষণ রুকইয়াহ করলে তুলনামূলক বেশি উপকার হয়।
আরেকটি কথা, “সাধারণ আয়াতে রুকইয়াহ” বলতে যে আয়াতগুলো আমরা বুঝি, সেটা নিচে উল্লেখিত প্রথম দুই স্তরের আয়াত দিয়ে সাজানো হয়েছে।
.
১. আফদ্বাল ওয়া মাসনুন (সর্বোত্তম এবং সুন্নাত)
ক. রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অথবা সাহাবায়ে কিরাম থেকে যেসব দোয়া এবং আয়াত দ্বারা রুকইয়াহ করার কথা বর্ণিত হয়েছে। যেমন: সুরা ফাতিহা, সুরা ফালাক, সুরা নাস। আযহিবিল বা’স রব্বান নাস....
খ. যেসব আয়াত এবং দুয়া শয়তান থেকে নিরাপদ থাকতে, বিপদ থেকে বাঁচতে, কিংবা সুস্থতার জন্য রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পড়েছেন অথবা পড়তে বলেছেন। যেমন: আয়াতুল কুরসি, সকাল-সন্ধ্যার কোন মাসনুন দোয়া
গ. কোরআনুল কারিম অথবা হাদিসে বর্ণিত অন্যান্য নবীদের দু’আ। যেমন: আইয়্যুব আলাইহিস সালামের দু’আ “আন্নি মাসসানিয়াদ দ্বুররু ওয়া আনতা আরহামুর রহিমীন”।
.
২. খইর (উত্তম)
প্রাসঙ্গিক আয়াতসমুহ। আক্রান্ত ব্যক্তির সমস্যার বিষয়ে কোরআনুল কারিমের যে আয়াতগুলোতে আলোচনা হয়েছে সেসব আয়াত। মাসনুন রুকইয়ার পর তুলনামুলকভাবে এই আয়াতগুলো অন্যান্য আয়াতের চেয়ে বেশি উপকারী।
যেমন যাদুর আক্রান্তের জন্য: সুরা আ'রাফ ১১৭-১২২, সুরা ইউনুস ৮১-৮২, সুরা ত্বহা ৬৯নং আয়াত।
জিন আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য: সুরা সফফাতের প্রথম ১০ আয়াত, সুরা জিনের প্রথম ৯ আয়াত, সুরা আর-রহমানের ৩৩ থেকে ৩৬ আয়াত।
বদনজর আক্রান্তের জন্য: সুরা কাহাফের ২৯নং আয়াত, সুরা কলামের শেষ ২ আয়াত।
.
৩. জায়েয (বৈধ)
এছাড়া কোরআনুল কারিমের অন্য যেকোন আয়াত, রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত যেকোন দোয়া দিয়ে আপনি রুকইয়াহ করতে পারেন। এরসাথে নিজে থেকে চাইলে কোন দোয়া করতে পারেন। যেমন প্রসিদ্ধ কিছু দোয়া: হে আল্লাহ! সব যাদু ধ্বংস করে দাও (আল্লাহুম্মা ফুক্কা কুল্লা সিহর) সব রোগ থেকে আরোগ্য দাও (আল্লাহুম্মাশফি কুল্লা মারিয) আল্লাহ তোমার শিফা থেকে আমাকে তুমি আরোগ্য দাও। (আল্লাহুম্মাশফিনি বিশিফাক) আপনি এসব দোয়া আরবিতে করতে পারেন অথবা নিজের ভাষা বাংলায় করতে পারেন, কোন সমস্যা নেই!
পুর্বে উল্লেখিত শরঈ বিধানের সীমারেখা লক্ষণ না করলে উপরের সবগুলোই জায়েজ, আর সবগুলো রুকইয়াহ শারইয়ার মধ্যেই গণ্য হবে। আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন!

জ্বিনের রোগীকে মারধোর করা এবং গাইরে মাহরামকে স্পর্শ করা প্রসঙ্গ

 May be an image of text that says 'জবনের রোগীকে মারধোর করা এবং গাইরে মাহরামকে স্পর্শ করা প্রসঙ্গ'

 

 

 

 

জ্বিনের রোগীকে মারধোর করা এবং গাইরে মাহরামকে স্পর্শ করা প্রসঙ্গ

--------
[ক]
কিছুদিন আগে আমাদের এক ভাই রুকইয়ার মাঝে রোগীকে মারধোর করা এবং গাইরে মাহরামকে স্পর্শ করা প্রসঙ্গে এমন কিছু মন্তব্য করেছেন, যা রাক্বিদের ঈমান এবং তাক্বওয়ার ব্যাপারে ঝুঁকিপূর্ণ।
.
লক্ষণীয় বিষয় হল, উনি উনার লেখার নিচে প্রসিদ্ধ ওয়েবসাইট "আল-আলুকাহ" এর একটি প্রবন্ধের ঠিকানা যুক্ত করে দিয়েছিলেন।
আমরা এপ্রসঙ্গে নিজে থেকে কিছু বলার পূর্বে সেই লেখাটার গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশের অনুবাদ আপনাদের সামনে পেশ করছি।
সবশেষে অল্প কথায় আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি উল্লেখ করব ইনশাআল্লাহ।
.
এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য, আমরা এসব ভুল ভ্রান্তি কাজের বিরোধিতা করছি শুধুমাত্র আল্লাহকে ভয় করে। এখানে আমাদের ব্যক্তিগত কোন বিদ্বেষ বা স্বার্থ নেই। বিভিন্ন সময় আমি বা আমরা বিভিন্ন রাকিদের কাছে রেফার করেছি, সেটাও যেমন আল্লাহর জন্য ছিল, তেমনি এখন কিছু ভাইদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজের বিরোধিতা করছি এটাও নিখাদ আল্লাহর জন্যই।
হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি'মাল ওয়াকিল।
.
[খ]
উদ্ধৃত প্রবন্ধটি লিখেছেন- মিশরের শাইখ মুসতাফা আদাবীর ছাত্র শাইখ আবু হাতিম সাঈদ। উনার আরেকটি পরিচয় হল, তিনি শাইখ ওয়াহীদ আব্দুস সালাম বালী'রও ছাত্র। যদিও তিনি মুসতাফা আদাবী থেকেই দীর্ঘসময় ইস্তিফাদা করেছেন।
.
লেখাটির প্রয়োজনীয় অংশ অনুবাদ করেছেন শ্রদ্ধেয় ভাই আবু খুবাইব।
 
والذي أرى - والله أعلم - أنَّ الأصل في الرقية الواردة عن نبيِّنا صلى الله عليه وسلم، وعن صحابته رضي الله عنهم، وعن أئمَّة السَّلف رحمهم الله - عدم استخدام الضَّرب، ولو قال قائلٌ بالجواز لِما ورد في حديث عثمان؛ فهذا ليس على إطلاقه، بل لا بد له من ضوابط[15].
ولو ترك الرُّقاةُ الضربَ بالسياط وواظبوا على قراءة كتاب الله تعالى، لكان أضرَّ على الشيطان وأخزى له؛ إذ ليس شيء أوقَعَ على الشيطان وأنكى له مِن كتاب ربنا تبارك وتعالى، وليحذر العباد مِن ضرب المسلمين بغير وجه حقٍّ،
 
আমি মনে করি - আল্লাহ ভালো জানেন - নবী সা., তাঁর সাহাবিগণ ও সালাফের ইমামগণ হতে বর্ণিত রুকইয়াহ এ প্রহার না করাটাই মূল পদ্ধতি। যদি কেউ উসমান (বিন আবিল আস) রা. হতে বর্ণিত হাদিসটির কারণে প্রহার করাকে জায়েয বলে তাহলে (মনে রাখতে হবে,) তা শর্তহীনভাবে জায়েজ নয়। অবশ্যই এর কিছু শর্ত ও মূলনীতি আছে।
 
যদি রাকীগণ প্রহার করা থেকে বিরত থেকে আল্লাহ তাআলার কিতাব পাঠ করতে থাকে তাহলে তা অবশ্যই শয়তানের জন্য অধিক ক্ষতিকর ও লাঞ্ছনাকর হবে। কারণ আমাদের রবের কিতাব হতে শয়তানের জন্য অধিক আক্রমণাত্মক কিছু নেই। আল্লাহর বান্দারা যেন কোন হক ছাড়া মুসলিমদেরকে প্রহার করার ব্যাপারে সতর্ক থাকে।
 
لا يجوز أن يمَسَّ الرجل المرأةَ الأجنبية، إلا الطَّبيب لضرورةٍ شرعية، وأرى كذلك - والله أعلم أنه لا يجوز للرَّاقي بالكتاب والسُّنة أن يباشر ضرب المرأة الأجنبية بنفسه بحالٍ من الأحوال، أما إذا وكَّل أحدًا مِن محارمها بضربها بالشروط المذكورة، فلا بأس، ولا يتوهَّمنَّ موسوسٌ أنه لا بد لخروج الجني من الضرب، فالأمر إلى الله مِن قبلُ ومن بعد، والشِّفاء بيد الله، ولا يدخل جنِّيٌّ ولا يخرج إلا بأمرٍ إلهيٍّ.
 
