চতুরঙ্গ-(১৩তম
পর্ব)
লেখক:নিথর শ্রাবণ শিহাব
[ বিঃদ্রঃ বাকী পর্বের লিঙ্ক এই পর্বের শেষে দেওয়া আছে ]
শূণ্য গ্লাসটা টেবিলে নামিয়ে রাখতে রাখতে ডাঃ এমরান
বললেন, “ সাভার থেকে ফিরতে ফিরতে রাত
হয়ে গিয়েছিল। তখনই অ্যাক্সিডেন্টটা হয়। আমার
জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া অ্যাক্সিডেন্ট........” শেষ
কথাটা বিড়বিড় করে আপন মনেই বললেন। খেয়াল
করলাম ওনার মুখে তীব্র একটা কষ্টের ছাপ
ফুটে উঠেছে হঠাৎ করে। কি বললেন বুঝতে পারলাম না।
এক মুহূর্ত বিরতি নিয়ে আবার বলা শুরু করলেন,
“বিচিত্র কোনো কারণে সেদিন সন্ধ্যা থেকেই আমার
কাছে লাগছিল আমাদের পেছনের সিটে মধ্যবয়স্ক
সাদা পাঞ্জাবী পরা একটা লোক বসে আছে।
কড়া মিষ্টি একটা গন্ধ পাচ্ছি লোকটার গা থেকে।
আমি তিনবার রিয়ার ভিউ মিররে দেখলাম
লোকটাকে – পেছনের দিকে ফিরে ব্যাক
সিটে অন্ধকারে কাউকে দেখলাম না! জয়নাব সাবধান
করে দিল, “ কি হল? গাড়ি চালাতে চালাতে এতবার
পেছনে তাকাচ্ছো কেন?”
আমি দুবার সামনের দিক
থেকে আসা দুটো গাড়িকে ঠুকে দিতে দিতে কোনো মতে সামলে নিলাম।
জয়নাব ভয় পাওয়া গলায় বলল, “ তুমি ঠিক
আছো তো এমরান? এরকম করছো কেন?”
আমি জবাব না দিয়ে আবার তাকালাম মিররে।
বিস্ফোরিত চোখে আয়নাতে এবারে দেখলাম পেছনের
কিছুই দেখা যাচ্ছে না! তার
বদলে দেখা যাচ্ছে আমার বাড়ির ছাদের দাবার
বোর্ডটা! সোজা হয়ে আছে বোর্ডটা। মূর্তি গুলো ঢাল
তলোয়ার হাতে দাঁড়িয়ে আছে বোর্ডের ঘরগুলোয়! হঠাৎ
শুনলাম জয়নাব চিৎকার দিল, “ এমরান!
গাড়ি সামলাও!” একটা ব্রীজ পার করছিলাম নদীর
ওপর দিয়ে। আমি চমকে সামনে তাকাতেই চোখ
ধাঁধিয়ে গেল! সামনের দিক থেকে আসা কোনো গাড়ির
হেডলাইটের আলোয় আমি কিছুই দেখতে পেলাম না।
কিন্তু গাড়িটা কিছুতে বাড়ি খাওয়ার বদলে অদ্ভূত
একটা ঘটনা ঘটল-
কিছু বোঝার আগেই আমাদের গাড়িটা আলোক
উৎসটা ভেদ করে লাফ দিয়ে এসে পড়ল বিশাল
একটা দাবা বোর্ডের ওপর! আমাদের বাড়ির ছাদের
সেই দাবা বোর্ডটায়!
গাড়ি উল্টো ভাবে ছুটছে বোর্ডের ওপর দিয়ে!
মধ্যাকর্ষণ যেন বোর্ডের দিকে! জয়নাব আতংকিত
গলায় চিৎকার দিল। আমি পাগলের মত স্টিয়ারিং হুইল
ঘুরিয়ে কয়েকটা মূর্তির
সাথে বাড়ি খেতে খেতে সামলে নিলাম। ছাদটা ঘুট
ঘুটে অন্ধকার। গাড়ির হেড লাইটের আলোই যা ভরসা।
ব্রেকটাও কাজ করছে না ঠিকমত। তীব্র
গতিতে ছুটে চলেছে নিয়ন্ত্রনহীন গাড়িটা।
মনে হচ্ছে অন্য কেউ একজন চালাচ্ছে সেটা!
