Sunday, June 10, 2012

আঁধার বিলাস [ Ghost Stories - 784]




আঁধার বিলাস=- (পর্ব- ৩) 
লেখক:ইউনুস খান
 
লোকটা কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করেবললো......"এ খন ১২টা বাজে....তোমরা প্রস্তুত?"
 
রাহাতের ঘাঁড়ের রোমগুলো খাড়া হয়ে গেল। লোকটা কিসের প্রস্তুতির কথা বললো?
 
সে নাকে কিসের যেন গন্ধ পেল। খুব বাজে গন্ধ। গন্ধটাথেকে
 থেকে আসছে। রাহাত বার বার জামিলের দৃষ্টি আকর্ষন করতে লাগলো। কিন্তু সে অবাকহয়ে দেখলো জামিল খালেকুজ্জামানের দিকেই তাকিয়ে আছে। 
খালেকুজ্জামান আবার বলতে লাগলো........"আ মি অজ্ঞান অবস্থায় তিনদিন ছিলাম। যেদিন জ্ঞান ফিরল সেদিন নিজেকে আবিষ্কার করলাম জনতার মাঝে, শয়ে শয়ে মানুষ আমার চারপাশে দাঁড়িয়ে আমার দিকে ঝুঁকে আছে। সবাই অর্ধ উলঙ্গ। কালো কালো বিদঘুটে চেহারার মানুষ। । আমাকে চোখমেলতে দেখে লাঠি হাতে একজন মানুষ আমার দিকে এগিয়ে আসল।সে ছিলো ঐ গ্রামের নেতা। সেআমার বুকে লাঠি ঠেকিয়ে বললো,"আইডা কোথায়?" আমি কোনকথা বলতে পারলামনা...শুধু ইশারা দিয়ে বললাম যে আমি কিছুই জানিনা আমার কি হয়েছে। লোকটাআরেকটা লোককে ইশারা দিয়ে কি যেন বললো.......খেয়া ল করে দেখলাম অনেক মানুষ মিলে এক জায়গায় কাঠ জড়ো করছে....তার মাঝে দুটো খুঁটি আড়াআড়ি করে ক্রসকরে লাগানো......জেস াস ক্রাইস্টের ক্রসের মত। মুহুর্তের মধ্যে আমার মনে পড়ে গেল যে এরা আমাকে পোড়ানোর ব্যবস্থা করছে। আমার পাদুটো টলে গেল। কোনমতেবসে মনে মনে সৃষ্টিকর্তাকে ডাকতে লাগলাম....হঠাৎ খেয়াল করলাম সৃষ্টিকর্তার পরিবর্তে আমিডাকছি "আইডা, আইডা, আইডা".........ল োকগুলা আগুনজ্বালালো... .তারমাঝে কিছু লাল রং ছিটিয়ে দিল....তারপর আমার মাথায় একরকম হলদে দুর্গন্ধময় তরল ঢেলে দিল....আমাকে চাবুক দিয়েপেটাতে লাগলো....তিনদিন নাখাওয়া মানুষকে এভাবে পেটালে সে বেঁচে থাকার কথানা। কিন্তু আমি বেঁচে গেলাম। আর যে বাঁচালো সে হলো ডেভিড......."
 
জামিল হাঁ করে শুনতে থাকলো.....তার চোখ দুটো যেন কোটর ছেড়ে বের হয়ে আসছে। সেমূর্তির মত বললো...."কীভাবে ?"
 
রাহাত একটা কুকুরের কান্নার শব্দ শুনতে পাচ্ছে। কুকুরের কান্না সে আগেও বহুবার শুনেছে কিন্তু আজকে সে এই শব্দটাকে ভয় পাচ্ছে। সে মনে মনে নিজেকে বলছে...."রাহাত তুমি ভয় পেওনা। সিচুয়েশনের কারনে তুমি ভীত।"
 
লোকটা চট করে রাহাতের দিকে তাকিয়ে হাসলো তারপর বলতে লাগলো.."আমাকে যখন সবাই মারছে তখন এক লোক হঠাৎ দৌড়েএসে আমার নিশ্চল দেহের উপর শুয়ে পড়লো।এই আকস্মিক ঘটনায় গ্রামবাসী কিছুটার জন্য চমকে গেল। তারালোকটাকে দাঁড় করালো.....আমি আধচোখ মেলে দেখলাম.....ডেভি ড।"
 
সেদিনের জন্য আমরা বেঁচে গেলাম....ঐদিন আর আমাদেরকে তারা পোড়ালোনা। গ্রামবাসী একটা মাচা বানালো.....তার উপরে আমাদের দুজনকে বেঁধে রাখলো..মাচার নিচে তিনটা বিশাল বিশাল নেকড়ে ছুটোছুটি করছে.....পিঠে পিঠ ঠেকিয়ে দুজন পড়ে রইলাম। আমিবারবার এলিয়েপড়ছিলাম... .ডেভিড হঠাৎ ফিসফিসিয়ে আমাকে বললো....কালকেই সব শেষ হয়ে যাবে। আমি বললাম...."আইডাকোথায়?" ডেভিড কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো..."সে মিলিয়ে গেছে...তার অনন্য ক্ষমতা দিয়ে সে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে যখনসে জানতে পেরেছে গ্রামবাসী তার খোঁজ পেয়ে গেছে।"
 
"সে কোথায় মিলিয়ে গেছে?"
 
"তোমার মাঝে"
 
আমার হঠাৎ মনে পড়লো আইডার হাতে হাত রাখার পর সবকিছু ওলটপালট হয়ে গিয়েছিলো। আমি দম নিয়ে বললাম..."আইডা আমার মাঝে। কিন্তু আমি টের পাচ্ছিনা কেন?"
 
"জানের বদলা জান।"
 
"মানে?"
 
"আইডা তখনই ক্ষমতা দেখাতে পারবে যদি তার নামে কাউকে বলি দেওয়া হয়।"
 
"মানে?"
 
"তুমি কি ক্ষুধা অনুভব করছ?"
 
আমি অবাক হয়ে আবিষ্কার করলামআমার শরীরে ব্যথা কিন্তু কোনক্ষুধা নেই। ডেভিড হেসে বললো....."এটাই আইডার অস্তিত্বের প্রমান। আমি আইডার জন্য আমার জীবন উৎসর্গকরব। তুমি শুধু আমার মৃত্যুরপর রক্তটুকু পান করবে তাহলেইআইডা ক্ষমতা ফিরে পাবে।"
 
"আমি কিছু বুঝতে পারছিনা। আমার কি হবে?"
 
"তুমিতো তুমিই থাকবে। আইডাকেতুমি ধারন করবে।"
 
এরপর লোকটা দম নেয়ার জন্য থামল।
 
রাহাতের শিড়দাঁড়া বেয়ে বারবার যেন শীতল কিছু বয়ে যাচ্ছে।
 
¤¤ চলবে ¤¤



চতুরঙ্গ-(৬ষ্ঠ পর্ব) [Ghost Stories - p6 ]



চতুরঙ্গ-(৬ষ্ঠ পর্ব)
লেখক:নিথর শ্রাবণ শিহাব

[ বিঃদ্রঃ বাকী পর্বের লিঙ্ক এই পর্বের শেষে দেওয়া আছে ]