পুরুষের জন্য গাইর মাহরাম নারীকে স্পর্শ করা জায়েয নেই। কিন্তু চিকিৎসকের জন্য শরীয়ত সম্মত প্রয়োজনে স্পর্শ করা বৈধ। আমি মনে করি, - আল্লাহ ভালো জানেন - আল্লাহর কিতাব ও সুন্নাহ দ্বারা রুকইয়াহকারীর জন্য সরাসরি (হাত, পা দ্বারা) গাইর মাহরাম নারীকে প্রহার করা কোন অবস্থায়ই জায়েজ নেই। যদি উল্লেখকৃত শর্তসাপেক্ষে তার (রোগীনির) কোন মাহরামকে প্রহারের দায়িত্ব দেয়" তাহলে কোন সমস্যা নেই।
 
কোন কুমন্ত্রণাদাতা যেন ধারণা না করে, জিন বের হওয়ার জন্য প্রহার করা আবশ্যক। ব্যাপারটি সর্বদাই আল্লাহর হাতে। আরোগ্য আল্লাহর হাতে। আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া জিন প্রবেশও করে না বেরও হয় না।
---------
 
 
 
 
শাইখ খালিদ আল হিবশী কি 'রুকইয়াহ এর সময় গাইর মাহরাম নারীকে স্পর্শ করা বৈধ' বলেছেন?
এবং আরও কিছু কথা...
----------------------------
[ক]
প্রথমে আমরা একটা কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই, একমাত্র আমাদের নবী মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত কোন একক ব্যক্তিকে চোখ বুজে অনুসরণ করা কারও জন্য বৈধ নয়। সেটা যে কেউই হোক না কেন।
উদাহরণস্বরূপ: আমরা যারা ফিক্বহে হানাফি অনুসরণ করি, তারা শুধুমাত্র আবু হানিফা রহ. কে অনুসরণ করি না, বরং আবু হানিফা রহ. প্রতিষ্ঠিত ইসলামী ফিকহী ধারা অনুসরণ করি, যা হাজার বছরের অসংখ্য আলেমদের অধ্যবসায়ের ফলাফল।
ইবনু তাইমিয়া রহ. তো নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত কোন একক ব্যক্তির অনুসরণকে বৈধ বিশ্বাস করাকে ইরতিদাদ বলেছেন! অর্থাৎ এথেকে তওবা করতে বলা হবে, তওবা না করলে মৃত্যুদণ্ড।
যাহোক, এই কথাগুলো এজন্যই বললাম, কিছুদিন আগে এক রাকি (ধরে নিচ্ছি তার নাম 'ফ') উড়ো কথা ছড়িয়েছে, তা হল - আমরা নাকি সবসময় উস্তায তিম হাম্বলের কথাই ফলো করি, এর বাহিরে যাওয়াকে দোষারোপ করি।
আল্লাহ মাফ করুক। এটা স্পষ্ট অপবাদ। আমরা না এমনটা করি, না কখনও এমনটা দাবি করেছি, আর না এর কোন ভিত্তি আছে।
আমরা ইতিপূর্বে উস্তায তিল হাম্বলের যত প্রবন্ধ / লেকচার অনুবাদ করেছি, প্রতি ক্ষেত্রেই আমরা সেটার উৎসের সাথে মিলিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছি। আর আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে কোন অংশ সম্পাদনার প্রয়োজন হলে সেটা করার পরেই প্রকাশের চেষ্টা করেছি। যদি আমরা অন্ধ অনুসারী হতাম তাহলে কখনও উনার কথার ওপর কলম লাগাতাম না।
যাহোক, অপর দিকে এক ভাই আমাকে বলেছেন, পূর্বোক্ত 'ফ' বলেছে "আমি যদি বলি শাইখ খালিদ হিবশিকে অন্ধভাবে অনুসরণ করা বৈধ, তবে কথাটা ভুল হবে না।" (আল্লাহ মাফ করুক)
আসলে সেই 'ফ' লোকটি শাইখ খালিদ হিবশির নামে একটা হাইপ তৈরি করতে চাইছে, যেন সে রুকইয়ার নামে যত অপকর্ম প্রমোট করে সব শাইখ হিবশিরই নির্দেশনা!! (আল্লাহর পানাহ) মানযুর ভাই যখন তার প্রশংসা করে পোস্ট দিয়েছিল, সেখানেও এই শাইখ হিবশির কথাই বলেছিল।
মাত্র কদিন আগে, সেই লোক মেয়েদের স্পর্শ করা জায়েজ বলার সময় তার কথাবার্তার সাথে শাইখের বক্তব্য জুড়ে দিয়েছে, যেন শাইখও এটাই বলেছেন। অথচ শাইখের বক্তব্য এব্যাপারে আর দশজন আলেমের মতই। অর্থাৎ "একান্ত অপারগ না হলে বৈধ নয়। যদি মোটা আবরণ বা জড়বস্তু ব্যবহারে কাজ হয়ে যায়, তবে হাত দিয়ে স্পর্শ বৈধ নয়।"
.
[খ]
অবশ্য শরিয়তের দলিলকে খেলনা বানানো এই লোক আগেও এধরণের জালিয়াতি করেছিল, রোগীকে ইচ্ছামত মারধোরের পক্ষে লিখে এক মিসরি আলেমের প্রবন্ধের লিংক জুড়ে দিয়েছিল, যেন সেখানে তার পক্ষেই আলোচনা আছে। বাস্তবতা ছিল এর সম্পূর্ণ উল্টা!!
আরেকটা বিষয় হল, আমি জানিনা সে শাইখ খালিদ হিবশির ব্যাপারে কতটুকু জানে, তবে আমার নিজের ঘটনা হল - আমার নিজের কিছু সমস্যার জন্য একটা সময় পর্যন্ত ইমেইলে শাইখ হিবশির থেকে পরামর্শ নিয়ে নিয়ে রুকইয়া করেছি, শাইখ আমাকে কখনও কোন উল্টাপাল্টা কাজ করতে বলেননি।
.
[গ]
যাহোক, আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় হল - শাইখ খালিদ আল হিবশী কি 'রুকইয়াহ এর সময় গাইর মাহরাম নারীকে স্পর্শ করা বৈধ' বলেছেন?
এবিষয়ে নিচের প্রবন্ধটি লিখেছেন শ্রদ্ধেয় ভাই আবু খুবাইব -
-------
কোন কোন রাক্বী বলেন, 'রুকইয়াহ এর সময় নারী রোগীকে স্পর্শ করা বৈধ৷ শাইখ খালিদ আল হিবশী বৈধ হবার ফতোয়া দিয়েছেন৷' অথচ বাস্তবে শাইখের বক্তব্য ভিন্ন৷ জানি না, তাঁদের এমন ভুল ধারণা কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে৷ আল্লাহ সবাইকে ফিতনাহ হতে হেফাজত করুন৷
আমরা শাইখের একটি ভিডিও বক্তব্য শেয়ার করছি, যেখানে তিনি নারী রোগীদেরকে স্পর্শ করার ব্যাপারে তাঁর বক্তব্য স্পষ্ট করেছেন৷ আশা করি এটা দেখার পর ভুল ধারণা দূর হবে৷
.
এই ভিডিওতে শাইখ খালিদ আল হিবশী গাইর মাহরাম নারীকে স্পর্শ করার ব্যাপারে যে বিষয়গুলো স্পষ্ট করেছেন:
১. রুকইয়াহ এর বিধান চিকিৎসার বিধানের মত। যতটুকু স্পর্শ করা আবশ্যক কেবল ততটুকুই করতে পারবে। যদি কোন বিকল্প পদ্ধতি থাকে, যেমন লাঠি বা কোন যন্ত্রের সাহায্যে স্পর্শ করা, তবে বিকল্প পদ্ধতিই প্রয়োগ করতে হবে৷
২. নারী রোগীর রুকইয়াহ করা বৈধ, তবে কোন শরীরের কোন স্থানে স্পর্শ করা ব্যতিত। (শুনুন: 1:00-1:10)
৩. যদি কখনো স্পর্শ করা আবশ্যক হয়ে যায় তখন আবরণের ওপর থেকে স্পর্শ করবে৷ সেক্ষেত্রেও মাথার ওপর স্পর্শ করার বিধান আর বুক বা অন্য কোন স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করার বিধান এক না।
৪. কোন নির্দিষ্ট স্থানে স্পর্শ করা বা চাপ দেয়ার প্রয়োজন হলে মেসওয়াক বা অন্য কিছু দ্বারা স্পর্শ করবে। অথবা একটা বালিশের ওপর থেকে স্পর্শ করবে।
৫. কেবল জরুরতের সময়ই স্পর্শ করা যেতে পারে৷ যেসব ক্ষেত্রে রোগীকে স্পর্শ করা আবশ্যক হতে পারে তার কয়েকটি উদাহরণ:
ক). রোগী রাকীকে আক্রমণ করেছেন। রোগীর মাহরামরা ভয়ে পালিয়ে গেছেন।
খ). রোগী শরীরের কাপড় খুলে ফেলছেন। বাঁধা না দিলে বিবস্ত্র হয়ে যেতে পারেন। মাহরামরা ভয়ে পালিয়ে গেছেন।
গ). রোগী আত্মহত্যা করার চেষ্টা করছেন। মাহরামরা ঠেকাতে পারছেন না।
এ ধরণের ক্ষেত্রে রাকীর বিধান উদ্ধারকর্মীদের মতই৷ এটা জরুরত৷
কিন্তু যে এসে বলে, 'আমি ডাক্তারের মতই', তারপর বিভিন্ন স্থানে হাত রাখে, তার ব্যাপারটি এমন না৷ (অর্থাৎ, বৈধ না৷) (2:36-2:40)
শাইখ খালিদ আল হিবশী এ ব্যাপারে ইবনু উসাইমীন রাহিমাহুল্লাহ এর ফতোয়া উল্লেখ করেছেন। ইবনু উসাইমীন রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, "গাইর মাহরাম নারীর রুকইয়াহ করার সময় তাকে স্পর্শ করা বৈধ নয়। কারণ, এখানে কোন জরুরত নেই। তবু যদি ধরে নেয়া হয় যে কখনো জরুরত হয়, তবে সেক্ষেত্রে স্পর্শ করা বৈধ৷ তবে শর্ত হল, স্পর্শ করার সময় কামনা জাগ্রত হওয়ার আশংকা থাকবে না৷ অন্যথায় তা হারাম হবে৷"
সবশেষে তিনি একটা বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁর বক্তব্য হুবহু তুলে ধরছি:
بخلاف ما نسمعه من بعض من دخلوا في هذا الباب، يقول: 'أنا مثل الطبيب'، ويتحسس، ويقوم بأمور، ما لها...
يعني - أعوذ بالله من الشيطان الرجيم - يزني بيده ويزني ببصره.
"এই কাজে জড়িত কারো কারো ব্যাপারে আমরা যা শুনতে পাই তাদের ব্যাপারটি ভিন্ন। (অর্থাৎ অবৈধ।) সে বলে, 'আমি ডাক্তারের মতই'। তারপর সে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে এবং এমন কিছু কাজ করে যা...
অর্থাৎ, - বিতাড়িত শয়তান হতে আল্লাহর আশ্রয় চাই - সে হাত ও চোখ দ্বারা যিনা করে।"
[উল্লেখ্য, কেউ যদি দাবি করেন, অনুবাদে ভুল হয়েছে, তাহলে দয়া করে ভুলটি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করুন। আমরা সংশোধন করতে প্রস্তুত।]
----------
শাইখের বক্তব্যের ইউটিউব লিংক এবং আমাদের এবিষয়ের আলোচনা কমেন্টে দেয়া হল। সত্যানুরাগী পাঠকরাই মিলিয়ে নেবেন কারা আমানত রক্ষা করেছে, আর কারা দ্বীনকে নিয়ে খেলছে।
আল্লাহ আমাদের হিদায়াতের ওপর অবিচল রাখুক। আমিন।
 