স্টিয়ারিং পর্যন্ত ঘুরিয়ে সোজা করা যাচ্ছে না!
নিজে থেকেই ঘুরছে!তার মাঝ দিয়েই আমি ঢাল
তলোয়ার হাতে দাঁড়ানো মূর্তিগুলোকে বাঁচিয়ে, পাশ
কাটিয়ে নিয়ে যাচ্ছি কোনোমতে।
কিন্তু এত চেষ্টার পরও দূর্ঘটনা এড়াতে পারলাম না।
আমি খেয়াল করিনি যে সামনের দিকে একটা বড়
মূর্তি বর্শা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যখন দেখলাম
চিৎকার দিয়ে ব্রেক কষলাম। ব্রেক লাগল এবারে।
কাঁচ ভাঙ্গার শব্দ পেতেই পাশে তাকালাম। জয়নাব
মূর্তির মত বসে আছে আমার পাশে। ওর ডান
হাতটা দিয়ে কাঁপা কাঁপা ভাবে আমার মুখটা স্পর্শ
করল। এই অন্ধকারের মাঝেও স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি ওর
দু’চোখ বেয়ে হীরের মত দু’ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল।
ফিস ফিস করে বলল, “ খুব ইচ্ছে ছিল এই
বাড়িতে মারা যাবো। ভাল থেকো এমরান। তুমি আমার
দেখা পৃথিবীর সবচেয়ে ভাল মানুষটা। আমি খুব
ভাগ্যবতী পৃথিবীর সবচেয়ে ভাল
মানুষটাকে ছুঁয়ে বিদায় নিতে পারছি.....”
আমি কাঁপা হাতে ওর হাতটা আমার মুখে ধরে রাখলাম।
জয়নাব অস্ফূট একটা শব্দ করল।
উইন্ডশীল্ডের কাঁচ ভেঙ্গে সামনে দাঁড়ানো মূর্তিটার
হাতের বর্শাটা ঢুকে গেছে জয়নাবের বুকের বাম
পাশে। ওর ঠোঁট দুটো কাঁপছে কেবল অসহ্য মৃত্যু
যন্ত্রনায়........
আমার দু’চোখ ঝাপসা হয়ে এল, ফিসফিস করে বললাম, “
তোমার সাথে আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর
সময়টা কেটেছে জয়নাব। I think I’ll miss you rest
of my life.”
জয়নাব হাসার চেষ্টা করল। আরো দু’ফোঁটা অশ্রু
গড়িয়ে পড়ল ওর চোখের কোণ বেয়ে। চোখের
পাঁপড়িগুলো ভিজে কাঁটার মত হয়ে আছে। একটা মানুষ
এত সুন্দর হয় কি করে?
অনুভব করলাম গাড়িটা ছাদ থেকে খসে পড়ার মত
প্রচন্ড গতিতে নিচের হল রুমের দিকে পড়ছে। কিন্তু
আমার কোনো ভয়, আতংক কিছুই হচ্ছে না.......
প্রচন্ড শব্দ আর ঝাঁকুনি দিয়ে সুইমিং পুলের
নীলচে পানি ভেদ করে ডুবে গেলো গাড়িটা। আমার
পাশে জয়নাব হাতবাড়িয়ে আমাকে ছুঁয়ে দেখছে,
মুখে একটুকরো নিষ্পাপ হাসি........ ওর বুকের বাম পাশ
থেকে বর্শার ভাঙ্গা অংশ বিশেষ বেরিয়ে আছে......
