চতুরঙ্গ -(১৫তম পর্ব)
লেখক:নিথর শ্রাবণ শিহাব
[ বিঃদ্রঃ বাকী পর্বের লিঙ্ক এই পর্বের শেষে দেওয়া আছে ]
আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। এত কম সময়ে কে এল!আর
লেখলোই বা কি এসব? ব্যাপারটা নিয়ে আমি এত
চিন্তায় পড়ে গেলাম যে আমার এক প্রফেসর
বন্ধুকে ডায়েরীটার লেখাগুলো পাঠিয়ে দিলাম
ফ্যাক্স করে। ফিজিক্সের টিচার ও,
ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটেতে পড়ায়- ড.
নিকোলাস অগাস্টাস। সে তো ফ্যাক্স পেয়ে পরের
ফ্লাইটেই বাংলাদেশে এসে হাজির!
আমি তো তাকে দেখে অবাক! আমার বাড়িতে এসেই
আমাকে বলে বসল, “ কে লিখেছে এটা?
যে লিখেছে তাকে আমার সামনে হাজির করো!
তাকে আমার চাই! সে সায়েন্সের কি বিশাল বিপ্লব
ঘটাতে যাচ্ছে নিজেও জানে না।”
আমি তার কথার আগা মাথা কিছুই বুঝলাম না। কিছুক্ষন
পর একটু ধাতস্থ
হয়ে আমাকে পুরো ব্যাপারটা বোঝাতে লাগল
নিকোলাস। যা বোঝালো তার সারমর্ম হলঃ সেই
ডায়েরীতে লেখা অংক গুলো হল স্পেস
টাইমিং এবং গ্র্যাভিটি বিষয়ক
একটা ম্যানুস্ক্রিপ্টপ্যাপার, গবেষণা পত্র। যদিও
অর্ধেক, কিন্তু সায়েন্স ওয়ার্ল্ডে হূল স্থূল
ফেলে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। এক বস্তু এক
জায়গা থেকে অন্য জায়গায় কিভাবে মুহূর্তেই
চলে যাবে, এবং তার গ্র্যাভিটিকে কিভাবে সেই
হাইপার ডাইভের জ্বালানি কিংবা বল রুপে ব্যবহার
করবে- তার বিশাল বর্ণনা। আমি নিজে ডাক্তার মানুষ,
এক সময় আগ্রহ করে এইচ.জি.ওয়েলসের বই পড়ার সময়
ঝোঁকের বশে ফিজিক্স নিয়ে এক আধটু
নাড়াচাড়া করেছিলাম। টুকটাক লেখালেখি করতাম
বলে পড়তে হত। ব্যস এটুকুই। কিন্তু এত কঠিন ফিজিক্স
বোঝার মত জ্ঞান আমার নেই। তাই নিকোলাসের সব
কথা বুঝতে পারলাম না।
নিকোলাস আমাকে জিজ্ঞেস করল কে লিখেছে এটা?
আমি কিছুই চাপলাম না। বলে দিলাম সব। খুব অবাক হল
নিকোলাস। কি যেন ভাবল অনেকহ্মণ ধরে। তারপর বলল
রাতে সে আমার বাড়িতেই থাকবে।কে এসে লেখে যায়
বের করা দরকার। আমিও তাই চাচ্ছিলাম। বলার
সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেলাম।
সেদিন বিকালেই সারা বাড়িতে দশ বারোটা ক্লোসড
সার্কিট ক্যামেরা বসিয়ে দিল নিকোলাস।
বিজ্ঞানী ভদ্রলোক আসলেও
ক্যামেরা এড়িয়ে আসতে পারবে না। ধরা পড়তেই
হবে ক্যামেরার চোখে।
সব ঠিক করে রাতে খাওয়ার পর
অপেক্ষা করতে লাগলাম দু’জনে।বসে আছি তো আছিই।
কোনো কিছুই হল না। নিকোলাস
লম্বা জার্নি করে এসেছিল। তাই ক্লান্ত ছিল।
জেগে থাকতে পারল না।ঘুমিয়ে পড়ল খুব তাড়াতাড়ি।
আমিও বসে বসে ঢুলতে লাগলাম ঘুমে।” দম নেয়ার জন্য
থামলেন।
আমি বসে আছি। অপেহ্মা করছি ওনার
বাকি কথাগুলো শোনার জন্য। জাহিদের প্রসঙ্গ
থেকে এই প্রসঙ্গে চলে আসার
ব্যাপারটা এখনো বুঝতে পারছি না। কিন্তু চুপ
থাকলাম।
ডাঃ এমরান বলা শুরু করলেন আবার, “ পরদিন
সকালে নিকোলাসকে হিষ্টোরিয়া রোগীরমত
কাঁপতে কাঁপতে পাগলের প্রলাপ বকতে দেখা গেল।
রীতিমত উন্মাদ হয়ে গেছে! দু-তিন জন মিলেও
ধরে রাখা যাচ্ছে না। বারবার
আমাকে দেখিয়ে বলছে, “ He's not a human!