 
 
 
 
 
 
[গ]
মন্তব্যঃ আমরা শাইখের ছাত্রের এই মতকে সমর্থন করি। আর মনে করি গাইরে মাহরাম রোগীকে স্পর্শ করা / মাথায় হাত রাখা / হাতপা দিয়ে সরাসরি প্রহার করার জায়েজ হবে না। কারণ এর বিশেষ কোন প্রয়োজন নেই।
যেহেতু রোগীর মাথায় হাত রেখে পড়লে অনেকের ক্ষেত্রে একটু বেশি উপকার হয়, তাই কেউ এটা করতেই চাইলে এক্ষেত্রে দুইটা পদ্ধতি সুপারিশ করে থাকি -
.
প্রথম পদ্ধতিঃ সার্বিক বিবেচনায় এটা সবচেয়ে নিরাপদ পদ্ধতি, আর "রুকইয়াহ" বইতেও এমনটাই বলা হয়েছে।
রোগীর সাথে থাকা গাইরে মাহরাম রোগীর মাহরাম পুরুষ (বাবা/ভাই/স্বামী) কিংবা রাক্বির কোন মাহরাম নারী (মা/বোন/স্ত্রী) রোগীর মাথায় হাত রাখবে। আর তার হাতের ওপর রাক্বি হাত রাখবে।
উদাহরণস্বরূপ, রোগীর মাথার ওপর রোগীর ভাই হাত রাখলো, ভাইয়ের হাতের ওপর আপনি হাত রাখলেন।
বিষয়টি না বুঝলে আরও কয়েকবার পড়ে নিন।
.
দ্বিতীয় পদ্ধতিঃ (রুকইয়ার সময় জ্বিনের রোগীর সাথে অবশ্যই কোন মাহরাম পুরুষ থাকা উচিত, যদি সম্ভব না হয় তবে রাক্বির স্ত্রী বা বোন সেখানে থাকা উচিত। এটাও যদি সম্ভব না হয়, তবে শেষ অপশন হল রোগীর মুরব্বি শ্রেণীর (মা-খালা জাতীয়) একাধিক মহিলা সেখানে উপস্থিত থাকবেন।
এরপর যখন মাথায় হাত রাখার হাজত হবে, তখন একটু দুরত্ব বজায় রেখে লম্বা স্কেল বা শক্ত বই জাতীয় কিছু মাথার তালুতে সামান্য স্পর্শ করবে। আর আল্লাহ চাইলে এটুকুই যথেষ্ট।
.
এখানে যে জিনিসটা ব্যবহার করবেন সেটা এমন না হওয়া চাই, যা ব্যাবহার সত্বেও রোগীর কোমলতা কিংবা তাপ রাক্বির হাতে অনুভুত হচ্ছে। কারন তাহলে এটা প্রায় হাতের মতই হবে। যেমনঃ সার্জিক্যাল গ্লাভস বা সাধারণ কাপড় দিয়ে হাত রাখা আমরা সমর্থন করব না। এটা জীবাণু থেকে বাচাতে পারে, কিন্তু সরাসরি স্পর্শের অনুভূতি দিচ্ছে, ফলে এটা আল্লাহর আযাব থেকে বাচাবে বলে আমাদের কাছে কোন নিশ্চয়তা নাই।
.
আর এমন কোন অস্বাভাবিক বস্তুও না হওয়া চাই, যেটা না ব্যাবহার করলে কোন সমস্যা নাই। যেমনঃ আপনি যেখানে সাধারণ স্কেল বা কাঠি ব্যবহার করতে পারতেন, সেখানে আপনি ম্যাজিকাল ওয়ান্ড নিয়ে চলে আসলেন। কি দরকার ভাই?
.
আর আমি অধমের খেয়াল হল, তাক্বওয়ার বিবেচনায় একান্ত জরুরত না হলে দ্বিতীয় পদ্ধতিও অনুসরণ উচিত না। বরং রোগির সাথে মাহরাম পুরুষ উপস্থিত থাকতে গুরুত্ব দেয়া উচিত।
.
আর আক্বিদা এবং আমলে এই কথার প্রকাশও থাকা উচিত যে, রোগীর মাথায় হাত রাখা ছাড়া আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা শুধু কোরআন তিলাওয়াত থেকেই উপকার দান করতে পারেন।
.
[ঘ]
রুকইয়াহ বিষয়ে আমি ৭জন উস্তাযের ইলম দ্বারা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছি, তার মাঝে একজন হলেন শাইখ আদিল বিন তাহির আল-মুকবিল। আমার জানামতে বর্তমান দুনিয়ায় সহিহ পন্থায় রুকইয়াহ শারইয়াহ প্রচারে যে ২জনের অবদান সবচেয়ে বেশি, তার একজন হলেন শাইখ আদিল, অন্যজন শাইখ ওয়াহিদ বিন আব্দুস সালাম বালি। আল্লাহ উনাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করুন।
এখানে শাইখ আদিলের মতামত উল্লেখ করা প্রয়োজন মনে করছি।
.
উনার মতে শুধুমাত্র ৩টা অবস্থায় গাইরে মাহরামকে স্পর্শ বৈধ হতে পারে-
১. যদি হঠাৎ জিনের রোগি রাক্বিকে আক্রমণ করে বসে। এবং বাধা দেয়ার মত অন্য কিছু না থাকে।
২. যদি জ্বিন রোগির নিজেকে আঘাত করে শারিরীক ক্ষতি করতে লাগে, কিন্তু সাথে থাকা মাহরাম যদি একা জিনকে বাধা দিতে না পারে।
৩. যদি রোগি পাশে বসা মাহরামকে খারাপভাবে আঘাত করতে থাকে বা গলা চিপে ধরে আর সে সরাতে না পারে।
-----
এই হল তিনটি সুরত। রাক্বি যদি চেষ্টা করে, তাহলে এধরনের পরিস্থিতিও এড়াতে পারবে ইনশাআল্লাহ।
যেমনঃ রুকইয়া চলাকালিন রোগির হাত দ্বারা আঘাত করতে চাইলে হাতের ওপর ফুঁ দিলে বা পানি ছিটিতে দিলে অধিকাংশ সময় দুর্বল হয়ে যায়। অথবা কাছে মোটা শক্ত জায়নামাজ থাকলেও এধরণের পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা যায়।
.
আর রোগীকে ধরে রাখা, রুকইয়ার জন্য রোগীকে বসানো এবং পাশে বসার কিছু পদ্ধতি আছে। এগুলো খেয়াল রাখলে যত ভায়োলেন্ট জিনই হোক, বেশি নড়াচড়া করতে পারে না। রাক্বিদের এই জিনিসগুলো সামনাসামনি দেখে হাতেকলমে শিখে নেয়া উচিত।
আর হ্যা, তিলাওয়াতের পাশাপাশি গামছা বা রুমাল দ্বারা মৃদু প্রহারে আমরা কোন আপত্তি করি না। আর আল্লাহ চানতো রুকইয়ার চলাকালীন এই সামান্য আঘাতই জ্বিনকে অনেক বেশি কষ্ট দিবে।
[ঙ]
আর সবশেষে আমরা রাক্বিদেরকে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদিস স্মরণ করে আল্লাহকে ভয় করার পরামর্শ দিব-
.
عن معقل بن يسار أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: "لأن يطعن في رأس أحدكم بمخيط من حديد خير له من أن يمس امرأة لا تحل له" رواه الطبراني والبيهقي.
(ভাবার্থ) মা'কাল ইবনে ইয়াসার রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে নারী তোমাদের জন্য হালাল নয়, তাকে স্পর্শ করার চেয়ে তোমাদের কারও মাথায় পেরেক ঠুকে দেয়া বেশি ভালো।
- তাবারানী; মুজামুল কাবির, সিলসিলাতুস সহীহাহ।
.
আল্লাহ আমাদেরকে সুন্নাহ এবং তাক্বওয়ার ওপর থাকার তাওফিক দিন। সেই কাজ করার তাওফিক দিন যার ওপর তিনি সন্তুষ্ট আছেন। আর সেই কাজগুলো, যা এই উম্মাতের জন্য কল্যাণকর। আর এই উম্মাতের সবচেয়ে মুত্তাকী জামায়াতের সাথে আমাদের হাশর করুন। আমিন।

 

ফোনে বা অনলাইনে রুকইয়াহ করে দেয়া

 

নতুন একটা ট্রেন্ড হচ্ছে, ফোনে বা অনলাইনে রুকইয়াহ করে দেয়া।
 
প্রথম কথা হল, এভাবে পুরোপুরি রুকইয়ার হক্ব আদায় করা সম্ভব না। এতে অনেক ধরনের সিচুয়েশন তৈরি হতে পারে, যেখানে রোগীর পরিবারের কিছু করার থাকবে না। উপরন্তু যদি এভাবে রুকইয়া করাটাকেই পেশা বানিয়ে নেয়া হয়, তবে বিষয়টা অনেক খারাপের দিকে মোড় নিতে পারে। বিশেষতঃ অনলাইনের প্রতারকরা এথেকে ফায়দা লুটতে পারে। আর ইতিমধ্যে লুটেছেও...।
 
দ্বিতীয়তঃ সালাফি আলেমদের মতে এভাবে রুকইয়াহ করা বিদআত। দেশ ও বিদেশের একাধিক আলেমকে আমি এমন ফাতওয়া দিতে শুনেছি। অথচ এখানে সালাফি/আহলে হাদিস রাক্বিরাই অহরহ ফোনে রুকইয়াহ করছে, ঘন্টার পর ঘন্টা, দিনের পর দিন করছে। ইমার্জেন্সি সিচুয়েশনে হঠাৎ একটু তিলাওয়াত করেছে এমন না, বরং ফোনে/অনলাইনেই প্রফেশনালি ঝাড়ফুঁক করছে!!
 
