Sunday, June 10, 2012

চতুরঙ্গ-(৭ম পর্ব) [Ghost Stories -p7 ]




চতুরঙ্গ-(৭ম পর্ব)

লেখক:নিথর শ্রাবণ শিহাব

[ বিঃদ্রঃ বাকী পর্বের লিঙ্ক এই পর্বের শেষে দেওয়া আছে ]

জাহিদ বড় একটা কার্টুনে করে একগাদা সিঙ্গারা নিয়ে এসেছে! গরম সিঙ্গারার ঘ্রানে কেবিনের বাতাস মোঁ মোঁ করছে!
দারাজ হাসি হেসে বলল জাহিদ, “একটা কবিতাও লিখেছি বেগাম। তোমার শুভ মুক্তি উপলক্ষে – ” কেঁশে গলা পরিষ্কার করল
মনে পড়ে আমার দিকে
তাকিয়ে ছিলে ভীরু চোখে?
প্রহর শুরুর ক্ষুদ্র ক্ষণে
স্বপ্ন দেখা সপ্তালোকে?
পথটা যখন শুরুয় ছিল
রঙ্গিন নেশায় ভোর,
তোমার কোমল ভালবাসার
পাইনি সে আদর।
বেলায় কেবল অল্প করে
লাগত রঙের টান,
দূর বহুক্ষণ প্রত্যাশাতেই
প্রেমের আহবান।
প্রহর শেষে তোমার কাছে
এসেছি আজ তাই,
পথের শুরুয় পাইনি তো কি?
পথের শেষে চাই!
ভ্রুঁ নাচাল, “ কেমন হয়েছে বেগাম?”
আমি কিছু বলার আগেই মিথিলা জোরে হাততালি দিয়ে উচ্ছ্বাসিত গলায় বলল, “ ওয়াও জিজু! চো চুইট! ইস ক্যামেরা থাকলে ভিডিও করতাম।
ওর দিকে তাকিয়ে এক হাতে বাক্সটা ধরে বাউ করার মত করল জাহিদ, “ শুকরিয়া, শুকরিয়া ছোট বেগাম!
আমি কোমরে দু হাত দিয়ে নাকের পাটা ফুলিয়ে বললাম, “ এই টন খানেক সিঙ্গারা কে খাবে? টাকা হাতে পেলে ওড়াতে ইচ্ছা করে? ভাল একটা শার্ট কিনতে পারো না? একটা নীল শার্টে কি দশ বছর চালাবে?”
বিন্দু মাত্র মলিন হল না জাহিদের হাসি, “ ওটা যৌতুকের খাতায় জমা আছে। বিয়ের আগে এই এক শার্টে পার করে দেবো।বাক্সটা হাতে উঠে দাঁড়াল, “ তোমার শুভ মুক্তি পাওয়া উপলক্ষে মিষ্টি কেনা ঠিক হবেনা। তাই ঝাল জিনিস বিলাবো ভেবেছি। ছোট বেগাম- মিথিলার দিকে তাকাল, “ চল সারা হাসপাতালে এগুলো বিলিয়ে আসি।
মিথিলা ফিঁক করে হেসে দিল। আমি রেগে তাকিয়ে রইলাম ওদের দিকে। আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে হাত ধরে, নাহ- কনুইয়ে কনুই ধরে বেরিয়ে গেল সিঙ্গারা বিলাতে!
বিরক্ত হলাম খুব। ঘুরে ব্যাগটা গোছাতে লাগলাম। জাহিদের কবিতাটার শেষ লাইন দুটো মাথায় ঘুরছে কেন জানি। খারাপ লেখেনি। কিন্তু প্রশংসা করলে পেয়ে বসবে। থাক। যেমন আছে থাকুক। আপন মনে হাসলাম ওর পাগলামীর কথা ভেবে।
স্যান্ডেল নিতে ঝুঁকেছি মেঝেতে হঠাৎ জমে গেলাম বরফের মত। ভয়ংকর একটা ভয় মাথা থেকে ছড়িয়ে গেল সারা শরীরে।রুমের লাইট জ্বলছে, ফ্যান ঘুরছে, তার ছায়া পড়েছে মেঝেতে। আমি বিস্ফোরিত চোখে চেয়ে দেখলাম ফ্যানের ছায়ার সঙ্গে একটা মানুষের উল্টো ছায়া! সিলিং থেকে কেউ ঝুলে থাকলে যেমন হবে- ঠিক তেমন! আমি কাঁপতে লাগলাম আতংকে। খুব ধীরে ধীরে ঘুরলাম। রুমের সিলিংটা ঠিক সেই দাবার বোর্ডের মত হয়ে গেছে!
সেখান থেকে গম্ভীর মুখে ঝুলে আছেন ডাঃ এমরান! তাকিয়ে রয়েছেন সরাসরি আমার দিকে!এরপর আমার আর কিছু মনে নেই!