something else! I saw him that he was
walking on the roof of the hall room! It seems
like - he was hanging from the roof!”
আমি তো হতবাক ওর কথা শুনে। কি বলে এসব?
কোনো মতে ওকে হাসপাতালে পাঠিয়ে সি.সি.
ক্যামেরাগুলোর ভিডিও দেখতে বসে গেলাম। কি এমন
দেখেছে ও যে এরকম ভয় পেল?
ভিডিও দেখতে গিয়ে আমি নিজেই স্তম্ভিত
হয়ে গেলাম। মনিটরের মধ্যে আটটা ভাগ, আমার
পুরো বাড়িটার ভেতর বাহির সব দেখা যাচ্ছে।
আবছা অন্ধকার। ভিডিওর প্রথম কয়েক ঘন্টা সব কিছু
স্বাভাবিক, স্থির, চুপচাপ। তার পরেই ঘটনাটার শুরু।
আবছা অন্ধকারেও দেখা যাচ্ছে রাত প্রায় আড়াইটার
দিকে আমার দোতলার রুমের
দরজা খুলে ভাসতে ভাসতে আমি ঘর
থেকে বেরিয়ে এসেছি। হাতে কলম আর ডায়েরীটা।
নভোচারীদের মত
শূন্যে ডিগবাজি খেয়ে সোজা হলরুমের ছাদের
দাবা বোর্ডের দিকে উঠতে লাগলাম।
গিয়ে ঝুলে পড়লাম উল্টো ভাবে। গম্ভীর
মুখে হাটতে হাটতে ডায়েরীতে লিখে যাচ্ছি কি যেন!
এবং লিখছি আমার বাম হাত দিয়ে! যদিও আমি রাইট
হ্যান্ডেড!
আমি বজ্রাহতের মত বসে রইলাম।নিকোলাস
সরাসরি আমাকে এ অবস্থায় দেখেছে কাল রাতে! কারণ
আমি ভিডিওতেই দেখতে পেলাম নিকোলাসের ভয়ার্ত
চিৎকার- হল রুমের নিচে দাঁড়িয়ে চেঁচাচ্ছে। আর
ছাদে ঝুলে থাকা “আমি” খুব বিরক্ত হয়ে নিকোলাসের
দিকে তাকিয়ে হাত তুলে ইশারা করতেই নিকোলাস
শুন্যে উঠে ঝুলতে থাকল বিচিত্র ভঙ্গিতে!
চেঁচাচ্ছে সে অবস্থাতেই!
আমি সেদিনই প্রথম আবিষ্কার করি আমার Split
personality বা দ্বৈত সত্ত্বা রয়েছে।
রোগটা কবে থেকে হয়েছে আমি নিজেও জানি না।
যেখানে নিজের ভেতরেই আরো একটা অস্তিত্ব
সৃষ্টি হয়েছে! আমি ঘুমিয়ে পড়লেই ওটা জেগে ওঠে।
সেই অস্তিত্বটাই এতদিন বাম হাতে আমার অজান্তেই
ডায়েরীতে এসব লিখে এসেছে!”