বিরাট বিরাট সব সাদা কালো দাবার ঘর, আমার চারপাশে আধো অন্ধকারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে আছে বর্ম পরা অনেক গুলো মূর্তি! নড়ছে না, কিন্তু মনে হচ্ছে এখনি নড়ে উঠবে। আমি টের পেলাম আমার দু কানের
 পাশ দিয়ে যেন আগুণের হল্কা ছুটে গেল। উষ্ণ রক্তের একটা স্রোতবয়ে গেল মাথা থেকে পায়ের দিকে। আমি কম্পিত মুখেধীরে ধীরে মাথার ওপরের দিকে তাকাতেই তীব্র একটা ভয় চেপে ধরল আমাকে! আমার মাথার ওপর দিকে ডাঃ এমরানের সেই হল রুম,হাজার হাজার অ্যানটিক্স আর বিশাল বিশাল বুক শেলফ! আমিছাদ থেকে উল্টো হয়ে ঝুলে আছি!নিজের অজান্তেই একটা চিৎকার দিয়ে উঠে দৌড়াতে লাগলাম। কিন্তু দৌড়ে কোথায় যাবো? মাটিতে একটা মানুষ যে ভাবে দৌড়ায়- আমি সেভাবে ছাদময় দৌড়াচ্ছি! আমার মধ্যাকর্ষন বল যেন ছাদের দিকে! ভয়ার্ত চোখে ওপরের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ডাঃ এমরানের পুরো মিউজিয়ামের হাজার হাজার জিনিস পত্র উড়ে ছুটে আসছে এই বিশাল দাবার বোর্ডের দিকে! যেন এই বিশাল বাড়িটাকে কেউ উল্টো করে বসিয়ে দিয়েছে। ছাদনিচে, ফ্লোর ওপরে! ফ্লোরের দিক থেকে ছুটে আসা জিনিস পত্র গুলো বৃষ্টির মত আমার চারপাশে আছড়ে পড়া শুরু করল। প্রচন্ড শব্দ করে কাঁচের জিনিস গুলো চূর্ণ বিচূর্ণ হতে থাকল। লাইব্রেরীর বই গুলো শেল্ফ থেকে উড়ে এসে পড়তে লাগল মূর্তি গুলোর ওপর।আমি আতংকে দিশেহারা হয়ে ছুটতে লাগলাম। আমার গায়েও এসে পড়ল দু একটা অ্যানটিক্স।তবে খুব ভারী না হওয়ায় বেশি কিছু হল না, কেবল ব্যথা পেয়ে পড়ে গেলাম। আবারওহাঁচড়ে পাঁচড়ে উঠে পাগলের মতছাদময় দৌড়ে বেরাতে লাগলাম। ডাঃ এমরানের হল রুমটা কয়েকটাবাঁক নিয়ে ঘুরে গেছে। ছাদটাওতাই। আমি বাঁক গুলো হয়ে হল রুমের অন্য দিকে ছুটলাম। হল রুমের কয়েকটা মোড়ঘুরতেই বিশাল ইনডোর সুইমিং পুলটা। যেখানে অক্টোপাসটা পোষেন ডাঃ এমরান। আমি বিস্ফোরিত নেত্রে চেয়ে দেখলাম সুইমিং পুলের পানি সোজা উড়ে আসছে দাবার বোর্ডেরদিকে! ছাদের এ অংশে মূর্তির ঘনত্ব বেশি। মূর্তি গুলোর ওপর রীতিমত সমুদ্রের গর্জন হেনে আছড়ে পড়ল সুইমিং পুলের টন খানেক পানি!পানির তোড়ে আমি খড় কুটোর মত ছিটকে গেলাম একদিকে! ভেসে যেতে যেতে একটা মূর্তির পা ধরে আটকে ফেললাম নিজেকে।আতংকিত হয়ে দেখলাম বিশাল মাকড়শার মত অক্টোপাসটাও উড়ে নেমে আসছে ছাদের দিকে! আমার নাকে মুখে পানি ঢুকেছে। বেদম জোরে কাঁশতে কাঁশতে উঠে দৌড়াতে লাগলাম। টাইলসে পানি পড়ায় পাপিছলে গেল হঠাৎ। দড়াম করে আছাড় খেতেই মাথার একপাশে একটা ভয়ংকর বাড়ি খেলাম। তীব্র যন্ত্রণায় কোনো শব্দই বেরুল না মুখ দিয়ে। জ্ঞান হারালাম।
০০০০০০০০০০০০০০০ ০০০০০০০০০০০০০০০ ০০০০০০০
হাসপাতালে জ্ঞান ফেরে আমার।
জ্ঞান ফিরে চোখ মেলতে জাহিদের মুখটা চোখে পড়ল। উদ্বিগ্ন মুখে তাকিয়ে ছিল, আমাকে চোখ খুলতে দেখেই দাঁত বের করে হাসল, “ এখন কেমন আছো বেগাম?”
আমি সামান্য নড়াতেই মাথার একপাশে তীব্র একটা ব্যথা অনুভব করলাম। মাথাটা যেন ছিঁড়েই যাবে! ব্যথায় মুখ বাঁকিয়ে ফেললাম, “ উফ! মাথাটাশেষ! ফেটে চার টুকরা হয়ে গেছে!
সমস্যা নেই। ডাক্তারেরা সুপার গ্লু দিয়ে জোড়া লাগিয়েদিয়েছে। এখন রোদে শুকাতে হবে। আর বলেছে এরপর যেন আর সোফায় শুয়ে ঘুমালে যেন সিট বেল্ট বেঁধে দেয়া হয়। তুমি তো ট্রাক ড্রাইভারের মত সোফায় ঘুমাও। ওখান থেকে পড়েইএই অবস্থা। আল্লায় বাঁচাইছে আরেকটু ওপর থেকে পড়ো নাই!
আমি দূর্বল গলায় বললাম, “ আমিসোফা থেকে পড়িনি জাহিদ। পা পিছলে ছাদে পড়েছি। আমি চার তলা উঁচু ছাদের সেই দাবার বোর্ডে ছিলাম উল্টো ভাবে।
জাহিদের মুখ থেকে হাসিটা মিলিয়ে গেল। থমথমে মুখে বলল, “ ডাক্তার মাথাটা জোড়া দেয়ারসময় নাট-বল্টু যে খুলে রেখে দেবে ভাবিনি। এতদিন জানতাম টি.ভি. মেকানিকরা এই কাজ করে।ডাক্তাররাও যে করে এই প্রথম জানলাম।ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলল। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে নরম গলায় বলল, “ তুমি ঘুমাবার চেষ্টা কর। নড়া চড়া একদম করবে না। আমি আছি এখানে।
আমার কথা বলতে কষ্ট হচ্ছিল। তাই জিজ্ঞেস করতে পারলাম না আমি এখানে কিভাবে এলাম? ডাঃ এমরান কি জানেন আমার এ অবস্থা কিভাবে হয়েছে? আর তিনিই বা কেমন আছেন এখন?
০০০০০০০০০০০০০০০ ০০০০০০০০০০০০০০০ ০০০০০০০
ডাঃ এমরানের মিউজিয়ামের অবস্থা কি হয়েছে সেটা দেখতে যাওয়ার মত সুস্থ হতে হতে দশ দিন লেগে গেল। শুনলাম তিনি নাকি আমাকে দেখতে এসেছিলেন। আমি ঘুমিয়ে ছিলাম, তাই কথা হয়নি। জাহিদের সঙ্গেই তাঁর আলাপ হয়েছে।অনেক্ষণ কথা বলেছে তারা শুনলাম মিথিলার কাছে।জাহিদ যে কি এত বকবক করতে পারে বুঝি না! হাসপাতালে এ কয়দিন জাহিদ, খালা আর মিথিলা ছিল আমার সঙ্গে প্রায় সারাক্ষণ। জাহিদের স্বরচিত অখাদ্য কবিতা শুনে শুনে কানের পোঁকাবেরিয়ে যাবে এমন যখন অবস্থা- তখন হাসপাতাল থেকে ডিকসাস করে দিল। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। কাজে ফেরার জন্য ভেতরে ভেতরে প্রায় পাগল হয়ে উঠেছিলাম।
মিথিলা ব্যাগ গোছাচ্ছিল হাসপাতাল ছাড়ার আগে। আমি জামা পালতে সবে ওড়না দিয়েছি, এমন সময় কেবিনের দরজায় নক করার শব্দ হল। ফিরে তাকালাম।
কে?” মিথিলা জিজ্ঞেস করল।
ছোট বেগাম, আমি।জাহিদের গলা শোনা গেল।
, ভাইয়া ভেতরে এসো।গিয়ে দরজার ছিটকিনি খুলে দিয়ে এসেমিথিলা ব্যাগ গোছানয় মন দিল।জাহিদ দরজা খুলে মুখ ঢুকিয়ে উঁকি দিল। আমার দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে একটা হাসি দিল, “ ডার্লিং ভাল আছো?”
ভেতরে ঢোকো।হাত নেড়ে বললাম।
উঁহু! চোক্ষু বন্ধ করো গো বেগাম! সারপ্রাইজ গিফট এনেছিতোমার লাগি।
তোমার এত ঢং করার এনার্জি আসে কোত্থেকে?” বিরক্ত হয়ে চোখ বন্ধ করে দাঁড়ালাম। কিন্তু পরক্ষণেই চোখ খুলে মিথিলার দিকে তাকালাম, মিটিমিটি হাসছে, মুখে হাত চেপে হাসি আটকাবার চেষ্টা করছে। ধমক দিলাম আমি, “ হাসবিনা ফ্যাঁক ফ্যাঁক করে।আবারচোখ বন্ধ করে দাঁড়ালাম।
শুনলাম জাহিদ দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো। আমার সামনে এসেবোধ হয় হাটু গেড়ে বসল।
বেগাম, তোমার জন্য দুনিয়া তন্য তন্য করে একশো আটটা নীল পদ্ম না আনতে পারি। এই অধম প্রেমিক তার নতুন টিউশ্যনির জোরে একশো আটটা সিঙ্গারা ঠিকি আনতে পেরেছে! চোখ খুলো বেগাম, দেখে ধন্য হও!
আমি চোখ খুলে ছানা বাড়া হয়ে গেলাম।