ডাঃ এমরানের সঙ্গে দেখা করাটা খুব জরুরী হয়ে পড়ল। হাসপাতেলের ঘটনাটার পর আমি জ্ঞান হারিয়েছিলাম অল্প সময়ের জন্য। জাহিদ আর মিথিলা এসে চোখে মুখে পানি দিয়ে আমার জ্ঞান ফেরায়। জ্ঞান ফেরার পর পরই আমি ওদেরকে বাসায় চলে যেতে বলে ডাঃ এমরানের মিউজিয়ামের দিকে রওনা দেই। জাহিদ আমাকে অসুস্থ শরীরে যেতে দিতে চাচ্ছিল না। কিন্তু আমি শুনলাম না। কারণ ডাঃ এমরানের সঙ্গে আগে কথা বলা দরকার। কথা না বলে আমি এক মুহূর্ত স্বাভাবিক থাকতে পারবো না। জাহিদ আমার সঙ্গে যেতে চাইলোকিন্তু সেটাও নিষেধ করে দিলাম। কারণ ব্যাপারগুলো ওকে বিশ্বাস করানো যাচ্ছে না, অবশ্য ওর জায়গায় আমি নিজে হলেও বিশ্বাস করতাম কিনা সন্দেহ আছে। আজগুবী এসব কথা বার্তা কেউ বিশ্বাস করবে না।তাই হাসপাতেলের ব্যাপারটা চেপে গেলাম ওর কাছে। আর মিথিলা তো আগা গোড়া কিছুই জানে না, বলিনি। শেষে খালাকে বলে দিলে আমার চাকরি করা নিয়ে টানা টানিতে পড়ে যাবো।
আমাকে ট্যাক্সিতে তুলে দিয়ে জানালায় দু হাত রেখে সামনে ঝুঁকলো জাহিদ, সামান্য সন্দিহান গলায় বলল, “ তুমি শিওর যে তুমি ঠিক আছো? না হলে বল, অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে পিছেপিছে আসি?”
মাথা নাড়াতে গিয়ে ব্যথাটা আবার টনটন করে উঠল, “ হুম। ঠিক আছি। তুমি চিন্তা কোরো না। ডাঃ এমরানের সঙ্গে দেখা করেই বাসায় ফিরে যাবো। তুমি মিথিলাকে বাসায় পৌছে দিও।
একটা নিঃশ্বাস ফেলে সোজা হয়ে দাঁড়াল, “ বাসায় ফিরে ফোন দিও বেগাম। রাতে আবার মিউজিয়ামে থেকে যেও না। আমি কিন্তু খুব সন্দেহ প্রবণ জামাই। যদি টের পাই আমাকে ছেড়ে ওই বুড়োর ঘাড়ে ঝুলে পরার তালে আছো- তাহলে কিন্তু পানি পথের চতুর্থ যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে।
জানি।মৃদু হেসে বিদায় জানালাম জাহিদকে। ট্যাক্সি ছেড়ে দিল ড্রাইভার। পেছনে তাকিয়ে দেখলাম জাহিদ চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে আছে। যতক্ষণ না চোখের আড়াল হলাম দাঁড়িয়ে রইল।
সন্ধ্যা হয়ে এসেছে প্রায়।
উল্টো পাল্টা বাতাস শুরু হয়েছে। বৃষ্টি আসবে বোঝা যাচ্ছে।থেকে থেকে মেঘের গুরগুর শব্দ শোনা যাচ্ছে। ট্যাক্সি থেকে নামলাম মিউজিয়ামের সামনে এসে। সন্ধ্যার আলোতে দেখা যাচ্ছে আকাশে ঘন কালো মেঘ জমে কুন্ডলী পাঁকিয়েছে জীবন্ত প্রাণির মত, ঠিক দূর্গটার ওপর দিকে। খুব স্বাভাবিক দৃশ্যটাও বড় অবাস্তব লাগল।
সোলেমান আলী আমাকে দেখার সাথে সাথে গেট খুলে দিল, “ আপা এখন কেমন আছেন? মাথার ঘাঁ শুঁকাইছে?”
হ্যা এখন একটু ভাল আছি। তুমি কেমন আছো?” বাতাসে চুল বারবার উড়িয়ে মুখের ওপর এনে ফেলছে দেখে ওড়নাটা ভাল করে মাথায় চাপিয়ে নিলাম।
কি যে চিন্তায় ফালায়া দিছিলেন আপনি!সরল হাসি হাসল। বিশাল দেহী এই মানুষটার হাসি দেখলে মনে হয় ছোট বাচ্চা হাসছে।
স্যার আছেন? নাকি বাহিরে গেছেন?”
না। আছেন। যায় নাই কোথাও। আপনারে দেখতে গত পরশু দিন হাসপাতালে গেছিলান একবার। তারপর আর কোথাও যায় নাই।গেটটা আবার লাগিয়ে দিতে দিতে বলল।
আমি খোয়া বিছানো পথ ধরে বিশাল সবুজ লনের মাঝ দিয়ে দূর্গটার দিকে হেটে গেলাম। লনের মাঝে এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বড় বড় কালো মূর্তি, গ্রীক পুরাণের নানান দেব,দেবীর আদলে গড়া সেগুলো। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে লনের লাইটগুলো জ্বালিয়ে দেয়া হয়। আজকে এখনো জ্বালানো হয়নি। আবছা অন্ধকারে মূর্তিগুলো খুব রহস্যময় লাগছে তাই। হাটার সময় বারবার মনে হচ্ছিল ওগুলোর আড়াল থেকে কেউ তাকিয়ে রয়েছে আমার দিকে। অদ্ভূত একটা গা ছমছম করা অনুভূতি!সারা শরীর দিয়ে ভয়ের একটা ঠান্ডা স্রোত অনুভব করলাম!

~~~ চলবে ~~~



No comments:

Post a Comment