( চলবে )
লেখক:নিথর শ্রাবণ শিহাব
[ বিঃদ্রঃ বাকী পর্বের লিঙ্ক এই পর্বের শেষে দেওয়া আছে ]
আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। এত কম সময়ে কে এল!আর
লেখলোই বা কি এসব? ব্যাপারটা নিয়ে আমি এত
চিন্তায় পড়ে গেলাম যে আমার এক প্রফেসর
বন্ধুকে ডায়েরীটার লেখাগুলো পাঠিয়ে দিলাম
ফ্যাক্স করে। ফিজিক্সের টিচার ও,
ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটেতে পড়ায়- ড.
নিকোলাস অগাস্টাস। সে তো ফ্যাক্স পেয়ে পরের
ফ্লাইটেই বাংলাদেশে এসে হাজির!
আমি তো তাকে দেখে অবাক! আমার বাড়িতে এসেই
আমাকে বলে বসল, “ কে লিখেছে এটা?
যে লিখেছে তাকে আমার সামনে হাজির করো!
তাকে আমার চাই! সে সায়েন্সের কি বিশাল বিপ্লব
ঘটাতে যাচ্ছে নিজেও জানে না।”
আমি তার কথার আগা মাথা কিছুই বুঝলাম না। কিছুক্ষন
পর একটু ধাতস্থ
হয়ে আমাকে পুরো ব্যাপারটা বোঝাতে লাগল
নিকোলাস। যা বোঝালো তার সারমর্ম হলঃ সেই
ডায়েরীতে লেখা অংক গুলো হল স্পেস
টাইমিং এবং গ্র্যাভিটি বিষয়ক
একটা ম্যানুস্ক্রিপ্টপ্যাপার, গবেষণা পত্র। যদিও
অর্ধেক, কিন্তু সায়েন্স ওয়ার্ল্ডে হূল স্থূল
ফেলে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। এক বস্তু এক
জায়গা থেকে অন্য জায়গায় কিভাবে মুহূর্তেই
চলে যাবে, এবং তার গ্র্যাভিটিকে কিভাবে সেই
হাইপার ডাইভের জ্বালানি কিংবা বল রুপে ব্যবহার
করবে- তার বিশাল বর্ণনা। আমি নিজে ডাক্তার মানুষ,
এক সময় আগ্রহ করে এইচ.জি.ওয়েলসের বই পড়ার সময়
ঝোঁকের বশে ফিজিক্স নিয়ে এক আধটু
নাড়াচাড়া করেছিলাম। টুকটাক লেখালেখি করতাম
বলে পড়তে হত। ব্যস এটুকুই। কিন্তু এত কঠিন ফিজিক্স
বোঝার মত জ্ঞান আমার নেই। তাই নিকোলাসের সব
কথা বুঝতে পারলাম না।
নিকোলাস আমাকে জিজ্ঞেস করল কে লিখেছে এটা?
আমি কিছুই চাপলাম না। বলে দিলাম সব। খুব অবাক হল
নিকোলাস। কি যেন ভাবল অনেকহ্মণ ধরে। তারপর বলল
রাতে সে আমার বাড়িতেই থাকবে।কে এসে লেখে যায়
বের করা দরকার। আমিও তাই চাচ্ছিলাম। বলার
সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেলাম।
সেদিন বিকালেই সারা বাড়িতে দশ বারোটা ক্লোসড
সার্কিট ক্যামেরা বসিয়ে দিল নিকোলাস।
বিজ্ঞানী ভদ্রলোক আসলেও
ক্যামেরা এড়িয়ে আসতে পারবে না। ধরা পড়তেই
হবে ক্যামেরার চোখে।
সব ঠিক করে রাতে খাওয়ার পর
অপেক্ষা করতে লাগলাম দু’জনে।বসে আছি তো আছিই।
কোনো কিছুই হল না। নিকোলাস
লম্বা জার্নি করে এসেছিল। তাই ক্লান্ত ছিল।
জেগে থাকতে পারল না।ঘুমিয়ে পড়ল খুব তাড়াতাড়ি।
আমিও বসে বসে ঢুলতে লাগলাম ঘুমে।” দম নেয়ার জন্য
থামলেন।
আমি বসে আছি। অপেহ্মা করছি ওনার
বাকি কথাগুলো শোনার জন্য। জাহিদের প্রসঙ্গ
থেকে এই প্রসঙ্গে চলে আসার
ব্যাপারটা এখনো বুঝতে পারছি না। কিন্তু চুপ
থাকলাম।
ডাঃ এমরান বলা শুরু করলেন আবার, “ পরদিন
সকালে নিকোলাসকে হিষ্টোরিয়া রোগীরমত
কাঁপতে কাঁপতে পাগলের প্রলাপ বকতে দেখা গেল।
রীতিমত উন্মাদ হয়ে গেছে! দু-তিন জন মিলেও
ধরে রাখা যাচ্ছে না। বারবার
আমাকে দেখিয়ে বলছে, “ He's not a human!