¤¤¤ চলবে ¤¤¤

চতুরঙ্গ-(৭ম পর্ব) [Ghost Stories -p7 ]




চতুরঙ্গ-(৭ম পর্ব)

লেখক:নিথর শ্রাবণ শিহাব

[ বিঃদ্রঃ বাকী পর্বের লিঙ্ক এই পর্বের শেষে দেওয়া আছে ]

জাহিদ বড় একটা কার্টুনে করে একগাদা সিঙ্গারা নিয়ে এসেছে! গরম সিঙ্গারার ঘ্রানে কেবিনের বাতাস মোঁ মোঁ করছে!
দারাজ হাসি হেসে বলল জাহিদ, “একটা কবিতাও লিখেছি বেগাম। তোমার শুভ মুক্তি উপলক্ষে – ” কেঁশে গলা পরিষ্কার করল
মনে পড়ে আমার দিকে
তাকিয়ে ছিলে ভীরু চোখে?
প্রহর শুরুর ক্ষুদ্র ক্ষণে
স্বপ্ন দেখা সপ্তালোকে?
পথটা যখন শুরুয় ছিল
রঙ্গিন নেশায় ভোর,
তোমার কোমল ভালবাসার
পাইনি সে আদর।
বেলায় কেবল অল্প করে
লাগত রঙের টান,
দূর বহুক্ষণ প্রত্যাশাতেই
প্রেমের আহবান।
প্রহর শেষে তোমার কাছে
এসেছি আজ তাই,
পথের শুরুয় পাইনি তো কি?
পথের শেষে চাই!
ভ্রুঁ নাচাল, “ কেমন হয়েছে বেগাম?”
আমি কিছু বলার আগেই মিথিলা জোরে হাততালি দিয়ে উচ্ছ্বাসিত গলায় বলল, “ ওয়াও জিজু! চো চুইট! ইস ক্যামেরা থাকলে ভিডিও করতাম।
ওর দিকে তাকিয়ে এক হাতে বাক্সটা ধরে বাউ করার মত করল জাহিদ, “ শুকরিয়া, শুকরিয়া ছোট বেগাম!
আমি কোমরে দু হাত দিয়ে নাকের পাটা ফুলিয়ে বললাম, “ এই টন খানেক সিঙ্গারা কে খাবে? টাকা হাতে পেলে ওড়াতে ইচ্ছা করে? ভাল একটা শার্ট কিনতে পারো না? একটা নীল শার্টে কি দশ বছর চালাবে?”
বিন্দু মাত্র মলিন হল না জাহিদের হাসি, “ ওটা যৌতুকের খাতায় জমা আছে। বিয়ের আগে এই এক শার্টে পার করে দেবো।বাক্সটা হাতে উঠে দাঁড়াল, “ তোমার শুভ মুক্তি পাওয়া উপলক্ষে মিষ্টি কেনা ঠিক হবেনা। তাই ঝাল জিনিস বিলাবো ভেবেছি। ছোট বেগাম- মিথিলার দিকে তাকাল, “ চল সারা হাসপাতালে এগুলো বিলিয়ে আসি।
মিথিলা ফিঁক করে হেসে দিল। আমি রেগে তাকিয়ে রইলাম ওদের দিকে। আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে হাত ধরে, নাহ- কনুইয়ে কনুই ধরে বেরিয়ে গেল সিঙ্গারা বিলাতে!
বিরক্ত হলাম খুব। ঘুরে ব্যাগটা গোছাতে লাগলাম। জাহিদের কবিতাটার শেষ লাইন দুটো মাথায় ঘুরছে কেন জানি। খারাপ লেখেনি। কিন্তু প্রশংসা করলে পেয়ে বসবে। থাক। যেমন আছে থাকুক। আপন মনে হাসলাম ওর পাগলামীর কথা ভেবে।
স্যান্ডেল নিতে ঝুঁকেছি মেঝেতে হঠাৎ জমে গেলাম বরফের মত। ভয়ংকর একটা ভয় মাথা থেকে ছড়িয়ে গেল সারা শরীরে।রুমের লাইট জ্বলছে, ফ্যান ঘুরছে, তার ছায়া পড়েছে মেঝেতে। আমি বিস্ফোরিত চোখে চেয়ে দেখলাম ফ্যানের ছায়ার সঙ্গে একটা মানুষের উল্টো ছায়া! সিলিং থেকে কেউ ঝুলে থাকলে যেমন হবে- ঠিক তেমন! আমি কাঁপতে লাগলাম আতংকে। খুব ধীরে ধীরে ঘুরলাম। রুমের সিলিংটা ঠিক সেই দাবার বোর্ডের মত হয়ে গেছে!
সেখান থেকে গম্ভীর মুখে ঝুলে আছেন ডাঃ এমরান! তাকিয়ে রয়েছেন সরাসরি আমার দিকে!এরপর আমার আর কিছু মনে নেই!