রক্তে ভেসে যাচ্ছে শরীরটা ওর। উইন্ডশীল্ডের
ভাঙ্গা কাঁচ দিয়ে সজোরে পানি ঢুকছে গাড়ির ভেতর।
আমার দু’পায়ে ভয়ংকর একটা ব্যথা টের পেলাম।
গাড়ির কিছু একটা বেঁকে আমার দু
পায়ে এসে চেপে ধরেছে......কিন্তু জয়নাবের
দিকে তাকিয়ে রয়েছি মুগ্ধ চোখে...... আহা! এই
মুখটা যদি চিরকাল এভাবে দেখতে পারতাম.....” চুপ
হয়ে গেলেন ডাঃ এমরান। অন্যদিকে তাকিয়ে আছেন।
বুঝতে পারলাম চোখে পানি এসে গেছে তাঁর।
সেটা আড়াল করতেই অন্য দিকে তাকিয়েছেন।
আমি অবাক হয়ে বললাম, “ সুইমিংপুলের নিচ থেকে বের
হলেন কি করে? গাড়ি নিয়ে ডোবার পরও ইনজুরড
অবস্থায়....” বুঝতে পারলাম
বিষ্ময়ে মুখটা হা হয়ে গেছে আমার।
ডাঃ এমরান চোখের কোণ ডললেন আঙ্গুল দিয়ে, “ পানির
নিচে দম আটকে মারা যাওয়ার কথা ছিল আমার। কিন্তু
অদ্ভূত একটা ঘটনা ঘটল তখন। গাড়ির ভেতর
ভাঙ্গা উইন্ডশীল্ড দিয়ে পানি ঢুকে আমার নিঃশ্বাস
আটকে গেছে- হঠাৎ দেখলাম পানির নিচের
নীলচে জগৎটা দাবা বোর্ডের মত হয়ে যাচ্ছে।
সুইমিং পুলের তলদেশটা সাদা কালো ছক
কাটা দাবা বোর্ডের মত হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে যতদূর চোখ
যায়। তার মাঝ
দিয়ে আবছা ভাবে চোখে পড়ছে সাদা কতগুলো মূর্তি দাঁড়িয়ে আছে একেকটা ঘরে।
তুমি হয়ত খেয়াল করেছো এ বাড়ির ছাদের
চারটা মূর্তি বাদে সবগুলোই কিন্তু কালো পহ্মের ঘুটি।
সাদা ঘুটি না। কিন্তু পানির নিচের ঘুটিগুলো সব
সাদা। আমার দম
যেতে যেতে দেখতে পাচ্ছি চারটা সাদা বর্ম
পরা বিশাল দেহী মূর্তি আমার গাড়ির চার কোণার
মাটি ফুঁড়ে যেন গজিয়ে উঠল। খুব আশ্চর্যের বিষয় চার
জনের একটা করে হাত আমার গাড়িটার চার কোণায়
ধরা! কিছু বোঝার আগেই তীব্র
গতিতে পানি ফুঁড়ে মূর্তিগুলো গাড়িটাকে নিয়ে উঠে গেল
সুইমিং পুলের ওপর দিকে।
( চলবে )
লেখক:নিথর শ্রাবণ শিহাব
[ বিঃদ্রঃ বাকী পর্বের লিঙ্ক এই পর্বের শেষে দেওয়া আছে ]
শূণ্য গ্লাসটা টেবিলে নামিয়ে রাখতে রাখতে ডাঃ এমরান
বললেন, “ সাভার থেকে ফিরতে ফিরতে রাত
হয়ে গিয়েছিল। তখনই অ্যাক্সিডেন্টটা হয়। আমার
জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া অ্যাক্সিডেন্ট........” শেষ
কথাটা বিড়বিড় করে আপন মনেই বললেন। খেয়াল
করলাম ওনার মুখে তীব্র একটা কষ্টের ছাপ
ফুটে উঠেছে হঠাৎ করে। কি বললেন বুঝতে পারলাম না।
এক মুহূর্ত বিরতি নিয়ে আবার বলা শুরু করলেন,
“বিচিত্র কোনো কারণে সেদিন সন্ধ্যা থেকেই আমার
কাছে লাগছিল আমাদের পেছনের সিটে মধ্যবয়স্ক
সাদা পাঞ্জাবী পরা একটা লোক বসে আছে।
কড়া মিষ্টি একটা গন্ধ পাচ্ছি লোকটার গা থেকে।
আমি তিনবার রিয়ার ভিউ মিররে দেখলাম
লোকটাকে – পেছনের দিকে ফিরে ব্যাক
সিটে অন্ধকারে কাউকে দেখলাম না! জয়নাব সাবধান
করে দিল, “ কি হল? গাড়ি চালাতে চালাতে এতবার
পেছনে তাকাচ্ছো কেন?”
আমি দুবার সামনের দিক
থেকে আসা দুটো গাড়িকে ঠুকে দিতে দিতে কোনো মতে সামলে নিলাম।
জয়নাব ভয় পাওয়া গলায় বলল, “ তুমি ঠিক
আছো তো এমরান? এরকম করছো কেন?”