কামাই-রোজগারের জন্য নিজের আদর্শের সাথেই সৎ না থাকলে কিভাবে হবে ভাই?
....
শেষ কথাঃ আমি মোটাদাগে বিদআত না বললেও এমন বলব, এতে স্পষ্টতই বেশ কিছু খারাপি আছে, অনেক ফিতনা আর বিপদের সম্ভাবনাও আছে, তাই এথেকে দূরে থাকতে পারলেই সবচেয়ে ভাল হয়। 
 
একটা কথা মনে রাখবেন ভাই, আপনি জায়েজের সীমার মধ্যে যতই থাকেন না কেন, সুন্নাহ থেকে যতই দূরে সরবেন, ততই নতুন নতুন সমস্যা বের হবে। আপনি হয়তো ভাববেন এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু না! এটা সুন্নাহ থেকে দূরে সরার নগদ প্রতিক্রিয়া। কিন্তু আপনি টের পাচ্ছেন না।
 
* এর নিরাপদ বিকল্প কি হতে পারে?
- রোগীর পরিবারের কেউ রোগীর কাছে বসে কোরআন বা দোয়া পড়বে, অথবা রুকইয়ার রেকর্ড শোনাবে। আর রাক্বি ফোনে বা অনলাইনে থেকে তাকে গাইড করবে।
وما علينا الا البلاغ
 
-----------
- Abdullah Almahmud

রুকইয়ার সমস্যা সমগ্র সব একসাথে


 

 

রুকইয়ার সমস্যা সমগ্র সব একসাথে

 
 
অন্যের জন্য রুকইয়াহ করা
------------------
[ক]
বিসমিল্লাহ, এই সিরিজে আমরা রুকইয়াহ শারইয়াহ’র মধ্যে যেসব ভুল, আপত্তিকর কিংবা পরিহার্য বিষয় মিশ্রিত হয়, সেসব নিয়ে আলোচনা করবো। আল্লাহ চায় তো এতে আমাদের দেশে প্রায় বিস্মৃত যে সুন্নাহটির পুনর্জাগরণ হচ্ছে, এটি অনেক ভুল-ভ্রান্তি এবং নোংরামির হাত থেকে রক্ষা পাবে। আর যারা সাধারণ দ্বীনি ভাই-বোন যারা সচরাচর রুকইয়াহ নিয়ে খুব একটা ঘাটাঘাটি করেন না, শুধু প্রয়োজনের তাগিদেই রুকইয়াহ করেন, তারা এধরনের বিষয় কারও মাঝে দেখলে সতর্ক করে দিতে বা ওই রাক্বি থেকে পরহেজ করতে পারবেন।
.
[খ]
 
দ্বিতীয়ত: যেহেতু অনেকদিন পর আমরা একটা নতুন ধারাবাহিক শুরু করতে যাচ্ছি, এর ওপর আবার রমাযান বিভিন্ন ব্যস্ততা আছে, তাই হয়তো খুব দ্রুত একের পর এক সিরিজের লেখা আসবে না। তবে আমার চেষ্টা থাকবে দ্রুত করার, যাতে আগ্রহের রেশ বাকি থাকে। আর সাবলীল ও সংক্ষিপ্ত করার, আর অতিরিক্ত রেফারেন্স চর্চা থেকে বিরত থাকার, যাতে লেখক-পাঠক উভয়েই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
আল্লাহ যদি আগামীতে এটাকে দুই মলাটের মাঝে আনার তাওফিক দেন, তাহলে ইনশাআল্লাহ রুকইয়াহ বইয়ের মত এখানেও পর্যাপ্ত রেফারেন্স এবং তাহকিক যুক্ত করে দেয়া হবে।
তৃতীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, যেহেতু ভুলভ্রান্তি নিয়েই আলোচনা। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই এটা অনেকের মনকষ্টের কারণ হবে। হয়তো এই ভুলটা উনার নিজের মধ্যেই আছে অথবা উনি যার দ্বারা প্রভাবিত, তার মধ্যে আছে..।
এটাকে ব্যক্তিগতভাবে না নিয়ে, যদি সবার দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থের দিকে তাকিয়ে একটু সবর করা যায়, সন্দেহজনক কিংবা আপত্তিকর বিষয় এড়িয়ে যাওয়া যায়, তাহলে এটা আমাদের সবার জন্যই ভাল। এরপরেও বলবো, আমার দায়িত্ব শুধু সতর্ক করা, উম্মতের স্বার্থ খেয়াল রেখে কাজ করে যাওয়া, এরপর যার যার কর্মফল সে সে ভোগ করবে।
চতুর্থ কথা হল, আমাদের এটা স্বীকার করতে হবে ‘আমরা মানুষ’ আমাদের ভুলত্রুটি হতেই পারে। অমুক ব্যক্তি অনেক ফেমাস শাইখ বলে, তার ভুল হবে না, অথবা তার সবকিছুই মেনে নিতে হবে; বাস্তবতা কিন্তু মোটেই এরকম না। সুতরাং এই সিরিজে আমরা ‘উম্মাহর বৃহত্তর স্বার্থে অনেক ব্যক্তির দিকে আঙ্গুল তুলবো’। যেহেতু এখানে আমার আর্থিক বা দুনিয়াবি কোন স্বার্থ জড়িত নাই, শুধুমাত্র সুন্নাহ এবং উম্মাহর হিফাজতই উদ্দেশ্য। অতএব এর দ্বারা কেউ কষ্ট পেলে কিংবা আমাকে শত্রু মনে করলে এজন্য আমি আল্লাহর সাহায্য চাইছি, আর আল্লাহকেই সাহায্যের জন্য যথেষ্ট মনে করছি।
পঞ্চম কথা, আমরা এখানে এমন কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো না, যেটা কারও ব্যক্তিগত সমস্যা। যার সাথে উম্মাহর স্বার্থ জড়িত নয়, কিংবা যে বিষয় পাবলিকলি প্রচার করা হয়নি। সুতরাং আলোচ্য বিষয় যেহেতু উম্মাহর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট, অতএব আমার জন্য অনুমতি রয়েছে এটা নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা করার। সমস্যা যেহেতু পাবলিক প্লেসে এসেছে, অতএব প্রতিকারও পাবলিকলি হওয়াই উত্তম। যাতে উম্মাহর সামনে এটা দৃষ্টান্ত হিসেবে বিদ্যমান থাকে।
ষষ্ট বিষয়, যেহেতু গত দুই বছরে আমরা রুকইয়াহ শারইয়াহ এবং এতসংক্রান্ত অনেক বই পুস্তক এবং ব্যক্তির সাথে পরিচিত হয়েছি। এজন্য আমরা অনেক বই এবং ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে কথা বলব, যাদের/যেসব কন্টেন্ট অনলাইনে যথেষ্ট এভেইলেবল। তাই একান্ত অপারগতা না থাকলে, আলাদাভাবে এসবের পরিচয় বর্ণনা করব না।
সপ্তম এবং শেষ কথা হল, একটা ভয় থাকেই, এতসব সমস্যা নিয়ে আলোচনা করলে মানুষ রুকইয়াহ শারইয়াহ থেকে নিরুৎসাহিত হতে পারে। আমি বলব, ভাই! পিওর কাজ সামান্য হওয়া উলটাপালটা অনেক বেশি কাজ হওয়ার চেয়ে উত্তম। একটু রয়েসয়েই মানুষ রুকইয়াহ করুক, কম করুক, কিন্তু যেটাই করুক নির্ভেজাল হোক।
.
[গ]
আমরা আলোচনায় প্রবেশ করি...
আজ আমরা ছোট্ট তবে দিনদিন ছড়িয়ে যাচ্ছে, এমন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করব, তা হল "একজনের জন্য অন্যজন রুকইয়াহ করা।" সম্ভবত এই জিনিসটা বেশি প্রচার হয়েছে মুফতি জুনাইদ সাহেবের লেকচার থেকে, উনি পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন, অথচ ঝুঁকির ব্যপারে সতর্ক করেননি।
যদিও উনার লেকচারগুলো অনুবাদ করেই এবিষয়ে আমার রুকইয়াহ বিষয়ে লেখালেখি শুরু…। পুরাতন ভাইব্রাদার-রা জানেন এটা।
কিন্তু আমি শুরু থেকেই চেষ্টা করেছি, এটা যথাসম্ভব চেপে রাখতে। সব সমস্যাগুলো আমার সামনে আসেনি, তবুও কেন যেন পছন্দ হত না বিষয়টা। আলোচনার প্রয়োজনে এই প্রসঙ্গ এসে গেলেও খুব একটা হাইলাইট না করে, অল্প কথায় পার করে দিতাম। আমাদের রুকইয়াহ সাপোর্ট গ্রুপের সহকর্মী ভাইদেরও বলেছিলাম, যেহেতু এটায় বেশ কিছু সমস্যা আছে, তাই একান্ত অপারগতা না থাকলে অনুগ্রহ করে পাবলিকলি বলবেন না।
.
শুরুতে সমস্যাগুলোর দিকে নজর দেই,
১. উপকার খুবই কম হয়। নিজে নিজে রুকইয়াহ করলে আল্লাহ চায়তো যে সমস্যা ৫-৭দিনে ভাল হয়ে যেত। সেটা ভালো হতে দুই তিন মাস লাগে।
.
২. যেহেতু সরাসরি সুন্নাহ থেকে মানকুল না, অতএব এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেশি।
যেমন: যে অন্যের নিয়াতে রুকইয়াহ করে, অধিকাংশ সময়েই সে ওই সমস্যাগুলোতে আক্রান্ত হয়ে যায়, যা রোগীর মধ্যে ছিল।
এটার প্রতিকার হল, একান্ত যদি করতেই হয়, তাহলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে মুক্ত থাকার জন্য নিয়মিত রুকইয়ার গোসল করা।
.
৩. এছাড়াও যে অন্যের জন্য রুকইয়াহ করছে, তার নিজের যদি জিন বা জাদু সংক্রান্ত সমস্যা থাকে। তাহলে অনেক সময় রোগীর মাঝে যে রুকইয়াহ করছে তার সমস্যাগুলোর প্রভাব দেখা যায়।
এর সমাধান হল, যার একটু বেশি সমস্যা আছে, সে পারতপক্ষে অন্য রোগীর জন্য রুকইয়াহ করবে না। এটা সরাসরিও না, দূর থেকেও না। বিশেষ ক্ষেত্রে অপারগতা হেতু যদি করতেই হয়, (যেমন স্বামীস্ত্রীর বিচ্ছেদের যাদু করা হয়েছে, দু’জন দুই যায়গায় অবস্থান করছে) তাহলে আগে নিজের জন্য রুকইয়াহ করে নিজের সমস্যা ভাল হওয়ার পর অন্যের জন্য রুকইয়াহ করবে।
আর অবস্থার কিছু উন্নতি হওয়া মাত্রই নিজে রুকইয়াহ বন্ধ করে, আসলে সমস্যা আছে যার; তাকে রুকইয়ার জন্য কনভিন্স করবে।
.
৪. যদি নিজের এবং অন্যের নিয়াতে একসাথে রুকইয়াহ করে। আর দুজনেরই বিভিন্ন রকমের সমস্যা থাকে। তাহলে মোটামুটি একটা জগাখিচুড়ি পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যায়। অতএব, ভাইজান এই পাগলামি ভুলেও কইরেন না! একশ গজ দূরে থাকেন।
 