ডাঃ এমরানের সঙ্গে দেখা করাটা খুব জরুরী হয়ে পড়ল। হাসপাতেলের ঘটনাটার পর আমি জ্ঞান হারিয়েছিলাম অল্প সময়ের জন্য। জাহিদ আর মিথিলা এসে চোখে মুখে পানি দিয়ে আমার জ্ঞান ফেরায়। জ্ঞান ফেরার পর পরই আমি ওদেরকে বাসায় চলে যেতে বলে ডাঃ এমরানের মিউজিয়ামের দিকে রওনা দেই। জাহিদ আমাকে অসুস্থ শরীরে যেতে দিতে চাচ্ছিল না। কিন্তু আমি শুনলাম না। কারণ ডাঃ এমরানের সঙ্গে আগে কথা বলা দরকার। কথা না বলে আমি এক মুহূর্ত স্বাভাবিক থাকতে পারবো না। জাহিদ আমার সঙ্গে যেতে চাইলোকিন্তু সেটাও নিষেধ করে দিলাম। কারণ ব্যাপারগুলো ওকে বিশ্বাস করানো যাচ্ছে না, অবশ্য ওর জায়গায় আমি নিজে হলেও বিশ্বাস করতাম কিনা সন্দেহ আছে। আজগুবী এসব কথা বার্তা কেউ বিশ্বাস করবে না।তাই হাসপাতেলের ব্যাপারটা চেপে গেলাম ওর কাছে। আর মিথিলা তো আগা গোড়া কিছুই জানে না, বলিনি। শেষে খালাকে বলে দিলে আমার চাকরি করা নিয়ে টানা টানিতে পড়ে যাবো।
আমাকে ট্যাক্সিতে তুলে দিয়ে জানালায় দু হাত রেখে সামনে ঝুঁকলো জাহিদ, সামান্য সন্দিহান গলায় বলল, “ তুমি শিওর যে তুমি ঠিক আছো? না হলে বল, অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে পিছেপিছে আসি?”
মাথা নাড়াতে গিয়ে ব্যথাটা আবার টনটন করে উঠল, “ হুম। ঠিক আছি। তুমি চিন্তা কোরো না। ডাঃ এমরানের সঙ্গে দেখা করেই বাসায় ফিরে যাবো। তুমি মিথিলাকে বাসায় পৌছে দিও।
একটা নিঃশ্বাস ফেলে সোজা হয়ে দাঁড়াল, “ বাসায় ফিরে ফোন দিও বেগাম। রাতে আবার মিউজিয়ামে থেকে যেও না। আমি কিন্তু খুব সন্দেহ প্রবণ জামাই। যদি টের পাই আমাকে ছেড়ে ওই বুড়োর ঘাড়ে ঝুলে পরার তালে আছো- তাহলে কিন্তু পানি পথের চতুর্থ যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে।
জানি।মৃদু হেসে বিদায় জানালাম জাহিদকে। ট্যাক্সি ছেড়ে দিল ড্রাইভার। পেছনে তাকিয়ে দেখলাম জাহিদ চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে আছে। যতক্ষণ না চোখের আড়াল হলাম দাঁড়িয়ে রইল।
সন্ধ্যা হয়ে এসেছে প্রায়।
উল্টো পাল্টা বাতাস শুরু হয়েছে। বৃষ্টি আসবে বোঝা যাচ্ছে।থেকে থেকে মেঘের গুরগুর শব্দ শোনা যাচ্ছে। ট্যাক্সি থেকে নামলাম মিউজিয়ামের সামনে এসে। সন্ধ্যার আলোতে দেখা যাচ্ছে আকাশে ঘন কালো মেঘ জমে কুন্ডলী পাঁকিয়েছে জীবন্ত প্রাণির মত, ঠিক দূর্গটার ওপর দিকে। খুব স্বাভাবিক দৃশ্যটাও বড় অবাস্তব লাগল।
সোলেমান আলী আমাকে দেখার সাথে সাথে গেট খুলে দিল, “ আপা এখন কেমন আছেন? মাথার ঘাঁ শুঁকাইছে?”
হ্যা এখন একটু ভাল আছি। তুমি কেমন আছো?” বাতাসে চুল বারবার উড়িয়ে মুখের ওপর এনে ফেলছে দেখে ওড়নাটা ভাল করে মাথায় চাপিয়ে নিলাম।
কি যে চিন্তায় ফালায়া দিছিলেন আপনি!সরল হাসি হাসল। বিশাল দেহী এই মানুষটার হাসি দেখলে মনে হয় ছোট বাচ্চা হাসছে।
স্যার আছেন? নাকি বাহিরে গেছেন?”
না। আছেন। যায় নাই কোথাও। আপনারে দেখতে গত পরশু দিন হাসপাতালে গেছিলান একবার। তারপর আর কোথাও যায় নাই।গেটটা আবার লাগিয়ে দিতে দিতে বলল।
আমি খোয়া বিছানো পথ ধরে বিশাল সবুজ লনের মাঝ দিয়ে দূর্গটার দিকে হেটে গেলাম। লনের মাঝে এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বড় বড় কালো মূর্তি, গ্রীক পুরাণের নানান দেব,দেবীর আদলে গড়া সেগুলো। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে লনের লাইটগুলো জ্বালিয়ে দেয়া হয়। আজকে এখনো জ্বালানো হয়নি। আবছা অন্ধকারে মূর্তিগুলো খুব রহস্যময় লাগছে তাই। হাটার সময় বারবার মনে হচ্ছিল ওগুলোর আড়াল থেকে কেউ তাকিয়ে রয়েছে আমার দিকে। অদ্ভূত একটা গা ছমছম করা অনুভূতি!সারা শরীর দিয়ে ভয়ের একটা ঠান্ডা স্রোত অনুভব করলাম!

~~~ চলবে ~~~



চতুরঙ্গ-(৮ম পর্ব) [ Ghost Stories - p8 ]




চতুরঙ্গ-(৮ম পর্ব)

লেখক:নিথর শ্রাবণ শিহাব

[ বিঃদ্রঃ বাকী পর্বের লিঙ্ক এই পর্বের শেষে দেওয়া আছে ]

নার্গিস আশে পাশেই ছিলেন। ডোর বেল বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে দিলেন। আমাকে দেখেই বলে উঠলেন, “ ওফ! শান্তি পেলাম। আমি তো ভেবেছিলাম তোমাকে আর সুস্থ দেখবো কিনা! যে ভাবে মাথা ফেটে রক্ত দিয়ে ফ্লোর ভাসিয়ে দিয়েছিলে!আমার হাত ধরে ভেতরে ঢোকালেন, “ আছো কেমন এখন?” শান্ত স্বভাবের এই মহিলাটির আন্তরিকতাটুকু খুব ভাল লাগল হঠাৎ।
আমি ওড়নার ওপর দিয়ে মাথার পেছন দিকে হাত বুলালাম নিজের অজান্তেই। চুলের আড়ালে ব্যান্ডেজটা ঢাকা পড়ে আছে। এখন একটু ভাল আছি...... স্যারের সাথে কিছু জরুরী কথা ছিল- উনি কি জেগে আছেন?”
মনে হয়। ওনার রুমের লাইট জ্বলতে দেখলাম একটু আগেও। স্যার তোমাকে নিয়ে কি যে দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন! পুরো দিশেহারা!সিঁড়ির দিকেএগুতে লাগলাম দুজনে।
তাই?” ভাবলেশহীন কন্ঠে বললাম।
হ্যা। বারবার বলছিলেন- মেয়েটার কিছু হয়ে গেলে নিজেকে সারা জীবনেও হ্মমা করতে পারবো না আমি। নিঃসন্তান মানুষ তো, তোমাকে নিজের মেয়ের মত ভাবে।সিঁড়িপর্যন্ত এসে থমকে দাঁড়ালাম আমি। হল রুমের দরজাটা খোলা। তার মাঝ দিয়ে স্পষ্ট দেখলাম পুরো হল রুম বহাল তবিয়তে রয়েছে! একটা জিনিসও এদিক সেদিক নেই! কোনো কাঁচের জিনিসও মিসিং নেই। অথচ সে রাতে তো কেয়ামত হয়ে গিয়েছিল! আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলাম দীর্ঘ একটা মুহূর্ত। এর মাঝেই আবার কারেন্ট চলে গেল।বাহিরে ভীষণ শব্দে বাজ পড়ছে।দূর্গের প্রতিটা ইট কাঁপছে থর থর করে। কাঁচের সব জিনিস পত্র ঝন ঝন করে উঠল।