আমি জবাব না দিয়ে আবার তাকালাম মিররে।
বিস্ফোরিত চোখে আয়নাতে এবারে দেখলাম পেছনের
কিছুই দেখা যাচ্ছে না! তার
বদলে দেখা যাচ্ছে আমার বাড়ির ছাদের দাবার
বোর্ডটা! সোজা হয়ে আছে বোর্ডটা। মূর্তি গুলো ঢাল
তলোয়ার হাতে দাঁড়িয়ে আছে বোর্ডের ঘরগুলোয়! হঠাৎ
শুনলাম জয়নাব চিৎকার দিল, “ এমরান!
গাড়ি সামলাও!” একটা ব্রীজ পার করছিলাম নদীর
ওপর দিয়ে। আমি চমকে সামনে তাকাতেই চোখ
ধাঁধিয়ে গেল! সামনের দিক থেকে আসা কোনো গাড়ির
হেডলাইটের আলোয় আমি কিছুই দেখতে পেলাম না।
কিন্তু গাড়িটা কিছুতে বাড়ি খাওয়ার বদলে অদ্ভূত
একটা ঘটনা ঘটল-
কিছু বোঝার আগেই আমাদের গাড়িটা আলোক
উৎসটা ভেদ করে লাফ দিয়ে এসে পড়ল বিশাল
একটা দাবা বোর্ডের ওপর! আমাদের বাড়ির ছাদের
সেই দাবা বোর্ডটায়!
গাড়ি উল্টো ভাবে ছুটছে বোর্ডের ওপর দিয়ে!
মধ্যাকর্ষণ যেন বোর্ডের দিকে! জয়নাব আতংকিত
গলায় চিৎকার দিল। আমি পাগলের মত স্টিয়ারিং হুইল
ঘুরিয়ে কয়েকটা মূর্তির
সাথে বাড়ি খেতে খেতে সামলে নিলাম। ছাদটা ঘুট
ঘুটে অন্ধকার। গাড়ির হেড লাইটের আলোই যা ভরসা।
ব্রেকটাও কাজ করছে না ঠিকমত। তীব্র
গতিতে ছুটে চলেছে নিয়ন্ত্রনহীন গাড়িটা।
মনে হচ্ছে অন্য কেউ একজন চালাচ্ছে সেটা!
স্টিয়ারিং পর্যন্ত ঘুরিয়ে সোজা করা যাচ্ছে না!
নিজে থেকেই ঘুরছে!তার মাঝ দিয়েই আমি ঢাল
তলোয়ার হাতে দাঁড়ানো মূর্তিগুলোকে বাঁচিয়ে, পাশ
কাটিয়ে নিয়ে যাচ্ছি কোনোমতে।
কিন্তু এত চেষ্টার পরও দূর্ঘটনা এড়াতে পারলাম না।
আমি খেয়াল করিনি যে সামনের দিকে একটা বড়
মূর্তি বর্শা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যখন দেখলাম
চিৎকার দিয়ে ব্রেক কষলাম। ব্রেক লাগল এবারে।
কাঁচ ভাঙ্গার শব্দ পেতেই পাশে তাকালাম। জয়নাব
মূর্তির মত বসে আছে আমার পাশে। ওর ডান
হাতটা দিয়ে কাঁপা কাঁপা ভাবে আমার মুখটা স্পর্শ
করল। এই অন্ধকারের মাঝেও স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি ওর
দু’চোখ বেয়ে হীরের মত দু’ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল।
ফিস ফিস করে বলল, “ খুব ইচ্ছে ছিল এই
বাড়িতে মারা যাবো। ভাল থেকো এমরান। তুমি আমার
দেখা পৃথিবীর সবচেয়ে ভাল মানুষটা। আমি খুব
ভাগ্যবতী পৃথিবীর সবচেয়ে ভাল
মানুষটাকে ছুঁয়ে বিদায় নিতে পারছি.....”
আমি কাঁপা হাতে ওর হাতটা আমার মুখে ধরে রাখলাম।
জয়নাব অস্ফূট একটা শব্দ করল।
উইন্ডশীল্ডের কাঁচ ভেঙ্গে সামনে দাঁড়ানো মূর্তিটার
হাতের বর্শাটা ঢুকে গেছে জয়নাবের বুকের বাম
পাশে। ওর ঠোঁট দুটো কাঁপছে কেবল অসহ্য মৃত্যু
যন্ত্রনায়........
আমার দু’চোখ ঝাপসা হয়ে এল, ফিসফিস করে বললাম, “
তোমার সাথে আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর
সময়টা কেটেছে জয়নাব। I think I’ll miss you rest
of my life.”