তবে স্বামীস্ত্রীর বিষয়টা ভিন্ন, যদি দুজনের বিচ্ছেদের জন্য একসাথেই যাদু করা হয়, তখন যেহেতু সমস্যা মূলত একটাই। তাই এভাবে রুকইয়াহ করলে ফায়দা হয়, কিন্তু অগ্রগতি খুবই স্লো…। অতএব পারতপক্ষে ঝামেলায় না যেতে পারলেই সবচেয়ে ভাল।
.
৫. একান্ত অপারগতা হেতু অন্যের জন্য রুকইয়াহ করতে হলে পারতপক্ষে অডিও তিলাওয়াত না শুনে, নিজেই তিলাওয়াত করা, আর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া / সমস্যা থেকে মুক্ত থাকার জন্য নিয়মিত রুকইয়ার গোসল করা গতানুগতিক রুকইয়ার চেয়ে তুলনামূলক ভাল।
.
[ঘ]
 
মাস কয়েক আগে, ইয়েমেনের এক শাইখের সাথে কথা হচ্ছিল, উনি নাকি মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উসাইমিন রহ. এর থেকে কিছুদিন ইস্তিফাদা করেছেন। আল্লাহু আলাম! উনি অন্যের জন্য রুকইয়াহ করার বিষয়টা শোনার পর এটাকে বিদআত বলে দিয়েছেন পুরা!
 
আমি কিছুক্ষণ হ্যাং হয়ে থাকলাম উনার কথা শোনার পর।
পরে বুঝতে পারলাম যে, উনি রুকইয়াহ-কে চিকিৎসা হিসেবে না গণ্য করে, নামাজ-রোজা, হজ্জ ইত্যাদির মত ইবাদাতে মাখসুসাহ ক্যাটাগরিতে ফেলে বিধান বর্ণনা করেছেন। এটা আবার আরেক ভুল! কি বিপদ…
ইনশাআল্লাহ এটা নিয়ে আমরা আরেকদিন আলোচনা করব।
 
 
কয়েকজনের জন্য একসাথে রুকইয়াহ করা
--------
[ক]
অনেক সময় রাকি একসাথে কয়েকজনকে রুকইয়াহ একসাথে করেন। কেউ কেউ এটাকে মাস এক্সোর্সিজম (mass exorcism) বা মাস রুকইয়া বলে। ইউটিউবের কোন কোন ভিডিওতে দেখা যায়, একটা রুম অথবা মসজিদ ভর্তি মানুষ বসে আছে, সামনে একজন রাকি দাঁড়িয়ে রুকইয়ার আয়াত পড়ছে। রোগীদের কেউ কেউ ঘুমাচ্ছে, কারও জিনের সমস্যা আছে সে লাফালাফি শুরু করে দিয়েছে (চর্মোনাইয়ের জিকিরের মত!) কেউ শুয়ে তড়পাচ্ছে… ইত্যাদি ইত্যাদি। কেমন যেন এক বিভীষিকাময় অবস্থা।
খ্রিষ্টানদের চার্চগুলোতেও ওদের প্রিস্ট / পাদ্রি / ধর্মগুরুরা মাস এক্সোরসিজম করে, এক্ষেত্রে বিশপের থেকে স্পেশাল পারমিশন নিয়ে আসতে হয়।
 
[খ]
আমরা প্রথমে দেখি এমনটা কেন করে?
প্রথমতঃ অনেক রোগীর চাপ থাকলে, সেটা সামাল দিতে। অর্থাৎ একে একে রুকইয়াহ করার মত পর্যাপ্ত সময় রাকির হাতে নেই, কিংবা এই পরিমাণ রাকি নেই যে এতগুলো রোগীর রুকইয়াহ করবে। তাই…
 
দ্বিতীয়তঃ এমনিতেই ভাল্লাগতেসে না, মানে অবহেলা করে। কয়েকজনকে একসাথে বসিয়ে রুকইয়া করে বিদায় করে দিল। এরপর টাকা যা নেয়ার নিয়ে নিল…
 
তৃতীয়তঃ অজ্ঞতাপ্রসূত। (বিভিন্ন কিসিমের জাহালতের কারণে করতে পারে। জ্ঞানের সীমা আছে, জাহালতের তো কোন সীমা-পরিসীমা নাই…) 
যেমন: রুকইয়াহ তো করতেইসি, অমুককেও এখানে বসিয়ে দেই।
 
এছাড়াও এভাবে রুকইয়াহ করার আরেকটা কারন হতে পারে, অহংকার! মানুষকে দেখানো যে "আই অ্যাম বিরাট কুছ!"
 
[গ]
যে সমস্যাগুলো হয় বলি-
 
১. রুকইয়ার ক্ষেত্রে মনযোগ একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনি একাধিক রোগীকে রুকইয়াহ করতে গেলে একজনের যদি উল্টাপাল্ট ইফেক্ট হতে লেগে, তখন আরেকজন থেকে মনযোগ ছুটে যাবে। কয়েকজনের একসাথে প্রবলেম শুরু হলে বাজে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে যায়।
 
দুজনের ঘটনা এমন শুনেছিলাম, দুজনেই জ্বিন+জাদুর রোগী ছিল, একসাথে রুকইয়া করা হত, তো কখনও কখনও একসাথে দুইজনের ওপর জিন চলে এসে ঝগড়াঝাঁটি গালিগালাজ শুরু করে দিত। আমি যখন এই দুইজনের রুকইয়াহ করেছি, যথেষ্ট ভোগান্তি হয়েছে। দুইজন একসাথে আমাকে আক্রমণ করতে উঠে চলে আসতো। পরে মনে হচ্ছিল এই সময়টা দুজনের আলাদা আলাদা করে রুকইয়া করলেই ভাল ছিল। 
 
২. নিয়াত- এটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ চাবি। নির্দিষ্ট নিয়াতে রুকইয়াহ করলে ফায়দা বেশি হয়। এজন্য একাধিক নিয়াত ঢুকে গেলে ঝামেলা হয়। ফায়দা কমে যায়।
 
৩. অনেক সময় একজনের সমস্যা আরেকজনের মধ্যে ঢুকে যায়। বিশেষতঃ দুজনের কেউ যদি বদনজর কিংবা ওয়াসওয়াসা রোগী হয়ে থাকে।
 
একবার আমার এক রিলেটিভের জন্য রুকইয়াহ করছিলাম, তিলাওয়াতের মধ্যে মনে হল কি? আমারও তো একটু প্রবলেম হচ্ছে, একসাথে দুইজনের নিয়াত করি। একটু পর দেখি আমার সমস্যা উনার শুরু হয়েছে। অথচ আমারটা শারীরিক অসুস্থতা ছিল…
 
কোন ভাই যেন বললেন, এক বাচ্চার রুকইয়ার সময় উনার বাচ্চাও সাথে ছিল, উনি ভাবলেন একসাথে দুইজনের নিয়তে তিলাওয়াত করি। পরে উনার বাচ্চা অসুস্থ হয়ে গেছে…
 
[ঘ]
তাহলে আমাদের করণীয় কি?
 
একান্তই অপারগতা না থাকলে একাধিক রোগীর রুকইয়াহ একসাথে করবেন না।
আর তবুও পরিস্থিতি চলে আসে, তাহলে এই বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন:
.
- যদি ছোটখাটো সমস্যা হয়, আর রোগীরা একই ফ্যামিলির হয়। তাহলে করতে পারেন।
যেমন, রাসূল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার দুই নাতির জন্য একসাথে রুকইয়াহ করেছিলেন বলে কয়েকটা হাদিসে পেয়েছি। (সহিহ-যয়িফ সবরকম সনদেই আছে)
 
- ফ্যামিলির সবার সমস্যা একসাথে ডায়াগনোসিস করতে চাচ্ছেন। কিংবা সমস্যা একটাই, সেটাতে পুরা ফ্যামিলি ভুগছে (যেমনঃ সুখ-স্বচ্ছলতায় নজর লেগেছে, কিংবা সবাইকে একসাথে যাদু করেছে, স্বামীস্ত্রী দুজনকে বিচ্ছেদের জন্য যাদু করেছে) এসব ক্ষেত্রে করতে পারেন।পরিবারের বিষয়গুলো আসলেই অন্যরকম…
 
- যদি কারও সেন্সিটিভিটি বেশি থাকে। বিশেষত যারা অনেক পুরাতন কিংবা বাজে ধরনের জাদুতে আক্রান্ত, তাদের ক্ষেত্রে ভুলেও অন্য কারও সাথে রুকইয়াহ করা উচিত না।
- ওয়াসওয়াসা আর নজরের সমস্যা বেশি থাকলে কি হয় বললামই তো। এরকম ক্ষেত্রেও পারতপক্ষে না করা।
 
- আর নুরুদ্দিন ইন্দুনিসির মত ওইরকম সব মানুষরে একসাথে বসাইয়া মাইক দিয়ে …। ভাই!! এগুলা পাগলামি কইরেন না প্লিজ..।
ওয়ামা আলাইনা ইল্লাল বালাগ!
ইনশাআল্লাহ ক্রমশঃ
- Abdullah Almahmud
 