অন্ধকারের মধ্যে নার্গিস বিরক্ত গলায় বললেন, “ দেখো দেখি কান্ড! সময় অসময় নাই কারেন্ট চলে যায়। তুমি এখানে দাঁড়াও। আমি মোম জ্বালিয়ে আনি। জেনারেটরটা কয় দিন হল ঝামেলা করছে খুব। সোলেমান আজ সকালেই ঠিক করতে বসেছিল। কি জানি একটা পার্টস নতুন কিনে আনতে হবে। আজকে কেনা হয়নি। মোমবাতিই ভরসা আজকে।অন্ধকারের মাঝে হাতড়ে হাতড়ে চলে গেলেন তিনি। আমি দাঁড়িয়ে রইলাম সিঁড়ির কাছে। অন্ধকারের মাঝেও কাঁচের জানালা দিয়ে বাহির থেকে আসা ম্লান আলোতে আবছা ভাবে ঘরের জিনিস পত্র গুলো দেখা যায়। আমি সিঁড়ির রেলিং ধরে গলা বাড়িয়ে দোতলার ঘরের দিকে তাকালাম। অন্ধকার। ডাঃ এমরান কি করছেন কে জানে। নার্গিসও আসছে না মোমবাতি নিয়ে। অস্বস্তি লাগছে খুব। বাহিরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। কাঁচের ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ চমকানোর সাদা আলো হঠাৎ হঠাৎ এসে দূর্গের ভেতরটাকে রহস্যময় করে তুলেছে।হঠাৎ একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম। আমি ছাড়া মিউজিয়ামের,অর্থাৎ হল রুমের দরজা কেউ খোলে না। তালার চাবি আমার কাছেই থাকে সব সময়। অন্য আরেক সেট চাবি থাকে ডাঃ এমরানের কাছে। আমি না থাকলে খুব একটা আসেন না তিনি এখানে। কিন্তু অন্য কারো এখানে আসার কথা না। তাহলে হল রুমের দরজা খোলা কেন? নাকি ডাঃ এমরান এসেছেন এখানে? কথাটা মাথায় আসতেই কৌতুহল হল। আবছা আলো ছায়ার মাঝ দিয়ে ত্রস্ত পদহ্মেপে এগিয়ে গেলাম হল রুমের দরজাটার কাছে। নিজের অজান্তেই চোখ চলে গেল চার তলা ওপরের ছাদের দিকে। বজ্রপাতের সাদা আলোতে দেখা যাচ্ছে বিশাল দাবার বোর্ডে স্থির হয়ে ঝুলে আছে মূর্তি গুলো, কোনো স্পন্দন নেই। কেবল রহস্যময় একটা ভাব ওদের মাঝে।
অন্ধকারে ডুবে থাকা মিউজিয়ামটার ভেতর ঢুকতেই হাটুতে বাড়ি লাগল একটা ছোট কাঁচের মূর্তিতে। সতর্ক হয়ে গেলাম। পায়ে লেগে কোনো কিছু ফেলে দিয়ে ডাঃ এমরানের মিউজিয়ামেরহ্মতি করতে চাই না।
কেমন যেন একটা চাপা অস্বস্তি লাগছিল। ভূতুড়ে কিম্বা অবাস্তব কিছু একটা দেখবো- এরকম একটা ভয় করছিল ভেতরে ভেতরে। কাঁপা গলায় ডাকলাম, “ স্যার? ডাঃ এমরান? আপনি এখানে আছেন?”
কথা গুলো প্রতিধ্বনিত হতে লাগল বিশাল হল রুমের দেয়ালে।
প্রায় সাথে সাথেই হল রুমের অন্য প্রান্ত থেকে ডাঃ এমরানের গলা ভেসে এল, “ কে? নোভেরা? এই অসময়ে তুমি এখানে?” গলা শুনেই মনে হল ভীষণ খুশি হয়েছেন আমাকে এখানে পেয়ে। আমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছিলাম না। অস্বস্তি জড়ানো গলায় বললাম , “ আপনি কোথায় স্যার? এই অন্ধকারে কিছু দেখা যাচ্ছে না।পায়ের ভার বদল করলাম।
হল রুমের অন্য মাথা থেকে টর্চেরর আলো নড়া চড়া করতে দেখা গেল। দাঁড়াও, আসছি। লাইব্রেরীতে এসেছিলাম মাত্র। কারেন্ট যাওয়ার আর সময় পেল না। আর জেনারেটরটাও কিনা আজকেই নষ্ট হয়েছে।
দেখলাম মাঝারি একটা ব্যাটারিওয়ালা টর্চ হাতে হইল চেয়ারে করে নিঃশব্দে কার্পেটের ওপর দিয়ে আমার কাছে এগিয়ে এলেন ডাঃ এমরান। এ কদিনে আরো শুকিয়ে গেছেন। চোখ ঢুকে গেছে কোটরে। চশমার ওপাশের চোখ দুটো কেবল জ্বল জ্বল করছে। মুখে হাসি। খুব কম সময়ই এই হাসিটা দেখেছি আমি।এখন কেমন আছো?” টর্চটা একটা বক্সের ওপর শুইয়ে রাখলেন যাতে সব দিকে আলো যায়।
মোটামুটি ভাল। আপনি এত শুঁকিয়ে গেছেন! খাওয়া দাওয়া করেন না?” একটা টুল টেনে বসে পড়লাম তাঁর সামনে।
আমার কথা বাদ দাও। আছিই দু-চার দিন। তার আবার খাওয়া দাওয়া। তোমার কথা বলো। আজকেই ডিসচার্জড হলে? ওষুধ পত্র খাচ্ছো ঠিকমত?”
হ্যা।কথার খেঁই হারিয়ে ফেললাম। এত সহজ সরল মানুষটার কারণে আমার জীবনে যে বিরাট একটা আতংকের সৃষ্টি হয়েছে- কেমন করে বলি?
কি ব্যাপার? তোমাকে খুব টেন্সড লাগছে। কোনো সমস্যা?”ভ্রুঁ জোড়া কাছাকাছি হল তাঁর। আমার ওপর স্থির হল দৃষ্টি।
অস্বস্তিতে নড়ে চড়ে বসলাম। বার কয়েক খুঁক খুঁক করে কেঁশে জড়তা কাটিয়ে বলা শুরু করলাম, “ স্যার, আমি বোধ হয় মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পরেছি।
কি রকম?” তীহ্ম হল তাঁর চোখের দৃষ্টি।
আমি মে বি আপনাকে নিয়ে হ্যালুসিন্যাসনে ভূগছি। আমি প্রায়ই আপনাকে দেখছি আপনি ছাদের দাবা বোর্ডে উল্টো ভাবে ঝুলে হাটা চলা করছেন, নামায পড়ছেন। এমনকি হাসপাতালেও আপনাকে আমার কেবিনে উল্টো ভাবে ছাদ থেকে ঝুলে থাকতে দেখেছি। আমি...... আমি খুব কনফিউজড স্যার...... বিব্রত গলায় বললাম।
ডাঃ এমরান হাসতে লাগলেন আমারকথা শুনে, “ সে দিন জ্বরের ঘোরে তোমাকে কি না কি বলেছি আবোল তাবোল- আর ওমনি তুমি ভয় পেয়ে গেলে? বুঝ্রছি। আমার কথাতে হিপনটাইজড হয়ে গেছো। তাই এসব উল্টো পাল্টা জিনিস দেখছো!ডাক্তার হয়ে অবাস্তব জিনিসকে বস্তব ভাবো কি করে?”
আমি অপ্রস্তুত ভাবে বসে রইলাম, কিছু বললাম না।

## চলবে ##

চতুরঙ্গ-(৯ম পর্ব) [Ghost Stories -p9 ]



চতুরঙ্গ-(৯ম পর্ব)

লেখক:নিথর শ্রাবণ শিহাব

[ বিঃদ্রঃ বাকী পর্বের লিঙ্ক এই পর্বের শেষে দেওয়া আছে ]

তুমি ছোট মানুষ। তোমাকে সে দিন এত সব কথা বলা উচিত হয়নি।ভয় পেয়ে গেছো। ভয়টা কাটাও।হাসি থামিয়ে গম্ভীর মুখে বললেন।
প্রায় শোনা যায় না, এমন ভাবে আস্তে আস্তে বললাম, “ তার মানে সবটাই সম্মোহন?”
হুম। আনওয়ান্টেড হিপনোটাইজিং।গম্ভীর মুখে হেলান দিলেন হুইল চেয়ারে।
তার মানে যা কিছু দেখেছি সবটাই আমার ঊর্বর মস্তিষ্কের কল্পনা? বাস্তবে এর অস্তিত্বই নেই?” হতাশ গলায় বললাম।
ঊর্বর মস্তিষ্ক না। অনুর্বর। মস্তিষ্ক ঊর্বর হলে এসব দেখতে না, বিশ্বাসও করতে না।
আমি খুব আশাভঙ্গ হলাম। উঠে দাঁড়িয়ে বললাম, “ আজ তাহলে যাই আমি স্যার? কাল সকাল থেকে আবার আসা শুরু করবো।