জয়নাব হাসার চেষ্টা করল। আরো দু’ফোঁটা অশ্রু
গড়িয়ে পড়ল ওর চোখের কোণ বেয়ে। চোখের
পাঁপড়িগুলো ভিজে কাঁটার মত হয়ে আছে। একটা মানুষ
এত সুন্দর হয় কি করে?
অনুভব করলাম গাড়িটা ছাদ থেকে খসে পড়ার মত
প্রচন্ড গতিতে নিচের হল রুমের দিকে পড়ছে। কিন্তু
আমার কোনো ভয়, আতংক কিছুই হচ্ছে না.......
প্রচন্ড শব্দ আর ঝাঁকুনি দিয়ে সুইমিং পুলের
নীলচে পানি ভেদ করে ডুবে গেলো গাড়িটা। আমার
পাশে জয়নাব হাতবাড়িয়ে আমাকে ছুঁয়ে দেখছে,
মুখে একটুকরো নিষ্পাপ হাসি........ ওর বুকের বাম পাশ
থেকে বর্শার ভাঙ্গা অংশ বিশেষ বেরিয়ে আছে......
রক্তে ভেসে যাচ্ছে শরীরটা ওর। উইন্ডশীল্ডের
ভাঙ্গা কাঁচ দিয়ে সজোরে পানি ঢুকছে গাড়ির ভেতর।
আমার দু’পায়ে ভয়ংকর একটা ব্যথা টের পেলাম।
গাড়ির কিছু একটা বেঁকে আমার দু
পায়ে এসে চেপে ধরেছে......কিন্তু জয়নাবের
দিকে তাকিয়ে রয়েছি মুগ্ধ চোখে...... আহা! এই
মুখটা যদি চিরকাল এভাবে দেখতে পারতাম.....” চুপ
হয়ে গেলেন ডাঃ এমরান। অন্যদিকে তাকিয়ে আছেন।
বুঝতে পারলাম চোখে পানি এসে গেছে তাঁর।
সেটা আড়াল করতেই অন্য দিকে তাকিয়েছেন।
আমি অবাক হয়ে বললাম, “ সুইমিংপুলের নিচ থেকে বের
হলেন কি করে? গাড়ি নিয়ে ডোবার পরও ইনজুরড
অবস্থায়....” বুঝতে পারলাম
বিষ্ময়ে মুখটা হা হয়ে গেছে আমার।
ডাঃ এমরান চোখের কোণ ডললেন আঙ্গুল দিয়ে, “ পানির
নিচে দম আটকে মারা যাওয়ার কথা ছিল আমার। কিন্তু
অদ্ভূত একটা ঘটনা ঘটল তখন। গাড়ির ভেতর
ভাঙ্গা উইন্ডশীল্ড দিয়ে পানি ঢুকে আমার নিঃশ্বাস
আটকে গেছে- হঠাৎ দেখলাম পানির নিচের
নীলচে জগৎটা দাবা বোর্ডের মত হয়ে যাচ্ছে।
সুইমিং পুলের তলদেশটা সাদা কালো ছক
কাটা দাবা বোর্ডের মত হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে যতদূর চোখ
যায়। তার মাঝ
দিয়ে আবছা ভাবে চোখে পড়ছে সাদা কতগুলো মূর্তি দাঁড়িয়ে আছে একেকটা ঘরে।
তুমি হয়ত খেয়াল করেছো এ বাড়ির ছাদের
চারটা মূর্তি বাদে সবগুলোই কিন্তু কালো পহ্মের ঘুটি।
সাদা ঘুটি না। কিন্তু পানির নিচের ঘুটিগুলো সব
সাদা। আমার দম
যেতে যেতে দেখতে পাচ্ছি চারটা সাদা বর্ম
পরা বিশাল দেহী মূর্তি আমার গাড়ির চার কোণার
মাটি ফুঁড়ে যেন গজিয়ে উঠল। খুব আশ্চর্যের বিষয় চার
জনের একটা করে হাত আমার গাড়িটার চার কোণায়
ধরা! কিছু বোঝার আগেই তীব্র
গতিতে পানি ফুঁড়ে মূর্তিগুলো গাড়িটাকে নিয়ে উঠে গেল
সুইমিং পুলের ওপর দিকে।
( চলবে )
No comments:
Post a Comment