 
 
 
আয়াত কাস্টমাইজেশনের ধোঁকায় পড়া
-----------
[ক]
রুকইয়াহ চলাকালীন অনেকে বিষয় ভিত্তিক আয়াতের ইফেক্ট দেখে ধোঁকায় পড়েন।
যেমন, জ্বিনের আয়াতগুলো পড়লে কষ্ট বেশি হচ্ছে, আর সিহরের আয়াত পড়লে কম হচ্ছে। অথবা জিনের আয়াতে কষ্ট হয়নি শুধু জাদুর আয়াতগুলোতে সমস্যা হচ্ছে, তখন অনেক রাকি খুব দ্রুত এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে বসেন যে, রোগীর জাদু-টোনার সমস্যা আছে।
বাস্তবতা হল, এটা এমন কোন ধ্রুব সত্য না যে, জাদুর রোগির সিহরের আয়াতেই ইফেক্ট বেশি হবে, নজরের রোগির আইন-হাসাদের আয়াতেই ইফেক্ট বেশি হবে। বরং এরকম আয়াত বিভাজনের ওপর অতিরিক্ত গুরুত্ব দিলে, শয়তান আপনাকে নিয়ে খেলতে পারে!
.
[খ]
এবিষয়ে উস্তায তিম হাম্বল এক ওয়ার্কশপে বলেছিলেন, "আপনার রুকইয়ার প্ল্যান আগেই ঠিক করে নেন এবং সে অনুযায়ীই শেষ করেন। প্রয়োজনে আবার রুকইয়া করেন। আপনার রুকইয়া সেশন জিনকে পরিচালনা করতে দিয়েন না!! অর্থাৎ জিনের লাফালাফি দেখে আপনি সে অনুযায়ী আয়াত পাঠ করছেন, এখানে-ওখানে আয়াত চেঞ্জ করছেন, পড়া বন্ধ করে দিচ্ছেন... এভাবে আপনি খুব সহজেই শয়তানের ধোঁকায় পড়বেন।
ধোকার অনেক কারণ আছে, তার মধ্যে বড় একটা কারণ হল, আপনি তো জিনকে সরাসরি দেখতে পাচ্ছেন না, হয়তোবা যে আয়াতগুলোতে কষ্ট হয়েছে সেখানে দাঁতে দাঁত চেপে বসে ছিল, আর যেখানে কষ্ট কম হচ্ছে সেখানে ব্যথা পাওয়ার মিথ্যা নাটক করছে। এরকম হতেই পারে, অস্বাভাবিক কিছু না।"
.
[গ]
দুদিন আগের কথাই বলি, যে জ্বিনের রুকইয়ার কথা শেয়ার করেছিলাম, (অনেক কষ্ট হয়েছে বের হতে, ওইটা..) উনার রুকইয়ার সময় খুব বেশি প্রভাব দেখা গেল বদনজরের আয়াতগুলো পড়ার সময়ে! কিন্তু আমরা তো খুব ভালো ভাবেই জানি যে, উনার জিনের সমস্যা আছে।
তাহলে এমন কেন হল?
- এই রোগীর ক্ষেত্রে যেটা ঘটেছে, প্রথমে শুরু করার পর থেকেই জিনের কষ্ট হয়েছে, কিন্তু সে কষ্ট সহ্য করেছে। সহ্য করতে করতে একদম শেষে যখন বদ নজরের আয়াতগুলো পড়ছিলাম তখন তার সহ্যক্ষমতা শেষ হয়ে গেছে, এরপর চিল্লাচিল্লি শুরু করেছে।
সত্য কথা হলো, যে আয়াতই পড়েন না কেন আপনি, শয়তান কমবেশি কষ্ট পাবেই, কিন্তু কতক্ষণ সহ্য করতে পারছে সেটাই বিষয়।
.
মজার ব্যাপার হলো সূরা নাস পর্যন্ত পর যখন আবার শুরুর দিকের আয়াতগুলো পড়েছি, তখন কিন্তু ঠিকই কষ্ট হয়েছে। যে আয়াতগুলোতে প্রথমবার একদম চুপ করে ছিল, পরেরবার সেই একই আয়াতে কান্নাকাটি করেছে, হাতজোড় করে মাফ চেয়েছে।
এরকম অনেকবার দেখেছি যে, সিহরের আয়াত পড়লে জিনের কষ্ট হচ্ছে। আর জিন সংক্রান্ত আয়াত পড়লে সিহরের রোগির মাঝে ইফেক্ট দেখা যাওয়া তো খুবই স্বাভাবিক। কারন অনেক জাদুর সাথে জিন জড়িত থাকে।
.
[ঘ]
অতিরিক্ত কাস্টমাইজ করলে আরও কিছু সমস্যা আছে, ভবিষ্যতে এটা নিয়ে বিস্তারিত কথা হবে ইনশাআল্লাহ। আজ সংক্ষেপে কয়েকটা পয়েন্ট বলি-
১. এর দ্বারা মাসনুন রুকিয়ার উপর আপনাকে ভরসা কমে যায়।
২. এরকম বিভিন্ন যায়গার ভাঙ্গা ভাঙ্গা ভাঙ্গা আয়াত পাঠ করলে, রোগীর ওপর সাইড ইফেক্ট অনেক বেশি হয়।
এজন্য খেয়াল করে দেখবেন, দীর্ঘদিনের জন্য রুকইয়া প্ল্যান দেয়া হলে অভিজ্ঞ শাইখরা সূরা বাকারা, ৮ সুরার রুকইয়াহ, আয়াতুল কুরসি, ৩কুল- এরকম সলিড তিলাওয়াত শুনতে বলেন। আমার মনে হয়, এগুলোতে তাৎক্ষণিক ইফেক্ট কম হলেও, দীর্ঘমেয়াদে ফায়দা অনেক বেশি হয়। আল্লাহ সবচেয়ে ভাল জানেন!
৩. আপনার মনোযোগ বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়, তিলাওয়াতের ধারাবাহিকতায় বিঘ্ন ঘটে, যখন আপনি বিভিন্ন জায়গা থেকে ছড়ানো-ছিটানো আয়াত তিলাওয়াত করেন।
শাইখ লুহাইদানের সাধারণ তিলাওয়াত আর রুকইয়ার তিলাওয়াতের তুলনা করলে এব্যাপারে কিছুটা ধারনা পাবেন।
৪. যেটা পূর্বে বললাম, ইফেক্টের ব্যাপারে জিন আপনাকে ধোঁকা দিতে পারে।
৫. আপনি ডায়াগনোসিসের ভুল করতে পারেন।
অর্থাৎ জিনের রোগিকে নজরের পেশেন্ট মনে করে, জাদুর রোগিকে কিংবা মানসিকভাবে অসুস্থ রোগিকে জীনের রোগি ভেবে ধোকা খেতে পারেন। চিকিৎসায় ভুল করতে পারেন।
.
[ঙ]
রুকইয়াহ শারইয়াহ দুইভাবে ফায়দা দেয়,
১. দোয়া বা রহমত প্রার্থনা
২. স্পেল ইফেক্ট
মাসনুন রুকইয়ার মাঝে সাধারণত ওপরের দুইটাই থাকে। আর বিষয়ভিত্তিক আয়াতে সাধারণত দ্বিতীয়টার প্রাধান্য থাকে।
আমাদের উচিত রুকইয়ার দোয়া ফর্মের দিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া।
---
পরিশেষে বলব, আমার খেয়াল হল, বিষয়ভিত্তিক আয়াত পড়েন, এর দ্বারা উপকৃত হোন সমস্যা নাই। কিন্তু এর ওপর অতিরিক্ত নির্ভর কইরেন না। বিশেষত চিকিৎসার প্রাথমিক লেভেলে এটা আপনাকে বাজে ধরনের বিভ্রান্তিতে ফেলতে পারে..।
.
আল্লাহ্‌ আমাদের সব ভুলভ্রান্তি এবং শয়তানের ধোঁকাথেকে হিফাজত করুন। আমিন।
ওয়ামা আলাইনা ইল্লাল বালাগ!
 
 
 