সুস্থ মনে করলে এসো। না হলে আরো কয়েকদিন ছুটি নিতে পারো।সমস্যা নেই।
নাহ। যথেষ্ট ছুটি কাটিয়েছি। এবার কাজে ফেরা দরকার। আসি।ঘুরে হাটা শুরু করলাম দরজার দিকে। বাহিরে যেহারে ঝড় বৃষ্টি চলছে- তাতে আজ বাসায় দাঁড় কাকের দশায় ফিরতে হবে।
মিউজিয়ামে একা বসে রইলেন ডাঃএমরান। আমি দরজার কাছে চলে এসেছি- হঠাৎ বিচিত্র একটা জিনিস খেয়াল করলাম। ডাঃ এমরানের টর্চটা একটা বাক্সের ওপর রাখা ছিল। সেটার আলোটা এতক্ষণ দরজার এদিকে ছিল, তাই আমার ছায়াটা লম্বা হয়ে ছিল সামনের দিকে। কিন্তু আচমকাই ছায়াটা দ্রুত ছোট হয়ে আসা শুরু করল। যার অর্থ হল পেছন থেকে আলোক উৎসটা সোজা ওপরের দিকে উঠে যাচ্ছে! তাই আমার ছায়াটা খাঁড়া হয়ে এসেছে। আমি তীব্র একটা আতংক নিয়ে পেছন দিকে ঘুরলাম। ডাঃ এমরান হুইল চেয়ারটা ছেড়ে ধীরগতিতে শূণ্যে ভাসতে ভাসতে ওপরের দিকে উঠে যাচ্ছেন! তাঁর সঙ্গে সেই টর্চটাও শূণ্যে উঠে ওপরের দিকে চলে যাচ্ছে! তিনি আমার দিকে তাকিয়ে নেই, লাইব্রেরীর উঁচুশেল্ফ থেকে বই নামাচ্ছেন ভাসতে ভাসতে! শুধু তাই না, বই বের করে শূণ্যে ছেড়ে দিচ্ছেন আর বই গুলো বজ্রপাতের আলোয় দেখা যাচ্ছে সেই দাবার বোর্ডের দিকে উঠে চলে যাচ্ছে!
আমি ভয়ে চিৎকার দেবো সেই শক্তিটাও পাচ্ছি না! বিদ্যুতের সাদাটে আলোয় স্পষ্ট দেখলাম ডাঃ এমরান বই গুলো ওপরের দিকে পাঠিয়ে নিজেও উঠে যেতে লাগলেন।হল রুমের ফ্লোর আর ছাদের মাঝামাঝি উচ্চতায় গিয়ে তিনি দড়াবাজিকরদের মত ডিগবাজি খেয়ে উলটে গেলেন! পা চলে গেল ছাদের দিকে, মাথা চলে এলো ফ্লোরের দিকে! আমি হতভম্ব হয়ে আবিষ্কার করলাম ছাদের দাবার বোর্ডে অন্ধকারের মাঝে একটা টেবিল আর দুটো মুখোমুখি চেয়ার উল্টো ভাবে ঝুলে আছে। ডাঃ এমরান ধীর গতিতে একটা চেয়ারে গিয়ে বসলেন। যেন মধ্যাকর্ষন শক্তি ছাদের দিকে তৈরি হল। ঠিক এ সময়ে-ই আবার বিদ্যুৎ চমকালো। আমি আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ ও অদ্ভূত দৃশ্যটা দেখলাম-
ডাঃ এমরানের সামনের দিকের সেই চেয়ারে কম বয়সী নীল শার্ট পরা এক যুবক উল্টো ভাবে বসে আছে। গম্ভীর মুখে টেবিলের ওপর দাবার ঘুটি সাজাচ্ছে! যেন দাবা খেলবে এখন তাঁরা! একটা মোমবাতি উল্টো ভাবে টেবিলের ওপর জ্বলছে। টেবিলের একপাশে সেই বইগুলো একটার ওপর একটা সাজিয়ে রাখা। পড়ে যাচ্ছে না কোনোটাই। ভয়টা ধীরে ধীরে আতংকে রুপ নেয়া শুরু করল হঠাৎ । এসব দেখে চমকাইনি আমি। যেটা দেখে আমার মাথা ঘুরে উঠল ভয়াবহ আতংকে সেটা হল বজ্রপাতের ক্ষণিক সাদাটে আলোয় দেখা যাচ্ছে নীলশার্ট পরা যুবকের মুখটা............ জাহিদ!
আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল!

আমি ট্যাক্সিতে উঠেই হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুখের পানি মুছলাম। বৃষ্টিতে ভিজে গেছি। মোবাইলটা বের করে ফোন দিলাম জাহিদের নাম্বারে। বাহিরে প্রচন্ড বৃষ্টি। ট্যাক্সির উইন্ডশীল্ডের ওয়াইপার দুটো একনাগারে এপাশ ওপাশ করে যাচ্ছে। রাস্তায় পানি জমেছে। তার মধ্যেও জ্যাম।
ওপাশে রিং হচ্ছে। দীর্ঘ একেকটা ডায়াল টোনের শব্দ। লাগছে অনেক সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ফোন ধরছে না জাহিদ। অস্থির হয়ে উঠলাম। কিন্তু অস্থির হওয়ার কিছুই নেই। মাত্র দুবার ডায়াল টোন হয়েছে। দীর্ঘ এক যুগ পর যেন ফোন ধরল জাহিদ, “ হ্যালো? নোভেরা? বাসায় ফিরেছো?”
তুমি এখন কোথায় জাহিদ?” কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলাম।
কেন? স্টুডেন্টের বাসায়। পড়াতে এসেছি।খুব অবাক হল। শুনতে পেলাম ছাত্রকে ধমক দিয়ে বলছে, “ কি হল? পড়ো না ক্যান? কান টান দিয়া ছিঁড়া ফালাবো!সাথে সাথে গলা ফাটিয়ে পড়ার শব্দ শুরু হয়ে গেল। মনে হচ্ছে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে, ছোট ছোট।
আমি ক্লান্ত ভাবে সিটে হেলান দিলাম, “ মিথিলাকে পৌছে দিয়েছো?”
হ্যা। তুমি কোথায়? এখনো বাসায় যাওনি?”
যাচ্ছি। জ্যামে আটকা পরেছি। বাসায় গিয়ে ফোন দিবো।রাখি?”
আচ্ছা।লাইন কেটে গেল।
খুব ক্লান্ত লাগছে। ঘুম ঘুম একটা ভাব দুই চোখে। জেগে থাকার চেষ্টা করছি। ট্যাক্সিতে একা। ঘুমিয়ে পড়লে ট্যাক্সি ড্রাইভার কোথায় না কোথায় নিয়ে যাবে, ঠিক নেই। বিপদ আপদ তো আর বলে কয়ে আসবে না।
শত চেষ্টার পরও ঘুম ঘুম ভাবটাকে কাটাতে পারলাম না। সিটে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পরলাম। মিষ্টি একটা মাদকীয় গন্ধ পাচ্ছি এর মাঝে। খুব কড়া গন্ধ। মাতাল করে ফেলে। আমি ঝাঁকি খেয়ে জেগে উঠলাম। চারপাশে গাড়ি আর রিক্সার সমুদ্র। রাস্তায় এত পানি জমেছে যে যে কোনো মুহূর্তে পানি ঢুকে যেতে পারে ইঞ্জিনে। বৃষ্টি খুব। ওয়াইপারগুলো একটানা ক্লান্তিহীন ভাবে উইন্ডশীল্ড মুছে যাচ্ছে। গাড়ির ভেতরে আলো নেই। কেবল গ্যাসের ডায়াল আর স্পিড মিটারের নীলচে সবুজ আলো। বাহির থেকে মাঝে মাঝে আলো আসছে।আমি সামান্য নড়েছি কেবল, আমার ডান হাতটা পাশের সিটের ওপর পড়তেই চমকে উঠলাম। বরফ শীতল একটা হাতের ওপর হাত রেখেছি! আমার কাঁধের দিকটায় যেন উষ্ণ রক্তের স্রোত বয়ে গেল। পেছনের দিক থেকে আন্যান্য গাড়ির হেড লাইটের আলো আসছে কাঁচ ভেদ করে। তার মাঝে বিস্ফোরিত চোখে দেখলাম আমার পাশে অসম্ভব সুন্দরী একমহিলা বসে আছেন। লম্বা হাতা ওয়ালা ব্লাউজ। বাম হাতের ওপরহাত পড়েছিল আমার, সেখানে একটা বেল্টওয়ালা কালো ঘড়ি। আমার দিকে তাকিয়ে খুব স্বাভাবিক ভাবে হাসলেন। এই মানুষটার ছবি আমি হাজার বার দেখেছি ডাঃ এমরানের বেড রুমের দেয়ালে তাঁর স্ত্রী জয়নাব আরা!!

¤¤ চলবে ¤¤

চতুরঙ্গ-(১০ম পর্ব) [Ghost Stories - p10 ]




চতুরঙ্গ-(১০ম পর্ব)

