Saturday, June 9, 2012

চতুরঙ্গ (১৬তম পর্ব) [Ghost Stories - p16 ]



চতুরঙ্গ -(১৬তম পর্ব)
লেখক:নিথর শ্রাবণ শিহাব


[ বিঃদ্রঃ বাকী পর্বের লিঙ্ক এই পর্বের শেষে দেওয়া আছে ]

আমি প্রায় শোনা যায়
না এমনভাবে আস্তে আস্তে বললাম, “অ্যাক্সিডেন্টট
া আসলে আপনার Split personality’র ঐ
অংশটা ঘটিয়েছে- তাই না স্যার?” গলার স্বরই
বলে দিলো আমি ভয় পাচ্ছি।
ডাঃ এমরান কাঁশলেন খুঁক খুঁক করে, “ দুঃখজনক হলেও
ব্যাপারটা সত্যি। সেরাতে আমি তোমাকে বারবার
চলে যেতে বলেছিলাম, ভয় পাচ্ছিলাম রাতে আমার ওই
অংশটা জেগে উঠলে তোমার হ্মতি করতে পারে। তাই।
কিন্তু তুমিই শুনলে না কথাটা।
আমি ভয়ার্ত চোখে তাকালাম তাঁর দিকে, “ অন্যদিন
হ্মতি না করে সে রাতেই করতে গেলেন কেন?” নিজের
কাছেই নিজের কন্ঠটা কেমন বেখাপ্পা শোনালো।
সে রাতে জয়নাবের ডোর বেলটা ভেঙ্গেছিলে তুমি,
আর আমি কষ্ট পেয়েছিলাম তখন-তাই।নির্লিপ্ত গলায়
বললেন।
আমি ঢোক গিললাম, “
তাহলে আমাকে মিথ্যা বলেছিলেন
কেন,যে আমি সম্মোহিত হয়েছি?”
ভয় পাবে তাই বলতে চাই নি।পানির গ্লাসটার
দিকে হাত বাড়ালেন। খালি ছিল সেটা।
আমি উঠে গিয়ে জগ থেকে পানি ঢেলে দিলাম তাঁকে।
এসে আবার বসলাম টুলে, “ আর জাহিদের
ব্যাপারটা কি?” জিজ্ঞেস করলাম।
পানি খেতে খেতেই বললেন, “ এখনো বোঝোনি? ওর-ও
একই সমস্যা আছে। স্প্লিট
পারসোন্যালিটি ডিসওর্ডার। বিচিত্র
কোনো কারণে ওর অন্য অস্তিত্বটা আমার
সঙ্গে দাবা খেলে। মানে আমার অন্য অস্তিত্বের
সাথে দাবা খেলে। হারানোর জন্য। সেদিন
হাসপাতালে পরিচয়ের সময়েই বোধ হয় ওর অন্য
সত্ত্বাটা আমাকে চিনেছিল।
আমি আপনার কথা বুঝতে পারছি না স্যার।
বিভ্রান্ত গলায় বললাম।
জাহিদের অন্য সত্ত্বাটা অসম্ভব স্ট্রং।
বলতে পারো ওর হ্মমতাটার সামনে আমার
কোনো শক্তিই নেই। গ্র্যাভিটিকে ফোর্স
বানিয়ে হাইপার ডাইভ দেয়ায় রীতিমত ওস্তাদ
জাহিদের অন্য অস্তিত্বটা। এ জন্যই ওকে হঠাৎ করেই
এখানে সেখানে চলে আসতে দেখা যায়। নিজের
অজান্তেই করে। অবশ্য
তুমি দেখেছো কিনা সেটা জানি না।এক মুহূর্ত
থামলেন। ছাদের বিশাল দাবা বোর্ডে ওর
সঙ্গে খেলা হওয়ার কথা ছিল। অনেক ছোট বেলা থেকে।
ওর দাদুই সেটা বলে গিয়েছিলেন। কখন,
কিভাবে বলেছেন জানি না। জাহিদ ভুলে গেলেও ওর
অন্য অস্তিত্বটা ভোলেনি। সেটাই খেলবে জাহিদ।
কবে?”
আজ রাতেই হওয়ার কথা ছিল। অন্তত আমার
ডায়েরীতে আমার অন্য অস্তিত্বটা সে কথাই
লিখে গেছে।টেবিলের ওপর থেকে তাঁর
ডায়েরীটা তুলে একটা পাতা খুলে দেখালেন।
দেখতে পাচ্ছি এখান থেকেই, সেখানে অন্য
কারো হাতের লেখাঃ
২৬ আগস্ট রাত সাড়ে আটটায় জাহিদের সঙ্গে বড়
বোর্ডে দাবা খেলা হবে।
আমি বিড়বিড় করে বললাম, “ এটা আপনার অন্য অংশের
লেখা?”