 
আয়াত কাস্টমাইজেশন প্রসঙ্গে আরও কিছু কথা..
-------
[ক]
কিছুদিন আগে আমরা "রুকইয়ার মাঝে অতিরিক্ত কাস্টমাইজেশন করার সমস্যা" নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। কেউ কেউ ভালোভাবে নিয়েছেন, কেউ আবার পাত্তা দেননি।
কদিন আগে নামের পূর্বে রাকি যুক্তকারী এক ভাই তো বেন হালিমার মত আয়াতের লিস্ট দিয়ে দিয়েছে, 'পাখি জিন হইলে এই আয়াত, হাতি জিন হলে এই আয়াত, ঘোড়া জিন হলে এই আয়াত।'
এগুলো নিঃসন্দেহে বাড়াবাড়ি ভাই। এই বাড়াবাড়ির কারণে কোরআনের রূহানিয়্যাত, রুকইয়ার সুরতে দোয়ার আকুলতা কিংবা রহমানের কাছে নিজেকে তুচ্ছ করে উপস্থাপনের অভ্যাস; এই সবকিছুতেই ভাটা পড়ে। এরপর আবার অদৃশ্যের ব্যাপারে এভাবে মন্তব্য করা, এসবের ফলে রাক্বি এবং তার ওপর আস্থা রাখা রোগীরা পতিত হন সুদুর ভ্রান্তিতে।
আপনি এধরনের রাক্বিদের দেখবেন জ্বিন অথবা জ্বিন প্রভাবিত রোগীর বক্তব্যকে খুব গুরত্ব দিতে। এমনকি কিছু রাক্বি জিন-শয়তানের কাছে কিয়ামতের আলামত বিষয়ে প্রশ্ন করে, এরপর সেসব ভিডিও করে ইউটিউব - ফেসবুকে আপলোড দেয় : "ইলুমিনাতি সম্পর্কে কী বলল ইবলিসের নাতি! দেখুন ভিডিওসহ!!"
[খ]
দ্বিতীয়তঃ এটা দোয়ার মাঝে বাড়াবাড়ির অনুরূপ কাজ। যে ব্যাপারে অনেক সাহাবায়ে কিরাম থেকে ধমকি বর্ণিত আছে।
‘আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফ্‌ফাল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি তাঁর পুত্রকে দু’আ করতে শুনলেনঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করি, আমি যখন জান্নাতে প্রবেশ করলে জান্নাতের ডান দিকে যেন সাদা অট্টালিকা থাকে। (একথা শুনে) ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, হে বৎস! আল্লাহ্‌র নিকট জান্নাত প্রার্থনা কর এবং জাহান্নামের আগুন থেকে আশ্রয় চাও। কারণ আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ শীঘ্রই এ উম্মাতের মধ্যে এমন একদল লোকের আবির্ভাব ঘটবে, যারা পবিত্রতা অর্জন ও দু’আর ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করবে।
- সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৯৬
.
সা’দ (রা) তাঁর এক ছেলেকে এই বলে দোয়া করতে শুনলেন যে, হে আল্লাহ,
নিংসন্দেহে আমি আপনার কাছে জান্নাত ও তার সুখ-শান্তি কামনা করি, এবং জান্নাতের মূল্যবান রেশমি বস্ত্র ও অনুরূপ (মূল্যবান জিনিস) কামনা করি, আর আপনার কাছে পানাহ চাই জাহান্নাম থেকে এবং তার শিকল ও তীব্র পিপাসা থেকে।
সা’দ রা. বলেন, হে বৎস! আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)কে বলতে শুনেছি: এমন সম্প্রদায় আসবে যারা তাদের দোয়ায় সীমা-লঙ্ঘন করবে। সাবধান তুমি তাদের দলভুক্ত হবে না। তোমাকে যদি জান্নাত দেয়া হয় তাহলে এর মধ্যে যা কিছু আছে সবকিছু সমেত দেয়া হবে। আর যদি জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়া হয় তাহলে জাহান্নাম ও তার মধ্যে যতো খারাপি আছে তার থেকে মুক্তি দেয়া হবে।
- মুসনাদে আহমাদ : ১/১৭২
[গ]
উপসংহারে পুরান কথাই নতুন করে বলি: রুকইয়ার সাথে সাথে উদ্ভট পদ্ধতি ফলো করা রাক্বিদের রুকইয়া এবং ম্যালপ্র্যাকটিসের তাৎক্ষণিক প্রভাব, সাইড ইফেক্ট এবং অস্বাভাবিক মুভমেন্ট থেকে রাক্বি এবং দর্শকরা ভেবে থাকে 'এটা হয়তো মাসনুন রুকইয়া কিংবা সালাফে সালেহীনদের অনুসৃত রুকইয়ার চেয়ে বেশি কাজে দিচ্ছে।
কিন্তু বাস্তবে তাদের দীর্ঘদিনের রুকইয়ার চিত্র একসাথে করলে আসল করুণ চিত্র বেরিয়ে আসে।
.
এক্ষেত্রে রোগীর ভাগ্য ভালো থাকলে তো ওই রাক্বির কবল থেকে বেচে যায়, নইলে দিন শেষে চট্টগ্রামের সেই ৬ লাখ জিন মারা ভাইয়ের মত রুকইয়া করাতে গিয়ে মানসিক অসুস্থ হয়ে ফিরে।
এজন্য ভাই! আমরা চোখ ধাঁধানো তেলেসমাতি কারবারের ব্যাপারে সাবধান হব। সাধারণ রুকইয়াহ শারইয়ার ওপর স্ট্রিক্ট থাকব। সবর করব আর দোয়া করব।
আল্লাহ তাওফিক দিক।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সবসময় হিদায়াতের ওপর অবিচল রাখুক। আমিন।
 
 
সোশ্যাল মিডিয়ায় অবিরত জিনের রুকইয়ার ঘটনা শেয়ার করা প্রসঙ্গে উন্মুক্ত চিঠি...
-----------
(এই স্ট্যাটাসের লেখাগুলো এক ভাইকে ব্যক্তিগতভাবে নসিহতের জন্য বলেছিলাম। এই প্রসঙ্গে আলাদা প্রবন্ধ লেখার চেয়ে সামান্য এডিট করে সবার জন্য প্রকাশ করছি। আশা করছি লেখক - পাঠক সবার জন্য এটা আখিরাতের পাথেয় হবে।)
-------
কেন রুকইয়ার ঘটনা খুব সতর্কতার সঙ্গে শেয়ার করা উচিত? কারণ -
 
১. এসব লেখাকে ভায়োলেন্সের প্রমাণ হিসেবে দেখিয়ে হিন্দু বা সেক্যুলাররা কাজে বাধা দেয়ার সুযোগ পাবে। তখন অন্যদের কাজের ক্ষেত্র নষ্ট হবে।
তান্ত্রিকরা ওদের পরিচিত এলিটদের দিয়ে ঝামেলা পাকাতে পারে। যেহেতু ওদের ইমারত ধ্বংস করতেসি আমরা।
 
২. এভাবে জ্বিনের ঘটনা শেয়ার করার কারনে রুকইয়ার ব্যাপারে মানুষের অতিপ্রাকৃত বিশ্বাস বাড়ছে, আমাদের তো উচিত বিষয়টা সহজ ও স্বাভাবিক বানানোর চেষ্টা করা।
নইলে সুস্থতা পেতে দেরি হলে বা কোন কারনে তাৎক্ষণিক উপকার কম পেলে মানুষ বিষয়টার ওপরেই আস্থা হারিয়ে ফেলবে।
(এরকম ঘটনা ইদানীং ঘটছেও। ফেসবুকের গল্প পড়ে গিয়ে বিভিন্ন রাক্বিদের সাথে রোগীরা তর্ক করছে - "অমুক অমুক ভাই তো এত এত জিন হাজির করে ওয়াদা নিয়ে বিদায় করে, আপনি আমার বেলায় করছেন না কেন? কত টাকা দিলে করবেন?!!"
আগে যে কথা মানুষ কবিরাজদের রেফারেন্স টেনে বলত, আজ রাক্বিদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলছে। এটা আমাদের জন্য কষ্টের।)
 
৩. আপনি অনেক রোগীর রুকইয়া মাসের পর মাস করছেন, যেগুলোর আলোচনা পাবলিক প্লেসে আসেনি। কিন্তু মানুষ তো আপনাদের এসব স্ট্রাগল বুঝবে না।
আর আপনি শেয়ার করছেন ১০০ জন মানুষের ১০০টা কেস। এদিকে পাঠক কিন্তু ঘুরে ফিরে একই। এদের ওপর এতগুলা ঘটনার বিরাট ইফেক্ট পড়তেসে।
এজন্য আমি অনেককেই বলতাম দরকার না থাকলে রুকইয়াহ গ্রুপ আনফলো করে রাখেন, এত জনের অস্বাভাবিক ঘটনার পোস্ট যখন আপনি একা মানুষ পড়বেন। তখন খুব সহজেই আপনার ওপর এর মন্দ প্রভাব দেখা যাবে।
কারণ, চিকিৎসক হিসেবে একশ জনকে দেখা, আর এমনি পাঠক দর্শক হিসেবে দেখার কিন্তু পার্থক্য আছে।
 
৪. সার্বিকভাবে চিন্তা করে দেখেন, রেগুলার এসব স্ট্যাটাস দেয়াতে আদতে রুকইয়াহ ফিল্ডের জন্য ফায়দা হচ্ছেনা। উম্মাহর দীর্ঘমেয়াদি ফায়দা তো আরওই না।
আপনার ভালোভালো ঘটনা একসাথে করে একটা ডক বানালে বা ব্লগে রাখলে তখন ভিন্ন বিষয়, অল্প কজন যারা রুকইয়া নিয়ে কাজ করবে তারা বারবার পড়ে শিখতে পারবে।
কিন্তু শত শত সাধারন মানুষের কাছে পোস্ট করে দিলে এসব মানুষের মনে জীন-জাদু সম্পর্কে যেসব ফ্যান্টাসি আছে, সেগুলো আরো উসকে যাচ্ছে।
 
আর নিজের ওয়ালে দিতে চাইলে আমভাবে সবার জন্য শিক্ষনীয় ঘটনা একদম ফিল্টার করে দেয়া উচিত, সাথে এই ঘটনা থেকে কি বুঝা গেল, এটা কেন ইউনিক, এথেকে কি কি উপদেশ গ্রহণ করার আছে এগুলো উল্লেখ করে দেয়া উচিত।
নইলে দিন শেষে এগুলো পড়া আর ভুত এফএম বা রূপকথার গল্প পড়ার মাঝে খুব একটা ব্যবধান থাকবে না।
 
আবু ইবরাহিমের আলোচনাগুলো খেয়াল করলে এই জিনিসটা পাবেন, সে প্রতিটা ঘটনার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে শিক্ষণীয় বিষয় কি কি সেটা উল্লেখ করে দেয়।
 
রুকইয়াহ গ্রুপের ওয়েবসাইটে কিন্তু কেস স্ট্যাডি সেকশন আছে, কিন্তু পুরা খালি। সবরকম ঘটনা শেয়ার করলে সেটা অনেক আগেই ভরে যেত। আপনি/আপনারা চাইলে সেটা ব্যবহার করতে পারেন। 
 
বেছে বেছে ঘটনা সেন্সর এবং সম্পাদনা করে সংরক্ষণ করলেন। ভবিষ্যতে যারা রুকইয়াহ নিয়ে কাজ করবে তাদের ফায়দা হবে।
হ্যা, লাভের লাভ একটা আছে কিছু লোকের! তা হচ্ছে, "এগুলা গল্প বা ভিডিও দিয়ে কাস্টমার ধরে।" এই কারণেই ওয়েস্টের বহু রাক্বি জায়েজ-নাজায়েজ বিবেচনা না করে, রোগীর প্রাইভেসির পাত্তা না দিয়ে ইউটিউবে রুকইয়ার অস্বাভাবিক অবস্থার ভিডিও আপলোড করতে থাকে। রোগীর অপ্রস্তুত অবস্থার ভিডিও আপলোড দিয়ে কাস্টমার ধরা নিসন্দেহে জঘন্যতম কাজগুলোর একটা।
যাহোক। শেষ কথা বলি - 
 