লেখক:নিথর শ্রাবণ শিহাব

[ বিঃদ্রঃ বাকী পর্বের লিঙ্ক এই পর্বের শেষে দেওয়া আছে ]


আমি আতংকে পিছিয়ে ট্যাক্সির দরজায় সেঁটে গেলাম। দরজা খুলে যে পালাবো সে কথাও মনে পড়ল না।
জয়নাব আরা আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলেন, “ কি ব্যাপার? ভয় পাচ্ছো আমাকে?”
আমি একটা কথাও বলতে পারলাম না। জমে গেছি যেন।
একটা হাত বাড়িয়ে আমার হাত ধরলেন, বরফের মত ঠান্ডা। হাসলেন, “ আমাকে ভয় পেও না। স্বাভাবিক হও।
আমি এতই ভয় পেয়েছি যে ওনার হাত থেকে আমার হাতটা ছাড়াতেও পারলাম না।
সামনে একটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে। তাই এত জ্যাম।বাহিরের বৃষ্টি হতে থাকা বিশাল জ্যামটার দিকে তাকালেন, “ তুমি ঘুমিয়ে পড়ছিলে দেখে চিন্তা হল। একা একা এভাবে বের হওয়া ঠিক না।জয়নাব আরা ফিরলেন আমার দিকে, “ ভিজে গেছো দেখি। ঠান্ডা বাঁধবে তো!আমি ভয় এবং বিষ্ময় নিয়ে লক্ষ করলাম উনি ওনার শাড়ির আচোঁলের এক প্রান্ত দিয়ে আমার হাত, মুখ, মাথা মুছে দিতে লাগলেন...... যেন কোনো মা তার ছোট বাচ্চাকে বৃষ্টিতে ভেজার পর আচোঁল দিয়ে মুছে দিচ্ছেন......
হীম শীতল হাত গুলোর স্পর্শ্বটুকু বাদ দিলে আমার ভয় পাওয়ার মত কিছুই ছিল না। উনি আমার আমার মাথা মুছে দিতে দিতে বললেন, “ এত বড় একটা মেয়েকে কোন আক্কেলে এই ঝড় বাদলের রাতে বাড়ি থেকে বের হতে দিয়েছে এমরান? ওর কান্ড জ্ঞান দেখি দিন দিন লোপ পাচ্ছে! ড্রাইভার দিয়ে বাড়ি পৌছে দেয়া যেত না? নাসের ভাই তো সারাদিন বেকার বসেই থাকেন। আমি নেই, এমরানেরও বোধ বুদ্ধি কমা শুরু করেছে!
আমি ঘোরের মধ্যে ডুবে আছি। আতংক আর মমতা- এ দুটোকে আলাদা করে চেনার মত ক্ষমতাটুকু কাজ করছে না। প্যারালাইজড রোগীর মত দরজার গায়ে এলিয়ে আছি স্পন্দনহীনভাবে।
এমরানকে বলবে আমি বলেছি যে তোমাকে বিকেল পাঁচটার পর ছুটি দিয়ে দিতে। রাত আটটা পর্যন্ত কিসের এত কাজ?” কঠোর গলায় বললেন জয়নাব আরা।
জ্যামের মধ্যে গাড়িটা নড়তে শুরু করেছে। খুব ধীরে ধীরে এগুচ্ছে শামুকের মত গতিতে। বড় সড় অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে সামনে। আমাদের গাড়িটা সেটার পাশ কাটানোর সময় দেখলাম একটা মাইক্রোবাস পুরো থ্যাঁতলে গেছে একটা ট্রাকের বাড়ি খেয়ে। কেউ বাঁচেনি মনে হচ্ছে। দেখলাম অ্যাম্বুল্যান্সে লাশ তোলা হচ্ছে সাদা কপড়ে ঢেকে। বৃষ্টি হচ্ছে খুব।ড্রাইভারকে বলতে শুনলাম, “ ইসসিরে! দুইটা ছোট বাচ্চাও মরছে! আল্লায় যে কারে কখন তুইল্যা নেয়।
জয়নাব আরা কথাটা শুনে গম্ভীর হয়ে গেলেন। আমি ঢোক গিললাম। ড্রাইভার কি জয়নাব আরাকে দেখতে পাচ্ছে?
রাতের নিকশ কালো অন্ধকারের মাঝ দিয়ে প্রচন্ড বৃষ্টির মধ্যে আমাদের গাড়িটা ছুটে চলেছে। অজানা একটা ভয় আর বোধহীন শূণ্যতা ঘুরপাক খাচ্ছে আমার ভেতরটায়।
আমাদের এলাকাটার সামনে এসে যখন ট্যাক্সিটা থামল জয়নাব আরা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে কোমল স্বরে বললেন, “ যাও। তোমার বাসায় ফেরাটা নিয়ে চিন্তা হচ্ছিল। সন্ধ্যার পর বাহিরে থেকো না।কেমন?”
আমি যন্ত্রের মত দরজা খুলে নেমে গেলাম। ড্রাইভারকে ভাড়া দিতে গিয়ে হাত গুলো কাঁপছিল। বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছি আবার। পেছনের জানালাটার দিকে তাকালাম। জয়নাব আরা এখনো বসে আছেন, স্নেহ ভরা চোখে তাকিয়ে আছেন; আমি তাকানো মাত্র আবার বলে উঠলেন, “ ভিজে যাচ্ছো তো! তাড়াতাড়ি যাও!
আমি মাথায় ওড়না দিয়ে বৃষ্টি থেকে বাঁচার চেষ্টা করলাম। চাবি দেয়া পুতুলের মত বাসার দিকে দৌড়াতে লাগলাম। পেছন দিকে ফিরে তাকাবার সাহস আমি হারিয়ে ফেলেছি।
০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০
বাসায় যেতে দুটো গলি পরে রাস্তায়।
মাত্র একটা গলি ঘুরেছি সামনে দেখলাম একটা ল্যাম্প পোষ্টের হলুদ লাইটের নিচে নীল শার্ট পরা একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। দূর থেকে দেখেই বোঝা গেল জাহিদ।
আমাকে দেখেই দাঁতগুলো সব বের করে হাসল, “ বাসায় ঠিক মত এসেছো কিনা দেখতে এলাম। টিউশ্যনি শেষ হতেই এক দৌড়ে এখানে।বৃষ্টিতে অনেক্ষণ ধরেই ভিজছে, শার্ট ভিজে গায়ের সাথে লেগে আছে ওর।
জাহিদকে হঠাৎ এখানে দেখে যতটা না অবাক হলাম, তার চেয়ে খুশি হলাম অনেক বেশি। প্রচন্ড ভয় পাচ্ছিলাম এতক্ষণ। কিন্তু ওকে দেখা মাত্র ভয়টা দূর হয়ে গেল মুহূর্তেই। যদিও কোনো কথা বলতে পারলাম না, কেবল বললাম, “ভাল করেছো।
হাটতে লাগলাম দুজন। জাহিদ বলল, “ ফোনে তোমার গলা শুনে মনে হচ্ছিল খুব টেনস্ড তুমি।তাই ভাবলাম দেখে যাই। তোমার জে.এম.বি. খালা তো আর এত রাতে ঘরে ঢুকতে দেবে না, তাই রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলাম।
সাবধানে হাটো। এখানে জায়গায় জায়গায় ম্যানহলের ঢাকনা নেই। চোরে নিয়ে যায়।ল্যাম্প পোষ্টের লাইটও চুরি যায় লাগাতে না লাগাতেই।
এক গাল হেসে আমার হাত ধরল জাহিদ, “ অসুবিধা নাই। ম্যানহলে পড়লে তুমি ওম্যান আছো, টেনে তুলবে।
আমার অত শক্তি নেই যে তোমার মত হাতি টেনে ম্যানহল থেকে বের করবো।কেউ দেখে ফেলবে এই ভয়ে হাতটা ছাড়িয়ে নিলাম। কিন্তু ম্যানহলে পড়ে যাবে এইভয়ে ওর শার্টের একটা অংশ মুঠো করে ধরে রাখলাম। সেটা দেখে জাহিদ উদাস গলায় ল্যাম্প পোষ্টের হলুদ বাল্বটার দিকে তাকিয়ে বলল, “ বেগাম, জগতের শেষ ল্যাম্প পোষ্টের বাল্বটা চুরি যাওয়ার পরেও আমি হারিকেন জ্বালিয়ে তোমার পাশে পাশে এভাবে শার্ট ধরিয়ে হাটবো...... কারণ, তোমার পাশে হাটতে আমার বড় ভাল লাগে! মনে হয় যেন বয়সটা একুশের ঘরে আটকে আছে এখনো!