something else! I saw him that he was
walking on the roof of the hall room! It seems
like - he was hanging from the roof!”
আমি তো হতবাক ওর কথা শুনে। কি বলে এসব?
কোনো মতে ওকে হাসপাতালে পাঠিয়ে সি.সি.
ক্যামেরাগুলোর ভিডিও দেখতে বসে গেলাম। কি এমন
দেখেছে ও যে এরকম ভয় পেল?
ভিডিও দেখতে গিয়ে আমি নিজেই স্তম্ভিত
হয়ে গেলাম। মনিটরের মধ্যে আটটা ভাগ, আমার
পুরো বাড়িটার ভেতর বাহির সব দেখা যাচ্ছে।
আবছা অন্ধকার। ভিডিওর প্রথম কয়েক ঘন্টা সব কিছু
স্বাভাবিক, স্থির, চুপচাপ। তার পরেই ঘটনাটার শুরু।
আবছা অন্ধকারেও দেখা যাচ্ছে রাত প্রায় আড়াইটার
দিকে আমার দোতলার রুমের
দরজা খুলে ভাসতে ভাসতে আমি ঘর
থেকে বেরিয়ে এসেছি। হাতে কলম আর ডায়েরীটা।
নভোচারীদের মত
শূন্যে ডিগবাজি খেয়ে সোজা হলরুমের ছাদের
দাবা বোর্ডের দিকে উঠতে লাগলাম।
গিয়ে ঝুলে পড়লাম উল্টো ভাবে। গম্ভীর
মুখে হাটতে হাটতে ডায়েরীতে লিখে যাচ্ছি কি যেন!
এবং লিখছি আমার বাম হাত দিয়ে! যদিও আমি রাইট
হ্যান্ডেড!
আমি বজ্রাহতের মত বসে রইলাম।নিকোলাস
সরাসরি আমাকে এ অবস্থায় দেখেছে কাল রাতে! কারণ
আমি ভিডিওতেই দেখতে পেলাম নিকোলাসের ভয়ার্ত
চিৎকার- হল রুমের নিচে দাঁড়িয়ে চেঁচাচ্ছে। আর
ছাদে ঝুলে থাকা “আমি” খুব বিরক্ত হয়ে নিকোলাসের
দিকে তাকিয়ে হাত তুলে ইশারা করতেই নিকোলাস
শুন্যে উঠে ঝুলতে থাকল বিচিত্র ভঙ্গিতে!
চেঁচাচ্ছে সে অবস্থাতেই!
আমি সেদিনই প্রথম আবিষ্কার করি আমার Split
personality বা দ্বৈত সত্ত্বা রয়েছে।
রোগটা কবে থেকে হয়েছে আমি নিজেও জানি না।
যেখানে নিজের ভেতরেই আরো একটা অস্তিত্ব
সৃষ্টি হয়েছে! আমি ঘুমিয়ে পড়লেই ওটা জেগে ওঠে।
সেই অস্তিত্বটাই এতদিন বাম হাতে আমার অজান্তেই
ডায়েরীতে এসব লিখে এসেছে!”
( চলবে )
No comments:
Post a Comment