৫. আপনিও একটা বিষয় জানেন, সেটা হলো "রাক্বিদের কাজ হল রুকইয়াহ আর মানুষকে দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা। জ্বিনের সাথে বেশি কথা বলা ঠিক নানাম, ধর্ম, কেন এসেছে। বিধর্মি হলে দাওয়াত দেয়া। এরপরে চলে যেতে বলা। গেলে ওয়াদা নেয়া আর না গেলে তাকে শাস্তির ভয় দেখানো" এটুকুই। 
 
হ্যাঁ, অন্য কথা বললে রোগীকে করা যাদুর জিনিসপত্রের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা যায়। তবে পুরাপুরি বিশ্বাস করা যাবে না।
 
এসব কথার বাইরে বেশি কথা বললে কোরআনে বলা "জ্বিন থেকে ফায়দা নেয়ার দিকে" যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। আমরা শুরুর দিকে লোক হিসেবে আগুন কেন, ধুয়া থেকেও দূরে থাকব তাইনা? যেন ভবিষ্যতের জন্য উদাহরণ হতে পারি।
 
যেমন, বেন হালিমা শয়তান জিনের থেকে দাজ্জালের গল্প শুনে, ভালো জিন(!) ডেকে খারাপ জিন তাড়ায়। চিন্তা করেন অবস্থা...। (এমন শয়তানি পরামর্শও নতুন রাক্বি ভাইদেরকে কেউ কেউ ইনবক্সে পাঠাচ্ছে)
 
এগুলা বাদ, আপনার স্ট্যাটাসেই অনেকে বলছে জিনকে ওখানে পাঠান / এটা ওটা করতে বলেন। কেউ কেউ নিজের স্বপ্ন কিংবা হ্যালুসিনেশনের কথা এমনভাবে বলছে, যেন এটা যে এতে কোন সন্দেহের সুযোগ নাই। আপনি এসব স্বপ্ন কিংবা ভ্রমকে পাত্তা দিতে মানা করলে আপনাকেই মন্দ ভাবা শুরু করবে।
এভাবে তো শয়তান খেলার সুযোগ পাচ্ছে আমাদের নিয়ে।
কবিরাজদের ব্যাপারে একটা ফেমাস উক্তি হচ্ছে "ওরা ভাবে যে শয়তানকে বশ করে নিজের কাজ করাচ্ছে, আসলে শয়তানই ওদেরকে বশ করেছে।"
আমাদের ক্ষেত্রে যেন এমন সম্ভাবনা তৈরি না হয়।
অনেক কথা বললাম। একটু সতর্ক থাইকেন প্লিজ। প্রয়োজনে প্রতিটা লেখার পূর্বে আলেমদের সাথে মাশওয়ারা করেন, লাভ-ক্ষতি চিন্তা করেন, ইস্তিখারা করেন, এসব আমাদের পূর্বসূরিবড়দের অভ্যাস ছিল।
পরামর্শগুলো একটু সময় নিয়ে ভাববেন।
আল্লাহ আপনাকে ও আমাকে সবসময় কল্যাণের মাঝে রাখুক। আমিন।

 
 

রুকইয়া বনাম কার্স (curse) - Ruqyah vs Curse


 

রুকইয়া বনাম কার্স (curse)

---------------------------
 
যাদুটোনায় তো স্পেল বা মন্ত্র ব্যবহার হয়ই। সাথে কিছু কার্স বা অভিশাপের মেথডও প্রচলিত আছে। 
 
সাধারণত ম্যাজিক রিলেটেড ফোরামগুলোতে এভাবে লেখা থাকে - "কার্স এন্ড স্পেল"। 
(হিন্ট: অর্ডার অফ ফিনিক্সের আন ফরগিভেবল কার্স)। 
কার্সগুলো সাধারণ স্পেল বা মন্ত্রের চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতিকর। এক সময় টপ সার্চ কিওয়ার্ডের মধ্যে ছিল "হাউ টু কার্স সামওয়ান টু লাভ মি"!!
 
একইভাবে এক্সোর্সিজমের মধ্যেও সাধারণ ঝাড়ফুঁক বা রুকইয়ার পাশাপাশি কিছু কার্স মেথড আছে। এগুলোও অনেক সিরিয়াস।
 
এসব থেকে আমি সবাইকে চরমভাবে নিরুৎসাহিত করি এবং যথাসম্ভব দূরত্ব বজায় রাখতে বলি। সখ করেও যেন না শিখতে যায় কেউ। এর মূল কারণ হচ্ছে, এসবের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব থাকে, অনেকসময় আপনি চিন্তার করার আগেই কল্পনাতীত মাপের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
 
সম্ভবত: জিন সিরিজে আলোচনা করতে গিয়ে সুরা আহযাবের একটা আয়াতের কথা বলেছিলাম। সেটা পরে মুছেও দিয়েছি, মিসইউজ হতেই পারে সেই ভয়ে।
তবে একটা সেদিনের মজার গল্প শোনেন, পরিচিত এক ভাইয়ের বাসায় গিয়েছি, উনার কাজিনের জিন রিলেটেড সমস্যা। বছর তিনেক হয়েছে, একদম সবার নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছে। এই কেসের বড় সমস্যা ছিল ওঁই জিনটা নিজেই ছিল যাদুকর, হিন্দু জিন। এজন্য কবিরাজ-টবিরাজদের কাছে গেলে সে মন্ত্র পড়ে কবিরাজদের সব তাবিজ-তুমার-মন্ত্রতন্ত্র পানি করে দিত!
 
তো আমরা গিয়ে রুকইয়া করলাম, প্রথম দিন সবাই মিলে অন্তত ৭ ঘণ্টা রুকইয়া করা হয়েছে। মাঝখানে আমি বিরক্ত হয়ে সুরা আহযাবের কার্সের আয়াতটি (রব্বানা আতিহিম দ্বি’ফাইনি মিনাল আযাব) পড়া শুরু করেছিলাম… উফ! ইফেক্ট দেখে কি যে মজা পাইসি!
 
যাহোক, এরপর প্রায় এক সপ্তাহ প্রতিদিন ৪-৫ ঘণ্টা করে রুকইয়া করার পর আলহামদুলিল্লাহ রুগী এখন একদম সুস্থ।
 
দুনিয়ায় আর কোন উদাহরণ না থাকলেও এই একটা উদাহরণই যথেষ্ট ছিল ভণ্ড কবিরাজি আর ইলাজ বিল কুরআন এর পার্থক্য দেখানোর জন্য।
 
এই ঘটনা থেকে কয়েকটা বিষয় আমার মাথায় এসেছে, এই কার্স বা লানত ক্যাটাগরির রুকইয়া নিয়ে যদি জাস্ট জানিয়ে রাখার জন্যেও কারও সাথে শেয়ার করি, তবুও এর যে মিসইউজ হবে না এর নিশ্চয়তা নাই। 
 
আরেকটা বিষয় হচ্ছে, জিন সিরিজের পোস্ট লেখার সময় যেভাবে জিন তাড়ানোর পদ্ধতি বয়ান করেছি, সবসময় পরিস্থিতি এতটা সরল নাও হতে পারে।
 
ঐএকদিনে আরও অনেকগুলো ক্যাটাগরির অভিজ্ঞতা হয়েছে!! আলহামদুলিল্লাহ!
 
তো আমরা বলছিলাম কার্স রুকইয়ার কথা, এটার বিধান খুঁজতে গিয়ে সেদিন কার যেন (ক্লাসিক আলেমদের মাঝে কারও) ফাতওয়া দেখেছিলাম, হারাম-শিরক কিছু না করলে কার্স রুকইয়াও নাকি জায়েজ! উনি আমভাবে জায়েজ বলেছেন। জানিনা আমাদের আলেমরা কি বলবেন। বাদবাকি আমার পছন্দ হয়নাই ব্যাপারটা।
 
প্রথমতঃ এখানে ব্যাপারটা নেতিবাচক। অর্থাৎ রুকইয়ার ক্ষেত্রে উইল থাকে রুগী সুস্থ হয়ে যাক, কিন্তু কার্সের ক্ষেত্রে প্রার্থনা থাকে জিন মরে যাক, সারাজীবন পেইন ভোগ করুক, নির্বংশ হোক ইত্যাদি। ব্যাপারটা তো ভাবতেই কেমন লাগছে তাইনা?
 
দ্বিতীয়তঃ অনেক জিনকেই যাদুকররা বাধ্য করে এসব কাজ করতে পাঠায়। আপনিও যদি তাকে মারতে চান, সে যাবে কোথায়?
 
রুকইয়া সেন্টারে দ্বিতীয় দিন এক আংকেল এসেছেন উনার ওয়াইফকে নিয়ে। তো উনার ওয়াইফের ওপর রুকইয়া করার সময় জিনটা বলছিল- “আমি যেতে পারব না, আমি গেলে আমাকে মেরে ফেলবে”
জিজ্ঞেস করলাম ‘কে মারবে তোকে?’
- “ম্যাজিশিয়ান!”
 
তৃতীয়তঃ কার্স রুকইয়ার ক্ষেত্রে অনেকসময় বিভিন্ন নবীদের বদদোয়াগুলো ব্যবহার হয়। অথচ অনেক নবী কিয়ামতের আগে চিন্তিত থাকবেন, তিনি কওমের ওপর বদদোয়া করেছেন এই কারণে। আর আমরা যদি এগুলোই আবার আওড়াই। কেমন যেন দেখায় না ব্যপারটা?
 
তবে হ্যাঁ! আমি যাদুকরের ওপর কার্স করা পক্ষে আছি। যদি প্রতিদিন ওদের ওপরে চাপাতি থেরাপিও দেয়া হয়, আমি আলহামদুলিল্লাহ বলব। শয়তানিতে স্বয়ং ইবলিস শয়তানের চেয়েও এরা বেশি অবদান রাখে।
 
ওয়াল্লাহি বলছি আপনি যদি কবিরাজ নামের যাদুকরগুলোর থেকে আল্লাহর জমিনকে পাক করতে পারেন, তাহলে পুরা দেশের যাদু, জিন, নজর, বাচ্চা হয়না, বিয়ে হয়না, হ্যানত্যান কাহিনীর ৯৯% এমনিতেই সলভ হয়ে যাবে। রুকইয়া-ঝাড়ফুঁক কিচ্ছু লাগবে না।