হ্যা।হাসতে লাগলেন হঠাৎ, চিকচিক করে উঠল
ডাঃ এমরানের চোখ।
আমি মূর্তির মত বসে রয়েছি। মাথা কাজ
করছে না আমার। আবার বিড়বিড় করলাম, এসব কেন
হচ্ছে স্যার?”
হাসতে লাগলেন মিটিমিটি। চোখের দৃষ্টিটা কেমন
যেন রহস্যময়। আমি টুল
ছেড়ে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালাম। আমার মাথা ঘুরছে,
অসুস্থ গলায় বললাম, “ আপনি এর ব্যাখ্যাটাও
জানেন?”
উনি জবাব না দিয়ে বসে রইলেন কাঠের চেয়ারে।
চোখে রহস্যময় সেই হাসি।
স্যার প্লিজ?” অনুনয় করে বললাম,
চোখে পানি এসে গেল।
সব কটা জিনিসের ব্যাখ্যা জানতে নেই নোভেরা।
মানুষকে তার জ্ঞান আর
মেধা খাঁটিয়ে সেটা আবিষ্কার করার সুযোগ
দেয়া উচিত। তুমি আসতে পারো- আমার নামাযের সময়
হয়ে গেছে।
আমি নিজের অজান্তেই ঠোঁট
কামড়ে কান্না আটকে দৌড়ে চলে এলাম।
০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০
সে রাতে হল রুমে তালা লাগিয়ে যখন চলে আসবো-
ছাদের দিক থেকেই একামাত দেয়ার শব্দ শোনা গেল।
কন্ঠটা খুব পরিচিত লাগলো। কিন্তু কার মনে পড়ল না।
আমি ফিরে তাকালাম। অন্ধকারের মাঝে দেখা যাচ্ছে,
ছাদের দাবা বোর্ডে উল্টো হয়ে অসংখ্য সাদা পোশাক
পরা মানুষ জামাতে নামাযে দাঁড়িয়েছে! কোথাও
কোনো মূর্তি নেই! ইমামের পেছনে নীল শার্ট
পরা কেউ একজন দাঁড়িয়েছে, নিচ থেকেও
চিনতে পারলাম- জাহিদ! এবং ইমাম আর কেউ নন-
ডাঃ এমরান!
আমি জানি নামাযের পরেই হয়ত সেই বড় খেলাটা শুরু
হবে...... আমি দাঁড়িয়ে রইলাম দরজার কাছে।
দেখতে পাচ্ছি লম্বা নামাযটা শেষে সাদা পোশাক
পরা মানুষগুলো মিলিয়ে যাচ্ছে..... দাবা বোর্ডে আগের
মূর্তিগুলো একে একে ফিরে আসছে...... যেন বোর্ড
ফূঁড়ে গজিয়ে উঠল।
আমি অসুস্থ হয়ে পড়ছি দ্রুত।
দেখতে পাচ্ছি দাবা খেলার শুরুর সমত
যেভাবে ঘুটি সাজানো হয়- তেমন ভাবে ঘুটি সজ্জিত
হচ্ছে আপনা আপনি। অভাব থাকা ঘুটিটা হিসেবে হল
রুম থেকে বেশ কিছু মূর্তি শূণ্যে উথে যাচ্ছে!
গিয়ে ছাদের ওই ঘরগুলোতে বসছে নিজে নিজে!
আমি নিজের পায়ের ওপর ভর রাখতে পারছি না।
ওপরে খেলা শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে বাহিরে প্রকৃতিও
যেন ঝড়ের তান্ডব লীলা শুরু করেছে!বজ্রপাতের আলোয়
দেখা যাচ্ছে মূর্তিগুলো যুদ্ধের ময়দানের মত
একটা আরেকটাকে গিয়ে প্রচন্ড জোরে আঘাত
করে গুড়িয়ে দিচ্ছে। উপর থেকে ভেঙ্গে সেগুলো হল
রুমের ফ্লোরে আছড়ে পড়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ হচ্ছে!
চারপাশে ধূলো-বালুর ঝড় হল রুমের ভেতর! যেন যুদ্ধ
লেগেছে!
ডাঃ এমরান ছাদের এক মাথায় ঝুলে আছেন- অন্য
মাথায় জাহিদ। দু জনের চোখেই অদ্ভূত উল্লাস
ভরা রহস্যময় একটা হাসি.....!!
¤¤ চলবে ¤¤








No comments:

Post a Comment