আমি অন্য সময় হলে হাসতাম, আজ হাসতে পারলাম না।

¤¤ চলবে ¤¤

চতুরঙ্গ-(১১তম পর্ব) [Ghost Stories -p11 ]



চতুরঙ্গ-(১১তম পর্ব)

লেখক:নিথর শ্রাবণ শিহাব

[ বিঃদ্রঃ বাকী পর্বের লিঙ্ক এই পর্বের শেষে দেওয়া আছে ]

স্যার আপনাকে একটা প্রশ্ন করবো আমি। প্লিজ জবাবটা দেবেন।
কি প্রশ্ন?” নামায পড়ার কাঠের চেয়ারটায় বসেছিলেন। অবাক হয়ে মাথা থেকে টুপিটা খুলে বেড সাইড টেবিলের ওপর রাখলেন। নামায শেষ হয়েছে। এতক্ষণ
 নামায পড়ছিলেন দেখে বাহিরে করিডোরে পায়চারি করছিলাম অস্থির ভাবে। বারবার উঁকি দিয়ে যাচ্ছিলাম নামায শেষ হয়েছে কিনা। গত রাতে এক ফোঁটা ঘুম হয়নি আমার। সারা রাত মিথিলাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবার চেষ্টা করেছি। কিন্তু অজানা একটা ভয়ে সারাক্ষণ কাঁপছিলাম। দুচোখের পাতা এককরতে পারিনি এক মুহূর্তের জন্য।
ডাঃ এমরান দাঁড়িতে আঙ্গুল বুলালেন কৌতুহলি মুখে, আবার জিজ্ঞেস করলেন, “ কি প্রশ্ন? এত অস্থির দেখাচ্ছে কেন তোমাকে?”
স্যার, আপনার অ্যাক্সিডেন্টটা সম্পর্কে বলুন প্লিজ। জয়নাব আরার মৃত্যু সম্পর্কে জানা ভীষণ প্রয়োজন আমার।রীতিমত অনুনয়মেশানো গলায় বললাম।
ডাঃ এমরান গম্ভীর হয়ে গেলেন প্রশ্নটা শুনে। আর চোখে দেয়ালে ঝোলানো তাঁর স্ত্রীর ছবিটার দিকে তাকালেন, কাঁশলেন, “ হঠাৎ এ প্রশ্ন?”
স্যার প্লিজ বলুন। আমি নয়ত পাগল হয়ে যাব!মিনতি ভরা কন্ঠে বললাম। আমার ধারণা আমি তাঁকে দেখেছি গতকাল সন্ধ্যায়।
আমার কথা শুনে সামান্য তম চমকালেন না তিনি। কেবল গম্ভীর মুখে হাতের নখ দেখতে লাগলেন।
“ It was just an ordinary road accident. nothing to explain. গাড়ি আমি ড্রাইভ করছিলাম সেদিন। নাসের অসুস্থ ছিল। তাই গাড়ি আমাকেইড্রাইভ করতে হয়েছিল। সেটাই কাল হল। সঙ্গে ছিল জয়নাব। একটা ব্রীজ পাড় করার সময় অন্য দিক থেকে আসা কারের হেড লাইটের আলোতে চোখ ধাঁধিয়ে গিয়েছিল। আমি ড্রাইভিং-এ কাঁচা ছিলাম। ব্যস, যা হবার হয়ে গেল। ফলাফল তোমার সামনেইদেখতে পাচ্ছো। আমি হুইল চেয়ারে বন্দী, জয়নাব দেয়ালে ফ্রেমে বন্দী।ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেললেন।
ব্যস? এটুকুই?” আমি নিজের পায়ের ওপর ভর রাখতে পারছিলামনা, একটা টুল টেনে বসে পরলাম।
হুম। আর কিছুই নেই।টেবিল থেকে একটা কোরআনের তাফসির বইতুলে নিলেন। স্পষ্ট বোঝা গেলআমাকে চলে যেতে ইঙ্গিত করছেন।আমি ক্লান্ত ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়ালাম, মুখের ওপর এসে পরা চুল গুলোকে কানের পেছনে পাঠিয়ে দিলাম, “ স্যার, আমি প্রচন্ড মানসিক সমস্যায় ভূগছি মে বি। আমি জানি না এর থেকে পরিত্রাণের উপায়টা কি।দরজার দিকে হাটা লাগালাম।
হঠাৎ শুনলাম পেছন থেকে ডাঃ এমরান বলছেন, “ আচ্ছা নোভেরা, বলতে পারো ধর্মের উৎপত্তি কোত্থেকে?”
ফিরে তাকালাম অবাক হয়ে, মাথা নাড়ালাম, “ জানি না স্যার।
যেখানে বিজ্ঞানের সমাপ্তি, সেখান থেকেই ধর্মের শুরু। তুমি বিজ্ঞাকে স্বীকৃতি দিতে পারো, অথচ ধর্মকে কেন নয়? তুমি প্রাইমারি স্কুল পড়বে অথচ হাই স্কুলে যাবে না-কেমন দেখাবে? ইদানীং কালে চারপাশে খুব বেশি নাস্তিক ছেলে মেয়েদের দেখা যাচ্ছে- কেন বলতে পারো?”
জানি না স্যার।বিমূঢ়ের মতএকই উত্তর দিলাম।
জ্ঞান অর্ধেক কিংবা অপূর্ণথাকায়। স্বল্প জ্ঞান নিয়ে এরা ধর্মকে ব্যাখ্যা করতে যায়- এবং ব্যাখ্যা করতে না পেরে স্রষ্টা ও ধর্ম- দুটোকেই অবাস্তব বলে উড়িয়ে দেয়। এরা নিজেরাই বিভ্রান্ত এদের স্বল্প জ্ঞান নিয়ে। যারকারণে সরল অংক করতে গিয়ে এরা মাঝ পথে আটকে যায় এবং বলে অংকে ভূল আছে। তার যোগ বিয়োগ জানায় যে ভূল আছে সেটাই বোঝে না। সেটাকে ঢাকতেই নাস্তিকতা বাদের এত চর্চা। দুনিয়াতে সব বড় বড় বিজ্ঞানীদের তুমি আস্তিক হিসেবে পাবে। কিন্তু বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দেখবে কট্টর নাস্তিক হিসেবে। যারা নিজেদের অজান্তেই তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে বেশ কিছু নাস্তিক ছাত্র-ছাত্রী প্রসব করছে। বুঝতে পারছো ব্যাপারটা? বর্তমানে গ্লোবাল ভিলেজ র‍্যাভুলিউশনের মত এটাও গ্লোবালাইজেশনের পর্যায়ে পড়ে গেছে। তাতে বোঝা যাছে শূণ্য কলস বিদ্যাধারী স্টুডেন্টদের সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। বিজ্ঞানের অক্ষমতাকে এরা অস্ত্র বানিয়ে ধর্মকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিচ্ছে-কিন্তু সেটা কতটুকু যৌক্তিক?”
আমি হঠাৎ করেই হেসে ফেললাম।
ডাঃ এমরান ভ্রুঁ কোঁচকালেন, “হাসছো কেন?”
আপনাকে দেখে হঠাৎ ডাঃ জাকির নায়েকের কথা মনে পরে গেল। ওনার কথা বলার ধরনটা অনেকটা আপনার মত।
হাতের বইটা টেবিলের ওপর রেখেহতাশ ভাবে মাথা নাড়ালেন ডাঃ এমরান, “ সিরিয়াস কথার মাঝ খানে তোমরা যে কিভাবে হাসতে পারো!
স্যরি স্যার।অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম।হুম........ বসো।টুলটা ইঙ্গিতকরলেন। আমি এসে বসার পর উনি বলা শুরু করলেন-
তোমাকে কথা গুলো বলার পেছনে কারণ ছিল। তাই বলেছি। কারণ তুমি দুনিয়াতে খুব অদ্ভূত কিছু কিছু জিনিস দেখবে- যার ব্যাখ্যা বিজ্ঞানে পাবে না। কিন্তু বিজ্ঞান তোমাকে ব্যাখ্যা না দিতে পারলেও ধর্ম তোমাকে সেটার ব্যাখ্যা এনে দেবে। আমার জীবনে সেরকম কিছু ঘটনা ঘটেছিল যার ব্যাখ্যা কিংবা বিশ্লেষণ করার মত ইচ্ছা জাগেনি মনে। সব কিছুর ব্যাখ্যা থাকতে হবে- এটা দাবি করা অন্যায়। যদি না সে ব্যাখ্যাটা গ্রহণ করার মত পূর্ণ জ্ঞান তোমার থাকে। জগতের স্রোত খুব বিচিত্র।দম নিলেন। কাঠের চেয়ারটায় বসে থাকায় হেলান দিয়ে বসছেন না। পিঠ সোজা করে বসে আছেন।

( চলবে )